ছিলেন আলী ইবন আবু তালিবের পক্ষ থেকে বসরার শাসক ৷ ইবন আব্বাস (বা) তার গৃহ
থেকে বের হয়ে আইউবকে সসম্মানে নিজ ঘরে প্রবেশ করলে-যেমনটি আবু আইউব
রাসুলুল্লাহ্কে তার গৃহে সসম্মানে বরণ করেছিলেন ৷ ঘরের সবকিছুই তার হাতে তিনি তুলে
দিয়েছিলেন ৷ তিনি ফিরে আসতে মনস্থ করলে ইবন আব্বাস (রা) তাকে ২০ হাজার (দিরহাম)
এবং ৪০টি গোলাম দান করেন ৷ আর আবু আইউবের গৃহ পরবর্তীকালে তার আযাদকুত
গোলাম আফলাহ এর গৃহে পরিণত হয় ৷ পরবর্তীকালে মুগীরা ইবন আবদুর রহমান ইবন হারিছ
ইবন হিশাম তার নিকট থেকে গৃহটি এক হাজার দীনারের বিনিময়ে ক্রয় করেন এবং তা
মেরামত করে মদীনায় নিঃস্বদেরকে তা দান করেন ৷
অনুরুপভাবে বনুনাজ্জারের মহল্লায় রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর অবস্থান এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে
তার জন্য তা অবলম্বন করা এটাও এক বিরাট ফষীলত ও মর্তবার ব্যাপার ৷ মদীনায় ছিল
অনেক পল্লী,যার সংখ্যা নয় পর্যন্ত পৌছে ৷ বসবাসের গৃহ, খেজুর বাগান; থেত-খামার আর
বাসিন্দাসহ এসব পল্লী রীতিমত একেকটি মহল্লা ছিল ৷ সেখানকার প্রতিটি গোত্র নিজেদের
মহল্লা আর জনপদে সমবেত হয়ে পরস্পর সম্পৃক্ত জনপদে পরিণত হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
জন্য আল্লাহ তাআলা বনুমালিক ইবন নাজ্জারের মহল্লাকে মনোনীত করেন ৷
আনসারদের গ্রেষ্ঠত্ব
বুখারী এবং মুসলিম শরীফে শুবা সুত্রে আনাস ইবন মালিক (বা) থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ
হাদীছে আছে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
আনসারগণের সমস্ত বংশের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে বনু নাজ্জার, তারপর বনু আবদুল
আশহাল, তারপর বনু হারিছ ইবন খাঘৃরাজ, তারপর বনু সইিদা ৷ আনসারগণের সকল
জনপদেই মঙ্গল আর কল্যাণ নিহিত আছে ৷ সাআদ ইবন উবাদা বলেন : আমি দেখি যে, নবী
করীম (না) আমাদের উপর গ্রেষ্ঠতু দান করেছেন ৷ তখন বলা হলো, তােমাদেরকেও অনেকের
উপর শ্রেষ্ঠতু দিয়েছেন ৷ এটা বুখারীর শব্দমালা ৷ অনুরুপভাবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস
ও আবু সালামা সুত্রে এবং আবু হুমায়দ সুত্রে নবী করীম (না) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
আবু হুমায়দ্যেশ্ব বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে ৷ তখন আবু উসায়দ সাআদ ইবন উবাদাকে বলেন :
তুমি কি দেখ না যে, নবী করীম (সা) আনসারগণকে শ্রেষ্ঠ আখ্যা দিয়েছেন আর আমাদেরকে
তাদের মধ্যে সকলের শেষে স্থান দিয়েছেন ৷ তখন সাআদ নবী করীম (না)-এর খিদমতে হাযির
হয়ে আরব করলেন ও ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আনসারদের জনপদকে আপনি গ্রেষ্ঠতু দিয়েছেন এবং
আমাদেরকে সকলের শেষে স্থান দিয়েছেন ৷ তিনি বললেন :
“তোমরা সর্বোত্তমদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় ? সমস্ত
মদীনাবাসী মুসলমানদের মধ্যে আনসারগণ দুনিয়া এবং আখিরাতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ৷ এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন : প্
ঘুহাজির আনস রদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং য কো নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের অনুসরণ
করে , আল্লাহ্ তাদের প্ৰতি ৩প্রসন্ন এবংত র বাও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে
রেখেছেন জান্নড়াত, যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে ৷ এটা মহা-
সাফল্য (৯ : ১০০)
মহান আল্লাহ আরো বলেন
আর তাদের জন্যও, মুহাজ্বিরদের আগমনের পুর্বে যারা এ নগরীতে বসবাস করেছে ও
ঈমান এন্যেছ ৷৩ তারা মুহড়াজিরদের ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেওয়া হয়েছে সে জন্য
তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না, আর যারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয়
নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও ৷ মনের ক র্পণ্য থেকে যাদেরকে মুক্ত রাখা হয়েছে, ত রাই সফলকাম
(৫৯ : ৯) ৷
আর রাসুলুল্লাহ্ (যা) বলেছেন :
হিজরত না হলে আমি হতাম একজন আনসারী ব্যক্তি আর মানুষ কোন গিরিপথ দিয়ে
চললে আমি চলতাম আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে ৷ আনসাররা প্রতীক পেশোক
স্বরুপ আর সাধারণ লোকেরা সাধারণ চাদর স্বরুপ ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) আরো বলেন :
“আনসাররা হল আমার একান্ত আপনজন আর নিভরি-স্থল ৷”
আল্লাহ্র নবী আরো বলেন
যারা আনসারদের সঙ্গে শাস্তি স্থাপন করে আমিও তাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন কবি আ র যারা
আনসারদের সঙ্গে সত্ঘ ঘাতে লিপ্ত হয়, আমিও তাদের সঙ্গে সংঘ যাতে লিপ্ত হই ৷ ”
হাজ্জাজ ইবন মিনহাল সুত্রে বড়ারা ইবন অড়াযিব (রা) থেকে বর্ণনা করে ইমাম বুখারী (র)
বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
“মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ আনসারদেরকে ভালবাসে না আর মুনাফিক ছাড়া কেউ
আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না ৷ যে আনসারদেরকে ভালবাসে আল্লাহ্ তাকে
ভালবাসেন; আর যে আনসাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, অল্লোহ্ তাকে অপসন্দ করেন ৷ ”
শুবা সুত্রে আবু দাউদ ছাড়া সিহাহ্ সিত্তাহ্র অন্যান্য সংকলকগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম বুখারী মুসলিম ইবন ইব্রাহীম আনাস ইবন মালিক থেকে, আর তিনি নবী করীম (সা)
থেকে বর্ণনা করেন ও
“আনসারকে ভালবাসা ঈমানের লক্ষণ আর আনসারকে ঘৃণা করা নিফাকের লক্ষণ ৷
ইমাম বুখারী আবুল ওয়ালীদ সুত্রেও হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ আনসারদের ফযীলত আর শ্রেষ্ঠতু
সম্পর্কে প্রচুর আয়াত এবং হাদীছ রয়েছে ৷ আনসারদের অন্যতম কবি আবু কায়স র্মুরমা ইবন
আবু আনাস, যার সম্পর্কে ইতেড়াপুর্বে আলোচনা করা হয়েছে-তিনি আনসারগণের মধ্যে
রাসুলুল্পাহ্ (না)-এর আগমন, তার প্রতি র্তাদের সাহায্য-সহায়তা এবং রাসুল (সা) এবং তার
সাহাবীগণের প্রতি আনসারগণের সহানুভুতি বিষয়ে কী চমৎকার কবিতাই না রচনা করেছেন ৷
তাদের সকলের প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট থাকুন ৷
ইবন ইসহাক বলেন ? আবু কায়স সুরমা ইবন আবু আনাস ইসলামের মাধ্যমে আল্লাহ্
তাআলা আনসারগণকে যে মর্যাদা দান করেছেন এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর মাধ্যমে
আনসারগণকে যে বৈশিষ্ট্য দান করেছে সে সম্পর্কে তিনি কবিতা রচনা করেছেন :
তিনি কুরায়শের মধ্যে ১৩ বছরের অধিক কাল অবস্থান করেন ৷
তিনি তাদেরকে উপদেশ দেন যদি মিলে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী ৷
স্বেশু
হজের মওসুমে লোকদের মধ্যে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতেন; কিন্তু তিনি দেখেননি
কোন অড়াশ্রয়দাতা , পাননি কোন আহবানকারী ৷
তিনি যখন আসেন আমাদের কাছে আর স্থিত হয় তার সওয়ারী ৷ আর তিনি তৃষ্ট হন মদীনা
তায়িবাে দ্বারা এবং সন্তুষ্ট হন ৷
তিনি লাভ করেন সঙ্গী আর তুষ্ট হয়৩ তাকে নিয়ে বাহন ৷ আর আসে তার জন্য আল্লাহর
পক্ষ থােক স্পষ্ট সাহায্য ৷
তিনি আমাদের নিকট কাহিনী বর্ণনা করেন, যা করেছেন নুহ্ (আ) তার জাতির নিকট ৷
আর যা বলেছেন মুসা (আ), যখন তিনি সাড়া দেন আহ্বায়ককে ৷
ফলে তিনি ভয় করেন না মানুষের মধ্যে ক ৷উকেও, না কাছের :কান মানুষকে, না দুরের
কোন মানুষকে ৷
আমাদের সম্পদ থেকে আমরা তার জন্য প্রচুর ব্যয় করি ৷ লড়াই আর সমবেদৃনাকালে
আমরা বিলিয়ে দিয়েছি আমাদের জীবনৰু ন্ ৷
যারা তার সঙ্গে শত্রুতা করে আমরা তাদের সকলের সঙ্গে শত্রুত৷ করি , যদিও সে অন্তরঙ্গ
বন্ধু হোক না কেন ৷
আমরা জা নি যে তা ৷ল্লাহ্ আছেন, তিনি ছাড়া অন্য কিছু নেই ৷ আর আল্লাহ্র কিতাব, তা-ই
তে ৷ কেবল পথ নির্দেশক ৷
যখন আমি সালাত আদায় করি সকল পবিত্র স্থানে, তখন আমি বলি, চাপিয়ে দিও না
আমাদের উপর দুশমনদেরকে ৷
আমি বলি, যখন আমি অতিক্রম করি ভীতিপ্রদ অঞ্চল; পবিত্র আল্লাহ্র নাম, তুমিই তাে
মাওলা ৷
তাই তুমি এগিয়ে চল বিপদ উপেক্ষা করে, মৃত্যুর উপলক্ষ তো প্রচুর, তুমি তাে রক্ষা
করতে পারবে না নিজেকে চিরদিন ৷
আল্লাহ্র শ,পথ যুবক জানে না কী তার চেষ্টায় পরিণতি; যদি আল্লাহ্ তার জন্য
হিফাযতকা রী নিয়োগ না করেন ৷
বালুকাম্য় স্থইনের (খজুর গ্শ্চেছও যখন
সে দাড ৷য় ৷নিজের পায়ে ৷
ইবন ইসহাক প্রমুখ কবি৩ ৷টি উল্লেখ করেছেন ৷ আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র আল-হুমায়দী
প্রমুখ সুফিয়ান ইবন উয়ায়না, ইয়াহ্ইয়া ইবন সাঈদ আনসারী সুত্রে এক আনসারী বৃদ্ধার
উদ্ধৃতি ৩দিয়ে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাসকে এ কবিতামা
বর্ণনড়াকালে সুরমা ইবন কায়স এর নিকট আসা যাওয়া করতে দেখেছি ৷ ইমাম বায়হাকী
বর্ণনাটি উদধৃত করেছেন ৷
অনুচ্ছেদ
মকা-মদীনার ফযীলত
মদীনায় রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর হিজরতের মাধ্যমে মদীনা নগরী ধন্য হয় ৷ আল্লাহ্র বন্ধু এবং
তীর নেক বন্দোদের জন্য তা নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয় ৷ মুসলমানদের জন্য তা পরিণত
হয় দুর্ভেদ্য দুর্ণে, আর গোটা বিশ্ববাসীর জন্য তা হয়ে উঠে ইিদায়াতের কেন্দ্রস্থল ৷ মদীনায়
ফযীলত সম্পর্কে অনেক অনেক হাদীছ বর্ণিত আছে ৷ বিভিন্ন স্থানে সে সমস্ত হাদীছ আমরা
উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ্ ৷
বুখারী এবং মুসলিম শরীফে হাবীব ইবন ইয়াসাফ সুত্রে জাফর ইবন আসিম-এর বরাতে
আবুহুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন ঘ্র
“নিশ্চয়ই ঈমান মদীনায় আশ্রয় নেবে যেমন সর্প আশ্রয় নেয় তার গর্ভে ৷” ইমাম মুসলিম
মুহাম্মদ ইবন রাফি’ সুত্রে ইবন উমর (রা) থেকে আর তিনি নবী করীম (সা) থেকে অনুরুপ
হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷ বুখারী এবং মুসলিম শরীফে মালিক সুত্রে আবু হুরায়রা (রা) এর বরাতে
বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
“এমন একটি জনপদে (হিজবত করার জন্য) আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যে জনপদ
সমস্ত জনপদকে গ্রাস করবে ৷ লোকেরা সে জনপদকে ইয়াছরিব বলে, (আসলে) তা হল মদীনা
রা নবীর নগরী, এ নগরী মানুষকে পরিচ্ছন্ন করে (পাপ-পংকিলতার আবর্ত থেকে) যেমন
আগুনের র্ভাটি লোহার মরিচা দুর করে ৷ চার ইমামের মধ্যে কেবল ইমাম মালিকই এককভাবে
মক্কার উপর মদীনায় শ্রেষ্ঠতৃ স্বীকার করেন ৷ ইমাম বায়হাকী (র) হাফিয আবু আবদুল্লাহ্ সুত্রে
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন :