তারাও সাক্ষ্য দিলেন যে, তিনি আল্লাহর রাসুল এবং চলে যাওয়ার পুর্বে তারাও তার হাতে
বায়আত হলেন ৷ (আবু আয়ুদ্রব বলেন) এরপর তিনি বললেন, যাও, এবার গিয়ে আমার কাছে
নব্বইজন আনসারকে ডেকে নিয়ে এসো! আবু আয়ুবে বলেন, আর আমি অবশ্যই নব্বই ও
ষাটজনের ব্যাপারে ত্রিশজনের চাইতে অধিক বদান্য ৷ তিনি বলেন, তখন আমি তাদেরকে
ডেকে নিয়ে আসলাম এবং তারা খেয়ে বের হলেন ৷ তারপর তারা সাক্ষ্য দিলেন যে, তিনি
আল্লাহর রাসুল এবং বের হয়ে যাওয়ার পুর্বে তারাও তার হাতে বায়আত হলেন ৷ আবু আয়ুব
বলেন, এভাবে আমার (আনীত) ঐ সামান্য খাবার থেকে একশ আশিজন খেলেন, যাদের
সকলেই ছিলেন আনসার ৷ সনদ ও পাঠ বিবেচনায় হাদীসটি “অতি গরীব” (অগ্রহণযােপ্য) ৷
ইমাম বায়হাকী মুহাম্মদ ইবন আবু বকরের হাদীস সংগ্রহ থেকে তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷
ফাতিমা (না)-এর গৃহে খাদ্যবৃদ্ধির তিন একটি ঘটনা
হাফিয আবু ইয়া’লা, সাহ্ল ইবনুল হানযালিয়া জাবির (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে
(একবার) রাসুলুল্লাহ্ (সা) কয়েক দিন অনাহারে কাটালেন, এমনকি অনাহারের কষ্ট সহ্য করা
তার জন্য কঠিন হয়ে র্দাড়াল ৷ তখন তিনি তার সহধর্মিনীগণের গৃহে গমন করলেন কিন্তু
তাদের কারো কাছেই কিছু পেলেন না ৷ অবশেষে কন্যা ফাতিমার (বা) কাছে এসে বললেন,
মা ৷ তোমার কাছে কি খাওয়ার কিছু আছে ? আমি বেশ ক্ষুধার্ত৷ জবাবে তিনি বললেন, জী না,
আব্বাজান! তেমন কিছুই নেই ৷ তারপর আল্লাহর রাসুল যখন তার কাছ থেকে বেরিয়ে
আসলেন তখন তার এক প্রতিবেশিনী দুটি রুটি এবং একটুকরা গোশত হাদিয়া পাঠালেন ৷
তখন তিনি তা নিয়ে তার একটি পাত্রে ঢেকে রেখে বললেন, আল্লাহর শপথ! এ খাবারের
ব্যাপারে অবশ্যই আমি নিজেদের উপর আল্লাহর রাসুলকে প্রাধান্য দেবাে ৷ উল্লেখ্য যে, সে সময়
তারা সকলেই খাদ্যাভাবে ছিলেন ৷ এরপর তিনি হাসান কিংবা হুসায়ন (রা)কে রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর কাছে পাঠালেন ৷ তখন আল্লাহর রাসুল ফিরে আসলেন ৷ তাকে দেখে ফাতিমা (বা)
বললেন, আব্বাজান! আল্লাহ কিছু খাবার পাঠিয়েছেন, আমি তা আপনার জন্য তুলে রেখেছি ৷
প্ তিনি বললেন, যা আমার ! তুমি তা নিয়ে এসো ! তখন ফাতিমা (বা) পাত্রটির ঢাকনা সরিয়ে
দেখেন তা গোশত ও রুটিতে পরিপুর্ণ ৷ তিনি যখন সেদিকে তাকালেন, তখন আনন্দে তার মুখ
রা’ সরছিল না ৷ তিনি বুঝতে পারলেন যে, এটা আল্লাহ প্রদত্ত বরকত ৷ তইি তিনি আল্লাহর
প্রশংসা করলেন এবং তার নবীর উদ্দেশ্যে দরুদ পড়লেন ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা)-,এর সামনে
তা পেশ করলেন ৷ তিনি যখন তা দেখলেন তখন আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, মা, এ ধারার
তুমি কােথেকে পেলে ? তিনি বললেন, আব্বাজান, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে ৷ আর আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিষিক দান করেন ৷ তখন আল্লাহর নবী আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন,
সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তোমাকে বনী ইসরাঈলের গ্রেষ্ঠানারীর সদৃশ করেছেন ৷ তিনিও
যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন রিযিকপ্রাপ্ত হতেন, তারপর সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতেন তখন
বলতেন, তা’ আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিসীম রিষিক দান করেন ৷
এরপর রাসুলুল্পাহ্ (সা) হযরত আলীকে ডেকে পাঠালেন এবং তিনি হযরত হাসান, হুসায়ন,
ফাতিমা আলী, নবী সহধর্মিগীগণের সকলে এবং তার;গৃহবাসী সকলেই তা খেয়ে তৃপ্ত হলেন ৷
ফাতিমা (রা) বলেন এরপরও পাত্রের খাবার যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেল ৷ তখন তিনিতার
অবশিষ্টাত্শ তার সকল প্রতিবেশীদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন ৷ এভাবে আল্লাহ্ তাতে প্রভুত
বরকত ও কল্যাণ দান করলেন ৷ সনদ ও পাঠ বিবেচনায় এ হাদীসখড়ানিও গরীব পর্যায়ের ৷ আর
ইতিপুর্বে আমরা নবৃওয়াতের সুচনাকালের আলোচনা প্রসঙ্গে যখন এই আয়াত নাযিল হয়
আর আপনি আপনার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দিন ৷
হযরত আলীর সুত্রে ৱাবীআ ইবন মাজ্যিদর হাদীস উল্লেখ করেছি ৷ সে হাদীসের বিষয়বস্তু হল,
নবী করীম (সা) বনু হাশিমের চল্লিশ জনকে দাওয়াত করলেন ৷ তারপর একমুঠ পরিমাণ যব
থেকে প্রস্তুত খাবার তাদেরকে পরিবেশন করলেন ৷ তখন তারা খেয়ে তৃপ্ত হল এবং খাবারের
পরিমাণ পুর্বের মতই রয়ে গেল ৷ তিনি তাদেরকে একটি বড় পেয়ালা থেকে পান করালেন
তখন তারা তৃপ্ত হল এবং পেয়ালার পানি যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেল ৷ এভাবে পর পর
তিনদিন করলেন এরপর তাদেরকে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান করলেন, যেমনটি পুর্বে বিগত
হয়েছে ৷
নবী গৃহে সংঘটিত আরেকটি ঘটনা
ইমাম আহমাদ আলী ইবন আদিম সামুরা ইবন জুনদৃব (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেছেন, একবার আমরা নবী করীম (না)-এর কাছে অবস্থান করছিলাম ৷ তখন তার
কাছে ছারীদপুর্ণ একটি খাঞ্চা আসল ৷ সামুরা (রা) বলেন, তখন তিনি খেলেন এবং তার সাথে
উপস্থিত সকলেই খেলেন ৷ এরপর তারা প্রায় যুহর নামায পর্যন্ত তা হাত বদল করতে
থাকলেন ৷ একদল খেয়ে উঠে যান তারপর আরেক দল এসে একের পর এক নিয়ে খেতে
থাকেন ৷ তখন এক ব্যক্তি সামুরা (রা)কে জিজ্ঞেস করল, তাতে কি (নতুন) খাবার সরবরাহ
করা হচ্ছিল ? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আসমান থেকে হচ্ছিল ৷ তারপর ইমাম আহমাদ ইয়াযীদ
ইবন হারুন সামুরা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে ছারীদপুর্ণ
একটি খাঞ্চা আসল ৷ তখন ণ্লাকেবা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তা খেতে লাগল ৷
একদল উঠে যায়, আরেক দল খেতে বসে ৷ তখন একব্যক্তি সামুরাকে বলল, তাকে কি
(নতুন) খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল ? তখন তিনি বললেন, তা হলে আর আশ্চর্য হওয়ার কী
আছে ? ওখান থেকেই তা সরবরাহ করা হচ্ছিল, একথা বলে তিনি আকাশের দিকে ইঙ্গিত
করলেন ৷ এছাড়া তিরমিযী ও নাসাঈও মু’তামির ইবন সুলায়মানের হাদীস সংগ্রহ থেকে
হযরত সামুরার বরাতে হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন ৷
আবু বকরের (রা) বাড়ির ঘটনা
সম্ভবত এটা হযরত সামুরার হাদীসে উল্লেখিত ঘটনড়াটিই ৷ আর আল্লাহ্ই সর্বাধিক জানেন ৷
বুখারী, মুসা ইবন ইসমাঈল আবদুর রহমান ইবন আবু বকর সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
সুফ্ফাবাসীরা ছিলেন নিঃস্ব ও দজ্জি ৷ একবার নবী করীম (সা) বললেন, যার ঘরে দু’জনের
খাবার আছে, সে যেন তৃতীয়জনকে সাথে নিয়ে খায়, আর যার কাছে চারজনের খাবার আছে
সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠত্তনেকে নিয়ে খায়, অথবা তিনি যেমন বলেছেন ৷ আর এডাবেআবু বকর
তিনজনকে নিয়ে আসলেন, আর নবী করীম (সা) দশজনকে নিয়ে ণ্গ্যলন ৷ আর আবু বকর
পরিবার ছিল তিনজনের তা হল আমি, আমার পিতা (আবু বকর) এবং আমার মাতা, আবু
উছমান বলেন, আমি জানিনা তিনি একথা বলেছেন কিনা আমাদের গৃহ এবং আবু বকরের
গুহ থেকে আমার শ্রী ও আমার দাসী ৷