রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্মের রাতে সংঘটিত
অলৌকিক ঘটনাবলী
রাসুলুল্লাহ (সঃ) যে রাতে তুমিষ্ঠ হন, যে রাতে অসংখ্য মুর্তির উপুড় হয়ে পড়া ও স্থানচ্যুত
হওয়া, যবশা অধিপতি নাআশীর মোঃ ঘটনার বিবরণ, জন্মের সময় রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর সঙ্গে
নুর বের হয়ে তাতে সিরিয়ার প্রাসাদসমুহ আলোকিত হয়ে যাওয়া; রাসুল (না)-এর মাতুণর্ত
থেকে হামাগুড়ি দিয়ে আকাশপানে মাথা ডুবে বের হয়ে আসা, ডেণ ফেটে শিংধিত হয়ে
যাওয়া, রাসুলুল্লাহ (সঃ) যে বয়ে জন্মনাত করেন, যে য্যাটি আলোকিত হয়ে যাওয়া এবং
নজ্যোড়াঙ্গি মানুষের নিকটবর্তী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনার বিবরণ আমরা ইতিপুর্বে অজ্ঞাত
স্থান থেকে অিনের কথা বলা অধ্যায়ে উল্লেখ করে এসেছি ৷
সুহায়শী বর্ণনা করেন যে, ইবশীস জীবনে চারবার বিলাপ করে : ১ অভিশপ্ত হওয়ার
সময় ৷ ২ জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময় ৷ ৩ রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্মের সময় এবং
৪ সুরা ফাতিহা নাযিল হওয়ার সময় ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক হযরত অড়ায়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক
ইহুদী মক্কায় বাস করত ৷ যে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো ৷ রাসুলুল্পাহ (সা) যে রাতে ভুমিষ্ঠ
হন যে রাতে কুরইিশ এর এক মজলিসে সে বলল, আজ রাতে কি তোমাদের মধ্যে কারও
কোনও সন্তানের জন্ম হয়েছে? জবাবে তারা বলল, আল্লাহর কসম ! আমরা এ রকম কিছুই জানি
না ৷ ইহুদীটি বলল, আল্লাহ আকবার ! তোমাদের অজাম্ভে ঘটে থাকলে তো কোনও অসুবিধা
নেই ৷ তবে তোমরা খোজ করে দেখ এবং যা বলছি স্মরণ রাখ ৷ এ রাতে আখেরী নবী ভুমিষ্ঠ
হয়েছেন ৷ তার দুই র্কাধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি চিহ্ন আছে ৷ তাতে ঘোড়ার কেশরের মত
একগুচ্ছ চুল আছে ৷ দুরাত তিনি দুধ পান করবেন না ৷ কারণ একটি দুষ্ট জিন তার মুখে আঙ্গুল
ঢুকিয়ে দিয়েছে ৷ ফলে তাকে দুধ পান থেকে নিবৃত্ত রাখা হয়েছে ৷
শুনে লোকজন মজলিস ছেড়ে উঠে চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে ৷ ইহুদীর কথায় তারা হতভম্ভ
স্তঙ্কিত ! ঘরে গিয়ে প্রত্যেকে তারা ঘরের লোকদেরকে এ খবরটি শুনায় ৷ শুনে তারা বলে উঠে,
হীড়া , আল্লাহর শপথ ! আব্দুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিবের একটি পুত্র সন্তান তুমিষ্ঠ হয়েছে ৷ তারা
তার নাম ব্লেখেছে মুহাম্মদ ৷ এবার তারা ইহুদীর কথা ও এই নবজড়াতক সম্পর্কে কানাঘুষা করতে
করতে ইহুদীর নিকট যায় এবং তাকে এ খবরটি জানায় ৷ ইহুদীটি বলল, তোমরা আমাকে নিয়ে
চল, আমি তাকে একটু দেখব ৷ লোকেরা ইহুদীকে নিয়ে আমেনার ঘরে গিয়ে তাকে বলল,
তোমার পুত্রটিকে একটু আমাদের কাছে দাও ৷ আংমনা পুত্রকে তাদের কাছে দিলে তারা তার
পিঠের কাপড় সরিয়ে ইহুদীর বর্ণিত নিদর্শনটি দেখতে পায় ৷ সাথে সাথে ইহুদী অজ্ঞান হয়ে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ৷ তার জ্ঞান ফিরলে লোকেরা তাকে বলল, কী ব্যাপার, আপনার হয়েছে
কি? ইহুদীটি বলল, আল্লাহর শপথ? নবুওত বনী ইসরাঈল থেকে বিদায় নিল! তোমরা এতে
আনন্দিত হও, হে কুরাইশের দল! আল্লাহর শপথ, তোমাদের সহায়তায় তিনি এমন বিজয় লাভ
করবেন যে, প্রাচ্যে-প্ৰতীচ্যে তার সুসমাচার ছড়িয়ে পড়বে ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বর্ণনা করেন
যে, হাসৃসান ইবন সাবিত (রা) বলেছেন, আমি তখন সাত কি আট বছরের বালক ৷ যা শুনি বা
দেখি, তা বুঝবার বয়স তখন আমার হয়েছে ৷ হঠাৎ একদিন সকাল বেলা ইয়াসরিবে জনৈক
ইহুদীকে চীৎকার করে বলতে শুনলাম, হে ইহুদী সমাজ! চীৎকার শুনে লোকজন তার নিকট
এসে ডীড় জমায় এবং বলে, বল, কি হয়েছে তোমার? সে লোঃ আহমদ নামের যে লোকটির
জন্ম হওয়ার কথা, এই রাতে তার তারকা উদিত হয়েছে ৷
হাফিজ আবু নুয়ায়ম দালায়িলুন্নবুওয়াহ্ কিভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আবু মালিক ইবন
সিনান বলেন, একদা আমি গল্পগুজব করার জন্য আবদুল আণহাল পােত্রে যাই ৷ তখন আমরা
তাদের সঙ্গে সন্ধিৰদ্ধ ৷ সে সময়ে আমি শুনতে পেলাম যে, ইউশা নামক এক ইহুদী বলছে,
আহমদ নবীর’ আগমনের সময় ঘনিয়ে এসেছে ৷ তিনি হোরম থেকে রেৰিয়ে আসবেন ৷ এ
কথা শুনে খলীফা ইবন ছালাবা আন-আশহালী উপহাস করে জিজ্ঞাসা করল, তার পরিচয় কী
হো ইহুদী বলল, তিনি হবেন এমন এক ব্যক্তি যিনি না হবেন বেটে, না লম্বা ৷ দুচোখে তার
লালিমা থাকবে ৷ তিনি হবেন কমলীওয়ালা ৷ তিনিও গাধায় সওয়ার হবেন ৷ তার কাধে তরবারী
ঝুলানো থাকবে ৷ এই নগরী হবে তার হিজরত স্থল ৷ আবু মালিক ইবন সিনান বলেন, ইহুদীর
কথায় অস্তিতুত হয়ে আমি আমার স্বগােত্র রনু খাদরায় চলে এলাম ৷ আমার নিকট থােক ঘটনার
বিবরণ শুনে এক ব্যক্তি বলে উঠল, এ কথা কি ইউশা একাই বলছে, নাকি ইয়াসরিবের সব
ইহুদীর একই কথা! আবু মালিক বলেন, এই ঘটনার পর আমি বনু কুরায়যার নিকট যাই ৷
সেখান গিয়ে দেখতে পেলাম, একদল মানুষ আখেরী নবী সষ্পর্কেই আলাপ-আলোচনা করছে ৷
কথা প্রসঙ্গে যুরায়র ইবন রাতা বললেন, সেই লাল নক্ষত্রটি উদিত হয়ে গেছে, যা কখনও
কোনও নবীর আগমন বা আবির্তাৰের উপলক্ষ ছাড়া কােনদিন উদিত হয় না ৷ এখন তো
আহমদ ছাড়া আর কোন নবীর আগমনের বাকী নেই ৷ আর এই ইয়াসরিবই হবে তার
হিজরত স্থল ৷
আবু সাঈদ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) মদীনা আগমন করার পর আমার আব্বা তাকে
এই ঘটনাটি শুনান ৷ শুনে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেনঃ যুবায়র যদি মুসলমান হত, তাহলে
নেতৃস্থানীয় অনেক ইহুদীও মুসলমান হয়ে যেত ৷ কারণ ওরা এর অনুগত ৷ ’
আবু নুয়ায়ম (র) বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবন সাবিত (বা) বলেন, বনু কুরায়যা ও বনু
নযীর এর ইহুদী পণ্ডিতগণ নবী কয়ীম (না)-এর পরিচিতি সম্পর্কে আলোচনা করতেন ৷
অবশেষে লাল নক্ষত্র উদিত হয়ে গেলে তারা ঘোষণা করে যে, ইনিই আখেরী নবী; এর পরে
আর কোনও নবী আসবেন না ৷ নাম তার আহমদ এবং তার হিজরত স্থল হবে ইয়াসরিব ৷ কিন্তু
যখন নবী করীম (সা) হিজরত করে মদীনায় আসলেন আর তারা র্তাকে অগ্রাহ্য করে , হিংসা
তবে আমরা জানতে পারব এ সময় আগুন পত হওয়া সং ক্রস্তি পত্র ত্জদের কাছে
বললেন ,আরবের কোনও এক উপকণ্ঠে বিশেষ কোনও একটি ঘটনা ঘটে
কিসরা নুমান ইবন মুনযির এর নিকট এ মর্মে পত্র লিখেনং
ব্যক্তির সন্ধান দেব, যিনি এর জবাব দিতে সক্ষম হবেন ৷ কিসরা তাকে ঘটনাটি খুলে বলেন ৷
জবাবে আবদুল মাসীহ বলেন, আমার এক মামা এর জবাব দিতে পারবেন ৷ তিনি সিরিয়ার
সাতীহ নামক স্থানের উপকষ্ঠে বাস করেন ৷ কিসরা বললেন, ঠিক আছে ৷ তুমি তার কাছে গিয়ে
দেখ, সে এর জবাব দিতে পারে কিনা ৷ আমি যা জানতে চাই তাকে তা জিজ্ঞেস করে তার
ব্যাখ্যা জেনে এসো ৷ আবদুল মাসীহ সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়ার রওয়ানা হয়ে মুমুর্বু সাতীহ এর নিকট
পৌছেন ৷ তিনি তাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন ৷ কিন্তু সাতীহ সালামের কোন
জবড়াবও দিলেন না বা কোন কথাও বললেন না ৷ তখন আবদুল মাসীহ কবিতার কয়েকটি পংক্তি
আবৃত্তি করেন ৷ তা শুনে এবার সাতীহ মাথা তুলে বলেন, আবদুল মাসীহ! উটের পিঠে চড়ে
তুমি সাতীহ এর নিকট এসেছ ৷ অথচ সে তখন মৃত্যুপথযাত্রী ৷ আমি আমি, তোমাকে সাসান
বংশের বাদশাহ প্রেরণ করেছেন ৷ রড়াজপ্রাসাদ প্রকম্পিত হওয়ায় অগ্নিকুণ্ড নিতে যাওয়ায় এবং
মুবিযানের স্বপ্ন যাতে তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, উটগুব্লা যেড়াগুলোক্লে তাড়া করছে এবং
দজলা অতিক্রম করে জনপদসমুহে ছড়িয়ে পড়েছে ৷ শোন হে আবদুল মাসীহ! যখন তিলাওয়াত
বৃদ্ধি পাবে, <মাটা ছড়িওয়ালা আত্মপ্রকাশ করবেন, সামাওয়া উপত্যক৷ প্লাবিত হবে, সাওয়াহ্রদ
শুকিয়ে যাবে এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড নিতে যাবে, তখন নাম আর সাতীহ এর জন্য শাম থাকবে
না ৷ গদ্বুজ্যো সমসংখ্যক রাজত্ব-রাণী তার কর্তৃতু কেড়ে নেবে, আর সেই সময়টি এসে পড়েছে ৷
একথাটি উচ্চারণ করেই সাতীহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৷
আবদুল মাসীহ তখনই ৰাহনে চড়ে কবিতা আবৃত্তি করতে করতে রওয়ানা হয়ে পড়েন ৷
কিসরার নিকট এসে তিনি তাকে শুনান ৷ সাতীহ যা বলেছেন, তার বিবরণ দেন ৷ শুনে কিসরা
বলে উঠেন, তার মানে র্দাড়াল, আমার পর চৌদ্দজন রাজা রাজত্ব করবে ৷
বাস্তবিক পরবর্তী চার বছরে দশজন রাজা পারস্যের সিংহাসনে বসেন ৷ অবশিষ্টপণ রাজত্ব
করেন হযরত উসমান (রা)-এর খিলাফত পর্যন্ত ৷ ৰায়যাৰীও অনুরুপ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন ৷
আমার মতে, পারস্যের সর্বশেষ রাজা যার নিকট থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়া হয়-তিনি হলেন,
ইয়াযদাগির্দ ইবন শাহরিয়ার ইবন পারভেজ ইবন হুরমুয ইবন নওশিরওয়ী ৷ এই রাজার
আমলেই রাজপ্রাসাদে ফাটল ধরে ৷ তার আগে তার পুর্বসুরীরা তিন হাজার একশ চৌষট্টি বছর
রাজত্ব করেছিলেন ৷ এদের সর্বপ্রথম রাজা ছিলেন খিওমারত ইবন উমাইম ইবন লাওয ইবন
সাম ইবন নুহ্ ৷
আলোচ্য সাতীহ এর পরিচয় প্রসঙ্গে ইবন আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন যে, এই
দােকটির নাম রর্বী ইবন রর্বীমা ইবন মাসউদ ইবন মাষিন ইবন যিব ইবন আর্দী ইবন মড়াষিন
ইবন আস-আবদ ৷ কেউ কেউ তাকে রর্বী ইবন মাসউদও বলেছেন ৷ তার মা রিদআ ৰিনতে সাপ
ইবনুল হারািহ আস-হাঙ্গুৰী ৷ তার বত্শ সডিকা জািতাবেও বর্ণিত হয়েছে ৷ ইবনে আসড়াকির এর
মতে তিনি ঙ্গাৰিরড়ার বাস করতেন ৷ তিনি আৰু হাতিম সজিংতনৌ থেকে বর্ণনা করেন যে,
তার করেস্কো শন্মেখ বলেছেন, সসৌং বম্বো সেকেমান ইবন আদ এর পরবর্তী যুগের মনুেধ্ ৷
মবড়াপ্লাবনের আমলে তার জন্ম ৷ বাদশাহ ইনাঅ্যাং মাংস পর্ঘস্ব তিনি সীৰিত হিসেব ৷
বর্খাৎ পার ত্রিশ প্রজন্মের আবু তিনি লাভ হ্মন ৷ তার অ্যাং ছিল তার মোঃ ৷
আবদুল কায়স গোত্র দাবি করে যে, সাতীহ তাদের বংশের লোক, অপরদিকে আযদ
গোত্রীয়দের দাবি হচ্ছে যে, তিনি তাদের বংশের ৷ অধিকাংশ মুহাদ্দিস সাডীহকে আযদ বংশীয়
বলে অভিমত প্রকাশ করেন ৷ তবে আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে , তার প্রকৃত পরিচয় কী?
তবে তার বংশধররা নিজেদেরকে আযদবংশীয় বলে দাবি করেন ৷
ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সাতীহ-এর সঙ্গে আদম
সন্তানের কারো কোনও মিল ছিল না ৷ তার দেহ ছিল গোশতের একটি টুকরা, যার মাথায়
দৃ’চােখে ও দৃ’হাতে ছাড়া আর কোথাও অস্থি অথবা শিরা ছিল না ৷ কাপড় যেভাবে র্ডাজ করা
যায় তেমনি তাকেও দৃ’পা থেকে ঘাড় পর্যন্ত ডড়াজ করা যেত ৷ জিহবা ছাড়া আর দেহে নাড়বার
মত কিছুই ছিল নট্রু ৷ কেউ কেউ বলেন, সাতীহ রেগে গেলে তার দেহ ফুলে যেত এবং তিনি
বসে পড়তেন ৷
ইবন আব্বাস (বা) আরও বলেন, সাতীহ একবার মক্কায় এসেছিলেন ৷ কুসাই এর দৃই পুত্র
আব্দে শামস ও আব্দে মানাফ সহ মক্কার নেতৃস্থানীয় অনেকে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে
আসেন ৷ তারা তাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন ৷ সব প্রশ্নের ঠিক ঠিক
জবাব তিনি দেন ৷ শেষ যুগে কী ঘটবে, যে বিষয়েও তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে ৷ জবাবে তিনি
বলেন, আল্লাহ আমাকে যা ইলহাম করেছেন, তার আলোকে বলছি যে, হে আরব জাতি ৷
তোমরা এখন চরম বার্ধক্যের যুগে উপনীত ৷ তোমাদের আর অনারবদের বুদ্ধি-বিচক্ষণতা
সমান ৷ তোমাদের নিকট না আছে বিদ্যা, না আছে বুদ্ধি ৷ তবে তোমাদের পরবর্তীদের মধ্যে
এমন কিছু বিবেকৰান লোকের আবির্ভাব ঘটবে যে, তারা নানা প্রকার বিদ্যা অৰেষণ করবে ৷
সেই বিদ্যার আলোকে তারা মুর্তি ভেঙ্গে চুরমার করে ফেনবে, বোপ্য লোকের অনুসরণ করবে,
অনারবদের হত্যা করবে এবং বকরীর পাল আলাপ করে বেড়াবে ৷ অতঃপর এই নগরবাসীদের
মধ্যে হতে এমন একজন সুপথপ্রাপ্ত নবীর আবির্ভাব ঘটবে, যিনি সত্য ও সঠিক পথের
দিক-নির্দেশনা করবেন এবং বহু দেবতার উপাসনা পরিহার করে এক রব এর ইবাদত
করবেন ৷ অতঃপর আল্লাহ তাকে প্রশংসিত এক স্থানে তুলে নেবেন ৷ তখন তিনি ইহজগত
থেকে আড়ালে থাকবেন; বিতু আকাশে থাকবেন প্রকাশমান ৷ তারপর এমন এক সিদ্দিক তথা
মহাসত্যবাদী তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি বিচার করবেন সঠিক এবং অধিকার প্রদানে হবেন
অকুণ্ঠচিত্ত ৷
এরপর সরল-সঠিক পথের অনুসারী, অভিজ্ঞ ও সমাত এক ব্যক্তি তার স্থুশাডিষিক্ত হবেন ৷
আতিথোতাে ও ন্যায় বিচারে তিনি হবেন সর্বজনবিদিত ৷ অতঃপর সাতীহ হযরত উদ্যান (বা) ,
তার হত্যা এবং তত্পরবর্তী বনু উমাইয়া ও বনু আব্বাসের যুগে যা কিছু ঘটবে, সব উল্লেখ
করেন ৷ এরপর যত ফেতনা ও যুদ্ধ-কািহ সংঘটিত হবে, তাও তার বক্তব্য থেকে বাদ পড়েনি ৷
ইবন আসাবির ইবন আব্বাস (না) থেকে এই বর্শনাঢি বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন ৷
উপরে আমরা উল্লেখ করে এসেছি যে, এক স্বপ্নের ব্যাখ্যার সাতীহ ইয়মােনের বাদশাহ
রর্বীয়া ইবন নাসরষ্কে ইমামানে বা কী অরহ্মেকতা দেখা দিবে এবং বিশ্বের ক্ষমতার মত দেন
হবে, সবকিছুর তবিষ্যৰ্পৌ কন্নেহিণেন ৷ এমনকি জ্যোও বঘেচ্চিস্ন যে, এক পর্যায়ে
কেননা, উপরিউক্ত বর্ণনায় আমরা বলেছি যে, সাতীহ তার ভাপিনাকে বলেছিলেন, হে আবদুল
মাসীহ যখন তিলাওয়াত বৃদ্ধি পাবে, শক্ত ছড়িওয়ালা আত্মপ্রকাশ করবেন, সামাওয়ার উপত্যকা
কুসে উঠবে, সাওয়াহ্রদ শুকিয়ে যাবে ও পারস্যের অপ্লিকুণ্ড নিবক্তভ্র যা:র, সাতীহ-এর জন্য শাম
আর খান থাকবে না, গস্তুজের সংখ্যার সমান সংখ্যক রাজত্ব-বাণী শ্যামর রাজত্ব করবে ৷ আর যা
আসবার, তা আসবেই ৷
এরপর সাভীহর মৃত্যু হয় ৷ ঘটনাটা ছিল ৱাসুলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের একমাস কিংবা তার
চাইতে কিছু কম পরে ৷ তার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ইরাকের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কোন এক প্রত্যন্ত
অঞ্চলে ৷ আল্লাহই সর্বজ্ঞ ৷
ইবন তাররার আল হারীরি বলেন, সাতীহ সাতশ’ বছরের আযু পেয়েছিলেন ৷ আবার কেউ
বলেন, পড়াচশ’ বছর, কেউ বলেন, তিনশ’ বছর ৷ ইবন আসাকির বর্ণনা করেন যে, এক বাদশাহ
সাতীহকে একটি শিশুর বংশ পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, যার ন্পিভৃপরিচয় সম্পর্কে
মতভেদ ছিল ৷ জবাবে সাতীহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তার সমাধান দেন ৷ এমনি এক জটিল সমস্যার
সমাধান পেয়ে বাদশাহ র্তাকে বললেন, সাতীহ! তোমার এই বিদ্যার উৎস সম্পর্কে তুমি আমাকে
বলবে কি? জবাবে সাতীহ বললেন, এই বিদ্যা আমার নিজস্ব নয় ৷ আমি এই বিদ্যা লাভ
করেছি, আমার সেই ভাইয়ের নিকট থেকে, যিনি সিনাই পর্বতে ওহী শ্রবণ করেছিলেন ৷
বাদশাহ বললেন, এমন নয় (তা যে, তোমার সেই জিন ভাইটি সর্বক্ষণ তোমার সঙ্গে
থাকে-কখ্যনা তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না? না, এমন নয় বরং আমি যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়ি, সেও আলাদা হয়ে যায় ৷ তবে সে যা বলে , আমি তা ছাড়া অন্যকিছু বলি না ৷
উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, সাতীহ এবং আরেকজন ভবিষ্যদ্বক্তা (ইবন মসআব ইবন
ইযাশকুর ইবন রাহম ইবন বুসর ইবন উকবা) একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৷ জন্মের পর
তাদেরকে তারীফা বিনতে হুসাইন আল হামীদিয়াহ নড়াম্বী এক গণক ঠাকুরণীর নিকট নিয়ে
যাওয়া হয় ৷ সে তাদের মুখে থুথু দেয় ৷ ফলে তার থেকে তারা জ্যেড়াতিষৰিদ্যা লাভ করে ৷ আর
সেই গণক ঠাকুরণী সেদিনই মারা যায় ৷ সাতীহ ছিলেন আধা মানুষ ৷ কথিত আছে যে, খালিদ
ইবন আবদুল্লাহ আল-কাসরী র্তারই বংশের লোক ৷ উল্লেখ্য যে, শিক্ সাতীহ-এর বেশ কিছুকাল
আগে মারা যান ৷
অপরদিকে আবদুল মাসীহ ইবন আমর ইবন কায়স ইবন হায়্যান ইবন নুফায়লা
আল-গাস্সানী আন-নাসরানী ছিলেন একজন প্রবীণ ব্যক্তি ৷ হাফিজ ইবন আসাকির তার
ইতিহাস গ্রন্থে তার জীবন-চরিত আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এই আবদুল মাসীহ্-ই
খালিদ ইবন ওলীদ (রা)-এর সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন ৷ এই প্রসঙ্গে ইবন আসাকির দীর্ঘ একটি
কাহিনীও উল্লেখ করেছেন এবং এও লিখেছেন যে, খালিদ ইবন ওলীদ (বা) এক সময় তার হাত
থেকে বিষ পেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তা তার বিন্দুমাত্র অনিষ্ট করেনি ৷ কেননা বিয়ের পাত্র হাতে নিয়ে
তিনি বলেছিলেন :
ল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৬৩-
এই বলে তিনি পাত্রস্থ পদার্থগুলো খেয়ে ফেলেন ৷ খালিদ ইবনে ওলীদের জ্ঞান হারাবার
উপক্রম হয় ৷ সঙ্গে সঙ্গে তিনি দু’হাতে নিজের দু’হাতে চাপড় মারেন এবং ঘর্মাক্ত হন ৷ তিনি
জ্ঞান ফিরে পান ৷ তখন আবদুল মাসীহকে তিনি কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করে শুনান ৷
আবু নুআয়ম শুআয়ব এর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, মাররুয যাহরান
নামক স্থানে একজন ধর্যযাজক বাস করতেন ৷ তার নাম ছিল ঈস ৷ তিনি সিরিয়ার অধিবাসী
ছিলেন ৷ তিনি ছিলেন আস ইবন ওয়ায়েল এর আশ্রিত ৷ আল্লাহ তাকে প্রচুর জ্ঞান দান
করেছিলেন এবং তাতে মক্কাবাসীদের জন্য বহু উপকার করেছিলেন ৷৩ তার একটি উপাসনালয়
ছিল, তাচ তই তিনি সর্বদা ৷থাকতেন ৷ বছরে কেবল একবার মক্কায় আস্তেন এবং মক্কাবাসীদের
সাথে দেখা সাক্ষাত করতেন ৷ তিনি তাদেরকে বলতেন, হে মক্কাবাসী ! অচিরেই তোমাদের
মাঝে এমন এক নবজাতকের আবির্ভাব হবে, সমগ্র আরব যার ধর্ম অবলম্বন করবে এবং আজম
তথা আরবের বাইরেও তার রাজৎ ছড়িয়ে পড়বে ৷ এই সেই সময , যে ব্যক্তি তাকে পাবে এবং
তার আনুগত্য করবে, সে কৃতকার্যহবে ৷ আর যে ব্যক্তি তাকে পেয়েও র্তার বিরুদ্ধাচরণ করবে,
সে ব্যর্থকাম হবে ৷ আল্লাহর শপথ ৷ তীর অনুসন্ধান ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে মদ-রুটি ও
শান্তির দেশ ত্যাগ করে আমি এই অভাব অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনাঃ ৷র দেশে আসিনি৷ মক্কায়
কোন সন্তান ভুমিষ্ঠ হলেই তিনি তার ব্যাপারে খোজ খবর নিতেন এবং শুনে বলতেন, না, এখন
তার আগমন ঘটেনি ৷ তখন তাকে বলা হতো, তাহলে বলুন না, সেই শি শুটি (কমন হবে?
তিনি বলতেন, না, বলা যাবে না ৷ প্ৰভীক্ষিত সেই মহান শিশুটির পরিচয় তিনি তার নিরাপত্তার
খাতিরেই গোপন রাখতেন ৷ কারণ তিনি জা নতে ন যে, সেই শিশুটির স্বজাতি তার অনিষ্ট করার
চেষ্টা করবে ৷
রাসুলুল্লাহ (সা) যে রাতে ভুমিষ্ঠ হন ৷ সেদিন প্ৰত্যুষে আবদুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিব
এসে ঈসের উপাসনালয়ের প্রধান ফটকের কাছে র্দাড়িয়ে তাকে ডাক দেন ৷ ডাক শুনে তিনি
আওয়াজ করে জিজ্ঞেস করেন, কো তিনি বললেন, আমি আবদুল্লাহ ৷ যাজক তার নিকটে এসে
বললেন, তমি তার পিতা হও ৷ আমি সেই শিশুটির কথা তোমাদের বলতাম যে, তিনি সোমবার
দিনে তুমিষ্ঠ হবেন, সােমবারে নবুওত লাভ করবেন এবং সোমবারেই তার ইস্তিকাল হবে ৷ সেই
প্রভীক্ষিত শিশুটি ভুমিষ্ঠ হয়ে গেছেন ৷ আবদুল্লাহ বললেন, আজ প্রত ত্যুষে আমার একটি সন্তান
জন্মেছে ৷ জিজ্ঞাসা করলেন,ত তার ৷কি নাম রেখেছেন? আব্দুল্লাহ বললেন, নাম রেখেছি, মুহাম্মদ ৷
পাদ্রী বললেন, হে কা বাব সেবায়ে৩ গণ! আমারও কামনা এই ছিল যে, সেই শিশুটি যেন
আপনাদের মধ্য থেকেই আগমন করেন ৷ তিনটি লক্ষ্যণ আমি বুঝতে পেয়েছি যে, আপনার
পুত্রই সেই প্রত্তীক্ষিত শিশু ৷ এক, গত রাতে তার নক্ষত্র উদিত হয়েছে ৷ দুই, আজ তিনি ভুমিষ্ঠ
হয়েছেন এবং তিন, তার নাম মুহাম্মদ ৷ আপনি যান ৷ আমি আপনাদেরকে যে শিশুটির কথা
বলতাম, আপনার পুত্র তিনিই ৷ আবদুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি করে বুঝলেন যে,
আমার পুএই তিনি? আজকে (তা অন্য শিশুরও জন্ম হয়ে থাকতে পারে? পাদ্রী বললেন,
আপনার পুত্রের সঙ্গে তার নাম মিলে গেছে ৷ আর আল্লাহ আলিমদের জন্য তার ইলমকে
সন্দেহজনক করেন না ৷ কারণ, তা হলো অকাট্য প্রমাণ স্বরুপ ৷
তাছাড় তা এর আরও একটি প্রমাণ হলো, আপনার পুত্র এখন ব্যাথাগ্রস্ত ৷ তার এই ব্যথা
তিনদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ৷ এতে তার ক্ষুধা প্রকাশ পাবে ৷ অতপ্পর তিনি সুন্থতা লাভ
করবেন ৷ আপনি আপনার জিহ্বাকে সংযত করে চলবেন ৷ কেননা, তার প্রতি এত বেশি বিদ্বেষ
পোষণ করা হবে, যা কখনো অন্য কারও বেলায় হয়নি এবং তার উপর এত বেশি অত্যাচার
হবে, যা অন্য কারও উপর কােনদিন হয়নি ৷ তার কথা বলার বয়স পর্যন্ত যদি আপনি বেচে
থাকেন এবং তিনি তার দাওয়াতের কাজ শুরু করেন, তাহলে আপনারাজাতির পক্ষ থেকে
আপনি এমন আচরণ দেখতে পাবেন, যা আপনি সহ্য করতে পারবেন না ৷ তখন ধৈর্যধারণ আর
লাঞ্চুনা ভোগ করা ব্যতীত কোন গতি থাকবে না ৷ অতএব আপনি আপনার জিহবাকে সংযত
রাখবেন এবং তাকে চোখে চোখে রাখবেন ৷ আবদুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন, শিশুটির আবু কত
হবো পাদ্রী বললেন, আয়ু৩ তার বেশি হোক আর কম হোক নত্তুরে পৌছবে না ৷ সত্তুরের নিচে
ষাটের ওপরে যে কোন বেজােড সং থ্যার বয়সে তার মৃত্যু হন্থ< ৷ আর এই হবে৩ তার উম্মতের
অধিকাৎহু শের গড় আবু ৷
বর্ণনাকারী বলেন, মুহাররমের দশ তারিখে রাসুলুল্লাহ (সা) মায়ের গর্ভে আসেন এবং
হস্তিবাহিনীর যুদ্ধের ণ্তইশ দিন আগে রমযান মাসের বার তারিখে সোমবার ভুমিষ্ঠ হন ৷
রাসুলুল্লাহ (না)-এর লালন-পালনকারী ও দাই-মাগণের বিবরণ
উম্মে আয়মান রাসুলুল্লাহ (না)-কে লালন পালন করতেন ৷ তার আসল নাম ছিল
বারাকা এই উম্মে আয়মানকে রাসুলুল্লাহ (সা) উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছিলেন ৷ পরবর্তীকালে
নবী করীম (সা) তাকে আযাদ করে তার আয়াদকৃত গোলাম যায়েদ ইবনে হাবিছা র সঙ্গে বিবাহ
দেন ৷ এই ত্রীর গর্ভেই যায়েদ ইবনে হারিছার পুত্র উসামা ইবনে যায়েদ (রা) এর জন্ম হয় ৷
হালীমা সা দিয়ার আগে তার মা আমিনা এবং আবু লাহাব এর দাসী ছুওয়াইবা (রা)
রাসুলুল্লাহ (না)-কে দুধপান করাতেন ৷
ইমাম বুখারী ও মুসলিমত তাদের সহীহদ্বয়ে বর্ণনা করেন যে, আবু সুফিয়ানের কন্যা উম্মে
হাবীবা একদিন রাসুল (সা) কে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার বোন আয্যাহ্ বিনত
আবু সুফিয়ানকে বিয়ে করুন! উত্তরে রাসুল (সা) বললেনং এটি কি তুমি পছন্দ কর? আমি
বললামং : ত্মী হ্যা ৷ তবে আমিই তো আপনার একমাত্র শ্রী নই? কল্যাণ লাভে আমার বোনটি
আমার সাথে শরীক হোক এটি আমার পছন্দনীয় ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন : কিভু আমার জন্য
হালাল হবে না ৷ উম্মে হাবীবাহ বলেন, তখন আমি বললাম, আমরা কিত্তু বলাবলি করছি যে ,
আপনি আবু সালামার কন্যাকে বিয়ে করতে আগ্রহী ৷ এক বর্ণনায় আবু সালামার কন্যা দৃররার
নামও উল্লেখ আছে ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন : তুমি কি উম্মে সালামার কন্যার কথা বলছন্
আমি বললাম, জী হীা ৷ তিনি বললেন০ উম্মে সালামার কন্যা যদি আমার ত্রীর সাথে আগত
পালিতা কন্যা নাও হত ,তবুও সে আমার জন্য হালাল হত না ৷ কারণ সে আমার দুধ ভাই এর
কন্যা ৷ ছুওয়াইবা আমি এবং আবু সালামা উভয়বেইি দুধ পান করান ৷ অতএব তোমরা আমার
কাছে তোমাদের কন্যা ও বোনদের কোন প্রস্তাব নিয়ে এস না ৷ বুখারীর বর্ণনায় এও আছে যে,
উরওয়া (র) বলেন, ছুওয়াইবা হচ্ছেন আবু লাহাবের আযাদকৃতা দাসী ৷ মুক্তি পাওয়ার পর
তিনি রাসুলুল্লাহ (সা)-কে দুধ পান করিয়ে ছিলেন ৷ আবু লাহাব এর মৃত্যুর পর তারই
পরিবারের কেউ একজন তাকে অত্যন্ত বিমর্য অবস্থায় স্বপ্নে দেখেন ৷ তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস
করেন, আপনি এখন কি হালে আছেন? আবু লাহাব বলল, তোমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর
এ পর্যন্ত আমি কোন কল্যাণ চোখে দেখিনি ৷ তবে ছুওয়াইবাকে মৃকুক্ত করে দেয়ার বদৌলতে
আমি এই পর্যায়ে উপনীত হয়েছি ৷ এই বলে সে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তজ্জীয় মধ্যবর্তী স্থানে
অবস্থিত একটি ছিদ্রের প্রতি ইংগিত করে ৷
সুহায়লী প্রমুখ উল্লেখ করেছেন, আবু লাহাবকে যিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, তিনি তারই ভাই
আব্বাস (রা) ৷ ঘটনাটি ঘটেছিল আবু লাহড়ারের মৃত্যুর এক বছর পর, বদর যুদ্ধের পরে ৷ সেই
স্বপ্নের বিবরণে একথাও উল্লেখ আছে যে, আবু লাহাব আব্বম্পাক বলেছিল যে, সোমবার
দিবসে আমার শাস্তি লঘু করা হয় ৷ অভিজ্ঞ মহল বলেন, তার কারণ এই ছিল যে, ছুওয়াইবা
যখন আবু লাহাবকে তার ভাতিজা মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহর জন্মের সুসংবাদ প্রদান করে,
তক্ষণাৎ সে ছুওয়াইরাকে আযড়াদ করে দিয়েছিল ৷ এটা তারই পুরস্কার স্বরুপ ৷
হলীেমার ঘরে রড়াসুলুল্লাহ (সা)
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন; অতঃপর রাসুলুল্লাহ (না)-এর জন্য হালীমা বিনতে আবী
যুওয়াইব-এর দুধপানের ব্যবস্থা করা হয় ৷ হালীমার পিতা আবু যুওয়াইব-এর পুরো নাম
আবদুল্লাহ ইবন হারিছ ৷ তার বংশলতিকা হচ্ছে এরুপ ৷ আবদুল্লাহ ইবন শাজনাহ ইবন জাৰির
ইবন বিযাম ইবন নাসিরা ইবন সাদ ইবন বকর ইবন হাওয়াযিন ইবনে মনসুর ইবন ইকরিমা
ইবন হাফসা ইবন কায়স আইলান ইবন মুযার ৷ ইবন ইসহাক বলেন : আর রাসুলুল্লাহ
(না)-এর দৃধপিতা-তথা হালীমার স্বামীর নাম হারিছ ইবন আবদুল উযযা ইবন রিফাআ ইবন
মিলান ইবন নাসিরা ইবন সাদ ইবন বকর ইবন হাওয়াযিন ৷ নবী করীম (না)-এর দুধ ভাই
বোনদের নাম যথাক্রমে আবদুল্লাহ ইবন হারিছ, আনীসা বিনতে হারিছ ও হুযাফা বিনতে
হারিছ ৷ হুযাফার অপর নাম শায়মা ৷ ঐতিহাসিকগণ বলেন, এই শায়মাই তার মায়ের সঙ্গে
রাসুলুল্লাহ (সা)-কে তাদের বাড়িতে তার অবস্থানকালে লালন পালন করতেন ৷
ইবন ইসহাক আবদুল্লাহ ইবন জাফর ইবন আবু তালিব সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেন, আমি হালিমা বিনতে হারিছ সম্পর্কে শুনেছি যে , তিনি বলেছেন : কোন এক দুর্তিক্ষের
বছর দৃগ্ধপোষ্য শিশু সঞ্চাহের জন্য বনু সাদের কয়েকজন মহিলার সঙ্গে আমি মক্কায় যাই ৷
( ওয়াকেদী তার সনদে উল্লেখ করেছেন যে, দুন্ধ্যপায্য শিশু অম্বেষণকারী মহিলাদের সংখ্যা ছিল
দশ) ৷ দুর্বল একটি গাধীতে সওয়ার হয়ে আমি মক্কায় পৌছি ৷ আমার সঙ্গে ছিল আমারই একটি
শিশু সন্তান আর একটি বুড়ো উটনী ৷ আল্লাহর শপথ ! উটনীটি আমার এক ফৌটা দৃধও দিচ্ছিল
না ৷ আর শিশুটির যন্ত্রণায় আমরা সেই রাতে একবিন্দুও ঘুমাতে পারিনি ৷ কারণ তাকে
খাওয়াবার মত না পেয়েছি আমার স্তনে এক কেটিড়া দুধ, না পেয়েছি তাকে পান করাবার মত
উটনীর সামান্য দুধ ৷ তবে আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠে স্বচ্ছলতা লাভে আশাবাদী ছিলাম ৷
যা হোক, অতি দুর্বল গাধীটির পিঠে সওয়ার হয়ে আমরা মক্কা এসে পৌছলাম ৷ দৃর্বলতার
কারণে গাধীটি আমাদেরকে যেন বহন করতে পারছিল না ৷ আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি,
আমাদের সব ক’জন মহিলার সম্মুখেই রাসুলুল্লাহ (না)-কে পেশ করা হয়েছিল ৷ কিংব্লু শিশুটি
এভীম শুনে কেউই তাকে গ্রহণ করতে সম্মত হল না ৷ আমরা বললাম এই এভীম শিশুর যা
আমাদের কি করতে পারবো আমরা তে তা শিশুর পিতার নিকট থেকে সুযোগ সুবিধা আশা ৷করি ৷
আর এই শিশুটির মাসে তো আমাদের কিছুই করতে পারবে না৷
যা হোক, আমি ছাড়া আমার সঙ্গী সব মহিলা একটি করে শিশু নিয়ে নেয় ৷ আমরা যখন
মুহাম্মদ ছাড়া আর কোন শিশুই পেলাম না এবং ফেরার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম; তখন আমার
স্বামী হারিছকে বললাম, আল্লাহর শপথ, শিশু সন্তান না নিয়ে এইভাবে শুন্য হাতে ফিরে যেতে
আমার খারাপ লাগছে ৷ আমি ওই এভীম শিশুটিকে অবশ্যই নিয়ে যাব ৷ স্বামী বললেন, ঠিক
আছে, তাই কর হতে পারে , আল্লাহ তার মধ্যে আমাদের জন্য বরকত রেখেছেন ৷ আমি গিয়ে
শিশুটিকে নিয়ে নিলাম ৷ আল্লাহর শপথ, আমি তো তাকে গ্রহ-শ্ করেছিলাম অন্য শিশু না ৷পেয়ে
নিতা ৷ম্ভ নিরুপায় হয়ে ৷ এভীম মুহ৷ ম্মদকে নিয়ে আমি আমার বাহণের কাছে গেলাম ৷ আমি লক্ষ্য
করলাম, আমার স্তনদ্বয় পর্যাপ্ত দৃধে পরিপুর্ণ ৷ শিশু মুহাম্মদ তৃপ্তির সাথে তা পান করে এবং৩ তার
দুধ ভাইও সেই দুধ পান করে তৃপ্ত হয় ৷ আমার স্বামী উটনীর নিকট গেলেন ৷ তিনি দেখতে
পান যে, তার স্তন দুধে পরিপুর্ণ ৷ উটনী থেকে তিনি দুধ দােহন করলেন ৷ নিজে পান করলেন,
আমিও তুপ্তি সহকারে পান করলাম ৷ আমরা শান্তিতে রাত কাটা ৷লাম ৷
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার স্বামী আমাকে বললেন, হালীমা৷ আল্লাহর শপথ, আমার
মনে হচ্ছে, তুমি একটি বরকতময় শিশুই নিয়েছ ৷ দেখলে না, ওকে আনার পর থেকে এই রাতে
আমরা কত কল্যাণ ও বরকত লাভ করলাম !’ এরপর থেকে আল্লাহ আমাদের জন্য এই কল্যাণ
আরও বৃদ্ধি করতে থাকেন ৷
এরপর আমরা সকলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম ৷ শপথ আল্লাহর! আমার পাধীটি
আমাদের নিয়ে এত ড্রুতপতিতে ছুটে চলে যে, সঙ্গের একটি পাধাও তার নাপাল পাচ্ছিল না ৷৩ তা
দেখে আমার সঙ্গীরা বলতে শুরু করে যে, আবু যুআইব-এর কন্যা ! ব্যা ৷পারট৷ কী? এই কি
ন্ তোমার সেই পাধী, যাতে করে তুমি আমাদের সঙ্গে এসেছিলে? আমি বললাম , হীা, এটিই
আমার সেই পাধী, যাতে চড়ে আমি তোমাদের সঙ্গে এসেছিলাম ৷ তারা বলল, আল্লাহর শপথ !
নিশ্চয় এর বিশেষ কোন রহস্য আছে ৷
এভাবে আমরা বনৃ সাদ-এর এলাকায় এসে পৌছলাম ৷ তখন এই ভুখণ্ড অপেক্ষা আল্লাহর
জমীনে অধিকতর অনুর্বর কোন ভুমি ছিল বলে আমার মনে হয় না ৷ আমার বকরীর পাল
সারাদিন চরে সন্ধ্যাবেলা তৃপ্ত পেটে স্তন ভর্তি দুধ নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করে ৷ আমরা
ইচ্ছামত দুধ দােহন করতে লাপলাম ৷ অথচ, আমাদের আশেপাঢ৷ তখন কারও বকরীই এক
ফৌটা দুধ দিচ্ছিল না ৷ প্রতিবেশীর বকরীগুলাে সারাদিন চরে সন্ধ্যাবেলা ক্ষুধার্ত (পটেই ফিরে
আসভাে ৷ তারা তাদের রাখালদের বলে দেয় যে, আবু যুআইব-এর কন্যার বকরী পাল যেখানে
চরে, আজ থেকে আমাদের বকরীগুলােও তোমরা সেখানেই চরাবে ৷ ফলে, তারা তাদের বকরী
আমার বকরী পালের সঙ্গে চরাতে শুরু করে ৷ কিভু তার পরও তাদের বকরী সেই দৃধৰিহীন
ক্ষুধা ৷র্ত অবস্থায় ফিরতো আ র আমার বকরী ফিরতে ৷তৃপ্তপেটে স্তন ভর্তি ৩দৃধ নিয়েই ৷ এইডা ৷বে
দৃ’দৃ’টি বছর পর্যন্ত আল্লাহ আমাদেরকে বরকত দান করতে থাকেন ৷
দুর্ভিক্ষের কারণে তখনকার পারিপার্শিক অবস্থা এই ছিল যে, পরিণত বয়সের একটি
যুরককে একটি কিশোরের সঙ্গে তুলনা করা মুশকিল ছিল ৷ কিত্তু আল্লাহর শ্ পথ দৃ ’টি বছর
অতিক্রাম্ভ হতে না হতে মুহাম্মদ একটি নাদৃস-নুদুস বালকে পরিণত হন ৷ আমরা তাকে তার
মায়ের নিকট নিয়ে গেলাম ৷ অথচ, তার বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় তাকে ফিরিয়ে
দিতে আমাদের মন সরছিল না ৷ যা হোক, তার মা তাকে দেখার পর আমি বললাম , আরও
একটি বছরের জন্য আপনার পুত্রকে আমার নিকট দিয়ে দিন ৷ আমি মক্কার মহামারীতে
ছেলেটির আক্রান্ত হয়ে পড়ার আশংকা করছি ৷ আল্লাহর শপথ, আমি কথাটা বারবার বলার
শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মত হয়ে বললেন, ঠিক আছে নিয়ে যাও!
তাকে সঙ্গে করে আমরা বাড়ি চলে গেলাম ৷ দুই কি তিন মাস কাটন্গেল ৷ একদিন তিনি
তার দুধ-শরীক এক ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের বাড়ির পেছনে বকরী রােতে যান ৷ হঠাৎ তার
ভাইটি দৌড়ে এসে বলল, আমাদের ঐ কুরাইশী ভাইকে সাদা পোশাক পরা দু’জন লোক এসে
তাকে শুইয়ে তার পেট চিরে ফেলেছে! খবর শুনে আমি ও তার দৃধ্ পিতা দৌড়ে তার নিকট
গিয়ে দেখতে পেলাম, বিবর্ণ অবন্থ য় তিনি দাড়িয়ে আছেন ৷৩ তার দুধ পিতা তাকে বুকে জড়িয়ে
ধরে জিজ্ঞাসা করেন, যারা! তোমার কী হয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, সাদা পোশাক পরা
দু’জন লোক এসে আমাকে শুইয়ে ফেলে এবং আমার পেট চিরে পেটের ভেতর থেকে কী যেন
বের করে ফেলে দিল! তারপর আমার পেট আগে যেমন ছিল তেমনি করে দেয় ৷ হড়ালীমা
বলেন, আমরা তাকে ঘরে নিয়ে গেলাম ৷৩ তার দুধ পিতা বললেন, হালীমা! আশংকা হয় যে,
আমার এই সত্তানটিকে জিনে পেয়ে বস্যেছ ৷ চল, আমরা যা আশঙ্কা করছি, কিছু একটা ঘটে
যাওয়ার আগেইভ ৷লোয় ভালোয় আমরা তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আমি ৷
তাকে নিয়ে আমরা তার মায়ের কাছে চলে গেলাম ৷ দেখে তার মা জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপার
কী, হে স্নেহশীলা ধাত্রী? আমার পুত্রের প্রতি তোমাদের দৃজনের এত আগ্রহ থাকা সত্বেও
তোমরা একে ফিরিয়ে আমলে কেনঃ হালীম৷ ও তার স্বামী বললেন, আল্লাহর শপথ ! আল্লাহর
অনুগ্রহে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি ৷ এখন এর ব্যাপারে আমাদের মনে নানা
আপদ-ৰিপদের আশংকা হচ্ছে ৷ তাই আপনার পুত্রকে আপনার নিকট ফিরিয়ে দিতে
আসলাম ৷
তখন তিনি বলেন, তোমরা কিসের আশংকা করছ? কী ঘটেছে সত্যি করে আমাকে খুলে
বল আমরা তাকে ঘটনা ৷র বৃত্তান্ত শোনালাম ৷ শুনে তিনি বললেন, তে ৷মর৷ কি এর ব্যাপারে দুষ্ট
জিনের ভয় করছ? কখনো নয়, আল্লাহর শপথ! আমার এই পুত্রের উপর শয়তানের কোন হাত
থাকতে পারে না ৷ আল্লাহর শপথ ৷ আমরা এই পুত্র ভবিষ্যতে বিরাট কিছু হবে ৷ আমি কি
তােমাদেরকে এর ঘটনা শোনার? আমার বললাম, জী হীা, গােনান ৷ তিনি বললেন ও যখন
আমার গর্ভে, তখন একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন আমার ভেতর থেকে এক ঝলক আলো
বের হয়ে তাতে সিরিয়ার সকল রাজপ্রাসাদ আলোকিত হয়ে গেছে ৷ আবার আমি যখন তাকে
প্রসব করি, তখন সে আকাশ পানে মাথা তুলে দু’হাতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে ভুমিষ্ঠ হয় ৷
সুতরাং তোমরা এ নিয়ে দুশ্চিভা করো না এ বর্ণনাটি আরও একাধিক সুত্রেও বর্ণিত হয়েছে ৷
সীরাত ও মাগড়াযী বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে এটি একটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা ৷
ওয়াকিদীইবন আব্বাসের বরাতে বর্ণনা করেন যে , তিনি বলেছেন, হালীমা একদিন নবী
করীম (না)-এর সন্ধানে বের হন ৷ খুজে খুজে একন্থানে তাকে তার বোনের সঙ্গে পান ৷ তখন
তাদের গানের পশুগুলো শুয়ে রয়েছিল ৷ দেখে হালীমা বললেন, তোমরা এই পরমের মধ্যে বসে
আছা জবাবে শিশু নবীর বোন বললেন, আম্মা ! আমার এ ভাইঢির তো গরম পাচ্ছে না ৷
দেখলাম, একখঃণ্ড মেঘ ওকে ছায়া দিচ্ছে ৷ ও থামলে মেঘও থােম যায়, ও চললে যেঘও ওর
সাথে সাথে চলতে শুরু করে ৷ এই অবস্থায়ই আমরা এই জায়গায় এসে পৌছেছি ৷
ইবন ইসহাক থালিদ ইবন মাদান সুত্রে বর্ণনা করেন যে , তিনি বলেছেন, কয়েকজন
সাহাবী একদিন রড়াসুলুল্লাহ (সা)-কে বললেন, আমাদেরকে আপন্ৰুশর নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন ৷
নবী করীম (সা) বললেন, ইা, বলছি; আমি আমার পিতা ইবরাহীমের দোয়া ও ঈসার
সুসংবাদ ৷ আর আমি গর্ভে থাকাবস্থায় আমার আশা স্বপ্নে দেখেন, তার ভেতর থেকে এক ঝলক
নুর বেরিয়ে আসে, যার আলোকে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদসমুহ আলোকিত হয়ে উঠে ৷ সাদ ইবন
বকর রুগাংত্র আমি লালিত-পালিত হই ৷ একদিন আমি আমাদের ছাগল-ভেড়া চরাচ্ছিলাম ৷ এমন
সময় সাদা পেশোক পরিহিত দু’জন লোক আমার নিকট আসে ৷ সঙ্গে তাদের বরফ ভর্তি একটি
সোনার তশতরী ৷ আমাকে তারা শুইয়ে ফেলে, আমার পেট চিরে ফেলে তারপর হৃৎপিও বের
করে তা চিরে ভিতর থেকে কালো রংয়ের একটি রক্তপিণ্ড বের করে ফেলে দেয় ৷ তারপর সাথে
আনা বরফ দ্বারা আমার হৃৎপিণ্ড ও পেট ধুয়ে দিয়ে আমাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে ৷
তারপর তাদের একজন অপরজনকে বলে, একে তার দশজন উম্মতের সঙ্গে ওজন কর ৷
অপরজন আমাকে আমার দশজন উম্মতের সঙ্গে ওজন করে ৷ আমার পাল্লা ভারী হয় ৷ তারপর
বলে, এবার তাকে তার একশ’ উম্মতের সঙ্গে ওজন করা সে আমাকে একশ’ জনের সঙ্গে ওজন
করে ৷ এবারও আমার পাল্লা ভারী হয় ৷ আবার বলে, এবার তাকে তার উম্মতের এক হাজার
জনের সঙ্গে ওজন কর ৷ আমাকে এক হাজার জনের সঙ্গে ওজন করে ৷ এবারও আমার পাল্লা
ভারী হয় ৷ এইবার লোকটি বলে, হয়েছে, আর প্রয়োজন নেই ৷ একে তার সমস্ত উম্মতের
সঙ্গেও যদি ওজন করা হয়, তবু তার পাল্লাই ভারী হবে ৷ এ সনদটি উত্তম ৷
আবু নুআয়ম তার দালায়িল’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, উতবা ইবন আবদুল্লাহ বলেন, এক
ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (না)-কে জিজ্ঞাসা করে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার প্রথম জীবনের অবস্থা
কেমন ছিল? জবাবে নবী করীম (সা) বললেন, যে মহিলা আমাকে দৃধ পান করাতেন, তিনি
ছিলেন বনু সড়াদ গোত্রীয় ৷ একদিন আমি আর তার এক পুত্র ভেড়া-বকরী চরানোর জন্য মাঠে
যাই ৷ যাওয়ার সময় সঙ্গে করে খাবার কিছু নিয়ে যাইনিঃ ৷ তাই আমি আমার দুধ ভাইকে
বললড়াম, তুমি গিয়ে আমার নিকট থেকে খাবার নিয়ে এস ৷ আমার ভাই চলে গেল আর আমি
পশুপালের নিকট রয়ে গেলাম ৷ হঠাৎ দেখি, শকুনের মত দুটি সাদা রংয়ের পাখি আমার দিকে
খেয়ে আসছে ৷ এসে একটি অপরটিকে বলে, এই কি সেই লোকঃ অপরটি বলল, ইক্রা ৷ তারপর
তারা ল্লুত আমার একেবারে নিকটে এসে আমাকে চিৎ করে শুইয়ে আমার পেট চিরে ফেলে ৷
তারপর আমার হৃৎপিণ্ড বের করে তার মধ্য থেকে দুটি কালো রক্তপিণ্ড বের করে ৷ তারপর
বরফের পানি দিয়ে আমার পেট ধুয়ে নেয় ৷ তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আমার হৃদপিণ্ড ধোয় ৷
তারপর আমার হৃদয়ে প্রশাস্তি ঢেলে দেয় ৷ তারপর একজন অপরজনকে বলে, এবার সেলাই
করে দাও ৷ পেট সেলাই করে আমার ওপর নবুওতের মোহর অংকিত করে দেয় ৷ তারপর
একজন অপরজনকে বলে, একে র্দাড়ির এক পাল্লায় রেখে আর তার উষ্মতের এক হাজার
জনকে অপর পাল্লায় রেখে ওজন কর ৷ সে মতে আমাকে ওজন করা হল ৷ আমি দেখলাম, এক
হাজার জনের পাল্লা উপরে ওঠে গেল ৷ আমার ভয় হচ্ছিল, তাদের কেউ আমার পর হুমড়ি খেয়ে
পড়ে কিনা ৷ তখন একজন বলল, যদি এর সকল উম্মতের সঙ্গেও একে ওজন করা হয়, তবু এর
পাল্লা ভারী হবে ৷
তারপর তারা আমাকে ফেলে চলে যায় ৷ আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম ৷ তারপর মায়ের
নিকট গিয়ে ঘটনা খুলে বললাম ৷ শুনে তিনিও শংকিত হয়ে পড়েন: পাছে আমার কোন ক্ষতি
হয়ে যায় ৷ তাই তিনি বললেন, তোমার জন্য আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি ৷ সঙ্গে সঙ্গে
তিনি উটের পিঠে করে আমাকে আমার আমার নিকট নিয়ে পেলেন ৷ বললেন, আমি আমার
আমানত বুঝিয়ে দিলাম ও দায়িত্ব পালন করলাম ৷ এই বলে তিনি আমার সব ঘটনা খুলে
বললেন ৷ বিক্ষ্ম সব শুনেও আমার আম্মা বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না ৷ তিনি বললেন, আমি স্বপ্নে
দেখেছি, আমার ভেতর থেকে এক ঝলক নুর বের হয়, যার আলোকে সিরিয়ার
রাজ-প্রাসাদগুলো আলোকিত হয়ে যায় ৷ এই বর্ণনায় এমন একজন নারী রয়েছেন যার জাল
হাদীস রটনার দৃর্নাম রয়েছে-যদ্দরুন হাফিজ ইবন আসাকির বর্ণনা করেন যে, আবুযর পিফারী
(রা) বলেছেন, একদিন আমি বললাম, ইয়া রাসুলড়াল্লাহ! আপনি কি করে জানলেন এবং কিভাবে
নিশ্চিত হলেন যে, আপনি নবী? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, শোন হে আবু মর ! আমি
মক্কার উপকষ্ঠে অবস্থান করছিলাম ৷ এই সময়ে দু’জন ফেরেশতা আমার নিকট আগমন করেন ৷
একজন মাটিতে অবতরণ করেন আর অপরজন আকাশ ও জমিনের মধ্যখানে অবস্থান করেন ৷
এক পর্যায়ে র্তাদের একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনিই কি সেই লোকঃ অপরজন
বললেন হীশ্ব, ইনিই সেই লোক ৷ তখন প্রথমজন বললেন : একে একজন মানুষের সঙ্গে ওজন
কর ৷ ফেরেশতা আমাকে একজন মানুষের সঙ্গে ওজন করে ৷ ওজনে আমার পাল্লা ভারী হয় ৷
ইবন আসাকির সম্পুর্ণ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন ৷ এতে তিনি নবী করীম (সা)-এর
বক্ষবিদারণ , বক্ষ সেলাই ও দুই র্কাধের মাঝে সােহরে নবুওত স্থাপনের কথাও উল্লেখ করেছেন ৷
এ বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে এরপর তারা চলে যান ৷ আমি যেন এখনো তা দিব্যি দেখতে
পাচ্ছি ৷
সহীহ মুসলিমে আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, একদিন
শিশু নবীর নিকট জিবরীল (আ) আগমন করেন ৷ নবী করীম (সা) তখন অন্য বালকদের সাথে
খেলা করছিলেন ৷ জিবরীল (আ) শিশু নবীকে ধরে মাটিতে শুইয়ে তার পেট চিরে তার হৃদপিণ্ড
বের করে আনেন ৷ তারপর হৃৎপিণ্ড থেকে একটি কালো রক্তপিণ্ড বের করেন এবং বলেন, এটি
শয়তানের অংশ ৷ তারপর সোনার একটি পাত্রে যমযমের পানি দ্বারা হৃদপিণ্ডটি ধুয়ে নেন ৷
অতঃপর তা যথাস্থড়ানে স্থাপন করে দেন ৷
ঘটনা দেখে বালকরা দৌড়ে নবীজির দুধ-মায়ের নিকট এসে বলে, মুহাম্মদকে খুন করা
হয়েছে ৷ শুনে সকলে তার নিকট দৌড়ে আসে ৷ তখন তার মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে ৷ আনাস (রা )
বলেন, আমি তার বুকে সেই সেলাইয়ের দাগ দেখতে পেতাম ৷
ইবন আসাকির আনাস (রা) সুত্রে আরও বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, নামায মদীনায়
ফরয হয় ৷ দুইজন ফেরেশতা রাসুলুল্লাহ (না)-এর নিকট এসে তাকে যমযমের কাছে নিয়ে
যান ৷ তারপর তার পেট চিরে নাড়িভুড়ি বের করে একটি সোনার পেয়ালায় নিয়ে যমযমের
পানি দ্বারা তা ধুয়ে দেন ৷ তারপর তার উদবকে প্রজ্ঞা ও ইলম দ্বরা ভরে দেন ৷
অন্য সুত্রে আনাস (রা) থেকে আরও বর্ণিত আছে ৷ তিনি বলেছেন, পরপর তিন রাত
রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট কয়েকজন ফেরেশতা আগমন করেন ৷ তাদের একজন অন্যদেরকে
বলেন, মানুষের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং তাদের নেতাকে নিয়ে চল ৷ ফেরেশতারা তাকে যমযমের
নিকট নিয়ে যান এবং তার পেট বিদীর্ণ করেন ৷ তারপর একটি সোনার পাত্র এনে শিশু নবীর
পেটকে ধুয়ে তা প্ৰজ্ঞাও ঈমান দ্বারা ভরে দেন ৷
উল্লেখ্য যে, সহীহ বুখারী ও যুসলিমে বিভিন্ন সুত্রে বর্ণিত মিরাজের হাদীসেও উক্ত রাতে
নবীজির বক্ষবিদারণ এবং যমযমের পানি দ্বুারা তা ধৌত করার ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে ৷ তবে
এতে কোনও বৈপরীতা নেই ৷ কারণ, হতে পারে একই ঘটনা নবী করীম (না)-এর জীবনে
দু’ৰার ঘটেছে ৷ একবার তার শৈশবে আর একবার মিরাজের রাতে, তাকে উর্ধ্বজগতে
আরোহণ এবং আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার উপযাের্গীর জন্য প্রন্তুতি করার লক্ষে ৷
ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) তার সাহাবীগণকে বলতেন, “আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ
আরবী, আমি কুরাইশী এবং দুধপান করেছি আমি সাদ ইবন বকর গোত্রে ৷ ”
ইবন ইসহাক আরো বলেন, দুধ ছাড়ানাের পর হালীমা শিশু নবীকে তার মায়ের নিকট
ফিরিয়ে দিতে যাওয়ার পথে একদিন তিনি নবীজ্যিক নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন ৷ পথে নাসারাদের
একটি কাফেলার সঙ্গে তাদের সাক্ষাত হয় ৷ দেখে কাফেলার লোকেরা শিশু নবীর দিকে এগিয়ে
এসে র্তাকে চুমাে খায় এবং বলে, এই বালকটিকে অবশ্যই আমরা আমাদের রাজার নিকট নিয়ে
যাব ৷ কারণ, ছেলেটি ভবিষ্যতে বিরাট কিছু হবে ৷ হালীমা বড় কষ্টে পুত্রকে তাদের হাত থেকে
ছাড়িয়ে আনেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, উক্ত কাফেলার হাত থেকে মুক্ত করে তাকে নিয়ে যখন
হালীমা মক্কার নিকটে চলে আসেন, তখন হঠাৎ শিশু নবী (সা) হারিয়ে যান ৷ অনেক খোজাখুজি
করে হালীমা আর তাকে পেলেন না ৷ সংবাদ পেয়ে দাদা আবদুল ঘুত্তালিব নিজে এবং আরও
একদল লোক তার সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন ৷ খুজতে খুজতে ওয়ারাকা ইবন নওফল ও অপর এক
ব্যক্তি তার সন্ধান পান ৷ পেয়ে তাকে তারা দাদা আবদুল মুত্তালিবের নিকট নিয়ে যান ৷ আবদুল
মুত্তালিব শিশু নবীজিকে কাধে তুলে নিয়ে বায়তুল্পাহয় চলে যান এবং তাওয়াফে শিশু নবীজির
নিরাপত্তার জন্য দোয়া করেন ৷ অতঃপর তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দেন ৷
আল-ৰিদায়া ওয়ান নিহড়ায়া (২র খণ্ড) ৬৪-
উমাবী বর্ণনা করেন যে, আবদুল মুত্তালিব পুত্র আবদুল্লাহকে আদেশ করেন, যেন তিনি শিশু
নবীজিকে সঙ্গে করে নিয়ে আরবের বিভিন্ন গোত্রে ঘুরে তার জন্য একজন দাই-মা ঠিক করে
নেন ৷ আবদুল্লাহ শিশু নবীকে দুধ পান করানোর জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হালীযাকে ঠিক
করেন ৷
বর্ণিত আছে যে, শিশু নবী হালীমার নিকট ছয় বছর অবস্থান করেন ৷ এই সময়ে তার দাদা
বছরে একবার তাকে দেখতে যেতেন ৷ বক্ষবিদারণের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর হালীমা শিশু
নবীকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে যান ৷ তিনি যখন আট বছরের বালক তখন মা আমিনা
মৃত্যুবরণ করেন ৷ এবার দাদা আবদুল মুত্তালিব তার লালন-পালনের দায়িত্ব নেন ৷ তার দশ
বছর বয়সের সময় দাদা আবদুল মুত্তালিবও মারা যান ৷ তখন নবীজির লালন-পালনের দায়িতু
হাতে নেন, তবে দুই আপন চাচা যুবায়র ও আবু তালিব ৷ তের বছর বয়সে তিনি চাচা
ষুবায়র-এর সঙ্গে ইয়ামান গমন করেন ৷ এই সফরে তার কয়েকন্টি আলৌকিক ঘটনা প্রকাশ
পায় ৷ তার একটি হলো, চলার পথে একটি উট তাকে দেখেই বসে পড়ে ৷ এমনকি তার বুক
মাটি স্পর্শ করে ৷ নবীজি (না) তাতে চড়ে বসেন ৷ আরেকটি ঘটনা হলো , ইয়ামানের একন্থানে
তখন র্বাধভাঙ্গা প্লাবন হচ্ছিল ৷ নবীজির উসিলায় আল্লাহ তাআলা বন্যার পানি শুকিয়ে দেন ৷
কাফেলার সকলে অনায়াসে পথ অতিক্রম করে ৷ তারপর চাচা যুবায়র নবীজির চৌদ্দ বছর
বয়সে মারা যান ৷ এইবার চাচা আবু তালিব একাই নবীজি (সা) কে লালনপালন করতে শুরু
করেন ৷ এ বর্ণনায় একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন ৷
যােটকথা , রাসুলুল্লাহ (না)-এর শৈশবেই হড়ালীমা সাদিয়া ও তার পরিবার-পরিজনের ওপর
তার বরকত প্রকাশ পায় ৷ তারপর সেই বরকত হাওয়াযিন গোত্রের সকলের ওপর ছড়িয়ে পড়ে;
পরবর্তীকালে যখন তাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর নবী করীম (সা) তাদেরকে বন্দী করেন তখন
তারা সেই দুধপানের দােহইি দিয়ে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে ৷ নবী করীম (সা) তাদেরকে
মুক্তিদান করেন এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন ৷ এটি মক্কা বিজয়ের একমাস পরের
ঘটনা ৷ পরে যথাস্থানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসবে, ইনৃশাআল্পাহ ৷
হাওয়াযিন-এর ঘটনা সম্পর্কে ইবন ইসহাক বর্ণনা করেন যে, আমর ইবনে শুয়াইব এর
দাদা বলেছেন, হুনড়ায়নে আমরা রাসুলুল্লাহ (না)-এর সঙ্গে ছিলাম ৷ তিনি তাদের থেকে প্রাপ্ত
গনীমতের মান ও বন্দীদের নিয়ে রওয়ানা হলে হাওয়াযিন-এর একটি প্রতিনিধি দল
জিয়িররানা নামক স্থানে তার সঙ্গে সাক্ষাত করে ৷ তারা তখন ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছে ৷
এসে তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনার আপনজন ও আত্মীয় ৷ আমরা যে বিপদে
পড়েছি তা আপনার অজানা নয় ৷ আপনি আমাদের প্রতি দয়া করুন, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া
করবেন ৷ যুহায়র ইবন সরদ নামক তাদের একজন বক্তা দাড়িয়ে বলে , ইয়া রাসুলাল্লাহ! বন্দী
মহিলাদের মধ্যে আপনার ঐসব খালা আর বোনরাও আছে, যারা আপনাকে কােলে-র্কাহ্বধ নিয়ে
লালন পালন করেছিল ৷ এখন যদি আমরা শিমর এর পুত্র কিংবা নুমান ইবন মুনযির এর পুত্রকে
দুধপান করিয়ে থাকত!ম এবং পরে যদি তাদের পক্ষ থেকেও আমাদের প্রতি সেইরুপ বিপদ
আসতাে, যেমন এসেছে, আপনার পক্ষ থেকে তাহলে তো আমরা তাদের অনুগ্রহ প্রত্যাশা
করত!ম ৷ অথচ, আপনি হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ অভিভ!বক ৷ এই বলে সে কবিতার কয়েকটি পংক্তি
আবৃত্তি করে :
-হে আল্লাহর রসুল ! মহ!নুভবতা দ্বার! আপনি আমাদের প্রতি ৩অনুগ্রহ করুন ৷ আপনিই
আমাদের প্রত্যাশিত ও নির্বাচিত ব্যক্তি ৷
আপনি এমন রমণীর প্রতি ৩অনুযহ করুন, ভ!গ্য যাকে (তার স্বগােত্রের কাছে ফিরে যাওয়া
থেকে) বিরত রেখেছে, যার জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তার জীবন ধারায় এসেছে
পরিবর্তা ৷
যে আমাদের যুগকে বানিয়ে রেখেছে দুঃখে আর্তনাদক!রী ৷ ঐ সকল লোক যাদের রয়েছে
সীমাহীন মর্মবেদনা ও দুঃখের প্রচণ্ড চাপ ৷
যদি না আপনার পক্ষ থেকে সম্প্রসারিত বরকতময় হাত তার ক্ষতিপুরণ করে ৷ হে শ্রেষ্ঠ
সহনশীল মানব যার সহনশীল৩ ! প্রকাশ পায় যখন তাকে পরীক্ষা কর! হয় ৷
আপনি সেই মহিলাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন, যাদের দুধ আপনি পান করেছেন ৷ যখন
আপনার সুখ তাদের দৃধেপুর্ণ থাকতে! ! অনুগ্রহ করুন সেই সব মহিলাদের প্রতি তখন আপনার
জন্য শোভনীয় হত , আপনি য! করতেন এবং যা করতেন ন! সবই ৷
আপনি আমাদের ঐ ব্যক্তির ন্যায় করবেন না, যে মৃত্যুবরণ করেছে ৷ আপনি আমাদেরকে
বীচিয়ে রাখুন ৷ কেননা, আমরা একটি সঘুজ্জ্বল সম্প্রদায় ৷
নিশ্চয় আমরা নিয়ামতের শোকর আদায় করে থাকি যদিও অন্যত্র৩ আর না শোকরী করা
হয় ৷ আমাদের এ কৃতজ্ঞতা আজকের দিনের পরও বহাল থাকবে ৷
উল্লেখ্য যে, যুহায়র ইবন সরদ ছিলেন তার গোত্রের নেতা ৷ তিনি বলেন, হুনায়নের দিন
আমাদেরকে বন্দী করে রাসুলুল্লাহ (সা) যখন আমাদের নবী পুরুষদের আলাদা করছিলেন,
তখন হঠাৎ আমি তার সম্মুখে গিয়ে দাড়িয়ে য ই এবং কবিতার ছন্দে তার হা ওয়াযিন গোত্রে
প্রতিপালিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে ৫ইে ৷ অন্য বর্ণনায় এ পংামোঃলোতে ঈষৎ শাব্দিক
পরিবর্তন সহ বর্ধিত আরো কয়েকটি চরণ আছে, যা নিম্নরুপ ৷
-৫হ আল্লাহর রাসুল ! স্বাচ্ছন্দা প্রদানের ক্ষেত্রে আপনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন ৷
আপনিই আমাদের কাজ্জিত ও প্রত্যাশিত ব্যক্তি ৷
সুতরাং আপনি আপনার যে মায়ের দুধ পান করতেন, তাকে আপনি ক্ষমার পোশাক পরিয়ে
দিন ৷ ক্ষমা খ্যাতি প্রসারের হেতু হয়ে থাকে ৷
আমরা আপনার নিকট ক্ষমার প্ৰও ব্রাশা করি, যা দ্বারা আপনি এই কয়েকটি প্রাণীকে
আচ্ছড়াদিত করবেন ৷
অতএব, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ! আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থেকে কিয়ামতের দিন
আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করবেন ৷ যখন আপনাকে সফলতা প্রদান করা হবে ৷
সবকিছু শুনে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, এই গনীমত ও বন্দীদের মধ্যকার যারা আমার ও
বনু আবদুল মুত্তালিবের ভাগে আসবে, তা আমি আল্লাহর ওয়ান্তে তােমাদেরকে দান করে
দিলাম ৷ ’
একথা শুনে আনসারপণ বললেন, তাহলে যা আমাদের ভাগে আসবে, আমরাও তা আল্লাহ
ও তার রাসুলের খাতিরে দান করলাম ৷
এই সময়ে রাসুলুল্লাহ (সা) নারী ও শিশুসহ ছয় হাজার লোককে মুক্তি দান করেছিলেন
এবং তাদেরকে বিপুল সংখ্যক পশু ও দাস-দাসী প্রদান করেন ৷ আবুল হুসায়ন ইবন ফারিস
মন্তব্য করেন যে, সেই দিন নবী জ্জীম (সা) যে সম্পদ ফিরিয়ে দেন এবং যেসব বন্দীদের মুক্ত
করে দেন, তার মুল্য ছিল পঞ্চাশ কোটি দ্যোহাম ৷ আর এইসব ছিল তাদের জীবনে পাওয়া
নবীজির নগদ বরকত ৷ যারা দুনিয়ার ন্ধীননে নবী করীম (না)-এর অনুসরণ করবে, আখিরাতে
তারা তার যে কি পরিমাণ বরকত লাভ ঙ্কাৰে তা সহজেই অনুমেয় ৷
ইবন ইসহড়াক বলেন, হালীমার খ্যাঃ প্লো পর্ব শেষে ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ (সা) আল্লাহর
হেফাজতে মা আমিনা ও পরে দাদা অ্যাংঅ্যাং এর সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেন ৷
আল্লাহ ওাকে উত্তমরুপে লালন পালন ম্মেখ্যাঃ ৷ তার বয়স ছয় বছরে উপনীত হলে মা
আমিনা ইস্তিকাল করেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর ইবন মুহাম্মদ ইবন আমর ইবন হায়ম
বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা)-এর বয়স যখন ছয় বছর, তখন তার মা আমিনা মক্কা ও
মদীনায় মধ্যবর্তী আবওয়া নামক স্থানে ইন্তিকাল করেন ৷ নবীজিকে সঙ্গে করে তিনি তার
মড়াতুলালয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৷ তারা ছিলেন আদী ইবন নাজ্জার গোত্রভুক্ত ৷ মক্কায়
প্রত্যাবর্ত্যনর পথে তার ইস্তিকাল হয় ৷
ওয়াকিদী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা)-কে সঙ্গে করে যা মদীনায় তার মাতুলালয়ে যান ৷ দাসী
উম্মে আয়মানও সঙ্গে ছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) এর বয়স তখন ছয় বছর ৷
উম্মে আয়মান বলেন, এ সময়ে একদিন দু’জন ইহুদী আমার নিকট এসে বলল, আহমদকে
নিয়ে এস দেখি! আমরা তাকে দেখতে এসেছি ৷ তারা র্তাকে দেখে ফিরিয়ে দিয়ে একজন
অপরজনকে বলে, এ ছেলেই এই উন্মতের নবী ৷ আর এটাই হল তার হিজবত স্থল ৷ একে
কেন্দ্র করে অনেক যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনা ঘটরে ৷ মা আমিনা এ সংবাদ শুনে ঘাবড়ে যান এবং
তাকে নিয়ে ফেরত রওয়ানা হন ৷ এই ফেরার পথেই আবওয়া নামক স্থানে তার ইন্তিকাল হয় ৷
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন যে, বুরায়দা (রা) বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ (সা)-এর
সঙ্গে বের হই ৷ ওয়াদ্দান নামক স্থানে উপনীত হলে নবী করীম (সা) বললেন, তােমরা এখানে
অবস্থান কর, আমি আসছি ৷ এই বলে তিনি চলে গেলেন ৷ কিছুক্ষণ পর তিনি ভারাক্রাস্ত হৃদয়ে
ফিরে আসেন ৷ এসে বললেন :
আমি আমার আম্মার কবরের কাছে গিয়ে আমার রব-এর নিকট তার জন্য সুপারিশ করার
অনুমতি চাই ৷ কিন্তু তিনি আমাকে তা থেকে বারণ করলেন ৷ আর আমি তোমাদেরকে
ইতিপুর্বে যিয়ারত করতে বারণ করেছিলাম ৷ এখন থেকে তোমরা কবর যিয়ারত করবে ৷
তিনদিনের পর কুরবানীর পশুর গোশত থেতেও আমি তোমাদেরকে রাবণ করেছিলাম ৷ এখন
থেকে য়ে ক’দিন ইচ্ছা তা খেতে পারবে এবং মতদিন ইচ্ছা ধরে রাখতে পারবে ৷ তোমাদেরকে
আমি মদের পাত্রে পানি পান করতে নিষেধ করেছিলাম ৷ এখন থেকে সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে
নিলাম ৷
বায়হষ্কর্কী বর্ণনা করেন যে, হযরত বুরায়দা (রা) বলেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা) একটি
কবরের নিকট গিয়ে বসে পড়েন ৷ দেখাদেখি লোকেরাও তীর চতুস্পার্পে বসে পড়ে ৷ বসে নবী
করীম (সা) মাথা নাড়তে নাড়তে র্কাদতে লাপলেন ৷ উমর (বা) তার নিকটে এগিয়ে গিয়ে
জিজ্ঞেস করেন, আপনি র্কাদছেন কেন ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা)? নবী কৰীম (সা) বললেন, এটি
আমার আম্মা আমিনা বিনতে ওহব-এর কবর ৷ আমার রব-এর নিকট আমি তার এই কবরঢি
যিয়ারত করার অনুমতি চেয়েস্থিলাম ৷ তিনি আমাকে অনুমতি দেন, কিস্তু তার মাগফিরড়াতের
আবেদন করার অনুমতি চাইলে তিনি তাতে সম্মতি দিলেন না ৷ মায়ের কথা ভেবে আমি
র্কাদছি ৷ বর্ণনাকারী বলেন, সেইদািনর মত এত বেশি সময় ধরে র্কাদতে নবীজিকে কখনও
দেখা যায়নি ৷
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)এর বরাতে বায়হড়াকী বংনাি করেন, ইবন মাসউদ (রা)
বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) এক দিন কব্রস্থড়ান যিয়ারত করতে বের হন ৷ আমরাও তার সঙ্গে বের
হলাম ৷ তার আদেশে আমরা এক জায়গায় বসে পড়লাম ৷ তিনি ঘুরে ঘুরে কবর দেখছেন ৷ এক
পর্যায়ে একটি কবরের নিকট গিয়ে তিনি দাড়িয়ে যান ৷ দীর্ঘক্ষণ পর্য৷ ন্ত নিম্নস্বরে কি যেন বলতে
থাকেন ৷ তারপর তিনি কেদে উঠেন ৷ তার ক ৷ন্ন৷ দেখে আমরাও কেদে ফেললাম ৷ অবশেষে
তিনি আমাদের কাছে ফিরে আসেন ৷ উমর ইবন খাত্তাব (বা) এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ (সা) ! আপনি কাদছেন কেন? আপনার কান্না তো আমাদেরকেও কাদিয়েছে এবং ভয়
পাইয়ে দিয়েছে৷ তিনি আমাদের নিকটে এসে বললেন এবং বললেন, “আমার কান্ন৷ বুঝি
তােমাদেরকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে?” আমরা বললাম, “জী হীা ৷ তিনি বললেন, যে কবরঢির
সামনে আমাকে তোমরা কথা বলতে দেখেছ, সেটি আমিনা বিনতে ওহব-এর কবর ৷ আমার
রব্-এর নিকট আমি তার যিয়ারত করার অনুমতি প্রার্থনা করেছিলাম ৷ তিনি আমাকে অনুমতি
প্রদান করেন ৷ আবার তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতিও চেয়েছিলাম , কিন্তু আমার বব সেই
অনুমতি দিলেন না এবং আমার প্ৰতি নাযিল করলেন :
“আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সং গত
নয় ৷ যখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, তারা জা ৷হান্নামী ৷ ইব্রাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করেছিল, তাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে ৷ অতঃপর যখন তার নিকট এ কথা
সুস্পষ্ট হলো যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন ইব্রাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল ৷ ইব্রাহীম তো
কোমল-হৃদয় ও সহনশীল ৷ (তাওবা : ১ ১৩ ১ ১৪ )
ফলে মায়ের জন্য পুত্রের হৃদয় যেভাবে বিগলিত হয় আমার অবন্থাও ঠিক৩ ৷ই হলো ৷ এ
কারণেই আমি কেদেছি ৷ ” বর্ণনাঢি গরীব পর্যায়ের ৷ হাদীছের প্রসিদ্ধ ছয় কিভাবে তা ৷র উল্লেখ
নেই ৷ ইমাম মুসলিম হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা) একদিন তার মায়ের কবর যিয়ারত করেন ৷ তখন তিনি নিজেও কান্নাকাটি করেন এবং
আশেপাশের লোকদেরও কাদান ৷ তারপর তিনি বলেন, “আমার রব্-এর নিকট আমি আমার
মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি আমাকে অনুমতি দেন ৷ কিত্তু মায়ের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলে আমার রব্ আমাকে সেই অনুমতি দেননি ৷ এখন থেকে
তোমরা কবর যিয়ারত করবে, কবর তােমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিবে ৷ ” ইমাম
মুসলিম আনাস (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে , তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ
(সা) বলুন তো আমার আব্ব৷ কোথায়? নবী করীম (সা) বললেন, জাহান্নামে ৷ একথা শুনে
লোকটি ফিরে যেতে উদ্যত হলে তিনি তাকে ডেকে বললেন, “আমার পিতা এবং তোমার পিতা
উভয়েই জাহান্নামে ৷”
বায়হাকী হযরত সাদ (বা) থেকে বনাি করেন যে, তিনি বলেন এক বেদুঈন নবী কবীম
(সা) এর নিকট এসে বলল, আমার আব্বা আত্মীয় বৎসল ছিলেন ৷ তার অমুক অমুক গুণ ছিল ৷
এখন তিনি কোথায় আছেনঃ জবাবে নবী করীম (সা) বললেন, জাহান্নামে’ ৷ বর্ণনাকারী বলেন,
একথা শুনে বেদৃঈন অস্থির হয়ে পড়ে এবং বলে, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা) ! আপনার পিতা
কোথায়ঃ নবী কবীম (সা) বললেন, যখনই তুমি কোন কাফিরের কবর অতিক্রম করবে, তাকে
জাহান্নামের সংবাদ দেবে ৷ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি মুসলমান হয়ে যায় ৷
পরে সে বলে, রাসুলুল্লাহ (সা) আমার উপর একটি কষ্টকর কাজ দিলেন ৷ এরপর থেকে
আমি যখনই যে কাফিরের কবরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করোৰুষ্ট্র তাকেই জাহান্নড়ামের সংবাদে
দিয়েছি ৷ এটাও গরীব পর্যায়ের বর্ণনা, বিশুদ্ধ হাদীসসমুহে অনুক্ত ৷
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ৷রা) বলেছেন একদিন আমরা
রাসুলুলাহ (সা) এর সঙ্গে হীটছিলাম ৷ হঠাৎ একজন মহিলা দেখা গেল ৷ তাকে নবী করীম (সা)
চিন্যেছন বলে আমরা ধারণা করিনি ৷ রাস্তার মধ্যখানে এসে নবী করীম (সা) র্দাড়িয়ে যান ৷
মহিলাও নবীজির নিকটে এসে র্দাড়ান ৷ তখন দেখা গেল, তিনি রাসুলুলাহ (না)-এর কন্যা
ফাতিমা ৷ নবী করীম (সা) বললে, ফাতিমা! কিসে তোমাকে তোমার ঘর থেকে বের করে
আনলো? ফাতিমা (বা) বললেন, এই গৃহবাসীদের মৃতের আত্মার মাণফেরাত প্রার্থনা ও
সমবেদনা প্রকাংশর জন্য এখানে এসেছি ৷ নবী করীম (সা) বললেন, বোধহয় তু তাদের সঙ্গে
কবর পর্যন্ত গিয়েছিল্যে জবাবে তিনি বললেন : লোকদের সঙ্গে মৃতের কবর পর্যন্ত যাওয়া থেকে
আল্লাহ আমাকে রক্ষা করুন ৷ আমি তো এ বিষয়ে আপনি যা বলে থাকেন তা শুনেছি ৷ নবী
করীম (সা) বললেন, “যদি তু তাদের সঙ্গে কবর পর্যন্ত যেতে, তবে জান্নাত দেখতে পেতে
না, যতক্ষণ না তোমার বাপের দাদা তা প্রত্যক্ষ করতেন ৷” আহমদ আবু দাউদ, নাসায়ী ও
বায়হাকী প্রমুখ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ তবে এর একজন রাবীকে অনেকে বিত ত
বলেছেন ৷ আবদুল মুত্তালিব জাহেলী দীনের অনুসারী রুপেই মারা যান ৷ তবে তার এবং আবু
তালিবের দীনের ব্যাপারে শিয়াদের তিন্নমর্ভ রয়েছে ৷ আবু তালিবের ওফাত অধ্যায়ে এ বিষয়ে
আলোকপাত করা হবে ৷
বায়হাকী তার দালায়লুন নুবুওয়াহ্’ গ্রন্থে এই হাদীসগুলো উল্লেখ করে মন্তব্য করেন যে,
রাসুলুল্পাহ (না)-এর পিতা-মাতা ও দাদার অবস্থা আখিরাতে কেন এরুপ হবে না? তারা তো
পৌত্তলিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ঈসা (আ)-এর দীনেরও র্তারা অনুসরণ করতেন
না ৷ তবে তাদের এই কুফরীতে রাসুলুল্লাহ (সা) এর বংশ পরিচয়ে কোন কলংক আসে না ৷
কারণ, কাফিরে কাফিরে বিবাহ শুদ্ধ ৷ এ কারণেই স্বামী ত্রী একত্রে ইসলাম গ্রহণ করলে বিবাহ
নবায়ন করতে হয় না না তাতে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে হয় না ৷ উল্লেখ্য যে, একাধিক সুত্রে
বর্ণিত একটি হাদীসে আছে যে, দুই নবীর মধ্যবর্তী সময়কার মানুষ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু, পাগল
এবং বধিরদেরকে কিয়ামতের চতুরে পরীক্ষা করা হবে ৷ তখন তাদের কেউ জবাব দিতে
পারবে, কেউ পারবে না ৷ আমার মতে এই হাদীসের বক্তব্য আর নবী করীম (না)-এর
পিতা-মাতা ও দাদা সম্পর্কে জাহান্নামী হওয়ার সংবাদ প্রদানের মধ্যে কোন বিরোধ নেই ৷
কেননা, সে সময় এরাও ঐ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবেন, যারা জবাব দানে অক্ষম হবে ৷
এই আঘাতের তাফসীরে আমি বিষয়টি বিস্তারিতভড়াবে আলোচনা করেছি ৷
সুহায়লী কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীসে আছে যে , আয়েশা (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (না)-এর
দােয়ায় আল্লাহ তাআলা তার পিতা-মাতা দু’জনকেই জীবিত করেছিলেন ৷ জীবন পেয়ে তারা
নবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করেন ৷ আল্লাহর কুদরতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে এমনটি সম্ভবপর
হলেও প্রকৃত পক্ষে এই বর্ণনাটি একান্তই মুনকাব’ পর্যায়ের ৷ সহীহ হাদীসে এর বিপরীত বক্তব্য
রয়েছে ৷ আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত ৷
ইবন ইসহাক বলেন, মা আমিনা বিনতে ওহব-এর মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ (সা) দাদা
আবদুল মুত্তালিব ইবন হাশিম-এর তত্ত্বড়াবধানে থাকেন ৷ সে সময়ে কাবার ছায়ায় আবদুল
মুত্তালিরের জন্য বিছানা পাতা হত ৷ আবদুল মুত্তালিব তাতে বসতেন এবং তার সম্ভান-সম্ভতিরা
সেই বিছানার চারদিকে বসে পড়ত ৷ তার সম্মানার্থে কেউই বিছানার উপরে উঠে বসত না ৷
নাদুসনুদুস বালক নবী (না)-ও সেই মজলিসে আসতেন এবং আবদুল মুত্তালিবের বিছানার
ওপর বসে পড়তেন ৷ তা দেখে তার চাচারা র্তাকে ধরে সরিয়ে বসাবার চেষ্টা করতেন ৷ কিন্তু
আবদুল মুত্তালিব বলতেন, আমার এ নাতিটিকে তোমরা ছেড়ে দাও ৷ আল্লাহর শপথ ! ভবিষ্যতে
ও বিরাট কিছু হবে ৷ এই বলে আবদুল মুত্তালিব নবীজিকে নিজ হাতে ধরে নিজের বিছানার
বসিয়ে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন এবং তিনি যা করতে চাইতেন, তাতে সহযোগিতা
করতেন ৷
ওয়াকিদী একাধিক সুত্রে বর্ণনা করেন যে , রাসুলুল্লাহ (না) যা আমিনার কাছে থাকতেন ৷
মায়ের ইস্তিকাল হলে দাদা আবদুল মুত্তালিব তীর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৷ আবদুল
মুত্তালিব তাকে নিজের ঔরসজাত সন্তানদের চাইতেও বেশি স্নেহ করতেন এবং সব সময় র্তাকে
কাছে কাছে রাখতেন ৷ শয়নে-স্বপনে সৰ্বাবস্থায় নবীজি দাদা আবদুল মৃত্তালিবের একাম্ভে যেতে
পারতেন ৷ দাদার বিছানার গিয়ে বসলে আবদুল মুত্তালিব বলতেন, একে তোমরা ছেড়ে দাও,
আমার এই সম্ভানটি কালে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে ৷
বনু মুদলাজ এর একদল লেকে আবদুল মুত্তালিবকে বলল, এই ছেলের প্রতি বিশেষভাবে
দৃষ্টি রাখবেন ৷ কারণ এর পায়ের আকৃক্কিমকােমে ইব্রাহীমের পায়ের আকৃতির সাথে অধিক
সাদৃশ্যপুর্ণ আর কোন পা আমরা মোঃ৷ এষ্কপা শুনে আবদুল মুত্তালিব আবু তালিবকে
বললেন, ণ্শান, এরা কী বলছে! সেই আন মোঃ আবু তালিব নবী কবীম (না)-কে বিশেষ
হেফাজতে রাখতে শুরু করেন ৷ আবদুল মুত্তালিব উম্মে আয়মানকে-যিনি নবীজিকে
(কালে-কাধে নিতেনশ্বলেছিলেন, বড়ারাকাহ! আমার এই নাতির ব্যাপারে উদাসীন হয়াে না ৷
আমি একে সিদরাতুল মুনতাহার নিকট বলেকদেব সঙ্গে দেখতে পেয়েছি, ৷ আর আহলে
কিতাবদের ধারণা আমার এই সভানটি এই উম্মতের নবী হবে উল্লেখ্য যে, আবদুল মুত্তালিব
যখনই থানা যেতেন বলতেন, আমার নড়াতিকে নিয়ে এস ৷ তখন নবীজিকে তার কাছে এসে
দেয়৷ হত ৷ মৃত্যুকালে আবদুল মুত্তালিব আবু তালিবকে রাসুলুল্লাহ (না)-এর দেখাশুনা করার
জন্য অসিয়ত করে যান ৷ এই অসিয়তের পরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং হাজুন নামক স্থানে
সমাধিস্থ হন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) আট বছরে উপনীত হলে তার দাদা আবদুল মুত্তালিব
মৃত্যুবরণ করেন ৷ মৃত্যুর প্রাক্কালে তিনি তার কন্যাদের ডেকে তাদের বিলাপ করার আদেশ
দেন ৷ সেই মেয়েরা হলো, আরওয়া, উমাইয়া, বাররা, সাফিফ্যা, আতিকা ও উম্মে হাকীম
আল-বড়ায়যা ৷ তাদের পিতাকে শুনিয়ে তারা যে কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন ইবন ইসহাক সেগুলি
উদ্ধৃত করেন ৷ এগুলে৷ ছিল খুবই মর্মস্পশী বিলাপ ৷ ইবন ইসহাক এ বিষয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করেছেন ৷ ইবন ইিশাম বলেন, এই কবিতাগুলো যে তাদেরই, তা যথার্থ বলে কোন
কাব্য বিশারদই স্বীকার করেন নি ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল মুত্তালিব ইবন হাশিমের মৃত্যুর পর যমযম ও পানি পান
করানো (সিকড়ায়া)-এর দায়িত্ব তীর পুত্র আব্বড়াসের ওপর অর্পিত হয় ৷ আব্বাস (রা) বয়সে তার
ভাইদের মধ্যে সকলের কনিষ্ঠ ৷ ইসলামের প্রতিষ্ঠা লাভ করা পর্যন্ত এই দায়িতৃ তারই হতে
থাকে ৷ রাসুলুল্লাহ (সা)-ও এই দায়িতু তারই হাতে বহাল রাখেন ৷ দাদা আবদুল মুত্তালিবের
মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ (সা) আবদুল মুত্তালিবের ওসিয়ত অনুসারে চাচা আবু তালিব-এর
তত্ত্বড়াবধানে থাকতে শুরু করেন ৷ আবু তালিব ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা)-এর পিতা আবদুল্লাহর
সহােদর ৷ তাদের দৃ’জনেবই মা হলেন, ফাতিমা বিনতে আমর ইবন আয়িয ইবন ইমরান ইবন
মাখযুম ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) চাচার সঙ্গে সঙ্গেই থাকতেন ৷
ওয়াকিদীর বর্ণনায় আরো আছে, আবু তালিবের সংসার ছিল অসচ্ছল ৷ রাসুলুল্লাহ (সা)-কে
তিনি এত বেশি আদর করতেন যে, নিজের ঔরসজাত সন্তানদেরকে তত আদর করতেন না ৷
রাসুলুল্লাহ (সা)-কে নিজের পার্শে না নিয়ে তিনি ঘুমাতেন না ৷ বাইরে কোথাও গেলে র্তাকেও
সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন ৷ তাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আহার করতেন ৷ তাকে ছাড়া আহার করলে
আবু তালিব এবং তার পরিবারের কারও আহারে তৃপ্তি আসত না ৷ সবাই খেতে বসলে আবু
তালিব বলতেন, তোমরা একটু অপেক্ষা কর, আমার অড়াদরের দৃলালটি এসে যাক ৷ রাসুলুল্লাহ
(সা) এসে তাদের সঙ্গে আহার করলে তাদের আহার্য উদ্বুত্ত থাকতো ৷ এ ব্যাপারে আবু তালিব
বলতেন, তুমি বড় বরকতময় ৷ সকালে ঘুম থেকে উঠলে সবইিকে যেখানে মলিন ও আলুথালু
মনে হত, সেখানে রাসুলুল্লাহকে অনেক দীপ্তিময় ও লাবণ্যময় দেখাতে৷ ৷
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৬৫
হাসান ইবন আরাফা (র) বর্ণনা করেন যে, ইবন আব্বাস (বা) সুত্রে বলেছেন, ভোর
হলে আবু তালিব শিশুদের জন্য একপাত্রে খাওয়ার আয়োজন করতেন ৷ শিশুরা বসে কাড়াকাড়ি
করে যেতে শুরু করত ৷ কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স) সেই কাড়াকাড়িতে যোগ দিতেন না ৷ তিনি হাত
সরিয়ে নািতন ৷ দেখে চাচা আবু তালিব তার জন্য আলাদা পাত্রের ব্যবস্থা করেন ৷
ইবন ইসহাক রনাি করেন, লাহাব গোত্রের এক ব্যক্তি গণক ছিল ৷ লোকটি মক্কায় আসলে
কুরাইশের লোকেরা তাদের সম্ভানদেরকে তার কাছে নিয়ে যেত ৷ একবার রাসুলুল্লাহ (সা ) এর
ওপর গণকের চোখ পড়ে ৷ এক পর্যায়ে সে বলে, ওই ছেলেটিকে আমার কাছে নিয়ে এসো ৷
তার অতিরিক্ত আগ্রহ দেখে আবু তালিব তাকে সরিয়ে নিয়ে যান ৷ কিন্তু গণক বলতে থাকে ,
আরে এইমাত্র আমি যে ছেলেটিকে দেখলাম, ওকে একটু আমার কাছে নিয়ে এস ৷ আল্লাহর
শপথ, ভবিষ্যতে ও বিরাট কিছু হবে ৷ বংনািকারী বলেন, কিত্তু আবু তালিব নবীজিকে নিয়ে
সরে পড়েন ৷
চাচা আবু তালিংবর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা) এর
সিরিয়া সফর এবং পাদ্রী বাহীরার সঙ্গে সাক্ষাত প্রসঙ্গ
ইবন ইসহাক বলেন, অতঃপর আবু তালিব বড়াণিজােপলক্ষে একটি কাফেলার সঙ্গে সিরিয়া
রওয়ানা হন ৷ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যেই মাত্র তিনি রওয়ানা হন, ঠিক তখনি রাসুলুল্লাহ (না)
তাকে জড়িয়ে ধরেন ৷ এতে তার প্রতি আবু তালিব বিগলিত হয়ে পড়েন এবং বলে ওঠেন,
আল্লাহর শপথ ! একে আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাব ৷ আমিও তাকে আমার থেকে বিচ্ছিন্ন করব না,
সেও কখনো আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না ৷
যা হোক, রাসুলুল্লাহ (সা)-কে সঙ্গে করে আবু তালিব রওয়ানা হন ৷ কাফেলা সিরিয়ার
বুসরা নামক এক স্থানে যাত্রা বিরতি করে৷ সেখানকার একটি গীর্জায় এক পাদ্রী অবস্থান
করেন ৷ তার নাম ছিল বাহীরা ৷
খৃষ্টীয় ধর্মের তিনি বড় পণ্ডিত ছিলেন ৷ পাদ্রীতু গ্রহণ অবধি তিনি ঐ পীর্জায়ই সব সময়
থাকতেন ৷ খৃষ্টানদের ধারণা মতে, খ্রীষ্টীয় ধর্মগ্রন্থে তিনিই ছিলেন শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত ৷
উত্তরাধিকার সুত্রে এই জ্ঞান তারা পেয়ে থাকেন ৷
মক্কার এই বণিক কাফেলা এর আগেও বহুবার এ পথ চলাচল করেছে ৷ কিন্তু পাদ্রী বাহীরা
এতকাল পর্যন্ত কখনো তাদের সঙ্গে কথাও বলেন নি এবং তাদের প্রতি ফিরেও তাকান নি ৷
কিত্তু এই যাত্রায় কাফেলা পাদ্রীর গীর্জার নিকটে অবতরণ করলে পাদ্রী তাদের জন্য খাবারের
আয়োজন করেন ৷ কাফেলার লোকজনের ধারণা মতে, পাদ্রী তার গীর্জায় বলে কিছু একটা লক্ষ্য
করেই এমনটি করেছিলেন ৷ তাদের ধারণা, পাদ্রী কাফেলার মাঝে রাসুলুল্পাহ (সা)-কে দেখে
ফেলেছিলেন ৷ ফলে তখন একখণ্ড মেঘ দলের মধ্য থেকে শুধু রাসুলুল্লাহ (না)-কেই ছায়া ণ্
দিচ্ছিল ৷ কাফেলার লোকেরা আরও সামনে অগ্রসর হয়ে পাদ্রীর কাছাকাছি একটি গাছের ছায়ায়
অবস্থান নেয় ৷ পাদ্রী রাসুলুল্লাহ (না)-কে মেঘের ছায়া প্রদান এবং তার প্রতি গাছের ডাল-পালা
ঝুকে থাকছে লক্ষ্য করেন ৷ এসব দেখে পাদ্রী তার পীর্জা হতে বেরিয়ে আসেন ৷ এদিকে তার
আদেশে খাবার প্ৰন্তুত করা হয় ৷ এবার তিনি কাফেলার নিকট লোক প্রেরণ করেন ৷ কাফেলার
প্রতিনিধি দল পাদ্রীর নিকট উপস্থিত হলে পাদ্রী বলেন, ওহে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমি তোমাদের
জন্য খাবারের আয়োজন করেছি ৷ আমার একান্ত কামনা তোমরা প্রতেব্রুকে আমার এই
আয়োজনে উপস্থিত হবে, বড় ছোট,গােলাম-আযাদ সকলে ৷ জবাবে একজন বলল, আজ
আপনি ব্যতিক্রম কিছু করছেন দেখছি ৷ ইতিপুর্বে ক্খনাে তো আপনি আমাদের জন্য এরুপ
আয়োজন করেন নি ৷ অথচ এর আগেও বহুবার আমরা এই পথে যাতায়াত করেছি ৷ আজ এমন