আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আলহামদুলিল্লাহ নামাযের প্রতি পাবন্দ আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এমনও আছে, যাদের কেউ তো একদমই নামায পড়ে না; বরং নামাযের সময় ক্যাম্পাসে বসে গল্প-গুজব, আড্ডা, খেলাধুলায় লিপ্ত থাকে। আর তাদের কেউ নামায তো পড়ে কিন্তু জামাতে আসে না। তাদেরকে নামাযী বানানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কখনো গাশত করা হয়, কখনো হাযীরী যাচাই করা হয়।
এতে কিছুটা ফায়েদা হলেও উল্লেখযোগ্য ফায়েদা হয়নি। তাই সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে কিছুদিন যাবত পরীক্ষামূলকভাবে এ পদক্ষেপ নেয়া হয় যে, প্রতিষ্ঠানের মসজিদে জামাত চলাকালীন ১০/১২ জনের একটি তদারকি দল গঠন করা হয়। যারা জামাত চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ ও রাস্তায় তদারকি করে। আলহামদুলিল্লাহ এ পদ্ধতিতে যথেষ্ট ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তদারকী দলের লোকদের অধিকাংশ সময় মাসবুক হতে হয়। কখনো একদমই জামাত ছুটে যায়। যার কারণে কেউ কেউ এ পদ্ধতির সমালোচনা করছেন। এখন জানার বিষয় হল, ক) প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনায় বিশেষ তদারকী দলের মাধ্যমে জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের ভিতরে মুসলিম বালেগ যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন আবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীগণের নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াতের উক্ত পদ্ধতি চালু রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?
খ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজের দায়িত্ব পালনের কারণে মাসবুক হিসেবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কি না?
গ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজে কখনও কখনও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় মূল জামাতের নামায শেষ হয়ে যাওয়ার পর তদারকী কাজে নিয়োজিত সদস্যগণের আলাদাভাবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?
ঘ) নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন মুসলিম বালেগ সদস্যদেরকে নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে নিযুক্ত সদস্যগণ এখলাসের সাথে নামাযের তদারকী কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে তারা দাওয়াতী কাজের মর্যাদায় সওয়াবের অংশীদার হবেন, নাকি গুনাহগার হবেন?
ঈমানের পর পাঁচ ওয়াক্ত নামায সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুম। ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করা কুফরীতুল্য ভয়াবহ গুনাহ। এছাড়া পুরুষের জন্য ফরয নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায় করাও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। তাই ছাত্রদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায়ের জন্য দাওয়াত, গাশত, হাজিরী যাচাই ও তদারকীসহ যেসব পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ।
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের আমল আখলাক ঠিক করা, শরীয়তের হুকুম আহকামের প্রতি পাবন্দ বানানো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, দায়িত্বশীলদের জরুরী কর্তব্য। বিশেষত প্রতিষ্ঠানে থাকাবস্থায় যে সকল ছাত্র নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুমের ব্যাপারে উদাসীন বা তদারকী না করলে যাদের নামায ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদেরকে নামাযী বানানোর লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া তো প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গুরুদায়িত্ব। তাই এ ধরনের ছাত্রের পেছনে আপনাদের চেষ্টা ও মেহনত অব্যাহত রাখুন।
তবে মসজিদের মূল জামাতে নামায আদায় করা যেহেতু শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, অন্যদিকে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইকামত হয়ে যাওয়ার পর জামাত চলতে থাকা অবস্থায় তদারকী করতে যাওয়া বা করতে থাকার কারণে যেহেতু তদারকী দলের জামাতে আসা থেকে বিরত থাকা হয় এবং এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত মাসবুক হতে হয়, কখনো বা পুরো জামাত ছুটে যায় তাই এসকল বিষয় থেকে দূরে থাকার জন্য তদারকী কাজের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যে, ছাত্রদেরকে নিয়ম করে দেওয়া হবে যে ছাত্রাবাসের সকল কামরা জামাতের দশ মিনিট পূর্বে তালাবদ্ধ করে দিতে হবে এবং সকল ছাত্রকে অবশ্যই জামাতের পাঁচ মিনিট পূর্বে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে।
এ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তদারকী দল জামাতের পনেরো/ বিশ মিনিট পূর্ব থেকে কাজ শুরু করবে এবং যথাসমযে কামরা বন্ধ করে ছাত্রদেরকে মসজিদে নিয়ে আসবে। এতে তদারকীর দায়িত্বও আদায় হবে এবং মসজিদের মূল জামাতে শুরু থেকেই সকলের নামায আদায় হবে।
অবশ্য উক্ত পন্থা যদি কার্যকরী না হয় এবং জামাত শুরু করার পরও তদারকী অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হয় তাহলে তরবীয়ত ও প্রশিক্ষণমূলক এ কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে দায়িত্বশীলগণ মাসবুক হয়ে গেলে বা তাদের জামাত ছুটে গেলে এ কারণে তারা গুনাহগার হবেন না ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে দায়িত্ব শেষে তারা নিজেরা কোনো স্থানে জামাতে নামায আদায় করে নিবেন।
প্রকাশ থাকে যে, নামাযের ব্যাপারে যেসব ছাত্রের গাফলতি রয়েছে তাদেরকে তদারকী করে নামাযে নিয়ে আসার পাশাপাশি নামাযের হাকীকত, গুরুত্ব ও ফযীলত তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করাতে হবে। নামাযের ব্যাপারে গাফলতি ও শিথিলতা প্রদর্শন এবং নামায ছেড়ে দেয়ার গুনাহ ও ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বাণী শুনাতে হবে। যেন তারা কোন ধরনের তদারকী ছাড়া নিজ থেকেই নামাযের প্রতি যত্নবান হয়ে যায়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৯৩; ফাতহুল বারী ১৩/১১৩; শরহু মুসলিম, ননবী ১২/১১৩; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ১৭/২২৯, ১৭/২৬৫; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৬২১; ফয়যুল কাদীর ২/৪১৬