যায়দ ইবনে আমর ইবন নুফায়ল (রা)
পুর্ণ পরিচয় যায়দ ইবন আমর ইবনে নুফায়ল ইবন আব্দুল উয্যা ইবনে বিবাহ ইবনে কারয
ইবনে রিযাহ্ ইবন আদী ইবন কাব ইবনে লুওয়াই আল-কুরশী আল আদাবী ৷ উমর
(রা) এর পিতা খাত্তা ব ছিলত তার চাচা ও বৈপেত্রিয় ভাই ৷ কারণ পিতার মৃত্যুর পর আমর ইবনে
নুফায়ল তার বিমাতাকে বিবাহ করেছিলেন ৷৩ তারই গর্ভে ইতিপুর্বে পিতা নুফায়লের ঔরসে তার
ভাই খাত্তাবের জন্ম হয়েছিল ৷ যুবায়র ইবন বাক্কার ও মুহাম্মদ ইবন ইসহাক এরুপ বলেছেন :
যায়দ ইবনে আমর শুরু জীবনেই মুর্তিপুজা ত্যাগ ও পৌত্তলিক ধম বন্লাগ করেছিলেন ৷ এক
আল্লাহ্র নাম নিয়ে যবাহ করা পশু ব্যতীত কোনো পশু তিনি যেতেন না ৷ আসৃমা বিনতে আবু
বকর বলেন, আমি একদিন যায়দ ইবনে আমরকে কাবার দেয়ালে হেলান দিয়ে বলা অবস্থায়
বলতে শুনেছি যে, হে করা ৷ইশ গো ত্র যার হাতে যা য়েদের জীবন, আমি তার শপথ করে বলছি
বর্তমানে আমি ব্যতীত তোমাদের আর কেউ ইবরাহীমের দীনের উপর বহাল নেই ৷ অতঃপর
তিনি বলেন, হে আল্লাহ ৷ তোমাকে পাওয়ার এর চেয়ে উত্তম পন্থা আছে বলে যদি আমি
জানতাম, তবে তা-ই করতাম ৷ কিত্তু অন্য কোনো পন্থা আমার জানা নেই ৷ এরুপ বলে
তিনি বাহনের উপরই সিজদড়ায় চলে যেতেন ৷ অন্য বর্ণনায় আছে যে, তিনি কাবার দিকে মুখ
করে নামায পড়তেন এবং বলতেন, ইবরাহীমের যিনি ইলাহ, তিনিই আমার ইলাহ ৷
ইবরাহীমের দীন যা আমার দীনও ত-৷ ই ৷ জীবন্ত কবর দেয়৷ মেয়েদের তিনি তাদের জীবন
বাচাতেন ৷ কেউ নিজের কন্যা সন্তানকে হত্যা করতে ৩চাইলে তিনি বলতেন, খুন না করে একে
তুমি আমার কাছে দিয়ে দাও ৷ আমি একে লালন-পালন করব ৷ বড় হলে ইচ্ছা করলে তুমি একে
নিয়েও নিতে পারবে আবার আমার কাছেই রেখেও দিতে পারবে ৷ নাসাঈ এ বর্ণনা উদ্ধৃত
করেছেন ৷
লাইছ হিশাম ইবনে উরওয়৷ সুত্রে এবং ইউনুস ইবনে বুকায়র মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক সুত্রে
বর্ণনা করেছেন যে, কুরাইশের তাওহীদবাদী বেশ কয়েকজন ছিলেনত ৷র৷ হচ্ছেন৪ যায়দ ইবনে
আমর ইবন নুফায়ল, ওয়ারাকা ইবনে নওফল ইবনে আসাদ ইবনে আব্দুল ওয্য়৷ ,উছমান ইবন
হুয়ায়রিছ ইবনে আসাদ ইবন আব্দুল ওযয়৷ ও আব্দুল্লাহ ইবন জাহ শ,আব্দুল মুত্তালিবের কন্যা
উমাইয়৷ ছিলেন তার মা ৷ উম্মুল মুমিনীন যয়নাব বিনতে জাহ্শ হলেন তার বোন ৷
একদা মক্কার কুরাইশ বা তাদের একটি প্ৰতিমার নিকট সমবেত হয় ৷ যে কোন উৎসবে
তারা ঐ প্রতিমার কাছে পংং বলি দিত ৷ এক পর্য যে তাদের কেউ কেউ বলাবলি করতে শুরু
করে যে, তোমরা পরস্পর সত্য কথা বলবে ৷ মনের কথা গোপন রাখবে না ৷ একজন বলল,
তোমরা তো অবশ্যই জা ন যে, ৫খৃশ্বানেই ৷ সরল সঠিক দীনে ইব্রাহীম
ভুলে গিয়ে এখন তারা প্রতিমা পুজা করছে ৷ মুর্তিপুজড়া করার কী যুক্তি আছে? ওরা তো কারো
উপকার অপকার কিছুই করতে পারে না ৷ অতএব, তে ৷মরা সঠিক পথের সন্ধান কর ৷ ফলে
তারা সঠিক পথের সন্ধানে বের হলো ৷ ইহুদী, নাসারা এবং অন,া৷ন্য ধর্মের পণ্ডিতদের শরণাপন্ন
হলো ৷ সেকালে ইব্রড়াহীমী দীন হানীফিয়া ৷ ওয়ারাকা ইবন নওফল মনে-প্রড়াণে খৃষ্টান হয়ে যান
এবং প্রধান খৃষ্টানদের নিকট থেকে ধম্বীয়ি গ্রন্থ সধ্প্রহ করে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন ৷
এদের মধ্যে যিনি হানীফিয়তের নীতিতে অটল থাকলেন, তিনি হলেন যায়দ ইবন আমর
ইবন নুফা য়ল ৷ প্রতিমা পুজা ইহুদী ও খৃষ্টা ন ধর্ম সবকিছু হতে তিনি নিজেকে মুক্ত রেখে দীনে
ইবরাহীমের উপর অটল থাকেন এবং আল্লাহ্তে বিশ্বাস স্থাপন করলেন ৷ নিজ সম্প্রদায়ের যবাই
ৰুকরা পশুও তিনি আহার করতেন না ৷ এ কারণে সমাজের মানুষ তাকে একঘরে করে
ব্লেখেছিল ৷
বর্ণনাকারী বলেন, খাত্তাব যায়দ ইবন আসর-এর ইটুন্পর সীমাহীন নির্যাতন চালায় ৷
খাত্তাবের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে তিনি লেড়াকালয় ত্যাগ করে মক্কার উচু অঞ্চলের
দিকে চলে যান ৷ খড়াত্তাব এলাকার বখাংট যুবকদেরকেত তার পেছনে লেলিয়ে দেয় এবং বলে
দেয়, ও যেন এলাকায় আর ঢুকতে না পারে ৷ ফলে তিনি একান্ত গোপনে ব্যতীত এলাকায়
ঢুকতেন না ৷ একদিন অতি গেড়াপনে এলাকায় প্রবেশ করলে লোকেরা টের পেয়ে যায় এবং
পাছে এলাকার লোকদের উপর কোন প্রভাব ফেলে বসে এই ভয়ে নির্যাতন করে তাকে এলাকা
থেকে বের করে দয় ৷
মুসা ইবন উকবা বলেন, আমি বিশ্বস্ত সুত্রে শুনেছি যে, যায়দ ইবন আমর নুফড়ায়ল
কুরাইশদের যবাই করা পশুর সমালোচনা করে বলতেন, বকরী আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং
তিনিই এদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং মাটি থেকে তার খাদ্যের ব্যবস্থা
করেছেন ৷ তোমরা এদেরকে কেন যবাই করো?
ইউনুস (র) ইবন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন যে, দীনে ইবরাহীমের সন্ধানে যায়দ ইবন
আমর ইবন নুফায়ল একদিন মক্কা থেকে বেরােতে মনস্থ করেন ৷ তার শ্রী আফিয়্যা বিনতে
হাযরামীর অভ্যাস ছিল যে তার স্বামী যায়দ কোথাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে সে খাত্তার
ইবন নুফায়লকে৩ তা বলে দিত ৷ যায়দ সিরিয়া গিয়ে আহ্লে কিতড়াবদের মধ্যে দীনে ইবরাহীম
সন্ধান করতে শুরু করলেন ৷ সুসেল জাযীরা সব চষে ফিরে এবার সিরিয়ার বালকা নামক
স্থানের একটি পীর্জার এমন এক যাজকের কাছে আসলেন, যিনি খৃষ্টীয় মতবাদে শীর্ষস্থানীয়
পণ্ডিতরুপে প্রসিদ্ধ ছিলেন ৷ যায়দ তাকে দীনে ইবরাহীম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি
বললেন, তুমি এমন একটি দীন সম্পর্কে জানতে চেয়েছ, যার সন্ধান দেওয়ার মত ৩কাউকে তুমি
পাবে না ৷ যারা এর সন্ধান দিতে পারত, তারা সকলেই এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন ৷ তার
একজন নবীর আগমনে আসন্ন ৷ এটাই তার যুগ ৷ ইতিমধ্যেই যায়দ ইহুদী এবং খৃষ্ট ধর্মকে
যাচাই করে অপছন্দ করেছিলেন ৷ পাদ্রীর এসব কথা শুনে তিনি দ্রুত সেখানে থেকে বের হয়ে
মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ড়ানা হন ৷ লাখৃমীদের এলাকায় পৌছার পর দুর্বৃত্তরা তার উপর চড়াও হয়
এবং তাকে হত্যা করে ৷
ষ্হে ইবন আমর ! তুমি সুপথ পেয়েছ ও কল্যাণ প্রাপ্ত হয়েছ ৷ আর এক অনুপম রবের
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও প্রতিমা পুর্জা বর্জন করার ফলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করেছ, বছরের
পর বছর মাটির নীচে অবস্থান করলেও আল্লাহর রহমত মানুষের কাছে :পাছবেই ৷
মুহাম্মদ ইবন উসমান ইবন আবু শায়বা বর্ণনা করেন যে, যায়েদ ইবন আমর ইবন নুফায়ল
জাহিলী যুগে সত্য দীন অনুসন্ধান করে বেড়াতেন ৷ একদা এক ইহুদীর নিকট গিয়ে বললেন,
আমাকে তোমার ধর্মে দীক্ষা দান কর ! ইহুদীটি বলল, আমি ৫ত্ল্যাংণ্ধ্বকে আমার ধর্মে দীক্ষিত
করবো না, কেননা তাতে তুমি আল্লাহ্র রােষে পতিত হবে ৷ একথা শুনে তিনি বললেন তা হলে
আমি আল্লাহ্র বোষ থেকে পালাই ৷ অতঃপর তিনি এক খৃষ্টানের নিকট গিয়ে বললেন, আমি
চাই যে, আমাকে তুমি তোমার ধর্মে দীক্ষিত কর ৷ খৃষ্টান বলল না, আমি তাতে রাজি নই ৷
কেননা তাতে তুমি ভ্রান্তির শিকারে পরিণত হবে ৷ জবাবে তিনি বললেন, তা হলে ভ্রান্তি
থেকে পালাই ৷ এবার খৃষ্টান সােকটি তাকে বলল, তবে আমি তোমাকে এমন একটি দীনের
সন্ধান দিতে পারি, তুমি তার অনুসরণ করলে হিদায়াত পেয়ে যাবে ৷ যায়দ জিজ্ঞেস করলেন,
কোন সে দীন? খৃষ্টান বলল, তাহলাে ইবরাহীমের দীন ৷ বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে যায়দ
বললেন, হে আল্লাহ! আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি ইবরাহীমের দীনের অনুসারী ৷
এ নিয়ে আমার জীবন এবং এ নিয়েই আমার মরণ ৷ বর্ণনাকারী বলেন, যায়দের এসব ঘটনা
শুনে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন : “যায়দ ইবন আমর কিয়ামতের দিন একাই একটি উম্মতের
মর্যাদা পাবে ৷ ”
মুসা ইবন উক্বা (র) ইবন উমর (রা) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
মুহাম্মদ ইবন সাদ (র) আব্দুর রহমান (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবন আমর
ইবন নুফায়ল বলেছেন, আমি ইহুদী খৃষ্টান উভয় ধর্মকে যাচাই করে দেখেছি একটিও আমার
মনঃপুত হয়নি ৷ অতঃপর সিরিয়া গিয়ে সেখানকার এক পীর্জার পাদ্রীর সঙ্গে দেখা করলাম এবং
আমার সমাজ ত্যাগ করে আসা, মুর্তিপুজা, ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের প্রতি অনীহার কথা জানালাম
আমার সব বৃত্তান্ত শুনে পাদ্রী বললেন, তুমি তো দেখছি, ইবরাহীমের দীন অনুসন্ধান করছ হে
মক্কার ভাই ! তুমি এমন একটি দীনের সন্ধান করছ বর্তমানে যার অনুসরণ করার মত একজন
মানুষও পাওয়া যাবে না ৷ তা হলো তোমার পিতা ইবরাহীমের দীন ৷ তিনি সরল সঠিক পথের
অনুসারী ছিলেন ৷ ইহুদী বা খৃষ্টান ছিলেন না ৷ তিনি নামায পড়তেন এবং তোমার শহরে
অবস্থিত সেই ঘরটির প্রতি মুখ করে সিজদা করতেন ৷ তুমি তোমার শহরে চলে যাও, ওখানেই
অবস্থান কর ৷ আল্লাহ তোমার দেশে তোমার সম্প্রদায় থেকে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ
করবেন, যিনি সরল সঠিক দীনে ইব্রাহীম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবেন ৷ আল্লাহর নিকট তিনি
হবেন সৃষ্টির সেরা মানুষ ৷
ইউনুস ইবন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়ল এর
ৎশের জনৈক ব্যক্তি বলেছেন যে, যায়দ ইবন আমর যখনই কাবায় প্ৰরশ করতেন, তখন
বলতেন, আমি হাজির, আমি সত্যের অনুসারী, আমি এক আল্লাহর দাসত্বে বিশ্বাসী ৷ আমি
আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেমন আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন ইব্রাহীম (আ) এই স্থানে প্রার্থনা
করেছিলেন ৷ হে আল্লাহ ! আমার নাক তোমার জন্য ধুলড়ামলিন হোক, তুমি আমাকে যখন যেমন
বোঝা বহন করতে বলবে, আমি তাই বহন করব ৷ পুণ্যই আমি কামনা করি ৷
আবু দাউদ তায়ান্সিসী (র) সাঈদ ইবন যায়দ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে,
যায়দ ইবন আমর এবং ওরাকা ইবন নওফল দীনের সন্ধানে বের হন ৷ মওসেল নামক স্থানে
জনৈক পাদ্রীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাত হয় ৷ পাদ্রী যায়দ ইবন আমরকে জিজ্ঞেস করল, হে
উষ্ট্রড়ারােহী ! তুমি কোথা থেকে এসেহা যায়দ বললেন, আমি ইব্রাহীম (আ)-এর এলাকা থেকে
এসেছি ৷ পাদ্রী বলল, তা এখানে এসেহ কিসের সনাঃনা যায়দ বললেন, এসেছি দীনের
সন্ধান্থে ৷ পডীটি বলল, তা হলে তুমি ফিরে যাও ! তুমি যে দীনের সন্ধান করছ, তা তোমার
অঞ্চলে আত্মপ্রকাশ করার সনাবনাই বেশী ৷ অবশেষে খৃষ্টান হতে চাইলে তিনি আমাকে ধারণ
করেন ৷ তখন যায়দ বলতে বলতে ফিরে আসেন ৷
বর্ণনাকারী বলেন, যায়দের পুত্র সাঈদ, যিনি জান্নাতের সৃসংৰাদ প্রাপ্ত দশজনের একজন
লোক ছিলেন, তা তাে আপনি দেখেছেন ও শুনেছেন ৷ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন ! রাসুলুল্লাহ
(সা) বললেন, হীড়া, করব ৷ তিনি তো কিয়ামতের দিন একা একটি উষ্মতরুপে উথিত হবেন ৷
একদিন যায়দ ইবন আমর রাসুলুল্লাহ (না)-এর নিকট আসেন ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) তখন
যায়দ ইবন হড়ারিছাকে সঙ্গে নিয়ে একটি মাথা থেকে আহার করছিলেন ৷ যায়দ ইবন
আমরকে খেতে আহ্বান করা হলে তিনি বললেন, ভাতিজা! আমি দেবতার নামে বলি দেওয়া
পশু থাই না ৷ ” >
মুহাম্মদ ইবন সা’দ হিজ্বর ইবন আবু ইহার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হিজ্বর বলেন, যায়দ
ইবনআমর সিরিয়া থেকে ফিরে আসার পর একদিন আমি দেখতে পেলাম যে, তিনি সুর্যের
দিকেলক্ষ্য রাখছেন ৷ আমি তখন বুওয়ানা মুর্তির কাছে দীড়িয়ে ৷ সুর্য পশ্চিম দিকে চলে পড়লে
কিবলার দিকে মুখ করে তিনি দুন্সিজদায় এক রাকাত নামায আদায় করেন ৷ তারপর বলেন :
এই হলো ইব্রাহীম ও ইসমাঈলের কিবলা ৷ আমি পাথরের পুজাও করি না এবং পাথরের
উদ্দেশ্যে নামাযও পড়ি না ৷ মুর্তির নামে বলি দেওয়া পশু পাই না, লটারীর মাধ্যমে ভাগ্য নির্ণয়
করি না ৷ মরণ পর্যন্ত আমি এই ঘরের দিকে মুখ করে নামায পড়ে যার ৷
১ সম্ভবত রসুলুল্লাহ (না)-যে দেবতার নামে যৰাইকৃত পশু গোশত আহার করতেন না , তা তার জানা ছিল না ৷
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৫ ৭-
যায়দ ইবন আমর হজ্জ করতেন এবং আরাফা য় অবস্থান করতেন ৷ তিনিও ৷লবিয়া পড়তেন
এবং তাতে বলতেন,“ তামার দরবারে আমি হাজির ৷ তোমার কে ৷নাে অং শীদ৷ ৷র সেই ৷ যেই
কোন সমকক্ষ ৷ অতঃপর লাব্বাইক বলতে বলতে পারে ৫হটে অ ৷বাফ থেকে ফিরে আসতেন ৷
ওয়াকিদী আমির ইবন রবীয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবন
আমরকে বলতে শুনেছি যে আমি ইসমাঈল ও আব্দুল মুত্তালিবের বংশ থেকে আগমনকাবী
একজন নবীর অপেক্ষায় আছি ৷ তবে র্তাকে পেয়ে আমি তার প্রতি ঈমান আনতে র্তার প্ৰতি
বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাকে নবী বলে সাক্ষ্য দিতে পারব বলে মনে হয় না ৷ যদি তুমি
ততদিন পর্যন্ত বেচে থাক এবং তীর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হও, তাহলে র্তাকে আমার সালাম
জানারে ৷ তিনি কেমন হবেন, আমি তোমাকে তা বলে দেব, যার ফলে তাকে চিনতে তোমার
মোটেই বেগ থেকে হবে না ৷ আমি বললাম , তবে তা বলুন ! তিনি বললেন, তিনি না অধিক লম্বা
না বেশী খাট ৷ মাথার চুল বেশীও নয় কমও না ৷ লালিমা তার চোখের অবিচ্ছেদ্য অংশ, দুই
র্কাধের মাঝে থাকবে নবুওতের মহর ৷ নাম হবে আহমদ ৷ এই নগরী তার জন্মস্থান এবং
এখনেই তিনি নবুওত লাভ করবেন ৷ পরে তার সম্প্রদায় র্তাকে জন্ভুমি থেকে বের করে দিয়ে
বংর্তার দীনের বিরুদ্ধাচরণ করবে ৷ ফলে তিনি ইয়াসরিবে ইিজরত করবেন ৷ ওখানেই তিনি
প্রতিষ্ঠা লাভ করবেন ৷ সাবধান ! তুমি যেন তার ব্যাপারে প্রত৷ ৷রিত না হও ৷ আমি ইবরাহীমের
দীনের সন্ধানে দেশময় ঘুরে বেরিয়েছি ৷ ইহুদী খৃষ্টান মজুসী যাকেই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা
করেছি, প্রতে দ্রকেই বলেছে যে, অচিরেই এ দীন আত্মপ্রকাশ করবে ৷ সেই নবী সম্পর্কে আমি
তোমাকে যে বিবরণ দিলাম, চারা সকলেই আমাকে এরুপই বলেছে ৷ তারা আরো বলেছে যে,
তিনি ব্যতীত আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না ৷
আমির ইবন রবীয়া বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে যায়দ ইবন
আমরের এসব কথা জানিয়েছি এবং তার আমানতও পৌছিয়েছি ৷ নবী করীম (সা) তার
সালামের জবাব দেন এবং তার জন্য রহমতের দোয়া করেন এবং বলেন, আমি তাকে জান্নাতে
বেব্ক্ত৷ শান-শওকতে বিচরণ করতে দেখেছি ৷
ইমাম বুখারী (র) আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবন উমর (রা)
বলেন, ওহী অব৩ রণ শুরু হওয়ার আগে একদিন৷ বা লদা হ-এর নিম্ন৷ ৷ঞ্চলে যায়দ ইবন আমর এর
সঙ্গে নবী করীম (না)-এর সাক্ষাত হয় ৷ আমি তার সামনে খাঞ্চা এগিয়ে দিই ৷ কিন্তু তিনি তা
খেতে অস্বীকার করেন ৷ তখন যায়দ বলে উঠলেন : আমিও তোমাদের দেবতার নামে
বলি দেওয়া পশু থাই না এবং সে পশুও আমি মুখে দেই না, যা তোমরা গাইরুল্লংাহ্ব নামে
যবাই কর ৷ উল্লেখ্য যে, যায়দ ইবন আমর যবাইর ব্যাপারে কুরাইশদের সমালোচনা করে
বলতেন : বকরী সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ ৷ আল্লাহই আকাশ থেকে পানি অবতারণ করে ঘাস
উৎপন্ন করে এর খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন ৷ আর কুরাইশের লোকেরা কিনা তা যবাই করে
পাইরুল্লাহর নামে !
মুসা ইবন উক্বা বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়ল একবার দীনের সন্ধানে
সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ৷ পথে এক ইহুদী আলিমের সাক্ষাত পেয়ে তাকে তাদের দীন
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং বলেন, আমি আপনাদের দীন গ্রহণ করতে আগ্রহী ৷ অতএব এ
সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন ৷ জবাবে তিনি বললেন আমাদের দীনে আসতে হলে তোমাকে
আল্লাহর গযবের তার মাথায় নিয়ে আসতে হবে ৷ এ কথা শুনে যায়দ বললেন, আমি তো
আল্লাহর গযব থেকেই পালিয়ে এসেছি আল্লাহ্র গযবের সসুমান্যও আমি বহন করতে পারব না,
সে সাধ্যও আমার সেই ৷ সম্ভব হলে আমাকে অন্য কোন দীনের সন্ধান দিন ৷ ইহুদী আলিম
বললেন, আমার বিবেচনায় তুমি হানীফ’ হতে পার ৷ যায়দ জিজ্ঞাসা করলেন, হানীফ’ আবার
কিং তিনি বললেন, হানীফ হলো ইব্রাহীম (আ)-এর দীন, যিনি ইহুদীও ছিলেন না, খৃষ্টানও
ছিলেন না ৷ তিনি আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করতেন না ৷ ইহুদী পণ্ডিতের বক্তব্য শুনে
যায়দ বেরিয়ে এলেন ৷ তারপর দৃহাত উপরে তুলে বলে উঠেন, “আল্লাহ ! তুমি সাক্ষী, আমি
ইবরাহীমের দীন গ্রহণ করলাম ৷”
লায়ছ বলেন, আসৃমা বিনতে আবু বকর (রা) বলাে:হছুন আমি একদিন দেখলাম যে, যায়দ
বাবার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলছেন, “হে কুরইিণ ন্ন্হৃম্পুদড়ায়! তোমাদের মধ্যে একমাত্র
আমিই ইবরাহীমের দীনের অনুসারী ৷ ”
যায়দ শিশু কন্যাদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে রক্ষা করতেন ৷ কাউকে নিজ কন্যা
সন্তান জীবন্ত কবর দিতে দেখলে তিনি বলতেন, একে হত্যা করো না, আমাকে দিয়ে দাও,
আমি এর ব্যয় তার বহন করব ৷ লালন-পালন করার পর বড় হলে কন্যার পিতাকে বলতেন,
“ইচ্ছে হলে তোমার সন্তানকে এবার তুমি নিয়ে যেতে পার, আর যদি বল, এখনও আমি এর
ভরণ-পােষণ বহন করতে পারি ৷” এ বর্ণনড়াটি বুখারীর ৷ ইবন আসাকির ভিন্ন সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন ৷
আব্দুর রহমান ইবন আবু যিনাদ বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবু বকর (বা)
বলেছেন, আমি দেখেছি যে, যায়েদ ইবন আমর কাবার সঙ্গে হেলান দিয়ে বলছেন, “হে
কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা ব্যভিচার থেকে দুরে থাক ৷ ব্যভিচার দারিদ্র্য ডেকে আনে ৷”
মুহাম্মদ ইবন উছমান ইবন আবু শায়বা জাবির (বা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি
বলেন , রাসুলুল্লাহ (সা) ণ্ক যায়দ ইবন আমর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, জাহিলী যুগে
তো তিনি কিবলার দিকে মুখ করে বলতেন, ইবরাহীমের যিনি ইলাহ, আমার ইলাহও তিনি ৷
ইবরাহীমের দীনই আমার দীন ৷ আবার তিনি সিজদাও করতেন ৷ তার কী হবো জবাবে নবী
করীম (সা) বললেন, আমার ও ঈসার মাঝখানে একা তাকে একটি উন্নত হিসাবে উথিত করা
হবে ৷ এ বর্ণনাটির সনদ উত্তম ও হাসান পর্যায়ের ৷
ওয়াকিদী খারিজা ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি
যায়দ ইবন আমর সম্পর্কে সাঈদ ইবন মুসায়িবে (রা)-ফে বলতে শুনেছি যে, রড়াসুলুল্লাহ
(না)-এর প্রতি ওহী অবতরণের পাচ বছর আগে যায়দ ইবন আমর যখন মারা যান, তখন
কুরাইশরা কাবা ঘর পুনঃনির্মাণ করছিল ৷ মৃত্যুর আগে প্রায়ই তিনি বলতেন, “আমি
ইবরাহীমের দীনের অনুসারী ৷” তার ছেলে সাঈদ ইবন যায়দ ইসলাম গ্রহণ করেন এবং
রাসুলুল্পাহ (না)-এর অনুসারী হন ৷ উমর ইবন পাতায় (বা) ও সাঈদ ইবন যায়দ (রা) একদিন
রাসুলুল্পাহ (সা) এর নিকট এসে যায়দ ইবন আমর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন
“আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ও তার প্রতি রহম করেছেন ৷ কারণ তিনি ইবরাহীমের
দীনের উপর ইস্তিকাল করেছেন ৷” বর্ণনাকারী বলেন, সেই থেকে ৷চােন মুসলমান ক্ষমাও
রহমতের দোয়া ছাড়া তার নাম উচ্চারণ করেন না ৷ এ বনািটির উল্লেখের পর সাঈদ ইবন
মুসায়িব্রব বলতেন :
মুহাম্মদ ইবন সা’দ বর্ণনা করেন যে ইয়াহ্ইয়া সাদী বলেছেন, দ্য্যায়দ ইবন আমর মক্কায়
মারা যান এবং হেরার পাদদেশে সমাহিত হন ৷ তবে আগে আমরা বলে এসেছি যে, সিরিয়ার
বালকা অঞ্চলের মায়কাআ নামক স্থানে বনু লাখমের একদল দৃর্বৃত্তের আক্রমণে তিনি নিহত
হন ৷ আল্লাহ্ই সম্যক অবগত ৷
বাগিনদী আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা)
বলেছেন ট্রুআমি জান্নতে প্রবেশ করে যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়লের দুটি অট্টালিকা
দেখতে পেয়েছি ৷ ” এ সনদটি উত্তম, তবে কো ন কিভাবে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না ৷
যায়দ ইবন আমর ইবন নুফা য়লের কিছু কবিতা আমরা সৃষ্টির সুচনা অধ্যায়ে উল্লেখ করে
এসেছি ৷ তার দু ”টি পংক্তি নিম্নরুপ০ ং
-আমার সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত যিনি রাজা ৷ধিরাজ, যার উপর কোন ইলাহ
নেই এবং এমন কোন রবও নেই, যে তার সমকক্ষ হতে পারে ৷
তবে কারও কারও মতে এ পৎক্তি দুটো উমাইয়া ইবনে আবুসৃ সালত এর ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক এবং যুবায়র ইবন বাক্কার প্রমুখ বর্ণিত যায়দ ইবন আমর-এর
তাওহীদ সং ক্রাস্ত কয়েকটি কবিতা নিম্নরুপ
-আমি নিজেকে সপে দিলাম সেই মহান সত্তার হাতে, যার কাছে মাথা নত ৩কবে ভারী
পাথর বহনকারী পৃথিবী ৷ যাকে বিন্তুত করার পর যখন তা সমতল হয় তখন পাহাড় চাপা
দিয়ে তিনি তাকে প্রোথিত করেন ৷
আমি আত্মসমর্পণ করলাম, সেই সভার কাছে, সুমিষ্ট পানি বহনকারী চমঘমালা যার
অনুগত, যে মেঘের পানি দ্বারা সিক্ত গোটা পৃথিবী ৷
আমি আত্মসমপর্ণ করলাম সেই সভার কাছে, যার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বায়ু, যে বায়ু
এক সময় এক একভাবে প্রবাহিত হয় ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক হিশাম ইবন উরওয়৷ (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন,
আমার আব্বা বলেছেন, যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়ল কাবড়াকাৰ্র বলেছিলেন :
এক বরের আনুগত্য করব না ৷কি হাজার বরের ? যদিও বিষয় বিভিন্ন ৷ আমি লাত উয্যা
সব ত্যাগ করেছি ৷ ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু লোকেরা এমনই করে থাকে ৷
আমি উয্যাকে মানি না, মানি না তার দুই কন্যাকেও ৷ বনু আমর ও বনু আযওর এর দুই
প্রতিমাকেও না ৷
গুনমকেও আমি মানি না ৷ আমি বৃদ্ধিতে যখন অপরিপক্ক তখন থেকেই আমার রর
একজন ৷ আমি বিস্মিত হয়েছি ৷ বন্তুত রাত্রিকালে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে থাকে ৷ আর
বিচক্ষণ লোকেরা দিনের বেলা সেসব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন ৷ বহু পাপাচারীকে আল্লাহ
ৎস করে দিয়েছেন আর সমাজের কিছু সাধু লোকদের রেখে দিয়েছেন, যাদের ছোট শিশুরা
আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে ৷
মানুষ যখন হোচট খায়, তখন একদিন তওবা করে যেমন সবুজ ডাল-পালা এক সময়
পল্লবিত হয় ৷
আমি আমার বব রহমানের ইবাদত করি ৷ এই আমার যে, ক্ষমড়াশীল রব আমার সব পাপ
মাফ করে দেবেন ৷
তোমরা তোমাদের রব আল্লাহর প্রতি তাকওয়ড়া সংরক্ষণ কর ৷ যতক্ষণ তোমরা তা’ করবে,
ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে না ৷
পুন্যবানদের আবাস হবে জান্নাত ৷ আর কাফিরদের ঠিকানা জাহান্নাম ৷ পার্থিব জীবনে
তাদের জন্য আছে লাঞ্চুনা ৷ আর মৃত্যুর পরে যা পাবে , তাতে তাদের হৃদয় ৎকৃচিতই হবে ৷
আবুল কাসিম রগবী আসমা বিনতে আবু বকর (বা) থেকে ভিন্ন সুত্রে উক্ত পংক্তিগুলো
ঈষৎ পরিবর্ত্য সহ বর্ণনা করেছেন ৷
জিনদেবকে আমি আমার থেকে দুরে সরিয়ে ব্লেখেছি ৷ ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু লোকেরা এমনই
করে থাকে ৷ আমি উয্যাকে মানি না, তার দুই কন্যাকেও না ৷ বন্ তসৃম এর প্ৰতিমার প্রতিও
আমার আস্থা নেই ৷
আমি গুনম এর আনুগ৩ করি না ৷ শৈশব থেকেই আমি এক রবের অনুসারী ৷ বিষয়
নানাবিধ হলেও আ ৷মি কি এক রব ছেড়ে হাজার রবের আনুগত্য করব ?
তোমার কি জানা নেই যে, আল্লাহ এমন বহু লোককে ধ্বংস করেছেন, যারা ছিল পাপিষ্ঠা
আর অবশিষ্ট রেখেছেন সাধু লোকদের, যাদের ছোট্ট শিশুরা এখন বড় হচ্ছে?
আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেন, এসব শুনে ওয়ারাক৷ ইবন নওফল বলেছিলেন ও
সুপথ পেয়ে গিয়েছ ও নিয়ামত লাভ করেছ হে ইবনে আমর এবং উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে
তুমি বেচে গিয়েছ ৷ এক অনুপম রবের আনুগত্য করে এবং পাহাড়ের জিনদের বর্জন করে
অন্ধকার থেকে মুক্তি পােয় তুমি আলোর পথের সন্ধান পেয়েছ ৷
কোনো ভয়াল জনপদে অবতরণ করলে আমি বলি, আমি তোমার দয়া চাই, শত্রুকে আমার
উপর বিজয়ী করো না ৷ তুমি আমার রব, তুমিই আমার আশা-ভরসা, হে আমার বব?
আল্লাহর রহমত মানুষের নাগাল পাবেই ৷ যদিও তারা সত্তর স্তর মাটির নীচে
অবস্থান করে ৷
আমি এমন রবকে মান্য কবি, যিনি ডাকে সাড়া দেন ৷ জীবনভর ডাকলেও যার সাড়া-শব্দ
পাওয়া যায় না, তাকে আমি মানি না ৷ যে কোনো উপাসনালয়ে ইবাদতকালে আমি বলি তুমি
মহান, তােমাকেই আমি পুনঃপুনঃ আহ্বান করি ৷
পুর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যায়দ ইবন আমর দীনের সন্ধানে সিরিয়া :িায়েছিলেন ৷ তার সঙ্গে
ছিলেন ওয়ারাকা ইবন নওফল, উছমান ইবন হুয়াইরিছ ও উবাইদুল্লাহ্ ইবন জাহ্শ ৷ যায়দ
ব্যতীত অন্য তিনজন খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন ৷ যায়দ নতুন করে কোন ধর্ম অবলম্বন না করে এক
লা-শারীক আল্পাহ্র ইবাদতেব উপরই অটল থেকে স্বভাবজাতভাবেই রুত্রতটুকু সম্ভব ইবরাহীমের
দীনের উপর থাকার চেষ্টা করেন ৷ ওয়ারাকা ইবন নওফলের বৃত্তান্ত পরে আসছে ৷ উছমান ইবন
হুয়াইরিছ সিরিয়ার বসবাস করেন এবং কায়সারের নৈকটো অবস্থান বসুর সে দেশেই মারা যান,
তার একটি বিস্ময়কর ঘটনা উমুবী বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন ৷ সংক্ষেপে ঘটনাটি এরুপ :
কায়সারের নিকট গিয়ে উছমান নিজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অনুযোপ করেন ৷ তা’ শুনে
কায়সার সিরিয়ার আরব অধ্যুষিত অঞ্চলের শাসক ইবন জাফনাকে কুরাইশের সঙ্গে যুদ্ধ করার
জন্য সৈন্য প্রেরণের আদেশ দেন ৷ শাসক সে মতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন ৷ তখন সেখানকার
আরবরা তা থেকে ধারণ করে ৷ যুক্তি হিসাবে মক্কা শরীফের মাহাত্ম্য এবং আসহাবে ফীলেব
সঙ্গে আল্লাহ যে আচরণ করেন, তার কথা তারা উল্লেখ করে ৷ ইবন জাফনা উছমান ইবন
হুয়াইরিছকে বিষ মাথা একটি রঙিন পোশাক পরিয়ে দেয়, যার বিষক্রিয়ায় সে মারা যায় ৷ যায়দ
ইবন আমর ইবন নুফায়ল তার মৃত্যুর শোক প্রকাশ করে কয়েকটি পংক্তি রচনা করেন ৷ উমুবী
পংক্তিগুলো উল্লেখ করেছেন ৷ কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় আমরা তা উল্লেখ করলাম না ৷ উছমান
ইবন হুয়াইরিছের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছিল রাসুলুল্লাহ (না)-এর নবুওত প্রাপ্তির কমবেশী তিন
বছর আগে ৷ আল্লাহ্ই সম্যক অবগত ৷
ঈসা (আ) ও রড়াসুলুল্লাহ (না)-এর মধ্যবর্তী
যুগের কয়েকটি ঘটনা
(ক) কাষা নির্মাণ
কেউ কেউ বলেন, সর্বপ্রথম যিনি কাবা ঘর নির্মাণ করেন তিনি হলেন আদম (আ)
আবদুল্লাহ্ ইবন অড়ামর বর্ণিত এ সম্পর্কে একটি মারফু হাদীসও আছে ৷ তবে এর সনদে ইবনুল
হায়আ নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন ৷ বিশুদ্ধতর অভিমত হলো, সর্বপ্রথম যিনি কাবা ঘর
নির্মাণ করেছেন, তিনি হলেন ইব্রাহীম (আ) ৷ ইতিপুর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ৷
সিমাক ইবন হারব আলী ইবন আবু তড়ালিব থেকে এরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ আলী (রা ) বলেন,
অতঃপর কাবাঘর ধ্বংস হয়ে গেলে আমালিকা বংশীয়রা তা নির্মাণ করে ৷ তারপর আবারও
ধ্বংস হলে জুরহুম বংশীয়রা তা নির্মাণ করে ৷ পুনরায় ধ্বংস হলে এবার কুরাইশরা তা নির্মাণ
করে ৷ কুরাইশের কাবাঘর পুনঃনির্মাণের আলোচনা পরে আসছে ৷ তা ঘটেছিল নবী করীম
(না)-এর নবুওত লাভের পাচ বছর , মতান্তরে পনের বছর আগে ৷ যুহরী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা)
তখন যৌবনে উপনীত ৷ যথাস্থানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইন্শাআল্পাহ ৷
আবু নু’আয়ম আবু সালামা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, কাব ইবন লুওয়াই
প্রতি শুক্রবার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সমবেত করে ভাষণ দিতেন ৷ কুরাইশরা সে দিনটিকে
বলতো আরুবা’ ৷ বক্ততায় তিনি বলতেন, হে লোক সকল ! তোমরা শ্রবণ কর, শিক্ষা লাভ কর
ও অনুধাবন কর ! অন্ধকার রাত, আলোকােজ্জ্বল দিন বিছানা স্বরুপ পৃথিবী ছাদ আকাশ স্বরুপ,
কীল্কস্বরুপ পাহাড়রাজি আর পথ নির্দেশক তারকারাজি আগের পরের নির্বিশেষে সকল
সকল, নারী ও পুরুষ সর্বপ্রথম স্বীকারােক্তি ফ্লেৰু-এর প্রতি ইঙ্গিতকারী বিষয় এবং রুহ ৷ তোমরা
রক্তের আত্মীয়তা বজায় রেখে চল ৷ বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষা কর ৷ অর্থ-সষ্পদকে ফলপ্রদ বানাও ৷
মৃত্যুবরণকারী কাউকে কি তোমরা ফিরে আসতে কিত্বা মৃত ব্যক্তিকে পুনরুথিত হবে দেখেছা
আসল বাড়ী তোমাদের সম্মুখে ৷ তোমরা যা বলছ, ব্যাপার তার বিপরীত ৷ তোমাদের মর্যাদাকে
তোমরা উৎকর্ষিত করে তােল এবং এর উপর দৃঢ় থাক ৷ অচিরেই আসছে এক মহা সংবাদ ৷
মহান এক নবী আত্মপ্রকাশ করছেন বলে ৷ অতঃপর তিনি আবৃত্তি করেন ?