ইসলামী ফতোয়া
ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ারের জীবনের পরিবর্তন
উত্তর
এক সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের বিশ্ববিখ্যাত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন সাঈদ আনোয়ার। বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত দাঈ। . পথভোলা মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার দাওয়াত দিয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা বিশ্বে। নিজের ক্যারিয়ারকে সাফল্যের মধ্য গগনে রেখে অবসর নিয়েছিলেন। কিন্তু কেন? শুনুন তাঁর নিজ জবানীতে - . “... ১০ সেপ্টেম্বর, ২০০১। বাসা থেকে আমার একমাত্র আদরের দুলালীকে আদর করে বের হই। ম্যাচ ছিলো মূলতানে। খেলার শেষে আমার স্ত্রীর ফোন। তার গলা কাঁপছিলো। . বললো, "হঠাৎ মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তুমি জলদি এসো।" সাথে সাথে বাসায় চলে আসি। মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হই। গাড়ী আমি নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। হঠাৎ আমার মেয়ে আমাকে "আব্বু" বলে ডাক দেয়। . আমি ডাকে সাড়া দিয়ে বলি, "কী বাবা, বলো"...! এর পরপরই আমার কলিজার টুকরার জীবন প্রদীপ চিরদিনের জন্য নিভে যায়। তার মুখে আব্বু ডাক বন্ধ হয়ে যায়। . আমার স্ত্রী হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে। সে বুঝতে পেরেছিলো যে আমাদের “স্বপ্নের সোনালী জগত” বিরান হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কারণ, সে তো এইমাত্র কথা বললো, আমাকে ‘আব্বু’ বলে ডাকলো। তাছাড়া তার তো এমন কোন মারাত্মক অসুখও হয় নি। . স্ত্রীকে সান্ত্বনা নিয়ে বললাম, তুমি চিন্তা করো না। সামনের হাসপাতালেই আমরা নামবো। পথেই এক হাসপাতালে নামলাম। দারোয়ান, নার্স, ডাক্তার সবাই আমাকে চিনতো। সবাই যার যার কাজ ফেলে আমার কাছে ছুটে আসে। আমার মেয়েকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। . কিন্তু আমার কলিজার টুকরা এর আগেই এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে। ডাক্তার ও নার্সদের কোন চেষ্টাই আমার মানিকের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারল না। এই ঘটনা আমাকে খুব নাড়া দিলো। . আমি ভাবতে লাগলাম, আমার কাড়ি-কাড়ি টাকা-পয়সা, যশ-খ্যাতি, ভক্ত-অনুরক্ত সবই ছিলো। কিন্তু আমার কিছুই কাজে আসলো না। ভাবনা-জগতের দুয়ার একে একে খুলতে লাগলো। ভাবলাম, এই দুনিয়ার কিছুই তো স্থায়ী নয়। এই ফুলের মতো ছোট্ট শিশু, যার সামনে ছিলো সম্ভাবনার অপার ভবিষ্যত। আমার সেই ফুলটিই আজ ঝরে গেলো। চিরদিনের মতো হারিয়ে গেলো। . আমিও তো একসময় দুনিয়া থেকে চলে যাব। আমি ভীত হয়ে পড়লাম। খুব কান্নাকাটি করলাম। অতীত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলাম। আল্লাহর কাছে হেদায়েত চাইলাম। . এর তিন-চারদিন পর এক চিল্লার জন্য তাবলীগ জামাআতে সময় লাগাই। আল্লাহর কসম! এটাই ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। সুখের দিন। . দুনিয়াতে আমার টাকা-পয়সা, যশ-খ্যাতি, বাড়ী-গাড়ী সবকিছু অঢেল ছিলো। কিন্তু এগুলো কখনোই আমাকে সুখ দিতে পারে নি। শান্তি দিতে পারে নি। কিন্তু যেই মুহূর্ত থেকে আমি আল্লাহর পথে সময় দিই, সেই মুহূর্ত থেকে আমি সুখে আছি। . এখন আমার ঘরে শান্তি, বাইরেও শান্তি। দেহে শান্তি, আত্মাতেও শান্তি। আমার স্ত্রী এখন বোরকা পরে। পর্দা করে। ভাই-বোনেরা যারা আমাকে বয়কট করেছিলো, তারাও দ্বীনের মেহনতে সময় লাগায়। ঘরের সর্বত্র এখন দ্বীনী পরিবেশ। আলহামদুলিল্লাহ।” . [....সাঈদ আনোয়ার এবং শচীন টেন্ডুলকারের মধ্যে তখন সেঞ্চুরির সংখ্যা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছিল৷ আজ সাঈদ আনোয়ার ১৬ তম সেঞ্চুরি করে তো কাল শচীন তা ভেঙ্গে ১৭ তম সেঞ্চুরি করে; আবার কয়দিন পরেই সাঈদ আনোয়ার ১৭তম এর রেকর্ড ভেঙ্গে ১৮তম সেঞ্চুরি করে ৷ . এই যখন ইঁদুর- বিড়াল প্রতিযোগিতা চলছিল, তখন আল্লাহ তা'আলা সাঈদ আনোয়ারের একমাত্র কন্যা "বিসমা সাঈদ" কে তাঁর কাছে নিয়ে গেলেন, আর দুনিয়ার বদলে চিনিয়ে দিলেন আখিরাত! মেয়ের পরিবর্তে আল্লাহ তা'আলা কতই না উত্তম জিনিস চিনিয়ে দিলেন তাকে...!] . --- সাইদ আনোয়ারের জীবন থেকে। - মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমী (পৃথিবীর পথে পথে: পৃ:৮৯-৯৫)