লেখক বলেন : ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ্ মুশরিক নারীকে মুমিন পুরুষের
জন্যে হারাম ঘোষণা করলে হযরত আবু বকর সিদ্দীক তার মুশরিকা ত্রী উম্মে বকরকে তালাক
দেন ৷ তখন শাদ্দাযা ইবন আসওয়াদ উক্ত উম্মে বকরকে বিবাহ করে ৷
(অর্থ ৪) উম্মে বকর তো লহা শান্তিতে জীবন যাপন করছে ৷ কিস্তু আমার স্ব-সম্প্রদায় ধ্বংস
হওয়ার পর আমার জীবনে কি কোন শাস্তি আছে ?
বদরের কুয়োর কাছে গায়িকা ও মদ্যপায়ীদের কী অবস্থাই না হয়েছে ৷
বদরের কুয়োর কাছে আবলুস কাঠের পাত্রে উচু করে ভর্তি করা কুজের গােশতের কী
দশাই না হল !
বদরের পাড় বীধা কুয়োর কাছে কত যে মুক্ত উট ও চতুষ্পদ জন্তুর পাল ছিল !
বদরের পাড় বাধা কুয়োর কাছে কী পরিমাণ দুর্বার শক্তি ও বড় বড় পেয়ালা ছিল !
আর সেখানে সম্রাম্ভ আবু আলীর কত যে সঙ্গী ছিল যারা ছিল তার উৎকৃষ্ট মদের
আসরের বন্ধু-বান্ধব ৷
তুমি যদি দেখতে আবুআকীল ও নিয়াম পর্বতদ্বয়ের মধ্যবর্তী উপত্যকায় অবস্থানকারীদের
তৎপরতা ৷
তবে তুমি সেখানে যাদেরকে পেতে তাদের উপর তুমি যেতে উঠতে ৷ যেভাবে উটের
বাচ্চার যা তার উদ্দেশ্য পুরণের জন্যে যেতে ওঠে ৷
রাসুল আমাদের জানাচ্ছেন যে, অচিরেই আমাদেরকে আবার জীবিত করা হবে ৷ কিন্তু
মৃতদের বিচুর্ণ হাড় ও মাথার খুলি কীভাবে জীবন লাভ করতে পারে ?
ইমাম বুখারী তার সহীহ্ গ্রন্থে এই কাসীদার কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছেন যাতে কবির
মানসিকতা প্রকাশ পায় ৷
উমাইয়া ইবন আবুসৃ সালতের কবিতা
ইবন ইসহাক বলেন : বদর যুদ্ধে নিহত কুরায়শদের জন্যে শোক প্রকাশ করে উমাইয়া
ইবন আবুস সালত নিম্নের কাসীদাটি আবৃত্তি করেন :
(অর্থ ৪) কেন তুমি র্কাদছো না সস্রান্ত পরিবারের স্ন্তুাম্ভ সন্তানদের জন্যে যারা প্রশংসা
পাওয়ার অধিকারী ৷
যেমন কেদে থাকে কবুতর বৃক্ষের ঝুলন্ত তালে বসে
পুঞ্জীভুত যস্ত্র০া৷য় সে কাদতে থাকে এবং সন্ধ্যাকালে অন্যান্য প্রত্যাবর্তাজ্বকারীদের সাথে
সেও প্রত্যাবর্তন করে ৷
তাদের দৃষ্টান্ত ঐসব বিলাপকারী মহিলা যারা উক্ট্রচ্চ৪স্বরে ক্রন্দন করে ৷
যে তাদের উপর ক্রন্দন করবে, সে দুঃখের কারণেই ক্রন্দন করবে এবং প্রতেদ্রক
প্ৰশংসাকারী যথাঃইি বলে থাকে ৷
বদরের প্রান্তরে ও টিলা ব উপর সর্দারদের কী যে শোচনীয় পরিণতি হয়ে গেল ৷
বারকায়ন অঞ্চলের নিম্নভুমিতে ও আওয়াশিহ্ অঞ্চলের টিলাগুলোতে কী যে কাণ্ড ঘটে
গেল
কিশোর ও যুবক সর্দার আর উদ্ধত ধ্বংসকাবীদের কী পরিণতি যে হল ৷
তোমরা কি তা দেখতে পাওনা, যা আমি দেখতে পাচ্ছি ৷ অথচ প্রত্যেক দর্শকদের কাছেই
তা প্রকাশমান ৷
মক্কা উপত্যকার তো ঢেহারাই পরিবর্তা হয়ে গিয়েছে এবং তা এক ভয়াল জনপদে পরিণত
হয়েছে
অহংকারের সাথে পদচারণাকারীদের সে যে কী অবস্থা হল যাদের গায়ের রং ছিল
উজ্জ্বল ফর্স৷ ৷
তারা ছিল রাজা-বাদশাহদের দরবারের কীট ৷ দুর্গম পথ অতিক্রম করে বিজয় লাভকারী ৷
তারা ছিল অতিভােজী, হুৎ ৷রকারী বিশালাদেহী ও সফলকাম নেতা ৷
তারা ছিল বক্তা, কর্মতৎপর ও সৎ কাজ মাত্রেরই নির্দেশ দানকাৰী ৷
তারা রুটির উপর মাছের পেঢির মত চর্বি রেখে আপ্যায়ন করতো ৷
তারা কুয়ার ন্যায় পাত্রের সাথে বড় বড় পাত্র নিয়ে হাউজের মত পাত্রের দিকে ছুটতো ৷
সে পাত্রগুলো যাঞাকারীদের জন্যে শুন্য বা এলোমেলো ছিল না ৷
এ পাত্রগুলাে নির্ধারিত ছিল একের পর এক আগমনকারী অতিথিদের জন্যে এবং এগুলো
ছিল দীর্ঘ ও প্রসারিত ৷
তারা শত শত বরং হাযার হাযার গর্ভবতী উট দান করে দেয় ৷
সে যেন বালাদিহ অঞ্চল থেকে আগমনকারী উটের কাফেলাকে হীকিয়ে দেয়া হচ্ছে ৷
অন্যদের মর্যাদার উপর তাদের মর্যাদার শ্রেষ্ঠতৃ এমন, যেমন শ্রেষ্ঠতৃ রয়েছে ঝুকে পড়া
পাল্লার ওযনের ৷
যেমন দানশীল হাত দ্বারা প্রদত্ত জিনিস পাল্লায় ওযন করলে ভারী হয়ে যায় ৷
একটি দল তাদের সাহায্য পরিত্যাগ করল ৷ অথচ তারা নিজেদের সম্রম লাঞ্জুনা থেকে রক্ষা
করছিল ৷
তারা শুভ্র ভারতীয় তরবারি দ্বারা অগ্রগামী সৈন্য দলের উপর আঘাত হানছিল ৷
তাদের আর্তনাদ আমাকে পীড়া দিচ্ছিল ৷ তাদের কেউ পানির জন্য হীক-ডাক করছিল আর
কেউ যন্ত্রণায় ছটফট করছিল ৷
আল্লাহ্ই হলেন বনু আলীর হিফাযতকারী, যাদের মধ্যে ছিল বিধবা ও সধবা মহিলারা ৷
যদি তারা এমন কোন আকস্মিক আক্রমণ না করে থাকে, যা ঘেউ যেউকারীকে গর্ভে
লুকাতে বাধ্য করে ৷
এমন আক্রমণ যা অনুগত, দুরপাল্লার পথ অতিক্রমকারী ও ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন ঘোটকীর
মুকাবিলায় অনুরুপ ঘোটকীর দ্বারা সাধিত হয় ৷
যে আক্রমণ হয় পৌফ-দাড়িহীন কিশোরদের দ্বারা মারা সােমহীন অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ
করে হিংস্র সিৎহের দিকে কুকুরের মত ঝাপিয়ে পড়ে ৷
সম মানের লোকেরা পরস্পরে এমনভাবে মুখোমুখি হয়, যেমন একজন কর মর্কাকারী অন্য
একজন কর মর্দনকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে থাকে ৷ প্
যারা সংখ্যায় এক হাযার , তারপর আরও এক হাযার ৷ এরা ছিল লৌহ বর্ম পরিহিত ও বর্শা
নিক্ষেপঃণ দক্ষ ৷
ইবন হিশাম বলেন : রাসুলুল্লাহ্র সহাবাগণ সম্পর্কে আপত্তিকর উক্তি থাকায় পংক্তি ছেড়ে
দেয়া হয়েছে
আমার মতে এটি একটি সমর্থনহীন প্রত্যাথ্যাত ও বুদ্ধিভ্রষ্ট ব্যক্তির কড়াসীদা ৷ এর দ্বারা
বক্তার চরম মুর্থতড়া ও অজ্ঞানতা প্রকাশ পেয়েছে ৷ কেননা যে এখানে মুশরিকদের প্রশংসা ও
ঘু’মিনদের নিন্দা করেছে ৷ আবু জাহ্ল ও তার দোসরদের অনুপস্থিতিতে মক্কাভুমি তার কাছে
উজাড় মনে হয়েছে ৷ যারা ছিল মুর্থ, সীমা লংঘনকারী, দৃষ্ট কাফির ৷ কিন্তু আল্পাহ্র প্রিয় রাসুল
-যিনি মড়ানবকুলের গৌরব, চাদের চাইতেও উজ্জ্বল যার চেহারা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় যিনি মহীয়ান,
তার সাথী সত্যানুসারী আবু বকর সিদ্দীক, যিনি ছিলেন সকল প্রকার কল্যাণমুলক কাজে অগ্রণী,
বিশ্বপ্রভু আল্পাহ্র পথে হাযার হাযার অর্থ ব্যয়কারী, অনুরুপডাবে অন্যান্য সড়াহড়াবায়ে কিরাম,
যারা মুর্থতা ত্যাগ করে জ্ঞানের সন্ধানে ছুটেছেন এবং দারুল কুফর ত্যাগ করে দারুল ইসলামে
গমন করেছেন তাদের অবর্তমানে মক্কাভুমি তাদের কাছে উজাড় মনে হয় না ৷ আলোর
সাথে অন্ধকার ও রাতের সাথে দিনকে তারা ঘুলিয়ে ফেলেন না ৷ বদর যুদ্ধ প্রসঙ্গে আরও বহু
কবিতা আছে ৷ ইবন ইসহাক সেগুলো উল্লেখ করেছেন ৷ গ্রন্থের কলেবর বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ও
পাঠকদের বিরক্তির আশংকায় আমরা এই পর্যন্ত উদ্ধৃত করেই ক্ষান্ত দিলাম ৷
উমাবী তার মাগাযী গ্রন্থে তার পিতা সুত্রে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্
(সা) জাহেলী কবিতা আবৃত্তিকে ক্ষমার চোখে দেখেছেন ৷ সুলায়মান বলেন, এ প্রসঙ্গে যুহরী
বলেছেন যে,, “তবে ছুটি কড়াসীদা এর ব্যতিক্রম ৷ তার একটি হল উমাইয়া ইবন আবিস
সালতের কবিতা যার মধ্যে বদরী সাহাবীগণের কুৎসা আছে ৷ দ্বিতীয়টি আশার কবিতা-
যার মধ্যে আখওয়াসের উল্লেখ আছে ৷ তবে এ হাদীছটি গরীব অপরিচিত এবং এর একজন
বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবন আরকামের বর্ণনা অগ্রহণযােগ্য ৷
অনুচ্ছেদ
বনু সুলায়মের যুদ্ধ
হিজরী ২য় সালে বনু সুলায়মের যুদ্ধ সংঘঠিত হয় ৷ ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বদর যুদ্ধ শেষে রমফোনের শেষ দিকে কিৎবা শাওয়ড়াল মাসে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন ৷
মদীনায় সাত দিন অবস্থান করার পর তিনি নিজেই বনী সুলায়মের বিরুদ্ধে এক অভিযান
পরিচালনা করেন ৷ ইবন হিশাম বলেন : এ সময় মদীনায় রাসুলুল্লাহ্র প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে
সিবা ইবন আরফাতা পিফারী অথবা অন্ধ সাহাবী ইবন উম্মে মাকতুমকে দায়িত্ব দেয়া হয় ৷
ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ্ বনু সুলায়মের কুদর নামক এক পানির কুয়া পর্যন্ত পৌছেন ৷
এখানে তিন দিন অবস্থান করেও শত্রুদের কোন সন্ধান না পেয়ে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন ৷
শাওয়ালের অবশিষ্ট দিন ও যিলকাদা মাস মদীনায় অবস্থান করেন এবং কুরায়শ বন্দীদের
একটি দলকে ঘুক্তিপণের বিনিময়ে দ্ভুছড়ে দেন ৷
অনুচ্ছেদ
সাবীক যুদ্ধ বা ছাত্র যুদ্ধ
হিজরী ২য় সালের ষিলহাজ্জ মাসে সাবীক যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৷ একে কারকারাতৃল কুদর
যুদ্ধও বলা হয় ৷ সুহায়লী বলেন : কারকারা অর্থ সমতলতুমি এবং কিদ্র এক প্রকার পাখীর
নাম, যার গায়ের রং ধুসর ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক মুহাম্মদ ইবন জাফর ও ইয়াযীদ ইবন রুমান
প্রমুখ সুত্রে আবদুল্লাহ্ ইবন কাআব ইবন মালিক থেকে বর্ণিত ৷ ইবন কাআব ছিলেন
অড়ানসারগণের মধ্যে বিজ্ঞ আলিম ৷ তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে পরাজিত কুরায়শরা যখন মক্কায়
পৌছল এবং আবু সুফিয়ানও মক্কায় প্রত্যাবর্তন করল, তখন সে কসম খেয়ে বসলো যে,
মুহাম্মদের সাথে আর একটি যুদ্ধ না করা পর্যন্ত যে শ্ৰীর সাথে সঙ্গত হবে না ৷ এরপর কসম
রক্ষার্থে সে দু’শ’ ংকুরায়শ আশ্বারোহী সঙ্গে নিয়ে মদীনায় উদ্দেশ্যে রওনা হল ৷ নজ্বদ অতিক্রম
করে মদীনা থেকে বার মাইল দুরে নীব নামক পাহাড়ের পাদদেশে উপনীত হল ৷ ঐ রাত্রেই সে
বনুনযীর গোত্রে উপস্থিত হয়ে হুয়াই ইবন আখতারের বাড়ীতে আসে ৷ তার ঘরের দরজায় শব্দ
করলে হুয়াই ইবন আখতার ভীত হয়ে পড়ে এবং দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানায় ৷ আবু
সুফিয়ান সেখান থেকে ফিরে এসে বনু নযীরের সর্দার ও কােষাধ্যক্ষ সাল্লাম ইবন মিশকামেব
বাড়ীতে যায় ৷ বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সাল্লাম ইবন মিশকাম তাকে অনুমতি দেয় ৷
এরপর তাকে উত্তম রুপে আখ্যায়িত করে মুসলমানদের গোপন সংবাদ সরবরাহ করে ৷ এরপর
সে রাতের শেষ ভাগে আপন সৈন্যদের সাথে মিলিত হয় এবং একদল কুরায়শ সৈন্যকে মদীনায়
দিকে পাঠিয়ে দেয় ৷ তারা মদীনায় উপকণ্ঠে আরীয নামক স্থানে এসে খেজুর গাছের শুকনা ডান
একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেয় ৷ তারা সেখানে একটি ক্ষেতে কর্মরত জনৈক আনসারী ও তার
এক মিত্রকে দেখতে পেয়ে উভয়কে হত্যা করে পালিয়ে যায় ৷ ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেসে
রাসুলুল্লাহ্ (না) তাদের ধরার জন্যে অগ্রসর হন ৷ ইবন হিশাম বলেন, যাত্রাকালে তিনি মদীনা