মক্কায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর অবস্থান-কাল
মক্কা বিজয়ের পর রমযান মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো রাসুলুল্লাহ্ (সা) সেখানেই কাটান ৷ এ
সময়ে তিনি যে নামায কসর পড়েন ও রােযা রাখেননি এ ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত নেই ৷ এটা
সেসব আলেমদের মতের স্বপক্ষে দলীল যীরা বলেন, মুসাফির যাঈ কোথাও অবস্থান (ইকামত)
করার দৃঢ় সংকল্প না করে, তবে আঠার দিন পর্যন্ত যে নামায কসর করতে পারবে ৷ অবশ্য এ
আলিমদের আর একটি মত যথাস্থানে লিপিবদ্ধ আছে ৷ ইমাম বখারী আবু নৃআয়ম আনাস
ইবন মালিক সুত্রে বণ্নাি করেন, তিনি বলেন : আমরা রাসুলুল্লাহ্ সাট্রুা-এর সাথে দশ দিন অবস্থান
করেছিলাম ৷ এ সময়ে তিনি নামায়ে কসর করতেন ৷ সিহাহ্সিতাং অন্যান্য সংকলকগণ ইয়াহ্য়া
ইবন আবুইসহাক হাদরামী আল-বসরী সুত্রে আনাস (রা) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ধুখারী
আবদান ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) (মক্কায়) উনিশ দিন
অবস্থান করেন এবং দৃরাকআত করে নামায আদায় করেন ৷ এ হাদীছ বুখারী অন্য সুত্রেও বর্ণনা
করেছেন ৷ বুখারী ও আবু হুসায়ন উত্তরে এবং আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবন মাজা এ হাদীছটি
আসিম ইবন সুলায়মান ইবন আব্বাস সুত্রে কিছুটা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন ৷ তবে আবু
দাউদের ভাবে অবস্থানকাল সতের দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ আহমদ ইবন ইউনুস
ইবন আব্বাস সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন : আমরা কোন এক সফরে রাসুলুল্লাহ্
(সা ) এর সাথে উনিশ দিন একই স্থানে অবস্থান করি ৷ তখন আমরা নামায়ে কসর করেছি ৷ ইবন
আব্বাস (রা) বলেন, এ কারণেই আমরা যখন কোন স্থানে উনিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করি তখন
নামায কসর পড়ি ৷ কিভু উনিশ দিনের বেশী অবস্থান করলে নামায পুরোপুরি পড়ি ৷ আবু দাউদ
ইব্রাহীম ইবন মুসা ইমরান ইবন হুসায়ন সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেছেন : আমি
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছি ৷ মক্কা বিজয়ে তীর সাথে থেকেছি ৷ তিনি তথায়
আঠার রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন ৷ এ সময়ে তিনি দৃরাকআত করে নামায পড়েছেন ৷ তার চেয়ে
বেশী পড়েননি ৷ তিনি পরিষ্কার বলে দিতেন : “হে মক্কার অধিবাসীরা ! তোমরা নামায চার
রাকআত পড় ৷ আমরা তাে মুসাফির ৷” ইমাম তিরমিযী এ হাদীছ আলী ইবন যায়দ ইবন জ্বাদআন
থেকে অনুরুপ বংনাি করে মন্তব্য করেছেন যে, এ হাদীছ হাসান পর্যায়ের ৷ এরপর ইমাম তিরমিযী
এ হাদীছ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক যুহরী আবদুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ সুত্রে ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে
বনাি করেন ৷ তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কা বিজয়ের পর সেখানে পনের রাত অবস্থান
করেন এবং নামায়ে কসর করেন ৷ এরপর তিরমিযী বলেন, এ হাদীছ ইবন ইসহাক থেকে
একাধিক রাবী বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তারা কেউ ইবন আব্বাসের উল্লেখ করেননি ৷ ইবন ইদরীস
মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক থেকে, তিনি যুহরী ও মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন হুসায়ন , আসিম ইবন আমর
ইবন কাতাদা, অড়াবদুল্লাহ্ ইবন আবু বকর, আমর ইবন শুআয়ব ও আরও কতিপয় রাবী থেকে
রক্ষা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কায় পনের রাত অবস্থান করেন ৷
মক্কায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর
কতিপয় নির্দেশ
বুখারী বলেন, আমার নিকট আবদুল্লাহ ইবন মুসলিম আইন্ণার সুত্রে নবী করীম (সা)
থেকে বর্ণনা করেন, অন্য সনদে লায়ছ — — আইশা (বা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন :
উত্বা ইবন আবু ওয়াক্কাস তদীয় ভ্রাতা সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাসকে ওসীয়াত করে যান যে, তিনি
যেন যামআর বীদীর পুত্রটিকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেন ৷ উত্বা বালছিলেন যে, ছেলেটির জন্ম
আমারই ঔরসে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বিজয়কালে যখন মক্কায় আসেন, তখন শ্না’দ ইবন আবু ওয়াক্কাস
এক সুযোগে যামআর র্বাদীর পুত্রটিকে নিজের আয়ত্বে এনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট উপস্থিত
হন ৷ তার সাথে যামআর পুত্র আবদও আসে ৷ সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস দাবী করলেন যে, এ
আমার ভাতিজা ৷ আমার ভাই ওসীয়ত করে গিয়েছেন যে, এ সম্ভানটি তারই ঔরসজাত ৷ প্ৰতি
উত্তরে আবদ ইবন যামআ বললো , ইয়া রাসুলাল্লাহ্ এ আমার ভাই ৷ এ যামআর পুত্র ৷ তার
বিছানায় এর জন্ম হয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন যামআর র্বাদীর পুত্রের প্ৰতি লক্ষ্য করে দেখলেন
যে, তার দৈহিক গঠন ও চেহারা উত্বা ইবন আবু ওয়াক্কাসের সাথে অধিক সাদৃশ্যপুর্ণ ৷ তখন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আবদ ইবন যামআ ! তুমিই এর অধিকারী ৷ এ তােমারই ভাই ৷
কেননা, সে তারই বিছানায় জন্ম গ্রহণ করেছে ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার সহধ্র্মিণী সাওদা
বিনৃত যামআকে বললেন, তুমি এর থেকে পর্দা করবে ৷ কারণ, তিনি দেখেছেন যে, উত্বা ইবন
আবু ওয়াক্কাসের সাথে তার সাদৃশ্য রয়েছে ৷ ইবন শিহাব বলেন, আইশা (বা) বলেছেন যে,
এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন বিছানা যার সন্তান তার,
আর ব্যভিচারীর জন্যে পাথর ৷ অর্থাৎ প্ৰস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড ৷ ইবন শিহাব বলেন, আবু হুরায়রা এ
বাক্যটি প্রায়ই উচ্চ৪স্বরে বলতেন ৷ এ হাদীছটি মুসলিম , আবু দাউদ, তিরমিযী এবং বুখারী ও
কুতায়বার সুত্রে লায়ছ থেকে অনুরুপ বনাি করেছেন ৷ ইবন মাজ৷ ও বুখারী মালিক সুত্রে যুহরী
থেকে এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷
এরপর ইমাম বুখারী বলেন, আমাদের নিকট মুহাম্মাদ ইবন মুকাতিল উরওয়া ইবন
যুবায়র সুত্রে বর্ণনা করেন যে, বিজয় যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর উপস্থিত কালে জনৈক মহিলা চুরি
করে ধরা পড়ে ৷ এতে তার গোত্রের লোকেরা ভীত হয়ে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে সুপারিশের
জন্যে উসামা ইবন যায়দের কাছে ছুটে আসে ৷ উরওয়া (রা) বলেন, উসামা যখন ঐ মহিলার
ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে আলাপ করছিল, তখন রড়াসুলুল্লাহ্ (না)-এর চেহারার রং
পরিবর্ভা হয়ে গিয়েছিল ৷ তিনি উসামাকে বলেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তির বিধান (হদ)
এর ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছো ? তখন উসামা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আমার
জন্যে ক্ষমা প্রাংনি৷ করুন ! এরপর সন্ধ্য৷ হলেও তিনি জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দণ্ডায়মান
হলেন ৷ প্রথমে আল্লাহর যথোপোযুক্ত প্রশংসা করলেন ৷ তারপরে বললেন, তোমাদের পুর্ববর্তী
জাতিসমুহ এ কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে যে, তাদের কোন অভিজাত লোক চুরি করলে তারা তাকে
ছেড়ে দিত ; কিন্তু কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর দণ্ড প্রয়োগ করতে৷ ৷ ,
যার হাতে মৃহাম্মাদের জীবন যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাত ৷তিমাও চুবি করতো তা হলে অবশ্যই আমি
তার হাত কেটে দিতাম ৷ তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নির্দেশক্রমে সে মহিলা র হাত তকেটে দেয়া
হয় ৷ পরবর্তীতে তার এ ত ৷ওব৷ উত্তম প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্য এক পুরুষের সাথে তার বিবাহ
হয়েছে ৷ আ ৷ইশ৷ (রা ) বলেন, এরপর সে প্রায়ই আমার কাছে আসাত৷ এবং আমি তার আবেদন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট পেশ করত তাম ৷ বুখারী তার গ্রন্থের অন্য স্থানে এবং মুসলিম ইবন
ওহবের সুত্রে আইশা (রা) থেকে অনুরুপ বর্ণনা ৷করেচ্ছেন ৷
সহীহ্ মুসলিম গ্রন্থে সাবুরা ইবন মাবাদ জুহানী সুত্রে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, বিজয়ের বছর
মক্কা প্রবেশকালে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাদেরকে মুতআ (সাময়িক বিবাহ) এর অনুমতি দেন !
এরপর তার মক্কা থেকে বের হয়ে আমার পুর্বেই এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন ৷
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন, আজকের এই দিন থেকে
কিয়ামত পর্যন্ত ঘুত্অ৷ হারাম ঘোষণা করা হলো ৷ মুসনাদে আহমদ ও সুনান প্রন্থসমুহের এক
বর্ণনা মতে কিয়ামত পর্যন্ত হারাম হওয়ার এ ঘোষণা বিদায় হরুজ্জ দেয়৷ হয়েছিল ৷ সহীহ্ মুসলিমে
আবু বকর ইবন আবু শায়বা সুত্রে সালামা ইবন আক্ওয়৷ (রা) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন
৪আওতাসের বছর রাসুলুল্পাহ্ (সা) আমাদেরকে মহিলাদের সাথে মুত তআ করার অনুমতি
দিয়েছিলেন তিন দিনের জন্যে ৷ এরপর তিনি আমাদেরকে এ থেকে ধারণ করে দেন ৷ বায়হাকী
বলেন, আওতাসের বছর ও বিজয়ের বছর একই ৷৩ তাই উক্ত হাদীছ ও সাবুরা বর্ণিত হা ৷দীছ অভিন্ন ৷
আমি বলি, যে সব আলিম খায়বারেব যুদ্ধে মুতঅ৷ হারাম হওয়া প্রমাণ করেন তাদের মতে
মুত্আ দৃ’বার মুবাহ করা হয়েছে এবং দৃ’বার হারাম করা হয়েছে ৷ ইমাম শাফিঈ প্রমুখ এ ব্যাপারে
সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণের অবতারণা করেছেন ৷ কারও কারও মতে দৃ’ বারের চেয়েও অধিক বার
একে মুবাহ ও হারাম করা হয়েছে ৷ আল্লাহ্ইভ তাল জা নেন ৷ কারও মতে এটা একবারই মুবাহ
করার পর হারাম করে দেওয়া হয়েছে ৷ আর তা হয়েছে মক্কা বিজয়ের কালে ৷ আবার কেউ কেউ
বলেছেন, প্রয়োজনের তাকিদে এটা মুবাহ করা হয়েছে ৷ এ মত তঅনুয়ায়ী যখনই প্রয়োজন দেখা
দেবে তখনই তা মুবাহ হয়ে যাবে ৷ ইমাম আহমদ থেকে এরুপ একটি মতের কথা জানা যায় ৷
কারও কারও মতে ঘুত্আ আদৌ হারাম করা হয়নি; বরং তা এখনও মুবাহ আ ছ ৷ ইবন আব্বাস
এই মত পোষণ করেন বলে প্রসিদ্ধ আছে ৷ এ ছাড়াত তার শিষ্যবর্গ এবং কতিপয় সাহাবীও এই
মত পোষণ করেন ৷ আহ্ক৷ ম বা বিধি-বিধানের অধ্যায়ই এ আলোচনা ৷র উপযুক্ত স্থান ৷
অনুচ্ছেদ
ইমাম আহমদ বলেন : আমার নিকট আবদুর রায়যাক — — মুহাম্মাদ ইবন আসওদ সুত্রে
বংনি৷ করেন যে, তার পিতা আসওদ রাসুলুল্লাহ্ (সা )-কে বিজয়ের দিন লোকদেরকে বায়আত