রাসুলুল্লাহ্ (না) এর সঙ্গে রুকানার কুন্তি এবং রাসুলুল্লাহ্
(না) এর আহ্বানে বৃক্ষের আগমন
ইবন ইসহাক বলেন, আবু ইসহাক ইবন ইয়ড়াসার বলেছেন, রুকানা ইবন আবৃদ ইয়াযীদ
ইবন হাশিম ইবন মুত্তালিব ইবন আবৃদ মানাফ ছিল কুরায়শ বংশের সেরা মল্লবীর ৷ এক দিন
এক পিরিসংকটে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে তার সাক্ষাত হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না) তাকে বললেন,
হে রুকানা! তুমি কি আল্লাহ্কে ভয় করবে না আর আমি তোমাংক যে দিকে আহবান করছি
তাতে কি সাড়া দেবে না ? সে বলল, আমি যদি বিশ্বাস করতাম যে, আপনি যা বলছেন তা
সত্য , তাহলে আমি অবশ্যই আপনার অনুসরণ করতাম ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন তাকে বললেন,
আচ্ছা, বল দেখি, আমি যদি কুন্তিতে তোমাকে পরাজিত করতে পারি, তবে কি তুমি বিশ্বাস
করবে যে, আমার আনীত ধর্ম সত্য ? সে বলল, হীদ্ব, বিশ্বাস করব ৷ তিনি বললেন, তবে প্রস্তুত
হও ৷ এসো, কুস্তিতে আমি তোমাকে পরাস্ত করি! যে মতে কুন্তি শুরু হল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (মা)
তাকে মাটিতে ফেলে এমন জোরে চেপে ধরলেন যে, তার কিছুই করার শক্তি রইল না ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে ছেড়ে দিলেন ৷ সে বলল, পুনরায় শক্তিপরীক্ষা হোক ৷ পুনরায় কুন্তি শুরু
হল ৷ এবারও সে পরাস্ত হল ৷ সে বলল, হে মুহাম্মাদ ! আল্লাহ্র কসম, এটা তো পরম বিস্ময়ের
কথা যে, আপনি আমাকে পরাজিত করলেন ৷ রাসুলুল্লড়াহ্ (সা) বললেন, তুমি যদি আল্লাহ্কে ভয়
কর এবং আমার অনুসরণ কর, তবে আমি তোমাকে আরো অধিক বিস্ময়কর ঘটনা দেখাতে
পারি ৷ সে জিজ্ঞেস করল, সেটি কি ? তিনি বললেন, ওই যে, দুরে বুক্ষ দেখছ, আমি সেটিকে
ডাকলে সেটি আমার নিকট এসে পৌছবে ৷ রুকানা বলল, তবে সেটিকে ডাকুন ৷ তিনি
বৃক্ষটিকে ডাকলেন ৷ সেটি এগিয়ে এল এবং রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সম্মুখে দাড়িয়ে গেল ৷ এবার
তিনি সেটিকে নিজের জায়গায় ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন ৷ সেটি স্বন্থানে ফিরে গেল ৷
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রুকানা তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বলল, হে বনু আবৃদ মানাফ !
তোমাদের এই লোককে নিয়ে তোমরা বিশ্ববাসীকে জাদু প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ করতে পারে৷ ৷
আল্পাহ্র কসম, তার চাইতে বড় জাদুকর আমি কখনো দেখিনি ৷ সে যা দেখেছে এবং
রাসুলুল্লাহ্ (না) যা করেছেন তার সবই সে তাদেরকে জানাল ৷ ইবন ইসহাক এ ঘটনা
মুরসালভাবে এরুপই বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিযী (র) আবুল হাসান আসকালানীর সনদে রুকানা সুত্রে বর্ণনা
করেন যে, রুকানা একদিন রাসুলুল্লাহ্ (না) এর সাথে কুন্তি লড়েছিল ৷ কুন্তি লড়াইয়ে রাসুলুল্লাহ্
(না) তাকে পরাজিত করেন ৷ এরপর ইমাম তিরমিযী বলেছেন এটি একটি পরীব তথা একক
বর্ণনকােরীর বনাি ৷ তিনি এও বলেছেন যে আমরা আবুল হাসানকে চিনি না ৷ আমি বলি আবু
বকর শাফিঈ উত্তম সনদে হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে ইয়াযীদ ইবন
রুকানা একে একে তিনবার রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে কুস্তি লড়েছিল এবং তিনবারই তিনি
তাকে পরাস্ত করেছিলেন ৷ অবশ্য প্ৰতিবারের পরাজয়ের জন্যে ১ ৩ : করে বকরী প্রদানের শর্ত
ছিল ৷ তৃভীয়বারে সে বলেছিলৰু হে মুহাম্মদ ! আপনার পুর্বে অন্য কেউ কোন দিন আমার পিঠ
মাটিতে ঠেকাতে পারেনি ৷ আর আমার নিকট আপনার চাইতে ঘৃণ্ন্াণ্দ্বতর কেউ ছিল না ৷ এখন
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল ৷ তখন
রাসুলুল্লাহ (সা) উঠে দীড়ালেন এবং তার বকরীগুলাে ফেরত দিয়ে দিলেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর আহ্বানে বৃক্ষের এগিয়ে আমার ঘটনাটি সীরাত অধ্যায়ের পর
নবুওয়াতের দলীল অধ্যায়ে উত্তম ও বিশুদ্ধ সনদে একাধিকবার উল্লিখিত হবে ইনশাআল্লাহ ৷
ইতোপুর্বে আবু আশাদ্দায়ন থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, সে রাসুলুল্লাহ (না)-এর সাথে কুস্তি
লড়েছিল ৷ তাতে রাসুলুল্লাহ (না) তাকে পরাজিত করেছিলেন , এরপর ঐতিহাসিক ইবন
ইসহাক আবিসিনিয়া থেকে খৃক্টানদের আগমনের ঘটনা উল্লেখ করেছেন ৷ আগমনকারী
খৃক্টানদের সংখ্যা ছিল প্রায় বিশজন ৷ তারা মক্কায় এসেছিল এবং তাদের সকলেই ইসলাম গ্রহণ
করেছিল ৷ নাজাশীর আলোচনার পর এই ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে ৷
ইবন ইসহড়াক বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) মসজিদে বসলে খাবৃবাব আমার আবু ফুকায়হা,
সাকওয়ান ইবন উমাইয়ার আযাদকৃত দাস ইয়াসা , সুহায়ব (বা) এবং অন্যান্য দরিঃ সাহাবীগণ
তার নিকট বসতেন ৷ তাদেরকে দেখে কুরায়শের লোকেরা ঠাট্টা-বিদ্রপ্প করত ৷ তারা একে
অন্যকে রলত, ওই যে দেখ দেখ, ওরা মুহাম্মদের সঙ্গী-সাথী আমাদেরকে বাদ দিয়ে আল্লাহ কি
ওদেরকেই হিদায়াত ও সত্যধর্য দ্বারা ধন্য করেছেন ? মুহাম্মদ (না) যা এসেছে তা যদি প্রকৃতই
কল্যাণকর হত তবে ওই দীনহীন দরিদ্র ল্যেকগুলাে সেটি গ্রহণে আমাদের থেকে অগ্রগামী হতে
পারত না এবং আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বাদ দিয়ে ওদেরকে সেটি দ্বারা ধন্য করতেন না ৷
এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন ও
“যারা তাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তার সন্তুষ্টি লাভের জন্যে ডাকে, তাদেরকে
আপনি বিতাড়িত করবেন না ৷ তাদের কর্মের জবাবদিহিতার দায়িত্ব আপনার নয় এবং আপনার
কর্মের জবাবদিহিতার দায়িত্ব তাদের নয় যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন ৷ তা করলে
আপনি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন ৷ এভাবে ওদের একদলকে অপরদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি
যেন তারা বলে, আমাদের মধ্যে কি ওদের প্রতিই আল্লাহ অনুগ্নহ করলেন ? আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ
লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন ? যারা আমার আয়াতে ঈমান আনে, তারা যখন
আপনার নিকট আসে তখন তাদেরকে বলবেন্ “তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক
তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা তার কর্তব্য বলে স্থির করেছেন ৷ তোমাদের মধ্যে কেউ
অজ্ঞতাবশত মন্দকার্য করে তারপর তাওবা করে এবং ৎশোধিত হয়, তবে তো আল্লাহ
ক্ষমাশীল পরম দয়ালু (৬ : ৫২-৫৪ ) ৷
বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মড়ারওয়া পর্বতের নিকট গেলে অধিকাংশ সময় জাবর
নামের এক খৃপ্টান বালকের দোকানে বসতেন ৷ বালকটি ছিল বনী হাযরামী গোত্রের ক্রীতদাস ৷
ওরা বলত যে, জাবর যা নিয়ে আসে মুহাম্মদ (সা) তার অতিরিক্ত কিছুই জানতে ও বলতে
পারেন না ৷ তাদের এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন যে, তারা বলে :
তাকে শিক্ষা দেয় এক ব্যক্তি ৷ তারা যার প্রতি এটি আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী
নয় ৷ কিভু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবী ৷ (সুরা নাহ্ল : ১০৩ ৷
এরপর ইবন ইসহাক আস ইবন ওয়াইলকে উপলক্ষ সৃরা কাওছার নাযিল হওয়ার ঘটনা
উল্লেখ করেছেন ৷ আস ইবন ওয়াইল রাসুলুল্লাহ্ (সা) সম্পর্কে বলেছিল যে , তিনি নির্বৎশ ৷
অর্থাৎ তার কোন উত্তরাধিকারী নেই ৷ তার ইনতিকালের সাথে সাথে তার চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে ৷
এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই
নিবংশ ৷) (১০৮ কাওছার ১ ৩ ) অর্থাৎ মৃত্যুর আপনার শত্রুর পর কেউই তাকে সুনাম সৃথ্যাতির
সাথে স্মরণ করবে না ৷ যদিও তার প্রচুর সম্ভান-সম্ভতি রয়েছে ৷ বন্তুতঃ শুধু ছেলে মেয়ে ও
বংশধর বেশী হলে সুনাম-সুথ্যাতি ও প্রশংসার অধিকারী হওয়া যায় না ৷ এ সুরা সম্পর্কে
তাফসীর গ্রন্থে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি ৷ সকল প্রশংসা আল্লাহর ৷
আবু জাফর বাকির থেকে বর্ণিত যে , রাসুলুল্লাহ (সা)-এর পুত্র হযরত কাসিম (রা)-এর
ওফাতের সময় আস ইবন ওয়াইল এ মন্তব্য করেছিল ৷ ইনতিকালের সময় হযরত কাসিমের
(রা) বয়স এতটুকু হয়েছিল যে , তিনি তখন বাহনের পিঠে সওয়ার হতে পারতেন এমনকি
উটের পিঠেও ভ্রমণ করতে পারতেন ৷
এরপর ইবন ইসহাক আল্লাহ তাআলার বাণী
তারা বলে, তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন নাযিল হন না ? যদি আমি ফেয়েশতাই
নাযিল করতাম, তাহলে তাদের কর্মের চুড়ান্ত ফায়সালাই তো হয়ে যেত (আনআম : ৮) নাযিল
হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন ৷ বন্তুতঃ উবায় ইবন খালফ, যামআ ইবন আসওয়াদ, আস
ইবন ওয়াইল এবং নাযর ইবন হারিছ প্রমুখের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয় ৷ তারা
বলেছিল, হে মুহাম্মদ (সা) ! তোমার নিকট একজন ফেরেশতা প্রেরিত হন না কেন যিনি-
তোমার পক্ষ থেকে সোকজনের সাথে কথা বল্তেন ?
ইবন ইসহাক বলেন, আমার নিকট বর্ণনা পৌছেছে যে, একদিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওয়ালীদ
ইবন মুগীরা, উমাইয়া ইবন খালফ এবং আবু জাহ্ল ইবন হিশাম প্রমুখের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ৷
তারা তার নিন্দা করল এবং তাকে নিয়ে ঠ ট্টা-বিন্ধ্রপ করল ৷ এতে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) রেগে
দে ৷লেন ৷ তখন আল্লাহ তা আল৷ নাযিল করলেন ও
“তোমার পুর্বে অনেক রাসুলকেই৷ ঠ ট্টা বিদ্রাপ করা হয়েছে ৷ পবিণামে তারা যা নিয়ে
ঠাট্টা জ্জিপ করছিলত ৷-ই বিদ্র্যপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করেছে ৷”
আমি বলি, মহান আল্লাহ আরো বলেছেন :
তোমার পুর্বেও অষ্কৃনক রাসুলকে অবশ্যই মিথ্যাবদী বলা হয়েছিল কিন্তু তাদেরকে মিথ্যাবাদী
বলা ও ক্লেশ দেয়া সত্বেও তারা ধৈর্যধারণ করেছিল যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাদের নিকট
এসেছে ৷ আল্লাহর আদেশ কেউ পরিবর্তন করতে পারে না প্রেরিত পুরুষদের সম্বন্ধে কিছু সংবাদ
তো তোমার নিকট এসেছে (৬ : ৩৪) ৷
আল্লাহ তাআলা বলেন : ৷ ষ্তোমায় বিরুদ্ধে
বিদ্রাপকারীদের জন্যে আ ৷মিই যথেষ্ট ( ১ ৫ ৯৫) ৷
সুফিয়ান ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
বিরুদ্ধে বিদ্রাপকারীরা হল ওয়ালীদ ইবন মুপীরা, আসওয়াদ ইবন আবৃদ ইয়াপুছ যুহরী,
আসওয়াদ ইবন মুত্তালিব আবু য়ামআ , হারিছ ইবন১ আয়তল এবং আল ইবন ওয়াইল সাহ্মী ৷
একদিন হযরত জিবরাঈল (আ) রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট আসলেন ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা)
জিবরাঈল (আ)-এর নিকট ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করলেন ৷ তিনি জিবরাঈল (আ)-এর
নিকট ওয়ালীদকে চিহ্নিত করে দিলেন ৷ জিবরাঈল (আ) ওয়ালীদের আঙ্গুলের মাথাগুলাের
দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং বললেন, আমি তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছি ৷ এরপর
রাসুলুল্লাহ্ (সা) আসওয়াদ ইবন মুত্তালিবের দিকে ইঙ্গিত করে জিবরাঈল (আ)-কে দেখিয়ে
দিলেন ৷ জিবরাঈল (আ) তার গর্দানের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমি তার উপযুক্ত
ব্যবস্থা করেছি ৷ এরপর তিনি জিবরা ঈল (আ) কে আসওয়াদ ইবন আবদ ইয়াপুছকে দেখিয়ে
দিলেন ৷ তিনি তার মাথার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমি তার ব্যবস্থা করেছি ৷ এরপর
হারিছ ইবন আয়তালকে দেখিয়ে দিলেন ৷ জিবরাঈল (আ ) তার পেটের দিকে ইঙ্গিত করে
বললেন, আমি তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি ৷ আস ইবন ওয়াইল জিবরাঈল
(আ)-এর পাশ ৷দিয়ে যাচ্ছিল ৷ তিনি তার চোখের ভ্রষ্-এর দিকে ইঙ্গিত করেন এবং বলেন যে,
আমি তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি ৷
১ মুল কিভাবে তার নাম ঈতাল ৷ পরে আসবে যে তার পরিচয় ইবন তালাতিলাহ্ ৷
ওয়ালীদ থুযাআ গোত্রের এক লোকের সাথে যাচ্ছিল ৷ সে ওয়ালীদের জন্যে একটি তীর
তৈরী করছিল ৷ হঠাৎ করে তার আঙ্গুলে আঘাত লাগে ৷ পরে সে ওই আঙ্গুল কেটে ফেলে ৷
আসওয়াদ ইবন আরদ ইয়াপুছের মাথায় একটি ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল ৷ তাতে তার মৃত্যু হয় ৷
আসওয়াদ ইবন মুত্তালির ভাল হয়ে গিয়েছিল ৷ তার কারণ এই ছিল যে, সে একটি বাবলা
গাছের নীচে যাত্রা বিরতি করেছিল ৷ তখন সে অনবরত চীৎকার করে বলছিল, হে পুত্র ! তোমরা
আমাকে রক্ষা করছ না কেন ? আমাকে তো মেরে ফেলা হচ্ছে ৷ এই যে আমার চোখে র্কাটার
ঘেড়াচা লাগছে ৷ ওরা বলছিল কই আমরা তো কিছুই দেখছি না ৷ এরুপ বলতে বলতে তার চক্ষু
ভাল হয়ে যায় ৷ হারিছ ইবন আয়তনের গেট থেকে হলুদ বর্ণের পানি বের হতে শুরু করে ৷ এক
পর্যায়ে তার পায়খানা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে এবং তাতে তার মৃত্যু হয় ৷ আস ইবন ওয়াইলের
মাথায় একটি র্কাটা ঢুকে পড়ে ৷ তাতে তার মৃত্যু হয় ৷ এ হাদীছের অন্য বর্ণনাকারী বলেছেন
যে, আস ইবন ওয়াইল একদিন পাধায় চড়ে তাইফের উদ্দেশে? যাত্রা করে ৷ পাধা তাকে নিয়ে
এক র্কাটা বনে ঢুকে পড়ে ৷ আস-এর পায়ে র্কাটা বিদ্ধ হয় তাতে সে মারা যায় ৷ বায়হাকীও
এরুপ রংনাি করেছেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, ইয়াযীদ ইবন রাওমান উরওয়া ইবন যুবায়র (রা)এর বরাতে
আমাকে বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে ঠাট্টা-ৰিদ্রোপকারীদের মধ্যে প্রধান ছিল পড়াচজন ৷ নিজ
নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে তারা রয়ােবৃদ্ধ এবং মর্যাদাশীল ছিল ৷ আসওয়াদ ইবন ম্মুত্তালিব আবু
যামআ ৷ তার প্ৰতি বদদুআ করে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন, হে আল্লাহ্ তার চোখ অন্ধ করে
দিন এবং তাকে নির্বৎশ করে দিন ৷ অন্যরা হল আসওয়াদ ইবন আবৃদ ইয়াগৃছ, ওয়ড়ালীদ ইবন
মুগীরা, আস ইবন ওয়াইল এবং হারিছ ইবন তালাতিলা ৷ উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্ তাআলা
তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই নাযিল করেছেন :
অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ তা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা
কর ৷ তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রপকারীদের জন্যে আমিই যথেষ্ট ৷ যারা আল্লাহর সাথে অপর ইলাহ্
নির্ধারণ করেছে শীঘ্রই তারা জানতে পারবে ( ১৫ : ৯৪ ৯৬ ) ৷
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে, হযরত জিবরাঈল (আ) রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট
এসেছিলেন ৷ ওই বিদ্র্যপকারীরা তখন কাবাঘর প্রদক্ষিণ করছিল ৷ জিবরাঈল (আ) সেখানে
র্দাড়ালেন ৷ তার পাশে ছিলেন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ৷ আসওয়াদ ইবন মুত্তালিব তক্ষুব্লুদর পাশ দিয়ে
যাচ্ছিল ৷ হযরত জিবরাঈল (আ) তার চৌখে একটি সবুজ পাতা নিক্ষেপ করেন ৷ তাতে সে অন্ধ
হয়ে যায় ৷ অড়াসওয়ড়াদ ইবন আবৃদ ইয়াপুছ তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ৷ তখন জিবরাঈল (আ)
তার পেটের দিকে ইঙ্গিত করলেন ৷ তাতে তার দেহের মধ্যে তৃষ্ণারোগ সৃষ্টি হয় ৷ অবশেষে
পিপাসড়ার্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয় ৷ ওয়ালীদ ইবন মুগীরা তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ৷ তার
পায়ের একটি ক্ষতন্থানের দিকে জিবরাঈল (আ) ইঙ্গিত করলেন ৷ ঐ ক্ষত তার পায়ে সৃষ্টি
হয়েছিল কয়েক বছর পুর্বে ৷ সে গিয়েছিল তার জন্যে একটি তীর তৈরী করার জন্যে বর্শা
প্রন্তুতকারী খুযাআ গোত্রের জ্যনক ব্যক্তির নিকট ৷ তখন একটি তীর তার লুঙ্গিতে জড়িয়ে যায় ৷
ঐ বর্শার খোচায় তার পায়ে ক্ষত ছুবুষ্টি হয় ৷ জিবরাঈল (আ)-এর ইঙ্গিতের ফলে ঐ ক্ষত থেকে
রক্ত পড়া শুরু হয় এবং তাতে তার মৃত্যু হয় ৷
আস ইবন ওয়াইল জিবরাঈল (আ)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ৷ তিনি তার পায়ের দিকে
ইঙ্গিত করলেন ৷ একদিন সে তাইফ যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাবার পিঠে চড়ে বসে ৷ গাধাটি তাকে
নিয়ে এক র্কাটাবনে প্রবেশ করে ৷ আস-এর পারে একটি কাটা ঢুকে পড়ে ৷ তাতে তার মৃত্যু
হয় ৷ হারিছ ইবন তালাতিল হযরত জিবরাঈল (আ) কে অতিক্রম করছিল ৷ তিনি তার মাথায়
দিকে ইঙ্গিত করলেন ৷ তার সমগ্র মাথায় পুজ ছড়িয়ে পড়ে ৷ তাতে তার মৃত্যু হয় ৷
এরপর ইবন ইসহাক উল্লেখ করেছেন যে, ওয়ালীদ ইবন মুগীরা তার মৃত্যুর সময় তিন
পুত্রকে ডেকে ওসীয়াত করেছিল ৷ তার তিন পুত্র ছিল যথাক্রমে খালিদ হাশিম ও ওয়ালীদ ৷ সে
বলেছিল বৎসরা ৷ আমি তােমাদেরকে তিনটি উপদেশ দিয়ে যাচ্ছি ৷ খুযাআ গোত্রের নিকট
আমার খুনের প্রতিশোধ ছুত্ত্বহণের দাবী রয়েছে ৷ তোমরা ঐ প্রতিশোধের দাবী ছেড়ে দিও না ৷
অবশ্য আমি জানি যে, ওদের নিকট আমি যে দাবী করেছি তা থেকে তারা মুক্ত ও নির্দোষ ৷
কিন্তু আমি আশংকা করছি যে , আমার মৃত্যুর পর তোমরা যদি ঐ দাবী বহাল না রাখ তবে
সেজন্যে তোমরা সমালোচিত হবে ৷ ছাকীফ গোত্রের নিকট আমার সুদ পাওনা রয়েছে ৷ উসুল
না করা পর্যন্ত এই দাবী তোমরা ছেড়ে দিয়ে না ৷ আবু আযীহড়ার দাওসীর নিকট আমি
দেন-মােহর বাবদ পরিশোধিত অর্থ ফেরত পড়ার ৷ সে যেন তা থেকে তোমাদেরকে বঞ্চিত না
করে ৷ আবু আযীহার তার এক কন্যার বিয়ে দিয়েছিল ওয়ালীদ ইবন মুগীরার নিকট ৷ পরে যে
ঐ কন্যাকে ওয়ালীদের নিকট থেকে দুরে সরিয়ে রাখে ৷ ফলে ওদের দুজনের যেলামেশা
হয়নি ৷ কিন্তু আবু অড়াযীহার মেয়ের দেন-মােহর বাবদ ধার্যকৃত অর্থ ওয়ালীদ থেকে উসুল
করে নিয়েছিল ৷ ওয়ালীদের মৃত্যুর পর বনুমাখবুম গোত্রের লোকেরা খুযাআ গোত্রের নিকট
বক্তপণ দাবী করে ৷ তারা বলে যে, তোমাদের খুযাআ গোত্রের এক লোকের তীরের
আঘাতে ওয়ালীদের মৃত্যু হয়েছে ৷ খুযাআ গোত্র ঐ দাবী অস্বীকার করে ৷ ফলে এ বিষয়ে
উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি কবিতা রচনা করে এবং উভয় গোত্রের মাঝে সংঘর্ষ সৃষ্টির উপক্রম হয় ৷
শেষ পর্যন্ত খুযাআ গোত্র আংশিক রক্তপণ প্রদান করে আপোস মীমাংসা করে এবং ৎঘাত
থেকে রক্ষা পায় ৷
ইবন ইসহাক বলেন, এরপর হিশাম ইবন ওয়ালীদ একদিন আবু উযাইহিরের উপর চড়াও
হয় ৷ সে তখন যুল-মাজায়ের বাজারে ছিল ৷ হিশামের আক্রমণে তার মৃত্যু হয় ৷ বন্তুত আপন
সম্প্রদায়ের মধ্যে আবু উযায়হির একজন সম্মানিত লোক ছিল ৷ তার এক মেয়ে ছিল আবু
সুফিয়ানের শ্রী ৷ আবু উযায়হির-এর হত্যাকাণ্ডের সময় আবু সৃফিয়ান বিদেশে ছিলেন ৷ তার পুত্র
১ ১ ৫ : ৯৪, ৯৫, ৯৬
ইয়াযীদ ইবন আবু সুফিয়ান গ্রতিশোধ গ্রহণের প্রস্তুতি নেয় ৷ বনু মাখবুমের উপর আক্রমণ
করার জন্যে সে লোক সংগ্রহ করে ৷ ইন্ব৩ ৷মধ্যে আবু সুফিয়ান দেশে ফিরে আসেন এবং পুত্র
ইয়াষীদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হন ৷ তাকে পাল মন্দ এবং প্ৰহার করেন ৷ তিনি উযায়হিরের
হত্যাকাণ্ডের শাস্তি স্বরুপ দিয়াত বা রক্তপণ গ্রহণে রাযী হন এবং তার পুএকে লক্ষ্য করে বলেন
দাওস বংশীয় একজন লোকের মৃত্যুকে উপলক্ষ করে তুমি কি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে
চেয়েছিলে যাতে কুরায়শগণ গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয় ৷ হাস্সান ইবন ছাবিত উযায়হিরের খুনের
, প্ৰতিশোধ নেয়ার জন্যে উদ্বুদ্ধ করে আবু সুফিয়ানের নিকট একটি কবিতা লিখে পাঠান ৷ এর
প্রতিক্রিয়ায় আবু সুফিয়ান বলেছিল, আমাদের একে অন্যকে হত্যা করার জন্যে প্ররোচন৷ দিয়ে
হাসৃসান যে কবিতা লিখেছেন তা অত্যন্ত মন্দ কাজ ৷ অথচ ইত্যেপুর্বে বদরের যুদ্ধে আমাদের
বহু শীর্ষস্থানীয় লোক নিহত হয়েছেন ৷ পররভীতিত খালিদ ইবন ৪য়ালীদ যখন ইসলাম গ্রহণ
করেন এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে ত ৷ইফ গমন করেন তখনৎ স্নাইফের অধিবাসীদের নিকট
প্রাপ্য তার পিতার সুদ উসুল করা সম্পর্কে তিনি রাসুলুল্লাহ্ ৷ সা) এর নিকট জা নতে চান ৷ ইবন
ইসহাক বলেন, জনৈক আলিম আমাকে বলেছেন যে, এই ঘটনার প্রেক্ষাপর্টেই নীচের
আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে : ,
হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়৷ আছে তা ছেড়ে
দাও যদি তোমরা মু’মিন হও ৷ এর পরবর্তী আয়াতগুলােও এ প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে
(২০ ং ২৭৮) ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আবু উযা ইহিরের পুএরা৩ তাদের পিতা ৷র খুনের প্ৰতিশোধ নিয়েছে বলে
আমার জানা নেই ৷ অবশেষে ইসলাম এসে খুনের প্ৰতিশোধ নেয়ার কুপ্রথ৷ থেকে তাদেরকে
রক্ষা করে ৷ তবে যিরার ইবন খাত্তাব ইবন মিরদাস আসলামী ক৩ ক কুরায়শী লোকের সাথে
একবার দাওসের এলাকায় সফরে গিয়েছিল ৷ তখন তারা উম্মে পায়লান নামে দাওস গোত্রের
আযাদকৃত এক ক্রী৩ দাসীর ঘরে উঠে ৷ মহিলাদের ঘোপ৷ বেধে দেয়৷ এবং বিয়ের কনে সাজিয়ে
দেয়৷ ছিল ঐ ক্রী৩ দাসীর পেশা ৷ আবু উযাইহিরের খৃনের প্রতিশোধরুপে দাওস গোত্রের
লোকেরা কুরায়শী মেহমানদেরকে হত্যার চক্রাম্ভ করে ৷ উম্মে পায়লান ও তার সাথী কতক
মহিলা ওদের বিরুদ্ধে দাড়ায় এবং যেহমানদেরকে রক্ষা করে ৷ সুহায়নী বলেন উম্মে পায়লান
তখন যিরার ইবন খাত্তাবকে রক্ষার জন্যে৩ তার আমার নীচে শরীরের সাথে জড়িয়ে রাখে ৷
ইবন হিশাম বলেন, হযরত উমর (রা)-এর শাসনামলে উম্মে পায়লান তার নিকট আসে ৷
যে ধারণা করেছিল যে , যিরার ইবন খাত্তাব হযরত উমর (রা)-এর সহোদর ভাই ৷ হযরত উমর
(রা) তাকে বললেন, আমি যিরারের সহােদর ভাই নই ৷ বরং দীনী ভাই ৷ তবে যিরারের প্ৰতি
তোমার যে অসামান্য অনুগ্রহ রয়েছে তা আমার জানা আছে ৷ অতঃপর মুসাফির হিসেবে হযরত
উমর (রা) উম্মে পায়লানকে কিছু সাদাক৷ প্রদান করেন ৷
ইবন হিশাম বলেন, উহুদ দিবসে যুদ্ধক্ষেত্রে যিরার ইবন খাত্তাব এবং উমর ইবন খাত্তাব
মুখোমুখি হন ৷ তখন যিরার ইবন খাত্তাব হযরত উমর (ৰুরা)-ফে নাপালে পেয়েও বর্শার ধারালো
অংশ দ্বারা আঘাত না করে ধারবিহীন পাশ দিয়ে পুণ্ডো দিতে থাকে এবং বলতে থাকে, হে
খাত্তাব তনয়! সরে যান, সরে যান ৷ আমি আপনাকে হত্যা করব না ৷ পরবর্তীতে যিরার ইবন
খাত্তাব ইসলাম গ্রহণ করার পর হযরত উমর (রা) যিরার (রা)-এর ঐ সহানুভুতির কথা স্মরণ
করতেন ৷
পরিচ্ছেদ
বায়হাকী (র) এ পর্যায়ে কুরায়শদের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর বদ দুআর ঘটনাউল্লেখ
করেছেন ৷ কুরায়শগণ যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নাফরমানীও অবদ্যোতায় সীমা ছাড়িয়ে যায়
তখন তাদের উপর ইউসুফ (আ)-এর সম্প্রদা য়ের ভোগকৃত সাত বছর ব্যাপী দৃর্তিক্ষের মত টানা
সাত বছরের দৃর্ভিক্ষ নাযিল করার জন্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আল্লাহর নিকট দুআ করেনা এ
প্রসঙ্গে তিনি সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ ঘুসলিমে উল্লিখিত আমাশ ইবন মাসউদ সুত্রে বর্ণিত
হাদীছটি উদ্ধৃত করেছেনা ইবন মাসউদ (রা) বলেছেন, পাচটি বিষয় বাস্তবাযিত হয়ে গিয়েছো
কাফিরদের জন্যে প্রতিশ্রুত ধ্বংস১ , রোম বিজয়, ধুম্র আগমন, চরম পাকড়াশ্ও এবং চদ্রের
দ্বিখণ্ডিত হওয়া অন্য বর্ণনায় ইবন মাসউদ (রা) বলেছেন, কুরাহ্ন্শগণ যখন রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর অবাধ্যতায় অটল রইল এবং ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত থাকল , তখন রাসুলুল্লাহ (সা)
দৃআ করলেন হে আল্লাহ! ইউসুফ (আ) এর সম্প্রদায়ের উপর নাযিলকৃত সাত বছরব্যাপী
দৃব্ধিক্ষর মত দুর্ভিক্ষ কুরায়শদের উপর নাযিল করে তাদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন ৷
ইবন মাসউদ (রা) বলেন এরপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ নেমে আসে ৷৩ তাদের সব কিছু নিঃশেষ
হয়ে যায় ৷ এমনকি ক্ষুধার তাড়নায় তারা মরা জীবজন্তু যেতে থাকে এমন হল যে, উপোস
করার কারণে তারা আকাশে বোয়া দেখতে পেতো ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ ( সা ) তাদের বিপদ
মুক্তির জন্যে দুআ করলেন ৷ আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে এ দুরবস্থা থেকে মুক্তি দিলেন ৷ এ
প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (বা) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন :
আমি ওে তামাদের শাস্তি কিছু কা লের জন্যে রহিত করছি ভৌমরা তো তোমাদের পুর্বাবস্থায়
ফিরে যাবে (৪৪ : ১৫) ৷
তিনি বলেন, তারা পুনরায় তাদের কুফরীতে ফিরে যায় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের শাস্তি
বিলম্বিত করা হয় ৷ তিনি একথা বলেছেন যে, বদর দিবস পর্যন্ত তাদের শাস্তি বিলম্বিত করা
হয় ৷ ইবন মাসউদ (রা) বলেন আলোচ্য শাস্তি দ্বারা যদি কিয়ামত দিবসের শাস্তি বুঝানো হয় ,
তবে ওই শাস্তি৩ ওো রহিত করা হবে না ৷
যেদিন আমি তােমাদেরকে প্রচন্ড ভাবে পাকড়াও করব সে দিন আমি ৫তামাদেরকে শাস্তি
দেবই (৪ : : ১৬) ৷ এ আয়াত সম্পর্কে ইবন মাসউদ (রা ) বলেন যে, এখানে বদর দিবসের
শাস্তির কথা বুঝানো হয়েছে ৷ ইবন মাসউদ (রা ) থেকে আরো বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন,
১ এতদ্বারা বদর দিবসকে বুঝানো হয়েছো
রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন দেখলেন মক্কার লোকজন র্তাকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করছে এবং তারা তার নিকট
থেকে দুরে সরে যাচ্ছে, তখন তিনি বলেন, হে আল্লাহ! ইউসুফ (আ)-এর সম্প্রদায়ের প্ৰতি
নাযিলকৃত সাত বছর ব্যাপী দুত্যিক্ষর মত দৃর্ভিক্ষ নাযিল করুন ৷ ফলে তারা দৃর্ডিংক্ষ পতিত
হয় ৷ শেষ পর্যন্ত তারা মৃত জীব-জ্য;হু, চামড়া এবং হাডিদ্র যেতে থাকে ৷ ঐ প্রেক্ষিতে মক্কার
অধিবাসী কতক লোক নিয়ে আবু সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকটে উপস্থিত হন ৷ তারা
বলে, হে মুহাম্মদ (সা)! তুমি তো দাবী কর যে, তুমি দয়া ও করুণার আবার রুপে প্রেরিত
হয়েছ ৷ এখন তো তোমার সম্প্রদায়ের লোকজন সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ৷ তুমি ওদের রক্ষার
জন্যে আল্লাহর নিকট দৃআ কর ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওদের জন্যে দুআ করলেন ৷ মক্কার লোকদের
উপর বৃষ্টি বর্ধিত হল ৷ টানা সাত দিন বর্ষণ চলল ৷ অবশেষে লোকজন তার নিকট অতিবৃষ্টির
অনুযােগ করল ৷ তিনি দৃআ করে বললেন ও
হে আল্লাহ্ ৷ আমাদের উপর নয়, অন্যদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন ৷ ফলে তাদের উপর
থেকে মেঘ কেটে গেল এবং মক্কাবাসীদেরকে ছেড়ে আংশপাশে অন্যত্র বৃষ্টি বর্নিত হল ৷
ইবন মাসউদ (বা) বলেন, ধোয়া দেখার নিদর্শনও বাস্তাবায়িত হয়েছে ৷ আর তা” হল
তাদের উপর আপতিত ক্ষুধার জ্বালা ৷ যার ফলে তারা আকাশে ধৌয়া দেখত ৷ অর্থাৎ চোখে
অন্ধকার দেখত ৷
আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্যে রহিত করছি তোমরা তো তোমাদের পুর্বাবন্থায়
ফিরে যাবে ৷ আয়াতে সে দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে ৷ তিনি বলেন, রোমানদের বিজয় সম্পর্কিত
আয়াতও বাস্তবায়িত হয়েছে ৷ আল্লাহ্ তাআলার ঘোষণা মুতাবিক কাফিরদেরকে প্রচণ্ডভাবে
পাকড়াও করার আয়াতও বাস্তবায়িত হয়েছে ৷ চীদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার আয়াতও বাস্তবায়িত
হয়েছে ৷ এগুলোর অধিকাংশ-ই বদর দিবসে বাস্তবায়িত হয়েছে ৷
বড়ায়হাকী (র ) বলেন, আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ তবে চরমডাবে পাকড়াও করা, ধোয়া দেখা
এবং কাফিরদের ধ্বংস হওয়া সম্পর্কিত আয়াতগুলাে বদর দিবসে বাস্তবায়িত হয়েছে ৷
বর্ণনাকারী বলেন, ইমাম বুখড়ারী (র) এ বর্ণনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন ৷ এরপর আবদুর
রাবৃযাক ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত আবু
সুফিয়ান উপস্থিত হন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ৷ ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে তিনি বৃষ্টি কামনা
করছিলেন ৷ তখন কোন খাদ্য দ্রব্য না পেয়ে তারা থেওহুদুরের১ ভাল পর্যন্ত চিৰিয়ে থেয়েছিল ৷
তখন আল্লাহ্ তাআলা নাযিল করলেন ৷
আমি ওদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম , কিন্ত ওরা ওদের প্ৰতিপালকের প্ৰতি বিনীত
হলান৷ এবং কাতর প্রাত্নাি করল না (২৩ : ৭৬) ৷
১ সুরা রুম আয়াত ১, ২, ৩, ৪ ৫ ৷
বর্ণনাকড়ারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওদের বিপদমুক্তির জন্যে আল্লাহ্ তাআলার
দরবারে দুআ করলেন ৷ আল্লাহ্ তা আলা তাদের বিপদ দুর করে দিলেন ৷ হাফিয বায়হাকী (র)
বলেন, আবু সুফিয়ান সম্পর্কিত এক বর্ণনায় কিছু বাক্য রয়েছে যা দ্বারা বুঝা যায় যে এ ঘটনা
ঘটেছিল হিজরতের পর ৷ অবশ্য এমনও হয়ে থাকতে পারে যে এরুপ ঘটনা দৃ’বার ঘটেছিল ৷
একবার ঘটেছিল হিজরতের পর এবং একবার ঘটেছিল হিজরতে র পুর্বে ৷ আল্লাহই ভাল
জানেন ৷
এরপর বায়হাকী (র) পারসিকও রোমানদের ঘটনা এবং নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার
প্রেক্ষম্পোট আলোচনা করেছেন তাৰুল্লাহ্ তা আলা বলেছেন
আলিফ-লাম-মীম ৷ রােমকগণ পরাজিত হয়েছে নিকটবর্তী অঞ্চলে ৷ কিন্তু ওদের এই
পরাজয়ের পর ওরা শীঘ্রই বিজয়ী হবে ৷ কয়েক বছরের মধেইে পুর্ব ও পরের সিদ্ধান্ত
আল্লাহ্রই ৷ আর সেদিন মু’মিনগণ আল্লাহর সাহায্য লাভে হর্যোৎফুল্ল হবে (৩০ : ১ ৫ ) ৷
বায়হাকী (র) এরপর সৃফিয়ান ছ৷ ৷ওরী ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে তিনি
বলেছেন পারসিকদের বিরুদ্ধে রোমকগণ বিজয়ী হোক মৃসলমানত তাই কামনা করতেন ৷ কারণ
রোমকগণ ছিল আহলে কিতাব, খৃন্টান ৷ পক্ষা স্তরে , আরবের মৃশরিক লোকেরা কামনা করত যে
পারসিকগণ যেন বিজয়ী হয় ৷ কারণ, ওরা ছিল মুর্তি পুজারী ৷ এই মনােভাবের কথা
মুসলমানগণ হযরত আবু বকর (রা)-কে জানান ৷ তিনি এটি জানান রাসুলুল্লাহ্ ৷সা)-৫ক ৷
উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন “বস্তুত রোমকগণ অবিলম্বে বিজয়ী হবে ৷ হযরত আবু বকর
(বা) এ সং বাদ মুশরিকদেরকে জানালেন ৷ তারা বলল, তাহলে আসুন আমরা একটি মেয়াদ
নির্ধারিত করি ৷ এই মেয়াদের মধ্যে যদি রোমকগণ বিজয়ী হয়, তবে এই অমুক বস্তু আমরা
আপনাকে দিব ৷ আর যদি পারসিকপণ বিজয়ী হয়, তবে আপনি অমুক অমুক বস্তু আমাদেরকে
দেবেন ৷ এ সকল কথা হযরত আবু বকর (বা) এসে রাসুলুল্লাহ্ ৷স৷ ) কে জানালেন ৷ রাসুলুল্লাহ্
(সা) বললেন আপনি দশ বছরের কম সমযটাকে মেয়াদ নির্ধারিত করলেন না কেন ?
পরবত্তীতিত ৩সত সতই রোমকগণ বিজয়ী হয়েছিল ৷
এই হাদীছের সনদগুলাে আমরা তাফন্সীর গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছি ৷ আমরা উল্লেখ করেছি
যে, আবু বকর (না)-এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ঘোষণাকারী ছিল উমাইয়া ইবন খালফ ৷ আর
চ্যালেরে মুল্য ছিল ৫টি বিশাল বপু উট ৷ > চ্যালেঞ্জের একটি মেয়াদ নির্ধারিত ছিল ৷ পরে
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর পরামর্শে হযরত আবু বকর (বা) ওই মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেন এবং
চ্যালেঞ্জেব মুল্যমানও বাড়িয়ে দেন ৷ পারসিকদের বিরুদ্ধে রোমকদের বিজয় সংঘটিত হয়েছিল
বদর যুদ্ধের দিবসে ৷ অথবা হুদায়রিয়াব সন্ধির দিবসে ওই বিজয় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৷ আল্লাহ্ই
ভাল জানেন ৷
এরপর তিনি ওয়ালীদ ইবন মুসলিম আলা ইবন যুবায়র কিলাবী সনদে বর্ণনা
করেছেন যে তার পিতা যুবায়র কিলাবী বলেছেন আমি রোমকদের উপর পারসিকদের বিজয়
এবং পারসিকদের উপর রোমকদের বিজয় দুটে ই দেখেছি ৷ এরপর রোমক এবং পারসিক ৩ভয়
জাতির উপর মুসলমানদের বিজয় দেখিছি ৷ মুসলমানদের সিরিয়া এবং ইরাক জয়ও আমি
দেখেছি ৷ মাত্র পনের বছরের মধ্যে এসব ঘটনা সংঘটিত হয় ৷
মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর রাত্রিভ্রমণ
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর মি’রাজ ও ভৈনশ ভ্রমণের হাদীছগুলাে ঐতিহাসিক ইবন আসাকির তার
গ্রন্থে “নবুওয়াতপ্রাপ্তির প্রথম দিকের ঘটনাবলী” অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন ৷ তবে ইবন ইসহাক
ওইগুলো উল্লেখ করেছেন নবুওয়াত লাভের ১০ বছর পরের ঘটনাবলীব সাথে ৷ বায়হাকী (ব)
মুসা ইবন উকব৷ সুত্রে যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর রাত্রিকালীন বিশেষ
ভ্রমণের ঘটনা ঘটেছে তার মদীনায় হিজরতের এক বছর পুর্বে ; তিনি বলেছেন যে, ইবন
লাহ্ইয়াহ্ আ বু আসওয়াদ সুত্রে উরওয়া থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ হার্কীম ইসমাঈল
সুদ্দী (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর হিজরতের ১৬ মাস পুর্বে মি’রাজের
রাত্রিতে বায়তুল মুক ৷দ্দাসে তার উপর পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয় ৷ সুতরাং সুদ্দীর বর্ণনা
অনুসারে মি রাজের ঘটনা ঘটে যুল-কা ৷দ৷ মাসে আর যুহরী ও উরওয়া (র)-এর বর্ণনানুসারে
ওই ঘটনা ঘটে রবিউল আউয়াল মাসে ৷ আবু বকর ইবন আবু শায়বা জাবির ও ইবন
আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তারা দুজনে বলেছেন যে, হাতীর বছরে রবিউল আউয়াল
মাসের ১২ তারিখ সোমবার রাসুলুল্লাহ্ (সা) জন্মগ্রহণ করেন ৷ পরবর্তীতে একই তারিখে তিনি
নবুওয়াত প্রাপ্ত হন ৷ ওই তারিখে তার মি রাজ স০ ঘটিত হয় ৷ ওই তারিখে হিজরত করেন এবং
ওই তারিখেই তিনি ইনতিকা ৷ল করেন ৷ অবশ্য, এই বর্ণনার সনদে বিচ্ছিন্নতা আছে ৷
হাফিয আবদুল গনী ইবন সারুর মুকাদ্দিসী তার সীরাত গ্রন্থে এ তারিথটিই গ্রহণ করেছেন ৷
অবশ্য,৩ তিনি অন্য একটি হাদীছও উল্লেখ করেছেন, সেটির সনদ বিশুদ্ধ নয় ৷ ওই হাদীছটি
আমরা রজব মাসের ফযীলত প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছি ৷ সেটি এই যে, মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল
রজব মাসের ২৭ তারিখের রাতে ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
কেউ কেউ মনে করেন যে, রজব মাসের প্রথম জুমুআর রাতে (বৃহস্পতিবার দিবাগত
রাতে) মিরাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৷ এই রাতকে “লায়লাতুর রাপাইব” বলা হয় ৷ ওই রাতে
বিশেষ নামায আদায়ের রেওয়াজের উদ্ভব হয়েছে ৷ বস্তুত এর কোন গ্রহণযোগ্য দলীল নেই ৷
আল্লাহ্ইভ ৷ল জানেন ৷ এ প্রসৎগে কেউ কেউ এই কবিতা পা ৷ঠ করেন :
অর্থাৎ জুমুআর রাত সে তো মর্যাদাময় রাত ৷ রজব মাসের প্রথম জুমুআর রাতে নবী করীম
(না)-এর মিরাজ অনুষ্ঠিত হয় ৷ ’
এই কবিতায় দুর্বলতা আছে ৷ যারা জুষুআর রাতে মিরাজ সংঘটিত হওয়ার অভিমত
পোষণ করেন তাদের বক্তব্যের সমর্থনে আমরা এই কবিতা উল্লেখ করলাম ৷