হযরত দানিয়াল (আ)-এর বিবরণ
ইবন আবিদ দৃনৃয়া আবদুল্লাহ ইবন হুজায়ল থেকে বর্ণনা করেন যে, বুখৃত নসর
দু’টি সিংহ ধরে একটি কুপের মধ্যে নিক্ষেপ করে এবং নবী দানিয়ালকে এনে এ দুটি সিংহের
মধ্যে ছেড়ে দেয় ৷ কিন্তু সিংহ দু’টি তার উপর কোনরুপ আক্রমণ করেনি ৷ তিনি দীর্ঘক্ষণ
সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই অবস্থান করার পর মানুষের জৈবিক চাহিদা অনুযায়ী তার খাদ্য
পানীয়ের প্রয়োজন দেখা দেয় ৷ তখন আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে নবী আরমিয়াকে দানিয়ালের জন্যে
খাদ্য পানীয় প্রস্তুত করতে বলেন ৷ তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক ! আমি থাকি রায়তুল
মুকাদ্দাস এলাকায়, আর দানিয়াল আছেন সুদুঢ় ইরাকের ববিল শহরে ৷ সেখানে আমি কিভাবে
খাদ্য পানীয় পৌছাব? আল্লাহ বললেন, হে আরমিয়া, আমি তোমাকে যা আদেশ করেছি, তুমি
তা-ই কর; প্রন্তুতকৃত খাদ্য সড়ামগ্রীসহ তোমাকে সেখানে পৌছিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা শীঘ্রই আমি
করছি ৷ আরমিয়া (আ) খাদ্য তৈরি করলেন ৷ তারপর এমন একজনকে প্রেরণ করা হলো, যিনি
খাদ্য পানীয়সহ আরমিয়াকে উক্ত কুপের পাড়ে পৌছিয়ে দিলেন ৷ দানিয়াল ভিতর থেকে
জ্যিজ্ঞস করলেন, এখানে কে? আরমিয়া (আ) নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন আমি আরমিয়া ৷
দানিয়াল (আ) বললেন, কেন আপনি এখানে এসেছেন? আরমিয়া (আ) জানালেন, আপনার প্রভু
আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন ৷ দানিয়াল (আ) বললেন, তা হলে আমার প্রভু আমাকে
স্মরণ করেছেন ? আরমিয়া বললেন, জী ছুব্রু৷ ৷ তখন বলে উঠলেন : সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহ্র
যীকে কেউ স্মরণ করলে তিনি তাকে ভুলেন না; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, মাকে কেউ
আহ্বান করলে তিনি সে আহ্বানে সাড়া দেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, র্যার প্রতি কেউ
নির্ভরশীল হলে তিনি তাকে অন্যের দিকে ঠেলে দেন না; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি
উত্তম কাজের উত্তম বিনিময় দান করেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি ধৈর্যের বিনিময়ে
মুক্তি দান করেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন ?;
সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের বিশ্বাস ও কর্মদ্যেড়াম শিথিল হয়ে পড়লে দৃঢ়তা দান
করেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের সকল উপায় শেষ হবার পর একমাত্র
ভরসা স্থল ৷
ইউনুস ইবন বুকায়র আবুল আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, আমরা যখন
তুস্তর শহর জয় করি, তখন হরযুযানের বাড়িতে একটি খাটের উপর একটি মৃত দেহ দেখতে
পাই ৷ তার লাশের শিয়রের কাছে একটি আসমানী কিতাব ৷ আমরা তা’ নিয়ে আমি এবং
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাবকে দেখাই ৷ তিনি হযরত কা’বকে ডেকে তার দ্বারা তা আরবীতে
অনুবাদ করান ৷ আবুল আলিয়া বলেন, আরবদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম ঐ কিতাবখানড়ার
অনুদিত কপি পাঠ করি, যেভাবে আমি কুরআন পাঠ করে থাকি ৷ খুলদ ইবন দীনার বলেন ,
আমি আবুল অড়ালিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, তাতে কী লেখা ছিল ? তিনি বললেন, তাতে
লিখিত ছিল তোমাদের কর্মকাণ্ড, ঘটনাবলী, কথাবার্তা ও পরবর্তীকালে বটিতব্য সার্বিক অবস্থা ৷
আমি বললড়াম, আপনারা সে লোকটিকে কী করলেনঃ তিনি বললেন আমরা দিনের বেলা
তেবটি কবর খুড়লাম এবং রাত্রিকালে একটি কবরে তাকে দাফন করে সবক’টি কবর একই রুপ
করে দিলাম ৷ এ ব্যবস্থা করলাম যাতে সাধারণ লোক তার কবরের সন্ধান না পায় এবং কবর
খুড়ে না ফেলে ৷
বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, মানুষ তার কাছে কী প্রত্যাশা করে ; অন্ন্বুল আলিয়া বললেন,
বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে গেলে লোকজন এ খাট নিয়ে ময়দানে এসে বৃষ্টি কামনা করতো এবং এর
ফলে বৃষ্টিপাত হত ৷ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ মৃত লোকটিকে জানেন কিং আবুল আলিয়া
বললেন, তার নাম দানিযাল বলে শোনা যায় ৷ রাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কত বছর
পুর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন ? আবুল আলিয়া বললেন তিনশ বছর পুৰ্:ণ্হ্র ৷ রাবী পুনরায় জিজ্ঞেস
করলেন, এ সময়ের মধ্যে তার মৃতদেহের কোন পরিবর্তন হয়েছিল কি ? আবুল আলিয়া
বললেন, না, তবে মাথার পিছনের দিকের কয়েকটি চুলের পরিবর্তন হয়েছে মাত্র ৷ নবীদের দেহ
মাটিতেও পচে না এবং জীবজন্তুও খায় না ৷ এ ঘটনাটি আবুল আলিয়া থেকে বিশুদ্ধ সনদে
বর্ণিত হয়েছে ৷ তবে তার মৃত্যু তারিখ যদি তিনশ বছর পুর্বে হওয়া সঠিক হয় তা হলে তিনি
নবী নন, বরং কোন পুণ্যবান ব্যক্তি হবেন ৷ কেননা, সহীহ্ বুখারী শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী
রাসুলুল্লাহ (মা) ও ঈসা ইবন মারয়ামের মধ্যে অন্য কোন নবীর আগমন ঘটেনি ৷ আর এ দুই
নবীর মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান চারশ’ বছর ৷ কারও মতে ছয়শ’ বছর কারও মতে ছয়শ’ বিশ
বছর ৷ কোন কোন লেখক ঐ ব্যক্তির মৃত্যু আটশ’ বছর পুর্বে হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন ৷
ঐতিহাসিক মতে দানিয়ালের মৃত্যুও প্রায় এই সময়ে হয়েছিল ৷ এ হিসাব অনুযায়ী মৃত
ব্যক্তি দড়ানিয়ালও হতে পারেন, বা অন্য কোন নবীও হতে পারেন, কিংবা কোন নেককার ল্যেকও
হতে পারেন ৷ তবে দানিয়াল হওয়ার সন্তাবনাই অধিক ৷ কেননা দানিয়াল নবীকেই পারস্য সম্রাট
ধরে নিয়ে বন্দী করে রেখেছিল ৷ আবুল আলিয়া থেকে সহীহ্ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, মৃত
ব্যক্তিটির নাক এক বিঘত লম্বা ছিল ৷ আনাস ইবন মালিক (রা ) থেকে বিশুদ্ধ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে
যে, তার নাক এক হাত লম্বা ছিল ৷ এ দিকে লক্ষ্য করলে বলা যেতে পারে যে এ লাশ বহু
পুর্বের, দুর অতীতের কোন নবীর লাশ ৷
আবু বকর ইবন আৰিদ্দুনয়া তীর রচিত কিতাবু আহকামিল কুবুর গ্রন্থে আবুল
আশ’আছের বরাতে লিখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা ) বলেছেন : নবী দানিয়াল আল্লাহর নিকট দোয়া
করেছিলেন যে, তার দাফনকার্য যেন উম্মতে মুহান্মাদীর হাতে সুসষ্পন্ন হয় ৷ পরবর্তীকালে আবু
মুসা আশআরীর হাতে তুসৃতর নগরী বিজিত হলে তার লাশ একটি সিব্দুকের মধ্যে দেখতে
পান ৷ এ সময় তার দেহের শিরা ও র্কাধের মোটা রগ দু’টি নড়াচড়৷ করছিল ৷ রাসুলুল্লাহ (সা )
বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করিয়ে দেবে, তাকে জান্নন্বতের সু-সংবাদ
দিবে ৷ হারকুস নামক এক ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করেছিলেন ৷ আবু মুসা ( র ৷ ) হযরত
উমর (রা)-কে এ বিষয়ে অবহিত করেন ৷ তখন হযরত উমর (রা ) পএ মারফত তাকে জানান
যে, দানিয়ালকে ওখানে দাফন কর এবং হারকুসকে আমার নিবল্ট পাঠিয়ে দাও কেননা নবী
করীম (সা) তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন ৷ বর্ণিত সুত্রে হাদীছটি মুরসাল এবং এর
বিগুদ্ধতড়ার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে ৷
ইবন আবিদ্ দুনিয়া আষাসা ইবন সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন যে , আবু মুসা মৃত
দানিয়ালের সাথে একখানা আসমানী কিতাব, চর্বি ভর্তি একটি কলস কিছু সংখ্যক দিৰুক্১;াম ও
তার ব্যবহৃত আৎটি পান ৷ এরপর হযরত উমর (রা)-যেৰু এ সম্পর্কে অবহিত করে আবু মুসা
(রা ) পত্র লিখেন ৷ হযরত উমর (রা ) চিঠির মাধ্যমে আবু যুসাকে জানান, অড়াসমানী কিতাবখানা
আমাদের নিকট পাঠিয়ে দাও, চর্বির কিছু অংশ অড়ামাদ্দোর ঢ়না পাঠাও এবং অবশিষ্ট অংশ
থেকে আরোগ্য লাভের জন্যে মুসলমানদেবকে তোমার পক্ষ ৷;থাক ব্যবহার করতে ম্াও আর
দিরহামগুলাে তাদের মাঝে বণ্টন কর এবং আৎটিটি তুমি ব্যবহার কর! ভিন্ন সুত্রে ইবন আবিদ্
দুনিয়া থেকে বর্ণিত, আবু মুসা (বা) যখন দানিযহ্লের লাশ পেলেন , তখন তিনি ত ন্ধ্রতিঃয়
ধরেন, ও চুম্বন করেন ৷ অতঃপর তিনি হযরত উমর (রা)-ব্;যশ্ এ বিষয়ে অবহিত করেন এবং
জানান যে, তার লাশের সাথে প্রায় দশ হাজার দিরহাম মুল্যের ধ্নসম্পদ পাওয়া গিয়েছে ৷
বিভিন্ন লোক তাখেকে ধার নেয় এবং পরে ফেরত দিয়ে যায় ৷ কেউ ফেরত না দিরু’ল রোগে
আক্রান্ত হয় ৷ তার পাশে ত্মাতর ভর্তি একটি কৌটাও রয়েছে ৷ হযরত উমর (রা ) আর মসাকে
জানান যে, তাকে বরই পাতা মিশানো পানি দ্বারা গোসল করিয়ে, কাফন পরিয়ে দ:’ফন কর
এবং তীর কবরটি এমনভাবে গোপন রাখ যেন কেউ তার সন্ধান না পায় ৷ মালামাল সম্পভৈর্ক
জানান যে, সেগুলো বায়তুলমালে জম৷ কর, আতরের কৌটা পাঠিয়ে দাও এবং আংটিটি তুন্ম
নিজে ব্যবহার কর ৷
আবু মুসা (বা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তার নির্দেশত্রুমে চারজন বন্দী নদীর মধ্যে রাধ্
দিয়ে তার তলদেশে কবর খুড়ে সেখানে হযরত দানিয়ালের লদ্বশ দাফন করে ৷ পরে আবু মুক্তাহ্র
(বা) ঐ চার বন্দীকে ডেকে এনে হত্যা করে দেন ৷ যণ্ব্লুষ্া আবু মুসা আশআবী ৷ রা ) বাদ্রীত্তে ট্টত
কবরের সন্ধান জানার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকল না ৷ ইবন আযিদ দৃনিয়৷
আবুবৃ-যিনাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি আবু মৃস৷ অম্পোত্যাবীর দ্বুষ্ত্র অ ৷ বু
বৃরদার হাতে একটি আৎটি দেখেছি যাতে দুটি সিৎহ এবং সিংহদ্বয়ের মহ্বঝে জনৈক ব্যক্তির
চিত্র অত্কিত রয়েছে; আর সিংহ দু’টি ঐ ৷লাকটিকে জিহ্বা দ্বারা চাটছে ৷ আবু বুরদা বললেন
এটি ঐ ল্যেকটির আৎটি-মাকে এই শহরের লোক দানিয়াল নামে জানে ৷ র্তাকে দাযক্ষা করার
সময় আবু মুসা (বা) তা ’ নিজের কাছে তুলে রাখেন ৷
আবু বুরদা বলেন, আবু মুসা আশআথ্:র্দুত্ব (বা) উক্ত জনপদের লোকজনের নিকট আংটিতে
অংকিত এ চিত্রের কারণ জানতে চাইলে তার৷ জানায়, দানিয়ালের আবিণ্র্তাবকালে দেশের যিনি
শাসনকর্তা ছিলেন, তার নিকট ৰুজ্যাতিৰী ও গণবণ্দল এসে ভবিষ্যদ্বাণী করে যে ন্সমৃক ৰাত্রে
আপনার রাজেব্র এমন একজন শিশুর জন হবে, যে এ রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে ৷
১ সম্ভবত এরা ছিল মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কয়েদী ৷
রাজা বললেন, আল্লাহর কসম ! ঐ রাত্রে যত শিশুর জন্ম হবে, আমি তাদের সকলকে হত্যা
করব ৷ বাস্তবে রাজা তাই করলেন ৷ অবশ্য, শিশু দানিয়ালকে রাজার লোকজন সিংহ সালের
মধ্যে নিক্ষেপ করে চলে যায় ৷ কিন্তু সিংহ তার কোন ক্ষতি করল না; বরং দু’টি সিংহ শিশুটিকে
জিহ্বা দ্বারা চেটে সুস্থ রাখে ৷ অতঃপর শিশুঢির মাতা এসে সন্তানকে এ অবস্থায় দেখে সেখান
থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান ৷ এভাবে আল্লাহ দানিয়ালকে রক্ষা করেন এবং স্বীয় ইচ্ছা কার্যকরী
করেন ৷ আবু মুসা (রা) বলেন, ঐ জনপদের লোকজন জানায় যে, দানিয়ালের প্রতি আল্লাহর এ
অনুগ্রহ স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্যে দানিয়াল তার আৎটিতে নিজেকে সিংহদ্বয়ের চাটারত অবস্থা
চিত্রাৎকিত করে রাখেন ৷ এ বর্ণনার সুত্রটি হাসান’ পর্যায়ের ৷
বিধ্বস্ত বায়ভুল মুকাদ্দাস পুনঃনির্মাণ এবং বিক্ষিপ্ত
বনী ইসরাঈলের পুনরায় একত্রিত হওয়ার বর্ণনা
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাণী :
-অথবা তুমি কী যে ব্যক্তিকে দেখনি, যে এমন এক নগরে উপনীত হয়েছিল, যা
ধ্বংসভুপে পরিণত হয়েছিল ৷ সে বলল, “মৃত্যুর পর কিরুপে আল্লাহ একে জীবিত করবেন?
তারপর আল্লাহ তাকে একশ’ বছর মৃত রাখলেন ৷ পরে ত কে পুনর্জীবিত করলেন ৷ আল্লাহ
বললেন, “তুমি কতকাল অবস্থান করলে?” সে বলল, একদিন অথবা একদিনেরও কিছু কম
অবস্থান করেছি ৷ তিনি বললেন, না, বরং তুমি একশ’ বছর অবস্থান করেছ ৷ তোমার খাদ্য
সামগ্রী ও পানীয় বস্তুর প্রতি লক্ষ্য কর, তা অবিকৃত রয়েছে এবং তোমার পাধাটির প্রতি লক্ষ্য
কর, কারণ তোমাকে মানব জাতির জন্য নিদর্শন স্বরুপ করব ৷ আর অস্থিগুলোর প্রতি লক্ষ্য
কর, কিভাবে সেগুলোকে সংযোজিত করি এবং গোশত দ্বারা ঢেকে দেই ৷’ যখন এ তার
নিকট সুস্পষ্ট হল তখন সে বলে উঠল, আমি জানি যে, আল্লাহ নিশ্চয়ই সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান ৷
(২ বড়াকারা : ২৫৯)
হিশাম ইবন কালবী বলেন, অতঃপর আল্লাহ আরমিয়া নবীর নিকট ওহী প্রেরণ করে
জানালেন যে, আমি বায়তুল-মুকাদ্দাসকে পুনরায় আবাদ করব ৷ সুতরাং তুমি সেখানে যাও ও
অবস্থান কর ৷ নির্দেশ মতে আরমিয়া (আ) সেখানে গোলন এবং দেখলেন যে, গোটা নগরী
সম্পুর্ণরুপে ধ্বংসদ্ভুপে পরিণত হয়েছে ৷ অবাক বিম্ময়ে তিনি ভাবলেন, সুবহানাল্লাহ৷ আল্লাহ
আমাকে এ নগরীতে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, তিনি একে পুনরায়
আবাদ করবেন; কিন্তু তা করে? এমন বিধ্বস্ত নগরীকে তিনি কতদিনে কিভাবে আবাদ করবেন?
এসব চিন্তা করতে করতে তিনি ঘুমিয়ে গেলেন ৷ তার সাথে ছিল একটি পাধা ও কিছু খাদ্য
দ্রব্য ৷ এ ঘুমের মধ্যে তার সত্তর বছর কেটে যায় ৷ ইতিমধ্যে বুখৃত নসর ও তার মনিব সম্রাট
লাহ্রাসার মৃত্যু হয় ৷ লাহ্রাসার একশ বিশ বছর যাবত রাজতু করেছিলেন ৷ তার মৃত্যুর পর
তার পুত্র বাশৃতাসাব তার স্থলাভিষিক্ত হন ৷ তারই রাজতুকালে বুখৃত নসরের মৃত্যু হয় ৷
বাশৃতাসড়াব সিরিয়া (শাম) সম্পর্কে অবগত হলেন যে, :দশশ্ণ্ট ধ্বংসদ্ভুপে পরিণত হয়ে আছে,
সমগ্র ফিলিস্তীন হিংস্র শ্বাপদে ভরে গিয়েছে এবং মানুষের কোন অস্তিত্ব সেখানে নেই ৷ তাই
তিনি সদয় হয়ে বাবিলে অবস্থানরত বনী ইসরাঈলদেরকে আহ্বান করে জানালেন ৷ তোমরা
যারা নিজেদের দেশে সিরিয়ার ফিরে যেতে চাও, যেতে পার ৷ তিনি দাউদ বংশের একজনকে
তাদের রাজা বানিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসসহ অন্যান্য মসজিদ পুনর্নির্মাণ করার নির্দেশ দেন ৷ রনী
ইসরাঈলরা তাদের রাজার সাথে আপন দেশ সিরিয়ার চলে গেল এবং বায়তুল মুকাদ্দাস
পুনঃপ্ৰতিষ্ঠা করল ৷
আল্লাহ তখন আরমিয়ার চোখ খুলে দিলেন ৷ তিনি নগরীর আবাদ হওয়া দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ
করতে থাকলেন ৷ এভাবে তার আরও ত্রিশ বছর কেটে যায় ৷ ফলে পুর্ণ নিদ্রাকাল একশ বছর
পুর্ণ হয় এবং তারপরে তিনি জাগ্রত হন ৷ কিন্তু তিনি ধারণা করতে থাকেন যে, তার নিদ্রাকাল
কয়েক ঘণ্টার বেশি হয়নি ৷ অথচ নগরীকে তিনি দেখেছিলেন ধ্বংস ও বিধ্বস্ত ৷ আর নিদ্রা থেকে
জেগে এখন দেখতে পাচ্ছেন আবাদ নগরী হিসেবে ৷ তাই সহসা বলে উঠলেন, আল্লাহ সবকিছুই
করতে পারেন ৷ অতঃপর বনী ইসরাঈলরা তথায় বসবাস করতে থাকে ৷ আল্লাহ তাদের রাজতৃ
ফিরিয়ে দিলেন ৷ এভাবে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয় ৷ তারপর তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দ্বন্দু
কলহে লিপ্ত হয় ৷ এ সুযোগে রোমান সম্রাট তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের দেশ দখল
করে নেয় ৷ রোমীয় খৃষ্টানদের শাসনাধীনে থেকে বনী ইসরাঈলের শক্তি ও ঐক্য-সৎহতি কিছুই
অবশিষ্ট থাকল না ৷
ইবন জারির (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে উক্ত ঘটনা এভাবেই বনাি করেছেন ৷ তিনি আরও
লিখেছেন যে, লাহ্রাসার ছিলেন একজন ন্যায়পরড়ায়ণ শাসক ৷ প্রজাবর্গ, সামত রাজগণ,
অধিনায়কগণ ও শহর-নগর সবই ছিল তার অনুগত আজ্ঞাবহ ৷ নগর তৈরি , নদী খনন ও
সরাইখানা নির্মাণে তিনি ছিলেন অতিশয় বিজ্ঞ ও পারদর্শী ৷ একশ বছরের উধের্ব রাজ্য শাসনের
পর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়লে আপন পুত্র রাশতাসবের নিকট ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি অবসর
গ্রহণ করেন ৷ রাশতাসবের আমলে সেদেশে মাজুসী ধর্মের (অগ্নিপুজার ) উদ্ভব হয় ৷ এ ধর্মের
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ১২
সুচনা করেন যারদাশৃত নামক এক ব্যক্তি ৷ তিনি নবী আরমিয়ার সঙ্গে থাকতেন ৷ নবীর উপর
কোন এক কারণে তিনি রাগাম্বিত হন ৷ নবী তাকে অভিশাপ দেন ৷ ফলে যারদাশৃত কুষ্ঠ রোগে
আক্রান্ত হয় ৷ অতঃপর তিনি আজার-বাইজানে গিয়ে বাশৃতাসবের সাথে মিলিত হন এবং তাকে
নিজের উদ্ভাবিত মাজুসী ধর্মে দীক্ষিত করেন ৷ এই ধর্ম গ্রহণ করার জন্যে বাশতাসব জনগণের
উপর ভীষণভাবে চাপ সৃষ্টি করে ৷ যারা স্বীকার করতে রাজি হয়নি তাদেরকে সে পাইকারীভাবে
হত্যা করে ৷ বাশৃতাসরের পরে তার পুত্র বাহ্মান পারস্যের সম্রাট হয় এবং রাজ্য শাসনে যথেষ্ট
খ্যাতি অর্জন করে ৷
বুখৃত নসর উপরোক্ত তিনজন সম্রাটের অধীনে আঞ্চলিক শাসনকর্তা ছিল এবং দীর্ঘ জীবন
লাভ করেছিল ৷ উপরোক্ত বর্ণনার সারমর্ম হল ইবন জারিরের যডে উক্ত জনপরুদর মধ্য
দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তি হলেন হযরত আরমিয়া (আ) ৷ কিন্তু ওহহ্বব ইবন ন্মুনাববিহ,, আবদৃল্লাহ্
ইবন উবায়দ প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ হযরত আলী, আবদুল্লাহ ইবন সলাম, ইবন আব্বাস ৰু
হাসান, কাতাদা, সুদ্দী, সুলায়মান ইবন বুরায়দা প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উক্ত
অতিক্রমকারী ব্যক্তি হযরত উযায়র (আ) ৷ গােষাক্ত বর্ণনার সুত্র উপরের মতের বর্ণনার সুত্রের
অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী এবং প্রথম যুগের ও পরবর্তী যুগের আলিমগণের অধিকাৎশের নিকট
বেশি প্রসিদ্ধ ৷
হযরত উযায়র (আ)-এর বর্ণনা
ইবন আসাকির হযরত উযায়র (আ) এর পুর্ব পুরুষদের বংশলতিকা নিম্নরুপ বর্ণনা
করেছেন : উযায়র ইবন জ বওয ৷(ভিন্নমতে সুরীক) ইবন আাদয়৷ ইবন আইয়ুব ইবন দারযিনা
ইবন আরী ইবন তাকী ইবন উসব ইবন ফিনহাস ইবনৃল আবির ইবন হারুন ইবন ইমরান ৷
কারও কারও বর্ণনায় উযায়র (আ)-এর পিতার নাম বলা হয়েছে সারুখ৷ ৷ কোন কোন
ঐতিহাসিকের মতে উযায়র (আ)-এর কবর দামিশকে অবস্থিত ৷ ইবন আসাকির ইবন
আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (না) বলেছেন, আমার জানা নেই, ঝর্ণাট৷ বি
বিক্রি হয়েছে না বিক্রি হয়নি, আর উযায়র কি নবী ছিলেন নাকি নবী ছিলেন না ৷ আবু
হুরায়রা (রা) থেকেও এরুপ বর্ণিত হয়েছে ৷ ইসহাক ইবন বিশর ইবন আব্বাস (রা ) থেকে
বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, বুখত নসর যাদেরকে বন্দী করে নিয়েছিল তাদের মধ্যে উযায়রও
ছিলেন ৷ তখন তিনি ছিলেন একজন কিশোর ৷ যখন তিনি চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হন তখন
আল্লাহ তাকে হিকমত (নবুওত) দান করেন ৷ তাওরাত কিতাবে তার চাইতে ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন
পন্ডিত আর কেউ ছিল না ৷ অন্যান্য নবীদের সাথে৩ তাকেও নবী হিসেবে উল্লেখ করা হত ৷ কিন্তু
যখন তিনি আল্লাহর নিকট তার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন তখন তার নবুওত প্রত্যাহার করে
(নয়৷ হয় ৷ কিভু এ বর্ণনাটি দুর্বল ৷ সুত্র পরম্পর৷ বিচ্ছিন্ন ও অগ্নহণযোগ্য ৷
ইসহাক ইবন বিশর আবদুল্লাহ ইবন সালাম (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে, উযায়র
হলেন আল্লাহর সেই বান্দা, র্যাকে তিনি একশ বছর মৃত অবস্থায় রেখে পুনরায় জীবিত
করেছিলেন ৷ ইসহাক ইবন বিশর বলেন, বিভিন্ন সুত্রে ইবন আব্বাস (রা) ৷;থকে বর্ণনা করেছেন
যে উযায়র ছিলেন একজন জ্ঞানী ও পুণ্যবান লোক ৷ একদা তিনি তার (ক্ষত খামার ও
বাগ বাগিচ৷ দেখার জন্যে ঘর থেকে বের হন ৷ সেখান থেকে প্রত্যাব৩ নকালে দ্বিপ্রহরের সময়
একটা বিধ্বস্ত বাড়িতে বিশ্রাম নেন ৷ তবে বাহন গাধার পিঠ থেকে নিচে অবতরণ করেন ৷ তার
সাথে একটি ঝুড়িতে ছিল ডুমুর এবং অন একটি ঝুড়িতে ছিল আঙ্গুর ৷ খাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি
একটি ;পয়ালায় আব্দুর নিংড়িয়ে রস বের করেন এবং শুকনো রুটি তাতে ভিজিয়ে রাখেন ৷
রুটি উক্ত বসে তালরুপে ভিজে গেলে খাবেন এই সময়ের মধ্যে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে কিছু
সময়ের জন্যে চিত হয়ে ওরে পড়েন এবং পাদ খান৷ দেয়ালের সাথে লাগিয়ে দেন ৷ এ অবস্থায়
তিনি বিধ্বস্ত ঘরগুলাের প্ৰতি লক্ষ্য করলেন যার অধিবাসীরাও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ৷ তিনি
অনেকগুলো পুরাতন হাড় দেখতে পেয়ে মনে মনে ভাবলেন মৃত্যুর পর আল্লাহ কিরুপে
এগুলোকে জীবিত করবেন? আল্লাহ যে জীবিত করবেন, এতে তার আ৷:দা কোন সন্দেহ ছিল
না ৷ এ কথাটি তিনি কেবল অবাক বিস্ময়ের সাথে ভেবেছিলেন ৷ অতঃপর আল্লাহ মৃত্যুর
ফেরেশতাকে পাঠিয়ে তবেঃ রুহ কবজ করলে এবং একশ বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় রেখে দেন ৷