তুমি নিজেকে ধৈর্যসহকারে রাখবে তাদেরই সংসর্গে, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করে
তাদের প্রতিপালককে, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা
করে তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে না ৷ তুমি তার আনুগত্য করো না, যার চিত্তকে
আমি আমার স্মরণে অমনােযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়ালখুশীর অনুসরণ করে ও যার
কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে ৷ (১৮ কাহ্ফ : ২৮)
অতএব যে আমার স্মরণে বিমুখ তাকে উপেক্ষা করে চল, সে তাে কেবল পার্থিব জীবনই
কামনা করে ৷ (৫৩ নাজমং ২৯)
আমি তাে তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুন পুন আবৃত্ত হয় এবং দিয়েছি মহা
কুরআন ৷ আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি
কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না, তাদের জন্য তুমি ক্ষোভ করো না, তুমি মু’মিনদের
জন্য তোমার পক্ষপুট অবনমিত কর (১৫ হিজর : ৮৭-৮৮) আর এ প্রসঙ্গে বহুসংখ্যক আয়াত
বিদ্যমান ৷
হাদীসে ভােগবিমুখতা প্রসঙ্গ
আর এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীসও রয়েছে ৷ ইয়াকুব ইবন সুফিয়ান আবুল আব্বাস হায়ওয়া
ইবন শুরায়হ …… মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ
ইবন আব্বাস (রা) বলেছেন, যে আল্লাহ তাআলা একদা হযরত জিবরাঈলের সাথে এক
ফেরেশতড়াকে তার নবীর কাছে পাঠালেন ৷ তখন সেই ফেরেশতা নবীজীকে বললেন, “আল্লাহ আপনাকে দুটি
বিষয়ের যে কোন একঢিকে বেছে নেয়ার ইখতিয়ার দিচ্ছেন, আপনি সাধারণ বান্দা ও নবী
হবেন, নাকি বাদশা ও নবী হবেন ৷ ” তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) জিবরাঈল আলাইহিস সালামের
দিকে এমনতাবে তাকালেন, যেন তিনি এ ব্যাপারে তার পরামর্শ জানতে চাচ্ছেন ৷ তখন
হযরত জিবরাঈল (আ) রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে বিনয়ীকে বেছে নেয়ার ইঙ্গিত করলেন ৷ তখন
তিনি বললেন, আমি বরং বান্দা-নবী হব ৷ তিনি (ইবন আব্বাস) বলেন, এই কথা বলার পর
থেকে আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়া পর্যন্ত তিনি কােনদিন হেলান দিয়ে কোন খাবার খাননি ৷ বুখারী
তাঁর ‘আত তারীখে’ হাওয়াত ইবন শুরায়হ্ সুত্রে এবং নাসাঈ আমর ইবন উছমান সুত্রে
এভাবেই তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷ আর সহীহ্ বুখারীতে প্রায় এ জাতীয় শব্দেই মুল হাদীসখানা
বিদ্যমান রয়েছে ৷ আর ইমাম আহমাদ মুহাম্মাদ ইবন ফুযায়ল আবু যুর’আ সুত্রে (আমি বলি,
আমার জানা মতে, আবু হুরায়রার সুত্র ছাড়া অন্য কারো থেকে আমি তা জানি না) ৷ তিনি
বলেন, (একবার) জিবরাঈল রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে বসে আসমানের দিকে তাকালেন,
হঠাৎ এক ফেরেশতাকে অবতরণ করতে দেখা গেল ৷ তখন জিবরাঈল বললেন, সৃষ্টি হওয়ার
পর থেকে এই মুহুর্তের পুর্ব পর্যন্ত এই ফেরেশত৷ (কোথাও) অবতীর্ণ হননি ৷ অতঃপর তিনি
যখন অবতরণ করলেন তখন তিনি বললেন হে মুহাম্মদ ! আপনার রব আমাকে আপনার কাছে
পাঠিয়েছেন (আপনার মত গ্রহণ করার জন্য) যে, তিনি আপনাকে বাদশা-নবী করবেন, নাকি
বান্দা-নবী? আমি বলি, আমার কাছে রক্ষিত মুসনাদে আহমদের কপিতে আমি হাদীসখানি
এরুপ সংক্ষিপ্তভাবে পেয়েছি ৷ আর এক্ষেত্রে এটি আহমদের একক বর্ণনা ৷
এছাড়া বুখারী ও মুসলিমে ইবন আব্বাসের (রা) হাদীস সংগ্রহ থেকে হযরত উমরের
বরাতে ঈলা১ সং ক্রাম্ভ যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাতে রয়েছে যে, (একবার) রাসুলুল্লাহ্ (সা)
তার সহধর্মিণীগণের সাথে ঈলা করলেন ৷ অর্থাৎ দীর্ঘ একমাস পর্যন্ত তাদের সং ত্সর্গ বর্জন করে
তার গৃহের উপর তলায় অবস্থান করলেন ৷ তারপর (একবার) হযরত উমর যখন সেখানে তার
কক্ষে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি দেখতে পেলেন, সেখানে কিছু বাংলা জাতীয় হলো গাছের
ফল তুপাকৃতির কিছু যব এবং একটি চামড়া ঝুলানাে রয়েছে ৷ আর তিনি একটি খালি চাটাইয়ে
কাত হয়ে শুয়ে আছেন, তার পার্শ্বদেশে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে ৷ আল্লাহ্র রাসুলের এই দীন
অবস্থা দেখে হযরত উমরের চক্ষুদ্বয় অশ্রুপ্লাবিত হল, তখন নবীজী তাকে বললেন, কী ব্যাপার?
(তুমি র্কাদছ কেন) তখন আমি (উমর) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্া আপনি আল্লাহ্র মনোনীত
শ্রেষ্ঠ৩ ম সৃষ্টি, (অথচ আপনার এই দীন অবস্থা) অথচ কিসরা-বগয়সারের (আরাম আয়েশ ও
ভোগ বিলাসের) কি অবস্থা? উমরের একথায় তিনি (ক্রুদ্ধ ও) রক্তিম চেহারা নিয়ে উঠে
বললেন এবং তাকে বললেন, হে খাত্তাব তনয়! তুমি কি স ৎশয়গ্রস্ত? তারপর তিনি বললেন,
ওরা তো এমন সম্প্রদায় যাদেরকে পার্থিব জীবনেই সকল আরাম-আয়েশ ও ভোগ বিলাসের
উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে ৷ মুসলিমের বর্ণনায় আছে, তুমি কি এতে তৃষ্ট নও যে, তাদের
জন্য হবে দুনিয়া আর আমাদের জন্য আখিরাত? তখন আমি বললাম, অবশ্যই ! হে আল্লাহ্র
রাসুল (আমি তাতে তুষ্ট) ৷ উমর বলেন, আমি আল্লাহ্র প্রশ সা করছি ৷ তারপর এক মাস
অতিবাহিত হলে আল্লাহ্ তাকে তার ত্রীদের ইখতিয়ার প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং এই আয়াত
নাযিল করলেন :
হে নবী তুমি তোমার ত্রীদের বল! তোমরা যদি পাথিং জীবন ও তার তুষণ কামনা কর
তবে আস আমিণ্ তামাদের ভোগ সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিই এবং সৌজন্যের সাথে
ণ্তামাদেরকে বিদায় দেই ৷ আর যদি তোমরা আল্পাহ্,৩ তার রাসুল ও আখিরাত কামনা কর
তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ্৩ তাদের জন্য মহাপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন ৷
(৩৩ আহযাবং ২৮ ২৯)
আর এ সম্পর্কিত বিশদ বিবরণ আমরা আমাদের তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছি ৷ তিনি
এই ইখতিয়ার প্রদানের সুচনা করেন হযরত আইশাকে দিয়ে, তিনি তাকে বলেন, আমি একটি
বিষয়ে তে আমার মত ও সিদ্ধান্ত জানতে চাই, এতে তোমার তাড়াহুড়া করার কোন প্রয়োজন
নেই যতক্ষণ না তুমি তোমার পিতা-মা৩ার পরামর্শ গ্রহণ করবে ৷ এরপর তিনি তাকে আয়াত
তেলাওয়াত করে গোনালেন ৷
আইশা বলেন, তখন জবাবে আমি বললাম, এ ব্যাপারে আমি পরামর্শ করতে যাব আমার
পিতা-মাতার সাথে? আমি (নির্ধিধায়) আল্লাহ্ ও তার রাসুল এবং আখিরা৩ কে গ্রহণ করছি ৷
১ (চার মাস বা তদুর্ধ্ব সময়) শ্রীগমন না করার শপথ করাকে পরিভাষায় ঈলা বলা হয় ৷ অনুবাদক
আর এরপর তার অন্যান্য সহধর্মিনীগণও এমনই বললেন এবং তিনি তাদের প্রতি প্রসন্ন হলেন ৷
মুবারক ইবন ফুযালা আনাস সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, (একবার) আমি রাসুলুল্লাহ্
(সা)-এর সাক্ষাতে প্রবেশ করলাম ৷ তখন তিনি পাকানাে দড়ি দিয়ে তৈরী একটি খাটে
শুয়েছিলেন, তার মাথার নীচে ছিল খেজুর গাছের আশ ভর্তি একটি চামড়ার বালিশ, এ সময়
হযরত উমর এবং আরও কয়েকজন সাহাবী তার কক্ষে প্রবেশ করলেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা)
ফিরলেন, তখন উমর তার শরীরে দড়ির দাগ দেখে কেদে ফেললেন ৷ তখন নবী করীম (সা)
তড়াকে জিজ্ঞেস করলেন, উমর! তুমি কড়াদছ কেন? উমর বললেন, না কেদে আমি কিভাবে
থাকতে পারি? কিনরা-কায়সার কী আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসে রয়েছে, তা আর আপনার
এ দীন অবন্থাও আমি প্রত্যক্ষ করছি ৷ তখন তিনি বললেন, হে উমর ! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও
যে, দুনিয়া তাদের জন্য হবে আর আমাদের জন্য হবে আখিরাত? তখন উমর বললেন, হী
অবশ্যই (সন্তুষ্ট) ৷ তিনি বললেন, তাহলে তােমাংক এটাও (মনে নিতে হবে ৷
আবু দাউদ তায়ালিসী আল-মাসউদী ইবন মাসউদ সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ্ (সা) একখানা খালি চাটাইয়ের (খেজুর পাতার) উপর কাত হয়ে
গোয়া ছিলেন ৷ তখন তার দেহে চাটাইয়ের দাগ ফুটে উঠেছিল, তখন আমি তা মিটিয়ে দিতে
দিতে বলতে লাগলাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান ৷ আপনি কেন আমাদেরকে
জানালেন না তাহলে তার (চাটাইয়ের) উপর একটা (নরম) কিছু বিছিয়ে দিতাম; তাহলে
আপনি তার উপর শুতে পারতেন, আর তা আপনাকে এ অবস্থা থেকে রক্ষা করতো ৷ তখন
তিনি বললেন, দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক! দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক ঐ অশ্বারোহী
পথচারীর ন্যায়, যে ক্ষণিকের জন্য কোন গাছের ছায়ায় আরাম করে তারপর সে স্থান ত্যাগ
করে চলে যায় ৷ ইবন মাজ৷ ইয়াহইয়া ইবন হাকীম আবু দাউদ তায়ালিসীর বরাতে এই সনদে
হাদীসখড়ানি রিওয়ায়াত করেছেন ৷ এছাড়া তিরমিযী মুসা ইবন আব্দুর রহমান কিন্দী সুত্রে তা
বর্ণনা করে মন্তব্য করেছেন, হাদীসখানি হাসান সহীহ্’, ৷ এছাড়া ইমাম আহমদ আব্দুস সামাদ
ইবন আব্বাস সুত্রে রিওয়ায়াত করেছেন যে (একবার) উমর (রা) রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কক্ষে
প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, তিনি (খেজুর পাতার) চাটাইয়ে শায়িত যা তার শরীরে দাগ
ফেলে দিয়েছে ৷ তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি যদি এর চেয়ে কােমলতর
বিছানা গ্রহণ করতেন ! তখন তিনি বললেন, আমার সাথে দুনিয়ার কী সম্পর্ক! আমার ও
দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হল ঐ অশ্বারোহীর ন্যায়, যে গ্রীষ্মের দিবসে পথ চলে ক্ষণিকের জন্য দিনের
একাৎশে কোন বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম করে, এরপর সেখান থেকে উঠে চলে যয়ে ৷ হাদীসখানি
ইমাম আহমদের একক বর্ণনা ৷ বুখারী শরীফে ইমাম যুহরীর হাদীস সংগ্রহ থেকে আবদুল্লাহ
ইবন আবদুল্লাহ আবু হুরায়রা সুত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন,
আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকত, তাহলে এটা আমার জন্য থুশির ব্যাপার
হত না যে, তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তার সামান্য অংশ আমার কাছে থাকবে,
শুধুমাত্র কিছু পরিমাণ যা আমি ঋণ পরিশোধের জন্য মজুদ রাখবাে ৷ > হযরত আবু হুরায়রার
উদ্ধৃতিতে বুখারী ও মুসলিমে উমারা ইবন কা’কার হাদীস সংগ্রহ থেকে আবু হুরায়রার প্রমুখাৎ
১ রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঋণ্যাস্তদের ঋণ পরিশেত্রে সাহায্য করতেন ৷ বিশেষত, যদি কেউ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা
যেতেন ৷-জালালাবাদী (সম্পাদক)
বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসুলুল্পাহ্ (সা) বলেছেন, হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ পরিবারকে ন্যুনতম
পরিমাণ জীবনােপকরণ দান করুন ৷ আর ইয়াষীদ ইবন সিনান হযরত আবু সাঈদ সুত্রের
বরাতে ইবন মাজা যে হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন যে রাসুলুল্পাহ্ (সা) বলেছেন, হে
আল্লাহ্! আমাকে নিঃা দরিদ্র অবস্থায় বীচিয়ে রাখুন এবং নিঃা দরিদ্র অবস্থায় মৃত্যু দান করুন
এবং নিঃা-দরিদ্রের সাথে আমার হাশর করুন, তা যয়ীফ, এর সনদ সুসাব্যস্ত নয় ৷ কেননা,
এতে ইয়াষীদ ইবন সিনান নামক একজন অত্যন্ত দুর্বল রাবী রয়েছেন ৷ আল্লাহ্ই সম্যক
অবগত ৷ অবশ্য তিরমিঘী অন্য এক সনদে তা বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি আবদুল আলা ইবন
ওয়াসিল কুফী আনাস (রা) সুত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ তাতে অতিরিক্ত আছে :
তখন আইশা (বা) প্রশ্ন করলেন, কেন ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ? জবাবে তিনি বললেন, কেননা, তারা
তাদের ধনীদের চল্লিশ বছর পুর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে, হে আইশা ! মিসকীনকে শুন্য হাতে
ফিরিয়ে দেবে না, যদি একটি থেজুরের একাৎশ হলেও তাকে দিও ৷ হে আইশা,
নিঃা-দবিদ্রদের ডালবসেবে এবং তাদেরকে কছে টেনে নেবে; তাহলে কাল কিয়ামতের দিন
আল্লাহও তোমাকে নৈকট্য দান করবেন ৷ তারপর ইমাম তিরমিঘী মন্তব্য করেন, এটা গরীব’
শ্রেণীর হাদীস ৷ আমি বলি, উক্ত হাদীসের সনদে দৃর্বলতা, আর তার ভাবে অগহণযোগ্যতা
রয়েছে ৷ আর :নঠিক বিষয় আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
ইমাম আহুমদ আবদুস সামাদ সুত্রে সাঈদ ইবন সা’দ থেকে বর্ণনা করেন যে,
(একবার) তাকে প্রশ্ন করা হল : তিনি কিাচক্ষে (ময়দা, ভুষিযুক্ত আটা) দেখেছিলেন ? তখন
তিনি বললেন যে, রাৰুসুলুল্লাহ্ (সা)াচক্ষে ময়দা দেখেন নি এমনাকি (এ অবস্থাংয়ই) তিনি
আল্লাহ্র দরবারে চলে যাঘুণ্ব্ ৷ তখন তাকে বলা হল, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর আমলে কি আপনাদের
চালুনি ছিল ? তখন জবারুহ্ব্ তিনি বললেন, না সেকালে আমাদের কোন চালুনি ছিল না ৷
পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হৰু, তাহলে যব আপনারা কী করতেন ? জবাবে তিনি বললেন,
আমরা ভাঙানাে ও পেষা যবে ফু ক দিতাম তখন তার ভুসি যা উড়াৱ উড়ে যেত ৷ ইমাম
তিরমিঘী আবদুর রহমান ইবন আবদুল্লাহ ইবন দীনারের হাদীস সংগ্রহ থেকে এই সনদে
এভাবেই তা রিওয়ায়াত করেছেন এবং নীিাক্ত অংশ বৃদ্ধি করেছেন-এরপর আমরা তা বাতাসে
উড়িয়ে তার খামীর বানাতাম ৷৩ তারপর তিনি বলেন, হাদীসখানি হাসান সহীহ্’ ৷ আর আবু
হাযিম থেকে ইমাম মালিক তা বর্ণনা করেছেন ৷ আমি বলি, ইমাম বুখারী সাঈদ ইবন আবু
মরিয়াম সাহল ইবন সা’দ (রা) সুত্রে তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷ এছাড়াও ইমাম বুখারী ও
নাসাঈ শায়বা ,সাহ্ল (রা) সুত্রে ঐ সনদে তা বর্ণনা করেছেন ৷ আর তিরমিঘী, আব্বাস
ইবন মুহাম্মাদ আছ ছাওরী সুলায়মান ইবন আমির, থেকে বর্ণনা করেন ৷ (তিনি বলেন)
আমি আবু উমামাকে (বা) বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর পরিবারে যবের রুটিও বাড়তি
থাকত না ৷ তারপর তিনি হাদীসটিকে “হাসন সহীহ্ ন্ারীব্ব্ বলে মন্তব্য করেছেন ৷ ইমাম
আহমদ ইয়াহ্ইয়া ইবন সাঈদ আবু হাযিম সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি
আবু হুরায়রা (রাকে তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে একাধিকবার ইশারা করতে দেখেছি (এবং
বলতে শুনেছি) শপথ ঐ সভার, যার হাতে আবু হরায়রার প্রাণং সাধাকুহ৷ যবের রুটিও আল্লাহর
নবী ও তার পরিবারের লোকেরা ক্রমাগত তিন দিন পেট ভরে খেতে পাক্লো নি, এমনকি তিনি
দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন ৷ ইমাম মুসলিম, তিরমিঘী ও ইবন মাজা ইয়াষীদ ইবন কায়সানের
হাদীস সংগ্রহ থেকে হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন ৷ বুখারী ও মুসলিমে জারীর ইবন আবদুল
হামীদের হাদীস সংগ্রহ থেকে হযরত আইশার বরাতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন,
মদীনায় আগমনের পর থেকে তার পথে চলে যাওয়া পর্যন্ত মুহাম্মাদ পরিবারবর্গ গমের রুটিও
উপর্বুপরি তিনদিন পেট ভরে খাননি ৷ ইমাম আহমাদ হাশিম অইিশা সুত্রে বর্ণনা করেন
যে , তিনি বলেছেন, মুহাম্মাদ পরিবার তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত গমের রুটিও উপর্বুপরি তিন
দিন পেট ভরে খাননি এবং তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত তার দস্তরখানা থেকে কখনও কোন রুটির
টুকরো তুলে রাখার অবকাশ ঘটেনি ৷ ইমাম আহমদ মুহাম্মাদ ইবন উবায়দ হযরত
অইিশা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার পথে চলে গেছেন কিন্তুং
তার পরিবারের লোকেরা উপর্বুপরি তিন দিন সাধারণ গমের রুটিও পেট ভরে খাননি ৷ ইমাম
আহমদ হাসান হযরত অইিশা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, শপথ ঐ সত্তার,
যিনি মুহাম্মাদ (সা)-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাকে নবী করার পর থেকে আমৃভ্যু
তিনি কখনও (আটার) চালুনি দেখেন নি এবং চালাদীআটার অর্থাৎ ময়দার রুটি খাননি ৷ রাবী
উরওয়া বলেন, আমি বললাম, কিভাবে আপনারা যব থেতেন ? তিনি বললেন, আমরা উফ্
বলতাম অর্থাৎ কুক দিয়ে তার ভুসি উড়িয়ে নিতাম ৷ এ সুত্রে হাদীসখানি ইমাম আহমাদের
একক বর্ণনা ৷
বুখারী মুহাম্মাদ ইবন কাহীর হযরত অইিশা সুত্রে বর্ণনা করেন যে , তিনি বলেছেন,
আমরা তাে পনের দিন পর একবার উট-বকরীর কিছু পা রান্না করে যেতে পারতাম ৷ আমি
বললাম, কেন আপনারা তা করতেন ? তখন তিনি হেসে বললেন, (বৎসা) মুহাম্মাদ (না)-এর
পরিবারবর্গ কখনও পেট পুরে ব্যঞ্জনসহ রুটি খাননি, এ অবস্থা চলতে চলতেই তিনি আল্লাহর
সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছেন ৷ ইমাম আহমদ ইয়াইেয়া হযরত অইিশা সুত্রে বর্ণনা করেন
যে, তিনি বলেছেন, মুহাম্মাদ (না)-এর পরিবারে মাস অতিবাহিত হয়ে যেত, কিন্তু তাদের চুলা
জ্বালানাে হত না, শুধু খেজুর আর পানিই ছিল তাদের সম্বল , তবে কখনও যদি গোশত আসত
তাহলে চুলায় আগুন জ্বলত ৷ বুখারী ও মুসলিমে হিশাম ইবন উরওয়া অইিশা (রা)-এর সুত্রে
বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, আমরা মুহাম্মাদ (সা)-এর পরিবারবর্গ এমন ছিলাম যে,
আমাদের মাস অতিবাহিত হয়ে যেত কিন্তু আমরা চুলা জ্বালাতড়াম না ৷ শুধুমাত্র খেজুর ও
পানিই ছিল আমাদের সম্বল ৷ তবে আমাদের আশেপাশের আনসার প্রতিবেশীরা তাদের উট বা
বকরীর দুধ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর খিদমতে পাঠিয়ে দিতেন, তখন তিনি নিজে পান করতেন
এবং আমাদেরকেও সেই দুধ থেকে পান করাতেন ৷ ইমাম আহমদ বুরায়দা হযরত অইিশা
সুত্রে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন ৷ ইমাম আহমদ আবদুল্লাহ উরওয়া ইবন যুবায়র সুত্রে
বর্ণনা করেন যে , তিনি হযরত অইিশাকে বলতে শুনেছেন, আমাদের মাসের পর মাস
অতিবাহিত হয়ে যেত, কিন্তু রাসুট্রণুল্লাহ্ (না)-এর কোন গৃহে আগুন জ্বাত না ৷ তিনি (উরওয়া)
বলেন, আমি বললাম, খালাম্মা ৷ তাহলে আপনারা কী থেয়ে জীবন ধারণ করতেন ? তিনি
বললেন, শুধু খেজুর আর পানির উপর চলতো ৷ এটি ইমাম আহমদের একক বর্ণনা ৷ আবু
দাউদ তায়ালিসী শু’বা অইিশা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, মৃত্যুর পুর্ব
পর্যন্ত রাসুলুল্পাহ্ (সাটুৰু কখনও ক্রমাগত দুই দিন তৃপ্তির সাথে যবের রুটিও খান নি ৷ শুবার
হাদীস সংগ্রহ থেকে মুসলিম তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷ ইমাম আহমদ, আবদুল্লাহ হযরত
আইশা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এক রাত্রে আবু বকর পরিবার একটি বকরীর
রান (রান্না করা) পাঠান, তখন আমি সেটা ধরলাম আর রাসুলুল্লাহ্ (সা) সেটা কাটালেন,
অথবা আইশা বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না) সেটা ধরলেন আর আমি সেটা কাটলাম ৷ তিনি বলেন,
এই কাটার কাজ ছিল কোন বাতি ছাড়া ৷ অন্য রিওয়ায়াতে আছে, যদি আমাদের কাছে কোন
বাতি থাকত (অর্থাৎ বাতির তেল) তাহলে আমরা তাই ব্যঞ্জনরুপে ব্যবহার করতড়াম ৷
হুমায়দ ইবন হিলাল বলেন, হযরত আইশা (আরো) বলেন, মুহাম্মাদ (না)-এর মাস
অতিবাহিত হয়ে যেত, কিন্তু তারা কোন রুটি বানাতেন না; কোন পারে কোন কিছু রান্নাও
করতেন না ৷ আর এটি তিনি বাহ্য ইবন আসাদ থেকে রিওয়ায়াত করেছেন ৷ এক রিওয়ায়াতে
এক মাসের স্থলে দুই মাসের কথা উল্লেখিত আছে ৷ হাদীসটি ইমাম আহমাদের একক বর্ণনা ৷
ইমাম আহমদ খলুফ হযরত আবু হুরায়রা সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন,
(মাঝে মাঝে) রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর পরিবারে মাসের পর মাস অতিবাহিত হয়ে যেত; কিন্তু
তারা তাদের ঘরে না কোন রুটি বানাতেন, না কিছু পাক করতেন ৷ লোকেরা জিজ্ঞেস করল,
হে আবু হুরায়রা! তাহলে তারা কী খেয়ে জীবন ধারণ করতেন ? তিনি বললেন, দুটি কালো
বস্তু থেজুর ও পানি ৷ তবে তাদের কতক আনসার প্রতিবেশী ছিলেন-আল্লাহ্ তাদেরকে উত্তম
প্রতিদান দিন! যাদের দুধের উটনী ছিল, মাঝে মাঝে তারা তাদের কাছে কিছু দুধ পাঠিয়ে
দিতেন ৷ এটি আহমদের একক বর্ণনা ৷ সহীহ্ মুসলিমে মড়ানসুর ইবন আবদুর রহমানের হাদীস
সংগ্রহ থেকে হযরত আইশার বরাতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্পাহ্ (সা) যখন
ইন্তিকাল করেন তখন লোকেরা কেবল দু’টি কাল বস্তু-থেজুর ও পানি দ্বারা তৃপ্ত হতেন ৷ ইবন
মাজা সুয়ায়দ ইবন সাঈদ সুত্রে আবু হুরায়রা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
একদিন রাসুলুল্পাহ্ (না)-এর কাছে গরম গরম খাবার আনা হল, যখন তিনি তা খেয়ে অবসর
হলেন তখন আলহামদুলিল্লাহ্ বলার পর বললেন, এত এত দিন পর্যন্ত আমার পেটে কোন গরম
খাদ্য পড়েনি ৷ ইমাম আহমদ, আবদুস সামাদ হযরত আনাস ইবন মালিক সুত্রে বর্ণনা
করেন যে, (একবার) হযরত ফাতিমা (রা) রাসুলুল্লাহ্ (সা)একে যবের রুটির একটি টুকরো
থেতে দিলেন ৷ তখন তিনি বললেন, তিন দিনের মাঝে এটাই প্রথম পাক করা খাবার, যা
তেমাের পিতা থেল ৷ এটি ইমাম আহমদের একক বর্ণনা ৷
ইমাম আহমদ, ইমাম তিরমিযী ও ইবন মাজা ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (না) উপর্বুপরি কয়েক রাত্র ক্ষুধার্ত থাকতেন আর তার
পরিবার-পরিজনের কোন রাতের খাবার থাকত না ৷ আর সচরাচর তাদের রুটি হত যবের
তৈরী-এই শব্দমালা ইমাম আহমদের ৷ ইমাম তিরমিযী তার শামইিলে’ আবদুল্লাহ ইবন
আবদুর রহমান আদ দারিমী আবদুল্লাহ ইবন সালামের পুত্র ইউসুফ থেকে বর্ণনা করেন
যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে দেখলাম তিনি এক টুকরো যবের রুটি নিলেন
এবং তার উপর একটি খেজুর রেখে বললেন, এটা হল ওটড়ার ব্যঞ্জন ৷ তারপর তিনি তা খেয়ে
নিলেন ৷ যুহরীর হাদীস সংগ্রহ থেকে হযরত আইশার বরাতে বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে;
তিনি (আইশা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় পানীয় ছিল যা ঠাণ্ডা ও মিষ্ট
হতো ৷ বুখারী কাতাদার হাদীস সংগ্রহ থেকে হযরত আনাসের বরাতে উল্লেখ করেছেন যে,
তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার ওফাতের পুর্বে কখনও (নিজগৃহে) চাপাতি রুটি কিৎবা
নিজ চোখে ভুনা বকরী দেখেছেন বলে আমার জানা নেই ৷ তারই বরাতে বর্ণিত বুখারীরই
অপর একটি রিওয়ায়াতে রয়েছে : রাসুলুল্পাহ্ (সা) কখনও খাঞ্চায় কিংবা তশত তে আহার
করেননি এবং৩ তার জন্য কখনও চাপাতি রুটি বানানো হয়নি ৷ তখন আমি (কাতাদা)
আনাসকে বললাম, তাহলে তারা কিসে খেতে ন ? তখন তিনি বললেন, এই সকল সাধারণ
দস্তরখানে ৷ এছাড়াও কাতাদার হাদীস সংগ্রহ থেকে হযরত আনাস সুত্রে তার (ইমাম বুখারীর)
বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, তিনি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে যবের রুচি ও গরম চর্বি নিয়ে
গেলেন ৷ আর ইতিপুর্বে তিনি পোষ্য পরিজনের জন্য যবের বিনিময়ে জনৈক ইয়াহুদীর কাছে
তার বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন ৷ আর একদিন আমি তাকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ (না)-এর
পরিবারের কাছে কখনও এক সা’১ পরিমাণ খেজুর কিৎবা এক সা” পরিমাণ শস্যদানা মজুদ
থাকেনি ৷ ইমাম আহমদ, আফ্ফান আনাস ইবন মালিক সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
অতিথিদের ভিড়ের পরিস্থিতি ব্যতীত রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কখনও দুপুর ও রাতের দু’বেলা রুচি
ও গোশতের খাবার জুটেনি ৷ ইমাম তিরমিযী তার শামাইল’-এ আবদুল্লাহ ইবন আবদুর
রহমান সুত্রে হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন ৷ আর এ সনদটি বুথারী ও মুসলিমের
শর্তানুযায়ী ৷ আবু দাউদ তায়ালিসী ও ’ব৷ সিমাক ইবন হাবৃব সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, আমি নুমান ইবন বশিরকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, (একবার) আমি উমর
ইবনুল খাত্তাবকে খুৎবা দিতে শুনলাম, তখন তিনি তার সময়ে আল্লাহ্ মানুষকে যে সম্পদ ও
প্রাচুর্ষ দান করেছেন তার উল্লেখ করলেন ৷৩ তারপর বললেন, আমি তাে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ণ্ক
ক্ষুধার তাড়নায় কুকড়ে যেতে দেখেছি, পেট ভরার মত দাকাল’২ খেজুরও৩ তার জুটাতা না ৷
ও বার হাদীস সংগ্রহ থেকে মুসলিম তা বর্ণনা করেছেন ৷ সহীহ্ বুখারীতে রয়েছে যে, (একবার)
হযরত আবু তালহ৷ তার ত্রীকে বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর স্বরে
ক্ষুধার আভাস পেলাম ৷ আর হাদীসখানি দালাইলুন্ নবুওয়্যা গ্রন্থে এবং আবুল হায়ছাম ইবন
তায়হান এর কাহিনীতে আসছে যে (একবার) হযরত আবু বকর ও উমর ক্ষুধার তাড়নায়
বাড়ি থেকে বের হলেন, এমন সময় হঠাৎ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বের হলেন, তখন তিনি তাদেরকে
জিজ্ঞেস করলেন, কী তোমাদের ঘর-ছাড়৷ করল ? তারা বললেন, ক্ষুধা ৷ তখন তিনি বললেন,
শপথ ঐ সভার, যার কুদরতি ৩হাতে আমার প্রাণ, ণ্তামাদেরাক যা ঘর ছাড়া করেছে আমাকেও
তাই ঘর ছাড়া করেছে ৷ এরপর তারা সকলে হায়ছাম ইবন তায়হানের বাগানে গেলেন, তখন
তিনি তাদেরকে গাছপালা (তরতাজা) খেজুর খাওয়ালেন এবং তাদের জন্য একটি বকরীও
জবাই করলেন, তখন তারা তা খেলেন এবং ঠাণ্ডা পানিও পান করলেন ৷ এ সময় নবীজী
বললেন, এই হল এ নিআমত যে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে ৷
ইমাম তিরমিযী আবদৃল্লাহ্ আবু যিয়াদ সুত্রে হযরত আবু তালহ৷ থেকে বর্ণনা করেন ৷
একবার আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে ক্ষুধার অনুযােগ করে আমাদের পেটে বাধা একটি
পাথর বের করে দেখালাম, তখন নবীজী তার পেটে বাধা দু’টি পাথর আমাদেরকে দেখালেন ৷
তারপর তিনি বলেন, হাদীসখানি গরীব ৷
১ অতি নিকৃষ্ট ও নিম্নমানের খেজুর ৷-অনুবাদক সােয়৷ তিন কেজি পরিমাণ ৷ ষ্সম্পাদক
২ ব্যক্তিগত জীবনে কৃচ্ছতাপালনকারী হলেও অতিথিদের আগমণে নবীগৃহে গোশতের ব্যবস্থা করা
হতো ৷-জালালাবাদী (সম্পাদক)
হিশাম ইবন উরওয়ার হাদীস সংগ্রহ থেকে হযরত আইশার বরাতে বুখারী ও মুসলিমে
রয়েছে যে, (একবার) তাকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বিছানা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বললেন, তা ছিল খেজুর গাছের আশ ভর্তি চামড়ার তােষক ৷ হাসান ইবন আরাফা হযরত
আইশা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, (একবার) জনৈক আনাসারী নারী আমার কক্ষে
প্রবেশ করল, তখন সে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বিছানা দেখল, আর তা ছিল দু ভাজ করা আবা১
তখন স্লে গিয়ে তৎক্ষণাৎ আমার কাছে পশম ভর্তি একটি তােষক পাঠিয়ে দিল ৷ এরপর
রাসুলুল্লাহ্ (না) আমার কক্ষে প্রবেশ করে বললেন, হে আইশা! এটা কী ? আইশা বলেন,
আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্৷ অমুক আনসারী নারী আমার কাছে এসেছিল, যে আপনার
বিছানা দেখেগ্ গিয়ে আমার কাছে এটা পাঠিয়ে দিয়েছে ৷ তখন তিনি বললেন, তৃমি তা ফিরিয়ে
দাও ৷ আইশা বলেন, কিন্তু আমি তা ফেরত পাঠালাম না আমার গৃহে৩ তা থাকবে এ বিষয়টি
আমার কাছে মোহনীয় ঠেকেছিল ৷ এমনকি তিনি তা তিনবার বললেন ৷ আইশা বলেন, তখন
তিনি বললেন, হে আইশা তৃমি তা ফিরিয়ে দাও আল্লাহর কসম আমি যদি চাইতাম তাহলে
আল্লাহ্ আমার সাথে সাথে স্বর্ণ ও রৌগ্যের পাহাড় চা ৷লিত করতেন ৷ তিরমিযী তার শামইিলে
আবুল খাত্তাব জাফর ইবন মুহাম্মাদের পিতা সুত্রে বর্ণনা করেন যে,৩ তিনি বলেছেন,
একবার আইশা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার গৃহে নবীজীর বিছানা কী ছিল ? জবাবে
তিনি বলেন, খেজুর গাছের আশ ভর্তি চামড়ার তােষক ৷ আর হযরত হাফসাকে জিজ্ঞাসা করা
হল : রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বিছানা কী ছিল ? তিনি বললেন, তা ছিল একটি পশযী জুব্বা,
যাকে আমরা দু ভাজ করে দিতাম এবং তিনি তার উপর ঘুমাতেন ৷ এরপর কোন এক রাত্রে
আমি ভাবলাম, আমি যদি এটিকে চারর্ভাজ করে দিই তাহলে তা আরো ণ্কামল ও
আরামদায়ক হবে ৷ এরপর আমরা তার জন্য তা চার ভীজ করে বিছিয়ে দিলাম ৷ তারপর (সে
বিছানায় রাত্রে শ্যেয়ার পর) সকালে তিনি বললেন, গতরাত্রে তোমরা আমাকে কী বিছিয়ে
দিয়েছিলে ? হাফসা বলেন, আমরা বললাম, তা আপনারই বিছানা, তবে আমরা তা চার র্ভাজ
করে দিয়েছিলাম ৷ আমরা বললাম, তা আপনার জন্য কােমলতর ৷ তিনি বললেন, তাকে
পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দাও ৷ কেননা তার কােমলতা গত রাত্রে আমাকে তাহাজ্জ্বদ থেকে বিরত
রেখেছে ৷ তাবারানী মুহাম্মাদ ইবন আবান হাকীম ইবন হিযাম সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
বলেছেন যে, একবার আমি ইয়ামানে গিয়েছিলাম, সেখানে আমি যী-য়াযানের জোড়া পোশাক
খরিদ করলাম এরপর তা রাসুলুল্লাহ্ (সা) এব কাছে উপচৌকনরুপে পাঠালাম, কিন্তু তিনি তা
ফিরিয়ে দিলেন ৷ এরপর আমি তা বিক্রি করতে চাইলে তিনি তা খরিদ করে নিলেন, এরপর
তা পরিধান করে তার সাহাবীগণের কাছে আসলেন ৷ এই পােশাকে তার চেয়ে সুন্দর কাউকে
আমি দেখিনি ৷ তখন আমি আত্মসংব বরণ করতে না পেরে আবৃত্তি করলাম
ললাটের২ ও পায়ের শুভ্রতা সুস্পষ্টরুপে প্রকাশ পাওয়ার পর বিচারকগণ আর অশ্বেব
শ্রেষ্ঠত্বে র ব্যাপারে কি রায় প্রদান করবেন ৷
১ হাতাবিহীন ঢিলেঢালা আলখেল্লা বিশেষ ৷
২ ললাট ও পায়ে শুভ্র চিহ্ন থাকা ঘোড়ার সদ্বৎশজাত হওয়ার প্রমাণ ৷-অনুবাদক
আর যখন তারা তার বীরত্বের যথার্থত৷ পরিমাপ করে তখন তিনি অপ্রতিহত রক্ত
প্রবাহিত কারী তরবড়ারির গুণে তাদেরকে ছাড়িয়ে যান ৷
তখন নবীজী তা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন, তারপর ঘরে নিয়েত
হযরত উমামা ইবন যায়দকে পরিয়ে দিলেন ৷
ইমাম আহমদ, হুসায়ন ইবন আলী হযরত উম্মু সালামা সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেছেন, (একবার) বিবর্ণ ও ভারী চেহারা নিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমার কাছে আসলেন ৷
তিনি (উম্মু সালামা) বলেন, আমি ধারণা করলাম, তা কোন ব্যথার কারণে হয়ে থাকবে ৷ তখন
আমি তাকে বললাম, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্া৩৷ আপনার চেহারা বিবর্ণ ও ভারী দেখছি এটা কি কোন
ব্যথার কারণে ? তখন তিনি বললেন, না বরং ঐ সাতটি দীনার যা আমাকে গতকাল দেয়া
হয়েছে অথচ আমি তা এখনও ব্যয় করিনি তােষকের নীচের এক প্রান্তে রেখে আমি তা ভুলে
গিয়েছি ৷ এটি ইমাম আহমদের একক বর্ণনা ৷ ইমাম আহমদ আবু সালামা আবু উমামা
ইবন সাহ্ল সুত্রে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন (একবার) আমি এবং উরওয়৷ ইবন যুবায়র
হযরত আইশার কক্ষে প্রবেশ করলাম, তখন তিনি বললেন তোমরা যদি নবী করীম (স ) কে
একদিন তার মৃত্যু শয্যায় দেখতে তিনি বলেন, আমার কাছে তার ছয়টি দীনার রাখা ছিল
(রাবী মুস৷ বিন জুবায়র বলেন, অথবা সাত ঢি) আইশা বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা) আমাকে
সেগুলো বিলিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন ৷ তিনি বলেন, কিন্তু ইতিমধ্যে নবীজীর ব্যথা ও অসুস্থতা
আমাকে ব্যস্ত রাখল এবং পরিশেষে আল্লাহ্ত তাকে আরোগ্য দান করলেন ৷ আইশা বলেন,
এরপর তিনি আমাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বললেন, ছয় দীন৷ ৷রের অথবা সাত
দীনারের কী হল ? আমি বললাম, না আল্লাহর কসমৰু (আমি তা বিলাতে পারিনি) আপনার
অসুস্থতা আমাকে তা থেকে বিরত রেখেছিল ৷ তিনি বললেন, তখন তিনি তা আনালেন এবং
তা হাতে ধারণ করে বললেন, আল্লাহর নবীর কী ধারণা, যদি যে এগুলি নিজের কাছে রেখে
আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে ? (তখন আল্লাহর কাছে কী জবাব হবে ?) এটি ইমাম আহমদের
একক বর্ণনা ৷
কুতায়বা জাফর ইবন সুলায়মান আনাস সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্
(সা ) কোন কিছু আগামীকালের জন্য মজুদ করতেন না ৷ এই হাদীসখানি বুখারী ও মুসলিম
শরীফেও বিদ্যমান ৷ মর্মার্থ হল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এমন কিছু তিনি আগামীকালের জন্য মজুদ
করতেন না, যেমন খাবার (রান্না করা) ও এ জাতীয় দ্রব্য ৷ এর প্রমাণ বুখারী ও মুসলিমে
হযরত উমর সুত্রে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি বলেন, বানু নড়াযীরের যে সম্পদ আল্লাহ তার
রাসুলকে মুসলমানদের অশ্ব বা উষ্ট্ৰ বাহিনীর আক্রমণ ছাড়ইি দান করেছিলেন, সেখান থেকে
তিনি পোয্যপরিজনের এক বছরের থােরাকী-খরচ৷ পৃথক করে ব্লেখেছিলেন ৷ তারপর যা
অবশিষ্ট ছিল তা যুদ্ধের বাহন ও অস্ত্র সংগ্রহে আল্লাহর রাহে জিহাদের প্রস্তুতি-উপকরণ
করেছিলেন ৷ ইমাম আহমদের পরবর্তী রিওয়ায়ড়া৩ টিও আমাদের উল্লেখিত রিওয়ায়াতের
সমর্থক ৷ আহমদ মারওয়ান ইবন যুআবিয়৷ হিলাল ইবন সুওয়ায়দ সুত্রে বর্ণনা করেন
যে, তিনি বলেছেন, আমি আনাস ইবন মালিককে বলতে শুনেছি (একবার) রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর জন্য তিনটি (ভুনা করা) পাখি হাদিয়া আসল ৷ তখন তিনি তার খাদিমকে একটি
খাওয়ালেন ৷ পরদিন তিনি (সম্ভবত আইশা রা) অবশিষ্ট (পাখি) তড়াকে পরিবেশন করলেন ৷
তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) র্তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে আগামী দিনের জন্য কোন কিছু
(খাবার) উঠিয়ে রাখতে নিষেধ করিনি ? কেননা, আল্লাহ্ র্তাআলা প্রতিটি আগামী দিনের
রিযিক (পৃথকভাবে) দান করে থাকেন ৷
এ প্রসঙ্গে হযরত বিলালেৱ হাদীস
ইমাম বায়হাকী, আবুল হুসায়ন ইবন বুশরান আবু হুরায়রা সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
(একবার) বাসুলুল্লাহ্ (সা) হযরত বিলালেৱ কক্ষে প্রবেশ করে তার কাছে থেজুরের কয়েকটি
দ্ভুপ দেখতে পেয়ে বললেন, হে বিলাল! এ কী ? বিলাল বললেন, এগুলি খেজুর, আমি মজুদ
করছি ৷ তিনি বললেন, তোমার সর্বনাশ আসন্ন, বিলাল! তুমি কি ভয় করো না যে, এগুলোর
জন্য জাহান্নড়ামে (তোমার জন্য) প্রজ্জ্বলিত সমুদ্র সৃষ্টি হবে ? হে বিলাল ! (দান সদকার মাধ্যমে)
ব্যয় করতে থাক এবং আরশাধিপতি থেকে কোন প্রকার কমতির আশংকা করো না ৷ বায়হাকী
তার নিজ সনদে আবু দাউদ সিজিসৃতানী আবদৃল্লাহ্ আল হুরায়নীর বরাঃত বর্ণনা করেন ৷
তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর মুয়ড়াজ্বজিন হযরত বিলালেৱ সাথে হাল্ব
শহরে১ সাক্ষাৎ করলাম ৷ তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে বিলালা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
ব্যয় (অর্থাৎ দান-সদকা) সম্পর্কে আমাকেবলুনঃ ৷ তখন তিনি বললেন, তীর নবুওয়াত লাভের
পর থেকে ওফাত পর্যন্ত তার (প্রায়) সব ব্যয় সংক্রান্ত দায়িতুই তার পক্ষ থেকে আমি পালন
করতাম ৷ তার কাছে যখন কোন মুসলমান আসত আর তিনি তাকে অভাবী মনে করতেন,
তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিতেন, তখন আমি বেরিয়ে ৰুপড়তাম এবং কারও থেকে ধার
নিতাম, তারপর তা দিয়ে চাদর ও অন্য কিছু কিনে তাংক পরিধেয় ও আহার্য দান করতাম ৷
অবশেষে একদিন এক মুশরিক আমার পথ আগলে দাড়িয়ে বলল, হে বিলাল! আমার যথেষ্ট
অর্থ সম্পদ রয়েছে ৷ সুতরাং তুমি আমি ছাড়া আর কারও থেকে ধার নিও না ৷ তখন আমি তাই
করলাম ৷ এরপর কোন একদিন আমি উযু করে আযান দেয়ার জন্য দীড়িয়েছি এমন সময় এ
মুশরিককে একদল ব্যবসায়ীর মাঝে দেখতে পেলাম ৷ তারপর সে যখন আমাকে দেখতে পেল
তখন বলল, হে হাবশী (নিগ্রো) ! বিলাল বলেন, আমি বললাম, বল ৷ তখন সে আমার উপর
আক্রমণ করল এবং কঠোর বা গুরতর অন্যায় কথা বলল ৷ সে বলল, তুমি কি জান, একমাস
পুর্ণ হতে আর ক’দিন বাকী ? আমি বললাম, সামান্য কয়েক দিন ৷ তখন সে বলল, তোমার
মেয়াদ পুর্ণ হতে আর চার দিন বাকী ৷ এরপর আমার পাওনার বিনিময়ে আমি তোমাকে
পাকড়াও করব ৷ কেননা, তোমাকে যে ঋণ আমি দিয়েছি তা তোমার বা তোমার নবীর
সম্মানার্থে নয়, আমি তাে এইজন্য তোমাকে ঋণ দিয়েছি যে, তার মাধ্যমে তুমি আমার দাসে
পরিণত হয়ে আর আমি তোমাকে মেষ চরাতে পাঠড়াব যেমনটি তুমি পুর্বে করতে ৷ তিনি
(বিলাল ) বলেন, তখন আমার অন্য দশ জনের মত মনকেও দুশ্চিন্তায় পেয়ে বসল ৷ তখন আমি
( সেখান থেকে) প্রস্থান করলাম এবং নামাষের আমান দিলাম ৷
১ আল্যেপ্পা নগরী ৷-জালালাবাদী (সম্পাদক)
অবশেষে আমি যখন ’ ইশার নামায পড়লাম এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার সহধর্মিণীগণের
কাছে ফিরে গেলেন তখন আমি তার সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলাম এবং তিনি আমাকে
অনুমতি দিলেন ৷ তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার পিতামাতড়া আপনার জন্য
কুরবান হোন, ঐ মুশরিকটি যার কথা আমি আপনার কাছে উল্লেখ করেছিলাম, যে আমি তার
নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করতাম, যে আজ আমাকে এমন এমন কথা বল্যেছ (অর্থাৎ ঋণ
পরিশোধের জন্য চাপ দিয়েছে ৷) অথচ আপনার বা আমার কারও কাছেই আমার ঋণ
পরিশোধের ব্যবস্থা নেই ৷ সুতরাং সে তো আমাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বে ৷ তখন তিনি আমাকে
ইসলাম গ্রহণকারী এই মহল্পাবাসীদের কারও কারও কাছে যেতে বললেন, যাতে আল্লাহ্ তার
রাসুলকে এমন কিছু দান করেন যা দিয়ে আমি আমার দেনা পরিশোধ করবো ৷ তখন আমি
সেখান থেকে বের হয়ে আমার বাড়িতে আসলাম এবং আমার তরবারি, বল্লম, বর্শা ও পাদৃকা
আমার শিয়রের কাছে রাখলাম, আর আমার মুখমণ্ডল দিগন্তমুখী করে রাখলাম ৷ ফলে যখন
আমার ঘুম আসছিল তখনই আমি জেগে উঠছিলাম ৷ এরপর যখন রাত ঘনিয়ে এসেছে অনুভব
করলাম তখন ঘুমিয়ে পড়লাম ৷ অবশেষে ভোরের প্রথম আলো প্রকাশ পেল ৷ তখন আমি চলে
যেতে উদ্যত হলাম ৷ হঠাৎ শুনতে পেলাম এক ব্যক্তি ডেকে বলছে : হে বিলাল! রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর ডাকে সাড়া দাও ! তখন আমি তার কাছে আমার জন্য রওয়ানা হলাম ৷ এমন সময়
দেখতে পেলাম পিঠে বোঝাসহ চারটি উট ৷ তখন আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে এসে তীর
অনুমতি প্রার্থনা করলাম ৷ তখন নবী করীম (সা) আমাকে বললেন, (বিলাল) তুমি সুসংবাদ
গ্রহণ কর ৷ আল্লাহ তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছেন ৷ তখন আমি আল্লাহর হামদ ও
শোকর আদায় করলাম, আর তিনি বললেন, তুমি কি বসিয়ে রাখা উট চারটি অতিক্রম করে
আসনি ? তিনি বলেন, জবাবে আমি বললাম, অবশ্যই ৷ তিনি বললেন, এই উটগুলি এবং
এগুলোর পিঠের উপর যা কিছু রয়েছে তুমি সবকিছুর-মালিক ৷ তখন আমি দেখতে পেলাম
ওগুলোর পিঠে খাবার ও পোশাক সামগ্রী রয়েছে যা ফাদাকের শাসক তার কাছে উপচৌকন
স্বরুপপাঠিয়েছেন ৷ এগুলি তুমি নিয়ে যাও এবং তোমার দেনা পরিশোধ করে দাও ৷ বিলাল
বলেন, আমি তাই করলাম, প্রথমে সেগুলোর পিঠের বোঝাগুলি নামিয়ে সেগুলোকে ঘাস
খাওয়ালাম ৷ তারপর ফজরের আযান দিলাম ৷ যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) নামায শেষ করলেন,
তখন আমি (জান্নাতৃল) বাকীর দিকে বের হয়ে গেলাম ৷ তখন আমি কানে আঙ্গুল ভরে
উচ্চস্বরে ঘোষণা করলাম, যাদের রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে কোন পাওনা আছে তারা যেন
উপস্থিত হয় ৷ এভাবে আমি পণ্যসামঘী বিক্রয় করে করে দেনা পােধ করতে থাকলাম ৷ এমন
কি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে পৃথিবীর আর কারও কোন পাওনা অবশিষ্ট রইল না ৷ পরিশেষে
আমার কাছে দুই বা দেড় উকিয়া স্বর্ণ রয়ে পেল ৷ তখন আমি মসজিদে পেলাম; কিন্তু বেলা
হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ লোক চলে গিয়েছে ৷ তখন আমি দেখতে পেলাম রাসুলুল্লাহ্ (সা)
একাকী মসজিদে বসে আছেন, আমি তাকে সালাম করলে তিনি আমাকে বললেন, তোমার
পুর্বের ঋণের কী অবস্থা ? আমি বললাম, আল্লাহর রাসুলের সকল ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে,
এখন আর কিছু বাকি নেই ৷ তিনি বললেন, কিছু বাড়তি রয়েছে কি ? আমি বললাম হী, দুই
দীনার ৷ তিনি বললেন, দেখ যে দুটি থেকে আমাকে স্বস্তি দিতে পার কিনা ? যে দুটি থেকে
তুমি আমাকে রেহাই না দেওয়া পর্যন্ত আমি আমার পরিবারবর্গের কারও কাছে যাচ্ছি না ৷ কিন্তু
আমাদের কাছে কেউ (যাঞ্চাকারী) আসল না ৷ তাই তিনি মসজিদে রাত্রি যাপন করলেন ৷
এমনকি দ্বিতীয় দিন সকাল ও দুপুর মসজিদেই অবস্থান করলেন ৷ অবশেষে দিন শেষে দুজন
আরোহী আসল ৷ তখন আমি তাদেরকে নিয়ে গিয়ে দীনার দুটি দ্বারা তাদের জন্য খাদ্য ও
পােশাকের সংন্থান করলাম ৷ অবশেষে যখন তিনি ইশার নামায পড়লেন তখন আমাকে ডেকে
জিজ্ঞেস করলেন তোমার কাছের দীনার দুটির কী খবর ? আমি বললাম, তা থেকে আল্লাহ
আপনাকে নিকৃতি দিয়েছেন ৷ তখন তিনি তার কাছে দীনার দুটি থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হতে
পারে এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ আকবার ও আ ৷লহামদুলিল্লাহ্ বললেন ৷ এরপর আমি
তার পিছু পিছু চললাম ৷ অবশেষে তিনি তার শ্রীদের কাছে এসে তাদেরকে একজন একজন
করে সালাম করলেন এবং তিনি তার রাত্রি যাপনন্থলে পৌছলেন ৷ আর এটইি ঐ বিষয় যে
সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে ৷
তিরমিযী তার শামাইলে হারুন ইবন মুসা উমর ইবনুল খাত্তাব সুত্রে বর্ণনা করেন
যে, (একবার) এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে এসে ভিক্ষা চাইল ৷ তখন তিনি বললেন,
(এই মুহুর্তে) আমার কাছে তোমাকে দেয়ার মত কিছু নেই, তবে তুমি আমার দায়িত্বে
বাকিতে কিছু কিনে নাও ৷ আমার কাছে কিছু আসলে আমি তা পরিশোধ করে দিব ৷ তখন
উমর (রা) বললেন, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্! আমি তাকে দিয়েছি, আর যা আপনার সামর্থ্যাতীত, তার
দায়িত্ব আল্পাহ্ আপনাকে দেননি ৷ তখন নবী করীম (সা) উমরের কথা তেমন পছন্দ করলেন
না ৷ এ সময় জনৈক আনসারী বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি দান করে যান আর
আরশাধিপতির পক্ষ থেকে কমতির আশঙ্কা করবেন না ৷ তখন তিনি মুচকি হাসলেন এবং
আনসারীর কথায় তার চেহারায় প্রসন্নতার মৃদু হাসি প্রকাশ পেল ৷ এরপর তিনি বললেন,
এমনটি করতেই আমি আদিষ্ট হয়েছি ৷ হাদীসে এ-ও রয়েছে, তারা আমার কাছে চাবেই; আর
আল্লাহ্ তাআলাও আমার জন্য কৃপণতা অনুমোদন করেন না ৷ হুনায়নের দিন যখন লোকেরা
তার কাছে গনীমত বণ্টনের জন্য আবেদন করল, তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আমার
কাছে যদি এই সকল বাবলা গাছের সংখ্যার ন্যায় (অগগিত) ধন-সম্পদও থাকত তাহলেও
আমি তার সব তোমাদের মাঝে বণ্টন করে দিতাম আর তোমরা আমাকে কৃপণ ব্যয়কুণ্ঠ কিৎবা
মিথ্যাশ্রয়ী পেতে না ৷ তিরমিযী, আলী ইবন হাজার রবী বিনত মুআববিয ইবন উমর
সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (রবী) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে বেশ কিছু
থেজুরের র্কাদি ও আঙুরের ছড়া নিয়ে আসলাম ৷ তখন তিনি আমাকে তার হাতের মুঠি ভরে
গহনা বা সোনা দিলেন ৷
ইমাম আহমাদ, সুফিয়ান হযরত আবু সাঈদ (রা) সুত্রে নবী করীম (সা) থেকে
বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, কী৩াবে আমি স্বস্তি লাভ করব, অথচ শিঙ্গাওয়ালা তার শিক্ষা
মুখে পুরে নিয়েছেন এবং কপাল ঝুকিয়ে উৎকর্ণ হয়ে প্রতীক্ষায় আছেন কখন তাকে (শিঙ্গায়
কুক দেয়ার জন্য) আদেশ করা হয় ৷ তখন মৃসলমানগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! তাহলে
আমরা কী বলব ৷ তিনি বললেন, তোমরা বলবে
আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক ৷ আমরা তারই
উপর ভরসা রাখি ৷ তিরমিষী ইবন আবু উমর আবু সাঈদ খুদরী সুত্রে হাদীসখানি বর্ণনা
করেছেন এবং তা ন্হাসান’ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ এছাড়া হাদীসখানি অন্য সুত্রে এবং ইবন
আব্বাসের হাদীস সংগ্রহ থেকেও বর্ণিত আছে, যেমনটি শীঘ্রই যথাস্থানে বর্ণিত হবে ৷
নবী করীম (না)-এর বিনয়
নবী করীম (না)-এর বিনয়ের আরও বহু প্রকাশ রয়েছে ৷ ইবন মাজা, আহমদ ইবন
মুহাম্মাদ, ইবন ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ সুত্রে খাব্বার (রা) থেকে আল্লাহ তাআলার এই
বাণী বর্ণিত :
“যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল-সন্ধ্যায় তার সভুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে, তাদেরকে
তৃমি তাড়িয়ে দিও না ৷৩ তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কর্মের
জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয় যে তুমি তাদেরকে তাড়িয়ে দিবে; তাহলে তুমি যালিমদের
অন্তর্ভুক্ত হবে” (সুরা আন আম ৫২) ৷
প্রসঙ্গে তিনি (খাব্বাব) বলেন, একবার আকরা ইবন হাবিস আত তামীমী এবং উয়ায়না
ইবন হিসন আল-ফাযারী এসে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে সুহায়ব, বিলাল, আমার, খাব্বাব (রা)
প্রমুখ অসহায় ও দুর্বল কতিপয় মুমিনের মাঝে বসা অবস্থায় পেল ৷ তারা যখন এদেরকে তার
পাশে দেখল তখন তাদেরকে হেয় জ্ঞান করে একাস্তে তার সাথে মিলিত হয়ে বলল, আমরা
চাই আপনি আমাদের জন্য এমন এক বিশেষ মজলিসের ব্যবস্থা করবেন যাতে করে আরবরা
আমাদের ৫শ্রষ্ঠতু উপলব্ধি করতে পারে ৷ কেননা, আপনার কাছে বিভিন্ন আরব গোত্রের
প্রতিনিধিদল আণমন করে থাকে ৷ তাই আমরা লজ্জাবােধ করি যে আরবরা আমাদেরকে এই
সকল ক্রীতদাসদের সাহচর্যে দেখবে ৷ আমরা যখন আসর আপনি তখন ওদেরকে আপনার
মজলিস থেকে দুরে সরিয়ে দেবেন ৷ এরপর আমরা নিক্রান্ত হলে আপনি পুনরায় ইচ্ছা করলে
তাদের সাথে রসবেন (এতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না) ৷ তখন তিনি বললেন, আচ্ছা
, (তাই হবে) ৷ তারা বলল, তাহলে আপনি এই ম র্ম আমাদের অনুকুলে একটি চুক্তিপত্র লিখে
দিন ৷ রর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি একটি সহীফ৷ (কাগজ) আনতে বললেন এবং হযরত
আলীকে লিখার জন্য ডেকে পাঠালেন, আর আমরা তখন এক প্রান্তে বসা ৷ এমন সময় হযরত
জিবরাঈল (আ) অবতরণ করে তিলাওয়াত করলেন :
ব্লু ন্
তারপর তিনি আল আকরা ইবন হাবিস এবং উয়ায়না ইবন হিসন এর কথা উল্লেখ করে
এের্দুট্রুষ্ ছুাৰুাৰুাছুটু
“এভাবে তাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি যেন তারা বলে, আমাদের মধ্যে
কি এদের প্রচ্ছি আল্লাহ অনুগ্রহ করলেন ? আল্লাহ কি কৃত তজ্ঞদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত
নন? (৬আন আমং ৫৩) ৷
তারপর বললেন, ইটু
১ আয়াতটির অনুবাদ ইতিপুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ৷