ইউনুস
يونس
بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় মেহেরবান।
1
الٓر ۚ تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱلْكِتَـٰبِ ٱلْحَكِيمِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আলিফ লাম রা, এটা হচ্ছে অতি সূক্ষ্ম তত্ত্বপূর্ণ কিতাবের আয়াত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১. আলিফ-লাম-রা। সূরা বাক্বারার শুরুতে এ জাতীয় বিচ্ছিন্ন বর্ণমালার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ সূরার পঠিতব্য আয়াতগুলো সুগঠিত হিকমতপূর্ণ কুর‘আনের আয়াত যা হিকমত ও বিধানাবলী সম্বলিত।
2
أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَآ إِلَىٰ رَجُلٍ مِّنْهُمْ أَنْ أَنذِرِ ٱلنَّاسَ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِندَ رَبِّهِمْ ۗ قَالَ ٱلْكَـٰفِرُونَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَـٰحِرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
লোকদের জন্য এটা কি বিস্ময়কর মনে হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি সকলকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের রবের নিকট পূর্ণ মর্যাদা লাভ করবে। কাফিরেরা বলতে লাগল যে, এ ব্যক্তিতো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২. মানুষের নিকট কি এটি এতো আশ্চর্যের বিষয় হয়ে গেলো যে, আমি তাদের মতো একজন মানুষের উপর ওহী নাযিল করেছি?! আমি তাঁকে আদেশ করেছি তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখানোর জন্য। হে রাসূল! আপনি মু’মিনদেরকে এ ব্যাপারে খুশির সংবাদ দিন যে, তারা যে নেক আমল পাঠাবে তার প্রতিদান স্বরূপ তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য রয়েছে উঁচু স্থান। কাফিররা বললো: নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট এ আয়াতগুলো আনয়নকারী প্রকাশ্য যাদুকর।
3
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ ۖ يُدَبِّرُ ٱلْأَمْرَ ۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ إِذْنِهِۦ ۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রাব্ব, যিনি আসমানসমূহকে এবং যমীনকে সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন, তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেহ নেই; এমন আল্লাহ হচ্ছেন তোমাদের রাব্ব। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদাত কর; তবুও কি তোমরা বুঝছনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩. হে আশ্চর্যান্বিতরা! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ যিনি বড় বড় আকাশগুলোকে এবং এ প্রশস্ত জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আরশের উপর সুউচ্চ ও সমুন্নত হন। তোমরা কীভাবে আশ্চর্য হও তোমাদের মধ্যকার একজনকে রাসূল বানানোর দরুন?! তিনি তাঁর প্রশস্ত মালিকানায় একাই ফায়সালা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কারো কোন অধিকার নেই কোন বিষয়ে তাঁর নিকট সুপারিশ করার সুপারিশকারীর প্রতি তাঁর সন্তুষ্টি ও সুপারিশের অনুমতি ছাড়া। এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারীই হলেন তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তাই তোমরা খাঁটিভাবে শুধু তাঁরই ইবাদত করো। তাঁর একত্ববাদের উপর এতো দলীল-প্রমাণ থাকা সত্তে¡ও তোমরা সেগুলো থেকে উপদেশ গ্রহণ করছো না? যার সামান্যটুকু উপদেশ গ্রহণের যোগ্যতা রয়েছে সে অবশ্যই তা বুঝবে ও তাঁর উপর ঈমান আনবে।
4
إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا ۖ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقًّا ۚ إِنَّهُۥ يَبْدَؤُا۟ ٱلْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ لِيَجْزِىَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ بِٱلْقِسْطِ ۚ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيمٍ وَعَذَابٌ أَلِيمٌۢ بِمَا كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ও‘য়াদা সত্য; নিশ্চয়ই তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বার সৃষ্টি করবেন, যাতে এরূপ লোকদের যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন; আর যারা অবিশ্বাসী তারা পান করার জন্য পাবে উত্তপ্ত পানি এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদের কুফরীর কারণে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪. কিয়ামতের দিন শুধু তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। যাতে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমলগুলোর প্রতিদান দিতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সাথে এ ব্যাপারে সত্য ওয়াদা করেছেন। যার কখনো ব্যত্যয় হবে না। নিশ্চয়ই তিনি তা করতে সক্ষম। তিনি পূর্বের বিনা নমুনায় তাঁর সৃষ্টির সূচনা করেন। মৃত্যুর পর তিনি আবার তাকে সৃষ্টি করবেন। যাতে তিনি আল্লাহতে বিশ্বাসী ও নেক আমলকারীদেরকে ইনসাফপূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেন। তাদের কোন সাওয়াব না হ্রাস হবে। না গুনাহ বাড়িয়ে দেয়া হবে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের সাথে কুফরিকারীদের জন্য পানীয় হিসেবে রয়েছে অত্যন্ত গরম পানি। যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে ফেলবে। উপরন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের সাথে কুফরির কারণে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
5
هُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ ٱلشَّمْسَ ضِيَآءً وَٱلْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُۥ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا۟ عَدَدَ ٱلسِّنِينَ وَٱلْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ ٱللَّهُ ذَٰلِكَ إِلَّا بِٱلْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ এমন, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং ওর (গতির) জন্য মানযিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি এই প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ঐসব লোকের জন্য যারা জ্ঞানবান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫. তিনি সূর্যকে বানিয়েছেন তেজোদীপ্তির বিচ্ছুরণ ও বিকিরণকারী। আর চন্দ্রকে আলোকময় করে। উপরন্তু তার গতিকে নির্ধারণ করেছেন তার আটাশটি মঞ্জিলের সংখ্যানুপাতে। মঞ্জিল বলতে সেই দূরত্বকে বুঝানো হয় যা চন্দ্র প্রতি দিন ও রাতে অতিক্রম করে। হে মানুষ সকল! যাতে তোমরা সূর্যের মাধ্যমে দিনের সংখ্যা এবং চন্দ্রের মাধ্যমে মাস ও বছরের সংখ্যা জানতে পারো। আল্লাহ তা‘আলা আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের মাঝের সবকিছু অনর্থক সৃষ্টি করেন নি। বরং তা মানুষের সামনে তাঁর ক্ষমতা ও বড়ত্বের প্রকাশ ঘটানোর জন্য করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর একত্ববাদের পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট দলীল ও প্রমাণাদির মাধ্যমে তাঁর একত্ববাদের প্রমাণ গ্রহণ করতে জানা সম্প্রদায়ের জন্য তা বর্ণনা করেছেন।
6
إِنَّ فِى ٱخْتِلَـٰفِ ٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ لَـَٔايَـٰتٍ لِّقَوْمٍ يَتَّقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিঃসন্দেহে রাত ও দিনের পরিবর্তনের মধ্যে এবং আল্লাহ যা কিছু আসমানসমূহে ও যমীনে সৃষ্টি করেছেন তৎসমুদয়ের মধ্যে প্রমাণসমূহ রয়েছে ঐ লোকদের জন্য যারা আল্লাহর ভয় পোষণ করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬. বান্দার উপর রাত ও দিনের আবর্তন এবং রাতের অন্ধকার ও দিনের আলো রাত-দিনের ছোট-বড় হওয়া, আসমান ও জমিনের তাঁর সকল সৃষ্টি আল্লাহর ক্ষমতা বুঝায় এমন সব আলামত। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্য।
7
إِنَّ ٱلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَآءَنَا وَرَضُوا۟ بِٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَٱطْمَأَنُّوا۟ بِهَا وَٱلَّذِينَ هُمْ عَنْ ءَايَـٰتِنَا غَـٰفِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করেনা এবং পার্থিব জীবনেই পরিতৃপ্ত এবং এতেই নিশ্চিন্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে গাফিল ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭. যে সব কাফির এবং আল্লাহ তা‘আলার দলীল ও নিদর্শনসমূহ থেকে গাফিল ও মুখ ফিরিয়ে নেয়া ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতের আশা করে না, যাতে তারা তাঁকে ভয় করে ও তাঁর প্রতি আগ্রহী হয় এবং আখিরাতের স্থায়ী জীবনের পরিবর্তে দুনিয়ার নশ্বর জীবনে সন্তুষ্ট হয়। উপরন্তু তার প্রতি খুশিতে তাদের অন্তরগুলো প্রশান্ত হয়।
8
أُو۟لَـٰٓئِكَ مَأْوَىٰهُمُ ٱلنَّارُ بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এইরূপ লোকদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, তাদের কার্যকলাপের কারণে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮. কুফরি অর্জন এবং কিয়ামতের দিবসকে অস্বীকার করার কারণে এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যাতে তারা আশ্রয় গ্রহণ করবে।
9
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَـٰنِهِمْ ۖ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَـٰرُ فِى جَنَّـٰتِ ٱلنَّعِيمِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে, তাদের রাব্ব তাদেরকে লক্ষ্য স্থলে (জান্নাতে) পৌঁছে দিবেন তাদের ঈমানের কারণে, শান্তির উদ্যানসমূহে, তাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ বইতে থাকবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯. আল্লাহতে বিশ্বাসী ও নেককারদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ঈমানের দরুন নেক আমলের পথ দেখান। যা তাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে পৌঁছিয়ে দিবে। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কিয়ামতের দিন স্থায়ী নিয়ামতের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যেখানে তাদের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত হবে।
10
دَعْوَىٰهُمْ فِيهَا سُبْحَـٰنَكَ ٱللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَـٰمٌ ۚ وَءَاخِرُ دَعْوَىٰهُمْ أَنِ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সেখানে তাদের বাক্য হবেঃ হে আল্লাহ! তুমি মহান, পবিত্র! এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম (আসসালামু ‘আলাইকুম), আর তাদের দু‘আর শেষ বাক্য হবে ‘আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের রাব্ব মহান আল্লাহর জন্য)।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০. জান্নাতে তাদের দু‘আ হবে তাসবীহ ও আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা। তাদের জন্য আল্লাহ, ফিরিশতা এবং তাদের একের জন্য অপরের সম্ভাষণ হবে সালাম। আর তাদের দু‘আর পরিসমাপ্তি হবে সকল সৃষ্টির প্রতিপালক আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে।
11
۞ وَلَوْ يُعَجِّلُ ٱللَّهُ لِلنَّاسِ ٱلشَّرَّ ٱسْتِعْجَالَهُم بِٱلْخَيْرِ لَقُضِىَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ ۖ فَنَذَرُ ٱلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَآءَنَا فِى طُغْيَـٰنِهِمْ يَعْمَهُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আল্লাহ যদি মানুষের উপর ত্বরিত ক্ষতি সাধন করতেন, যেমন তারা ত্বরিত উপকার লাভ করতে আগ্রহ রাখে, তাহলে তাদের অঙ্গীকার কবেই পূর্ণ হয়ে যেত! অনন্তর আমি সেই লোকদেরকে, যারা আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার চিন্তা করেনা, ছেড়ে দিই তাদের অবস্থার উপর, যেন তারা তাদের অবাধ্যতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১. রাগের সময় নিজ, সন্তান ও সম্পদের বিরুদ্ধে করা মানুষের অকল্যাণের দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা কল্যাণের দু‘আর ন্যায় দ্রæত কবুল করলে তারা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সময় দিয়ে থাকেন। যারা তাঁর সাক্ষাতের আশা করে না তিনি তাদেরকে পরিত্যাগ করেন। কারণ, তারা কোন শাস্তিকে ভয় পায় না। না তারা কোন সাওয়াবের আশা করে। তাই তিনি কিয়ামতের দিবসে তাদেরকে সন্দিহান, অস্থির ও দ্বিধাযুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দিবেন।
12
وَإِذَا مَسَّ ٱلْإِنسَـٰنَ ٱلضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۢبِهِۦٓ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَآئِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُۥ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَآ إِلَىٰ ضُرٍّ مَّسَّهُۥ ۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন মানুষকে কোন ক্লেশ স্পর্শ করে তখন আমাকে ডাকতে থাকে শুয়ে, বসে এবং দাঁড়িয়েও; অতঃপর যখন আমি তার সেই কষ্ট দূর করে দিই তখন সে নিজের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। যে কষ্ট তাকে স্পর্শ করেছিল তা মোচন করার জন্য সে যেন আমাকে কখনও ডাকেইনি; এই সীমা লংঘনকারীদের কার্যকলাপ তাদের কাছে এইরূপই পছন্দনীয় মনে হয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২. নিজের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা লোক রুগ্ন বা অবনতির সময় ক্ষতি থেকে বাঁচার আশায় দাঁড়িয়ে, বসে বা কাত হয়ে বিনয়ী ও ন¤্রভাবে আমাকে ডাকলে আমি তার দু‘আ কবুল করে বিপদ দূর করে দেই। কিন্তু পরক্ষণেই সে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। যেন সে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাকে একেবারেই ডাকেনি। যেমনিভাবে এ মুখ ফিরিয়ে নেয়া লোকের সামনে তার ভ্রষ্টতার উপর অটল থাকার ব্যাপারটিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তেমনিভাবে কুফরির মাধ্যমে সীমাতিক্রমকারীদের সামনেও তাদের কৃত কুফরি ও পাপসমূহকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই তারা সেগুলোকে আর পরিত্যাগ করে না।
13
وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا ٱلْقُرُونَ مِن قَبْلِكُمْ لَمَّا ظَلَمُوا۟ ۙ وَجَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ وَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْقَوْمَ ٱلْمُجْرِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তোমাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যখন তারা যুলম করেছিল, অথচ তাদের নিকট তাদের রাসূলগণও প্রমাণাদীসহ আগমন করেছিল, কিন্তু কিছুতেই তারা ঈমান আনলনা। আর আমি অপরাধীদেরকে এই রূপেই শাস্তি দিয়ে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩. হে মুশরিকরা! আমি তোমাদের পূর্বের জাতিগুলোকে আল্লাহর রাসূলগণের অস্বীকার ও পাপে লিপ্ত হওয়ার দরুন ধ্বংস করে দিয়েছি। অথচ তাদের নিকট রাসূলদেরকে এমন সুস্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছি যা তাঁদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আনীত বিধানের সত্যতা প্রমাণ করে। এরপরও তারা ঈমান আনে নি। কারণ, তারা ঈমান আনার জন্য বস্তুতঃ প্রস্তুতই ছিলো না। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদের অসহযোগিতা করেছেন এবং তাদেরকে ঈমান আনার তাওফীক দেন নি। যেমনিভাবে আমি যালিম জাতিগুলোকে প্রতিফল দিয়েছি তেমনিভাবে আমি প্রত্যেক যুগ ও জায়গার তাদের মতো যালিমদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
14
ثُمَّ جَعَلْنَـٰكُمْ خَلَـٰٓئِفَ فِى ٱلْأَرْضِ مِنۢ بَعْدِهِمْ لِنَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তাদের স্থলে তোমাদেরকে তাদের পর ভূমন্ডলে আবাদ করলাম, যেন আমি প্রত্যক্ষ করি যে, তোমরা কি রূপ কাজ কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪. অতঃপর হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে তোমরা কেমন আমল করো তা দেখার জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্বীকারকারী জাতিগুলোর প্রতিনিধি বানিয়েছি। তোমরা কি সাওয়াব পাওয়ার মতো নেক আমল করো, না শাস্তি পাওয়ার মতো অকল্যাণ করো?
15
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ ءَايَاتُنَا بَيِّنَـٰتٍ ۙ قَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَآءَنَا ٱئْتِ بِقُرْءَانٍ غَيْرِ هَـٰذَآ أَوْ بَدِّلْهُ ۚ قُلْ مَا يَكُونُ لِىٓ أَنْ أُبَدِّلَهُۥ مِن تِلْقَآئِ نَفْسِىٓ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ ۖ إِنِّىٓ أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّى عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন তাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় - যা অতি স্পষ্ট, তখন ঐ সব লোক, যাদের আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার চিন্তা নেই - এইরূপ বলেঃ এটা ছাড়া অন্য কোন কুরআন আনয়ন করুন অথবা এতেই কিছু পরিবর্তন করে দিন। বলঃ আমার দ্বারা ইহা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, আমিতো শুধুমাত্র উহারই অনুসরণ করব যা অহীযোগে আমার কাছে পৌঁছেছে। আমি যদি আমার রবের নাফরমানী করি তাহলে আমি এক অতি ভীষণ দিনের শাস্তির আশংকা রাখি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫. তাদের নিকট আল্লাহর একত্ববাদ প্রমাণকারী সুস্পষ্ট কুর‘আনের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হলে পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা তথা যারা সাওয়াবের আশা করে না এবং শাস্তিকেও ভয় পায় না তারা বলে: হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাদের নিকট এ কুর‘আন ছাড়া যাতে মূর্তি পূজা ইত্যাদির প্রতি গালি রয়েছে অন্য কুর‘আন নিয়ে আসো। যাতে পূর্বের কিতাবের কিয়দংশ বা পুরোটাই আমাদের রুচি মাফিক রহিত করা হয়েছে। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আমার পরিবর্তন শুদ্ধ হবে না, না আমি এটা ছাড়া অন্যটি নিয়ে আসতে পারবো। বরং একমাত্র আল্লাহই ইচ্ছামাফিক পরিবর্তন করতে পারেন। আমি তো কেবল আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত ওহীরই অনুসরণ করে থাকি। আমি তোমাদের আহŸানে সাড়া দিয়ে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলে কঠিন দিন তথা কিয়ামতের দিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি।
16
قُل لَّوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا تَلَوْتُهُۥ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَدْرَىٰكُم بِهِۦ ۖ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِّن قَبْلِهِۦٓ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ যদি আল্লাহর ইচ্ছা হত তাহলে, না আমি তোমাদেরকে এটা পাঠ করে শোনাতাম আর না আল্লাহ তোমাদেরকে ওটা জানাতেন। কেননা আমি এর পূর্বেওতো জীবনের এক দীর্ঘ সময় তোমাদের মধ্যে অতিবাহিত করেছি; তাহলে কি তোমরা এতটুকু জ্ঞান রাখনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: আল্লাহ না চাইলে আমি তোমাদের নিকট কুর‘আন পড়বোও না এবং পৌঁছাবোও না। আল্লাহ চাইলে আমার মুখ দিয়ে তোমাদেরকে তিনি কুর‘আন শিখাতেন না। কারণ, আমি তোমাদের মাঝে এক দীর্ঘ কাল তথা চল্লিশ বছর অবস্থান করেছি। আমি তখন কোন লেখাপড়াই জানতাম না। আর এ জাতীয় কিছু অনুসন্ধানও করতাম না। তোমরা কি নিজেদের বিবেক দিয়ে এ কথা অনুধাবন করো না যে, তোমাদের নিকট আমার আনিত ফরমান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। এতে আমার কোন হাত নেই?!
17
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦٓ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُفْلِحُ ٱلْمُجْرِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতএব সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী (যালিম) কে যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে? নিঃসন্দেহে এমন পাপাচারীদের কিছুতেই মঙ্গল হবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭. সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কেউ নেই যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বানিয়েছে। তাহলে আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব কুর‘আনকে বদলিয়ে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা। বস্তুতঃ অপবাদের মাধ্যমে আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রমকারীরা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলে সফল হবে না।
18
وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـٰٓؤُلَآءِ شُفَعَـٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِ ۚ قُلْ أَتُنَبِّـُٔونَ ٱللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَلَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ سُبْحَـٰنَهُۥ وَتَعَـٰلَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহের ইবাদাত করে যারা তাদের কোন অপকার করতে পারেনা এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারেনা। আর তারা বলে, এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বলে দাওঃ তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আসমানে, আর না যমীনে? তিনি পবিত্র এবং তাদের মুশরিকী কার্যকলাপ হতে তিনি অনেক উর্ধ্বে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮. মুশরিকরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের ধারণাকৃত উপাস্যদের পূজা করে। যা তাদের কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারবে না। আর সত্যিকার মা’বূদ ইচ্ছানুযায়ী যে কারো লাভ ও ক্ষতি করতে পারে। তারা নিজেদের উপাস্য সম্পর্কে বলে, এরা হলো আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী আমাদের মাধ্যম। ফলে তিনি আমাদেরকে গুনাহের জন্য শাস্তি দিবেন না। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন, তোমরা কি সবজান্তা আল্লাহকে এ কথা জানাচ্ছো যে, নিশ্চয়ই তাঁর শরীক রয়েছে। অথচ আসমান ও জমিনে যে তাঁর কোন শরীক রয়েছে তিনি তা জানেন না। মুশরিকরা যে বাতিল ও মিথ্যা কথা বলে তা থেকে আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয়ই পূত-পবিত্র।
19
وَمَا كَانَ ٱلنَّاسُ إِلَّآ أُمَّةً وَٰحِدَةً فَٱخْتَلَفُوا۟ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَقُضِىَ بَيْنَهُمْ فِيمَا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর সমস্ত মানুষ (প্রথম) এক উম্মাতই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল। আর যদি তোমার রবের পক্ষ হতে এক নির্দেশ বাণী প্রথমে সাব্যস্ত হয়ে না থাকত তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯. বস্তুতঃ সকল মানুষ এক উম্মত ও একত্ববাদী মু’মিন ছিলো। অতঃপর তাদের মাঝে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ মু’মিন থেকেছে। আবার কেউ কাফির হয়েছে। দুনিয়াতে দ্ব›দ্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মাঝে ফায়সালা না করে বরং কিয়ামত দিবসেই করবেন এ ব্যাপারে আল্লাহর পূর্বের চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকলে তিনি দুনিয়াতেই দ্ব›দ্বপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা করে দিতেন। তখন হিদায়েতপ্রাপ্তরা পথভ্রষ্ট থেকে স্পষ্টতঃ ভিন্ন হয়ে যেতো।
20
وَيَقُولُونَ لَوْلَآ أُنزِلَ عَلَيْهِ ءَايَةٌ مِّن رَّبِّهِۦ ۖ فَقُلْ إِنَّمَا ٱلْغَيْبُ لِلَّهِ فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তারা বলেঃ তার প্রতি তার রবের পক্ষ হতে কোন মু’জিযা কেন নাযিল হলনা? তুমি বলে দাওঃ গাইবের খবর শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। অতএব তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় থাকলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০. মুশরিকরা বলে: মুহাম্মাদের উপর কেন তার রবের পক্ষ থেকে তার সত্যতা প্রমাণকারী নিদর্শন নেমে আসে না? হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: নিদর্শন নাযিল হওয়া মূলতঃ একটি গায়েবী ব্যাপার। যা বিশেষভাবে একমাত্র আল্লাহই জানেন। অতএব, তোমরা প্রস্তাবিত প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহের অপেক্ষা করো। আমিও তোমাদের সাথে সেগুলোরই অপেক্ষা করছি।
21
وَإِذَآ أَذَقْنَا ٱلنَّاسَ رَحْمَةً مِّنۢ بَعْدِ ضَرَّآءَ مَسَّتْهُمْ إِذَا لَهُم مَّكْرٌ فِىٓ ءَايَاتِنَا ۚ قُلِ ٱللَّهُ أَسْرَعُ مَكْرًا ۚ إِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُونَ مَا تَمْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন আমি মানুষকে কোন নি‘আমাতের স্বাদ উপভোগ করাই তাদের উপর কোন বিপদ পতিত হওয়ার পর, তখনই তারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে দুরভিসন্ধি করতে থাকে। তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ অতি দ্রুত কলাকৌশল তৈরী করতে পারেন। নিশ্চয়ই আমার মালাইকা/ফেরেশতাগণ তোমাদের সকল দুরভিসন্ধি লিপিবদ্ধ করছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২১. আমি দুর্ভিক্ষ ও খরার পর মুশরিকদেরকে বৃষ্টি ও সজীবতার নিয়ামত আস্বাদন করালে তারা আমার নিদর্শনসমূহ নিয়ে ঠাট্টা ও সেগুলোকে অস্বীকার করে। হে রাসূল! আপনি এই মুশরিকদেরকে বলে দিন: আল্লাহ তা‘আলা দ্রæত কৌশলী এবং তিনি দ্রæত অবকাশ ও শাস্তি উভয়টিই দিতে পারেন। এদিকে সংরক্ষণকারী ফিরিশতারা তোমাদের সকল ক‚টকৌশল লিখে রাখছে। কোন কিছুই তাদের হাতছাড়া হয় না। তাহলে কীভাবে তোমাদের ¯্রষ্টার হাতছাড়া হবে?! তিনি অচিরেই তোমাদের ক‚টকৌশলের প্রতিফল দিবেন।
22
هُوَ ٱلَّذِى يُسَيِّرُكُمْ فِى ٱلْبَرِّ وَٱلْبَحْرِ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا كُنتُمْ فِى ٱلْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِم بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا۟ بِهَا جَآءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَآءَهُمُ ٱلْمَوْجُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوٓا۟ أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ ۙ دَعَوُا۟ ٱللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ لَئِنْ أَنجَيْتَنَا مِنْ هَـٰذِهِۦ لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّـٰكِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি এমন, যিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে ও পানি পথে পরিভ্রমণ করান; যখন তোমরা নৌকায় অবস্থান কর, আর সেই নৌকাগুলি লোকদেরকে নিয়ে অনুকূল বায়ুর সাহায্যে চলতে থাকে, আর তারা তাতে আনন্দিত হয়, (হঠাৎ) তাদের উপর এক প্রচন্ড (প্রতিকূল) বায়ু এসে পড়ে এবং প্রত্যেক দিক হতে তাদের উপর তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে যে, তারা (বিপদে) বেষ্টিত হয়ে পড়েছে, (তখন) সকলে খাঁটি বিশ্বাসের সাথে আল্লাহকেই ডাকতে থাকেঃ (হে আল্লাহ!) আপনি যদি আমাদেরকে এটা হতে রক্ষা করেন তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ হয়ে যাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২২. হে মানুষ! একমাত্র আল্লাহই তোমাদেরকে স্থলভাগে নিজেদের পা ও পশুর পিঠে ভ্রমণ করান। তেমনিভাবে তিনি সাগরেও তোমাদেরকে নৌকায় ভ্রমণ করান। অনুক‚ল আবহাওয়ায় তোমাদের নিয়ে সাগরে নৌকাগুলো চলতে থাকলে আরোহীরা খুশি হয়। এমতাবস্থায় হঠাৎ তাদের উপর ঝড় বাতাস বয়ে যায় এবং চতুর্দিক থেকে সাগরের ঢেউ ধেয়ে আসে আর তাদের এ ধারণা প্রবল হয় যে, তারা নিশ্চিত ধ্বংস হবে তখন তারা এক আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে ডাকতে থাকে: আপনি আমাদেরকে এ ধ্বংসাত্মক বিপদ থেকে উদ্ধার করলে আমরা আপনার নিয়ামতের দরুন নিশ্চয়ই আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাবো।
23
فَلَمَّآ أَنجَىٰهُمْ إِذَا هُمْ يَبْغُونَ فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ ۗ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّمَا بَغْيُكُمْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُم ۖ مَّتَـٰعَ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُكُمْ فَنُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখনই মা‘বূদ তাদেরকে উদ্ধার করেন তখনই তারা ভূপৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করতে থাকে। হে লোক সকল! (শুনে রেখ), তোমাদের বিদ্রোহাচরণ তোমাদেরই (প্রাণের) জন্য বিপদ হবে, পার্থিব জীবনে (এটা দ্বারা কিছু ফল) ভোগ করে নাও, অতঃপর আমারই কাছে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতঃপর আমি তোমাদের যাবতীয় কৃতকর্ম তোমাদেরকে জানিয়ে দিব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৩. আল্লাহ তা‘আলা দু‘আ কবুল করে তাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করলে তারা কুফরি, গুনাহ ও পাপে নিমজ্জিত হয়ে জমিনে ফাসাদ শুরু করে দেয়। হে মানুষ! তোমরা অবচেতন থেকে ফিরে আসো। নিশ্চয়ই তোমাদের বিদ্রোহী আচরণের কুফল তোমাদের উপরই বর্তাবে; আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এরই মাধ্যমে এ নশ্বর দুনিয়ার জীবনে কিছু আনন্দ-উল্লাস করে যাবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন আমার দিকে ফিরে আসলে আমি তোমাদেরকে কৃত গুনাহ অবহিত করে তার প্রতিদান দেবো।
24
إِنَّمَا مَثَلُ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا كَمَآءٍ أَنزَلْنَـٰهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَٱخْتَلَطَ بِهِۦ نَبَاتُ ٱلْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ ٱلنَّاسُ وَٱلْأَنْعَـٰمُ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَخَذَتِ ٱلْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَٱزَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَآ أَنَّهُمْ قَـٰدِرُونَ عَلَيْهَآ أَتَىٰهَآ أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَـٰهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِٱلْأَمْسِ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের অবস্থাতো এরূপ, যেমন আমি আসমান হতে পানি বর্ষণ করলাম, অতঃপর তা দ্বারা উৎপন্ন হয় যমীনের উদ্ভিদগুলি অতিশয় ঘন হয়ে, যা মানুষ ও পশুরা আহার করে; এমন কি, যখন সেই যমীন নিজের সুদৃশ্যতার পূর্ণ রূপ ধারণ করল এবং তা শোভনীয় হয়ে উঠল, আর ওর মালিকরা মনে করল যে, তারা এখন ওর পূর্ণ অধিকারী হয়েছে, তখন দিনে অথবা রাতে ওর উপর আমার পক্ষ হতে কোন আপদ এসে পড়ল। সুতরাং আমি ওকে এমন নিশ্চিহ্ন করে দিলাম, যেন গতকাল ওর অস্তিত্বই ছিলনা। এরূপেই আয়াতগুলিতে আমি বিশদ রূপে বর্ণনা করি এমন লোকদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৪. দুনিয়ার জীবন যাতে তোমরা আনন্দ-উল্লাস করো তা দ্রæত নিঃশেষ হওয়ার উদাহরণ বৃষ্টির পানির ন্যায়। যার সংস্পর্শে ভূমিজাত উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। যার কিছু হলো মানুষের খাদ্য যেমন: দানা জাতীয় ফসল ও ফলফলাদি, আর কিছু হলো পশুর খাদ্য যেমন: ঘাস ইত্যাদি। অবশেষে জমিন সজীবতা ধারণ করে রকমারী উদ্ভিদে তা সুশোভিত হলে সেগুলোর মালিকরা মনে করে যে, তারা ফসলগুলো কাটতে ও উঠাতে পারবে আর তখনই তা ধ্বংসের ফায়সালা নেমে আসে। ফলে তা কাটার মতোই হয়ে যায়। যেন একটু আগে এ জমিনে গাছপালা ও উদ্ভিদ কিছুই ছিলো না। যেমনিভাবে আমি তোমাদের জন্য দুনিয়ার অবস্থা ও তা দ্রæত শেষ হওয়ার বর্ণনা দিলাম তেমনিভাবে আমি চিন্তাশীল ও শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্য দলীল ও প্রমাণ বর্ণনা করি।
25
وَٱللَّهُ يَدْعُوٓا۟ إِلَىٰ دَارِ ٱلسَّلَـٰمِ وَيَهْدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আল্লাহ তোমাদেরকে শান্তির নিবাসের দিকে আহবান করেন; এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে চলার ক্ষমতা দান করেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৫. আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে তাঁর শান্তির ঘর জান্নাতের দিকে ডাকেন। সেখানে মানুষ সকল চিন্তা, মৃত্যু ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের যাকে চান তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের তাওফীক দিয়ে থাকেন। যা একদা এ শান্তির নীড়ের দিকেই পৌঁছিয়ে দিবে।
26
۞ لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا۟ ٱلْحُسْنَىٰ وَزِيَادَةٌ ۖ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوهَهُمْ قَتَرٌ وَلَا ذِلَّةٌ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা সৎ কাজ করেছে তাদের জন্য উত্তম বস্তু (জান্নাত) রয়েছে; এবং অতিরিক্ত কিছুও বটে; আর না তাদের মুখমন্ডলকে মলিনতা আচ্ছন্ন করবে, আর না অপমান; তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল থাকবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৬. আল্লাহ তা‘আলার বাধ্যতামূলক আনুগত্য মেনে এবং হারাম পাপগুলো পরিত্যাগ করে নেককার পরিচয় দানকারীদের জন্য রয়েছে উত্তম সাওয়াব তথা জান্নাত। এর উপর তাদেরকে আরেকটু বেশিও দেয়া হবে আর তা হলো আল্লাহর মহিমান্বিত চেহারার দর্শন। সেদিন না কোন ধুলাবালি তাদের চেহারা ঢেকে দিবে। না কোন লাঞ্ছনা ও অবমাননা তাদেরকে ঢেকে ফেলবে। এ ধরনের নেককাররাই জান্নাতী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
27
وَٱلَّذِينَ كَسَبُوا۟ ٱلسَّيِّـَٔاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍۭ بِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ مَّا لَهُم مِّنَ ٱللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ ۖ كَأَنَّمَآ أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ ٱلَّيْلِ مُظْلِمًا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পক্ষান্তরে যারা মন্দ কাজ করেছে তারা তাদের মন্দ কাজের শাস্তি পাবে ওর অনুরূপ, এবং অপমান তাদেরকে আচ্ছাদিত করে নিবে; তাদেরকে আল্লাহ (এর শাস্তি) হতে কেহই রক্ষা করতে পারবেনা, যেন তাদের মুখমন্ডলকে আচ্ছাদিত করে দেয়া হয়েছে রাতের অন্ধকার স্তরসমূহ দ্বারা। এরা হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্ত কাল থাকবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৭. আর বদকারদের কুফরি ও পাপের জন্য পরকালে সেই সমপরিমাণ আল্লাহর শাস্তি রয়েছে। উপরন্তু লাঞ্ছনা ও অবমাননা তাদের চেহারাগুলো ঢেকে ফেলবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর কোন আযাব নাযিল করলে তা প্রতিরোধকারী কেউ থাকবে না। অন্ধকার রাতের কালো ছায়ার মতো আগুনের ধোঁয়া ও কালো রং তাদের চেহারাগুলোকে ঢেকে ফেলবে। মূলতঃ এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরা জাহান্নামী। যাতে তারা চিরকাল থাকবে।
28
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا۟ مَكَانَكُمْ أَنتُمْ وَشُرَكَآؤُكُمْ ۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ ۖ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُم مَّا كُنتُمْ إِيَّانَا تَعْبُدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর সেই দিনটিও উল্লেখযোগ্য যেদিন আমি মুশরিকদেরকে একত্রিত করব, অতঃপর বলবঃ তোমরা ও তোমাদের নিরূপিত শরীকরা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান কর, অতঃপর আমি তাদের মধ্যে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করে দিব এবং তাদের সেই শরীকরা বলবেঃ তোমরাতো আমাদের ইবাদাত করতেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৮. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন কিয়ামতের দিনের কথা যখন আমি সকল সৃষ্টিকে একত্রিত করবো। অতঃপর দুনিয়াতে আল্লাহর সাথে শিরককারীদেরকে বলবো, হে মুশরিকরা! তোমরা এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অন্য উপাস্যরা নিজেদের জায়গায় অবস্থান করো। অতঃপর আমি ইবাদাতকারী ও মা’বূদদেরকে পৃথক করে দেবো। তখন মা’বূদরা ইবাদাতকারীদের দায়মুক্তির ঘোষণা দিয়ে বলবে, তোমরা তো দুনিয়াতে আমাদের ইবাদাত করোনি।
29
فَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدًۢا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ إِن كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَـٰفِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বস্তুতঃ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই হচ্ছেন যথোপযুক্ত সাক্ষী যে, আমরা তোমাদের ইবাদাত সম্বন্ধে অবগত ছিলামনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৯. তখন তাদের অন্য উপাস্য মূর্তিগুলো এ বলে দায়িত্বমুক্তির ঘোষণা করবে যে, এ ব্যাপারে আল্লাহই সাক্ষী আর তিনি সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের ইবাদাতে সন্তুষ্ট ছিলাম না, না তোমাদেরকে তা করার আদেশ করেছি। বরং আমরা তোমাদের ইবাদাতের ব্যাপারটি অনুভবই করতে পারতাম না।
30
هُنَالِكَ تَبْلُوا۟ كُلُّ نَفْسٍ مَّآ أَسْلَفَتْ ۚ وَرُدُّوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ مَوْلَىٰهُمُ ٱلْحَقِّ ۖ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বীয় পূর্ব কৃতকর্মগুলি পরীক্ষা করে নিবে, এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে, যিনি তাদের প্রকৃত মালিক। আর যে সব মিথ্যা মা‘বূদ তারা বানিয়ে নিয়েছিল তারা সবাই তাদের থেকে দূরে সরে যাবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩০. সে কঠিন জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা হবে, কে দুনিয়ার জীবনে কী আমল করেছে। আর মুশরিকদেরকে তাদের সত্য প্রতিপালকের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। যিনি তাদের হিসাবের দায়িত্ব নিবেন। তখন তারা যে মূর্তিগুলোর সুপারিশের অমূলক দাবি করতো তা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
31
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَـٰرَ وَمَن يُخْرِجُ ٱلْحَىَّ مِنَ ٱلْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ ٱلْمَيِّتَ مِنَ ٱلْحَىِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلْأَمْرَ ۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُ ۚ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে আসমান ও যমীন হতে রিয্ক পৌঁছিয়ে থাকেন? অথবা কে তিনি, যিনি কর্ণ ও চক্ষুসমূহের উপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর তিনি কে, যিনি জীবন্তকে প্রাণহীন হতে বের করেন, আর প্রাণহীনকে জীবন্ত হতে বের করেন? আর তিনি কে যিনি সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন? তখন অবশ্যই তারা বলবেঃ আল্লাহ! অতএব তুমি বলঃ তাহলে কেন তোমরা (শির্ক হতে) নিবৃত্ত থাকছনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩১. হে রাসূল! আপনি এ আল্লাহর সাথে শিরককারীদেরকে বলে দিন: আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে তোমাদেরকে কে রিযিক দেয়? তেমনিভাবে জমিনে যে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয় এবং তাতে যে খনিজ দ্রব্য লুপ্ত থাকে সেগুলোর রিযিক কে দেয়? আর কে মৃত থেকে জীবিত বের করে যেমন: বীর্য থেকে মানুষ এবং ডিম থেকে পাখি আর কে জীবিত থেকে মৃত বের করে যেমন: পশু থেকে বীর্য এবং পাখি থেকে ডিম? আর কে আসমান ও জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝের সৃষ্টিগুলো পরিচালনা করে? তারা অচিরেই উত্তর দিবে যে, এসবগুলোর কর্তা হলেন একমাত্র আল্লাহ। তাই আপনি তাদেরকে বলুন: তোমরা কি এ ব্যাপারটি জেনে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করবে না?!
32
فَذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمُ ٱلْحَقُّ ۖ فَمَاذَا بَعْدَ ٱلْحَقِّ إِلَّا ٱلضَّلَـٰلُ ۖ فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রকৃত রাব্ব, অতএব সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি রইল? তাহলে তোমরা (সত্যকে ছেড়ে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩২. হে মানুষ! যিনি এসব করেন তিনিই হলেন ¯্রষ্টা ও তোমাদের সকল ব্যাপার পরিচালনাকারী সত্য আল্লাহ। সত্য জানার পর তা থেকে দূরে থাকা ও বিনষ্ট ছাড়া আর কী থাকতে পারে?! তাহলে এ সুস্পষ্ট সত্য থেকে তোমাদের বিবেকগুলো কোথায় যায়?!
33
كَذَٰلِكَ حَقَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ عَلَى ٱلَّذِينَ فَسَقُوٓا۟ أَنَّهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এভাবে সমস্ত অবাধ্য লোকদের সম্পর্কে তোমার রবের এই কথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, তারা ঈমান আনবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৩. যেমনিভাবে সত্য রুবূবিয়্যাত আল্লাহর জন্য প্রমাণিত হলো তেমনিভাবে গাদ্দারী করে সত্য থেকে বেরিয়ে আসা লোকদের উপর আপনার প্রতিপালকের নির্ধারিত বাণী চ‚ড়ান্ত হলো যে, তারা কখনো ঈমান আনবে না।
34
قُلْ هَلْ مِن شُرَكَآئِكُم مَّن يَبْدَؤُا۟ ٱلْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ ۚ قُلِ ٱللَّهُ يَبْدَؤُا۟ ٱلْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
(হে নাবী) তুমি বলঃ তোমাদের (নিরূপিত) শরীকদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি যে প্রথমবারও সৃষ্টি করে এবং পুনরাবর্তন করতে পারে? তুমি বলে দাওঃ আল্লাহই প্রথমবারও সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বারও সৃষ্টি করবেন, অতএব তোমরা (সত্য হতে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৪. হে রাসূল! আপনি এ মুশরিকদেরকে বলে দিন, তোমাদের আল্লাহ ছাড়া ইবাদাত করা সেই শরীক উপাস্যদের কেউ কি পূর্ব নমুনা ছাড়া কোন সৃষ্টি তৈরি করতে এবং তার মৃত্যুর পর তাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারে? আপনি তাদেরকে বলে দিন, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই পূর্ব নমুনা ছাড়া যে কোন সৃষ্টি তৈরি ও তার মৃত্যুর পর তাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন। তাহলে হে মুশরিকরা! তোমরা কীভাবে হক ছেড়ে বাতিলের দিকে ধাবিত হও?!
35
قُلْ هَلْ مِن شُرَكَآئِكُم مَّن يَهْدِىٓ إِلَى ٱلْحَقِّ ۚ قُلِ ٱللَّهُ يَهْدِى لِلْحَقِّ ۗ أَفَمَن يَهْدِىٓ إِلَى ٱلْحَقِّ أَحَقُّ أَن يُتَّبَعَ أَمَّن لَّا يَهِدِّىٓ إِلَّآ أَن يُهْدَىٰ ۖ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি যে সত্য বিষয়ের সন্ধান দেয়? তুমি বলে দাও, আল্লাহই সত্য বিষয়ের পথ প্রদর্শন করেন; তাহলে কি যিনি সত্য বিষয়ের পথ প্রদর্শন করেন তিনি অনুসরণ করার সর্বাধিক যোগ্য, নাকি ঐ ব্যক্তি যে অন্যের পথ প্রদর্শন করা ছাড়া নিজেই পথ প্রাপ্ত হয়না? তাহলে তোমাদের কি হল? তোমরা কিরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৫. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহ ছাড়া যেসব শরীক উপাস্যদের তোমরা ইবাদাত করো তাদের কেউ কি তোমাদেরকে সৎ পথ দেখায়? আপনি তাদেরকে বলুন, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই সৎ পথ দেখান। অতএব, যে সত্তা মানুষকে সৎ পথ দেখান এবং তাদেরকে সত্যের দিকে ডাকেন তাঁর অনুসরণ করা উচিত, না তোমাদের সেই মা’বূদদের যারা নিজেরাই নিজেদের পথ খুঁজে পায় না যতক্ষণ না অন্যরা তাদেরকে পথ দেখায়?! তোমাদের কী হলো, তোমরা কীভাবে বাতিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো, তোমরা মনে করো যে, তারা আল্লাহর শরীক?! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের এ কথার অনেক ঊর্ধ্বে।
36
وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلَّا ظَنًّا ۚ إِنَّ ٱلظَّنَّ لَا يُغْنِى مِنَ ٱلْحَقِّ شَيْـًٔا ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِمَا يَفْعَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তাদের অধিকাংশ লোক শুধু অলীক কল্পনার পিছনে চলছে; নিশ্চয়ই অলীক কল্পনা বাস্তব ব্যাপারে মোটেই ফলপ্রসু নয়; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবই জানেন, যা কিছু তারা করছে ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৬. অধিকাংশ মুশরিক না জানা বিষয়ের অনুসরণ করে থাকে। তারা মূলতঃ ধারণা ও সন্দেহের অনুসরণ করে। অথচ সন্দেহ কখনো জ্ঞানের স্থলাভিষিক্ত ও তার চাহিদা পূরণ করতে পারে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে জানেন। তাদের কোন কর্মই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে সেগুলোর প্রতিদান দিবেন।
37
وَمَا كَانَ هَـٰذَا ٱلْقُرْءَانُ أَن يُفْتَرَىٰ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ ٱلَّذِى بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ ٱلْكِتَـٰبِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর এই কুরআন কল্পনা প্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, ইহাতো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী যা এর পূর্বে (নাযিল) হয়েছে, এবং আবশ্যকীয় বিধানসমূহের বিশদ বর্ণনাকারী, (এবং) এতে কোন সন্দেহ নেই (ইহা) বিশ্বের রবের পক্ষ হতে (নাযিল) হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৭. এ কুর‘আন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কর্তৃক রচিত হওয়া এবং তার সাথে সম্পৃক্ত করা সঠিক নয়। কারণ, মানুষ এর মতো আরেকটি আনতে একেবারেই অক্ষম। তবে এটি পূর্বের নাযিলকৃত কিতাবগুলোর সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিধানের বিস্তারিত বর্ণনাকারী। তাই এটি সকল সৃষ্টির প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
38
أَمْ يَقُولُونَ ٱفْتَرَىٰهُ ۖ قُلْ فَأْتُوا۟ بِسُورَةٍ مِّثْلِهِۦ وَٱدْعُوا۟ مَنِ ٱسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা কি এরূপ বলে যে, এটা তার (নাবীর) স্বরচিত? তুমি বলে দাওঃ তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা রচনা কর এবং গাইরুল্লাহ হতে যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৮. বরং এ মুশরিকরা কি এটা বলতে চায় যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কুর‘আন নিজে রচনা করে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করেছে। হে রাসূল! আপনি তাদের উত্তরে বলুন, আমি মানুষ হয়ে নিজ হাতে এ কুর‘আন রচনা করতে পারলে তোমরাও এর মতো একটি সূরা নিয়ে আসো। আর তোমরা কুর‘আন রচিত ও মিথ্যা হওয়ার দাবিতে সত্যবাদী হলে নিজেদের সহযোগিতার জন্য সাধ্যমতো যাকে পারো ডাকো। আসলে তোমরা কখনোই তা করতে পারবে না। তোমরা আরবী ভাষাভাষী এবং ভাষাশৈলীর অধিকারী হওয়া সত্তে¡ও যখন তা করতে পারছো না তখন এটিই এ কথার দলীল যে, কুর‘আন অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ।
39
بَلْ كَذَّبُوا۟ بِمَا لَمْ يُحِيطُوا۟ بِعِلْمِهِۦ وَلَمَّا يَأْتِهِمْ تَأْوِيلُهُۥ ۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বরং তারা এমন বিষয়কে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে, যাকে নিজ জ্ঞানের পরিধিতে আনয়ন করেনি, আর এখনো তাদের প্রতি ওর পরিণাম (আযাব) পৌঁছেনি; এরূপভাবে তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল, যারা তাদের পূর্বে গত হয়েছে। অতএব দেখ সেই অত্যাচারীদের পরিণাম কি হল?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৯. তারা এ প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে বরং কুর‘আনকে বুঝা ও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা এমনকি তার ব্যাপারে ভীতিপ্রদর্শনকৃত শাস্তি আসার পূর্বেই তাকে দ্রæত অস্বীকার করে বসে। অথচ সেই শাস্তি অতি সন্নিকটে। এ অস্বীকারের ন্যায় পূর্বের উম্মতরাও অস্বীকার করেছে। ফলে তাদের উপর আযাব নেমে এসেছে। হে রাসূল! আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন তো, অস্বীকারকারী উম্মতদের পরিণতি কেমন হয়েছিলো। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
40
وَمِنْهُم مَّن يُؤْمِنُ بِهِۦ وَمِنْهُم مَّن لَّا يُؤْمِنُ بِهِۦ ۚ وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِٱلْمُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তাদের মধ্যে এমন কতক লোক আছে, যারা এর প্রতি ঈমান আনবে এবং এমন কতক লোকও আছে যে, তারা এর প্রতি ঈমান আনবেনা, আর তোমার রাব্ব অত্যাচারীদেরকে ভাল রূপে জানেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪০. মুশরিকদের কেউ কেউ তার মৃত্যুর পূর্বে অচিরেই এর উপর ঈমান আনবে। আর কেউ কেউ অহঙ্কার ও হঠকারিতা দেখিয়ে এর উপর মৃত্যু পর্যন্ত ঈমান আনবে না। হে রাসূল! আপনার প্রতিপালক কুফরির উপর অটল ব্যক্তিদের সম্পর্কে ভালোই জানেন। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে এ কুফরির প্রতিদান দিবেন।
41
وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّى عَمَلِى وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ ۖ أَنتُم بَرِيٓـُٔونَ مِمَّآ أَعْمَلُ وَأَنَا۠ بَرِىٓءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর (এতদসত্ত্বেও) যদি তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে থাকে তাহলে তুমি বলে দাওঃ আমার কর্মফল আমি পাব, আর তোমাদের কর্মফল তোমরা পাবে। তোমরা আমার কৃতকর্মের জন্য দায়ী নও, আর আমিও তোমাদের কর্মের জন্য দায়ী নই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪১. হে রাসূল! আপনার জাতি যদি আপনাকে মিথ্যুক মনে করে তাহলে আপনি তাদেরকে বলুন: আমি আমার আমলের সাওয়াব পাবো এবং এর ধাক্কাও সামলাবো। আর তোমরা নিজেদের আমলের সাওয়াব পাবে এবং এর শাস্তি বহন করবে। তোমরা আমার আমলের শাস্তি থেকে মুক্ত। আর আমিও তোমাদের কর্মকাÐের শাস্তি থেকে মুক্ত।
42
وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنتَ تُسْمِعُ ٱلصُّمَّ وَلَوْ كَانُوا۟ لَا يَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তাদের কতক এমন আছে যারা তোমার (কথার) প্রতি কান পেতে রাখে। কিন্তু কি তুমি বধিরদেরকে শোনাবে, যদি তাদের বোধশক্তি না থাকে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪২. হে রাসূল! মুশরিকদের কেউ কেউ আপনি কুর‘আন পড়লে সে তা অবশ্যই শুনে। তবে এ শুনার পর তারা তা গ্রহণ ও বিশ্বাস করে না। যার শ্রবণশক্তি বাস্তবেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে আপনি কি তাকে শুনাতে পারবেন?! তেমনিভাবে যারা সত্য শুনার ব্যাপারে বধিরতার পরিচয় দিয়ে তা বুঝার চেষ্টা করে না আপনি কখনো তাদেরকে হিদায়েত দিতে পারেন না।
43
وَمِنْهُم مَّن يَنظُرُ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنتَ تَهْدِى ٱلْعُمْىَ وَلَوْ كَانُوا۟ لَا يُبْصِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তাদের কতক এমনও আছে যারা তোমাকে দেখছে; তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাতে পারবে, যদি তাদের অর্ন্তদৃষ্টি না থাকে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৩. হে রাসূল! মুশরিকদের কেউ কেউ আপনার দিকে বাহ্য দৃষ্টিতে তাকায়; অন্তরের চোখ দিয়ে নয়। যাদের দৃষ্টি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে আপনি কি তাদেরকে কিছু দেখাতে পারবেন?! নিশ্চয়ই আপনি তা কখনো পারবেন না। তেমনিভাবে যার অন্তরের চোখ নেই তাকেও আপনি হিদায়েত দিতে পারেন না।
44
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظْلِمُ ٱلنَّاسَ شَيْـًٔا وَلَـٰكِنَّ ٱلنَّاسَ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন যুলম করেননা, বরং মানুষ নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৪. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি যুলুম করা থেকে একেবারেই পূত-পবিত্র। তিনি তাদের প্রতি এক অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। তবে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করে নিজেদের উপর যুলুম করছে। কারণ, তারা বাতিলের জন্য কট্টরতা, অহঙ্কারবশতঃ সত্যকে প্রত্যাখ্যান ও তার প্রতি গাদ্দারী দেখাচ্ছে।
45
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَأَن لَّمْ يَلْبَثُوٓا۟ إِلَّا سَاعَةً مِّنَ ٱلنَّهَارِ يَتَعَارَفُونَ بَيْنَهُمْ ۚ قَدْ خَسِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِلِقَآءِ ٱللَّهِ وَمَا كَانُوا۟ مُهْتَدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর (ঐ দিনটি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দাও) যে দিন তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে এইরূপ অবস্থায় একত্রিত করবেন যেন তারা পূর্ণ দিনের মুহুর্তকাল মাত্র অবস্থান করেছিল, এবং তারা পরস্পর পরস্পরকে চিনবে; বাস্তবিকই ক্ষতিগ্রস্ত হল ঐ সব লোক যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত হওয়াকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং তারা হিদায়াত প্রাপ্ত ছিলনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৫. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যখন মানুষদেরকে হিসাবের জন্য একত্রিত করবেন তখন এমন মনে হবে যে, যেন তারা দুনিয়া ও কবরের জীবনে এক দিনের সামান্য কিছু সময় অবস্থান করেছে। এর চেয়ে বেশি নয়। তারা প্রথমে একে অপরকে চিনবে। অতঃপর তারা কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখলে সেই কঠিন পরিস্থিতির দরুন তাদের পরিচিতিটুকুও শেষ হয়ে যাবে। যারা কিয়ামতের দিন তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তারা নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্ত। তারা দুনিয়াতে পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাসী ছিলো না। তা না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে বাঁচতে পারতো।
46
وَإِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ ٱلَّذِى نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ ٱللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا يَفْعَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি তাদের সাথে যে শাস্তির অঙ্গীকার করছি, যদি ওর সামান্য অংশও তোমাকে দেখিয়ে দিই, অথবা তোমাকে মৃত্যু দান করি, সর্বাবস্থায় তাদেরকে আমারই পানে আসতে হবে, আর আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মেরই খবর রাখেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৬. হে রাসূল! আমি যদি আপনাকে আপনার মৃত্যুর পূর্বেই তাদের সাথে ওয়াদাকৃত কিছু আযাব দেখিয়ে দেই অথবা এর পূর্বেই আপনাকে মৃত্যু দেই উভয় অবস্থায় কিয়ামতের দিন তাদেরকে অবশ্যই আমার নিকট ফিরে আসতে হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তো তাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে অবশ্যই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই লুক্কায়িত নয়। তিনি অচিরেই তাদের কর্মকাÐের প্রতিদান দিবেন।
47
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولٌ ۖ فَإِذَا جَآءَ رَسُولُهُمْ قُضِىَ بَيْنَهُم بِٱلْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
প্রত্যেক উম্মাতের জন্য রাসূল রয়েছে, যখন তাদের সেই রাসূল (বিচার দিবসে) এসে পড়বে, (তখন) তাদের মীমাংসা করা হবে ন্যায়ভাবে, আর তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৭. পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রত্যেকের নিকটই একজন রাসূল পাঠানো হয়েছে। অতঃপর যখন তিনি তাঁকে যা পৌঁছানোর আদেশ করা হয়েছে তা তাঁর উম্মতকে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং তারা তাঁকে এ ব্যাপারে মিথ্যুক বলেছে তখন তিনি তাঁর ও তাঁর উম্মতের মাঝে ইনসাফের ফায়সালা করেন। আল্লাহ তাঁকে নিজ দয়ায় মুক্তি দিয়েছেন এবং ওদেরকে নিজ ইনসাফে ধ্বংস করেছেন। তাদের আমলসমূহের প্রতিদানের ক্ষেত্রে তাদের প্রতি সামান্যটুকুও যুলুম করা হবে না।
48
وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا ٱلْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তারা বলেঃ (আমাদের) এই অঙ্গীকার কখন (সংঘটিত) হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৮. এ কাফিররা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ও গাদ্দারী করে বলেছে: তোমরা আমাদের সাথে যে আযাবের ওয়াদা করেছিলে তার সময় কখন হবে বলো যদি তোমরা নিজ দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো?!
49
قُل لَّآ أَمْلِكُ لِنَفْسِى ضَرًّا وَلَا نَفْعًا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ ۗ لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۚ إِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ فَلَا يَسْتَـْٔخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত আমি আমার নিজের জন্যও কোন উপকার বা ক্ষতির অধিকারী নই, প্রত্যেক উম্মাতের (আযাবের) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে পৌঁছে তখন তারা মুহুর্তকাল না পশ্চাদপদ হতে পারবে, আর না অগ্রসর হতে পারবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৯. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আমি নিজের কোন ক্ষতিরও মালিক নই। যার মাধ্যমে আমি তার ক্ষতি করবো অথবা ক্ষতিকে প্রতিহত করবো। না আমি কোন লাভের মালিক। যার মাধ্যমে আমি নিজের লাভ করবো। তাহলে আমি কীভাবে অন্যের কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারি? তবে আল্লাহ যা চাইবেন তাই হবে। ফলে আমি তাঁর গায়েবও কীভাবে জানবো? প্রত্যেক জাতির জন্যই যাদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংসের ওয়াদা করেছেন তাদের ধ্বংসের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। যখন তাদের ধ্বংসের সময় এসে যাবে তখন তা এতটুকুও দেরী করা হবে না, না একটু আগে করা হবে।
50
قُلْ أَرَءَيْتُمْ إِنْ أَتَىٰكُمْ عَذَابُهُۥ بَيَـٰتًا أَوْ نَهَارًا مَّاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ ٱلْمُجْرِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ বল তো, যদি তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব রাতে অথবা দিনে আসে তাহলে আযাবের মধ্যে এমন কোন্ জিনিস রয়েছে যা অপরাধীরা তাড়াতাড়ি চাচ্ছে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫০. হে রাসূল! আপনি এ দ্রæত আযাব কামনাকারী লোকদেরকে বলে দিন: যখন দিন বা রাতের কোন সময় আল্লাহর আযাব চলে আসবে তখন তোমরা বলো, তোমরা এ আযাবের কোনটি দ্রæত কামনা করছিলে?!
51
أَثُمَّ إِذَا مَا وَقَعَ ءَامَنتُم بِهِۦٓ ۚ ءَآلْـَٔـٰنَ وَقَدْ كُنتُم بِهِۦ تَسْتَعْجِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাহলে কি ওটা যখন এসেই পড়বে, তখন ওটা বিশ্বাস করবে? (বলা হবে) হ্যাঁ, এখন মেনে নিলে। অথচ তোমরা ওর জন্য তাড়াহুড়া করছিলে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫১. তোমরা কি তোমাদের সাথে ওয়াদাকৃত আযাব আসার পরই তা বিশ্বাস করবে, যখন করো ঈমান তার কোন ফায়েদায় আসবে না যদি সে ইতিপূর্বে ঈমান না এনে থাকে? তোমরা কি এখন বিশ্বাস করছো। অথচ তোমরাই ইতিপূর্বে এ আযাবের প্রতি মিথ্যারোপ করে তা দ্রæত কামনা করছিলে?!
52
ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ ذُوقُوا۟ عَذَابَ ٱلْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যালিমদেরকে বলা হবেঃ চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে থাক, তোমরাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল পাচ্ছ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫২. অতঃপর তাদেরকে আযাবে ঢুকানো এবং তা থেকে বের হয়ে আসা কামনা করার পর বলা হবে: তোমরা আখিরাতের স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করো। তোমরা যে কুফরি ও গুনাহসমূহ করছিলে তারই প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে। তা নয় কী?!
53
۞ وَيَسْتَنۢبِـُٔونَكَ أَحَقٌّ هُوَ ۖ قُلْ إِى وَرَبِّىٓ إِنَّهُۥ لَحَقٌّ ۖ وَمَآ أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, ওটা (শাস্তি) কি যথার্থ বিষয়? তুমি বলে দাওঃ হ্যাঁ, আমার রবের কসম! ওটা নিশ্চিত সত্য; আর তোমরা কিছুতেই আল্লাহকে অপারগ করতে পারবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৩. হে রাসূল! মুশরিকরা আপনার কাছ থেকে জানতে চাইবে যে, আমাদের সাথে যে আযাবের ওয়াদা করা হচ্ছে তা কি সত্য? আপনি তাদেরকে বলুন: হ্যাঁ। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তা সত্য। তোমরা কখনোই তা থেকে পার পাবে না।
54
وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِى ٱلْأَرْضِ لَٱفْتَدَتْ بِهِۦ ۗ وَأَسَرُّوا۟ ٱلنَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا۟ ٱلْعَذَابَ ۖ وَقُضِىَ بَيْنَهُم بِٱلْقِسْطِ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যদি প্রত্যেক মুশরিকের কাছে এই পরিমাণ (মাল) থাকে যে, তা সমগ্র পৃথিবীর সম পরিমাণ হয় তাহলে সে তা দান করেও নিজের প্রাণ রক্ষা করতে চাবে; এবং যখন তারা আযাব দেখতে পাবে তখন (নিজেদের) অনুশোচনা প্রকাশ করতে সক্ষম হবেনা, আর তাদের ফাইসালা করা হবে ন্যায়ভাবে এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৪. যদি আল্লাহর সাথে শিরককারী প্রত্যেকেই দুনিয়ার সকল মূল্যবান সম্পদের মালিক হতো তাহলে সে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার জন্য ফিদিয়া হিসেবে তার সবই বিলিয়ে দিতো। যদি ফিদিয়া দেয়ার কোন ব্যবস্থা থাকতো। মুশরিকরা কিয়ামতের দিন যখন আযাব দেখতে পাবে তখন তারা নিজেদের কুফরির লজ্জা ঢাকতে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা তখন তাদের মাঝে ইনসাফের ফায়সালা করবেন। তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না। বরং তখন শুধু তাদের আমলগুলোরই প্রতিদান দেয়া হবে।
55
أَلَآ إِنَّ لِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۗ أَلَآ إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সাবধান! আসমানসমূহে এবং যমীনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর; সাবধান! আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৫. কেবল আল্লাহর জন্যই আকাশ ও জমিনের সবকিছুর মালিকানা। কাফিরদেরকে শাস্তি দেয়ার আল্লাহর কৃত ওয়াদা অবশ্যম্ভাবী। তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তাদের অধিকাংশই তা জানে না। বরং তারা তা নিয়ে সন্দেহ করে।
56
هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান, আর তোমরা সবাই তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৬. আল্লাহ তা‘আলা মৃতের পুনরুত্থান করেন এবং জীবিতকে মৃত্যু দেন। কেবল তাঁর কাছেই কিয়ামতের দিন ফিরে যেতে হবে। অতঃপর তিনি তোমাদের কর্মসমূহের প্রতিদান দিবেন।
57
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى ٱلصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
(হে মানব জাতি!) তোমাদের কাছে তোমাদের রবের তরফ হতে এমন বিষয় সমাগত হয়েছে যা হচ্ছে নাসীহাত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী, আর মু’মিনদের জন্য ওটা পথ প্রদর্শক ও রাহমাত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৭. হে মানুষ! তোমাদের নিকট কুর‘আন এসেছে। তাতে রয়েছে তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা এবং আশা ও ভীতি প্রদর্শন। সেটি অন্তরে থাকা সকল প্রকারের সন্দেহ ও সংশয়ের চিকিৎসা এবং সত্য পথের দিশারী। তেমনিভাবে তাতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য রহমত। তারাই মূলতঃ এ থেকে লাভবান হবে।
58
قُلْ بِفَضْلِ ٱللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا۟ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ আল্লাহর এই দান ও রাহমাতের প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত; তা ওটা (পার্থিব সম্পদ) হতে বহু গুণে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৮. হে রাসূল! আপনি মানুষদেরকে বলে দিন: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে কুর‘আন তোমাদের নিকট নিয়ে এসেছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ মাত্র। তাই তোমরা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ তথা এ কুর‘আনের নাযিল হওয়ার ব্যাপারটিকে নিয়ে খুশি হও; অন্য কিছুকে নিয়ে নয়। বস্তুতঃ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনা জিনিস দুনিয়ার এ নশ্বর ধনসম্পদ সংগ্রহের চেয়ে অনেক উত্তম।
59
قُلْ أَرَءَيْتُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلَـٰلًا قُلْ ءَآللَّهُ أَذِنَ لَكُمْ ۖ أَمْ عَلَى ٱللَّهِ تَفْتَرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু রিয্ক পাঠিয়েছিলেন, অতঃপর তোমরা ওর কতক অংশ হারাম এবং কতক অংশ হালাল সাব্যস্ত করে নিলে; তুমি জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহ কি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন, না কি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৯. হে রাসূল! আপনি এ মুশরিকদেরকে বলে দিন: আল্লাহ তা‘আলা নিজ দয়ায় তোমাদের উপর যে রিযিক নাযিল করেছেন অতঃপর তোমরা তাতে নিজেদের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কিছু হালাল করেছো আবার কিছু হারাম। তোমরা কেন এমন করেছো তার ব্যাখ্যা দাও। আপনি তাদেরকে বলুন: আল্লাহ তা‘আলা কি তোমরা যা হালাল করেছো তা হালাল করার এবং তোমরা যা হারাম করেছো তা হারাম করার অনুমতি দিয়েছেন। না কি তোমরা তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা বানিয়ে বলো?!
60
وَمَا ظَنُّ ٱلَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى ٱلنَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَشْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তাদের কিয়ামাতের দিন সম্বন্ধে কি ধারণা? বাস্তবিক, মানুষের উপর আল্লাহর খুবই অনুগ্রহ রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ লোকই অকৃতজ্ঞ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬০. যারা তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা বানিয়ে বলছে কিয়ামতের দিন তাদের উপর কী পতিত হবে তারা কি তা ভেবে দেখেছে?! তারা কি মনে করছে যে, তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। না কখনোই না। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা মানুষের উপর দয়া করছেন তাদেরকে শুধরানোর সময় ও দ্রæত শাস্তি না দিয়ে। অথচ তাদের অধিকাংশই আল্লাহর নিয়ামতসমূহকে অস্বীকার করছে এবং সেগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করছে না।
61
وَمَا تَكُونُ فِى شَأْنٍ وَمَا تَتْلُوا۟ مِنْهُ مِن قُرْءَانٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ ۚ وَمَا يَعْزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا فِى ٱلسَّمَآءِ وَلَآ أَصْغَرَ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكْبَرَ إِلَّا فِى كِتَـٰبٍ مُّبِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তুমি যে অবস্থায়ই থাক না কেন, আর যে কোন অংশ হতে কুরআন পাঠ কর এবং তোমরা (অন্যান্য লোক) যে কাজই কর, আমার কাছে সব কিছুরই খবর থাকে, যখন তোমরা সেই কাজ করতে শুরু কর। কণা পরিমাণও কোন বস্তু তোমার রবের (জ্ঞানের) অগোচর নয় - না যমীনে, না আসমানে। আর তা হতে ক্ষুদ্রতর, কিংবা বৃহত্তর, সমস্তই সুস্পষ্ট কিতাবে (কুরআনে) লিপিবদ্ধ রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬১. হে রাসূল! আপনি যে অবস্থাতেই থাকেন না কেন এবং যতটুকু কুর‘আনই আপনি পড়েন না কেন উপরন্তু হে মু’মিনরা! তোমরা যতো কাজই করো না কেন তা সবই আমি দেখি ও জানি। তোমরা যখন সোৎসাহে কাজ শুরু করো তখনো আমি তা শুনি। বস্তুতঃ আকাশ ও জমিনে তোমার প্রতিপালকের জ্ঞান থেকে এক অণু পরিমাণও গোপন নয়। না এর চেয়ে ছোট না বড়ো। বরং তা সবই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। সে ছোট-বড় কোন কিছুই সংরক্ষণ না করে ছাড়েনি।
62
أَلَآ إِنَّ أَوْلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মনে রেখ, আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশংকা আছে, আর না তারা বিষন্ন হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬২. বস্তুতঃ আল্লাহর বন্ধুদের আগামীর কিয়ামতের ভয়াবহতা নিয়ে কোন ভয় নেই। না তারা দুনিয়ার কোন সুবিধা হারিয়ে দুঃখিত।
63
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَكَانُوا۟ يَتَّقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ঈমান এনেছে এবং (পাপ হতে) পরহেয করে থাকে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৩. এ বন্ধুরাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছিলো এবং তারাই আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করতো।
64
لَهُمُ ٱلْبُشْرَىٰ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ ۚ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَـٰتِ ٱللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও। আল্লাহর বাক্যসমূহে কোন পরিবর্তন হয়না; এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৪. তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আনন্দদায়ক সুসংবাদ তথা ভালো স্বপ্ন ও মানুষের প্রশংসা। তাদের জন্য আরো রয়েছে জান কবজের সময়, মৃত্যুর পর ও হাশরে ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে সুসংবাদ। আল্লাহর ওয়াদার কোন পরিবর্তন নেই। মূলতঃ এ প্রতিদান হলো মহা সফলতা। কারণ, তাতে রয়েছে উদ্দেশ্য হাসিল ও আশঙ্কিত বস্তু থেকে মুক্তি।
65
وَلَا يَحْزُنكَ قَوْلُهُمْ ۘ إِنَّ ٱلْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ۚ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তোমাকে যেন তাদের উক্তিগুলি বিষণ্ণ না করে। সকল ক্ষমতা এবং ইয্যাত আল্লাহরই জন্য; তিনি শোনেন, জানেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৫. হে রাসূল! ওরা যে আপনার ধর্মকে আঘাত দিচ্ছে এবং তার সমালোচনা করছে তাতে আপনি এতটুকুও চিন্তিত হবেন না। কারণ, সকল জয় ও বশে আনার ব্যাপার শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই। কোন কিছু তাঁকে অক্ষম করতে পারে না। তিনি তাদের সকল কথা শুনেন এবং সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
66
أَلَآ إِنَّ لِلَّهِ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ ۗ وَمَا يَتَّبِعُ ٱلَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ شُرَكَآءَ ۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মনে রেখ, যা কিছু আসমানসমূহে আছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, এই সমস্তই আল্লাহর। আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য শরীকদের ইবাদাত করে তারা কোন্ বস্তুর অনুসরণ করছে? তারা শুধু অবাস্তব খেয়ালের তাবেদারী করে চলছে এবং শুধু অনুমান প্রসূত কথা বলছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৬. নিশ্চয়ই আকাশ ও জমিনের সকল মালিকানা কেবল আল্লাহর জন্যই। মুশরিকরা যে আল্লাহ ছাড়া অন্য শরীকদের ইবাদাত করছে তারা মূলতঃ কার অনুসরণ করছে?! বস্তুতঃ তারা কেবল সন্দেহেরই অনুসরণ করছে। আসলেই তারা শরীকদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করে কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এসকল কথার অনেক ঊর্ধ্বে।
67
هُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيْلَ لِتَسْكُنُوا۟ فِيهِ وَٱلنَّهَارَ مُبْصِرًا ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি এমন যিনি তোমাদের জন্য রাত বানিয়েছেন, যেন তোমরা তাতে স্বস্তি লাভ কর। আর দিনকেও এভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তা হচ্ছে দেখাশোনার উপকরণ। ওতে (তাওহীদের) প্রমাণসমূহ রয়েছে তাদের জন্য যারা শোনে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৭. হে মানুষ! তিনিই এককভাবে তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা কর্ম ও ক্লান্তি থেকে কিছুটা হলেও আরাম পেতে পারো এবং তিনি দিনকে সৃষ্টি করেছেন আলোকিত করে যেন তোমরা নিজেদের জীবিকার জন্য যা লাভজনক তার পেছনে প্রচেষ্টা চালাতে পারো। নিশ্চয়ই যারা শিক্ষা ও সত্য গ্রহণের জন্য শুনে তাদের জন্য এতে রয়েছে প্রচুর সুস্পষ্ট প্রমাণ।
68
قَالُوا۟ ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَـٰنَهُۥ ۖ هُوَ ٱلْغَنِىُّ ۖ لَهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ إِنْ عِندَكُم مِّن سُلْطَـٰنٍۭ بِهَـٰذَآ ۚ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বলেঃ আল্লাহর সন্তান আছে, সুবহানাল্লাহ! তিনিতো কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁরই অধীনে রয়েছে যা কিছু আসমানসমূহে আছে এবং যা কিছু যমীনে আছে। তোমাদের কাছে এর (উক্ত দাবীর) কোন প্রমাণও নেই; আল্লাহ সম্বন্ধে কি তোমরা এমন কথা আরোপ করছো যা তোমাদের জানা নেই?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৮. মুশরিকদের একদল বলে: আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাদেরকে মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এমন কথা থেকে পবিত্র। কারণ, তিনি তাঁর সকল সৃষ্টিরই অমুখাপেক্ষী। আকাশ ও জমিনের সবকিছুর মালিকানা কেবল তাঁর জন্যই। হে মুশরিকরা! তোমাদের কাছে এ কথার কোন প্রমাণ নেই। তাহলে তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন মারাত্মক কথা বললে যার দলীলবিহীন মূলতত্ত¡ তোমরা জানো না?! কারণ, তোমরা তাঁর সাথে সন্তানকে সম্পৃক্ত করেছো।
69
قُلْ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে নিশ্চয়ই তারা সফলকাম হবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৯. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: যারা আল্লাহর সাথে সন্তানকে সম্পৃক্ত করে তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বানায় তারা কখনো তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে না। না তারা তাদের আশঙ্কিত বস্তু থেকে নাজাত পাবে।
70
مَتَـٰعٌ فِى ٱلدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيقُهُمُ ٱلْعَذَابَ ٱلشَّدِيدَ بِمَا كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এটা দুনিয়ার সামান্য আরাম-আয়েশ মাত্র। অতঃপর আমারই দিকে তাদের ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তাদেরকে তাদের কুফরীর কারণে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭০. ফলে তারা যেন দুনিয়ার নিয়ামত ও ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে ধোঁকায় না পড়ে যায়। কারণ, সামান্য অস্থায়ী বস্তু। কিয়ামতের দিন তাদেরকে অবশ্যই আমার নিকট ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তাদেরকে আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করার কারণে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাবো।
71
۞ وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ نُوحٍ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦ يَـٰقَوْمِ إِن كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُم مَّقَامِى وَتَذْكِيرِى بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ فَعَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُوٓا۟ أَمْرَكُمْ وَشُرَكَآءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ ٱقْضُوٓا۟ إِلَىَّ وَلَا تُنظِرُونِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তুমি তাদেরকে নূহের ইতিবৃত্ত পড়ে শোনাও, যখন সে নিজের কাওমকে বললঃ হে আমার কাওম! যদি তোমাদের কাছে দুর্বহ মনে হয় আমার অবস্থান এবং আল্লাহর আদেশাবলীর নাসীহাত করা, তাহলে আমারতো আল্লাহরই উপর ভরসা। সুতরাং তোমরা তোমাদের (কল্পিত) শরীকদেরকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্র মাযবূত করে নাও, অতঃপর তোমাদের সেই তদবীর (গোপন ষড়যন্ত্র) যেন তোমাদের দুশ্চিন্তার কারণ না হয়, তারপর আমার সাথে (যা করতে চাও) করে ফেল, আর আমাকে মোটেই অবকাশ দিওনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭১. হে রাসূল! আপনি এ অস্বীকারকারী মুশরিকদেরকে নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সংবাদ শুনিয়ে দিন। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমাদের মাঝে আমার উপস্থিতি তোমাদের নিকট বেশি বড় মনে হয় এবং আল্লাহর আয়াতকে স্মরণ করিয়ে দেয়া ও আমার উপদেশ তোমাদের নিকট খুব কঠিন মনে হয় আর তোমরা আমাকে হত্যা করার প্রতিজ্ঞা করো তাহলে আমি তোমাদের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করছি। অতএব, তোমরা নিজেদের সিদ্ধান্তকে চ‚ড়ান্ত করো আর আমাকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করো। উপরন্তু এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য তোমাদের মা’বূদদেরকে ডাকো। তোমাদের ষড়যন্ত্রটুকু যেন অস্পষ্ট ও গোপনীয় না হয়। আর আমাকে হত্যা করা প্রস্তুতিপর্ব শেষ হলে তোমাদের মনের আকুতিটুকু বাস্তবায়ন করো। আমাকে এতটুকুও সময় দিয়ো না।
72
فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُم مِّنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِىَ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যদি তোমরা পরোম্মুখই থাক তাহলে আমিতো তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাইনা, আমার পারিশ্রমিকতো শুধু আল্লাহরই যিম্মায় রয়েছে। আর আমাকে হুকুম করা হয়েছে, আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭২. তোমরা যদি আমার দা’ওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তোমরা তো জানোই আমি তোমাদের কাছ থেকে আমার প্রতিপালকের বাণী পৌঁছানোর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। আমার সাওয়াব কেবল আল্লাহর কাছেই। তোমরা আমার উপর ঈমান আনো বা কুফরি করো। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আদেশ করেছেন আমি যেন আনুগত্য ও নেক আমলের মাধ্যমে কেবল তাঁরই অনুগত হই।
73
فَكَذَّبُوهُ فَنَجَّيْنَـٰهُ وَمَن مَّعَهُۥ فِى ٱلْفُلْكِ وَجَعَلْنَـٰهُمْ خَلَـٰٓئِفَ وَأَغْرَقْنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُنذَرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে থাকে; অতএব আমি তাকে এবং যারা তার সাথে নৌকায় ছিল তাদেরকে নাজাত দিলাম ও তাদেরকে আবাদ করলাম, আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম। সুতরাং দেখ কি পরিণাম হয়েছিল তাদের যাদেরকে সাবধান করা হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৩. তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে মিথ্যুক বলেছে এবং তাঁকে বিশ্বাস করে নি। তাই আমি তাঁকে ও তাঁর সাথে থাকা মু’মিনদেরকে নৌকায় চড়িয়ে উদ্ধার করলাম এবং তাদেরকে পূর্ববর্তীদের অনুগামী বানালাম। এদিকে আমি নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর নিয়ে আসা দলীল ও নিদর্শনসমূহের অস্বীকারকারীদেরকে তুফান দিয়ে ধ্বংস করে দিলাম। হে রাসূল! আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, নূহ (আলাইহিস-সালাম) যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করার পরও তারা ঈমান আনে নি সেই সম্প্রদায়ের শেষ পরিণতি কেমন ছিলো?!
74
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنۢ بَعْدِهِۦ رُسُلًا إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَآءُوهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ بِهِۦ مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ نَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلْمُعْتَدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আবার আমি তার পরে অপর রাসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করলাম। তারা তাদের নিকট মু’জিযা’সমূহ নিয়ে এলো। এতদসত্ত্বেও তারা পূর্বে যা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল পরে তা মেনে নেয়ার ছিলনা; এভাবেই আল্লাহ কাফিরদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৪. নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর চলে যাওয়ার কিছু কাল পর আমি আবারো রাসূলদেরকে তাঁদের সম্প্রদায়ের নিকট পাঠালাম। রাসূলরা মূলতঃ দলীল ও নিদর্শনসমূহ নিয়েই তাঁদের উম্মতদের নিকট এসেছিলেন। কিন্তু রাসূলদেরকে অস্বীকার করার তাদের পূর্বের গোঁয়ার্তুমির দরুন তারা আর ঈমান আনার ইচ্ছা পোষণ করে নি। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরসমূহের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন। পূর্ববর্তী রাসূলগণের অনুসারীদের উপর আমি যেমন মোহর মেরেছি তেমনিভাবে আমি সকল যুগ ও অঞ্চলের কুফরির মাধ্যমে আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রমকারী কাফিরদের অন্তরেও মোহর মেরে দেবো।
75
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنۢ بَعْدِهِم مُّوسَىٰ وَهَـٰرُونَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَإِي۟هِۦ بِـَٔايَـٰتِنَا فَٱسْتَكْبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তাদের পর মূসা ও হারুনকে আমার মু’জিযা সহকারে ফির‘আউন ও তার প্রধানদের নিকট পাঠালাম, অতঃপর তারা অহংকার করল, আর সেই লোকগুলি ছিল পাপাচারীপরায়ণ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৫. এ রাসূলগণের প্রস্থানের কিছু কাল পর আমি আবার মূসা এবং তাঁর ভাই হারূন (আলাইহিমাস-সালাম) কে মিশরের রাষ্ট্রপতি ফির‘আউন এবং তাঁর বংশের বড়দের নিকট পাঠিয়েছি। আমি তাঁদেরকে তাঁদের সত্যতা বুঝায় এমন নিদর্শনসমূহ দিয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা ওদের আনীত বিধানের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে অহঙ্কার দেখিয়েছে। বস্তুতঃ তারা আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁর রাসূলদেরকে মিথ্যুক বলার দরুন একটি অপরাধী জাতি হিসেবেই পরিচিত ছিলো।
76
فَلَمَّا جَآءَهُمُ ٱلْحَقُّ مِنْ عِندِنَا قَالُوٓا۟ إِنَّ هَـٰذَا لَسِحْرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখন তাদের প্রতি আমার সন্নিধান হতে প্রমাণ পৌঁছল তখন তারা বলতে লাগল, নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট যাদু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৬. যখন ফির‘আউন ও তার বংশের বড়দের নিকট মূসা ও হারূন (আলাইহিমাস-সালাম) আনীত দ্বীন এসে গেলো তখন তারা মূসা (আলাইহিস-সালাম) আনীত বিধানকে সত্য বুঝায় এমন সকল নিদর্শনের ব্যাপারে বললো: এটি মূলতঃ সুস্পষ্ট যাদু মাত্র। তা কোনভাবেই সত্য নয়।
77
قَالَ مُوسَىٰٓ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَكُمْ ۖ أَسِحْرٌ هَـٰذَا وَلَا يُفْلِحُ ٱلسَّـٰحِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা বললঃ তোমরা কি এই যথার্থ প্রমাণ সম্পর্কে এমন কথা বলছ, যখন ওটা তোমাদের নিকট পৌঁছল? এটা কি যাদু? অথচ যাদুকররাতো সফলকাম হয়না!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৭. মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে নিন্দা করে বললেন: সত্য আসার পর তোমরা কি তাকে যাদু বলে আখ্যায়িত করলে?! না, তা কখনোই যাদু হতে পারে না। কারণ, আমি এ কথা নিশ্চিতভাবে জানি যে, যাদুকর কখনো সফল হতে পারে না। তাহলে তা আবার আমি কীভাবে করতে পারি?!
78
قَالُوٓا۟ أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ ءَابَآءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا ٱلْكِبْرِيَآءُ فِى ٱلْأَرْضِ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বলতে লাগলঃ তুমি কি আমাদের নিকট এ জন্য এসেছ যে, আমাদেরকে সরিয়ে দাও সেই তরীকা হতে, যাতে আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে পেয়েছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দু’জনের আধিপত্য স্থাপিত হয়ে যায়? আমরা তোমাদের দু’জনকে কখনও মানবনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৮. ফির‘আউনের সম্প্রদায় মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর উত্তরে বললো: তুমি কি আমাদেরকে নিজেদের বাপ-দাদার ধর্ম থেকে দূরে সরানো এবং তুমি ও তোমার ভাইয়ের জন্য ক্ষমতা চ‚ড়ান্ত করতে আমাদের নিকট এ জাতীয় যাদু নিয়ে এসেছো? হে মূসা ও হারূন! আমরা কখনোই এ কথা স্বীকার করবো না যে, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে আমাদের নিকট রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে।
79
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ٱئْتُونِى بِكُلِّ سَـٰحِرٍ عَلِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং ফির‘আউন বললঃ আমার কাছে সমস্ত সুদক্ষ যাদুকরদের উপস্থিত কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৯. ফির‘আউন তার সম্প্রদায়কে বললো: তোমরা সকল পরিপক্ক ও অভিজ্ঞ যাদুকরকে আমার কাছে নিয়ে এসো।
80
فَلَمَّا جَآءَ ٱلسَّحَرَةُ قَالَ لَهُم مُّوسَىٰٓ أَلْقُوا۟ مَآ أَنتُم مُّلْقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখন যাদুকররা এলো, তখন মূসা তাদেরকে বললঃ নিক্ষেপ কর যা কিছু তোমরা নিক্ষেপ করতে চাও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮০. যখন তারা ফির‘আউনের নিকট যাদুকরদেরকে নিয়ে আসলো তখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) নিজের বিজয়ে আস্থাশীল হয়ে তাদেরকে বললেন: হে যাদুকররা! তোমরা যাদু হিসেবে যা দেখানোর দেখাও।
81
فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟ قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ ٱلسِّحْرُ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ سَيُبْطِلُهُۥٓ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ ٱلْمُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন মূসা বললঃ যাদু এটাই, নিশ্চয়ই আল্লাহ এখনই এটাকে বানচাল করে দিবেন; (কেননা) আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কাজ সার্থক করেন না।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮১. যখন তারা নিজেদের কাছে থাকা যাদুর সবকিছু দেখানো শুরু করলো তখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: তোমরা যা দেখাচ্ছো তা মূলতঃ যাদু। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তোমাদের কর্মকাÐকে বাতিল ও ক্রিয়াহীন করে দিবেন। তোমরা নিজেদের যাদুর মাধ্যমে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। আর আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের আমলকে বিশুদ্ধ করেন না।
82
وَيُحِقُّ ٱللَّهُ ٱلْحَقَّ بِكَلِمَـٰتِهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُجْرِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আল্লাহ তাঁর বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন, যদিও পাপাচারীরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮২. আল্লাহ তা‘আলা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তিনি নিজের সুনির্ধারিত ও শরয়ী বাণী তথা দলীল ও প্রমাণাদির মাধ্যমে তাকে স্থায়িত্ব দেন। যদিও ফির‘আউনের বংশের অপরাধী কাফিররা তা অপছন্দ করে।
83
فَمَآ ءَامَنَ لِمُوسَىٰٓ إِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِّن قَوْمِهِۦ عَلَىٰ خَوْفٍ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَإِي۟هِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ ۚ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِى ٱلْأَرْضِ وَإِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلْمُسْرِفِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু মূসার প্রতি তার কওমের ক্ষুদ্র একটি দল ছাড়া কেউ ঈমান আনল না, এ ভয়ে যে, ফিরআউন ও তাদের পারিষদবর্গ তাদেরকে ফিতনায় ফেলবে। আর নিশ্চয় ফির‘আউন ছিল যমীনে প্রতাপশালী এবং নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৩. ফির‘আউনের জাতি তাদের রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলো। ফলে মূসা (আলাইহিস-সালাম) যে প্রকাশ্য দলীল ও সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসলেন তা তাঁর বংশধর কিছু বনী ইসরাঈলের যুবকরাই বিশ্বাস করলো। তারা এ কথার ভয় পাচ্ছিলো যে, তাদের ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে গেলে ফির‘আউন ও তার বংশের বড়রা তাদেরকে শাস্তি দিয়ে ঈমান থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে। বস্তুতঃ ফির‘আউন মিশর ও তার অধিবাসীদের উপর খুব প্রতাপশালী অহঙ্কারী ছিলো। নিশ্চয়ই সে কুফরি এবং বনী ইসরাঈলকে হত্যা ও শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে বিশেষ সীমাতিক্রমকারী ছিলো।
84
وَقَالَ مُوسَىٰ يَـٰقَوْمِ إِن كُنتُمْ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوٓا۟ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর মূসা বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান রাখ তাহলে তাঁরই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুসলিম হও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৪. মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যদি সত্যিকারার্থে আল্লাহর উপর ঈমান এনে থাকো তাহলে একমাত্র আল্লাহর উপরই তোমাদেরকে ভরসা করতে হবে যদি তোমরা একান্ত তাঁরই অনুগত হয়ে থাকো। বস্তুতঃ আল্লাহর উপর ভরসা তোমাদের অকল্যাণকে প্রতিরোধ করবে এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
85
فَقَالُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে এই যালিমদের লক্ষ্যস্থল বানাবেননা ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৫. তারা মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর উপদেশের উত্তরে বললো, আমরা একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের উপর যালিমদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলবেন না যাতে তারা লোভ দেখিয়ে এবং হত্যা ও শাস্তির মাধ্যমে আমাদেরকে নিজেদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ পায়।
86
وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে এই কাফিরদের (কবল) হতে মুক্তি দিন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৬. হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে নিজ রহমতে ফির‘আউনের কাফির সম্প্রদায়ের হাত থেকে রক্ষা করুন। কারণ, তারা আমাদেরকে তাদের গোলাম বানিয়ে নিয়েছে এবং আমাদেরকে হত্যা ও শাস্তির মাধ্যমে কষ্ট দিয়েছে।
87
وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّءَا لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَٱجْعَلُوا۟ بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি অহী পাঠালামঃ তোমরা উভয়ে তোমাদের এই লোকদের জন্য মিসরে বাসস্থান বহাল রাখ, আর (সালাতের সময়) তোমরা সবাই নিজেদের সেই গৃহগুলিকে সালাত আদায় করার স্থান রূপে গণ্য কর এবং সালাত কায়েম কর, আর মু’মিনদেরকে শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৭. আমি মূসা ও তাঁর ভাই হারূন (আলাইহিমাস-সালাম) এর নিকট এ মর্মে ওহী পাঠিয়েছি যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিজেদের সম্প্রদায়ের জন্য কিছু ঘর চয়ন ও তৈরি করো এবং তোমাদের ঘরগুলোকে কিবলা তথা বাইতুল-মাকদিসমুখী করো। আর পরিপূর্ণরূপে সালাত আদায় করো। হে মূসা! তুমি মু’মিনদেরকে আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা, শত্রæদেরকে ধ্বংস এবং তাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানানোর সুসংবাদ দাও।
88
وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَآ إِنَّكَ ءَاتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُۥ زِينَةً وَأَمْوَٰلًا فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا۟ عَن سَبِيلِكَ ۖ رَبَّنَا ٱطْمِسْ عَلَىٰٓ أَمْوَٰلِهِمْ وَٱشْدُدْ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا۟ حَتَّىٰ يَرَوُا۟ ٱلْعَذَابَ ٱلْأَلِيمَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর মূসা বললঃ হে আমাদের রাব্ব! আপনি ফির‘আউন ও তার প্রধানবর্গকে দান করেছেন জাঁকজমকের সামগ্রী এবং বিভিন্ন রকমের জীবনোপকরণ। হে আমাদের রাব্ব! এর ফলে তারা আপনার পথ হতে (মানব মন্ডলীকে) বিভ্রান্ত করছে। হে আমাদের রাব্ব! তাদের সম্পদগুলিকে নিশ্চিহ্ন করে দিন এবং তাদের অন্তরসমূহকে কঠিন করুন যাতে তারা ঈমান আনতে না পারে ঐ পর্যন্ত যতক্ষণ তারা যন্ত্রণাদায়ক আযাবকে প্রত্যক্ষ করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৮. মূসা (আলাইহিস-সালাম) বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের সম্মানীদেরকে দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রচুর সৌন্দর্য দিয়েছেন এবং তাদেরকে এ দুনিয়ার জীবনে বহু সম্পদও দিয়েছেন। অথচ তারা আপনার দেয়া নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করে নি। বরং তারা মানুষদেরকে আপনার পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য এগুলোর সহযোগিতা নিয়েছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাদের সম্পদগুলোকে দুনিয়ার পিঠ থেকে মুছে দিন এবং সেগুলোর বরকত উঠিয়ে নিন। উপরন্তু তাদের অন্তরগুলোকে আরো কঠিন বানিয়ে দিন। যাতে তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখা পর্যন্ত ঈমান না আনে। যখন তাদের ঈমান কোন উপকারে আসবে না।
89
قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا فَٱسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَآنِّ سَبِيلَ ٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তোমাদের উভয়ের দু‘আ কবূল করা হল। অতএব তোমরা দৃঢ় থেক এবং তাদের পথ অনুসরণ করনা যাদের জ্ঞান নেই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৯. আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে মূসা ও হারূন! আমি ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের সম্মানী লোকদের ব্যাপারে তোমাদের বদদু‘আ কবুল করা হয়েছে। তাই তোমরা নিজেদের ধর্মের উপর অটল থাকো। উপরন্তু যে মূর্খরা সত্যের পথ সম্পর্কে জানে না তাদের পথের অনুসরণ করতে গিয়ে এ পথ থেকে সরে যেয়ো না।
90
۞ وَجَـٰوَزْنَا بِبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱلْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُۥ بَغْيًا وَعَدْوًا ۖ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَدْرَكَهُ ٱلْغَرَقُ قَالَ ءَامَنتُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا ٱلَّذِىٓ ءَامَنَتْ بِهِۦ بَنُوٓا۟ إِسْرَٰٓءِيلَ وَأَنَا۠ مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করে দিলাম, অতঃপর ফির‘আউন তার সৈন্যদলসহ তাদের পশ্চাদানুসরণ করল যুলম ও নির্যাতনের উদ্দেশে; এমনকি যখন সে নিমজ্জিত হতে লাগল তখন বলতে লাগলঃ আমি ঈমান এনেছি বানী ইসরাঈল যাঁর উপর ঈমান এনেছে, তিনি ছাড়া অন্য মা‘বূদ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯০. আমি বনী ইসরাঈলের জন্য সাগর চিরে তা পাড়ি দেয়া সহজ করে দিয়েছি। ফলে তারা নিরাপদভাবে তা অতিক্রম করে। এদিকে ফির‘আউন ও তার সেনাবাহিনী যুলুম ও অত্যাচারবশতঃ তাদের পিছু নিয়েছে। যখন সাগর তার উপর মিশে গেলো এবং সে ডুবে গেলো তখন সে মুক্তি থেকে নিরাশ হয়ে বললো, আমি এ ব্যাপারে ঈমান এনেছি যে, বনী ইসরাঈলরা যাঁর উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। আর আমি আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর একান্ত বাধ্যগত।
91
ءَآلْـَٔـٰنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ ٱلْمُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এখন ঈমান আনছ? অথচ পূর্ব (মুহুর্ত) পর্যন্ত তুমি নাফরমানী করছিলে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯১. তুমি জীবন থেকে নিরাশ হয়ে এখন ঈমান আনছো?! অথচ হে ফির‘আউন! তুমি আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বে আল্লাহর সাথে কুফরি এবং তাঁর পথে বাধা সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাঁর অবাধ্য হয়েছিলে। আর তুমি নিজেই পথভ্রষ্ট হয়ে এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করে ফাসাদ সৃষ্টি করেছিলে।
92
فَٱلْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ ءَايَةً ۚ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلنَّاسِ عَنْ ءَايَـٰتِنَا لَغَـٰفِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতএব আমি আজ তোমার লাশকে উদ্ধার করব, যেন তুমি তোমার পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপকরণ হয়ে থাক; আর প্রকৃত পক্ষে অনেক লোক আমার উপদেশাবলী হতে উদাসীন রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯২. তাই হে ফির‘আউন! আজ আমি তোমাকে সাগর থেকে বের করে এনে জমিনের উঁচু জায়গায় রাখবো। যাতে তোমার পরবর্তী লোকেরা তোমাকে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বস্তুতঃ অধিকাংশ মানুষই আমার কুদরতের দলীল ও প্রমাণাদি থেকে গাফিল। তারা সেগুলোকে নিয়ে চিন্তা করে না।
93
وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ مُبَوَّأَ صِدْقٍ وَرَزَقْنَـٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَـٰتِ فَمَا ٱخْتَلَفُوا۟ حَتَّىٰ جَآءَهُمُ ٱلْعِلْمُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِى بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ فِيمَا كَانُوا۟ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি বানী ইসরাঈলকে থাকার জন্য অতি উত্তম বাসস্থান প্রদান করলাম, আর আমি তাদেরকে আহার করার জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করলাম, তারা মতভেদ করেনি ঐ পর্যন্ত যতক্ষণ তাদের নিকট (আহকামের) জ্ঞান পৌঁছল। নিঃসন্দেহে তোমার রাব্ব কিয়ামাত দিবসে তাদের মধ্যে সেই সব বিষয়ের মীমাংসা করবেন, যাতে তারা মতভেদ করছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৩. আমি বনী ইসরাঈলকে বরকতময় শাম এলাকার পছন্দনীয় জায়গা ও প্রশংসনীয় অবস্থানে উন্নীত করেছি। আর তাদেরকে পবিত্র হালাল রিযিক দিয়েছি। অতঃপর তারা কুর‘আন আসা পর্যন্ত নিজেদের ধর্মকে নিয়ে কোন মতভেদ করে নি। যা তাওরাতে পঠিত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর গুণাবলীর সত্যায়নকারী। তবে যখন তারা এটিকে অস্বীকার করেছে তখন তাদের এলাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন তাদের দ্ব›দ্বপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা করবেন। অতঃপর তিনি তাদের মধ্যকার সত্য ও বাতিলপন্থীকে তাদের উপযুক্ত প্রতিদান দিবেন।
94
فَإِن كُنتَ فِى شَكٍّ مِّمَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْـَٔلِ ٱلَّذِينَ يَقْرَءُونَ ٱلْكِتَـٰبَ مِن قَبْلِكَ ۚ لَقَدْ جَآءَكَ ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلْمُمْتَرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর (হে নাবী) যদি তুমি এ (কিতাব) সম্পর্কে সন্দিহান হও, যা আমি তোমার নিকট পাঠিয়েছি, তাহলে তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ, যারা তোমার পূর্বেকার কিতাবসমূহ পাঠ করে। নিঃসন্দেহে তোমার নিকট এসেছে তোমার রবের পক্ষ হতে সত্য কিতাব, সুতরাং তুমি কখনই সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৪. হে রাসূল! আপনি যদি আপনার উপর নাযিলকৃত কুর‘আনের মূলতত্ত¡ নিয়ে সন্দেহ ও অস্থিরতায় ভোগেন তাহলে আপনি তাওরাত পড়া মু’মিন ইহুদি এবং ইঞ্জীল পড়া মু’মিন খ্রিস্টানদেরকে প্রশ্ন করুন। তারা অচিরেই আপনাকে এ সংবাদ দিবে যে, নিশ্চয়ই যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে তা সত্য। কারণ, তারা নিজেদের কিতাবে এ সম্পর্কীয় বর্ণনা পায়। নিশ্চয়ই আপনার নিকট আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য এসেছে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব, আপনি এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ করবেন না।
95
وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ فَتَكُونَ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর ঐ সব লোকেরও অন্তর্ভুক্ত হয়োনা যারা আল্লাহর আয়াতগুলিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যেন তুমি ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত না হও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৫. আপনি ওদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না যারা আল্লাহর দলীল ও প্রমাণাদিকে অস্বীকার করে। ফলে আপনি সেই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন যারা কুফরির দরুন নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সকল সতর্কতা সন্দেহ ও মিথ্যারোপের ভয়ানকতা বর্ণনার জন্য। নতুবা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এ জাতীয় কিছু বের হওয়া থেকে তিনি অবশ্যই পবিত্র।
96
إِنَّ ٱلَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিঃসন্দেহে যাদের সম্বন্ধে তোমার রবের বাক্য সাব্যস্ত হয়েছে, তারা কখনও ঈমান আনবেনা ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৬. যাদের গোঁয়ার্তুমির দরুন তাদের ব্যাপারে আল্লাহর এ ফায়সালা চ‚ড়ান্ত হয়েছে যে, তারা কুফরির উপর নিশ্চিত মারা যাবে তারা আর কখনোই ঈমান আনবে না।
97
وَلَوْ جَآءَتْهُمْ كُلُّ ءَايَةٍ حَتَّىٰ يَرَوُا۟ ٱلْعَذَابَ ٱلْأَلِيمَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যদিও তাদের নিকট সমস্ত প্রমাণ পৌঁছে যায়, যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৭. যদিও তাদের নিকট শরীয়ত ও দুনিয়ার সকল নিদর্শন চলে আসে। যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবলোকন করবে। তখন তারা ঈমান আনবে ঠিকই কিন্তু সেই ঈমান আর তাদের কোন উপকারে আসবে না।
98
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ ءَامَنَتْ فَنَفَعَهَآ إِيمَـٰنُهَآ إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ لَمَّآ ءَامَنُوا۟ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ ٱلْخِزْىِ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَمَتَّعْنَـٰهُمْ إِلَىٰ حِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং এমন কোন জনপদই ঈমান আনেনি যে, তাদের ঈমান আনা উপকারী হয়েছে, ইউনুসের কাওম ছাড়া। যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমি তাদের থেকে পার্থিব জীবনের অপমানজনক শাস্তি বিদূরিত করলাম এবং তাদেরকে সুখ স্বাচ্ছন্দে থাকতে দিলাম এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৮. এমন ঘটেনি যে, যে জনপদগুলোর নিকট আমি রাসূল পাঠিয়েছি সেগুলোর কোন একটি শাস্তি দেখার পূর্বে গ্রহণযোগ্য ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমান শাস্তি দেখার পূর্বে হওয়ার দরুন তাদের উপকারে এসেছে কেবল ইউনুস (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় ছাড়া। যখন তারা সত্যিকারার্থে ঈমান এনেছে তখন আমি তাদের উপর থেকে দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনা ও অপমানমূলক শাস্তিটুকু উঠিয়ে নিয়েছি এবং তাদেরকে তাদের বয়স শেষ হওয়া পর্যন্ত জীবন উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছি।
99
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَـَٔامَنَ مَن فِى ٱلْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ ٱلنَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا۟ مُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যদি তোমার রাব্ব ইচ্ছা করতেন তাহলে বিশ্বের সকল লোকই ঈমান আনত। তাহলে তুমি কি মানুষের উপর যবরদস্তি করতে পার, যাতে তারা ঈমান আনেই?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৯. হে রাসূল! আপনার প্রতিপালক বিশ্বের সবার ঈমান আনা চাইলে সবাই নিশ্চিত ঈমান আনতো। কিন্তু তিনি তা চান নি কোন এক হিকমতের দরুন। বস্তুতঃ তিনি যাকে চান তাঁর ইনসাফের ভিত্তিতেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন। আর যাকে চান তাঁর অনুগ্রহের ভিত্তিতেই হিদায়েত দিয়ে থাকেন। ফলে আপনি মানুষকে ঈমান আনতে বাধ্য করতে পারেন না। কারণ, তাদেরকে ঈমান আনার তাওফীক দেয়া কেবল আল্লাহরই হাতে।
100
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَيَجْعَلُ ٱلرِّجْسَ عَلَى ٱلَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অথচ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারও ঈমান আনা সম্ভব নয়; আর আল্লাহ নির্বোধ লোকদের উপর (কুফরীর) অপবিত্রতা স্থাপন করে দেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০০. আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ নিজে নিজেই ঈমান আনতে পারে না। তাই আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন ঈমানই বাস্তবায়িত হয় না। ফলে আপনি যেন তাদের ব্যাপারে আপসোস করে ধ্বংস না হয়ে যান। যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও প্রমাণাদি বুঝতে চায় না তিনি তাদের উপর তাঁর শাস্তি ও লাঞ্ছনা অবধারিত করেন।
101
قُلِ ٱنظُرُوا۟ مَاذَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَمَا تُغْنِى ٱلْـَٔايَـٰتُ وَٱلنُّذُرُ عَن قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বলে দাওঃ তোমরা লক্ষ্য কর, যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে ও যমীনে; আর যারা ঈমান আনেনা, প্রমাণাদী ও ভয় প্রদর্শন তাদের কোন উপকার সাধন করতে পারেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০১. হে রাসূল! যে মুশরিকরা আপনার নিকট নিদর্শনাবলী চায় আপনি তাদেরকে বলুন, আল্লাহর ক্ষমতা ও একত্ববাদ বুঝায় আকাশ ও জমিনের এমন নিদর্শনাবলী নিয়ে তোমরা একটু চিন্তা করো। কুফরির উপর গোঁয়ার্তুমির দরুন যে জাতির ঈমান আনার কোন প্রস্তুতিই নেই। রাসূল, প্রমাণাদি ও নিদর্শনাবলী নাযিল করায় তাদের কোন লাভ নেই।
102
فَهَلْ يَنتَظِرُونَ إِلَّا مِثْلَ أَيَّامِ ٱلَّذِينَ خَلَوْا۟ مِن قَبْلِهِمْ ۚ قُلْ فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতএব তারা শুধু ঐ লোকদের অনুরূপ ঘটনাবলীর প্রতীক্ষা করছে যারা তাদের পূর্বে গত হয়েছে। তুমি বলে দাওঃ আচ্ছা তাহলে তোমরা ওর প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষারতদের মধ্যে রইলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০২. আল্লাহ তা‘আলা যে ঘটনাবলী পূর্ববর্তী মিথ্যারোপকারী উম্মতদের সাথে ঘটিয়েছেন এ মিথ্যারোপকারীরাও কি সে জাতীয় কোন ঘটনার অপেক্ষা করছে?! হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: তোমরা আল্লাহর শাস্তির অপেক্ষা করো। আমি তোমাদের সাথে আমার প্রতিপালকের ওয়াদার অপেক্ষা করছি।
103
ثُمَّ نُنَجِّى رُسُلَنَا وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ۚ كَذَٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنجِ ٱلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
শেষ পর্যন্ত আমি স্বীয় রাসূলদেরকে এবং মু’মিনদেরকে নাজাত দিলাম, এ রূপেই আমি মু’মিনদেরকে নাজাত দিয়ে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৩. অতঃপর আমি তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবো এবং আমার রাসূলগণ ও তাঁদের সাথের মু’মিনদেরকে তা থেকে নিষ্কৃতি দেবো। ফলে তাদের নিকট তা পৌঁছুবে না যা তাদের জাতির নিকট পৌঁছেছে। যেমনিভাবে আমি রাসূলগণ ও তাঁদের মু’মিন সাথীদেরকে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছি তেমনিভাবে আমি আল্লাহর রাসূল ও তাঁর সাথের মু’মিনদেরকেও সত্যিকারার্থেই নিষ্কৃতি দেবো যা আমার কর্তব্যও বটে।
104
قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِن كُنتُمْ فِى شَكٍّ مِّن دِينِى فَلَآ أَعْبُدُ ٱلَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنْ أَعْبُدُ ٱللَّهَ ٱلَّذِى يَتَوَفَّىٰكُمْ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বলে দাওঃ হে লোকসকল! যদি তোমরা আমার দীন সম্বন্ধে সন্দিহান হও তাহলে আমি সেই মা‘বূদদের ইবাদাত করিনা, আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যাদের ইবাদাত কর; কিন্তু আমি সেই আল্লাহর ইবাদাত করি যিনি তোমাদের তোমাদের মৃত্যু ঘটান, আর আমাকে এই আদেশ করা হয়েছে যে, আমি যেন ঈমান আনয়নকারীদের দলভুক্ত থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৪. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে মানুষ! আমি যে তাওহীদের ধর্মের দিকে তোমাদেরকে ডাকছি তাতে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ হয় তাহলে আমি কিন্তু তোমাদের ধর্মের অসত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত। তাই আমি সেটির অনুসরণ করবো না। তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করছো আমি কিন্তু তাদের ইবাদাত করবো না। বরং আমি কেবল আল্লাহরই ইবাদাত করবো যিনি তোমাদেরকে মৃত্যু দিয়ে থাকেন। তিনি আমাকে আদেশ করেছেন আমি যেন খাঁটি মু’মিন হয়ে যাই।
105
وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর এটাও যে, নিজকে নিজে এই ধর্মের প্রতি এভাবে নিবিষ্ট করে রাখবে যে, অন্যান্য সকল তরীকা হতে পৃথক হয়ে যাও, আর কখনও মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৫. তেমনিভাবে তিনি আমাকে সকল ধর্ম থেকে বিমুখ হয়ে কেবল সত্য ধর্মের উপর অটল ও অবিচল থাকতে আদেশ করেছেন। আর তিনি আমাকে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হতে নিষেধ করেছেন।
106
وَلَا تَدْعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ۖ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুর ইবাদাত করনা যা না তোমার কোন উপকার করতে পারে, আর না কোন ক্ষতি করতে পারে। বস্তুতঃ যদি এরূপ কর তাহলে তুমি এমতাবস্থায় যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৬. হে রাসূল! আপনি আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন মূর্তি, আকৃতি ইত্যাদিকে ডাকবেন না যে লাভ ও ক্ষতি কোন কিছুরই মালিক নয়। যাতে আপনার কোন লাভ ও ক্ষতি করতে পারে। আপনি যদি সেগুলোর ইবাদাত করেন তাহলে আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যারা আল্লাহ ও তাদের নিজেদের অধিকারের উপর অত্যাচার চালিয়েছে।
107
وَإِن يَمْسَسْكَ ٱللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهِۦ ۚ يُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۚ وَهُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন তাহলে তিনি ছাড়া কেহ তা মোচনকারী নেই, আর যদি তিনি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ ও শান্তি পৌঁছাতে চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহের কোন অপসারণকারী নেই; তিনি স্বীয় অনুগ্রহ নিজের বান্দাদের মধ্য হতে যাকে চান দান করেন; এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৭. হে রাসূল! আল্লাহ যদি আপনাকে কোন বিপদে ফেলে দেন আর আপনি তা নিজের থেকে সরাতে চান তিনি ছাড়া আর কেউ তা সরাতে পারবে না। তেমনিভাবে তিনি যদি আপনাকে সচ্ছলতা দিতে চান তাহলে কেউই তাঁর অনুগ্রহকে বাধা দিতে পারবে না। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান অনুগ্রহ করবেন। তাঁকে বাধ্য করার কেউ নেই। তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
108
قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدْ جَآءَكُمُ ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَنِ ٱهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِى لِنَفْسِهِۦ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۖ وَمَآ أَنَا۠ عَلَيْكُم بِوَكِيلٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বলঃ হে লোক সকল! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ হতে সত্য (ধর্ম) এসেছে, অতএব যে ব্যক্তি সঠিক পথে আসবে, বস্তুতঃ সে নিজের জন্যই পথে আসবে; আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট থাকবে তার পথভ্রষ্টতা তারই উপরে বর্তাবে, আর আমাকে (রাসূলকে) তোমাদের উপর দায়িত্বশীল করা হয়নি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৮. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে মানুষ! তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কুর‘আন নাযিল হয়েছে। যে ব্যক্তির তার উপর ঈমান এনে তা কর্তৃক হিদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে তার লাভ তারই উপর বর্তাবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের আনুগত্যের অমুখাপেক্ষী। আর যে পথভ্রষ্ট হয়েছে তার ভ্রষ্টতার কুফল একা তাকেই ভোগ করতে হবে। কারণ, বান্দাদের পাপ আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর আমি তোমাদের কোন সংরক্ষক নই। যার ফলে আমি তোমাদের আমলগুলো সংরক্ষণ করবো এবং তার হিসাব নেবো।
109
وَٱتَّبِعْ مَا يُوحَىٰٓ إِلَيْكَ وَٱصْبِرْ حَتَّىٰ يَحْكُمَ ٱللَّهُ ۚ وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَـٰكِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তুমি তোমার প্রতি প্রেরিত অহীর অনুসরণ কর, আর ধৈর্য ধারণ কর এই পর্যন্ত যে, আল্লাহ মীমাংসা করে দেন, এবং তিনিই উত্তম মীমাংসাকারী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৯. হে রাসূল! আপনার নিকট আপনার প্রতিপালক যে ওহী পাঠান আপনি তারই অনুসরণ ও তার উপর আমল করুন। আর আপনার বংশের বিরোধী লোকদের দেয়া কষ্ট এবং আপনাকে যা প্রচারের আদেশ করা হয়েছে তা প্রচার করার ক্ষেত্রে আপনি ধৈর্য ধরুন এবং এভাবেই আপনি চলতে থাকুন যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে তাঁর ফায়সালা বাস্তবায়িত করেন তথা দুনিয়াতে আপনাকে তাদের উপর বিজয়ী করেন এবং পরকালে তাদেরকে শাস্তি দেন যদি তারা কুফরির উপর মৃত্যু বরণ করে।