সৌভাগ্যের অধিকারী তার৷ তার প্ৰতি ঈমান আনয়ন করেন ৷ সত ব্রুাদ্রোহী অহং কারীরা তার
বিরোধিতা ও অবাধ্য৩ ৷য় লিপ্ত হয় ৷ স্বাধীন বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেন
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) ৷ অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেন হযরত
আলী ইবন আবী তালিব (রা) মহিলাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সহধর্মিণী হযরত খাদীজা
(বা) এবং আযাদকৃত দাসদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর ক্রীতদাস হযরত যায়দ ইবন হ রিছা
কালবী ৷ আল্পাহ্৩ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাদেরকে সভুষ্ট করুন ৷
ওহী সম্পর্কিত সংবাদ পাওয়ার পর ওয়ারাক৷ ইবন নাওফিলের ঈমান আনয়ন সম্পর্কে
ইতোপুর্বে আলোচনা হয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রতি ওহীশ্বিরতিকালে ওয়ারাক৷ ইনতিকাল
করেন ৷
পরিচ্ছেদ
কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার প্রাক্কালে জিন ও সতাদ্রোহী শয়তানদের আসমানী সংবাদ
শ্রবণে বাধা দেয়া হতো যাতে করে তারা কুরআনের একটি বর্ণও চুরি করে শুনতে না পড়ায় ৷
কুরআনের কিছু অং শও যদি তারা শুনতে (পত, তবে তা তাদের বন্ধুদের নিকট পৌছিয়ে দিত ৷
ফলে সত্য মিথ্যায় স০ মিশ্রণ ঘটায় আশঙ্কা থাকতো ৷ এটি সৃষ্টিজগতের প্রতি আল্লাহ তা জানার
পরম দয়া ও অনুগ্রহ যে , তিনি জিন ও দুর্ধর্ষ শয়তানদেরকে আসমানী সংবাদ শ্রবণ থেকে বিরত
রেখেছেন ৷ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআল৷ তাদের উক্তির উল্লেখ করেন এভাবে :
-এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য স০ গ্রহ করতে ৷ কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম
কঠোর গ্রহণ ও উল্কপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপুর্ণ ৷ আর পুর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাটিতে
ত্বাদ শোনার জন্যে বসতাম ৷ কিন্তু এখন কেউ স০ বা দ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের
জন্যে প্রস্তুত জ্বলম্ভ উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয় ৷ আমরা জানি না জগত বাসীর অকল্যাণই
অতিপ্রেত, নাকি৩ ৷দের প্ৰতিপালক তাদের কল্যাণ চান ? ( ৭২ ৮ ১০ ) ৷
আল্লাহ তা জানা অন্যত্র বলেন :
শয়তানরা তা নিয়ে অবতরণ করেনি ৷ তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এটির সামর্থও
রাখে না ৷ ওদেরকে তো তা শোনার সুযোগ থেকে দুরে রাখা হয়েছে (২৬ ন্তু ২ ১ : ২১ ১ ) ৷
হাফিয আবু নুআয়ম বলেন, সুলায়মান ইবন আহমদ তড়াবারানী হযরত ইবন আব্বাস
(রা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেছেন, জিনরা আকাশে আরোহণ করে ওহী বিষয়ক
আলোচনা শুনত ৷ তার মধ্য থেকে একটি কথা কন্ঠস্থ করে সেটির সাথে আরও নয়টি কথা তারা
যোগ করত ৷ ফলে একটি কথা সত্য হত আর তাদের যোগ করা কথাগুলো অসত্য প্রমাণিত
হত ৷ নবী করীম (না) যখন বাসুলরুপে প্রেরিত হলেন, তখন তাদেরকে তাথেকে বাধা দেয়া
হয় ৷ বিষয়টি তারা ইবলীসকে জানায় ৷ ইতোপুর্বে অবশ্য তাদের প্ৰতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা
হতো না ৷ ইবলীস বলল, নিশ্চয়ই পৃথিবীতে কিছু একটা ঘটেছে যার জংন্য এমনটি হচ্ছে ৷
কারণ অনুসন্ধানের জন্যে সে তার শিষ্যদেরকে পাঠায় ৷ তারা দেখতে পায় যে, দুটো পাহাড়ের
মধ্যবর্তী এক স্থানে রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) দাড়িয়ে নামায আদায় করছেন ৷ ভাবা এসে ইবলীসকে তা
জানার ৷ সে বলে, এ-ই আসল ঘটনা বা পৃথিবীতে ঘটেছে ৷
আবু আওয়ানা হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওর্তার সাহাবীপণ উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলেন ৷ তখন
আসমানী সংবাদ শ্রবণে শয়তানরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল ৷ তাদের প্রতি উল্কাপিগু নিক্ষেপ করা শুরু
হয়েছিল ৷ বাধাপ্রাপ্ত শয়তানরা আপন সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে ৷ ওরা জিজ্ঞেস করল, কী
ব্যাপার, তোমরা ফিরে এলে কেন ? উত্তরে ওরা বলল, আসমানী সংবাদ শ্রবণে আমাদেরকে
বাধা দেয়া হয়েছে ৷ আমাদের প্রতি উল্কাপিগু নিক্ষেপ করা হয়েছে ৷ ওরা বলল, নিশ্চয় পৃথিবীতে
নতুন কোন ঘটনা ঘটেছে যার ফলে এমনটি হয়েছে ৷ তোমরা পুর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত
খুজে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত হও ৷ জিনদের একটি দল তিহামা অভিমুখে যাচ্ছিল ৷
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর উকায বাজারে যাওয়ার পথে তারা তাকে নাখল নামক স্থানে দেখতে পায় ৷
তিনি তখন সাহাবীপণকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন, কুরআন তিলাওয়াত শুনে
তারা অত্যন্ত মনােযোগী হয় ৷ তখন তারা বলাবলি করে, এটিই হল মুল ঘটনা যার জন্যে
আমরা আসমানী সংবাদ শ্রবণে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি ৷ এরপর তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে
গিয়ে বলে :
-আযরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি ৷ যা সঠিক পথ-নির্দেশ করে ৷ ফলে আমরা
তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি ৷ আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের শরীক নির্ধারণ করব না ৷
(৭২ : ১ ২) ৷ এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা প্রিয়নবী (না)-এর প্রতি ওহী নাযিল করেন :
বলুন, আমার প্রতি ওহী প্রেরিত হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ
করেছে (প্রাগুক্ত) ৷ সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে এ হাদীছ উল্লিখিত হয়েছে ৷
আবু বকর ইবন আবী শায়বা হযরত ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, আসমানী সংবাদ শ্রবণের জন্যে জিনদের প্রত্যেক গোত্রের আকাশে আলাদা আলাদা
বসার স্থান ছিল ৷ যখন ওহী নাযিল হত, তখন ফেরেশতাগণ কঠিন পাথরে লোহার আঘাতের
ন্যায় শব্দ শুনতে পেতেন ৷ ওই শব্দ শুনে ফেরেশতাগণ সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন ৷ ওহী নাযিল
সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা মাথা তুলতেন না ৷ ওহী নাযিল শেষ হওয়ার পর তারা একে অন্যে
বলাবলি করতেন, “তোমাদের প্রতিপালক কী বললেন ?” যদি ওহীটি উর্ধ্ব জগত বিষয়ক হত,
তবে তারা বলতেন, “তিনি সত্য বলেছেন, তিনি সমুচ্চ মহান ৷ ” আর যদি সেটি পৃথিবীতে
অনুষ্ঠিতব্য অদৃশ্য বিষয় হত, অথবা পৃথিবীর করো মৃত্যু সম্পর্কিত হত, তখন তারা ওই বিষয়
নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন এবং ত ৷র৷ বলাবলি করতেন, এরুপ হবে ৷ এদিকে শয়তানগণ
ফেরেশতাদের আলোচনা শুনে ফেলত এবং তা এনে নিজেদের মানুষ বন্ধুদের নিকট পৌছিয়ে
দিত ৷ রাসুলুল্লড়াহ্ (সা)-এর রিসালাতপ্রাপ্তির পর থেকে শয়তানদেরকে উল্কাপিও নিক্ষেপ করে
বিতাড়িত করা হয় ৷ উল্কাপিও নিক্ষেপের বিষয়টি সর্বপ্রথম অবগত হয় ছাকীফ গোত্রের
লোকেরা ৷ উল্কাপিণ্ডের পতনকে বিপদ মনে করে ওই বিপদ থেকে মুক্তিলাভের জন্যে তাদের
মধ্যে যারা বকরীর মালিক তারা প্রতিদিন একটি করে বকরী যবাহ্ দিতে লাগল ৷ আর যারা
উটের মালিক তারা প্রতিদিন একটি উট যবাহ্ দিতে লাগল ৷ অন্যরাও দ্রুত তাদের মালামাল
দান-সাদাক৷ করতে শুরু করল ৷ ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ বলল, আপাতত তোমরা
ধন-সম্পদ নষ্ট করো না ৷ বরং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ কর ৷ খসে পড়া তারকাগুলো যদি
পথ-নির্দেশক তারকা হয়, তবে এটি বিপদ বটে , অন্যথায় বুঝতে হয়ে এটি নতুন কোন ঘটনার
ফলশ্রুতি ৷ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারা বুঝে নিল যে, পথ-নির্দেশক তারকাগুলো যথান্থানে
রয়েছে ৷ এগুলো মোটেও কক্ষচ্যুত হয়নি ৷ এরপর তারা মালামাল ও পশুপাখী উৎসর্গ করা
থেকে বিরত রইল ৷
এদিকে আল্লাহ্ত তা জানা একদল জিনকে কুরআন শোনার সুযোগ দিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
নামাযরত থাকা অবস্থায় তারা কুরআন পাঠ শুনল ৷ সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা নিজেদেরকে
বলল, চুপ করে শোনা শয়তানরা ইবলীসকে বিষয়টি জানাল ৷ সে বলল, ওহী শ্রবণে বাধাপ্রাপ্তি
পৃথিবীতে ঘটে৷ যা ওয়া কোন ঘটনা ৷র ফলশ্রুতি ৷ তোমরা পৃথিবীর সকল অঞ্চল থেকে কিছু কিছু
মাটি আমার নিকট নিয়ে এস ৷ অন্যান্য মাটির সাথে তারা তিহামাহ্ম্পা অঞ্চলের মাটিও নিয়ে এল ৷
ইবলীস বলল, ঘটনা ঘটেছে এ স্থানে ৷
বায়হাকী ও হাকিম এ হাদীছটি হাশাদ ইবন সলোমা সুত্রে আত৷ ইবন সাইব থেকে উদ্ধৃত
করেছেন ৷
ওয়াকিদী বলেন, উসামা ইবন যায়দ ইবন আসলড়াম কা’ব (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেছেন, হযরত ঈসা (আ ) এর উর্ধ্বারোহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
নবুওয়াতপ্রাপ্তির পুর্ব পর্যন্ত কারো প্ৰতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়নি ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
নবুওয়াত লাভের পর তা শুরু হয় ৷ কুরায়শগণ তখন উল্ক৷ পতনের এ বিস্ময়কর ঘটনাটি
দেখতে পেলো যা ইতোপুর্বে তারা দেখেনি ৷ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মনে করে তারা তা থেকে
মুক্তিলাভের জন্যে পশু উৎসর্গ করতে ও ক্রীতদাস যুক্ত করতে শুরু করে ৷ তাদের এ সংবাদ
তাইফে পৌছলে ছাকীফ গোত্রের লােকেরাও অনুরুপ দান-দক্ষিণা শুরু করে ৷ ছাকীফ গোত্রের
কার্যকলড়াপের কথা তাদের পােত্রপতি আবৃদে ইয়ালীল এর কানে যায় ৷ সে বলল, তোমরা এরুপ
কেন করছ ? তারা বলল, আকাশ থেকে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হচ্ছে ৷ আমরা ওইগুলােকে
আকাশ থেকে নিশ্চিত হতে দেখেছি ৷ সে বলল, ধন-সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেলে পুনরায় অর্জন
করা কষ্টসাধ্য হবে ৷ তোমরা তাড়াহুড়াে করে কিছু করো না ৷ বরং ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে
থাকে৷ ৷ যদি ঘটনা এমন হয় যে, আমাদের চেনা-জানা ও পরিচিত তারকাগুলাে খসে পড়ছে,
তাহলে বুঝবে যে, মানুষের ধ্বংস শুরু হয়েছে ৷ আর যদি আমাদের ণ্চনা-জানা ও পরিচিতির
বাইরের তারকাগুলো খসে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে পৃথিবী ত নতুন কোন ঘটনা ঘটায়
প্রেক্ষিতে এমন হচ্ছে ৷ তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেল যে, পতনশীল উল্কাগুলাে
তাদের পরিচিত তারকা নয় ৷ বিষয়টি তারা আবদে ইয়ালীলকে জানায় ৷ সে বলল,
তোমাদেরকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ৷ কোন নবীর আবির্ভাব ঘটলে এমনটি হয়ে থাকে ৷
অল্প কয়েক দিন পর নিজের ধন-সম্পদের ঘেড়াজখবর নেয়ার জন্যে আবু সুফিয়ান ইবন
হাবৃব তাদের নিকট যায় ৷ আবদে ইয়ালীল এসে তার সাথে সাক্ষাত করে এবং উল্কাপতন
বিষয়ে আলোচনা করে ৷ আবু সুফিয়ান বলল, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ আবির্ভুত হয়েছে ৷ সে
নিজেকে রিসালাতপ্রাপ্ত নবী বলে দাবী করে ৷ আবদে ইয়ালীল বলল, এ কারণেই উল্কাপিণ্ড
নিক্ষেপ করা হচ্ছে ৷
সাঈদ ইবন মানসুর আমির শাবী সুত্রে অনুরুপ একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷
বায়হাকী ও হাকিম (র) হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন
যে, হযরত ঈসা (আ) থেকে মুহাম্মাদ (সা ) পর্যন্ত ওহী বিরতির মেয়াদে দুনিয়ার আকাশে প্রহরা
ছিল না ৷ বস্তুত যারা প্রহরা না থাকার কথা বলেছেন সম্ভবত তারা এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে,
তখন আকাশে প্ৰহরার কঠোরতা ছিল না ৷ অবশ্য সাধারণ প্রহরা ছিল ৷ তাদের উপরোক্ত
বক্তব্যের এরুপ ব্যাখ্যা দেয়া একান্ত আবশ্যক ৷ কারণ, উক্ত বক্তব্যের বিপরীতে আবদুর রাযযাক
ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, একদিন আমাদেরকে নিয়ে
রাসুলুল্লাহ্ (না) একটি মজলিসে বসা ছিলেন ৷ হঠাৎ একটি উল্কাপিও নিক্ষিপ্ত হয়ে চারিদিক
আলোকিত করে তোলে ৷ তিনি বললেন, এরুপ উল্কাপিগু নিক্ষিপ্ত হলে তোমরা কী ধারণা কর ?
ইবন আব্বাস (রা) বললেন, তখন আমরা বলি যে, কোন সম্মানিত লোকের মৃত্যু হয়েছে বা
জন্ম হয়েছে ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, না, তা নয়, বরং ব্যাপার হল এই, একথা বলে তিনি সেই
হাদীছটি বললেন, যেটি “জগত সৃষ্টির সুচনা অধ্যায়ে আকাশ ও তার নক্ষত্ররাজির সৃজন”
শিংরানামের মধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি ৷ সকল প্রশংসা আল্লাহর ৷
ইবন ইসহাক তার সীরাত গ্রন্থে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপের কাহিনী উল্লেখ করেছেন ৷ ছাকীফ
গোত্রের জনৈক বয়ােবৃদ্ধ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন যে, ওই ব্যক্তি তার
সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলেছিল যে, তোমরা তারকাগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ কর যে,
পথ প্রদর্শক তারকাগুলে৷ যথান্থানে আছে নাকি স্থানচুতে হয়েছে ৷ তিনি উক্ত বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির
নাম বলেছেন আমর ইবন উমায়্যা ৷
সুদ্দী বলেছেন, পৃথিবীতে কোন নবী না থাকলে কিৎবা আল্লাহর কোন প্রধান দীন বিদ্যমান
না থাকলে আকাশে প্ৰহরা থাকত না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নবৃওয়াত লাভের পুর্বে শয়তানরা
দুনিয়ার আকাশে নিজেদের আসন নির্ধারণ করে রেখেছিল ৷ কি বিষয় সম্পর্কে আকাশ জগতে
ফেরেশতাদের মধ্যে আলোচনা হত, তা তারা আড়ি পেতে শুনত ৷ আল্লাহ তাআল৷ হযরত
মুহাম্মাদ (সা) কে যখন নবীরুপে প্রেরণ করলেন, তখন এক রাতে ওদের প্ৰতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ
করা হল ৷ এটি দেখে৩াইফের অধিবাসীরা আত ত ৩হ্যয় উঠে ৷৩ তারা বলাবলি করতে শুরু
করে যে, আকাশের অধিবাসীদের ধ্বংস অনিবার্য ৷ আকাৰু: শ ভয়ং কর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং
উল্কা পিণ্ডের পতন দেখে তারা দ ৷সদাসী মুক্ত করা এবং পশুপাখী উৎসর্গ করা শুরু করে৷ আবদে
ইয়ালীল ইবন আমর ইবন উমায়র তাদেরকে তিরস্কার করে বলে, ধিক তোমাদের জন্যে হে
তাইফবাসি! তে তামাদের নিজেদের ধন সম্পদগুলাে এভাবে নষ্ট করো না ৷ বরং বড় বড়
তারকাগুলােকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ কর ৷ যদি দেখতে পাও যে সেগুলো নিজ নিজ স্থানে স্থির
আছে তবে বুঝে নিয়ে যে, আকাশের অধিবাসিগণ ধ্বংস হয়নি ৷ বরং আবু কাবাশার বংশধর
ব্যক্তিটির কারণে এরুপ ঘটছে ৷ আর যদি ওই তারকাগুল্যেকে যথান্থানে দেখতে না পাও
তাহলে আকাশের অধিরাসিগণ নিশ্চয় ধ্ব স হয়েছে ৷ তারা তারকাগুলে৷ যথান্থানে দেখতে পায়
এবং নিজেদের ধন-সম্পদ বিলিয়ে দেয়৷ থেকে বিরত থাকে ৷ ওই রাতে শয়তানরা বিচলিত হয়ে
ইবলীসেব নিকট গিয়ে উপস্থিত হয় ৷ পৃথিবীর সকল স্থান থেকে এক মুষ্টি করে মাটি আমার
জন্যে সে ওদেরকে নির্দেশ দেয় ৷ তারা তার কথামত তা নিয়ে আসে ৷ সে মাটিগুলাের ঘ্রাণ
নেয় এবং বলে, তোমাদের প্রতিপক্ষ তো মক্কাতেই রয়েছে ৷
নসীবায়ন অঞ্চলের অধিবাসী সাতটি জিনকে সে মক্কা পাঠায় ৷ সেখানে এসে তারা
রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে দেখতে পায় ৷ তিনি হারাম শরীফের মসজিদে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত
করছিলেন ৷ কুরআন তিলাওয়াত শোনার প্রবল আগ্রহে তারা তার খুবই নিকটে পৌছে যায় ৷
যেন তাদের বক্ষ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর দেহ মুবারক স্পর্শ করবে ৷ এরপর ওই জিনগুলাে ইসলাম
গ্রহণ করে ৷ তাদের বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা আলা প্রিয়নবী (সা ) কে অবহিত করেন ৷
ওয়ড়াকিদী বলেন, মুহাম্মাদ ইবন সালিহ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷
তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন নবুওয়াত ৩লাভ করেন তখন সকল মুর্তি ৩মাথা নুইয়ে পড়ে
যায় ৷ শয়ত৷ নরা ইবলীসেব নিকট এসে জানায় যে দৃনিয়ার তাবৎ মুর্তি মাথা নৃইয়ে পড়ে
রয়েছে ৷ সে বলল, এরুপ ঘটেছে একজন নবীর ক বণে যাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে ৷
শস্য-শ্যামল জনপদে তোমরা তার খোজ নাও তারা বলল, সেখানে তাকে খুজে আমরা তাকে
পাইনি ৷ ইবলীস বলল, ঠিক আছে আমি নিজে তাকে খুজে বের করব ৷ এবার সে নিজে বের
হল ৷ তাকে তােক অদৃশ্য থেকে বলা হল, দরজার পাশে তাকে খুজে দেখ ৷ অর্থাৎ মক্কায় খুজে
দেখ ৷ “কা বনুস ছ ৷আলিব নামক স্থানে সে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) কে দেখতে পায় ৷ এরপর সে তার
বাহিনীর নিকট গিয়ে বলে আমি তাকে পেয়েছি এবং লক্ষ্য করেছি যে, তার সহায়তায়
জিবরাঈল ফেরেশতা রয়েছেন ৷ আচ্ছা, তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে ? তারা উত্তর দিল
যে, তার সাথীদের নিকট কমনীয় ও রমণীয় বিষয়গুলােকে আমরা চিত্তাকর্ষক ও সুসজ্জিত করে
রাখব এবং ওগুলোকে তাদের নিকট মােহনীয় করে তুলব ৷ এবার ইবলীস বলল, ঠিক আছে,
তাহলে আমি নিরাশ হব না ৷
ওয়াকিদী বলেন, তালহা ইবন আমর আবদুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
বলেছেন, যে দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন, সেদিন শয়তানদেরকে আকাশে যেতে
বধো দেয়া হল এবং তাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হল ৷ তখন শয়তানরা ইবলীসের নিকট
গিয়ে উপস্থিত হয় এবং ওই ঘটনা তাকে জানায় ৷ তখন সে বলে, আসলে নতুন একটি ঘটনা
ঘটেছে ৷ ইসরাঈলীদের নির্গমন স্থলে পবিত্র ভুমিতে তোমাদের প্রতি একজন নবী প্রেরিত
হয়েছেন ৷ তার খোজে শয়তানরা সিরিয়ায় যায় ৷ কিন্তু সেখানে তাকে না পেয়ে তারা ইবলীসের
নিকট ফিরে এসে বলে, ওখানে তিনি সেই ৷ ইবলীস বলল, ঠিক আছে, আমি নিজে তাকে খুজে
বের করব ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর খোজে সে মক্কায় গমন করে ৷ যে তাকে দেখতে পায় যে,
তিনি হেরা গুহায় অবতরণ করছেন ৷ তার সাথে রয়েছেন ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) ৷ সে তার
শিষ্যদের নিকট ফিরে আসে ৷ তাদের উদ্দেশ্যে সে বলে, আহমদ (সা) নবীরুপে প্রেরিত
হয়েছেন, তার সাথে রয়েছেন জিবরাঈল (আ) ৷ তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে ? তারা
সমন্বয়ে উত্তর দিল যে, আমাদের নিকট আছে দুনিয়া ৷ এটিকে আমরা মানব জাতির নিকট
চাকচিক্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলব ৷ যে বলল, ঠিক আছে, তবে তাই কর ৷
ওয়াকিদী (র) বলেন, তালহা ইবন আমর ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বলেছেন,
শয়তানরা আড়ি পেতে ওহী শ্রবণ করত ৷ মুহাম্মাদ (সা) যখন নবুওয়াত লাভ করলেন, তারা
ওহী শ্রবণে বাধা প্রাপ্ত হল ৷ ইবলীসের নিকট তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেশ করে ৷ সে বলে,
নিশ্চয়ই কোন নতুন ঘটনা ঘটেছে ৷ সে আবু কুবায়স পাহাড়ে উঠল ৷ এটি পৃথিবীর আদি
পাহাড় ৷ ওখান থেকে সে দেখতে পেল যে, রাসুলুল্পাহ্ (সা) মাকামে ইবরাহীমের পেছনে নামায
আদায় করছেন ৷ সে বলল, আমি গিয়ে তার ঘাড় মটকে দিই ৷ রাগে গরগর করতে করতে সে
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট যায় ৷ তার নিকট তখন হযরত জিবরাঈল (আ) ছিলেন ৷
হযরত জিবরাঈল (আ) তখন ইবলীসকে এমন একটি লাথি নামের যে , সে দুরে বহুদুরে
গিয়ে ছিটকে পড়ল এবং পালিয়ে প্রাণ র্বাচাল ৷ অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, জিবরাঈল (আ)
তাকে এমন সজােরে লাথি যেরেছিলেন যে, সে এডেন অঞ্চলে গিয়ে পড়েছিল ৷
রাসুলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ওহী আসতো কেমন করে ?
হযরত জিবরাঈল (আ) প্রথমবার কোন অবস্থায় এসেছিলেন তা ইতোপুর্বে আলোচিত
হয়েছে ৷ দ্বিতীয়বার কেমন অবস্থায় এসেছিলেন তাও আলোচনা করা হয়েছে ৷ মালিক (র)
হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হারিছ ইবন হিশাম রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে
জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনার নিকট ওহী আসে কেমন করে ? উত্তরে তিনি
বলেছিলেন, কখনো আসে ঘন্টাধ্বনির ন্যায় ৷ এটি আমার জন্যে খুবই কষ্টকর হয় ৷ এরপর ওই
পরিস্থিতি কেটে যায় আর যা নাযিল হল আমি তা সংরক্ষণ করি ৷ কখনো কখনো ওই ফেরেশতা