হড়াদীসে আদম (আ)-এর সৃষ্টি প্রসঙ্গ
আবু মুসা আশআরী (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : আল্লাহ্ তাআলা আদম
(আ)-কে সমগ্র পৃথিবী থেকে সংগৃহীত এক ঘুঠো মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন ৷ তাই মাটি অনুপাতে
আদমের সন্তানদের কেউ হয় সাদা, কেউ হয় গৌরবর্ণ, কেউ হয় কালো, কেউ মাঝামাঝি
বর্ণের ৷ আবার কেউ হয় নােং রা, কেউ হয় পরিচ্ছন্ন, কেউ হয় কোমল, কেউ হয় পাষাণ ৷,কেউ
বা এগুলোর মাঝামাঝি ৷ ঈষৎ শাব্দিক পার্থক্যসহ তিনি ভিন্ন সুত্রে উক্ত হাদীসঢি বর্ণনা
করেছেন ৷
ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী এবং ইবন হিব্বান (র) আবু মুসা আশআরী (রা) যীর আসল
নাম আবদৃল্পাহ্ ইবন কায়েস (রা) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন ৷ ইমাম তিরমিযী (র) হাদীসটি
হাসান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন ৷
সুদ্দী (র) ইবন আব্বাস ও ইবন মাসউদ (না)-সহ কতিপয় সাহারা সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
তারা বলেন : আল্লাহ্ তাআলা কিছু কাদামাটি নেয়ার জন্য জিবরাঈল (আ)-কে যমীনে প্রেরণ
করেন ৷ তিনি এসে মাটি নিতে চাইলে যমীন বলল, তুমি আমার অঙ্গহানি করবে যা আঘাতে
ত সৃষ্টি করবে; এ ব্যাপারে তোমার নিকট থেকে আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাই ৷ ফলে
জিবরাঈল (আ) মাটি না নিয়ে ফিরে গিয়ে বললেন, হে আমার রব! যমীন তোমার আশ্রয়
প্রার্থনা করায় আমি তাকে ছেড়ে এসেছি ৷
এবার অ ৷ল্লাহ্ তা অ ৷লা মীকাঈল (আ) কে প্রেরণ করেন ৷ যমীন তার নিকট থেকেও আশ্রয়
প্রার্থনা করে বসে ৷ তাই তিনিও ফিরে গিয়ে জিবরাঈল (আ)-এর মতই বর্ণনা দেন ৷ এবার
আল্লাহ্ তাআলা মালাকুল মউত (আ) বা মৃত্যুর ফেরেশতাকে প্রেরণ করেন ৷ যমীন তার কাছ
থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি র্কীলেন, আর আমিও আল্লাহ্তাআলার আদেশ বাস্তবায়ন
না করে শুন্য হাতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তার পানাহ্ চাই ৷ এ কথা বলে তিনি পৃথিবীর
বিভিন্ন স্থান থেকে সাদা, লাল ও কালো রঙের কিছু মাটি সংগ্রহ করে মিশিয়ে নিয়ে চলে যান ৷
এ কারণেই আদম (আ)-এর সন্তানদের এক একজনের রঙ এক এক রকম হয়ে থাকে ৷
আজরাঈল (আ) মাটি নিয়ে উপস্থিত হলে আল্লাহ তাআলা মাটিগুলো ভিজ্যিয় নেন ৷ এতে
তা আটালো হয়ে যায় ৷ তারপর ফেরেশতাদের উদ্দেশে তিনি ঘোষণা দেন :
অর্থাৎ কাদামাটি দ্বারা আমি মানুষ সৃষ্টি করতে ৩যাচ্ছি ৷ যখন আমি তাকে সুঠাম করব
এবং তাতে আমার রুহ্ সঞ্চার করব; তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো ৷ ( ১ ৫ : ২৮)
তারপর আল্লাহ তাআল৷ আদম (আ)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেন, যাতে ইবলীস তার
ব্যাপারে অহংকার করতে না পারে ৷ তারপর মাটির তৈরি এ মানব দেহটি থেকে চল্লিশ বছর
পর্যন্ত যা জুমআর দিনের অংশ বিশেষ ছিল১ একইভাবে পড়ে থাকে ৷ তা দেখে ফেরেশতাগণ
ঘাবড়ে যান ৷ সবচাইতে বেশি ভয় পায় ইবলীস ৷ সেত তার পাশ দিয়ে আনাগােনা করত এবং
তাকে আঘাত করত ৷ ফলে দেহটি ঠনঠনে পােড়া মাটির ন্যায় শব্দ করত ৷ এ কা ৷বণেই মানব
সৃষ্টির উপাদানকে এাষ্া৷ৎ ৰুমোঃ তথা পোড়ামাটির ন্যায় ঠনঠনে মাটি বলে অভিহিত
করা হয়েছে ৷ আর ইবলীস তাকে বলত, তুমি একটি বিশ্বে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়েছ ৷
এক পর্যায়ে ইবলীস তার মুখ দিয়ে প্রবেশ করে পেছন দিয়ে বের হয়ে এসে
ফেরেশতাগণকে বলল, একে তোমাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই ৷ কেননা তোমাদের
বব হলেন সামাদ তথা অমুখাপেক্ষী আর এটি একটি শুন্যগর্ভ বন্তুমাত্র কাছে পেলে আমি একে
ৎস করেই৷ ছা ড়ব ৷
এরপর তার মধ্যে রুহ্ সঞ্চার করার সময় হয়ে এলে আল্লাহ তাআল৷ ফেরেশতাগণকে
বললেন : আমি যখন এর মধ্যে রুহ সঞ্চার করব; তখন তার প্রতি তোমরা সিজদাবনত হয়ো ৷
যথাসময়ে আল্লাহ্ তাআলা তার মধ্যে রুহ্ সঞ্চার করলেন যখন রুহ্ তার মাথায় প্রবেশ করে,
তখন তিনি ইাচি দেন ৷ ফেরেশতাগণ বললেন, আপনি আল-হামদুলিল্লাহ্ বলুন ৷ তিনি
আলা-হামদুলিল্লাহ্’ বললেন ৷ জবাবে আল্লাহ তাআলা বললেন : প্র ন্র্চু (ণ্াহু১১ (তোমার বব
তোমাকে রহম করুন!) তারপর রুহ্ তার দুচোখে প্রবেশ করলে তিনি জান্নাতের ফল-ফলাদির
প্রতি ৩দৃষ্টিপাত করেন ৷ এবার রুহ্ তার পেটে প্রবেশ করলে তার মনে খাওয়ার আকাডক্ষা জাগে ৷
ফলে রুহ্ পা পর্যন্ত পৌছানের আগেই তড়িঘরি করে তিনি জান্নাতের ফল-ফলাদির প্রতি ছুটে
যান ৷ এ কারণেই আল্লাহ তা আলা বলেন৪ ষ্; ব্লুটু০ ষ্া১৷ ৷ এপুর্দু মানুষ সৃষ্টিপতভাবেই
তৃরাপ্রবণ ৷’ (২১০ : ৩৭)
এ্যা
অথাত্ তখন ইবলীস ব্যতীত ফেরেশত ৷রা সকলেই সিজদা করল ৷ সে সিজদাক৷ রীদের
অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল ৷ ( ১ ৫ : ৩০)
সুদ্দী (র) এভাবে কাহিনীটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন ৷ এ কাহিনীর সমর্থনে আরো বেশ
কটি হাদীস পাওয়া যায় ৷ তবে তার বেশির ভাগই ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে গৃহীত
১ উর্ধ জগতের একদিন পৃথিবীর হাজার বছরের, বর্ণনাম্ভরে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান বলে কুরআনের বর্ণনায় পাওয়া
যায় ৷ (রিঃদ্ৰ৪ ২২ : ৪৭ ও ৭০ : ৪)
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আনাস (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
“আল্লাহ্ তাআলা আদম (আ) কে সৃষ্টি করে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন তাকে ফেলে রাখেন ৷
এ সুযোগে ইবলীস ৩ড়ার চতুষ্পড়াভৈর্শ্ব চক্কর দিতে শুরু করে ৷ অবশেষে তাকে শুন্যগর্ভ দেখতে
পেয়ে সে আচ করতে পারল যে, এটাতো এমন একটি সৃষ্টি যার সৎযম ক্ষমতা থাকবে না ৷”
ইবন হিব্বান (র)ত তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, আনাস (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বলেছেন ং “আদম (আ) এর মধ্যে রুহ্ সঞ্চাবিত হওয়ার পর রুহ্৩ তার মাথায় পৌছুলে তিনি
হীচি দেন এবং আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বলেন ৷ উত্তরে আল্লাহ তা জানা
বললেন : ইয়ারহামুকাল্লাহ’ ৷ ঈষৎ শাব্দিক পার্থক্যসহ হাফিজ আবু বকর বায্যার (র) (য়াহয়া
ইবন মুহাম্মদ ইবন সাকান)-ও হড়াদীসটি বর্ণনা করেন ৷
উমর ইবন আব্দুল আযীয (ব) বলেন, “আদম (আ)-কে সিজদা করার জন্য
ফেরেশতাগণকে আদেশ করা হলে সর্বপ্রথম হযরত ইসরাফীল (আ) সিজদড়াবনত হন ৷ এর
পুরস্কারস্বরুপ আল্লাহ্ তাআলা তীর ললড়াটে কুরআন অঙ্কিত করে দেন ৷ ইবনে আসাকিব এ
উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন ৷
হাফিজ আবু ইয়ালা (র) বর্ণনা করেন যে, আনাস (বা) বলেন, রাসুল (সা) বলেছেন :
আল্লাহ্ তাআলা হযরত আদম (আ)-কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন ৷ প্রথমে মাটিগুলোকে তিজিয়ে
অটিড়ালো করে কিছু দিন রেখে দেন ৷ এতে তা ছুড়াচে ঢড়ালা মাটিতে পরিণত হলে আদম
(আ) এর আকৃতি সৃষ্টি করে কিছুদিন এ অবস্থায় রেখে দেন ৷ এবার তা পোড়া মাটির মত
শুকনো ঠনঠনে মাটিতে রুপান্তরিত হয় ৷ বর্ণনাকারী বলেন, ইবলীস তখন তার কাছে গিয়ে
বলতে শুরু করে যে, তুমি এক মহান উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়েছ ৷ তারপর আল্লাহ তাআলা তার মধ্যে
রুহ্ সঞ্চার করেন ৷ রুহ্ সর্বপ্রথম তার চোখ ও নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করলে তিনি হাচি দেন ৷
হীচি শুনে আল্লাহ্ বললেন : তোমার বব তোমার প্রতি বহমত বর্যণ করুন
অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বললেন, হে আদম তুমি ঐ ফেরেশ্ তো দলের কাছে গিয়ে দেখ
তারা কী বলে? তখন তিনি ফেরেশত ৷ দলের কাছেগ্ গিয়ে তাদেরকে সালাম দেন ৷ আর তারা
বলে উত্তর দেন ৷ তখন আল্লাহ বললেন, হে
আদম এটা তোমার এবং তোমরা বংশধরের অভিবাদন ৷ আদম (আ) জিজ্ঞাসা করলেন, হে
আমার বব! আমার বংশধর আবার কি? আল্লাহ বললেনহ্র; আদম তুমি আমার দৃ হাতের যে
কোন একটি পছন্দ কর ৷ আদম (আ) বললেন, আমি আমার বরের ডান হাত পছন্দ করলাম ৷
আমার বর-এর উভয় হাতই তো ভাল হাত বরকতময় ৷
এবার আল্লাহ্ তাঅড়ালা নিজের হাতেরত তালু প্রসারিত ৩করলে আদম (আ) কিয়ামত পর্যন্ত
আগমনকারী তার সকল সন্তানকে আল্পাহ্র হাতের তালুতে দেখেতে পান ৷ তন্মধ্যে
কিছুসংখ্যকেব মুখমণ্ডল ছিল নুরে সমুজ্জ্বল ৷ সহসা তাদের মধ্যে একজনের নুরে অধিক বিমুগ্ধ
হয়ে আদম (আ) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার বর! ইনি কে? আল্লাহ্ বললেন, ইনি তোমার
সন্তান দউিদ ৷ জিজ্ঞাসা করলেন, এর আবু কত নির্ধারণ করেছেন? আল্লাহ বললেন, ষাট বছর ৷
আদম (আ) বললেন, আমার থেকে নিয়ে এর আযু পুর্ণ একশ বছর করে দিন ৷ আল্লাহ তার
আবদার মঞ্জুর করেন এবং এ ব্যাপারে ৫ফরেশতাগণকে সাক্ষী রাখেন ৷ তারপর যখন আদম
(আ)-এর আযু শেষ হয়ে আসলাে তখন তার রুহ্ কবয করার জন্য আল্লাহ তাআলা আযরাঈল
(আ) কে প্রেরণ করেন ৷ তখন আদম (আ) বললেন, কেন, আমার আর তো আরো চল্লিশ বছর
বাকি আছে ৫ফরেশত ৷ বললেন, আপনি না আপনার আযুর চল্লিশ বছর আপনার সন্তান দাউদ
(আ)-কে দিয়ে দিয়েছিলেন! কিন্তু আদম (আ)৩ ত ৷অস্বীকার করে বলেন এবং পুর্বের কথা তুলে
যান ৷ ফলে তার সন্তানদের মধ্যে অস্বীকৃতি ও বিস্মৃতির প্রবণতা সৃষ্টি হয় ৷ হাফিজ আবু বকর
বাবৃযার (র) তিরমিষী ও নাসাঈ (র) তার ইয়াওম ওয়াল লাইলা’ কিতাবে আবু হুরায়রা সুত্রে
এ হাদীসটি বর্ণনা করেন ৷ তিরমিষী (র) হাদীসটি হাসান গরীব পর্যায়ের এবং ইমাম নাসাঈ
(র) ঘুনকার’ তথা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ৷
তিরমিষী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
“আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তা আলা তার পিঠে হাত ৩বৃলান ৷ সাথে সাথে কিয়ড়ামত
পর্যন্ত আগমনকারী তার সবক টি সন্তান তার পিঠ থেকে ঝরে পড়ে ৷ আর আল্লাহ্ তা আলা
তাদের প্রত্যেকের দু’ চোখের মাঝে একটি করে নুরের দীপ্তি স্থাপন করে দিয়ে তাদেরকে আদম
(আ)-এর সামনে ৫পশ করেন ৷ তখন আদম (আ) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার রব! এরা
কারা? আল্লাহ্ বললেন, এরা তোমার সন্তান-সন্ততি ৷ তখন তাদের একজনের দুচােখের মাঝে
দীপ্তিতে বিমুগ্ধ হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার রব! ইনি কে? আল্লাহ বললেন, যে
তোমার ভবিষ্যত বংশধরের দাউদ নামক এক ব্যক্তি ৷ তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এর আযু
কত নির্ধারণ করেছন? আল্লাহ বললেন : ষাট বছর ৷ আদম (আ) বললেন, হে আমার রব ৷
আমার আয়ু থেকে নিয়ে এর আযু আরো চল্লিশ বছর বৃদ্ধি করে দিন ৷ তারপর যখন আদম
(আ)-এর আয়ু শেষ হয়ে যায়; তখন জান কবয করার জন্য আযরাঈল (আ) তার কাছে
আগমন করেন ৷ তখন তিনি বললেন, আমার আযু না আরো চল্লিশ বছর বাকি আছে?
আযরাঈল (আ) বললেন, কেন আপনি না তা আপনার সন্তান দাউদ (আ)-কে দিয়ে
দিয়েছিলেন? কিন্ত আদম (আ) তা অস্বীকার করে বলেন ৷ এ কারণে তার সন্তানদের মধ্যে
অস্বীকৃতির প্রবণতা রয়েছে ৷ তিনি পুর্বের কথা তুলে যান ৷ ফলে তার সন্তানদের মধ্যেও
বিস্মৃতির প্রবণতা রয়েছে ৷ আদম (আ) ত্রুটি করেন, তাই তার সন্তানরাও ত্রুটি করে থাকে ৷
ইমাম তিরমিষী (র) হাদীসটি হাসান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন ৷ আবু হুরায়রা (রা)
থেকে আরো একাধিক সুত্রে হ্াদীসটি বর্ণিত হয়েছে ৷ হাকিম (র) তীর মুস্তাদরাকে আবু নুআয়ম
(ফযল ইবনে দুকায়ন)-এর সুত্রে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী
হাদীসটি সহীহ ৷ তবে ইমাম বুখারী ও মুসলিমের কেউই হাদীসটি বর্ণনা করেননি ৷ আর ইবনে
আবু হড়াতিম (র) হড়াদীসটির যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে এও আছে যে আল্লাহ্ তাআলা আদম
(আ)-এর বংশধরকে তার সামনে পেশ করে বললেন, ৫হ আদম ! এরা তোমার সন্তান-সন্ততি ৷
তখন আদম (আ) তাদের মধ্যে কুষ্ঠ ও ৫শ্বভী ৫রাপী, অন্ধ এবং আরো নানা প্রকার ব্যাধিগ্নস্ত
লোক দেখতে পেয়ে বললেন, হে আমার বব ! আমার সন্তানদের আপনি এ দশা করলেন কেন ?
আল্লাহ বললেন, করেছি এ জন্য যাতে আমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয় ৷ এর পরে
বর্ণনঢিতে দাউদ (আ)-এর প্রসঙ্গও রয়েছে-যা ইবন আব্বাস (বা) সুত্রে পরে আসছে ৷
ইমাম আহমদ (র) তার মুসনাদে বর্ণনা করেন যে, আবুদ্ দড়ারদা (রা) বলেন, রাসুলুল্পাহ
(সা) বলেছেন : যথা সময়ে অল্লোহ্ তাআলা আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে তার ডান কাধে
আঘাত করে মুক্তার ন্যায় ধবধবে সাদা তার একদল সন্তানকে বের করেন ৷ আবার তার বাম
কাধে আঘাত করে কয়লার ন্যায় মিশমিশে কালো একদল সন্তানকে বের করে আনেন ৷ তারপর
ডান পাশের গুলোকে বললেন, তোমরা জান্নড়াতপামী, আমি কারো পরোয়া করি না ৷ আর বাম
র্কাধের গুলোকে বললেন, তোমরা জাহান্নামগড়ামী , আমি কারো পরোয়া করি না ৷
ইবনে আবুদ্ দুনিয়া (র) বর্ণনা করেন যে, হাসান (ব) বলেন, “আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে
আল্লাহ তাআলা তার ডান পার্শ্বদেশ থেকে জান্নাতীদের আর বাম পার্শ্বদেশ থেকে জাহান্নড়ামীদের
বের করে এনে তাদেরকে যমীনে নিক্ষেপ করেন ৷ এদের মধ্যে কিছু লোককে অন্ধ, বধির ও
অন্যান্য রোগে আক্রান্ত দেখে আদম (আ) বললেন, হে আমার রব! আমার সন্তানদের সকলকে
এক সমান করে সৃষ্টি যে করলেন না তার হেতৃ কি ? আল্লাহ বললেন, “আমি চাই যে , আমার
শুকরিয়া আদায় হোক ৷ আব্দুর রাঘৃযাক অনুরুপ রিওয়ায়ত বর্ণনা করেছেন ৷
ইবন হিব্বানের এ সংক্রান্ত বর্ণনার শেষ দিকে আছে আল্পাহ্র মর্জি মোতাবেক আদম
(আ) কিছুকাল জান্নাতে বসবাস করেন ৷ তারপর সেখান থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করেন ৷
অবশেষে এক সময় আযরড়াঈল (আ) তার নিবটি আগমন করলে তিনি বললেন, আমার আযু
তাে এক হাজার বছর ৷ আপনি নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে পড়েছেন ৷ আযরাঈল (আ)
বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন ৷ কিন্তু আপনি না আপনার আবু থেকে চল্লিশ বছর আপনার
সন্তান দাউদকে দিয়ে দিয়েছিলেন ৷ বিক্ষ্ম আদম (আ) তা অস্বীকার করে বলেন ৷ ফলে তার
সন্তানদের মধ্যেও অস্বীকার করার প্রবণতা সৃষ্টি হয় ৷ তিনি পুর্বের কথা ভুলে যান ৷ ফলে তার
সন্তানদের মধ্যে বিস্মৃতির প্রবণতা দেখা দেয় ৷ সেদিন থেকেই পারস্পরিক লেন-দেন লিপিবদ্ধ
করে রাখার এবং সাক্ষী রাখার আদেশ জারি হয় ৷
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
“আল্লড়াহ্ তাআলা হযরত আদম (আ)-কে ষাট হাত দীর্ঘ করে সৃষ্টি করেন ৷ তারপর বললেন,
ঐ ফেরেশতা দলের কাছে গিয়ে তুমি তাদের সালাম কর এবং লক্ষ্য করে শোন, তারা তোমাকে
কি উত্তর দেয় ৷ কারণ এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তান-সস্ততির অভিবড়াদন ৷ আদেশ
মত্হু গিয়ে তিনি ন্হ্র ণুপুণ্ ’হ্রাট্রুএে ৷ বলে সালাম করেন, আর তারা
বলে উত্তর দেন ৷ উল্লেখ্য যে, আদমের সন্তানদের যারইি
জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা সকলেই আদম (আ) এর আকৃতিসম্পন্ন হবে ৷ ধীরে ধীরে হ্রাস
পেতে পেতে মানুষের উচ্চতা এখন এ পর্যায়ে এসে পৌছেছে ৷
অনুরুপ ইমাম বুখারী (র) কিতাবুল ইস্তিয়ানে’ আর ইমাম মুসলিম (র) তার গ্রন্থে ভিন্ন
ভিন্ন সুত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে , আবু হুরায়রা (বা)
বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আদম (আ)-এর উচ্চতা ছিল ষাট হাত আর প্রস্থ সাত হাত ৷
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন, ইবন আব্বাস (রা) বলেন, বকেয়া লেন দেন লিপিবদ্ধ
করে রাখার আদেশ সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, সর্বপ্রথম যিনি
আল বিদড়ায়া ওয়ান নিহড়ায়া ( ১ম খণ্ড)প্তেমোঃা-
অস্বীকার করেন; তিনি হলেন আদম (আ), সর্বপ্রথম যিনি অস্বীকার করেন, তিনি হলেন আদম
(আ), সর্বপ্রথম যিনি অস্বীকার করেন, তিনি হলেন আদম (আ) ৷ ঘটনা হলো-আল্লাহ্
তাআলা আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে তার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী
সকল মানুষকে বের করে এনে তাদের তার সামনে পেশ করেন ৷ তাদের মধ্যে তিনি উজ্জ্বল
এক ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে বললেন, হে আমার বব! ইনি কে? আল্লাহ বলেন, যে তোমার
সন্তান দাউদ ৷ আদম (আ) জিজ্ঞেস করলেন, এর আযু কত? আল্লাহ বললেন, ষাট বছর ৷
আদম (আ) বললেন, এর আবু আরো বাড়িয়ে দিন ৷ আল্লাহ্ বলেন না তা হবে না ৷ তবে
তোমার আযু থেকে কর্তন করে বাড়াতে পারি ৷ উল্লেখ্য যে, আদম (আ)এর আযু ছিল এক
হাজার বছর ৷ তার থেকে কর্তা করে আল্লাহ্ তাআলা দাউদ-এর আবু চল্লিশ বছর বৃদ্ধি
করেন ৷
এ ব্যাপারে চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করে নেন এবং ফেরেশতাদের সাক্ষী রাখেন ৷ অবশেষে
আদম (আ)-এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তার জান কবয করার জন্য একদিন আযরাইল
(আ) তার কাছে আগমন করেন ৷ তখন তিনি বললেন, আমার আযুর তো আরো চল্লিশ বছর
বাকি আছে ৷ উত্তরে বলা হলো, কেন আপনি না তা আপনার সন্তান দাউদকে দিয়ে দিয়েছিলেন!
আদম (আ) তা অস্বীকার করে বললেন, আমি তো এমনটি করিনি৷ তখন প্রমাণস্বরুপ আল্লাহ
তাআলা পুর্বের লিখিত চুক্তিনামা তার সামনে তুলে ধরেন এবং ফেরেশতাগণ এ ব্যাপারে সাক্ষ্য
প্রদান করেন ৷”
ইমাম আহমদের অনুরুপ আরেকটি বর্ণনার শেবাংশে আছে : “অবশেষে আল্লাহ দাউদের
বয়স একশ বছর আর আদম (আ)-এর এক হাজার বছর পুর্ণ করে দেন ৷ ” তাবারানী (র)ও
অনুরুপ একটি রিওয়ায়ত বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম মালিক ইবনে আনাস (র) বর্ণনা করেন যে, মুসলিম ইবনে য়াসার (র) বলেন, উমর
ইবনে খাত্তাব (রা)-কে ব্লু৷ ৷ প্রপুর্চু পুর্ষী ^১)দ্বু এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিনি
বললেন, এ আয়াত সস্পবিতি এক প্রশ্নের জবাবে আমি রাসুলুল্লাহ (না)-কে বলতে শুনেছি যে,
তিনি বলেন : আল্লাহ তাআলা আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে তার পিঠে নিজের ডান হাত বুলিয়ে
তার সন্তানদের একদল বের করে এনে বললেন, এদেরকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করলাম ৷
এরা জান্নাভীদের আমলই করবে ৷ তারপর পুনরায় হাত বুলিয়ে আরেক দল সন্তানকে বের করে
এনে বললেন, এদের আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি ৷ এরা জাহান্নড়ামীদেরই আমল করবে ৷
এ কথা শুনে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে আমল করার প্রয়োজন
কি? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহ যাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার থেকে
তিনি জান্নাতীদেরই আমল করান ৷ আমৃত্যু জান্নড়াতীদের আমল করতে করতেই শের পর্যন্ত যে
জান্নড়াতে চলে যাবে ৷ পক্ষাম্ভার যাকে তিনি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন; তার দ্বারা তিনি
জাহড়ান্নামীদের আমলই করান ৷ আমৃত্যু জাহান্নামীদের আমল করতে করতেই শেষ পর্যন্ত যে
জ্বাহান্নামে পৌছেযাবে ৷
ইমাম আহমদ আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে জারীর ও ইবনে আবু হাতিম ও আবু
হাতিম ইবন হিব্বান (ব) বিভিন্ন সুত্রে ইমাম মড়ালেক (ব) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম তিরমিযী (র) হাদীসটি হাসান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন ৷ তবে উমর (রা) নিকট
থেকে মুসলিম ইবন ইয়াসার (র) সরাসরি হাদীসটি শুনেননি ৷ আবু হাতিম ও আবু যুরআ (র)
এ অভিমত পেশ করেছেন ৷ আবু হাতিম (র) আরো বলেছেন যে, এ দুজনের মাঝে আরেক
রাবী নুয়ায়ম ইবনে রবীয়া রয়েছেন ৷ ইমাম আবু দাউদ হড়াদীসটির সুত্রে ইবনে যায়েদ ইবনে
খাত্তাব, মধ্যবর্তী রাবী নুয়ায়ম ইবন রবীয়ার নামও উল্লেখ করেছেন ৷ দারা কুতনী বলেন,
“উপরোক্ত সব কটি হাদীস এ কথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ তাআলা আদম (আ)-এর
সন্তানদের তারই পিঠ থেকে ছোট ছোট পিপড়ার মত বের করে এসেছেন এবং তাদেরকে ডান
ও বাম এ দৃ’দলে বিভক্ত করে ডান দলকে বলেছেন, তোমরা জান্নাতী, আমি কাউকে পরোয়া
করি না ৷ আর বাম দলকে বলেছেন, তোমরা জাহান্নড়ামী, আমার কারো পরোয়া নেই ৷”
পক্ষাস্তরে তাদের নিকট থেকে সাক্ষ্য এবং আল্লাহর একতু সম্পর্কে তাদের থেকে স্বীকারোক্তি
নেয়ার কথা প্রামাণ্য কোন হাদীস পাওয়া যায় না ৷ সুরা আরাফের একটি আয়াতকে এ অর্থে
প্রয়োগ করার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে ৷ যথান্থানে এ বিষয়ে আমি সবিস্তার আলোচনা করেছি ৷
তবে এ মর্মে ইমাম আহমদ (র) কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীস আছে ৷ ইমাম মুসলিমের
শর্তানুযায়ী যার সনদ উত্তম ও শক্তিশালী ৷ হাদীসটি হলো :
ইবন আব্বাস (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : আল্লাহ তাআলা জিলহভ্রুজ্জর নয়
তারিখে নু’মান নামক স্থানে আদম (আ)-এব পিঠ থেকে অঙ্গীকার নেন ৷ তারপর তার যেরুদণ্ড
থেকে (কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী) তার সকল সন্তানকে বের করে এসে তার সম্মুখে ছড়িয়ে
দেন ৷ তারপর তাদের সাথে সামনা-সামনি কথা বলেন ৷ তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমি কি
তোমাদের বব নই? তারা বলল, নিশ্চয়ই, আমরা সাক্ষী থাকলাম ৷ এ স্বীকৃতি গ্রহণ এ জন্য যে,
তোমরা যেন কিয়ামতের দিন বলতে না পারো আমরা তো এ ব্যাপারে অনবহিত ছিলাম ৷ কিংবা
তোমরা যেন বলতে না পায় যে, আমাদের পুর্ব-পুরুষগংইি তো আমাদের পুর্বে শিবক করে ৷
আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর, তবে কি পথভ্রষ্টদের কৃত-কর্মের জন্য তুমি আমাদের
ধ্বংস করবে ? (৭ : ১৭২ ১৭৩) ’
ইমাম নাসাঈ, ইবন জারীর ও হাকিম (র) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ হাকিম (র)
হাদীসটির সনদ সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন ৷ প্রামাণ্য কথা হলো , বর্ণিত হাদীসটি আসলে ইবন
আব্বাস (রা)-এর উক্তি ৷ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকেও মওকুফ, মরকু উভয় সুত্রেই
হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ৷ তবে মওফুক সুত্রটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ ৷ তবে অধিকাৎশ আলিমেব
মতে, সেদিন আদম (আ)-এর সন্তানদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে ৷ তাদের দলীল
হলো, ইমাম আহমদ (র) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসটি ৷ যাতে আছে
আনড়াস (রা) বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : “কিয়ামতের দিন কোন এক জাহান্নামীকে
বলা হবে আচ্ছা, যদি তুমি পৃথিবীর সমুদয় বন্তু-স্যারের মালিক হতে; তাহলে এখন
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার সমস্ত কিছু ঘুক্তিপণ রুপে দিতে প্রস্তুত থাকতে ? উত্তরে
সে বলবে, জী হী৷ ৷ তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তো তোমার নিকট থেকে এর চাইতে আরো
সহজটাই চেয়েছিলাম ৷ আদম (আ)-এর পিঠে থাকা অবস্থায় আমি তোমার নিকট থেকে
অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, আমার সাথে তুমি কাউকে শরীক করবে না ৷ কিত্তু তা প্রত্যাখ্যান
করে তুমি শরীক না করে ছাড়ােনি ৷ শুবার বরাতে বুখারী (র) এবং মুসলিম (র) হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন ৷
আবু জ ফব রাযী (র) বর্ণনা করেন যে উবাই ইবন কাব (বা)
আয়াত এবং এর পরবর্তী আয়াতে তর ব্যাখ্যার বলেন কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মানুষ
সৃষ্টি করে আল্লাহ্ ত৷ আলা তাদের এক স্থানে সমবেত করেন ৷ তারপর তাদের সাথে কথা
বলেন ও তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন এবং তাদের নিজেদেরকেই তাদের
সাক্ষীরুপে রেখে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “আমি কি তোমাদের রব নই? র্তারা বলল, জী হী৷ ৷
আল্লাহ্ বললেন, এ ব্যাপারে আমি সাত আসমান, সাত যমীন এবং তোমাদের পিতা আদমকে
সাক্ষী রাখলাম, যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা এ কথা বলতে না পার যে, এ ব্যাপারে তো
আমরা কিছুই জানতাম না ৷ তোমরা জেনে রাখ যে, আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই , আমি ব্যতীত
কোন বব নেই ৷ আর আমার সাথে তোমরা কাউকে শরীক করে৷ না ৷ তোমাদের নিকট
পর্যায়ক্রমে আমি রাসুল পাঠাব, তারা তোমাদেৱকে আমার এ অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে
সতর্ক করবেন ৷ আর তোমাদের কাছে আমি আমার কিতাব নাযিল করব ৷” তারা বলল, আমরা
সাক্ষ্য দিলাম যে, আপনি আমাদের বর ও ইলাহ ৷ আপনি ব্যতীত আমাদের কোন বর বা ইলাহ
নেই ৷ মােটকথা, সেদিন তারা আল্লাহর আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিল ৷
এরপর উপর থেকে দৃষ্টিপাত করে আদম (আ) তাদের মধ্যে ধনী-পরীব ও সুশ্রী-ক্শ্ৰী
সকল ধরনের লোক দেখতে পেয়ে বললেন, হে আমার বব! আপনার বান্দাদের সকলকে যদি
সমান করে সৃষ্টি করতে ন আল্পাহ্ বললেন, আমি চাই আমার শুকরিয়৷ আদায় করা হোক ৷
এরপর আদম (আ) নবীগণকে তাদের মধ্যে প্রদীপের ন্যায় দীপ্তিমান দেখতে পান ৷ আল্লাহ
তা আল৷ তাদের নিকট থেকে বিসালাত ও নবুওতের বিশেষ অঙ্গীকার গ্রহণ করেন ৷ এ প্রসঙ্গেই
আল্লাহ তাআলা বলেন
অর্থাৎ স্মরণ কর, যখন আমি নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকা ৷র গ্রহণ করেছিলাম এবং
তোমার নিকট থেকেও এবং নুহ, ইব্রাহীম, মুসা ও মারয়াম তনয় ঈসার নিকট থেকে-এদের
নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার ৷ (৩৩০ ৭)
অর্থাৎ-তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে দীনে প্রতিষ্ঠিত কর ৷ আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর,
যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন ৷ আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই ৷
(৩০ং : ৩০ )
অর্থাৎ-অতীতের সতককারীদের ন্যায় এ নবীও একজন
সতবকিারী ৷ (৫৩ : ৫৭)
’
অর্থাৎ আমি তাদের অধিকাৎশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি বরং তাদের
অধিকাংশকে তো সত্যত্যাগী পেয়েছি ৷ (৭ : ১০২)
ইমাম আব্দুল্লাহ্ ইবন আহমদ, ইবন আবু হাতিম, ইবন জারীর ও ইবন মারদুওয়েহ্ (র)
র্তাদের নিজ নিজ তাফসীর গ্রন্থে আবু জাফর (র) সুত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ মুজাহিদ,
ইকরিমা, সাঈদ ইবন জুবায়র, হাসান বসরী, কাতাদা ও সুদ্দী (র) প্রমুখ পুর্বসুরি আলিম
থেকেও এসব হাদীসের সমর্থনে বর্ণনা পাওয়া যায় ৷ আর পুর্বে আমরা এ কথাটি উল্লেখ করে
এসেছি যে, ফেরেশতাগণ আদম (আ)-কে সিজদা করার জন্যে আদিষ্ট হলে ইবলীস ব্যতীত
সকলেই সে থােদায়ী ফরমান পালন করেন ৷ ইবলীস হিংসা ও শত্রুতাবশত সিজদা করা থেকে
বিরত থাকে ৷ ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে আপন সান্নিধ্য থেকে বিতাড়িত করে অভিশপ্ত
শয়তান বানিয়ে পৃথিবীতে নিৰ্বাসন দেন ৷
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে , আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন :
“আদমের সন্তানরা সিজদার আয়াত পাঠ করে যখন সিজদা করে; ইবলীস তখন একদিকে সরে
গিয়ে র্কাদতে শুরু করে এবং বলে, হায় কপাল ! আল্লাহর আদেশ পালনড়ার্থে সিজদা করে আদম
সন্তান জান্নাতী হলো আর সিজদার আদেশ অমান্য করে আমি হলাম জাহান্নড়ামী ৷” ইমাম
মুসলিমও হড়াদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷
যাহোক, আদম (আ) ও তার সহধর্মিনী হাওয়া (আ) জান্নাতে তা অড়াসমানেরই হোক,
বা যমীনেরই কোন উদ্যান হোক যে মতভেদের কথা পুর্বেই বিবৃত হয়েছে কিছুকাল
বসবাস করেন এবং অবাধে ও স্বচ্ছন্দে সেখানে আহারাদি করতে থাকেন ৷ অবশেষে নিষিদ্ধ
বৃক্ষের ফল আহার করার তাদের পরিধানের পোশাক ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং তাদেরকে
পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয় ৷ অবতরণের ক্ষেত্র সম্পর্কে মতভেদের কথা পুর্বেই উল্লেখ করা
হয়েছে ৷
জান্নাতে আদম (আ)-এর অবস্থানকাল সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে ৷ কারো মতে দুনিয়ার
হিসাবের একদিনের কিছু অংশ ৷ আবু হুরায়রা (রা) থেকে মরকু সুত্রে ইমাম মুসলিম (র) কর্তৃক
বর্ণিত একটি হাদীস উপরে উল্লেখ করে এসেছি যে, আদম (আ)-কে জুমআর দিনের শেষ
প্রহরে সৃষ্টি করা হয়েছে ৷ আরেক বংনািয় এও আছে যে, জুমআর দিন আদম (আ) কে সৃষ্টি
করা হয় আর এদিনেই তাকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করা হয় ৷ সুতরাং যদি এমন হয়ে থাকে
যে, যেদিন আদম (আ)-এর সৃষ্টি হয় ঠিক সেদিনই জান্নাত থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন, তাহলে
একথা বলা যায় যে, তিনি একদিনের মাত্র কিছু অংশ জান্নাতে অবস্থান করেছিলেন ৷ তবে এ
বক্তব্যটি বিতর্কের উর্ধে নয় ৷ পক্ষান্তরে যদি তার বহিষ্কার সৃষ্টির দিন থেকে ভিন্ন কোন দিনে
হয়ে থাকে কিৎবা ঐ ছয় দিনের সময়ের পরিমাণ ছয় হাজার বছর হয়ে থাকলে সেখানে তিনি
সুদীর্ঘ সময়ই অবস্থান করে থাকবেন ৷ যেমন ইবন আব্বাস (রা), মুজাহিদ ও যাহ্হাক (র)
থেকে বর্ণিত এবং ইবন জারীর (র) কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে বলে পুর্বেই উল্লেখিত হয়েছে ৷
ইবনে জারীর (র) বলেন, এটা জানা কথা যে, আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে জুমআ
দিবসের শেষ প্রহরে ৷ আর তথাকার এক প্রহর দুনিয়ার তিরাশি বছর চার মাসের সমান ৷ এতে
প্রমাণিত হয় যে, রুহ সঞ্চারের পুর্বে মাটির মুর্তিরুপে আদম (আ) চল্লিশ বছর এমনিতেই পড়ে
রয়েছিলেন ৷ আর পৃথিবীতে অবতরণের পুর্বে জান্নাতে অবস্থান করেছেন তেতাল্লিশ বছর চার
মাস কাল ৷ আল্লাহই সর্বজ্ঞ ৷
আবদুর রায্যাক (র) বর্ণনা করেন যে, ’আতা ইবনে আবু রাবাহ (র) বলেন, আদম
(আ)-এর পদদ্বয় যখন পৃথিবী স্পর্শ করে তখনো তার মাথা ছিল আকাশে ৷ তারপর আল্লাহ তার
দৈর্ঘ্য ষটি হাতে কমিয়ে আনেন ৷ ইবন আ ব্বাস (রা) সুত্রেও এরুপ একটি বর্ণনা আছে ৷ তবে এ
তথ্যটি আপত্তিকর ৷ কারণ ইতিপুর্বে আবু হুরায়রা (রা) কতুকি সর্বজন স্বীকৃত বিশুদ্ধ হাদীস
উদ্ধৃত করে এসেছি যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আদম (অড়া)-কে ষাট হাত
দীর্ঘ করে সৃষ্টি করেন ৷ এরপর তার সন্তানদের উচ্চতা কমতে কমতে এখন এ পর্যন্ত এসে
পৌছেছে ৷ এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আদম (আ)-কে সৃষ্টিই করা হয়েছে ষাট হাত দৈর্ঘ্য
দিয়ে তার বেশি নয় ৷ আর তার সন্তানদের উচ্চতড়াহ্রড়াস পেতে পেতে এখন এ পর্যায়ে এসে
উপনীত হয়েছে ৷
ইবনে জারীর (র) ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে , আল্লাহ তাআলা বলেন, হে
আদম ! আমার আরশ বরাবর পৃথিবীতে আমার একটি সম্মানিত স্থান আছে ৷ তুমি গিয়ে তথায়
আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে তা তড়াওয়াফ কর, যেমনটি ফেরেশতারা আমার আরশ
তড়াওয়াফ করে ৷ অতঃপর আল্পাহ্ তাআলড়া তার কাছে একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন ৷ তিনি
আদম (আ)-কে জায়গাটি দেখিয়ে দেন এবং তাকে হরুজ্জর করণীয় কাজসমুহ শিখিয়ে দেন ৷
ইবনে জারীর (র) আরো উল্লেখ করেন যে, দুনিয়ার যেখানে সেখানে আদম (আ)-এর
পদচারণা হয়, পরবর্তীতে সেখানেই এক একটি জনবসতি গড়ে ওঠে ৷
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, পৃথিবীত আদম (আ)-এর প্রথম খাদ্য
ছিল গম ৷ জিবরাঈল (আ) তার কাছে সাতটি গমের বীজ নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন, এগুলো কি? জিবরাঈল (আ) বললেন, এই তো আপনার সেই নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল,
যা আপনি থেয়েছিলেন ৷ আদম (আ) জিজ্ঞাসা করলেন, এগুলো আমি কি করব? জিবরাঈল
(আ) বললেন, যমীনে বপন করবেন ৷ উল্লেখ্য যে, তার প্রতিটি বীজের ওজন ছিল দুনিয়ার এক
লক্ষ দানা অপেক্ষা বেশি ৷ বীজগুলো বোপণ করার পর ফসল উৎপন্ন হলে আদম (আ) তা
কেটে মাড়িয়ে পিষে আটা বানিয়ে খড়ামির করে রুটি বানিয়ে বহু ক্লেশ ও শ্রমের পর তা আহার
করেন ৷ এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ তাআলা বলেন : প্লুপু প্রোপ্রুহু র্দু র্বু!ৰু সুতরাং সে যেন
তোমাদের কিছুতেই জান্নাত থেকে বের করে না দেয় ৷ দিলে তোমরা দুঃখ পাবে ৷ ’ ( ২০ ১ ১ ৭ )
আদম ও হাওয়া (আ) সর্বপ্রথম যে পেশোক পরিধান করেন, তা ছিল ভেড়ার পশমের
তৈরি ৷ প্রথমে চামড়া থেকে পশমগুলাে খসিয়ে তা দিয়ে সুতা তৈরি করেন ৷ তারপর আদম
(আ) নিজের জন্য একটি জুব্বা আর হাওয়ার জন্য একটি কামীজ ও একটি ওড়না তৈরি করে
নেন ৷
জান্নাতে থাকাবন্থায় তাদের কোন সন্তানাদি জন্যেছিল কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে ৷
কারো কারো মতে, পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও র্তাদের কোন সন্তান জন্মেনি ৷ কেউ বলেন,
জন্মেছে ৷ কাবীল ও তার বোনের জন্ম জান্নড়াতেই হয়েছিল ৷ আল্লাহ সর্বজ্ঞ ৷
উল্লেখ্য যে, প্রতি দফায় আদম (আ)-এর এক সঙ্গে একটি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা
, সন্তান জন্ম নিত ৷ আর এক গর্ভের পুত্রের সঙ্গে পরবর্তী গর্ডের কন্যার ও কন্যার সঙ্গে
পুত্রের বিবাহ দেওয়ার বিধান দেওয়া হয় ৷ পরবর্তীতে একই গর্তো৷ দৃভাই-ণ্বানের বিবাহ
নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ৷
কাৰীল ও হাবীলের কাহিনী
আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
অর্থাৎ আদমের দৃ’ পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনাও , যখন তারা উভয়ে
কুরবানী করেছিল তখন একজনের কুরবানী কবুল হলো, অন্য জনের কবুল হলো না ৷ তাদের
একজন বলল, আমি তোমাকে হত্যা করব-ই ৷ অপরজন বলল, আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী
কবুল করেন ৷
আমাকে হত্যা করার জন্য আমার প্রতি তুমি হাত বাড়ালেও তোমাকে হত্যা করার জন্য
আমি হাত বাড়ার না ৷ আমি তো জগতসমুহের রব আল্লাহকে ভয় করি ৷ আমি চাই যে, তুমি
আমার ও তোমার পাপের ভার বহন করে জাহান্নামী হও এবং এটা জালিমদের কর্মফল ৷
তারপর তার প্ৰর্বৃত্তি তাকে তার ভাইকে হত্যায় প্ৰরোচিত করল এবং সে তাকে হত্যা করল,
ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো ৷
তারপর আল্লাহ্ তাআলা একটি কাক পাঠালেন যে তার ভাই-এর লাশ কিভাবে গোপন
করা যায় তা দেখাবার জন্য মাটি খুড়তে লাগল ৷ সে বলল, হায় ! আমি কি এ কাকের মতও
হতে পারলাম না যাতে আমার ভাই-এর লাশ গোপন করতে পারি? তারপর সে অনুতপ্ত
হলো
তাফসীর গ্রন্থে আমরা সুরা মায়িদার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এ কাহিনী সম্পর্কে যথেষ্ট আলোচনা
করেছি ৷ এখানে শুধু পুর্বসুরি ইমামগণ এ বিষয়ে যা বলেছেন তার সারাংশ উল্লেখ করব ৷