Home » অনুবাদকৃত বইসমুহ » আল বিদায়া ওয়ান্নিহায়া - খন্ড ৩ » আকাবার দ্বিতীয় শপথ

আকাবার দ্বিতীয় শপথ

  • 3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
  • Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
  • আকাৰার দ্বিতীয় শপথ

    ইবন ইসহাক বলেন, তারপর মুসআব ইবন উমায়র মক্কায় ফিরে এলেন ৷ তার সাথে
    আনসারী হাজীগণ এবং তাদের সম্প্রদায়ের মুশরিক হজ্জ সম্পাদনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাও ৷ র্তারা
    সকলে মক্কায় উপস্থিত হলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে তাদের কথাবার্তা হল যে, আইয়ামে
    তাশরীকের মধ্যবর্তী দিবসে অর্থাৎ ১ ২ই যিলহাজ্জ তারিখে র্তারা আকাবা নামক স্থানে একত্রিত
    হবেন ৷ “তাদেরকে মহিমাম্বিত করার জন্যে, নবী (সা) কে সাহায্য করার জন্যে এবং ইসলাম ও
    মুসলমানদেরকে বিজয়ী করার জন্যে আল্লাহ তাআলা এই সময়উি র্তীদের জন্যে নির্ধারিত
    করেছিলেন ৷

    মাবাদ ইবন কাআব ইবন মালিক আমাকে জানিয়েছেন যে, তার ভাই আবদুল্লাহ ইবন
    কাআব তাকে জানিয়েছেন ৷ এই আবদুল্লাহ ছিলেন আনসারীদের একজন বড় আলিম ৷ বন্তুত
    আবদুল্লাহ বলেছেন যে, তার পিতা র্তাকে জানিয়েছেন, তিনি আকত্থার শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত
    ছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর হাতে তখন বড়ায়আত হয়েছিলেন ৷ তিনি বলেছেন, আমাদের
    সম্প্রদায়ের মুশরিক হড়াজীদেরকে নিয়ে আমরা সবাই মক্কায় রওনা হলাম ৷ আমরা তখন নামায
    পড়তাম এবং দীনের জ্ঞান অত্তনি করতাম ৷ আমাদের সাথে ছিলেন আমাদের বয়ােজেষ্ঠে ও
    নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বারা ইবন মারুর ৷ মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে আমরা যখন যাত্রা করলাম,
    তখন বাবা (রা) বললেন, হে লোক সকল আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমরা আমার
    সাথে একমত হবে কিনা আমি জানি না ৷ আমরা বললাম , “সিদ্ধাস্তটা কী ?” তিনি বললেন
    আমি সিদ্ধান্ত গিয়েছি যে , এই গৃহকে অর্থাৎ কাবাগৃহকে আমি পেছনে রাখতে পারব না আমি
    বরং ওই কাবাগৃহের দিকে মুখ করেই নামায আদায় করব ৷ আমরা বললাম, আমরা তো আমি
    যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) সিরিয়ার দিকে (বায়তৃল মুকাদ্দামের দিকে) মুখ করেই নামায আদায়
    করেন ৷ সুতরাং আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বিপরীত কাজ করব না ৷ বারা’ (রা) বললেন, আমি
    কাবাগৃহের দিকে মুখ করেই নামায আদায় করব ৷ আমরা বললাম, আমরা কিন্তু তা করব না ৷
    এরপর নামাযের সময় হলে আমরা নামায পড়তড়াম সিরিয়ার (বাযতুল মুকাদ্দাসের) দিকে মুখ
    করে আর তিনি নামায আদায় করতেন কাবার দিকে মুখ করে ৷ এভাবে আমরা মক্কা এসে
    পৌছি ৷

    মক্কায় এসে তিনি আমাকে বললেন, ভাতিজা! তুমি আমাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
    নিকট চল ৷ সফরে আমি যা করেছি সে সম্পর্কে আমি তার কাছে জানতে চইিব ৷ কারণ, আমি
    যা করেছি সে সম্পর্কে আমার মনে একটু খটকা সৃষ্টি হয়েছে এজন্যে যে, আমি তোমাদের
    সকলের উল্টেড়া কাজ করেছি ৷ বর্ণনাকারী কাআব (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) থেকে বিষয়টি
    জানার জন্যে আমরা তার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ৷ আমরা কিন্তু তখনও র্তাকে চিনতড়াম না এবং
    ইতোপুর্বে তাকে কোন দিন দেখিনি ৷ পথে মক্কার এক লোকের সাথে আমাদের দেখা হয় ৷
    আমরা তাকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি ৷ সে বলল, আপনারা কি র্তাকে চিবুনন ?
    আমরা বললাম, না, র্তাকে আমরা চিনি না ৷ সে বলল, তবে তার চাচা আব্বাস ইবন আবদুল
    মুত্তালিবকে চিনেন ? আমরা বললাম, “ইক্রা , আমরা তাকে চিনি ৷ আব্বাস নিয়মিত ব্যবসায়িক

    কাজে মদীনা যেতেন বলে আমরা তাকে চিনতাম ৷ লেড়াকটি বলল, আপনারা মাসজিদুল হারামে
    প্রবেশ করলে দেখতে পারেন যে, আব্বাস-এর সাথে একজন লোক বসা আছেন ৷ তিনিই
    রাসুলুল্পাহ্ (সা) ৷ আমরা মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, আব্বাস বসা আছেন এবং তার সাথে
    রাসুলুল্লাহ্ (সা)-ও বসা আছেন ৷ আমরা সালাম দিলাম এবং তীর কাছে গিয়ে বসলাম ৷
    আব্বাসের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আবুল ফযল ৷ আপনি কি এ দু’জনকে চিনেন ?
    আব্বাস বললেন, হীড়া, চিনি ৷ ইনি হচ্ছেন গোত্রপতি বারা ইবন মা“রব্র আর উনি হচ্ছেন কাআব
    ইবন মালিক ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, করি কাআব ? আব্বাস বললেন, হী৷ , তাই ৷ বর্ণনাকারী
    বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যে বলেছেন “করি কাআব” তা আমি কোন দিন তুলবাে না ৷

    এরপর বারা ইবন মারুর বললেন, হে আল্লাহ্র নবী ! আল্লাহ্ তা আলা আমাকে ইসলামের
    পথে হিদায়াত করেছেন ৷ আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি ৷ আমি যখন এই সফরে বের হই, তখন
    আমার মনে একটি তার জন্যে যে, এই কা’বাগৃহকে পেছনে রাখা সমীচীন হবে না ৷ ফলে আমি
    বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ না করে বরং কাবাগৃহের দিকে মুখ করেই নামায আদায়
    করেছি ৷ আমার সাথীগণ সকলে আমার বিপরীত কাজ করেছে৷ অর্থাৎ র্তারা কা’বাগৃহকে
    পেছনে রেখে বায়তৃল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করেছেন ৷ ফলে এ বিষয়ে
    আমার মনে খটকার সৃষ্টি হয়েছে ৷ এখন এ বিষয়ে আপনার মতামত কি ? রাসুলুল্লাহ্ (সা)
    বললেন, তুমি তাে একটা কিবলারই (বায়তৃল মৃকাদ্দাসের) অনুসারী ছিলে যদি তুমি তাতে
    অবিচল থাকতে ! বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বাবা (মা) রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর অনুসৃত কিবলার
    অভিমুখী হলেন এবং আমাদের সাথে সিরিয়া অভিমুখী (বায়তৃল মুকাদ্দাসমৃখী) হয়ে নামায
    আদায় করতে লাগলেন ৷ তার পরিবারের লোকজন মনে করে যে, মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কাবামুখী
    হয়ে নামায আদায় করেছেন ৷ আসলে তা ঠিক নয় ৷ তার অবস্থান সম্পর্কে ওদের চেয়ে আমরা
    বেশী জানি ৷

    বর্ণনাকারী কাআব ইবন মালিক বলেন, এরপর আমরা হরুজ্জর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি এবং
    ১ ২ই যিলহাজ্জ আকাবা তে তার সাথে সাক্ষাত করব বলে কথা দিয়ে যাই ৷ আমরা হজ্জ শেষ
    করি ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে সাক্ষাতের ওই রাতটি আসলো ৷ আমাদের সাথে ছিলেন
    আমাদের সমাজপতি আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম আবু জাবির ৷ তিনি তখনো মুশরিক ৷
    আমাদের সাথী মুশরিকদের থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম গোপন রাখতাম ৷ আমরা
    আমাদের সমাজপতি ও নেতা আবদুল্লাহ্ ইবন অড়ামরের সাথে একান্তে কথা বলি ৷ আমরা
    বললাম, হে আবু জাবির ! আপনি আমাদের অন্যতম নেতা এবং স্ন্তুম্ভে ব্যক্তি ৷ আপনি যে পথে
    আছেন, সে পথে থেকে আথিরাভে জাহান্নামের জ্বালানি হবেন তা হতে আমরা আপনাকে রক্ষা
    করতে চাই ৷ এরপর আমরা তাকে ইসলামের দাওয়াত দেই এবং আকাবায়ে আমাদের সাথে
    রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর আসন্ন বৈঠকের কথা তাকে অবহিত করি ৷ তিনি ইসলামগ্নহণ করেন এবং
    আমাদের সাথে আকাবায় উপস্থিত হন ৷ তিনি একজন অন্যতম নকীব হন ৷

    ইমাম বুখারী বলেন, ইব্রাহীম জাবির (রা) সুত্রে বলেন, তিনি বলেছেন, আমি
    আমার পিতা এবং আমার মামা আকাবায় শপথ গ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলাম ৷ আবদুল্লাহ ইবন

    মুহাম্মদ বলেন যে, ইবন উয়ায়না বলেছেন, শপথ গ্রহণকারীদের একজন হলেন বারা’ ইবন
    মারুর ৷ জারির ইবন আবদুল্লাহ (বা) বলেছেন, “আমার দুই মামা আমার সাথে আকাবার শপথ
    অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৷
    ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবদুর রায্যাক জারির (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
    বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কায় ১০ বছর অবস্থান করেছিলেন ৷ তখন তিনি লোকজনকে
    দাওয়াত দেয়ার জন্যে র্তাবুতে র্তাবুতে গিয়েছেন ৷ উর্কায মেলা উপলক্ষে মাজান্না বাজারে এবং
    হভৈজ্জর মওসুমে তিনি মানুষের নিকট গিয়েছেন এবং বলেছেন, “অড়ামকে কে আশ্রয় দেবে,
    আমাকে কে সাহায্য করবে, যাতে করে আমি আমার প্রতিপালকের দেয়া রিসালাতের বাণী
    পৌছাতে পারি ? যে আশ্রয় দেবে, যে সাহায্য করবে, সে জান্নাত পাবে ৷ কিন্তু র্তাকে আশ্রয়
    দেয়ার মতও সাহায্য করার মত কাউকে তিনি পেলেন না ৷ কখনো কখনো ইয়ড়ামড়ান থেকে লোক
    আসত ৷ মুদার গোত্র থেকে লোক আসত ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাদের নিঃকঢ যেতেন এবং আপন
    বক্তব্য পেশ করতেন ৷ সাথে সাথে তারই গোত্রের লোকজন এবং র্তারই আত্মীয়-স্বজন ওই
    লোকের নিকট উপস্থিত হত এবং বলত কুরায়শী এই বালক থেকে আপনারা সতর্ক থাকবেন ৷
    সে যেন আপনাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না) তার বক্তব্য নিয়ে
    মহল্লায়-মহল্লায়, র্তাবুতে র্তাবুতে গমন করতেন আর মুশরিকরা তার দিকে ইঙ্গিত করে তিরস্কার
    ও কটুক্তি করত ৷ শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলা ইয়াছরিব থেকে আমাদেরকে তীর নিকট
    পাঠালেন ৷ আমরা তাকে সত্য বলে গ্রহণ করলাম এবং র্তাকে আশ্রয় দিলাম ৷ এরপর আমাদের
    একেকজন তার নিকট যেত ৷ তার প্ৰতি ঈমান আনত ৷ তিনি তাকে কুরআন পড়াতেন ৷ সে
    লোক তার পরিবারের নিকট ফিরে আসত এবং তার ইসলামের বদৌলতে তার পরিবারের
    লোকজ্যা ইসলাম গ্রহণ করত ৷ অবশেষে এমন হয়ে গেল যে, আনসারদের ঘরে ঘরে, মহল্লায়
    মহল্লায় মুসলমানদের জামাআত সৃষ্টি হয়ে গেল ৷ তারা প্রকাশ্যে ইসলামের কথা বলতে লাগল ৷
    তারা সকলে এ বিষয়ে পরামর্শ করল যে, আর কত দিন রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে মক্কায় রাখব যে,
    তিনি মক্কার পাহাড়ে-পর্বতে ঘুরে বেড়াবেন আর ভয়-ডীতির মধ্যে দিন গুজরান করবেন ?
    আমাদের ৭০ জন লোক রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে নিয়ে আসার জন্যে রওনা হলেন ৷ হস্থজ্জর মওসুমে
    তড়ারা তীর নিকট গিয়ে পৌছলেন ৷ আকাবার গিরি সংকটে তার সাথে আমাদের সাক্ষাতের
    সিদ্ধান্ত হল ৷ যথা সময় একজন দু’জন করে আমরা তার নিকট উপস্থিত হলাম ৷ শেষ পর্যন্ত
    আমরা সকলে সেখানে সমবেত হলাম ৷ আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ৷ কােনৃ বিষয়ে আমরা
    আপনার হাতে বায়আত করব? তিনি বললেন, তোমরা আমার হাতে বায়আত করবে যে,
    সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তোমরা আমার কথা শুনবে, আমার নির্দেশ পালন করবে ৷ অভাবের
    সময়, সচ্ছলতার সময় সর্বসময়ে তোমরা আল্লাহর পথে দড়ান-সাদাকা করবে ৷ তোমরা সৎ
    কাজের আদেশ দিয়ে আর অসৎ কাজ থেকে বারণ করবে ৷ তোমরা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির পক্ষে কথা
    বলবে, আল্লাহ্র পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, কাজ করতে গিয়ে কোন ভহ্সনড়াকারীর ভহ্সনড়ার
    তোয়াক্কা করবে না ৷ তোমরা এ বিষয়েও বায়আত করবে যে, তোমরা আমাকে সাহায্য করবে
    এবং তোমাদের নিকট আমি যখন যাই, তখন তোমরা আমাকে তেমন ভাবে নিরাপত্তা দিয়ে,
    যেমনটি নিরাপত্তা দাও তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের ত্রী-পুত্রদেরকে ৷ বিনিময়ে

    তোমরা জান্নড়াত পাবে ৷ তীর হাতে বায়আত হবার জন্যে আমরা উঠে দাড়ালড়াম ৷ তখনি
    আসআদ ইবন যুরারা এসে তীর হাতে হাত রাখলেন ৷ তিনি আমাদের ৭০ জনের ছোটদের
    অন্যতম ছিলেন ৷ অবশ্য আমি তার চেয়েও ছোট ছিলাম ৷ তিনি বললেন, হে ইয়াছরিবের
    অধিবাসিগণ ৷ থামুন, আমরা উটের পিঠে আরোহণ করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি
    এজন্যে যে, আমরা বিশ্বাস করি তিনি আল্লাহর রাসুল ৷ তবে কথা হল, আজ যদি আপনারা
    র্তাকে এখান থেকে নিয়ে যান, তবে আরবদের সকলেই আপনাদের শত্রু হয়ে যাবে ৷
    আপনাদের নেতৃস্থানীয় লোকগুলো নিহত হবেন ৷ তীক্ষ্ণ তরবড়ারি আপনাদের গর্দান উড়াবে ৷ এ
    পরিস্থিতিতে আপনারা যদি এই অঙ্গীকারে অবিচল থাকতে পারেন , অটল থাকতে পারেন, তবে
    ভীকে নিয়ে যাবেন, ফ্ফাশ্রুতিতে আল্লাহর নিকট সাওয়াব পাবেন ৷ আর যদি আপনারা নিজেদের
    ব্যাপারে শংকিত হয়ে থাকেন, তার পুর্ণ নিরাপত্তা প্রদানে অক্ষমতার ভয় করেন, তবে র্তাকে
    রেখে যান ৷ আল্লাহ্র নিকট ওমর পেশ করার জন্যে এটিই হবে সহজতর ৷ উপস্থিত লোকজন
    বলল, হে আসআদ ! তুমি সরে যাও, আমরা এই বায়আত ত্যাগ করব না এবং কম্মিনকালেও
    এর বরখেলাপ করব না ৷ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সম্মুখে
    র্দাড়ালাম এবং তার হাতে বায়আত হলাম ৷ তিনি আমাদের থেকে কিছু শর্ত ও অঙ্গীকার আদায়
    করলেন আর বিনিময়ে আমাদেরকে জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি দিলেন ৷

    ইমাম আহমদ ও বায়হড়াকী (র) দাউদ ইবন আবদুর রহমান আত্তার আবু ইদরীস
    থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম মুসলিম (র)-এর শর্ত অনুযায়ী এটি একটি উত্তম সনদ,
    যদিও তিনি এ হাদীছ তার সহীহ্ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেননি ৷ বায়যার বলেছেন, একাধিক ব্যক্তি
    ইবন খায়ছাম থেকে এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷ তবে এই সনদ ব্যতীত অন্য কোন সনদে
    জাবির (রা) থেকে এ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই ৷

    ইমাম আহমদ (র) বলেন, সুলায়মান ইবন দাউদ জাবির (না) থেকে বর্ণনা করেন ৷
    তিনি বলেছেন, উক্ত অনুষ্ঠানে আব্বাস রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর হাত ধরে রেখেছিলেন আর
    রাসুলুল্পাহ্ (সা) আমাদের থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার নিচ্ছিলেন ৷ আমরা যখন অঙ্গীকার প্রদান শেষ
    করলাম, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আমি কিছু অঙ্গীকার আদায়
    করেছি এবং কিছু কথা দিয়েছি ৷ ন্

    বায্যার বলেন, মুহাম্মদ ইবন মা’মার জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা

    করেন, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) আনসারী নকীবগণকে বললেন,
    ন্-শুতামর৷ কি আমাকে আশ্রয় দিয়ে এবং আমাকে নিরাপত্তা দিবে ? নকীবগণ বললেন, “হী৷ ,
    তা দেবাে বটে, বিনিময়ে আমরা কী পাব ? তিনি বললেন তোমরা বিনিময়ে জান্নাত পাবে ৷
    বায্যার বলেন, জাবির (রা) থেকে এই সনদ ব্যতীত অন্য কোন সনদে এ হাদীছটি বর্ণিত
    হয়েছে বলে আমার জানা নেই ৷

    ইবন ইসহড়াক বলেন কাআব ইবন মালিক বলেছেন, এই রাতে আমাদের লোকদের
    সাথে আমরা আমাদের র্তাবুতে ঘুমিয়ে পড়ি ৷ রাতের এক-তৃভীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর
    রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে প্রতিশ্রুত সাক্ষাতের জন্যে আমরা র্তাবু হতে বেরিয়ে পড়ি আমরা

    বের হলাম চুপি চুপি অতি সস্তর্পণে যেমন বেরিয়ে আসে বিড়াল ৷ আমরা সকলে আকাবায় গিয়ে
    একত্রিত হলাম ৷ আমরা ছিলাম ৭৩ জন পুরুষ ৷ আমাদের সাথে দু’জন মহিলাও ছিল ৷ একজন
    উম্মু আম্মারা নাসীবাহ্ বিনৃত কাআব ৷ সে বনু মাযিন ইবন নাজ্জার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল ৷
    দ্বিতীয়জন আমর ইবন আদী ইবন নড়াবীর কন্যা আসমা ৷ তিনি ছিলেন বনু সালামা গোত্রের
    মেয়ে ৷ তার উপনাম ছিল উম্মু মানী’ ৷ ইবন ইসহাক ইউনুস ইষ্হ্ন বুকয়াবের বর্ণনার মাধ্যমে
    আকাবায় উপস্থিত লোকদের নাম ও বংশ পরিচয় ম্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন ৷ যে সকল বর্ণনায়
    এসেছে যে, তারা ৭০ জন ছিলেন, যে বর্ণনা সম্পর্কে বলা যায় যে, আরবগণ সংখ্যা বর্ণনায়
    সাধারণত দুই দশকের মধ্যবর্তী খুচরা সংখ্যাগুলো ছেড়ে দিত ৷ সে হিসেবে আলোচ্য
    বর্ণনাগুলোতে ৭০ এর অতিরিক্ত সংখ্যাগুলাে বাদ পড়েছে ৷

    উরওয়া ইবন যুবায়র ও মুসা ইবন উকবা (বা) বলেছেন, আকাবায় উপ ত ছিলেন ৭০
    জন পুরুষ এবং একজন মহিলা ৷ তন্মধ্যে ৪০ জন ছিলেন প্রবীণ আর ৩০ জন যুবক ৷ সবার
    ছোট ছিলেন আবু মাসউদ ও জাবির ইবন আবদৃল্লাহ্ (রা) ৷

    কাআব ইবন মালিক বলেন, আকাবায় গিরিসঙ্কটে উপস্থিত হয়ে আমরা রাসুলুল্লাহ্
    (না)-এর আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম ৷ এক সময় তিনি এলেন ৷ তার সাথে ছিলেন আব্বাস
    ইবন আবদুল মুত্তালিব ৷ আব্বাস তখনো তার পিতৃধর্মের অনুসারী ছিলেন ৷ তবে ভাতিজা
    মুহাম্মদ (না)-এর সম্পর্কে গৃহীতব্য সিদ্ধান্তে উপস্থিত থাকতে তিনি আগ্রহী ছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্
    (না)-এর পক্ষে সুদৃঢ় অঙ্গীকার নেয়াও তার উদ্দেশ্য ছিল ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা) এসে বললেন ৷ প্রথম
    কথা বললেন আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব ৷ তিনি বললেন, হে খড়াযরাজের লোকজন ৷
    আরবগণ আনসারীদের আওস ও খাযরাজ উভয় গোত্রকে থায়রাজ গোত্র নামে ডাকত ৷ তাদের
    উদ্দেশ্যে আব্বাস বললেন, আমাদের মধ্যে মুহাম্মদ (না)-এর অবস্থা সম্পর্কে তোমরা অবগত
    অড়াছ ৷ আমাদের মতবাদে বিশ্বাসী লোকদের হাত থেকে আমরা কিন্তু তাকে নিরাপত্তা দিয়েছি ৷
    ফলে আপন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে তাদের ধরা-ছোয়ার বাইরে এবং আপন শহরে সে নিরাপদ
    রয়েছে ৷ এখন যে তোমাদের সাথে মিলিত হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ এখন তোমরা যদি মনে কর
    যে, মুহাম্মদ (না)-কে দেয়া প্রতিশ্রুতিসমুহ তোমরা পুরোপুরি পালন করতে পারবে এবং
    বিরোধিতাকারীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবে, তবে ভাল ৷ আর যদি তোমরা মনে
    কর যে, শেষ পর্যন্ত তোমরা তাকে রক্ষা করতে পারবে না বরং বিরুদ্ধবাদীদের হাতে তুলে
    দেবে এবং তাকে লাঞ্ছিত করবে, তবে এখনই তাকে রেখে যাও, কারণ, নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে
    আপন দেশে সে সম্মান ও নিরাপত্তার মধ্যে আছে ৷ বর্ণনাকারী বলেন, আমরা আব্বাসকে
    বললাম, আপনার কথা আমরা শুনেছি ৷ ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (না)-এবার আপনি কথা বলুন এবং
    আপনার প্রতিপালকের পক্ষে আমাদের থেকে যত অঙ্গীকার নিতে চান, নিন ৷

    রাসুলুল্লাহ্ (সা) কথা বললেন ৷ তিনি কুরআন তিলাওয়াত করলেন, আল্লাহ্র প্রতি দাওয়াত
    দিলেন এবং ইসলামের প্রতি উৎসাহিত করলেন ৷ তিনি বললেন, আমি তোমাদের অঙ্গীকার
    নেবাে যে, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের ত্রী-পুত্রকে যেভাবে রক্ষা কর, আমাকেও
    সেভাবে রক্ষা করবে ৷ বারা ইবন মারুর রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর হাত ধরে ফেললেন এবং বললেন,

    যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তার শপথ করে বলছি, আমাদের
    শ্ৰীদেরকে আমরা যেভাবে রক্ষা করি আপনাকেও অবশ্যই সেভাবে রক্ষা করব ৷ সুতরাং ইয়া
    রাসুলাল্পাহ্৷ আপনি আমাদেরকে বায়আত করান ৷ আল্লাহ্র কসম , আমরা তো যোদ্ধা জাতি ৷
    প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে উত্তরাধিকার সুত্রে আমরা যুদ্ধ পেয়ে আসছি ৷ যারা কথা বলছিলেন, এরই
    মধ্যে আবু হায়ছাম ইবন তায়হান বলে উঠল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! এখন আমাদের মাঝে এবং
    স্থানীয় সম্প্রদায় ইয়াহ্রদীদের মাঝে একটি মৈত্রী চুক্তি আছে ৷ আপনার অনুসরণ করতে গিয়ে
    আমরা ওই চুক্তি ভঙ্গ করব ৷ পরে আপনি এমন কিছু করবেন নাকি যে, আমরা যদি এই চুক্তি
    ভঙ্গ করি এবং আপনাকে নিরাপত্তা দেই তারপর আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে সার্বিক বিজয় দান
    করেন, তাহলে আপনি আমাদেরকে ছেড়ে আপনার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসবেন ? তার
    কথায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) মুচকি হাসলেন এবং বললেন :
    অর্থাৎ আমার জীবন তোমাদের জীবন, আমার ধ্বংস তোমাদের ধ্বংস ৷ আমি তোমাদের
    তোমরা আমার ৷ তোমরা যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব আর তোমরা
    যার সাথে সন্ধি করবে আমি তার সাথে সন্ধি করব ৷ কাআব (রা) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা)
    বললেন, আমাকে তোমাদের মধ্য থেকে ১২ জন প্রতিনিধি নির্বাচন করে দাও ৷ তারা তাদের
    সম্প্রদায়ের উপর দায়িত্বশীল হবে ৷ তারা খাযরাজ গোত্র থেকে ৯ জন এবং আওস গোত্র

    থেকে ৩ জন মোট ১২ জন প্রতিনিধি বাছাই করে দিলেন ইসলামের ইতিহাসে এই বারোজন
    নকীবরুপে পরিচিত ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, ওই বারো জন হলেন পুর্বোল্লিখিত আবু উমড়াম আসআদ ইবন
    যুরারাহ্, সাআদ ইবন রাবী (ইবন আমর ইবন আবু যুহায়র ইবন মালিক ইবন মালিক ইবন
    ইমরুল কায়স ইবন মালিক ইবন ছা’লাবা ইবন কাআব ইবন খাযরাজ ইবন হারিছ ইবন
    খাযরাজ, আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা ইবন ইমরুল কায়স ইবন আমর ইবন ইমরুল কায়স ইবন
    মালিক ইবন ছালাবাহ ইবন কাআব ইবন খাযরাজ ইবন হারিছ ইবন খাযরাজ পুর্বোল্লিখিত
    রাফি’ ইবন মালিক ইবন আজলান, বারা ইবন মা’রুর ইবন সাখর ইবন থানসা ইবন সিনান
    ইবন উবায়দ ইবন আদী ইবন গানাম ইবন কাআব ইবন সালামা ইবন সআেদ ইবন আলী ইবন
    আসাদ ইবন সারিদা ইবন তাযীদ ইবন জাশ্ম ইবন খাযরাজ, আবদুল্লাহ্ ইবন আমর (ইবন
    হারাম ইবন ছা’লাবা ইবন হড়ারাম ইবন কাআব ইবন গানাম ইবন কাআব ইবন সালামা),
    পুর্বোল্লিখিত উবাদা এর সামিত, সাআদ ইবন উবাদা (ইবন দালীম ইবন হারিছা ইবন খুযায়মা
    ইবন ছা’লাবা ইবন তারীফ ইবন খাযরাজ ইবন সাইদা ইবন কাআব ইবন খাযরাজ) , মুনযির
    ইবন আমর খুনায়স ইবন হারিছা লুযান ইবন আবদুদ (ইবন যায়দ ইবন ছালাবা ইবন খাযরাজ
    ইবন সাইদা ইবন কাআব ইবন খাযরাজ (রা) ৷ এই নয় জন হলেন খাযরাজ গোত্রভুক্ত ৷

    আওস গোত্রের ছিলেন তিনজন ৷ তারা হলেন (১) উসায়দ ইবন হুযায়র (ইবন সিমাক
    ইবন আভীক ইবন রাফি’ ইবন ইমরুল কায়স ইবন যায়দ ইবন আবদুল আশহাল ইবন জাশম
    ইবন খাযরাজ ইবন আমর ইবন মালিক ইবন আওস) (২) সাআদ ইবন খায়ছামা (ইবন হারিছ
    ইবন মালিক ইবন কাআব ইবন নুহাত ইবন কাত্,ণব ইবন হারিছা ইবন পানাম ইবন সালাম
    ইবন ইমরুল কায়স ইবন মালিক ইবন আওস (৩), রিফাআ ইবন আবদুল মুনযির (ইবন যানীর
    ইবন যায়দ ইবন উমাইয়া ইবন যায়দ ইবন মালিক ইবন আওফ ইবন আমর ইবন আওফ ইবন
    মালিক ইবন আওস ৷

    ইবন হিশাম বলেন, বিদ্বান ব্যক্তিগণ উপরোল্লিখিত রিফাআর স্থানে আবু হায়ছাম ইবন
    তায়হানকে গণ্য করেন ৷ ইবন ইসহাক থেকে ইউনুস সুত্রে বর্ণিত বর্ণনায়ও তাই রয়েছে ৷
    সৃহায়লী এবং ইবনুল আহীর তার উসদুল গাবায়ও তা সমর্থন করেছেন ৷ এই বক্তব্যের প্রমাণ
    স্বরুপ ইবন হিশাম আবু যায়দ আনসারী থেকে বর্ণিত কাআব ইবন মালিকের কবিতাটি পেশ
    করেন ৷ আকাবার দ্বিতীয় শপথের রাতে উপস্থিত ১ ২জন প্রতিনিধি সম্বন্ধে কাআব ইবন মালিক
    বলেছেন :

    উবায়কে জানিয়ে দাও যে, তার অভিমত ও পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে এবং তা সম্পুংইি ধ্বংস
    হয়েছে আকাবার শপথ দিবসে ৷ ধ্বংস তো তাদের উপর আপতিত হবেই ৷

    তোমার মন যা কামনা করেছে আল্লাহ তাআলা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ৷ মানুষের
    কর্মতৎপরতা সম্পর্কে তিনি সদা সতর্ক ৷ তিনি সব দেখেন, সব শুনেন ৷

    আবু সুফিয়ানকে জানিয়ে দাও যে, আহমাদ (না)-এর সাথে সাথে আমাদের নিকট আল্লাহ
    তাআলার হিদায়াতের প্রদীপ্ত আলো প্রকাশিত হয়েছে ৷

    ;

    সুতরাং তুমি যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কামনা করছ, তা পুর্ণতা লাভের আশা করোনা ৷
    তুমি যত ইচ্ছা প্রস্তুতি নাও, যা ইচ্ছা সংগ্রহ কর তাতে কোন কাজ হবে না ৷

    তুমি এটাও জেনে রেথো যে, মুহাম্মাদ (সা)-এর সাথে সম্পাদিত আমাদের শপথ ও

    অঙ্গীকার ভঙ্গ করার জংন্য তুমি যে প্রস্তাব ও প্ররােচনা দান করেছ আমাদের দল তা প্রতাখ্যন্যে
    করেছে ৷ যখন তারা অঙ্গীকার করেছে, তখনই তোমার প্রস্তাব প্রড্যাখ্যাত হয়েছে ৷

    ১ ব্রাড়াকেটের অংশটি সীরাতে ইবন হিশামে (নই ৷

    আমি বলি ক আর ইবন মালিক তে ৷ এই কবিতায় সাআদ ইবন মুআয়ের নামও উল্লেখ
    করেছেন অথচ এই রাতে উপস্থিত প্রতিনিধিদের মধ্যে তিনি মোটেই ছিলেন না ৷ ইয়াকুব ইবন
    সুফিয়ান মালিক থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেছেন, আকাবার শপথের রাতে উপস্থিত আনসারদের
    ৎখ্যা ছিল ৭০ ৷ তাদের নেতা মনোনীত হয়েছিলেন ১২ জন ৷ ৯ জন খাযরাজ গোত্রের এবং ৩
    জন আওস গোত্রের ৷ জনৈক আনসারী প্রবীণ ব্যক্তি বলেছেন, আকাবার শপথের রাতে
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) কাদেরকে নেতা বানাবেন, জিবরাঈল (আ) ইঙ্গিতে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে তা
    দেখিয়ে দিয়েছিলেন ৷ উসায়দ ইবন হুযায়র (বা) যে রাতে একজন নকীব মনোনীত
    হয়েছিলেন ৷ বায়হাকী এটি বর্ণনা করেছেন ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মনোনীত
    নর্কীবগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন :

    নিজ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যে আপনারা এক একজন দায়িত্বশীল ও যিম্মাদার, যেমন
    হাওয়ারিপণ ঈসা (আ)-এর পক্ষে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যে যিম্মাদার ছিলেন ৷ আর আমি
    আমার সম্প্রদায়ের জন্যে যিষ্মাদার ৷ উপস্থিত সকলে তাতে সম্মতি প্রদান করেন ৷

    আসিম ইবন উমর ইবন কাতাদ৷ আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর হাতে
    বায়আত হওয়ার জন্যে লোকজন যখন একত্রিত হলেন, তখন বনু সালিম ইবন আওফ গোত্রের
    আব্বাস ইবন উবাদা ইবন নাযলা আনসারী বলেন, হে খাযরাজের লোকজন ৷ তোমরা কোন
    বিষয়ে তার হাতে বায়আত করতে যাচ্ছ তা কি তোমরা জান ? উপস্থিত লোকজন বলল, ইা,
    জানি ৷ তিনি বললেন, বন্তুত তোমরা বায়আত করছ এ বিষয়ে যে, তার কারণে তোমাদেরকে
    যুদ্ধ করতে হবে পাের৷ কালো সকল মানুষের বিরুদ্ধে ৷ তোমরা যদি মনে কর যে, তোমরা
    বিপদে পড়লে, তোমাদের ধন-সম্পদ বিনষ্ট হলে এবং যুদ্ধে তোমাদের নেতৃস্থানীয় লোকজন
    নিহত হতে দেখলে, তোমরা তাকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে, তবে এখনই র্তাকে রেখে যাও ৷
    কেননা, তখন যদি ৫৩ তামর৷ তাকে ছেড়ে যাও, তবে তা হবে তোমাদের ইহক৷ ৷-ল পরকা ৷ল উভয়
    জগতের জন্যে ক্ষতি ও লাঞ্চুনার কারণ ৷ আর যদি তোমরা মনে কর যে, ধন-সম্পদ বিসজ্যা
    দিয়ে, নেতৃস্থানীয় লোকদের বিনাশ সভ্রুত্ত্বও৩ ৫৩ ৷মরা অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারবে, প্রতিশ্রুতি
    পুরণ করতে পারবে, তবে তোমরা তাকে নিয়ে যাও ৷ আল্লাহ্র কসম তখন তা হবে তোমাদের
    ইহক ল ও পরকাল উভয় জগতের জন্যে কল্যাণকর ৷ উপস্থিত লোকজন বলল ধন সম্পদ
    বিসর্জন এবং নে৩ তাদের বিনাশ হওয়ার আশং কা সত্বেও আমরা তাকে নিয়ে যাব ৷ ইয়া
    রাসুলাল্লাহ্ আমরা যদি এই অঙ্গীকার পালন করি, এই বায়আত রক্ষা করি, তবে আমরা কী
    পাব ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তোমরা জান্নাত পাবে ৷ তারা বললেন, তবে আপনি আপনার
    হাত বাড়িয়ে দিন ৷ তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন ৷ সকলে তার হাতে বায়আত করলেন ৷ আসিম
    ইবন উমর ইবন কাতাদ৷ বলেন, আব্বাস ইবন উবাদা এ কথাটি বলেছিলেন বায়আতের

    দায়-দায়িৎ যেন তাদের র্কাধে ময়বুত ভাবে বর্তায় ৷ পক্ষান্তরে আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর
    বলেছেন, ওই বক্তব্য দানের পেছনে আব্বাসের উদ্দেশ্য ছিল ওই বায়আত যেন ৰিলম্বিত হয়,
    ওই রাতে যেন তা অনুষ্ঠিত না হয় ৷ তার উদ্দিষ্ট ছিল যে, এই অবসরে থড়াযরাজ গোত্রের নেতা
    আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সালুল এসে পৌছবে এবং আপন সম্প্রদায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
    করবে ৷ মুলত কী উদ্দেশ্য ছিল, তা আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷

    ইবন ইসহড়াক বলেন, বনু নাজ্জার গোত্র দাবী করে যে আবু উমামা আসআদ ইবন
    যুরারাহ-ই সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর হাতে বায়আত করেন ৷ বনু আবৃদ আশহাল বলে যে
    সর্বপ্রথম বায়আত করেন আবু হায়ছাম ইবন তায়হান ৷

    ইবন ইসহড়াক বলেন, মাবাদ ইবন কাআব তার ভাই আবদুল্লাহ ৷:থৰুকে বর্ণনা করেছেন যে,
    তার পিতা কাআব ইবন মালিক বলেছেন, সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর হাতে হাত রেখে
    বায়আত করেছিলেন বারা’ ইবন মা’রুর তারপর অবশিষ্ট লোকজন ৷ ইবন আহীর “উসদুল পারা
    গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, বনু সালমা গোত্রের দাবী হল, ওই রাতে সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ্
    (না)-এর হাতে বায়আত করেছিলেন কাআব ইবন মালিক (রা) ৷ সহীহ্ বৃখারী ও মুসলিমে
    যুহ্রী কাআব ইবন মালিকের হাদীছে আছে, তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করা প্রসংগে তিনি
    বলেছেন, আমি আকাবার রাতে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট উপ ত ছিলাম ৷ তখন আমরা
    ইসলড়ামকে মযবুত ভাবে ধারণ করার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই ৷ সেই রাতের পরিবর্তে বদরের
    যুদ্ধে উপস্থিত থাকা আমার নিকট অধিক প্রিয় মনে হয় না , যদিও লোক সমাজে বদরের যুদ্ধই
    অধিক স্মরণীয় ও আলোচ্য বিষয় ৷ বায়হাকী বলেন, আবুল হুসাইন ইবন বিশরান আমির
    শা’বী থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার চাচা আব্বাসকে নিয়ে আকাবাতে
    বৃক্ষের নীচে ৭০ জন আনসারী লোকের নিকট উপস্থিত হলেন ৷ তিনি বললেন, আপনাদের মধ্য
    থেকে যিনি কথা বলবেন, তাকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে হবে ৷ বক্তব্য দীর্ঘ করা যাবে না ৷ কারণ
    মুশরিকদের পক্ষ থেকে আপনাদের পেছনে গুপ্তচর নিয়োজিত আছে ৷ তারা যদি আপনাদের
    অবস্থান জানতে পারে , তবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে ছাড়বে ৷ তাদের একজন আবু উমামা
    বললেন, হে মুহাম্মাদ (সা) ! আপনার প্রতিপালকের জ্যন্য আপনি আমাদের থেকে যত অঙ্গীকার
    নিতে চান নিন ৷ তারপর আপনার জন্যে যত অঙ্গীকার নিতে চান নিন! তারপর ওই সব
    অঙ্গীকার পালনের ফলশ্রুতিতে আমরা আপনার থেকে এবং আপনার প্ৰতিপালকের নিকট থেকে
    কী কী প্রতিদান পাব, তা আমাদের অবহিত করুন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আমার
    প্রতিপালকের জন্যে আমি আপনাদের নিকট এই অঙ্গীকার চাই যে, আপনারা তার ইবাদত
    করবেন, তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবেন না ৷ আর আমার জন্যে এবং আমার
    সাহাবীদের জন্যে এই অঙ্গীকার চাই যে, আপনারা আমাদেরকে আশ্রয় দেবেন, সাহায্য করবেন
    এবং নিজেদেরকে যেভাবে নিরাপত্তা প্রদান করেন, আমাদেরকেও যে ভাবে নিরাপত্তা প্রদান
    করবেন ৷ উপস্থিত লোকজন বললেন, আমরা যদি তা পালন করি, তাহলে বিনিময়ে আমরা কী
    পাব ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আপনারা পাবেন জান্নাত ৷ তারা বললেন, তবে আমরা
    আপনাকে অঙ্গীকার প্রদান করলাম ৷

    হড়াম্বল আবু মাসউদ আনসারী থেকে বর্ণিত ৷ তিনি উক্ত ঘটনা আলোচনা করেছেন ৷
    আবু মাসউদ আনসারী উপস্থিত লোকদের মধ্যে সকলের ছোট ছিলেন ৷ আহমদ শা’বী
    সুত্রে বলেছেন উপস্থিত-যুবক বৃদ্ধ কেউই ইতােপুর্বে এমন চমৎকার বক্তৃতা ওনেননি ৷
    বায়হাকী বলেন, আবু তাহির মুহাম্মদ ইসমাঈল ইবন উবায়দুল্লাহ্ ইবন রিফাআ তার পিতা
    সুত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন যে, আমি শরাবের পাত্র এগিয়ে দিলাম ৷ উবাদা ইবন
    সামিত সেখানে এলেন এবং ওই পাত্র ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ্
    (না)-এর হাতে বায়আত করেছি ৷ আমরা অঙ্গীকার করেছি যে, আনন্দ-বিবাদ সকল অবস্থায়
    র্তার আনুগত্য করব ৷ সচ্ছল অসচ্ছল সর্বাবস্থায় আল্লাহর পথে ব্যয় করব ৷ আমরা সৎকাজের
    আদেশ দেবাে, অসৎ কাজ থেকে বারণ করবো ৷ আমরা আল্লাহর পথে কথা বলে যার, কোন
    নিন্দুকের নিন্দা আমাদেরকে পিছপা করতে পারবে না ৷ আমরা আঃরা অঙ্গীকার করেছি যে,
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) ইয়াছরিবে আমাদের নিকট এলে আমরা তাকে সাহায্য করব এবং আমাদের
    নিজেদেরকে ও সন্তানদেরকে যেভাবে রক্ষা করি র্তাকেও সে ভাবে রক্ষন করব ৷ বিনিময়ে
    আমরা জান্নড়াত পাব ৷ এটি ছিল রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে আমাদের অঙ্গীকার ৷ তার হাতে
    আমাদের বায়আত ৷ এটি একটি উত্তম সনদ ৷ কিন্তু সিহাহ্ সঙ্কলকগগ এটি উদ্ধৃত করেননি ৷

    ইউনুস উবাদা ইবন সামিত (রা) সুত্রে বর্ণিত ৷ তিনি বলেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ্
    (না)-এর সাথে অঙ্গীকার করেছি যুদ্ধের অঙ্গীকারের ন্যায় ৷ আমরা অঙ্গীকার করেছি যে,
    অভাবেসচ্ছলতায় সর্বাবস্থায় আমরা তার আনুগত্য কর ৷ সুখে দুঃখে এবং আমাদের উপর
    অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দিলেও আমরা তার আনুগত্য করে যাবো ৷ আমরা দায়িত্শীলদের
    বিরোধিতা করবো না ৷ আমরা যেখানেই থাকি সত্য কথা বলবো ৷ আল্লাহর পথে আমরা কোন
    নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবো না ৷

    ইবন ইসহাক মাবাদ ইবন কাআব থেকে তিনি তার ভাই আবদুল্লাহ ইবন কাআব ইবন
    মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি বলেছেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) — এর হাতে বায়আত
    করলাম, তখন আকাবা পাহাড়ের চুড়া থেকে শয়তান এমন জোরে একটি চীৎকার দিল, যা
    ইতেড়াপুর্বে কখনো আমি শুনিনি ৷ চীৎকার দিয়ে সে বলল, হে র্তাবু ও গৃহের আধিবাসীবৃন্দ ! এক
    নিন্দিত লোক এবং তার সাথে কতক ধর্মত্যাগী লোকদের ব্যাপারে তোমরা কোন ব্যবস্থা নিয়ে
    কি ? তারা তো তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সমবেত হয়েছে, একমত হয়েছে ৷
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন, এই চীৎকারকারী হল আকাবার ঘৃণ্য আযিব জিন ৷ সে ঘৃণ্য বংশজাত ৷
    ইবন হিশাম বলেন, শয়তানকে “ইবন আযীব” বলা হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) আরো বললেন, “ হে
    আল্লাহর দৃশমন৷ আমরা তােকে ওই সুযোগ দেবাে না ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, এবার
    সবাই নিজ নিজ তীবুতে ফিরে যাও ! আব্বাস ইবন উবাদা ইবন নাযলা বললেন, ইয়া
    রাসুলাল্পাহ্ ! যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তার কসম, “আপনি
    চাইলে আপামীকাল ভোরে আমরা তরবারি নিয়ে মীনারাসীদের উপর অভিযান চালাতে পারি ৷
    রাসুলুল্লাহ্ (না) বললেন, না, এখনও আমরা যে বিষয়ে আদেশপ্রাপ্ত হইনি ৷ সবাই বরং র্তাবুতে
    ফিরে যাও ! বর্গনাকারী বলেন, আমরা সবাই আমাদের র্তাবুতে ফিরে গেলাম এবং ভোর পর্যন্ত
    ঘুমিয়ে কাটালাম ৷ সকালে কুরায়শের কতক নেতৃস্থানীয় লোকৰুঅড়ামড়াদের নিকট উপস্থিত হলো ৰু

    তারা বলে, হে খাযরাজের লোকজন আমরা খবর পেয়েছি যে, তোমরা আমাদের বিরোধী
    লোকটির নিকট গিয়েছিলে ৷৫ তোমরা নাকি তাকে আমাদের কাছ থেকে বের করে নিয়ে যেতে
    চাও ৷ আর তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যেত তার সাথে অঙ্গীকার করেছ ৷ তোমাদের
    বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে আমরা যত ঘৃণা করি আরবের অন্য কোন গোত্রের সাথে যুদ্ধকে আমরা
    তত ঘৃণা করি না ৷ ওদের কথা শুনে আমাদের সম্প্রদায়ের মুশরিকরা উঠে র্দাড়াল এবং কসম
    করে বলল, এমন কোন ঘটনা ৷তাে ঘটেনি এবং এবিষয়ে আমরা কিচাই জ নি না ৷ বস্তুত তারা
    সতাই বলেছিল ৷ আসলে তারাও তা এ বিষয়ে কিছুই জানতো না ৷ বর্ণনাকারী বলেন আমরা
    যারাশ্ ৷পথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম, আমরা পরস্পরে মুখ চাওয়ান্চ৷ ওয়ি করছিলাম ৷ এরপর
    কুরায়শের লোকজন চলে যাবার জন্যে উঠে দীড়াল ৷ তাদের মধ্যে হারিছ ইবন হিশাম ইবন
    মুগীরা মাখযুমী ছিল ৷ তার পায়ে ছিল এক জোড়া নতুন জুতা ৷ আমার সম্প্রদায়ের লোকজন
    ওদেরকে যা বলেছে সে বক্তব্যে আমিও শ্ ৷৷মিল আছি বুঝানো র জন্যে আমি বললাম, হে আবু
    জাবির! আপনি আমাদের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ নেতা, আপনি কি কুরায়শের ওই নওজোয়ান
    যুবকের ন্যায় দু ’খানি জুতা ব্যবহার করতে ৩পারেন না ? হারিছ আাধ্ র কথা শুনেছিল ৷ পা থেকে
    জুতা দু ’খানি খুলে সে আমার দিকে ছুড়ে মারল এবং বলল, আল্লাহ্র কসম, এ দুটো তোমাকে
    পরিধান করতেই হবে ৷ আবু জাবির বলল, আহ থামে৷ ! তুমি তো যুবকটিকে ক্ষেপিয়ে তৃলেছ ৷
    তার জুতা তাকে ফিরিয়ে দাও ৷ আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম, আমি ওগুলো ফেরত দেবাে না ৷
    আল্লাহর কসম, এটি একটি শুভাচিহ্ন ৷ এই শুভ মাত্রা যদি সত্য হয় তবে আমি তাকেও ছিনিয়ে
    আনব ৷
    ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবন আবু বকর আমাকে বলেছেন যে, তারা আবদুল্লাহ
    ইবন উবাই ইবন সালুলের নিকট গিয়েছিলেন এবং কাআব যা উল্লেখ করেছেন তা তাকে
    জানালেন, সে বলল, এ বিষয়টি তো খুব গুরুত্বপুর্ণ ৷ আমার সম্প্রদায়ের লোকজন বিচ্ছিন্ন হয়ে
    এমন কাজ করল অথচ আমিত ৷র কিছুই জা ৷নি না ৷ বর্ণনাক৷ রী বলেন এরপর তারা তার কাছ
    থেকে ফিরে এলেন ৷ আমাদের লোকজন মীন৷ ছেড়ে চলে গেল ৷ অন্যদিকে কুরায়শের লোকেরা
    এই ঘটনা সম্পর্কে গোপনে খোজখবর নিল ৷ তারা ঘটনার সত্যতা উদঘাটন করল ৷ তারা
    আমাদের লোকজনকে খুজতে লাগল ৷ ইযখির ঘাসসহ তারা সাআদ ইবন উবাদাকে ধরে
    ফেলল ৷ ঘুনযির ইবন আমর যিনি বনু সা ৷ইদা ইবন কাআব ইবন খাযরাজ গোত্রের মিত্র ছিলেন,
    তাকেও তারা খুজে পেল ৷ত তারা দু ’জনেই ওই রাতে নকীব নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ কিন্তু মুনযির
    তাদেরকে ফাকি দিয়ে কৌশলে পালিয়ে আসেন ৷ তারা সওয়ারীর রশি দিয়ে সাআদ ইবন
    উবাদার হাত দুটো গলার সাথে বেধে তাকে নিয়ে মক্কার দিকে৷ বা তা করল ৷ তারা তাকে প্রহারে
    প্রহারে জর্জরিত করে মাথার চুল টেনে ধরে মক্কায় নিয়ে এল ৷৩ তার মাথায় অনেক চুল ছিল ৷
    সাআদ (বা) বলেন আল্লাহর কসম, আমি তাদের হাতে বন্দী ছিলাম ৷ তখন দেখি সেখানে
    উপস্থিত হল একদল কুরায়শী লোক ৷৩ তাদের মধ্যে একজন খুব ফর্স৷ দীপ্তিময় চেহারা বিশিষ্ট
    নেতৃন্থানীয় লোক ছিল ৷ আমি মনে মনে বললাম, এদের মধ্যে যদি কারো নিকট কো ন উপকার
    পাওয়া যায়, তবে এই লোকের নিকট পাওয়া যাবে ৷ সে যখন আমার কাছাকাছি এল, তখন
    হাত উপরে তুলে আমাকে প্রচণ্ড এক ঘুষি দিল ৷ তখন আমি আপন মনে বললাম, এরপর ওদের

    কারো নিকট আর কোন সহানুভুতি আশা করা যায় না ৷ আমি তাদের হাতে ছিলাম ৷ তারা
    আমাকে টানা-ইচড়৷ করতে থাকে ৷ মাটিতে ফেলে টানতে থাকে ৷ হঠাৎ তাদের এক লোক
    আমার প্রতি সহানুভুতিশীল হয় ৷ সে বলল, ধুত্তুরী, তোমার সাথে কি কুরায়শের কোন একজন
    লোকের সাথেও আশ্রয় চুক্তি ও মৈত্রী চুক্তি নেই ? আমি বললাম, ভুা৷ আছে তো আমি তো
    আমার শহরে জুবায়র ইবন মুতঈম এর ব্যবসায়ী কাফেলাকে আশ্রয় দিতাম এবং কেউ তাদের
    উপর জুলুম করতে চাইলে তাদেরকে রক্ষা করতাম এবং মক্কার গো ক হারিছ ইবন হারব ইবন
    উমইিয়া ইবন আবৃদ শামস এর সাথেও তো আমি একই আচরণ কর৩ ৷ম ৷ লোকটি আমাকে
    বলল, তাড়াতাড়ি তুমি ওই দু জনের নাম ধরে টীৎকার দাও, ওদেরকে ডাক এবং ওদের সাথে
    তোমার যে সম্পর্ক টীৎকার করে তা সব ইকে জানিয়ে দাও সাঅন্দে (রা) বলেন, আমিত
    করলাম ৷ ওই লোক দ্রুত ওই দু’জনের নিকট রওনা করল ৷ যে ন্াদেবন্থক কা বাগৃহের নিকট
    মসজিদে খুজে পেল ৷ সে ওদেরকে বলল, মক্কার সম৩ লভুমিতে৷ থাযরাজ গোত্রের একজন
    লোককে প্রচণ্ডভাবে মারপিট করা হচ্ছে ৷ সে আপনাদের দু জনের নাম ধরে ডাকছে ৷ তারা
    বলল, লোকটি কে ? সে বলল, লোকটি হল সাআদ ইবন উহান্লা৷ জুবায়র ইবন ঘুতঈম ও
    হারিছ ইবন হারব বলল সে তো ঠিবইি বলেছে ৷ নিজ শহরে যে আমাদের ব্যবসায়ী কাফেলাকে
    আশ্রয় দিত এবং তাদের উপর কেউ জুলুম করতে চাইলে সে তাদেরকে রক্ষা করত ৷ এরপর
    তারা দু’জনে এল এবং সাআদ (রা)-কে অত্যাচারী কুরড়ায়শীদের হাত থেকে রক্ষা করল ৷
    সাআদ (রা) আপন পথে চলে গেলেন ৷ হযরত সাআদ (রা )-কে যে ব্যক্তি ঘুষি ণ্মরেছিল, সে
    ছিল সুহায়ল ইবন আমর ৷ ইবন হিশাম বলেন যে ব্যক্তি হযরত সাআদ (রা)-এর প্রতি
    সহানুভুতি দেখিয়েছিল, সে হল আবুল বুখ৩ ভারী ইবন হিশাম ৷

    বায়হাকী (র) আপন সনদে ঈস৷ ইবন আবু ঈসা ইবন জুবায়র থেকে বর্ণনা করেছেন ৷
    তিনি বলেছেন যে, এক রাতে আবু কুবায়স পাহাড় থেকে এক ঘোষক ঘোষণা দিয়েছিল,
    কুরায়শগণ তা শুনেছিল ৷ ঘোষক বলেছিলশু ং

    সাআদ নামের ব্যক্তিদ্বয় যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে মহাম্মাদ (সা) মক্কা নগরীতে এমন
    অবস্থা য় পৌছে যাবেন যে, কোন বিরো ধিতা ৷কারীর বিরোধিতাকে তিনি ভয় করবেন না ৷

    সকালে আবুসুফিয়ান বলল, ওই দুই সাআদ কে ? সাআদ ইবন বকর, নাকি সাআদ ইবন
    হুযায়ম ? দ্বিতীয় রাতে তারা শুনতে পেল, ঘোষক ঘোষণা দিয়ে বলছে :

    হে সাআদ! আওস গোত্রের সাআদ ৷ তুমি সাহায্যকারী হয়ে যাও ৷ এবং হে সাআদ সুন্দর ও
    চালাক গোত্র খাযরাজ গোত্রের সাআদ!

    ১ সীরাতে ইবন হিশাম-এ আছে, তারা আমার ছেড়ে চলে গেল ৷

    তোমরা দু’ জলে সাড়া দাও হিদায়াদু তর পথে আহ্বানকারীর ডাকে ৷ আর আল্লাহর নিকট

    জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চস্থান কামনা কর যেমন কামনা করে আল্লাহর পরিচয় লাভকারী
    ব্যক্তি ৷

    নিশ্চয় হিদায়াত অন্বেষণকারীদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার হল ফিরদাউসের
    বাপানসমুহ যেগুলোতে রয়েছে সবুজ আ সন ৷

    ভেরে হওয়ার পর আবু সুফিয়ান বলল, আলোচ্য দুই সা আাদ হল সাআদ ইবন মুআয এবং
    সাআদ ইবন উবাদা ৷

    পরিচ্ছেদ

    ইবন ইসহাক বলেন, আকাবার দ্বিতীয় শপথের রাতে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে বায়আত
    সম্পন্ন করে আনসারী সাহাবীগণ মদীনায় ফিরে আসার পর সেখানে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু
    করেন ৷ তাদের মধ্যে কতক বয়ােবৃদ্ধ লোক ছিল যারা ৩ থনও তাদের পি৩ ধম শিবৃকের
    অনুসবণকারী ছিল ৷৩ তাদের একজন হল আমর ইবন জামুহ্ ইবৃন ন্ য়ায়দ ইবন হারাম ইবন
    অকাব ইবন গানাম ইবন কাআব ইবন সালামা ৷৩ তার পুত্র মুআয ইবন আমর আকাবার শপথ
    অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শপথ গ্রহণ করেছিলেন ৷ আমর ইবন জামুহ্ ছিল বনু সালামা গোত্রের
    অন্যতম নেতা ও শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ৷৩ তার গৃহে সে কাঠের তৈরী একটি মুর্তি স্থাপন করেছিল ৷
    সেটির নাম মানাত ৷ শিবৃকবাদী ন্ম্বোন্ত লোকেরা৩াই করত ৷ এক একটি মুর্তি নির্মাণ করে তারা
    তার পুজা করত, সেটিকে ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন করত ৩৷ বনু সালামা গোত্রের দু যুবক ইসলাম
    গ্রহণ করলেন ৷ একজন আমরেব পুত্র মুআয, অনজেন মুআয ইবন জাবাল ৷ তারা রাতের
    অন্ধকারে আমরের পুজনীয় মুর্তির নিকট যেতেন ৷ সেটিকে তুলে এনে বনু সালামা গোত্রের এক
    কুয়াের মধ্যে উপুড় করে ফেলে দিতেন ৷ কুয়োটিতে লোকজন ময়লা-আবর্জনা ফেলত ৷ সকালে
    ঘুম থেকে উঠে আমর বলত, “তোমাদের জন্যে ধ্বংস আসুক , গত রাতে আমাদের মুর্তির উপর
    চড়াও হল কে ? এরপর সে মুর্তি খুজতে বের হত ৷ খুজে পাওয়ার পর সেটিকে গোসল করিয়ে
    খোশবু লাগিয়ে পবিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে যথাস্থানে রাখত এবং বলত, আল্লাহর কলম, কে আমার
    মুতিকে এমন করেছে৩ তা যদি আমি জানতে পারতাম, তবে তাকে আমি চরম ভাবে অপমানিত
    করতাম ৷ সন্ধ্যা বেলা আমর ঘুমিয়ে পড়লে মুআয ইবন আমর ও মুআয ইবন জ বাল মুতির
    নিকট আসতেন এবং পুর্ব রাতে যা করেছেন এ রাতেও তা করতেন ৷ সকালে অড়ামর মুর্তির
    খোজ করত এবং ময়লা আবর্জনা মিশ্রিত অবস্থায় তুলে এনে গোসল করিয়ে থােশবু লাগিয়ে
    পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে যথান্থাভৈন রাখতো ৷ আরার সন্ধ্য৷ হলে সে ঘুমাতে যেত ৷ তাবা বএসে মুর্তি
    নিয়ে পুর্বের ন্যায় আচরণ করতেন ৷ বহুদিন এভাবে চলার পর একদিন সে ময়লা আবর্জনা
    থেকে সেটিকে তুলে এনে যথাস্থানে স্থাপন করে ৷ তারপর সেটির গলায় একটি তরবারি ঝুলিয়ে
    দিয়ে বলে আল্লাহর কলম, কে যে তোমার এই অবস্থা করে৩ তা আমি জানি না ৷ মুলত তোমার
    মধ্যে যদি কোন কল্যাণ থাকে তবে এই তরবারি৫ আমার সাথে রইল, এটি দিয়ে তুমি নিজেকে
    রক্ষা করো ৷ সন্ধ্যায় আমর ঘুমিয়ে পড়ল ৷ তারা মুর্তির উপর চড়া ও হলেন ৷ সেটির গলা থেকে

    তলােয়ারটি খুলে নিলেন ৷ একটি মৃত কুকুর এনে রশি দিয়ে সেটিকে মুর্তির সাথে মিলিয়ে
    বীধলেন ৷ তারপর মুর্তি ও কুকুরটি বনু সা’লাম৷ গোত্রের আবর্জন৷ নিক্ষেপের কুয়ােতে ফেলে
    দিলেন ৷ সকালে এসে আমর মুর্তিটিকে যথাস্থানে পেল ন৷ ৷ খুজতে গিয়ে সে দেখতে পেল মৃত
    কুকুরেব সাথে এবইি রশিতে বাধা অবস্থায় ওই কুয়ােতে সেটি উপুড় অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ এ
    অবস্থা দেখে মুর্তিঢির আসল পরিচয় তথা অক্ষমত ৷ সে উপলব্ধি করে ৷ তার সম্প্রদায়ের যারা
    ইসলাম গ্রহণ করেছিল, ভীরাও তার সাথে কথাবার্তা বলে ৷ ফলে আল্লাহর সময়ে যে ইসলাম
    গ্রহণ করে এবং ভাল ভাবে ইসলাম পালন করে ৷ আল্লাহর পক্ষ থেকে উপযুক্ত মাআরিফাত লাভ
    করে ৷ পরবর্তীতে তার মুর্তিব প্রকৃত অবস্থা এবং অন্ধতু ও গোমরাহী থেকে আল্লাহ র্তাকে যে
    যুক্তি দিলেন, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বললেন০ :


    আল্লাহর কসম হে মুর্তি! তুমি যদি প্ৰকৃ৩ তই ইলাহ্ ও উপসা হ ত তবে মৃতকু কুকুরের
    সাথে মিলিত ভাবে কুয়াের মধ্যে পড়ে থাকতে না
    ৷ এ£ব্ৰাছুএ ৰু;ন্া
    দুঃখ হয় তোমার নিক্ষিপ্ত হওয়া দেখে ৷ তুমি৩ ৷লাঞ্ছিত উপাস্য ৷ মন্দতম প্রতারণার
    বশ ৷বর্তী হয়ে আমি তোমাকে বরণ করেছিলাম ৷
    সকল প্রশংসা আল্লাহ তা অ লার, যিনি সর্বোচ্চ, অনুগ্নহশীল, দাত ,৷ রিযিক প্রদানকারী এবং
    সকল দীন ও ধর্মের স্রষ্টা ৷

    ওই মহান আল্লাহ আমাকে মুক্তি দিয়েছেন কবরের অন্ধকারে আবদ্ধ হয়ে যাওয়ার পুর্বে ৷

    পবিছেদ
    আকাবার দ্বিতীয় শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৭৩ জন পুরুষ ২ জন
    মহিলার নামের তালিকা

    আওস গোত্রের ছিলেন ১ ১জন ৷ তারা হলেন (১) উসায়দ ইবন হুযায়র, সেই রাতে
    মনোনীত একজন নকীব, (২) আবু হায়ছাম ইবন তায়হান বদরী, (৩) সালাম৷ ইবন সা’লামা
    ইবন ওয়াক্শ বদরী, (৪) যাহীর ইবন রাফি’, (৫) আবু বুরদাহ্ ইবন দীনার বদরী, (৬) নাহীর
    ইবন হায়ছাম ইবন নাবী ইবন মাজদাআ ইবন হারিছাহ, (৭) সাআদ ইবন খায়ছামা, ওই রাতে
    মনোনীত একজন নকীব ৷ বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, (৮) রিফাঅ৷ ইবন আবদুল মুনযির ইবন
    যানীর বদরী, ওই রাতে মনোনীত একজন নকীব, (৯) আবদুল্লাহ ইবন জুবায়র ইবন নু’মান

    ৷ যে রশি দ্বারা বন্দী লোককে র্বাধ৷ হয় ৷
    ৷ প্রতারণ৷ ৷

    ইবন উমাইয়া ইবন বাবৃক বদরী, উহুদ যুদ্ধে তীরন্দাজ বাহিনীর নেতা ছিলেন ৷ ওই যুদ্ধে শহীদ
    হন, (১০) মা’ন ইবন আদী ইবন জাদ্দ ইবন আজলান ইবন হারিছ ইবন যাবীআ বালাভী ৷ তিনি
    আওস গোত্রের মিত্র ৷ বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন ৷ ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হন,
    (১ ১) উওয়াইম ইবন সাইদা বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন ৷

    উক্ত অনুষ্ঠানে খাযরাজ গোত্রের ৬২ জন পুরুষ উপস্থিত ছিলেন ৷ র্তারা হলেন (১) আবু
    আইয়ুব খালিদ ইবন যায়দ (বা) তিনি বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন ৷ হযরত
    যুআবিয়া (বা ) এর শাসনামলে রোমান রাজ্যে শহীদ হয়েছেন, (২) মুআয ইবন হারিছ (৩) তার
    ভাই আওফ (৪) তীর ভাই মুআওয়ায ৷ র্তারা তিন জন আফরার পুত্র ৷ র্তাব্লা সকলে বদর যুদ্ধে
    উপস্থিত ছিলেন, (৫) আম্মারা ইবন হড়াযম ৷ তিনি বদর ও অনণ্ল্দো যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন ৷
    ইয়ামড়ামার যুদ্ধে শহীদ হন, (৬) আসআদ ইবন যুরারাহ আবু উমব্বমহ্ব মনোনীত অন্যতম নকীব ৷
    বদর যুদ্ধের পুর্বে ইনতিকাল করেন ৷ (৭) সাহ্ল ইবন আভীক বদরী (৮ ) আওস ইবন ছাবিত
    ইবন যুনযির বদরী , (৯) আবু তালহা যায়দ ইবন সাহ্ল বদরী , ( ১ : ) কায়স ইবন আবু সাসাআ
    আমর ইবন যায়দ ইবন আওফইবন মাবযুল ইবন আমর ইবন গানড়াম ইবন মাযিন ৷ বদরের
    যুদ্ধে পশ্চাৎবর্তী বাহিনীর নেতা ছিলেন, (১১) আমর ইবন পাযয়াহ, (১২) সাআদ ইবন রাবী’ ৷
    ওই রাতে মনোনীত একজন নকীব ৷ বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন,
    (১৩) খারিজা ইবন যায়দ, বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন ৷ উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন ৷ (১৪)
    আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা ওই রাতে মনোনীত একজন অন্যতম নকীব, বদর, উহুদ ও খন্দকের
    যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন ৷ মুতার যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালনকালে শহীদ হন ৷ (১৫) বড়াশীর
    ইবন সাআদ বদরী, (১৬) আবদুল্লাহ্ ইবন যায়দ ইবন ছা’লাবা ইবন আবৃদ রাব্বিহী ৷ আল্লাহ
    তড়াআলা তড়াকে স্বপ্নে আযানের বাণী দেখিয়েছিলেন ৷ বদর যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন, (১ ৭) খাল্লাদ
    ইবন সুওয়াইদ বদরী , উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন ৷ বনু কুরায়যা যুদ্ধের দিন শহীদ
    হন ৷ তার মাথায় একটি র্যাতা ফেলে দিয়ে তাকে হত্যা করা হয় ৷ কথিত আছে যে, তার
    সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন ৷ র্তার জন্যে দু’শহীদের সমান
    সাওয়াব থাকবে, (১৮) আবু মাসউদ উকবা ইবন আমর বদরী ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আকাবায়
    যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে ইনি বয়সে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন ৷ বদরের যুদ্ধে হাযির হননি ৷
    (১৯) যিয়াদ ইবন লাবীদ বদরী, (২০) ফারওয়া ইবন আমর ইবন ওয়াদাফা, (২১) খালিদ ইবন
    কায়স ইবন মালিক বদরী, (২২) রাফি’ ইবন মালিক ৷ সে রাতের মনোনীত একজন নকীব,
    (২৩) যাকওয়ান ইবন আবদ কায়স ইবন খালদা ইবন মাখলাদ ইবন আমির ইবন যুরায়ক,
    র্তাকে মুহাজির সাহাবী এবং আনসারী সাহাবী দু’ উপাধিতে ভুষিত করা হয় ৷ কারণ, তিনি
    মক্কায় রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর সাথে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছিলেন এবং সেখান থেকে মদীনায়
    হিজরত করেন ৷ তিনি বদরী সাহাবী ৷ উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন, (২৪ ) আব্বাদ ইবন কায়স ইবন
    আমির ইবন খালিদ ইবন আমির ইবন যুরায়ক বদরী (২৫) তার ভাই হারিছ ইবন কায়স ইবন
    আমির বদরী ৷ (২৬) বারা ইবন মারুর ৷ অন্যতম নকীব, বনু সালামা গোত্রের দাবী হল বারা
    ইবন মারুর-ই সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর হাতে বায়আত করেছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)

    মদীনায় আমার পুর্বে তার ইনতিকাল হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর জন্যে তার সম্পত্তির
    এক-তৃভীয়অংশ ওসীয়াত করে গিয়েছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না) তার সবই তার ওয়ারিসদের
    ফেরত দিয়ে দেন ৷ (২৭) বারা-এর পুত্র বিশর, তিনি বদর, উহুদ এবং খন্দকের যুদ্ধে অংশ
    গ্রহণ করেছিলেন ৷ খায়বারের যুদ্ধে গিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে দেয়া ইয়াহুদীর বিষ মড়াখানো
    বকরীর গোশত খেয়ে তিনি শহীদ হন, (২৮) সিনান ইবন সায়ফী ইবন সাখর বদরী, ( ২৯)
    তুফায়ল ইবন নুমান ইবন খানসা বদরী ৷ তিনি খন্দকের যুদ্ধে শহীদ হন, (৩০) মড়াকিল ইবন
    মুনযির ইবন সারা বদরী, (৩১) তার ভাই ইয়ড়াযীদ ইবন মুনযির বদরী , (৩২) মাসউদ ইবন
    যায়দ ইবন সুবায় , (৩৩) দাহ্হাক ইবন হারিছা ইবন যায়দ ইবন ছা’লাবা বদরী , (৩৪) ইয়ড়াযীদ
    ইবন খুযাম ইবন সুবায়’ (৩৫) জাব্বার ইবন সাখর ইবন উমাইয়া ইবন খানসা ইবন সিনান
    ইবন উবায়দ বদরী, (৩৬) তুফায়ল ইবন মালিক ইবন খানসা বদরী, (৩৭) কাআব ইবন
    মাসিক, (৩৮) সুলড়ায়ম ইবন আমির ইবন হাদীদা বদরী, (৩৯) কুতবা ইবন আমির ইবন হাদীদা
    বদরী, (৪০) তার ভাই আবু মুনযির ইয়ড়াযীদ বদরী, (৪ ১) আবু ইউসর কাআব ইবন আমর
    বদরী , (৪ ২) সায়ফী ইবন সাওয়ড়াদ ইবন আব্বাদ, (৪৩) ছা’লাবা ইবন পানামা ইবন আদী ইবন
    নড়াবী বদরী ৷ তিনি খন্দকের যুদ্ধে শহীদ হন, (৪৪) তার ভাই অড়ামর ইবন পানামা ইবন আদী,
    (৪৫) আবাস ইবন আমির ইবন আদী বদরী, (৪৬) খালিদ ইবন অড়ামর ইবন অড়াদী ইবন নাবী,
    (৪৭) আবদুল্লাহ ইবন উনায়স ৷ কুযাঅড়া গোত্রের মিত্র, (৪৮) আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন
    হারাম ৷ ওই৷ রাতে মনোনীত একজন নকীব ৷ বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং উহুদের যুদ্ধে
    শহীদ হয়েছেন ৷ (৪৯) তার পুত্র জাবির ইবন অড়াবদুল্লাহ্, (৫০) মুআয় ইবন অড়ামর ইবন জামুহ
    বদরী, (৫১) ছাবিত ইবন জাযা’ বদরী ৷ তিনি তাইফের যুদ্ধে শহীদ হন, (৫২) উমায়র ইবন
    হারিছ ইবন ছা’লাবা বদরী, (৫৩) খাদীজ ইবন সালামা বালী গোত্রের মিত্র, (৫৪) মুআয় ইবন
    জাবাল ৷ বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ৷ উমর ইবন খাত্তাব (না)-এর শাসনামলে
    আমওয়াসের প্রেগ রোগে মৃত্যুবরণ করেন, (৫৫) উবাদা ইবন সামিত ৷ ওই রাতে মনোনীত
    নকীব ৷ বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশ্যাহণকারী, (৫৬) আব্বাস ইবন উবাদা ইবন নাযলা, তিনি
    মক্কায় অবস্থান করছিলেন ৷ অবশেষে সেখান থেকে মদীনায় হিজরত করেন ৷ তাই র্তাকেও
    মুহাজির ও আনসার সাহাবী বলা হয় ৷ উহুদের যুদ্ধে তিনি শহীদ হন, (৫৭) আবু আবদুর
    রহমান ইয়ড়াযীদ ইবন ছা’লাবা ইবন খাযড়ামা ইবন আসরাম ৷ বালী গোত্রের মিত্র, (৫৮) আমর
    ইবন হারিছ ইবন কিনদড়া, (৫৯) রিফাআ ইবন অড়ামর ইবন যায়দ বদরী, (৬০) উকবা ইবন
    ওহাব ইবন কালদা ৷ ইনি খাযরাজীদের মিত্র ছিলেন ৷ প্রথমে মক্কায় চলে এসেছিলেন ৷ সেখানে
    অবস্থান করছিলেন ৷ পরে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন ৷ তাই তিনিও একই সাথে
    মুহাজির ও আনসারী নামে পরিচিত ৷ (৬১) সাআদ ইবন উবাদা ইবন দড়ালীম ৷ ওই রাতে
    মনোনীত একজন নকীব, (৬২) মুনযির ইবন আমর ৷ ওই রাতে মনোনীত নকীব ৷ বদর ও উহুদ
    যুদ্ধে শরীক হন ৷ বি’রে মাউনা দিবসে সংশ্লিষ্ট কাফেলার নেতা হিসেবে শহীদ হন ৷ র্তাকে মৃত্যু
    আলিঙ্গনকারী নামে আখ্যায়িত করা হয় ৷

    আকাবার দ্বিতীয় শপথের রাতে উপস্থিত মহিলা দু’জন হলেন (১) উম্মু আম্মড়ারা নড়াসীবা
    বিনৃত কাআব ইবন অড়ামর ইবন আওফ ইবন মড়াবয়ুল ইবন অড়ামর ইবন পানাম ইবন মড়াযিন ইবন

    নাজ্জার মাযিনিয়্যা নাজ্জারিয়্যা ৷ ইবন ইসহাক বলেন, ইনি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে বহু যুদ্ধে
    উপস্থিত ছিলেন ৷ তার বোন এবং স্বামী যায়দ ইবন আসিমও যুদ্ধে উপ ত ছিলেন ৷ তার দু’পুত্র
    থুবায়ব এবং আবদুল্লাহ তার সাথে যুদ্ধে শরীক ছিলেন ৷ তার পুত্র খুবায়বকে ভও নবী
    মুসায়লামা কায্যাব হত্যা করেছিল ৷ মুসায়লামা র্তাকে বলেছিল, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে,
    মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসুল ? খুবায়ব (রা) বললেন, হীা, আমি তো ওই সাক্ষব্রই দিই ৷ এবার
    মুসায়লামা বলল, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসুল ? তিনি বললেন, না, আমি ওই
    সাক্ষ্য দিই না ৷ তুমি ভাল করে শুনে নাও যে, আমি ওই সাক্ষ্য র্দিহ্ না ৷ ফলে সে একটি একটি
    করে তার অঙ্গ-প্রতক্ষোদি কটিতে থাকে ৷ ওই অবস্থায় মুসায়লড়ামার হাতেই তিনি শাহড়াদাতবরণ
    করেন ৷ তিনি অবিরত বলে যাচ্ছিলেন, না, আমি তোমার কোন কথাই শুনছি না ৷ তার মা উম্মু
    আন্মারাহ (রা) মুসলমানদের সাথে ওই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন ৷ যাতে যুসায়লামা নিহত
    হয় ৷ যুদ্ধ শেষে তিনি যখন বাড়ী ফিরে এলেন, তখন তার দেহে তীর ও ছবির আঘাত মিলিয়ে
    প্রায় ১২ টি ক্ষতচিহ্ন ছিল ৷

    আকাবার শপথে উপস্থিত অপর মহিলা হলেন উম্মু মানী’ আসমা বিনৃত আমর ইবন আদী
    ইবন নাবী ইবন আমর ইবন সাওয়াদ ইবন গানাম ইবন কাআব ইবন সালামা ৷ আল্লাহ র্তাদের
    সকলের প্রতি প্রসন্ন হোন ৷

    মক্কা থেকে মদীনায় হিজৱত

    ইমাম যুহরী উরওয়া সুত্রে হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ আইশা (রা) বলেন,
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : আর তখন তিনি ছিলেন মক্কায় আমাকে দেখানো হয়েছে হিজৱত
    ভুমি ৷ তা কােলাহলপুর্ণ এলাকা, খর্জুর বৃক্ষ পরিরেষ্টিত কৃষ্ণ প্রস্তরময় দু’টি অঞ্চলের মধ্যখড়ানে
    তা অবস্থিত ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন একথা বলেন, তখন কিছু লোক মদীনায় দিকে হিজৱত করে
    এবং মুসলমানদের মধ্যে যারা হাবশায় হিজৱত করেছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে
    এসে মদীনায় হিজৱত করেন ৷ ইমাম বুখড়ারী এ বর্ণনা করেন ৷ হযরত আবু মুসা (বা) নবী (সা)
    থেকে বর্ণনা করেছেন ৷ আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি মক্কা থেকে এমন এক ভুমিতে হিজৱত
    করছি, যা খর্জুর বৃক্ষ পরিরেষ্টিত ৷ আমার ধারণা হল যে, এলাকাটা হবে ইয়ামামা বা হিজর,
    দেখা গেল যে তা মদীনা অর্থাৎ ইয়াছরিব ৷ ইমাম বুখড়ারী অন্যত্র দীর্ঘ এ হাদীছটি বর্ণনা
    করেছেন ৷ আর ইমাম মুসলিম আবু কুরাইব সুত্রে আবদুল্লাহ ইবন কায়স এর বরাতে নবী (সা)
    থেকে দীর্ঘ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ বায়হাকী হাফিয সুত্রে জারীর (যা) থেকে বর্ণনা করেন যে,
    নবী সাল্লাল্পাহ্ আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন :

    আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করেন, এ তিনটি শহরের যেখানেই অবস্থান
    করবে তা-ই হবে তোমার হিজৱত ভুমি মদীনা, বাহরাইন বা কিন্নড়াসিরীন ৷ বিজ্ঞজনেরা
    বলেন যে, এরপর তার জন্যে মদীনাকেই সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্ধারিত করে দেয়া হয় ৷ তখন তিনি
    তার সঙ্গী সাহাবীদেরকে সেখানে হিজৱত করার নির্দেশ দান করেন ৷

    এ হাদীছটি অতিশয় গরীব (অর্থাৎ কোন এক যুগে মাত্র একজন রাবী হাদীছটি রিওয়ায়াত
    করেন) ৷ আর ইমাম তিরমিযী র্তার জামি’ গ্রন্থের মানাকিব তথা গুণাবলী অধ্যায়ে আবু

    সম্পর্কিত পোস্ট:


    নোটঃ আকাবার দ্বিতীয় শপথ Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।

    মীযান জামাতের সমস্ত কিতাব PDF Download

    নাহবেমীর জামাতের কিতাব PDF Download

    হেদায়াতুন নাহু জামাতের কিতাব PDF Download

    কাফিয়া জামাতের কিতাব PDF Download

    শরহে জামী জামাতের কিতাব PDF Download

    জালালাইন জামাতের কিতাব PDF Download

    মেশকাত জামাতের কিতাব PDF Download

    দাওরায়ে হাদিসের কিতাব সমূহ PDF Download

    মাদানী নেসাবের কিতাবসমূহ PDF Download

    Leave a Comment

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.