কওমে শু আয়ব বা মাদ্য়ানবাসীৱ ঘটনা
আল্লাহ্ তা আলা সুরা আ রাফে কওমে লুতের কাহিনী শেষ করার পর বলেন
মাদ্য়ানবাসীদের কাছে তাদের স্বগােত্রীয় শুআয়বকে পাঠিয়েছিলাম ৷ সে বলেছিল ,
আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্পাহ্র ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্
নেই ৷ তোমাদের প্রতিপালক হতে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে ৷ সুতরাং তোমরা মাপ
ও ওজন ঠিকভাবে দেবে; লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং দুনিয়ার শাস্তি
স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না; তোমরা মু’মিন হলে তোমাদের জন্যে এটা কল্যাণকর ৷ তার
প্রতি যারা ঈমান এবুনবুছত তাদেরকে ভয় প্রদর্শনের জন্যে কোন পথে বসে থাকবে না, আল্লাহ্র
পথে তাদেরকে বাধা দেবে না এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে না ৷ স্মরণ কর, তোমরা
যখন সংখ্যায় কম ছিবুল আল্লাহ তখন তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন এবং বিপর্যয়
সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কিরুপ ছিল, তা লক্ষ্য কর ৷ আমি যাসহ প্রেরিত হয়েছি তাতে যদি
তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল বিশ্বাস না করেত তবে ধৈর্যধারণ কর, যতক্ষণ
না আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন ৷ আর তিনিই শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী ৷ তার
সম্প্রদায়ের দাস্তিক প্রধানগণ বলল, হে শুআয়ব! তোমাকে ও তোমার সাথে যারা বিশ্বাস
করেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে
ফিরে আসতে হবে ৷ ’সে বলল, কী! আমরা তা ঘৃণা করলেও ?’ তোমাদের ধর্ম দর্শ হতে
আল্পাহ্ আমাদেরকে উদ্ধার করার পর যদি আমরা তাবুত ফিরে যাই, তবুব তো আমরা আল্লাহর
প্রতি মিথ্যা আরোপ করব, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ ইচ্ছা না করলে আর তাতে ফিরে
যাওয়া আমাদের কাজ নয়; সবকিছুই আমাদের প্ৰতিপালকের জ্ঞানায়ত্ত ৷ আমরা আল্লাহ্র প্রতি
নির্ভর করি; হে আমাদের প্ৰতিপালক৷ আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যাভারে
মীমাংসা করে দাও; এবং তৃমিই মীমাংসাকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ৷ তার সম্প্রদায়ের অৰিশ্বাসী
প্রধানগণ বলল, তোমরা যদি শুআয়বকে অনুসরণ কর তবে তোমরা তো ৷ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷
অতঃপর তারা ভুমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল, ফলে তাদের প্রভাত হল নিজ ঘরে উপুড় হয়ে
পতিত অবস্থায় ৷ মনে হল, শু আয়ববুক যায়৷ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা যেন কখনও সেখানে
বসবাস করেই নি ৷ শুআয়বকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৷ সে
তাদের থেকে মুখ ফিরাল এবং বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমার প্রতিপালকের বাণী আমি
তো তোমাদেরকে পৌছে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি; সুতরাং আমি কাফির
সম্প্রদায়ের জন্যে কি করে আবুক্ষপ করি ৷’ (৭ : ৮৫ ৯৩)
সুরা হ্রদের মধ্যেও লুত (আ) এর সম্প্রদায়ের যটন৷ বলার পর আল্লাহ ববুলন ং
মাদ্য়ানবাসীদের নিকট তাদের স্ব গােত্রীয় শু আয়বকে পাঠিয়েছিলাম; সে বলেছিল, হে
আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর,৩ তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্
নেই ৷ মাপে ও ওজনে কম করো না ৷ আমি তােমাদেরকে সমৃদ্ধিশালী দেখছি, কিন্তু আমি
তোমাদের জন্যে আশংকা করছি এক সর্বগ্ৰাসী দিনের শাস্তি ৷ হে আমার সম্প্রদায় !
ন্যায়-সংগতভাবে মাপবে ও ওজন করবে ৷ সােকদেরকে তাদের প্রাপ্যবন্তু কম দেবে না এবং
পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাবে না, যদি তোমরা মুমিন হও তবে তা ল্লাহ্ অনুমোদিত যা বাকি থাকবে
তোমাদের জন্যে তা উত্তম, আমি তােমাদেরত তত্ত্বড়াবধায়ক নই ৷ ওরা বলল, হে শুআয়ব!
তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃ পুরুষেরা যার ইবাদত করত,
আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে এবং আমরা ধন-সম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও না ? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু , সদাচারী’ ৷
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আমি যদি আমার
প্রতিপালক-প্রেরিত স্পষ্ট প্ৰমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি তার কাছ থেকে আমাকে
উৎকৃষ্ট জীবনােপকরণ দান করে থাকেন,তবে কি করে আমি আমার কর্তব্য হতে ৩বিরত থাকর ?
আমি তােমাদেরকে যা নিষেধ করি, আমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না ৷ আমি আমার
সাধ্যমত সং ৷র করতে চাই ৷ আমার কার্য-সাধন ৫৩ তা আল্লাহরই সাহায্যে; আমি তারই উপর
” নির্ভর করি এবং আমি তারই অভিমুখী ৷ হে আমার সম্প্রদায় ৷ আমার সাথে বিরোধ যেন
কিছুতেই তােমাদেরকে এমন অপরাধ না করায় যাতে তোমাদের উপর তার অনুরুপ বিপদ
আপতিত হবে যা আপতিত হয়েছিল নুহের সম্প্রদায়ের উপর, হ্রদের সম্প্রদায়ের উপর কিৎবা
সালিহ্র সম্প্রদায়ের উপর, আর লুতের সম্প্রদায় ৫ত৷ তোমাদের থেকে দুরে নয় ৷ তোমরা
তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তার দিকে প্রত্যাবর্তন কর; আমার
প্রতিপালক পরম দয়ালু, ৫প্রমময় ৷ ’ তারা বলল, হে শুআয়ব! তুমি যা বল তার অনেক কথা
আমরা বুঝি না এবং আমরা তো তোমাকে আমাদের মধ্যে দৃর্বলই দেখছি ৷ তােমা র স্বজনবর্গ না
থাকলে আমরা তোমাকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতাম, আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও ৷ ’ সে
বলল, ৫হ আমার সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে কি আমার স্বজনবর্গ আল্লাহর চাইতে অধিক
শক্তিশালী? তোমরা তাকে সম্পুর্ণ পেছনে ফেলে ৫রখেছ ৷ তোমরা যা কর আমার প্ৰতিপালক তা
পরিবেষ্টন করে আছেন ৷
৫হ আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় কাজ করতে থাক, আমিও আমার কাজ
করছি, ৫৩ তামরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপর আসবে লাঞ্চুনাদায়ক শান্তি এবং কে
মিথ্যাবাদী? সুতরাং তোমরা প্ৰতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রডীক্ষা করছি ৷ ’ যখন আমার
নির্দেশ আসল তখন আমি শুআয়ব ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার
অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম, তারপর যারা সীমালংঘন করেছিল মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল,
ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল ; যেন তারা সেখানে কখনও বসবাস
করেনি ৷ জেনে ৫রখ, ধ্বংসই ছিল মাদয়ানরাসীদের পরিণাম; যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল ছামুদ
সম্প্রদায় ৷ (১১ : ৮৪-৯৫)
সুরা আল-হিজরে লুত (আ) এর সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনার পর বলা হয়েছেং
আর আয়কাবাসীরাও১ ৫৩ ৷ ছিল সীমালংঘনকারী ৷ সুতরাং আমি ওদেরকে শাস্তি দিয়েছি,
এরা উভয়ই২ ৫ত৷ প্রকাশ্য পথের পাশে অবস্থিত ৷ ( ১৫ : ৭৮ ৭৯)
সুরা ও আবার উক্ত ঘটনার পর আল্লাহ্ বলেনং ং
১ আয়কা অর্থ গভীর অরণ্য ৷ শুআয়ব (আ)-এর সম্প্রদায় অরণ্যের অধিবাসী ছিল ৷ আয়ক৷ মাদায়নের পা৫র্শ্বর অঞ্চল ৷
উভয় অঞ্চলের জন্য তিনি নবী ছিলেন ৷
২ উভয় শব্দ দ্বারা লুত (আ) ও শুআয়ব (আ)-এর সম্প্রদায়ের বসতির ধ্বংসতুপ বুঝানো হয়েছে ৷
আয়কাবাসীরা রাসুলগণকে অস্বীকার করেছিল যখন শুআয়ব ওদেরকে বলেছিল, তোমরা
কি সাবধান হবে না ? আমি তোমাদের জন্যে এক বিশ্বস্ত রাসুল ৷ সুতরাং আল্লাহ্কে ভয় কর ও
আমার আনুগত্য কর ৷ এর জন্যে অড়ামি৫ তামাদের কাছে কোন প্ৰতিদান চাই না ৷ আমার
পুরস্কার তো জগতসমুহের প্রতিপালকের কাছেই আছে ৷ মাপে পুর্ণমাত্রায় দেবে; যারা মাপে
ঘাটতি করে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না এবং ওজন করবে সঠিক দাড়ি পাল্লায় ৷ সােকদেরকে
তাদের প্রাপ্ত বস্তু কম দিবে না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটড়াবে না ৷ এবং ভর কর তাকে , যিনি
তােমাদেরকে ও তোমাদের পুর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন ৷ ’ তারা বলল, তুমি
তো জাদুগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত; আমাদের মত একজন মানুষ ৷ আমরা মনে করি, তুমি মিথ্যাবাদীদের
অন্যতম ৷ তুমি যদি স৩ তাবাদী হও, তবে আকাশের এক খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও ৷ সে
বলল, আমার প্রতিপালক ভাল জানেন তোমরা যা কর ৷ ’ তারপর ওরা তাকে প্রত্যাখ্যান করল,
পরে ওদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিনের শাস্তি গ্রাস করল ৷ এতে৷ ছিল এক ভীষণ দিনের শাস্তি ৷ এতে
অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু ওদের অধিকাৎশই মুমিন নয় ৷ এবং তোমার প্রতিপালক , তিনি
তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু ৷ (২৬ : ১ ৭৬ ১ ৯১ )
মাদ্য়ানবাসীরা ছিল আরব জাতির অন্তর্ভুক্ত ৷ মাদ্য়ান শহরে তারা বসবাস করত ৷ মাদ্য়ান
সিরিয়ার নিকটবর্তী মাআন এলাকার একটি গ্রামের নাম ৷ এর অবস্থান হিজাযের পার্শে ও লুত
সম্প্রদায়ের হ্রদের সন্নিকটে ৷ লুতের সম্প্রদায়ের পরেই এই সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় ৷
মাদ্য়ানবাসীরা ছিল মাদ্য়ান ইবন মাদ্য়ানে ইবন ইবরাহীম খন্সিলুল্লাহ্র সন্তান ৷ শুআয়ব ইবন
মীকীল ইবন য়াশৃজান তাদের নবী ৷ ইবন ইসহাক উপরোক্ত মত বর্ণনা করেছেন ৷ তীর মতে, ন্
শুআয়ব (আ)-কে সুরিয়ানী ভাষায় বলা হয় বিনয়ুন ৷ কিন্তু এ মত গ্রহণযোগ্য নয় ৷ শুআয়ব
(আ)এর নসবনামায় বিভিন্ন মত দেখতে পাওয়া যায় ৷ কেউ বলেন, শুআয়ব ইবন য়াশৃখার
ইবন লাবায় ইবন ইয়াকুব ৷ কেউ বলেছেন, শুআয়ব ইবন নুওয়ায়ব ইবন আয়ফা ইবন
মাদ্য়ান ইবন ইবরাহীম ৷ কারও মতে, শুআয়ব ইবন দায়কুর ইবন আয়ফা ইবন ছাবিত ইবন
মাদৃয়ান ইবন ইবরাহীম ৷ এ ছাড়া আরও বিভিন্ন মত রয়েছে ৷
ইবন আসাকির (র) বলেন, হযরত লুত (আ)-এর কন্যা ছিলেন হযরত শুআয়বের মা;
মতান্তরে, তিনি ছিলেন তীর নানী ৷ যে কয়জন লোক ইবরাহীম (আ)এর প্ৰতি ঈমান এনেছিল
ও আয়ব (আ) ছিলেন তাদের অন্যতম ৷ তিনি হযরত ৩ইবরাহীম (আ)-এর সাথে হিজরত করেন
ও তার সাথে দামেশৃকে যান ৷ ওহব ইবন মুনাব্বিহ্ বলেন, শু’আয়ব ও মালপাম দৃ’জনে হযরত
ইব্রাহীম (আ)-কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপের দিন তার প্রতি ঈমান এসেছিলেন ৷ উভয়ে ত ৷র সাথে
সিরিয়ার হিজরত ও করেন ৷ সেখানে তিনি লুত (আ) এর দুই কন্যাকে তাদের দু ’জনের সাথে
বিবাহ দেন ৷ ইবন কুতায়বা এভাবেই বর্ণনা করেছেন ৷ কিন্তু উপরোক্ত কোন মতই সন্দেহমুক্ত
নয় ৷
আবু উমর ইবন আবদুর বার (র) ইস্তিআব’ গ্রন্থে সালামা ইবন সাদ আল আনাষী
প্রসঙ্গে লিখেন যে, তিনি রসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে আগমন করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন ৷
অতঃপর আনাযা পর্যন্ত তিনি তার বংশ পঞ্জিকাও উল্লেখ করেন ৷ রাসুল (সা) বললেন, কতই না
উত্তম এ আনাযা গোত্র, তারা ছিল নির্যাতিত এবং এরাই সেই সাহায্যপ্রাপ্ত শুআয়বের অনুসারী
এবং মুসা (আ)-এর শ্বশুর গোষ্ঠী ৷ এ বর্ণনা সঠিক হলে প্রমাণিত হয় যে, হযরত শুআয়ব মুসা
(আ)-এর সমগােত্রীয় এবং তিনি আদি আরবদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার কবীলার নাম আনাযা ৷
তবে এরা আনাযা ইবন আসাদ ইবন রাবীআ ইবন নাযার ইবন মাদ ইবন আদনান গোত্র নয় ৷
কেননা, এই আনাযা উপরোক্ত আনাযার দীর্ঘকাল পরে এসেছে ৷ আল্লাহই সর্বজ্ঞ ৷
সহীহ ইবন হিব্বড়ান গ্রন্থে আম্বিয়া ও রসুলগণের বিবরণ অধ্যায়ে হযরত আবু যর (রা) এর
বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে ৷ নবী করীম (সা) বলেছেন : নবীদের মধ্যে চারজন
নবী আরবের যথা-হ্রদ, সালিহ্, শুআয়ব ও তোমাদের নবী, হে আবু যর ! কোন কোন প্রাচীন
বিজ্ঞ অড়ালিম হযরত শুআয়ব (আ) কে খভীবুল আম্বিয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ৷ কেননা
তিনি তার সম্প্রদায়কে ঈমান গ্রহণের জন্যে যে দাওয়াত পেশ করেন৩ তার শব্দ ও ভাষা ছিল
অতি উচ্চড়াঙ্গের এবং বক্তব্য ও উপস্থাপনা ছিল অতি প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী ৷ ইবন ইসহাক (র)
ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, রসুল (সা) যখনই হযরত শুআয়ব (আ)-এর উল্লেখ
করতেন তখনই তিনি বলতেন : তিনি ছিলেন খতীবুল অড়াম্বিয়া (নবীগণের খভীব) ৷
মাদ্য়ানবাসীরা ছিল কাফির, ডাকাতি ও রাহাজানি করত, পথচায়ীদেরকে ভয়-ভীতি দেখাত
এবং আয়কড়ার উপাসনা করত ৷ অড়ায়কা ছিল পার্শ্ববর্তী অরণ্যের একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট
গাছের নাম ৷ তাদের লেন-দেনের ক্ষেত্রে তারা ছিল অত্যন্ত জঘন্য ৷ ওজনে এবং সাথে তারা
খুবই কম দিত ৷ পক্ষান্তরে কারও থেকে নেওয়ার সময় বেশি বেশি নিত ৷ আল্লাহ্ তাদেরই মধ্য
থেকে শুআয়ব (আ) কে তাদের রসুলরুপে প্রেরণ করেন ৷ তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর
ইরাদং তর দিকে আহ্বান জানান ৷ সাথে ও ওজনে কম দেয়া এবং পথিকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন
প্রভৃতি দুষ্কর্ম থেকে নিষেধ করেন ৷ কিছু লোক ত ৷র প্রতি ঈমান আসল, কিন্তু অধিকাৎশই
কুফরীর উপর অটল থাকল ৷ ফলে আল্লাহ৩ তাদের উপর কঠিন আযাব নাযিল করেন ৷
আল্লাহর বাণীং
মাদৃয়ানবাসীদের কাছে তাদের স্ব-গোত্রীয় শুআয়বকে প্রেরণ করেছি ৷ সে বলল, হে আমার
সম্প্রদায় ৷ তোমরা আল্লাহ্র দাসতু কবুল কর ৷ তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই ৷ ণ্
তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে ৷ ( ৭ ং ৮৫)
অর্থাৎ আমি তোমাদের নিকট যা কিছু বিধি-বিধান নিয়ে এসেছি তার সভ্যতার উপর সুস্পষ্ট
দলীল ও অকাট্য প্রমাণ এসে গেছে ৷ আর তিনি যে আমাকে রসুল করে পাঠিয়েছেন তার
প্রমাণও এসে গেছে ৷ এই দলীল ও প্রমাণ হল সেই সব মু’জিযা যা হযরত শুআয়ব (আ)-এর
হাতে আল্লাহ্ প্রকাশ করেন ৷ সেই মু’জিযাসমুহের বিস্তারিত বিবরণ আমাদের কাছে না
পৌছলেও আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ ( ব) থেকে মোটামুটি এর প্রমাণ পাওয়া যায় ৷
সাথে ও ওজঃন পুরোপুরি দাও ৷ মানুষের প্রাপ্য বন্তু কম দিও না এবং সমাজকে সংস্কারের
পর ফিৎন৷ ফাসাদ সৃষ্টি করে৷ না ৷ ( ৭ : ৮৫)
এ আয়াতে আল্লাহ্ তাদেরকে জুলুমের পথ পরিহার করে ইনসাফের পথে চলার নির্দেশ
দেন ৷ অন্যথায় তাদেরকে কঠোরশাস্তির ভয় প্রদর্শন কারন ৷ অতংপর বলেন; ং
তোমরা মু মিন হলে এটাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর এবং ভর দেখাবার উদ্দেশ্যে
প্রতিটি রাস্তায় বসে থেকাে না ৷ অর্থাৎ পথের উপর বসে পথিকদেরকে ভয় দেখিয়ে তাদের
সম্পদ ও শুল্ক আদায় করে৷ না ৷ উপরোক্ত আয়াত ( র্চু, ব্লুর্বৃপ্লুদ্বুন্শু ৷, ৷ , ; ; ৷ ,
এর ব্যাখ্যার সাহাবীদের বরাত দিয়ে সুদ্দী (র) বলেছেন যে, তারা পথিকদের থেকে তাদের)
পণ্য দ্রব্যের এক-দশমাংশ টোল আদায় করত ৷ ইসহাক ইবন বিশর ইবন আব্বাস (বা)
সুত্রে বর্ণনা করেছেন, ও আরব (আ) এর সম্প্রদায় ছিল সীমালংঘনকারী, বিদ্রোহী তারা
রাস্তার উপরে বসে থাকত ,এে (,§éfl§ অর্থাৎ তারা মানুষের নিকট থেকে তাদের
এক-দশমাংশ উসুল করত ৩৷ এ প্রথা তারইি সর্বপ্রথম চালু করে ৷
আল্লাহ্র প্রতি যারা ঈমান পোষণ করে তাদেরকে আল্লাহ্র পথে চলতে ৩বাধা দিও না আর
আল্লাহ্র পথের মধ্যে বক্রতা তালাশ করে৷ না ৷’ আল্লাহ্ তাদেরকে দুনিয়ার ড৷ ৷কাতি ও দীনের
ডাকাতি উভয়টা থেকে নিষেধ করে দেন ৷
স্মরণ কর, সেই সময়ের কথা যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে ৷ অতঃপর আল্লাহ্
তোমাদের সং খ্যা বৃদ্ধি করে দেন, আর তোমরা লক্ষ্য করে দেখ, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণতি
কেমন হয় (৭ং ৮৫ ৮৬)
প্রথমে তারা সং খ্যায় কম ছিল, পরে আল্পাহ্৩ তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন এই নিয়ামতের
কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়৷ হয় ৷ এরপর যদি ত ৷রা আল্লাহর প্রদর্শিত পথের বিরুদ্ধে যায়
তাহলে সে জন্যে যে শাস্তি আসবে তার হুমকি দেয়৷ হয় ৷ অন্য এক ঘটনায় তাদের উদ্দেশে
বলা হয়েছেং :
১াএ
মাপে ও ওজনে কম দিও না, আমি তো তোমাদেরকে সচ্ছল অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি ৷
আমি তোমাদের উপর এক সামগ্রিক আমার আমার আশংকা করছি ৷ ’ অর্থাৎ তোমরা যে
অপরাধে অভ্যস্ত হয়ে গেছ তার উপর অবিচল থেকাে না, অন্যথায় তোমাদের ধন -সম্পদের
বরকত আল্লাহ তাআলা উঠিয়ে নেবেন, তোমাদেরকে অভাবঃাস্ত করে দেবেন ৷ উপরন্তু থাকবে
পরকালের আমার ৷ আর যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই রকম উভয় শাস্তি একত্রিত হবে, যে ব্যক্তি মহা
ক্ষতির সম্মুখীন হবে ৷ এই কারণে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রথমে হালকাভাবে ঐসব কাজ থেকে
নিষেধ করেছেন এবং দুনিয়ার আল্পাহ্র নিয়ামত উঠিয়ে নেয়ার ভয় দেখিয়েছেন ও আখিরাতের
শাস্তি থেকে ভুশিয়ার করেছেন এবং কঠোরভ্যবে সাবধান করে দিয়েছেন ৷
অতংপর অ ৷ল্লাহ্ নির্দেশের সুরে বলেন০ ং
হে আমার সম্প্রদায় ! ন্যায়সঙ্গতভাবে মাপবে ও ওজন করবে ৷ লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য
বস্তু কম দেবে না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাবে না ৷ যদি তোমরা মুমিন হও, তবে আল্লাহ্
অনুমোদিত যা বাকি থাকবে তোমাদের জন্যে৩াই উত্তম ৷ আমি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক নই ৷
( ১ ১ ৮৪ ৮৬)
ইবন আব্বাস (রা) ও হাসান বসরী (র) ০ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন :
), অর্থা ৷ৎ আল্লাহ যা কিছু রিযিক
তোমাদেরকে দান করেন তা ঐসব সম্পদের তুলনায় অনেক ভাল যা তোমরা মানুষের থেকে
জোরপুর্বক আদায় কর ৷ ’
ইবন জা ৷রীর (র) এ আয়াতে র ব্যাখ্যার বলেছেন, ওজনে কম দিয়ে মানুষের সম্পদ নেয়ার
চাইতে মাপ ও ওজন সঠিকভ৷ ৷বে পুরোপুরি দেওয়ার পর যা কিছু মুনাফা অবশিষ্ট থাকে,৩ তা-ই
তোমাদের জন্যে বহুগুণে উত্তম ৷ ইবন আব্বাস (যা) থেকে এরুপ ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে ৷ হাসান
বসরী (র) যে ব্যাখ্যা করেছেন নিম্নের আয়াত তার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ০
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৫৩-
বল, পবিত্র বস্তু ও অপবিত্র বস্তু সমান হয় না, যদিও অপবিত্র বস্তুর আধিক্য তোমার কাছে
আকর্ষণীয় হোক না কেন ৷ ’ অর্থাৎ হালাল জিনিস যদি কমও হয় তবুও তা তোমাদের জন্যে ভাল
হারাম জিনিস থেকে, যদিও তা বেশি হয় ৷ কেননা, হাল ল জিনিস কম হলেও তা বরকতময়;
পক্ষাম্ভরে হারাম জিনিস বেশি হলেও তা বরকত শুন্যা
আল্লাহ্বলেছেন :
অর্থাৎ-আল্লাহ্ সুদকে বিলুপ্ত করেন এবংদ দা সাদকাকে বৃদ্ধি করেন ৷ ’
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন৪ সুদের মাল যতই বেশি হোক না কেন, ক্রমাম্বয়ে তা ফুরিয়ে
যায় ৷ ইমাম আহমদ (র)৩ তার মুসনাদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ৷ রসুল (সা) আরও বল্যেছন,
ক্রয় বিক্রয়ে ক্রেতা ও ৰিক্রেত৷ ৷র জন্যে গ্রহণ ও বর্জনের ইখতিয়ার থাকে যতক্ষণ তারা আলাদা
হয়ে না র্যায় ৷ যদি তারা সততার সাথে বেচা-কেন৷ করে এবং পণ্যের দোষ-গুণ প্রকাশ করে
দেয় তাহলে এ ব্যবসায়ে উভয়কে বরকত দান করা হয় ৷ আর যদি তারা পণ্যের দােষ-গুণ
গোপন রাখে এবং মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তাহলে উভয়ের থেকে এ বেচা-কেনায় বরকত উঠিয়ে
নেয়া হয় ৷ মোটকথা, হ লাল মুনাফা কম হলেও তাতে বরকত হয়, কিন্তু হারাম মুনাফা বেশি
হলেও তাতে বরকত থাকে না ৷ এ কারণেই নবী ও আরব (আ) বলেছিলেন :
’ ৷
আল্লাহর অনুমোদিত যা ই বাকি থাকে তা ই তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা বিশ্বাসী
হও ৷ আল্লাহর বাণী৪ )০প্ ণ্ব্লু শ্া; fl ৷ £ম্পু আমি তোমাদের তত্ত্ব বধাযক নই অর্থাৎ
তোমাদেরকে আমি যা করার নির্দেশ দিয়েছি তোমরা তা আল্লাহর সভুষ্টি ও নওয়াব লাভের
উদ্দেশ্যে কর, আমাকে বা অন্যকে দেখাবার জন্যে নয় ৷
অ আল্লাহর বাণী৪
তারা বলল, হে শুআয়ব! তোমার সালাত কি তে তামাকে নির্দেশ ৷দেয় যে, আমাদের
পিতৃ-পুরুষরা যার ইবাদত করতো আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে এবং আমরা ধন-সম্পদ
সম্পর্কে যা করি তাও না? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু , সদাচারী ৷ (১ ১ : ৮৭)
শুআয়ব (আ) এর সম্প্রদায় এ কথাটি ঠাট্ট৷ রুিদ্ধপ ও উপহাসস্বরুপ বলেছে ৷ তার৷ বলেছে,
এই যে সালা৩ তুমি পড়ছ৩ তা কি তোমাকে আমাদের বিরোধিতা করতে বলে যে, আমরা কেবল
তোমার আল্পাহ্রই ইবাদত করব এবং আমাদের পুর্ব পুরুষগণ যাদের ইবাদত করত তাদেরকে
ত্যাগ করে দেব? ত্ব৷ তুমি যেভাবে চাও সেভাবে আমরা আমাদের লেনদেন করব আর
যেভাবে চাও না সেভাবে আমাদের পছন্দনীয় লেনদেন করা ছেড়ে দেব ? ৷
৷ (নিশ্চয়তু মি একজন ধৈর্যশীল, স৩ পেন্থী) এ প্রসঙ্গে হযরত ইবন আব্বাস (রা),
মায়মুন ইবন মিহরা ন, ইবন জুরায়জ, যায়দ ইবন আসলাম (বা) এবং ইবন জারীর (র) বলেন,
এ উক্তি তারা ঠাট্ট৷ ও বিন্ধ্রপাত্মকভাবে করেছে ৷
ও আরব বলল, হে আমার সম্প্রদায়! এ ব্যাপারে তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আমি যদি
আমার পালনকর্তার সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি, আর তিনি যদি আমাকে তার কাছ
থেকে উত্তম রিযিক দান করেন, তবে কি করে আমি আমার কর্তব্য থেকে বিরত থাকবাে ? আমি
তােমাদেরকে যা নিষেধ করি, অমি নিজে তা করতে ইচ্ছা করি না ৷ আমি আমার সাধ্যমত
সংস্কার করতে চাই ৷ আমার কার্য-সাধন তো আল্লাহ্রই সাহায্যে ৷ আমি তারই উপর নির্ভর করি
এবং আমি তারই অভিমুখী ৷ ( ১ ১ ৮৮)
এখানে হযরত ও আয়ব (আ) কোমল ভাষায় কিন্তু সুস্পষ্ট ইংগিতে তার সম্প্রদায়কে সত্যের
দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন ৷ তিনি বলছেন-তে তোমরা কি একটু চিন্তা করে দেখেছ, হে মিথ্যাবাদীব
আমি যদি আমার রবের প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত
থাকি’ ৷ শ্চেঅর্থাৎ আল্লাহ্র সুস্পষ্ট নিদ্যেশর উপর যে তিনি আমাকে তোমাদের নিকট রসুলরুপে
প্রেরণ করেছেন? মোঃ তার কাছ থেকে আমাকে উত্তম রিযিক
দান করেছেন’ উত্তম রিযিক অর্থ নবুওত ও রিসালাত ত৷ অর্থাৎ তোমরা যদি তা বুঝতে না পার,
তবে তোমাদের ব্যাপারে আমার আর কি করার আছে ? এ কথাটি ঠিক তদ্র্যপ যা নুহ (আ) তার
জাতিকে বলেছিলেন
যে কাজ করতে আমি তােমাদেরকে নিষেধ করি আমি যে কাজ নিজে করতে ইচ্ছা করি
না ৷ অর্থাৎ তােমাদেরকে যে কাজ করতে আদেশ করি যে কাজ সর্বপ্রথম আমিই করি; আর যা
থেকে তােমাদেরকে নিষেধ করি তা থেকে সর্বপ্রথম আমি ই বিরত থাকি ৷ বন্তুত পক্ষে এটা
একটা উৎকৃষ্ট ও মহান গুণ ৷ এর বিপরীত আচরণ অত্যন্ত জঘন্য ও নিকৃষ্ট ৷ বনী ইসরাঈলের
শেষ দিকের আলিম ও ধর্মোপদেশদাত ৷গণ এই দোষে দুষ্ট ছিলেন ৷ আল্লাহ্ বলেনং :
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের আদেশ দাও এবং নিজেদেরকে বিস্মৃত হও? অথচ তোমরাই
তাে কিতাব অধ্যয়ন কর ৷ তবে কি তোমরা বৃঝ না ? (২০ ৪৪)
এই আয়াতের ব্যাখ্যার সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন :
কিয়ামতে তর দিন এক ব্যক্তিকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে ৷ত তার পেট থেকে নাড়িভুড়ি বের হয়ে
যাবে এবং তা নিয়ে সে ঘুরপাক খেতে থাকবে, যেমনটি পাধা আট৷ পেষার চাক্কি নিয়ে
চক্রাকারে ঘুরতে থাকে ৷ দােযখবাসীরা তার কাছে এসে জড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করবে , হে অমুক ৷
তোমার একি দশা, তুমি না সৎ কাজের আদেশ দিতে ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে? সে বলবে,
হীা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু নিজে তা করতাম না এবং অসৎ কাজ থেকে
নিষেধ কর৩ ৷ম ৷কত্তু আমি নিজেই তা করতাম ৷ এ আচরণ ৷নবীদের নীতির সম্পুর্ণ
পবিপন্থী পাপিন্ঠ ও দুর্বৃত্তদের নীতি ৷ পক্ষ স্তরে জ্ঞা ৷নী-গুণী উলামা যারা না দেখেই আল্লাহকে
ভয় করে চলে ভীহুদর অবস্থা হয় সেই রকম, যেমন নবী শুআয়ব (আ) বহৃ^০ন্াছেন০ ং
অর্থাৎ-আমার যাবতীয় কর্মতৎপরতার উদ্দেশ্য হল, সাধ্য অৰুযায়ী কথা ও কাজের
সংশোধন ও সংস্কার করা ৷
অর্থাৎ-সর্বাবস্থায় আ ৷ল্লাহ্ই আমাকে সাহায্য ও ক্ষমতা দ ন করবেন ৷ সকল বিষয়ে তার
উপরই আমি ভরসা রাখি এবং সকল ব্যাপারে আর দিকেই আমি প্রতাবর্তন করি’ ৷ এ হল
তারপীব বা উৎসাহ প্রদান ৷ এরপর হযরত শু আয়ব (আ) কিছুটা তারহীব বা ধমকের সুরে
বলেন :
হে আমার সম্প্রদায়! আমার বিরোধিতা যেন কিছুতেই তোমাদেরকে এমন অপরাধ না
করায় যাতে তোমাদের উপর তার অনুরুপ বিপদ আসবে, যেরুপ বিপদ আপতিত হয়েছিল
কওমে নুহ, কওমে হ্রদ কিৎবা কওমে সালিহ্র উপর আর কওমে লুত তো তোমাদের থেকে খুব
দুরে নয় ৷ (১১ং ৮৯)
অর্থাৎ আমার সাথে তোমাদের শত্রুতা এবং আমি যে দীন নিয়ে এসেছি তার সাথে বিদ্বেষ
ভাব যেন তোমাদেরকে গুমরাহী, মুর্থতা ও শত্রুতার উপর অবিচল থাকতে বা ধ্য না করে ৷ এরুপ
হলে তোমাদের উপর সেই ধরনের আমার ও শান্তি আসবে, যে ধরনের আমার ও শান্তি
এসেছিল কওমে নুহ, কওমে হ্রদ ও কওমে সালিহ-এর মিথ্যাচারী বিরুদ্ধাচা রীদের উপর ৷
(কওমে লুত তো তোমাদের থেকে দুরে নয়) দুরে নয়
এই কথাটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে, (১) সময়ের দিক থেকে, অর্থাৎ কুফর ও জুলুমের কারণে
কওমে লুতের উপর যে শাস্তি এসেছিল সে ঘটনা বেশি দিনের নয় ৷ তাদের সব বর্ণন ই
তোমাদের কাছে পৌছেছে ৷ (২) স্থান ও অবস্থানের দিক দিয়ে ৷ অর্থাৎ কওমে লুতের বিধ্বস্ত
এলাকা তোমাদের বাসস্থান থেকে দুরে নয় ৷ (৩) নীতি ও কর্মের দিক থেকে ৷ অর্থাৎ কওমে
লুত যেমন ডড়াকাতি-রাহাজানি করত, মার্মুপুষর ধন-সম্পদ জােরপুর্বক কেড়ে নিত এবং বিভিন্ন
রকম গোপন ফীদ তাটত, তোমবাও তাই করছ ৷ অবশ্য উপরোক্ত তিনটি মতকে এখানে
একত্রেও বলা যেতে পারে, যেমন কওমে লুত সময়ের দিক থেকে, অবস্থানের দিক থেকে এবং
কর্মনীতির দিক থেকে দুরে নয় ৷ অতঃপর ভয় ও আগ্রহ সৃষ্টি সমন্বিত আহ্বানস্বরুপ বলেনং :
তােমরা তোমাদের প্রতিপা ৷লকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তার কাছে ৩ ওবা কর ৷ আমার
প্রতিপালক নিশ্চ-য় দয়ালু প্রেমময় ৷’ (১১ : ৯০)
অর্থাৎ তোমরা যেসব অপরাধে জড়িত আছ, তা বর্জন কর এবং দয়াময় প্রেমময় প্ৰতিপালকের
নিকট তওবা কর ৷ কেননা, যে ব্যক্তি তার কাছে তওবা করে, তিনি তা র তওবা কবুল করেন ৷
কারণ সন্তানের প্রতি৷ যা তার স্নেহের চেয়ে বান্দাহর প্ৰতি ৩অ ৷ল্লাহ্র দয়া অধিকতর ৷
তারা বলল, হে শুআয়ব! তুমি যা বল৩ ব অধিকাৎশই আমরা বুঝি ন, আমরা তো
তোমাকে আমাদের মধ্যে দুর্বল-শক্তিহীন দেখতে পাচ্ছি ৷ (১ ১৪ ৯১)
ইবন আব্বাস, সাঈদ ইবন জুবায়র ও ছাওরী (বা) বলেছেন, হযরত শু’আয়ব (আ)-এর
চোখে দৃষ্টিশক্তি ছিল না ৷ মারকু হাদীসে বর্ণিত, আল্লাহ্র মহব্বতে নবী শুআয়ব (আ) এতো
অধিক পরিমাণ কান্নাকাটি করেন যে, তিনি অন্ধ হয়ে যান ৷ আল্লাহ র্তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন ৷
আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, হে শুআয়ব ! তোমার কান্নাকাটি কি জাহান্নামের ভয়ে , নাকি জান্নাতের
লোভে ? শুআয়ব (আ ) বলেন, বরং আপনার মহব্বতেই র্কাদি ৷ আমি যখন আপনাকে দেখব,
তখন আমার প্রতি কি করা হবে৩ তার পরােয়৷ আমি করি না ৷ আল্লাহ তখন ওহীর মাধ্যমে
জা,নালেন হে শু আয়ব৷ আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ খুবই আনন্দময় হবে ৷ এ জন্যে আমি
ইমরানের পুত্র মুসা কালীমুল্লাহকে তোমার খিদমতে নিয়োগ করেছি ৷ এ হাদীস ওয়াহিদী
শাদ্দাদ ইবন আমীন (বা) সুত্রে রসুল (সা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ কিন্তু এটা অ৩ ম্ভে গরীব
হাদীস ৷ খাভীব বাগদাদী (ব ) একে যয়ীফ বলে আখ্যায়িত করেছেন ৷
তোমার আত্মীয়বর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করতাম ৷ তুমি আমাদের
উপর শক্তিশালী নও ৷ (১১ং ৯১)
এটি ছিল তাদের কট্টর কুফরী ও জঘন্য শত্রু৩ ৷র বহিংপ্রকাশ ৷ এ কারণেই তারা বলেছেং
,প্রুদ্বুও ) $ ৮১ (তুমি যা বল৩ ব অধিকাং শই আমরা বুঝি না ৷) অর্থাৎ আমরা
ত ৷উপলব্ধি করি না ৷ কেননা ওসব আমরা পছন্দ করি না, চাইও না ৷ ওর প্ৰতি আমাদের কোন
আগ্রহ নেই, আকর্ষণও নেই ৷ ওদের এ কথাটি ঠিক কুরায়শ কাফিরদের সেই কথার সাথে মিলে
যায়, যা তারা রসুলুল্লাহ (সা) কে উদ্দেশ ৷করে বলেছিলং ং
ওরা বলে, তুমি যার প্রতি আমাদেরকে আহ্বান করছো সে বিষয়ে আমাদের অন্তর
আবরণ-আচ্ছাদিত ৷ আমাদের কানে আছে বধিরতা এবং আমাদের ও তোমার মাঝে রয়েছে
অম্ভরাল ৷ সুতরাং তুমি তোমার কাজ কর, আমরা আমাদের কাজ করি ৷ (৪ ১০ ং ৫)
(আমরা আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বল দেখতে পাচ্ছি)
অর্থাৎ নিংসঙ্গ ও পরিত্যাজ্য এএে ’ অর্থ ৎ আমাদের মধ্যে যদি তোমার গোত্র ও
আত্মীয়বর্গ না ৷থাকত ৷ (তবে আমরা অবশ্যই
তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করতাম ৷ তুমি আমাদের উপর শাক্তিশ লী নও ৷)
(হে আমার সম্প্রদা য় আমার আ ড়াত্মীয় স্বজন
কি আল্লাহর চাইতে ও তোমাদের উপর অধিক শক্তিশালী ?) ৷ অর্থাৎ তোমরা আমার গোত্র ও
স্বজনদেরকে ভয় কর এবং তাদের কারণে আমাকে খড়াতির করছ, অথচ আল্লাহর পাকড়াওকে
ভয় করছ না এবং আল্লাহর রসুল হওয়ার কারণে আমাকে খা তির করছ না ৷ ফলে প্রমাণিত
হচ্ছে যে, আমার গোত্র ও আত্নীয স্বজনই তোমাদের উপর অ ৷ল্লাহ্র চা ৷ইতে অধিক শক্তিশালী ৷
(আর অড়াল্লাহকে তোমরা পশ্চাতে ফেলে রেখেই) অর্থাৎ
আল্লাহর দিকে তোমরা পিঠ দিয়ে রেখেছে ৷৷ ণ্)মোঃ ৩^ছুও ট্রুট্রু৷ (তোমরা যা-ই
কর, আমার প্রতিপা ড়ালক তা পরিবেষ্টন করে আছেন ৷) অর্থাৎ৫ তামরা যা কিছু কাজ কর্ম কর না
কেন সে সব বিষয়ে আল্লাহ পুপতাবে অবগত আছেন ৷ যখন তার কাছে ফিরে যাবে , তখন তিনি
এর প্রতিফল দান করবেন ৷
হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা তোমাদের অবস্থানের উপর থেকে কাজ কর আমি আমার
কাজ করতে থাকি ৷ অচিরেই জানতে পারবে যে, আমার কার উপর আসে, যা তাকে লাঞ্ছিত
করে ছাড়বে? এবং আরও জানতে পারবে যে, মিথ্যাবাদী কে? তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও
তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম ৷ (সুরা হ্রদ : ৯৩)
, এটা স্বাভাবিক আদেশ নয় যে, তাদে রকে তাদের রীতিনীতি ও অভ্যাস পদ্ধতির
উপরে থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বরং এটা ধমকের সুরে কঠোর ছুশিয়ারি বাণী
হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ শীঘ্রই জানতে পারবে যে পরকালের শুভ পরিণতি কার ভাগ্যে
জুটে এবং ধ্বংস ও বিনাশ কাকে গ্রাস করে ৷ ; ওছু (কার উপর
লা নাকর আমার আসে) এ আযাব দৃনিয়ড়ায় তাদের উপর পতিত আযাবকে বুঝান হয়েছে ৷
;
এ আমার হল
আখিরাতের আমার (অড়ার কে মিথ্যাবাদী) অর্থাৎ যে বিষয়ে সংবাদ দেয়া
হচ্ছে ৷ সুসং বাদ ও সতর্কবাণী শুনান হচ্ছে সে বিষয়ে৫ তামাদের ও আমার মধ্যে কে মিথ্যাবাদী
তা অতি শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে ৷ ন্পুদ্বুন্ও ’ ” ^ ৷দ্বু£ব্লুওও!ও তোমরাও অপেক্ষা
কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করতে থাকি’ ৷ নিম্নের আয়াতে এ আঘাতের সাদৃশ্য
আছে, যাতে বলড়া হয়েছেং :
আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তাতে যদি তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল
বিশ্বাস না করে, তবে ধৈর্যধারণ ৷কর, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন ৷
আর তিনিই শ্রেষ্ঠ মীমাৎসাকারী ৷ তার সম্প্রদায়ের দান্তিক প্রধানগণ বলল, হে শুআয়ব ৷
তোমাকে ও তোমার সাথে যারা বিশ্বাস করেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে
দেবই ৷ অথবা তােমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে ৷ ’ সে বলল, কী আমরা তা
ঘৃণা করলেও? তোমাদের ধর্মাদর্শ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করার পর যদি আমরা
তাতে ফিরে যাই তবে তো আমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করব ৷ আমাদের প্রতিপালক
আল্লাহ ইচ্ছা না করলে আর ওতে ফিরে যাওয়া আমাদের কাজ নয় ৷ সব কিছুই আমাদের
প্রতিপালকের জ্ঞান্যয়ত্ত ৷ আমরা আল্লাহর প্রতি নির্ত্য৷ করি; হে আমাদের প্রতিপালক ৷ আমাদের
ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিন এবং আপনিই মীমাংসাকারীদের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ ৷ (৭ ? ৮৭-৮৯)
শুআয়ব (আ) এর সম্প্রদায় তাদের ধারণা মতে ঈমান গ্রহণকারীদেরকে পুর্ব ধর্মে
ফিরিয়ে নেয়ার কামনা করেছিল ৷ নবী শুআয়ব (আ) তাদের এ আশা প্রত্যাখ্যান করে বলেনং :
এে ওশ্দ্বু (আমরা যদি অপছন্দ কবি৩ তবুও কি?) অর্থাৎ এরা স্বেচ্ছায় তোমাদের
ধর্মে ফিরে আসবে না ৷ যদি ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে শক্তি প্রয়োগের ফলে অসন্তুষ্টি ও
অনিচ্ছায় ফিরে এসেছে ৷ কেননা, আন্তরিক আগ্নহ নিয়ে যে ব্যক্তি ঈমান আনে ত ৷র সে ঈমান
কেউ কেড়ে নিতে পারে না, ৷কেউ তাকে৩ ৷ ৷থেকে ফিরাতে পারে না, কারও পক্ষে তা সন্তবও
নয় ৷ এ জন্যেই বলেছেনং :
আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদকারী হয়ে যাব যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে
যাই ৷ অথচ তিনি আমাদেরকে এ থেকে মুক্তি দিয়েছেন ৷ আমাদের কাজ নয় ঐ ধর্মে ফিরে
যাওয়া কিন্তু আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যদি চান ৷ আমাদের প্রতিপালক প্রত্যেক বস্তুকে জ্ঞান
দ্বারা রেষ্টন করে আছেন ৷ আল্লাহর প্রতিই আমরা ভরসা করছি ৷ ’ অর্থাৎ আমাদের জন্যে
আল্লাহই যথেষ্ট ৷ তিনিই আমাদের রক্ষাকারী ৷ সকল বিষয়ে তিনিই আমাদের আশ্রয় স্থল ৷
অতপর হযরত শুআয়ব (আ) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন এবং তারা যে
শাস্তির যোগ্য তার সতুর আগমন কামনা করেন ৷ তিনি বলেন :
হে আমাদের প্রতিপালকশু আমাদের মধ্যে ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে
দিন যথার্থ ফয়সালা ৷ আপনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালা দানকারী ৷ ’ (৭ : ৮৯)
এভাবে হযরত শুআয়ব (আ)৩ র্তড়া ৷র সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট প্রার্থ্যা৷ করেন ৷ আর
আল্লাহর রাসুলদের যারা অস্বীকার করে, অবাধ্য হয় ও বিরুদ্ধাচরণ ৷করে৩ তাদের বিরুদ্ধে
রসুলদের প্রার্থনা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন না ৷ কিন্তু এ৩ তদসত্বেও সম্প্রদায়ের লোক যে নীতির
উপর ছিল তার উপরই তারা অটল অবিচল হয়ে রইল ং
তার সম্প্রদায়ের কাফির সর্দাররা বলল : যদি তোমরা শুআয়বের অনুসরণ কর , তবে
শ্চিতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷
আল্লাহর বাণী
অনম্ভর তাদেরকে ভুমিকম্প পাকড়াও করল ৷ ফলে তারা সকাল বেলায় ঘরের মধ্যে
উপুড় হয়ে পড়ে রইল ৷’ (৭ : ৯০-৯১)
সুরা আ রড়াফে বলা হয়েছে, ভুমিকম্প৩ তাদেরকে পাকড়াও করেছিল ৷ অর্থাৎ এক মহা কম্পন
তাদের গো টা৷ আবাসভুমিকে সজাে রে আঘাত করে ৷ ফলে তাদের দেহ থেকে তাদের রুহ্ উধাও
হয়ে যায় ৷ গোটা এলাকার জীব-জন্তু জড়-বস্তুর ন্যায় নিশ্চল হয়ে পড়ে ৷ তাদের শবদেহগুলো
নিথর হয়ে যত্রতত্র পড়ে থাকে ৷ উক্ত জনগোষ্ঠীর উপর আল্লাহ বিভিন্ন প্রকার আযাব ও শান্তি
নাযিল করেন ৷ যখন তারা বিভিন্ন প্রকার অন্যায় ও জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হলো , তখন আল্লাহ
তাদের উপর মহাকম্পন পাঠালেন ৷ যার ফলে সকল চলাচল মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যায় ৷ বিকট
আওয়াজ পাঠান যার ফলে অপর সকল আওয়াজ নীরব হয়ে যায় ৷ আগুনের মেঘ পাঠান যার
লেলিহান শিখ৷ চতুর্দিক থেকে তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলে ৷ কিন্তু বিভিন্ন সুরায় আলোচনার
পুর্বাপরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেখানে যেমন প্রয়োজন আল্লাহ সেখানে ততটুকুই উল্লেখ
করেছেন ৷ সুরা আ রাফের বক্তব্যে কাফির সর্দ ৷ররা আল্লাহর নবী ও তার সাথীদেরকে ভয় ডীতি
প্রদর্শন করে ৷ এলাকা থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয় অথবা তাদেরকে তাদের পুর্বের কুফবী ধর্ম
গ্রহণ করতে হবে ৷ এই পটভুমিতে আল্লাহ বলেন ং
অতঃপর ভুমিকম্প তাদেরকে আঘাত করল ৷ ফলে তারা তাদের ঘরের মধ্যে উপুড় হয়ে
পড়ে রইল’
এখানে তাদের বহিষ্কায়ের হুমকি ও ধমকের মোকাবিলায় ভুমিকম্পের কথা এবং ভীতি
প্রদর্শনের মোকাবিলায় ভয়ের কথা বলা হয়েছে ৷ সুতরাং পুর্বাপর আলোচনার সাথে সামঞ্জস্য
রক্ষিত হয়েছে ৷ অপর দিকে সুরা হুদে বলা হয়েছে এক বিকট শব্দ তাদেরকে আঘাত করে ৷
ফলে তারা নিজেদের ঘর-বাড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে ৷ এর কারণ ঐ সুরার বর্ণিত হয়েছে
তারা নবীকে ঠাট্টা-বিদ্র্যপ ও উপহাস করে বলতাে০ ং
তােমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পুর্ব পুরুষেরা যেগুলোর ইবাদত
করত আমরা তা বর্জন করি ? কিৎবা আমাদের ধনসম্পদ আমাদের ইচ্ছামত ৩ব্যবহার না করি?
তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু , সদাচারী ৷ ’ (১১০ ং ৮৭)
সুতরাং আল্লাহর রসুলকে এই ঔদ্ধ৩ ৷পুর্ণ কথা ৷বলার কারণে এখানে এই ভয়ানক বিকট
শব্দের উল্লেখ সামঞ্জস্যপুর্ণ হয়েছে ৷ সুরা শুআরায় বলা হয়েছে যে, এক যেঘাচ্ছন্ন দিবসের
আমার তাদেরকে গ্রাস করেছিল ৷ এর কারণ হল, তারা এ জাতীয় আমার নিয়ে আমার
জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল ৷ সুতরাং তাদের আগ্রহ অনুযায়ী সেই আযাবের কথা বলাই
সামঞ্জস্যপুর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে ৷ কেননা তারা বলেছিলং :
তুমি৫ তা জাদুগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত ৷ তুমি আমাদেরই মত একজন মানুষ বৈ তো নও ৷
আমাদের ধ বণ৷ তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ৷ অতএব যদি স৩ ৷বাদী হও তবে আকাশের
এক খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও ৷ সে বলল, তোমরা যা কর , আমার পালনকর্তা সে সম্পর্কে
ভাল জানেন ৷’ (২৬ : ১৮৫-১৮৯)
আল্লাহ বলেন ং
অতংপর তারা তাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করলো ৷ ফলে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের
আমার পাকড়াও করল ৷ নিশ্চয়ই সেটা ছিল এক ভীষণ দিবসের আমার ৷ ( ২৬ : ১৯০)
কাতাদা (র) সহ কতিপয় ষুফাসসিরের মতে, আয়কাবাসী ও মাদ্য়ানবাসী অভিন্ন সম্প্রদায়
নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন দুইটি সম্প্রদায় ৷ কিন্তু তাদের এ মত দুর্বল ৷ এ মতের পক্ষে দুইটি যুক্তি
পেশ করা হয়;
(১) আল্লাহর বাণী;
(আয়ক৷ ৷বাসীরা রসুলগণকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছে ৷ যখন ও আরব তাদেরকে বলল )
এখানে তাদের স্বগােত্রীর শু আয়ব বলা হয়নি কিন্তু মাদয়ড়ানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে০ ং : ৷
অর্থাৎ মাদয়ানবাসীদের কাছে তাদের স্বগােত্রীয় শুআয়বকে রসুলরুপে
পাঠালাম; (২) আয়কাবাসীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে০ ং মেঘাচ্ছন্ন দিবসের’
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৫৪-
আমার তাদেরকে গ্রস করে অর মাদয়ানবাসীদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে যে ভুমিবৰুন্ষ্পঠে ও
মহানাদ (
কেননা, এখানে কথা বলা হয়েছে আয়কড়ার অধিবাসীদের সম্বোধন করে, সুতরাংএ
ক্ষেত্রে তাদের স্বগােত্রীয় বলা সংগতিপুর্ণ নয় ৷ কিন্তু যেখানে গোত্রকে সম্বোধন করা
হয়েছে, সেখানে তাদের স্বগােত্রীয়’ বল ই যুক্তিসংগত ৷ প্রকৃত পক্ষে এ একটি সুক্ষ্ম ও গুরুতৃপুর্ণ
পার্থক্য ৷ দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর এইং ণ্ধ্র্দুপ্রু ৷ ণ্ৰুহু র্বৃ৷ বা মঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি’ এই একটি স্বতন্ত্র
র্ণশাস্তির উল্লেখ দেখেই যদি বলা হয় যে, এর ভিন্ন সম্প্রদায়, তা হলে ণ্হুণ্হুএ বা ভুমিকম্প এবং
’ ^ ’ মোঃবা নাদ এ দুটি স্বতন্ত্র শাস্তির থেকেও দলীল নেয়া যেতে পারে যে, এরাও দুটি ভিন্ন
সম্প্রদা য়-যড়াদের এক দলের উপর ভুমিকম্প ও অপর দলের উপর নাদরুপে আযাব এসেছিলা
কিন্তু এমন কথা কেউই বলেননি ৷ তবে হাফিজ ইবন আসাকির (র ) হযরত শুআয়র নবীর
আলোচনা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইবন উছমান (র) আবদুল্লাহ ইবন আমর (বা) বর্ণিত একটি মারকু’
হাদীসের উল্লেখ করেছেন :
অর্থাৎ মড়াদয়ানবাসী ও আয়কাবাসী দু’টি সম্প্রদায় ৷ উভয়ের কাছে আল্লাহ হযরত শুআয়ব
(আ)-কে নবীরুপে প্রেরণ করেন ৷ কিন্তু এ হড়াদীসটি পরীব পর্যায়ের ৷ এর সনদে বিতর্কিত
ব্যক্তিও রয়েছেন ৷ সম্ভবত এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা)-এর নিজস্ব উক্তি যা তিনি
ইয়ারমুকের যুদ্ধের সময় বনী ইসরাঈলের কাহিনী সম্পর্কে প্রাপ্ত দুই উট বোঝাই পাণ্ডুলিপি
থেকে নিয়ে থাকবেন ৷
এছাড়া লক্ষণীয় যে, আল্লাহ তা আলা আয়কড়াবাসীদের সেই সব দোষ ত্রুটির উল্লেখ
করেছেন, যেগুলো মাদয়ানবাসীদের মধ্যেও ছিল ৷ যেমন : ওজনে ও সাথে কম দেওয়া
ইত্যাদি ৷ এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উভয়ে একই সম্প্রদায়তুক্ত ৷ বিভিন্ন প্রকার শাস্তি তাদের
উপর পতিত হয় ৷ অবশ্য বিভিন্ন সুরায় আলোচনার পরিবেশ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম সম্বোধন
করা হয়েছে ৷
মেঘাচ্ছন্ন দিবসের আযাব তাদেরকে গ্রাস করে নিল ৷ এটা ছিল ভয়াবহ দিবসের শাস্তি ৷
(সুরা শু আরা : ১৮৯)
মুফা ৷সসিরগণ ৷৪বলেছেন শুআয়বের সম্প্রদায় প্রচণ্ড গরমে আক্রান্ত হয় ৷ আল্লাহ সাত দিন
পর্যন্ত তাদের উপর বায়ু প্রবাহ বন্ধ রাখেন ৷ ফলে পানি, ছায়া ও ঝর্ণাধারা তাদের কোন কাজেই
আসেনি ৷ তখন তারা যর-বাড়ি ছেড়ে উন্মুক্ত প্রাম্ভরে চলে যায় ৷ এক টুকবা মেঘ এসে
তাদেরকে ছায়াদান করে ৷ সম্প্রদায়ের সবাই ঐ মেঘের ছায়ড়ায় আশ্রয় গ্রহণের উদ্দেশ্যে সমবেত
হয় ৷ সকলে যখন সমবেত হল তখন আল্লাহ তাদের উপর অপ্লিস্ফুলিঙ্গ ও জ্বলম্ভ অঙ্গার নিক্ষেপ
করেন ৷ গোটা এলাকাব্যাপী প্রচণ্ড ভুমিকম্প হয় এবং আকাশ থেকে এক ভয়াবহ নাদ আসে ৷
ফলে সকলের প্রাণ বায়ু উড়ে যায়, ঘরবাড়ি উজ৷ ৷ড় হয় এবং নিজ নিজ ঘরের মধ্যে তারা উপুড়
হয়ে পড়ে থাকে ৷ যারা শুআয়ব (আ) কে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল, তারা এরুপ নিশ্চিহ্ন
হলো যে , এখানে যেন তারা কো ন দিনই বসবাস করেনি ৷ যারাই ও আরব (আ)-কে মিথ্যাবাদী
প্রতিপন্ন করেছে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হল ৷ পক্ষাস্তরে, আল্লাহ শুআয়ব (তম)-কে ও তার সাথের
মুমিনদেরকে আমার থেকে রক্ষা করেন ৷
আল্লাহ বলেন :
যখন আমার নির্দেশ এল, তখন আমি ও আরব ও তার সঙ্গী ঈমানদারগণকে আমার
অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম, তারপর যারা সীমালং ঘন করেছিল, মহানাদ তাদেরকে আঘাত
হানলো ৷ ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল ৷ যেন তারা সেখানে কখনও
বসবাসই করেনি ৷ জেনে রেখো, ধ্বংস ছিল মাদ্য়ানবাসীদের পরিণাম যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল
ছামুদ সম্প্রদায় ৷ (১১ : ৯৪-৯৬)
তার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী প্রধানগণ বলল, তোমরা দ্দৌযদি শু আয়বের অনুসরণ কর তাহলে
ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷ তারপর এক ভুমিকম্প তাদেরকে আঘাত করল ৷ ফলে তারা ঘরের মধ্যে
উপুড় হয়ে পড়ে রইল, যারা শুআয়বকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল ৷ মনে হবে যেন
এখানে তারা কখনও বসবাস করেনি ৷ শুআয়বকে যারা মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করছিল, তারাই
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৷’ (৭ : ৯০ ৯২)
এ কথাটি তাদেরই কথার পা ৷ল্টা হিসাবে বলা হয়েছে ৷ কারণ তারা বলেছিল :
(যদি তোমরা শু আয়বের অনুগামী
হও তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷ ( ৭ ৯০ )
সম্প্রদায়ের ধ্বংসের পরে নবী শুআয়ব (আ) দুঃখ করে যে কথা বলেছিলেন যে প্ৰসংগে
আল্লাহর বাণীরু
হে আমার সম্প্রদায় আমি তোমাদেরকে আমার প্রতিপালকের পয়পড়াম পৌছিয়ে দিয়েছি
এবং ৫তামাদের উপদেশ দিয়েছি ৷ এখন আমি ক ফির সম্প্রদায়ের জন্যে কী করে আক্ষেপ করি
( ৭ ৯৩) ৷
অর্থাৎ তাদের ধ্বংসের পরে তিনি তাদের এলাকা থেকে এই কথা বলে চলে আসেন যে,
আমি
আমার প্রতিপালকের পয়পাম পৌছিয়ে দিয়েছি এবংণ্ডে তোমাদেরকে উপদেশ দান করেছি) অর্থাৎ
পৌছিয়ে দেয়ার ও উপদেশ দেয়ার যে দায়ি আমার উপর অর্পণ করা হয়েছিল তা আমি
পুর্ণরুপে আদায় করেছি এবং তোমাদের হিদায়াতের জন্যে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি ৷ কিন্তু
আমার এসব প্রচেষ্টা তোমাদের কোন উপকারে আসেনি ৷ কেননা যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথে চলে
আল্লাহ তাকে হিদায়াত করেন না, আর তার কোন সাহায্যকারীও থাকে না ৷ অতএব, এরপর
আমি তোমাদের ব্যাপারে আক্ষেপ করব না ৷ কেননা তোমরা উপদেশ গ্রহণ করনি, লাঞ্ছিত
হবার দিনকে ভয় করনি ৷ এ জন্যেই তিনি বলেছেন, কিতাবে আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্যে
আক্ষেপ ও দুঃখ প্রকাশ করব ! অর্থাৎ যা সত্য তা তোমরা মানছ না, সেদিকে প্রত্যাবর্তন করছ
না এবং সেদিকে দৃষ্টিপাতও করতে প্রস্তুত নও ৷ ফলে তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন
আঘাত আসল, যা না যায় ফিরান আর না যায় প্রতিরোধ করা , আর না স্থগিত করা সম্ভব ৷
কারও উপর পতিত হলে না যে এর থেকে রক্ষা পেতে পারে, না পলায়ন করে বীচতে পারে ৷
হাফিজ ইবন আসাকির (র)৩ তার ইতিহাস গ্রন্থে হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর উক্তি
উল্লেখ করেছেন যে, হযরত শু আরব (আ) হযরত ইউসুফ (আ)-এর পরবর্তী কালের লোক ৷
ওহাব ইবন মুনাব্বিহ (র) থেকে বর্ণিত, হযরত শুআয়ব (আ) ও তা ৷র সঙ্গী মুমিনগণ সকলেই
মক্কা ৷শরীফে ইনতিকাল করেন এবং তাদের কবর ক৷ বা গৃহের পশ্চিম পাশে দারুন নাদওয়া ও
দায়ে বনী-সাহ্মের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ৷
ইব্রাহীম (আ)-এর সম্ভান-সন্ততি
ইতিপুর্বে আমরা হযরত ইব্রাহীম (আ) ও তার সম্প্রদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও
ঘট্নাপঞ্জি বর্ণনা করেছি ৷ এরপর তার সময়কালে সংঘটিত লুত (আ )-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা
উল্লেখ করেছি ৷ অতঃপর কওমে শুআয়ব অর্থাৎ মাদয়ানবাসীদের ঘটনা বর্ণনা করেছি ৷ কারণ
কুরআন মজীদের বহু স্থানে এ উভয় ঘটনাগুলো পাশাপাশি বর্ণিত হয়েছে ৷ আল্লাহ তা“আলা
লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনার পরেই মাদয়ান বা আয়কাবাসীদের ঘটনা বর্ণনা
করেছেন ৷ কুরআনের অনুকরণে আমরা লুত (আ)-এর পরে শুআয়ব (আ)-এর ঘটনা বর্ণনা
করেছি ৷ এখন আমরা হযরত ইবরাহীম (আ) এর সভান সম্ভতি ও বংশধরদের সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করব ৷ কেননা তার বা শধরদের মধ্যেই আল্লাহ নবী ও কিতাব প্রেরণ
সীমাবদ্ধ রাখেন ৷ সুতরাং ইবরাহীম (আ)-এর পরে আগত প্রত্যেক নবীই তার অধ৪স্তনৎশ ধর ৷
হযরত ইসমাঈল (আ)
হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর বেশ কয়েকজন পুত্র সন্তান ছিলেন যার উল্লেখ
পুর্বেই আমরা করেছি ৷ তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছেন সে দু’জন যীরা ছিলেন
মহান নবী ৷ আবার এ দুজনের মধ্যে ব্য়োজেব্রুষ্ঠ ছিলেন ইসমাঈল (আ) ৷ বিশুদ্ধ মতে যিনি
ছিলেন যাবীহুল্লাহ ৷ তিনিই ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ) এর প্রথম সন্তান ৷ মা৩ ৷ মিসরের
কিবভী বংশের কন্যা হযরত হাজেরা ৷ যারা হযরত ইসহাককে যাবীহুল্লাহ বলেছেন,৩ তারা বনী
ইসরাঈল থেকে এ মত প্রাপ্ত হয়েছেন ৷ অথচ বনী ইসরাঈলগণ তাওরাত ও ইনজীলের মধ্যে
পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছে এবং এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাবের অপব্যাথ্যা দিয়েছে ৷ তারা তাদের
কাছে রক্ষিত আসমানী কিতাবের বক্তব্যের বিরুদ্ধাচরণ করেছে ৷ হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে
তার প্রথম পুত্র কুরব্ানী করার নির্দেশ দেয়া হয় ৷ অন্য বর্ণনা মতে, তার একমাত্র পুত্রকে যবেহ
করার আদেশ দেয়া হয় ৷ যেটাই ধরা হোক না কেন, এর দ্বারা হযরত ইসমাঈল (আ)-কেই
বোঝানো হয়েছে ৷ তাদের কিভাবে সুস্পষ্টভাবে রয়েছে যে, হযরত ইসমাঈল (আ) যখন ভুমিষ্ঠ
হন, তখন হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর বয়স ছিল ছিয়াশি বছর ৷ আর যখন হযরত ইসহাক
(আ) এর জন্ম হয় তখন, হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর বয়স একশশ্’ণ্ বছরের উপরে ৷ সুতরাং
সন্দেহাভীতভ৷ ৩াবে প্রমাণিত যে, ইসমাঈল (আ) ই খলীলুল্লাহর প্রথম সন্তান ৷ সুতরাং সর্বাব্স্থায়
তিনিই ছিলেন একক সন্তান ৷ বাহ্যত তের বছরের অধিক কাল পর্যন্ত ইসমাঈল (আ) ছিলেন
তার একমাত্র সন্তান ৷ এ সময়ের মধ্যে অন্য কোন সন্তানের জন্ম হয়নি ৷ আর তাৎপর্যগত দিক
থেকে একক এ হিসেবে যে, পিতা ইব্রাহীম (আ) শিশু পুত্র ইসমাঈল (আ) ও তার মা
হাজেরাকে নিয়ে হিজরত করেন এবং মক্কার ফারান পর্বতে র উপত্যকায় উভয়কে নির্বা
করেন ৷ তাদেরকে যখন তিনি রেখে আসেন তখন তাদের সাথে যৎসামান্য পানি ও রসদ
ব্যতীত কিছুই ছিল না ৷ এটা তিনি করেছিলেন আল্লাহর উপর পুর্ণ আস্থা ও ভরসা রেখে ৷
আল্লাহ তাআলা আপন অনুগ্রহ ও করুণার দ্বারা তাদেরকে বেষ্টন করে নেন ৷ ব্স্তুত তিনিই
প্রকৃত অনুথহকাবী, সাহায্যকারী ও অভিভাব্ক ৷ অতএব, প্রমাণিত হল যে, হযরত ইসমাঈল
(আ)-ই বাহ্যিক ও তাৎপর্যগত উভয় দিক থেকে একক সন্তান ৷ কিন্তু কে বুঝবে এই সুক্ষ্ম তত্ত্ব
এবং কে খুলবে এই৷ ন্ ৷ক্ত পিট ৷ আল্লাহ যাকে গভীর তত্ত্বজ্ঞা ন দা ন করেছেন, তিনিই কেবল এটা
উপলব্ধি করতে সক্ষম ৷ আল্লাহ৩ তা আল৷ হযরত ইসমাঈল (আ) এর বিভিন্ন গুণাগুণের প্রশংসা
করেছেন ৷ যেমন : তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, সহনশীল, ওয়াদা পালনকা ৷রী, সালাতের
হেফাজতকারী ৷ পরিব্ারব্র্পকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দানকারী-যাতে তারা আযাব থেকে
রক্ষা পায় এবং মহা ন প্রভুর ইবাদতে র দিকে মানুষকে আহ্বানকারী ৷ আল্লাহর বাণী৪