ওয়াকিদী ও অন্যান্যরা ওফাত প্ৰসংগে অনেক আজগুবী ও অভিনব বিবরণ দিয়েছেন ৷ আমরা
সেগুলির সনদের দুর্বলতা এবং মুল পাঠের অপ্রামাণ্যতা লক্ষ্য করে তার অধিকাংশই বর্জণ
করাই শ্রেয় মনে করেছি ৷ বিশেষতঃ শেষ যুগের পেশাদার ওয়ায়েজ ওকথকদের উপস্থাপিত
অভিনব ও ঘুখরোচক কাহিনী সমুহ, যার অধিকাংশ্ইি নিঃসন্দেহে জাল ও বানােয়টি ৷ তা ছাড়া
প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমুহে বিবৃত সহীহ্ ও হাসান পর্যায়ের হাদীসসমুইে প্রাসংগিক বিশদ বিবরণের জন্য
যথেষ্ট এবং অপরিজ্ঞাত সনদ যুক্ত ও হাদীস নামে প্রচলিত মিথ্যা জাল কথাগুলি দিয়ে গ্রন্থের
কলেবর বৃদ্ধি করার কোন প্রয়োজন কিংবা যৌক্তিকতা নেই ৷ আল্লাহই সম্যক অবগত ৷
রাসুল (না)-এর ওফাতের পরে ও তার দাফনের পুর্বে
সৎঘটিত গুরুত্বপুর্ণ ঘটনাবলী
এ সময়ের ঘটনাবলীর মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ইসলাম ও মুসলিম
উম্মাহ্র জন্য সর্বাধিক ররকতপুর্ন ঘটনা হলো আবু বকর সিদ্দীক (রা)-এর হতে বায়আত ও
তীর খিলাফড়াতের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা ও স্বীকৃতি ৷ এ ঘটনার সুত্র হল, যে দিন রড়াসুলুল্লাহ
(না)-এর ওফাত হল ঠিক যে দিন ভোর বেলায়ই আবু বকর সিদ্দীক (বা) মুসলমানদের ইমাম
হয়ে ফজরের সালাত আদায় করেছিলেন ৷ এ সালাতের সময় রাসুলুল্লাহ (না) তার বিগত
কয়েক দিনের অসুস্থতাজনিত দুর্বলতা ও অচেতনতা হতে সাময়িক সুস্থতা বোধ করেছিলেন
এবং দরযার পর্দা তুলে ধরে আবু বকর (রা)-এর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে সালাত আদায়রত
মুসলমানদের প্রত্যক্ষ করে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন এবং তার চেহারা অনড়াবিল হাসিতে
উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল ৷ এমন কি মুসলমান যুসল্লীবৃন্দ তাদের প্রিয়তম নবীর সুস্থতা দর্শনের
আনন্দাতিশয্যে তাদের সালাতে থাকার কথা ভুলে যেতে বলেছিলেন এমন কি সালাত ছেড়ে
দিয়ে ছুটে আসার উপক্রম করছিলেন এবং আবু বকর (বা) নিজেও নবী করীম (না)-এর
আগমন সম্ভাবনার ইমামের স্থান ছেড়ে দিয়ে পিছনে যুকতাদীর সারিতে শামিল হতে উদ্যত
হয়েছিলেন, তখন নবী করীম (সা) তাদের নিজ নিজ অবস্থার’ থাকার ইংগিত করে পর্দা
ঝুলিয়ে দিলেন এবং এটাই ছিল নবী করীম (সা)কে মুসলমানদের শেষ দর্শন ৷ আবু বকর
(বা) সালাত শেষে নবী করীম (না)-এর কাছে গেলেন এবং আইশা (রা)কে বললেন
রাসুলুল্লাহ (না)-এর অসুস্থতা কম হতে চলেছে দেখছি ৷ আর আজ ৰিনত খারিজার (আবু বকর
(রা)-এর দু’শ্ৰীর একজন যিনি মদীনায় পুর্ব প্রান্তে অবস্থিত সৃনহ্ মহল্লায় বসবাস করতেন)
পালার দিন (তাই সেখান থেকে ঘুরে আসি) ৷ সুতরাং তিনি ঘোড়ার চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে
রওয়ানা হলেন ৷ ওদিকে রাসুলুল্পাহ (সা)-এর ওফাত হয়ে গেল সে দিনই প্রথম প্রহরের শেষ
দিকে, মতাম্ভরে দুপুরের সময় ৷ আল্লাহই সমধিক অবগত ৷
তার ওফাতের পর সাহারা-ই কিরামের মাঝে মতবিরোধ দেখা দিল ৷ কেউ বললেন,
বড়াসুলুল্লাহ (সা) ইনতিকাল করেছেন, কেউ বলছিলেন, ইনতিকাল করেন নি ৷ তখন সালিম
ইবন উবারদ (রা) সুনৃহে সিদ্দীক (রা)-এর কাছে গিয়ে র্তাকে রাসুলুল্লাহ (সা)এর ওফাত
সম্পর্কে অবহিত করলেন ৷ সিদ্দীক (রা) খবর পাওয়া মাত্র তার বাড়ি হতে রওয়ানা করে এনে
রাসুলুল্লাহ (না)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তার ঢেহারার আবরণ উন্মুক্ত করে তাকে চুমু
খেলেন এবং তার ওফাত সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে লোকদের কাছে বেরিয়ে গিয়ে মিম্বারের পাশে
দাড়িয়ে তাদের সামনে ভাষণ দিলেন ৷ তিনি সব সন্দেহের অপনােদন ও সব প্রশ্নের অবসান
ঘটিয়ে রাসুলুল্লাহ (না)-এর ওফাতের ঘোষণা দিলেন ৷ যেমনটি পুর্বে বর্ণিত হয়েছে ৷ আগত
লোকেরা তার কাছে সমবেত হল এবং সাহাবীদের জামাআত তার হাতে বয়আত গ্রহণ করল ৷
তবে কতক আনসারীর (বা) মনে বিষয়টিকে খটকা বীধে এবং তাদের কারো কারো কাছে
একজন আনসারীকে খলীফা মনোনয়ন সযীচীন মনে হলো ৷
কেউ আবার আপােয বফার পন্থায় মুহাজিরদের মধ্য হতে একজন আমীর এবং
আনসারদের পক্ষে একজন আমীর হওয়ার কথা বলতে লাপলেন ৷ এ পরিস্থিতিতে আবু বকর
সিদ্দীক (রা) র্তাদের কাছে স্পষ্ট করে দিলেন যে, (বিধান মতে) খিলাফতের পদাধিকারী রুপে
কুরায়শদের মধ্য হতেই কেউ মনোনীত হবেন ৷ ফলে তারা সকলে আবু বকরের আনুগত্যে
আস্থা জ্ঞাপন করলেন ৷ এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পরে আসছে ৷
বনু সাঈদা : মজলিস বরের ঘটনা
ইমাম আহ্মদ (র) বলেন, ইসহাক ঈসা আততাব বা (র) ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে বর্ণনা
করেন যে, তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবন আওফ (বা) তার অবস্থান ক্ষেত্রে ফিরে এলেন ৷
ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবন আওফ (রা)-কে পাঠ’ গােনাতড়াম;
তিনি এসে আমাকে প্রভীক্ষমান দেখলেন-এটা ছিল উমর ইবনুল খাত্তাব (বা) এর শেষ হরুজ্জর
সময় মিনার ঘটনা ৷ তখন আবদুর রহমান ইবন আওফ (বা) বললেন, এক ব্যক্তি উমর ইবনুল
খক্টত্তাব (বা) এর কাছে এসে বলল, অযুক’ ণ্লাক বলে যে, “উমরের মৃত্যু হলে আমি অঘুকের
হাতে বায়আত করবো ৷
তখন উমর (রা) বললেন, “ইনশাআল্লাহ ৷ আজ বিকালে আমি লোকদের সমবেত করে
ভাষণ দেব এবং এ কেফকা সম্পর্কে সতর্ক করে দেব যারা জনতার হাত থেকে তাদের
অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায় ৷ আবদুর রহমান বলেন, আমি তখন বললাম, আমীরুল ঘু’মিনীন!
এমন করবেন না ৷
কেননা, হত্তজ্জর মওসুমে অনেক সাধারণ ও থে’ড়ালমাল পাকানাে লোকের সমাবেশ ঘটে ৷
আর আপনার মজলিসে এদের সংখ্যাই বেশী থাকে ৷ তাই, আমার আশঙ্কা, হয় যে, আপনি
লোকদের সামনে কোন গুরুত্পুর্ণ কথা বললেও এ সব লোক তা বুঝে না বুঝে দৌড়াতে শুরু
করবে এবং তারা যথাযথ সংরক্ষণ করবে না, যথার্থ ক্ষেত্রে ও পাত্রে তা প্রয়ােগও করবে না ৷
বরং আপনি মদীনায় পৌছা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন! কেননা, মদীনা হচ্ছে হিজরাত ও সুন্নাতের
কেন্দ্র ৷ সেখানে আপনি উম্মাহ্র আলিমকুল ও অভিজাত গ্রেণীকে একাস্তে পারেন এবং তখন
আপনি ধীরে ন্থিরে আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন ৷ ফলে তারা আপনার বক্তব্য
যথাযথ রুপে অনুধাবন ও সংরক্ষণ করে তা যথাস্থানে প্রয়োগ করবেন ৷ উমর (রা) বললেন,
“সুস্থ দেহে আমি মদীনায় পৌছুতে পারলে আল্লাহ চাহেন তো সেখানে আমার প্রথম বক্তব্য
প্রদানের সুযােগেই আমি এ বিষয় লোকদের সামনে বক্তব্য রাখব ৷ তারপর জিলহদ্বজ্জর শেষ
দিকে যখন আমরা মদীনায় পৌছলাম এবং ওক্রাড়ার দুপুর হতে না হতে আমি চোখ খুজে’