জিবরাঈল ফেরেশতা রয়েছেন ৷ আচ্ছা, তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে ? তারা উত্তর দিল
যে, তার সাথীদের নিকট কমনীয় ও রমণীয় বিষয়গুলােকে আমরা চিত্তাকর্ষক ও সুসজ্জিত করে
রাখব এবং ওগুলোকে তাদের নিকট মােহনীয় করে তুলব ৷ এবার ইবলীস বলল, ঠিক আছে,
তাহলে আমি নিরাশ হব না ৷
ওয়াকিদী বলেন, তালহা ইবন আমর আবদুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
বলেছেন, যে দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন, সেদিন শয়তানদেরকে আকাশে যেতে
বধো দেয়া হল এবং তাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হল ৷ তখন শয়তানরা ইবলীসের নিকট
গিয়ে উপস্থিত হয় এবং ওই ঘটনা তাকে জানায় ৷ তখন সে বলে, আসলে নতুন একটি ঘটনা
ঘটেছে ৷ ইসরাঈলীদের নির্গমন স্থলে পবিত্র ভুমিতে তোমাদের প্রতি একজন নবী প্রেরিত
হয়েছেন ৷ তার খোজে শয়তানরা সিরিয়ায় যায় ৷ কিন্তু সেখানে তাকে না পেয়ে তারা ইবলীসের
নিকট ফিরে এসে বলে, ওখানে তিনি সেই ৷ ইবলীস বলল, ঠিক আছে, আমি নিজে তাকে খুজে
বের করব ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর খোজে সে মক্কায় গমন করে ৷ যে তাকে দেখতে পায় যে,
তিনি হেরা গুহায় অবতরণ করছেন ৷ তার সাথে রয়েছেন ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) ৷ সে তার
শিষ্যদের নিকট ফিরে আসে ৷ তাদের উদ্দেশ্যে সে বলে, আহমদ (সা) নবীরুপে প্রেরিত
হয়েছেন, তার সাথে রয়েছেন জিবরাঈল (আ) ৷ তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে ? তারা
সমন্বয়ে উত্তর দিল যে, আমাদের নিকট আছে দুনিয়া ৷ এটিকে আমরা মানব জাতির নিকট
চাকচিক্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলব ৷ যে বলল, ঠিক আছে, তবে তাই কর ৷
ওয়াকিদী (র) বলেন, তালহা ইবন আমর ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বলেছেন,
শয়তানরা আড়ি পেতে ওহী শ্রবণ করত ৷ মুহাম্মাদ (সা) যখন নবুওয়াত লাভ করলেন, তারা
ওহী শ্রবণে বাধা প্রাপ্ত হল ৷ ইবলীসের নিকট তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেশ করে ৷ সে বলে,
নিশ্চয়ই কোন নতুন ঘটনা ঘটেছে ৷ সে আবু কুবায়স পাহাড়ে উঠল ৷ এটি পৃথিবীর আদি
পাহাড় ৷ ওখান থেকে সে দেখতে পেল যে, রাসুলুল্পাহ্ (সা) মাকামে ইবরাহীমের পেছনে নামায
আদায় করছেন ৷ সে বলল, আমি গিয়ে তার ঘাড় মটকে দিই ৷ রাগে গরগর করতে করতে সে
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট যায় ৷ তার নিকট তখন হযরত জিবরাঈল (আ) ছিলেন ৷
হযরত জিবরাঈল (আ) তখন ইবলীসকে এমন একটি লাথি নামের যে , সে দুরে বহুদুরে
গিয়ে ছিটকে পড়ল এবং পালিয়ে প্রাণ র্বাচাল ৷ অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, জিবরাঈল (আ)
তাকে এমন সজােরে লাথি যেরেছিলেন যে, সে এডেন অঞ্চলে গিয়ে পড়েছিল ৷
রাসুলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে ?
হযরত জিবরাঈল (আ) প্রথমবার কোন অবস্থায় এসেছিলেন তা ইতোপুর্বে আলোচিত
হয়েছে ৷ দ্বিতীয়বার কেমন অবস্থায় এসেছিলেন তাও আলোচনা করা হয়েছে ৷ মালিক (র)
হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হারিছ ইবন হিশাম রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে
জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনার নিকট ওহী আসে কেমন করে ? উত্তরে তিনি
বলেছিলেন, কখনো আসে ঘন্টাধ্বনির ন্যায় ৷ এটি আমার জন্যে খুবই কষ্টকর হয় ৷ এরপর ওই
পরিস্থিতি কেটে যায় আর যা নাযিল হল আমি তা সংরক্ষণ করি ৷ কখনো কখনো ওই ফেরেশতা
আমার নিকট আসেন মানুষের রুপ ধরে ৷ তিনি সরাসরি আমার সাথে কথা বলেন ৷ তিনি যা
বলেন, আমি তা সংরক্ষণ করি ৷ হযরত আইশা (রা) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে দেখেছি
যখন তার প্রতি ওহী নাযিল হত প্রচণ্ড ঠাণ্ডার দিলেও ওহী নাযিল হওয়ার পর তার কপাল থেকে
যান ঝরে পড়ত ৷ বর্ণনাটি বুখারী ও সহীহ্ মুসলিম-এর ৷ ইমাম আহমদ (র) আমির ইবন
সালিহ্ সুত্রে অনুরুপ উদ্ধৃত করেছেন ৷ অনুরুপ আবদা ইবন সৃলায়মান এবং আনাস ইবন ইয়ায
এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷
আইয়ুব সুখতিয়ানী হারিছ ইবন হিশাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্পাহ্
(সা) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আপনার নিকট কীভাবে ওহী আসে ? এরপর তিনি পুর্বোক্ত
হাদীছের ন্যায়ই বর্ণনা করেছেন ৷ তবে ওই সনদে হযরত আইশা (রা) এর নাম উল্লেখ নেই ৷
হযরত আইশা (রা)-এর প্রতি অপবাদ সংক্রান্ত হাদীছে রয়েছে যে , তিনি বলেছিলেন,
এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওই ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করেননি আর অন্য কেউও বের হয়নি
এমতাবস্থায় তার প্রতি ওহী নাযিল হতে শুরু করে ৷ ওহী নাযিলকালীন অবস্থার মত তখন তার
চোখ-মুখ কঠিন ও স্থির হয়ে উঠে ৷ এরপর তার মুখমণ্ডল থেকে মুক্তাবিন্দুর ন্যায় নাম ঝরে
পড়তে থাকে ৷ তখন ছিল শীতকাল ৷ ওহী নাযিলের গুরুভারের কারণে এমনটি হয়েছিল ৷
ইমাম আহমদ উমর ইবন খড়াত্তাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত, তখন তার মুখমণ্ডলের নিকট মৌমাছির গুঞ্জরনের ন্যায়
গুঞ্জন শোনা যেত ৷ ট্রু,দ্দু;পু৷ ৷ ত্া১৷ ন্ আঘাতের শানে নুয়ুল বর্ণনা প্ৰসংগে এ হাদীছ
বিস্তারিত ভাবে উল্লিখিত হয়েছে ৷ ইমাম তিরমিযী ও নাসাঈ (র) হাদীছটি আবদুর রায্যাক সুত্রে
বর্ণনা করেছেন ৷ এরপর ইমাম নাসাঈ মন্তব্য করেছেন যে, বর্ণনাটি অগ্রহণযােগ্য ৷ ইউনুস ইবন
সুলায়ম ব্যতীত অন্য কেউ এটি বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই ৷ আর তিনি একজন
অজ্ঞাত পরিচয় রাবী ৷
সহীহ্ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থে আছে যে, হাসান উবাদাহ্ ইবন সামিত (রা) থেকে বর্ণনা
করেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত, তখন তা তীর নিকট অত্যন্ত কষ্টকর
হত এবং তার মুখমণ্ডল ঘর্মাক্ত হয়ে যেত ৷ এক বর্ণনায় আছে যে , তিনি তখন দুচােখ বন্ধ করে
রাখতেন ৷ তার এ অবস্থায় সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম ৷
সহীহ্ বুখারী ও মুসলিমে যায়দ ইবন ছাবিত (রা) থেকে বর্ণিত যে , আয়াত নাযিল হওয়ার পর ইবন উম্মে মাকতুম তীর অন্ধত্বের বিষয়টি
ন্রার্মুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট ব্যক্ত করলেন ৷ এ প্রেক্ষিতে (অর্থাৎ যাদের
কোন ওমর নেই) আয়াতাংশ (৪ : ৯৫) নাযিল হয় ৷ যায়র্দ ইবন ছার্বিত (রা) বলেন যে, তখন
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর উরু মুবারক আমার জানুর উপর ছিল ৷ আমি তখন ওহী লিখছিলাম ৷ ওহী
যখন নাযিল হচ্ছিল, তখন তার উরুর চাপে আমার উরু যেতলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল ৷
সহীহ্ মুসলিমে হিশাম ইবন ইয়াহ্য়া ইয়ালা ইবন উমাইয়া সুত্রে বর্ণনা করেন তিনি
বলেছেন, হযরত উমর (রা) আমাকে বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রতি ওহী নাযিল হওয়ার
সময় তীর অবস্থা দেখার কোন আগ্নহ তোমার আছে কি ? একথা বলে তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা )
;খমওলের পর্দা ফীক করে দিলেন ৷ তখন তার প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল ৷ তার মুখমণ্ডল ছিল
চাল টকটকে ৷ তখন তিনি গোঙাচ্ছিলেন ৷ এ ঘটনা ঘটেছিল জিইররানা নামক স্থানে ৷
সহীহ্ বুথারী ও সহীহ্ মৃসলিমে হযরত আইশা (না) থেকে বর্ণিত ৷ পর্দার আয়াত নাযিল
দ্বুওয়ার অব্যবহিত পুর্বে একরাতে হযরত সাওদা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে
পয়েছিলেন ৷ তাকে দেখে হযরত উমর (রা) বললেন হে সাওদা শু আমি আপনাকে চিনে
ফলেছি ৷ হযরত সাওদা ঘরে পৌছে এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর নিকট অনুযোপ করলেন ৷
ান্বসুলুল্লাহ্ (সা) তখন বসে বসে রাতের খাবার গ্রহণ করছিলেন ৷ তার হাতে ছিল একটি হাড় ৷
চখনি আল্লাহ্ তাআলা তার প্রতি ওহী নাযিল করলেন ৷ ওই হাড় তখনও তার হাতে ছিল ৷
এরপর তিনি মাথা তুলে বললেন, “প্রয়োজন সমাধা করার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি
তামাদেরকে দেয়া হয়েছে ৷” এতে প্রমাণিত হয় যে, ওহী নাযিল হওয়ার সময় তার অনুভুতি
ন্ম্পুর্ণরুপে বিলুপ্ত হত না ৷ কারণ, হাদীছে রয়েছে যে , তিনি বসা ছিলেন এবং তার হাত থেকে
হাড়টি পড়ে যায়নি ৷
আবু দাউদ তায়ালিসী বলেন, আব্বাদ ইবন মানসুর হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে
বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, ওহী নাযিল হওয়ার সময় রড়াসুলুল্লাহ (না)-এর দেহ ঘুবারক ও
মুখমণ্ডল ঘর্মাক্ত হয়ে যেত ৷ তিনি তখন সাহাবীদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতেন ৷
তাদের কেউ তখন র্তার সাথে কথাবার্তা বলতেন না ৷ মুলনাদে আহমদ প্রভৃতি পন্থে ইবন
নাহ্ইয়া আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) সুত্রে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ ! ওহী নাযিল হওয়ার বিষয়টি কি আপনি অনুভব করতে পারেন ? তিনি বললেন হীা,
আমি তখন ঘণ্টাধ্বনির ন্যায় আওয়াজ শুনতে পাই আর তখন আমি স্থির হয়ে থাকি ৷ যখন
আমার প্রতি ওহী নাযিল হতে থাকে, তখন আমার আশংকা হয় যে, এর কারণে আমার প্রাণ
বেরিয়ে যাবে ৷
আবু ইয়ালা মুসিলী বলেন, ইবরাহীম ইবন হাজ্জাজ আলইয়াস ইবন আসিম থেকে বণ্নাি
করেন ৷ তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ছিলাম ৷ তখন তার প্রতি ওহী
নাযিল হচ্ছিল ৷ তীর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত, তখন তার দৃষ্টি স্থির হয়ে যেত চক্ষুদ্বয় থাকত
খোলা ৷ তার শ্রবণেদ্রিয় ও অন্তর আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নাযিল হচ্ছে তা সংরক্ষণের জন্যে
প্রস্তুত থাকত ৷
আবু নুআয়ম হযরত আবু হুরায়রা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্
(সা) এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত , তখন তার মাথা ধরে যেত এবং তিনি (মহ্দী দ্বারা মাথায়
প্ৰলেপ দিতেন ৷ হাদীছটি অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের ৷
ইমাম আহমদ বলেন, আবু নাসর আসমা বিনত ইয়াযীদ (রা) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন
একদিনের ঘটনা ৷ আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর “আযবা” নামক উষ্ট্রীর লাগাম ধরে র্দাড়িয়ে
ছিলাম ৷ তখন সুরা মায়িদা পুরোটাই তার প্রতি নাযিল হল ৷ ওহীর ভারে উষ্ট্রীর পার্শ্বদেশ ভেঙ্গে
যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল ৷ এ হাদীছটি আবু নুআয়মও বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম আহমদ হাসান আবদুল্লাহ ইবন আমর সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ্
(সা) সওয়ারীর পৃষ্ঠে ছিলেন এ অবস্থায় সুরা মায়িদা নড়াযিলভ্রু হত ৩থাকে ৷ সওয়ারী ওহীর তার
সইতে অক্ষম হয়ে পড়ে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) সেটি থেকে নেমে পড়েন ৷
ইবন মারদাবিয়্যাহ উম্মে আমরের চাচা সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, একদা তিনি রাসুলুল্লাহ
(সা) এর সাথে সফরে ছিলেন ৷ তখন তার প্রতি ৩সুরা মায়িদা নাযিল হয় ৷ ওহীর৩ শরে সষ্ শ্লিষ্ট
সওয়৷ ৷রীর ঘাড় ভেঙ্গে যাওয়া র উপক্রম হয়েছিল ৷ এ সনদে হাদীছটি ণরীব পর্যায়ের ৷
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যারর্তনের সময়
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতি ৩সুরা ফাত তহ নাযিল হয় ৷ তখনও তিনি সওয়ারীর পিঠে ছিলেন ৷ অবস্থা
ভেদে সেটি একবার এদিক, একবার ওদিক নড়াচড়৷ করছিল ৷
সহীহ্ বুখায়ীর ভাষ্য গ্রন্থের প্রথম দিকে আমরা ওহীর প্রকারভেদ আলোচনা করেছি ৷
হালীমী প্রমুখ ইমামগণ বা মন্তব্য করেছেন৩ তাও আমরা সেথাঃন উল্লেখ করেছি ৷
পরিচ্ছেদ
আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
“তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্যে আপনি আপনার জিহ্বা সেটির সাথে সঞ্চালন করবেন
না ৷ এটিড় সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দ য়ি আমারই ৷ সুতরাং আমি যখন সেটি পাঠ করি
আপনি যে পাঠের অনুসরণ করুন ৷ এরপর সেটির বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই” (৭৫ :
১৬ ১৯) ৷
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
“আপনার প্রতি আল্লাহর ওহী সম্পুর্ণ হওয়ার পুর্বে কুরআন পাঠে আপনি তৃর৷ করবেন না
এবং বলুন হে আমার প্রতিপালকা” আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন (২০ : ১১৪) ৷ ওহী নাযিলের
সুচনাকালে পরিস্থিতি এরুপ ছিল ৷ আল্লাহ তা আলার পক্ষ থেকে ফেরেশ৩ তা জিবরাঈল (আ)
ওহী নিয়ে আসলে ফেরেশত৷ থেকে তা গ্রহণ করার প্রচণ্ড আগ্রহ হেতু রাসুলুল্লাহ্ (সা) হযরত
জিবরাঈলের তিলাওয়াতে র সাথে সাথে তিলাওয়তি করতেন ৷
এরপর আল্লাহ তা আল৷ তাকে এ নির্দেশ দিলেন যে, ওহী নাযিল শেষ হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত
তিনি যেন চুপ থাকেন ৷ ওই ওহী রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বক্ষে সংরক্ষণ করা সেটির তিলাওয়াত
ও তাবলীগ সহজ করে দেয়া, সেটির ব্যাথ্যা-বিশ্লেষণ এবং সেটির মর্য অনুধাবন করিয়ে দেয়ার
যিম্মাদারী মহান আল্লাহ নিজেই নিয়ে নিয়েছেন ৷ এ প্রেক্ষিতেই আল্লাহ্ তাআলা উপরোক্ত
আয়াত নাযিল করেন ৷ এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন :
তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্যে সেটির সাথে আপনি জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না ৷
সেটির সংরক্ষণ করা অর্থাৎ আপনার বক্ষে স্থায়ী রাখা এবং সেটি পাঠ করানো অর্থাৎ
আপনাকে তা পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই অতএব আমি যখন তা পাঠ করি
অর্থাৎ ফেরেশতা যখন তা আপনার নিকট পাঠ করেন, রু১াপ্রু’ও ং৫ ড্রু;া১ তখন আপনি তার পাঠের
অনুসরণ করুন ৷ অর্থাৎ আপনি তা মনোযোগ সহকারে শুনুন ও তার প্রতি মনোনিবেশ করুন ৷
এরপর সেটির বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই এটি ৷
এর অনুরুপ মর্ম-জ্ঞাপক ৷
সহীহ্ বুখায়ী ও সহীহ্ মুসলিমে রয়েছে যে, মুসা ইবন আবী আইশা হযরত ইবন আব্বাস
(রা) সুত্রে বর্ণনা করো ৷ তিনি বলেন, কুরআন নাযিল হওয়ার সময় রাসুলুল্পাহ্ (না) তা আয়ত্ত
করতে অত্যন্ত যত্মবান হতেন ৷ তখন তিনি তার ওষ্ঠদ্বয় সঞ্চালন করতেন ৷ তখন আল্পাহ্
তাআলা নাযিল করলেন :
ঠু১নুএটুএ
এর ব্যাখ্যার ইবন আব্বাস বলেছেন যে, ওই কুরআন আপনার বক্ষে সংরক্ষিত রাখা এবং
তারপর আপনাকে দিয়ে তা পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই ৷
গ্রুাট্রু’ও ছুট্রু;এে
অর্থাৎ আমি যখন পাঠ করি, তখন আপনি মনোযোগ সহকারে তা শুনবেন এবং চুপ
থাকবেন ৷
এরপর সেটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দায়িত্ব আমারই ৷
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ্ (না) জিবরাঈল (আ) ওহী নিয়ে আসলে নত
মস্তকে চুপ করে থাকতেন ৷ জিবরাঈল (আ) চলে গেলে তিনি নাযিলকৃত ওহী পাঠ করতেন ৷
যেমনটি মহান আল্লাহ র্তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৷
পবিছেদ
ইবন ইসহাক বলেন, এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্ৰতি নিয়মিত ওহী নাযিল হতে
থাকে ৷ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে যা আসত তা পুরোপুরি এবং যথাযথ ভাবেই তিনি প্ৰত্যায়ন ও
সর্বন্তঃকরণে বরণ করতেন ৷ সাধারণ মানুষ তাতে সন্তুষ্ট কি অসন্তুষ্ট তিনি তার তােয়াক্কা মাত্র না
করে তা সহ্য করে পুেছেন ৷ নবুওয়াতী দায়িত্ব পালন উপলক্ষে তিনি অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ
করেছেন ৷ প্রচণ্ড শক্তিমান ও সুদৃঢ় রাসুলগণ ব্যতীত অন্য কেউ তা সহ্য করতে পারে না
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আনীত বিষয় প্রচার করতে গিয়ে ওই নবী-রাসুলগণ
জনসাধাব ণের পক্ষ থেকে যে অপ্রীতিকর আচরণের সম্মুখীন হন এবং ওরা তাদের উপর যে
অত্যাচা র নির্যাতন চালায় তার মুকা ৷বিলড়ায় মহান আল্লাহর সাহায্য ও দয়ায় তারা দায়িতু পালনে
সক্ষম হন ৷ এ ভাবেই আপন সম্প্রদায়ের বিরোধিতা ও নির্যা ৷তসের মুখে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
নিয়মিতভাবে আল্লাহর নির্দেশ পালন করে গিয়েছেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, হযরত খাদীজা বিনত খুওয়ায়লিদ ঈমান আনয়ন করলেন আল্লাহর
পক্ষ থেকে প্রা ৷প্ত বিষয় সত্য বলে গ্রহণ করলেন এবং স্বীয় দায়ি তু পালনে রাসুলুল্লাহ (সা) কে
সাহায্য করেন ৷ তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান এসেছেন ৷ আল্লাহর পক্ষ থেকে
যা এসেছে তা সত্য বলে গ্রহণ করেছেন ৷ তার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ্ ( সা)-এর
দুঃখ-কষ্ট লাঘব করেছেন ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) তার বিরুদ্ধবাদীন্দের প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকৃতি
ইত্যাকার যত দুঃখজনক আচরণের মুখোমুখি হয়ে শোকেদুঃখে জর্জরিত হয়ে যখন হযরত
খাদীজা (রা)-এর নিকট ফিরে আসতেন, তখন হযরত খাদীজার মাধ্যমে আল্লাহ তাত্মালা তার
সকল দৃংখের উপশম ঘটাতেন ৷
হযরত খাদীজা ৷(রা)৩ তাকে অটল থাকতে বলতে তন ৷ তিনিওার গুরুদায়িতৃ পালন সহজ
করে তুলতেন ৷ সকল কাজে তার সত্যায়ন করতেন এবং শত্রুদের শত্রুতামুলক আচরণকে
সহনীয় করে তৃলতেন ৷ আল্লাহ হযরত খাদীজার প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তবে সন্তুষ্ট করুন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, হিশাম ইবন উরওয়া তার পিতা থেকে এবং তিনি আবদুল্লাহ ইবন
জাফর থেকে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আমাকে নির্দেশ
দেয়া হয়েছে আমি যেন খাদীজাকে জান্নাতে মুক্তার তৈরি একটি ঘরের সুসংবাদ দিই যেখানে
না আছে কোন কোলাহল, আর না আছে কোন দুঃখ-কষ্ট ৷ এ হাদীছ সহীহ বুখারী ও সহীহ
মুসলিমে হিশাম (র) থেকে উদ্ধৃত আছে ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আল্লাহ তা অ ৷ল৷ প্রিয়নবী (সা) কে নবুওয়াত প্রদানের মাধ্যমে তার
প্রতি এবং সকল বান্দ র প্রতি যে নিআমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করেছেন প্রিয়নবী (না) তার
পরিবারের ঘনিষ্ঠজনকে একান্তে সেগুলো জানাতেন ৷
মুসা ইবন উকবা যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত খাদীজা (রা) সর্বপ্রথম আল্লাহর
প্রতি ঈমান এসেছেন এবং রাসুলকে সত্য বলে গ্রহণ করেছেন ৷ নামায ফরয হওয়ার পুরেই
তিনি ঈমান আসেন ৷
উক্ত বর্ণনার ব্যাখ্যায় আমি বলি যে, এখানে মিরাজের রাতে পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয
হওয়ার পুর্বের কথা বলা হয়েছে ৷ নতুবা মুলত নামায ফরয হয়েছে হযরত খাদীজা (রা)-এর
জীবদ্দশায় ৷ এ বিষয়ে আমরা এবন্টু পরে আলোচনা করব ৷
ইবন ইসহাক বলেন, হযরত খাদীজা (রা)-ই প্রথম লোক, যিনি আল্লাহ ও তার রাসুলের
প্রতি ঈমান এসেছেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা) যা এসেছেন, তা সত্য বলে গ্রহণ করেছেন ৷
রাসুলুল্লাহ (না)-এর উপর নামায ফরয হওয়ার পরের একদিনের ঘটনা ৷ হযরত জিবরাঈল
(আ) এলেন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ৷ নিজের পায়ের গোড়ালি দ্বারা তিনি মাঠের এক প্রান্তে
মাটিতে আঘাত করলেন ৷ তার ফলে যমযম কুপের সাথে সংযোগ সম্পন্ন একটি ঝর্ণার সৃষ্টি
হয় ৷ হযরত জিবরাঈল (আ) ও প্রিয়নবী (সা) দু’জনে ওই পানিতে উয়ু করেন ৷ তারপর
জিবরা ঈল (আ) চার সিজদায় দু’রাকআত নামায আদায় করেন ৷ তার নয়ন জুড়ালো ও হৃদয়
প্রশান্ত হলো ৷ এমতাবস্থায় রাসুলুল্পাহ্ (সা) আপন ঘরে ফিরে এলেন ৷ আল্লাহর নিকট থেকে
তাই এলো যা তিনি পসন্দ করতেন ৷ ঘরে ফিরে গিয়ে তিনি হযরত খাদীজার হাত ধরে তাকে
নিয়ে ওই ঝর্ণাধারার নিকট আসলেন ৷ তারপর জিবরাঈল (আ) যেমনটি উয়ু করেছিলেন
রাসুলুল্লাহ্ (সা)-ও তেমনটি উবু করলেন ৷ তারপর চার সিজদাসহ দু’রাকআত নামায আদায়
করলেন ৷ এরপর থেকে তারা দৃজনে গোপনে নিয়মিত নামায আদায় করতেন ৷
আমি বলি, হযরত জিবরাঈল (আ) এর এই নামায তার বায়তৃল্লাহ্ শরীফের সম্মুখে দৃ বার
আদায় করা নামায থেকে পৃথক একটি নামায ৷ বায়তৃল্লাহ্ শরীফের সম্মুখে দু বার আদায়কৃত
নামাষে তিনি পড়াচ ওয়াক্ত নামাষের প্রথম ও শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন এবং ওই
শিক্ষামুলক নামায ছিল মিরাজ রাতে পড়াচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার পরের ঘটনা ৷ এ
বিষয়ে আলোচনা পরবর্তীতে আসবে ইনশাআল্লাহ্ ৷
পবিস্দ
সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকায়ী সাহাৰায়ে কিরাম
ইবন ইসহাক বলেন, ওই ঘটনার একদিন পর হযরত আলী (বা) তাদের নিকট আসেন ৷
তখন রাসুলুল্লাহ্ ও হযরত খাদীজা নামায আদায় করছিলেন ৷ আলী (বা) বললেন : আপনারা এ
কী করছেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, এটি আল্লাহ্র দীন ৷ তার নিজের জন্য এ দীনকে তিনি
মনোনীত করেছেন এবং এ দীন সহকারে তিনি রাসুলগণকে প্রেরণ করেছেন ৷ আমি তখন
তোমাকে একক ও লা-শরীক আল্লাহর দিকে এবং তার ইবাদতের দিকে আহ্বান করছি ৷ আমি
তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি লাভ ও উঘৃযা প্রতিমা পরিত্যাগ করতে ৷ হযরত আলী (রা) বললেন,
এটি তো এমন একটি বিষয়, যা ইতোপুর্বে আমি কখনো শুনিনি ৷ আমার পিতা আবু তালিবের
সাথে আলোচনা না করে আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না ৷ পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষিত
হওয়ার পুর্বে আবু তালিবের নিকট এ গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশিত হোক রাসুলুল্লাহ্ (সা) তা
সমীচীন মনে করলেন না ৷ তাই হযরত আলী (রা) কে বললেন, হে আলী ৷ তুমি যদি এখনই
ইসলাম গ্রহণ না কর, তবে আপাতত বিষয়টি গোপন রাখ, কাউকে বলো না ৷ হযরত আলী
(বা) ওই রাত অপেক্ষা করলেন ৷
এরপর আল্লাহ্ তাআলা হযরত আলী (রা)-এর অতরে ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ সৃষ্টি করে
দিলেন ৷ ভোর বেলা তিনি রড়াসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট গেলেন এবং বললেন, আপনি আমার
নিকট কি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, প্রস্তাবটি এই, তুমি সাক্ষ্য দিয়ে
যে, আল্লাহ ব্যতীত কে ন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, তার কে ন শরীক নেই ৷ আর তুমি লাভ ও
উয্যা প্ৰতিমাকে পরিত্যাগ করবে এবং সকল প্রকার অ ৎশীবাদিতড়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে ৷
হযরত আলী তা ইি করলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন ৷ তবে পিতা আবু তালিবের ভয়ে তিনি