Home » অনুবাদকৃত বইসমুহ » আল বিদায়া ওয়ান্নিহায়া - খন্ড ১ » হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা

হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা

  • 3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
  • Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
  • হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ (আ) এর , ঘটনা

    ইব্রাহীম (আ)-এর নসবনামা নিম্নরুপ ও ইব্রাহীম ইবন তারাখ (২৫০) ইবন লাহুর
    (১৪৮) ইবন সারুগ (২৩০) ইবন রাউ (২৩৯) ইবন ফালিগ (৪৩৯) ইবন আবির (৪৬৪) ইবন
    শালিহ্ (৪৩৩) ইবন আরফাখশাদ (৪৩৮) ইবন নাম (৬০০) ইবন নুহ্ (আ) ৷ আহলে
    কিতাবদেৱ গ্রন্থে এভাবেই হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর নসবনামার উল্লেখ করা হয়েছে ৷ উপরে
    বন্ধনীর মধ্যে বয়স দেখান হয়েছে ৷ হযরত নুহ্ (আ)-এর বয়স ইতিপুর্বে তার আলোচনায়
    উল্লেখ করা হয়েছে, তইি এখানে পুনরুল্পেখের প্রয়োজন নেই ৷ হাফিজ ইবন আসাকির (র) তার
    ইতিহাস গ্রন্থে,ইসহাক ইবন বিশ্ব কাহিনীর “আল মাবদা’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে ,
    ইব্রাহীম (আ)-এর মায়ের নাম ছিল উমায়লা ৷ এরপর তিনি ইব্রাহীম (আ)এর জন্মের এক
    দীর্ঘ কাহিনীও লিখেছেন ৷ ফালবী লিখেছেন যে, ইব্রাহীম (আ)-এর মায়ের নাম বুনা বিনৃত
    কারবানা ইবন কুরহী ৷ ইনি ছিলেন আরফাখৃশাদ ইবন নাম ইবন নুহের বংশধর ৷
    ইবন আসাকির ইকরামা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর
    কুনিয়াত বা উপনাম ছিল আর্য যায়ফান (গ্লু , ৮৷ ৷ , ৷) ৷ বর্ণনাকারিপণ বলেছেন,
    তারাখের বয়স যখন পচাত্তর বছর তখন তার ঔরসে ইব্রাহীম, নাহ্রর ও হারান-এর জন্ম হয় ৷
    হারানের পুত্রের নাম ছিল লুত (আ) ৷ বর্ণনাকারীদের মতে, ইব্রাহীম ছিলেন তিন পুত্রের মধ্যে
    মধ্যম ৷ হারান পিতার জীবদ্দশায় নিজ জন্মস্থান কালদান অর্থাৎ বাবেলে (ব্যাবিলনে) মৃত্যুবরণ
    করেন ৷ ঐতিহাসিক ও জীবনীকারদের নিকট এই মতই প্রসিদ্ধ ও যথার্থ ৷ ইবন আসাকির ইবন
    আব্বাস (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, ইব্রাহীম (আ) গুতায়ে দামেশ্যকর১ বুরযা নামক গ্রামে
    জন্মগ্রহণ করেন, যা কাসিয়ুন পর্বতের সন্নিকাট অবস্থিত ৷ অতঃপর ইবন আসাকির বলেন,
    সঠিক মত এই যে, তিনি বাবেলে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তবে গুতায়ে দামেশকে জন্ম হওয়ার কথা
    এ কারণে বলা হয় যে, হযরত লুত (আ)কে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে যখন তিনি এখানে
    আগমন করেছিলেন, তখন তিনি সেখানে সালাত আদায় করেছিলেন ৷ ইব্রাহীম (আ) বিবি
    সারাহ্কে এবং নাহুর আপন ভাই হারানের কন্যা মালিকাকে বিবাহ করেন ৷ সারাহ্ ছিলেন ’
    বন্ধ্য৷ ৷ তার কোন সন্তান হত না ৷ ইতিহাসবেত্তাদের মতে, তারাখ নিজ পুত্র ইব্রাহীম,
    ইবরাহীমের শ্রী সারাহ্ ও হারানের পুত্র লুতকে নিয়ে কালদানীদের এলাকা থেকে কানআনীদের
    এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন ৷ হারান নামক স্থানে তারা অবতরণ করেন ৷ এখানেই তারাখের
    মৃত্যু ঘটে ৷ মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল দৃ’শ পঞ্চাশ বছর ৷ এই বর্ণনা থেকে প্রমাণ মেলে যে,
    ইব্রাহীম (আ)-এর জন্ম হারানে হয়নি; বরং কাশদানী জাতির ভুখশুই তার জন্মস্থান ৷ এ স্থানটি
    হল বাবেল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ৷ এরপর-তারা সেখান থেকে কানআনীদের আবাসভুমির

    ১ সিরিয়ার একটি এলাকার নাম যেখানে প্রচুর পানি ও বৃক্ষ বিদ্যমান ৷
    আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ( ১ম খণ্ড) : >—

    উদ্দেশে যাত্রা করেন ৷ এটা হলো বায়তৃল মুকাদ্দাসের এলাকা ণ্৷ তারপর তারা হারানে বসবাস
    আরম্ভ করেন ৷ হারান হলো সেকালের কাশদানী জাতির আবাসভুমি ৷ জাসীরা এবং শামও-এর
    অন্তর্ভুক্ত ৷ এখানকার অধিবাসীরা সাতটি নক্ষত্রের পুজা করত ৷ সেই জাতির লোকেরা দামেশক
    শহর নির্মাণ করেছিল ৷ তারা এই দীনের অনুসারী ছিল ৷ তারা উত্তর মেরুর দিকে মুখ করে
    বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়াকলাপ বা মন্তের দ্বারা সাতটি তারকার পুজা করত ৷ এই কারণেই প্রাচীন
    দামেশকের সাতটি প্রবেশ দ্বারের্ প্রতিটিতেউক্ত, সাততারকার এক একটি তারকার বিশাল
    মুর্তি স্থাপিত ছিল ৷ এদের নামে তারা বিভিন্ন পর্ব ও উৎসব পালন করত ৷ হারানের,
    অধিবাসীরাও নক্ষত্র ও মুর্তি পুজা করত ৷ মােটকথা, সে সময় ভু-পৃষ্ঠের উপর যত লোক ছিল
    তাদের মধ্য থেকে শুধু ইবরাহীম খলীল (আ), তার ত্রী (সারা) ও ভাতিজা লুত (আ) ব্যতীত
    সবাই ছিল কাফির ৷ আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দ্বারা সেসব দৃকুতি ও ভ্রাস্তি
    ৰিদুরিত করেন ৷ কেননা, আল্লাহ র্তাকে বাল্যকাণেই সঠিক পথের সন্ধান দেন ৷ রাসুল হওয়ার

    ৰুর্গীরব দান করেন এবং বৃদ্ধ বয়সে খলীল বা বন্ধুরুপে গ্রহণ করেন


    আমি তো ইতিপুর্বে ইবরাহীমকে সং পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে ছিলাম
    সম্যক পরিজ্ঞাত ৷ (সুরা আম্বিয়াং ৫১) অর্থাৎ তিনি এর যোগ্য ছিলেন ৷

    আল্লাহরবাণী৪
    স্মরং৷ কর ইব্রাহীমের কথা, যে তার সম্প্রদায়কে ব্যলছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর
    এবং তাকে ভয় কর; তোমাদের জন্যে এটাই গ্রেয়, যদি তোমরা জানতে ৷ তোমরা তো আল্লাহ
    ব্যতীত কেবল মুর্তি পুজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ; তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পুজা
    কর তারা তোমাদের র্জীবনােপকরণের মালিক নয় ৷ সুতরাং তোমরা জীবনােপকরণ কামনা কর
    আল্লাহর নিকট“ এবং তারই ইবাদত কর ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ৷ তোমরা তারই
    নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে ৷ তোমরা যদি আমাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন কর তবে জেনে রেখ,
    তোমাদের পুর্ববর্তীগণও নবীগণকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল ৷ বন্তুত সুস্পক্টভাৰে প্রচার করে
    দেয়া ব্যতীত রাসুলের আর কোন দায়িত্ব নেই ৷ ওরা কি লক্ষ্য করে না, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে
    অস্তিত্ব দান করেন, তারপর তা পুনরায় সৃষ্টি করেন ? এটা তো আল্লাহর জন্যে সহজ ৷

    বল, পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর, কিভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন ? তারপর
    আল্লাহ সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টি ৷ আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান ৷ তিনি যাকে ইচ্ছা
    শাস্তি দেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন ৷ তোমরা তারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে ৷
    তোমরা আল্লাহকে ব্যর্থ করতে পারবে না পৃথিবীতে অথবা আকাশে এবং আল্লাহ ব্যতীত
    তোমাদের কোন অভিভাবক নেই, সাহাযকোরীও নেই ৷ যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তার সাক্ষাৎ
    অস্বীকার করে, তারাই আমার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়, তাদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি ৷

    উত্তরে ইবরাহীমের সম্প্রদায় শুধু এই বলল, তাকে হত্যা কর অথবা আগুনে পুড়িয়ে দাও ৷
    কিন্তু আল্লাহ তাকে অগ্নি থেকে রক্ষা করলেন ৷ এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের ’
    জন্য ৷ ইব্রাহীম বলল, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে মুর্তিগুলোকে উপাস্যরুপে গ্রহণ করছ; পার্থিব
    জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের খাতিরে ৷ পরে কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে
    অস্বীকার করবে এবং পরস্পরকে অতিসম্পাত দিবে ৷ তোমাদের আবাস হবে জাহড়ান্নড়াম এবং
    তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না ৷ লুত তার প্ৰতি বিশ্বাস স্থাপন করল ৷ ইব্রাহীম বলল,
    আমি আমার প্ৰতিপালকের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ কংছি ৷ তিনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় ৷
    আমি ইবরাহীমকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং তার বংশধরদের জন্যে স্থির করলাম
    নবুওত ও কিতাব এবং আমি তাকে দুনিয়ার পুরস্কৃত করেছিলাম; আখিরাতেও সে নিশ্চয়
    সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম হবে ৷ (সুরা আনকাবুত : ১৬-২৭)

    তারপর আল্লাহ ইব্রাহীম (আ)-এর সাথে তার পিতার এবং সম্প্রদায়ের সোকদেরন্বিতবেরি
    কথা উল্লেখ করেছেন ৷ পরে আমরা ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ৷ হযরত
    ইব্রাহীম (আ) সর্ব প্রথম আপন পিতাকে ঈমানের দাওয়াত দেন ৷ তার পিতা ছিল মুর্তিপুজাৰী ৷
    কাজেই কল্যাণের দিকে আহ্বান পাওয়ার অধিকার তারই সবচাইতে বেশি ৷ আল্লাহ বলেন :

    স্মরণ কর, এই কিভাবে উল্লিখিত ইবরাহীমের কথা; যে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী ৷ যখন সে তার
    পিতাকে বলল, হে পিতা ! তুমি কেন তার ইবাদত কর যে শুনে না, দেখে না এবং তোমার
    কোন কাণ্ডেইি আসে না ? হে আমার পিতা ! আমার নিকট তো এসেছে জ্ঞান, যা তোমার নিকট
    আসেনি; সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখার ৷ হে আমার পিতা !
    শয়তানের ইবাদত কর না ৷ শয়তান তো দয়াময়ের অবাধ্য ৷ হে আমার পিতা ! আমি আশংকা
    করছি, তোমাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে এবং তুমি শয়তানের বন্ধু হয়ে পড়বে ৷

    পিতা বলল, হে ইবরাহীম ! তুমি কি আমার দেব-দেবী হতে বিমুখঃ যদি তুমি নিবৃত্ত না হও
    তবে আমি পাথরের আঘাতে তোমার প্রাণনাশ করবই ৷ তুমি চিরদিনের জন্যে আমার নিকট
    হতে দুর হয়ে যাও ৷’ ইব্রাহীম বলল, তোমার প্রতি সালাম ৷ আমি আমার প্রতিপালকের নিকট
    তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব, তিনি আমার প্ৰতি অতিশয় অনুযহশীল ৷ আমি তোমাদের
    হতে ও তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত কর তাদের হতে পৃথক হচ্ছি ৷ আমি আমার
    প্রতিপালককে আহ্বান করি, আশা করি আমার প্রতিপালককে আহ্বান করে আমি ব্যকৈন্বম হব
    না ৷ (সুরা মারয়াম : ৪ ১-৪৮)

    এখানে আল্লাহ ইবরাহীম (আ) ও তার পিতার মধ্যে যে কথোপকথন ও বিতর্ক হয়েছিল তা
    উল্লেখ করেছেন ৷ সত্যের দিকে পিতাকে যে কোমল ভাষায় ও উত্তম তংপিতে আহ্বান করেছেন
    তা এখানে সুন্দরতাবে ব্যক্ত হয়েছে ৷ তিনি পিতার মুর্তি পুজার অসারতা তুলে ধরেছেন এভাবে
    যে, এগুলো তাদের উপাসনাকারীদের ডাক শুনতে পায় না, তাদের অবস্থানও দেখতে পায় না;
    তা হলে কিভাবে এরা উপাসকদের উপকার করবে? কিভাবে তাদের খাদ্য ও সাহায্য দান করে
    তাদের কল্যাণ করবে ? তারপর আল্লাহ তাকে যে হিদায়াত ও উপকারী জ্ঞান দান করছেন তার
    ভিত্তিতে পিতাকে সতর্ক করে দেন , যদিও বয়সে তিনি পিতার চেয়ে ছোট ৷

    হে আমার পিতা! আমার কাছে জ্ঞান এসেছে যা তোমার নিকট আসেনি; সুতরাং আমার
    অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখার ৷ অর্থাৎ এমন পথ যা অতি সুদৃঢ় , সহজ ও
    সরল ৷ যে পথ অবলম্বন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে কল্যাণের পথে নিয়ে যাবে ৷
    ইবরাহীম (আ) যখন পিতার নিকট এই সভা পথ ও উপদেশ পেশ করলেন, তখন পিতা তা

    গ্রহণ করল না, বরং উল্টে৷ তাকে ধমকাল ও ভয় দেখাল ৷ সে বলল০

    (হে ইব্রাহীম! তুমি কি আমার (সব দেবী থেকে বিমুখ? যদি তুমি নিবৃত্ত না হও, তবে
    আমি পাথরের আঘাতে তোমার প্রাণ নাশ করবােই’ ৷ কেউ কেউ বলেন, মৌখিকভাবে আবার

    কেউ কেউ বলেন, বাস্তবেই পাথর মারব ৷ র্দু পুার্শ্ব র্দেট্রুর্বৃহু ৷ , (চিরতরের জন্যে দুর হয়ে যাও)
    অর্থাৎ আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দীর্ঘকালের জন্যে চলে যাও ৷ ইবরাহীম (আ) তখন
    বলেছিলেন০ এহুা ণ্১া (তোমার প্রতি সালাম) অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে কোন রকম
    কষ্টদায়ক ব্যবহার তুমি পাবে না ৷ আমার তৰুফ্র থেকে ভুমি সম্পুর্ণ নিরাপদ ৷ ইবরাহীম

    অতিরিক্ত আরও বললেন, (আমি আমার

    প্রতিপ৷ ৷লকের নিকট তােমা ৷র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব ৷ তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুযহশীল)া
    ইবন আব্বাস (রা) প্রমুখ বলেছেন ছুব্লু অর্থ হু^০া০৷ অর্থাৎ দয়ালু ৷ কেননা তিনি আমাকে
    সত্য পথের সন্ধাদ্বু দিয়েছেন ৷ একনিষ্ঠভ৷ ৷বে তার ইবাদত করার তওফীক দিয়েছেন ৷ একারণেই
    তিনি বললেনং ১৷ ৷ ’

    ৷ (আমি তােমাদেরকে পরিত্যাগ করছি এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের
    তোমরা পুজা করছ তাদেরও পরিত্যাগ করছি ৷ আমি কেবল আমার পালনকর্তা গ্লুাকই আহ্বান
    করি ৷ আশা করি, আমার প্রতিপালককে আহ্বান করে আমি ব্যর্থকাম হব না ৷ এই ওয়াদা
    অনুযায়ী ইবরাহীম পিতার জন্যে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন ষ্৷ পরে যখন জানলেন যে,
    তার পিতা আল্লাহর দুশমন; তখন তিনি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন ৷ যেমন আল্লাহ্

    বলেনঃ

    ইব্রাহীম তার পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল, তাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে;
    অতঃপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহর শত্রু, তখন ইবরাহীমতার সম্পর্ক
    ছিন্ন করল ৷ ইবরাহীম তো কোমল হৃদয় ও সহনশীল ৷ (সুরা তাওব্াং : ১১৪)
    ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
    কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আ)-এর সাথে তীর পিতা আযরের সাক্ষাৎ হবে ৷ আযরের চেহারা
    মলিন ও কালিমালিপ্ত দেখে ইবরাহীম (আ) বলবেন, আমি কি আপনাকে দুনিয়ার বলিনি যে,
    আমার অব্ড়াধ্য হবেন না ? পিতা বলবে, আজ আর আমি তোমার অবাধ্য হব না ৷’ তখন
    ইবরাহীম (আ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক৷ আপনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে,
    পুনরুথান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না ৷ কিন্তু আমার পিতা যেখানে আপনার দয়া ও

    ক্ষমা থেকে দুরে থাকছে, সেখানে এর চেয়ে অধিক লাঞ্চুনা আর কি হতে পারাে আল্লাহ
    বলবেন, আমি কাফিরদের উপর জান্নাত হারামগু করে দিয়েছি ৷ তারপর বলা হবে : হে
    ইব্রাহীম! তোমার পায়ের নিচে কি? নিচের দিকে তাকিয়ে তিনি দেখবেন, একটি জবাইকৃত

    পশু রক্তাপুত অবস্থায় পড়ে আছে ৷ তারপর পশুটির পাগুলি ধরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা
    হবো

    ইমাম বুখারী (র) কিতাবুত তাফসীরে’ ভিন্ন সুত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম
    নাসাঈও এ হড়াদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম ৰায্যার (র) এটা আবু হুরায়রা (রা) ও আবু সাঈদ
    (রা) থেকে বর্ণনা করছেন এসব বর্ণনায় ইব্রাহীম (আ)-এর পিতা আযর বলে বর্ণিত
    হয়েছে ৷ আল্লাহ বলেন :

    স্মরণ কর, ইব্রাহীম তার পিতা আযরকে ব্লেছিল, আপনি কি মুর্তিকে ইলাহরুপে গ্রহণ
    করেন? আমি আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রাস্তিত্বে দেখছি ৷ (সুরা আনআম : ৭৪)

    কুরআনের উক্ত আয়াত ও বর্ণিত হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইব্রাহীম (আ)-এর
    পিতার নাম আযর ৷ কিন্তু অধিকাংশ বংশবিদদের মতে,-যাদের মধ্যে ইবন আব্বাস (রা) ও
    আছেন, ইব্রাহীম (আ)-এর পিতার নাম তারাখ ৷ আহন্সি কিতড়াবদের মতে, তারাখ একটি
    মুর্তির নাম ৷ ইব্রাহীম (আ)-এর পিতা এর পুজা করত এবং এরই নামানুসারে তাকে তারাখ
    উপাধি দেয়া হয় ৷ কিন্তু প্রকৃত নাম আযর ৷ ইবন জারীর লিখেছেন : সঠিক কথা এই যে, আযর
    তার প্রকৃত নাম; অথবা আযর ও তারাখ দুটোই তার আসল নাম; কিৎবা যে কোন একটা
    উপাধি এবং অপরটা নাম ৷ ইবনে জারীরের এ বক্তব্যটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷
    আল্লাহই অধিকতর ধ্জ্ঞাত ৷ আল্লাহর বাণী :

    এভাবে ইবরাহীমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালন ব্যবস্থা ৷দেখইি, আর যাতে সে
    নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয় ৷ তারপর রাত্রির অন্ধকার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল, তখন সে
    নক্ষত্র দেখে বলল, এই তো আমার প্রতিপালক, এরপর যখন উহা অস্তমিত হল তখন সে
    বলল, যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না ৷ ’ তারপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বলরুপে উদিত
    হতে দেখল, তখন সে বলল, এই তো আমার প্রতিপালক,’ যখন এটাও অস্তমিত হল তখন সে
    বলল, আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ প্রদর্শন না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত
    হব ৷ ’ তারপর যখন সে সুর্যকে দীপ্তিমানরুপে উদিত হতে দেখল তখন সে বলল, এটাই আমার
    প্রতিপালক এটিই সর্ববৃহৎ, যখন এটাও অস্তমিত হল তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় !
    তোমরা যাকে আল্লাহর শরীক কর তার সাথে আমার কোন সংশ্রব নেই ৷ আমি একনিষ্ঠভাবে
    তার দিকে মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশ্ারিকদের
    ত্ন্তের্তুক্ত নই ৷

    তার সম্প্রদায় তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হল ৷ সে বলল, তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে আমার
    সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবো তিনি তাে আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন ৷ আমার প্রতিপ৷ ৷লক
    অন্যরুপ ইচ্ছা না করলে তোমরা যাবে তার শরীক কর তাকে আমি ভয় করি না, সব কিছুই
    আমার প্রতিপালকের জ্ঞানায়ত্ত ৷ তবে কি তোমরা অবধান করবে না ? তোমরা যাকে আল্লাহর
    শরীক কর আমি তাকে কিরুপে ভয় করব? অথচ তোমরা আল্লাহর শরীক করতে ভয় ণ্কর না
    যে বিষয়ে তিনি তােমাদেরকে কোন সনদ দেননি; সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বল , দৃদলের
    মধ্যে কোন দল নিরাপত্তা লাভের অধিকারী ৷ যারা ঈমান এসেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম
    দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদের জন্যে, তারাই সৎপথ প্রাপ্ত ৷ এবং এই হচ্ছে আমার
    যুক্তি-প্রমাণ যা ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের মুক৷ ৷বিলায়; যাকে ইচ্ছা মর্যা ৷দায় আ ৷মি
    উন্নীত করি; তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, জ্ঞানী ৷ (সুরা আনআম : ৭৫-৮৩)

    এখানে ইব্রাহীম (আ) ও তার সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট বিতর্কের কথা বলা হয়েছে ৷ তিনি
    যুক্তি দেখিয়েছেন যে, এসব উজ্জাপ্ নক্ষ্যঘ্র মুলত জড় পদার্থ যা কখনো উপাসা হতে পারে না ৷
    আর আল্লাহর সাথে শরীক করে এগুলোর পুজাও করা যেতে পারে না ৷ কেননা, এটা সৃষ্ট,
    প্রতিপালিত ও ন্নিয়গ্রিত ৷ এরা উদিত হয় ও অস্ত যায় এবং অদৃশ্যও হয়ে যায় ৷ পক্ষান্তরে, মহান
    প্রতিপালর্ক আল্লাহ, যার থেকে কোন কিছুই অদৃশ্য হতে পারে না ৷ কিছুই তার দৃষ্টি থেকে
    গোপন থাকতে পারে না ৷ বরং তিনি সর্বদা, সর্বত্র বিদ্যমান ৷ তার কোন ক্ষয় ও পতন নেই ৷
    তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই ৷ তিনি ব্যতীত অন্য কোন প্ৰতিপালক নেই ৷ এভাবে
    ইব্রাহীম (আ) সর্বপ্রথম নক্ষত্রের ইলাহ্ হওয়ার অযােগ্যত৷ বর্ণনা করেন ৷ কারো কারো মতে,
    এখানে নক্ষত্র বলতে যোহরা সেতারা তথা শুক্র গ্রহকে বুঝানো হয়েছে-যা অন্য সকল
    নক্ষত্রের চেয়ে অধিক উজ্জ্বল হয় ৷ এ কারভ্রুংইি পরবর্তীতে তিনি আরও অগ্রসর হয়ে চদ্রের

    উল্লেখ করেনষ্-ষ্যা নক্ষত্রের চেয়ে অধিক উজ্জ্বল ও ঝলমলে ৷ এর পর আরও উপরের দিকে
    লক্ষ্য করে সুর্যের উল্লেখ করেন, যার অবয়ব্ সর্ব বৃহৎ এবং যার উজ্জ্বলতা ও আলোক বিকিরণ
    তীব্রতর ৷ এভাবে ইব্রাহীম (আ) স্পষ্টতাবে বুঝান্সেন যে, সুর্যও নিয়ত্রিত ও অধীনস্থু অন্যের

    নির্দেশ পালনে বাধ্য ৷ আল্লাহর বাণী :
    তার নিদর্শনসমুহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন ৷ তোমরা সুর্যকে সিজদা ৷করো না; চন্দ্রকেও
    নয়, বরং সিজদা কর সেই আল্লাহঙ্গুকন্-যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবল তার
    ইবাদত কর ৷ (সুরা হা-মীম আস্সাজদাং ৩৭)

    এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন র্চু£) স্পে! ৷ $ এে (যখন সে সুর্যকে দীপ্তিমান
    অর্থাৎ উদিত হতে দেখল ৷)

    আমার প্রতিপালক অন্যরুপ ইচ্ছা না করলে তোমরা থাকে তার শরীক কর তাকে আমি ভয়
    করি না অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদের ইবাদত তোমরা কর তাদের কোন পরোয়া আমি করি
    না ৷ কেননা ওরা না পারে কোন উপকার করতে, না পারে কিছু শুনতে আর না পারে কিছু
    অনুধাবন করতে ৷ বরং এরা হয় প্ৰতিপালিত ও নিয়শ্রিত যেমন নক্ষত্র ইত্যাদি ৷ না হয়
    নিজেদেরই হাতের তৈরি ও থােদাইকৃত ৷

    নক্ষত্র সম্পর্কে ইব্রাহীম (আ)-এর উপরোক্ত উপদেশ বাণী থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে ,
    এ সব কথা তিনি হারানের অধিবাসীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন ৷ কেননা, তারা নক্ষত্রের পুজা
    করত ৷ এর দ্বারা ইবন ইসহাক (র) প্রমুখ যারা মনে করেন যে, ইব্রাহীম (আ) এ কথা তখন
    বলেছিলেন; যখন তিনি ৰাল্যকালে গুহা থেকে বের হয়ে আসেন ৷ এতে তাদের অভিমত খণ্ডন
    হয়ে যায় ৷ এই মত ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে ৷ যার কোন নির্জাযােগ্যতা নেই ৷
    বিশেষ করে যখন তা সঠিক বর্ণনার পরিপন্থী হয় ৷ অপরদিকে বড়াবেলবাসীরা ছিল মুর্তিপুজক ৷
    ইব্রাহীম (আ) তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন ৷ মুর্তি ভাঙ্গেন, অপদস্ত করেন এবং সেগুলোর
    অসারতা বর্ণনা করেন ৷

    আল্পাহ্তাআলা বলেনং :

    ইব্রাহীম বলল, তোমরা আল্পাহ্র পরিবর্তে মুর্তিদেরকে উপাস্যরুপে গ্রহণ করহাে, পার্থিব
    জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের খাতিরে; পরৈ কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরহুক্ল
    তাম্বীকার করবে এবং পরস্পরকে অডিসম্পাত দিবে ৷ তোমাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং
    তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না ৷ (সুরা আনকাবুত : ২৫)

    ধু ঞাসুরা আন্বিয়ায় আল্লাহ তাআলা বলেন :

    আমি তো এর পুর্বে ইবরাহীমকে সৎপখের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে ছিলাম

    সম্যক পরিজ্ঞাত ৷ যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এই মুর্তিগুলাে কী, যাদের
    পুজায় তোমরা রত রয়েছ? ওরা বলল, আমরা আম,দ্বুদের পিতৃ-পুরুষগণকে এগুলোর পুজা

    আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৪২ ——

    করতে দেখেছি ৷ সে বলল, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃ-পুরুষগণও রয়েছে স্পষ্ট
    বিভ্রাস্তিতে ৷ ওরা বলল, তুমি কি আমাদের নিকট সত্য এনেছ, নাকি তুমি কৌতুক করছ? সে
    বলল, না তোমাদের প্রতিপালক তো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক, যিনি ওদের সৃষ্টি
    করেছেন এবং এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী ৷

    শপথ আল্লাহর, তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মুর্তিগুলো সম্বন্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা
    অবলম্বন করব ৷ ’ তারপর সে চুর্ণৰুবিচুর্ণ করে দিল ওদের প্রধানটি ব্যতীত; যাতে তারা ওর দিকে
    ফিরে আসে ৷ তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের প্রতি এরুপ করল কে? সে নিশ্চয়ই
    সীমা লংঘনকারী ৷ কেউ কেউ বলল, এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে ৩শুনেছি; তাকে বলা
    হয় ইব্রাহীম ৷ ওরা বলল,ত তাকে উপস্থিত কর লোকজনের সম্মুখে, যাতে তারা সাক্ষ্য দিতে
    পারে ৷ তারা বলল, হে ইব্রাহীম! তৃমিই কি আমাদের উপাস্যদের প্রতি এরুপ করেছ? সে
    বলল, সে-ই তাে এটা করেছে, এই তাে এগুলোর প্রধান ৷ এ গুলোকে জিজ্ঞেস কর ৷ যদি
    এগুলো কথা বলতে পারে ৷ তখন ওরা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে
    লাগল, তােমরাই তো সীমালস্মনকাবী ?

    অতপর ওদের মস্তক অবনত হয়ে গেল এবং ওরা বলল, তুমি তে ৷ জানই যে, এরা কথা
    বলে না ৷ ইব্রাহীম বলল, তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর যা
    তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না? ধিক্ তােমাদেরকে এবং
    আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদেরকে ৷ তবে কি তোমরা বুঝবে না ? ওরা
    বলল, একে পুড়িয়ে দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলোকে, তোমরা যদি কিছু
    করতে চাও ৷ আমি বললাম, হে আগুন তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও ৷
    ওরা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল ৷ কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ৷
    (সুরা আন্বিয়৷ : ৫১ ৭০)

    সুরা শুআ ৷রায় আল্লাহর বাণী :

    ওদের নিকট ইবরাহীমের বৃত্তান্ত বর্ণনা কর ৷ সে যখন তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে
    বলেছিল, তোমরা কিসের ইবাদত কর ? ওরা বলল, আমরা প্রতিমার পুজা করি এবং আমরা
    নিষ্ঠার সাথে ওদের পুজায় নিরত থাকর ৷ সে বলল, তোমরা প্রার্থনা করলে ওরা কি ণ্শ্যানা
    অথবা ওরা কি তোমাদের উপকার কিত্বা অপকাৱ করতে পারো ওরা বলল, না, তবে আমরা
    আমাদের পিতৃ পুরুষদ্দেরকে এরুপই করতে দেখেছি ৷

    সে বলল, তোমরা কি তার সম্বন্ধে ভোর দেখেছ যার পুজা করছ-তোমরা এবং তোমাদের
    অতীত পিতৃ পুরুষরাঃ ওরা সকলেই আমার শত্রু, জগতসমুহের প্রতিপালক ব্যতীত, যিনি
    আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন ৷ তিনিই আমাকে দান করেন আহড়ার্য
    ও পানীয় ৷ এবং রেগােক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রােগমুক্ত করেন; এবং তিনিই আমার মৃত্যু
    ঘটাবেন, তারপর পুনর্জীবিত করবেন ৷ এবং আশা করি, তিনি কিয়ামত দিবসে আমার
    অপরাধসমুহ মার্জনা করে দেবেন ৷ হে আমার প্রতিপালক৷ আমাকে জ্ঞান দান কর এবং
    সৎকর্মপরায়ণদের শামিল কর ৷ (সুরা শুআরড়া : ৬৯-৮৩)

    সুরা সাফ্ফাতে আল্লাহ বলেন

    ইবরাহীম তো তার অনুপামীদের অন্তর্ভুক্ত ৷ স্মরণ কর, সে তার প্রতিপালকের নিকট
    উপস্থিত হয়েছিল বিশুদ্ধচিত্তে ৷ যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কেও জিজ্ঞেস করেছিল,
    তোমরা কিসের পুজা করছ? তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে অলীক ইলাহ্গুলোকে চাও?
    জগতসমুহের প্রতিপালক সম্বন্ধে তোমাদের ধারণা কী? তারপর সে তারকারাজির দিকে একবার
    তাকাল এবং বলল, আমি অসুস্থ ৷ অতঃপর ওরা তাকে পশ্চাতে রেখে চলে গেল ৷ পরে সে
    সন্তর্পণে ওদের দেবতাগুলাের নিকট গেল ৷ এবং বলল, তোমরা খাদ্য গ্রহণ করছ না কেন ষ্
    তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা কথা বলনাঃ তখন সে তাদের উপর সবলে আঘাত হানল ৷
    তখন ঐ লোকগুলো তার দিকে ছুটে আসলাে ৷ সে বলল, তোমরা নিজেরা যাদেরকে খোদাই
    করে নির্মাণ কর, তোমরা কি তাদেরই পুজা কর? প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন
    তােমাদেরকে এবং তোমরা যা তৈরি কর তাও ৷ ওরা বলল, এর জন্যে এক ইমারত তৈরি কর,
    তারপর একে জ্বলত্ত আগুনে নিক্ষেপ কর ৷ ওরা তার বিরুদ্ধে চক্রাস্তের সংকল্প করেছিল; কিন্তু
    আমি ওদেরকে অতিশয় হেয় করে দিলাম ৷ (সুরাসাফ্ফাত : ৮৩-৯৮)

    এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেন যে, ইবরাহীম (আ) তার
    ’ ন্ সম্প্রদায়ের লোকদের মুর্তি পুজার সমালোচনা করেন এবং তাদের কাছে ওগুলোর অসারতা ও
    অক্ষমতার কথা তুলে ধরেন ৷ যেমন তিনি বলেছেন :

    (এই মুর্তিগুলো কি? যাদের পুজায় তোমরা রত রয়েছ?) অর্থাৎ এদের নিকট নিষ্ঠার সাথে
    বসে থাক ও কাতর হয়ে থাক ৷ তারা উত্তর দিল; (আমরা
    আমাদের পুর্ব পুরুষদেরকে এদের পুজারীরুপে পেয়েছি ৷) তাদের যুক্তি এই একটাই যে, তাদের
    বাপ-দাদারা এরুপ দেবদেবীর পুজা-অর্চনা করতো ৷

    এদ্বুণ্
    তিনি বললেন, তোমরা ও তোমাদের ৰাপ-দাদারা স্পষ্ট বিভ্রাস্তিতে রয়েছে৷ ৷ যেমন আল্লাহ্ বলেছেনং

    যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিল, তোমরা কিসের পুজা করছ?
    তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে অলীক ইলাহগুলােকে চাওদ্রু তা হলে জগতসমুহের প্রতিপালক
    সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি?

    কাতাদা এ আয়াতাৎশের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, বিশ্ব জাহড়ানের পালনকর্তা আল্লাহকে
    বাদ দিয়ে যখন তোমরা অন্যদের ইবাদত করছ, তখন যেদিন তার সাথে সাক্ষাৎ হবে সেদিন
    তিনি তোমাদের সাথে কিরুপ ব্যবহার করবেন বলে মনে করা

    ইব্রাহীম (আ) তাদেরকে বলেছেন

    তোমরা প্রার্থনা করলে ওরা কি শুনাে অথবা ওরা কি তোমাদের উপকার কিং বা অপকার

    করতে পাবেঃ ওরা বলল, না তবে আমরা আমাদের রাপ-দাদাদেরকে এরুপই করতে দেখেছি ৷
    (সুরা শুআরা০ ৭২ ৭৪)

    তারা স্বীকার করে নেয় যে, আহবড়ানকারীর ডাক ওরা শোনে না, কারও কোন উপকারও
    করতে পারে না ৷ অপকারও করতে পারে না ৷ তারা এরুপ করছে কেবল তাদের মুর্থ
    পুর্ব অন্ধ আনুগত্য হিসেবে ৷ এ জন্যেই তিনি তাদেরকে বলে দেন যেং :

    তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ যাদের পুজা করে আসছ তোমরা ও তোমাদের

    পুর্ববর্তী পিতৃ পুরুষেরা; কেননা রাববুল আলামীন ব্যতীত ত ৷রা সবা ৷ই আমার দৃশমন ৷ (সুরা
    শু ৭৭)

    তারা মুর্তির উপাস্য হওয়ার যে দা ৷বি করত তা যে বাতিল ও ভ্রান্ত, উল্লিখিত আয়ড়াতসমুহে
    তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় ৷ কেননা, হযরত ৩ইবরাহীম (আ) ওগুলােকে পরিত্যাগ করেন ও

    হেয়প্রতিপন্ন করেন ৷ এতে যদি তাদের ক্ষমতা থাকত ক্ষতি করার তা হলে অবশ্যই তারা তার
    ক্ষতি করত ৷ অথবা যদি আদৌ কোন প্রভাবের অধিকারী হত তবে অবশ্যই তার উপর যে

    ধরনের প্রভাব ফেলত ৷

    (তারা বলল, তুমি কি আমাদের নিকট সতাসহ আগমন করেছ, না কি তুমি কৌতুক
    করছ?) অর্থাৎ তারা বলেছে যে, হে ইব্রাহীম ! তুমি আমাদের নিকট যা কিছু ব্লছো, আমাদের
    উপাস্যদেরকে তিরস্কার করছো এবং আমাদের পুর্ব-পুরুষদের সামালোচনা করছো এ সব কি
    তুমি সত্যি সত্যিই বলছ, নাকি কৌতুক করছ?

    (সে বলল, না তোমাদের প্রতিপালক তো তিনি, যিনি আসমান ও যমীনের প্ৰতিপালক,
    যিনি এগুলো সৃজন করেছেন; এবং আমিই এর উপর অন্যতম সাক্ষী ৷ (অর্থাৎ আমি তোমাদের
    নিকট যা কিছু বলছি, সবই সত্য ও যথার্থ বলছি ৷ ব্ন্তুত তোমাদের উপাস্য সেই একজনই,
    যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই ৷ তিনি ণ্তামাদের প্রতিপালক এবং আসমান-যমীনেরও
    প্রতিপালকন্৷ পুর্ব-দৃষ্টাম্ভ ছাড়াই তিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন ৷ সুতরাং ইৰাদতের যোগ্য একমাত্র
    তিনিই, তার কোন শরীক নেই; এবং আমি নিজেই এর উপর সাক্ষী ৷

    আল্লাহর কলম, তোমরা চর্দুল গেলে আমি তোমাদের মুর্তিগুলো সম্বন্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা
    অবলম্বন করব (সুরা আন্বিয়া৪ ৫৫ ৫ ৭) ৷ অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আ) এ মর্মে প্রতিজ্ঞা ৷করেন
    যে, লোকজন মেলায় চলে যাওয়ার পর তাদের উপাস্য মুর্তিগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ
    করবেন ৷ কারো কারো মতে, ইব্রাহীম (আ) এ কথা মনে মনে বলেছিলেন ৷ ইবন মাসউদ (রা)
    বলেছেন যে, তাদের মধ্যে কয়েকজন ইব্রাহীম (আ)-এর এ কথাটি শুনে ফেলেছিল ৷ ইব্রাহীম
    (আ)-এর সম্প্রদায়ের লোকজন শহরের উপকণ্ঠে তাদের একটি নির্ধারিত বার্ষিক মেলায় মিলিত
    হতো ৷ ইব্রাহীম (আ)-এব পিতা তাকে মেলায় যাওয়ার জন্যে আহ্বান জানালে তিনি
    বলেছিলেন, আমি পীড়িত’ ৷ আল্লাহ বলেন :

    (সে নক্ষত্রের দিকে একবার তড়াকাল, তারপর বলল, আমি পীড়িত) তিনি কথাটা একটু
    ঘুরিয়ে বললেন ৷ যাতে তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় আর তা হলো তাদের মুর্তিসমুহকে হেয়প্রতিপন্ন
    করা ৷ মুর্তিপুজা খণ্ডনের ব্যাপারে আল্লাহর সত্য দীনের সাহায্য করা ৷ আর ধ্ব স ও চরম
    লাঞ্চুন্যাই ছিল মুর্তিগুলোর যথার্থ পাওনা ৷ এরপর সম্প্রদায়ের লোকজন যখন মেলায় চলে যায়
    এবং ইব্রাহীম (আ) শহরেই থেকে যান তখন মোঃ ! ষ্পু ! ব্লু৷ , অখাৎ তিনি চুপিসারে
    দ্রুতপদে দেবতাদের দিকে অগ্রসর হলেন ৷ তিনি র্দুদখতে পান যে, মুর্তিগুলো একটি বিরাট
    প্রকােষ্ঠের মধ্যে রয়েছে এবং তাদের সম্মুখে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য সৈবেদ্যরুপে রাখা আছে ৷ এ
    দেশে তিনি উপহাস ছলে বললেন ং

    (তোমরা খাচ্ছ না কেন? কি হল তোমাদের, কথা বলছ না কেন ? তারপর সে তাদের উপর তার
    ডান হাত দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত হানল ৷) কেননা, ডান হতেই অধিকতর শক্তিশালী ও দ্রুত
    ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে ৷ তাই তিনি নিজ হাতের কুঠারের প্রচণ্ড আঘাতে মুর্তিগুলো ভেঙ্গে চুরমার
    করে দিলেন ৷ ;হু মোঃঠুষ্ (ইব্রাহীম মুর্তিগুলাের্কে টুকরো টুকরো করে দিন) অর্থাৎ
    সব্গুলোকে তিনি ভেঙ্গে :চুরমার করে দিলেন ৷ (তাদের
    মধ্যে বড়টা ব্যতীত, যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে ৷) কেউ কেউ বলেছেন, ইব্রাহীম
    (আ) তার কুঠারখানা বড় মুর্তির হাতে ঝুলিয়ে রেখে দেন ৷ এতে এই ইঙ্গিত ছিল যে; তারা যেন
    মনে করে যে, তার সাথে ছোট মুর্তিগুলো পুজিত হওয়ার কারণে ওটাই ছোটগুলোর উপর ঈর্ষা
    বশত আক্রমণ করেছে ৷ তারপর মেলা থেকে ফিরে এসে লোকজন তাদের উপাস্যদের এ অবস্থা
    যখন দেখল :
    (তখন তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের সাথে এরুপ আচরণ কে করল ৷ নিশ্চয়ই সে
    একজন সীমালংঘনকারী ৷ ) ণ্ এ কথার মধ্যে তাদের জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিল , যদি তারা বুঝতে
    চেষ্টা করত ! কেননা, তারা যে সব দেব-দেবীর উপাসনা করে , তারা যদি সত্যি উপাস্য হত, তা
    হলে যে তাদেরকে আক্রমণ করেছে তাকে তারা প্রতিহত করত ৷ কিভু নিজেদের মুর্থতা,
    নির্বুদ্ধিতা ও চরম পথভ্রষ্টতার কারণে তারা বললং :

    (আমাদের উপাস্যদের সাথে এ আচরণ করল কে ? নিশ্চয়ই সে এক জালিম ৷ তাদের
    কতিপয় লোক বলল, আমরা এক যুবককে এদের বিষয়ে আলোচনা করতে শুনেছি, তাকে
    ইব্রাহীম বলা হয় ৷) অর্থাৎ যে এদের দোষ-ক্রটি বর্ণনা করত, এদের নিয়ে সমালোচনা করত ৷
    সুতরাং সেই এসে এদেরকে ভেঙ্গেছে ৷ ইবন মাসউদ (রা) বলেছেন ন্গুাষ্ট্র£; র্দ্র (সে এদের

    আলোচনা করত) দ্বারা ইব্রাহীম (আ) ইতিপুর্বের কথা বলাই উদ্দেশ্য, অর্থাৎ-

    (আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের মুর্তিগুলোর ব্যাপারে এক ব্যবস্থা নেব্ তোমরা ফিরে
    যাওয়ার পরে) টুপুর্চুঘ্র (তারা বলল,
    তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখতে পারে) অর্থাৎ উপস্থিত জনতার মাঝে
    নেতৃবৃন্দের সম্মুখে তাকে হাযির কর; যাতে জনগণ তার বক্তব্য প্রদানকালে উপস্থিত থাকে এবং
    তার কথাবার্তা শুনতে পারে ৷ এবং তাকে ব্দলাস্বরুপ যে শাস্তি দেওয়া হবে তা প্রত্যক্ষ করতে
    পারে ৷ এটাই ছিল হযরত ইব্রাহীম খলীলের প্রধানতম উদ্দেশ্য যে, সকল মানুষ উপস্থিত হলে
    তিনি সমস্ত মুর্তি পুজারীর সম্মুখে তাদের ধর্ম-কর্মের ভ্রাস্তিব্ প্রমাণ পেশ করবেন ৷ যেমনটি মুসা

    আ ও ফিরআউনকে বলে লেনং :

    (ণ্তামাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং যেই দিন পুৰ্বাহে লোকজনকে সমবেত করা
    হবে ৷ (সুরা আহা; ৫৯) ৷ তারপর যখন লোকজন জমায়েত হলো এবং ইব্রাহীম (আ)-কে

    সেখানে হাযির করা হল, তখন তারা বলল :

    (হে ইব্রাহীম! আমাদের দেব-দেবীর সাথে এই কাণ্ড কি তুমিই ঘঢিয়েছ? সে বলল, এদের
    এই বড়টাই বরং এ কাজটি করেছে ৷) কেউ কেউ এ আয়ড়াতের অর্থ করেছেন এভাবে এটি
    আমাকে এগুলো ভাঙ্গার ব্যাপারে উব্দুদ্ধ করেছে; অবশ্য কথাটাকে তিনি একটু ঘুরিয়ে বলেছেন ৷

    (ওদের কাছেই জিজ্ঞেস কর যদি ওরা কথা বলতে
    পারে) ইব্রাহীম (আ) এ কথার দ্বারা এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, ওরা যেন দ্রুত এই কথা
    বলে যে, এরা তো কথা বলতে পারে না ৷ ফলত তারা স্বীকা ৷র করে নিয়ে যে, অন্যান্য জড়ব্ন্তুর
    ন্যায় এগুলােও নিছক জড়বন্তু ৷ র্চু,ক্ট্র’া৷হি৷ ৷
    (অতঃপর তারা মনে মনে চিন্তা করল এবং বলল, তােমরাই র্তো জালিম) অর্থাৎ তারা
    নিজেদেরকে তিরক৷ ৷র ও ধিক্কার দিয়ে বলল, জা ড়ালিম তো তোমরা নিজেরাই; এদেরকে তোমরা

    এমনিই ণ্হুৰুড় চলে গেলে, ণ্কান পাহারাদার ও হিফাজতকারী রেখে গেলে না

    (তারপর তারা মাথা নত করে ঝুকে গেল) সুদ্দী (র) এর অর্থ করেছেন, তারা ফিত্না

    ফ্যাসাদের দিকে ফিরে পেল ৷ এ অর্থ অনুযায়ী উপরের তােমরাই জালিম
    ৷ ৷ এর অর্থ তোমরা এদের ইবাদত করার কারণে জালিম পদবড়াচ্য ৷ কাতাদ৷ (র)
    বলেছেন, ইব্রাহীম (আ)-এর কথায় তারা অত্যধিক দৃশ্চিভাগ্রস্ত হয় ৷ ফলে তাদের মাথা নত
    হয়ে যায় ৷ তারপর তারা বলল ট্রু,ক্ট্রপুৰুাৰু ণ্র্বৃাহ্র১ ৷শু এ পুএছু(তুমি তো জানই যে,
    এগুলো কথা বলে না) অর্থাৎ হে ইব্রাহীম! তোমার তো জানা আছে যে, এরা কথা বলে না ৷

    সুতরাং এদের নিকট জিজ্ঞেস করার জন্যে তুমি কেন ব্লছ ? এ সময় ইব্রাহীম খলীল তাদের

    উদ্দেশ করে বলেন ’; ৷

    (তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন সব বস্তুর পুজা কর, যা না তোমাদের কোন উপকার
    করতে পারে; না কোন ক্ষতি করতে পারে ? ধিক তোমাদের জন্যে এবং তোমাদের উপাস্যদের
    জব্লুন৷ যাদেরকে তোমরা পুজা কর আল্লাহ ব্যতীত ৷ তোমরা কি মোটেই জ্ঞান খাটাও না?)
    (তারপর তারা ইবরড়াহীমের দিকে জোড় আসলো ৷) মুজাহিদ
    বলেছেন,৷
    (তোমরা কি সেই সব দেবতাদের পুজা কর যেগুলো তোমরা নিজেরাই খেদািই করে তৈরি কর?)
    অর্থাৎ তোমরা কিভাবে এমন সব মুর্তির পুজা কর, যেগুলো তোমরা স্বহস্তে কাঠ অথবা পাথর
    খোদাই করে নির্মাণ করে থাকে৷ এবং নিজেদের ইচ্ছামত আকৃতি দান কর ৷ ন্র্বুঘ্রর্দুছু ৰুড়া৷ ৷ ও

    , (অথচ আল্লাহৃই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন
    যাদেরকে তোমরা তৈরি করে থাক) ৷ৰুঅক্ষরটি হতে পারে; আবার

    -ও হতে পারে ৷ যেটাই হোক, এখানে যেকথা বলা উদ্দেশ্য তা হল এই যে, তােমরাও সৃষ্টি
    আর এই মুর্তিশুলোও সৃষ্টি ৷ এখন একটি সৃষ্টি অপর একটি সৃষ্টির ইবাদত কিভাবে করতে পারে ৷
    কেননা, তোমরা তাদের উপাস্য না হয়ে তারা তোমাদের উপাস্য হবে এই অ্যাধিকারের কোন
    ভিত্তি নেই ৷ এটাও যেমন ভিত্তিহীন, তেমনি এর বিপরীতটা অর্থাৎ তোমার উপাস্য হওয়াও
    ভিত্তিহীন ৷ কারণ, ইবাদত, উপাসনা পাওয়ার অধিকারী কেবল সৃষ্টিকর্তাই; এ ব্যাপারে কেউ
    তার শরীক নেই ৷

    ন্এ৷ মোঃ ৷ মুে অিরা বলল,
    এর জনে এক ইমারত তৈরি কর ৷ তারপর একে জ্বলম্ভ আগুনে
    নিক্ষেপ কর ৷ তারা ইবরাহীমের বিরুদ্ধে চক্রাস্তের সংকল্প করেছিল, কিত্তু আমি তাদেরকে
    অতিশয় হেয় করে দিলাম ৷) ইব্রাহীম (আ)-এর সাথে তারা যখন যুক্তি ও বিতর্কে এটে উঠতে
    পারলো না, তাদের পক্ষে পেশ করার মত কােনই দলীলপ্ৰমাণ থাকল না, তখন তারা বিতর্কের
    পথ এড়িয়ে শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগের পথ অবলম্বন করে যাতে করে নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ও
    হ্ঠকারিতা টিকিয়ে রাখতে পারে ৷ সুতরাং আল্লাহ সুবহানুহ্ তাআলাও তাদের চক্রান্তকে ব্যর্থ
    করে দেয়ার কৌশল গ্রহণ করেন ৷ আল্লাহ বলেন :

    তারা বলল, ইবরাহীমকে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবতাদেরকে সাহায্য কর যদি

    তোমরা কিছু করতে চাও ৷ আমি ব্ললাম , হে আগুন তুমি ইব্রাহীমের জন্যে শীতল ও নিরাপদ

    হয়ে যাও ৷ তারা ইব্রাহীমের ক্ষতি সাধন করতে ঢেয়েছিল; কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম
    সর্বাধিক ক্ষতিঃপ্লস্ত ৷ (সুরা আম্বিয়া : ৬৮ ৭০)

    তারা বিভিন্ন স্থান থেকে সম্ভাব্য চেষ্টায় মাধ্যমে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে থাকে ৷ দীর্ঘদিন
    পর্যন্ত তারা এ সংগ্রহের কাজে রত থাকে ৷ তাদের মধ্যে কোন মহিলা পীড়িত হলে মানত করত
    যে, যদি সে আরােগ্য লাভ করে তবে ইব্রাহীম (আ) কে পােড়াবার লাকড়ি সংগ্রহ করে দেবে ৷
    এরপর তারা বিরাট এক গর্ত তৈরি করে তার মধ্যে লাকড়ি নিক্ষেপ করে অগ্নি সংযোগ করে ৷
    ফলে তীব্র দাহনে প্ৰজ্বলিত অগ্নিশিখড়া এত উর্ধে উঠতে থাকে, যার কোন তুলনা হয় না ৷ তারপর
    ইব্রাহীম (আ)-কে মিনজানীক নামক নিক্ষেপণযরুন্ত্র বসিয়ে দেয় ৷ এই যন্ত্রটি কুর্দী সম্প্রদায়ের
    হযােন নামক এক ব্যক্তি তৈরি করে ৷ মিনজানীক যন্ত্র সে-ই সর্ব প্রথম আবিষ্কার করে ৷ আল্লাহ
    তাকে মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেন ৷ কিয়ামত পর্যন্ত যে মাটির মধ্যে তলিয়ে যেতে থাকবে ৷
    তারপর তারা ইব্রাহীম (আ)-কে আষ্টেপৃষ্ঠে রেধে টেনে হেচড়ে নিয়ে যেতে থাকে) তখন তিনি
    বলতে থাকেন :

    (আপনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আপনি মহা পবিত্র, বাদশাহীর মালিক কেবল
    আপনিই, আপনার কোন শরীক সেই ৷) ইব্রাহীম (আ)-কে মিনজানীকের পাল্লাদ্বুট্রুাত-প৷ র্বৃাৰুা

    অবস্থায় রেখে আগুনে নিক্ষেপ করা হয় ৷ তখন তিনি বলেন
    (আমার জন্যে আল্লাহ-ই যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক) ৷ যেমন বুখারী শর্বীফে ইবন আব্বাস

    (রা) সুত্রে বর্ণিত হয়েছে যেং ংইবরাহীম (আ) কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন তিনি
    বলেছিলেন :
    যখন তাকে বলা হয়েছিলং
    তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে ৷ সুতরাং তাদেরকে ভয় কর; কিন্তু এটা তাদের
    ঈমানকে আরও দৃঢ় করে দিয়েছিল ৷ আর তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট এবং
    তিনি বড়ই উত্তম কর্ম-বিধায়ক ৷ তারপর তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিল ৷
    কােনরুপ ক্ষতি তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি ৷ (সুরা আল-ইমরান : ১ ৭৩-১ ৭৪ )

    আবু ইয়াল৷ (র ) আবু হুরায়রা (বা ) সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
    ইবরাহীয (আ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন তিনি এই দৃআটি পড়েন : হে আল্লাহ !
    আপনি আকাশ রাজ্যে একা আর এই যমীনে আমি একইি আপনার ইবাদত করছি ৷

    পুর্ববর্তী যুগের কোন কোন আলিম বলেন, জিবরাঈল (আ) শুন্যে থেকে হযরত ইবরাহীয
    (আ)-কে বলেছিলেন : আপনার কোন সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি? উত্তরে ইবরাহীয (আ)
    বলেছিলেন, সাহায্যের প্রয়োজন আছে, তবে আপনার কাছে নয় ৷ ’ ইবন আব্বাস ও সাঈদ
    ইবন জুবড়ায়র (রা) থেকে বর্ণিতং : ঐ সময় বৃষ্টির ফেরেশত৷ (মীকাঈল) বলেছিলেন, আমাকে
    যখনই নির্দেশ দেওয়া হবে তখনই বৃষ্টি প্রেরণ করব ৷ কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ বাণী অধিক দ্রুত
    গতিতে পৌছে যায়

    অর্থাৎ-আমি হুকুম করলাম, হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের উপর শীতল ও শাণ্ডিদায়ক হয়ে
    যাও) ৷ হযরত আ ৷লী ইবন আবী তালিব (রা) র্চু১া এর অর্থ করেছেন, তাকে কষ্ট দিও না ৷
    ইবন আব্বাস (রা) ও আবুল আলিয়া (র) বলেছেন, আল্লাহ য না
    বলতেন তাহলে ঠাও৷ ৷ও শীতলতায় ইবরাহীয (আ) এর কষ্ট হত ৷ কা বে আহবার বলেছেন,
    পৃথিবীর কোন লোকই ঐদিন আগুন থেকে কােনরুপ উপকৃত হতে পারেনি এবং ইবরাহীয
    (আ)-এর বন্ধনের রশি ছাড়া আর কিছুই জ্বলেনি ৷ যাহ্হাক (র) বলেছেন, ঐ সময় হযরত
    জিবরাঈল (আ) ইবরাহীয (আ)-এর সঙ্গে ছিলেন এবং তার শরীর থেকে যায় মুছে দিচ্ছিলেন
    এবং ঘাম নিগতি হওয়া ছাড়া আগুনের আর কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়নি ৷ সুদ্দী (র)
    বলেছেন : ইবরাহীয (আ)-এর সাথে ছায়া দানের ফেরেশতাও ছিলেন ৷ হযরত ইব্রাহীম (আ)
    যখন প্রাচীর রেষ্টনীর মধ্যকার উক্ত গহবরে অবস্থান করছিলেন, তখন তার চতৃষ্পার্শে আগুনের
    লেলিহান শিখ৷ দাউ দাউ করছিল অথচ তিনি ছিলেন শ্যাযল উদ্যানে শান্তি ও নিরাপদে ৷
    লোকজন এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করছিল; কিন্তু না৩ ৷রা ইবরাহীয (আ) এর নিকট যেতে পারছিল,
    , আর না ইবরাহীয (আ) বেরিয়ে তাদের কাছে আসতে পারছিলেন ৷ আবুহুরায়রা (রা) বলেন :
    ইবরাহীয (আ) এর পিতা ৷আপন পুত্রের এ অবস্থা ৷দেখে একটি অতি উত্তম কথা বলেছিল,৩
    ণ্;;১ হে ইবরাহীয! তোমার প্রতিপালক কতই না উত্তম
    প্রতিপালক ৷

    আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়৷ ( ১ম খণ্ডম্পো)গ্যে৪৩-

    ইবন আসাকীর (র) ইকরিমা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন : ইবরাহীম (আ) এর মা পুত্রকে এ
    অবস্থায় দেখে ডেকে বলেছিলেন, হে আমার প্রিয় পুত্র ! আমি তোমার নিকট আসতে চাই ৷ তাই
    আল্লাহর কাছে একটু বল, যাতে তোমার চারপাশের আগুন থেকে আমাকে রক্ষা করেন ৷
    ইবরাহীম (আ) বললেন, হীা, বলছি ৷ তারপর মা পুত্রের নিকট চলে গেলেন ৷ আগুন তাকে
    স্পর্শ কর ল না ৷ কাছে গিয়ে মাতা আপন পুত্রকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করলেন এবং পুনরায়
    অক্ষতভাবে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন ৷ মিনহাল ইবন আমর (রা) বর্ণনা করেছেন :
    হযরত ইবরাহীম (আ) আগুনের মধ্যে চল্লিশ কিৎবা পঞ্চাশ দিন অবস্থান করেন ৷ এই সময়
    সম্পর্কে হযরত ইবরাহীম (আ) বলেন : আগুনের মধ্যে আমি যতদিন ছিলাম ততদিন এমন
    শান্তি ও আরামে কাটিয়েছি যে, তার চেয়ে অধিক আরামের জীবন আমি কখনও উপভোগ
    করিনি ৷ তিনি আরও বলেন : আমার গোটা জীবন যদি ঐরুপ অবস্থায় কাটত , তবে কতই না
    উত্তম হতো এভাবে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সম্প্রদায় শত্রুতাবশত প্রতিশোধ নিতে
    চেয়েছিল; কিন্তু তারা ব্যর্থকাম হল ৷ তারা গৌরব অর্জন করতে চেয়েছিল, কিন্তু লাঞ্ছিত হল ৷
    তারা বিজয়ী হতে চেয়েছিল, কিন্তু পরাজিত হল ৷ আল্লাহর বাণী :

    (তারা চক্রান্ত করে ক্ষতি করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত করে
    দেই ৷) অপর আয়াতে আছে শ্রোর্মু৷ ন্দ্বু মোঃ (আমি তাদেরকে হীনতম করে দেই)
    এরুপে দুনিয়ার জীবনে তারা ক্ষ্হুতি ও লাঞ্চুনাপ্রাপ্ত হয় আর আখিরাতের জীবনে তাড়ের উপর
    আগুন না শীতল হবে, না শাস্তিদায়ক হবে বরং সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
    (জাহান্নড়াম হল তাদের জন্যে নিকৃষ্ট আবাস ও ঠিকানা

    (সুরা ফুরকান : ৬৬)

    ইমাম বুখারী (র) উমৃমু শারীক (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) গিরগিটি
    মারার আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ইবরাহীম (আ)-এর বিরুদ্ধে এটি আগুনে কুক
    দিয়েছিল ৷ ইমাম মুসলিম (র) ইবন জুরায়জ (র) সুত্রে এবং বুখারী, মুসলিম , নাসাঈ ও ইবন
    মাজাহ্ (র) সুফিয়ান ইবন উয়ায়না (রা) সুত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম আহমদ (র)
    আয়েশা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা গিরগিটি হত্যা কর;
    কারণ সে ইবরাহীম (আ)-এর বিরুদ্ধে আগুনে কুক দিয়েছিল তাই হযরত আয়েশা (রা)
    গিরগিটি হত্যা করতেন ৷ ইমাম আহমদ (র) নড়াফি (র)-এর সুত্রে বর্ণনা করেন, জনৈক মহিলা
    হযরত আয়েশা (রা)-এর গৃহে প্রবেশ্ করে একটি বার্তা দেখে জিজ্ঞেস করল : এ বর্শা দ্বারা
    আপনি কি করেন? উত্তরে আয়েশা (রা) বললেন, এর দ্বারা আমি গিরগিটি নিধন করি ৷ তারপর
    তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ইবরাহীম (আ) কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়
    তখন সমস্ত জীব-ড্ড ও কীট-পতঙ্গ আগুন নিভাতে চেষ্টা করেছিল, কেবল এ গিরগিটি তা
    করেনি; বরং সে উল্টে৷ আগুনে কুক দিয়েছিল ৷ উপরোক্ত হাদীস দু’টি ইমাম আহমদ (র) ভিন্ন
    আর কেউ বর্ণনা করেননি ৷

    ইমাম আহমদফাকিহ্ ইবনুল মুপীরার মুক্ত দাসী সুমামা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
    বলেন, আমি একদা আয়েশা (রা)-এর গৃহে যাই ৷ তখন সেখানে একটা বর্শা রাখা আছে
    দেখতে পাই ৷ জিজ্ঞেস করলাম, হে উম্মুল মুমিনীন! এ বর্শা দিয়ে আপনি কী করেন ? তিনি
    বললেন, এ দিয়ে আমি এসব গিরগিটি বধ করি ৷ কারণ রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে বলেছেন :
    ইবরাহীম (আ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন যমীনের উপর এমন কোন জীব ছিল
    না যারা আগুন নেভাতে চেষ্টা করেনি, কেবল এই গিরগিটি ব্যতীত ৷ সে ইবরাহীম (আ)এর
    উপরে আগুনে কুক দেয় ৷ তাই রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে এগুলো হত্যা করতে আদেশ
    করেছেন ৷ ইবন মাজাহ্ (ব) জারীর ইবন হাযিম (র) সুত্রে এ হড়াদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷

    হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সাথে খােদায়ী দাবিদার
    এক দুর্বল ৰান্দার বিতর্ক প্রসঙ্গ
    এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী :

    তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখনি, যে ইবরাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত
    হয়েছিল, যেহেতু আল্লাহ তাকে কর্তৃতু দিয়েছিলেন ৷ যখন ইবরাহীম বলল, তিনি আমার
    প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান ৷ সে বলল, আমিও তাে জীবন দান কবি ও
    মৃত্যু ঘটাই ৷ ইবরাহীম বলল, আল্লাহ সুর্যকে পুর্ব দিক হতে উদয় করান, তুমি তাকে পশ্চিম
    দিক হতে উদয় করাও তো! অতঃপর যে কুফরী করেছিল, যে হতবুদ্ধি হয়ে গেল ৷ আল্লাহ
    জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না ৷ (সুরা বাকারা : ২৫৮)

    এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সাথে সেই সীমালংঘনকারী
    প্রতাপশালী রাজার বিতর্বেল্ম কথা উল্লেখ করছেন, যে নিজে প্রতিপালক হওয়ার দাবি করেছিল ৷
    হযরত ইবরাহীম খলীল (আ) তার উপস্থাপিত যুক্তির অসারতা প্রমাণ করেন, তার মুর্থতা ও
    স্বল্পবুদ্ধিতা প্রকাশ করে দেন এবং নিজের দলীল দ্বারা তাকে নিরু ত্তর করেন ৷

    তাফসীরবিদ, ঐতিহাসিক ও বংশবিদদের মতে, এ রাজাটি ছিল ব্যাবিলনের রাজা ৷ মুজাহিদ
    (র) তার নাম নমরুদ ইবন কিনআন ইবন কুশ ইবন সামং ইবন নুহ বলে উল্লেখ করেছেন ৷
    অন্যরা তার বংশলতিকা বলেছেন এভাবে নমরুদ ইবন ফালিহ্ ইবন আবির ইবন সালিহ
    ইবন আরফাখশাদ ইবন সাম ইবন নুহ ৷ মুজাহিদ (র) প্রমুখ বলেছেন, যেসব রাজস্ব-বাদশাহ
    দুনিয়া জোড়া রাজত্ব করেছে, এ ছিল তাদের অন্যতম ৷ ঐতিহাসিকদের মতে, এরুপ বাদশাহর
    ৎখ্যা ছিল চার ৷ দুজন মু’মিন ও দু’জন কাফির ৷ মু’মিন দু’জন হলেন (১) যুলকারনায়ন ও (২)
    সুলায়মান (আ) আর কাফির দু’জন হল (১) নমরুদ ও (২) বুখৃত নসর ৷ ঐতিহাসিকদের মতে,

    নমরুদ চারশ বছরকালব্যাপী রাজতু করেছিল ৷ ফলে সে জুলুম-অত্যাচাব, দান্তিকত৷ ও
    সীমালংঘনের চরমে গিয়ে পৌছে এবং পার্থিব র্জীবনবেইি সে চরম লক্ষ্য বলে বেছে নেয় ৷
    ইব্রাহীম খলীল (আ) যখন তাকে এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের জন্যে আহ্বান
    জানালেন, তখন তার মুর্থতা, পথ ভ্রষ্টত৷ ও উচ্চ জািাষ তাকে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করতে
    প্ৰরোচিত করে ৷ এ ব্যাপারে সে ইবরাহীম (আ) এর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং নিজেই
    প্ৰতিপালক হওয়ার দাবি করে ৷ হযরত ইবরাহীম (আ) যখন ব্ললেন৪ আমার প্রতিপা ৷লক তো
    তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান ৷ নমরুদ বলল, আমিও তাে জীবন দান করি ও
    মৃত্যু ঘটইি ৷

    কাতাদা, সুদ্দী ও মুহাম্মদ ইবন ইসহ ক (র) লিখেছেন, নমরুদ ঐ সময় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দু’
    ব্যক্তিকে ডেকে আসে ৷ অতঃপর একজনকে হত্য৷ করে ও অপরজনকে ক্ষমা করে দেয় ৷ এর
    দ্বারা সে বোঝাতে (চয়েছে যে, সে একজনকে জীবন দান করল এবং অন্যজনের মৃত্যু ঘটান ৷
    এ কা ৷জটি ইব্রাহীম (আ) এর দলীলের কোন মুকাবিলাই ছিল না ৷ বরং৩ তা বিতর্কের সাথে
    সামঞ্জস্যহীন একটা উদ্ভট দুষ্কর্ম ছাড়া কিছুই নয় ৷ কেননা, হযরত ইবরাহীম খলীল (আ)
    বিদ্যমান সৃষ্ট-বন্তুর দ্বারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করছেন ৷ তিনি দেখাচ্ছেন যে, যেসব প্রাণী
    আমরা দেখতে পাই, তা এক সময় জন্মলাভ করেছে ৷ আবার কিছু দিন পর সেগুলো মৃত্যুবরণ
    করছে ৷ এ থেকেই বোঝা যায় যে, এই কাজের একজন কর্তা আছেন, যিনি প্রাণীকে সৃষ্টি
    করছেন ও মৃত্যু দিচ্ছেন ৷ কারণ কর্তা ছাড়া আপনা আপনি কোন কিছু হওয়া অসম্ভব ৷ সুতরাং
    বিশ্বজগতে প্রাণী অপ্রাণী যা কিছু আছে৩ তা একবার অস্তিত্বে আসা ও আর একবার অস্তিতৃ লােপ
    পাওয়া, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা, নক্ষত্র, বায়ু, যেঘমালা ও বৃষ্টি পরিচালনা করা ইত্যাদি কাজের
    জন্যে অবশ্যই একজন কর্তা আছেন ৷ সে জন্যে ইব্রাহীম (আ) বললেনং :

    ঞাদ্বু পুশু র্চুব্লুএাশু ’ পু(আমার প্রতিপালক তিনিই, যিনি জীবন দান করেন ও
    মৃত্যু ঘটান ৷) অতএব, এ মুর্থ বাদচুা৷হর এই যে কথা আমিও জীবন দান কবি ও মৃত্যু ঘটইি
    এর দ্বারা যদি এটা বোঝান হয় যে, সে ই দৃশ্যমান জগতের কর্তা, তবে এটা বৃথা দম্ভও
    বাস্তবকে অস্বীকার করা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ আর এ কথার দ্বারা যদি সেটাই বোঝান হয়ে
    থাকে, যার উল্লেখ মুজাহিদ, সুদ্দী ও ইবন ইসহাক (র) করেছেন, তাহলে এ কথার কোন
    মুল্যই নেই ৷ কেননা ইব্রাহীম (আ)-এর পেশকৃত দলীলের তাতে পতন হয় না

    বাদশাহ নমরুদের এই যুক্তির অসারত ৷ উপস্থিত অনেকের কাছে অস্পষ্ট হওয়ায় এবং
    অনুপন্থিতদের নিকট অস্পষ্ট হওয়ার প্রবল আশংকা থাকায় হযরত ইবরাহীম (আ) আর একটি
    যুক্তি পেশ করেন, যার দ্বারা সৃষ্টিকর্তা র অস্তিত্ব ও নমরুদের মিথ্যা দাবি স্পষ্টভ৷ ৷বে প্রমাণিত
    হয়

    ইবরাহীম বলল, আল্লাহ ওে ৷ সুর্যকে পুর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি একে পশ্চিম দিক
    থেকে উদিত করাও দেখি ৷

    অর্থাৎ এই সুর্য আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে প্র৩ তাহ পুর্ব দিক থেকে উদিত হয় এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে
    পবিচালনা করেন ৷ এই আল্লাহ এক, অন্য কোন ইলাহ্ নেই ৷ তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকতা৷

    এখন তোমার জীবন দান ও মৃত্যু ঘটানোর দা ৷বি যদি যথার্থ হয়, তবে এ সুর্যকেতু মি পশ্চিম
    দিক থেকে উদিত কর ৷ কেননা, যিনি জীবন দান ও মৃত্যু ঘটাতে পারেন, তিনি যা ইচ্ছা তাই
    করতে পারেন ৷ তার ইচ্ছাকে কেউ বাধা দিতে পারে না, তাকে কেউ অক্ষম করতে পারে না;
    বরং সব কিছুর উপরই তার কর্তৃত্ব চলে, সব কিছুই তার নির্দেশ মানতে বাধ্য ৷ অতএব নিজের
    দাবি অনুযায়ী তুমি যদি প্রতিপালক হয়ে থাক, তাহলে এটা করে দেখাও ৷ আর যদি তা করতে
    না পার তবে তোমার দাবি মিথ্যা ৷ কিন্তু তৃমিও জান এবং অন্যান্য প্রত্যেকেই জানে যে, এ কাজ
    করতে তুমি সক্ষম নও ৷ এতে৷ দুরের কথা, একটা সামান্য মশা সৃষ্টি করাও তোমার পক্ষে সম্ভব
    নয় ৷ এ যুক্তি প্রদর্শনের পরে নমরুদের ভ্রষ্টতড়া, মুর্থতা, মিথ্যাচার ও মুর্থ সমাজের কাছে তার
    দাম্ভিকত৷ স্পষ্ট হয়ে যায় ৷ সে কোন উত্তর দিতে সক্ষম হল না ৷,নীরব নিছুপ হয়ে রয়ে গেল ৷

    অড়াল্লড়াহ্ বকৃলনং :
    কাফির লোকটি হতভম্ব হয়ে গেল ৷ আর জা ৷লিম সম্প্রদায়কে আল্লাহ সুপথ দেখান না ৷
    (সুরা বাকারা ২৫৮)

    সুদ্দী (র) লিখেছেন, নমরুদ ও ইবরাহীম (আ) এর মধ্যে এ বিত তর্ক হচ্ছেত তিনি অগ্নি থেকে
    বের হয়ে আসার দিনের ঘটনা এবৎ সেখানে লোকের কোন জমায়েত ছিল৷ না ৷ কেবল দু জনের
    মধ্যেই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় ৷ আবদুর রাজ্জাক যায়দ ইবন আসলাম (বা) সুত্রে বর্ণনা করেছেন :
    নমরুদের নিকট সঞ্চিত খাদ্য ভাত্তার ছিল ৷ লোকজন দলে দলে তার নিকট খাদ্য আনার জন্যে
    যেত ৷ হযরত ইবরাহীম (আ)-ও এরুপ এক দলের সাথে খাদ্য আনতে যান ৷ সেখানেই এ
    বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় ৷ ফলে নমরুদ ইবরাহীম (আ)কে খাদ্য না দিয়ে ফিরিয়ে দেয় ৷ ইবরাহীম
    (আ) শুন্যপাত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন ৷ বাড়ির কাছে এসে তিনি দু’টি পাত্রে মাটি ভর্তি করে
    আনেন এবং মনে মনে ভাবেন বাড়ি পৌছে সাংসারিক কাজে জড়িয়ে পড়বেন ৷ বাড়ি পৌছে
    বাহন রেখে তিনি ঘরে প্রবেশ করে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়েন ৷ কিছুক্ষণের
    মধ্যেই তিনি নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন ৷ ইবরাহীম (আ)-এর ত্রী সারাহ পাত্র দু’টির কাছে গিয়ে
    উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য দ্বারা তা ভর্তি দেখতে পান এবংত৷ দ্বারা খাদ্য তৈরি করেন ৷ ঘুম থেকে জেগে
    হযরত ইবরাহীম (আ) রান্না করা খাদ্য দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এ তোমরা কােথেকে পেলে?
    সারাহ জানালেন, আপনি যা এনেছেনত ত৷ থেবেইি তৈরি করা হয়েছে ৷ এ সময় ইবরাহীম (আ)
    আচ করতে পারেন যে, আল্লাহ তাআলা বিশেষ খাদ্য হিসেবে তাদেরকে এ রিয্ক দান
    করেছেন ৷
    যায়দ ইবন আসলাম (বা) বর্ণনা করেছেন যে, এই অহৎকারী বাদশাহর নিকট আল্লাহ
    একজন ফেবেশত৷ প্রেরণ করেন ৷ ফেরেশত৷ তাকে আল্লাহর উপর ঈমান আনতে বললে সে
    অস্বীকার করে ৷ পুনরায় দ্বিতীয় ও তভীয়বার আহ্বান জানালে প্রত্যেক বারেই সে অস্বীকৃতি
    জানায় এবৎ বলে দেয়, তুমি তোমার বাহিনী একত্র কর, আর আমি আমার বাহিনী একত্র করি ৷
    পরের দিন সুর্যোদয়ের সময় নমরুদত তার সৈন্য সামস্তের সমাবেশ ঘটালাে ৷ অপর দিকে আল্লাহ
    অগণিত মশা প্রেরণ করলেন ৷ মশার সং থ্যা এত বেশি ছিল যে, তাতে তারা সুর্যের মুখটি পর্যন্ত
    দেখতে সক্ষম হয়নি ৷ আল্লাহ মশা বাহিনীকে তাদের উপর লেলিয়ে দেন ৷ ফলে মশা তাদের
    রক্ত-মাৎস খেয়ে সাদা হাডিদ্র বের করে দেয় ৷ একটি মশা নমরুদের নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করে ৷

    চারশ বছর পর্যন্ত এই মশা তার নাকের ছিদ্রে অবন্থ ন করে দৎশন করতে থাকে ৷ এই দীর্ঘ
    সময়ে সে হাতৃড়ি দ্বারা নিজের মাথা ঠুকড়াতে থাকে ৷ অবশেষে এভাবেই আল্লাহ তাকে ধ্বংস
    করেন ৷

    হযরত ইব্রাহীম (আ) এর সিরিয়া ও মিসরে হিজরত
    এবং অবশেষে ফিলিস্তিনে স্থায়ী বসতি স্থাপন
    এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীং

    লুত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল ৷ ইব্রাহীম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশে

    দেশ ত্যাগ করছি ৷ তিনি তো পরড়াক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় ৷ আমি ইবরাহীমকে দান করলাম ইসহাক

    ও ইয়াকুব এবং বৎশধরদের জান্য স্থির করলাম নবুওত ও কিতাব এবং আমি তাকে দুনিয়ার

    পুরস্কৃত করেছিলাম ৷ আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎকর্য পরায়ণদের অন্যতম হবে (সুরা
    আনকাবুত : ২৬-২৭)

    আল্লাহ্ তাআলা বলেন ং
    এবং আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সেই দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি কল্যাণ
    ব্লেখেছি বিশ্ববাসীর জন্যে এবং আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্ররুপে
    ইয়াকুব, আর প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ; এবং তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা
    আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত, তাদেরকে ওহী প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম
    করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে; তারা:আমারই ইবড়াদত করত ৷
    (সুরা আন্বিয়ড়া০ ং ৭১ ৭৩)

    হযরত ইব্রাহীম (আ) নিজের দেশ ও জাতিকে ত্যাগ করে আল্লাহর রাহে হিজরত করেন ৷
    তার ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা, কোন সন্তান হত না এবং তার কে ন পুত্র সন্তান ছিল না বরং ভ্রাতুম্পুএ
    লুত ইবন হারান ইবন আযর তার সংগে ছিল ৷ এমতাবস্থায় আল্লাহ র্তাকে একাধিক পুত্র সন্তান
    দান করেন এবং তাদের সকলেই পুণ্যবান ছিলেন ৷ ইব্রাহীম (আ)-এর বৎশে নবুওত এবং
    কিতাব প্রেরণের ধারা চালু রাখেন ৷ সুতরাং ইব্রাহীম (আ)-এর পরে যিনিই নবী হিসেবে
    প্রেরিত হয়েছেন তার বংশ থেবেইি হয়েছেন এবং তার পরে যে কিতাবই আসমান থেকে কোন

    নবীর উপর অবতীর্ণ হয়েছে, তা র্তার বং শধরদের উপরই অবতীর্ণ হয়েছে ৷ এ সব পুরস্কার
    আল্লাহ তাকে দিয়েছেন তার ত্যাগ ও কুরবানী এবং আল্লাহর জন্যে দ্বেশ, পরিজন ও
    আত্মীয়-স্বজনকে পরিত্যাগ করার বিনিময়ে ৷ এমন দেশের উদ্দেশে তিনি হিজরত করলেন
    যেখানে আল্লাহর ইবাদত এবং বান্দাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবানের সুযোগ ছিল ৷ র্তার সেই
    হিজরতের দেশটি হল শাম বা সিরিয়া ৷ এ দেশ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন০ ং

    — ঞ্জা৷
    সে দেশের দিকে যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখে দিয়েছি’ ৷ উবা ই ইবন কা ব

    আল আলিয়া, কাতাদা প্রমুখ এই মত পোষণ করেন ৷ কিভু আওফীর সুত্রে ইবন আব্বাস (বা)

    সুত্রে বর্ণিত ৷ উপরোক্ত আয়াতে (;,, ,াএে গ্র;গ্ ৷ৰুইর্চুাপ্লু ট্রুপু ৷ ,ণ্ , ১৷ ৷ ণ্ডা৷ ) যে
    দেশের কথা বলা হয়েছে, যে দেশ হল মক্ক৷ এবং সমর্থনে ৷র্তিনিগু নিরুম্নর অয়েতে উৰুল্লখ করেন :

    নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে স্থাপিত ৩হয়েছে সেটাই হচ্ছে এ ঘর যা মক্কায়
    অবস্থিত এবং সারা জাহানের জন্যে হিদায়াত ও বরকতময় ৷ (সুরা আল-ইমরান : ৯৬)

    বার আহবার (বা) এর মতে , সে দেশটি ছিল হড়ারান ৷ ইতিপুর্বে আমরা আহ্লি কিতাবদের
    বরাত দিয়ে বলে এসেছি যে, হযরত ইবরাহীম (আ), তার ভ্রাতৃম্পুত্র লুত (আ), ডাই নাহ্রর ত্রী
    সারাহ্ ও ভাইয়ের ত্রী মালিকাসহ বাবিল থেকে বওয়ানা হন এবং হারানে পৌছে সেখানে
    বসবাস শুরু করেন ৷ সেখানে ইবরাহীম (আ) এর পিতা তারাখ এর মৃত্যু হয় ৷

    সুদ্দী (ব) লিখেছেন, ইবরাহীম (আ) ও লুত (আ) সিরিয়ার উদ্দেশে বওয়ানা হন ৷ পথে
    সারাহ্র সাথে সাক্ষাৎ হয় ৷ সারাহ্ ছিলেন হারানের রাজকুমারী ৷ তিনি র্তার সম্প্রদায়ের ধর্মকে
    কটাক্ষ করতে ন ৷ ইবরাহীম (আ)৩ তাকে এই শর্তে বিবাহ করেন যে, তাকে ত্যাগ করবেন না ৷
    ইবন জ বীর (র) এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন কিন্তু ঐতিহাসিকদের আর কেউ এ ব্যাপারে বর্ণনা
    করেন নি ৷ প্রসিদ্ধ মতে, সারাহ্ হযরত ইবরাহীম (আ) এর চাচা হারান এর কন্যা ৷ যার নামে
    হারান রাজ্যের পরিচিতি ৷ সুহায়লী (র) কুতায়বী ও নাফ্ফাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে,
    সারাহ্ হযরত ইবরাহীম (আ)-এব সহোদর হারানের কন্যা লুত-এর ভগ্নি ৷ এ মত সম্পুর্ণ
    ভিত্তিহীন ও অমুলক ৷ এ মত পােষণকারীরা দাবি করেছেন যে, ঐ সময় ভাতিজী বিবাহ করা
    ভৈবধ ছিল ৷ কিন্তু এ দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ নেই ৷ যদি ধরেও নেয়া হয় যে, কোন এক সময়ে
    ভাতিজী বিবাহ করা বৈধ ছিল ৷ যেমন ইহুদী পণ্ডিতরা বলে থাকেন তবুও এটা সম্ভব নয় ৷
    কেননা, নিরুপায় অবস্থায় কোন কিছু বৈধ হলেও৩ তার সুযোগ গ্রহণ নবী রাসুলগণের উন্নত
    চরিত্রের মর্যাদার পক্ষে শোভনীয় নয় ৷ আ ৷ল্লাহই সর্বজ্ঞ ৷

    প্রসিদ্ধ মত হল, হযরত ইবরাহীম (আ) যখন বাবিল থেকে হিজরত করেন, তখন সারাহ্কে
    সাথে নিয়েই বের হয়েছিলেন যেমন পুর্বে বর্ণিত হয়েছে ৷ আল্লাহ্ই সম্যক জ্ঞাত ৷ আহ্লি
    কিতাবদের বর্ণনা মতে, হযরত ইবরাহীম (আ) যখন সিরিয়ায় যান তখন আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে
    জানান, তোমার পরে এই দেশটি আমি তোমার উত্তরসুরিদের আয়ত্তে দেব ৷ এই অনুপ্রহের
    কৃতজ্ঞতা প্রকাশস্বরুপ তিনি তথায় কুরবড়ানীর একটি কেন্দ্র নির্মাণ করেন এবং বায়তৃল

    মুকাদ্দাসের পুর্ব প্রান্তে তিনি নিজের থাকার জন্যে একটি গম্বুজ বিশিষ্ট প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করেন ৷
    অতংপর তিনি জীবিকার অন্বেষণে বের হন ৷ এ সময় বায়তু ল মুকাদ্দাস অঞ্চলে ছিল প্রচণ্ড
    আক ল ও দুর্তিক্ষ, তাই সবাইকে নিয়ে তিনি মিসরে চলে যান ৷ এই সাথে আহ্লি কিতাবরা
    সারাহ্ এবং তথ্াকার রাজার ঘটনা, সারাহ্কে নিজের বোন বলে পরিচয় দিতে শিখিয়ে দেয়া
    রাজা কর্তৃক সারাহ্ (ব)-এর খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান; অতঃপর সেখান থেকে
    তাদেরকে বহিষ্কার করা এবং বরকতময় বায়তৃল মুকাদ্দাস অঞ্চলে বহু জীব্-জন্তু, দাস-দাসী ও
    ধন-সম্পদসহ প্রত্যাগমন করার কথা উল্লেখ করেছেন ৷

    ইমাম বুথারী (র) আবুহুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন, হযরত ইবরাহীম (আ)৩ তিনবার
    অসত্য উক্তি করেছিলেন ৷ এর দুটি আল্লাহ সৎ ক্রাম্ভ (১) তিনি বলেছিলেন : এের্দু১া

    বড় মুর্তিটিই এ কর্মটি করেছে ৷ এবং তৃতীয় উক্তিটি করেছিলেন নিজের ব্যাপারে ৷ ঘটনা এই,

    হযরত ইব্রাহীম (আ) শ্রী সারাহ্সহ কোন এক জালিম বাদশাহৱ এলাকা অতিক্রম করছিলেন ৷
    বাদশাহৱ নিকট সংবাদ গেল যে, এই এলাকায় একজন লোক আছে যার সাথে রয়েছে এক
    পরমা সুন্দরী নারী ৷ জালিম বাদশাহ্ হযরত ইব্রাহীম (আ)-এব নিকট লোক পাঠান ৷ আগন্তুক
    এসে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে সারাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, ইনি (ক? উত্তরে তিনি বললেন
    ৪ আমার বোন ৷ এরপর হযরত ইব্রাহীম (আ) সারাহ্র কাছে এসে বলেন, দেখ সারাহ্! এই
    ধরাপৃষ্ঠে আমি এবং তুমি ব্যতীত আর কোন মুমিন নেই ৷ এই আগন্তুক তোমার সাথে আমার
    সম্পবেরি কথা জানতে ঢেয়েছে ৷ আমি তাকে এই কথা ৷বলে দিয়েছি যে, তুমি আমার বোন ৷
    এখন আমাকে তুমি মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করো না ৷ এরপর ঐ জালিম বাদশাহ সারাহ্কে নিয়ে

    , যাওয়ার জন্যে লোক পাঠান ৷

    সারাহ্ বাদশাহৱ দরবারে নীত হলে , বাদশাহ তীর প্রতি হাত বাড়ায় ৷ সংগে সংগে সে
    থােদার গযবে পতিত হয় ৷ বাদশাহ বলল, সারাহ্ আমার জন্যে দুআ কর, আমি তোমার কোন
    ক্ষতি সাধন করব না ৷ সারাহ্ দুআ করলেন ৷ ফলে বাদশাহ ছাড়া পড়ায় ৷ কিত্তু দ্বিতীয়বার সে

    সারাহ্র প্রতি হাত বাড়ায় ৷ এবারও সে পুর্বের ন্যায় কিৎবা তদপেক্ষা কঠিনভাবে তার প্রতি

    শাস্তি নেমে আসে ৷ পুনর্বার বাদশাহ বলল, আমার জন্যে দৃআ কর ৷ আমি তোমার কোন অনিষ্ট
    করব না ৷ সারাহ্ দৃআ করলে সে পুনরায় রক্ষা পায় ৷ তখন বাদশাহ্ তার একান্ত সচিবকে
    ডেকে বলল, তুমি তো আমার কাছে কোন মানবী আননি, এনেছ এক ড়ামানবী ৷ পরে বাদশাহ

    সারাহ্র খিদমতের জ্যন্য হাজেরাকে দান করল ৷ সারাহ্ ইব্রাহীম (আ) এর কাছে ফিরে এসে

    তাকে সালাত আদায়রত দেখতে পান ৷ হযরত ইব্রাহীম (আ) সা ৷লাতে থেকেই হাং৩ র ইশারা
    দ্বারা ঘটনা জন নতে চাইলেন ৷ সারা বললেন, আল্লাহ অনড়াচ৷ ৷রী কা ৷ফিরের চক্রাস্ত নস্যাত করে
    দিয়েছেন এবং ঐ জালিম আমার খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দিয়েছে ৷

    আবু হুরায়রা (বা) বলেন, হে বেদুঈন আরব সত্তানগণ! এই হাজেরাই তোমাদের আদি
    মাতা ৷ ইমাম বুখারী (র) এই একক সুত্রে হাদীসটি মওকুফ রুপে বর্ণনা করেছেন ৷ হাফিজ আবু
    বকর আল বাবৃযার (র) আবু হুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্পাহ (সা) বলেছেন :
    হযরত ইব্রাহীম (আ) মাত্র তিনবার ব্যতীত কখনও অসত্য উক্তি করেন নি ৷ ঐ তিনটি উক্তিই

    ছিল আল্লাহ সংক্রান্ত ৷ (১) নিজেকে ছু ট্রুদ্বুন্ট্রুন্ন্ “; (আমি পীড়িত বলা ,) (২)ধ্াগ্প্
    (এদের এ বড়টাই এ কাজ করেছে বর্লাষ্ ,) (৩) হযরত ইবরাহীম কোন এক জালিম
    রাজার এলাকা দিয়ে সফর করার সময় কো ন এক মঞ্জিলে অবতরণ করেন ৷ জালিম রাজা ৩ থায

    আগমন করে ৷ তাকে জানানো হয় যে, এখানে একজন লোক এসেছে যার সাথে এক পরমা
    সুন্দরী রমণী আছে ৷ রাজা তখনই ইবরাহীম (আ)-এর নিকট লোক প্রেরণ করে ৷ সে এসে
    মহিলাটি সম্পর্কে ইবরাহীম (আ)-কে জিজ্ঞেস করল ৷ তিনি বললেন, যে আমার বোন ’ ৷ এরপর
    ইবরাহীম (আ) তার ত্রীর কাছে আসেন এবং বলেন, একটি লোক তোমার সম্পর্কে আমার কাছে
    জিজ্ঞেস করেছে ৷ আমি তোমাকে আমার কোন বলে পরিচয় দিয়েছি ৷ এখন আমি আর তুমি
    ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মুসলিম নেই ৷ এ হিস্যেব তুমি আমার বোনও বটে ৷ সুতরাং রাজার
    কাছে আমাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করো না যেন ৷ রাজা তার দিকে হাত বাড়াতেই আল্লাহর
    পক্ষ থেকে এক আমার এসে তাকে পাকড়াও করে ৷ রাজা বলল, তুমি আল্লাহ্র কাছে দৃআ
    কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না ৷ তিনি দৃআ করেন ৷ ফলে সে যুক্ত হয় ৷ কিন্তু পরক্ষাণ
    আবার তাকে ধরার জন্যে হাত বাড়ার ৷ এবারও আল্লাহর পক্ষ থেকে পুর্বের ন্যায় কিৎরা
    তদপেক্ষা শক্তডারে পাকড়াও হয় ৷ রাজা পুনরায় বলল, আমার জন্যে আল্লাহর নিকট দৃআ
    কর, তোমার কোন ক্ষতি আমি করব না ৷ সুতরাং দৃআ করায় যে মুক্তি পেয়ে যায় ৷ এরুপ
    তিনবার ঘটে ৷ অতঃপর রাজা তার সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ অনুচরকে ডেকে বললাে, তুমি তাে কোন
    মানবী আননি; এনেছ এক মানবী ৷ একে বের করে দাও এবং হড়াজেরাকেও সাথে দিয়ে দাও ৷
    বিবি সারাহ্ ফিরে আসলেন ৷ ইবরাহীম (আ) তখন সালাতে রত ছিলেন ৷ সারাহ্র শব্দ পেয়েই
    তিনি তার দিকে ফিরে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনা কি? সারড়াহ্ বললেন, আল্লাহ
    জালিমের চক্রাম্ভ ব্যর্থ করে দিয়েছেন ৷ আর সে আমার খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান
    করেছে ৷ ’ বায্যার (র) বলেছেন, মুহম্মদ (র) এর সুত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে হিশাম ব্যতীত
    কেউ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বলে আমার জন ৷নেই ৷ অন্যরা একে মওকুর্ফ’ হিসেবে বর্ণনা
    করেছেন ৷

    ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেছেন : তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা)
    বলেছেন, হযরত ইবরাহীম (আ)৩ তিনবার ছাড়া কখনও মিথ্যা কথা বলেননি ৷ ( ১ ) কাফিররা
    যখন তাদের মেলায় যাওয়ার জন্যে আহবান জানায়, তখন তিনি বলেছিলেন, ণ্র্বৃদ্বু;র্চু é; ৷
    (আমি পীড়িত) (২) তিনি মুর্তি ভেঙ্গে বলেছিলেন,া!১ণ্ ১ঝু^হ্র র্দুপুহুপুণ্ড্র ট্রু৷ (এদের মর্দুধ্য
    এই বড়টিই এ কাজ করেছে), (৩) নিজের শ্ৰী স ৷রাহ্র পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেনং
    র্শেং ৷ ৷ষ্৷ (এ আমার কোন) ৷ বর্ণনাক৷ রী বলেনং : হযরত ইবরাহীম (আ) একবার কোন এক
    জনপদে প্রবেশ করেন ৷ সেখানে ছিল এক জ লিম রাজা ৷ তাকে জানানো হল যে, এ রড়াত্রে
    ইবরাহীম এক পরমা সুন্দরী নারীসহ এখানে এসেছে ৷ রাজা তার কাছে দুত পাঠাল ৷ দুত হযরত
    ইবরাহীম (আ) কে জিজ্ঞেস করল ৷ আপনার সাথী এ রমণীটি কে ? ইবরাহীম (আ) বললেন,
    আমার বোন ৷ দুত বলল, একে রাজার কাছে পাঠিয়ে দিন ৷ হযরত ইবরাহীম (আ) পাঠিয়ে
    দিলেন এবং বলে দিলেন যে, আমার উক্তিকে তুমি মিথ্যা প্রতিপন্ন করে৷ না যেন ৷ কারণ

    রাজাকে আমি জ৷ ৷নিয়েছি যে, তুমি আমার বোন হও ৷ মনে কর যে, এ পৃথিবীর বুকে আমি এবং
    আল বিদায়৷ ওয়ান নিহড়ায়া ( ১ম খগ্যে)
    তুমি ছাড়া আর কোন মু’মিন নেই ৷ সারাহ্ রাজার দরবারে পৌছলে সে সারাহ্র দিকে অগ্রসর
    হল ৷ সারাহ্ তখন অযু করে সালাত আদায় করতে উদ্যত হলেন এবং নিম্নের দুআটি পড়লেন-
    নৌ ১৷ ৷ ৷

    অর্থাৎ হে আল্লাহ ! আপনি অবশ্যই অবগত আছেন যে, আমি আপনার উপর ও আপনার
    রাসুলের উপর ঈমান এসেছি ৷ আমার স্বামী ব্যতীত অন্য সবার থেকে আমার লজ্জাস্থানকে
    হিফাজত করেছি ৷ অতএব, কোন কাফিরকে আমার উপর হস্তক্ষেপ করতে দেবেন না ৷ ’

    জালিম রাজাকে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এমনভাবে টুটি চেপে ধরা হলো যে, পায়ের
    সাথে পা ঘর্ষণ করে ছট্ফাট্ করতে লাগলো ৷ আবুয যিনাদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সুত্রে বলেন,
    সারাহ্ তখন পুনরায় দুআ করেন, হে আল্লাহ! লোকটি এভাবে মারা গেলে লোকে বলবে
    আমিই তাকে হত্যা করেছি ৷ অতএব, রাজা শাস্তি থেকে মুক্তিলাভ করল ৷ কিন্তু পুনরায় রাজা
    তার দিকে, অগ্রসর হলো ৷ সারাহ্ও পুর্বের ন্যায় অয়ু ও সালাত শেষে ঐ দুআটি পড়লেন ৷ রাজা
    পুনরায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ছট্ফট্ করতে থাকে ৷ এ দেশে সারাহ্ বললেন, “হে আল্লাহ ! এ যদি মারা
    যায় তবে লোকে বলবে ঐ মহিলাটিই তাকে হত্যা করেছে ৷” অতঃপর যে মুক্তি লাভ করে ৷ এ
    ভাবে তৃতীয় বা চতুর্থ বারের পর জালিম রাজা তার লোকদেরকে ডেকে বলল, তোমরা আমার
    কাছে তো একটা দানবী পাঠিয়েছ ৷ একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও আর হাজেরাকেও এর
    সাথে দিয়ে দাও ৷ বিবি সারাহ্ ফিরে এসে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে জানালেন, আপনি কি
    জানতে পেরেছেন, আল্লাহ কাফিরদের চক্রাভ ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং ঐ জালিম একজন
    দাসীকেও দান করেছে ? কেবল ইমাম আহমদ (র) এই সুত্রে হাদীসটি বংনাি করেছেন, অবশ্য
    সহীহ সনদের শর্ত অনুযায়ী ৷ ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সুত্রে মারফুভাবে হাদীসটি

    ৎাকক্ষিপ্ত কাংর বংনাি ৷করেছেন ৷ ইবন আবী হাতিম আবু সাঈদ (রা ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
    রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন৪ হযরত ইবরাহীম (আ) যে তিনটি কথা বলেছিলেন তার প্রতিটিই
    আল্লাহ্র দীনের গ্রন্থি উম্মোচন করে ৷ তার প্রথম কথাং : ছুট্রু ব্লু০শু^ ক্লে৷ ৷ (আমি পীডি৩ ) দ্বিভীয়
    কথা০ ৷১১ণ্ ^ ’ং দ্বুট্রু০র্দু fi£’§ র্চুর্চু (বরং এদের বড়জনই এ কাজ করেছে), তৃতীয় কথা০ : যখন
    রাজা তার ত্রীকে কামনা করেছিল তখন বলেছিলেন, ঞ্জ;;৷ ১ (সে আমার বোন) অর্থাং
    আল্লাহর দীনের সম্পর্কে বোন ৷ হযরত ইবরাহীম (আ) ত ৷র ত্রীকে বলেছিলেন-“ এ জগতে
    আমি এবং তুমি ব্যতীত আর কো ন মু মিন নেই ৷” তার এ কথা ৷র অর্থ হল, আমরা ব্যতীত আর
    কোন মু’মিন দম্পতি নেই ৷ এ ব্যাখ্যা এ জন্যে প্রয়োজন, যেহেতু হযরত লুত (আ) ও তখন
    তাদের সফরসংগী ছিলেন আর তিনি ছিলেন একজন নবী ৷ বিবি সারাহ্ যখন জালিম বাদশাহর
    নিকট যাওয়ার জন্যে রওয়ানা হন, তখন থেকেই হযরত ইবরাহীম (আ) সালাত আদায়ে রত
    থাকেন এবং দু আ করতে থাকেন, যেন আল্লাহ তার ত্রীকে হিফা ৷জত করেন এবং জালিমের
    কুমতলব ব্যর্থ করে দেন ৷ বিবি সারাহ্ও অনুরুপ আমল করেন ৷ আল্লাহর দৃশমন তাকে ধরতে
    গেলে তিনি অযু করে সালাত আদায়ান্তে দুআ করেন ৷ আল্লাহ বলেন :

    (আমরা ধৈর্য ও সালাত দ্বারা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর ৷ (২ বাকারা : ৪৫) ৷ এভাবে আল্লাহ
    তার খলীল , হাবীব, রাসুল ও বান্দার খাতিরে তার ত্রীর সক্সম রক্ষা করলেন ৷

    কোন কোন বিজ্ঞ আলিমের মতে, তিনজন মহিলা নবী ছিলেন (১) সারাহ্ (২) হযরত মুসা
    (আ)-এব যা, (৩) মারয়াম ৷ কিন্ডু অধিকাৎ শের মতে, তারা তিনজন সিদ্দীকা (সত্যপরায়ণা)
    (আল্লাহ্ তাদের প্রতি প্রসন্ন হোন) ছিলেন ৷ আমি কোন কোন বর্ণনায় দেখেছি বিবি সারাহ্
    যখন ইবরাহীম (আ)-এব নিকট থেকে জালিম বাদশাহর কাছে যান, তখন থেকে র্তার ফিরে
    আসা পর্যন্ত আল্লাহ ইবরাহীম (আ) ও সারাহ্র মধ্যকার পর্দা উঠিয়ে নেন ৷ ফলে রাজার কাছে ,
    তার থাকাকা ৷লীন যা যা যটছিল সবই তিনি প্রত ত্যক্ষ করছিলেন ৷ আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেছিলেন
    যাতে ইব্রাহীম (আ) এর হৃদয় পবিত্র থাকে চক্ষু শীতল থাকে এবংত তিনি অস্তরে প্রশান্তি বোধ
    করেন ৷ কেননা, হযরত ইবরাহীম (আ) সারাহ্কেত তার দীনের জন্যে, আত্মীয়ত ৷র সম্পর্কের
    জন্যে ও অনুপম সৌন্দর্যের জন্যে তাকে প্রগাঢ় মহব্বত করতেন ৷ কেউ কেউ বলেছেন, বিবি
    হাওয়ার পর থেকে সারাহ্র যুগ পর্যন্ত তার চাইতে অধিক সুন্দরী কোন নারীর জন্ম হয়নি ৷
    সকল প্রশংসা আল্লাহরই ৷

    কোন কোন ইতিহাসবিদ লিখেছেন, এই সময়ে মিসরের ফিরআউন ছিল বিখ্যাত জালিম
    বাদশাহ জাহ্হাকের ভাই ৷ সেত তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে মিসরের শাসনকর্তা ৷ছিল ৷ তার নাম
    কেউ বলেন সিনান ইবন আলওযান ইবন উবায়দ ইবন উওয়ায়জ ইবন আমলাক ইবন লাওদ
    ইবন নাম ইবন নুহ ৷ ইবন হিশাম ভীজা ন’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, যে রাজা সারাহ্র উপর লোড
    করেছিলত ৷র নাম আমর ইবন ইমরুল কায়স ইবন ম ইলুন ইবন সারা ৷ সে মিসরের
    শাসনকর্তাছিল ৷ সুহায়লী (র) এ তথ্য বর্ণনা করেছেন ৷ আল্লাহ্ই সম্যক জ্ঞাত ৷

    অতঃপর হযরত ইবরাহীম (আ) মিসর থেকে তীর পুর্ববর্তী বাসস্থান বরকতের দেশ তথা
    বায়ভুল মুকাদ্দাসে যান ৷ তার সাথে বহু পশু সম্পদ, গোলাম, বীদী ও ধনসম্পদ ছিল ৷ মিসরের
    কিবতী বংশোদ্ভুত হাজেরাও সাথে ছিলেন ৷ এই সময় হযরত লুত (আ) র্তার ধন-সম্পদসহ
    হযরত ইবরাহীম (আ)-এর আদেশক্রমে পাওব দেশে চলে যান ৷ পাওরে-যাগার নামে এ
    স্থানটি প্রসিদ্ধ ছিল ৷ তিনি সে অঞ্চলে ঐ যুগের প্রসিদ্ধ শহর সাদ্দুমে অবতরণ করেন ৷ শহরের
    বাসিন্দার৷ ছিল কাফির, পাপাসক্ত ও দুকুতকারী ৷ আল্লাহ্ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আ) কে
    দৃষ্টি প্রসারিত করে উত্তর, দক্ষিণ, পুর্ব ও পশ্চিমে তাকাত্তুত বলেন এবং সু-সৎবাদ দেন যে, এই
    সমুদয় স্থান তোমাকে ও তোমার উত্তরসুরিদেরকে চিরদিনের জন্য দান করব ৷ তোমার
    সন্তানদের সংখ্যা এত বৃদ্ধি করে দেব যে, তাদের সংখ্যা পৃথিবীর বালুকণার সংখ্যার সমান হয়ে
    যাবে ৷ এই সুসৎবাদ পুর্ণ মাত্রায় প্রতিফলিত হয়, বিশেষ করে এই উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ক্ষেত্রে ৷
    একটি হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায় ৷

    রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনষ্ক আল্লাহ আমার সম্মুখে পৃথিবীর এক অৎশকে ঝুকিয়ে দেন ৷
    আমিত ৷র পুর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত দেখে নিলাম ৷ অচিরেই আমার উম্মতের রাজতু এই দেখান
    সীমানা পর্যন্ত বিস্তার লা ৩ করবে ৷ ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, কিছুদিন পর ঐ দুরাচার লোকেরা
    হযরত লুত (আ)-এব উপর চড়াও হয় এবং তীর পশু ও ধন-সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাকে বন্দী

    করে রাখে ৷ এ সংবাদ হযরত ইবরা হীম (আ) এর নিকট পৌছলে তিনি তিনশ’ আঠ৷ ৷রজন সৈন্য
    নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করেন এবং লুত (আ) কে উদ্ধার করেন তার সম্পদ ফিরিয়ে
    আনেন ৷ আল্লাহ ও তার রাসুলের বিপুল স ×খ্যক শত্রুকে হত্যা করেন ৷ শত্রু বাহিনীকে পরাজিত
    করেন ও , তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেত তিনি৷ দ ৷মেশকের পুর্ব প্রান্ত পর্যন্ত পৌছেন ৷ শহরের উপকণ্ঠে
    ব্ারযাহ্ নামক স্থানে সেনা ছাউনি স্থাপন করেন ৷ আমার ধারণা-; এই স্থানকে “মাকামে
    ইব্রাহীম” বলার কারণ এটাই যে , এখানে ইব্রাহীম খলীলুল্লাহর সৈন্য বাহিনীর শিবির ছিল ৷

    তারপর হযরত ইব্রাহীম (আ) আল্লাহর সাহায্যপুষ্ট অবস্থায় বিজয়ীর বেশে নিজ দেশে
    প্রত্যাবর্তন করেন ৷ বায়তৃল মুকাদ্দাসের শহরসমুহের শাসকবর্গ শ্রদ্ধাভরে ও বিনীতভাবে এসে
    তাকে অভ্যর্থাং৷ জানান ৷ তিনি সেখানেই বসবাস করতে থাকেন ৷

    হাজেরার গর্ভে ইসমাঈল (আ) এর জন্ম প্রসঙ্গ

    আহ্লি কিতাবদের বর্ণনা মতে হযরত ইব্রাহীম (আ) আল্লাহর নিকট সুসন্তানের জন্য

    দুআ করেন ৷ আল্লাহত তাকে এ বিষয়ে সৃসৎ বাদ দানও করেন ৷ কিন্তু এরপর বায়তৃল মুকাদ্দাসে

    তার বিশটি বছর অতিবাহিত হয়ে যায় ৷ এ সময় একদিন সারাহ্ হযরত তইবরাহীম (আ) কে
    বললেন, আমাকে তে৷ আল্লাহ সন্তান থেকে বঞ্চিতই রেখেছেন ৷ সুতরাং আপনি আমার বাদীয়
    সাথে মিলিত হন ৷৩ তার গর্ভে আল্লাহ আমাকে একটা সন্তান দিতেও পারেন ৷ সারাহ্ হাজেরাকে
    ইব্রাহীমের জন্যে হেব৷ করে দিলে ইব্রাহীম (আ) তার সাথে মিলিত হন ৷ তাতে হাজেরা
    সন্তান-সম্ভবা হন ৷ এতে আহ্লি কিতাবগণ বলে থাকেন, হড়াজেরা অনেকটা গৌরব্বােধ করেন
    এবং আপন মনিব স ৷রাহ্র তুলনায় নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করতে থাকেন ৷ সারাহ্র মধ্যে
    আত্মমর্যাদা বোধ জাগ্রত হয় এবংত তিনি এ সম্পর্কে ইব্রাহীম (আ) এর নিকট অভিযোগ করেন ৷
    জবাবে ইব্রাহীম (আ) বললেন, “তার ব্যাপারে তুমি যে কোন পদক্ষেপ নিতে চাও নিতে
    পার ৷” এতে হড়াজেরা শংকিত হয়ে পলায়ন করেন এবং অদুরেই এক কুপের নিকটে অবতরণ
    করেন ৷ সেখানে জনৈক ফেরেশতা তাকে বলে দেন যে, তুমি ভয় পেয় না; যে সন্তান তুমি
    ধারণ করেছ আল্লাহ তাকে পৌরবময় করবেন ৷ ফেরেশতা তাকে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেন
    এবং সৃস× বাদ দেন যে, তুমি পুত্র-সন্তান প্রসব করবে ৷ তার নাম রাখবে ইসমাঈল ৷ সে হয়ে
    এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিতৃ ৷ সকল লোকের উপর তার প্রভাব থাকবে এবং অন্য সবাই তার
    দ্বারা শক্তির প্রেরণা পাবে ৷ সে তার ভাইদের কর্তৃত্াধীন সমস্ত এলাকার অধিকারী হবে ৷ এসব
    শুনে হড়াজেরা আল্লাহর শুকরিয়৷ আদায়করেন ৷ এই সৃসৎবাদ হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর
    অবঃস্তন সন্তান মুহাম্মদ (না)-এর ক্ষেত্রে পুর্ণমাত্রায় প্রযোজ্য ৷ কেননা, গোটা আরব জাতি তার
    দ্বারা গৌরবের অধিকারী হয় ৷ পুর্ব-পশ্চিমের সমস্ত এলাকায় তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
    তাকে আল্লাহ এমন উন্নত ও কল্যাণকর শিক্ষা এবং সৎকর্ম-কুশলতা দান করেন যা পুর্বে কোন
    উম্মতকেই দেওয়া হয়নি ৷ আরব জাত ৷তির এ মর্যাদা পাওয়ার কারণ হচ্ছে তাদের রাসলেল <
    যিনি হচ্ছেন নবীকুল শিরােমণি ৷৩ তার রিস৷ লোড হচ্ছে বরকতময় ৷ তিনি হলেন চ
    জন্যে রাসুল ৷ তার আনীত আদর্শ হচ্ছে পুণ্যত তম আদর্শ ৷ হাজেরা ঘরে যে

    ইসমাঈল (আ) ভুক্ষিষ্ঠ হন ৷ এ সময় ইবরাহীম (আ)-এর বয়স হয়েছিল ছিয়াশি বছর ৷ এটা
    হচ্ছে ইসহাক (আ) এর জন্মের (তর বছর পুর্বের ঘটনা ৷ ইসমাঈল (আ) এর জন্মের পর

    আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আ) কে স ৷রাহ্র গর্ভে ইসহাক নামের সন্তান জন্মের সুসং বাদ দেন ৷
    ইবরাহীম (আ) খনত আল্লাহর উদ্দেশে গােকরানা সিজদা আদায় করেন ৷ আল্লাহ তাকে জানান
    যে, আমি তোমার দুআ ইসমাঈব্লুলর পক্ষে কবুল করেছি ৷ তাকে বরকত দান করেছি ৷ তার

    ৎশের বিন্তুতি দান করেছি ৷ তার সন্তানদের মধ্য থেকে বারজন প্রধাব্লুনর জন্ম হবে ৷ তাকে
    আমি বিরাট সম্প্রদায়ের প্রধান করব ৷ এটাও এই উম্মণ্ডে তর জন্যে একটা সুসংবা-দ ৷ বারজন
    প্রধান হলেন সেই বারজন খলীফাব্লুয় রাশিদা যাদের কথা জাবির ইবন সামুরা সুত্রে বর্ণিত
    হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে বলা হয়েছে যে, নবী করীম (সা) বলেছেন, বারজন
    আমীর হবে ৷ জাবির (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) এরপর একটা শব্দ বলেছেন, কিন্তু আমি তা
    বুঝতে পারিনি ৷ তাই সে সম্পর্কে আমার পিতার কাছে জিজ্ঞেস করি ৷ তিনি বললেন, রাসুলের
    সে শব্দটি হল শুষ্টন্-ন্-ন্ ঠো ৭স্পাহ্র অর্থাৎ তারা সবাই হবেন কুরায়শ গোত্রের লোক ৷ বুখারী
    ও মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ অপর এক বর্ণনায় আছে :

    অর্থাৎ এই খিলাফত বারজন খলীফ৷ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত বা শক্তিশালী থাকব্লুব এরা সবাই
    হবে কুরায়শ গোত্রের লোক ৷ উক্ত বারজব্লুনর মধ্যে চারজন হলেন প্রথম চার খলীফা আবু বকর
    (রা), উমর (রা), উসমান (রা) ও আলী (বা); একজন উমর ইবন আবদুল আযীয (র);
    কতিপয় বনী আব্বাসীয় খলীফা ৷ বারজন খলীফা ধারাবাহিকভাবে হতে হবে এমন কোন কথা
    নাই, বরং যে ব্লুকানভাব্লুব বারজব্লুনর বিদ্যমান হওয়াটাই জরুরী ৷ উল্লিখিত বারজন ইমাম
    রাফিজী সম্প্রদা ব্লুয়র কথিত বার ইমাম’ নয়- যাদের প্রথমজন আ ৷লী ইবন তালিব (বা) আর
    শেষ ইমাম মুহাম্মদ ইবন হাসান আসকা রী ৷ এই শেষোক্ত ইমাব্লুমর ব্যাপারে তাদের বিশ্বাস এই
    যে, তিনি সামেরার একটি ভুগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠ থেকে তিনি বের হয়ে আসব্লুবন এরা তার
    প্রতীক্ষায় আছে ৷ কারণ এই ইমামগণ হযরত আলী (রা) ও তার পুত্র হাসান ইবন আ ৷লী (বা)
    অপেক্ষা অধিকতর কল্যাণকামী হতে পারেন না ৷ বিশেষ করে যখন স্বয়ং হাসান ইবন আলী
    (বা) যুদ্ধ পরিত্যাগ করে হযরত মুআবিয়া (রা) এর অনুকুলে খিলাফত ত্যাগ করেন ৷ যার ফলে
    ফিৎনার আগুন নির্বাপিত হয়, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয় ৷ অবশিষ্ট
    ইমামগণ তো অন্যদের শাসনাধীন ছিলেন ৷ উম্মব্লু৩ র উপরে ব্লুক ন বিষব্লুয়ই তাদের কোন
    আধিপত্য ছিল না ৷ সামিরার ভুগর্ভন্থিত প্রব্লুকাষ্ঠ সম্পর্কে রাফিজীদের যে বিশ্বাসত ৷নিতান্ত
    অবাস্তব কল্পনা ও হেয়ালীপনা ছাড়া আর কিছুই নয়, এর কো ন৬ ভিত্তি নেই ৷

    হা৷জেরার গর্ভে ইসমাঈল (আ)-এর জন্ম হলে সারাহ্র ঈর্ষা পায় ৷ তিনি হযরত ইবরাহীম
    (আ) এর নিকট আবেদন জানান, যাব্লুত হাজেরাব্লুক তার চোখের আড়াল করে দেন ৷ সুতরাং
    ইবরাহীম (আ) হাজেরা ও তার পুত্রব্লুক নিয়ে বের হয়ে পড়েন এবং মক্কায় নিয়ে রাখেন ৷ বলা
    হয়ে থাকে যে, ইসমাঈল (আ) তখন দুধের শিশু ছিলেন ৷ ইবরাহীম (আ) যখন তাদেরকে

    সেখানে রেখে ফিরে আসার জন্যে উদ্যত ৩হলেন, তখন হাজেরা উঠে তার কাপড় জড়িয়ে ধরে
    বললেন, হে ইবরাহীম ৷ আমাদেরকে এখানে খাদ্য-রসদহীন অবস্থায় রেখে কোথায় যাচ্ছেন?
    ইবরাহীম (আ) কোন উত্তর দিলেন না, বারবার পীড়াপীড়ি করা সত্বেও তিনি যখন জওয়াব
    দিলেন না, তখন হাজেরা জিজ্ঞেস করলেন ও আল্লাহ কি এরুপ করতে আপনাকে আদেশ
    করেছেনঃ’ ইবরাহীম (আ) বললেন, হীা’ ৷ হাজেরা বললেন : তাহলে আর কোন ভয় নেই ৷
    তিনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না ৷ ’ শায়খ আবু মুহাম্মদ ইবন আবী যায়দ (র) নাওয়াদির’
    কিতাবে লিখেছেন : সারাহ্ হাজেরার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে কসম করলেন যে, তিনি তার তিনটি
    অঙ্গ ছেদন করবেন ৷ ইবরাহীম (আ) বললেন, দুটি কান ছিদ্র করে দাও ও খাৎনা করিয়ে দাও
    এবং কসম থেকে মুক্ত হয়ে যাও ৷ সুহায়লী বলেছেন : এই হাজেরাই সর্বপ্রথম নারী যার খাৎনা
    করা হয়েছিল, সর্বপ্রথম যার উভয় কান স্থির করা হয় এবং তিনিই সর্বপ্রথম দীর্ঘ তাচল ব্যবহার
    করেন ৷

    ইসমাঈল (আ) ও হাজেরাকে নিয়ে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর ফারান
    পর্বতমালা তথা মক্কা ভুমিতে হিজরত ও কাবড়া গৃহ নির্মাণ

    ইমাম বুখারী (র) ইবন আব্বাস (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন ও নারী জাতি সর্বপ্রথম কােমরবন্দ
    ব্যবহার শিখে ইসমাঈল (আ) এর মায়ের নিকট থেকে ৷ হাজেরা কােমরবন্দ ব্যবহার করতেন
    সারাহ্র দৃষ্টি থেকে নিজের পদচিহ্ন গোপন রাখার জন্যে ৷

    হযরত ইবরাহীম (আ) হাজেরা ও ইসমাঈল (আ)-কে নিয়ে যখন মক্কায় যান, হাজেরা
    তখন তার শিশু পুত্রকে দুধ পান করাতে ন ৷ মসজিদে হারমের উচু অংশে বায়তৃল্লাহর কাছে
    যমযম কুপের নিকটে অবস্থিত একটি বড় গাছের নিচে তিনি তাদেরকে রেখে আসেন ৷ মক্কায়
    তখন না ছিল কোন মানুষ, না ছিল কোন পানি ৷ এখানেই তিনি তাদেরকে রেখে এলেন ৷ একটি
    থলের মধ্যে কিছু খেজুর ও একটি মশকে কিছু পানিও রাখলেন ৷৩ রতপর ইবরাহীম (আ)
    যেদিক থেকে এসেছিলেন, সেদিকে ফিরে চললেন ৷ হাজেরাও তার পিছু পিছু ছুটে যান এবং
    জিজ্ঞেস করেন : হে ইবরাহীম ! আমাদেরকে এই শুন্য প্রান্তরে রেখে কোথায় যাচ্ছেন? যেখানে
    নেই কোন মানুষজন, নেই কোন খাদ্য পানীয় ৷ ’ হাজেরা বার বার একথা বলা সত্বেও ইবরাহীম
    (আ) র্তার দিকে ফিরেও৩ কা৷লেন না ৷ তখন হাজেরা জিজ্ঞেস করলেন৪ আল্লাহ কি এরকম
    করতে আপনাকে আদেশ করেছেনঃ ইবরাহীম (আ) বললেন, হ্যা’ ৷ হাজেরা বললেনং :
    তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না ৷ ’ একথা বলে হাজেরা ফিরে অড়াসলেন এবং
    ইবরাহীম (আ)-ও চলে গেলেন ৷ যখন তিনি ছানিয়া (গিরিপথ) পর্যন্ত পৌছলেন, যেখান থেকে
    তাকে আর দেখা যাচ্ছিল না ৷ তখন তিনি কাব৷ ঘরের দিকে মুখ করে র্দাড়ালেন এবং দুহাত
    তুলে নিম্নো ৷ক্ত দুআ পড়লেন :
    হে আমার প্রতিপালক ! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর
    উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট ৷ হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্যে যে, ওরা যেন
    সালাত কায়েম করে ৷ অতএব, তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের দিকে অনুরাগী করে দাও এবং
    ফলাদি দ্বারা ওদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দাও ৷ যাতে ওরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ৷’ (সুরা
    ইব্রাহীম : ৩ ৭) ৷

    ইসমাঈল (আ) এর মা ইসমাঈলকে নিজের স্তনের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ
    মশকের পানি পান করতে তন ৷ শেষে যশকের পানি ফুবিয়ে গেলে মা ও শিশু উভয়ে তৃষ্ণায়

    কাতর হয়ে পড়েন ৷ শিশুর প্রতি তাকিয়ে দেখেন, পিপাসায় তার বুক ধড়ফড় করছে কিৎবা
    মাটিতে পড়েছট্ফট্ করছে ৷ শিশু পুত্রের এ করুণ অবস্থা দেখে সহ্য করতে না পেরে মা
    সেখান থেকে উঠে গেলেন এবং নিকটবর্তী সাফা পর্বতে আরোহণ করলেন ৷ সেখান থেকে
    প্রাম্ভরের দিকে তাকিয়ে কা ৷উকে দেখা যায় কিনা লক্ষ্য করলেন ৷ কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন
    না ৷ তারপর সাফ৷ পর্বত থেকে হাজের৷ নেমে নিম্ন ভুমিতে ৩চলে আসলে তিনি তার আমার
    তাচলের একদিক উঠিয়ে ক্লাম্ভ-শ্রাম্ভ ব্যক্তির মত ছুটে চললেন ৷ নীচু ভুমি পাড়ি দিয়ে তিনি
    মারওয়৷ পাহাড়ে ওঠেন ৷ চতুর্দিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলেন ক উকে দেখা যায় কিনা ৷
    কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না ৷ এত ৷বে৩ তিনি সাতবার আসা-যাওয়৷ করেন ৷ ইবন আব্বাস
    (রা) বলেন, নবী করীম (যা) বলেছেন, এ জন্যেই লোকজন হজ্জ ও উমরায় উভয় পাহাড়ের
    মাঝে সাতবার সাঈ করে থাকেন ৷ মারওয়৷ পাহাড়ে উঠে তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পান ৷
    তিনি তখন নিজেকে লক্ষ্য করে বলেন : চুপ কর! তারপর কান পেতে পুনরায় ঐ একই
    আওয়াজ শুনতে পেলেন ৷ হাজের৷ তখন বললেন, তোমার আওয়াজ শুনেছি, যদি সাহায্য করতে
    পার, তবে সাহায্য করা এমন সময় তিনি দেখতে পুেলেন যে, যযযম কুপের স্থানে একজন
    ফেবেশ্ তা দাড়িয়ে আছেন ৷ ফেরেশত ৷ নিজের পায়ের গোড়ালি দ্বারা কিৎবা তার ডানা দ্বারা
    মাটিতে আঘাত করতে লাগলেন ৷ শেষ পর্যন্ত পানি বের হয়ে আসে ৷ তখন হাজের৷ এর
    চারপাশে আপন হাত দ্বারা বীধ দিয়ে হাউজের ন্যায় করে দিলেন এবং আজলা তবে যশকে

    পানি তালার পরও পানি উপচে পড়তে লাগল ৷

    ইবন আব্বাস (বা) বলেন, নবী করীম (যা) বলেছেন, ইসমাঈল (আ) এর মাঝে আল্লাহ
    রহম করুন ৷ যদি টুনি যমযমকে বাধ না দিয়ে এভাবে ছেড়ে দিতে ন কিত্বা তিনি বলেছেন :

    প্রবহমান ঝর্ণায় পরিণত হত ৷ তারপর হাজের৷ পানি পান করলেন এবং শিশু পুত্রকে দুধ পান
    করালেন ৷ ফেরেশত৷ তাকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না ৷ কেননা,
    এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে ৷ একে এই শিশু ও তার পিতা পুনঃনির্মাণ করবেন ৷ আল্লাহ তার
    পরিজনকে বিনাশ করবেন না ৷ ঐ সময় আল্লাহর এ ঘরটি মাটির থেকে কিছু উচু ঢিবির মত
    ছিল ৷ বন্যার পানির ফলে তার ডান ও বাযদিকে ভাঙন ধরেছিল ৷ হাজের৷ এভাবে দিনযাপন
    করছিলেন ৷ পরিশেষে জুরহুম গোত্রের য়ামান দেশীয় একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে
    অতিক্রম করছিল ৷ অথবা জুরহুম পরিবারের কিছু লোক ঐ পথ ধরে এদিকে আসছিল ৷ তারা
    মক্কার নিচু ভুমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল যে, একটা পাখি চক্রাকারে উড়ছে ৷

    তখন তারা বলাবলি করল, নিশ্চয় এ পাথিটি পানির উপরই উড়ছে অথচ আমরা এ উপত্যকায়
    বহুদিন কাটিয়েছি, এখানে কোন পানি ছিল না ৷ তখন তারা একজন কি দু’জন মশকধারী লোক
    সেখানে পাঠান ৷ তারা সেখানে পিয়েই পানি দেখতে পেল ৷ ফিরে এসে সবাইকে পানির সংবাদ
    দিল ৷ সংবাদ পেয়ে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল ৷ ইসমাঈল (আ) এর যা ঐ সময় পানির নিকট
    বসা ছিলেন ৷ তারা তার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করার অনুমতি চাইল ৷ হাজেরা জবাব দিলেন
    ৪ হীা, থাকতে পার, তবে এ পানির ওপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না ৷ তারা তা মেনে
    নিল

    আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (যা) বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈল
    (আ)-এর মাকে একটি সুযোগ এনে দিল ৷ সেও মানুষের সাহচর্য চাচ্ছিল ৷ এরপর তারা সেখানে
    বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পয়িবড়ার-পরিজনের কাছেও সংবাদ পাঠাল , তারাও এসে তাদের
    সাথে বসবাস করতে লাগল ৷ পরিশেষে সেখানে তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত
    হল ৷ এদিকে ইসমাঈল (আ) যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা
    শিখলেন যৌবনে পৌছে তিনি তাদের কাছে আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হার উঠলেন ৷ যখন তিনি
    পুর্ণ যৌবন লাভ করলেন তখন তারা তার সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল ৷ এরই
    মধ্যে ইসমাঈল (আ)-এর যা হাজেরার ইন্তিকাল হয় ৷ ইসমাঈল (আ)-এর বিবাহের পর
    ইবরাহীম (আ) তার পরিত্যক্ত পরিবারকে দেখার জন্যে এখানে আসেন ৷ কিন্তু ইসমড়াঈল
    (আ)-কে পেলেন না ৷ তখন তার শ্ৰীকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন ৷ শ্রী জানালেন, তিনি
    আমাদের জীবিকার খোজে বেরিয়ে গেছেন ৷ তখন তিনি তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্বন্ধে
    জিজ্ঞেস করলেন ৷ সে জানায়, আমরা অতি কষ্টে, অভাব-অনটনে আছি ৷ সে তার কাছে
    নিজেদের দুর্দশার অভিযোগ করল ৷ তখন ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমার স্বামী বাড়ি ফিরে
    এসে আমার সালাম জানাবে এবং তাকে দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলতে বলবে ৷

    ইসমাঈল (আ) বাড়ি ফিরে এলে তিনি যেন কিছু একটা ঘটনার আভাস পেলেন ৷ ত্রীকে
    জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কাছে কি কোন লোক এসেছিল? শ্রী বলল, হ্যা , এই এই আকৃতির
    একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন ৷ তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন ৷ আমি তা
    জানিয়েছি ৷ আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন ৷ আমি বলেছি যে, আমরা খুব
    কষ্টে ও অভাবে আছি ৷ ইসমাঈল (আ) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি তোমাকে কোন উপদেশ
    দিয়েছেন কি? ত্রী বলল, হ্যা, আপনাকে তার সালাম জানাতে বলেছেন ও আপনাকে দরজার
    চৌকাঠ বদলাতে বলেছেন ৷ ইসমাঈল (আ) বললেন, ইনি আমার পিতা ৷ তোমাকে ত্যাগ করার
    জন্যে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন ৷ সুতরাং তুমি তোমার আপনজনদের কাছে চলে যাও ৷ তখন
    তিনি শ্ৰীকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং জুরহুম গোত্রের অন্য এক মহিলাকে বিবাহ করেন ৷
    ইবরাহীম (আ) দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাদের থেকে দুরেই রইলেন ৷ তারপর হযরত ইবরাহীম (আ)
    তাদেরকে পুনরায় দেখতে এলেন ৷ কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈলকে বাড়িতে পেলেন না ৷
    পুত্রবধুর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন, তিনি আমাদের জীবিকার অম্বেষণে
    বাইরে গেছেন ৷ ’ ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমরা কেমন আছ, তোমাদের জীবনযাত্রা ও
    অবস্থা কেমনঃ জবাবে পুত্রবধু বললেন : আমরা ভাল আছি ও স্বচ্ছন্দে আছি, সাথে সাথে

    মহিলাটি আল্লাহ্র প্ৰশংসাও করলেন ৷ ইব্রাহীম (আ) জিজ্ঞেস করলেন, সাধারণত তোমাদের
    খাদ্য কী? তিনি বললেন : গোশৃত ৷ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন ও তোমাদের পানীয় কি? তিনি
    বললেন, পানি ৷ ইব্রাহীম (আ) দুআ করলেন, হে আল্লাহ ! এদের গোশৃত ও পানিতে বরকত
    দান করুন ৷ ’

    নবী করীম (সা) বলেছেন, ঐ সময় তাদের ওখানে খড়াদম্মেস্য উৎপাদিত হত না ৷ যদি হত
    তা হলে তিনি তাদের জন্যে সে ৰিষয়েও দুআ করতেন ৷ ব্ংনািকারী বলেন, মক্কা ব্যতীত অন্য
    কোথাও কেউ শুধু গোশত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারে না ৷ কেননা, শুধু গোশত ও
    পানি জীবন যাপনের অনুকুল হতে পারে না ৷ ইব্রাহীম (আ) বললেন, তোমার স্বামী যখন
    বাড়িতে আসবে তখন আমার সালাম জানাবে ও দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখতে বলবে ৷
    ইসমাঈল (আ) যখন বাড়িতে আসলেন, তখন ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের নিকট কেউ
    এসেছিল কি? শ্রী বললেন : হীা, একজন সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধলোক এসেছিলেন ৷ ত্রী আগন্তুকের
    প্রশংসা করলেন ৷ তিনি আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছেন ৷ আমি তাকে আপনার সংবাদ
    জানিয়েছি ৷ তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন ৷ আমি জানিয়েছি যে,
    আমরা ভাল আছি ৷ ইসমাঈল (আ) বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোন উপদেশ দিয়েছেন ?
    শ্রী বললেন, হীা, তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন ও আপনার দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখতে
    বলেছেন ৷ ইসমাঈল (আ) বললেন, ইনি আমার পিতা ৷ তোমাকে শ্রীরুপে বহাল রাখতে আদেশ
    করেছেন ৷

    পুনরায় ইব্রাহীম (আ) এদের থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুরেই থাকলেন ৷ তারপর ইব্রাহীম
    (আ) পুনরায় তথায় আসলেন ৷ দেখলেন, ইসমাঈল যমযম কুপের নিকটে বিরাট এক বৃক্ষের
    নিচে বসে তীর র্চাছছিলেন ৷ পিতাকে দেখে তিনি তার দিকে এগিয়ে আসলেন ৷ অতঃপর উভয়ে
    এমনভাবে পরস্পরকে আলিঙ্গন করলেন, যেমন সাধারণত পিতাপুত্রের মধ্যে হয়ে থাকে ৷
    এরপর ইব্রাহীম (আ) বললেন, হে ইসমাঈল ! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের আদেশ
    করেছেন ৷ ইসমাঈল (আ) বললেন, আল্লাহ যে আদেশ করেছেন তা বাস্তবায়িত করুন ৷
    ইব্রাহীম (আ) বললেন, তুমি আমাকে সাহায্য করবেঃ ইসমাঈল (আ) বললেন : নিশ্চয়ই
    আমি আপনাকে সাহায্য করব ৷ ইব্রাহীম (আ) পার্শে অবস্থিত উচু ঢিবিটির দিকে ইঙ্গিত করে
    বললেন, আল্লাহ আমাকে এ স্থানটি ঘিরে একটি ঘর নির্মাণের আদেশ দিয়েছেন ৷ তখন তারা
    উভয়ে কাবা ঘরের দেয়াল উঠাতে লেগে পেলেন ৷ ইসমাঈল (আ) পাথর আনতেন ও
    ইব্রাহীম (আ) পাথুনী দিতেন ৷ শেষে যখন দেয়াল উচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (আ)
    মাকামে ইবরাহীম’ নামে প্রসিদ্ধ পাথরটি আনলেন এবং সেখানে রাখলেন ৷ ইব্রাহীম (আ)
    তার উপর দাড়িয়ে ইমারত তৈরি করতে লাগলেন আর ইসমাঈল (আ) তাকে পাথর যোগান
    দিতে থাকেন ৷ এ সময় তারা উভয়ে নিম্নের দৃআটি পাঠ করেন এর্দুদ্বু fi: টুদ্বুব্লুট্রু ট্রুন্টু
    আমাদের থেকে এ কাজ কবুল করুন ৷ নিশ্চয়ই
    আপনি সবকিছু শোনেন ও জানেন ৷ (সুরা বাকারা : ১২৭)

    আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৪৫

    এভাবে তারা দু’জনে কাবাঘর নির্মাণ কাজ শেষ করেন এবং কাজ শেষে ঘরের চারদিকে
    তড়াওয়ড়াফ করেন এবং উক্ত দৃআ পাঠ করেন ৷ ইমাম বুখারী (র) ইবন আব্বাস (বা) সুত্রে বর্ণনা
    করেন, তিনি বলেন : যখন ইবরাহীম (আ) ও তার শ্রী সারাহ্র মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেল , তখন
    তিনি ইসমাঈল (আ) ও তার মাকে নিয়ে বের হয়ে যান ৷ তাদের সাথে পানি ভর্তি একটি মশক
    ছিল ৷ তারপর ইমাম বুখারী (র) ণ্পুর্বোল্লিখিত হড়াদীসের অনুরুপ ঘটনার বিবরণ দেন ৷ হাদীসটি
    ইবন অড়াব্বাসের উক্তি ৷ এর কিছু অংশ মারফু’ আর কিছু গরীব’ পর্যায়ের ৷ ইবন আব্বাস (বা)
    সম্ভবত ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছেন ৷ তার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, ইসমাঈল
    (আ) ঐ সময় দৃগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন ৷ তাওরাত পন্থীরা বলেন, আল্লাহ ইবরাহীম (আ)-কে পুত্র
    ইসমাঈল (আ) ও তার কাছে আর যত দাস ও অন্যান্য লোক ছিল তাদের খাতনার নির্দেশ
    দেন ৷ তিনি এ নির্দেশ পালন করেন এবং সবাইকে খাৎনা করান ৷ এ সময় ইবরাহীম (আ)-এর
    বয়স হয়েছিল নিরানব্বই বছর ও ইসমাঈল (আ)-এর বয়স ছিল তের বছর ৷ খাতনা করাটা
    ছিল আল্লাহর নির্দোণ পালনার্থে ৷ এতে প্রতীয়মান হয়, অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবেই তিনি

    তা পালন করেন ৷ এ কারণেই উলামায়ে কিরাম খাতনা করা ওয়াজিব বলেছেন-এ মত
    সঠিক ৷

    বুখারী শরীফে আবু হুরায়রা (বা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা) বলেছেন :
    ইবরাহীম (আ) আশি বছর বয়সে (ছুতারের) বাইসের (ণ্প্রু;চা৷রু)সড়াহড়াভ্রুযব্র নিজের খাতনা
    করেন ৷ আবদুর রহমান ইবন ইসহাক , আজলান, মুহাম্মদ ইবন আমর ও ইমাম মুসলিম ভিন্ন
    ভিন্ন সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ উক্ত বর্ণনায় ব্যবহৃত কুদুম ’ শব্দটির অর্থ ধারাল অস্ত্র ৷
    কেউ কেউ এটি একটি স্থানের নাম বলেছেন ৷ এসব হাদীসের শব্দের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য

    আছে ৷ ইবন হিব্বান (র) আবু হুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন :
    নবী ইবরাহীম (আ) একশ’ বিশ বছর বয়সে খাতনা করান ৷ এর পরেও আশি বছর জীবিত
    থাকেন ৷ এসব বর্ণনায় ইসমাঈল (আ) কে যাবীহ্ বলে উল্লেখ করা হয়নি এবং এতে ইবরাহীম
    (আ)-এর তিনবার আগমনের কথা বলা হয়েছে ৷ প্রথমবার আগমন করেন তখন, যখন
    হাজেরার মৃত্যু হয় ও ইসমাঈল (আ) বিবাহ করেন ৷ শিশুকালে রেখে আসার পর থেকে
    ইসমাঈলের বিবাহ করা পর্যন্ত তিনি আর তাদের শৌজ-খবর নেননি ৷ বলা হয় যে, সফরকালে
    ইবরাহীম (আ)-এর জন্যে য়যীনের দুরৎ সংকুচিত হয়ে যেত ৷ কেউ কেউ বলেছেন, তিনি যখন
    আসতেন তখন বিদ্যুতের গতিসম্পন্ন বাহন বুরাকে চড়ে আসতেন ৷ এ যদি হয় তাহলে হযরত
    ইবরাহীম (আ) তা দের সংবাদ না নিয়ে কিভাবে দুরে পড়ে থাকতে পারেন? অথচ নিজের
    পরিজনের সংবাদ রাখা একটি গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব; বিশেষ করে যে অবস্থায় তাদের রেখে

    এসেছিলেন ৷ এসব ঘটনার কিছু অংশ ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে নেয়া ৷ অবশ্য কিছু আছে মারফু
    হাদীস ৷ তবে এতে যাবীহ্’-এর ঘটনার উল্লেখ নেই ৷ কিন্তু তাফসীরের মধ্যে সুরা সাফ্ফাতে
    আমরা দলীলসহ উল্লেখ করেছি যে, যাবীহ হলেন হযরত ইসমাঈল (আ) ৷

    ইসমাঈল যড়াবীহুল্লাহ (আ) এর ঘটনা

    আল্লাহর বাণীষ্ক

    এবং সে বলল, আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম, তিনি আমাকে অবশ্যই সৎপথে
    পরিচালিত করবেন; হে আমার প্রতিপালর্ক ! আমাকে এক সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান কর ৷ ’
    তারপর আমি তাকে এক স্থির-বুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম ৷ অতঃপর সে যখন তার পিতার
    সঙ্গে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহীম্ (আ) বলল, বৎস ! আমি স্বপ্নে দেখি
    যে, তোমাকে যবেহ্ করছি; এখন তোমার অভিমত কি বল ? সে বলল, পিতা ! আপনি যাতে
    আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন ৷ আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন ৷ ’ যখন
    তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করল, তখন
    আমি তাকে আহ্বান করে বললড়াম, ৫হ ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নড়াদেশ সত্যই পালন করলে!
    এভ৷ ৷বেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি ৷ ’নিশ্চয়ই এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা ৷
    আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে ৷ আমি এটা পরবর্তীদের স্মরণে
    রেখেছি ৷ ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক ৷ এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত
    করে থাকি ৷ সে ছিল আমার মুমিন বান্দাদের অন্যতম ! আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলড়াম
    ইসহাকের, সে ছিল এক নবী, সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম ৷ আমি তাকে বরকত দান করেছিলাম
    এবং ইসহড়াককেও, তাদের বং শধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের প্রতি
    স্পষ্ট অত্যাচারী ৷ (সুরা৪ সাফ্ফাতষ্ক ৯৯ ১১৩)

    সম্পর্কিত পোস্ট:


    নোটঃ হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।

    মীযান জামাতের সমস্ত কিতাব PDF Download

    নাহবেমীর জামাতের কিতাব PDF Download

    হেদায়াতুন নাহু জামাতের কিতাব PDF Download

    কাফিয়া জামাতের কিতাব PDF Download

    শরহে জামী জামাতের কিতাব PDF Download

    জালালাইন জামাতের কিতাব PDF Download

    মেশকাত জামাতের কিতাব PDF Download

    দাওরায়ে হাদিসের কিতাব সমূহ PDF Download

    মাদানী নেসাবের কিতাবসমূহ PDF Download

    1 thought on “হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা”

    Leave a Comment

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.