অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হয় তা হলে প্রথম বর্ণনা থেকে দ্বিতীয় বর্ণনাটি অধিক বিশুদ্ধ ৷ নচেৎ প্রসিদ্ধতর ও
সঠিক মত অনুযায়ী মক্কার উচু এলাকাকে বলা হয় কাদা এবং মক্কার নিম্ন ভুমিকে বলা হয়
৷ আমরা পুর্বে উল্লেখ করেছি এবং সহীহ্ বুখারীর বর্ণনায়ও এসেছে যে সে দিন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) খড়ালিদ ইবন ওয়ড়ালীদকে মক্কার উচু এলাকা (কাদা) দিয়ে প্রবেশ করার জন্যে
প্রেরণ করেন এবং নবী করীম (সা) নিজে মক্কার নিম্ন এলাকা কুদার দিক থেকে প্রবেশ করেন ৷
আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ বায়হাকী বলেন, আবুল হুসায়ন ইবন আবদান — ইবন উমর (রা)
থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন
মহিলারা এসে অশ্বগুলাের মুখের ধুলাবালি মুছে দিতে থাকে ৷ এ দৃশ্য দখে রাসৃলুল্লাহ্ (সা)
ঘুচকি হেসে আবু বকরকে বললেন, আবু বকর ! হাসৃসানেব কবিতাটা কী ? তখন আবু বকর (রা )
হাসৃসানের নিম্নোক্ত কবিতাৎশ আবৃত্তি করেন : ইয়াইেয়৷ ইয়াহ্ইয়া
অর্থ : তোমরা যদি লক্ষ্য না রাখ, তা হলে আমি আমার প্রিয় অশ্বগুলো হারাব ৷ যেগুলো কাদা
নামক স্থানের দুই প্রান্তের ধৃলাবালি উড়িয়ে চলছিল ৷ যীন পরান অবস্থায় সেগুলো লাগামের সাথে
প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল ৷ আর মহিলারা তাদের ওড়না দিয়ে সেগুলোর ধুলাবালি ঝেড়ে
দিচ্ছিল ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হাসৃসান যেভাবে বলেছে সেভাবে একে অন্তর্ভুক্ত কর ৷
ইবন ইসহাক বলেন, ইয়াহ্য়া ইবন আববাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র তার পিতার সুত্রে,
তার দাদী আসমা বিনত আবু বকর থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন যী
তৃওয়ড়ায় অবস্থান করেন, তখন আবু কুহাফ৷ তার কনিষ্ঠতম কন্যাকে ডেকে বললেন, হে আমার
কন্যা ! আমাকে আবু কুরায়স পাহাড়ে নিয়ে চলো ৷ আসৃমা বলেন, তখন তার দৃষ্টিশক্তি লোপ
পেয়ে গিয়েছিল ৷ সে অবস্থায় কন্যাটি তাকে নিয়ে পাহাড়ে আরোহণ করল ৷ আবু কুহাফা
বললেন, হে আমার কন্যা ! তুমি কি দেখতে পাচ্ছে৷ ? মেয়েটি বললো, আমি এক বিশাল
জনসমষ্টি দেখতে পাচ্ছি ৷ আবুকুহাফা বললেন, এরা অশ্বারোহী বাহিনী ৷ যেয়েটি আরো বললো,
আমি এক ব্যক্তিকে উক্ত জনসমষ্টির আগে পিছে অত্যন্ত তৎপর দেখতে পাচ্ছি ৷ আবু কুহাফা
বললেন, হে আমার কন্যা ঐ ব্যক্তিই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আগে আগে থাকছে ৷
তারপর যেয়েটি বললো, আল্লাহর কসম, জনতা এখন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে ৷ আবু কুহাফা
বললেন, আল্লাহর কসম , তা হলে অশ্বারােহী বাহিনীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ৷ তুমি আমাকে
তাড়াতাড়ি বাড়ি নিয়ে চলো ৷ তখন যেয়েটি তাকে নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসে ৷ কিন্তু
বাড়িতে পৌছবার আগেই তিনি অশ্বারােহীদের সামনে পড়ে যান ৷ আসমা বলেন, যেয়েটির গলায়
স্বর্ণের একটি হার ছিল, এক ব্যক্তি অগ্রসর হয়ে তার গলা থেকে হারটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় ৷ আসমা
বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন মক্কায় আসেন এবং মসজিদে প্রবেশ করেন ৷ তখন আবু
বকর তার পিতাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে দেখেই বললেন,
মুরব্বিকে বাড়ি রেখে আসলে না কেন ? আমিই বাড়িতে গিয়ে তাকে দেখে আসতাম ৷ আবু বকর
(রা) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনার নিজে গিয়ে দেখে আমার চাইতে আপনার কাছে তার
৩া৷সাট ই অধিকতর মানানসই ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ (সা)৩ তাকে সম্মুখে বসিয়ে র্তার বুকে হাত
বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ইসলাম কবুল করুন ৷ বৃদ্ধ আবু কুহাফা তখন ইসলাম গ্রহণ করলেন ৷
আসম৷ বলেন, আবু বকর যখন পিতাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর দরবারে প্রবেশ করেন, তখন
৷ তার মাথাটি কাশফুলের মত শ্বেত শুভ্র দেখাচ্ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তবললেন, তার চুল রাঙ্গিয়ে
দাও ! তারপর আবু বকর তার বোনের হাত ধরে দাড়িয়ে বললেন, আল্লাহর দােহাই ! ইসলামের
দােহাই ! আমি আমার এই বোনের স্বর্ণের হারটি ফেরত চাই ৷ কিভু কারও থেকে কোন উত্তর
পাওয়া গেল না ৷ তখন আবু বকর বললেন, শুনাে বোন ! নিজের হার নিজেই সামলে রাখবে ৷
আল্লাহর কসম ! লোকদের মধ্যে আজ আর তেমন আমানতদা রী নেই ৷ আজ’ বলতে হযরত
আবু বকর সিদ্দীক ঐ দিনকেই নির্দিষ্ট করে বুঝিয়েছেন ৷ কেনন৷ সে দিন সৈনাস থ্যা ছিল বিপুল ৷
বিক্ষিপ্তভাবে থাকার কা ৷রণে কেউ কারও ঘোজ রাখতে পারছি^৷ না ৷ আর যে ব্যক্তি হার ছিনিয়ে
নিয়েছে হযরত সিদ্দীক হয়তো মনে করেছেন যে, যে ব্যক্তি হয়তো শত্রু পক্ষের কেউ হবে ৷
হাফিয বায়হাকী বলেন, আবদুল্লাহ আর হাফিয জাবির (রা) থেকে বর্ণিত ৷ উমর ইবন
খাত্তাব আবু কুহাফাকে হাতে ধরে নবী করীম (সা)-এর কাছে নিয়ে যান ৷ তাকে দেখে রাসুলুল্লাহ্
(সা) বললেন, একে পরিবর্তন করে দাও অর্থাৎ তার দা ৷ড়ি রাঙ্গিয়ে দাও তবে কাল করে৷ না ৷
ইবন ওহাব যায়দ ইবন অ ৷সলাম থেকে বর্ণনা করেন যে আবু বকরের পিতা ইসলাম গ্রহণ
করার রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবু বকরকে মুবারকবাদ জানান ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন
নাজীহ আমার নিকট বর্ণনা ৷করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন তার সৈন্য বাহিনীকে ষী তৃওয়া
থেকে বিভিন্ন দলে বি৩ ক্ত করে মক্কায় প্রবেশের আদেশ দেন, তখন যুবায়র ইবনুল আওয়ামকে
একটি দল নিয়ে কাদার দিক থেকে প্রবেশ করার হুকুম দেন ৷ যুবায়র বাহিনীর রাম অংশের
দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন ৷ আর সাদ ইবন উবাদাকে আর একটি দল নিয়ে কুদার দিক থেকে
প্রবেশের নির্দেশ দেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, কোন কোন আলিম বলেছেন যে, সাদ ইবন উবাদা
মক্কায় প্রবেশের জন্যে যাত্র ৷কালে বলেছিলেনং :
“আজকের দিন কঠিন যুদ্ধের দিন ! আজ বায়তৃল্লাহ্ব হুরমতকে হালাল করার দিন !
জনৈক ব্যক্তি তার এ কথাটি শুনে ফেলেন ৷ ইবন হিশামের মতে ,তিনি ছিলেন উমার ইবন
হতো যে (রা) ৷ তিনি বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ্ সা দ ইবন উবাদা কি বলছে শুনুন ! কুরায়শদের
উপর যে যে হামলা করবে না সে ব্যাপারে আমরা তার উপর ভরসা করতে পারছি না ৷ তখন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলীকে ডেকে বললেন : তুমি ওর কাছে যাও এবং তার নিকট থেকে পতাকা
নিজ হাতে তনিয়ে তা নিয়ে তুমিই বরং নগরে প্রবেশ কর ৷
মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক ব্যতীত ৩অন্য একজন বর্ণনা কারী ঘটনাটি এ৬ ৷বে বর্ণনা করেছেন যে
সা দ ইবন উবাদ৷ আবু সুফিয়ানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
হে আবু সুফিয়ান ! “আজকের দিন সং ঘাতের দিন ৷ আজকের দিন বায়তুল্লাহ্র স্থুরমাতকে হালাল
বিবেচনায় দিন” ৷ তখন আবু সৃফিয়ান রড়াসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট সাদ এর উক্তির বিরুদ্ধে
অভিযোগ পেশ করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) জবাবে বললেন : না , বরং আজকের দিন কা’বার সম্মান
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দিন ৷ তিনি সাদ ইবন উবাদাকে সৌজন্য শিক্ষা দেয়ার জন্যে তার হাত থেকে
আনসারদের পতাকা নিয়ে নেয়ার আদেশ দেন ৷ কথিত আছে যে, মধ্যে এর নিকট থেকে পতাকা
নিয়ে তা র্তারই পুত্র কায়স ইবন সাদের হাতে ন্যস্ত করা হয় ৷ কিভু মুসা ইবন উকবা যুহবী
থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সাদ এর হাত থেকে পতাকা নিয়ে যুবায়র ইবন আওয়ামের হাতে
প্রদান করা হয় ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
হাফিয ইবন আসাকির ইয়া’কুব ইবন ইসহাক ইবন দীনারের আংলাচনায় আবদুল্লাহ ইব ন
সুররী এভাকী ও মুসা ইবন উকবা সুত্রে জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (বা ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) সাদ ইবন উবাদার হাতে পতাকা প্রদান করেন ৷ সাদ পতাকা
নেড়ে নেড়ে বলছিলেন “আজকের দিন রক্তপাতের দিন ৷ আজ কাবব হুরমত হালাল করার দিন ৷
বর্ণনাকারী বলেন, সাদের এ কথাটি কুরায়শদের মনে প্রচণ্ড আঘাত করল এবং তাদের
আত্মমর্যাদায় খুব লাগলো ৷ বর্ণনড়াকারী বলেন : এ সময় জনৈক মহিলা তার গতি-পথে সম্মুখে
আসে এবং নিম্নের কবিতাটি আবৃত্তি করে :
অর্থ : হে সঠিক পথের সন্ধান দানকারী নবী কুরায়শ জনগণ আপনার নিকট আশ্রয় গ্রহণ
করেছে এবং আশ্রয় গ্রহণকালে সংবাদ প্রদান করেছে ৷
তারা আশ্রয় নিয়েছে এমন সময়, যখন প্রশস্ত ভুখণ্ড তাদের উপর সংকুচিত হয়ে পড়েছে ৷
আর আসমানের প্রভু তাদের প্রতি বিরুপ হয়েছেন ৷
এ কওমের অবস্থা অতি শোচনীয় অবস্থায় উপনীত হয়েছে ৷ এক জন-মানবশুন্য ধুসর প্রাম্ভর
তাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ৷
সাদ এখন চাচ্ছে, এ উপত্যকার দুর্বল অধিবাসীদের কােমর ভেৎগে দিতে ৷
সে তো খাযরাজ গোত্রের লোক ; ক্রোধের আতিশয্যে সে আমাদেরকে শকুন ও কুকুরের
খাদ্য হিসেবে নিক্ষেপ করতেও ত্রুটি করবে না ৷ আপনি তাকে বাধা দিন ৷ না হলে সে তো রক্ত
পিপাসু সিংহ ও নেকড়ের ভুমিকা গ্রহণ করবে ৷
সে যদি স্বেচ্ছা প্ৰণোদিত হয়ে পতাকা ধারণ করে এবং পতাকার অধিকারী ও সংরক্ষণ-
কারীদের আহ্বান করে, তাহলে কুরায়শদের এ উপত্যকা দাসীদের হাতে শুন্য মরুভুমিতে পরিণত
হয়ে যাবে ৷
যে এমন বীর-বাহাদুর যে, বিষাক্ত মুক সর্পের ন্যায় এ উপত্যকায় তার নীরব সিদ্ধান্ত
কার্যকর করতে চায় ৷
এ কবিতা ওনার পর তাদের প্রতি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর ষ্ন্াহানুতুতির সঞ্চার হল এবং তার
নির্দেশক্রমে সাদ ইবন উবাদার হাত থেকে পতাকা নিয়ে তারই পুত্র কায়স ইবন সা ’ দের হাতে
তুলে দেয়া হলো ৷ বলা হয়ে থাকে যে, মহিলাটি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট আগ্রহ সহকারে
মিনতি জানালে তিনি যেমন তাকে নিরাশ করতে চাননি, তেমনি সাদকেও অখুশী করতে চাননি-
তাই তিনি সাদের হাত থেকে পতাকা নিয়ে তারই পুত্রের হাতে তা অর্পণ করেন ৷
ইবন ইসহড়াক বলেন ;; ইবন আবু নাজীহ র্তার বর্ণনায় আরও উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর নির্দেশে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ কিছু লোক নিয়ে মক্কার নিস্নাঞ্চল লায়ত’ দিয়ে প্রবেশ
করেন ৷ খালিদ ছিলেন ডান দিকের বাহিনীর অধিনায়ক ৷ আর এ বাহিনীতে ছিল আসলাম, সুলায়ম ,
গিফার, মুযায়না ও জুহায়নাসহ আরবের আরও কতিপয় গোত্র ৷ অপর দিকে আবু উবায়দা ইবনুল
জাররাহ (রা) মুসলমানদের এক সারি লোকসহ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সম্মুখ দিয়ে মক্কায় প্রবেশ
করেন ৷ আর স্বয়ং রাসুলুল্লাহ্ (সা) আযাখির হয়ে মক্কার উচু এলাকায় উপনীত হন এবং সেখানেই
তার জন্যে র্তাবু স্থাপন করা হয় ৷ বুখারী যুহরী আলী ইবন হুসায়ন উসামা ইবন যায়দ সুত্রে
বর্ণনা করেন : মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে উসামড়া রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ্; আপামীকাল কোথায় অবস্থান করবেন ? তিনি বললেন, আকীল কি আমাদের জানা
কোন জায়গা-জমি অবশিষ্ট রেখেছে ? তারপরে তিনি বললেন ও কাফির ঘু’মিনের ওয়ারিশ হয় না
এবং মু’মিন ও কাফিরের ওয়ারিশ হয় না ৷ এরপর বুখারী আবুল ইয়ামান সুত্রে আবু হুরায়রা
(রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ নবী করীম (সা ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে বিজয় দান করলে
ইনশাআল্লাহ্ আমাদের অবস্থান স্থল হবে খায়ফে যেখানে কাফিরর৷ কুফরীর উপর পরস্পর শপথ
গ্রহণ করেছিল ৷ ইমাম আহমদ ইউনুস সুত্রে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন : ইনৃশাআল্লাহ্ আগামীকাল আমাদের অবস্থানস্থুল হয়ে খায়ফে বনু
কিনানায় যেখানে কুরায়শরা কুফরীর উপরে শপথ করেছিল ৷ ইমাম বুখাবীও ইবরাহীম ইবন
সাদ সুত্রে আবু হুরায়রা থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন : আবদুল্লাহ ইবন আবু নাজীহ ও আবদুল্লাহ্ ইবন আবু বকর আমার
নিকট বর্ণনা করেন যে, সাফওয়ান ইবন উমাইয়া, ইক্রিমা ইবন আবু জাহ্ল ও সুহড়ায়ল ইবন
আমর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে খানদামা নামক স্থানে কিছু সৈন্য সমাবেশ করে ৷ অপর দিকে বনু বকর
গোত্রের হিমাস ইবন কায়স ইবন খালিদ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর মক্কা প্রবেশের আগে তার অংস্ত্র শান
দিতে শুরু করে ৷ তা দেখে তার ত্রী তাকে বলে : এসব প্রস্তুত করা হচ্ছে কিসের জন্যে ? জবাবে
সে বলে : মুহাম্মাদ ও তার সঙ্গীদের জন্যে ৷ তার শ্রী তাকে বললো : আল্লাহর কসম ! মুহাম্মাদ ও
তার সঙ্গীদের মুকাবিলায় কিছু করতে পারবে বলে তো আমার মনে হয় না ৷ হিমাস বললোং :
আল্লাহর কসম আমিতে ৷ আশা করছি তাদের ক ৷উকে অবশ্যই তোমার সামনে হ যিব করতে
পারবো ৷ তারপর সে কবিতায় বললােং :
অর্থাৎ — আজ যদি তারা মুকাবিলার জন্যে এগিয়ে আসে তবে ৷ কান পরোয়া করি না ৷
কেননা আমার কাছে এই যে রয়েছে পুর্ণ অস্ত্রশস্ত্র, রয়েছে বর্শা ও দু ধারী তরবারি যা শত্রু বধ
করতে দ্রুত কার্যকর ৷
তারপর সে খানদামায় গিয়ে সাফওয়ান, ইকরামা ও সুহায়লের সংগে মিলিত হয় ৷ খালিদ
ইবন ওলীদের বাহিনীর কতিপয় মুসলমানের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয় ৷ এবং দু-পক্ষের মধ্যে
সামান্য স০×ঘর্ষও হয় ৷ এতে বনু মুহারিব ইবন ফিহর গোত্রের কুরঘৃ ইবন জাবির ও বনু-মুনকিয়ের
মিত্র হনায়শ১ ইবন খ৷ ৷লিদ ইবন রাবীঅ৷ ইবন আসরাম শহীদ হন ৷ এরা দুজনই ছিলেন খালিদের
বাহিনীভুক্ত ৷ খালিদের অবলম্বিত পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরে চলার তাদের এ বিপর্যয় ঘটে এবং
একই সাথে উভয়ে নিহত হন ৷৩ তবে হুনায়শ নিহত হওয়ার একটু আগে কুবৃয নিহত হন ৷
আবদুল্লাহ ইবন৷ অ৷ বু নাজীহ ও অ বদুেল্লাহ্ ইবন অ৷ বু বকর বলেন : ঐ দিন খালিদের অশ্ব বাহিনীর
মধ্য থেকে সালামা ইবন মায়লা জুহানীও নিহত হন ৷ অপর দিকে মুশরিক বাহিনী পরাজিত হয়ে
পলায়ন করে ৷ এ সময়ও তাদের বারজন কি তেরজন মুসলমানদের হাতে নিহত হয় ৷ ওদিকে
হিমাস পালিয়ে বাড়ি চলে যায় এবং ঘরে প্রবেশ করে ত্রীকে ডেকে বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে
দাও ৷ শ্রী তাকে বললো, তোমার সে বাহাদুরী কথা পেল কোথায় ? হিমাস তখন কবিতায় বলে :
অর্থাৎ ওহে ! তুমি যদি খানদামার যুদ্ধে তথায় উপস্থিত থাকতে, তদুব সাফওয়ান ও
ইকরামার পলায়নের অবস্থা দেখতে পেতে ৷ সেদিন আবু ইয়াষীদ (সৃহায়ল) স্তন্তের ন্যায়
“ দাড়িয়েছিল ৷ আমি তা ৷দুদর ঘুক৷ ৷বিল৷ করেছি অনুগত তরবারি দ্বারা ৷৩ তরবারিগুলাে হাতের কজি ও
মাথার খুলি দুছদন করে যাচ্ছিল ৷ যুদ্ধের ঘনঘটায় গুমগুম আওয়৷ জ ছাড় ৷আর কিছুই শোনা য৷ ৷চ্ছিল
না ৷ তাদের রণ-হুত্কারে আমি দুরে পশ্চাতে ফিরে আসি ৷ তুমি যদি ওসব দেখতে তবে
তিরস্কারমুলক একটি কথাও বলতে না ৷
ইবন হিশাম বলেন৪ কবিতা গুলো মুলত০ ং রিয়াশ হুযালির বলে বর্ণিত ৷
স ৎকেত০ মক্কা বিজয়, হুনায়ন ও তায়েফের যুদ্ধে মুসলমানদের সা০ ×কেতিক চিহ্নসমুহ ছিল
নিম্নরুপ০ :
১ ইবন হিশাম ও তায়মুরিয়ার মতে৩ তার নাম ছিল খুনায়স ৷ কিতু সুহায়লী বলেন, সঠিক হলো হুনায়শ ৷
মুহাজিরদের সংকেত :
খাযরাজীদের সংকেত :
আওস গোত্রীয়দের সংকেত উবায়দুল্লাহর গোত্র !
তাবারাপী আলী ইবন সাঈদ রাযী — — — ইবন আব্বাস সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বলেছেন : আল্লাহ যে দিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যে দিন থেকে এ শহরকে হড়ারম’
করেছেন ৷ এবং যে দিন তিনি সুর্য ও চন্দ্র স্থাপন করেন যে দিনই এ শহর স্থাপন করেন ৷ এ
শহরের সমান্তরালে অবস্থিত আকাশকেও তিনি হড়ারম করেছেন ; আমার পুর্বে কখনও এ শহর
কারও জন্যে হলােল করা হয়নি ৷ কেবল আমার ক্ষেত্রে দিবসের স্বল্পক্ষণের জন্যে হালাল করা
হয়েছে ৷ এবং স্বল্পক্ষণ পরেই পুর্বের ন্যায় আবার এর হুরমত বহাল করা হয়েছে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্
(সা)-কে জানান হল যে, এই তো খালিদ ইবন ওয়ালীদ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা)
তখন একজনকে ডেকে বললেন : তুমি যাও খালিদকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বল ৷ ল্যেকটি এসে
খালিদকে বললো : নবী করীম (সা) বলেছেন, যাকেই নাগালের মধ্যে পাও তড়াকেই হত্যা করতে
থাক ৷ খালিদ সেদিন সত্তর জন ব্যক্তিকে হত্যা করেন ৷ লোকটি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট এসে
এ সংবাদ তাকে জানায় ৷ তখন তিনি খালিদকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি তোমাকে
নর হত্যা করতে নিষেধ করিনি : খালিদ জবাব দিলেন, অমুক ব্যক্তি আমাকে গিয়ে বলেছে-
যাকেই আমি নাপালে পাই তাবেইি যেন হত্যা করি ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) সে ল্যেকটিকে ডেকে এনে
বললেন : আমি কি তোমাকে যুদ্ধ বন্ধ করার হুকুম দিইনি ? লোকটি বললো : আপনি এক প্রকার
চেয়েছেন, আর আল্লাহ্ চেয়েছেন অন্য প্রকার ৷ আপনার ইচ্ছার উপর আল্লাহর ইচ্ছাই বলবত
হয়েছে ৷ তাই না হওয়ার ছিল তার অন্যথা আমি করতে পারিনি ৷ তার জবাব শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
নীরব থাকলেন এবং তাকে কিইে বললেন না ৷
ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার সেনাধ্যক্ষদের নিকট থেকে এই মর্মে অংপীকার
নিয়েছিলেন যে, তারা তাদের ধিরষ্দ্ধে যুদ্ধ করতে আসা লোকদের ব্যতীত অন্য কারও সংগে
যুদ্ধে লিপ্ত হবেন না ৷ তবে তিনি নাম উল্লেখ করে বিশেষ কিছু লোককে হত্যার আদেশ
দিয়েছিলেন ৷ এমনকি যদি তাদেরকে কা’বার গিলাফের নীচেও পাওয়া যায় তবু ৷ তাদের মধ্যে
আবদুল্লাহ ইবন সাদ ইবন আবু সারাহ্ ছিল অন্যতম ৷ সে বাহ্যত : ইসলাম গ্রহণ করে ও ওহী
লিপিবদ্ধ করার দায়িতু পালন করে ৷ জ্যি পরে সে ঘুরতাদ হয়ে যায় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কায়
প্রবেশ করে তাকে হত্যার ঘোষণা দিলে সে পালিয়ে উছমান (বা) এর কাছে আশ্রয় নেয় ৷ সে ছিল
উছমানেব দুধভাই ৷ উছমান তাকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে নিয়ে
আসেন ৷ তিনি দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকার পর বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে ৷ ’ উছমানের সাথে তার
ফিরে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ্ (সা) উপস্থিত সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন : তোমাদের মধ্যে
এমন একজন সুবুদ্ধিসম্পন্ন ল্যেকও কি ছিল না, যে আমার নীরব থাকা অবস্থায় তাকে হত্যা করে
দিত ৷ সাহাবীগণ বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি আমাদেরকে একটু ইংগিত দিলেন না কেন :
তিনি বললেন, ইংগিত দিয়ে কাউকে হত্যা করান নবীর জন্যে শোভনীয় নয় ৷ অন্য একটি বর্ণনায়
আছে তিনি তখন বলেছিলেন : কোন নবী চোখের খিয়ানত করতে পারেন না ৷
ইবন হিশাম বলেনং লোকটি পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে এবং র্খা টি মুসলমান হয় ৷ হযরত
উমর তাকে গর্তনরও নিযুক্ত করেন ৷ পরবর্তীতে হযরত উছমানও তাকে গভর্নর বানান ৷
আমি বলি , উক্ত আবদুল্লাহ ইবন সা দ নিজ গৃহে ফজরের নামাযে সিজদারত অবস্থায় কিংবা
নামায শেষ হওয়া রাসাথেই ইনতিকা ল করেন ৷
ইবন ইসহাক বলেনং বনু৩ তায়ম ইবন ণালিব গোত্রের আবদুল্লাহ ইবন খাতালকেও রাসুলুল্লাহ্
(সা) হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ তার নাম আবদুল উঘৃযা ইবন হুাতালও বলা হয় ৷ সম্ভবত
এ রকমই ছিল ৷ পরে ইসলাম গ্রহণ করলে আবদুল্লাহ নাম রাখা হয় ৷ ১ ইসলাম গ্রহণ করার পর
রাসুণুল্লাহু (সা) ৩াণ্ডে য়াকা ৩ উশুল করার জন্যে পাঠান তার সাথে একজন আনসারীকেও দেন ৷
তার নিজের আযাদকৃত গোলামও সাথে ছিল ৷ কোন এক কারণে (ন্ালাণ্পুমর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে
তাকে সে হত্যা করে ফেলে ৷ তার পরে সে পুনরায় পৌত্তলিকতায় ফিরে যায় ৷ আবদুল্লাহ ইবন
খাতালের দুটি গায়িকা দাসী ছিল ৷
একজনের নাম ফারতানী ৷ অপর জন৩ তারই আরেক সংগিনী ৷ এরা প্;৷ জ্রনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও
মুসলমানদের কুৎসামুলক গান গেয়ে বেড়াত ৷ এ কারণে তিনি ইবন খাতাল ও তার দৃ গায়িকাকে
হত্যার নির্দেশ দেন ৷ ফলে কা’বার গিলাফ ধরে থাকা অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয় ৷ আবু বুরযা
আসলামী এবং সাঈদ ইবন হুরায়ছ সম্মিলিতভ্যবে তাকে হত্যা করেন ৷ গায়িকাদ্বয়ের মধ্যে এক-
জনকে হভ্যা করা হয় এবং অপরজনকে নিরাপত্তা প্রদান করা হয় ৷ বর্ণনাকা রী বলেন৪ হুয়ায়রিছ
ইবন নৃকাযছ২ ইবন ওহব ইবন আবদে কুসায়ওে এ৩ তালিকার অন্যতম ব্যক্তি ৷ এ লোকটিও মক্কায়
নানাভারে রাসুলুল্লাহ্ (সা) (ক জ্বালাতন করত ৷ হিজরাতের প্রথম দিকে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর কন্যা
ফাতিমা ও উম্মে কুলছুমকে হযরত আব্বাস যখন মদীনায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট পৌছিয়ে
দেয়ার জন্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এই হুয়ায়রিছ তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে এবং যে উটে তারা
আরোহণ করে যাচ্ছিলেন সে উটকে বল্লম দিয়ে ঘোচা দেয় ৷ ফলে৩ তারা দুজনেই মাটিতে লুটিয়ে
পড়েন ৷ হুয়ায়রিছকে হত্যা করার আদেশাদিলে আলী ইবন আবু৩ তালিব তাকে হত্যা করেন ৷
ইবন হসহাক বলেনং : তালিকায় মিক্য়াস ইবন সুবাবাও ছিল ৷ এক ব্যক্তি তার ভাইকে
ভুলত্রুমে হত্যা করে ৷ এ জন্যে সে য়থারীতি রক্তপণ গ্রহণ করে করে ৷ কিন্তু পরে সে
হতাকারীকে হত্যাও করে এবং মুরতাদ হয়ে ঘুশরিকদের দলে ভিড়ে যায় ৷ তাকে হত্যার নির্দেশ
দেওয়া হলে তারই গোত্রের নুমায়লা ইবন আবদুল্লাহ্ তাকে হত্যা করেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন
বনু আবদুল মুত্তালব ও ইকরামা ইবন আবু জাহলের দাসী সারাও এ তালিকার অভ র্চুক্ত ছিল ৷
কেননা সে মক্কায় রাসুলুল্লাহ্ (সা ) কে নানা ধরনের কষ্ট দিতা
আমি বলি, ইতিপুর্বেই ৩ল্লেখ করা হয়েছে যে এইস রা হাতির ইবন আবু বাল৩াআর চিঠি
বহন করেছিল ৷ এবং হয়তো তার অপরাধ ক্ষমা করা হয়েছিল ৷ অথবা হতে পারে সে পালিয়ে
গিয়েছিল ৷ তারপরে তাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ পরে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর নিকটত
জন্যে নিরাপত্তা প্রার্থনা করা হয় ৷ তিনি৩ তাকে নিরাপত্তা দেন ৷ থলীফা উমর (রা) এর সময় পর্যন্ত
১ সুহায়লী বলেন৪ কারও মতে তার নাম ছিল হিলাল ৷ কারও মতে তার ভাইয়ের নাম হিলাল এবং দুই
ভাইকে এক সংগে খাতলান বলা হত ৷
২ আসাহ্হুস সিয়ারে এ নামটি হুয়ায়রিছ ইবন নুকায়দ-নুকায়য নয় ৷-সম্পাদক
মে জীবিত থাকে ৷ ঘটনাক্রমে এক ব্যক্তির ঘোড়৷ ব পদতলে দলিত ৩হয়ে সে মারা যায় ৷ সুহায়লী
বলেছেনং ইবন খাত ৷লের গায়িকা দাসী ফ ব ৷নী ১ ও পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করে ৷ ইবন
ইসহ৷ ৷ক বলেনং : ইকরামা ইবন আবু জাহ্ল ইয়ামানে পালিয়ে যায় ৷ তার শ্রী উম্মু হাকিম বিনৃত
হারিছ ইবন হিশাম ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ তিনি তার জন্যে রাসুলুল্লাহ (সা ) এর নিকট নিরাপত্তার
আবেদন জানান ৷ আবেদন মঞ্জুব হলে স্বামীর ঘোজে তিনি ইয়ামানে গিয়ে তাকে রাসুলুল্লাহ
(সা) এর কাছে নিয়ে আসেন ৷
তখন ইকরামাও ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ বায়হাকী — — — আবুতাহিব মাসআব (রা)
সুত্রে বংনাি করেন : মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা) চারজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা ব্যতীত
অন্যান্য সকলের জন্যে নিরাপত্তা প্রদান করেন ৷ ঐ ছয় ব্যক্তি সম্পর্কে তিনি ঘোষণা দেন যে,
কা’বার গিলাফ জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থায় পেলেও ওদেরকে হত্যা করবে ৷ পুরুষ চারজন হল —
ইকরামা ইবন আবু জাহ্ল, আবদুল্লাহ ইবন খাত ৷,ল মিক্য়াস ইব -ব সুবাব ও আবদুল্লাহ ইবন সা দ
ইবন আবু স ৷রাহ এর মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন খাতালকে কা ৷রন্ ৷গি ৷লা ৷ফ ধরে থাকা ৷অবস্থায় পা ওয়া
যায় ৷ তাকে দেখে সাঈদ ইবন হুরায়ছ এবং আমার ইবন ইয়৷ সির (রা) দৌড়ে অগ্রসর হন ৷ সা ৷ঈদ
বয়সে অপেক্ষাকৃত যুবক হওয়ায় আম্মারকে পিছে ফেলে আগে পৌছে যান এবং সেখানেই তাকে
হত্যা করেন ৷ মিক্য়াসকে মুসলমানগণ বাজারের মধ্যে পেয়ে সেখানেই তাকে হত্যা করেন ৷
ইকরামা মক্কা থেকে পালিয়ে যান ৷ সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জন্যে তিনি নৌকায় আরোহণ করেন ৷
কিছুদুর অগ্রসর হলে সমুদ্রে ভীষণ ঝড় ওঠে ৷ তখন নৌকায় মাঝি আরোহীদেরকে জানলে,
তোমরা দেব-দেবীর প্রভাব থেকে অম্ভরকে মুক্ত করে থীঢি মনে এক আল্লাহকে ডাক ৷ কেননা,
তোমাদের ওসব দেব-দেবী এখানে কোন কাজেই আসবে না ৷ তখন ইকরামা বললে৷ : আল্লাহর
কসম ! সমুদ্রে যদি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মুক্তি দিতে না পারে তা হলে স্থলেও তিনি ছাড়া অন্য
কেউ মুক্তি দিতে পারবে না ৷ তারপরে তিনি দু’আ করলেন — হে আল্লাহু ! আমি আপনার নিকট
এই অংপীকার করছি যে, এই বিপদ থেকে যদি আপনি আমাকে যুক্তি দেন, তবে আমি
মুহাম্মাদের কাছে গিয়ে তীর হাতে নিজেকে সােপর্দ করবো ৷ আমি অবশ্যই তাকে দয়ালু ও
ক্ষমাশীল হিসেবে পাব ৷ এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করেন ৷
আবদুল্লাহ ইবন সাদ ইবন আবু সারাহ্ হযরত উছমান ইবন আফ্ফানের নিকট আত্মগােপন করে
থাকে ৷ পরে রাসুলুল্লাহ (সা) যখন ঈমড়ানের উপর বায়আত গ্রহণ করার জন্যে লোকদের আহ্বান
করেন তখন হযরত উছমান আবদুল্লাহ ইবন সাদকে সাথে এনে নবী (সা) এর সামনে উপস্থিত
হন এবং তাকে বায়আত করার আবেদন জানান ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) চক্ষু তুলে তার দিকে তাকান
আবার চক্ষু ফিরিয়ে নেন ৷ এভাবে তিনবার করেন , কিভু৩৷ার বায়আত নিলেন না ৷ তিনবার
তাকাবার পর তাকে বায়আত করান ৷ এরপর সাহাবাদের সম্বোধন করে বলেন : তোমাদের মধ্যে
কি এমন একজন বিচক্ষণ লোক নেই, যে আমাকে বায়আত করা হতে বিরত থাকতে দেখে
তাকে হত্যা করে দিতঃ সাহাবাগণ বললেন : ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! আপনার মনের কথা আমরা কি
করে বুঝবাে, আমাদের প্রতি আপনি চোখ দিয়ে একটু ইশারা করলেন না কেন ? তিনি বললেন,
১ আসাহহুসৃ সিয়রে এ নামটি কারতানা এবং অপর গায়িকাটির নাম কুরায়বা বলা হয়েছে ৷ দ্র আসাহ্হুস
সিয়ার পৃ ২৬৫ জালালাবাদী
৬৫
নবীর জন্যে খিয়ানতকারী চোখ থাকা বাঞ্চুনীয় নয় ৷ আবুদাউদ ও নাসাঈ এ হাদীছটি আহমদ ইবন
মুফাযযাল সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম বায়হাকী আবু আবদুল্লাহ হাফিয আনাস
ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণনা করেন : মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) চার ব্যক্তি ব্যতীত
অন্য সকলের জন্যে নিরাপত্তা ঘোষণা করেন ৷ চারজন হল আবদুল উঘৃযা ইবন খাতাল, মিক্য়াস
ইবন সুবাবা, আবদুল্লাহ ইবন সাদ ইবন আবু সারাহ্ এবং উম্মে সারা ৷ আবদুল উঘৃযা ইবন
খাতালকে কা’বার গিলাফ ধরে থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয় ৷ আবদুল্লাহ ইবন সাদ ইবন আবু
সারাহ্কে দেখামাত্র হত্যা করার জন্যে এক ব্যক্তি মানত (প্রনিজ্ঞা ) করে ৷ আবদুল্লাহ ছিল উছমান
ইবন আফ্ফানের দুধ তা ৷ই ৷ তিনি৩ার পক্ষে সুপারিশ করার জন্যে তাকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর
দরবারে নিয়ে আসেন ৷ তাকে আসতে দেখে ঐ আনসারী ৩রবারি নিয়ে রেবিয়ে আসলেন ৷ কিন্তু
তিনি এসে দেখলেন যে, আবদুল্লাহ রাসুলের মজলিসে বসে পড়েছে ৷ এ অবস্থায় আনসারী
সংশয়ে পড়ে যায় এবং অগ্রসর হতে ইতস্তত৷ বোধ করে ৷ এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) হাত
বাড়ালে সে বায়আত হয়ে যায় ৷ তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) আনসারীকে বললেন, তুমি তোমার
মানত পুরণ করবে বলে আমি অপেক্ষা করছিলাম ৷ তিনি বললেনং ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! আমি তো
দ্বিধাগ্নস্ত ছিলাম, আপনি আমাকে একটু ইংগিত করলেন না কেন ? তিনি বললেন, ইংগিত করা
নবীর জন্যে শোভা পায় না ৷ মিক্য়াস ইবন সুবাবা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সে একজন
মুসলমানকে হত্যা করে মুরতড়াদ হয়ে যায় ৷ উম্মু সারা ছিল কুরায়শ গোত্রের দাসী ৷ সে নবী করীম
সা-) এর নিকট এসে তার অভাবের কথা জানালে তিনিও তাকে সাহায্য স্বরুপ কিছু প্রদান করেন ৷
ফিরে যাওয়ার সময় এক লোক মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠি তার কাছে দেয় ৷ এরপর
বায়হাকী হা৩ ৷তিব ইবন আবু বালত৷ ৷আর ঘটনা বর্ণনা করেন ৷ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক — ইবন
হাঘৃম থেকে বর্ণনা করেন, বনু মুস৩ ৩ালিকের যুদ্ধে মিক্য়াস ইবন সুবাবা র ভাই হিশামকে মুশরিক
মনে করে জনৈক মুসলমান হত্যা করে ৷ এ ঘটনার পর মিক্য়াস নিজেকে মুসলমান হিসাবে
প্রকাশ করে ভাইয়ের রক্তপণ আদায়ের জন্যে এগিয়ে আসে ৷ রক্তপণ গ্রহণ করার পর সে তার
ভাইয়ের হত্যাকারীকে হত্যা করে এবং পুনরায় মুশরিক হয়ে মক্কায় চলে যায় ৷ মক্কা বিজয়ের দিন
তাকে হত্যার ঘোষণা দিলে স৷ ৷ফ৷ ও মারওয়৷ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী জায়গায় তাকে হত্যা করা হয় ৷
ইবন ইসহাক ও বায়হাকী উল্লেখ করেছেন যে, মিক্য়াস তার ভাইয়ের হত্যাক৷ ৷রীকে হত্যা করার
সময় নিম্নোক্ত কবি ৷আবৃত্তি করছিল —
অর্থ : যে ব্যক্তি দুর প্রান্তরে গিয়ে রাত্রি যাপন করেছে, তার হৃদয় প্রশাস্তি লাভ করেছে তখন,
যখন তার পােশাক-পরিচ্ছদ অহৎকারীদের রক্তে রঞ্জিভ হয়েছে ৷
তাকে হত্যা করার পুর্ব পর্যন্ত আমার অন্তর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন ছিল, নিজেকে তিরস্কৃত মনে
হচ্ছিল এবং শয্যা গ্রহণ পর্যন্ত আমি ভুলে বসেছিলাম ৷
আমি আমার ভাইয়ের বিনিময়ে বনু ফিহ্রের একজনকে হত্যা করেছি এবং বনু নাজ্জারের
উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সর্দারদের থেকে রক্তপণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছি ৷
এ হত্যা-প্রতিশোধ দ্বারা আমি আমার মানত পুরণ করেছি, সম্পদ লাভ করেছি এবং সর্বাগ্রে
মুর্তি দেবতার কাছে প্রত্যাবর্তন করেছি ৷
আমি বলি, কারও কারও মতে যে দুজন গায়িকা কে হত আর নির্দেশ দেওয়া হয় তারা ছিল এই
মিক্য়াস ইবন সুবাবারই দাসী ৷ আর সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের ম ধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করা হয়
মিকইয়াসের চাচাত ভাইকে ৷ কোন কোন লেখক বলেছেন, ইবন খা৩ালকে হত্যা করেছিলেন
যুবায়র ইবন আওয়াম (রা) ৷ ইবন ইসহাক বলেন, সাঈদ ইবন আবু :িত্ত্বণদ আমার নিকট আকীল
ইবন আবৃত তালিবের গোলাম আবু মুবৃরা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আবু তালিবের কন্যা উম্মু হানী
বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন মক্কার উচু এলাকায় অবতরণ করেন, তখন মাখযুম গোত্রের আমার
দেবর সম্পর্কীয় দুব্যক্তি পালিয়ে আমার নিকট চলে আসে ৷ ইবন হিশাম বলেন, ঐ দু’ ব্যক্তির
নাম হারিছ ইবন হিশাম ও যুহায়র ইবন আবু উমাইয়া ইবন মুপীরা ৷ ইবন ইসহাক বলেন, উম্মু
হানী ছিলেন মাখযুম গোত্রের হুবায়রা ইবন আবু ওহবের শ্রী ৷ তিনি বলেন, এমন সময় আমার ভাই
আলী ইবন আবৃত তালিব আমার ঘরে আগমন করেন ৷৩ তাদের দু’জনকে দেখেই তিনি বলে
উঠলেন, আল্লাহর কসম ! আমি এদেরকে হত্যা করবই ৷ তখন আমি তাদেরকে আমার ঘরে
আবদ্ধ করে দরজা বন্ধ করে দিলাম ৷৩ তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট মক্কা র উচু ভুমিতে ছুটে
গেলাম ৷ আমি লক্ষ্য করলাম, তখন তিনি এমন একটি মটকা থেকে পানি নিয়ে গোসল করছেন,
যাতে আটার চিহ্ন লেগে ছিল এবং তার কন্যা ফাতিমা তখন তাকে কাপড় দিয়ে আড়াল করে
রেখেছেন ৷ গোসল শেষ করে তিনি কা পড় পরলেন ৷ তারপর আাট রাকআত চাশতেব নামায
আদায় করলেন ৷ তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেনষ্কাগতম হে উম্মু হানী কী মনে করে
আসলে ? তখন আমি তাকে ঐ দু ব্যক্তি ও আলীর সংবাদ জানালাম ৷ শুনে তিনি বললেন, তুমি
যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম , তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ আমরাও তাকে
নিরাপত্তা দিলাম ৷ আমরা ওদেরকে হত্যা করবো না ৷ ইমাম বুখারী বলেন, আমার নিকট হাদীছ
বর্ণনা করেছেন আবুল ওলীদ ইবন আবু লায়লা সুত্রে ৷ ইবন আবু লায়লা বলেন, রাসুলুল্লাহ্
(না)-কে চাশতের নামায পড়তে দেখেছেন এ কথা একমাত্র উম্মু হানী ব্যতীত আর কেউ
আমাদের নিকট বর্ণনা করেন নি ৷ তিনি মক্কা বিজয় যুদ্ধের উল্লেখ প্ৰসংগে বলেন : নবী করীম
(সা)৩া তার ঘরে গোসল সম্পন্ন করে আট রাকআত নামায পড়েন ৷ উন্মু হানী আরও বলেন, তিনি এ
নামায এতো সংক্ষেপে পড়লেন যেমনটি আমি আর কখনও দেখিনি ৷ তবে রুকু সিজদা
যথারীতি আদায় করেছেন ৷ সহীহ্ মুসলিমে (আকীলের গোলাম) আবু মুবৃরা সুত্রে অনুরুপ
বর্ণনা রয়েছে ৷ তবে তাতে আছে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার গোসল ও চাশতের নামায আদায়ের
পুর্বেই তাদেরকে নিরাপত্তা দানের ঘোষণা দেন ৷৩ তাকে আশ্রয় দিলাম ৷
মুসলিমের আর একটি বর্থাংায় আছে যে, উম্মু হানী রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে যখন যান,
তখন তিনি গোসলরত ছিলেন এবং তার কন্যা ফাতিমা একখানা কাপড় আড় করে পর্দা করে
রেখেছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) জিজ্ঞেস করলেন, এ আগভুক কে ? উত্তরে ফাতিমা জানালেন-
উম্মু হানী ৷ তিনি বললেন, উন্মু হানীকে স্বাগতম ৷ তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আমি
দুজন পুরুষকে আশ্রয় দিয়েছি কিন্তু আলী ইবন আবু তালিবের মায়ের পুত্র (আলী) তাদেরকে হত্যা
করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে উম্মু হানী ! তুমি যাদেরকে আশ্রয়
দিয়েছো ৷ আমরাও তাদেরকে আশ্রয় দিলাম ৷ উম্মু হানী বলেন, এরপর তিনি আট রাকআত নামায
পড়লেন ৷ আর এটা ছিল চাশতের সময় ৷ এ কারণে বহু সংখ্যক আলিম মনে করেন যে, এ
নামায ছিল চাশতের নামায ৷ কিন্তু অন্যান্য আলিমগণ বলেন, এটা ছিল বিজয়ের নামায ৷ এ
ফিরিয়েছেন ৷ এ বর্ণনাটি সুহড়ায়লীসহ ঐসব আলিমদের মতের বিরোধী যারা বিজয়ের নামায এবইি
সালামে আট রাকআত পড়ার কথা বলেন ৷ বর্ণিত আছে, সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস পারস্য
সাম্রাজ্যের মাদায়েন শহর জয় করার পর কিসরার রাজপ্রাসাদে আট রাকআত নামায পড়েছিলেন
এবং প্রতি দৃ’রাকআতের পর সালাম ফিরিয়েছিলেন ৷ সমস্ত প্রশংসা আল্পাহ্রই ৷
ইবন ইসহাক বলেন : মুহাম্মাদ ইবন জাফর সাফিয়্যা বিদ্ধৃর্তেশায়বা সুত্রে বর্ণিত ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কায় অবতরণের পর যখন লোকজনের মধ্যে স্বস্তির ভাব ফিরে আসে তখন তিনি
নিজ অবস্থান থেকে বের হয়ে বায়তুল্লায় আসেন এবং বাহনের উপর বসা অবস্থায়ই সাতবার
তাওয়াফ করেন ৷ তাওয়াফকালে তিনি তীর হাতের ছড়ি দ্বারা বায়তুল্লাহ্র রুক্ন স্পর্শ করে চুম্বনের
কাজ সমাধা করেন ৷ তাওয়াফ শেষে তিনি উছমান ইবন তালহাকে ডেকে তার নিকট থেকে
কাবার চাবি গ্রহণ করেন ৷ কা’বার দরজা খোলা হলে তিনি তাতে প্রবেশ করেই একটি কাষ্ঠ
নির্মিত কবুতর মুর্তি দেখতে পান ৷ তিনি নিজ হাতে তা ভেঙ্গে ছুড়ে ফেলে দেন ৷ তারপর কাবার
দরজায় এসে র্দাড়ান ৷ ইতোমধ্যে তার আগমনে মসজিদে প্রচুর লোকের সমাবেশ ঘটে ৷ মুসা
ইবন উকবা বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) দৃ’বার সিজদা করে যমযম কুপের কাছে যান ৷
সেখানে তিনি পানি আনিয়ে পান করেন ও উয়ু সম্পন্ন করেন ৷ সাহাবীগণ তার উয়ুর ব্যবহৃত পানির
কিছু অংশ বরকত হিসেবে লওয়ার জন্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন ৷ মুশরিকরা এ দৃশ্য দেখে
বিস্মিত হয়ে বলাবলি করছিল আমরা এমন একজন সম্রাট জীবনে কখনও দেখিনি বা তার কথা
শুনিনি যাকে তার ভক্তরা এত ভক্তি করে ৷ তিনি আজ বায়তৃল্লাহর সংলগ্ন নিজ জায়গায় বেশ
কিছুক্ষণ অবস্থান করলেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আমার নিকট জনৈক আলিম বলেন, তারপর
রাসুলুল্লাহ্ (সা) কা’বার দরজায় দাড়িয়ে নিম্নরুপ ভাষণ দেন
অর্থাৎ : এক আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই ৷
তিনি একক, তার কোন শরীক নেই ৷
তিনি তার ওয়াদা পুরণ করেছেন, তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন ৷ তিনি একাই সকল
বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন ৷
জেনে রেখো ৷ জাহিলিয়াত যুগের সকল আভিজ্যাতরে অহংকার, রক্ত বা সম্পদের
প্রতিশোধ দাবি আমার এ দৃপায়ের নীচে আজ দলিত ৷
তবে বায়তুল্লাহ্র সেবা ও হাজীদের পানি পান করানোর ব্যবস্থাপনা এর ব্যতিক্রম ৷
জেনে রেখো ! ভুলক্রমে হত্যার বিষয়টা ছড়ি অথবা লাঠি দ্বারা ইচ্ছা কৃত হত্যার অনুরুপ ৷
এর জন্যে গুরুতর রক্তপণ দিতে হবে-
অর্থাৎ — একশ উট, যার মধ্যে চল্লিশটি থাকবে গর্ভবতী ৷
হে কুরায়শ সম্প্রদায় ! আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের থেকে জাহিলিয়াত যুগের অহমিকা ও
বৎশ-গৌববের অবসান ঘটিয়েছেন ৷
মানুষ মাত্রই আদম থেকে সৃষ্ট ৷
আর আদম সৃষ্ট মাটি থেকে ৷
তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন ও
অর্থাৎ “হে মানুষ ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী ’থেকে ৷ পরে
তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত
হতে পার ৷ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই আল্লাহ্র নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিকতর
মুত্তাকি ৷ আল্লাহ্ সবকিছু জানেন ৷ সমস্ত খবর রাখেন ৷” (৪ ৯ হুজুরাত : ১৩) ৷
তারপর তিনি বললেন, হে কুরায়শ সম্প্রদায় ! ণ্ন্নুৰু ণ্ া;৷১ প্রু১ ! ;এে: — তোমাদের
ব্যাপারে আমি কী আচরণ করবো বলে তোমরা মনে কর ? তারা বললো:
উত্তম ধারণা রাখি, কেননা, আপনি একজন মহান ভাই ও মহৎ
ভইিপো ৷ তখন তিনি বললেন ১ ! যাও, তোমরা আজ মুক্ত স্বাধীন ৷
তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) মসজিদে গিয়ে বসলেন ৷ তখন আলী ইবন আবু তালিব কা’বা ঘরের চাবি
হাতে করে তার সামনে দাড়িয়ে বললেন : ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! বায়তৃল্লাহ্র সেবায়েতের দায়িত্ব এবং
হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব দুটোই আমাকে দান করুন ৷ আল্লাহ্ আপনার প্রতি রহমত
বর্ষণ করুন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন বললেন : উছমান ইবন তালহা কোথায় ? তাকে ডেকে আনা
হলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : এই লও তোমার চাবি, হে উছমান ! আজকের দিন ইচ্ছে সদাচার
ও প্রতিশ্রুতি পালনের দিন ৷” ইমাম আহমদ সুফিয়ান ইবন উমর (র) সুত্রে বর্ণনা করেন, মক্কা বিজয়ের দিন
রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) বায়তুল্লাহ্ব সিড়িতে র্দাড়িয়ে নিম্নোক্ত খুতবা পেশ করেন :
“প্রশংসা সেই আল্লাহ্ৱ
যিনি তীর ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছেন,
তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সমস্ত বাহিনীকে পর্বুদস্ত করেছেন ৷
জেনে রেখো ! ছড়ি বা লাঠি দ্বারা অনিচ্ছাকৃত হত্যড়ায় একশ’ উট দিতে হবে ৷ তার অন্য
বংনািয় গুরুতর রক্তপণের কথা আছে ৷ যার মধ্যে চল্লিশটি হবে গর্ভবডী ৷
জেনে রেখো ! জাহিলী যুগের সকল অহমিকা ও রক্তের প্রতিশোধের দাবী (আর এক বর্ণনা
মতে মালের দাবী) আমার এ দু পায়ের নীচে দলিত ৷
তবে হাজীদের পানি পান করান ও বায়তুল্লাহ্র সেবা এ দুটি ব্যাপার ভিন্ন ৷ কেননা, এ দুটি
বিষয়ের দায়িত্ব যাদের হাতে ছিল তাদেরকেই বহাল রাখা হয়েছে ৷ আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবন
মাজা আলী ইবন যায়দ ইবন উমর (রা) সুত্রে এ হাদীছটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইবন
হিশাম বলেন : কতিপয় আলিম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্
(সা) বায়তুল্লায় প্রবেশ করে তার মধ্যে ফেরেশতার ও অন্যান্য কিছু জিনিসের ছবি দেখতে পান ৷
তিনি আরও দেখতে পান যে, ইবরাহীম (আ)-এব একটি ছবি, হাতে তীর নিয়ে তিনি ভাগ্য নির্ণয়
করছেন ৷ তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্ ওদেরকে ধ্বংস করুন ! ওরা আমাদের মহান নেতাকে তীর
দ্বারা ভগ্যে নির্ণয়কারী বানিয়ে ছেড়েছে ৷ অথচ ঐ সব ভাগ্য নির্ণয়ের তীরের সাথে ইবরাহীম
(আ)-এর কী সম্পর্ক ?
“ইবরাহীম তো য়াহ্রদী বা নাসারা ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলমান ৷ তিনি
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না ৷” (৩ আলে ইমরান : ৬৭) ৷
এরপর তিনি ছবিগুলো মুছে ফেলার নির্দেশ দেন এবং সেমতে সেগুলো মুছে ফেলা হয় ৷
ইমাম আহমদ বলেন : আমার নিকট সুলায়মান জাবির সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন ও
তারা ঘরের অভ্যন্তরে কতিপয় ছবি ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) উমর (বা)-কে সেগুলো মুছে ফেলতে
নির্দেশ দেন ৷ তখন উমর (রা) একখানা কাপড় নিয়ে সেগুলো মুছে দেন ৷ তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সা)
কা ’বা ঘরে প্রবেশ করেন ৷ তখন ঘরের মধ্যে আর কোন ছবি অবশিষ্ট ছিল না ৷ ইমাম বৃথারী
সাদকা ইবন ফযল আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কায় প্রবেশ করেন ৷ তখন বড়ায়তুল্লাহ্র চারপাশ ঘিরে তিনশ’ ষাটটি মুর্তি স্থাপিত
ছিল ৷ তিনি হাতে একটি লাঠি নিয়ে মুর্তিগুলােকে আঘাত করতে থাকলেন, আর মুখে বলতে
লাপলেন 🙂 “হক এসেছে বাতিল দুরীভুত হয়েছে ৷ ” হক
এসেছে বাতিলের আর উদ্ভব বা পুনরুদ্ভর ঘটবে না ৷ ইমাম মুসলিম এ হাদীছটি ইবন উআয়না
সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷ বায়হাকী ইবন ইসহাক সুত্রে আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা)
মক্কায় প্রবেশ করেন ৷ তখন কা’বা গৃহে তিনশ’ প্রতিমা স্থাপিত ছিল ৷ তিনি হাতে একটি লাঠি
নিয়ে এক একটি প্রতিমার কাছে যেতে থাকেন, আর অমনি সে প্রতিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়তে
থাকে ৷ এভাবে সব কটি প্রতিমা তিনি অতিক্রম করেন ৷ এরপর বায়হাকী সুওয়ায়দ ইবন
উমর সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন ৷ তাতে অতিরিক্ত এতটুকু আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) লাঠি দ্বারা
কোন প্রতিমাকে স্পর্শ করেননি ; বরং ইংগিত করতেই প্রতিটি প্রতিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ৷
তারপর বায়হাকী বলেন, এ হাদীছের সনদটি যদিও দুর্বল, কিভু পুর্বের, হাদীছের সমর্থনে তা
শক্তিশালী হয়েছে ৷ হাম্বল ইবন ইসহাক ইবন আবযা সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
যখন মক্কা জয় করেন তখন মাথার চুল কুকড়ান জনৈক হাবশী মহিলা মুখে রং <মখে ধ্বংস
কামনা করতে করতে আগমন করে ৷ তাকে দেখে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : ঐ যে বিলাপকারিণী
মহিলা যে এ কারণে হতাশ হয়ে পড়েছে যে, তোমাদের এ শহরে আর কখনও পুজিত হবে না ৷
ইবন হিশাম বলেন : ইবন শিহাব যুহ্রী উবড়ায়দুল্লাহ্ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস সুত্রে
আমার জনৈক আস্থাভাজন আলিম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্
(সা) তার বাহনে চড়ে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং বাহনের উপর থেকে বড়ায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ
করেন ৷ তখন বায়তৃল্পাহর চারপাশে শীসা র্বীধানাে অনেকগুলো মুর্তি ছিল ৷ নবী করীম (সা) তার
হাতের ছড়ি দ্বারা মুর্তিগুলোর দিকে ইং গত করে যাচ্ছিলেন এবং মুখে বলছিলেন এ সত্য সমাগত, মিথ্যা বিলুপ্ত, মিথ্যা বিলুপ্তই
” যেসব মুর্ডিং মুখমন্ডলের দিকে তিনি ইংগিত করছিলেন সেগুলো চিৎ হয়ে পড়ছিল ৷ আর
যেগুলোর পশ্চাৎভাগের দিকে ইংগিত করছিলেন সেগুলো উপুড় হয়ে পড়ছিল ৷ এভাবে সব কটি
মুর্তিই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ৷ তামীম ইবন আসাদ আল-খুযাঈ এ প্রসৎগে তার কবিতায় বলেন :
“মুর্ডিং প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কেবল তারই থাকতে পারে, যে তাদের কাছে পুরস্কার ও শাস্তির
আশা করে ৷ ”
সহীহ্ মুসলিমে সিনান ইবন ফাররুখ আবু হুরায়রা সুত্রে বর্ণিত ৷ মক্কা বিজয় সম্পর্কিয়
হাদীছে তিনি বর্ণনা করেন : এরপর রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) হাজরে আসওদের নিকটবর্তী হয়ে
তাকে চুম্বন করলেন এবং বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করলেন ৷ এরপর তিনি বায়তুল্লাহ্র পার্শে রক্ষিত
একটি মুর্তির কাছে এলেন, যাকে তারা উপাসনা করতো ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর হাতে একটি ধনুক
ছিল ৷ তিনি তার এক প্রান্ত ধারণ করেছিলেন ৷ মুর্তিটির কাছে এসে তিনি ধনুকের দ্বারা তার চোখ
গৌচাতে লাপলেন এবং বললেন :
“সত্য আগমন করেছে, মিথ্যা বিদায় নিয়েছে ৷ মিথ্যার বিদায় অবধারিত ৷ ”
বায়তুল্লাহ্র তাওয়ড়াফ শেষে তিনি সাফা পাহাড়ের দিকে গমন করলেন ৷ এরপর তাতে
আরোহণ করে বায়তৃল্লাহ্র দিকে তড়াকালেন এবং দৃহাত উচু করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং
যা প্রার্থনা করার ছিল তিনি তা প্রার্থনা করলেন ৷ বুখারী বলেন : আমার নিকট ইসহাক ইবন
মানসুর ইকরামা সুত্রে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কায়
আগমন করে তাৎক্ষণিকভাবে বায়তৃল্লায় প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকেন কেননা, বায়তুল্লাহ্র
মধ্যে তখন অনেকগুলো মুর্তি ছিল ৷ তিনি এগুলোকে বের করে ফেলার আদেশ দেন ৷ ফলে
মুর্তিগুলো বের করা হল ৷ বইিকুত মুর্তির সাথে দেখা গেল ইব্রাহীম (আ) ও ইসমাঈল (আ)-এর
মুর্তিও বেরিয়ে এসেছে ৷ আর তাদের উভয়ের হাতে রয়েছে ভাগ্য গণনার কয়েকটি তীর ৷ তখন
রাসুলুল্লাহ্ (সা ) বললেন : আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুন ৷ তারা অবশ্যই জানতে৷ যে , ইব্রাহীম
(আ) ও ইসমাঈল (আ) কখনও তীর দিয়ে ভাগ্য গণনার কাজ করেননি ৷ এরপর তিনি বায়তুল্লাহ্র
ভিতরে প্রবেশ করেন এৎ প্রতেকে কোণে গিয়ে আল্লাহ আকবার ধ্বনি দেন ৷ কিছু সময় পর তিনি
বেরিয়ে আসেন এবং ঘরের ভিতরে নামায পড়েননি ৷ এ হাদীছটি শুধু বুখারীতে আছে, মুসলিমে
নেই ৷ ইমাম আহমদ বলেন : আমার নিকট বর্ণনা করেছেন আবদুস সামাদ ৷ আব্বাস সুত্রে যে ,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) কা’বা ঘরে প্রবেশ করেন ৷ তখন তাতে ছিল ছয়টি স্তম্ভ ৷ তিনি প্রতিটি স্তন্তের কাছে
গিয়ে র্দাড়ান এবং দুআ করেন ; কিন্তু কা’বা ঘরের ভিতরে নামায পড়েননি ৷ ইমাম ঘুসলিমও এ
হাদীছ শায়বান ইবন ফাররুখ, হাম্মাম ইবন ইয়াহ্য়া আওষী ও আত৷ থেকে সনদ পরম্পরায় অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম আহমদ বলেন : আমার নিকট হারুন ইবন মা’রুফ ইবন আব্বাস
সুত্রে বর্ণনা করেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) বায়তৃল্লায় প্রবেশ করে ইব্রাহীম (আ) ও মারয়াম (আ ) এর
ছবি দেখতে পান ৷ এ দৃশ্য দেখে তিনি বলেন : তারা তো শুনেছে যে, ফেরেশতাগণ ঐ গৃহে
প্রবেশ করে না ৷ যে গৃহে ছবি থাকে ৷ অথচ নবী ইব্রাহীম (আ)-এর এই ছবি ৷ আর ভীরের
সাহায্যে ভাগ্য নির্ণয়ের তো কোন প্ৰশ্নই উঠে না ৷ বুখারী ও নাসাঈ ইবন ওহব সুত্রে এ হাদীছটি
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম আহমদ বলেন : আমার নিকট আবদুর রায্যাক ইবন
আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বায়তৃল্পায় প্রবেশ করে ভিতরে বিভিন্ন প্রান্তে
দাড়িয়ে দু’আ করে ঘরের বাইরে এসে দু রাকআত নামায আদায় করেন ৷ ইমাম আহমদ একাই
এ হাদীছটি বংনাি করেছেন ৷ ইমাম আহমদ বলেন : ইসমাঈল ইবন উমার সনদে বর্ণনা
করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (না) বায়তুল্লাহ্র অভ্যন্তরে দু রাকআত নামায পড়েছেন ৷ বুখারী বলেন :
লায়ছ আবদুল্লাহ ইবন উমর সুত্রে বর্ণিত আছে যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা)
সওয়ারীতে আরোহণ করে এবং উসামা ইবন মায়দকে নিজের পিছনে বসিয়ে মক্কা নগরীর উচু
এলাকার দিক থেকে মক্কায় প্রবেশ করেন ৷ তার সংগে ছিলেন বায়তুল্লাহ্র চাবি রক্ষক উছমান
ইবন তালহা ৷ তিনি মসজিদে হারামের সামনে এসে সাওয়ারী থামালেন এবং কা’বার চাবি এনে
দরজা খোলার আদেশ করলেন ৷ দরজা খোলা হলে তিনি কা’বা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করেন ৷
তখন তার সংগে ছিলেন উসামা ইবন যায়দ, বিলাল এবং উছমান ইবন তালহা ৷ সেখানে তিনি
দিবসের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবস্থান করার পর বেরিয়ে আসেন ৷ তখন অন্যান্য লোকজন দ্রুত ছুটে
এলো কা’বার ভিতরে প্রবেশের জন্যে ৷ আবদুল্লাহ ইবন উমার সেখানে সর্বড়াগ্রে প্রবেশ করলেন ৷
তিনি বিলালকে দরজার পাশে দীড়ানো পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) কোন জায়গায়
নামায পড়েছেন ? তখন বিলাল তাকে তার নামায পড়ার জায়গাটি ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন ৷
আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা ) বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) কত রাকআত আদায় করেছেন, বিলালকে
আমি এ কথাটি জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম ৷ ইমাম আহমদ এ হাদীছটি হুশায়ম
ইবন উমার সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ
করেন ৷ তার সংগে ছিলেন ফযল ইবন আব্বাস, উসামা ইবন যায়দ, উছমান ইবন তালহা ও
বিলাল ৷ তখন বিলালকে আদেশ করলে তিনি দরজা টেনে বন্ধ করে দেন ৷ তারপর যতক্ষণ
আল্লাহর ইচ্ছা ছিল ততক্ষণ তিনি ভিতরে থাকার পর বেরিয়ে আসেন ৷ ইবন উমার বলেন :
এরপর তাদের মধ্যে বিলালের সাথে আমার সর্বপ্রথম সাক্ষাৎ হয় ৷ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম
রাসুলুল্লাহ্ (সা) কােনৃ জায়গায় দাড়িয়ে নামায আদায় করেছেন : তিনি আমাকে দেখিয়ে দিয়ে
বললেন এই দুই খুটির মাঝখানে ৷
আমি বলি, সহীহ্ বুখারী ও অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) কা’বড়ার
অভ্যন্তরে প্রাচীর পশ্চাতে রেখে দরােজার দিকে মুখ করে নামায আদায় করেছেন ৷ দুটি স্তম্ভ ছিল
ডান দিকে, একটি ছিল বা দিকে এবং পশ্চাৎ দিকে ছিল আরও তিনটি স্তম্ভ ৷ কাবা ঘর তখন ছয়টি
স্তম্ভের উপর স্থাপিত ছিল ৷ তার ও পশ্চিম পাশের দেওয়ালের মাঝে মাত্র তিন হাত পরিমাণ দুরত্ব
ছিল ৷ ইমাম আহমদ ইসমাঈল ইবন উমার (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বায়তুল্লায় দু রাকআত নামায আদায় করেছিলেন ৷ ইবন হিশাম বলেন : আমার নিকট কোন কোন
আলিম বর্ণনা করেছেন যে, মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ্ (সা) কা’বায় প্রবেশ করেন ৷ তখন তার
ৎগে ছিলেন বিলাল ৷ তিনি বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দেন ৷ আবু সৃফিয়ান ইবন হড়ারব,
আত্তাব ইবন উসায়দ ও হারিছ ইবন হিশাম তখন কা’বড়ার আৎগিনায় উপবিষ্ট ছিল ৷ আযান শুনে
আত্তাব বললো , আল্লাহ আমার পিতা উসায়দকে সম্মানিত করেছেন যে , তাকে এ জিনিস শুনতে
হয়নি ৷ কেননা, এ সব শুনলে তিনি ক্ষেপে যেতেন ৷ হারিছ ইবন হিশাম বললো, আল্লাহর কসম ৷
আমি যদি জানতে পারতাম যে, এ ব্যক্তি সঠিক পথে রয়েছে তবে আমি অবশ্যই তার অনুসরণ
করতাম ৷ আবু সুফিয়ান বললো, আমি এ সম্পর্কে মুখ খুলবাে না ৷ কেননা, আমি যদি কিছু বলি,
তবে এ কংকরগুলোই আমার এ সংবাদ (তাকে) পৌছে দেবে ৷ এমন সময় রাসুলুল্লাহ্ (সা)
তাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন : তোমরা যা যা বলেছ, তা সবই আমি জেনে গেছি ৷ তিনি
তাদেরকে সেসব কথা পুনরাবৃত্তি করে শুনিয়ে দেন ৷ হারিছ ও আত্তাব সহসা বলে উঠলো : ধ্
ব্৷ ৷ প্রু, এ;প্রু ৷ “আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহ্র রাসুল” ৷ আল্লাহর কসম ৷
আমাদের কাছে কেউ ছিল না যে, বলবো সে জেনে আপনাকে জানিয়ে দিয়েছে ৷ ইউনুস ইবন
বুকায়র বলেন : আমার পিতার নিকট জুবায়র ইবন মুত্ঈম বংশের জনৈক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন
শ্ যে , রাসুলুল্পাহ্ (সা) মক্কায় প্রবেশ করে বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দেন ৷ বিলাল তখন কাবা
ঘরের ছাদে উঠে নামাযের জন্যে আযান দিলেন আযান শুনে সাঈদ ইবন আস গোত্রের এক
৬৬ ———
ব্যক্তি বললাে, কা’বার ছাদে চড়ে এই কৃষ্ণাৎগের আযান শুনার পুর্বে মৃত্যু দিয়ে আল্লাহ সাঈদকে
সম্মানিত করেছেন ৷ আবদুর রাঘৃযাক — — — ইবন আবু মুলায়ক৷ সুত্রে বলেন : বিজয়ের দিন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি কা’বার ছাদে চড়ে আযান দেন ৷ তখন
কুরায়শ গোত্রের এক ব্যক্তি হারিছ ইবন হিশামকে বলে, দেখছেন না ! এই ক্রীতদাস কোথায়
উঠেছে ? হারিছ তাকে বললো, থাম ! আল্লাহ যদি তাকে অপসন্দ করেন তবে অচিরেই তার
পরিবত নযটাবেন ৷ ইউনুস ইবন বুক৷ য়র প্রমুখ বর্ণনা কারিগণ উরওয়া সুত্রে বলেন : বিজয়ের বছর
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বিলালকে আযান দিতে নির্দেশ দিলে তিনি কা’বার ছাদে উঠে আযান দেন ৷
মুশরিকদের মর্মপীড়া সৃষ্টিই ছিল এর উদ্দেশ্য ৷ মুহাম্মাদ ইবন সাদ আবু ইসহাক সুত্রে
বর্ণনা করেন : মক্কা বিজয়ের পর আবু সুফিয়ান ইবন হারব একাকী বসে ভাবছিল হায় ! যদি
মুহাম্মড়াদের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী সং গঠিত করতে পারতাম ? সে এই কথা মনে মনে ভাবছিল
অমনি রাসুলুল্লাহ্ (সা)ত তার দৃই কাধের মাঝে থাপ্পড় মেরে বললেলঃ তা হলে আল্লাহ তোমাকে
লাঞ্ছিত করে ছাড়তে তন ৷ আবু সুফিয়ান মাথা তুলে দেখলে৷ যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার শিয়রে
দন্ডায়মান ৷ খনত সে বললাে , আমি এর আগে বিশ্বা ৷স করতাম না যে, আপনি সত্য নবী ৷ বায়হাকী
আবুতা৷বদুল্লাহ হাফিয — ইবন আব্বাস সুত্রে ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন য, আবু
সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ্র পিছনে পিছনে লোক ছুটতে দেখে মনে মনে ভাবছিল যে, এ লোকটির
বিরুদ্ধে যদি একটি যুদ্ধ র্বাধা ৷তে পারতাম ! এ সময়ে আচম্বিতে ৩রাসুলুল্লাহ্ (সা) এসেই তার বুকে
এক থাপ্পড় যেয়ে বললেন, “তোমাকে তাহলে আল্লাহ লাঞ্ছিত ই করতেন ৷’ ’আবু সুফিয়ান
বললাে, আমি যা বাজে বকেছি সে জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই মাফ চাই ৷ এরপর বায়হাকী
ইবন খুযায়ম৷ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব সুত্রে বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয় করে
ঘুসলমানগণ নগরে প্রবেশ করার পর যখন রাতের আগমন হল, তখন রাতভর তারা তাকবীর ধ্বনি
ও কালেমার আওয়াজে চারিদিক মুখরিত করে রাখলেন ৷ এভাবে সকাল হয়ে গেল ৷ তখন আবু
সুফিয়ান শ্রী হিন্দকে ডেকে বললাে দেখনা, এ সবই আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হচ্ছে ৷ হিন্দ বললো,
হীা এ আল্লাহর পক্ষ থেকেই ৷ এরপর আবু সুফিয়ান অতি প্রত্যুষে উঠে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
নিকট গিয়ে উপস্থিত হল ৷ তাকে দেখে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : তুমি হিন্দকে বলেছিলে
“দেখনা শ্এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে হচ্ছে ৷ আর হিন্দ বলেছিল, হীা এ আল্লাহর পক্ষ থেকে ৷
তখন আবু সুফিয়ান বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহ্র বান্দা ও তার রাসুল ৷ সেই
আল্লাহ্র কসম, যার নামে কসম খাওয়া হয়, আমার এ কথা হিন্দ ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি
শুনেনি, ইমাম বুখারী ইসহাক মুজাহিদের সুত্রে বর্ণনা করেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন,
যে দিন আল্লাহ আকাশসমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যে দিন থেকেই তিনি মক্কা নগরীকে হারম
(সম্মানিত) করেছেন ৷ সুতরাং আল্লাহ্র সম্মান দেয়ার কারণে এর হুরমত কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণ্ন
থাকবে ৷ আম৷ ৷র পুর্বে তা কাংর৷ জন্যে হাল লাল ছিল৷ না এবং আমার পরেও তা কারো জন্যে হাল ৷লাল
করা হবে না ৷ কেবল এক দিনের সামান্য সময়ের জন্যে আমার জন্যে হালাল করা হয়েছিল ৷
এখানকার কোন শিকারকে তাড়ান যাবে না ৷ র্কাটাযুক্ত বৃক্ষ কর্তন করা যাবে না ৷ এখানকার ঘাস
কাটা যাবে না ৷ এখানে রাস্তায় পড়ে থাকা জিনিস উঠান যাবে না ; তবে হারান বিজ্ঞপ্তি দেয়ার
জন্যে উঠান যাবে ৷ একথা শুনে আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব বললেন, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! ইয্থির
ব্যতীত ? কেননা, ইয্খির ঘাস দাফনের কাজে ও ঘরের ছাউনিতে লাগে ৷ কিছুক্ষণ চুপ থাকার
পর রাসুলুল্লাহ্ (না) বললেন, হী৷ , ইয্খির ব্যতীত এটা হালাল ৷ ইবন জুরায়জ এ হাদীছটি
আবদুল করীম ইকরিমা ইবন আব্বাস সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ আবু হুরায়রা (রা) ও
রাসুলুল্লাহ্ (সা) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ প্রথম বর্ণনা মুরসাল এবং দ্বিতীয় বর্ণনা মুত্তাসিল ৷
মারা বলেন, মক্কা যুদ্ধের মাধ্যমে জয় হয়েছে তারা এই হাদীছ ও অনুরুপ অন্যান্য হাদীছ এবং
পুর্বোল্লিখিত খড়ানছামার ঘটনা থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেন ৷ এ ছাড়া মক্কা বিজয়ের দিন মুশরিক ও
মুসলমান মিলে বিশ জন লোক নিহত হয় ৷ এটা স্পষ্টভাবেই সংঘর্ষের প্রমাণবহ ৷ জমহুরে উলামা
এ মতই পোষণ করেন ৷ কিন্তু ইমাম শাফিঈর প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে মক্কা সন্ধির মাধ্যমে বিজিত হয় ৷
কেননা, মক্কার ভুমি সৈন্যদের মধ্যে বন্টন করা হয়নি ৷ তাছাড়া ৰিজরুয়ঃ রাত্রে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
ঘোষণা করেছিলেন : “যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে তবো নিরাপদ, মারা হারমে
অবস্থান নিয়ে তারা নিরাপদ এবং যারা নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখবে তারা নিরাপদ ৷ এ
বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ কিতাবুল আহকামে করা হবে ৷ ইনশা আল্লাহ্ ৷ ইমাম বুখারী
সাঈদ ইব ন শারজীল আবু শুরায়হ্ খুজাঈ সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ (মদীনায় ন্ণসক) আমর ইবন সাঈদ
যখন মক্কা অভিমুখে সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করছিলেন ৷ তখন আবু শুরায়হ র্তাকে বলেছিলেন, হে
আমাদের আমীর ! আমাকে একটু অনুমতি দিন, তা হলে আমি আপনাকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
একটি রাণী শুনাব যা তিনি মক্কা বিজয়ের পরের দিন বলেছিলেন ৷ সে রাণী আমার দু’কান শুনেছে,
আমার হৃদয় সংরক্ষণ করে রেখেছে এবং যখন তিনি বলছিলেন তখন আমার দু’চােখ র্তাকে
দেখেছে ৷ তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করেছেন ৷ তারপরে বলেছেন : আল্লাহ্ নিজেই
মক্কাকে হারম’ ঘোষণা করেছেন, কোন মানুষ তাকে হারম’ বানায়নি ৷ সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ
ও পরকালে বিশ্বাসী তার জন্যে সেখানে রক্তপাত ঘটান কিৎবা তথাকার গাছপালা কর্তন করা
অবৈধ ৷ যদি কেউ আল্লাহর রাসুলের লড়াই এর কথা বলে নিজের এ সুযোগ গ্রহণ করতে চায়,
তবে তোমরা তাকে বলে দিও আল্লাহ তীর রাসুলকে অনুমতি দিয়েছিলেন ৷ ভোমাদেরকে
অনুমতি দেননি ৷ আর আমাকেও অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এক দিনের মাত্র কিছু সময়ের জন্যে ৷
এবং সে দিলেই তা পুনরায় হারাম করে দেওয়া হয়েছে, যেমন আগের দিন হারাম ছিল ৷ উপস্থিত
লোকজন যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এ কথাটি পৌছিয়ে দেয় ৷
আবু শুরায়হ্ এর নিকট একদা জিজ্ঞেস করা হয় যে, আমর (এ বাণীটি শুনার পর) আপনাকে
কী বলেছিলেন ? তিনি বললেন, আমর আমাকে বলেছিলেন এ হাদীছ সম্পর্কে আমি তোমার
চাইতে অধিক অবগত ৷ হে আবু শুরায়হ্ ! হারম শরীফ কোন অপরাধীকে বা পলায়নকারী থুনীকে
কিৎরা জিযিয়৷ থেকে পলায়নকারীকে আশ্রয় দেয়না ৷ এ হাদীছটি বুখারী ও মুসলিম কুতায়বা লায়ছ
ইবন সাদ সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
ইবন ইসহাক উল্লেখ করেছেন যে, ইবনুল আছওপ নামক মক্কার এক ব্যক্তিকে খিরাশ ইবন
উমাইয়া হত্যা করে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, “হে খুযাআ গোত্রের লোকজন ! হত্যা
থেকে তোমাদের হাত গুটিয়ে ফেল ৷ খুনোখুনি তো অনেকই হয়েছে; কিন্তু এতে কোন ফায়দা
আসেনি ৷ তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ আমি তার রক্তপণ আদায় করে দেব ৷” ইবন
ইসহাক বলেন, আবদুর রহমান ইবন হারমালা আমার নিকট সাঈদ ইবনুল মুসাযিবে এর বরাতে
বর্ণনা করেছেন যে, খিরাশ ইবন উমাইয়ার ঘটনা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট পৌছলে তিনি
বলেছিলেন : খিরাশ বড়ই রক্তপিপাসৃ ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আমার নিকট সাঈদ ইবন আবু সাঈদ
মাকবেরী আবু শুরায়হ্ খুযাঈ সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আমর ইবন যুবায়র ১ তার ভাই আবদৃল্লোহ্
ইবন যুবায়রের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে যখন মক্কায় আসেন, তখন আমি তার নিকট উপস্থিত হয়ে
বললাম , শুনুন ভাই মক্কা বিজয়কালে আমরা রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে ছিলাম ৷ বিজয়ের পরের
দিন খুযাআ গোত্রের লোকজন হুযায়ল গোত্রের জনৈক মুশরিককে হত্যা করে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্
(সা) আমাদের মধ্যে দাড়িয়ে একটি ভাষণ দেন ৷ ভাষণে তিনি বলেন হে জনমওলী ! আল্লাহ্ যে
দিন জ্বালানি ও যমীন সৃষ্টি করেন যে দিনই তিনি মক্কড়াকে হারম’ ঘোষণা করেছেন ৷ সুতরাং
আল্লাহ কর্তৃক হারম’ ঘোষণার ফলে কিয়ড়ামত পর্যন্ত তার হুরমত বা সম্মান বলবত থাকবে ৷ তাই
যে লোক আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্যে এখানে রক্তপাত ঘটান কিৎবা
এখানকার গাছপালা কর্তন করা বৈধ নয় ৷ আমার পুর্বে কারও জনেব্ তা বৈধ করা হয়নি, আর
আমার পরে কারও জন্যে বৈধ করা হবে না ৷ আমার জন্যেও বৈধ নয় ; তবে এখানকার
অধিবাসীদের প্রতি ৫ক্রাধের কারণে এই সামান্য কিছু সময়ের জন্যে আমার জন্যে বৈধ করা
হয়েছে ৷ জেনে রেখো, বিগত দিনের ন্যায় এর হুরমত আবার ফিরে এসেছে ৷ তোমাদের মধ্যে
যারা উপস্থিত আছ তারা অনুপন্থিতদের নিকট তা পৌছিয়ে দেবে ৷ সুতরাং কেউ যদি
তােমাদেরকে বলে, আল্লাহর রাসুল তো এখানে লড়াই করেছেন, তাহল তোমরা বলে দেবে,
আল্লাহ তার রাসুলের জন্যে বৈধ করেছেন, তোমাদের জন্যে বৈধ করেননি ৷ হে থুযাআ সম্প্রদায় !
খুন-খারাবী থেকে সংযত হও ৷ খুন-খারাবী বহু হয়েছে; কিন্তু কােনই লাভ হয়নি ৷ তোমরা এক
ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, আমি নিজে এর রক্তপণ আদায় করে দেব ৷ আমার এ আদেশের পর কেউ
যদি কাউকে হত্যা করে, তবে নিহতের অভিভাবকগণ প্রতিশোধ গ্রহণের দু’টি পন্থার যে কোন
একটির সুযোগ নিতে পারবে ৷ যদি তারা চায় তবে কিসাস হিসেবে ঘাতককে হত্যা করতে
পারবে ৷ কিংবা চাইলে তার থেকে রক্তপণ গ্রহণ করতে পারবে ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঐ নিহত
ব্যক্তির রক্তপণ আদায় করেন যাকে থুযাআ গোত্রের লোকজন হত্যা করেছিল ৷ এসব বক্তব্য
শুনার পর আমর ইবন যুবায়র আবু শুরায়হ্কে বললো, ও বুড়ো ! তুমি যাও এখান থেকে ৷ মক্কার
হুরমত ও মর্যাদা সম্পর্কে আমরা তোমার চাইতে ভালই অবগত আছি ৷ মক্কার হুরমত কোন
রক্তপাতকারী, আনুগত্য বত্তনিকারী কিৎবা জিযিয়া দিতে অস্বীকারকারীকে শান্তি দিতে বা বা দেয়
না ৷ আবু শুরায়হ্ তখন জবাবে আমরকে বললেন, আমি সেদিন উপ ত ছিলাম, আর তুমি ছিলে
অনুপস্থিত ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, উপন্থিতরা অনুপন্থিতদের কাছে
এ কথা পৌছিয়ে দেবে ৷ আমি তাই তোমাকে সে কথা পৌছিয়ে দিলাম ৷ এখন তুমি কি করবে
সে সিদ্ধান্ত তোমার ৷
ইবন হিশাম বলেন, আমার নিকট এই বিবরণ পৌছেছে যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্
১ সুহায়লী বলেন, ইবন হিশাম নিজের ধারণা মতে এই নাম লিখেছেন ৷ আসলে তিনি আমর ইবন
যুবায়র ছিলেন না ৷ তিনি ছিলেন আমর ইবন সাঈদ ইবনুল আস ইবন উমাইয়া, তাকে আশদাক বলা
হত ৷ আবুউমাইয়া তার কুনিয়াত, লকব লাতীযুশ শায়তান ৷ সে ছিল ভীষণ যুদ্ধবাজ ৷ খলীফা আবদুল
মালিকের আশঙ্কা হয় যে মক্কার নিরাপত্তা তার দ্বারা বিব্লিত হবে ৷ ফলে এক বাহানায় তাকে হত্যা
করেন ৷
(সা) সর্ব প্রথম যে নিহতের রক্তপণ আদায় করেন যে হচ্ছে জুনায়দাব ইবনুল আকওয়া ৷ বনু
কা’বের লোকজন তাকে হত্যা করে ৷ একশ উষ্টী দিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার রক্তপণ আদায়
করেন ৷ ইমাম আহমদ বলেন, আমার নিকট ইয়াহ্য়া — শুআয়ব থেকে বর্ণনা করেন যে,
মক্কা বিজয় হয়ে যাওয়ার পর রাসুলুল্পাহ্ (সা) ঘোষণা দিলেন ৷ সবাই অস্ত্র সংবরণ কর ; তবে
খুযাআ গোত্র যদি বনু বকর থেকে প্ৰতিশোধ নিতে চায় তা তাদের জন্যে অনুমতি আছে ৷
আসরের সালাত আদায়ের পর খুযাআ গোত্রকে সম্বোধন করে তিনি বললেন, এখন থেকে
তােমরাও অস্ত্র গুটিয়ে ফেল ৷ পরের দিন খুযাআ গোত্রের এক ব্যক্তি বনু বকর গোত্রের এক
ব্যক্তিকে মুয্দালিফায় দেখতে পেয়ে হত্যা করে ৷ এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট পৌছলে
তিনি কা’বা ঘরের গায়ে হেলান দিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন ৷ তিনি বলেন, আল্লাহর
নির্ধারিত সীমা অধিক লংঘণকারী সে, যে হারম সীমার মধ্যে কাউকে হত্যা করে অথবা কিসাস-
বিহীন কাউকে হত্যা করে কিংবা জাহিলী যুগের প্রতিহিংসার বশ্চার্তী হয়ে কাউকে হত্যা করে ৷
বর্ণনাকারী পুরা হাদীছই উল্লেখ করেছেন ৷ তবে হাদীছটি একান্তই পরীব পর্যত্বয়ের’ ৷ সুনান
গ্রন্থকারগণ এ হাদীছের কিছু কিছু অংশ উল্লেখ করেছেন ৷ তবে বিজয়ের দিন বনু বকর থেকে
প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে বনু খুযাআকে আসর পর্যন্ত অনুমতি দেয়ার উল্লেখ এ হাদীছ ব্যতীত
অন্য কোথাও নেই ৷ হাদীছটি সহীহ্ হলে এর ব্যাথ্যায় বলা যায় যে, “লায়লাতৃল ওয়াতীরে” ১ বনু
বকর বনু খুযাআর উপর যে যুলুম করেছিল, তারই বাংলা হিসেবে এ অনুমতি ব্যতিক্রমী নির্দেশ
স্বরুপ ৷ কেবল তাদেরকে দেয়া হয়েছিল ৷ তবে আসল রহস্য আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
ইমাম আহমদ ইয়াহ্য়া ইবন সাঈদ হড়ারিছ ইবন মালিক ইবন বারসা খুযাঈ থেকে
বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের দিন বাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে,
“আজকের পর কিয়ামত পর্যন্ত আমরা এখানে আর যুদ্ধ করব না ৷ তিরমিযী বুনদার সুত্রে এ
হাদীছটি বর্ণনা করে একে হাসান ও সহীহ্ বলে অভিহিত করেছেন ৷
আমি বলি, এ উক্তি যদি নিষেধসুচক হয় তা হলে কোন প্রশ্ন থাকে না ৷ আর যদি না সুচক হয়
তবে বায়হাকী তার ব্যাখ্যার বলেন, এখানকার অধিবাসীদের কুফরী কাজে লিপ্ত হওয়ার সাথে এ
হুকুম সংযুক্ত ৷ সহীহ্ মুসলিমে যাকারিয়া ইবন আবু যায়েদা ইরনুল আসওয়াদ আদাবী
থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘোষণা করেন : আজকের দিনের
পর কিয়ামত পর্যন্ত কুরায়শপণকে ধর্মত্যাগের অপরাধে ও যুদ্ধে হত্যা করা হবে না ৷
ইবন হিশাম বলেন, আমার নিকট এ তথ্য পৌছেছে যে, মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ্ (সা)
যখন সেখানে প্রবেশ করেন, তখন তিনি সাফ৷ পাহাড়ে আরোহণ করে আল্লাহ্র নিকট দৃআ
করতে থাকেন ৷ আনসারর্গণ তার চার পাশে জড়ো হয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো ৷
তোমাদের কী ধারণা, আল্লাহ যখন তীর রাসুলকে নিজ দেশে ও শহরে বিজয় দান করেছেন, তখন
কি তিনি এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন ? দু’আ শেষ করার পর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস
করলেন, তোমরা কী বলাবলি করছিলে ? তারা রললো , ইয়৷ বাসুলাল্লাহ্ ! তেমন কিছুই না ৷ তিনি
১ ওয়াতীর একটি কুপের নাম ৷ এ কুপের কাছেই এক রাত্রে কুবায়শদের মিত্র বনু বকর মুসলমানদের
মিত্র বনু খুযাআর উপর আক্রমণ করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল যার ফলে মক্কা আক্রমণ অনিবার্য হয়ে
পড়ে ৷
যখন পীড়াপীড়ি করলেন, তখন তারা যে কথাটি তাকে জানালেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন
জীবনে মরণে আমি
তোমাদের সাথেই থাকবাে ৷ ” এ হাদীছটি ইবন হিশাম মুআল্লাকরুপে বর্ণনা করেছেন ৷ কিন্তু
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলত তার গ্রন্থ মুসনাদে সনদসহ ৰুহ্য ও হাশিম আবদুল্লাহ ইবন
রাবাহ্ সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি বলেনং , একবার একটি প্রতিনিধি দল মুআবিয়৷ র কাছে যায় ৷
আমি ও আবু হুরায়রা ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম ৷ সে সময়টা ছিল রমযান মাস ৷ আমাদের মধ্যে
একে অন্যের জন্যে থানা পাকাতো ৷ তবে অধিকাৎশ সময় আবুহুরায়রাই আমাদেরকে দাওয়াত
করে খাওয়াতেন ৷ আবদুল্লাহ ইবন রাবাহ্ বলেন, আমি ভাবলাম — আমি কেন অন্যদেরকে আমার
বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াবাে না ?৩ তাই আমি৷ খা না পাক কাতে নির্দেশাদলাম ৷ বিকেল বেলা আবু
হুরায়রার সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম আজ রাত্রে আমার বাড়িতে আপনার দাওয়াত ৷ আবুহুরায়রা
বললে৷ , আজ আপনি আমার পুর্বেই দাওয়াত দিয়ে দিলেন ৷ আমি বললাম, ই৷ ৷ এরপর আমি
অন্যদেরকেও দাওয়াত দিলাম ৷ সকলে আমার বাড়িতে এসে সমবেত হল ৷ তখন আবু হুরায়রা
বললেন, হে আনস৷ র সম্প্রদায় ৷ আ ৷মি কি তোমাদের নিকট তে ৷মাদের বিষয়ে একটি হাদীছ বর্ণনা
করবো না ? তারপর তিনি মক্কা বিজয়ের ঘটনা বর্ণনা করা শুরু করলেন ৷ তিনি বললেনং :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কার দিকে অগ্রসর হলেন এবং শেষ পর্যন্ত সেখানে গিয়ে উপনীত হলেন ৷
এরপর যুবায়রকে মক্কার এক দিকে এবং খালিদকে অপর দিকে প্রেরণ করলেন ৷ আর আবু
উবায়দাকে পদাতিক বাহিনীর নেত তা বানিয়ে প্রেরণ করলেন ৷ তারা ( বাতনে ওয়াদীর ) পথ
অবলম্বন করে চললাে ৷ আর রাসুলুল্লাহ্ (সা) ছিলেন একটি হো চি সেনাদলের মধ্যে ৷ এ দিকে
কুরায়শরাও তাদের বিভিন্ন গোত্রের লোক এনে একত্রিত করলো ৷ বর্ণনাকারী বলেন, তারা বললো,
আমরা তাদেরকে আগে প্রেরণ করলাম ৷ যদি তাদের ভাগ্যে কিছু জুটে যায়, তবে আমরাও তো
তাদের সং গেই আছি ৷ আর যদি তারা বিপদের সম্মুখীন হয় ৷ তবে আমাদের কাছে যা চাবে তাই
দিয়ে দিব ৷ আবু হুরায়রা বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকালেন এবং আমাকে দেখে বললেন, হে আবু
হুরায়রা ! আমি বললাম, আমি উপ ত,ইয়া৷ র ৷সুলাল্লাহ ! তিনি বললেন আনসারদেরকে আমার
কাছে আসার জন্যে আহ্বান কর এবং আনসার ব্যতীত অন্য কেউ যেন আমার কাছে না আসো
অতএব, আমি তাদেরকে আহ্বান করলাম ৷ তারা এসে রাসুলুল্লাহ্র চারপাশে জমায়েত হলেন ৷
তিনি সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা কি কুরায়শের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং তাদের
অনুগতদেরকে দেখতে পাচ্ছ ? এরপর তিনি তার এক হাত অপর হাতের উপর রেখে বললেনং :
শত্রু সামনে পেলে নির্মুল করে দিয়ে এবং সাফা পাহাড়ে তোমরা আমার সাথে মিলিত হবে ৷ আবু
হুরায়রা বলেন, আমরা সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলাম ৷ আমাদের মধ্যে যে কেউ কোন শত্রুকে
হত্যা করতে চেয়েছে যে তা ৷সহজেই সম্পন্ন করেছে ৷ কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই আমাদের উপর
আক্রমণ করতে সাহস পায়নি ৷ বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবু সুফিয়ান এসে বললো, ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ ৷ আজ কুরায়শদের রক্ত হালাল করে দেয়া হয়েছে ৷ আজকের পরে আর কোন
কুরায়শের অস্তিতৃ থাকবে না ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি নিজ ঘরের দরজা
বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান করবে সে নিরাপদ ৷ যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে
নিরাপদ ৷ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর জনগণ আপন আপন ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকলো ৷
রাসুলুল্লাহ (সা) হাজরে আসওদের নিকটবর্তী হয়ে তা’ চুম্বন করলেন এবং বায়তুল্পাহর তাওয়াফ
করলেন ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) এর হাতে তখন একটি ধনুক ছিল, তিনি উহার এক প্রান্ত ধরে
রেখেছিলেন ৷৩ তাওয়াফকালে তিনি বায়ত তুল্লাহর পার্গেরক্ষিত একটি মুর্তির নিকটবর্তী হলেন, যাকে
তারা পুজা করতো ৷ তিনি ধনুক দ্বারা মুর্তিটির চোখ খুচাতে লাগলেন এবং বললেন০ “সত্য
সমাগত , মিথ্যা অপসারিত, মিথ্যার অপসারণ অবধা ৷রিত ৷” ত ৷ওয়াফ শে যে তিনি সাফ৷ পাহাড়ের
দিকে গমন করেন এবং তাতে আরোহণ করেন ৷ সেখান থেকে বায়তুল্লাহর দিকে তাকিয়ে দৃ হাত
তুলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রাণ খুলে দু অ৷ করেন ৷ বর্ণনাকা রী বলেন, তখন
আনসারগণ সাফ৷ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করছিল ৷ তারা পরস্পর বল্যবলি করতে লাগলো
যে, লোকটিকে স্ব দেশের প্রেম ও স্ব-সম্প্রদায়ের ভালবাসা পেয়ে বসােছ ৷ আবুহুরায়র৷ বলেন, ঐ
সময় ওহী অবতীর্ণ হল ৷ আর ওহী যখন অবতীর্ণ হত৩ তা আমাদের নিকট গোপন থাকতো না ৷
তখন রাসুলুল্লাহর দিকে চোখ তুলে দেখার সাধ্য কারোর হতো না ৷ যতক্ষণ না ওহী অবতরণ শেষ
হতো ৷ হাশিম বলেন, ওহী অবতরণ শেষ হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ্ (সা) মাথা “উঠিয়ে বললেন, হে
আনসার সম্প্রদায় তোমরা কি এ কথা বলেছে৷ যে, লোকটিকে স্ব-দেশ প্রেম ও স্ব-সম্প্রদায়ের
ভালবাসা পেয়ে বস্যেছ ? তারা বললেন, ইয়৷ রাসুলা ল্লাহ ! আমরা এ কথা বলেছি ৷ তিনি বললেন,
তা হলে আমার নামের স্বার্থকতা কি ? কক্ষণও না, আমি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল ৷ আমি
হিজরত করেছি আল্লাহর দিকে ও৫ তামাদের নিকটে ৷ সুতরাং আমার জীবন মরণ তোমাদের
জীবন-মরণের সাথে জড়িত ৷ বর্ণনাকারী বলেন, তখন আনসারগণ বাসুলুল্লাহর দিকে ফিরে
র্কাদতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন : আল্লাহর কসম ! আমরা যা বলেছি তা কেবল আল্লাহ ও
তার রাসুলেব প্রতি দৃর্বলতার কারণেই বলেছি ৷ তখন রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহ ও তার
রাসুল তোমাদের উত্তর সত্য বলে গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদের ওমর গ্রহণ করেছেন ৷ এ হাদীছ
মুসলিম সুলায়মান ইবন মুগীর৷ ও হামমাদ ইবন সালামা থেকে এবং নানা ৷ঈ সুলায়মান ইবন মুগীরা
ও সালাম ইবন মিসকীন থেকে, পরে এ তিনজনই ছা ৷বি৩রু র মাধ্যমে বসরার প্রবাসী আবদুল্লাহ
ইবন রাবাহ্ সুত্রে আবু হুরায়রা থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইবন হিশাম বলেনং : আমার নিকট
জনৈক বিজ্ঞ আলিম বর্ণনা করেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন বায়তুল্লাহর তাওয়াফকালে ফুযালা ইবন
উমায়র ইবন মালুহ্ (লায়হী) নবী করীম (না)-কে হত্যার পরিকল্পনা করে ৷ সে রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর নিকটবর্তী হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে, ফুযাল৷ না কি ? জবাবে সে বললাে, জী
হীা, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ ! আমি ফুযাল৷ ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি মনে মনে কি
বলছিলে ? সে বললাে, অন্য কিছু না আমি তাে আল্লাহর যিক্র করছিলাম ৷ তার এ কথা শুনে
রাসুলুল্লাহ্ হেসে দিয়ে বললেন০ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও ৷৩ তারপর তিনি তার পবিত্র হা৩
ফুযা ৷লার বক্ষের উপর রাখেন ৷ সাথে সাথে তার অন্তর শাম্ভ-শীতল হয়ে যায় ৷ তারপর ফুযালা
প্রায়ই বলতাে, আল্লাহর কসম ৷ তার পবিত্র হাত আমার বুকের উপর থেকে সরাতে ই অবস্থা এমন
হল যে, পৃথিবীতে তার চেয়ে অধিকতর প্রিয় আমার কাছে আ র কেউ বা ৷কলে৷ না ৷ ফুযালা বলেন,
তারপর আমি আমার পরিবারবর্গের মধ্যে ফিরে যাই এবং শ্ৰীর সাথে আলাপ আলোচনায় নিমগ্ন
হই ৷ ত্রী বললাে, আমাকে কিছু ন ন বিষয় শুনাও ৷ ফুয ৷লা বললেন, নতুন কোন খবর নেই ৷ এ
কথা বলে৩ তিনি নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করলেন :
অর্থাৎ ত্রী বললো, আমাকে তুমি নতুন কিছু শুনাও ৷ আমি বলল ম না ৷ তুমি যদি দেখতে
মুহাম্মাদ ও তার সৎগীদেবকে বিজয়ের দিন যে দিন মুর্তিগুলাে তে হপে টুকরো টুকরো হয়ে
গিয়েছিল ৷ তবে তুমি অবশ্যই দেখতে যে, আল্লাহ্র দীন সত্যিই সুস্পষ্ট: ও যুক্তিযুক্ত ৷ আর শিরক
তার নিজ যুখমণ্ডলকে অন্ধকারে কালিমা লিপ্ত করে রেখেছে ৷
ইবন ইসহাক বলেন : মুহাম্মাদ ইবন জাফর আইশা (রা) সুা;ত্র আমার নিকট বর্ণনা
করেন : সাফওয়ড়ান ইবন উমাইয়া জিদ্দা থেকে জাহাজ যােগে ইযামানে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে
মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়ে ৷ উমায়র ইবন ওহব বিষয়টি রাসুলুল্লাহ্ (সা)এব গোচরে আনেন ৷
তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র নবী ! সাফওয়ান ইবন উমাইয়া হচ্ছে তার সম্প্রদায়ের নেতা যে
আপনার ভয়ে নিজেকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছে ৷ ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ৷ আপনি
তাকে নিরাপত্তা দিন ৷ আল্লাহ্ আপনার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন ! রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তাকে
নিরাপত্তা দেওয়া হল ৷ উমায়র বললেনং ইয়৷ রাসুলা ল্লাহ্৷ আমাকে এমন একটি নিদর্শন দিন যার
দ্বারা বুঝা যায় যে, আপনি তাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা ) তার নিকট নিজের
পাগড়ীটি দিয়ে দিলেন ৷ যা মাথায় দিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন ৷ উমায়র পাগড়ীটি নিয়ে
বেরিয়ে পড়েন এবং এমন অবস্থায়৩ ৷কে পেয়ে যান যখন সে সমুদ্রে পাড়ি দেয়ার জন্যে প্রস্তুতি
নিচ্ছিল ৷ উমায়র৩ তাকে ডেকে বললেন ,হে সাফওয়ড়ান ! আমার পিত ৷মাতা তােমা র জন্যে উৎসর্গ
হোন ! আল্লাহ্কে ভয় কর, নিজেকে ধ্বংস করােন৷ ৷ এই যে আমি রাসুলুল্লাহ্র পক্ষ থেকে
তোমার জন্যে নিরাপত্তা সনদ নিয়ে এসেছি ৷ সাফওয়ড়ান বললো, তোমার সর্বনাশ হোক ! তুমি
আমার নিকট থেকে দুর হও ৷ আমার সাথে কোন কথা বলো না ৷ উমায়র বললেন, সাফওয়ান ৷
তোমার জন্যে আমার পিতামাত৷ উৎসর্গ হোন ! দেখ, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মানবকুলের সর্বোত্তম
ব্যক্তি ৷ মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক সদাচারী লোক, মানব গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী সহিষ্ণু
পুরুষ এবং সমগ্র মানবমওলীর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি ৷ তিনি তো তোমার পিতৃব্য-পুত্র ৷ তীর
সম্মান তোমারই সম্মান ৷ তার গৌরব তােমারই গৌরব, তার রাজত্ব তােমারই রাজতু ৷ সাফওয়ড়ান
বললো, আমি নিজের জীবনের ব্যাপারে তাকে ভয় করি ৷ উমায়র বললেন, তার সহিষ্ণুতা ও
মহানুভবতা এর অনেক উধের্ব ৷ এরপর সাফওয়ান উমায়রের সাথে ফিরে আসে এবং রাসুলুল্লাহ্
(সা) এর সামনে গিয়ে দাড়ায় ৷ তখন সাফওয়ড়ান বললো, ও দাবী করছে, আপনি নাকি আমাকে
নিরাপত্তা দিয়েছেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যে সত্য কথাই বলেছে ৷ সাফওয়ান বললো , তা
হলে এ ব্যাপারে চিম্ভা-ভাবনা করার জন্যে আমাকে দৃ’ মাসের অবকাশ দিন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন, যাও, চার মাসের অবকাশ দেওয়া হল, (ডালরুপে চিন্তা-ভাবনা কর) ৷ ইবন ইসহাক
যুহরী থেকে বর্ণনা করেন যে, সাফওয়ানের ত্রী ফাখৃতা বিনত ওয়ালীদ এবং ইকরামা ইবন আবু
জাহলের ত্রী উম্মু হাকীম বিনত হারিছ বিনত হিশাম (ইসলাম গ্রহণ করে) ৷ মুসলমানগণ মক্কা
দখল করার সাথেই ইকরামা পালিয়ে ইয়ামানে চলে যায় ৷ পরে তার শ্রী উন্মু হাকীম ইয়ামান
থেকে স্বামীকে ফিরিয়ে আনেন ৷ মক্কায় পৌছে ইকরামা ইসলাম গ্রহণ করে ৷ ইকরামা ও
সাফওয়ান উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাদের ত্রীদের সাথে পুর্বের বিবাহ বহাল
রাখেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, সাঈদ ইবন আবদুর রহমান ইবন হাসসান ইবন ছাবিত আমার
নিকট বর্ণনা করেন যে, নাজরানে অবস্থানরত ইবন যাবারীর উদ্দেশ্যে হাসৃসান একটি মাত্র পংক্তি
ছুড়ে মারেন, তার বেশী কিছু বলেননি ৷ পংক্তিটি হলো :
অর্থাৎ “সে লোকটিকে তুমি হারিয়াে না, যার প্রতি অন্তারর ব্যিদ্বষ তোমাকে নাজরানে
নিয়ে নিক্ষেপ করেছে ৷ যেখানে তুমি নিকৃষ্টতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছ ৷
’ ইবন যাবা’রীর নিকট এ কবিতা পৌছা মাত্র সে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ছুটে আসে এবং
ইসলাম গ্রহণ করে ৷ ইসলাম গ্রহণকালে সে নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ কার :
অর্থাৎ — হে রাজাধিরাজের প্রেরিত রাসুল আমার রসনা সর্বদা সংযত ছিল ৷ যখন আমি
ধ্বংসের পথে ছিলাম, তখনও কুৎসা রটাতে আমি আমার মুখ খুলিনি ৷
যখন আমি বিভ্রান্তির অলি-গলিতে শয়তানের অগ্রগামী ছিলাম ৷ আর যে ব্যক্তি শয়তানের
পথে অগ্রসর হয় সে মুলত ধ্বংসের দিকেই অগ্রসর হয় ৷
আমার অস্থিমাংস আমার প্রতিপালকের প্ৰতি ঈমান এন্যেছ ৷ তারপর আমার অস্তরও সাক্ষ্য
দিচ্ছে যে, আপনি সতর্ককারী রাসুল ৷
আমি আপনার পক্ষ থেকে লুয়াই গােত্রকে সাবধান করছি ৷ আর তারা তো সকলেই
প্রতারণার শিকার ৷
ইবন ইসহাক বলেন, ইসলাম গ্রহণকালে আবদৃল্লাহ্ ইবন যাবা’রী আরও বলেছিল :
৬ ৭ —
অর্থাৎ “বিভিন্ন রকম দৃশ্চিন্তা ও উৎকষ্ঠা আমার ঘুম কেড়ে নিল ৷ অথচ রাতের শুরু থেকে
শেষ পর্যন্ত গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল ৷ কারণ, আমার নিকট সংবাদ এলো যে, নবী আহমদ
(সা) আমাকে ধিক্কার দিয়েছেন ৷ ফলে আমি রাত কাটালাম এমনভাবে যেন আমি একজন
জ্বরের বোপী ৷
হে সর্বেড়াত্তম ব্যক্তি, যার অংগ-প্রতাৎগ অত্যন্ত সরল ও সুঠাম, যিনি এমন প্ৰত্যয়দীপ্ত
অভিযাত্রী, যার কখনও গতি বোধ হয় না ৷
আমি আমার পথভ্রষ্ট জীবনের কৃত অপরাধসমুহের জন্যে আপনার নিকট লজ্জিত ও অনুতপ্ত ৷
সে জীবনে আমাকে সাহ্ম গোত্রের লোকেরা এক ধরনের গোমরাহীর পথে উদ্বুদ্ধ করতো
তো মাখষুম গোত্রের লোকেরা আহ্বান জানাভাে আর এক ধরনের গোমরাহীর পথে ৷
আমি নিকৃষ্ট জাতীয় উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে চলছিলাম ৷ আর পথভ্রষ্ট লোকদের
কার্যাবলী আমাকে সে দিকেই টেনে নিচ্ছিল ৷ তাদের কার্যাবলী সর্বদা অমংগলই হয়ে থাকে ৷
আজ আমার অন্তর নবী মুহাম্মাদের উপর ঈমান এন্যেছ এবং এ ব্যাপারে ভুল সিদ্ধাম্ভকারীরা
হচ্ছে চিরবঞ্চিত ৷
আমাদের মধ্যকার শত্রুতার অবসান ঘটেছে এবং শত্রুতার কারণসমুহও বিদুরিত হয়েছে ৷
এখন আমাদের পারস্পরিক সৌজন্য-সত্মীতি ও জ্ঞানপ্প্রজ্ঞা আমাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছে ৷
আমার পিতামাতা আপনার জন্যে কুরবান হোন ! আপনি আমার পদস্থালনসমুহ ক্ষমা করুন ৷
কেননা, আপনি দয়ালু এবং দয়াপ্রাপ্ত ৷
আপনার মাঝে রড়াজাধিরাজ মহান আল্লাহ্র দেওয়া জ্ঞানের সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে ৷ আপনি
উজ্জ্বল আলোকবর্ডিংম ৷ আপনি শেষ নবী এবং আপনার মাধ্যমে নবুওয়াত মহরাংকিত করা
হয়েছে ৷
তিনি আপনাকে ভালবেসে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন প্রমাণাদি দান করেছেন ৷ আর আল্লাহ্র প্ৰমাণাদি
অতি মহান ৷
আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার আনীত জীবন বিধান সত্য ৷ আর মানব ফুলের মধ্যে
আপনার ব্যক্তিত্ব অতি বিশাল ৷
আল্লাহ্ই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আহমদ মুস্তাফা পুণ্যবান লোকদের জন্যে আদর্শ ও উচ্চ মর্যাদার
অধিকারী ৷
তিনি এমন এক কওমের সন্তান যার ভিত্তি বনুহাশিম ৷ তার মুল ও শাখা সর্বজন ৰিদিত ৷
ইবন হিশাম বলেন, কোন কোন পণ্ডিতের মতে এ কবিতাগুলো যাবাব্রীর নয় ৷
আমি বলি, আবদৃল্লাহ্ ইবন যাবা’রী আসৃসাহমী ছিল ইসলামের একজন ঘোর শত্রু ৷ সে ছিল
ঐসব কবিদের দলভুক্ত যারা তাদের কাব্য প্রতিভাকে মুসলমানদের কুৎসা প্রচারে নিয়োজিত
রেখেছিল ৷ এরপর এক পর্যায়ে আল্লাহ্ তার প্রতি সদর হন ৷ ফলে সে তওবা করে ইসলাম গ্রহণ
করে এবং ইসলামের সাহায্য সহযোগিতায় নিজেকে নিবেদিত করে ৷
অনুত্তচ্ছদ
ইবন ইসহড়াক বলেন : মক্কা বিজয় অভিযানে মুসলমানদের সর্বমোট সংখ্যা ছিল দশ হাজার ৷
তার মধ্যে সুলায়ম গোত্রের সাতশ’ (কারও মতে এক হাজার), গিফার গোত্রের চারশ’ , (আসলাম
গোত্রের চারশ), মুযায়না গোত্রের এক হাজার তিন জন ৷ অবশিষ্ট সকলেই ছিলেন কুরায়শ,
আনসার ও তাদের মিত্র এবং আরবের তামীম, কায়স ও আসাদ গোত্রের লোক ৷ কিন্তু উরওয়া,
যুহ্রী এবং মুসা ইবন উক্বা বলেন, মক্কা বিজয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সংপী মুসলমানদের সংখ্যা
ছিল যার হাজার ৷
ইবন ইসহাক বলেন, কথিত আছে যে, মক্কা বিজয়ের দিন হাসর্চুসান ইবন ছাবিত নিম্নের
কবিতাটি আবৃত্তি করেন :
অর্থাৎ : যাতুল আসাবি ও জাওয়া থেকে আরম্ভ করে আযরা পর্যন্ত সমগ্র এলাকা জনশুণ্য
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া
হয়ে গিয়েছে এখানকার ঘরবাড়িগুলাে খালি পড়ে আছে
বনুহাসহাসের (বনু আসাদ) বাড়িঘরগুলাে খী-র্খা করছে এ যেন ধুসর প্রাস্তর ৷ বায়ুর প্রবাহ
এর বৃষ্টির বর্ষণ এর নিশানা মিটিয়ে দিয়েছে ৷
অথচ একদা এখানে ছিল ণ্লাকজনের বিচরণ ৷ আর এর চারণভুমিতে চরে বেড়াত উট ও
বকরীর পাল ৷
এখন এসবের চিন্তা ছেড়ে দাও, এবং বল আমার প্রেমম্পেদের খরব কি ? যে ইশার পরে
এসে আমাকে ঘুম থেকে জাগায়
আমার প্রিয়া শাছার জন্যে যে তাকে পাওয়ার কামনা করেছে ৷ কিন্তু এতে করে তার অন্তর
শান্তি লাভ করবে না ৷
তার জন্যে আমার যে প্রেমের স্বাদ ঠিক বায়তে রাসে’ তৈরি মদের ন্যায় ষ্যা মধু ও পানি
মিশ্রিত করে প্রস্তুত করা হয় ৷
যে দিন সে মদের গুণাগুণ আলোচনা করা হয়, সে দিন এ মদের সু-ঘ্রড়াণে আত্মহারা হতে
হয় ৷
আমরা মদের জন্যে তাকে ভর্চুসনা করি ৷ আর এ ভর্চুসনা চুড়ান্ত হয় যখন এর সাথে থাকে
হাতের দ্বারা প্রহার ও মুখের গালমন্দ ৷
আমরা যে মদ পান করি ৷ তারপর আমাদেরকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, কোন
রাজত্ব-বাদশা কিৎবা কোন সিংহের সাথে সাক্ষাৎ করতেও আমাদেরকে বাধা দেয় না ৷
আমরা আমাদের ঘোড়াগুলো হারাবাে যদি তোমরা তাদের প্রতি লক্ষ্য না রাখ ৷ পথের ধুলি
উড়াতে উড়াতে সেগুলো মক্কার নিকটবর্তী কিদা নামক স্থানে পৌছবে ৷
ঘোড়াগুলো লম্বা ও শক্ত লাপাম থেকে ছুটার জন্যে কঠিনভাবে চেষ্টা করে ৷ আর সেগুলোর
কাধে ঝুলান রয়েছে তৃষ্ণার্ত ধারাল তলোয়ার ৷
আমাদের ঘোড়াগুলো সে দিন ছিল ক্ষিপ্ৰ গতিতে অগ্রসরমান ৷ আর মহিলারা ওড়না দ্বারা
সেগুলোর গায়ের ধুলাবালি ঝেড়ে দিচ্ছিল ৷
সুতরাং হয় তোমরা আমাদের প্রতিবন্ধকতা উঠিয়ে লও, যাতে আমরা উমরা আদায় করতে
পারি ৷ ফলে বিজয় এসে যাবে এবং বাবার গিলাফ উন্মুক্ত হবে ৷
নচেৎ একদিনের কঠোরতা (যুদ্ধ) গ্রহণের জন্যে ধৈর্য্য ধারণ কর ৷ সে ক্ষেত্রে আল্লাহ্ যাকে
ইচ্ছা মর্যাদা (বিজয়) দান করবেন ৷
আল্লাহ্র দুত জিবরাঈল ফেরেশতা আমাদের মাঝে অবস্থান করছেন ৷ আর রুহুল কুদৃস পবিত্র
আত্মা জিবরড়াঈলের সমকক্ষ কেউ নেই ৷
আল্লাহ্ বলেন, আমি এক বন্দোকে আমার রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছি ৷ সে সত্য কথা বলছে ৷
যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় তবেই ভাল ৷
আমি তার সভ্যতার সাক্ষ্য দিয়েছি ৷ তোমরাও তার সভ্যতার সাক্ষ্য দাও ৷ কিন্তু তোমরা
বললে, না, আমরা তা করবো না ; এবং আমরা তা চাইও না ৷
এদিকে আল্লাহ্ বললেন, আমি আমার এক বাহিনীকে প্রেরণ করেছি ৷ তারা (মুসলমানদের)
সাহায্যকারী ৷ তাদের লক্ষ্য হলো শত্রুর মুকাবিলা করা ৷
মাআদ গোত্রের পক্ষ থেকে প্রতি দিনই আমাদের জন্যে আসছে পালমন্দ অথবা যুদ্ধের
হুমকি অথবা নিন্দাবাদ ৷
সে কারণে যারা আমাদের কুৎসা পায় ও নিন্দাবাদ করে , আমরা কাব্য-ছন্দ দ্বারা তাদের
প্রতিহত করার ফয়সালা নিই ৷ আর যখন যুদ্ধ-ক্ষেত্রে রক্ত-স্রোত প্রবাহিত হয় ৷ তখন আমরা
তাদেরকে তলোয়ার দ্বারা আঘাত করি ৷
হে আবুসুফিয়ান ! তুমি আমার পক্ষ থেকে সে ব্যক্তির নিকট এ বার্তা পৌছে দাও যে পাশ
কাটিয়ে দুরে পড়ে আছে ৷
বার্তাটি এই যে, আমাদের তরবাবি তোমাকে দাসে পরিণত করে চুছড়েছে ৷ আর বনু
আবদুদদ৷ রের সর্দ৷ ৷রগণ পরিগণিত হয়েছে দাসরুপে ৷
তুমি মুহাম্মাদ (সা) এর নিন্দামুলক কবিতা ছড়িয়েছ আমির্ত নব পক্ষ থেকে জবাব দিয়েছি ৷
আল্লাহ্র নিকট এ জন্যে রয়েছে প্ৰতিদ৷ ৷ন ৷
ওহে তুমি আবু সুফিয়ান র্তার নিন্দা কর ৷ অথচ কোন দিক দিয়েই তুমি তার সমকক্ষ নও ৷
সুতরাং তোমাদের দুজনের মধ্যে নিকৃষ্টজন উত্কৃষ্টজনের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে ৷
তুমি এমন এক মহৎ ব্যক্তির নিন্দা করেছ, যিনি কল্যাণের প্রতীক পুতপবিত্র ও একনিষ্ঠ
বান্দা ৷ তিনি আল্লাহর একান্ত বিশ্বস্ত এবং দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করা যার স্বভাব ৷
জেনে রেখো, আমার পি৩ ৷ ও তার পিতা এবং আমার মান মর্যস্কো সবাকছু মুহাম্মাদ (সা) এর
মান ন-মর্যাদাকে তোমাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্যে নিবেদিত ৷
আমার রসন৷ নিং সৃত কবিতা এমন এক শানিত তলােয়ার স্বরুপ যাতে কো ন ত্রুটি নেই ৷
এবং তা এমন এক সমুদ্র, যাতে বারবার বালতি মারলেওশু তার পানি ঘোলা করতে পারে না ৷ ইবন
হিশাম বলেন, হাসৃস৷ ন ইবন ছ৷ ৷বিত এ কবি৩ ৷টি মক্কা বিজয়ের পুর্বে আবৃত্তি করেছিলেন ৷
আমি বলি, এ কাসীদ৷ ৷র মধ্যে যা কিছু বলা হয়েছে তা ইবন হিশামের মম্ভব্যকে সমর্থন
করে ৷ আর কবিতায় উল্লিখিত আবু সুফিয়ান হচ্ছে হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিবের পুত্র আবু
সুফিয়ান ৷ ইবন হিশাম বলেনং আমার নিকট যুহরী সুত্রে এ কথা পৌছেছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
যখন দেখলেন যে, মহিলারা তাদের ওড়না দিয়ে ঘোড়ার পায়ের ধুলাবালি বোড়ে দিচ্ছে, তখন
তিনি আবু বকরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন ৷ ইবন ইসহাক বলেনং আমর ইবন সালিম
খুয৷ ঈ যখন আন৷ স ইবন যুনায়ম দৃআলীর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য চেয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর
নিকট আবেদন করেন, তখন আনাস রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ওযর পেশ করে নিম্নোক্ত কবিতা
আবৃত্তি করেন :
অর্থ : আপনি কি যে ব্যক্তি, যিনি মা’আদ গোত্রকে তাদের আচরণের সঠিক পথ দেখাচ্ছেন ?
বরং আল্লাহ্ই তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন ৷ আর তিনি আপনাকে বলেছেন সাক্ষী
থাকুন ৷
কোন জ্জীই এমন কোন সওয়ারকে তার হাওদায় বহন করেনি যে মুহাম্মাদ (স) থেকে
অধিক পুণ্যবান এবং ওয়াদা পালনে অধিকতর নিষ্ঠ্যবান ৷
যে কল্যাণকর কাজে তার চাইতে অধিকতর উৎসাহদানকারী এবং তার চাইতে বেশী
বদান্যশীল ৷
যখন তিনি কোন মঙ্গলময়^ কাজের উদ্দেশ্যে বের হন, তখন এত দ্রুত অগ্রসর হন ৷ যেমন
দ্রুত চলে ভারতীয় তীক্ষ্ণ তলোয়ার ৷ এবং যিনি ইয়ামানী মুল্যবান চাদর নিজের কাজে ব্যবহার
করার পুর্বেই অন্যকে পরিধান করার জন্যে দান করেন ৷ আর দ্রুতপামী দামী ঘোড়া অপরকে দান
করতে খুবই পারঙ্গম ৷
জেনে রাখুন হে আল্লাহ্র রাসুল ! আপনি আমার উপর কর্তৃতুশীল ৷ আপনার পক্ষ থেকে
ঘোষিত সতর্কবাণী — সে তো হাতে হাতে পাওয়ারই শামিল ৷
জেনে নিন হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি সকল নিম্নভুমি ও উচ্চভুমির ঘরবাড়ির উপর
এককভাবে নিয়ন্ত্রণকারী ৷
আপনি জেনে রাখুন, ঘৃণিত আমরের দলভুক্ত লোকজন হচ্ছে সেই সব লোক যারা মিথ্যাবাদী
ও প্রতিশ্রুতি ভৎগকারী ৷
তারা আল্লাহর রাসুলকে এই সংবাদ দিয়েছে যে, আমি নাকি তার নিন্দাবাদ করেছি ৷ তা যদি
সত্য হতো তা হলে আমি নিজ হাতে নিজেকে রেত্রাঘাত কবতাম ৷ তবে এ কথা আমি বলেছি
যে, সেই সব কিশোরদের মায়েদের জন্যে দৃর্তাগ্য যারা পাহাড়ের পাদদেশে নিরুপায় ও সৌভাগ্য
বঞ্চিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে ৷
তাদেরকে হত্যা করেছে এমন সব লোক যারা তাদের রক্তপণ শোধ করতে পারবে না কোন
ক্রমেই (অথবা ওদের রক্তের সন মর্যাদাপুর্ণ নয় ৷) তাই আমি অশ্রু প্রবাহিত করছি ও শোক
প্রকাশ করছি ৷
আর আপনি এই সংবাদ দিয়েছেন যে, আবৃদ ইবন আবদুল্লাহ, মুহাব্বিদের কন্যা যুওয়ায়ব,
কুলছুম ও সুলমা এদের সকলকে নির্মুল করার জন্যে আপনি চেষ্টা করছেন ৷ এতে আমার চক্ষু
যদি অশ্রু নড়াও বহায় তবে আমার অন্তর তাে ব্যথিত হবেই ৷
আর সুলমা ও তার ভাইদের কথা বলছি যে সুলমার সমতুল্য কোন লোকই হতে পারে না ৷
রাজা-বাদশাহরা কি কখনও দাসদের মত হয় ?
ষ্ আমি কোন অপরাধ সংঘটিত করিনি এবং কাউকে হত্যাও করিনি ৷ আপনি বাস্তব জগতকে
উদঘাটন করুন ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন বুজায়র ইবন যুহায়র ইবন সুলমা নিম্নোক্ত কবিতা
আবৃত্তি করেন ::
অর্থ : বিজয়ের দিন প্রত্যুষকালে মুযায়না ও বনু খুফাফ গোত্রের লোকজন সাত সকালে
তাদের বসতি এলাকার প্রতিটি রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো ৷
শ্রেষ্ঠ নবীর মক্কা বিজয়ের দিন আমরা হালকা ধরনের তলােয়ার দ্বারা তাদেরকে আঘাত
করেছি ৷
প্রভাত বেলায়ই আমরা তাদের উপর বাপিয়ে পড়লাম সুলায়ম গোত্রের সাত শ’ ও বনু
উছমানের পুর্ণ এক হাজার লোক নিয়ে, তাদের উপর তলােয়ারের আঘাতে, বর্শার ঘেড়াচড়ায় ও
হালকা তীর নিক্ষেপে আমরা তাদের স্কন্ধসমুহ রক্তাক্ত করে দিলাম ৷
পালক বিশিষ্ট তীরের ফলক বাট থেকে বেরিয়ে যখন দ্রুত বেগে শত্রু বুহ্য ভেদ করে যড়াচ্ছিল
তখন তুমি তার শন শন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলে ৷
সাে জা ও পরিপাটি করা বল্লমগুলাে নিয়ে অশ্বগুলাে যখন তাদের মাঝে চক্কর কটিছিল তখন
আমরা খুবই উৎফুল্ল বোধ করছিলাম ৷
তারপর আমরা আমাদের কাৎগ্রিত গনীমতের মাল নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলাম ৷ পক্ষাম্ভরে
তারা লাঞ্ছিত অপমানিত হয়ে ফিরে গেল ৷
আমরা অতি সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহ্র রাসুলকে আমাদের পক্ষ থেকে অং গীকার প্রদান করলাম ৷
সেই ভয়াল দিয়ে তারা আমাদের পারস্পরিক কথাবার্তা শুনেই পালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ
নিয়েছিলা ৷ম ৷
ইবন হিশাম বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আব্বাস ইবন মিরদাস সুলামী নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি
করেন :
অর্থ৪ মুহাম্মাদ (সা) এর মক্কা বিজয়ের দিন আমাদের এক হাজার চিহ্নিত বীর যােদ্ধার
পদভা রে মক্কাভুমি প্রকস্পিত হয় ৷
তারা আল্লাহ্র রাসুলকে সাহায্য করে ও তার নিদর্শনসমুহ প্রত্যক্ষ করে ৷ আর যুদ্ধের দিন
তা ৷দ্দের নিশানগুলাে সবার আগে ছিল ৷
যে সংকীর্ণ স্থানে তাদের পা দৃঢ়ভ ৩াবে জমে যেত সেখানে (শত্রুদের) মাথার খুলি কদৃর
খােলে নির্মিত মটকার মত পড়ে থাকত ৷
ইত৪পুর্বে এসব যোদ্ধাদের পদচারণা নজ্বদ ভুমিতেও হয়েছে ৷ এরপর মিশমিশে কালো
হিজাজ ভুমিও তাদের অবস্থান কামনা করেছে ৷
আল্লাহ্ র্তীকে হিজাযে ক্ষমতাসীন করেছেন এবং তলোয়ারের ফায়সালা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা এ
ভুমিকে আমাদের পদানত করে দিয়েছে ৷
তারা শাসন ক্ষমতার যোগ, মর্যাদার অধিকারী, সদাচারী, আতিথেয়তা ও বদান্যতায় তারা
অভ্যস্ত ৷
ইবন হিশাম আব্বাস ইবন মিরদাসের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ
করেছেন যে, তার পিতা মিরদাস একটি পাথরের মুর্তির পুজা করতো ৷ মুর্তিটির নাম ছিল যিমার ৷
মিরদাসের মৃত্যু সময় উপস্থিত হলে সে তার পুত্র আব্বাসকে ঐ মুর্তির ব্যাপারে যত্ন শীল থাকা র
উপদেশ দিয়ে যায় ৷ একদা আব্বাস মুর্তিটির সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ৷ হঠাৎ মুর্তির পেটের মধ্য
থেকে বেরিয়ে আ ৷সা এক আওয়াজ তিনি শুনতে পান ৷ আওয়াজের মধ্যে নিম্নের কবিতাটি ছিল০ ং
অর্থ : সুলায়ম গোত্রের সকল শাখা-গোত্রকে জানিয়ে দাও যে, যিমড়ার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে
এবং মসজিদবাসীরা জীবন লাভ করেছে ৷
মরিয়মের পুত্র (ঈসা (আ)-এর পর কুরায়শ গোত্রের যে ব্যক্তি নৃবুওয়ত ও হিদায়াতের
উত্তরাধিকারী হয়েছেন, তিনি সঠিক পথের উপর আছেন ৷
যিমার ধ্বংস হয়েছে অথচ নবী ঘুহান্মড়াদের নিকট কিতাব নাযিল হওয়ার পুর্বে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত
তার উপাসনা করা হয়েছে ৷
ইবন হিশাম বলেন, এরপর আব্বাস যিমার মুর্তিটি পুড়িয়ে ফেলেন নবী করীম (সা) এর
নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ এ ঘটনা ইতিপুর্বে জিনদের অদৃশ্য আওয়াজ ও আকৃতি
পরিবর্তন সংক্রান্ত অধ্যায়ে বিস্তারিতভড়াবে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ সমস্ত প্রশংসা ও অনুগ্রহ
আল্লাহ্রই ৷
মক্কা বিজয়ের পর খালিদ ইবন ওয়ালীদকে বনু জুযায়মা ইবন কিনানার উদ্দেশেব্রু
প্রেরণ
ইবন ইসহাক বলেন, হাকীম ইবন হাকীম ইবন আববাদ ইবন হানীফ আমার নিকট আবুজাফর
মুহাম্মাদ ইবন আলী সুত্রে বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয় হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) খালিদ ইবন
ওলীদকে আল্লাহর পথে আহ্বানকারীরুপে প্রেরণ করেন; যোদ্ধা হিসেবে প্রেরণ করেননি ৷ তার
সাথে তখন সুলায়ম ইবন মনসুর, মুদলিজ ইবন মুর্রা প্রভৃতি আরব পােত্রসমুহও ছিল ৷ তারা
গিয়ে বনু জুযায়মা ইবন আমির ইবন অড়াবৃদ মানাত ইবন কিনানার উপর চড়াও হয় ৷ ঐ গোত্রের
লোকজন তাকে আসতে দেখে অস্ত্রধারণ করে ৷ তখন খালিদ বললাে, তোমরা অস্ত্র সংবরণ কর ৷
ইবন ইসহাক বলেন : বনু জুযায়মার কোন কোন বিজ্ঞ আলিম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন,
খালিদ যখন আমাদেরকে অস্ত্র সংবরণের নির্দেশ দেয়, তখন আমাদের গোত্রের জাহ্দাম নামক
এক ব্যক্তি বলে উঠলাে : হে বনু জুযায়মা ! তোমাদের সর্বনাশ হবে, এ যে খালিদ ! আল্লাহ্র
কসম , অস্ত্র সংবরণ করলেই বন্দী হতে হবে ৷ আর বন্দী হওয়ার পরই তোমাদের গর্দান কাটা
হবে ৷ আল্লাহ্র কসম ! আমি কিছুতেই অস্ত্র সংবরণ করবো না ৷ তখন তার গোত্রের কিছু লোক
তাকে ধরে নিয়ে বললো , হে জাহ্দাম ! তুমি কি চাও, আমাদের রক্ত প্রবাহিত হোক ? লোকজন
ইসলাম গ্রহণ করেছে ৷ যুদ্ধ থেমে গেছে এবং মানুষ নিরাপদ হয়ে গেছে ৷ গোত্রের লোকজন
তাকে এ বিষয়ে পীড়াপীড়ি করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তার অস্ত্রপাতি কেড়ে নেয় এবং গোটা
সম্প্রদায় খালিদের কথামত অস্ত্র সংবরণ করে ৷ ইবন ইসহাক বলেন : হাকীম ইবন হাকীম আমার
নিকট আবু জাফর সুত্রে বর্ণনা করেন : যখন তারা অস্ত্র সংবরণ করলো তখন খালিদের নির্দেশে
তাদের বেধে ফেলা হলে৷ ৷ তারপরে তালায়ারের মুখে তাদের অনেককেই হতা৷ করা হল ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌছল্যে, তখন তিনি তার হস্তদ্বয় আকাশের দিকে
উঠিয়ে বললেন :
“হে আল্লাহ ! খালিদ ইবন ওয়ালীদ যা কিছু করেছে৩ তার সাথে আমি সম্পর্কহীনতা ঘোষণা
করছি” ৷
ইবন ইসহাক বলেন৪ আমার নিকট কো ন কো ন আলিম বর্ণনা করেছেন যে, গোত্রের এক
ব্যক্তি ছুটে এসে রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে ঘটনার বিবরণ জ ৷নালো ৷ র ৷সুলুল্লাহ্ (সা)৩ তাকে জিজ্ঞেস
করলেন, কেউ কি খ৷ লিদকে এ কাজে বাধা দেয়নি ? ল্যেকটি বললো, হ্যা, দিয়েছে একজন ফর্সা
চেহারা বিশিষ্ট লোক বাধা দিয়েছিল ৷ কিন্তু খালিদ তাকে এক ধমক দিলে সে চুপ হয়ে যায় ৷
তাছাড়া আরও একজন দীর্ঘকায় লোকও তাকে কঠিনভাবে বাধা দেয় এবং উভয়ের মধ্যে৩ তীব্র
বাক-বিতডা হয় ৷ এ সময় উমার ইবন খাত্তাব বললেন, ইয়৷ রাসুলাল্লতু ! এদের মধ্যে প্রথমজন
আমার পুত্র আবদুল্লাহ, আর দ্বিতীয় জন আবুহুযায়ফার যুক্ত গোলাম সালিম ৷
ইবন ইসহাক বলেন৪ হাকীম ইবন হা ৷কীম আবু জাফর সুত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন ৷
এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলী ইবন আবু৩ তালিবকে ডেকে ন্থল্যলন্ ৷, হে আলী ! ভুমি ঐসব
সম্প্রদায়ের নিকট যাও এবং৩ ৷ তাদের বিষয়টিভ তালকরে দেখ ৷ তারপর তা ৷হিলী যুগের রীতি নীতিকে
তামার পদতলে মথিত কর ৷ আ ৷লী বের হয়ে গেলেন এবং৩ তাদের কাছে উপস্থিত হলেন ৷ তিনি
তার সাথে রাসুলুল্পাহ্ (সা) প্রদত্ত অর্থ-সস্পদও নিয়ে গেলেন ৷ তিনি ঐ অর্থ দ্বারা তাদের রক্তপণ
আদায় করলেন ও নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পদের ক্ষতিপুরণ দিলেন ৷ এমন কি কুকুরের পানি খাওয়া
পাত্রের ক্ষতিপুরণ গোধ করলেন ৷৩ তাদের রক্তপণ ও মাসের ক্ষতিপুরণ দেওয়ার পরও তার হাতে
প্রচুর অর্থ অবশিষ্ট থেকে যায় ৷ তখন আলী (রা)৩ তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের আর কারও
রক্তপণ বা সম্পদের ক্ষতিপুরণ বাকী আছে কি ? ত ৷রা বললো , জী, না’ ৷ ৩ খন তিনি বললেন :
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর দেয়া দায়িত্ব পালনে সতর্কতা স্বরুপ “এই অবশিষ্ট মালও আমি তােমাদেরকে
দিয়ে যাচ্ছি ৷” এ বিষয়টা তিনিও জানেন না, তােমরাও জান না ৷ তারপর তিনি সে রকমই করলেন
এবং কাজ শেষে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ফিরে এসে বিস্তারিতভাবে সবকিছু জানালেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ সাে) বললেন : মোঃ ৷ এ মোঃ ৷ তৃমি ঠিক করেছ এবং বেশ করেছ ৷ তারপর
রাসুলুল্লাহ্ (না) কিবলাঘুখী হয়ে দীড়ালেন এবং দু’হাত অনেক উধের্ব তুলে ধরলেন, এমন কি তীর
উভয় বগলের নীচের অং শ দেখা যাচ্ছিল ৷ আর তিনি তখন বলছিলেন “হে আল্লাহ ! খালিদ
ইবন ওয়ালীদ যে কান্ড করেছে৩ তা থেকে আপনার কাছে আমার সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা
করছি ৷ এরুপ তিনি তিনবা ৷র বললেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন : কেউ কেউ খালিদকে এ ব্যাপারে নির্দোষ মনে করেন ৷ তারা বলেন,
খালিদ এ কথা বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবন হুযাফা সাহমী আমাকে না বলা পর্যন্ত আমি যুদ্ধে লিপ্ত
হইনি ৷ কেননা, আবদুল্লাহ ইবন হুযাফা আমাকে বলেছিল যে তারা যদি ইসলাম গ্রহণ করতে
অস্বীকার করে তবে তু তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে ৷ ইবন হিশাম বলেন আবু আমর মাদীনী
বলেছেন, খালিদ ইবন ওয়ালীদ ঐ সম্প্রদায়ের নিকট পৌছলে তারা বলেছিল আমরা ধর্মান্তরিত
হয়েছি ৷ আমরা ধর্মান্তরিত হয়েছি ৷ (অর্থাৎ সাবেয়ী গ্রহণ করেছি) ১ , এ বর্ণনাটি মুরসাল ও
যুনকাতি (সনদ বিচ্ছিন্ন) ৷
১ মুল কিতারের পাদটীকায় এর অর্থ দেয়৷ হয়েছে, “আমরা সাবেঈ ধর্মে প্রত্যাবর্তন করেছি ৷ সম্পাদক
ইমাম আহমদ বলেন : আমার নিকট আবদুর রাঘৃযাক আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা)
সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) খালিদ ইবন ওলীদকে আমার যতদুর মনে
পড়ে জুযায়মা গোত্রে প্রেরণ করেন ৷ তিনি সে গোত্রের লে ৷কজনকে ইসলাম গ্রহণ করার আহ্বান
জানান কিন্তু তারা স্পষ্টভাবে এ কথা বলেনি যে, আমরা ইসলাম গ্রহণ করলাম’ বরং তারা এ
কথা বলে যে, আমরা ধর্মান্তরিত হলাম ৷ আমরা ধর্মান্তরিত ৩হলাম ৷ ফলে খালিদ তাদেরকে বন্দী
ও হত্যা করার জন্যে পাকড়াও করেন ৷ ইবন উমর (রা ) বলেন, খালিদ আমাদের প্রত্যেকের কাছে
একজন করে বন্দীকে তুলে দেন ৷ পরের দিন সকাল বেলা আমাদের প্ৰতেককে নিজ নিজ
বব্দীকে হত্যা করার নির্দেশ দেন ৷ জবাবে আমি বললাম, আল্লাহর কলম আমি আমার বন্দীকে
হত্যা করবো না এবং আমার য ৷রা ভক্ত আছে তা ৷রাও কেউ৩ তাদের বন্দীবে হত্যা করবে না ৷ ইবন
উমার (রা) বলেন, এরপর সকলে নবী করীম (সা) এর কাছে ৷ফরে এসে খালিদের কর্মকাণ্ড
সবিস্তারেড় তাকে জানায় ৷ তখন নবী করীম (সা) দুহাত ৩উঠিয়ে দুআ করেন, : “হে আল্লাহ্ !
খালিদ যে কাজ করেছে৩ তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ৷ এ কথা টি রাসুলুল্লাহ্ (সা) দু বার
বলেন ৷ বুখারী ও নাসাঈ আবদুর রাবযাক সুত্রে, আবদুল্লাহ ইবন উমার (বা ) থেকে এ হাদীছঢি
অনুরুপ বর্ণনা করেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন ০; খালিদ যখন তার কর্মকাণ্ড শুরু করেন, যে দৃশ্য
দেখে জাহ্দাম বলেছিল, ওহে বনী জ্বযায়মা ! লড়াই বৃথ৷ গেল, তোমরা এখন যে অবস্থায়
পড়েছ আমি পুর্বেই সে ব্যাপারে তােমাদেরকে সতর্ক করেছিলাম ৷
ইবন ইসহাক বলেন০ আমার নিকট এ স০ বাদ পৌছেছে যে, ঐ দিনের ঘটনার ব্যাপারে
খালিদ ও আবদুর রহমান ইবন আওফের মধ্যে কথা ক৷ ৷টাকাটি হয় ৷ আবদুর রহমান খালিদকে
বলেছিলেন, তুমি ইসলামের মধ্যে এসে একটা জাহিলী যুগের কাজ করলে ৷ জবাবে খালিদ
বলেন : আমি তোমার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছি ৷ আবদুর রহমান বললেন, তুমি মিথ্যা
বলছে৷ ৷ আমার পিতার হত্যাকারীকে তো আমি হত্যা করেছি ৷ তুমি বরং তোমার চাচ৷ ফাকিহ
ইবন মুগীরার হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে৷ ৷ এ বিতণ্ডা শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি
করে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌছলাে তখন তিনি বললেন :
“ ধীরে , খালিদ ! ধীরে ৷ আমার সাহাবীদের ব্যাপারে সাবধান আল্লাহ্র কসম , যদি তোমার
কাছে উহুদ পরিমাণও স্বর্ণ থাকে, আর তা তুমি আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দাও, তা হলেও তুমি
আমার সাহাবীদের এক সকাল কিৎবা এক বিকালের পুণ্য লাভেও সমর্থ হবে না ৷ ”
তারপর ইবন ইসহাক খালিদ ও আবদুর রহমানের মধ্যকার দ্বরুন্দুর মুল ঘটনা উল্লেখ করেন ৷
তিনি বলেন ঘ্র তিন ব্যক্তি যথা : ( ১ ) খালিদ ইবন ওয়ালীদের চাচা ফাকিহ ইবন মুপীর৷ ইবন
আবদুল্লাহ ইবন উমার ইবন মাখবুম, (২) আওফ ইবন আবদ আওফ ইবন আবদুল হারিছ ইবন
যুহ্রা ৷ আওফের সাথে তার পুত্র আবদুর রহমানও ছিল (৩) আফ্ফান ইবন আবুল আস ইবন
উমাইয়৷ ইবন আবদে শাম্স ৷ আফফানের সাথে তার পুত্র উছমানও ছিল ৷ উক্ত তিন ব্যক্তি