মুসা (আ) ও খিযির (আ)-এর ঘটনা
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন :
স্মরণ কর, যখন মুসা তার সঙ্গীকে বলেছিল, দৃই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌছে আমি থামব
না ৷ অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব ৷ তারা উভয়েই যখন দৃই সমুদ্রের সৎগমস্থলে
পৌছল তারা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল এটা সুড়ৎগের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে
গেল ৷ যখন তারা আরো অগ্রসর হলো, মুসা তার সঙ্গীকে বলল, আমাদের সকালের নাশৃতা
নিয়ে এসো, আমরা তে ৷ আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’ ৷ সঙ্গী বলল, আপনি কি লক্ষ্য
করেছেন, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম ৷
শয়তানই এটার কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল ৷ মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ
করে সমুদ্রে নেমে গেল ৷ মুসা বলল, আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম ৷ তারপর
তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল ৷ তারপর তারা সাক্ষাৎ পেল , আমার বান্দাদের মধ্যে
একজনের, যাকে আমি আমার কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার কাছ থেকে শিক্ষা
দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান ৷
মুসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা
দেবেন, এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি? যে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে
ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন ন, যে বিষয়ে আপনার জ্ঞানায়ত্ত নয় সে বিষয়ে আপনি
ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে? মুসা বলল, আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পারেন
এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না ৷ সে বলল, আচ্ছাঅ ৷পনি যদি আমার
অনুসরণ করবেনই ৩বে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না ৷আমি সে সম্বন্ধে
আপনাকে কিছু বলি ৷ ’ ৷ ৩ারপর উভয়ে চলতে লাগল, পরে তারা যখন নৌকায় আরোহণ করল,
তখন সে ওটা বিদীর্ণ করে দিল ৷ মুসা বলল, আপনি কি আরােহীদের নিমজ্জিত করে দেবার
জন্যে এটা বিদীর্ণ করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন ৷ ’ সে বলল, আমি
বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতে ই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না?’ মুসা বলল আমার
ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠােরতা অবলম্বন
করবেন না
তারপর উভয়ে চলতে লাগল ৷ চলতে চলতে ওদের সাথে এক বালকের সাক্ষাত ৩হলে সে
তাকে হত্যা করল ৷ তখন মুসা বলল, আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন, হত্যার
অপরাধ ছা ৷ড়াই৷ আপনি তে ৷ এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন ৷’ সে বলল, আমি কি বলিনি
যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না ? মুসা বলল, এটার পর যদি
আমি আপনাকে কে ন বিষয়ে জিজ্ঞেস কবি৩ তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না আমার
ওযর আপত্তির চুড়ান্ত হয়েছো’ তারপর উভয়ে চলতে লাগল, চলতে চলতে তারা এক
জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে তাদের কাছে খাদ্য চাইল, কিভু৩ারা তাদের মেহমানদারী
করতে অস্বীকার করলো ৷ তারপর তারা এক পতনােন্মুখ প্রাচীর দেখতে গেল এবং সে এটাকে
সুদৃঢ় করে দিল ৷ মুসা বলল, আপনি তো ৷ইচ্ছে করলে এটার জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে
পারতেন ৷ ’ সে বলল, এখানেই আপনার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কছেদ হল; যে বিষয়ে আপনি
ধৈর্যধারণ করতে পারেন নি আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি ৷ ’
নৌকাটির ব্যাপার এটা ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির, ওরা সমুদ্রে জীবিকা অম্বেযণ
করত; আমি ইচ্ছা করলাম নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে ৷ কারণ, তা ৷দের সম্মুখে ছিল এক রাজা
যে বলপ্রয়োগে সকল নৌকা ছিনিয়ে নিত ৷ আর কিশোরঢি-৩ ৷র পিতামা৩ ৷ ছিল মু মিন ৷
আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দ্বারা তাদেরকে ব্বিত করবে ৷ তারপরে
আমি চাইলাম যে, ওদের প্রতিপালক যেন ওদেরকে তার পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে
হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভ৷ ৷লবাসায় ঘনিষ্ঠতর ৷ আর ঐ প্রাচীবটি এটা ছিল নগরবাসী
দুই পিতহীন কিশোরের, এর নিম্নদেশে ৷আছে ওদের গুপ্তধন এবং ওদের পি৩ ৷ ছিল
সৎকর্যপরায়ণ ৷ সুতরাং আপনার প্রর্ণিপ লক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, ওরা বয়ঃপ্রাপ্ত
হউক এবং ওরা ওদের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করুক ৷ আমি নিজ থেকে কিছু করিনি, আপনি যে
বিষয়ে ধৈর্যধারণে অপারক হয়েছিলেন, এটাই তার ব্যাখ্যা ৷ (সুরা কাহাফ : ৫৯ ৮ ২)
কোন কোন কিতাবী বলে যে, খিযির (আ) এর কাছে যে মুসা (আ) গমন করেছিলেন, তিনি
হচ্ছেন মুসা (আ) ইবন মীশা ইবন ইউসুফ (আ) ইবন ইয়াকুব (আ) ইবন ইসহাক (আ) ইবন
ইব্রাহীম আল খলীল (আ) ৷ এ সব কিতাবীর অভিমতে র সমর্থ্য৷ করে যারা তাদের কিতাব ও
বই পুস্তক থেকে তথ্যাদি উদ্ধৃত করে থাকে, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন নুপ ইবন ফুআলা
আল হেমইয়ারী আশ-শ্ ৷,৷মী আল বৃকালী ৷ কথিত আছে যে, তিনি ছিলেন দামিশ্াকের
অধিবাসী ৷৩ তার মাতা হচ্ছেন কা ব আহবারের শ্রী ৷ বাহ্যত কুরআনের পুর্ব৷ ৷পর বর্ণনা ও সর্বজন
গৃতহী ৩বিশুদ্ধ হাদীসের স্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসা (আ) ইবন ইমরানই হচ্ছেন বনী
ইসরাঈলের কাছে প্রেরিত মুসা (আ) ৷
ইমাম বুখারী (র) বলেন, সাঈদ ইবন জুবায়র (রা) বলেছেন একদিন আমি ইবন আব্বাস
(রা)-কে বললাম যে, নুফ আল বুকালীর ধারণা যে, খিযির (আ)-এর সাথে যে মুস৷ (আ)
সাক্ষাত করেছিলেন তিনি বনী ইসরাঈলের মুসা (আ) নন ৷ ইবন আব্বাস (বা) বলেন,
“আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে ৷” উবাই ইবন কাব (রা) বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা)-কে
বলতে শুনেছেন যে, একদিন মুসা (আ) ইসরাঈলীদের কাছে বক্তব্য রাখছিলেন ৷ এমন সময়
তাকে প্রশ্ন করা হল যে, মানব জ দিব মধ্যে সর্ব ধিক জ্ঞানী কে ? তিনি বললেন আমি ৷
যেহেতু জ্ঞা ৷নকে তিনি আল্লাহ্ তা অ ৷লার দিকে সম্পর্কিত করেন নি৩ ৷ই আল্লাহ তা আলা তাকে
তর্ধসনা করলেন ৷ তার কাছে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে ওহী প্রেরণ করেন যে, দুই সমুদ্রের
সংগমস্থুলে আমার এক বান্দা রয়েছে যিনি তোমার চাইতে অধিক জ্ঞ৷ ৷নী ৷ মুসা (আ) বললেন
“হে আমার প্রতিপালক৷ আমি কেমন করে তার কাছে পৌছতে পারব?” আল্লাহ তা আলা
বললেন, একটি মাছ সাথে নিয়ে তা থলেতে পুরে নাও ৷ যেখানেই মাছটি হারিয়ে যাবে,
সেখানেই তাকে পাওয়া যাবে ৷’ তিনি একটি মাছ নিয়ে তা একটি থলে পুরে নিলেন ৷ তারপর
তিনি চলতে লাগলেন ৷ তার সাথে তার খাদিম ইউশা ইবন নুনও ছিলেন ৷ যখন তারা
শৈলশীলার কাছে পৌছলেন, তখন তারা তাতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন ৷ মাছটি লাফ দিয়ে
থলে থেকে বের হয়ে গেল এবং সৃড়ঙ্গের পথ করে সাগরে নেমে গোল ৷
আল্লাহ তাআলা মাছের যাত্রাপথের পানি ঠেকিয়ে রাখলেন, যাতে সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল ৷
মুসা যখন জাগলেন, তখন খাদিম মাছটি সম্বন্ধে তাকে অবহিত করতে ভুলে গেলেন এবং তারা
বাকি দিন ও রাত পথ চলতে লাগলেন ৷ পরদিন সকালে মুসা (আ)৩ তার খাদিমকে বলেন
আমাদের প্রাত৪রাশ আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ৷ যে স্থানে
পৌছার জন্য আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আ)-কে হুকুম দিয়েছিলেন যে স্থান অতিক্রম করার পুর্ব
পর্যন্ত তিনি কোন ক্লান্তি বোধ করেননি ৷ থাদিম মুসা (আ)-কে বললেন, “আপনি কি লক্ষ্য
করেছেন আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা তুলে গিয়েছিলামঃ
শয়তানই এটার কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল ৷ মাছটি আশ্চর্যজনকতাবে নিজের পথ
করে সাগরে নেমে যায় ৷ অর্থাৎ মাছটি পথ করে সমুদ্রে নেমে যাওয়ায় দুজনই আশ্চর্য৷ ত
হয়ে গেলেন ৷ মুসা (আ) বললেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই অম্বেষণ করছিলাম ৷ ’
তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং পাথরটির কাছে গিয়ে পৌছলেন ৷
তারা সেখানে একজন বস্ত্রাবৃত লোককে দেখতে পান ৷ মুসা (আ) তাকে সালাম দিলেন, তখন
ঐ ব্যক্তি অর্থাৎ খিযির (আ) বললেন, আপনার এ জনপদে সালাম আসল কােখেকে? মুসা (আ)
বললেন, আমি মুসা ৷ তিনি প্রশ্ন করলেন, বনী ইসরাঈলের মুসা (আ) ? মুসা (আ) বললেন হ্যা,
তাই ৷ সত্যের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে৩ তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন এজন্য
আমি আপনার কাছে এসেছি ৷ খিযির (আ) বললেন, “হে মুসা (আ) ! আল্লাহ তা আলা তার
জ্ঞান থেকে আমাকে একটি বিশেষ জ্ঞান প্রদান করেছেন, যা আপনার অজ্ঞাত ৷ অনুরুপভারে
আপনাকে এমন একটি জ্ঞান দান করেছেন যা আমার অজ্ঞাত ৷ তা ৷ই আপনি কিছুতে ই আমার
সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না ৷”
হযরত মুসা (আ) খিযির (আ) কে বললেন, “আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল
পারেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না ৷” খিযির (আ) মুসা (আ)-কে
বললেন, যদি আপনি আমার অনুকরণ করেনই, তবে কে ন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না
যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি ৷ ’ তারপর উভয়ে সাগরের তীর ধরে চলতে
লাগলেন এবং একটি নৌকার দেখা পেলেন ৷ নৌকার মালিকদের সাথে পারাপারের ব্যাপারে
আলোচনা করলেন ৷ নৌকার মালিকগণ খিযির (আ) কে চিনতে পারলেন এবং ভাড়া না নিয়েই
তাদেরকে পার করে দিলেন ৷ যখন তারা উভয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন, খিযির (আ)
কিছুক্ষণের মধ্যে কুঠার দ্বারা নৌক র একটি কাঠ খুলে ফেললেন ৷ তখন মুসা( (আ) তাকে
বললেন, এরা বিনাভাড ড়ায় আমাদেরকে পার করে দিলেন আর আপনি আরােহীদেরকে নিমজ্জিত
করার জন্যে নৌকা টিকে বিদীর্ণ করে দিলেন আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন
তিনি মুসা (আ) কে বললেন, “আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কিছুতেই
ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না?” মুসা (আ) বললেন, “আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী
ঠাওরাবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না ৷”
রসুলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, “প্রথম বারের প্রশ্নটি মুসা (আ) হতে ভুলক্রমে সংঘটিত
হয়েছিল ৷ ” রসুলুল্লাহ (সা) আরো বলেন, এমন সময় একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক
পাশে বসল তারপর ণ্ঠীট দিয়ে পানি উঠাল ৷ তখন খিযির (আ) মুসা (আ)-কে লক্ষ্য করে
বললেন, “আল্লাহ্ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞানের পরিমাণ হচ্ছে সাগর
থেকে নেয়া চড়ুই পাখির এক বিন্দু পানির মত৷ ” বা উভযে নৌকা থেকে অবতরণের পর
সাগরের কুল যেষে চলতে লাগলেন ৷ অতঃপর খিযির (আ) এক বা লককে দেখতে পেলেন ৷ যে
অন্যান্য বালকের সাথে খেলাধুলা করছিল ৷ খিযির (আ) কিশোরটির মাথা ধরে টেনে ছিড়ে
ফেললেন ৷ এভাবে ভাবে তিনি হত্যা করলেন ৷ মুসা (আ) তখন র্তাকে বললেন, “আপনি কি
এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন, হত্যার অপরাধ ছাড়াই? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায়
কাজ করলেন!” তিনি বললেন, “আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ
করতে পারবেন না?
রসুলুল্লাহ (সা) বলেন, এবারের প্রশ্নটি উত্থাপন ছিল পুর্বের বারের চেয়ে গুরুতর ৷৩ তাই
মুসা (আ) বললেন, এটার পর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞা ৷স৷ করিত তবে আপনি
আমাকে সঙ্গে রাখবেন না ৷ আমার ওযর আপত্তির চুড়ান্ত হয়েছে ৷ অতঃপর উভযে চলতে
লাগলেন ৷ চলতে চলতে তারা এক জনপদের আধিবাসীদের নিকট পৌছে তাদের কাছে খাদ্য
চাইলেন ৷ বিন্দু তারা এদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল ৷ অতঃপর তারা তথায় এক
পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন, তখন খিযির (আ)ত তা সুদৃঢ় করে দিলেন ৷ তখন মুসা (আ)
বললেন, “তারা এমন একটি সম্প্রদায় যাদের কাছে আমরা আগমন করলাম, তারা আমাদেরকে
না দিল খাদ্য, না করল মেহমানদারী, আপনি তাে ইচ্ছে করলে এটার জন্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ
করতে পারতেন ৷” খিযির (আ) বললেন, “এখানেই আপনার এবংঅ আমার মধ্যে সম্পর্কছেদ
হল ৷ যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেন নি আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি ৷ ”
রসুলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, আমাদের এটা পছন্দনীয় ছিল যে, মুসা (আ) যদি
ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে আল্লাহ্ তাআল৷ তাদের সম্বন্ধে আমাদেরকে আরও অনেক
ঘটনা শুনাভ্রুত তন ৷ সাঈদ ইবন জুবায়র (র) বলেন, উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখিত আয়াতাত্শ
মোঃ এর স্থলে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস
(রা) পাঠ হৰু রু শব্দটির সাথে এোশু বিশেষণ সহকারে পাঠ করতেন ৷ পুনরায়
আয়াতাংশ , এর সাথে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) পড়তেন
এ শব্দটি যোগ করে পড়তে তন ৷ হাদীস শরীফে উল্লেখ
রয়েছে যে, যে ছিল কাফির ৷ বুখারী শরীফে সুফয়ান ইবন উয়ায়ন৷ (রা) এর সুত্রে অনুরুপ
বর্ণনা রয়েছে ৷ তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে, মুসা (আ) সফরে বের হয়ে পড়লেন ৷ তার সাথে
ছিলেন ইউশা ইবন নুন এবং৩ তাদের সাথে ছিল একটি মাছ ৷ অতঃপর তারা উভয়ে একটি
পাথরের কাছে পৌছলেন এবং দুজনেই পাথরের নিকট অবতরণ করলেন ৷ বর্ণনাকারী বলেন,
মুস৷ (আ) পাথরের উপর৩ার মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন ৷ পাথরের উপর ছিল একটি প্রস্রবণ,
যাকে ব্লুা! বলা হত ৷ কে ন কিছুর মধ্যে ঐ প্রস্রবণের পানি পড়লে ঐ বস্তুটি জীবিত হয়ে
যেত ৷ ভুনা মাছটির উপরও উক্ত প্রস্রবণ ৷৫থকে পানি পডেছিল ৷ ত ই মাছটি নড়ে উঠল, থলে
থেকে বের হয়ে সমুদ্রে পড়ে গেল ৷ অতঃপর যখন মুসা (আ) জেগে উঠলেন, তখন খাদিমকে
বললেন, আমাদের নাশত৷ নিয়ে এস ৷ আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ৷
তারপর হাদীসটির বাকি অংশ বর্ননা করা হয়েছে ৷ উক্ত হাদীসে আ রো আছে, তিনি বলেন,
নৌকার একপাশে একটি চড়ুই পাখি এসে বসল; সমুদ্রে৩ার হ্রঠ ট ডুবাল ৷ তখন খিযির (আ)
মুসা (আ)-কে বললেন, “আমার, আপনার এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের জ্ঞ৷ ৷ন আল্লাহর জ্ঞানের
তুলনায় এই চড়ুই পাখির সমুদ্রে ভুবানাে ৫ঠাটের মাধ্যমে সংগৃহীত এক বিন্দু পানির ন্যায়
নগণ্য ৷ আতঃপর পুর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন ৷
ইমাম বুখারী (র) অন্য একটি সুত্রেও সাঈদ ইবন জুবায়র (বা) হতে এ হাদীসটি বর্ণনা
করেন ৷ সাঈদ ইবন জুবায়র (রা) বলেন, একদিন আমরা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) এর
ঘরে উপবিষ্ট ছিলাম ৷ তখন তিনি বললেন, “তোমরা আমাকে যে কোন প্রশ্ন করতে পার ৷
আমি বললাম, হে আবু আব্বাস (রা) আল্লাহ তা আলা আপনার জন্যে আমাকে উৎসর্গ করে
দিন, কুফ৷ তে একজন বক্তা আছে, তাকে বলা হয় নুফ ৷ তার ধারণা যে, খিযির (আ ) এর সাথে
যায় ঘটনা ঘটেছে তিনি বনী ইসরাঈলের মুসা (আ) নন ৷ বর্ননাকারী আমরের মতে, আবদুল্লাহ
ইবন আব্বাস (রা) বলেন, “আল্লাহর দৃশমন মিথ্যা বলেছে ৷” বর্ণনাকারী ইয়ালা (র)-এর মতে,
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আমাকে উবাই ইবন কা’ব (রা) বলেছেন যে, রসুলুল্লাহ
(সা) বলেন, আল্লাহর রাসুল মুসা (আ) একদিন জনগণকে নসীহত করছিলেন, তাতে চোখে
পানি এসে গিয়েছিল এবং অম্ভরসমুহ ৰিগলিত হয়ে গিয়েছিল ৷ মুসা (আ) যখন স্থান ত্যাগ
করছিলেন অমনি এক ব্যক্তি তাকে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, “হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর যমীনে
কি কেউ আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী রয়েছেন ?” তিনি প্রতি উত্তরে বললেন “না” ৷ জ্ঞানকে
আল্লাহ তাআলার প্রতি সম্পর্কিত না করায় আল্লাহ তাআলা মুসা (আ)-কে ভর্চুসন৷ করেন ৷
মুসা (আ)-কে বলা হল, “হী৷ রয়েছে ৷ মুসা (আ) বললেন, “হে আমার প্ৰতিপালক৷ তিনি
কোথায় আছেন?” আল্লাহ তাআল৷ বললেন, “দুই সমুদ্রের সংগমস্থানে ৷ ” মুসা (আ) বললেন,
“হে আমার প্রতিপালক৷ আমাকে একটি চিহ্ন নির্দেশ করুন যা দিয়ে আমি তাকে চিনে নিতে
পারব ৷” তিনি বললেন, “যেখানে মাছটি তোমার নিকট থেকে পৃথক হয়ে যাবে ৷ ”
ইয়ালা (র) বলেন, আল্লাহ ৷ আল৷ বললেন, একটি তুন৷ মাছ সাথে নিয়ে না ও ৷ যেখানেই
তাতে প্রাণ সঞ্চার করা হবে সেখানেই তুমি খিযির (আ) কে পাবে ৷ মুসা (আ) একটি মাছ
নিয়ে একটি থলে রাখলেন ৷ অতঃপর আবার খাদেমকে বললেন, “আমি তোমাকে অন্য কোন
দায়িত্ব দিয়ে কষ্ট দেব না, তুমি শুধু যেখানে মাছটি আমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে যে
জায়গাটি সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করবে ৷” খাদেম ইউশ ৷৷ (আ) বললেন, এটাতে৷ আর তেমন
কো ন কঠিন কাজ নয় ৷ এ সম্পর্কে আল্লাহ তা আল৷ বলেন,অর্থাৎ
স্মরণ কর, যখন মুসা (আ) আপন খাদেম ইউশা ইবন নুন-কে বললেন ৷ ’ সাঈদ (বা) ব্যতীত
অন্য বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন, ইউশা (আ) একটি পরিষ্কার জায়গায় পাথরের ছায়ায় অবস্থান
করছিলেন এবং মুসা (আ) নিদ্রিত ছিলেন ৷ মাছটি নড়ে উঠল, ইউশা (আ) মনে মনে বললেন,
নিজে না জেগেওঠা পর্যন্ত আমি মুসা (আ) কে জাগাব না বরং জেগে উঠলে তার কাছে মাছের
ঘটনাটি বলব ৷ কিন্তু পরে তিনি তা বলতে ভুলে গেলেন ৷ এদিকে মাছটি নড়াচড়া করতে করতে
সাগরে নেমে গেল ৷ আল্লাহর হুকুমে মাছের নির্গমন জায়গায় পানির চলাচল বন্ধ হয়ে গেল ৷
পাথরের মধ্যেও মাছের কিছু চিহ্ন রয়ে যায় ৷ বর্ণনাকারী আমর সেই চিহ্নের প্ৰতি ইঙ্গিত করতে
গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার পাশের দুইটি আঙ্গুলের দ্বারা বৃত্ত তৈরি কার ণ্দখালেন ৷
অতঃপর মুসা (আ ) বললেন :
আমরা এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’ ৷ এ পর্যন্ত তোম৷ থে ক আল্লাহ তা আলা ভ্রমণের কষ্ট
দুর করে রেখেছিলেন ৷ উভয়ে ফিরে চললেন এবং খিযির (আ)-কে পেয়ে গেলেন ৷ উনমান
ইবন আবু সুলাইমান (র) বলেন, খিযির (আ) সমুদ্রের বুকে একটি সবুজ রংয়ের চাটাইয়ের
উপর ছিলেন ৷ সাঈদ (বা) বলেন, তিনি তার কাপড়ে আবৃত অবস্থায় ছিলেন ৷ কাপড়ের
একপ্রান্ত ছিল তার দুই পায়ের নিচে এবং অপরপ্রাম্ভ ছিল তার মাথার নিচে ৷ মুসা (আ) তাকে
সালাম করলেন ৷ তখন তিনি চেহারা থেকে কাপড় সরালেন এবং বললেন, “এ অঞ্চলে কি
সালামের প্রথা আছেঃ আপনি কে?” মুসা (আ) বললেন, “আমি মুসা ৷ ” তিনি বললেন, বনী
ইসরাঈলের মুসা?’ মুসা (আ) বললেন, ইা৷ ৷ খিযির (আ) বললেন, “ব্যাপার কী? আপনি কেন
এসেছেন? মুসা (আ) বললেন, আপনি যে জ্ঞান শিক্ষা লাভ করেছেন তার থেকে আপনি
আমাকে কিছু শিখাবেন এজন্যই আমি এখানে এসেছি ৷ ’ আপনার হাতে তৌরাত রয়েছে তা কি
যথেষ্ট নয়? হে মুসা (আ) ৷ আপনার কাছে তো আল্লাহ্র ওহী আসে ৷ আমার কাছে এক প্রকার
জ্ঞান রয়েছে যা শিক্ষা করা আপনার পক্ষে সমীচীন নয় ৷ অন্যদিকে আপনার কাছে এমন জ্ঞান
রয়েছে যা আমাকে মানায় না ৷
এমন সময় একটি পাখি তার ঠোট দ্বারা সমুদ্র থেকে এক বিন্দু পানি উঠাল ৷ খিযির (আ)
বললেন, “আল্লাহর শপথ, আল্লাহ্ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞানের
পরিমাণ হচ্ছে সমুদ্র থেকে উঠানাে পাখির ঠোটের এ পানির বিন্দুর মত ৷ যখন র্তার৷ উভয়ে
নৌকায় আরোহণ করলেন তখন র্তারা দেখলেন, ছোট ছোট ফেরী নৌকা ৷রয়েছে, যেগুলো
সােকদেরকে নদী পারাপার করে ৷৩ তারা খিযির (আ)-কে চিনতে পেরে বলে উঠল৪ “ইনি তো
আল্লাহ্র পুণ্যবান বান্দ৷ ৷ ” বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সাঈদ (রা)-কে জিজ্ঞ সা করলাম : তিনি
কি খিযির (আ) ? তিনি বললেন হীা’ ৷ তারা আরো বলল, তার কাছ থেকে আমরা ভাড়া গ্রহণ
করব না ৷ খিযির (আ) নৌকাটিকে ফুটো করে দিলেন এবং এতে একটি পেরেক ঠুকে দিলেন ৷
মুসা (আ) বললেন, “আপনি কি আরোহীদেরকে ডুবিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে ফুটো করে দিলেন ?
আপনি তো একটা গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন ৷”
মুজাহিদ (র) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত মেং ৷ শব্দটির অর্থ হচ্ছে , অর্থাৎ অন্যায়
কাজ ৷ খিযির (আ) বললেন, “আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতে ই ধৈয ধারণ
করে থাকতে পারবেন না?” প্রথম প্রশ্নটি ছিল তুলক্রমে, দ্বিতীয়টি ছিল শর্ত হিসেবে আর
তৃতীয়টি ছিল ইচ্ছাকৃত ৷ মুসা (আ) বললেন, “আমার ভুলের জন্যে আমাকে অপরাধী
ঠাওরাবেন না ও আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না ৷ ’ তারপর উভয়ে
চলতে লাগলেন, চলতে চলতে তাদের সাথে এক বালকের সাক্ষাত হলে তিনি তাকে হত্যা
করলেন ৷ বর্ণনাকারী ইয়াল৷ (র) বলেন, সাঈদ (রা) বলেছেন, তিনি অনেকগুলো ছেলেকে
থেলারত অবস্থায় পেলেন, তাদের মধ্য থেকে তিনি একটি চটপটে কাফির বালককে গোয়ালেন
এবং ছুরি দ্বারা যবেহ্ করে ফেললেন ৷ মুসা (আ) বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ
করলেন, যে এখনও কোন নােৎরা কাজ করেনি !” ইবন আব্বাস (রা) আয়াতে উল্লেখিত র্দুশুএৰু
এিব্লু১-কে — ও;প্রুাশু ধ্ন্দ্বুা১ ৷ব্লু পাঠ করেছেন অর্থাৎ নিম্পাপ ও মুসলিম পবিত্রাত্মা
বালক ৷ অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন এবং তারা একটি পতনােন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন ৷
তিনি এটাকে সুদৃঢ় করে দিলেন ৷ বর্ণনাকারী হাত উঠিয়ে বলেন খিযির (আ) এভাবে হাত
উঠালেন এবং এতে প্রাচীরটি ঠিক হয়ে গেল ৷ বর্ণনাকারী ইয়ালা ৷বলেন, আমার ধারণা সাঈদ
(র) বলেছেন, “খিযির (আ ) প্রাচীরটিকে আপন হাত দ্বারা পর্শকরলেন ৷ অমনিন্ব তই এটা সুদৃঢ়
হয়ে গেল ৷ মুসা (আ ) বললেন, আপনি তো ইচ্ছা করলে এটার জন্যে পাবিশ্রমিক গ্রহণ করতে
পারতেন, যা আমরা খেতে পারতাম ৷ আয়াতে উল্লেখিত : ন্ছুর্চু৷ ৷দ্বুদ্বু :,($; (তাদের পেছনে)
ণ্ক ইবন আব্বাস (বা) ণ্প্রুা (তাদের সামনে) পড়েছেন ৷ সাঈদ (র) ব্যতীত অন্য
মুফাসসিরগণ বলেন, উল্লেখিত বাদশার নাম ছিল : (১শু ;প্রু াএে ) (হাদাদ ইবন বাদাদ ) ৷
আর নিহত কিশোরটির নাম ছিল জায়সুর ৷
বাদশা’র সামনে দিয়ে যখন কোন খুত বিশিষ্ট নৌকা অতিক্রম করত তখন সে এটাকে
খুতের কারণে ছেড়ে দিত এবং তারপর এ স্থান অতিক্রম করার পর মালিকের খুত সারিয়ে নিয়ে
নৌকাকে কাজে লাগতে ৷ তাফসীরকারদের কেউ কেউ বলেন, নৌকার ছিদ্রটি বন্ধ করা
হয়েছিল র্কাচের দ্বারা ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, আলকাতর৷ দিয়ে ৷ কিশোরটির পিতামাতা
ছিলেন মুমিন বান্দা কিন্তু কিশোরটি নিজে ছিল কাফির ৷ খিযির (আ) বলেন, তাই আমি আশঙ্কা
করেছিলাম যে, তার প্রতি বাৎসল্যের কারণে পিতামাতা তার ধর্মের অনুসারী হয়ে পড়বেন ৷
এজন্যেই আমি চেয়েছিলাম যে, তাদেরকে প্রতিপালক যেন ওর পরিবর্তে এমন এক সন্তান দান
করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভ লবাসায ঘনিষ্ঠতর ৷ সাঈদ ইবন জুবায়র (ব ) এর
ধারণা, সম্ভানটি ছিল বালক, যেয়ে নয় ৷ দ উদ ইবন আবুআসিম (র) অসং খ্য তাফসীরকারের
থেকে বনাি করেন যে সম্ভানটি ছিল বালিকা ৷
আবদুর রাজ্জাক (র) আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (বা) সুত্রে এবং মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক (র)
উবাই ইবন কাব সুত্রে অন্যরুপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম যুহরী (র) আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ একদিন তিনি ও হুর
ইবন কায়স ইবন হাসন ফারাবী মুসা (আ)-এর সঙ্গী সম্পর্কে বিতর্কে রত ছিলেন ৷ ইবন
আব্বাস (রা) বলেন, তিনি ছিলেন খিযির (আ) ৷’ এমন সময় উবাই ইবন কাব (বা) তাদের
কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন ৷ ইবন আব্বাস (বা) ভীকে ডাকলেন এবং বললেন, আমি ও
আমার এই সঙ্গী মুসা (আ)-এর সঙ্গী সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি, ইা৷র সাথে সাক্ষাত করার
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৮৪
জন্যে মুসা (আ) আল্লাহ তাআলার নিকট পথের সন্ধান চেয়েছিলেন ৷ আপনি কি এ সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ (না) থেকে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যা ৷ এরপর হাদীসের বাকি অংশটুকু
বর্ণনা করেন ৷ হাদীসের বিস্তারিত বর্ণনা বিভিন্ন সনদ সহকারে সুরায়ে কাহাফের তাফসীরে আমি
বর্ণনা করেছি ৷ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর ৷
আয়াতাৎশ শুঙ্কেদ্বু এ উল্লেখিত ইয়ার্তীমদের সম্পর্কে সুহায়লী (র)
বলেন, ত ৷র৷ ছিল ক ৷শিহ-এর দুই ছেলে আসরাম ও সুরাইম ৷ আয়াতে উল্লেখিত কানৃয ( ড্রুাহ্র )
ছিল অর্থ স্বর্ণ ৷ এটা ইকরিমা (র)-এর অভিমত ৷ আবার আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (বা) বলেন,
-এর অর্থ হচ্ছে জ্ঞান ৷ অধিক গ্রহণীয় অভিমত অনুসারে এটার অর্থ হচ্ছে, জ্ঞানের বাণী
সম্বলিত একটি স্বর্ণের পাত ৷ বায্যার (র) আবুযর (রা)-এর সুত্রে একটি মারফু হাদীস বর্ণনা
করেন এবং বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা র্তার কিভাবে যে গ্লুদুহ্র-এর কথা
উল্লেখ করেছেন তা ছিল একটি নিরেট সোনার পাত ৷
তাতে লিখা ছিল :
অর্থাৎ “তকদীরে বিশ্বাসী লোক কী করে ব্যতিব্যস্ত হয়, সে জন্যে বিস্মিত হই, দোযখের
কথা মনে য়েখেও যে ব্যক্তি হাসতে পারে তার জন্যে আ ৷মি বিস্ময় বোধ করি; যে ব্যক্তি মৃত্যুর
কথা স্মরণে রেখেও লা ইলাহ৷ ইল্লা ৷ল্লাহ্ থেকে পাফিল থাকে, তর জন্য বিস্মিত রোধ করি ৷
অনুরুপভা বে হাসান বসরী (র) ও জাফর সাদেক (র) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ৷
আয়াতে উল্লেখিত এে ঞ্জীষ্টু বলতে কারো কারো সপ্তম পুব-পুরুষের, আবার কারো কারো
মতে দশম পুর্ব পুরুষের কথা বলা হয়েছে ৷ য ই হোক, এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ
পুণ বোন লোকের রং শধরদের হেফাজত করে থাকেন ৷
আয়াতাৎশ এব্লু দ্বু এর দ্বারা বোঝা যায় যে, খিযির (আ) নবী ছিলেন ৷ তিনি
নিজের থেকে কিছুই করেননি ৷ বরং যা করেছেন তার প্রতিপালকের নির্দোশই করেছেন ৷
সুতরাং তিনি নবী ছিলেন ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি একজন রাসুল ছিলেন ৷ আবার
কেউ কেউ বলেন, ’তিনি একজন ওলী ছিলেন ৷ ’ একটি বিরল মতে, তিনি একজন ফেরেশতা
ছিলেন ৷’ এর চাইতে আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে যে, কেউ কেউ বলেন, তিনি ফিরআউনের পুত্র
ছিলেন ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি ছিলেন যাহ্হাকের পুত্র যিনি হাজার বছর ধরে গোটা
পৃথিবীতে রাজতু করে গেছেন ৷ ’
ইবন জ বীর তাবারী (র) বলেন, কিতাবীদের অধিকাং শের অভিমত হচ্ছে, তিনি ছিলেন
আফরীদুনের যুগের লোক ৷ আরো কথিত আছে যে, তিনি ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ যুল-কারনায়নের
অগ্রগামী বাহিনীর সেনাপতি ৷ আর এ যুলকুরনায়নকেই কেউ কেউ আফরীদুন ও যুল ফারাস
বলে অভিহিত করেছেন ৷ তিনি ছিলেন, ইব্রাহীম খলীল (আ)-এর যুগের লোক ৷ কিতাবীরা
আরো মনে করেন যে, “তিনি আবে-হায়াত’ পান করে অমর হয়ে গেছেন এবং আজও তিনি
জীবিত আছেন ৷ ” কেউ কেউ বলেন, ইবরাহীম (আ)-এর প্রতি যারা ঈমান আনয়ন করেছিলেন
এবং রাবুবল শহর থেকে ইবরাহীম (আ) এর সাথে হিজরত করেছিলেন, তিনি তাদের কারোর
সন্তান ছিলেন ৷ ’ আবার কেউ কেউ ববুলন, তার নাম ছিল মাল্কান ৷ ’ কেউ কেউ বলেন, তার
নাম ছিল, আরমিয়া ইবন খাল্কিয়৷ ৷ ’ কেউ কেউ বলেন, লাহরাসিবুবর পুত্র সাবাসিবের আমবুল
তিনি একজন নবী ছিলেন ৷ ’ ইবন জারীর (র) বলেন, আফরীদুন ও সাবাসিবের মধ্যে
যুগ-য়ুগান্তবুরর ফারাক ছিল যা সম্পর্কে বংশ বৃত্তান্তের পারদশীবুদর কেউ অনবহিত থাকতে পারে
না ৷
ইবন জারীর (র) বলেন, বিশুদ্ধ অভিমত হল যে, তিনি আফরীদুনের যুগের লোক, যিনি
মুসা (আ)-এর যুগ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন ৷ মুসা (আ)-এর নবুওবুতর কাল ছিল মনুবুচবুহবুরর
আমল ৷ আর মনুবুচবুহর ছিলেন পারস্য সম্রাট আফরীদুনের পৌত্র এবং আবরাজের পুত্র ৷
পিতামহ আফরীদুনের পর যুবরাজ মনুবুচবুহর সম্রাট হন ৷ তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ ৷ তিনিই
প্রথম পরিখ৷ খনন করেছিলেন এবং তিনিই প্রথম প্রবুত্যক গ্রামে সর্দার নিযুক্ত করেছিলেন ৷ তার
রাজতুকাল প্রায় ১৫০ বছর পর্যন্ত বিন্তুত ছিল ৷ কথিত আছে যে, তিনি ছিলেন ইসহাক ইবন
ইবরাহীমের অধ৪স্তন বংশধর ৷ ত ৷র বহু বাগিাতাপুর্ণ সুন্দর সুন্দর বক্তৃতা ও উক্তির উল্লেখ পা ওয়া
যায়, যা শ্রোতৃবর্গকে বিস্ময়াভিভু৩ করে ৷ আর এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি ইবরাহীম খলীল
(আ) এর অধ৪স্তন বংশধর ছিলেন ৷ আল্লাহ্ই সর্বাধিক জ্ঞাত ৷
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন ং
স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তা আল৷ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, বুতামাবুদরবুক কিতাব
ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি আর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরুপে, যখন একজন
রাসুল আসবে তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং৩ তাকে সাহায্য করবুব ৷ তিনি
বললেন, তোমরা কি স্বীকা ৷র করবুলঃ (সুরা আল ইমরানঘ্র ৮১)
অন্য কথায়, আল্লাহ্ তা জানা প্রবুত্যক নবী থেকে অঙ্গীক৷ ৷র নিয়েছেন যে, তিনি ত ৷র পরে
আগত নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন ও তাকে সাহায্য করবুবন ৷ যদি রাসুলুল্লাহ (সা) এর
যমানায় খিযির (আ) জীবিত থাকবুতন, ৩াহবুল রসুলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য স্বীকার, তার
সাথে মিলিত হওয়া ও তার সাহায্য করা ব্যতীত খিযির (আ) এর কোন পতাম্ভর থাকত না ৷
তিনি অবশ্যই ঐসব লোকের অন্তর্ভুক্ত হবুতন যারা বদবুরর দিন রসুলুল্লাহ (সা ) এর পতাকাতবুল
সমবুবত হয়েছিলেন ৷ যেমনটি জিবরাঈল (আ) ও ফেবুরশত ৷বুদর সর্দড়ারগণ হয়েছিলেন ৷ কিত্রা
তিনি রাসুল ছিলেন-যা কেউ কেউ বলেছেন; অথবা তিনি বুফবুরশত৷ ছিলেন-যেমনি কেউ
কেউ উল্লেখ কবুরবুছন ৷ খিযির (আ) নবী ছিবুলন এবং এটিই সঠিক অভিমত ৷ তিনি যাই হয়ে
থাকুন না কেন, জিবরাঈল (আ) হবুচ্ছন ফেরেশতাবুদর সর্দার এবং মুসা (আ) মর্যাদার খিযির
রসুলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান আনা ও তার সাহায্য করা তবে জন্যেও অপরিহার্য হত ৷
এমতাবস্থায় খিযির (আ) যদি ওলীই হয়ে থাকেন যেমনি অনেকেই মনে করে থাকেন ৷ তবে
তার উম্মতভুক্ত হওয়াট৷ অধিকতর যুক্তিযুক্ত হতে তা ৷ কিন্তু কোন হাসান পর্যায়ের কিৎবা
নির্ত্যায়োগ্য দুর্বল হাদীসেও পাওয়া যায় না যে,৩ তিনি একদিনও রসুলুল্লাহ (সা )-এর দরবারে
হাবিব হয়েছিলেন কিৎব৷ তার সাথে মিলিত হয়েছিলেন ৷ এ সম্পর্কে হাকীম (র) কর্তৃক যে
ণ্শাকবাণী সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত রয়েছে, তার সুত্র খুবই দুর্বল ৷ পরবর্তীতে খিযির (আ) সম্বন্ধে
স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করা হবে ৷
মুসা (আ)এর কাহিনী সম্বলিত পরীক্ষার হাদীস
ইমাম আবু আবদুর রহমান নাসাঈ (র)৩ তার সুনানের’ কিতাবুত তাফসীরে কুরআন
মজীদের সুরায়ে তা-হার ৪০ নং আয়াতেব তাফসীরে বা ৷৷পরীক্ষর হাদীস
বর্ণনা করেন ৷
আয়াতটি হচ্ছে : —
“আর তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে; অতঃপর আমি তোমাকে দৃশ্চিস্তা হতে মুক্তি
নেই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করেছি ৷ আর সে হাদীসটি হচ্ছে নিম্নরুপ :
আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (র) হতে বর্ণিত ৷ তিনি সাঈদ ইবন জুবায়র (রা) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি একদিন আয়াতাৎশ -এর তাফসীর প্রসঙ্গেংইবন আব্বাস
(রা) কে প্রশ্ন করলেন, ফুতুন’ কি? আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (বা) বললেন , হে ইবন জুবায়র !
দিন ফুরিয়ে আসছে সম্বন্ধে একটি সুদীর্ঘ হাদীস রয়েছে ৷ বর্ণনাকারী বললেন, পরদিন
সকালে সে প্রতিশ্রুত ফুতুন সং ×ক্রান্ত হাদীসটি শোনার জন্যে আমি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস
(রা ) এর কাছে গেলাম ৷ তিনি বললেন : ইবরাহীম (আ) এর বংশে আল্লাহ তা আলা যে নবীগণ
ও রাজ-রাজড়ার উদ্ভব ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে ফিরআউন ও তার
পরামর্শদাতা ৷রা আলোচনায় বসে ৷৩ তাদের কেউ কেউ বলল, বনী ইসরাঈলরা এটা সম্বন্ধে কোন
সন্দেহ পোষণ করে না ৷ তাই তারা এটার জন্যে অপেক্ষা করছে ৷ তারা ধারণা করেছিল যে,
ইউসুফ ইবন ইয়াকুব (আ) সেই প্রতিশ্রুত নবী ৷ কিন্তু যখন তিনি ইনতিকাল করলেন, তখন
তারা বলল, ইব্রাহীম (আ)-কে এরুপ ওয়াদা দেয়৷ হয়নি ৷
ফিরআউন বলল, তোমাদের অভিমত কি? অতঃপর তারা পরামর্শ করল এবং এ কথার
উপর একমত হল যে, ফিরআউন কিছু সংখ্যক লোককে বড় বড় ছুরিসহ পাঠাবে ৷৩ তারা বনী
ইসরাঈলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে যখনই কে ৷ন ছেলে সন্তান পাবে, তখনই তাকে হত্যা করবে ৷ তারা
কিছুদিন য়াবত এরুপ করল ৷ অতঃপর যখন তার ৷ দেখল যে, বনী ইসরাঈলের বৃদ্ধরা মৃত্যুর
কারণে এবং ছোটরা হত্যার কারণে নিঃশে ৷ষ হয়ে যাচ্ছে, তখন তার ৷বলাবলি করতে লাগল যে,
এভাবে বনী ইসরাঈলরা ধ্বংস হয়ে গেলে যে সব দৈহিক শ্রম ও সেবার কাজ তারা করত তা
ভবিষ্যতে কিবভীদেরকে করতে হবে, তাই তারা পুনরায় স্থির করল যে, এক বছর প্রতিটি ছেলে
সন্তান হত্যা করা হবে এবং পরের বছর তাদের কাউকে হত্যা করা হবে না ৷ নবজাতকগুলো
বড় হয়ে বৃদ্ধদের মধ্যে বাবা মারা যাবে তাদের স্থান পুরণ করবে ৷ আর বৃদ্ধরা সংখ্যায় যাদের
জীবিত রাখা হচ্ছে, তাদের চেয়ে অধিক হবে না ৷ মােটকথা, প্রয়োজনীয় কর্মীদের সং থ্যা পুর্বের
মত থাকবে, তাতে হত্যার দ্বারা কোন প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না ৷ সুতরাং এই
সিদ্ধান্তে তারা একমত হল ৷ যে বছর নবজাতকদের হত্যা করা হয়ে না, সে বছরই মুসা
(আ) এর মা হারুন (আ) কে নিয়ে অন্তঃসত্ত্ব৷ হন এবং তিনি নিবিঘ্নে নবজা তক হারুন (আ কে
জন্ম দেন ৷ পরবর্তী বছর৩ তিনি মুস৷ (আ) কে গর্ভে ধারণ করেন ৷৩ তাই তার অম্ভরে ভীতি ও
দুশ্চিন্তার উদ্রেক হল ৷ ইবন আব্বাস (রা) বলেন, হে ইবন জুবায়র! এটা ছিল ফুতুন বা
পরীক্ষাসমুহের একটি ৷ মাতৃগর্ভে থাকতেই আল্লাহর ইচ্ছায় মুসা (আ)-কে এই পরীক্ষার সম্মুখীন
হতে হয় ৷
আল্লাহ্ তাআলা মুস৷ (আ)-এর মায়ের কাছে ইল্হাম করলেন যে, তুমি ভীত হয়ে না ও
চিম্ভাগ্রস্ত হবে না, আমি তাকে আবার তোমার কাছে ফেরত পাঠাব এবং তাকে রাসুলদের
অন্তর্ভুক্ত করব ৷ আল্লাহ তা আলা তখন তাকে নির্দেশ দিলেন যে, যখন তু৩মি ৷ ৩াকে প্রসব করবে
তখন তাকে একটি সিন্দুকে পুরে নদীতে ভাসিয়ে দেবে ৷ যখন তিনি মুসা (আ ) কে প্রসব করেন
তখন সে মতে কাজ করেন ৷ সন্তান যখন মার কাছ থেকে দুরে সরে গেল, তখন তার কাছে
শয়তান আগমন করল ৷ যা মনে মনে বলতে লাগলেন, হায়! আমার ছেলেকে আমি কী
করলাম ৷ যদি আমার সামনে ছেলেকে যবেহ্ করা হত, আমি তাকে দাফন-কড়াফন করতে
পারতাম ৷ তাহলে ছেলেটিকে সাগরের প্রাণী ও মাছের খাদ্য হিসেবে নদীতে ফেলে দেয়৷ থেকে
আমার কাছে অধিকতর প্রিয় হতো ৷ পা ৷নির স্রোত ৩সিন্দুকটিকে প্রায় নদীমুখে নিয়ে গেল, যেখান
থেকে ফিরআউনের ত্রীর বাদীরা পানি উঠিয়ে নিয়ে যেতে৷ ৷ যখন তারা সিন্দুকটি দেখতে পেল,
তখন এটাতার৷ উঠিয়ে নিল এবং খুলতে চাইল ৷ তাদের একজন বলল, এটার ভেতরে যদি
কোন সম্পদ থাকে আর আমরা এটা থুলি তাহলে এটাতে আমরা যা পাব ফিরআউনের শ্ৰী তা
বিশ্বাস নাও করতে পারেন ৷ সুতরাং তারা যেরুপ পেলো হুবহু যে অবস্থায় এটাকে
ফিরআউনের ব্রীর কাছে নিয়ে হাযির করল ৷ ফিরআউনের শ্ৰী যখন সিন্দুকটি খুললেন তাতে
একটি নবজা তক শিশুকে দেখতে গেলেন এবং তার অস্তরে শিশুটির প্রতি এক অভুতপুর্ব স্নেহের
উদ্রেক হল ৷ অন্যদিকে মুসা (আ)-এর মা অস্থির হয়ে পড়লেন এবং তার মনে শুধু মুসা
(আ)-এর স্মৃতিই ভাসতে লাগল ৷ জল্লাদেরা যখন এ নবজাতকটির কথা শুনতে পেল তখন তারা
তাকে যবেহ্ করার জন্যে ফিরআউনের ত্রীর কাছে ছবি নিয়ে ছুটে আসল ৷ আবদুল্লাহ ইবন
আব্বাস (রা) বললেন, হে ইবন জুবায়র এটাও ছিল সে ফুতু ন রা পরীক্ষড়াসমুহের অন্যতম ৷
ফিরআউনের শ্রী জল্লাদদের বললেন, ফিরআউন না আসা পর্যন্ত একে ছেড়ে দাও ৷ এই
একটি ছেলের জন্যে বনী ইসরাঈল সং থ্যায় বেড়ে যাবে না ৷ তিনি আসলে আমি তার কাছ
থেকে তাকে চেয়ে নেবো, যদি তিনি তা মঞ্জুর করেন, তাহলে এটা হয়ে তোমাদের একটা
চমৎকার কাজ, আর যদি তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দেন, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে আমার
কোন অভিযোগ থাকবে না ৷ তিনি তখন ফিরআউনের কাছে গেলেন এবং বললেন, এই শিশুটি
আমার ও আপনার চোখ জুড়াবে ৷ ফিরআউন বলল, তোমার জন্যে তা হতে পারে , কিন্তু আমার
জন্যে নয়, আমার এটার কো ন প্রয়োজন নেই ৷ বসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন যে পবিত্র সভার
শপথ যার শপথ গ্রহণ করা হয়ে যা কে, যদি ফিরআউন মুসা নবজাত তককে নয়ন প্রীতিকর রুপে
গ্রহণ করে নিত, যেমন৩ার শ্রী সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তাহলে তাকে আল্লাহ তা ৷আলা
সুপথ প্রদর্শন করতেন যেমন তা ৷র ত্রীকে করেছিলেন কিন্তু সে৩ তা থেকে বঞ্চিত থাকে ৷ সুতরাং
ফিরআউনের ত্রী৩ র আশে পাশের প্রতিটি মহিলার কাছে লোক প্রেরণ করে একজন ধাত্রী
তালাশ করতে লাগলেন ৷ কিভু যে মহিলাই তাকে দুধ পান করাতে আসে কারো স্তন নবজাতক
মুসা গ্রহণ করলেন না ৷ তাতে ফিরআউনের ত্রী আশংকা করতে লাগলেন যে, হয়তো এই
শিশুটি দুধ না থেয়ে মারাই যাবে ৷ তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন ৷
অতঃপর তিনি এ আমার তাকে বাজারে ও লোকালয়ে নিয়ে ৷:যতে নির্দেশ দিলেন যে,
হয়তো এই ধরনের কোন ধাত্রী পাওয়াও যাবে, যার স্তন শিশুটি গ্রহণ করবে ৷ কিন্তু শিশুটি
কারো স্তনই গ্রহণ করলেন ন ৷ অন্যদিকে মুসা জননী ব্যাকুল হয়ে মুসা ৷র বোনকে বললেন তার
পিছনে পিছনে যাও এবং ঘে৷ তো না ও যে, তার কোন সং বাদ পাওয়া যায় কিনা, সে জীবিত আছে
নাকি কোন জীব জন্তু৩ তাকে খেয়ে ফেলেছে ৷ আর এসময় তিনি তার সন্তান সম্পর্কে তার
প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতির কথাটি তুলেই বলেছিলেন ৷ দুর থেকে মুসা ৷ আ) এর বোন৩ার দিকে
লক্ষ্য রাখছিলেন, কিন্তু লোকজন টের পায়নি ৷ মুসার বোন দেখলেন, কোন ধাত্রীই মুসা
(আ)-কে দুধ পান করাতে পারছে না ৷ তখন তিনি অ৩ ন্তে খুশী হয়ে ধাত্রী অনেষণকারীদের
বলতে লাগলেন, আমি তে আমাদের এমন একটি পরিবারের সন্ধান দিতে পারি, বাবা তাকে
স্নেহ-মমতা দিয়ে সুচারুরুপে লালন-পালন করার দায়িত্ব নিতে পারে ৷ তারা সব সময়ই৩ ৷ র
হিতাকাভক্ষী হবে ৷ তারা বলতে লাগল, তুমি কেমন করে জানতে পারলে যে, তারা তার
হিতাকাডফী হবে,৩ তারা কি৩াকে চিহ্ন? এ ব্যাপারে তারা সন্দেহ করতে লাগল ৷ ইবন আব্বাস
(বা) বলেন, হে ইবনে জুবায়ব ! এটাও ছিল সে পরীক্ষা ৷সমুহের একটা৷
মুসার বোন বললেন, তারা তার হিতাকাভফী ও তার প্রতি সদয় ৷ কেননা, তারা সম্রাটের
শ্বশুর পক্ষের সত্তুষ্টি বিধান ও সম্রাটের কাছ থেকে উপকার লাভের আকাক্ষে৷ পোষণ করে ৷ তার
কথায় তারা মুগ্ধ হয়ে মুসার বোনকে তার মায়ের কাছে প্রেরণ করল ৷ তিনি মায়ের কাছে গিয়ে
এ সংবাদ দিলেন ৷ তখন তার মা আসলেন ৷ যখন তিনি তাকে আপন কােলে লে নিলেন,
তখন তিনি মায়ের স্তন চুষতে অ৩ারম্ভ করেন ও তৃপ্তিসহকাবে দুধ পান করেন ৷ তখন একজন
বাদদ তা ফিরআউনের শ্ৰীর কাছে গিয়ে এ সৃসং বাদ দিলেন যে, আমরা আপনার ছেলের
জন্যে ধা ৷ত্রী পেয়েছি ৷ ফিরআউনের ল্লী মা ও শিশুকে ডেকে পাঠান ৷ তারা তার কাছে গিয়ে
পৌছলেন ৷ তিনি যখন৩ার প্রতি শিশুটির আকর্ষণ লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি তাকে বললেন,
তুমি এখানে থেকে যাও এবং আমার এই সন্তানকে দুধ পান করাও ৷ কেননা, সে আমার কাছে
অতি প্রিয় ৷ মা বললেন, আমার সন্তানাদি ও বাড়িঘর ছেড়ে আমি এখানে থাকতে পারি না,
তাতে আমার সব কিছু বিনাশ হয়ে যাবে ৷ যদি আপনি ভাল মনে করেন, তাহলে তাকে আমার
কাছে সমর্পণ করতে পারেন, আমি তাকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে পারি ৷ সে আমার সাথে
থাকবে ৷ তার কল্যাণ সাধনে আমার কোন প্রকার ত্রুটি হবে না ৷ আমি আমার ঘরবাড়ি ও
সন্তানাদি ছেড়ে কোথাও থাকতে পারব না ৷ মুসার যা ঐ মুহুর্তে আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি স্মরণ
করে ফিরআউনের শ্ৰীর নিকট অনড় রইলেন এবং নিশ্চিত থাকলেন যে, আল্লাহ তাআলা
অবশ্যই তার প্রতিশ্রুতি পুরণ করবেন ৷
তারপর মুসার মা আপন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ৷ তখন থেকে আল্লাহ তাআলা মুসা
(আ) কে তার মায়ের তত্ত্বাবধানে অতি উত্তম রুপে লালন-পালন করতে লাগলেন এবং তাকে
ভাগ্য-নির্ধারিত পন্থায় তাকে হিফড়াজত করলেন ৷ ইতিপুর্বে বনী ইসরাঈল যেরুপ উপহাস ও
জুলুমের শিকার হচ্ছিল তা কিছুটা লাঘব হল এবং তারা শহরের এক প্রান্তে বসবাস করতে
লাগল ৷ মুসা (আ) যখন আরো বেড়ে উঠলেন, তখন একদিন ফিরআউনের শ্রী মুসার মাকে
বললেন, “ একদিন আমাকে তুমি আমার ছেলেটি দেখাবে ৷ ” মুসার মা ছেলেকে দেখাবার জন্যে
একটি দিন নির্ধারণ করেন ৷ এদিকে ফিরআউনের শ্রী খাজাধটী যাত্রী ও আমলাদেরকে নির্দেশ
দিলেন প্রত্যেকে যেন উপহারসহ তার পুত্র মুসা (আ)শ্কে সংবর্ধনা জানায় ৷ তিনি অন্য একজন
বিশ্বন্ত কর্মচারীকে পাঠালেন, যাতে তাদের মধ্যে কে কি উপহার দেয় তার হিসাব রাখে ৷
মুসা (আ) মায়ের বাড়ি থেকে বের হবার পর হতে ফিরআউনের শ্রীর কাছে পর্যন্ত আসার
পথে অসংখ্য উপহার ও উপটোকন লাভ করেন ৷ ফিরআউনের শ্রীর কাছে এসে পৌছলে তিনিও
তাকে উপচৌকনাদি প্রদান করলেন এবং অত্যন্ত খুশি হলেন মুসা (আ )-এর মাকেও তার
উত্তম সেবার জন্যে বহু টাকা-পযসা প্রদান করলেন ৷ অতঃপর তিনি বললেন, আমি মুসা
(আ)-কে নিয়ে ফিরআউনের কাছে যাবো, যাতে করে তিনিও তাকে উপচৌকন প্রদান করেন ও
তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন ৷ যখন ফিরআউনের শ্রী মুসা (আ)-কে নিয়ে তার কোলে তুলে দিলেন,
তখন মুসা ফিরআউনের দাড়ি ও মাটির দিকে আকর্ষণ করলেন ৷ তখন ফিরআউনকে আল্লাহর
শত্রু পথভ্রষ্ট পারিষদরা বলল, আপনার কি স্মরণ নেই যে, আল্লাহ তাআলা তার নবী ইবরাহীম
(আ)-কে কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ইবরাহীমের একজন
অধ৪স্তন বংশধর আপনার উত্তরাধিকারী হবেন ৷ তিনি আপনার উপর জয়লাভ করবেন ও
আপনাকে পরাজিত করবেন ৷ সুতরাং আপনি কসাই জল্লাদের নিকট কাউকে প্রেরণ করেন
যাতে তারা এসে তাকে হত্যা করে ফেলে ৷ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন, হে ইবন
জ্বরায়র ! এটাও ছিল একটা পরীক্ষা ৷
ফিরআউনের শ্রী একথা শুনে ফিরআউনের কাছে দৌড়ে আসলেন এবং বললেন যে, শিশুটি
আপনি আমাকে দান করেছেন, এর ব্যাপারে আপনার কী হয়েছে? ফিরআউন বলল, তুমি কি
দেখতে পাচ্ছ না যে, এই শিশুটির ধারণা সে আমাকে পরাস্ত করবে ও আমার উপর বিজয়ী
হয়ে ৷ ফিরআউনের শ্রী বললেন, আপনি বরং তাকে পরীক্ষা করুন ৷ চলুন আমরা এমন একটি
কাজ করি যা থেকে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে ৷ দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার ও দুটি মুক্তা তার সামনে
রেখে দিন যদি সে মুক্তা দু’টি ধরে এবং জ্বলন্ত অঙ্গার না ধরে, তাহলে বুঝতে হবে যে তার
বোধশক্তি আছে ৷ আর যদি জ্বলম্ভ অঙ্গার দু’টি ধরে এবং মুক্তা না ধরে, তাহলে বুঝতে হবে
তার এখনও বোধোদয় হয়নি ৷ কেননা বোধশক্তি সম্পন্ন কেউ মুক্তার উপর অঙ্গারকে অগ্রাধিকার
দিতে পারে না ৷ সে মতে দু’টি জ্বলম্ভ অঙ্গার ও দুটি মুক্তা তার সামনে রাখা হল ৷ তিনি জুলম্ভ
অঙ্গার ধরলেন ৷ ফিরআউন তার হাত পুড়ে যাবে এ ভয়ে তার হাত থেকে অঙ্গারগুলাে সরিয়ে
নিল ৷ ফিরআউনের শ্রী বললেন, আপনি কি লক্ষ্য করছেন না?
শিশু মুসা মুক্তা ধরার জন্যে ইচ্ছে করেছিলেন কিন্তু আল্লাহ তাআলা তা থেকে তাকে
ফিরিয়ে রাখলেন ৷ আল্লাহ তাআলা তার সিদ্ধান্ত কার্যকরী করেই থাকেন ৷ মুসা (আ) যখন
যৌবনে পদার্পণ করলেন, তখন ফিরআউন সম্প্রদায়ের কারো পক্ষে বনী ইসরাঈলের প্রতি
কােনরুপ জুলুম বা কটাক্ষ করার উপায় ছিল না ৷ এখন বনী ইসরাঈল পুরোপুরি বিরত থাকে ৷
একদিন মুসা (আ) শহরের এক প্রান্ত দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন, অমনি দেখলেন যে, দুইটি লোক
একে অপরের সাথে ঝগড়া করছে ৷ এদের একজন কিবতী ও অন্য একজন ইসরাঈলী ৷ মুসা
(আ) কে দেখে ইসরাঈলীটি তার কাছে কিবতীর বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করল ৷ তাতে মুসা (আ)
অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন ৷ কেননা, কিবতীটি ইসরাঈলীদের মধ্যে মুসা (আ) এর অবস্থান এবং তিনি
ইসরাঈলীদের হিফাজত করে থাকেন তা জানতো ৷ যদিও অন্য কারো তা জানা ছিল না ৷ তখন
মুসা (আ) কিবতীটিকে একটি ঘুষি দিলেন ৷ ফলে সে মারা গেল ৷ ইসরাঈলী ও আল্লাহ ব্যতীত
অন্য ৰুকউপ্লুই হভ্যুার ব্যাট্রুা৷রটি দেখতে পাদ্বুানি ৷ যখন লোকটি মারা :পল, তখন মুসা (আ)
বললেন,
অর্থাৎ-এটা শয়তানের কাণ্ডা সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রা ম্ভকারী ৷ (কাসাস : ১৫)
অতঃপর তিনি বলেন০ ং
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি৫ তা আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি ৷ সুতরা০
আমাকে ক্ষমা কর ৷ অতঃপর তাকে ক্ষমা করলেন ৷ তিনি৫ তা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷ সে
আরো বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, আমি কখনও
অপরাধীদের সাহায্যকারী হবে৷ না ৷ অতঃপর ভীত সতর্ক অবস্থায় সেই নগরীতে তার প্রভাত
হল ৷ (সুরা ক মাস : ১৬ ১৮)
ফিরআউনের কাছে তার সম্প্রদায় সং বাদ পৌছাল যে, বনী ইসরাঈলর৷ ফিরআউন
সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ৷ হে ফিরআউন ৷ আমাদের জন্য প্ৰতিশোধ গ্রহণ করুন
আমরা তাদেরকে ক্ষমা করব না ৷ ফিরআউন বলল, হত্যাকা ৷রীকে তোমরা খুজে বের করে দাও,
সাক্ষী উপস্থিত করে৷ ৷ কেননা, সম্রাট তার সম্প্রদায়কে ভালবাসলেও বিনা সাক্ষ্য প্রমাণে তাদের
জন্যে ক উকে হত্যা করা তার পক্ষে সমুচিত হবে না ৷ সুতরা০ তাকে ঘোজ করে বের কর;
আমি এর প্রতিশোধ নেব ৷৩ রতা৷ খুজতে লাগল কিন্তু তারা কোন প্রম৷ ৷ণ খুজে গেল না ৷ পরের
দিন মুসা (আ) উক্ত ইসরাঈলীকে দেখতে পেলেন, যে অন্য একজন কিবতীর সাথে ঝগড়া
করছে ৷ মুসা (আ)-কে দেখে সে পুর্বের দিনের মত কিবতীটির বিরুদ্ধে মুসা (আ )-এর কাছে
ফরিয়াদ করল ৷ মুসা (আ) অগ্রসর হলেন ৷ কিন্তু আগের দিন যেই ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্য
খুবই লজ্জিত ছিলেন এবং আজকের দৃশ্যও অপছন্দ করতে লাগলেন ৷ এদিকে ইসরাঈলীঢি খুবই
রাগাম্বিত হয়ে কিবভীকে আক্রমণ করতে উদ্বুাত হ্রলশু গতদিনের ও আজকের কাজের জন্য মুসা
(আ) ইসরাঈলীকে লক্ষ্য করে বললেনং :অর্থা ৷ৎ তুমি তো স্পষ্টই একজন
বিভ্রান্ত ব্যক্তি ৷
ইসরাঈলীটি মুসা (আ)-এর প্রতি তাকাল ৷ মুসা (আ)-এর কথা শুনে এবং আগের দিনের
ন্যায় রাগাম্বিত অবস্থায় দেখে সে ঘাবড়ে গেলো এবং ভর করতে লাগলো যে, তাকে স্পষ্টই
একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি বলার পর হয়ত মুসা (আ) তাকেই আক্রমণ করতে পারেন ৷ অথচ তিনি
কিবভীকে আক্রমণ করতেই উদ্যত ছিলেন ৷ ইসরাঈলীটি মুসা (আ) কে লক্ষ্য করে বলল : হে
মুসান্ গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাওন্
তাকে হত্যা করার জন্যে মুসা (আ) আক্রমণ করছেন ভেবেই যে এ কথাটি বলল ৷ ততক্ষণে
তারা দু’ জন ঝগড়৷ থেকে ক্ষান্ত হল ৷ কিন্তু কিবভীটি তার সম্প্রদায়ের কাছে ইসরাঈলীর মুখে
শোনা হত্যা তথ্যটি জা ৷নিয়ে দিল ৷ এই কথা শুনে ফিরআউন জল্লাদদের মুসা (আ)-কে হত্যার
জন্যে প্রেরণ করল ৷ ফিরআউন প্রেরিত জল্লাদরা রাজপথ ধরে ধীর গতিতে মুসা (আ)-এর
দিকে অগ্রসর হতে লাগল ৷ মুসা (আ) তাদের হাতছাড়া হয়ে গেল এরুপ কোন আশংকা তাদের
ছিল না ৷ অতঃপর মুসা (আ)-এর দলের একজন লোক শহরের প্রান্ত থেকে সংক্ষিপ্ত পথ ধরে
তাদের পুর্কেহ মুসা (আ)-এর কাছে পৌছে এ সংবাদটি দিল ৷ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা)
বলেন, হে ইবন জুবায়র (বা) ৷ মুসা (আ)-এর জন্য এটাও ছিল একটি পরীক্ষা ৷
মুসা (আ) তখন মাদায়ান শহরের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন ৷ ইতিপুর্বে মুসা (আ) এ
ধরনের কোন পরীক্ষার শিকার হননি এবং এ রাস্তায়ও চলাচল করেন নি ৷ কাজেই এই রাস্তা
ছিল তার অপরিচিত ৷ কিন্তু আল্লাহ তা জানার ওপর ছিল তার অগাধ বিশ্বাস ও অটল ভরসা ৷
তিনি বলেছিলেন করি আমার
প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করবেন ৷
এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে
অর্থাৎ যখন সে মাদায়ানের কুপের নিকট পৌছল, দেখল একদল লোক তাদের
পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং ওদের দুটি ত্রীলােক তাদের পশুগুলোকে আগলাচ্ছে অর্থাৎ
ছাগলগুলোকে ৷
মুসা (আ) তাদের দু’জ্যাকে বললেন, তোমাদের কী ব্যাপার ? তোমরা পৃথক হয়ে বসে আছ,
লোকজনের সাথে পশুগুলােকে পানি পান করাচ্ছনাঃ তারা দু’জন বললেন, জনতার ভিড় ঠেলার
শক্তি আমাদের নেই ৷ আমরা তাদের পান করাবার পর উচ্ছিষ্ট পানির অপেক্ষা করছি ৷ মুসা
(আ) তাদের দুজনের বকরীগুলােকে পানি পান করালেন ৷ তিনি বা ৷লতি দিয়ে এত বেশি পানি
উঠাতে সক্ষম হলেন যে, তিনিই রাখা ৷লদের অগ্রবর্তী হয়ে গেলেন ৷ এরপর দু’জন মহিলা তাদের
বকরীগুলো নিয়ে তাদের বৃদ্ধ পিতার কাছে ৫পীছৰুলন ৷ অন্যদিকে মুসা (আ) গাছের ছায়ায়
আশ্রয় নিলেন এ,
অর্থাৎ-“হে আমার প্রতিপালক ! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবে আমি তার কাঙ্গাল ৷
আজ বকরীগুলেড়াকে নিয়ে দেরি না করে দ্রুত পৌছায় তাদের পিতার কাছে কেমন কেমন
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৮৫-
ঠেকছিল ৷ তাই বললেনং আজকে তোমাদের ব্যাপার কী? তখন তারা দু জনেই মুসা (আ)
সম্বন্ধে তাদের পিতাকে অবহিত করল ৷ তাকে ডেকে আমার জন্যে পিতা একজনকে মুসা
(আ) এর কাছে পাঠালেন ৷ তাদের একজন মুসা (আ ) এর কাছে গিয়ে তাকে ডেকে আনলেন ৷
মুসা (অ ) যখন মহিলাদের পিতার সাথে আলোচনা করলেন, তখন তিনি মুসা (অ ) কে অভয়
দিয়ে বললেনং অর্থ ৎ মি জালিম সম্প্রদায়ের করল
হতে যেচে গিয়েছ ৷ আমাদের এখানে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের কোন কতৃতৃ নেই ৷ আমরা
তার বা জত্বে বাস করি না ৷
অর্থ ৎ “াদেব একজন বলল, হে পিতা! তুমি তাকে মজুর নিযুক্ত কর ৷ কারণ তোমার
মজুর হিসাবে উত্তম হয়ে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী-বিশ্বস্ত ৷” পিতাকে তার মর্যাদাবােধ্ সম্বন্ধে
জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য করল যে, তুমি কেমন করে জানলে যে, সে শক্তিশালী এবং আমানতদার ?
মেয়েটি বলল, তার শক্তির বিষয়ে প্রমাণ ৷এই যে, পানি পান করানোর ক্ষেত্রে বালতি টানার
ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী আমি কাউকে দেখিনি ৷ আমান দারীর বিষয়ে প্রমাণ এই
যে, আমি যখন তার কাছে গিয়ে পরিচয় দিলাম, খনত তিনি একবার আমার দিকে
তাকিয়েছিলেন ৷ যখন তিনি আচ করতে পারলেন আমি একজন মহিলা, তখন তিনি তার মাথা
নীচু করলেন ৷ আপনার সংবাদ তার কাছে না পৌছানাে পর্যন্ত তিনি আর মাথা উঠিয়ে
াকাননি ৷ অতঃপর আমাকে বললেন, তুমি আমার পেছনে চলবে এবং রাস্তার নির্দেশনা দেবে ৷
তার এ কাজের দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি আমানতদার ৷ পিতার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে
গেল, মেয়ের কথার সত্যতাও প্রমাণিত হল এবং মেয়ের বক্তব্য অনুযায়ী মুসা (আ) সম্বন্ধে তিনি
৷ ৩ার অভিমত নির্ধারণ করলেন ৷ তিনি তখন মুসা (আ ) কে উদ্দেশ করে বললেন :
আমি আমার এই কন্যা দৃটির একটি তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি
আট বছর আমার কাজ করবে ৷ যদি তুমি দশ বছর পুর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছে ৷ আমি তোমাকে
কষ্ট দিতে চাই না ৷ আল্লাহ চ ৷হেতোঙু মি আমাকে সদা ৷চারী পাবে ৷’ (সুরা কাসাস৪ ২৭)
তিনি এ প্রস্তাবে রাযী হলেন ৷ আট বছর কা জ করা ছিল মুসা (আ )-এর উপর অপরিহার্য ৷
আর দুই বছর ছিল তার পক্ষ থেকে অঙ্গীকার ৷ আল্লাহ তাআলা র্তাকে পুর্ণ দশ বছরের মেয়াদ
পালনের তাওফীক দেন ৷ সাঈদ ইবন জুবায়র (রা) বলেন, একদিন এক খৃক্টান পণ্ডিত আমার
সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, তৃমি কি জ৷ ন, মুসা (আ ) কো ন মেয়াদটি পুর্ণ করেছিলেনা তখন
আমি জানতাম না, তাই বললাম, না, আমি জানি না ৷ এরপর আমি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস
(রা) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং এ সম্পর্কে আমি তার সাথে আলোচনা করলাম ৷ তিনি
বললেন, তুমি কি জান না যে, আট বছর পুর্ণ করা আল্লাহর নবীর উপর ওয়াজিব ছিল ৷ তিনি
কােনক্রমেই তার থেকে কম করতে পারতেন না ৷ তুমি জেনে রেখ, আল্লাহ্ তাঅড়ালা মুসা
(আ) এর দ্বারা ওয়াদা মুতাবিক দশ বছরের মেয়াদ পুরণ করান ৷ অতঃপর আমি উক্ত খৃক্টানের
সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে সংবাদটি দিলাম, তখন সে বলল, তােমাকে এ ব্যাপারে যে সংবাদ
দিয়েছে সে কি তােমড়া থেকে বেশি জ্ঞানী?’ উত্তরে আমি বললড়াম, হীড়া, তিনি শ্রেষ্ঠ ও অগ্রগণ্য ৷ ’
মুসা (আ) যখন তার পরিবার নিয়ে রওয়ড়ানা হলেন, তখন আগুন, লাঠি ও হাতে র মু জিযা
প্রকাশিত হল যা আল্লাহ তা আলা কুরআনুল করীমে বর্ণনা করেছেন ৷ অতঃপর মুসা (আ)
নিহত ব্যক্তি ও মুখের জড়তা সম্পর্কে ফিরআউন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যে আশঙ্কা পোষণ
করতেন, সে সম্বন্ধে তিনি আল্লাহ্৩ তা আলার দরবারে ফরিয়াদ করেন ৷ মুখের জড়তা অনর্গল
কথাবার্তা বলার ব্যাপারে কিছুটা অম্ভরায় সৃষ্টি করত ৷ তাই তিনি তার প্রতিপালকের কাছে
প্রার্থনা করলেন যেন আল্লাহ্ তাআলা তার ভইি হারুনের মাধ্যমে তার সাহায্য করেন ৷ তার
পক্ষ থেকে হারুন (আ) প্রাঞ্জল ভাষায় জনগণের সাথে কথা বলেন, যেখানে মুসা (আ) তাদের
সাথে অনর্গল কথা বলতে অপারক ৷ আল্লাহ তাআলা তার দরখাস্ত মঞ্জুর করলেন ৷ তার মুখের
জড়তা দুর করে দিলেন, হড়ারুন (আ)-এর কাছে ওহী প্রেরণ করলেন ও তাকে হুকুম দিলেন যেন
তিনি তার ভাই মুসা (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন ৷ মুসা (আ) আপন লাঠিসহ ফিরে
আসলেন ৷ শেষ পর্যন্ত হড়ারুন (আ) এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয় ৷
অতঃপর দু’জন একত্রে ফিরঅড়াউনের কাছে গমন করলেন এবং তার ফটকে বহুক্ষণ ধরে
অপেক্ষা করলেন কিন্তু তাদেরকে অনুমতি দেয়া হল না ৷ কঠোর গোপনীয়তা ৷অবলম্বন করে
তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হল ৷৩ র্তারা বললেন, আমরা তোমার প্ৰতিপালকের দুত ৷
ফিরআউন বলল, তোমাদের প্রতিপালক কে? র্তারা তার উত্তর প্রদান করেন, যার বর্ণনা
কুরআনুল করীমে রয়েছে ৷ ফিরআউন বলল, তােমরা কী চাওস্তু’ প্রসঙ্গক্রমে সে ইতাবসরে
হত্যার কথাও উল্লেখ করল ৷ হত্যার ব্যাপারে ওযর পেশ করে মুসা (আ) বলেন, আমি চাই যে,
তুমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে যেতে দেবে ৷
ফিরআউন তা অস্বীকার করল এবং বলল, যদি তুমি সত্যবাদী হও৩ ড়াহলে কোন মুজিযা প্রদশ্নি
কর ৷ তখন তিনি তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন ৷ অমনি তা একটি বিরাট অজগরে পরিণত হল, যা
বিরাট হা মেলে ফিরআউনের দিকে দ্রুত ৩অগ্রসর হয় ৷ ফিরআউন যখন দেখল অজগরটি তার
দিকে আসর হচ্ছে, সে ভয় পেয়ে গেল এবং সিংহাসন থেকে লাফিয়ে পড়ল ৷ মুসা (আ)-এর
কাছে এটাকে ফিরিয়ে রাখার জন্যে ফরিয়াদ করতে লাগল ৷ তখন মুসা (আ) তা-ই করলেন ৷
অতঃপর মুসা (আ) তার হাত বগলের নীচ থেকে বের করলেন ৷ ফিরআউন এটাকে ওভ্রসমুজ্জ্বল
নির্দোষ ও শ্বেত রোগে আক্রান্ত নয় দেখতে পেল ৷ তিনি আবার হাত ভিতরে নিয়ে নিলেন ৷ এটা
অমনি পুর্বের রঙ ধারণ করল ৷ ফিরআউন যা দেখল তা নিয়ে তার পারিষদবর্গের সাথে
সলাপরামর্শ করল ৷ তখন তারা বলল :
এ দু’জন অবশ্যই জাদুকর, তারা চায় তাদের জাদু দ্বারা তােমাদেবকে তোমাদের দেশ
থেকে বের করে দিতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে ৷ ’
অর্থাৎ তোমাদের রাজতু এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দা থেকে তােমাদেরকে বিতাড়িত করতে ৷ এভাবে
মুসা (আ) যা চেয়েছিলেন ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গ তার কিছুই দিতে রাযী হল না ৷
পারিষদরা ফিরআউনকে পরামর্শ দিল, “আপনার রাজত্বে জাদুকরের অভাব নেই , কাজেই সকল
জাদুকর একত্রিত হবার জন্যে আপনি নির্দেশ দেন, যাতে তারা তাদের দু’জনের উপস্থাপিত
জাদুকে পরাজিত করতে পারে ৷ ” অতঃপর ফিরআউন বিভিন্ন শহরে জাদুকর সংগ্রহকারী পাঠাল ,
যাতে তারা উচুমানের জাদুকরদের ডেকে আসে ৷ যখন তারা ফিবআউরুনর কাছে আসল তখন
বলতে লাগল, কি দিয়ে তিনি জাদু দেখান? পারিষদবর্গ বলল, সাপ দিয়ে ৷ ’ তখন তারা বলল,
আল্লাহর শপথ, তাহলে তারা উতয়ে আমাদের উপর জয়লাভ করতে পারবে না ৷ কেননা,
পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যে আমাদের ন্যায় সাপ, রশি ও লাঠি দিয়ে আমাদের চাইতে
উত্তম জাদু দেখাতে পারে ৷ তবে যদি আমরা তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারি, তাহলে
আমাদের পুরস্কার কী হবে? ফিরআউন তাদেরকে বলল, তড়াহলে তোমরা আমার নৈকটা
লাভকারী ও বিশিষ্ট সভাষদবর্গের অন্তর্ভুক্ত হবে ৷ আর তোমরা যা চাইবে তা-ই আমি
তােমাদেরকে দেবাে ৷ এভাবে তারা ফিরআউন থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করল ও উৎসবের দিন
নির্ধারিত করল, যে দিন পুর্বাহে জনগণকে সমবেত করা হয়ে ৷
সাঈদ ইবন জুবায়র (বা) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (বা) আমার কাছে বর্ণনা করেন,
উৎসবের দিলেই আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আ)-কে ফিরআউন ও তার জাদুকরদের বিরুদ্ধে বিজয়
দান করেছিলেন ৷ আর সেই দিনটি ছিল আশুরার দিন ৷ যখন তারা একটি মাঠে সমবেত হলো,
তখন লোকজন বলাবলি করতে লাগল-চল, আজ আমরা তাদের এই প্রতিযোগিতা দেখার
জন্যে উপস্থিত হই এবং উপহাস ছলে বলতে লাগল, যদি নতুন জাদুকররা (মুসা ও হারুন)
জয়লাভ করে তাহলে আমরা তাদের অনুসরণ করবো ৷ জাদুকরপণ বলল, হে মুসা ! হয় তুমি
প্রথমে নিক্ষেপ কর, নতুবা আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি ৷ ’ মুসা (আ) বললেন, বরং তােমরাই
নিক্ষেপ কর ৷ ’ তখন তারা তাদের দড়ি ও লাঠি নিক্ষেপ করল ও বলতে লাগল, ফিরআউনের
ইযযতের শপথ, আমরাই জয়ী হব ৷ ’ মুসা (আ) তাদের জাদু প্রত্যক্ষ করলেন ও তাতে তিনি
তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলেন ৷ তার কাছে আল্লাহ্ তাআলা ওহী পাঠালেন , হে মুসা ৷
তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর ৷ ’ যখন তিনি তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন, তখন তা একটি বিরাট
অজগরে পরিণত হল, যা হা করে থাকে ৷ সে লাঠি ও দড়িগুলোকে একত্র মিশিয়ে সবগুলোকে
তার মুখে পুরতে লাগল ৷ এমনকি কোন লাঠি বা দড়িই অবশিষ্ট রইল না ৷ জাদুকররা যখন
ঘটনার যথার্থতা বুঝতে পারল, তখন তারা বলতে লাগল, মুসা (আ) এর ব্যাপারটি যদি জাদু
হত তাহলে আমাদের জাদুকে এটা কখনও গ্রাস করতে পারত না ৷ এটা নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ
তাআলার পক্ষ থেকে ৷ কারুফৌ আমরা আল্লাহ্ তাআলার প্রতি ও মুসা (আ) যা কিছু নিয়ে
এসেছেন তার প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করলাম, আমরা পুর্বে যা কিছু পাপ করেছি তার থেকে
তওবা করলাম ৷ ’ এভাবে আল্লাহ তা“আলা উক্ত জনপদে ফিরআউন ও তার পারিষদবশ্চেৰি শক্তি
চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দিলেন ৷
সত্য প্রতিষ্ঠিত হল এবং তাদের সমস্ত কার্যকলাপ মিথ্যা প্রতিপন্ন হল ৷ তারা পরাভুত হল ও
অপদস্থ হল ৷ অন্যদিকে ফিরআউনের শ্রী ছিন্ন বসন পরিহিতা অবস্থায় বের হলেন এবং
ফিরআউন ও ফিরআউনীদের বিরুদ্ধে মুসা (আ)-এর সাহায্যের জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ
করতে লাগলেন ৷ ফিরআউনের গোত্রের যারা তাকে (দখল তারা মনে করতে লাগল যে, তিনি
ফিরআউন ও ফিরআউনীদের জন্যে সহানুভুতি প্রদর্শনার্থে ছিন্ন বসন পারছেন ৷ আসলে তার
সমস্ত জ্যিড়া-ভাবনা ছিল মুসা (আ)-এর জন্যেই ৷ মুসা (আ)-এর সাথে কৃত ফিরআউনের মিথ্যা
প্রতিশ্রুতির বিষয়টি দীর্যায়িত হতে লাগল ৷ বনী ইসরাঈলকে মুসা (আ)-এর কাছে প্রত্যর্পণ
করার জন্যে যখনই ফিরআউন কোন নিদর্শন প্রদর্শন করার শর্ত আরোপ করতো এবং মুসা
(আ)-এর দু’আয় আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন প্রকাশিত হতো, তখনই ফিরআউন প্রতিশ্রুতি
ভঙ্গ করে বলতাে, হে মুসা ! তোমার প্রতিপালক কি এটা ব্যতীত অন্য একটি নিদর্শন আমাদের
জন্যে প্রদর্শন করার ক্ষমতা রাখেনঃ ’
এরুপ বার বার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে আল্লাহ তাআলা ফিরঅড়াউনের সম্প্রদায়ের
প্রতি স্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে পর্যায়ক্রমে ভুফান, পঙ্গপাল, উকুন , ভেক ও রক্ত আযাবরুগে
পাঠান ৷ প্রতেক্তকটি মুসীবত অবতীর্ণ হলে ফিরআউন মুসা (আ) এর কাছে ফরিয়াদ করত এবং
তা দুর করার জন্যে মুসা (আ)-কে অনুরোধ করত যে, মুসীবত দুর হয়ে গেলে সে বনী
ইসরাঈলকে মুসা (আ)-এর কাছে প্রতার্পণ করবে ৷ আবার যখনই মুসীবত দুর হয়ে যেত,
তারপর দিনই সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করত ৷ শেষ পর্যন্ত আপন সম্প্রদায়সহ উক্ত জনপদ ত্যাগ
করার জন্যে মুসা (আ)-এর প্রতি আল্লাহর নির্দেশ আসল ৷ মুসা (আ) তাদেরকে নিয়ে রাতের
বেলা রওয়ানা হয়ে পড়লেন ৷ প্রত্যুষে ফিরআউন টের পেল যে, বনী ইসরাঈলরা চলে গেছে ৷
তখন যে বিভিন্ন শহরে লোক পাঠাল এবং বিরাট এক সৈন্যদল নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করল ৷
এদিকে আল্লাহ তাআলা সমুদ্রকে হুকুম দিলেন, আমার বান্দা মুসা (আ) তোমাকে লাঠি দিয়ে
আঘাত করবে, তখন তুমি বারটি খণ্ডে খণ্ডিত হয়ে যাবে, যাতে মুসা ও তার সাথীরা নির্বিঘ্নে পার
হয়ে যেতে পারে ৷ অতঃপর তুমি ফিরআউন ও তার সাথীদেৱকে গ্রাস করে ফেলবে ৷
লাঠি দিয়ে সমুদ্রকে আঘাত করতে মুসা (আ) তুলে গেলেন ও সমুদ্রের পাড়ে পৌছে
গেলেন ৷ মুসা (আ) তার লাঠি দ্বারা আঘাত করবেন আর সে গাফিল থাকবে, যার কারণে সে
হবে আল্লাহ্ তাআলার কাছে নাফরমান এই ভয়ে সাগর উত্তাল ছিল ৷ যখন উভয় দল
পরস্পরকে দেখল ও নিকটবর্তী হল, মুসা (আ)-এর সাখিগণ তাকে বলল, আল্লাহ আপনার
প্রতিপালক, আল্লাহ তাআলা যা হুকুম করেন তাই করুন, নচেৎ আমরা ধরা পড়ে যার ৷ তিনি
মিথ্যা বলেননি এবং আপনিও আমাদেরকে মিথ্যা বলেননি ৷ মুসা (আ) বলেন, আমার
প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমি যখন সমুদ্রের কিনারায় আসর, তখন তা বার
ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে যাতে আমি নির্বিঘ্নে সমুদ্র পার হয়ে যেতে পারি ৷ অতঃপর লাঠির কথা
স্মরণে আসল, তখন তিনি আপন লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করলেন ৷ এরপর যখন ফিরআউনের
সেনাবাহিনীর অগ্রভাপ মুসা (আ)-এর সেনাবাহিনীর পশ্চাৎভাগের নিকটবর্তী হলো, সমুদ্র তার
প্রতিপালকের নির্দেশ অনুযায়ী ও মুসা (আ )-এর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বিভক্ত হয়ে গেল ৷ যখন
মুসা (আ) ও তার সাথিগণ সকলেই সমুদ্র পড়ার হলেন এবং ফিরআউন ও তার সাথীরা সমুদ্রে
প্রবেশ করল, নির্দেশ মোতাবেক সমুদ্র দু’দিক থেকে মিশে গিয়ে তাদের ডুবিয়ে দিল ৷ আবার
মুসা (আ) যখন পার হয়ে গেলেন, তখন তার সাথিগণ বলতে লাগল, আমাদের আশংকা হচ্ছে
ফিরআউন হয়তো ডুবেনি ৷ আমরা তার ধ্বংসের ব্যাপারে সুনিশ্চিত নই ৷
মুসা (আ) তার প্রতিপালকের কাছে এ ব্যাপারে দুআ করলেন ৷ ফলে আল্লাহ্ তাআলা
ফিরআউনের শরীর সমুদ্র থেকে বের করে দিলেন যাতে তারা ফিরআউনের ধ্বংসের ব্যাপারে
নিশ্চিত হল ৷ অতংপর বনী ইসরাঈলরা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে আগমন করলেন যাদের
ইবাদরু তর জন্যে প্রতিমা রয়েছে, তখন তারা মুসা (আ) কে বলতে লাগল :
তারা বলল, “হে মুসা ! তাদের দেবতার ন্যায় আমাদের জ্যনাও এক দেবতা গড়ে দাও ৷ ”
তিনি বললেন, তোমরা তো এক মুর্থ সম্প্রদায়, এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত
হবে এবং তারা বা করছে তাও অমুলক ৷” (সুরা আরাফ : ১৩৮)
অর্থাৎ হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা তো সমুদ্র পড়ার হওয়ার ব্যাপারটি নিজ চক্ষে প্রত্যক্ষ
করলে এবং নিজ কানেও শুনলে, যা তোমাদের পক্ষে আল্লাহ্র কুদরত অনুধাবন করার জানা
যথেষ্ট ৷
অতঃপর মুসা (আ) পথ চলতে লাগলেন এবং তাদেরকে নিয়ে অবতরণ করলেন ও বলতে
লাগলেন, তোমরা হারুন (আ)-এর আনুগত্য করবে ৷ কেননা, আল্লাহ্ তাআলা তাকে আমার
প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন ৷ আমি আমার প্রতিপালকের সমীপে যাচ্ছি এবং ত্রিশ দিন পর
আমি তোমাদের কাছে ফিরে আসর ৷ মুসা (আ) যখন তার প্রতিপালকের সাথে ত্রিশ দিনের
মধ্যে কথাবার্তা বলার ইচ্ছে করলেন ও ত্রিশ দিন-রাত রোযা রাখলেন, তখন তিনি রোযাদারের
মুখের গন্ধের ন্যায় গন্ধ অনুভব করলেন এবং আপন প্রতিপালকের সাথে এ গন্ধ নিয়ে কথাবার্তা
বলা অপছন্দনীয় মনে করলেন ৷ তাই মুসা (আ) একটি গাছের ডাল নিয়ে চিবালেন যাতে মুখের
দৃর্পন্ধ দুর হয়ে যায় ৷ মুসা (আ) যখন আল্পাহ্র সমীপে পৌছলেন, তখন তার প্রতিপালক তাকে
বললেন, তুমি ণ্রাযা কেন ভঙ্গ করলো অথচ কেন তিনি এরুপ করেছিলেন এ ব্যাপারে তিনিই
অধিক জ্ঞাত ছিলেন ৷ মুসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক ! সুগন্ধিযুক্ত মুখ নিয়ে ছাড়া
আপনার সাথে কথাবার্তা বলা আমার অপছন্দনীয় ছিল ৷ আল্লাহ্ তাআলা বললেন, হে মুসা
তুমি কি জান না, রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশকের গন্ধের চেয়ে শ্রেয়ঃ কারুআ তুমি ফেরত
যাও, আরো দশটি রােযা রাখ এবং তারপর আস ৷ ’ প্রতিপালক যা নির্দেশ দিলেন মুসা (আ)
তা-ই করলেন ৷
এদিকে মুসা (আ)-এর সম্প্রদায় যখন দেখতে পেল যে, মুসা (আ) নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ
ত্রিশদিনের মধ্যে ফেরত আসছেন না, এটা তাদের কাছে খুবই খারাপ লাগল ৷ হারুন (আ) বনী
ইসরাঈলদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা মিসর থেকে বের হয়ে এসেছ অথচ তোমাদের
কাছে ফিবআউন সম্প্রদায়ের দেয়া ও আমানতের প্রচুর বন্তু রয়েছে ৷ অনুরুপভাবে তোমাদেরও
প্রচুর বস্তু তাদের কাছে রয়েছে ৷ আমার মতামত হচ্ছে, তাদের কাছে তোমাদের যে পরিমাণ বস্তু
রয়েছে, যে পরিমাণ তোমরা হিসাব করে রেখে দিতে পার, তবে তাদের ধার দেয়৷ বস্তু
তোমাদের কাছে তাদের আমানর্তী বন্তু , আমি তোমাদের জন্য হালাল মনে করি না ৷ আর
আমরা তাদের কোন বন্তু তাদের কাছে ফেরত পাঠাতে পারছি না ৷ অন্যদিকে আমরা তাদের
কোন বন্তু নিজেরাও ভোগ করতে পারছি না ৷ হারুন (আ) একটি গর্ত খুড়তে হুকুম দিলেন,
যখন একটি বিরাট গর্ত খোড়া হল, তখন তিনি সম্প্রদায়ের সকলকে তাদের কাছে মজুদ
জিনিসপত্র ও অলংকারাদি গর্ভে নিক্ষেপ করতে আদেশ করলেন ৷ অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে
তা পুড়িয়ে দেয়৷ হল ৷ হারুন (আ) বললেন, এ সম্পদ আমাদেরও নয় এবং তাদেরও নয় ৷
সামিরী ছিল বনী ইসরাঈলের পড়শী এমন এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত যারা গরু পুজা করত ৷
সে বনী ইসরাঈলের লোক ছিল না ৷ মুসা (আ) ও বনী ইসরাঈলের সাথে সমুদ্র পাড়ি দেবার
সময় সে জিবরাঈলের যোটকীর পায়ের ধুল৷ দেখতে পেয়ে এক মুষ্টি তুলে নিয়েছিল ৷ এখন যে
হারুন (আ) এর কাছে গেল ৷ হারুন (আ) তাকে লক্ষ্য করে বললেন০ হে সামিরী! তোমার
মুষ্ঠির মধ্যে যা রয়েছেতু মি কি তা অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে না?’ সে সকলের অলক্ষেদ্র সেই ধুলা
মুঠোয় ধরে রেখেছিল ৷ সে বলল, এটাতাে সেই দুতের যে টকীব পায়ের ধুলা, যে আপনাদেরকে
সমুদ্র পার করিয়েছেন, তবে আমি এটাকে কিছুতেই নিক্ষেপ করব না, যতক্ষণ না আপনি
আল্পাহ্ তাআলার কাছে দু আ করেন যে, আমি যে কাজের জন্য এটাকে নিক্ষেপ করব সে
কাডইি যেন হয়ে যায় ৷ সে মতে তিনি দু আ করলেন এবং সে তা নিক্ষেপ করে বলল, আমি চা ৷ই
এগুলো যেন বাছুরে পরিণত হয়ে যায় ৷ ফলে গর্তের মধ্যে যত সােনা-দানা, সহায়-সম্পদ
অলংকারাদি তামা-লোহ৷ ইত্যাদি ছিল, একত্রিত হয়ে একটি বাছুরের আকার ধারণ করল ৷ যার
মধ্যখানট৷ ছিল ফাকা, তার মধ্যে প্রাণ ছিল না, ছিল শুধু গরুর ডাক ৷
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (বা) বলেন, আল্লাহ্র কসম, বাছুরটির কোন শব্দ ছিল না, বাতাস
তার পেছনের দিক্ দিয়ে ঢুকত এবং সামনের দিক্ দিয়ে বের হয়ে যেত ৷ এজন্য এক প্রকারের
শব্দ হত, বাছুরের নিজস্ব কো ন শব্দ ছিল না ৷ এই ঘটনার পর বনী ইসরা ঈল তিন তা ৷গে বিভক্ত
হয়ে পড়ল ৷ একদল বলল, হে সামিরী! এটা কি? তুমিই তে ৷ এটা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত
সামিরী বলল, এটা তোমাদের প্রতিপালক ৷ তবে মুসা (আ) পথ হারিয়ে ফেলেছেন ৷ অন্য
একদল বলল, যতক্ষণ না মুসা (আ) আমাদের কাছে ফিরে আসেন, আমরা এটাকে মিথ্যা
প্রতিপন্ন করব না ৷ এমনও তো হতে পারে যে, এটাই আমাদের প্ৰতিপালক তাই এটাকে
আমরা বিনষ্ট করলাম না আর এটা সম্বন্ধে আমরা বিপাকেও পড়লাম না ৷৩ তাই আমরা এটাকে
দেখে-শুনে রাখব ৷ আর যদি এটা আমাদের প্ৰতিপালক বলে প্রমাণিত না হয়, তাহলে এ
সম্পর্কে আমরা মুসা (আ) এর নির্দেশই মান্য করব ৷ অন্য একদল বলল, এটা শয়তানের কাজ,
এটা আমাদের প্রতিপালক নয়, এটাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি না, এটাকে আমরা সত্য বলে
গ্রহণও করি না ৷ বাছুরটি সম্বন্ধে সামিরী যা বলেছিল, তাকে তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তার
মিথ্যা দা ৷৩বিকোরা মিথ্যা বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করল ৷ হারুন (আ) তাদেরকে বললেন :
“হে আমার সম্প্রদায়! এটা দ্বারা৫ তা কেবল তােমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে ৷ তোমাদের
প্ৰতিপা লক দয়াময় ৷” এটা তোমাদের প্রতিপা ৷লক নয় ৷ তারা হারুন (আ )-কে প্রশ্ন করল, মুসা
(আ)-এর খবর কি? আমাদের সাথে ত্রিশদিনের ওয়াদা করে গিয়েছেন, তিনি তো আমাদের
সাথে কৃত ওয়াদা পুরণ করলেন না চল্লিশ দিন অতিক্রাম্ভ হয়ে গিয়েছে ৷ তাদের মধ্যে যারা
নির্বোধ, তারা বলল, মুসা (আ) তার প্রতিপালককে পাননি, তাই তিনি তাকে খুজে রেড়াচ্ছেন ৷
আল্লাহ্ তা আলা মুসা (আ) এর সাথে কথা বলার সময় তিনি তাকে বনী ইসরাঈলের মধ্যে
ৎঘটিত ব্যাপারসমুহ অবগত করেন ৷ তাতে মুসা (আ) অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও রাপাম্বিত ৩হয়ে নিজ
সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসেন ৷ এরপর তিনি তাদেরকে যা বললেন, তা কুরআনুল করীমে
উল্লেখিত হয়েছে ৷
মুসা (আ ) তার সহোদর হারুন (আ) এর কেশ ধরে আকর্ষণ করতে লাগলেন এবং রাগের
কারণে ফলকগুলাে ফেলে দেন ৷ তারপর তিনি তার সহোদরের ওমর গ্রহণ করে নিলেন এবং
তার জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন ৷ অতঃপর তিনি সামিরীর দিকে মনোযোগ
দিলেন এবং৩ তাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি এমনটি কেন করলো সামিরী বলল “আমি
জিবরাঈলের ঘোটকীর পায়ের এক মুঠে৷ ধুল৷ সঞ্চাহ করেছিলাম, আমি এটার অলৌকিক ক্ষমতা
অনুধাবন করেছিলাম এবং আপনাদের কাছে ছিল এটা অজানা বস্তু ৷ এরপর এটাকে নিক্ষেপ
করলাম এবং আমার মন এরুপ করাই আমার জন্য শোভন করেছিল ৷ মুসা (আ) বললেন, দৃর
হ’, তোর জীবদ্দশায় তোর জন্যে এটাই রইল যে, তুই বলবি, আমাকে কেউ ছুয়ে৷ না’ এবং
তোর জন্য রইল একটি নির্দিষ্ট কাল, তোর বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না ; তুই তোর সেই
ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পুজায় তুই রত ছিলে, আমরা এটাকে জ্বালিয়ে দেবই; অতঃপর
এটাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই ৷ ”
বলাবাহুল্য, এটা যদি উপাস্যই হত ৩তাহলে এটাকে এরুপ কেউ করতে পারত না ৷ এজন্যই
বনী ইসরাঈল এটাকে নিশ্চিতভাবে পরীক্ষা হিসেবে গণ্য করে ৷ আর যাদের মতামত হারুন
(আ) এর মতামতের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ ছিল তারা মহাথুশী হলো এবং নিজেদের সম্প্রদায়ের
উপকারার্থে মুসা (আ) কে লক্ষ্য করে তারা আরো বলল, হে মুসা (আ) ! আপনি আল্লাহ্
তাআলার কাছে প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আমাদের জন্যে তওবা করার নিমিত্তে একটি বিধি
ব্যবস্থা করেন, যা আমরা তা ৷ঞ্জাম দিলে, আমাদের কৃত পাপরাশির কাফ্ফার৷ হয়ে যায় ৷”
অতঃপর মুসা (আ)ত ৷র সম্প্রদায় থেকে সত্তরজন এমন লোককে এ কাজের জন্যে মনোনীত
করলেন, যারা ভাল কাজ সম্পাদনে ত্রুটি করে না এবং আল্লাহ্ তা জানার সাথে কাউকে শরীক
করে না, তাদের নিয়ে মুসা (আ) তওবার জন্যে চললেন ৷ অতঃপর ভুমিকম্প দেখা দিল ৷ আর
এতে আল্লাহ্র নবী, তার সম্প্রদায় ও মনোনীত লোকদের কাছে লজ্জিত হলেন এবং বলতে
লাপলেন, “হে আল্লাহ্ তাআলা! ইচ্ছে করলে তুমি তাদেরকে ও আমাকে এর পুর্বেই ধ্বংস করে
দিতে পারতে ৷ আমাদের মধ্যে যারা নির্বে৷ ধ, তাদের কৃতকর্মের জন্যে কি আমাদেরকে তুমি
ৎস করবেঃ” উত্তর আসল, তাদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে যাদের অম্ভরে বাছুরগ্রীতি রয়েছে
ও এটার প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে, তাই তাদেরকে নিয়ে ভুমি কেপে উঠেছিল ৷
আল্লাহ্৩ তা আলা ইরশাদ করেন০ :
“আমার দয়া-তা তো প্রত্যেক রস্তুতে ব্যাপ্ত ৷ সুতরাংাম এটা তাদের জন্যে নির্ধারিত
করব যারা তাক্ওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে, যারা অনুসরণ
করে বার্তাবাহক উমী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইঞ্জীল, যা তাদের কাছে আছে তাতে
লিপিবদ্ধ পায় ৷ (সুরা আরাফ : ১৫৬-১৫ ৭)
মুসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক আমার সম্প্রদায়ের জন্য আমি তােক্ট্রার কাছে
তওবা কবুলের দু আ করছি আর তুমি আমাকে বলছ, নিশ্চয়ই আমার রহমত এমন একটি
সম্প্রদায়ের জন্যে লিপিবদ্ধ করেছি যা তোমার সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন ৷ হায়া যদি তুমি আমার
জন্মকে আরো বিলম্ব করতে এবং আমাকে সেই রহমত তপ্রাপ্ত ব্যক্তির উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করতে
কতই না ভাল হত ! আল্লাহ তা আলা মুসা (আ)-কে বললেন, তাদের তওবা হচ্ছে তাদের মধ্য
হতে যে ব্যক্তি যার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তার পিতা বা সন্তান হোক না কেন সে তাকে তরবারি
দ্বারা হত্যা করবে ৷ কে নিহত হলো, এ ব্যাপারে কোন পরোয়া করবে না ৷ যাদের গুনাহ্ মুসা
(আ) ও হারুন (আ)-এর কাছে অজ্ঞাত থাকলেও আল্লাহ্ তাআলা তাদের পাপ সম্বন্ধে অবহিত
ছিলেন ৷ তারা নিজ নিজ পাপের কথাীকার করলো ও তাদেরকে যা করতে বলা হয়েছে তা
করলো ৷ তখন আল্লাহ তাআলা হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়কে মাফ করে দিলেন ৷
অতঃপর মুসা (আ) বনী ইসরাঈলদেরকে নিয়ে পবিত্র ভুমির দিকে অগ্রসর হলেন ৷ রাগ
থেমে যাবার পর তিনি ফলকগুলো কুড়িয়ে নিলেন এবং ফলকে লিখিত বিভিন্ন করণীয় কাজ
সম্পর্কে উম্মতদেরকে নির্দোা দিলেন ৷ এগুলো তাদের কাছে কঠিন মনে হতে লাগল এবং
এগুলোকে পুরোপুরিাীকার করে নিতে তারা আীকৃতি জ্ঞাপন করল ৷ তখন আল্লাহ্ তাআলা
তুর পাহাড় তাদের মাথার উপর চাদোয়ার মত উত্তোনিত করলেন ৷ পাহাড় তাদের নিকটবর্তী
হতে লাগল, এমনকি তারা ভয় করতে লাগল যে, তা তাদের মাথার উপর না পড়ে যায় ৷ তারা
একদিকে তাদের ডান হাতে কিতাবখানা ধরে রেখেছিল, অন্যদিকে গভীর মানাযােগ সহকারে
পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিল ৷৩ তারা ছিল পাহাড়ের পেছনে ৷ ভয় করছিল না জানি কখন
তাদের উপর তা পড়ে যায় ৷
অতঃপর তারা চলতে চলতে পবিত্র ভুমিতে পৌছে গেল এবং সেখানে তারা একটি শহর
পেল, যাতে রয়েছে একটি দুর্ধর্ষ জাতি ৷ তারা ছিল নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী ৷ তাদের
ফল-ফলাদি অত্যন্ত বৃহৎ আকারের ছিল বলে বর্ণনা করা হয়েছে ৷ রনী ইসরাঈলরা বলল, হে
মুসা ! এখানে রয়েছে একটি দৃর্দাম্ভ জাতি যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই,
যতক্ষণ পর্যন্ত এরা শহরে অবস্থান করবে আমরা তাতে প্রবেশ করব না ৷ যদি তারা বের হয়ে
যায় তাহলেই কেবল আমরা সেখানে প্রবেশ করব ৷ দৃর্দান্ত সম্প্রদায়টির মধ্য থেকে দুই ব্যক্তি
আল-ৰিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খ
যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করত; বললেন, আমরা মুসা (আ) এর প্রতি ঈমান এনেছি এবং
আমরা আমাদের সম্প্রদায় থেকে বেরিয়ে এসেছি ৷ তারা আরো বললেন, আমরা আমাদের
সম্প্রদায়ের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে সম্যক অবগত ৷ তোমরা তাদের বিরাট শরীর ও সংখ্যার
আধিক্য দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছো ৷ আসলে তাদের তে মন শক্তি সামর্থ্য নেই ৷ তোমরা
তাদের ফটক দিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা কর ৷ তোমরা তাতে প্রবেশ করতে পারলেই তাদের
উপর জয়ী হয়ে ৷ কেউ কেউ বলেন, যাদের উক্তি উপরে উল্লেখ করা হল, তারা হলেন মুসা
(আ)-এর সম্প্রদায়ের লোক ৷ অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা ভয় করছিল ৷
অ আল্লাহ্ তাআলা ইবশাদ করেন ং
“তারা বলল, হে মুসা ! তারা যতদিন সেখানে থাকবে, ত এন্নদিন আমরা সেখানে প্রবেশ
করবই না ৷ সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর ৷ আমরা এখানেই বসে
থাকর ৷ (৫ মায়িদা : ২৪) ৷
এরুপ বলে তারা মুসা (আ)-এর ক্রোধের উদ্রেক করল ৷ তিনি তাদের জন্য বদদুআ
করলেন, তাদেরকে ফাসিক’ বলে আখ্যায়িত করলেন ৷ এর আগে তিনি তাদের বিরুদ্ধে আর
বদদুআ করেননি ৷ কেননা, এখন তিনি তাদের মধ্যে পাপ এবং অবাধ্যত৷ দেখতে পেলেন , আর
আল্লাহ তাআলা তার বদদুআ কবুল করলেন এবছুআল্লাহ্ তাআলাও তাদেরকে ফাসিক বলে
আখ্যায়িত করলেন-যেমনটি মুসা (আ) করেছিলেন ৷ চল্লিশ বছরের জন্যে পবিত্র ভুমিতে
প্রবেশ তাদের জন্যে নিষিদ্ধ করে দিলেন ৷ যাতে৩ ৷ ৷রা পৃথিবীতে উদভ্রাস্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে ৷
সারাদিন ধরে তারা চলতে ই থাকবে ৷ তাদের কোন স্বস্তি নসীব হবে না ৷ অতঃপর আল্লাহ্
তা জানা সদয় হয়ে তাদের উপর তীহের ময়দানে মেঘের ছায়া দান করেন, তাদের জন্যে নানা
ও সালওয়৷ অবতীর্ণ করেন ৷ত তাদেরকে এমন পোশাক দান করেন বা না ছিড়ে, না ময়লা হয় ৷
তাদেরকে এমন একটি বর্ণাকৃতির পাথর দান করলেন এবং এটাকে লাঠি দ্বারা আঘাত করার
জন্য মুসা (আ)-কে নির্দেশ দিলেন ৷ ফলে পাথর থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল ৷ প্রতি দিকে
তিনটি করে প্রস্রবণ অব ত ছিল, তাদের প্রতিটি গোত্র নিজ নিজ প্রস্রবণের পরিচয় পেয়ে
গেল ৷ তারা নিজ নিজ প্রস্রবণ থেকে পানি পান করতো ৷ আবার তারা যখন এক জায়গা থেকে
অন্য জায়গায় যেত, সেখানেই এই পাথরঢিকে পুর্বদিনের অবস্থানে পেত ৷
উপরোক্ত হাদীসটি মারকু বলে ইবন আব্বাস (রা) উল্লেখ করেছেন ৷ আমার মতে এটাই
যথার্থ ৷ কেননা, একদা মুআবিয়া (রা) ইবন আব্বাস (আ) থেকে শোনার পর মুসা (আ) কর্তৃক
নিহত ব্যক্তিটি সম্বন্ধে ফিরআউনীকে তথ্য প্রকাশকারী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন ৷ তিনি
বলেন, এ ব্যাপারে ফিরআউন বংশীয় লোকটির আমার কোন উপায়ই ছিল না ৷ জানতে৷ কেবল
ইসরাঈলীটি, যে সেখানে উপস্থিত ছিল ৷ তাহলে ফিরআউনী ব্যক্তিটি কেমন করে এ তথ্য
প্রকাশ করতে পারাে তার এই উক্তি শুনে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) রাগান্বিত হলেন এবং
মুআবিয়৷ (রা) এর হাত ধরলেন ও তাকে নিয়ে সা’দ ইবন মালিক যুহরী (রা ) এর কাছে পেলেন
এবং তাকে বললেন, হে আবু ইসহাক ৷ আপনার কি ঐ দিনটির কথা মনে পড়ে? যেদিন
রাসুলুল্পাহ্ (সা) মুসা (আ) কর্তৃক নিহত ফিরআউন সম্প্রদায়ের লোকটি সম্বন্ধে বর্ণনা
করেছিলেন? তথ্যটি ইসরাঈলীঢি প্রকাশ করেছিল, না-কি ফিরআউনী? জবাবে তিনি
বলেছিলেন, এই তথ্যটি প্রকাশ করেছিল ফিরআউনী ৷ তবে যে এটা শুনেছিল ইসরাঈলী থেকে,
যে এ ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছিল ও এটা উল্লেখ করেছিল ৷
ইমাম নাসাঈ (র)-ও অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন ৷ ইবন জারীর তড়াবারী (র) ও ইবন আবু
হাতিম (র) র্তাদের তাফসীরে এরুপ হাদীসের উল্লেখ করেছেন ৷ তবে এ হাদীসটি মরকু না হয়ে
মওকুফ হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক ৷ এ বর্ণনার অধিকাৎশই ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে গৃহীত ৷ এতে
কিছু কিছু অংশ এমনও রয়েছে যা সন্দেহমুক্ত নয় ৷ আমি আমার উস্তাদ হাফিজ আবুল হাজ্জাজ
মযী (র) থেকে শুনেছি ৷ তিনি বলেন, এটা ইহুদী আলিমদের বর্ণনা হওয়ার সন্তাবনাই অধিক ৷
আল্লাহই সর্বজ্ঞ ৷
র্তাবু ষ্াম্বুজের নির্মাণ প্রসঙ্গ
কিতড়াবীরা বলে, আল্লাহ্ তড়াআলা একবার মুসা (আ)-কে শিমশার কাঠ, পশুর চামড়া ও
ভেড়ার পশমের দ্বারা একটি র্তাবু তৈরি করতে নির্দেশ দিলেন ৷ তাদের বিস্তারিত বর্ণনা অনুযায়ী
রঙিন রেশম,ার্ণ ও রৌপ্য দ্বারা এটাকে সজ্জিত করার হুকৃম দেয়া হয়েছিল ৷ এতে ছিল ১০টি
শামিয়ানা ৷ প্রতিটি শামিয়ানার দৈর্ঘ ছিল ২৮ হাত ও প্রস্থ ছিল : হাত ৷ এতে ছিল ৪টি দরজা ৷
এর রশিগুলো ছিল বিভিন্ন প্রকার ও বিভিন্ন বর্ণের রেশমের, এতে এর চৌকাঠ এবং তাক ছিল
ার্ণ-রৌপের ৷ প্রতিটি কোণে ছিল ২টি দরজা, এছাড়া আরো অনেক বড় বড় দরজা ছিল ৷ এর
পর্দাগুলো ছিল রঙিন রেশমের ৷
এ ধরনের বহু সাজসজ্জার সামগ্রী ছিল, যার ফিরিস্তি ছিল দীর্ঘ ৷ আল্লাহ্ তড়াআলা মুসা
(আ)-কে শিমশার কাঠের একটি সিন্দুকও তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ যার দৈর্ঘ আড়াই
হাত এবং প্রস্থ দুই হাত এবং উচ্চতা ছিল দেড় হাত ৷ ভিতরে ও বাইরে র্খাটিার্ণ দ্বারা
মোড়ানাে, এটার চার কোণে ছিল চারটি আঙটা, সম্মুখ ভাগের দুই দিকে ছিল চারটি আঙটা;
সম্মুখ ভাগের দুই দিক ছিলার্ণের পাখাবিশিষ্ট ৷ তাদের ধারণায় দুইজন ফেরেশতড়ার মুর্তি
যেগুলো মুখোমুখিভাবে স্থাপিত ছিল ৷ এগুলো ছিল বাসলিয়াল নামক এক প্রসিদ্ধ শিল্পীর তৈরি ৷
তারা তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শিমশার কাঠের একটি খাঞ্চা তৈরি করতে যার দৈর্ঘ দুই হাত ও
প্রস্থ ছিল দেড় হাত ৷ এতে ছিল উপরের ডালায়ার্ণের তালা ওার্ণের মুকুট ; এর চতুর্দিকে ছিল
চারটি আঙটা যেগুলোর কিনারাগুলো ছিল সোনা দিয়ে মোড়ানাে, আনারের ন্যায় কাঠের তৈরি ৷
তড়ারা তাকে নির্দেশ দেন, তিনি যেন থাঞ্চাটিতে বড় বড় বরতন; পেয়ালা ও গ্লাসের ব্যবস্থা
করেন ৷ তিনি যেনার্ণের মিনারা তৈরি করেন যাতে প্রতি দিকে তিনটি করে ৬টি সোনার
আলোক স্তম্ভ থাকে, আবার প্রতিটি স্তস্তে যেন ৩টি করে বাতি থাকে ৷ আর মিনারের মধ্যে যেন
চারটি ঝাড় বাতি থাকে ৷ এগুলো এবং অন্যান্য পানপাত্র যেনার্ণ দ্বারা নির্মিত হয় ৷ এ সবই
ছিল বাসলিয়ালের তৈরী ৷ বাসলিয়াল পশু যবাইর বেদীও তৈরী করে ৷ উপরোক্ত র্তাবৃটি তাদের
বছরের প্রথম দিন স্থাপন করা হয় ৷ আর সেই দিনটি ছিল বসন্ত ঋতৃর প্রথম দিন ৷ আবার
শাহাদতের তাবুত’ও এতে স্থাপন করা হয়েছিল ৷ সম্ভবত কুরআনুল করীমে নিম্নোক্ত আয়াতে
এর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে ৷
সিন্দুক) আসবে, যাতে তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে চিত্ত প্রশান্তি এবং মুসা ও হারুন
বংশীয়গণ যা পরিত্যাগ করেছে তার অবশিষ্টাত্শ থাকবে; ফেরেশতাগণ এটা বহন করে
আনবে ৷ তোমরা মুমিন হও, তবে অবশ্যই তোমাদের জন্য এটাতে নিদর্শন রয়েছে ৷” (সুরা
বাকারা : ২৪ ৮)
ইসরাঈলী কিভাবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে ৷ এতে রয়েছে তাদের শরীয়ত ,
তাদের জন্যে নির্দেশাবলী, তাদের কুরবানীর বৈশিষ্ট্য ও নিয়ম-পদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনা ৷
আবার এতে বর্ণিত রয়েছে যে, তার গম্বুজ তাদের বাছুর পুজার পুর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৷ আর
বাছুর পুজার ব্যপারটি ঘটেছিল তাদের বায়তুল মুকাদ্দাসে আগমনের পুর্বে ৷ আবার এটা ছিল
তাদের কাছে কারা শরীফ তুলা ৷ তারা এটার ভিতরে ও এটার দিকে মুখ করে প্রার্থনা করত
এবং এটার কারুইে আল্লাহ তাআলার ভৈনকট্য লাভের আশা করত ৷ মুসা (আ) যখন এটার
ভিতরে প্রবেশ করতেন, তখন বনী ইসরাঈলরা এর পাশে দণ্ডায়মান থাকত ৷ এটার দ্বারপ্রান্তেই
মেঘমালার ৫জ্যাতির্ময় স্তম্ভ অবতীর্ণ হত ৷ তখন তারা আল্লাহ্ তাআলার উদ্দেশে সিজদায়
লুটিয়ে পড়ত ৷ আল্লাহ তাআলা মেঘমালার স্তন্তের ভেতর থেকে মুসা (আ)-এর সাথে কথা
বলতেন ৷ মেঘমালড়াটি ছিল আল্লাহ তাআলার নুর ৷ আল্লাহ তড়াআলা মুসা (আ)-কে লক্ষ্য করে
একান্তে কথা বলতেন ৷ তার প্রতি আদেশ-নিষেধ অবতীর্ণ করতেন এবং মুসা (আ) তাবুতের
কাছে দণ্ডায়মান থাকতেন ও পুর্বোক্ত মুর্তি দুইটির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করতেন ৷ ঐ সময়
শাসন সংক্রান্ত ফয়সালাদি আসভাে ৷ ইবাদতথানায় স্বর্ণ, রঙিন মুক্তার ব্যবহার তাদের শরীয়তে
বৈধ ছিল ৷ কিন্তু আমাদের শরীয়তে বৈধ নয় ৷ আমাদের শরীয়তে মসজিদে জাকজমকপুর্ণ
অলংকরণ নিষিদ্ধ, যাতে সালাতে মুসল্লীদের মনোযোগ বিখ্রিত না হয় ৷ মসজিদুন নববী
সম্প্রসারণের সময় উমর ইবন থাত্তাব (রা) নির্মাণ কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিকে বললেন, এমনভাবে
মসজিদটি নির্মাণ কর যাতে বেশি বেশি লোকের জায়গা হয় ৷ তবে মসজিদকে লাল কিত্বা
হলদে বং করা থেকে বিরত থাকো ৷ কেননা, তাতে মুসল্লীগণের একাগ্রতা বিয়িত হবে ৷
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের মসজিদসমুহ এমনভাবে
সাজাবাে যেরুপ ইয়াহুদ ও নাসারাগণ তাদের গির্জা ও ইবাদতখানাগুলােকে সাজায় ৷ এটা হবে
মসজিদের ইজ্জত-সম্মান ও পবিত্রতড়া রক্ষার উদ্দেশ্যে ৷ কেননা, এই উম্মত পুর্বেকার উম্মতের
মত নয় ৷ তাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাদের সালাতে আল্লাহ তাআলার প্রতি একনিষ্ঠ ও
মনােযোগী হবার, গাইরুল্লাহ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখার, এমনকি অন্য সকল চিন্তা ও
ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থেকে শুধু আল্লাহ তাআলার দিকে একাগ্রচিত্ত হবার নির্দেশ দিয়েছেন ৷
আল্লাহর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা ৷
উপরোক্ত র্তাবু গম্বুজ’৩ ভীহ্ প্রাতরে বনী ইসরাঈলদের সাথে ছিল, তারা এটার দিকে মুখ
করে সালাত আদায় করত ৷ এটা ছিলত তাদের কিবলা ও কা’ বা এবং মুসা (আ) ছিলেন তাদের
ইমাম আর তার ভাই হারুন (আ) ছিলেন কুরবানীর দায়িতুপ্রাপ্ত ৷ যখন হারুন (আ) এবং
তারপর মুসা (আ) ইন্তিকাল করলেন, তখন হারুন (আ) এর বং শধররা নিজেদের মধ্যে
কুরবানী প্রথা চালু রাখেন এবং এটা আজ পর্যন্তও তাদের মধ্যে চালু রয়েছে ৷ মুসা (আ) এরপর
তার খাদেম ইউশা ইবন নুন (আ) রিসালাতসহ সমস্ত কাজের দায়িতৃভা র গ্রহণ করেন এবং
তিনি তাদেরকে নিয়ে বায়তুল ঘুকাদ্দাসে প্রবেশ করেন ৷ এ ঘটনাটি পরে বর্ণনা কর হবে ৷
মােদ্দা কথা, বায়তুল মুকাদ্দাসের নিয়ন্ত্রণভার যখন ইউশা ইবন নুন (আ) এর উপর ন্যস্ত
হল, তখন তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের একটি পাথরের উপর এইত ইাবু পম্বুজটি স্থাপন করেন ৷
বনী ইসরাঈলরা এটার দিকে মুখ করে সালড়াত আদায় করত ৷ অতঘ্র পর যখন তাবু গম্বুজটি বিনষ্ট
হয়ে যায় তখন তারা গম্বুজের স্থান অর্থাৎ পাথরের দিকেই সালাত আদায় করতে লাগল ৷ এ
জন্যেই ইউশা (আ)-এর পর থেকে রাসুলুল্লাহ (না)-এর যুগ পর্যন্ত সমস্ত নবীর কিবলা ছিল
এটা ই ৷ এমনকি রাসুলুল্লাহ্ (সা)ও হিজবতের পুর্বে বায়তৃল মুকাদ্দাসেব দিকে মুখ করে সালাত
আদায় করতেন, তবে ক বারীফকে সামনে রেখেই তা করতেন ৷ রাসুল (সা) যখন মদীনায়
হিজরত করেন, তখন তাকে বায়তৃল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করার নির্দেশ
দেয়া হয় এবং ষোল মাস মতান্তরে সতের মাস তিনি বায়তৃল ঘুকাদ্দাসেব দিকে মুখ করে
সালাত আদায় করেন ৷ অতঃপর দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে আসরেব নামাযে মতান্তরে
জোহরের সময় ইবরাহীমী কিবলা কা বার দিকে কিবলা পরিবর্তিত হয় ৷৩ তাফসীরে এ সম্পর্কে
নিম্ন বর্ণিত আয়াতের ব্যাখায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে ৷
আল্লাহ তা অ ৷লা ইরশাদ করেন :
,
নির্বোধ লোকেরা বলবে যে, তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল এটা হতে
কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বল, পুর্ব ও পশ্চিম অ ল্লাহবই ৷ তিনি যাকে ইচ্ছে সরল পথে
পরিচালিত করেন ৷ আকাশের দিকে তোমার বার বার তাকানােকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করি ৷
সুতরাং তোমাকে অবশ্যই এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ কর ৷ অতএব,
তুমি মসজিদৃল হারমের দিকে মুখ ফিরাও ৷ তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেদিকে মুখ
ফিরাও ৷ (সুরা বাকারা : ১৪২ ও ১৪৪)
মুসা (আ) এয় সাথে কারুনের ঘটনা
আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেনঃ
কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল ৷ আমি
তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের
পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল ৷ স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করবে না, নিশ্চয় আল্লাহ
দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না ৷ আল্লাহ্ যা তোমাকে দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের আবাস