বিধ্বস্ত বাগদাদের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন হালাকু খান। সামনে এত বই দেখে বেশ বিরক্তই হলেন তিনি, খেঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কী? এখানে এত বই কেন?” জবাবে তার দুই শিয়া চাটুকার নাসিরুদ্দিন তুসি ও ইবনে আলকামি বলে ওঠে, “এটা বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার।” এটা শুনে হালাকু আরও ক্ষেপে যান, নির্দেশ দেন গ্রন্থাগার পুড়িয়ে ফেলার।
তুসি ও ইবনে আলকামি তাকে এ থেকে নিবৃত্ত করতে চাইলে তিনি বিদ্রুপের কন্ঠেই সেদিন বলেছিলেন, “মুসলিমরা কি এত এত বই পড়েও শিক্ষা নেয়নি যে কী করে নিজেদের রাজ্য রক্ষা করতে হয়? যে বই তাদের নিজেদের রক্ষা করতে শেখায়নি, সে বই দিয়ে কী হবে?”
এভাবেই কুখ্যাত হালাকু খানের নির্দেষে বাগদাদের সকল লাইব্রেরির কিতাব ছুড়ে ফেলা হয় টাইগ্ৰিস নদীতে। এতো পরিমাণে কিতাব ছিল যে সেসবের কালিতে টাইগ্ৰিস নদীর পানি কালো হয়ে যায়। এমনকি বাগদাদের বিখ্যাত হাউজ অফ উইজডমটিও ( বাইতুল হিকমাহ ) ধ্বংস করে দেয়। ফলে চিকিৎসা থেকে জ্যোতির্বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রচিত অসংখ্য মূল্যবান বই হারিয়ে যায়।
পালিয়ে যেতে চেষ্টা করা নাগরিকদেরকে মঙ্গোলরা গণহারে হত্যা করে। এমনকি রেহাই পায়নি নারী ও নিষ্পাপ শিশুরাও। এই হত্যাযজ্ঞে প্রায় ৯০,০০০ এর মত নাগরিক নিহত হয়েছে বলে অভিমত রয়েছে। অন্যান্য সূত্রে ভিন্ন সংখ্যা পাওয়া যায়। দ্য নিউ ইয়র্কারের ইয়ান ফ্রেজিয়ারের মতে মৃতের সংখ্যা ২,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০।
মানুষ কী ভুলতে পারবে ইতিহাসের পাতায় লেখা সেই ১২৫৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারিকে! নিমিষেই গুড়িয়ে যাওয়া সেই সোনালি যুগের প্রাণকেন্দ্রকে!
ছবিটি দ্যা রাউন্ড সিটি খ্যাত তৎকালীন বাগদাদের, যার প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে স্বর্নযুগের ছাপ রাখা বাইতুল হিকমাহর!
লিখেছেন জুবায়ের সরকার