মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র
ইয়াহ্রদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
কুরায়শী এবং ইয়াছরিবী মুসলমান এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে উস্বী নবী মুহাম্মদ (সা)
এ সনদ জারী করেন ৷
এক জাতি হিসাবে তারা জিহাদে অংশ গ্রহণ করবে অন্যদের মুকাবিলায় ৷
কুরায়শী মুহাজিররা তাদের কর্তৃত্বে বহাল থাকবে ৷ তারা রীতি অনুযায়ী নিজেদের
রক্তপণ পরিশোধ করবে এবং প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে বন্দীদের
মুক্তিপণ পরিশোধ করবে ৷
বনু আওফ তাদের কতৃত্বে বহাল থাকবে ৷ তারা রীতি ও বিধি মতো দিয়াত পরিশোধ
করবে এবং প্রতেক দল রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মিনদেরকে ফিদিয়া
পরিশোধ করে তাদের বন্দীদেরকে মুক্ত করবে ৷
এরপর তিনি আনসারদের প্রতেকে বংশ-গোত্র-এর উল্লেখ করেন ৷ এরা হলো, বনু
সাইদা, বনু জুশাম, বনুনাজ্জার, বনুঅড়ামর ইবন আওফ, বনু নাবীত ৷ এমনকি চুক্তিতে
তিনি একথাও উল্লেখ করেন যে, কোন মুসলমান ঋণভারে জর্জরিত বিপণ
জনগােষ্ঠীকে আশ্রয়হীন রাখবে না এবং ফিদিয়া আর দিয়াতের ক্ষেত্রে নিয়ম-রীতি
অনুযায়ী পরস্পরের সাহায্য-সহায়তা করবে ৷
কোন মুসলমান অপর মুসলমানের আযাদ করা গোলামের সঙ্গে কোন চুক্তি করবে না
র্তাকে বাদ দিয়ে (মুহাম্মদ (না)-কে ছাড়া) ৷ (অর্থাৎ অন্যের মুক্ত দাসের সঙ্গে কোন
মুসলমান মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করতে পারবে না ৷
মু’মিন মুত্তাকীরা ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গঠন করবে বিদ্রোহী, যালিম, অত্যাচারী, পাপাচারীর
বিরুদ্ধে, মু’মিনদের মধ্যে ফাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টির বিরুদ্ধে ৷ এমন কি আপন
সন্তানদের বিরুদ্ধে গেলেও এ মাের্চা গঠন করতে হবে এবং এ ব্যাপারে সকলে নবী
মুহাম্মদ (না)-কে সহায়তা করবে ৷
কোন কাফিরের বদলায় কোন মু’মিন কোন মুমিনকে হত্যা করবে না ৷
মু’মিনের বিরুদ্ধে কোন কাফিরের সাহায্য করা যাবে না ৷
আল্লাহ্র যিম্মড়া-অঙ্গীকার এক ও অভিন্ন ৷ তাদের পক্ষ থেকে একজন সামান্য-নগণ্য
ব্যক্তিও কাউকে আশ্রয় দিতে পারবে ৷
অন্যদের মুকাবিলায় মুসলমানগণ পরস্পরে ভাই ৷
আল-বিদায়া ওয়ান নিহড়ায়া
আমাদের অনুগত ইয়াহুদীরা সাহায্য-সহায়তা পাওয়ার যোগ্য ৷ তাদের প্রতি জুলুম করা
যাবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে সাহাযল্দোহযােগিতা করা যাবে না ৷
সকল মুসলমানের নিরাপত্তা আর স্বার্থ এক ৷ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোন মৃ’মিন
অপর মৃ’মিন ভাইকে বাদ দিয়ে সন্ধি চুক্তি করবে না ৷ তা সমভাবে সকলের জন্য
ইনসাফ ভিত্তিক হতে হবে ৷
যে সব যোদ্ধা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হবে, তারা একে অন্যের সহায়তা করবে ৷
মৃ’মিনগণ আল্লাহর রাস্তায় নিহতদেরকে পরস্পরে সহায়তা করবে ৷
মু’মিন-মুত্তাকীরা সত্য-সরল ও সঠিক হিদায়াতের উপর আছে ৷ কোন মুশরিক কোন
কুরায়শীকে জান-মালের নিরাপত্তা দেবে না ৷ কোন মৃ’মিনের মুকড়াবিলায় সে প্রতি বন্ধক
হবে না (এবং তার বিরুদ্ধে সাহায্য-সহায়তা করবে না) ৷
অহেতুক কোন মৃ’মিনকে হত্যা করলে হত্যাকারীকে দায় বহন করতে হবে এবং নিহত
ব্যক্তির ওলী-ওয়ারিসকে সন্তুষ্ট করতে হবে ৷ হত্যাকারীর বিরুদ্ধে র্দাড়ানাে সমস্ত
মু’মিনের কর্তব্য হবে ৷ তার বিরুদ্ধে র্দাড়ানাে ছাড়া অন্য কিছু করা তাদের জন্য হালাল
হবে না ৷
পুকােন মৃ’মিন ব্যক্তি, যে এ সনদের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে ঈমান রাখে এবং তা স্বীকার করে,
আল্লাহ এবং শেষ দিনে যার ঈমান ও বিশ্বাস আছে, কোন নতুন কিছু উদ্ভাবনকারীর
সাহায্য সহায়তা করা তার জন্য হালাল নয়, হালাল নয় এমন নব উদ্ভাবনকাৰীকে আশ্রয়
দান করা ৷ যে ব্যক্তি এমন লোককে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা তাকে আশ্রয় দান
করবে কিয়ড়ামতের দিন তার প্রতি আল্লাহর লানত, আল্লাহ্র গযব আপতিত হবে ৷ তার
নিকট থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না (তার তাওবওে কবুল করা হবে না) ৷
চুক্তির ক্ষেত্রে কোন বিরোধ, মত পার্থক্য দেখা দিলে (তার ব্যাখড়াড়া-বিশ্লেষণের জন্য)
আল্লাহ্ ও তার রাসুলের দিকে প্রত্যাবর্ভা করতে হবে ৷
ইয়াহ্রদীরা যত দিন মৃ’মিনদের সহযােদ্ধা রুপে থাকবে, ততদিন তারা মু’মিনদের সাথে
ব্যয় নিবাহের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকবে ৷
বনু আওফের ইয়াহ্রদীরা ঘু’মিনদের সঙ্গে একই উষ্ম৷ রুপে থাকবে ৷
ইয়াহ্রদীরা তাদের ধর্ম মেনে চলবে আর মু’মিনরা মেনে চলবে তাদের নিজেদের দীন ৷
তাদের দাস এবং তারা নিজেরা নিরাপদ থাকবে ৷ অবশ্য কেউ জুলুম, পাপাচার আর
অপরাধ করলে যে কেবল নিজেকেই ধ্বংস করে ৷ নিজের এবং নিজের পরিজনের ক্ষতি
সাধন করে ৷ (অন্যায়কারীকে অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করতে হবে) ৷
বনু নাজ্জার , বনু হারিছ, বনু সাইদা, বনু জুশাম, বনু আওস, বনু ছা’লাবা বনু জাফনা,
বনু শাতনা এসব শাখা গোত্রের ইয়াহুদীরা বনু আওফের ইয়াহুদীদের মতো অধিকার
ভোগ করবে, সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে এবং ইয়াহুদীদের গোপন বিষয় নিজেদের
গোপন বিষয়ের মতো বিবেচিত হবে ৷
মুহাম্মদ এর বিনা অনুমতিতে তাদের কেউ বের হতে পারবে না ৷
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া
২৬ কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তা করবে নিজেরই সঙ্গে, তার জুলুমের বিপরীতে জুলুমের
শা তাকে পেতে হবে ৷
আর আল্লাহ্ তো রয়েছেনই তার পশ্চড়াতে ৷
ইয়াহুদীরা নিজেদের ব্যয় তার বহন করবে, আর মুসলমানরা বহন করবে নিজেদের
ব্যয়ভার ৷
এ চুক্তিপত্রের অনুসারীর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করবে, তার বিরুদ্ধে সাহায্য করা সকলের
কর্তব্য হবে ৷
চুক্তিবদ্ধ পক্ষসমুহের মধ্যে সম্পর্ক হবে শুভাকাদ্ভক্ষী, সুম্পেদেশও পুণ্যভিত্তিক
পাপাচারমুলক হবে না ৷
কোন ব্যক্তি তার মিত্রপক্ষের সঙ্গে পাপাচারের কর্ম করবে না ৷ মিত্রপক্ষের অপরাধের
কারণে সে অপরাধী হবে না ৷
মজলুমের সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে ৷
এ চুক্তির পক্ষের লোকের জন্য ইয়াছরিব এবং তার উপকন্ঠ হবে সম্মানার্দু ৷
প্ৰতিবেশী-আশ্রয়প্রাথী হবে নিজের মতো যদি সে ক্ষতিকর এবং অপরাধী না হয় ৷
অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন নারীকে আশ্রয় দেয়া যাবে না ৷
এ চুক্তির পক্ষের মধ্যে কোন ঘটনা-উত্তেজনায় বিপর্যয়ের আশংকা সৃষ্টি হলে (বা কোন
বিরোধ দেখা দিলে) ব্যাখ্যার জন্য আল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন
করতে হবে ৷
যে এ চুক্তি মেনে চলবে আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন ৷
কুরায়শ এবং তাদের সাহায্যকারীকে আশ্রয় দেয়া যাবে না ৷
কেউ ইয়াছরিবের উপর চড়াও হলে সকল পক্ষ মিলে ঠেকাবে ৷
মুসলমানদেরকে কোন সন্ধি-চুক্তির জন্য আহ্বান করা হলে তারা (ইয়াহ্রদীরা) ও তা
মেনে চলবে ৷ ইয়াহ্রদীরা কারো সঙ্গে চুক্তি করলে মুসলমানরাও তাতে যোগ দিবে ৷ তবে
কেউ দীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তাতে মুসলমানরা যোগ দেবে না ৷
প্রতিটি নাপরিকের কর্তব্য তার অংশের সংরক্ষণ করা ৷
জালিম আর অপরাধী ছাড়া কেউ এ চুক্তিপত্রের অন্যথা করবে না ৷
কেউ মদীনার বাইরে গেলে বা মদীনায় বসবাস করলে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে যদি
সে জালিম এবং অপরাধী না হয়ে থাকে ৷
যে ব্যক্তি পুণ্যবান এবং মুত্তাকী, আল্লাহ হবেন তার হিফাযতকারী ৷
ইবন ইসহাক চুক্তিপত্রের অনুরুপ বিবরণ দিয়েছেন ৷ অবশ্য আবু উবায়দ কাসিম ইবন সালাম
তার কিতাবুল গরীব ইত্যাকার গ্রন্থে এ সম্পর্কে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ৷
অনুচ্ছেদ
মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে নবী (সা) এর ভ্রাতৃত্ব স্থাপন
আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
(আর তাদের জন্যেও) মুহাজিরদের আগমনের পুর্বে যারা এ নগরীতে বসবাস করেছে এবং
ঈমান এসেছে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেওয়া হয়েছে সে জন্যে তারা অন্তরে আকাম্ভক্ষা পোষণ
করে না আর তারা ওদেরকে নিজেদের উপর অগাধিকার দেয়—-’নিক্তেরা অভাবগ্রস্ত হলেও ৷
অন্তরের কার্পণ্য থেকে যাদেরকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম (৫৯ : ৯) ৷
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
৷ ব্লু
এবং যাদের সঙ্গে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ, তোমরা তাদেরকে তাদের অংশ দান
করবে ৷ নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে দ্রষ্টা (৪ : ৩৩) ৷
ইমাম বুখারী (র) সাল্ৎ ইবন মুহাম্মদ সুত্রে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে,
(এবং প্রত্যেকের জন্য আমি মাওয়ালী করেছি) এ আয়াতে মাওয়ালী অর্থ
ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী ৷ এবং যাদের সঙ্গে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ
হয়েছ)-এ আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন : মুহাজিরপণ যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন তারা
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াই আনসারদের ওয়ারিছ বলে গণ্য হতেন, নবী (না) তাদের মধ্যে যে
ভ্রাতৃতৃ বন্ধন স্থাপন করেছেন তার সুবাদে ৷ ;এ আয়াত নাযিল হলে
আনসারদেরকে উত্তরাধিকার দানের বিধান রর্হিত হয় ৷ তিনি বলেনঃ, পরে আয়াত নাযিল হয় :
এ আয়াতে তাদের অংশ বলে তাদেরকে
সাহায্য করা, রিফাদা অর্থাৎ আপ্যায়ন এবং কল্যাণ কামনা বুঝানো হয়েছে ৷ আর মীরাছেও
ওসীয়াতের বিধান রহিত হয়ে গেছে ৷ ইমাম আহমদ সুফিয়ান ও আসিম সুত্রে আনাস (বা)
থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (না) আমাদের গৃহে মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃতু স্থাপন করেন ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (না) তার মুহাজির এবং আনসার সাহাবীগণের
মধ্যে ভ্রাতৃতৃ বন্ধন স্থাপন করেন ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, রাসুলুল্লড়াহ্ (না) যা বলেননি,
এমন কথা তীর প্রতি আরোপ করা থেকে আল্লাহর পানাহ্ চাই ৷ আমরা জানতে পেয়েছি, তাতে