মাগরিবের নামায কখন পড়া উত্তম? রমযান মাসে ইফতারের জন্য কিছুটা বিলম্ব করে জামাত দাঁড়ায়Ñ এর হুকুম কী?
সাধারণ অবস্থায় সূর্যাস্তের পর মাগরীবের নামায বিলম্ব না করা মুস্তাহাব। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিব পড়তাম যখন সূর্য অস্ত যেত। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬১
রাফে ইবনে খাদীজ রা. বলেন, আমরা নবীজী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করতাম। অতপর নামায শেষে আমাদের কেউ চলে গেলে তখন সে তীর নিক্ষেপের স্থান দেখতে পেত। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৯
হাদীস ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব নামায সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে পড়তেন এবং এত আগে পড়তেন যে, নামায শেষ করার পরও চতুর্দিক আলোকিত থাকত। অন্ধকার হয়ে যেত না। আর এটিই অধিকাংশের মত। Ñউমদাতুল কারী ৫/৫৫
হাদীস বিশারদ হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, উপরোক্ত হাদীসের দাবি হল, মাগরিব নামায ওয়াক্তের শুরুতেই আদায় করা। যেন আলো থাকতে থাকতে নামায শেষ করা যায়। Ñফাতহুল বারী ২/৫০
ফকীহগণ বলেছেন, ওয়াক্তের শুরুতেই মাগরিবের নামায পড়ে নেওয়া মুস্তাহাব। তবে সূর্যাস্তের পর নামাযের প্রস্তুতি নিতে যে পরিমাণ সময় লাগে এতটুকু পরিমাণ সময় বিলম্ব করা অনুত্তম হবে না। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ. বলেছেন, ১০ মিনিট বিলম্ব করলে মাকরূহ হবে না। Ñইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১০৪
এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ আকাশের তারকারাজী অধিক পরিমাণে প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরূহ তানযীহী। আর তারকারাজী অধিক পরিমাণে প্রকাশ হয়ে যায় এত বিলম্ব করা মাকরূহ তাহরীমী।
সুতরাং রমযানে ইফতারির প্রয়োজনে ১০-১২ মিনিট বিলম্ব করা যাবে। এতে অসুবিধা নেই। মাকরূহ হবে না। তবে এর চেয়ে বেশি বিলম্ব করা ঠিক হবে না। রমযানে ইফতারের জন্য কিছুটা বিলম্ব করার কথা সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রমাণিত আছে।
আবু জামরা দুবায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রমযানে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে ইফতার করতেন। … তিনি বলেন,
فاذا غابت الشمس أذن، فيأكل ونأكل، فإذا فرغ أقيمت الصلاة، فيقوم فيصلي ونصلي معه.
যখন সূর্য অস্ত যেত তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আযান দিয়ে খাবার খেতেন। আমরাও তাঁর সাথে খাবার খেতাম। খাবার শেষে ইকামত দেওয়া হত। তখন তিনি নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। আমরাও তাঁর সাথে নামায পড়ে নিতাম।
Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯০৩৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, ১/২০৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১৪৪, ১৪৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৮; বাযলুল মাজহূদ ৩/২১৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৯;