চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের ফুজু মসজিদটি ইসলামের ইতিহাস এবং মুসলমানদের প্রাচীন ঐতিয্যের নিদর্শন।
পূর্ব চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্ম রয়েছে। মাত্র কয়েক যুগ আগে এই প্রদেশে ইসলাম প্রবেশ করেছে। প্রদেশটি নদীর উপকূলে হওয়ায় ব্যবসার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ব্যাপক আগমন ঘটেছে এই অঞ্চলে। আর সেই সুবাধে তাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রবেশ করেছে এই অঞ্চলে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনের এক কোটি ২০ লাখ মুসলমানের মধ্যে এক লক্ষ দশ হাজার রয়েছে ফুজিয়ান প্রদেশে।
ফুজিয়ান শহরে রয়েছে অনেক প্রাচীন ঐতিহাসিক ফুজু মসজিদ। মসজিদটি শহরের ব্যস্ততম এলাকায় একটি গীর্জার সামনে অবস্থিত। ৯০৭ থেকে ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। প্রথমে এটি একটি বৌদ্ধ মন্দিরে ছিল। এরপর অনেক দিন তা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। 13 ও 14 শতকের মাঝামাঝি সময়ে মঙ্গোল অঞ্চলটি দখল করার পর এটাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।
সর্বপ্রথম এই পরিত্যাক্ত মন্দিরটিকে কে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিল- এ বিষয়ে একাধিক মত রয়েছে। একটি অভিমত এমন রয়েছে, ফুজিয়ানের শিয়া বাসিন্দাদের গার্ডের সদস্যরা- যারা তৎকালীন ব্যবসায়ীদের ঘোড়া সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করত- তারাই এটিকে সর্বপ্রথম মসজিদ বানায়।
১৫৪১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি অগ্নিকান্ডের কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। পরে তা পুনরায় নির্মিত হয়েছিল এবং আজ এটি এক ঐতিহাসিক মসজিদ।
মসজিদটির দেয়াল সাদা-কালো পাথর খচিত, দৃষ্টিনন্দন ছাদ এবং অন্যান্য মূল্যবান স্তম্ভ দ্বারা নির্মিত মসজিদটি দেখতে খুবই সুন্দর। মসজিদের প্রতিটি কারুকার্যই চীনা সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে।
চীনের এক কোটি বিশ লাখ মুসলমানের মধ্যে 1.5 থেকে 4 শতাংশ মুসলমান। যাদের অধিকাংশই সুন্নি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই পূর্ব তুর্কিস্তানে রয়েছেন। পূর্ব তুর্কীস্তানকে চীন থেকে পৃথক করার জন্য এবং সেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
চীনে ইসলাম প্রবেশ করেছে দুই রাস্তায়। স্থল পথে এসেছে পশ্চিম থেকে। উমাইয়া আমলে পূর্ব তুর্কিস্তান বিজিত হয়। হিজরীর প্রথম শতাব্দিতে সাহাবী হজরত কুতাইবা বিন মুসলিম বাহেলী রা. এর কাফেলা চীন সীমান্তে পৌঁছে। যদিও ইসলামী বিজয়গুলো চীনের ভূখন্ডে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তবুও চীন ও পশ্চিম এশিয়ার মাঝে বাণিজ্যিক কাফেলার আসা যাওয়া ছিল। সেই সুবাধে পশ্চিম চীনে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারিত হয়। তৎকালীন ব্যবসায়ীরা রেশমের আমদানী রপ্তানী করত।
সমুদ্র পথেও ইসলাম প্রবেশ করেছে চীনে। পূর্ব চীনে ইসলাম আসার ক্ষেত্রে সমুদ্র পথই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। ২১ হিজরী মোতাবেক ২৫১ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৮৪ হিজরী মোতাবেক ৮০০ খ্রিস্টাব্দে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের শেষের দিকে হজরত উসমান ইবনে আফফান রা. এর শাসনামলে অনেক ইসলামী কাফেলা এই অঞ্চলে আসে এবং উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে তারা চীনের ভেতরে প্রবেশ করে। তাদের মাধ্যমেও এই অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে।