Home » অনুবাদকৃত বইসমুহ » আল বিদায়া ওয়ান্নিহায়া - খন্ড ৩ » পরিচ্ছেদ কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে

পরিচ্ছেদ কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে

  • 3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
  • Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
  • সৌভাগ্যের অধিকারী তার৷ তার প্ৰতি ঈমান আনয়ন করেন ৷ সত ব্রুাদ্রোহী অহং কারীরা তার
    বিরোধিতা ও অবাধ্য৩ ৷য় লিপ্ত হয় ৷ স্বাধীন বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেন
    হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) ৷ অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেন হযরত
    আলী ইবন আবী তালিব (রা) মহিলাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সহধর্মিণী হযরত খাদীজা
    (বা) এবং আযাদকৃত দাসদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর ক্রীতদাস হযরত যায়দ ইবন হ রিছা
    কালবী ৷ আল্পাহ্৩ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাদেরকে সভুষ্ট করুন ৷
    ওহী সম্পর্কিত সংবাদ পাওয়ার পর ওয়ারাক৷ ইবন নাওফিলের ঈমান আনয়ন সম্পর্কে
    ইতোপুর্বে আলোচনা হয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রতি ওহীশ্বিরতিকালে ওয়ারাক৷ ইনতিকাল
    করেন ৷
    পরিচ্ছেদ
    কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে

    কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার প্রাক্কালে জিন ও সতাদ্রোহী শয়তানদের আসমানী সংবাদ
    শ্রবণে বাধা দেয়া হতো যাতে করে তারা কুরআনের একটি বর্ণও চুরি করে শুনতে না পড়ায় ৷
    কুরআনের কিছু অং শও যদি তারা শুনতে (পত, তবে তা তাদের বন্ধুদের নিকট পৌছিয়ে দিত ৷
    ফলে সত্য মিথ্যায় স০ মিশ্রণ ঘটায় আশঙ্কা থাকতো ৷ এটি সৃষ্টিজগতের প্রতি আল্লাহ তা জানার
    পরম দয়া ও অনুগ্রহ যে , তিনি জিন ও দুর্ধর্ষ শয়তানদেরকে আসমানী সংবাদ শ্রবণ থেকে বিরত
    রেখেছেন ৷ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআল৷ তাদের উক্তির উল্লেখ করেন এভাবে :

    -এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য স০ গ্রহ করতে ৷ কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম
    কঠোর গ্রহণ ও উল্কপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপুর্ণ ৷ আর পুর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাটিতে
    ত্বাদ শোনার জন্যে বসতাম ৷ কিন্তু এখন কেউ স০ বা দ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের
    জন্যে প্রস্তুত জ্বলম্ভ উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয় ৷ আমরা জানি না জগত বাসীর অকল্যাণই
    অতিপ্রেত, নাকি৩ ৷দের প্ৰতিপালক তাদের কল্যাণ চান ? ( ৭২ ৮ ১০ ) ৷
    আল্লাহ তা জানা অন্যত্র বলেন :

    শয়তানরা তা নিয়ে অবতরণ করেনি ৷ তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এটির সামর্থও
    রাখে না ৷ ওদেরকে তো তা শোনার সুযোগ থেকে দুরে রাখা হয়েছে (২৬ ন্তু ২ ১ : ২১ ১ ) ৷

    হাফিয আবু নুআয়ম বলেন, সুলায়মান ইবন আহমদ তড়াবারানী হযরত ইবন আব্বাস
    (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেছেন, জিনরা আকাশে আরোহণ করে ওহী বিষয়ক
    আলোচনা শুনত ৷ তার মধ্য থেকে একটি কথা কন্ঠস্থ করে সেটির সাথে আরও নয়টি কথা তারা
    যোগ করত ৷ ফলে একটি কথা সত্য হত আর তাদের যোগ করা কথাগুলো অসত্য প্রমাণিত
    হত ৷ নবী করীম (না) যখন বাসুলরুপে প্রেরিত হলেন, তখন তাদেরকে তাথেকে বাধা দেয়া
    হয় ৷ বিষয়টি তারা ইবলীসকে জানায় ৷ ইতোপুর্বে অবশ্য তাদের প্ৰতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা
    হতো না ৷ ইবলীস বলল, নিশ্চয়ই পৃথিবীতে কিছু একটা ঘটেছে যার জংন্য এমনটি হচ্ছে ৷
    কারণ অনুসন্ধানের জন্যে সে তার শিষ্যদেরকে পাঠায় ৷ তারা দেখতে পায় যে, দুটো পাহাড়ের
    মধ্যবর্তী এক স্থানে রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) দাড়িয়ে নামায আদায় করছেন ৷ ভাবা এসে ইবলীসকে তা
    জানার ৷ সে বলে, এ-ই আসল ঘটনা বা পৃথিবীতে ঘটেছে ৷

    আবু আওয়ানা হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন,
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওর্তার সাহাবীপণ উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলেন ৷ তখন
    আসমানী সংবাদ শ্রবণে শয়তানরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল ৷ তাদের প্রতি উল্কাপিগু নিক্ষেপ করা শুরু
    হয়েছিল ৷ বাধাপ্রাপ্ত শয়তানরা আপন সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে ৷ ওরা জিজ্ঞেস করল, কী
    ব্যাপার, তোমরা ফিরে এলে কেন ? উত্তরে ওরা বলল, আসমানী সংবাদ শ্রবণে আমাদেরকে
    বাধা দেয়া হয়েছে ৷ আমাদের প্রতি উল্কাপিগু নিক্ষেপ করা হয়েছে ৷ ওরা বলল, নিশ্চয় পৃথিবীতে
    নতুন কোন ঘটনা ঘটেছে যার ফলে এমনটি হয়েছে ৷ তোমরা পুর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত
    খুজে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত হও ৷ জিনদের একটি দল তিহামা অভিমুখে যাচ্ছিল ৷
    রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর উকায বাজারে যাওয়ার পথে তারা তাকে নাখল নামক স্থানে দেখতে পায় ৷
    তিনি তখন সাহাবীপণকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন, কুরআন তিলাওয়াত শুনে
    তারা অত্যন্ত মনােযোগী হয় ৷ তখন তারা বলাবলি করে, এটিই হল মুল ঘটনা যার জন্যে
    আমরা আসমানী সংবাদ শ্রবণে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি ৷ এরপর তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে
    গিয়ে বলে :

    -আযরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি ৷ যা সঠিক পথ-নির্দেশ করে ৷ ফলে আমরা

    তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি ৷ আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের শরীক নির্ধারণ করব না ৷
    (৭২ : ১ ২) ৷ এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা প্রিয়নবী (না)-এর প্রতি ওহী নাযিল করেন :

    বলুন, আমার প্রতি ওহী প্রেরিত হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ
    করেছে (প্রাগুক্ত) ৷ সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে এ হাদীছ উল্লিখিত হয়েছে ৷

    আবু বকর ইবন আবী শায়বা হযরত ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
    বলেছেন, আসমানী সংবাদ শ্রবণের জন্যে জিনদের প্রত্যেক গোত্রের আকাশে আলাদা আলাদা
    বসার স্থান ছিল ৷ যখন ওহী নাযিল হত, তখন ফেরেশতাগণ কঠিন পাথরে লোহার আঘাতের
    ন্যায় শব্দ শুনতে পেতেন ৷ ওই শব্দ শুনে ফেরেশতাগণ সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন ৷ ওহী নাযিল
    সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা মাথা তুলতেন না ৷ ওহী নাযিল শেষ হওয়ার পর তারা একে অন্যে
    বলাবলি করতেন, “তোমাদের প্রতিপালক কী বললেন ?” যদি ওহীটি উর্ধ্ব জগত বিষয়ক হত,
    তবে তারা বলতেন, “তিনি সত্য বলেছেন, তিনি সমুচ্চ মহান ৷ ” আর যদি সেটি পৃথিবীতে
    অনুষ্ঠিতব্য অদৃশ্য বিষয় হত, অথবা পৃথিবীর করো মৃত্যু সম্পর্কিত হত, তখন তারা ওই বিষয়
    নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন এবং ত ৷র৷ বলাবলি করতেন, এরুপ হবে ৷ এদিকে শয়তানগণ
    ফেরেশতাদের আলোচনা শুনে ফেলত এবং তা এনে নিজেদের মানুষ বন্ধুদের নিকট পৌছিয়ে
    দিত ৷ রাসুলুল্লড়াহ্ (সা)-এর রিসালাতপ্রাপ্তির পর থেকে শয়তানদেরকে উল্কাপিও নিক্ষেপ করে
    বিতাড়িত করা হয় ৷ উল্কাপিও নিক্ষেপের বিষয়টি সর্বপ্রথম অবগত হয় ছাকীফ গোত্রের
    লোকেরা ৷ উল্কাপিণ্ডের পতনকে বিপদ মনে করে ওই বিপদ থেকে মুক্তিলাভের জন্যে তাদের
    মধ্যে যারা বকরীর মালিক তারা প্রতিদিন একটি করে বকরী যবাহ্ দিতে লাগল ৷ আর যারা
    উটের মালিক তারা প্রতিদিন একটি উট যবাহ্ দিতে লাগল ৷ অন্যরাও দ্রুত তাদের মালামাল
    দান-সাদাক৷ করতে শুরু করল ৷ ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ বলল, আপাতত তোমরা
    ধন-সম্পদ নষ্ট করো না ৷ বরং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ কর ৷ খসে পড়া তারকাগুলো যদি
    পথ-নির্দেশক তারকা হয়, তবে এটি বিপদ বটে , অন্যথায় বুঝতে হয়ে এটি নতুন কোন ঘটনার
    ফলশ্রুতি ৷ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারা বুঝে নিল যে, পথ-নির্দেশক তারকাগুলো যথান্থানে
    রয়েছে ৷ এগুলো মোটেও কক্ষচ্যুত হয়নি ৷ এরপর তারা মালামাল ও পশুপাখী উৎসর্গ করা
    থেকে বিরত রইল ৷

    এদিকে আল্লাহ্ত তা জানা একদল জিনকে কুরআন শোনার সুযোগ দিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
    নামাযরত থাকা অবস্থায় তারা কুরআন পাঠ শুনল ৷ সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা নিজেদেরকে
    বলল, চুপ করে শোনা শয়তানরা ইবলীসকে বিষয়টি জানাল ৷ সে বলল, ওহী শ্রবণে বাধাপ্রাপ্তি
    পৃথিবীতে ঘটে৷ যা ওয়া কোন ঘটনা ৷র ফলশ্রুতি ৷ তোমরা পৃথিবীর সকল অঞ্চল থেকে কিছু কিছু
    মাটি আমার নিকট নিয়ে এস ৷ অন্যান্য মাটির সাথে তারা তিহামাহ্ম্পা অঞ্চলের মাটিও নিয়ে এল ৷
    ইবলীস বলল, ঘটনা ঘটেছে এ স্থানে ৷

    বায়হাকী ও হাকিম এ হাদীছটি হাশাদ ইবন সলোমা সুত্রে আত৷ ইবন সাইব থেকে উদ্ধৃত
    করেছেন ৷

    ওয়াকিদী বলেন, উসামা ইবন যায়দ ইবন আসলড়াম কা’ব (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
    তিনি বলেছেন, হযরত ঈসা (আ ) এর উর্ধ্বারোহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
    নবুওয়াতপ্রাপ্তির পুর্ব পর্যন্ত কারো প্ৰতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়নি ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
    নবুওয়াত লাভের পর তা শুরু হয় ৷ কুরায়শগণ তখন উল্ক৷ পতনের এ বিস্ময়কর ঘটনাটি
    দেখতে পেলো যা ইতোপুর্বে তারা দেখেনি ৷ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মনে করে তারা তা থেকে

    মুক্তিলাভের জন্যে পশু উৎসর্গ করতে ও ক্রীতদাস যুক্ত করতে শুরু করে ৷ তাদের এ সংবাদ
    তাইফে পৌছলে ছাকীফ গোত্রের লােকেরাও অনুরুপ দান-দক্ষিণা শুরু করে ৷ ছাকীফ গোত্রের
    কার্যকলড়াপের কথা তাদের পােত্রপতি আবৃদে ইয়ালীল এর কানে যায় ৷ সে বলল, তোমরা এরুপ
    কেন করছ ? তারা বলল, আকাশ থেকে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হচ্ছে ৷ আমরা ওইগুলােকে
    আকাশ থেকে নিশ্চিত হতে দেখেছি ৷ সে বলল, ধন-সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেলে পুনরায় অর্জন
    করা কষ্টসাধ্য হবে ৷ তোমরা তাড়াহুড়াে করে কিছু করো না ৷ বরং ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে
    থাকে৷ ৷ যদি ঘটনা এমন হয় যে, আমাদের চেনা-জানা ও পরিচিত তারকাগুলাে খসে পড়ছে,
    তাহলে বুঝবে যে, মানুষের ধ্বংস শুরু হয়েছে ৷ আর যদি আমাদের ণ্চনা-জানা ও পরিচিতির
    বাইরের তারকাগুলো খসে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে পৃথিবী ত নতুন কোন ঘটনা ঘটায়
    প্রেক্ষিতে এমন হচ্ছে ৷ তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেল যে, পতনশীল উল্কাগুলাে
    তাদের পরিচিত তারকা নয় ৷ বিষয়টি তারা আবদে ইয়ালীলকে জানায় ৷ সে বলল,
    তোমাদেরকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ৷ কোন নবীর আবির্ভাব ঘটলে এমনটি হয়ে থাকে ৷

    অল্প কয়েক দিন পর নিজের ধন-সম্পদের ঘেড়াজখবর নেয়ার জন্যে আবু সুফিয়ান ইবন
    হাবৃব তাদের নিকট যায় ৷ আবদে ইয়ালীল এসে তার সাথে সাক্ষাত করে এবং উল্কাপতন
    বিষয়ে আলোচনা করে ৷ আবু সুফিয়ান বলল, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ আবির্ভুত হয়েছে ৷ সে
    নিজেকে রিসালাতপ্রাপ্ত নবী বলে দাবী করে ৷ আবদে ইয়ালীল বলল, এ কারণেই উল্কাপিণ্ড
    নিক্ষেপ করা হচ্ছে ৷

    সাঈদ ইবন মানসুর আমির শাবী সুত্রে অনুরুপ একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷

    বায়হাকী ও হাকিম (র) হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন
    যে, হযরত ঈসা (আ) থেকে মুহাম্মাদ (সা ) পর্যন্ত ওহী বিরতির মেয়াদে দুনিয়ার আকাশে প্রহরা
    ছিল না ৷ বস্তুত যারা প্রহরা না থাকার কথা বলেছেন সম্ভবত তারা এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে,
    তখন আকাশে প্ৰহরার কঠোরতা ছিল না ৷ অবশ্য সাধারণ প্রহরা ছিল ৷ তাদের উপরোক্ত
    বক্তব্যের এরুপ ব্যাখ্যা দেয়া একান্ত আবশ্যক ৷ কারণ, উক্ত বক্তব্যের বিপরীতে আবদুর রাযযাক
    ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, একদিন আমাদেরকে নিয়ে
    রাসুলুল্লাহ্ (না) একটি মজলিসে বসা ছিলেন ৷ হঠাৎ একটি উল্কাপিও নিক্ষিপ্ত হয়ে চারিদিক
    আলোকিত করে তোলে ৷ তিনি বললেন, এরুপ উল্কাপিগু নিক্ষিপ্ত হলে তোমরা কী ধারণা কর ?
    ইবন আব্বাস (রা) বললেন, তখন আমরা বলি যে, কোন সম্মানিত লোকের মৃত্যু হয়েছে বা
    জন্ম হয়েছে ৷

    রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, না, তা নয়, বরং ব্যাপার হল এই, একথা বলে তিনি সেই
    হাদীছটি বললেন, যেটি “জগত সৃষ্টির সুচনা অধ্যায়ে আকাশ ও তার নক্ষত্ররাজির সৃজন”
    শিংরানামের মধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি ৷ সকল প্রশংসা আল্লাহর ৷

    ইবন ইসহাক তার সীরাত গ্রন্থে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপের কাহিনী উল্লেখ করেছেন ৷ ছাকীফ
    গোত্রের জনৈক বয়ােবৃদ্ধ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন যে, ওই ব্যক্তি তার
    সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলেছিল যে, তোমরা তারকাগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ কর যে,

    পথ প্রদর্শক তারকাগুলে৷ যথান্থানে আছে নাকি স্থানচুতে হয়েছে ৷ তিনি উক্ত বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির
    নাম বলেছেন আমর ইবন উমায়্যা ৷

    সুদ্দী বলেছেন, পৃথিবীতে কোন নবী না থাকলে কিৎবা আল্লাহর কোন প্রধান দীন বিদ্যমান
    না থাকলে আকাশে প্ৰহরা থাকত না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নবৃওয়াত লাভের পুর্বে শয়তানরা
    দুনিয়ার আকাশে নিজেদের আসন নির্ধারণ করে রেখেছিল ৷ কি বিষয় সম্পর্কে আকাশ জগতে
    ফেরেশতাদের মধ্যে আলোচনা হত, তা তারা আড়ি পেতে শুনত ৷ আল্লাহ তাআল৷ হযরত
    মুহাম্মাদ (সা) কে যখন নবীরুপে প্রেরণ করলেন, তখন এক রাতে ওদের প্ৰতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ
    করা হল ৷ এটি দেখে৩াইফের অধিবাসীরা আত ত ৩হ্যয় উঠে ৷৩ তারা বলাবলি করতে শুরু
    করে যে, আকাশের অধিবাসীদের ধ্বংস অনিবার্য ৷ আকাৰু: শ ভয়ং কর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং
    উল্কা পিণ্ডের পতন দেখে তারা দ ৷সদাসী মুক্ত করা এবং পশুপাখী উৎসর্গ করা শুরু করে৷ আবদে
    ইয়ালীল ইবন আমর ইবন উমায়র তাদেরকে তিরস্কার করে বলে, ধিক তোমাদের জন্যে হে
    তাইফবাসি! তে তামাদের নিজেদের ধন সম্পদগুলাে এভাবে নষ্ট করো না ৷ বরং বড় বড়
    তারকাগুলােকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ কর ৷ যদি দেখতে পাও যে সেগুলো নিজ নিজ স্থানে স্থির
    আছে তবে বুঝে নিয়ে যে, আকাশের অধিবাসিগণ ধ্বংস হয়নি ৷ বরং আবু কাবাশার বংশধর
    ব্যক্তিটির কারণে এরুপ ঘটছে ৷ আর যদি ওই তারকাগুল্যেকে যথান্থানে দেখতে না পাও
    তাহলে আকাশের অধিরাসিগণ নিশ্চয় ধ্ব স হয়েছে ৷ তারা তারকাগুলে৷ যথান্থানে দেখতে পায়
    এবং নিজেদের ধন-সম্পদ বিলিয়ে দেয়৷ থেকে বিরত থাকে ৷ ওই রাতে শয়তানরা বিচলিত হয়ে
    ইবলীসেব নিকট গিয়ে উপস্থিত হয় ৷ পৃথিবীর সকল স্থান থেকে এক মুষ্টি করে মাটি আমার
    জন্যে সে ওদেরকে নির্দেশ দেয় ৷ তারা তার কথামত তা নিয়ে আসে ৷ সে মাটিগুলাের ঘ্রাণ
    নেয় এবং বলে, তোমাদের প্রতিপক্ষ তো মক্কাতেই রয়েছে ৷

    নসীবায়ন অঞ্চলের অধিবাসী সাতটি জিনকে সে মক্কা পাঠায় ৷ সেখানে এসে তারা
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে দেখতে পায় ৷ তিনি হারাম শরীফের মসজিদে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত
    করছিলেন ৷ কুরআন তিলাওয়াত শোনার প্রবল আগ্রহে তারা তার খুবই নিকটে পৌছে যায় ৷
    যেন তাদের বক্ষ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর দেহ মুবারক স্পর্শ করবে ৷ এরপর ওই জিনগুলাে ইসলাম
    গ্রহণ করে ৷ তাদের বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা আলা প্রিয়নবী (সা ) কে অবহিত করেন ৷

    ওয়ড়াকিদী বলেন, মুহাম্মাদ ইবন সালিহ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷
    তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন নবুওয়াত ৩লাভ করেন তখন সকল মুর্তি ৩মাথা নুইয়ে পড়ে
    যায় ৷ শয়ত৷ নরা ইবলীসেব নিকট এসে জানায় যে দৃনিয়ার তাবৎ মুর্তি মাথা নৃইয়ে পড়ে
    রয়েছে ৷ সে বলল, এরুপ ঘটেছে একজন নবীর ক বণে যাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে ৷
    শস্য-শ্যামল জনপদে তোমরা তার খোজ নাও তারা বলল, সেখানে তাকে খুজে আমরা তাকে
    পাইনি ৷ ইবলীস বলল, ঠিক আছে আমি নিজে তাকে খুজে বের করব ৷ এবার সে নিজে বের
    হল ৷ তাকে তােক অদৃশ্য থেকে বলা হল, দরজার পাশে তাকে খুজে দেখ ৷ অর্থাৎ মক্কায় খুজে
    দেখ ৷ “কা বনুস ছ ৷আলিব নামক স্থানে সে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) কে দেখতে পায় ৷ এরপর সে তার
    বাহিনীর নিকট গিয়ে বলে আমি তাকে পেয়েছি এবং লক্ষ্য করেছি যে, তার সহায়তায়

    জিবরাঈল ফেরেশতা রয়েছেন ৷ আচ্ছা, তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে ? তারা উত্তর দিল
    যে, তার সাথীদের নিকট কমনীয় ও রমণীয় বিষয়গুলােকে আমরা চিত্তাকর্ষক ও সুসজ্জিত করে
    রাখব এবং ওগুলোকে তাদের নিকট মােহনীয় করে তুলব ৷ এবার ইবলীস বলল, ঠিক আছে,
    তাহলে আমি নিরাশ হব না ৷

    ওয়াকিদী বলেন, তালহা ইবন আমর আবদুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
    বলেছেন, যে দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন, সেদিন শয়তানদেরকে আকাশে যেতে
    বধো দেয়া হল এবং তাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হল ৷ তখন শয়তানরা ইবলীসের নিকট
    গিয়ে উপস্থিত হয় এবং ওই ঘটনা তাকে জানায় ৷ তখন সে বলে, আসলে নতুন একটি ঘটনা
    ঘটেছে ৷ ইসরাঈলীদের নির্গমন স্থলে পবিত্র ভুমিতে তোমাদের প্রতি একজন নবী প্রেরিত
    হয়েছেন ৷ তার খোজে শয়তানরা সিরিয়ায় যায় ৷ কিন্তু সেখানে তাকে না পেয়ে তারা ইবলীসের
    নিকট ফিরে এসে বলে, ওখানে তিনি সেই ৷ ইবলীস বলল, ঠিক আছে, আমি নিজে তাকে খুজে
    বের করব ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর খোজে সে মক্কায় গমন করে ৷ যে তাকে দেখতে পায় যে,
    তিনি হেরা গুহায় অবতরণ করছেন ৷ তার সাথে রয়েছেন ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) ৷ সে তার
    শিষ্যদের নিকট ফিরে আসে ৷ তাদের উদ্দেশ্যে সে বলে, আহমদ (সা) নবীরুপে প্রেরিত
    হয়েছেন, তার সাথে রয়েছেন জিবরাঈল (আ) ৷ তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে ? তারা
    সমন্বয়ে উত্তর দিল যে, আমাদের নিকট আছে দুনিয়া ৷ এটিকে আমরা মানব জাতির নিকট
    চাকচিক্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলব ৷ যে বলল, ঠিক আছে, তবে তাই কর ৷

    ওয়াকিদী (র) বলেন, তালহা ইবন আমর ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বলেছেন,
    শয়তানরা আড়ি পেতে ওহী শ্রবণ করত ৷ মুহাম্মাদ (সা) যখন নবুওয়াত লাভ করলেন, তারা
    ওহী শ্রবণে বাধা প্রাপ্ত হল ৷ ইবলীসের নিকট তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেশ করে ৷ সে বলে,
    নিশ্চয়ই কোন নতুন ঘটনা ঘটেছে ৷ সে আবু কুবায়স পাহাড়ে উঠল ৷ এটি পৃথিবীর আদি
    পাহাড় ৷ ওখান থেকে সে দেখতে পেল যে, রাসুলুল্পাহ্ (সা) মাকামে ইবরাহীমের পেছনে নামায
    আদায় করছেন ৷ সে বলল, আমি গিয়ে তার ঘাড় মটকে দিই ৷ রাগে গরগর করতে করতে সে
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট যায় ৷ তার নিকট তখন হযরত জিবরাঈল (আ) ছিলেন ৷

    হযরত জিবরাঈল (আ) তখন ইবলীসকে এমন একটি লাথি নামের যে , সে দুরে বহুদুরে
    গিয়ে ছিটকে পড়ল এবং পালিয়ে প্রাণ র্বাচাল ৷ অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, জিবরাঈল (আ)
    তাকে এমন সজােরে লাথি যেরেছিলেন যে, সে এডেন অঞ্চলে গিয়ে পড়েছিল ৷

    রাসুলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে ?

    হযরত জিবরাঈল (আ) প্রথমবার কোন অবস্থায় এসেছিলেন তা ইতোপুর্বে আলোচিত
    হয়েছে ৷ দ্বিতীয়বার কেমন অবস্থায় এসেছিলেন তাও আলোচনা করা হয়েছে ৷ মালিক (র)
    হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হারিছ ইবন হিশাম রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে
    জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনার নিকট ওহী আসে কেমন করে ? উত্তরে তিনি
    বলেছিলেন, কখনো আসে ঘন্টাধ্বনির ন্যায় ৷ এটি আমার জন্যে খুবই কষ্টকর হয় ৷ এরপর ওই
    পরিস্থিতি কেটে যায় আর যা নাযিল হল আমি তা সংরক্ষণ করি ৷ কখনো কখনো ওই ফেরেশতা

    সম্পর্কিত পোস্ট:


    নোটঃ পরিচ্ছেদ কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।

    মীযান জামাতের সমস্ত কিতাব PDF Download

    নাহবেমীর জামাতের কিতাব PDF Download

    হেদায়াতুন নাহু জামাতের কিতাব PDF Download

    কাফিয়া জামাতের কিতাব PDF Download

    শরহে জামী জামাতের কিতাব PDF Download

    জালালাইন জামাতের কিতাব PDF Download

    মেশকাত জামাতের কিতাব PDF Download

    দাওরায়ে হাদিসের কিতাব সমূহ PDF Download

    মাদানী নেসাবের কিতাবসমূহ PDF Download

    Leave a Comment

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.