Home » অনুবাদকৃত বইসমুহ » আল বিদায়া ওয়ান্নিহায়া - খন্ড ৩ » পরিচ্ছেদ : সাহাবায়ে কিরাম (রা) – এর আবিসিনিয়ায় হিজরত

পরিচ্ছেদ : সাহাবায়ে কিরাম (রা) – এর আবিসিনিয়ায় হিজরত

  • 3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
  • Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
  • অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) যদি নিম্নস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করতেন, তাহলে যারা
    মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত শুনতে চাইতেন, তারা তা শুনতে পেতেন না ৷ এই প্রেক্ষিতে
    পাঠ করবেন না যায় ফলে ওরা সবইি আপনার নিকট থেকে দুরে সরে যায় ৷ ৷ঠু ;ষ্১!ট্রু
    এবং অতিশয় ক্ষীণস্বরেও পাঠ করবেন না ৷ তা হলে তো গোপনে শ্ররণকারীরা তা শুনছুত পাবে
    না ৷ এমনও হতে পারে যে, সে যা শুনবে তাতে তার অম্ভরে থােদাভীতি সৃষ্টি হবে এবং সে
    উপকৃত হবে ৷এ দুয়ের মধ্যপস্থা অবলম্বন করুন!

    পরিছেদ : সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর আবিসিনিয়ায় হিজৱত

    মুসলমানদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিলেন , তাদের প্রতি মুশরিকদের
    অত্যাচার-নির্যাতন, নির্দয় প্রহার এবং অপমান, লাঞ্চুনার কথা ইভােপুর্বে আলোচিত হয়েছে ৷
    আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবী (সা) থেকে ওদেরকে সরিয়ে রেখেছিলেন এবং চাচা আবু তালিবের
    মাধ্যমে তাকে কাফিরদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন ৷ এ বিষয়ে ইতোপুর্বে উল্লেখ করা
    হয়েছে ৷ সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ্র জন্যে ৷

    ঐতিহাসিক ওয়াকিদী বলেন, তারা নবুওয়াতের পঞ্চম বছর রজব মাসে আবিসিনিয়ায়
    উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ৷ সর্বপ্রথম ১ ১জন পুরুষ এবং : জন মহিলা সেখানে হিজৱত করেন ৷
    পদব্রজে এবং সওয়ারীতে আরোহণ করে তারা সাগর তীরে গিয়ে পৌছেন ৷ এরপর অ র্ধ
    দীনারের বিনিময়ে আবিসিনিয়া পর্যন্ত একটি নৌকা ভাড়া করেন ৷ তারা হলেন উছমান ইবন
    আফ্ফান, তার সহধর্মিণী রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কন্যা রুকাইয়া , আবু হুযায়ফা ইবন উতবা , তার
    শ্রী সাহ্লা বিনত সুহায়ল, যুবায়র ইবন আওঅ্যাম , মুসআব ইবন উমায়র , আবদুর রহমান ইবন
    আওফ , আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদ, তার শ্রী উন্মু সালামা বিনত আবু উমাইয়া, উছমান
    ইবন মাযউন, আমির ইবন রাবীআ আল-আনাসী, তার শ্রী লায়লা বিনত আবু হাছামড়াহ্, আবু
    সাবুরা ইবন আবু রুহাম মতান্তরে আবু হাতির ইবন আমর, সুহায়ল ইবন বায়দা, আবদুল্লাহ
    ইবন মাসউদ বাযিয়াল্লাহু আনহুম কৃআজমাঈন ৷

    ইবন জারীর (র) প্রমুখ বলেন, মহিলা ও শিশু ব্যতীত শুধু পুরুষ ছিলেন ৮২ জন ৷ আমার
    ইবন ইয়াসির (বা) তাদের সাথে ছিলেন কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে ৷ তিনি যদি
    তাদের সাথে থাকেন, তবে তাদের সংখ্যা হবে ৮৩ ৷

    মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না) তার সড়াহাবীদের উপর আপতিত
    মুশরিকদের জুলুম-নির্যাতন দেখলেন এবং এও দেখলেন যে, আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতে
    এবং আবু তালিবের মাধ্যমে তাকে ওদের জুলুম থেকে রক্ষা করছেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) কিভু
    নিজে তার সাহাবীদেরকে বিপদাপদ ও জুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারছেন না ৷ তখন
    তিনি সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা যদি আবিসিনিয়া চলে যেতে, তাহলে ভাল
    হত ৷ কারণ, সেখানে একজন রাজা আছেন যিনি কারো প্রতি জুলুম করেন না ৷ এবং সেটি
    একটি ভাল রাজ্য ৷ ওখানে গেলে আল্লাহ তাআলা তােমাদেরকে এই জুলুম-নির্যাতন থেকে
    মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন ৷ এ প্রেক্ষিতে জুলুম-অত্যাচার থেকে মুক্তি এবং দীন-ধর্ম রক্ষার
    লক্ষে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাহাবীগণের একটি দল আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন ৷ এটি হল
    ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের প্রথম হিজরত ৷ সর্বপ্রথম র্ষারা বের হলেন, তারা হলেন
    উছমান ইবন আফ্ফান (বা) , তার শ্রী ও রড়াসুলুল্লাহ্ (না)-এর কন্যা রুকাইয়া (রা) ৷

    বায়হাকী (র) ইয়াকুব ইবন সুফিয়ান কাতাদা (র) সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি
    বলেছেন, সর্বপ্রথম সপরিবারে যিনি হিজরত করলেন তিনি হলেন উছমান ইবন আফ্ফান (বা) ৷
    আমি নাযর ইবন আনাসকে বলতে শুনেছি, তিনি বলছিলেন যে , আমি আবু হামযা অর্থাৎ আনাস
    ইবন মালিক (রা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছিলেন, উছমান ইবন আফ্ফান (রা)
    আবিসিনিয়ায় হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেন ৷ তার সাথে ছিলেন তার শ্ৰী নবী
    দুহিতা রুকাইয়া (বা) ৷ দীর্ঘদিন পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ্ (না) তাদের কোন ঘেড়াজখবর পাচ্ছিলেন না ৷
    এরপর এক কুরায়শী মহিলা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলে, হে মুহাম্মদ ৷ (না) আমি তো
    আপনার জামাতাকে দেখে এসেছি ৷ তার সাথে তার শ্ৰীও আছেন ৷ ওদের কী অবস্থায় দেখে
    এসেছ ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) জিজ্ঞেস করলেন ৷ সে বলল, আমি দেখেছি যে, ত্রীকে একটি গাধার
    পিঠে তুলে দিয়ে তিনি পাধাটিকে ইাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না) বললেন, খ্যাঃ
    ট্রুর্দু৷ ৷ — আল্লাহ্ তাআলা তাদের সঙ্গে থাকুন ৷ লুতের (আ) পর উছমানই সর্বপ্রথম সপরিবারে
    হিজরত করেন ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, হিজরতকারীদের মধ্যে ছিলেন আবু হুযায়ফা ইবন উতবা তার শ্রী
    সাহ্লা বিনত সুহায়ল ইবন আমর, সেখানে তাদের একটি পুত্র সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়, তার নাম
    মুহাম্মাদ ইবন আবু হুযায়ফা, যুবায়র ইবন আওআম, মুসআব ইবন উমায়র , আবদুর রহমান
    ইবন আওফ, আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদ, তার শ্রী উন্মু সালামা বিনত আবু উমাইয়া
    ইবন মুগীরা ৷ সেখানে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়, তার নাম যায়নাব, উছমান ইবন
    মাযউন, আমির ইবন রাবীআ, ইনি খাত্তাব পরিবারের মিত্র ছিলেন ৷ তার গোত্র হল বনু আনায
    ইবন ওয়াইল গোত্র, তীর শ্ৰী লায়লা বিনত আবু হাছামাহ্ ৷ আবু সাবুরা ইবন আবু রুহাম
    আমিরী, তার শ্ৰী উম্মু কুলছুম বিনত সুহায়ল ইবন আমর, মতান্তরে আবু হাতির ইবন আমর
    ইবন আবৃদ শামস ইবন আবদুদ ইবন নাসর ইবন মালিক ইবন হাসল ইবন আমির ৷ কথিত
    আছে যে, তিনি সবার আগে ওখানে পৌছেছিলেন এবং সুহায়ল ইবন বায়যা ৷ আমার নিকট
    বর্ণনা পৌছেছে যে, উল্লিখিত ১০ জন পুরুষ সর্বপ্রথম আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন ৷ কেউ কেউ
    বলেছেন যে, উছমান ইবন মাযউন তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, এরপর যাত্রা করেন জা’ফর ইবন আবু তালিব (বা) ৷ তার সাথে
    ছিলেন তার শ্ৰী আসমা বিনৃত উমায়স ৷ সেখানে র্তাদের পুত্র সন্তান আবদুল্লাহ ইবন জাফরের
    জন্ম হয় ৷ এরপর একের পর এক মুসলমানগণ সেখানে হিজরত করতে থাকেন ৷ ফলে
    আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের একটি বিরাট দল একত্রিত হয় ৷

    মুসা ইবন উক্বা মনে করেন যে, আবু তালিব ও তার মিত্র গোত্রগুলো যখন রাসুলুল্লাহ্
    (না)-এর সাথে পিরিসঙ্কটে অম্ভরীণ ছিলেন, তখন মুসলমানদের আবিসিনিয়ায় হিজরতের ঘটনা
    ঘটে ৷ অবশ্য এ মন্তব্য সন্দেহাভীত নয় ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷

    মুসা ইবন উকব৷ এও মনে করেন যে জা ফর ইবন আবৃত তালিব আ ৷বিসিনিয়ায় গিয়েছিলেন
    সেখানে দ্বিতীয় দলের হিজরতকালে ৷ আর দ্বিতীয় হিজরতের ঘটনা ঘটেছিল প্রথম
    হিজরতকারীদের কতক মক্কা ফিরে আসার পর ৷ আবিসিনিয়ায় অবস্থানকালে তাদের নিকট
    সংবাদ পৌছেছিল যে মক্কার মুশবিকগণ ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তারা রীতিমত নামায
    আদায় করছে ৷ এ সংবাদ শুনে তাদের কতক মক্কায় ফিরে আসেন ৷ যারা ফিরে এসেছিলেন,
    তাদের মধ্যে উছমান ইবন মাযউনও ছিলেন ৷ এখানে এসে তারা দেখতে পেলেন যে,
    মুন্ণবিকদের ইসলাম গ্রহণের সং বাদ সঠিক নয় ৷ ফলে তারা পুনরায় আবিসিনিয়ায় চলে যান ৷
    অবশ্য তাদের কতক মক্কায় থেকে যান ৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে নতুন করে আরো কিছু মুসলমান
    আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন ৷ এটিই আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় হিজরত ৷ এর বিস্তারিত বিবরণ পরে
    আলোচিত হবে ৷ মুসা ইবন উকবা বলেন, জা ফর ইবন আবুত৷ তালিব আবিসিনিয়ায় গমন করেন
    দ্বিতীয় দলের সাথে ৷ আর ইবন ইসহড়াক বলেন,৩ তিনি আবিসিনিয়ায় গিয়েছেন তথায় প্রথম
    হিজরতকালে ৷ ইবন ইসহাকের বক্তব্যটিই অধিকতর সঠিক ৷ এ বিষয়ে আলোচনা পরে
    আসছে ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ তবে কথা হল, তিনি প্রথম হিজরতকারীদের দ্বিতীয় দলে
    ছিলেন ৷ হিজরতকা রীদেরকে তিনিই সম্রাট৷ নাজ্জ ৷শীর নিকট উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের
    পক্ষ থেকে সম্র৷ ৷ট ও অন্যদের সাথে কথা বলেছিলেন ৷ একটু পরেই আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত
    আলোচনা করব ৷

    জাফর ইবন আবৃত তালিবের সাথী হয়ে যারা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন ইবন
    ইসহড়াক তাদের নাম উল্লেখ করেছেন ৷৩ তারা হলেন আমর ইবন সাঈদ ইবন আস, তার শ্রী
    ফাতিম৷ বিনত সাফওয়ান ইবন উম৷ ইয়৷ ইবন মুহবিছ ইবন শাক্ আল-কিনড়ানী, আমরের ভাই
    থালিদ, খালিদের শ্রী উমাইয়া, বিনত খাল্ফ ইবন আসআদ আল খুযাঈ , সেখানে তাদের পুত্র
    সন্তান সাঈদের জন্ম হয়, তার মাত৷ যাকে পরবর্তীতে যুবায়র (বা) বিয়ে করেন তার ঔরসে
    উমর ও খালিদের জন্ম হয়, আবদুল্লাহ ইবন জাহশ ইবন রিছাব, তার ভাই উবায়দৃল্লাহ্, তার
    সাথে তার শ্রী উম্মু হাবীবাহ্ বিনত আবী সুফিয়ান, বনু আসাদ ইবন থুয়ায় গোত্রের কায়স ইবন
    আবদুল্লাহ্ তার শ্রী আবু সুফিয়ানের আযাদকৃত ক্রীত দাস ইয়াসারের কন্যা বারকাহ বিনত
    ইয়াসার , মুআয়কীব ইবন আবু ফা ৷তিম৷ ইনি ছিলেন সাঈদ ইবন আসের আযাদকৃত ক্রী৩দাস ,
    ইবন হিশাম বলেন, মুআয়কীব ছিলেন দাওস গোত্রের লোক ৷

    আবু মুসা ৷আশআরী আবদুল্লাহ্ ইবন কায়স তিনি উতবা ইবন রাবীআর’ পরিবারের মিত্র
    ছিলেন এ বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করব, উত বা ইবন গাযওয়ড়ান, ইয়াযীদ ইবন ঘুম আ
    ইবন আসওয়াদ , আমর ইবন উম৷ ইয়৷ ইবন হারিছ ইবন আসাদ, তুলায়ব ইবন উমায়ব ইবন
    ওয়াহ্ব ইবন আবু কাহীর ইবন আবদ, সুওয়াইবিত ইবন হুরায়মাল৷ সাআদ ইবন জুহম ইবন
    কায়স আল আবদাবী, তার সাথে ছিলেন তার শ্ৰী উম্মু হারমালাহ্ বিনত আবদুল আসওয়াদ ইবন

    ১ দুই মুলকপি এবং সীরাতে ইবন হিশাম প্ররুই মুহাজিরদের সংখ্যা এবং তাদের সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য
    রয়েছে ৷ এই গ্রন্থের সংকলক যেহেতু ইবন ইসহাকের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, সেহেতু ইবন হিশামসহ যে কোন
    একটি মুল কপির সাথে যে তথ্যের মিল রয়েছে সেটিকে আমরা নির্ভরযোগ্যরুপে চিহ্নিত করেছি ৷

    খুযায়মা তার দুই পুত্র আমর ইবন জুহম এবং খুযায়মা ইবন জুহম, আবু রওম ইবন উমায়র
    ইবন হাশিম ইবন আবৃদ মানড়াফ ইবন আবদুদ্দার ফিরাস ইবন নায্র ইবন হারিছ ইবন
    কালদাহ্, সাআদ (রা) এর ভাই আমির ইবন আবু ওয়াক্কাস, মুত্তালিব ইবন আঘৃহার ইবন আবদৃ
    আওফ আবৃ ঘুহরী, তার শ্রী রামলা বিনত আবু আওফ ইবন যবীরা সেখানে তার পুত্র
    আবদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, তার ভাই উতবা, মিকদড়াদ ইবন
    আসওয়াদ্ হারিছ ইবন খালিদ ইবন সাখর অড়াত-তায়যী, তার শ্রী রাবতা বিনত হারিছ ইবন
    জাবীলা, সেখানে তাদের ছেলে মুসা, এবং তিন মেয়ে আইশা, যয়নাব ও ফাতিমার জন্ম হয় ৷
    আমর ইবন উছমান ইবন আমর ইবন কাআব ইবন সাআদ ইবন তায়ম ইবন মুররা, শাম্মড়াস
    ইবন উছমান ইবন শারীদ আল মাখবুমী ৷ কথিত আছে যে, তিনি অত্যন্ত সৃদর্শন ছিলেন বিধায়
    তার এরুপ নামকরণ করা হয়েছিল ৷ মুলত তার নাম ছিল উছমান ইবন উছমান ৷ হাব্বার ইবন
    সুফিয়ান ইবন আবদুল আসাদ আল মাখবুমী , তার ভাই আবদুল্লাহ, হিশাম ইবন আবু হুযায়ফা
    ইবন মুগীরা ইবন আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন মাখবুম সালামা ইবন হিশাম ইবন মুগীরা,
    আইয়াশ ইবন আবু রাবীআ ইবন মুগীরা, মুআত্তাব ইবন আওফ ইবন আমির তাকে আইহামা
    নামেও ডাকা হত, তিনি বনু মাখবুম গোত্রের মিত্র ছিলেন ৷

    উছমান ইবন মাযউন-এর দুই ভাই কুদামা ও আবদুল্লাহ, সাইব ইবন উছমান ইবন মাযউন,
    হাতির ইবন হারিছ ইবন মা’মার ৷ তার সাথে ছিলেন তার শ্রী ফাতিমা বিনত মুজাল্লিল ৷ তাদের
    দু’ পুত্র মুহাম্মদ ও হারিছ, হাতিবের ভাই খাত্তাব, খাত্তাবের শ্রী ফুকায়হা বিনত ইয়াসার, সুফিয়ান
    ইবন মা’মার ইবন হাবীব, তার ত্রী হাসানা, তাদের দু’পুত্র জাবির ও জুনড়াদা ৷ হাসান এর পুর্ব
    স্বামীর ঔরসজাত পুত্র শুরাহবীল ইবন আবদুল্লাহ, তিনি গাওদা ইবন মুছাহিম ইবন তড়ামীম
    গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ৷ তিনি শুরড়াহবীল ইবন হাসানা নামেও পরিচিত উছমান ইবন রাবীআ
    ইবন ইহবান ইবন ওয়াহাব ইবন হুযাফা ইবন জুমাহ্, খুনড়ায়স ইবন হুযাফা ইবন কায়স ইবন
    অড়াদী, আবদুল্লাহ ইবন হারিছ ইবন কায়ছ ইবন আদী ইবন সাঈদ ইবন সাহ্মন্ হিশাম ইবন
    আস ইবন ওয়াইল ইবন সাঈদ, কায়স ইবন হুযাফা ইবন কায়স ইবন আদী, তার ভাই
    আবদুল্লাহ, আবু কায়স ইবন হারিছ ইবন কায়স ইবন আদী র্তার বৈমড়াত্রেয় ভাইগণ হারিছ,
    মা’মার সাইব’ বিশর ও সাঈদ এবং বৈপিত্রেয় ভাই সাঈদ ইবন কায়স ইবন আদী, তার মুল
    পরিচয় সাঈদ ইবন অড়ামর তড়ামীমী, উমায়র ইবন রিছাব ইবন হুযায়ফা ইবন মাহশাম সাঈদ
    ইবন সাহম, বনু সাহম গোত্রের মিত্র মাহমিয়্যা ইবন জুয আয্ যুবায়দী, মা’মার ইবন
    আবদুল্লাহ আল আদাবী, উরওয়া ইবন আবদুল উয্যা, আদী ইবন নায়লা ইবন আবদুল
    উঘৃযা, তার পুত্র নু’মান, আবদুল্লাহ ইবন মাখরামাহ্ আল-আমিরী, আবদুল্লাহ ইবন সুহায়ল
    ইবন আমর, সালীত ইবন আমব , তার ভাই সুকরান, তার সাথে তার ত্রী সওবিত যামআ,
    মালিক ইবন রাবীআ,-র্তার ত্রী উম্রা বিনত সাআদী, আবু হাতির ইবন আমর আল
    আমিরী, তাদের মিত্র সাআদ ইবনখাওলা (তিনি ইয়ামানী বংশোদ্ভুত ছিলেন) আবু উবায়দা
    আমির ইবন আবদুল্লাহ ইবনুল জাররাহ্ আল-ফিহ্বী, সুহায়ল ইবন বায়যা (বায়যা তার
    মাতা ছিলেন ৷ বায়যার মুল নাম দা’দ বিনত জাহদাম ইবন উমাইয়া ইবন যারব ইবন
    হারিছ ইবন ফিহর এই সুহায়ল হলেন সুহায়ল ইবন ওয়াহব ইবন রাবীআ ইবন হিলাল

    ইবন দাববাহ ইবন হারিছ, আমর ইবন আবু সারাহ ইবন রাবীআ ইবন হিলাল ইবন মালিক

    ইবন দাব্বাহ ইবন হারিছ, ইয়ায ইবন যুহায়র ইবন আবু শাদ্দাদ ইবন রাবীআ ইবন হিলাল
    ইবন মালিক ইবন দাব্বাহ, আমর ইবন হারিছ ইবন যুহায়র ইবন আবী শাদ্দাদ ইবন রাবীআ,
    উছমান ইবন আবদ গানাম ইবন যুহায়র , সাঈদ ইবন আবদ কায়স ইবন লাকীত এবং তার ভাই
    হারিছ ৷ তারা ফিহর বংশের অন্তর্ভুক্ত ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, অনুষঙ্গী হিসেবে পমনকারী নাবালক পুত্রগণ এবং সেখানে

    জন্মগ্রহণকারী শিশুগণকে বাদ দিয়ে হিসেব করলে আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী মুসলামানদের

    ৎখ্যা হয় ৮৩ ৷ অবশ্য, যদি আম্মার ইবন ইয়াসির (রা) কে হিজরতকারীদের মধ্যে গণ্য করা
    হয়, তবে ৮৩ জন হবে ৷ তবে তার আবিসিনিয়ায় গমন সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জানা যায় না ৷

    ইবন ইসহাক যে উল্লেখ করেছেন যে, মক্কা থেকে র্যারা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছেন,
    তাদের মধ্যে আবু মুসা আশআরীও রয়েছেন আমার মতে তার এই মন্তব্য নির্ত্যাযোগ্য মনে হয়
    না ? এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ (র) বলেন, হাসান ইবন মুসা ইবন মাসউদ (বা) থেকে
    বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাদেরকে নাজাশী নিকট প্রেরণ করলেন ৷
    আমরা সংখ্যায় প্রায় ৮০ জন ছিলাম ৷ তাদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, জাফর,
    আবদুল্লাহ ইবন আরফাতা, উছমান ইবন মাযউন এবং আবু মুসা ৷ র্তারা নাজাশীর নিকট
    এলেন ৷ অন্যদিকে কুরায়শ গোত্রের লোকেরা আমর ইবন আস এবং আমার ইবন ওয়ালীদকে
    মুল্যবান উপটোকন দিয়ে নাজাশীর নিকট প্রেরণ করে ৷ নাজাশীর দরবারে উপস্থিত হয়ে তারা
    তাকে সিজদা করে এবং খুব দ্রুত তাদের একজন তার ডানদিকে এবং অপরজন বামদিকে বসে
    পড়ে ৷ তারপর তারা তাকে বলে, আমাদের স্বগােত্রীয় কিছু লোক আমাদের প্ৰতি বিরুপ হয়ে
    এবং আমাদের ধর্ম ত্যাগ করে আপনার বাজে এসে আশ্রয় নিয়েছে ৷ নাজাশী বললেন, ওরা
    এখন কোথায় ? তারা বলল, আপনার রাজ্যেই আছে ৷ ওদেরকে ডেকে পাঠান ৷ নাজাশী
    তাদেরকে ডেকে আনলেন ৷ হযরত জাফর (রা ) তার সাথীদেরকে বললেন, “আজ আমি
    আপনাদের সকলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখব ৷ সকলে তা মেনে নিলেন ৷ তিনি নাজাশীকে
    সালাম দিলেন, বিন্দু সিজদা করলেন না ৷ রাজ-দরবারের লোকেরা বলল, আপনি জাহীপনাকে
    সিজদা করলেন না কেন ? হযরত জাফর উত্তরে বললেন, আমরা মহান আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য
    কাউকে সিজদা করি না ৷ নাজাশী বললেন, এ কেমন কথা ? জাফর (রা) বললেন, “আল্লাহ
    তাআলা আমাদের প্ৰতি একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন ৷ ওই রাসুল আমাদেরকে নির্দেশ
    দিয়েছেন আমরা যেন একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা না করি ৷ তিনি আমাদেরকে
    নামায আদায় করতে এবং যাকাত দানের নির্দেশ দিয়েছেন ৷” কুরায়শ প্রতিনিধি আমর বলে
    উঠলেন, ওরা ঈসা ইবন মারয়ামের ব্যাপারে আপনার বিশ্বাসের বিপরীত বিশ্বাস পোষণ করে ৷
    নাজাশী বললেন, ঈসা (আ) এবং তার মা মারয়াম সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী ? তিনি বললেন,
    তাদের সম্পর্কে আমরা ঠিক তা-ই বলি যা আল্লাহ্ বলেছেন, আর তা হলো , তিনি আল্লাহর
    কালেমা ও বাণী এবং তার বহু ৷ এ রুহকে তিনি সতীসাধবী কুমারী মারয়ামের প্ৰতি নিক্ষেপ
    করেছেন ৷ কোন পুরুষ ওই কুমারীকে স্পর্শ করেনি এবং কোন পুরুষ তার মধ্যে সন্তানের বীজ

    বপন করেনি ৷ একথা শুকৃন নাজ৷ ৷শী মাটি থেকে একটি শুকনো কাঠ তুলে নিলেন এবং বললেন
    কৃহ আবিসিনীয় সম্প্রদায়, পাদ্রী ও ধর্ম যাজকগণ! আমরা ঈস৷ (আ) সম্পর্কে যা বলি এরাত
    থেকে এতটুকুও বাড়িয়ে বকৃলনি ৷ হে আগন্তুক প্রতিনিধিদল ! সাদর অভিনন্দন, আপনাদের প্রতি
    এবং যার পক্ষ থেকে আপনারা এসেছেন তার প্রতি ৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , তিনি আল্লাহর
    রাসুল এবং তিনি সেই ব্যক্তি র্ষার বর্ণনা আমরা ইনজীল কিভাবে পাই এবং তিনিই সেই রাসুল
    ঈস৷ (আ) র্যার আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন ৷ আপনারা আমার রাকৃজ্যর যেখানে ইচ্ছা বসবাস
    করতে থাকুন ৷ আল্লাহর কসম, আমি যদি এখন রাজ্য পরিচ৷ ৷লনার দায়িত্বে না থাকতাম, তকৃব
    আমি নিশ্চয়ই তার নিকট যেতাম এবং তার জুতা বহন করতাম ৷ এরপর তার নির্দেশে কুরায়শী
    প্রতিনিধি দলের দেয়৷ উপচৌকন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয় পরবর্তীতে অন্যতম
    হিজর৩ কারী হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) এর অব্যবহিত পরেই আবিসিনিয়া থেকে
    ফিরে আসেন এবং বদকৃরর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ৷

    বর্ণিত আছে যে, নাজাশীর মৃত্যু সং বাদ কৃপকৃয় রাসুলুল্লাহ্ (না) তার মাগকৃফরাকৃতর জন্যে
    দুআ করেন ৷ এটি একটি মযবুত ও সুদৃঢ় সনকৃদ বর্ণিত ৷ এর বর্ণনা রীতিও চমৎকার ৷ এ বর্ণনা
    থেকে প্রতীয়মান হয় যে আবু মুসা (বা) যে সকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা মক্কা থেকে
    আবিসিনিয়৷ গিয়েছিলেন ৷ অবশ্য, এটা সঠিক হকৃব তখন যদি তার নাম কোন বর্ণনাকা বীর পক্ষ
    থেকে সং কৃযাজিত না হয়ে থাকে ৷ আবু ইসহাক সুবায়ঈ থেকে অন্য সনকৃদও এরুপ বর্ণিত
    আছে ৷

    হাফিয আবু নৃআয়ম (র) আদদালাইল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, সুলায়মান ইবন
    আহমদ আবু মুসা (রা) সুত্রে বর্ণনা ককৃরন, তিনি বকৃলন রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাকৃদরকৃক
    নিকৃর্দশ দিকৃলন জা ফর ইবন আবু৩ তালিব (রা) এর সাথে নাজাশীর রাকৃজ্য চলে যেতে ৷
    কুবাযশ্ গণ এ সং বাদ অবগত হয় ৷ তারা প্রচুর পরিমাণে উপহার র উপচৌকনসহ আমর ইবন
    আস ও আম্মার৷ ইবন ওয়ালীদকৃক নাজা শীর নিকট পাঠায় ৷৩ তারা উপহার সামশ্রী নিয়ে নাজ ৷শীর
    দরবারে উপস্থিত হয় ৷ নাজাশী ওই সব উপহার গ্রহণ করেন ৷ তারা তাকে সিজদ৷ করে ৷
    এরপর আমর ইবন আস বলেন, “আমাদের দেশের কতক লোক আমাদের পিতৃধর্ম ত্যাগ করে
    পালিয়ে একৃস আপনার রাকৃজ্য অবস্থান করছে ৷” অবাক হয়ে নাজাশী বলকৃলন, ওরা আমার
    রাকৃজ্য অবস্থান করছে ? তারা বলল, ইা, আপনার রাজ্যেই ৷ নাজাশী আমাদেরকে ডেকে
    পাঠালেন ৷ হযরত জাফর (রা) আমাদেরকে বলকৃলন, আজ আমিই আপনাদের পক্ষে বক্তব্য
    রাখব, আপনাদের কেউ কো ন কথা বলকৃবন না ৷ এরপর আমরা নাজাশীর নিকট উপস্থিত হই ৷
    তিনি তখন আপন আসনে উপবিষ্ট ৷ আমর ইবন আস তার ডানদিকৃক আর আম্মারা তার নাম
    দিকৃক বসা ছিলেন, পাদ্রীগণ দু সারিকৃ বসা ছিলেন ৷ কুরায়শ প্রতিনিধি আমর ও আম্মারাহ্
    রাজাকে পুর্বেই বলে কৃরকৃখছিকৃলন যে, ওরা আপনাকে সিজদ৷ করকৃব না ৷ আমরা ওখানে
    পৌছানাের পর উপস্থিত পাদ্রী ও যাজকগণ আমাদেরকে বলল, “আপনারা জাহীপনাকৃক সিজদা
    করবেন ৷” হযরত জাফর (রা) বললেন, আমরা মহান আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সিজদ৷ করি না ৷
    আমরা যখন নাজাশীর নিককৃট উপস্থিত হলাম, তখন তিনি জাফরকৃক বলকৃলন, তুমি সিজদা

    করলে না কেন ? হযরত জাফর (রা) বললেন, আমরা মহান আল্লাহ্ ব্যতীত কাউকে সিজদা
    করি না ৷ নাজাশী বললেন, সেটি কিরুপ? হযরত জাফর (রা) বললেন, আল্লাহ্ তাআলা
    আমাদের প্রতি একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন ৷ তিনি সেই রাসুল, ঈসা ইবন মারয়াম তার পরে
    আহমদ নামের যে রাসুলের আগমনী সুসংবাদ দিয়েছিলেন ৷ ওই রাসুল আমাদেরকে একমাত্র
    আল্লাহর ইবাদত করা এবং তার সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ তিনি
    আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন নামায আদায় করি, যাকাত দিই ৷ তিনি আমাদেরকে
    সৎকাজ করার আদেশ দিয়েছেন এবং অসৎ কাজ থেকে বারণ করেছেন ৷ নাজাশী তার কথায়
    চমৎকৃত হন ৷ এ অবস্থা দেখে আমর ইবন আস নাজাশীকে বললেন, “আল্লাহ সম্রাটের মঙ্গল
    করুন, ওরা ঈসা (আ)-এব ব্যাপারে আপনার বিরুদ্ধ মত পোষণ করে ৷ নাজাশী জাফর
    (রা) কে বললেন, আপনাদের নবী হযরত মারিয়াম পুত্র ঈসা (আ) সম্পর্কে কী বলেন ? উত্তরে
    জাফর (বা) বললেন, তিনি তো তাই বলেন, যা আল্লাহ্ তাআলা নিজে বলেছেন আর তা
    হলো, তিনি আল্লাহ্র প্রেরিত রুহ, এবং আল্লাহর কালেমা ও বাণী ৷ আল্লাহ্ তাআলা র্তাকে
    এমন একজন সতী-সাত্রী কুমারীর গর্ভ থেকে বের করেছেন কোন পুরুষ যার নিকট যায়নি এবং
    যার মধ্যে কোন সন্তানের বীজ নিক্ষেপ করেনি ৷ তারপর নাজাশী মাটি থেকে একটি শুকনো
    কাঠ তুলে নিয়ে বললেন, হে পাদ্রী ও যাজক সম্প্রদায় ! মারয়াম পুত্র সম্পর্কে আমরা যা বলি,
    ওরা তা থেকে এতটুকুও অতিরিক্ত বলে না ৷ এমনকি এই শুকনো কাঠ পরিমাণও নয় ৷ ”

    “হে প্রতিনিধিদল, সাদর অভিনন্দন আপনাদের প্ৰতি এবং আপনারা মার পক্ষ থেকে
    এসেছেন তার প্ৰতি ৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসুল এবং তিনি সেই মহান পুরুষ
    হযরত ঈসা (আ) যীর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন ৷ আমি যদি রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বে না
    থাকতাম, তবে আমি অবশ্যই তার নিকট যেতাম এবং তার পাদুকাদ্বয়ে চুঘু থেতাম ৷ আপনারা
    আমার রাংজ্য যেখানে ইচ্ছা বসবাস করুন ৷ তিনি আমাদেরকে খাদ্য ও পােশাক-পরিচ্ছদ দানের
    নির্দেশ দিলেন এবং কুরায়শ প্রতিনিধিদের উপহার সামগ্রী ফেরত দেয়ার আদেশ করলেন ৷

    আমর ইবন আস ছিলেন একজন বেটে মানুষ ৷ আর আম্মারা ছিল সুদর্শন ব্যক্তি ৷ তারা
    দু’জনে সাগর তীরে এসে পানি পান করেন ৷ আমরের সাথে তার ত্রীও ছিলেন ৷ পানি পান করার
    পর আম্মারা তার সাথী আমরকে বলল, তুমি তোমার ন্তীকে নির্দেশ দাও সে যেন আমাকে চুমু
    খায় ৷ আমর বললেন, তাতে ভোর লজ্জা হয় না ৷ কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আম্মারা তার
    সাথী আমরকে তুলে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে ৷ আমরের কাকুতি-মিনতি ও প্রাণে ৰ্বাচানাের দােহাই
    দেয়ার প্রেক্ষিতে আম্মারা তাকে নৌকায় তুলে নেয় ৷ এ ঘটনায় আম্মারার প্রতি চরম ক্ষুব্ধ হয়ে
    উঠেন আমর ৷ প্ৰতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে তিনি নাজাশীকে গিয়ে বলেন যে, আপনি ঘর থেকে
    বেরিয়ে গেলে আম্মারা গিয়ে আপনার ব্রীর সাথে কুকর্ম করে ৷ নাজাশী তখন আম্মারাকে ডেকে
    আনেন ৷ তারপর তার পুরুষাঙ্গে ছিদ্র করে দেন ৷ অবশেষে সে বন প্রাণীদের সাথে ঘুরে
    বেড়াতো ৷ হাফিয বায়হাকী (র) আদ-দালাইল গ্রন্থে আবু আলী হাসান ইবন সালাম আস
    সাওয়াক সুত্রে উবায়দুল্লাহ্ ইবন মুসা থেকে নিজস্ব সনদে এরুপ বর্ণনা করেছেন, “তিনি
    আমাদের জন্যে খাদ্য ও বত্রের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেন” পর্যন্ত ৷

    বায়হাকী (র) বলেন, এটি একটি বিশুদ্ধ সনদ ৷ বাহ্যত মনে হয় যে আবিসিনিয়ায়
    হিজরতের অব্যাহিত পুর্বে হযরত আবু মুসা (রা) মক্কাভ্রুত ই অবস্থান করছিলেন এবং সেখান
    থেকে তিনি জা ফর ইবন আবৃত তালিবের সাথে আবিসিনিয়ায় উদ্দেশ্যে বা তা ত্রকরেন ৷ তবে বিশুদ্ধ
    সনদে ইয়াযীদ ইবন আবদুল্লাহ আবু মুসা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে তারা ইয়ামানে
    অবস্থান কালে সং বাদ পান যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) হিজরত করেছেন ৷ ফলে তারা পঞ্চাশাধিক
    লোক একটি নৌকা ৷য় করে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হন ৷

    নৌকা তাদেরকে আবিসিনিয়ায় রাজা নাজাশীর দরবারে নিয়ে ( শীছায় সেখানে জা ফর

    ইবন আবৃত তালিব ও তার সাথীদের সাথে তাদের সাক্ষাত হয় ৷ জ ফর ইবন আবুত তালিব

    তাদেরকে সেখানেই অবস্থান করতে বলেন ৷ ফলে, তারা সেখানে থেকে যান ৷ অবশেষে
    খায়বারের যুদ্ধের সময় তারা সকলে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট এসে ৷;পাছেন ৷

    এরপর বায়হাকী বলেন, জা ফর ইবন আবৃত তালিব এবং নাজাশীর মধ্যে আলাপচারিতার
    সময় আবু মুসা (রা) উপস্থিত ছিলেন এবং পরে তিনি তা বর্ণনা করেছেন৷ তবে যে বর্ণনায়
    আবু মুসার এ বক্তব্য এসেছে, “রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন জাফরের সাথে
    আবিসিনিয়ায় যেতে ৷ ” সে বর্ণনায় সম্ভবত বর্ণনা ৷কা ৷রীর ভুল হয়েছে ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷

    ইমাম বুখারী (র) “আবিসিনিয়ায় হিজরত” অধ্যায়ে অনুরুপ উদ্ধৃত করেছেন ৷ তিনি
    বলেছেন, মুহাম্মাদ ইবন আলা আবু মুসা থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্
    (সা) হিজরণ্ডে তর উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন আমরা এ স বাদ অবগত হলাম ৷ আমরা তখন
    ইয়ামানে ৷ এরপর হিজরতের উদ্দেশ্যে আমরা একটি নৌকায় আরোহণ করি ৷ নৌকা
    আমাদেরকে আবিসিনিয়ায় নাজাশীর নিকট নিয়ে পৌছায় ৷ সেখানে জা ফর ইবন আবৃত তালিব
    (রা)-এর সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয় ৷ আমরা তার সাথে সেখানেই অবস্থান করতে থাকি ৷
    অবশেষে আমরা ফিরে অ সি এবং খায়বার বিজয়কালে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে আমাদের
    দেখা হয় ৷ আমাদের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে নৌকার আরোহিগণ তামর৷ দুটো
    হিজরহ্বত র মুহাজির’ ৷

    ইমাম মুসলিম (র) আবু কুরায়ব এবং আবু আমির আবদুল্লাহ ইবন বুরাদ সুত্রে আবু উসামা
    থেকে নঅনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷৩ তারা দু’ জনে অন্যত্র এ বিষয়ে আরও দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন ৷

    জাশীর সাথে হযরত জা’ ফর ইবন আবৃত তালিবের কথোপকথনের ঘটনাটি হাফিয ইবন
    আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে “জা ৷ফর ইবন আবৃত তালিবের প্রসঙ্গ” অধ্যায়ে জা ফর (রা) এর
    নিজের জবানীতে উতদ্ধৃ করেছেন ৷ আবার তিনি আমর ইবন আগের বর্ণনাও উদ্ধৃত করেছেন ৷
    তিনি এ প্রসঙ্গে ইতোপুর্বে উল্লিখিত ইবন মাসউদ (রা) এর বর্ণনাটিও উদ্ধৃত করেছেন ৷ হযরত
    উম্মু সা ৷লাম৷ (রা) এর একটি বর্ণনা তিনি এসেছেন যা একটু পরেই আমরা উল্লেখ করব ৷ বন্তুত
    জাফর ইবন আবুত তালিবের নিজের বর্ণনাটি বিশুদ্ধতর ৷ ইবন আসাকির সেটি উল্লেখ করেছেন
    এভাবেং : আবুল কাসিম আবদুল্পাহ্ ইবন জা ফর তার পিত ৷ সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে,
    তিনি বলেছেন, আবু সুফিয়ড়ানের পক্ষ থেকে সংগৃহীত মুল্যবান উপহারসাযগ্রী নিয়ে কুরায়শের
    লোকেরা আমর ইবন আস ও আম্মার৷ ইবন ওয়ালীদকে নাজাশীর নিকট প্রেরণ করে ৷ আমরা

    তখন আবিসিনিয়ায় ৷ তারা নাজাশীকে বলল, আমাদের কতক নীচু স্তরের মুর্থ লোক দেশ ছেড়ে
    আপনার বাজে এসে আশ্রয় নিয়েছে ৷ আপনি ওদেরকে আমাদের হাতে তুলে দিন ৷ রাজা
    বললেন, না, ওদের বক্তব্য না শুনে আমি ওদেরকে তোমাদের হাতে তুলে দেব না ৷” রাজা
    আমাদের নিকট লোক পাঠালেন ৷ আমরা তার দরবারে উপস্থিত হলে তিনি বললেন, ওরা এসব
    কী বলছে ? আমরা বললাম, ওরা তো এমন এক সম্প্রদায় যারা মুর্তি পুজা করে ৷ এদিকে
    আল্লাহ্ তাআলা আমাদের মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন ৷ আমরা ওই রাসুলের প্রতি
    ঈমান এসেছি এবং তাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি ৷ কুরায়শ প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে নাজাশী
    বললেন, এদের মধ্যে কি তোমাদের কোন দাস-দাসী আছে ? ওরা বলল, না সেই ৷ রজাে
    বললেন, এদের কারো কাছে কি ,তোমাদের কোন পাওনা আছে ? ওরা বলল, না, সেই ৷ এবার
    রজো বললেন, “তবে ওদের ব্যাপারে নাক গলিয়াে না ৷ ওদেরকে ওদের মত থাকতে দাও ৷ ”

    হযরত জাফর (বা) বলেন, আমরা দরবার থেকে বেরিয়ে এলড়াম ৷ এরপর অড়ামর ইবন
    আস রাজাকে বলল, এরা ঈসা (আ) সম্পর্কে আপনি যা বলেন তার বিপরীত বলে ৷ রাজা
    বললেন, ঈসা (আ) সম্পর্কে আমি যা যদি তারা যদি সেরুপ না বলে, তবে আমি তাদেরকে এক
    মুহুর্তও আমার রা জেব্র থাকতে দেব না ৷ রাজা আমাদেরকে পুনরায় ডেকে পাঠালেন ৷
    আমাদেরকে দ্বিতীয়বার ডাকা আমাদের নিকট প্রথমবারের চেয়ে গুরুতর মনে হল ৷ তোমাদের
    নবী হযরত ঈসা (আ) সম্পর্কে কী বলেন ? রাজা জিজ্ঞেস করলেন ৷ আমরা বললাম, তিনি
    বলেন যে, ঈসা (আ) আল্লাহর রুহ এবং ভুড়ার কালেমা, যা তিনি সতী-সাধ্বী কুমারীর মধ্যে
    নিক্ষেপ করেছেন ৷ রাজা লোক পাঠিয়ে বললেন, অমুক পাদ্রী এবং অমুক যাজককে ডেকে নিয়ে
    আন ৷ কতক যাজক ও পাদ্রী উপস্থিত হল ৷ রাজা বললেন, আপনারা ঈসা (আ) সম্পর্কে কী
    বলেন ? তারা বলল, আপনি তো আমাদের মধ্যে সবচাইতে জ্ঞানী ব্যক্তি, আপনি কী বলে ?
    নাজাশী ইতোমধ্যে মাটি থেকে কিছু একটা হাতে তুলে নিলেন এবং বললেন : “এরা ঈসা (আ)
    সম্পর্কে যা বলছে মুলত ঈসা (আ) তার চাইতে এতটুকুও বেশী নন ৷ এরপর রাজা আমাদের
    উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের কাউকে কি কেউ কোন কষ্ট দেয় ? আমরা বললাম, জী হী৷ তখন
    রাজাদেশে জনৈক ঘোষক ঘোষণা দিয়ে বলল: এদের কাউকে যদি কেউ কষ্ট দেয়, তবে চার
    দিরহাম জরিমানা দিতে হবে ৷ তারপর আমাদেরকে বললেন, এতে তোমাদের চলবে তো ?
    আমরা বললড়াম , জী না ৷ তখন তিনি জরিমানা দ্বিগুণ নির্ধারণ করে দিলেন ৷ হযরত জা’ফর (রা )
    বলেন, পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন হিজরত করে মদীনা এলেন এবং সেখানকার কর্তৃতৃ
    লাভ করলেন, তখন আমরা রাজাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় হিজরত করে সেখানকার
    কর্তৃতৃ লাভ করেছেন, আর চুয কাফির নেতাদের কথা আমরা আপনাকে বলেছিলাম ওরা নিহত
    হয়েছে ৷ এখন আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে মিলিত হতে চাই ৷ আপনি আমাদের যাওয়ার
    অনুমতি দিন ৷ নাজাশী বললেন : ঠিক আছে, তাই হবে ৷ তিনি আমাদের যানবাহনের ব্যবস্থা
    করে দিলেন এবং আমাদেরকে প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে দিলেন ৷ তারপর বললেন,
    “আমি আপনাদের প্ৰতি যে সদ্ব্যবহার করেছি তাকে বলবেন ৷ আর এ লোক আমার প্রতিনিধি
    হিসাবে আপনাদের সাথে যাবে ৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং
    তিনি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রাসুল ৷ আপনারা তাকে বলবেন, তিনি যেন আমার জন্যে আল্লাহর

    দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ৷ জাফর (বা) বলেন, আমরা সেখান থেকে যাত্রা করে মদীনায়
    এসে পৌছলাম ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে আমাদের সাক্ষ্যত হল ৷ তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে
    ধরলেন ৷ তারপর বললেন, এখন আমি খায়বর বিজয়ের আনন্দে বেশী আনন্দিত, নাকি
    জাফরের আপমনে বেশী আনন্দিত, তা বুঝতে পারছি না ৷ এটা ছিল খায়বর রিজয়কালেব
    ঘটনা ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন ৷ নাজাশীর প্রতিনিধি বললেন, এ যে জাফর, র্তাকে
    জিজ্ঞেস করুন, আমাদের রাজা তীর সাথে কেমন আচরণ করেছেন ?

    জাফর বললেন, হ্যা অবশ্যই রাজা আমাদের সাথে এরুপ এরুপ সদাচারণ করছেন ৷
    আমাদের যানবাহন ও পাথেয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ৷ তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আল্লাহ
    ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং আপনি আল্লাহ্র রাসুল ৷ তিনি আমাকে বলেছেন, আমি যেন
    আপনাকে বলি র্তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে ৷ এসব শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) উঠে দীড়ালেন এবং
    উযু করে নিলেন ৷ তারপর ,,;ৰুগুা৷ )@ছু ৷ স্পোা৷৷ “হে আল্লাহ নাজাশীকে ক্ষমা করুন
    বলে উপর্বুপরি তিনবার দুআ করলেন ৷ প্রতিবার উপস্থিত মুসলমানগণ আমীন বলেন ৷ এরপর
    হযরত জাফর (বা) প্রতিনিধিকে বললেন, আপনি এবার আপনার দোশ যেতে পারেন এবং
    সেখানে গিয়ে আপনার রাজাকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর দরবারে যা লক্ষ্য করলেন সে সম্পর্কে
    অবহিত করবেন ৷

    ইবন আসাকির এটি হাসানগ্ড়ারীব পর্যায়ের বর্ণনা বলে উল্লেখ করেছেন ৷ হযরত উম্মে
    সালামা (রা) এর বর্ণনা এই, ইউনুস ইবন বুকায়র উম্মে সালামা (বা) থেকে বর্ণনা করেন
    যে, তিনি বলেছেন, মক্কায় সাহাবীগণের জীবন যাত্রা যখন দুর্বিষহ হয়ে উঠে এবং তারা
    চরমভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হতে থাকেন দীন-ধর্ম পালনের প্রেক্ষিতে নানা প্রকার
    জুলুম-পীড়নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন, নিজ সম্প্রদায় এবং তার চাচা আবু তালিবের প্রভাবে
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) মোটামুটি নিজে কিছুটা রক্ষা পেলেও তার সাহাবীগণকে রক্ষায় তিনি অপারগ
    হয়ে পড়েছিলেন ৷ এমন পরিস্থিতিতে তিনি তার সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন,
    আবিসিনিয়ায় একজন রাজা আছেন, তার রাজ্যে কারো প্রতি জুলুম করা হয় না ৷ তোমরা সবাই
    তীর বাজে চলে যাও ৷ এখানে তোমরা যে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেড়া, সেখানে গেলে
    আশা করি আল্লাহ তড়াআলা তা থেকে নিকৃতি দেবেন ৷ তখন আমরা ওই রাজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা
    করি ৷ সেখানে আমরা সবাই একত্রিত হই ৷ আমাদের দীনের ব্যাপারে নিরাপদ হয়ে আমরা
    একটি ভাল দেখে ভাল পরিবেশে গিয়ে পৌছি ৷ সেখানে আমাদের উপর কোন
    জুলুম-অতাড়াচারের আশংকা ছিল না ৷ কুরায়শের লোকেরা যখন লক্ষ্য করল যে, আমরা একটি
    নিরাপদ বাসস্থান পেয়েছি, তখন তারা আমাদের প্রতি আরো মারযুখো হয়ে উঠে ৷ তারা একমত
    হয় যে, আমাদেরকে ওই রাজ্য থেকে বের করে তাদের হাতে সোপর্দ করে দেয়ার জন্যে তারা
    নাজাশীর নিকট একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে ৷ তারা আমর ইবন আস এবং আবদুল্লাহ ইবন
    আবু রাবীআকে নাজাশীর নিকট পাঠায় ৷ তারা নাজাশী এবং তার প্রত্যেক সেনাপতির জন্যে
    পৃথক পৃথক উপহারসামগ্রী প্রন্তুত করে ৷ প্রতিনিধি দু’জনকে তারা নির্দেশ দেয় যে , রাজার সাথে
    পলায়নকারীদেরকে প্রত্যর্পণের আলোচনা শুরু করার পুর্বেই প্রত্যেক সেনাপতিকে নির্ধারিত

    উপহার দিয়ে দিয়ে ৷ তারপর রাজার জন্য নির্ধারিত উপহার তাকে দেবে ৷ পলায়নকারীদের
    সাথে রাজার কথােপকথন হওয়ার পুর্বে যদি তার কাছ থেকে ওদেরকে ফেরত তে পার তবে
    তাই করবে ৷ পরিকল্পনা মুতাবিক আমব ইবন তাস এবং আবদুল্লাহ ইবন আবু রাবীআ নাজাশীর
    দরবারে উপস্থিত প্রত্যেক সেনাপতিকে নির্ধারিত উপহার প্রদান করে ৷ তারা বলে যে, আমরা এ
    রাজেব্রু এসেছি আমাদের কতক মুর্থ লোককে ফেরত নিয়ে যেতে ৷ ওরা পিতৃধর্ম ত্যাগ করেছে
    কিন্ত আপনাদের ধর্মও গ্রহণ করেনি ৷ ওদের সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদেরকে এ জন্যে
    জাইাপনার নিকট পাঠিয়েছে যে, তিনি যেন ওই লোকওলোকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন ৷
    আমরা এ বিষয়ে জাহীপনার সাথে যখন আলোচনা করব তখন আপনারা সেনাপতিবর্গ
    ওদেরকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করবেন তার বলল, আমরা তাই করব ৷
    এরপর তারা নাজ৷ শীর নিকট যায় এবং তার জন্যে নির্ধারিত উপচোকন তার হাতে তুলে দেয় ৷
    মক্কা থেকে প্রেরিত উপচৌকন সামগ্রীর মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় ও মুল্যবান ছিল চামড়া ৷ মুসা ইবন
    উকবা উল্লেখ করেছেন যে, তারা তাকে একটি ঘোড়া ও একটি ণ্রশমী জুব্বাও উপহার দেয় ৷
    উপহার হস্তান্তর করে তারা বলল০ ং

    রাজন! আমাদের সম্প্রদায়ের কতক মুর্থ যুবক পিতৃধর্ম ত্যাগ করেছে কিন্ত আপনার ধর্মও
    গ্রহণ করেনি ৷৩ তারা এমন একটি নতু ন ধর্ম এসেছে যা সম্পর্কে আমরা কিছুই জ্ঞাত নই ৷ এখন
    তারা আপনার রাজে৷ এসে আশ্রয় নিয়েছে ৷ ওদের বাপ-চাচা ও সম্প্রদায়ের লোকেরা
    আমাদেরকে আপনার নিকট পাঠিয়েছে যাতে করে আপনি এদেরকে ওদেব নিকট ফেরত
    পাঠিয়ে দেন ৷ এ লোকগুলাে কিত্তু ভীষণ দান্তিক ৷ ওরা কোন দিন আপনার ধর্ম গ্রহণ করবে না
    যে আপনি তাদেরকে নিরাপত্তা দেবেন ৷ একথা শুনে রাজা ক্রুদ্ধ হন ৷ তিনি বললেন, না,
    আল্লাহর কসম, ওদেরকে ডেকে এনে ওদের কথা না শোনা এবং ওদের প্রকৃত অবস্থা না জানা
    পর্যন্ত আমি ওদেরকে ফেরত দেব না ৷ ওরা তো এমন কতক লোক, মারা আমার রাজে আশ্রম
    নিয়েছে এবং অন্যের প্রতিবেশী হওয়া অপেক্ষা আমার প্রতিবেশী হওয়ার অ্যাধিকার দিয়েছে ৷
    হা৷ এরা না বলেছে ওরা যদি সত্যি সত্যি সেরুপ হয়ে থাকে, তবে আমি ওদেরকে ফেরত
    পাঠিয়ে দেব ৷ কিভু ওরা যদি সেরুপ না হয়, তবে আমি ওদেরকে আশ্রয় দেবে৷ ৷ ওদের উপর
    কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করব না এবং ওদের প্রতিপক্ষকে খুশী করব না ৷ মুসা ইবন উকবা
    বলেন, তখন পারিষদ নাজাশীকে ইঙ্গিতে বলেছিলেন যেন ওদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া
    হয় ৷ রাজা বললেন, না, আল্লাহ্র কসম, ওদেরকে ফেরত দেব না

    হিজরতকারী মুসলমানপণ রাজ-দরবারে এলেন ৷ তারা রাজাকে সালাম দিলেন বর্টে, কিস্তু
    সিজদা করলেন না ৷ রাজা বললেন, হে লোকসকল! বল দেখি, তোমাদের সম্প্রদায়ের যারা

    তোপুর্বে আমার নিকট এলো৩ তারা আমাকে যে ভাবে অভিবাদন জ নালে৷ তোমরা সেভাবে
    অভিবাদন জানালে না কেন ? আমাকে আগে বল, ঈস৷ (আ) সম্পর্কে ৫৩ ৷মাদের বক্তব্য কী এবং
    তোমাদের ধর্ম কি ? তোমরা কি খৃক্টান ? মুসলমানগণ উত্তরে বললেন, না, আমরা খৃক্টান নই ৷
    তিনি বললেন, তাহলে তোমরা কি ইয়াহুদী ? তারা বললেন, না, আমরা ইয়াহুদীও নই ৷ তিনি
    বললেন তাহলে তোমরা তোমাদের স্বজাতির ধর্মানুসারী ?৩ তারা বললেন না, আমরা তাও নই ৷

    এবার রাজা বললেন, তাহলে তোমাদের ধর্ম কি ?৩ তারা বললেন, ইসলাম ৷ রাজা বললেন:
    ইসলাম কী ?ত তারা বললেন, আমরা আল্লাহর ইবাদত করি ৷ তার সাথে কা ৷উকে শরীক করি না ৷
    তিনি বললেন, এই ধর্ম কে নিয়ে এসেছেন ?ত তারা বললেন, এটি আমাদের নিকট নিয়ে
    এসেছেন আমাদের মধ্যকার একজন ৷ আমরা তাকে সম্যক চিনি ৷ তার বংশ পরিচয় জানি ৷
    আমাদের পুর্ববর্তী সম্প্রদায়সমুহের প্রতি ৩আল্পাহ তাআলা যেমন রাসুল প্রেরণ করেছেন, তেমনি

    তাকে আমাদের প্ৰতি রাসুলরুপে প্রেরণ করেছেন ৷ তিনি আমাদেরকে সততা, সত বােদিতা,
    প্রতিজ্ঞা ৷পুরণ ও আমানত রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মুর্তিপুজা করতে নিষেধ করেছেন ৷ তিনি
    আমাদেরকে আদেশ করেছেন একক লা-শরীক আল্লাহর ইবাদত করতে ৷ আমরা তাকে সত্য
    নবী বলে বরণ করে নিয়েছি ৷ আল্লাহর বাণী উপলব্ধি করেছি এবৎ তিনি যা এসেছেন তা যে
    আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছেন তা অনুধাবন করেছি ৷ আমরা এরুপ করার কারণে আমাদের
    সম্প্রদায় আমাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে৷ তার৷ সতব্রবাদী নবীর সাথে শত্রুত৷ পোষণ
    করেছে ৷ তাকে মিথ্যাবাদী ঠাওরিয়েছে এবং তাকে হত্যার প্রয়াস পেয়েছে ৷ তারা আমাদেরকে
    মুর্তিপুজায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে ৷ ফলে, আমরা আমাদের প্রাণ বীচানাে ও ধর্ম রক্ষার জন্যে
    আপনার নিকট পালিয়ে এসেছি ৷

    রাজা বললেন, আল্লাহর কসম, এতো সেই জোাতির উৎস থেকে উৎসারিত যেখান থেকে
    এসেছিল হযরত মুসা (আ)-এর ধর্ম ৷

    হযরত জাফর (বা) বললেন, অভিবাদন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে বলেছেন
    যে, জান্নাতরাসীদের অভিবাদন হল “সালাম” ৷ তিনি আমাদেরকে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন

    জানানো র নির্দেশ দিয়েছেন ৷ সুতরাং আমরা পরস্পার যে ভ ৷বে অভিবাদন জানাই, আপনাকেও

    সে ভ ৷রে অভিবাদন জা ৷নিয়েছি ৷ আর ঈস৷ ইবন মারয়াম (আ) সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল,
    তিনি ভাল ল্লাহ্ তা আলার বান্দ৷ ও রাসুল ৷ তিনি মারয়ামের প্ৰতি নিক্ষিপ্ত অ ৷ল্লাহ্র কালেম৷ ও রুহ
    এবং তিনি সতী-সাধবী কুমারী মাতা ৷র পুত্র ৷ এবার রাজা একটি শুষ্ক কা ৷ষ্ঠখণ্ড হাতে তুলে নিলেন
    এবং বললেন, এরা যা বলেছে মারয়াম পুত্র ঈসাত ৷র চেয়ে এতর্টুকুও অতিরিক্ত নন ৷ তখন
    আবিসিনিয়ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বললেন, রাজন হাবশী লোকজন আপনার একথা শুনলে
    তার৷ অবশ্যই আপনাকে সিংহাসনচ্যুত করবে ৷ তিনি বললেন, আল্লাহর কলম, আমি ঈস৷ (আ)
    সম্পর্কে যা বলেছি কখনােতার ব্যতিক্রম কিছু বলব না ৷ আল্লাহ যখন আমাকে আমার রাজতু
    ফিরিয়ে দেন, তখন লোকজন তো আল্লাহর আনুগত্য করেনি ৷ সুতরাং আমিও আল্লাহর দীনের
    ব্যাপারে লোকজনের কথা মানবাে না ৷ এ জাতীয় অপকর্ম থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা
    করি ৷ ইবন ইসহাক সুত্রে ইউনুস বর্ণনা করেছেন যে, রাজা নাজাশী মহাজিরগণের নিকট লোক
    পাঠিয়ে তাদেরকে একত্রিত তহওয়ার নির্দেশ দিলেন ৷ তিনি মুসলমানদের কথা শুনবেন আমর
    ইবন আস এবং আবদুল্লাহ ইবন আবু রাবীআর নিকট এর চেয়ে ৫ক্ষাভের বিষয় অন্য কিছু ছিল
    না ৷ নাজাশীর দুত আগমন করার পর মুসলমানগণ একত্রিত হলেন এবং পরস্পর আলোচনা
    করলেন যে, তারা কী বলবেন ? শেতষে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পরিস্থিতি য ই হোক আল্লাহ্র
    কসম ,আমরা ত ৷ই বলব, যা আমরা জানি ৷ আমরা যে দীনের উপর আছি এবং রাসুলুল্লাহ (সা)
    আমাদের নিকট যা নিয়ে এস্যেছন, তাই বলবো ৷ তাতে যা হয় হবে ৷

    রাজ দরবারে উপস্থিত হওয়ার পর জা ফর ইবন আবৃত তালিব (রা) সকলের পক্ষে কথা
    বললেন ৷ রাজা বললেন, তোমরা যে ধর্ম অনুসরণ করছো, সেটা কী ? তোমরা তে৷ স্বজাতির
    ধর্ম ত্যাগ করেছে৷ অথচ ইয়াহুদী কিত্বা খৃক্টান ধর্মও গ্রহণ করোনি ৷ জাফর (রা) বললেন,
    “রাজন, আমরা ছিলাম অংশীবাদী ৷ আমরা মুর্তিপুজ৷ করতাম ৷ মৃত প্রাণীর গোশত থেতাম ৷
    প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণ করত ৷ম ৷ খুন খারাবী ও অন্যান্য অপকর্মকেও আমাদের কেউ
    কেউ বৈধ মনে করত ৷ আমরা হালাল-হারামের ধার ধরতাম না ৷ এ অবস্থায় আল্লাহ তা আলা
    আমাদের প্রতি আমাদেরই মধ্য থেকে একজন লোককে রাসুলরুপে প্রেরণ করলেন ৷ তার
    সতবােদি৩ ৷ প্ৰতিজ্ঞাপুরণ ও আমানত দারী সম্পর্কে আমরা সম্যক অবগত ছিলাম ৷ তিনি
    আমাদেরকে আহ্বান জানলেন আমরা যেন এক লা শয়ীক আল্লাহর ইবাদত করি ৷ আমরা
    যেন আত্মীয়৩ ৷ বন্ধন ছিন্ন না ৷করি ৷ প্রতিবেশীর হক নষ্ট না করি ৷ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে
    নামায আদায় করি ৷ তার সত্তুষ্টির জন্যে রোযা পালন করি এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো
    ইবাদত না করি ৷
    ইবন ইসহাক থেকে যিয়াদ উদ্ধৃত করেছেন যে জা ফর ইবন আবু৩ তালিব আরো বলেন,
    “ওই রাসুল আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আহবান জানান ৷ তিনি আদেশ করেন আমরা যেন
    আল্লাহ্র একতুবাদ মেনে নিই, তাৱ ইবাদত করি আর আমাদের পুর্বপুরুষপণ এবং আমরা
    আল্লাহ্ ব্যতীত যে মুর্তিপুজ৷ ও পাথরপুজ৷ করতাম, তা যেন পরিহার করি ৷ তিনি আমাদেরকে
    সত্য কথা বলার জন্যে, আমানত পরিশোধের জন্যে, আত্মীয়ত৷ রক্ষার জন্যে, সৎ প্রতিবেশী
    সুলভ আচরণ করার জন্যে এবং হারাম কাজও খুন খারাবী থেকে বেচে থাকার জন্যে নির্দেশ
    দেন ৷ অশ্লীল৩ ৷, মিথ্যাচ৷ ৷র, ইয়াভীমের সম্পদ আত্মসাৎ সতী সাধৰী নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ
    আরোপ করতে তিনি ধারণ করেন ৷ তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন আল্লাহর
    ইবাদত করি ৷৩ তার সাথে কিছুকে শরীক না করি, নামায আদায় করি, যাকাত দেই এবং বোমা
    পালন করি ৷ বর্ণনাকারী বলেন, এভাবে ইসলামের বিধি-বিধানের কথা তারা এক এক করে
    তার নিকট পেশ করেন ৷ অত: পর আমরা সেই রাসুলকে সত্য বলে গ্রহণ করি ৷৩ তার প্রতি
    ঈমান আনয়ন করি ৷ অ ৷ল্লাহ্র নিকট থেকে তিনি যা ৷নিয়ে এসেছেন আমরা তা অনুসরণ করি ৷
    এ প্রেক্ষিতে আমরা একক, অনন্য ল৷ ৷-শরীক আল্পাহ্র ইবাদত করতে থাকি ৷ তার সাথে কা ৷উকে
    শরীক করা থেকে বিরত থাকি ৷ তিনি আমাদের জন্যে যা হারাম বলে ঘোষণা করেছেন
    আমরা সেগুলোকে হারামরুপে বর্জন করতে থাকি এবং তিনি যা হালাল ঘোষণা দিয়েছেন তা
    হালালরুপে গ্রহণ করি ৷ এই পরিস্থিতিতে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদের শত্রু
    হয়ে উঠে ৷ আমাদেরকে আমাদের দীন-ধর্ম থেকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে এবং আল্লাহর
    ইবাদত ছেড়ে মুর্তিপুজায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে আমাদের উপর তারা নির্যাতন
    চালাতে থাকে ৷ আমরা পুর্বে যেমন নাপাক ও অপবিত্র কাজগুলো হালাল মনে করতাম এখনও
    যেন তা করি , সে জন্যে তার৷ আমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট দিতে থাকে ৷ তারা যখন আমাদের
    উপর নির্যাতন চালাল, আমাদের জীবন দৃর্বিষহ করে তুলল এবং আমাদের ধর্ম পালনে বাধা
    সৃষ্টি করল, তখন আমরা আপনার রাজ্যে পালিয়ে এলাম ৷ অন্য সকলের পরিবর্তে আপনাকেই
    আমরা বেছে নিলাম ৷ অন্যদের পরিবর্তে আপনার প্ৰতিবেশকেই অগ্ৰাধিকার দিলাম ৷ রাজনা

    আমাদের একান্ত আশা যে, আপনার আশ্রয়ে আসার পর কেউ আমাদের উপর জুলুম করতে
    পারবে না ৷

    রাবী বলেন, তখন নাজাশী বললেন, তোমাদের নবী তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন
    তার কোন অংশ কি তোমার নিকট আছে ? ইতোমধ্যে তিনি তার ধর্মযাজকদেরকে ডেকে
    এসেছিলেন ৷ তার পাশে বলে তারা ধর্মগ্রন্থ খুলে বসলেন ৷ হযরত জ্বাফর বললেন, হা৷ বাণী
    আছে ৷ রাজা বললেন, তা নিয়ে এসো এবং পড়ে শুনাও ? হযরত জাফর সুরা মারয়ামের গুরু
    থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করলেন ৷ তা শুনে নাজাশী র্কাদতে’ শুরু করলেন ৷ অশ্রুতে তার
    দাড়ি ভিজে গেল ৷ ধর্মযাজকরা কেদে কেদে তাদের ধর্মগ্রন্থ ভিজিয়ে ফেললেন ৷ এবার রাজা
    বললেন, এই বাণী নিশ্চয়ই সেই জ্যোতির্ময় উৎস থেকে উৎসারিত হয়েছে, যেখান থেকে মুসা
    (আ)-এর বাণী উৎসারিত হয়েছিল ৷ কুরায়শ প্রতিনিধিদেরকে তিনি বললেন, তোমরা সোজা
    চলে যাও ৷ আমি এদেরকে তোমাদের হাতে তুলে দেবাে না এবং এ বিষয়ে আমি তােমাদেরকে
    খুশী করতে পারব না ৷ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরাও ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম ওদের
    দুজনের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন আবু রাবীআ আমাদের প্রতি অনেকটা সহানুভুতিশীল ছিল ৷

    এরপর আমর ইবন আস বলল, আল্লাহর কসম , পরের দিন আমি আবার যাব এবং এমন
    কাজ করব যে, এই সবুজেব দেশ থেকে আমি ওদেরকে সমুলে উৎপাটিত করে দেব ৷ আমি
    রাজাকে বলব, রাজা যে ঈসা (আ)-এর উপাসনা করে থাকেন সেই ঈসাকে ওরা দাস বলে
    বিশ্বাস করে ৷ আবদুল্লাহ ইবন আবু রাবীআ তাকে বলল, “তুমি ওসব করো না ৷ কারণ, ওরা
    আমাদের বিরোধিতা করলেও তারা তো আমাদের আত্মীয়, আমাদের উপর তাদেরও একটা হক
    রয়েছে ৷ সে বলল, না, আল্লাহর কসম, আমি ওই কাজ করবই ৷

    পরের দিন যে রাজ-দরবারে উপস্থিত হয়ে বলে, রাজন! ওরা তো ঈসা (আ) সম্পর্কে
    গুরুতর কথা বলে ৷ ওদেরকে ডেকে এনে ঈসা (আ) সম্বন্ধে ওদের বিশ্বাসের কথা জিজ্ঞেস
    করুন ৷

    রাজা পুনরায় আমাদের নিকট লোক পাঠালেন ৷ আল্লাহর কসম , এসময়ে আমরা যে
    বিপদের সম্মুখীন হই ইতােপুর্বে আর তেমনটি হইনি ৷ আমরা একে অন্যকে বললাম, যদি ঈসা
    (আ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তবে কী উত্তর দিবে ? আমাদের সকলে বলল, তার সম্পর্কে
    আল্লাহ তাআলা যা বলেছেন এবং আমাদের নবী (সা) আমাদেরকে যা বলার নির্দেশ দিয়েছেন,
    আমরা তাই বলব ৷ তখন তারা সকলে রাজার নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন ৷ তার সেনাপতিগণ
    তখন তার পাশে উপবিষ্ট ৷ আমাদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, ঈসা (আ) সম্পর্কে তোমরা কী
    বলো ? সবার পক্ষ থেকে জাফর (বা) বললেন, আমরা এটা বলি যে, তিনি আল্লাহর বন্দো,
    আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর রুহ এবং আল্লাহর কালেমা, সতী-সাধবী কুমারীর প্ৰতি আল্লাহ সেটিকে
    নিক্ষেপ করেছেন ৷ একথা শুনে নাজাশী যমীনের দিকে হাত নামালেন এবং দু’ আঙ্গুলের মাঝে
    একটি ছোট শুকনো কাষ্ঠখও তুলে নিয়ে বললেন, আপনি ঈসা (আ) সম্পর্কে যা বলেছেন ঈসা
    (আ) তা থেকে এতৃটুকুও বেশী নন ৷

    রাজার এ বক্তব্যে সেনাপতিদের মধ্যে গুঞ্জরণ সৃষ্টি হয় ৷ তিনি বললেন আল্লাহর কলম,
    তোমরা গুঞ্জরণ কর আর অসত্তুষ্ট হও আমি যা বলেছি৩াই সঠিক ৷ ঘুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য
    করে তিনি বললেন, আপনারা যেতে পারেন ৷ এ রাজে৷ আপনারা সম্পুর্ণ নিরাপদ ৷ কেউ
    আপনাদেরকে পালি দিলে জরিমানা দিতে হবে ৷ কেউ আপনাদের পালি দিলে জরিমানা দিতে
    হবে ৷ কেউ আপনাদেরকে পালি দিলে জরিমানা দিতে হবে ৷ একে একে তিনবার তিনি এ
    ঘোষণা দিলেন ৷ আপনাদের কাউকে কষ্ট দিয়ে আমি স্বর্ণখণ্ডের অধিকারী হব, তাও আমি পসন্দ
    করি না ৷ ইবন ইসহাক থেকে যিয়াদের বর্ণনায় আছে আমি স্বর্ণের মালিক হই তাও আমার
    পসন্দ নয় ৷ ইবন হিশাম বলেন রাজা তখন স্বর্ণখণ্ডের পরিবর্তে স্বর্ণের পাহাড়’ শব্দ
    বলেছিলেন ৷

    এরপর নাজাশী বললেন, আল্লাহ্ তাআলা যখন আমাকে রাজতু ফিরিয়ে দিলেন, তখন
    তিনি আমার থেকে ঘুষ নেননি আর তখন লোকজন আমার আনগত ৷ করেনি ৷ তাহলে আমি
    তাদের কথা মানতে যাবো কেন ? তারপর তিনি তার লোককে বললেন কুরায়শ প্রতিনিধিদের
    দেয়া ৷উপচৌকন সামগ্রী ফিরিয়ে দাও ৷

    ওসবে আমার প্রয়োজন নেই ৷ আর তাদেরকে বললেন, তোমরা দু’জন আমার রাজ্য ছেড়ে
    চলে যাও ৷ এরপর তারা যা নিয়ে এসেছিল তা সহ ব্যর্থতার গ্নানি নিয়ে চলে গেল ৷ আমরা
    উত্তম রাবষ্ট্ৰর উত্তম মানুষের প্রতিবেশে সেখানে বসবাস করতে থাকি ৷

    ইতে ৷মধ্যে আরিসিনিয়ার জনৈক বিদ্রোহী ব্যক্তি নাজাশীর রাজ্য কেড়ে নিতে উদ্যত হয় ৷
    এতে আমরা ভীষণ দুঃখ পাই ৷ আমরা এ জন্যে শং ত হয়ে পড়ি যে, সে লোক যদি ক্ষমতায়
    অধিষ্ঠিত হয়, তবে নাজাশী আমাদের যেরুপ কদর করেছেন ওই ব্যক্তি তা নাও করতে পারে ৷
    আমরা আল্লাহর দরবারে নাজাশীর জন্যে দুআ ও সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকি ৷ নাজাশী
    যুদ্ধাভিযানে বের হলেন ৷ আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাহাবীগণ নিজেদের মধ্যে আলোচনা
    করলাম যে, আমাদের মধ্য থেকে ঘটনাস্থুলে কে যাবে এবং দেখবে কোন পক্ষ বিজয়ী হচ্ছে ৷
    যুবায়র (রা) বয়সে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন বটে ,কিত্তু তিনি বললেন, “আমি মাঝে” ৷ উপস্থিত
    সাথিগ ৷ণ চামড়ার একটি মশক ফুলিয়ে তার বুকের নীচে বেধে দেন ওই মশকে ভর করে সাতার
    দিয়ে তিনি নীলনদ পার হন ৷ তিনি নদীর অপর তীরের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে পৌছেন ৷ শেষ পর্যন্ত
    রাজত্বের দাবীদ৷ ৷র বিদ্রোহী লোকটি পরা ৷স্ত ও নিহত হয় ৷ নাজা ৷শীর জয় হয় ৷ যুবায়র (রা) ফিরে
    আসেন ৷ দুর থেকে চাদর যেড়ে৩ তিনি আমাদেরকে বিজয়ের সৃসং বাদ জ৷ ৷নিয়ে বলেন, সুসংবাদ
    গ্রহণ করুন, আল্লাহ্ তা জানা নাজাশীকে জয়ী করেছেন ৷ আমি বললাম আল্লাহর কসম
    নাজাশীর বিজয়ে আমরা যা খুশী হয়েছিলাম অন্য কোন বিষয়ে তে মন খুশী হয়েছি বলে
    আমাদের জানা নেই ৷ এরপর আমরা সেখানে বসবাস করতে থাকি ৷ ইতোমধ্যে আমাদের কেউ
    কেউ মক্কায় ফিরে আসেন এবং কেউ কেউ ওখানে থেকে যান ৷

    যুহরী বলেন, উম্মে সালাম৷ (রা) থেকে বর্ণিত এই বর্ণনা আমি উরওয়া ইবন যুবায়র
    (রা) কে শুন ই ৷ তখন উরওয়া বললেন, আল্লাহ্ যখন আমার রাজত্ব ফিরিয়ে দিলেন, তখন
    তিনি তো আমার নিকট থেকে ঘুষ নেননি যে, আমি তার ব্যাপারে ঘুষ নিব ? এবং তখন

    জনসাধারণ আমার আনুগত্য করেনি যে, আমি এ বিষয়ে তাদের আনুগত্য করব ? নাজাশীর এই
    বক্তব্যের ব্যাখ্যা তুমি জানাে ? আমি বললাম, জী না, তা তো জানি না ৷ এ বিষয়ে আবু বকর
    ইবন আবদুর রহমান উম্মে সালামার বরাতে আমাকে কিছু বলেননি ৷ উরওয়া বললেন , হযরত
    আইশা (বা) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, নড়াজাশীর পিতা নিজেও একজন রাজা ছিলেন ৷
    তার একটি ভাই ছিল ৷ ভাইটির ছিল ১২ টি পুত্র ৷ পক্ষাম্ভরে নজোশীর পিতার তিনি ছিলেন
    একমাত্র পুত্র ৷ আবিসিনিয়ার অধিবাসিগণ নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে পরামর্শ করে যে, আমরা যদি
    এখন ক্ষমতাসীন রাজাকে হত্যা করে তার ভাইকে সিংহাসনে বসাই, তাহলে আমাদের রাম্বীয়
    অবকাঠামো ও সার্বভৌমতৃ দীর্ঘ দিন সুসংহত থাকবে আর রাজার ভাইয়ের রয়েছে ১ ২জন পুত্র ৷
    পিতার মৃত্যুর পর এই ১২জন পুত্র ধারাবাহিক ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সক্ষম হবে ৷ ফলে
    দীর্ঘদিন যাবত বাধা-বিপত্তি ও মতভেদ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালিত হয়ে ৷ এই পরিকল্পনায় তারা
    ক্ষমতাসীন রাজাকে হত্যা করে এবং তার ভাইকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে ৷ নাজাশীও তার
    চাচার নিকট উপস্থিত হন এবং তার উপর প্রভাব বিস্তার করেন ৷ পরিস্থিতি এমন দাড়ায় যে,
    তার পরামর্শ ছাড়া রাজা কোন কাজই করতে পাতেন না নাজাশী অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও ৰিচক্ষণ
    লোক ছিলেন ৷ রাজার নিকট নাজড়াশীর মর্যাদা দেখে লোকজন শংকিত হয়ে পড়ে ৷ তারা
    বলাবলি করত , এই যুবক তো তার চাচার উপর প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে ৷ এক সময় সে যে
    রাজার পদ দখল করেবসবে না সে ব্যাপারে আমরা তো নিশ্চিত নই ৷ আমরা তার পিতাকে
    হত্যা করেছি তা সে জানে ৷ সুতরাং একবার যদি সে রাষ্টীয় ক্ষমতা দখল করতে পারে, তবে
    আমাদের সকল সস্রান্ত লোককে সে খুন করে ফেলবে ৷ তাকে মেরে ফেলার জন্যে কিৎবা দেশ
    থেকে বহিষ্কার করার জন্যে তারা সলা-পরামর্শ করতে থাকে ৷ তারপর তার চাচার নিকট গিয়ে
    বলে, আপনার উপর এই যুবকের প্রভাব আমরা লক্ষ্য করেছি ৷ আপনি তো জানেন যে, আমরা
    তার পিতাকে হত্যা করে আপনাকে তার স্থানে বসিয়েছি ৷ এখন যে পরিস্থিতি তাতে সে যে
    একদিন সিংহড়াসন দখল করবে না সে ব্যাপারে আমরা নিরাপদ বোধ করছি না ৷ ক্ষমতা আয়ত্ত
    করতে পারলে যে আমাদের সকলকে খুন করে ফেলবে ৷ আপনি হয় তাকে হত্যা করুন, না হয়
    তাকে দেশান্তরিত করুন ৷

    রাজা বললেন, “ধিক, গতকাল তোমরা তার পিতাকে হত্যা করেছ আর আজকে আমি
    তাকে হত্যা করব ? তবে আমি তাকে দেশ থেকে বের করে দিব ৷ তারা নাজাশীকে নিয়ে বের
    হয় এবং একটি বাজারে নিয়ে ৬০০ কিৎবা ৭০০ দিরহামে বিক্রি করে দেয় ৷ ব্যবসায়ী তাকে
    নৌকায় তুলে যাত্রা করে ৷ সন্ধ্যড়া বেলা হেমন্তকালীন প্রচণ্ড ঝড়-তৃফান শুরু হয় তার চাচা বৃষ্টিতে
    নেমেছিলেন ৷ প্রচণ্ড বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয় ৷ লোকজন ছুটে যায় তার পুত্রদের নিকট ৷ তারা
    লক্ষ্য করে যে, তাদের সকলেই অযােগ্য ও গণ্ডমুর্থ ৷ তাদের কারো মধ্যেই কোন প্রকারের
    সদ্গুণ ছিল না ৷ ফলে তাদের মধ্যে মারাত্মক মতানৈক্য দেখা দেয় ৷ তারা পরস্পরে বলাবলি
    করে যে, তোমরা যাকে গতকাল বিক্রি করে দিয়েছিলে, সে ব্যতীত এমন কোন রাজা তোমরা
    খুজে পাবে না যে তোমাদেরৰু রাঃজ্য শৃৎখলা ফিরিয়ে আনতে পারবে ৷ আবিসিনিয়ার
    অধিবাসীদের কল্যাণ যদি তোমাদের কাম্য হয়, তবে তাকে দুরে নিয়ে যাওয়ার পুর্বেই খুজে

    নিয়ে এসো ৷ নাজাশীর খোজে ওরা বেরিয়ে পড়ে ৷ অবশেষে তাকে খুজে পায় এবং ফিরিয়ে
    নিয়ে আসে ৷ রাজমুকুট পরিয়ে তারা তাকে সম্রাটের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে ৷

    ক্রেতা ৷ব্যবসায়ীটি বলল, আপনারা আমার নিকট থেকে যুবককে যখন ফিরিয়ে নিয়ে
    গেলেন, তখন আমার মুল্যট৷ ফেরত দিন ৷ লোকজন বলল, না তা দেয়৷ হবে না ৷ সে বলল
    তাহলে আল্লাহ্র কসম, আমি নিজে৩ার সাথে কথা বলব ৷ ব্যবসায়ী নিজে নাজাশীর সাথে
    সাক্ষাত করে বলল, রাজন! আমি একটি যুবক ক্রয় করেছিলাম ৷ বিক্রেতাদেরকে আমিত
    মুল্যও পরিশোধ করে দিয়েছি ৷ পরে তারা এসে আমার নিকট থেকে যুবকটিকে কেড়ে নেয় ৷
    কিভু আমার মুল্য ফেরত দেয়নি ৷ নাজাশী সর্বপ্রথম উথাপিত এই মামলায় নিজের দৃঢ়তা
    প্রদর্শন করে রায়ে বললেন, “তোমরা হয় ব্যবসায়ীর মুল্য ফেরত দিবে নতুবা :তামাদের
    বিক্রীত যুবক৩ তাকে ফিরিয়ে দেবে ৷ ওই যুবককে নিয়ে যেখানে ইচ্ছা যে চলে যাবে ৷ তারা
    বলল, আমরা বরং তার মুল্য ফিরিয়ে দেব ৷ তারা মুল্য ফেরত দিয়ে দেয় ৷ এই ঘটনার
    প্রেক্ষাপটেই নাজাশী বলেছিলেন, “আমার রাজতৃ আমার নিকট ফিরিয়ে দেয়ার সময় মহান
    আল্লাহ্ তাে আমার নিকট থেকে ঘুষ নেননি যে, তার ব্যাপারে আমি ঘুষ নেব, আর আমার
    ক্ষেত্রে লোকজন তাে আমার আনুগত্য করেনি যে, আমি তাদের কথা মত চলবাে !”

    মুসা ইবন উকবা (রা) বলেন, নাজাশীর পিতা ছিলেন আবিসিনিয়ার রাজা ৰু তার পিতার
    যখন মৃত্যু হয়, তখন নাজাশী ছিলেন ছোট শিশু ৷ মৃতুাকালে নিজ ভাইকে তিনি ওসীয়াত
    করেছিলেন০ ং “আমার পুত্র সাব৷ লক না হওয়া পর্যন্ত রাজতৃ তোমার হাতে থাকবে ৷ সাবালকতু
    প্রাপ্তির পর সেই রাজা হবে ৷” পরব ত ৷ তার ভাই নিজে রাজত্বের জন্য লালাযিত হয়ে পড়ে
    এবং জনৈক বাবসায়ীর নিকট নাজাশীকে বিক্রি করে দেয় ৷ ওই রাতেই নাজাশীর চাচার মৃত্যু
    হয় ৷ আবিসিনিয়ার জনগণ তখন নাজাশীকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তার মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে
    দেয় ৷ মুসা ইবন উকবা এভাবে সৎক্ষিপ্তাকারে এ বর্ণনা উদ্ধৃত করেন ৷ ইবন ইসহাকের বর্ণনাটি
    অধিকতর বিস্তারিত এবং সুবিন্যস্ত ৷ আল্পাহ্ই ড়াল জানেন ৷

    ইবন ইসহাকের বর্ণনায় আছে যে, কুরায়শ প্রতিনিধি হিসেবে নাজাশীর নিকট আমর ইবন
    ভাল এবং আবদুল্লাহ্ ইবন আবু রাবীআকে প্রেরণ করা হয়েছিল ৷ পক্ষান্তরে মুসা ইবন উকবা,
    উমাবী এবং অন্যান্যদের বর্ণনায় এসেছে যে, তারা আমর ইবন আস এবং আম্মারা ইবন
    ওয়া ৷লীদ ইবন মুগীরাকে প্রেরণ করেছিল ৷ কাবা শরীফের সম্মুখে নামায আদায়ের সময় যেদিন
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর পিঠে উটের নাড়িভুড়ি লে দেয়৷ হয়েছিল, সে দািনর ঘটনায় উপস্থিত
    কাফিরদের হাসাহাসির প্রেক্ষিতে ৩রাসুলুল্লাহ্ (সা) যে সাতজনের বিরুদ্ধে বদ দু আ করেছিলেন
    আম্মারা ইবন ওয়ালীদ ইবন মুগীরা ছিল তাদের একজন ৷ ইতাে ৷পুর্বে আবু মুসা আশআরী ও
    ইবন মাসউদ (না)-এর হাদীছে এ ঘটনা আলোচিত হয়েছে ৷ বন্তুত আমর ইবন আস এবং
    আম্মারা ইবন ওয়ালীদ ইবন মুগীরা দুজনে যখন মক্কা থেকে বের হয়, তখন আমর ইবন
    আসের সাথে তার শ্রী ছিল ৷ আম্মারা ছিল সুদর্শন যুবক ৷ তারা দু’জ্যন একসাথে নৌকায় উঠে ৷
    অম্ম৷ ৷রার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আমরের শ্ৰীর উপর ৷ সে আমর ইবন আসকে সমুদ্রে ফেলে দেয়
    যাতে সে সাগরে ডুবে মরে যায় ৷ কিভু আমর সা৩ রিয়ে জীবন রক্ষা করে এবং নৌকায় উঠে

    পড়ে ৷ আম্মারা বলল, আপনি সাতারে পারদর্শী এটা জানলে আমি আপনাকে সাগরে ফেলতাম
    না ৷ আন্মারার প্রতি প্রচণ্ড বিক্ষুদ্ধ হয় আমর ৷ হিজরতকারী মুসলমানদের প্রত্যর্পাণর ব্যাপারে
    নড়াজাশীর নিকট তারা যখন ব্যর্থ হয়, তখন আম্মারা জনৈক আবিসিনীয় লোকের নিকট যায় ৷
    এদিকে আমর দেখা করে নড়াজাশীর সাথে এবং আম্মারার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে তার কান
    ভারী করে তোলে ৷ এরপর নাজাশীর নির্দেশে আম্মারাকে জাদু করা হয় ৷ ফলে সে উন্মাদ হয়ে
    যায় ৷ সে বন্য প্রাণীদের সাথে বনে-জঙ্গলে ঘৃরাফেরা করতে থাকে ৷

    এ বিষয়ে উমাভী একটি দীর্ঘ ঘটনা উল্লেখ করেছেন ৷ তাতে এ কথাও আছে যে, হযরত
    উমর ইবন খাত্তাব (রা)-এর শাসনামল পর্যন্ত আম্মারা জীবিত ছিল ৷ জনৈক সাহাবী বন্য জম্বুর
    সাথে বিচরণকারী আম্মারাকে ফীদ পেতে ধরে ফেলেছিলেন ৷ সে তখন বলছিল, “আমাকে
    ছেড়ে দাও না হয় আমি মারা যাব ৷” তাকে ছেড়ে না দেয়ায় তার মৃত্যু হয় ৷ আল্লাহ্ই ভাল
    জানেন ৷

    কেউ কেউ বলেছেন যে, হিজরতকারী মুসলমানদেরকে ফেরত পাঠানোর জন্যে কুরায়শ
    নড়াজাশীর নিকট দৃ’দফা প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল ৷ একবার পাঠিয়েছিল আমর ইবন অড়াস এবং
    আম্মারা ইবন ওয়ালীদকে ৷ দ্বিতীয়বার পাঠিয়েছিল আমর ইব ন আস এবং আবদুল্লাহ্ ইবন আবু
    রাবীআকে ৷ আবু নুআয়ম তার “দালাইল” গ্রন্থে স্পষ্টভাবে তা উল্লেখ করেছেন ৷ আল্লাহ্ই ভাল
    জানেন ৷

    কেউ কেউ বলেছেন, দ্বিতীয় দফায় প্রতিনিধি প্রেরণের ঘটনা ঘটেছিল বদর যুদ্ধের পর ৷
    এটি যুহরীর উক্তি ৷ বদরের যুদ্ধে নিহত কাফিরদের প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে ঘৃসলমানদেরকে
    ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব সহকারে তারা দ্বিতীয় দফায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল ৷ কিন্তু নজােশী তাদের
    প্রস্তাব গ্রহণ করেননি ৷ আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সভুষ্ট হোন এবং তাকে সতুষ্ট করুন ৷

    ইবন ইসহাক সুত্রে যিয়াদ উল্লেখ করেছেন যে, ম্সলমানদেরকে ফেরত আনার জন্যে
    কুরায়শদের কুট-কৌশল সম্বন্ধে জানার পর আবু তালিব নাজাশীর নিকট কয়েকটি কবিতার
    চরণ লিখে পাঠান ৷ নড়াজাশীর নিকট আশ্রয় গ্রহণকারী মুসলমানদের প্ৰতি ইনসাফ প্রদর্শন ও
    সদয় আচরণ করার জন্যে তিনিনাজাশীকে উৎসাহিত করেন ৷ কবিতার চরণগুলো এই

    আহ্ৰু আমি যদি জানতে পারতাম ওই দুর দেশে কেমন আছে জাফর ও আমর এবং কেমন
    আছে আমর নিকটাত্মীয় শত্রুর শত্রুরা ৷
    নড়াজাশীর সদাচরণ ও সহানুভুতি কি জাফর ও তার সাথীদের ভাগ্যে জুর্টেছে ? নাকি কোন
    বিরোধী পক্ষের ষড়যন্ত্র তাদেরকে ওই সহানুভুতি থেকে বঞ্চিত করেছে ৷

    আমি জানি “আপনার জয় হোক” আপনি একজন সম্মানিত ও মর্যাদাবান ব্যক্তি ৷ দুরদুরাম্ভ
    থেকে আগত পথিক আপনার নিকট দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয় না ৷
    আমি এও জানি যে, মহান আল্লাহ আপনাকে শক্তি ও প্রাচুর্য দান ও অনুগ্রহ দানে ধন্য
    করেছেন এবং সকল প্রকার কল্যাণ অর্জনের উপায়-উপকরণ আপনার নিকট মওজুদ রয়েছে ৷

    ইবন ইসহাক থেকে ইউনুস বর্ণনা করেছেন যে, ইয়াষীদ ইবন রুমান উরওয়া ইবন যুবায়র
    থেকে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি বলেছেন, নাজাশী কথাবার্তা বলেছিলেন হযরত উছমান ইবন
    আফ্ফড়ান (রা)-এর সাথে ৷ তবে প্রসিদ্ধ বংনাি হল, তিনি কথা বলেছিলেন হযরত জাফর
    (রা)-এর সাথে ৷

    ইবন ইসহাক থেকে যিয়াদ বুকাঈ বলেছেন, ইয়াষীদ ইবন রুমান উরওয়া সুত্রে হযরত
    অইিশা (বা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, নাজাশীর মৃত্যুর পর সর্বত্র আলোচিত হত
    যে, তার কবরের উপর সর্বদা ৫জ্যাতি ও আলো দেখা যেত ৷ ইমাম আবু দাউদ
    মুহাম্মদ ইবন ইসহাক সুত্রে ওই সনদে উদ্ধৃত করেছেন যে, যখন নাজাশীর মৃত্যু হয়, তখন
    আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতাম যে, তার কবরের উপর সর্বদা আলো ও £জ্যাতি
    দৃশ্যমান হচ্ছে ৷

    যিয়াদ বংনাি করেছেন, মুহাম্মদ ইবন ইসহাক থেকে তিনি বলেছেন যে, জাফর ইবন
    মুহাম্মদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একদিন আবিসিনিয়ার অধিবাসীরা একত্রিত হয় ৷
    তারা নাজাশীকে বলে, আপনি আমাদের ধর্ম ত্যাগ করেছেন ৷ একথা বলে তারা তার বিরুদ্ধে
    বিদ্রোহ ঘোষণা করে ৷ রাজা হযরত জাফর ও তার সাথীদের নিকট সংবাদ পাঠান এবং একটি
    নৌকা প্রস্তুত করে দিয়ে তাদেরকে বলেন যে, আপনারা ভালোয় ভালোয় এ নৌকাতে উঠুন ৷
    আমার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমি পরাজিত হলে আপনারা যেখানে ইচ্ছা চলে যাবেন
    আর আমি বিজয়ী হলে আমার রাজেইি থাকবেন ৷ এরপর তিনি এক টুকরা কাগজ নিলেন ৷
    তাতে লিখলেন, “তিনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, মুহাম্মদ (সা)
    আল্লাহ্র বান্দা ও রাসুল ৷ তিনি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ঈসা (আ) আল্লাহর বন্দো , তার রাসুল
    তার রুহ এবং তীর কালেমা, যেটিকে তিনি মারয়ড়ামের প্রতি নিক্ষেপ করেছেন ৷” লিখিত
    কাগজঢি তিনি তার জুবৃবার ডান কাধের মধ্যে লুকিয়ে রাখলেন ৷ এরপর তিনি আবিসিনীয়দের
    নিকট গেলেন ৷ তারা তখন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সারিবদ্ধভাবে দীড়িয়েছিল ৷ তিনি
    বললেন, আবিসিনিয়বাসিগণ! তোমাদের সম্মান পাওয়ার জন্যে আমি কি সর্বাধিক যোগ্য পাত্র
    নই? তারা বলল, “ইব্রুা,অবশ্যই ৷ তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার আচার-আচরণ
    কেমন ? তারা বলল, সুন্দর ও সবেত্তিম চরিত্র ৷ তিনি বললেন, এখন তোমাদের মধ্যে আমার
    অবস্থান কেমন ? তারা বলল, আপনি আমাদের ধর্মত্যাগ করেছেন এবং আপনি মনে করেন যে,
    ঈসা (আ) আল্লাহ্র বন্দো ও রাসুল ৷ তিনি বললেন, ঈসা সম্বন্ধে তোমরা কি বল ? তারা বলল,
    আমরা বলি যে, তিনি আল্লাহর পুত্র ৷ নাজাশী তার জুব্বার উপর দিয়ে বুকে হাত রেখে এই
    সাক্ষ্য দিয়ে বললেন, ঈসা ইবন মারয়ড়াম এর চেয়ে মোটেই অতিরিক্ত কিছু নন ৷ অর্থাৎ তিনি যা

    লিখেছেন তার অতিরিক্ত কিছু নন ৷ এতে তারা তার প্রতি সভুষ্ট হয় এবং স্বগৃহে ফিরে যায় ৷ এ
    ৎবাদ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট পৌছে ৷ নাজাশী যখন ইনতিকাল করেন, তখন রাসুলুল্লাহ
    (না) তার জানাযার নামায আদায় করেন এবং তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ৷

    সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রা (যা) থেকে বর্ণিত আছে যে, যেদিন
    নাজাশীর মৃত্যু হয়, সেদিন রাসুলুল্লাহ্ (না) তার মৃত্যু সংবাদ প্রচার করেন এবং সাহাবায়ে
    কিরামকে নিয়ে জানাযার নামায়ের উদ্দেশ্যে ঈদগাহে আসেন ৷ এরপর সবাইকে সারিবদ্ধভাবে
    দাড় করিয়ে চার তাকবীরের সাথে জানাযার নামায আদায় করেন ৷

    ইমাম বুখারী (র) বলেন, “নাজাশীর ইনতিকাল বিষয়ক অধ্যায় আবু রাবী হযরত
    জাবির (যা) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, নাজাশী যখন ইনতিকাল করেন , তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা)
    বললেন, আজ একজন নেক্কার লোক ইনতিকাল করেছেন ৷ তোমরা সকলে প্রন্তুত হও,
    তোমাদের ভাই আসহামাহ্-এর জন্যে জানাযার নামায পড় ৷ আনাস ইবন মালিক, আবদুল্লাহ
    ইবন মাসউদ ও অন্যন্যে অনেক সাহাবী থেকে এটি বর্ণিত হয়েছে ৷ কোন কোন বর্ণনায় আছে
    যে , তীর নাম মুসহিমা ৷ তিনি মুলত আসহামাহ্ ইবন আবহুর ৷ তিনি একজন নেক্কার,
    বুদ্ধিমান, মেধাবী, ন্যায়পরায়ণ ও বিজ্ঞ লোক ছিলেন ৷ আল্পাহ্ তার প্রতি সত্তুষ্ট হোন এবং তাকে
    সত্তুষ্ট করুন ৷
    ইবন ইসহাক সুত্রে ইউনুস বলেন, নাজাশীর মুল নাম মাসহড়ামা ৷ বায়হাকী এটির বিশুদ্ধ
    রুপ আসহ্াম বলে মন্তব্য করেছেন ৷ অড়াসহড়াম শব্দের অর্থ দান-দক্ষিণা ৷ তিনি এও বলেছেন যে
    নাজাশী হল আবিসিনিয়া রাজ্যের উপাধি ৷ যেমন বলা হয় কিসরা, হিরাকল প্রভৃতি ৷
    আমি বলি হিরাকল দ্বারা সম্ভবত রোম সম্রাট কায়সারের কথা বুঝানো হয়েছে ৷ কারণ,
    রোমান নগরসমুহের দ্বীপণ্ডলোসহ সিরিয়ার রাজাকে বলা হয় কায়সার ৷ পারস্য সম্রাটের উপাধি
    কিসরা ৷ সমগ্র মিসরের সম্রাটের উপাধি ফিরআওন ৷ আলেকজাদ্রিয়ার রাজার উপাধি
    ,মুকাওকিস ৷ ইয়ামান ও শাহারর রাজার উপাধি তুবৃবা’ ৷ আবিসিনিয়ার রাজার উপাধি নাজাশী ৷
    গ্রীস এবং কারো কারো মতে ভারতবর্ষের সম্রাটের উপাধি বাতলীমুস এবং তৃর্কদের সম্রাটের
    উপহ্ণ্র্দুহ্৷ খাকান ৷
    কোন কোন আলিম বলেছেন, যেহেতু নাজাশী তার ঈমান গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখতেন
    এবং যেদিন তার ইনতিকাল হয়, সেদিন সেখানে তার জানাযার নামায পড়ার কেউ ছিল না,
    যেহেতু রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় তার জানাযার নামায আদায় করেন ৷ এ প্রেক্ষিতেই ফকীহ্গণ
    বলেছেন যে, কোন ব্যক্তি যে দেশে মৃত্যুবরণ করে, সে দেশে যদি তার জানাযা পড়া হয়, তবে
    যে দেশে সে অনুপস্থিত, সে দেশে তার জানাযা পড়া বৈধ নয় ৷ এজন্যে মদীনা মুনাওয়ারা
    ব্যতীত অন্য কোন স্থানে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর জানাযার নামায হয়নি ৷ মক্কাতেও নয়, অন্য কোন
    স্থানেও নয় ৷ হযরত আবু বকর (রা) , উমর (রা) , উছমান (রা)-সহ অন্যান্য সাহাবীর ক্ষেত্রেও
    এমন কোন বিবরণ পাওয়া যায় না যে, তারা যেখানে ইনতিকাল করেছেন এবং যেখানে র্তাদের
    জানাযা হয়েছে, সেখানে ব্যতীত অন্য কোন শহরে ভীদের জানাযা হয়েছে ৷
    আমি বলি, নাজাশী (রা)-এর জানাযায় আবু হুরায়ারা (রা)-এর উপস্থিতি একথা প্রমাণ
    করে যে, খায়বার বিজয়ের পর তার ইনতিকাল হয়েছে ৷ খায়বার বিজয়ের দিনে জাফর ইবন
    আবু তালিব (রা) অবশিষ্ট মুহাজিরদেরকে নিয়ে আবিসিনিয়া থেকে মদীনায় ফিরে এসেছিলেন ৷
    এ প্রেক্ষিতেই রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন, আল্লাহর কলম, আমি বুঝে উঠতে পারছি না, আমি
    জাফরের আগমনে বেশী আনন্দিত, না খায়বার বিজয়ের জন্যে বেশী আনন্দিত ৷ র্তারা ফিরে
    আসার সময় নাজাশীর পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর জন্যে প্রচুর উপচৌকন নিয়ে
    এসেছিলেন ৷ আবু মুসা আশআরী (রা)-এর সাথিগণ এবং আশআরী সম্প্রদায়ের নৌকাযাত্রী
    লোকজন জাযম্ম ইবন আবু তালিবের সহযাত্রী হয়েছিলেন ৷

    নাজাশীর পক্ষ থেকে রাসুলুল্পাহ্ (সা)-এর খিদমত করার জন্যে উপহার সামগ্রী ও জাফর
    ইবন আবু তালিবের সাথে নাজাশী তার এক ভ্রাতুম্পুত্রকে প্রেরণ করেছিলেন, ওই ভ্রাতুম্পুত্রের
    নাম ছিল ঘু-নাখতারা কিত্বা ঘু-মাখমারা ৷ সুহায়লী বলেন, নবম হিজরীর রজব মাসে নাজাশীর
    ইনতিকাল হয় ৷ এ মন্তব্যের যথার্থতা পর্যালোচনা সাপেক্ষ ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷

    বায়হাকী বলেন, ফকীহ্ আবু ইসহড়াক আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন,
    নাজাশীর পাঠানো প্রতিনিধিদল রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর উপস্থিত হওয়ার পর তিনি নিজে তাদের
    খিদমত করতে লাগলেন ৷ সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! ওদের খিদমতের
    জন্যে আমরাই তো যথেষ্ট ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ওরা আমার সাহাবীদের প্রতি সম্মানজনক
    আচারণ করেছে, তার বিনিময়ে আমি নিজ হাতে ওদের প্রতিদান দিতে চাই ৷

    এরপর বায়হাকী (র) বলেন, আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবন ইস্পাহানী আর কাতাদা
    (র) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নাজাশীর প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট
    উপস্থিত হয় ৷ তখন তিনি নিজে ওদের সেবা করতে শুরু করেন ৷ সাহাবায়ে কিরাম (বা) আরয
    করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আপনার পক্ষ থেকে আমরাই তো ওদের সেবা করার জন্যে যথেষ্ট ৷
    উত্তরে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ওরা আমার সাহাবীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করেছে,
    আমি নিজ হাতে ওদেরকে কিছু প্রতিদান দেয়া পসন্দ করি ৷ আওযাঈ থেকে তালহা ইবন যায়দ
    একা এ হড়াদীছ বর্ণনা করেছেন ৷

    বায়হাকী (র) আরো বলেন, আবুল হুসাইন ইবন বিশরান আমর সুত্রে বর্ণনা করেন ৷
    তিনি বলেন, আমর ইবন আস আবিসিনিয়া থেকে ফিরে এসে তার বাড়িতে অবস্থান করছিল ৷
    বাইরে বের হচ্ছিল না ৷ লোকজন বলল, ওর কি হল, বাড়ী থেকে বের হয় না কেন ? তখন
    আমর বলল, নাজাশী আসহড়ামা বিশ্বাস করে যে, তোমাদের প্রতিপক্ষ মুহাম্মাদ (সা) একজন
    সত্য নবী ৷

    ইবন ইসহড়াক বলেন, আমর ইবন আস এবং আবদুল্লাহ্ ইবন আবু রাবীআ সাহাবীপণকে
    ফেরত আনতে ব্যর্থ হয়ে নাজাশীর পক্ষ থেকে অনাকাডিক্ষত উত্তর নিয়ে কুরায়শদের নিকট
    ফিরে আসে ৷ এদিকে উমর ইবন খাত্তাব (রা) ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছিলেন ৷ তিনি ছিলেন
    অত্যন্ত ব্যক্তিতুসম্পন্ন ও আত্মমর্ষাদাশীল লোক ৷ তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস কারো ছিল না ৷
    তীর এবং হামযার মাধ্যমে রাসুলুল্পাহ্ (সা)-এর সাহাবীপণ নিরাপত্তা লাভ করেছিলেন ৷ এসকল

    পরিস্থিতি কুরায়শদেরকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে ৷ আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (বা) বলেন, হযরত
    উমর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের পুর্ব পর্যন্ত আমরা কাবা শরীফের নিকট নামায আদায় করতে
    পারতাম না ৷ হযরত উমর (রা) যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন তিনি কুরায়শদের বিরুদ্ধে
    চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন এবং নিজে কাবা শরীফে নামায আদায় করলেন ৷ আমরাও তার সাথে
    সেখানে নামায আদায় করলাম ৷

    আমি বলি , সহীহ্ ৰুখারীতে ইবন মাসউদ (রা)-এর একটি হাদীছ আছে ৷ তিনি বলেছেন,
    “হযরত উমর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমরা শক্তিশালী হতে লাগলাম যিয়াদ
    বৃকাঈ বলেন, ইবন মাসউদ (রা) বলেছেন, হযরত উমর (রশ্মি-এর ইসলাম গ্রহণ করাই ছিল
    একটি বিজয় ৷ র্তার হিজরত ছিল বিরাট সাহায্য এবং তার শাসন ছিল একটি রহমত ৷ হযরত
    উমর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের পুর্বে আমরা কাবা শরীফের নিকট নামায আদায় করতে
    পারতাম না : তার ইসলাম গ্রহণ করার পর কুরায়শদের প্রতি তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন এবং
    কা’বাগৃহের নিকট নামায আদায় করলেন ৷ আমরাও তার সাথে নামায আদায় করলাম ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাহাবীপণের আবিসিনিয়ার হিজরতের পর
    হযরত উমর (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ ইবন ইসহড়াক উম্মে আবদুল্লাহ বিনত আবু হাছামা
    থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা আবিসিনিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম ৷
    জরুরী প্রয়োজনে আমির (রা) বাইরে গিয়েছিলেন ৷ হঠাৎ উমর এসে উপস্থিত হলেন ৷ তিনি
    আমার নিকট এসে দীড়ালেন ৷ তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি ৷ তার বহু জুলুম-নির্যাতনের
    শিকার আমরা হয়েছিলাম ৷ উমর (রা) বললেন, হে উম্মে আবদুল্লাহ তোমরা কি দেশ ছেড়ে চলে
    যাচ্ছে ? আমি বললাম হ্যা আপনারা যখন আমাদেরকে নানা ভাবে কষ্ট দিচ্ছেন নির্যাতন
    করছেন, তখন আমরা আল্লাহর দুনিয়ার অনব্লি কোন দেশে চলে যাব ৷ যেখানে মহান আল্লাহ
    আমাদের নিষ্কৃতির ব্যবস্থা করবেন ৷ তখন উমর বললেন, তাই হোক আল্লাহ তোমাদের সহায়
    হোন ৷ সে মুহুর্তে আমি উমরের মধ্যে এমন নম্রতা ও উদারতা লক্ষ্য করলাম, যা ইতোপুর্বে
    কখনো তার মধ্যে দেখা যায়নি ৷ এরপর তিনি নিজ গন্তব্যে চলে গেলেন ৷ আমার যা মনে হল
    আমাদের দেশত্যাগে তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন ৷ ইতোমধ্যে প্রয়োজন সমাধা করে আমির ফিরে
    এলেন ৷ আমি বললাম, হে আবু আবদুল্লাহ! একটু আগে আপনি যদি উমরের নম্রতা ও উদারতা
    এবং আমাদের ব্যাপারে দুঃখিত হওয়ার পরিস্থিতিটা দেখতে পেতেন! আমির বললেন, উমর
    ইসলাম কবুল করুন তুমি কি তা“ কামনা কর ? আমি বললাম হ্যা, তা বটে ৷ তিনি বললেন,
    খাত্তারের গাধা যতক্ষণ ইসলাম গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ তোমার এ দেখা সত্বেও তাতে উমরের
    ইসলাম গ্রহণের সম্ভাবনা নেই ৷ উম্মে আবদুল্লাহ বলেন , ইসলামের প্রতি উমরের অনমনীয়তা,
    রুক্ষতা ও কঠােরতার প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন ৷

    আমি বলি যারা মনে করেন যে, হযরত উমর (বা) : :তম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি এ
    বর্ণনা তাদের মন্তব্যকে রদ করে দেয় ৷ কারণ, আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী মুসলমানদের সংখ্যা
    ৮ : এর উপরে ছিল ৷ তবে উপরোক্ত মন্তব্য সঠিক বলে ধরে নেয়া যাবে তখন, যখন বলা হবে
    যে, হিজরতকারীদের হিজরতের পর যারা মক্কায় অবশিষ্ট ছিলেন তাদের সংখ্যা অনুসারে হযরত

    উমর (বা) : :তম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি ৷ অবশ্য , হযরত উমর (বা)-এর ইসলাম গ্রহণ
    বিষয়ক যে ঘটনা ইবন ইসহাক বর্ণনা করেছেন, তাতে উপরোক্ত ব্যাখ্যার সমর্থন পাওয়া যায় ৷
    ইবন ইসহাক বলেছেন হযরত উমর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কিত যে ঘটনা আমার নিবল্ট
    এসেছে তা এরুপ :

    তার বোন ফাতিম৷ বিনত খাত্তাব ছিলেন সাঈদ ইবন যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়ল এর
    শ্রী ৷ র্তার৷ স্বামী-দ্রী ণুজনেই ইওে তাপৃর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ৷ র্তার৷ ইসলাম গ্রহণের
    বিষয়টি উমর থেকে গোপন রেখেছিলেন ৷ বনু আদী গোত্রের নুআয়ম ইবন আবদুল্লাহ নামের
    এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ৷ তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি তিনিও নিজ সম্প্রদায়ের
    লোকদের নিকট থেকে ৷:গপন রেখেছিলেন ৷ খাব্বাব ইবন আরত (বা) বিভিন্ন সময়ে উমরের
    বোন ফাতিমার বা তে এসে র্তাকে কুরআন শিক্ষা দিতেন ৷

    একদিন উমর নাঙ্গা তরবাবি হাতে রাসুলুল্লাহ্ (না) ও তার সাথীদেরকে হত্যা করার
    উদ্দেশ্যে রওনা হন ৷ তাকে জানানো হয় যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও তার সাহাবীগণ সাফ৷ পাহাড়ের

    কাছাকাছি ৷ রাসুলুয়াহ্ (সা) এ-র নিকট তখন তার চাচা হামযা (রা), আবু বকর ইবন আবু
    কুহাফ৷ (বা ) এবং আলী ইবন আবৃত তালিব (রা) সহ মক্কায় অবস্থানকারী মুসলমানগণ ছিলেন ৷
    ৷ ৩ারা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেননি ৷

    পথে উমরের সাথে দেখা হয় নুআয়ম ইবন আবদুল্লাহ (বা ) এর ৷ নুআয়ম বললেন উমর
    কোথায় যাচ্ছা উমর বলল, “যাচ্ছি তো ধর্মন্৩ চ্যাপী মুহাম্মদ (সা) এর উদ্দেশে ৷ সে কুরায়শ
    জাতির ঐক্য বিনষ্ট করেছে ৷ জ্ঞানী-গুর্ণীদেরকে মুর্থ ঠাওরিয়েছে ৷ কুরায়শদের ধর্মের নিন্দা ও
    দােষারোপ করেছে এবং আমার দেবতাদেরকে গালমন্দ করেছে ৷ আমি তাকে খুন করব ৷
    নুআয়ম (বা) বললেন, উমর ! তোমাদের আত্মগরিমা তোমাকে প্রভাবিত করেছে ৷ তুমি যদি
    মুহাম্মদ (সা) কে খুন কর তবে তুমি কি মনে করেছ যে আবৃদ মানাফ গোত্র তোমাকে
    দুনিয়াতে বিচরণ করার জন্যে ছেড়ে দেবে ? আগে নিজ পরিবারের দিকে ফিরে গিয়ে তাদেরকে
    ঠিক কর ৷ উমর বললেন, আমার পরিবারের কার কথা বলছ ? নুআয়ম বললেন, তোমার চাচাত
    ভাই ও ভগ্নিপতি সাঈদ ইবন যায়দ এবং তোমার সহােদরা ফাতিমার কথা বলছি ৷ আল্লাহর
    কলম, তারা দু’জনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং মুহাম্মদ (সা)-এর দীন কবুল করেছেন ৷ তুমি
    আগে ওদেরকে ঠিক কর ৷ উমর তখন ছুটে গেলেন তার বোন ফ তিমার বাড়ী অভিমুখে ৷
    খাব্বাব ইবন আরত তখন ফাত ৷তিম৷ (রা) এর বাড়ীতে ছিলেন ৷ সুরা ছু-৷ হা লিখিত একটি কপি
    থেকে তিনি ফাতিমাকে কুরআন পাঠ শিক্ষা দিচ্ছিলেন ৷ উমরের আগমন জড়াচ করতে পেরে
    খাব্বাব (বা) একটি ক্ষুদ্র কক্ষে অথবা গৃহকােণে লুকিয়ে গেলেন ৷ ফাতিম৷ (বা) কুরআনের
    কপিটি তার উরুর নীচে লুকিয়ে রাখলেন ৷ গৃহের দরজার পাশে এসেই উমর ফাতিমাকে
    খাব্বাবের কুরআন শেখানাের শব্দ শুনেছিলেন ৷ ঘরে প্রবেশ করে ফাতিমাকে বললেন একটু
    আগে আমি কিসের শব্দ শুনছিলাম ? ফ৷ ৷তিমাও তার স্বামী বললেন, কই না তো আপনি কিছুই
    শুনেননি ৷ উমর হুৎকার ছেড়ে বললেন, আমি অবশ্যই শুনেছি ৷ আর আল্লাহর কসম, আমি

    জানতে পেয়েছি যে, তোমরা দৃ’জনে মুহাম্মদ-এর দীন কবুল করেছ ৷ এ বলে তিনি তীর
    ভগ্নিপতি সাঈদ ইবন যায়দের উপর আক্রমণ করলেন এবং তাকে বেধড়ক পেটাতে লাগলেন ৷
    ফাতিমা তার স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন ৷ উমর তাকেও প্রহারে প্ৰহারে রক্তাক্ত করে
    তুললেন ৷ শেষ পর্যন্ত ফাতিমা (রা) ও তার স্বামী বললেন, “হ্যা, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি
    এবং আল্লাহ ও তার রড়াসুলের প্রতি ঈমান এসেছি ৷ এখন আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন ৷”

    বোনের রক্তাক্ত শরীর দেখে উমর নিজের কৃতকর্মের জন্যে পাঠজ্জিত হলেন এবং প্রহার
    বন্ধ করে দিলেন ৷ বোন ফ তিমাকে বললেন, ইতোপুর্বে তোমরা যা করছিলে সেটি আমাকে
    দাও ৷ মুহাম্মাদ কি নিয়ে এসেছেন তা আমি একটু দেখি ৷ উমর লেখাপড়া জানা লোক ছিলেন ৷
    ফাতিমা (রা) বললেন, আপনি সেটির অমর্যাদ৷ করবেন বলে আমার আশংকা হচ্ছে ৷ তিনি
    বললেন, না, ভয় করো না ৷ পাঠ শেষে ওই কপি ফাতিমাকে ফিরিয়ে দিবেন বলে তিনি আপন
    উপাস্যের শপথ করলেন ৷ একথা শুনে হযরত উমর ইসলাম গ্রহণ করবেন এমন আশার সঞ্চার
    হয় ফ নিমাব মনে ৷ ফাতিমা (রা) বললেন, ভাইয়া! শিরক অনুসরণ করার কারণে আপনি
    অপবিত্র হয়ে আছেন ৷ পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কেউ এটি স্পর্শ কররু ন্ পারে না ৷ উমর উঠে
    দাড়ালেন এবং গোসল সেরে এলেন ৷ ফাতিমা (রা) লিপিক৷ টি তাকে দিলেন ৷ তাতে সুরা ত্া-হা
    লিখিত ছিল ৷ উমর তা পাঠ করতে লাগলেন ৷ শুরু থেকে কিছু পাঠ করার পর তিনি বলে
    উঠলেন, কী চমৎকার! এটি কত সুন্দর ও মর্ষাদাপুর্ণ বাণী ৷ উমরেব কথা শুনে খাব্বাব ইবন
    আরত গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, হে উমর ! আল্লাহ্র কসম , আমি নিশ্চিত
    আশা রাখি যে, রাসুলুল্লাহ (সা) এর দৃআর প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ আপনাকে বিশেষভাবে
    কবুল করেছেন ৷ কারণ আমি গতকাল রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে বলতে শুনেছি তিনি বলছিলেন
    ৷ ণ্া৷ ৷ হে আল্লাহ আবুল
    হিকাম ইবন হিশাম অথবা উমর ইবন খাত্তাবের দ্বারা আপনি ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করে দিন ৷
    সুতরাং হে উমর আপনি আল্লাহ্কে ভয় করুন, তার পথ অবলম্বন করুন ৷

    উমর বললেন, হে খাব্বাব ! আমাকে বল, মুহাম্মদ (সা) কোথায় আছেন ? আমি যাতে তার
    নিকট গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে পারি ৷ খাব্বাব (রা) বললেন, কতক সাহাবীসহ মুহাম্মদ (সা)
    সাফ৷ পাহাড়ের পাদদেশে একটি বাড়ীতে অবস্থান করছেন ৷ উমর তার তরবারি হাতে নিলেন ৷
    সেটি কােষমুক্ত করে রাসুলুল্লাহ্ (না) ও তার সাহাবীদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ছুটে
    চললেন ৷ গন্তব্যে পৌছে তিনি দরজায় করাঘাত করলেন ৷ শব্দ শুনে একজন সাহাবী দরজায়
    র্ফাক দিয়ে বাইরে তাকালেন ৷ খোলা তরবারি হাতে উমরকে দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি
    রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ফিরে যান এবং বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ৷ খোলা তরবারি হাতে
    উমর দ্বার প্রান্তে দাড়িয়ে আছেন ৷ হযরত হামযা (রা) বললেন, ওকে আসতে দাও, সে যদি ভাল
    চায় তবে আমরা তাকে সে সুযোগ দিব ৷ আর সে যদি কোন মন্দ উদ্দেশ্যে এসে থাকে তবে
    তার নিজ তরবারি দিয়েই আমরা তাকে হত্যা করব ৷

    রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ওকে ভেতরে আসার অনুমতি দাও ৷ অনুমতি দেয়৷ হল ৷ কক্ষে
    প্রবেশ করার পর রাসুলুল্পাহ্ (না) তার প্রতি এগিয়ে গেলেন ৷ উমরেব কােমর অথবা চাদরের

    গিট ধরে তিনি সজেড়ারে এক বাড়াকুনি দিলেন ৷ তারপর বললেন, “খাত্তাব তনয় ৷ কি উদ্দেশ্যে
    এসেছ ? আল্লাহর কসম, তুমি এ মন্দ পথে থেকে যাও আর শেষ পর্যন্ত তোমার উপর আল্লাহর
    গযব নাযিল হোক তা আমি চাই না ৷ এবার উমর বললেন ইয়া রাসুলাল্পাহ্! আমি এসেছি
    আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনয়ন করার জন্যে এবং তার প্ৰতি আল্লাহর পক্ষ থেকে
    নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ৷ বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) সজােরে তাকবীর
    বলে উঠলেন ৷ তাতে ঐ ঘরে অবস্থানকারী সকলে বুঝে নিলেন যে, হযরত উমর (রা) ইসলাম
    গ্রহণ করেছেন ৷ তখন থেকে সাহাবায়ে কিরড়াম (বা) ছেড়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েন এবং হযরত
    হামযা (রা) এর ইসলাম গ্রহণের পর হযরত উমর (রা) বাড়ি ইসলাম গ্রহণ করায় মুসলমানদের
    মনােবল বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় ৷ তারা আশ্বন্ত হন যে, এরা দু’জনে এখন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
    পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করবেন এবং এদের সাহায্যে মুসলমানগণ শক্রদের অত্যাচারের মুকাবিলা
    করবেন ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, মদীনায় অবস্থানকারী বর্ণনাকায়িপণ হযরত উমর (রা) এর ইসলাম
    গ্রহণ সম্পর্কে এরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আবু নাজীহ মকী
    তার সমসাময়িক আতা’ , মুজাহিদ এবং অন্যান্য বর্ণনাকারী থেকে হযরত উমরের ইসলাম গ্রহণ
    সম্পর্কে তার নিজের বর্ণনা এভাবে উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলতেন আমি ইসলাম থেকে
    বহুদুরে অবস্থান করছিলাম ৷ জাহিলী যুগে আমি মদ পানে আসক্ত ছিলাম ৷ মদ ছিল আমার প্রিয়
    বন্তু ৷ আমি রীতিমত মদপান করতাম ৷ হাঘুরা নামক স্থানে আমাদের এক মদপানের আসর
    বসত ৷ কুরড়ায়শের অভিজাত লোকজন সেখানে সমবেত হত ৷ এক রাতে আমি সাথীদের সঙ্গে
    সাক্ষাতের জন্যে সেখানে যাই ৷ কিন্তু ওদের কাউকেই সেখানে পেলাম না আমি মনে মনে
    বললাম , তাহলে অমুক মদ্যপের নিকট যাই আশা করি তার নিকট মদ পাব এবং সেখানে মদ
    পান করব ৷ আমি তার বাড়ি পৌছি কিত্তু তাকেও পেলাম না ৷ এবার মনে মনে বললাম , এখন
    যদি কাবাগৃহে গিয়ে সাতবার কিৎবা সত্তরবার তাওয়াফ করি , তবে তাওতো ভাল হয় ৷

    হযরত উমর (রা) বলেন, এরপর আমি মাসজিদুল হারামে আসি ৷ হঠাৎ দেখতে পাই
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) দাড়িয়ে নামায আদায় করছেন ৷ তিনি তখন সিরিয়ার দিকে মুখ করে নামায
    আদায় করতেন ৷ তার এবং সিরিয়ার মধ্যখানে থাকত কাবাগৃহ ৷ রুকন-ই-আসওয়াদ এবং
    রুকন-ই-ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থান ছিল তার নামাযের স্থান ৷ উমর (রা) বলেন, তাকে দেখে
    আমি মনে মনে বললাম, আজ রাতে আমি যদি মুহাম্মদের কথাবার্তা ওনি, তাহলে আমি বুঝতে
    পারব যে, তিনি কী বলেন ? আমি মনে মনে বললাম, তার কাছে গিয়ে আমি যদি শুনি, আহলে
    তিনি আমাকে দেখে ফেলবেন এবং তাতে তার একাগ্রতা বিব্লিত হবে ৷ তাই আমি হড়াজারে
    আসওয়ড়াদের দিকে আসি এবং কাবার গিলাফের মধ্যে ঢুকে পড়ি ৷ তারপর ধীরে ধীরে অতি
    সন্তর্পণে অগ্রসর হই ৷ গিলাফের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে আমি ঠিক তার সম্মুখে গিয়ে তার
    দিকে মুখ করে দাড়িয়ে যাই ৷ তার মাঝে আর আমার মাঝে ব্যবধান শুধু কাবার পিলাফ টুকু ৷
    তার কুরআন পাঠ শুনে আমার মন বিচলিত হয় ৷ আমার কান্না এসে পড়ে এবং ইসলাম আমার
    অস্তরে স্থান করে নেয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি ওখানে দাড়িয়ে

    থাকি ৷ নামায শেষ করে তিনি চলে যান ৷ তিনি ফিরে গিয়ে ইবন আবু হুসা ৷ইনের গৃহে উঠতেন ৷
    ইবন আবুল হুসাইনের গৃহ ছিল আদ দারুর রাকতায় ৷ সেটি পরবর্তীতে মুআবিয়ার
    মালিকানা ধীনে আসে ৷

    উমর (রা) বলেন, আমি তার পেছন পেছন যাত্রা করি ৷ হযরত আব্বাসের বাড়ী এবং ইবন
    আযহারের বাড়ীর মধ্যবর্তীন্থানে আমি ত ব নাগাল পাই ৷ আমার পদধ্বনি শুনে তিনি আমাকে
    চিহ্ন ফেললেন ৷ তিনি মনে করেছিলেন ত বুাক কষ্ট দেয়ার ওত তার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই
    বুঝি আমি তার নিকট উপস্থিত হয়েছি ৷ত তাই তিনি আমাকে সজোরে ধমক দিলেন ৷
    তারপর বললেন, “ইবনুল খড়াত্তাব! এ সময়ে তুমি এখানে কেন ? আমি বললাম, ” আমি
    এসেছি আল্লাহর প্রতি এবং৩ ৷ তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনয়ন করার জন্যে এবং আল্লাহর পক্ষ
    থেকে যা এসেছে তা সত্য বলে মেনে নেয়ার জন্যে ৷” আমার উত্তর শুনে তিনি আল্লাহর প্রশংসা
    করলেন এবং বললেন :

    “হে উমর মহান আল্লাহ তে তামাকে হিদায়াত দান করেছেন ৷’ তারপর তিনি আমার বুকে
    হাত বুলিয়ে দিলেন এবং ঈমানে আমার দৃঢ়তার জন্যে দু অ করলেন ৷ এরপর আমি চলে
    পেলাম ৷ তিনি ঘরে ঢুকে পড়লেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন উমরের ইসলাম গ্রহণ উক্ত ঘটনা
    দু’টির কো ৷নটির প্রেক্ষিতে হয়েছিল তা আল্লাহ তা’আলা ই জা নেন ৷

    আমি বলি, উমর (রা) এর জীবনী গ্রন্থের প্রথম ভাগে আমি তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
    এবং এ সম্পর্কিত যত তবর্ণনা ও মন্তব্য রয়েছেত তার সবগুলো বিস্তারিত৩াবে উল্লেখ করেছি ৷
    সকল প্রশংসা আল্লাহর ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, নাফি’ ইবন উমর (রা) সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি বলেছেন যে,
    হযরত উমর (রা) যখন ইসলামগ্রহণ করলেন, তখন তিনি বললেন, কুরায়শের মধ্যে সবচেয়ে
    দ্রুত বার্তা প্রচার করতে পারে কে ? তাকে বলা হল যে জামীল ইবন মা’মা ৷র জুমাহী তা পারে ৷
    পরের দিন সকালে উমর (রা)ত তার নিকট পেলেন ৷ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) বলেন আমিও
    তিনি কী করেন তা দেখার জন্যে তার পেছনে পেছনে পেলাম ৷ তখন আমি এ বয়সের বালক
    যে, যা দেখি তা বুঝতে পারি ৷ উমর (রা) এলেন জামীলের নিকট ৷ তাকে বললেন, মি কি

    জান হে জামীল! আমি ওে ৷ ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং মুহাম্মদ (সা ) এর ধর্মে প্রবেশ করেছি ৷
    ইবন উমর (রা) বলেন, আল্লাহর কসম, সে আর দেরী করেনি, কে ন উত্তরও দেয়নি এবং
    চাদরটি টেনে নিয়ে ছুটে চলল ৷ আমি আর উমর (বা) তার পেছনে পেছনে ছুটলাম ৷
    মাসজিদুল হারামের দরজায় গিয়ে সে দীড়ায় এবং উট্চ্চস্ব৪রে চীৎকার করে বলে, হে কুরায়শ
    সম্প্রদায় ! ওরা তখন কাবাগৃহের আশে-পাশে তাদের আসবে উপস্থিত ছিল ৷ তোমরা শুনে
    নাও, খাত্তাবের পুত্র ধর্মত্যাগী হয়েছে ৷ তখন তার পেছন থেকে উমর (রা) বলে উঠলেন,
    সে মিথ্যা বলেছে, আমি বরং ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং সাক্ষ্য দিয়েছি যে, আল্লাহ ব্যতীত
    কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসুল ৷ একথা শুনে তারা সবাই হযরত উমর
    (রা)-এর উপর বাপিয়ে পড়ে ৷ তিনি একা ওদের সকলের বিরুদ্ধে লড়তে লাগলেন ৷ ওরা সবাই
    একযোগে তার বিরুদ্ধে লড়তে লাগল ৷ এভাবে যুদ্ধ চলতে চলতে সুর্য এসে পড়ল তাদের

    মাথার উপর ৷ এবার তিনি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লেন ৷ ওরা সকলে তখন র্তাকে যেরাও করে
    রয়েছে ৷ তিনি বলছিলেন, তোমাদের বা মন চায় করতে পার, তবে আল্লাহর কলম করে বলছি,
    আমরা যদি সংখ্যায় ৩০০ জন থাকতাম, তাহলে কি আমরা তোমাদেরকে এমন ছেড়ে দিতাম ,
    না তোমরা আমাদের এভাবে ছেড়ে দিতে ?

    তারা এ পরিস্থিতিতে ছিল ৷ হঠাৎ রেশমী চাদর ও নকশা খচিত জামা গায়ে বয়োবৃদ্ধ এক
    কুরায়শী ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয় ৷ সে বলে, তোমাদের কী হলো হে ? তার বলল, উমর
    ধর্মত্যাগী হয়েছে ৷ বৃদ্ধটি বলল, থাম, একজন লোকতার নিজের জন্যে যা ভাল মনে করেছে
    তা গ্রহণ করেছে ৷ এখন তোমরা কী করতে চাও ? তোমরা কি মনে করেছ আদী গোত্রের
    লোকেরা তাদের একজন লোককে এ অবস্থায় তোমাদের হাতে ছেত্তঢ় দেবে ? তোমরা ওর পথ
    ছেড়ে দাও ৷ আল্লাহ্র কসম , এরপর তারা ভয় পেয়ে সকলে তার কাছ থেকে এমন ভাবে সরে
    পড়ে যেমন কাপড় গা থেকে সরে পড়ে যায় ৷

    ইবন উমর (রা) বলেন, পরবর্তীতে আমার পিতা যখন মদীনায় হিজরত করলেন, তখন
    আমি বললাম, পিতা মক্কায় যেদিন আপনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, সেদিন আপনার উপর
    আক্রমণকারী লোকজনকে ধমক যেয়ে যে ব্যক্তি আপনার নিকট থেকে সরিয়ে দিয়েছিল,
    সে ব্যক্তিটি কে ছিল ? উত্তরে তিনি বললেন, বৎস, সে হল ত্মাস ইবন ওয়াইল সাহমী ৷ এটি
    একটি মযবুত ও উৎকৃষ্ট সনদ ৷ এ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, উমর (রা) বিলন্বে ইসলাম
    গ্রহণ করেছিলেন ৷ ক বণ উহুদ যুদ্ধের দিন ইবন উমর নিজেকে মুজাহিদ তালিকাভুক্ত করার
    জন্যে উপস্থিত হয়েছিলেন ৷ তখন তার বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর ৷ উহুদের যুদ্ধ স ঘটিত
    হয়েছিল তৃতীয় হিজরীতে ৷ যখন তার ৷প৩ ৷ ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তিনি মোটামুটি

    লা-ক চতুর ছিলেন ৷ এ হিসেবে ধরে নেয়া যায় যে, হযরত ৩উমর (বা) ইসলাম গ্রহণ করেছেন
    চহিজররুত র চার বছর পুর্বে ৷ এ হিসেবে তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ঘটে নবুওয়াতের নবম
    বছরে ৷ আল্লাহ্ই ভাল জা নেন ৷

    বায়হাকী (র) বলেন, হাকিম ইবন ইসহড়াক সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
    রাসুলুল্পাহ্ (সা) মক্কায় অবস্থান করছিলেন ৷ তার নবুওয়াতের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায়
    আবিসিনিয়া থেকে প্রায় কুড়ি জন খৃণ্টান রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর থেদমতে হাযির হয় ৷ তখন তিনি
    একটি মজলিসে বসা ছিলেন ৷ তারা তার সাথে আলাপ-আলোচনা করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে
    জিজ্ঞাসাবাদ করে ৷ কুরায়শের কতক লোক কাবাগৃহের আশে-পাশে তাদের আসবে উপস্থিত
    ছিল ৷ রাসুলুল্পাহ্ (না)-কে তাদের যা জিজ্ঞেস করার ছিল তা জিজ্ঞেস করার পর তিনি
    তাদেরকে আল্লাহ্ তাঅড়ালার দিকে দাওয়াত দেন এবং তাদের নিকট কুরআন তিলাওয়াত
    করেন ৷ কুরআন তিলাওয়াত শুনে তাদের দু’চোখ যেয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে ৷ তারা তার
    আহ্বানে সাড়া দেয়, তার প্রতি ঈমান আনয়ন করে ৷ তাকে সত্যবলে মেনে নেয় এবং তার
    সম্পর্কে তাদের ইনজীল কিত ড়াবে যেসকল পরিচয় পেয়েছে তার মধ্যে যে গুলোর সত্যতা
    উপলব্ধি করে ৷

    তার মজলিস থেকে ফেরার পথে কতক কুরায়শ লোকসহ আবু জাহ্ল তাদের সম্মুখে এসে
    দাড় ৷য় ৷ সে তাদের উদ্দেশ্যে বলে, ওে ৷মাদের এ আরোহী দলকে অ ৷ল্পাহ্ তা আলা ব্যর্থ করে
    দিন ৷ তোমাদের ধর্মানুসারী লোকের, ওে ৷মাদেরকে প্রেরণ করেছিল এজন্যে যে, তোমরা এই
    লোকের নিকট আসবে এবং৩ তার ঘোজখবর নিয়ে ওদেরকে জ নারে ৷ কিংব্লু তোমরা করেছ
    কী ? তার মজলিসে বসেছ আর শেষ পর্যন্ত নিজেদের ধর্ম তা৷গ করে সে তােমাদেরকে
    যা বলল, তাকে সর্ব সত্য বলে মেনে নিলে! তোমাদের চাইতে অধিক মুর্থ কোন প্রতিনিধিদল
    আমরা দেখিনি ৷

    প্রতিনিধিদল বলল, আমরা আপনাদেরকে মুর্থ বলব না ৷ আপনাদের প্রতি সালাম ৷
    আমাদের কর্ম আমাদের জন্যে আর আপনাদের কর্ম আপনাদের জন্যে ৷ আমাদের কল্যাণ
    সাধনে আমরা কমতি করব না ৷ কথিত ৩আছে যে ওরা ছিল নাজরানের খৃন্টান প্রতিনিধিদল ’
    আল্লাহ্ই ভ ৷ল জানেন ৷ কথিত আছে যে, নিম্নোক্ত আয়াত গুলো ওদেরকে উপলক্ষ করে নাযিল
    হয়েছেং :
    যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম, তারা এটিতে বিশ্বাস করে ৷ যখন তাদের নিকট এটি
    তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা এটিতে ঈমান আমি, এটি আমাদের
    প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্য ৷ আমরা তো পুর্বেও আত্মসমর্পণকারী ছিলাম ৷ ওদেরকে
    দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দেয়৷ হবে ৷ কারণ, তারা ধৈর্যশীল এবং তারা ভাল দ্বারা মন্দকে প্রতিরোধ
    করে এবং আমি ওদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে ৷ ওরা যখন অসার বাক্য শ্রবণ
    করে , তখন তা উপেক্ষা করে চলে এবং বলে” “আমাদের কাজের ফ ল আমাদের জন্যে এবং
    তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্যে, তোমাদের প্রতি সালাম আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাই না”
    (২৮ : ৫ ২ ৫ ৫ ) ৷
    পরিছেদ

    বায়হাকী (র) আদ-দা লাইল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “নাজাশীর নিকট রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
    পত্র বিষয়ক পরিচ্ছেদ” তারপর তিনি হাকিম ইবন ইসহাক সুত্রে উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি
    বলােছলা

    এটি রাসুলুল্লাহ-এর পক্ষ থেকে আবিসিনিয়ায় রাজা আসহাম নাজাশীর প্রতি প্রেরিত লিপি ৷
    শান্তি বর্ধিত হোক তার উপর যে হিদায়াতের পথ অনুসরণ করে ৷ আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি
    ঈমান আনয়ন করে এবং সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই ৷ তিনি একক, তার
    কোন শরীক নেই ৷ তিনি শ্রী কিৎবা সন্তান গ্রহণ করেননি এবং যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দেয় যে,
    মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল ৷ আমি আপনাকে আল্লাহ তাআলার প্রতি দাওয়াত
    দিচ্ছি ৷ আমি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল ৷ আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন, তাহলে নিরাপত্তা পাবেন ৷
    হে কিতাবিগণ! এসো সে কথায় যা আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে অভিন্ন ৷ যেন আমরা
    আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করি ৷ কোন কিছুকেই তার শরীক না করি এবং
    আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত প্রতিপালকরুপে গ্রহণ না করে ৷ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে
    দেয়, তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম (২৩) (৩ : ৬৪ ) হে নাজাশী ! আপনি যদি
    ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান, তবে আপনার সম্প্রদায়ের সকল খৃক্টানের পাপ আপনার উপর
    বতাবে ৷
    বায়হাকী (র) আবিসিনিয়ায় হিজরত সম্পর্কিত ঘটনা বর্ণনা করার পর এভাবে চিঠি বিষয়ক
    আলোচনা উল্লেখ করেছেন ৷ অবশ্য এভাবে উল্লেখ করার যথার্থতা সন্দেহমুক্ত নয় ৷ কারণ,
    এচিঠি দেয়া হয়েছিল হযরত জাফর (রা) ও তীর সঙ্গীগণ যে নাজাশীর সাথে কথা বলেছিলেন
    যে নাজাশীর পরে ক্ষমতাসীন নাজাশীকে ৷ বন্তুত মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ্ (না)
    আল্লাহ্র প্রতি দাওয়াত দিয়ে অন্যান্য রাষ্ট্ৰনায়কদেরকে যে পত্রাবলী দিয়েছিলেন এটি তারই
    একটি ৷ এ সময় তিনি রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস, পারস্য সম্রাট কিসরা, মিসর-রাজ ফিরআওন
    এবং আবিসিনিয়ায় রজো নাজাশীর নিকট পত্র প্রেরণ করেছিলেন ৷

    যুহরী বলেন, সকল রাষ্ট্র প্রধানের নিকট রাসুলুল্লাহ্কেই মর্মের পত্র প্রেরণ করেছিলেন ৷
    সকল চিঠিতেই এ আয়াত ছিল ৷ এটি সুরা আবুল-ইমরানের আয়াত ৷ এটি যে মাদানী সুরা
    তাতে কোন দ্বিমত নেই ৷ এ আয়াতগুলাে সুরার প্রথম দিকের আয়াত ৷ আলোচ্য সুরার প্রথম
    দিকের ৮৩ টি আয়াত নাজরানের খৃষ্টান প্রতিনিধিদেরকে উপলক্ষ করে নাযিল হয়েছে ৷
    তাফ্সীর গ্রন্থে আমরা এটি উল্লেখ করেছি ৷ সকল প্রশংসা আল্লাহর ৷

    সুতরাং এ পত্রখানা দেয়া হয়েছিল দ্বিতীয় নাজাশীকে ৷ প্রথম নাজাশীকে নয় ৷ বর্ণনায়
    আসহাম” নামের উল্লেখ সম্ভবত কোন বর্ণনাকারীর নিজস্ব উপলব্ধি প্রসুত সংযোজন ৷ আল্লাহ্ই
    ভাল জানেন ৷

    এ আলোচনার সাথে উপরোক্ত পত্র অপেক্ষা নিম্নে বর্ণিত পত্রটি উদ্ধৃত করা অধিকতর

    প্রাসংগিক ও খুক্তিসংগত ৷ বায়হাকী (র) উল্লেখ করেছেন যে, হাকিম মুহাম্মদ ইবন ইসহাক
    সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) জাফর ইবন আবু তালির ও তার সঙ্গীদের

    প্রতি সহানুভুতিপুর্ণ আচরণ করার অনুরোধ সম্বলিত একটি চিঠি সহকারে আমর ইবন উমাইয়া
    যামারীকে নাজাশীর নিকট প্রেরণ করেছিলেন ৷

    পরম দয়ালু, দয়মিয় আল্লাহর নামে ৷ আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা ) এর পক্ষ থেকে
    আবিসিনিয়ার রাজা আসহাম নাজাশীর প্ৰতি ৷ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক ৷ আপনার নিকট
    আমি সর্ব ধিপনি পবিত্র, নিরাপত্তা বিধায়ক ও রক্ষক মহান আল্লাহর প্রশংসা পেশ করছি ৷ আমি
    সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ঈস৷ (আ) আল্লাহর রুহ ও বাণী ৷ আল্লাহ তা আলা নিক্ষেপ করেছেন
    সতী-সাধ্বী, পবিত্রাত্ম৷ মারয়ামের নিকট ৷ ফলে তিনি ঈস৷ (আ) কে গর্ভে ধারণ করেছেন ৷
    মহান আল্লাহ হযরত ঈস৷ (আ) কে সৃষ্টি করেছেন তীর রুহ ও কু দ্বারা যেমন হযরত আদম
    (আ) কে সৃষ্টি করেছেন৩ তার কুদরতী হাত ও কু দ্বারা ৷ আমি আপনাকে একক, লা শরীক
    আল্লাহর প্ৰতি আহ্বান জ নাচ্ছি এবং তারই আনুগণ্ডে ৷ অবিচল থাকার দা ৷ওয়াত দিচ্ছি ৷ আমি
    আরও দাওয়াত দিচ্ছি, আপনি যেন আমার অনুসরণ করেন এবং আমার প্ৰতি ঈমান আনয়ন
    করেন ৷ কারণ, আমি আল্লাহ তাআলার রাসুল ৷ আমার চাচাত ডাই জাফর এবং তার সাথে
    কতক মুসলমানকে আপনার নিকট প্রেরণ করলাম ৷ ওরা আপনার নিকট পৌছলে ওদের
    আতিথ্য দেবেন ৷ ওদের প্রতি রুঢ় আচরণ করবেন না ৷ আমি আপনাকে এবং আপনার
    বাহিনীকে মহামহিম আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি ৷ আমি রিসালাতের বাণী পৌছিয়েছি এবং
    উপদেশ দিয়েছি ৷ আপনারা আমার উপদেশ গ্রহণ করুন ৷ শাস্তি বর্নিত হোক তাদের উপর
    যারা হিদায়াতের অনুসরণ করে ৷

    রাসুলুল্লাহ (না)-এর প্রেরিত পত্রের উত্তরে নাজাশী নিঃম্নাক্ত চিঠি প্রেরণ করেন :
    “পরম দয়ালু দয়াময় আল্লাহর নামে ৷ আসহাম ইবন আবজুর নাজা স্পোর পক্ষ থেকে আল্লাহর
    রাসুল মুহাম্মদ (না)-এর প্রতি ৷ হে আল্লাহর নবী আপনার উপর শান্তি বর্ধিত হোক এবং
    আল্লাহর রহমত ও বরকত নাযিল হোক ! যে মহান সত্তা আমাকে ইসলামের প্রতি হিদায়াত
    করেছেন তিনি ব্যতীত কোন ইলড়াহ্ ও উপাস্য নেই ৷ হে আল্লাহর রাসুল ! আপনার চিঠি আমার
    নিকট পৌছেছে ৷ ওই চিঠিতে আপনি ঈস৷ ৷-(আ) এর বর্ণনা দিয়েছেন ৷ আসমান ও যমীনের
    প্ৰতিপালকের কসম, ঈসা (আ) সম্পর্কে আপনি যা, উল্লেখ করেছেন তিনি তার চাইতে
    এতট্রুকুও অতিরিক্ত নন ৷ আপনি আমার প্ৰতি যে বিষয়গুলো সম্বলিত পত্র প্রেরণ করেছেন তা
    আমি উপলব্ধি করেছি ৷ আপনার চাচাত ভাই ও তার সাথীদের জন্যে আতিথ্যের ব্যরস্থুা
    করেছি ৷ আ ৷মি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি সতাবাদী এবংঅ ৷ল্লাহ্র সত্যায়িত রাসুল আ ৷মি আপনার
    প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছি এবং আপনার চাচাত ভাইয়ের নিকট বায়আত করেছি ৷ আর
    আপনার চাচাত ভাইয়ের মাধ্যমে বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি ৷ হে
    আল্লাহর নবী আমি বারিহা ইবন ইসহাম ইবন আবজুরকে আপনার নিকট প্রেরণ করলাম ৷

    আমি ৫৩ ৷ আমার নিজের ব্যতীত ৩অন্য কারো উপর কর্তৃহ্শীল নই ৷ আপনি যদি চান, তাহলে
    আমি আপনার খিদমতে হা ৷যির হবে৷ ৷ তবে আমি নিশ্চিত সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি যা বলেন, তা
    অকাট্য সত্য ৷ ”

    পরিচ্ছেদ
    কুরায়শদের বয়কট

    রাসুলুল্লাহ (না)-কে সাহায্য করার প্রশ্নে বনু হাশিম ও বনু আবদিল মুত্তালিব গোত্রের
    আহ্বানের প্রেক্ষিতে কুরায়শী অন্যান্য গোত্রের৷ বিরোধিতা করে এবং রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে
    তাদের নিকট হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ওই গোত্রদ্বয়ের সাথে ৰিয়ে-শাদী ও রেচা-কেনার সম্পর্ক
    ছিন্ন রাখার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করে এবং দীর্ঘদিন য়াবত ওদেরকে আবু
    তালিব গিরিসঙ্কটে অন্তরীণ করে রাখে ৷ এ বিষয়ে৩ ৷দের নিবর্তামুলক ও অন্যায় চুক্তিপত্র তৈ

    সম্পর্কিত পোস্ট:


    নোটঃ পরিচ্ছেদ : সাহাবায়ে কিরাম (রা) – এর আবিসিনিয়ায় হিজরত Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।

    মীযান জামাতের সমস্ত কিতাব PDF Download

    নাহবেমীর জামাতের কিতাব PDF Download

    হেদায়াতুন নাহু জামাতের কিতাব PDF Download

    কাফিয়া জামাতের কিতাব PDF Download

    শরহে জামী জামাতের কিতাব PDF Download

    জালালাইন জামাতের কিতাব PDF Download

    মেশকাত জামাতের কিতাব PDF Download

    দাওরায়ে হাদিসের কিতাব সমূহ PDF Download

    মাদানী নেসাবের কিতাবসমূহ PDF Download

    Leave a Comment

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.