মারইয়াম

مريم

সূরা 19 মক্কী 98 আয়াত

بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় মেহেরবান।

1
كٓهيعٓصٓ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কাফ্ হা ইয়া ‘আঈন সাদ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১. কাফ-হা-ইয়া-আইন-সাদ। সূরা বাকারার শুরুতে এ জাতীয় অক্ষর সমষ্টিকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
2
ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَهُۥ زَكَرِيَّآ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এটা তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ, তাঁর দাস যাকারিয়ার প্রতি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২. এটি মূলতঃ আল্লাহর বান্দা যাকারিয়া (আলাইহিস-সালাম) এর সাথে তাঁর প্রতিপালকের রহমতের বর্ণনা। শিক্ষা গ্রহণের জন্য আমি আপনার নিকট তা বর্ণনা করছি।
3
إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُۥ نِدَآءً خَفِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন সে তার রাব্বকে আহবান করেছিল নিভৃতে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩. তিনি তাঁর প্রতিপালককে গোপনভাবে ডেকেছেন। যাতে তা বেশি গ্রহণীয় হয়।
4
قَالَ رَبِّ إِنِّى وَهَنَ ٱلْعَظْمُ مِنِّى وَٱشْتَعَلَ ٱلرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়েছে; হে আমার রাব্ব! আপনাকে আহবান করে আমি কখনও ব্যর্থকাম হইনি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪. তিনি বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে এবং আমার মাথার চুল বেশিরভাগ পেকে গেছে। আর আমি কখনো আপনার নিকট দু‘আ করে নিষ্ফল হইনি। বরং যখনই আমি আপনার নিকট দু‘আ করেছি আপনি আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
5
وَإِنِّى خِفْتُ ٱلْمَوَٰلِىَ مِن وَرَآءِى وَكَانَتِ ٱمْرَأَتِى عَاقِرًا فَهَبْ لِى مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি আশংকা করি আমার পর আমার স্বগোত্ররা দীনকে ধ্বংস করে দিবে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং আপনি আপনার তরফ হতে আমাকে দান করুন উত্তরাধিকারী –
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫. আমি ভয় পাচ্ছি যে, আমার মৃত্যুর পর আমার আত্মীয়-স্বজনরা দুনিয়াদারীতে মগ্ন থাকার দরুন ধর্মের দাবিটুকু আদায় করবে না। অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; তার কোন বাচ্চা হবে না। তাই আপনি আমাকে আপনার নিজ পক্ষ থেকে একটি সাহায্যকারী সন্তান দিন।
6
يَرِثُنِى وَيَرِثُ مِنْ ءَالِ يَعْقُوبَ ۖ وَٱجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং উত্তরাধিকারীত্ব পাবে ইয়াকূবের বংশের এবং হে আমার রাব্ব! তাকে করুন সন্তোষভাজন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬. যে আমার ও ইয়াকুব (আলাইহিস-সালাম) এর নবুওয়াতের উত্তরাধিকার পাবে। হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাকে ধর্ম, চরিত্র ও জ্ঞানে একজন সন্তোষজনক ব্যক্তি বানিয়ে দিন।
7
يَـٰزَكَرِيَّآ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَـٰمٍ ٱسْمُهُۥ يَحْيَىٰ لَمْ نَجْعَل لَّهُۥ مِن قَبْلُ سَمِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি বললেনঃ হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি - তার নাম হবে ইয়াহইয়া। এই নামে আমি পূর্বে কারও নামকরণ করিনি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবুল করলেন এবং তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন: হে যাকারিয়া! আমি আপনাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছি যে, আমি আপনার দু‘আ কবুল করেছি এবং আপনাকে এমন এক ছেলে দিয়েছি যার নাম হবে ইয়াহয়া। আমি ইতিপূর্বে এ নামে আর অন্য কারো নাম রাখিনি।
8
قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى غُلَـٰمٌ وَكَانَتِ ٱمْرَأَتِى عَاقِرًا وَقَدْ بَلَغْتُ مِنَ ٱلْكِبَرِ عِتِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ হে আমার রাব্ব! কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং আমি বার্ধক্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮. যাকারিয়া (আলাইহিস-সালাম) আল্লাহর ক্ষমতায় আশ্চর্য হয়ে বললেন: আমার কীভাবে সন্তান হবে; অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; তার কোন সন্তান হয় না। আর আমি বৃদ্ধ হয়ে শেষ বয়সে পৌঁছে গিয়েছি এবং আমার হাড়গুলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে?!
9
قَالَ كَذَٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَىَّ هَيِّنٌ وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِن قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْـًٔا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি বললেনঃ এরূপই হবে। তোমার রাব্ব বললেনঃ এটা আমার জন্য সহজসাধ্য; আমিতো পূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯. সংবাদদাতা ফিরিশতা বললেন: ব্যাপারটি তেমনই যেমন আপনি বলেছেন। আপনার স্ত্রীর সন্তান হয় না। আর আপনি বৃদ্ধ হয়ে শেষ বয়সে পৌঁছে গিয়েছেন এবং আপনার হাড়গুলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু আপনার প্রতিপালক বলেন: বন্ধ্যা মা এবং শেষ বয়সে পৌঁছে যাওয়া পিতা থেকে আপনার প্রতিপালকের জন্য ইয়াহয়াকে সৃষ্টি করা খুবই সহজ। হে যাকারিয়া! আমি তো ইতিপূর্বে আপনাকেও সৃষ্টি করেছি। অথচ আপনি তখন উল্লেখযোগ্য কোন কিছুই ছিলেন না। কারণ, আপনি ছিলেন তখন না থাকারই পর্যায়ে।
10
قَالَ رَبِّ ٱجْعَل لِّىٓ ءَايَةً ۚ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَـٰثَ لَيَالٍ سَوِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যাকারিয়া বললঃ হে আমার রাব্ব! আমাকে একটি নিদর্শন দিন। তিনি বললেনঃ তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থাবস্থায় কারও সাথে তিন দিন বাক্যালাপ করবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০. যাকারিয়া (আলাইহিস-সালাম) বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার জন্য একটি মনঃপূত আলামত ঠিক করুন যা ফিরিশতাদের দেয়া সুসংবাদ হাসিল হওয়া বুঝাবে। তিনি বললেন: আপনাকে দেয়া সুসংবাদ হাসিল হওয়ার আলামত হলো আপনি কোন রোগ ছাড়াই তিন দিন মানুষের সাথে কথা বলবেন না। বরং আপনি তখন সুস্থ ও রোগমুক্ত।
11
فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوْمِهِۦ مِنَ ٱلْمِحْرَابِ فَأَوْحَىٰٓ إِلَيْهِمْ أَن سَبِّحُوا۟ بُكْرَةً وَعَشِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর সে কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট এলো এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় (আল্লাহর) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বলল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১. অতঃপর যাকারিয়া (আলাইহিস-সালাম) নিজ নামাযের জায়গা থেকে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট বেরিয়ে এসে কোন কথা ছাড়াই তাদের দিকে ইশারা করে বললেন: তোমরা দিনের শুরু ও শেষে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো।
12
يَـٰيَحْيَىٰ خُذِ ٱلْكِتَـٰبَ بِقُوَّةٍ ۖ وَءَاتَيْنَـٰهُ ٱلْحُكْمَ صَبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি বললামঃ হে ইয়াহ্ইয়া! এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর; আমি তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান –
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২. পরিশেষে যাকারিয়া (আলাইহিস-সালাম) এর সন্তান ইয়াহয়া জন্ম নিলো। সে যখন সম্বোধন করার বয়সে পৌঁছালো তখন আমি তাকে বললাম: হে ইয়াহয়া! তুমি তাওরাতকে সত্যিকারার্থেই শক্ত করে ধরো। আমি তাকে তার বাচ্চা বয়সেই বুঝ, জ্ঞান, বাস্তবিকতা ও দৃঢ়তা দিলাম।
13
وَحَنَانًا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَوٰةً ۖ وَكَانَ تَقِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং আমার নিকট হতে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা; সে ছিল সাবধানী –
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩. আর আমি তাকে নিজ পক্ষ থেকে দয়াপরবশ হয়ে সকল গুনাহ থেকে পবিত্র করেছি। সে ছিলো আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানা সত্যিকারেরই একজন মুত্তাকী।
14
وَبَرًّۢا بِوَٰلِدَيْهِ وَلَمْ يَكُن جَبَّارًا عَصِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মাতা-পিতার অনুগত এবং সে ছিলনা উদ্ধ্যত, অবাধ্য ছিলনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪. সে আরো ছিলো মাতা-পিতার সাথে সদাচারী, নম্রভদ্র ও দয়াবান। উপরন্তু সে তার প্রতিপালক এবং তার মাতা-পিতার আনুগত্যের ব্যাপারে অহঙ্কারী ও নাফরমান ছিলো না।
15
وَسَلَـٰمٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তার প্রতি ছিল শান্তি যেদিন সে জন্ম গ্রহণ করে এবং শান্তি যেদিন তার মৃত্যু হয় এবং যেদিন সে পুনরুজ্জীবিত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫. তার উপর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হোক যেদিন সে জন্ম গ্রহণ করেছে এবং যেদিন সে মারা যাবে ও এ দুনিয়া থেকে বেরিয়ে পড়বে। উপরন্তু যেদিন তাকে কিয়ামতের দিবসে জীবন্ত উঠানো হবে। এ তিনটি জায়গা সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্বের যা মানুষ অতিক্রম করবে। এ জায়গাগুলোতে সে নিরাপত্তা পেলে অন্য কোথাও সে আর ভয় পাবে না।
16
وَٱذْكُرْ فِى ٱلْكِتَـٰبِ مَرْيَمَ إِذِ ٱنتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লেখিত মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬. হে রাসূল! আপনি নিজের উপর নাযিলকৃত কুর‘আনে মারইয়াম (আলাইহাস-সালাম) এর বৃত্তান্ত উল্লেখ করুন। একদা তিনি নিজ পরিবার থেকে দূরে সরে গিয়ে পূর্ব দিকের এক জায়গায় একাকী অবস্থান করলেন।
17
فَٱتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَآ إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তাদের হতে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে পর্দা করল; অতঃপর আমি তার নিকট আমার রূহকে (জিবরাঈলকে) পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭. তিনি নিজের জন্য একটি পর্দা টেনে নিলেন যা তাঁকে তাঁর সম্প্রদায় থেকে লুকিয়ে রাখে। যাতে তারা তাঁকে নিজ প্রতিপালকের ইবাদাতের সময় না দেখে। এমন সময় আমি জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) কে তার নিকট পাঠালাম। তখন জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) তাঁর নিকট এক পরিপূর্ণ মানুষের আকৃতি ধারণ করলেন। ফলে তিনি এ কথা ভেবে ভয় পেয়ে গেলেন যে, মনে হয় জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) তথা এ মানুষটি তাঁর সাথে কোন খারাপ কর্ম করতে চাইছে।
18
قَالَتْ إِنِّىٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحْمَـٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মারইয়াম বললঃ তুমি যদি (আল্লাহকে) ভয় কর তাহলে আমি তোমা হতে দয়াময়ের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮. যখন তিনি জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) কে এক পরিপূর্ণ মানুষের ছবিতে তার দিকে অগ্রসর হতে দেখলেন তখন তিনি বললেন: এই যে, যদি আপনি আল্লাহভীরু কোন মুত্তাকী মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার পক্ষ থেকে কোন অকল্যাণ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে আমার দয়ালু প্রভুর আশ্রয় কামনা করছি।
19
قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَـٰمًا زَكِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমিতো শুধু তোমার রাব্ব হতে প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার (সুসংবাদ জানানোর) জন্য।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯. জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) বললেন: আমি কোন মানুষ নই। বরং আমি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একজন দূত মাত্র। তিনি আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন যাতে আমি আপনাকে একটি পবিত্র নেককার সন্তান দিয়ে দেই।
20
قَالَتْ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى غُلَـٰمٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِى بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মারইয়াম বললঃ কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০. মারইয়াম (আলাইহাস-সালাম) আশ্চর্য হয়ে বললেন: আমার কীভাবে সন্তান হবে; আমার নিকট স্বামী হিসেবে কোন ব্যক্তি বা অন্য কেউ তো আসেনি। না আমি কোন ব্যভিচারিণী মেয়ে যে, আমার সে ক্ষেত্রে সন্তান হতে পারতো?!
21
قَالَ كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَىَّ هَيِّنٌ ۖ وَلِنَجْعَلَهُۥٓ ءَايَةً لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّا ۚ وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ এরূপই হবে; তোমার রাব্ব বলেছেন - এটা আমার জন্য সহজ সাধ্য এবং তাকে আমি এ জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন এবং আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ; এটাতো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২১. জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) তাকে বললেন: ব্যাপারটি তেমনই যেমন আপনি উল্লেখ করেছেন যে, আপনাকে স্বামী হিসেবে কোন ব্যক্তি বা অন্য কেউ স্পর্শ করেনি। আপনি কোন ব্যভিচারিণী মেয়েও নন। কিন্তু আপনার মহান প্রতিপালক বলেন: পিতা ছাড়া সন্তান জন্ম দেয়া আমার জন্য কোন কঠিন বিষয় নয়। যেন আপনাকে দেয়া সন্তানটি মানুষের জন্য আল্লাহর অসীম ক্ষমতার একটি আলামত হয় এবং আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য এবং তার উপর ঈমান আনা লোকেদের জন্য রহমত হয়। বস্তুতঃ আপনার এ সন্তানের জন্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নির্ধারিত ফায়সালা যা লাওহে মাহফ‚জে লিখিত আছে।
22
۞ فَحَمَلَتْهُ فَٱنتَبَذَتْ بِهِۦ مَكَانًا قَصِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২২. ফিরিশতার ফুঁয়ের পর মারইয়াম (আলাইহাস-সালাম) গর্ভবতী হয়ে যান। ফলে তিনি গর্ভের সন্তানটিকে নিয়ে মানুষ থেকে অনেক দূরের জায়গায় সরে যান।
23
فَأَجَآءَهَا ٱلْمَخَاضُ إِلَىٰ جِذْعِ ٱلنَّخْلَةِ قَالَتْ يَـٰلَيْتَنِى مِتُّ قَبْلَ هَـٰذَا وَكُنتُ نَسْيًا مَّنسِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
প্রসব বেদনা তাকে এক খর্জুর বৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; সে বললঃ হায়! এর পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম এবং লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৩. ইতিমধ্যে তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হয় যা তাঁকে খেজুর গাছের গোড়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। তখন মারইয়াম (আলাইহাস-সালাম) বললেন: হায় আপসোস! আমি যদি এ দিনের আগে মরে যেতাম এবং অনুল্লেখযোগ্য কোন কিছু হয়ে যেতাম। তাহলে কেউ আমার ব্যাপারে কোন কুধারণা করতো না।
24
فَنَادَىٰهَا مِن تَحْتِهَآ أَلَّا تَحْزَنِى قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মালাক/ফেরেশতা তার নিম্ন পার্শ্ব হতে আহবান করে তাকে বললঃ তুমি দুঃখ করনা, তোমার পাদদেশে তোমার রাব্ব এক নহর সৃষ্টি করেছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৪. তখন ঈসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর দু’ পায়ের নিচ থেকে ডেকে বললেন: আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আপনার নিচ থেকে আপনার প্রতিপালক পানির একটি নালা সৃষ্টি করেছেন। যা থেকে আপনি পানি পান করুন।
25
وَهُزِّىٓ إِلَيْكِ بِجِذْعِ ٱلنَّخْلَةِ تُسَـٰقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি তোমার দিকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে নাড়া দাও, ওটা তোমাকে সুপক্ক তাজা খেজুর দান করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৫. আর আপনি খেজুর গাছের গোড়া ধরে ঝাঁকি দিন তাহলে আপনার জন্য তরতাজা খেজুর পড়বে।
26
فَكُلِى وَٱشْرَبِى وَقَرِّى عَيْنًا ۖ فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ ٱلْبَشَرِ أَحَدًا فَقُولِىٓ إِنِّى نَذَرْتُ لِلرَّحْمَـٰنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ ٱلْيَوْمَ إِنسِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং আহার কর, পান কর ও চক্ষু জুড়িয়ে নাও; মানুষের মধ্যে কেহকে যদি তুমি দেখ তখন বলঃ আমি দয়াময়ের উদ্দেশে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি; সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে বাক্যালাপ করবনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৬. তুমি তাজা খেজুর খাও, পানি পান করো এবং নিজ সন্তানকে নিয়ে আনন্দিত হও আর চিন্তা করো না। তুমি যদি কোন মানুষকে দেখো যে, সে তোমার সন্তানের খবর জানতে চাচ্ছে তখন তুমি তাকে বলো: আমি নিজের উপর আমার প্রতিপালকের জন্য কথা না বলে চুপ থাকা বাধ্যতামূলক করে নিয়েছি। তাই আজ আমি কোন মানুষের সাথে কথা বলবো না।
27
فَأَتَتْ بِهِۦ قَوْمَهَا تَحْمِلُهُۥ ۖ قَالُوا۟ يَـٰمَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْـًٔا فَرِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বললঃ হে মারইয়াম! তুমিতো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৭. এরপর মারইয়াম তার সন্তানকে কোলে নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের নিকট আসলো। তখন তার সম্প্রদায় তার এ কর্মকে খারাপ মনে করে বললো: হে মারইয়াম! তুমি তো একটি জঘন্য পাপের কাজ করে ফেলেছো। তুমি তো পিতা ছাড়া একটি সন্তান নিয়ে আসলে।
28
يَـٰٓأُخْتَ هَـٰرُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ ٱمْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে হারূন ভগ্নি! তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলনা এবং তোমার মাতাও ছিলনা ব্যভিচারিণী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৮. হে হারূনের ন্যায় ইবাদাতকারিণী! (হারূন তখনকার একজন নেককার ব্যক্তি ছিলেন) তোমার পিতা তো ব্যভিচারী ছিলেন না। না তোমার মা ব্যভিচারিণী ছিলেন। তুমি তো একটি প্রসিদ্ধ নেককার ও পবিত্র ঘরের সন্তান। তাহলে তুমি কীভাবে পিতা ছাড়া একটি সন্তান নিয়ে আসলে?!
29
فَأَشَارَتْ إِلَيْهِ ۖ قَالُوا۟ كَيْفَ نُكَلِّمُ مَن كَانَ فِى ٱلْمَهْدِ صَبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর মারইয়াম ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখাল; তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৯. তখন তিনি তাঁর সন্তান তথা তার কোলের ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) এর দিকে ইশারা করলেন। ফলে তার সম্প্রদায় আশ্চর্য হয়ে তাকে বললো: আমরা কীভাবে একটি কোলের বাচ্চার সাথে কথা বলবো?!
30
قَالَ إِنِّى عَبْدُ ٱللَّهِ ءَاتَىٰنِىَ ٱلْكِتَـٰبَ وَجَعَلَنِى نَبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে (ঈসা) বললঃ আমিতো আল্লাহর দাস; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নাবী করেছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩০. ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) বললেন: নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে ইঞ্জীল দিয়েছেন এবং তিনি আমাকে একজন নবী বানিয়েছেন।
31
وَجَعَلَنِى مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَـٰنِى بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱلزَّكَوٰةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে আশিষ ভাজন করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে –
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩১. আর আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে তাঁর বান্দাদের জন্য অধিক উপকারী ব্যক্তি বানিয়েছেন। উপরন্তু তিনি আমাকে আজীবন সালাত ও যাকাত আদায়ের আদেশ করেছেন।
32
وَبَرًّۢا بِوَٰلِدَتِى وَلَمْ يَجْعَلْنِى جَبَّارًا شَقِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমার মাতার প্রতি অনুগত থাকতে এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩২. তিনি আমাকে নিজ মায়ের প্রতি সদাচারী বানিয়েছেন। তিনি আমাকে আমার প্রতিপালকের আনুগত্যের ব্যাপারে অহঙ্কারী ও পাপী বানাননি।
33
وَٱلسَّلَـٰمُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও শান্তি থাকবে যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৩. আর আমার জন্য আমার জন্ম ও মৃত্যুর দিন এবং আমাকে কিয়ামতের দিবসে জীবিত পুনরুত্থানের দিন শয়তান ও তার সহযোগীদের থেকে বিশেষ নিরাপত্তা রয়েছে। তাই এ তিন একাকীত্বের জায়গায় শয়তান আমাকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনি এবং পারবেও না।
34
ذَٰلِكَ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ ۚ قَوْلَ ٱلْحَقِّ ٱلَّذِى فِيهِ يَمْتَرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এই মারইয়াম তনয় ঈসা! আমি বললাম সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৪. এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলেন ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস-সালাম)। আর এটিই হলো তাঁর ব্যাপারে একান্ত সত্য কথা। না তাদের কথা যারা পথভ্রষ্ট এবং তাঁর ব্যাপার নিয়ে সন্দিহান ও বিবাদে লিপ্ত।
35
مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٍ ۖ سُبْحَـٰنَهُۥٓ ۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি পবিত্র, মহিমাময়; তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেনঃ ‘হও’ এবং তা হয়ে যায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৫. কোন সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর জন্য মানানসই নয়। তিনি এ থেকে পূত-পবিত্র। যখন তিনি কোন কিছু করতে চান তখন তাঁর জন্য এটিই যথেষ্ট যে, তিনি সে ব্যাপারটিকে বলবেন: হয়ে যাও তখন তা অনিবার্যভাবে হয়ে যাবে। আর যিনি এমন তিনি তো সন্তান থেকে অবশ্যই পবিত্র।
36
وَإِنَّ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ ۚ هَـٰذَا صِرَٰطٌ مُّسْتَقِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহই আমার রাব্ব এবং তোমাদের রাব্ব। সুতরাং তাঁর ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৬. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার ও তোমাদের সকলেরই প্রতিপালক। তাই তোমরা এককভাবে তাঁর খাঁটি ইবাদাত করবে। বস্তুতঃ আমি যা তোমাদের জন্য উল্লেখ করেছি তাই সঠিক পথ। যা আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে পৌঁছিয়ে দিবে।
37
فَٱخْتَلَفَ ٱلْأَحْزَابُ مِنۢ بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল; সুতরাং এই কাফিরদের মহা দিনের আগমনে ভীষণ দুর্দশা রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৭. অতঃপর ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) এর ব্যাপারটিকে নিয়ে দ্ব›দ্বকারীরা নিজেদের মাঝে দ্ব›দ্ব করে তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যেই তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। তাদের কেউ কেউ তাঁর উপর ঈমান এনে বললো: তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল। আর অন্যরা তাঁর সাথে কুফরি করেছে যেমন: ইহুদিরা। যেমনিভাবে তাঁর ব্যাপারটিকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে কোন কোন সম্প্রদায় বললো: তিনি হলেন আল্লাহ। অন্যরা বললো: তিনি হলেন আল্লাহর ছেলে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। সুতরাং তাঁর ব্যাপারটিকে নিয়ে দ্ব›দ্বকারীদের জন্য খুবই দুর্ভোগ যে তারা কিয়ামতের মহান দিনে হিসাব ও শাস্তি এবং বহু ভয়ঙ্কর চিত্র নিজেদের চোখেই দেখতে পাবে।
38
أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُونَنَا ۖ لَـٰكِنِ ٱلظَّـٰلِمُونَ ٱلْيَوْمَ فِى ضَلَـٰلٍ مُّبِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা যেদিন আমার নিকট আসবে সেদিন তারা কত স্পষ্ট শুনবে ও দেখবে! কিন্তু সীমা লংঘনকারীরা আজ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৮. সেদিন তারা কতো কিছুই না শুনবে আর কতো কিছুই না দেখবে। তবে তারা যখন শুনবে তখন তাদের এ শুনা কোন উপকারেই আসবে না। আর তারা যখন দেখবে তখন তাদের সেই দেখা কোন উপকারেই আসবে না। কিন্তু যালিমরা দুনিয়ার জীবনে সঠিক পথ থেকে সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় রয়েছে। তারা পরকালের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে না। অথচ তাদের এ অবস্থায়ই একদা হঠাৎ তা এসে পড়বে।
39
وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ ٱلْحَسْرَةِ إِذْ قُضِىَ ٱلْأَمْرُ وَهُمْ فِى غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; এখন তারা অনুধাবন এবং বিশ্বাস স্থাপন করবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৯. হে রাসূল! আপনি মানুষদেরকে আফসোস ও লজ্জার দিনের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করুন। যখন পাপী তার পাপের ব্যাপারে এবং নেককার ব্যক্তি বেশি আনুগত্য না করতে পেরে লজ্জিত হবে। সেদিন মানুষের আমলনামা গুটিয়ে নেয়া হবে এবং তাদের হিসাব-নিকাশ শেষ করা হবে। উপরন্তু প্রত্যেকেই তার অগ্রিম আমলের দিকে চলে যাবে। অথচ তারা দুনিয়ার জীবনে সে ব্যাপারে ধোঁকায় রয়েছে। আখিরাতের ব্যাপারে তামাশা করছে। বস্তুতঃ তারা কিয়ামতের দিবসে বিশ্বাসী নয়।
40
إِنَّا نَحْنُ نَرِثُ ٱلْأَرْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَإِلَيْنَا يُرْجَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী আমি, পৃথিবীর এবং ওর উপর যা আছে তাদেরও এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যানীত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪০. সৃষ্টিসমূহ নিঃশেষের পর কেবল আমিই বাকি থাকবো। তখন আমিই জমিন ও তার উপর যারা আছে তাদের সবারই মালিক হবো। কারণ, তখন সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমিই কেবল বাকি থাকবো। তাই আমিই তাদের মালিক হবো এবং আমিই ইচ্ছা মতো তাদেরকে পরিচালনা করবো। আর কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য কেবল আমার দিকেই তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
41
وَٱذْكُرْ فِى ٱلْكِتَـٰبِ إِبْرَٰهِيمَ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত ইবরাহীমের কথা; সে ছিল সত্যবাদী ও নাবী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪১. হে রাসূল! আপনি নিজের উপর নাযিলকৃত কুর‘আনে ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর সংবাদ উল্লেখ করুন। তিনি ছিলেন অতি সত্যবাদী এবং আল্লাহর আয়াতসমূহে কঠিন বিশ্বাসী। উপরন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন নবী।
42
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ يَـٰٓأَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِى عَنكَ شَيْـًٔا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন সে তার পিতাকে বললঃ হে আমার পিতা! যে শোনেনা, দেখেনা এবং তোমার কোন কাজে আসেনা তুমি তার ইবাদাত কর কেন?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪২. তিনি তার পিতা আযরকে বললেন: হে আমার পিতা! কেন আপনি আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিপূজা করেন? অথচ আপনি তাকে ডাকলে সে আপনার ডাক শুনে না। আপনি তার পূজা করলে সে আপনার পূজা দেখতে পায় না। না সে আপনার কোন ক্ষতি দূর করতে পারে। না সে আপনার কোন উপকার করতে পারে?!
43
يَـٰٓأَبَتِ إِنِّى قَدْ جَآءَنِى مِنَ ٱلْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَٱتَّبِعْنِىٓ أَهْدِكَ صِرَٰطًا سَوِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার পিতা! আমার নিকটতো এসেছে জ্ঞান যা তোমার নিকট আসেনি। সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমায় সঠিক পথ দেখাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৩. হে আমার পিতা! নিশ্চয়ই আমার নিকট ওহীর মাধ্যমে এমন জ্ঞান এসেছে যা আপনার নিকট আসেনি। তাই আপনি আমার অনুসরণ করুন। আমি আপনাকে সঠিক পথ দেখাবো।
44
يَـٰٓأَبَتِ لَا تَعْبُدِ ٱلشَّيْطَـٰنَ ۖ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ كَانَ لِلرَّحْمَـٰنِ عَصِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার পিতা! শাইতানের ইবাদাত করনা; শাইতান আল্লাহর অবাধ্য।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৪. হে আমার পিতা! আপনি শয়তানের আনুগত্যের মাধ্যমে তার পূজা করবেন না। কারণ, শয়তান আমার দয়ালু প্রভুর অবাধ্য ছিলো। তিনি তাকে আদমের জন্য সাজদাহ করার আদেশ করলে সে সাজদাহ করেনি।
45
يَـٰٓأَبَتِ إِنِّىٓ أَخَافُ أَن يَمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ ٱلرَّحْمَـٰنِ فَتَكُونَ لِلشَّيْطَـٰنِ وَلِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার পিতা! আমি আশংকা করি, তোমাকে আল্লাহর শাস্তি স্পর্শ করবে এবং তুমি শাইতানের সাথী হয়ে পড়বে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৫. হে আমার পিতা! আপনি যদি কুফরির উপর মৃত্যু বরণ করেন তাহলে আমি দয়ালু প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার ব্যাপারে আযাবের আশঙ্কা করছি। তখন আপনি শয়তানকে ভালোবাসার দরুন আযাবের ক্ষেত্রে তারই সাথী হবেন।
46
قَالَ أَرَاغِبٌ أَنتَ عَنْ ءَالِهَتِى يَـٰٓإِبْرَٰهِيمُ ۖ لَئِن لَّمْ تَنتَهِ لَأَرْجُمَنَّكَ ۖ وَٱهْجُرْنِى مَلِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পিতা বললঃ হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার দেব-দেবী হতে বিমুখ হচ্ছ? যদি নিবৃত্ত না হও তাহলে আমি প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণ নাশ করবই; তুমি চিরদিনের জন্য আমার নিকট হতে দূর হয়ে যাও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৬. আযর তার ছেলে ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) কে বললো: হে ইব্রাহীম! তুমি কি আমার সেই মূর্তিগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো যেগুলোর আমি পূজা করি?! তুমি যদি আমার মূর্তিগুলোকে গালি দেয়া থেকে বিরত না হও তাহলে আমি অবশ্যই তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করবো। তুমি দীর্ঘ সময়ের জন্য আমার থেকে পৃথক হয়ে যাও। আমার সাথে কোন কথা বলো না এবং আমার সাথে সাক্ষাতও করো না।
47
قَالَ سَلَـٰمٌ عَلَيْكَ ۖ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّىٓ ۖ إِنَّهُۥ كَانَ بِى حَفِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইবরাহীম বললঃ তোমার নিকট হতে বিদায়; আমি আমার রবের নিকট তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৭. ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) তাঁর পিতাকে বললেন: আপনার প্রতি আমার সালাম। আমার পক্ষ থেকে অপছন্দনীয় কোন কিছু আপনার নিকট পৌঁছাবে না। আর আমি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার জন্য ক্ষমা ও হিদায়েত কামনা করবো। নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল।
48
وَأَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَأَدْعُوا۟ رَبِّى عَسَىٰٓ أَلَّآ أَكُونَ بِدُعَآءِ رَبِّى شَقِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তোমাদের দিক হতে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত কর তাদের দিক হতে পৃথক হচ্ছি; আমি আমার রবের আহবান করি; আশা করি আমার রবের আহবান করে আমি ব্যর্থকাম হবনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৮. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আপনারা যেগুলোর ইবাদাত করেন আমি সেগুলো থেকে এবং আপনাদের থেকে এবং আপনাদের সেই মা’বূদগুলো থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি। বরং আমি আমার একক প্রতিপালককে ডাকি। তাঁর সাথে আমি কোন কিছুকেই শরীক করি না। আশা করি আমি তাঁকে ডাকলে তিনি আমাকে নিরাশ করবেন না। ফলে আমি তাঁকে ডেকে দুর্ভাগা হবো না।
49
فَلَمَّا ٱعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَهَبْنَا لَهُۥٓ إِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর সে যখন তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করত সেই সব হতে পৃথক হয়ে গেল তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকূব এবং প্রত্যেককে নাবী করলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৯. যখন তিনি তাদেরকে ও আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তারা যেগুলোর ইবাদাত করতো সেগুলোকে পরিত্যাগ করলেন তখন আমি তাঁকে নিজ পরিবার হারানোর বিকল্প মিলিয়ে দিলাম। আমি তাঁকে তাঁর ছেলে ইসহাক এবং তাঁর নাতি ইয়াক‚বকে দিলাম। উপরন্তু আমি এঁদের প্রত্যেককে নবীও বানিয়ে দিলাম।
50
وَوَهَبْنَا لَهُم مِّن رَّحْمَتِنَا وَجَعَلْنَا لَهُمْ لِسَانَ صِدْقٍ عَلِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং তাদেরকে আমি দান করলাম আমার অনুগ্রহ ও তাদের দিলাম সমুচ্চ বংশ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫০. নবুওয়াতের পাশাপাশি আমি তাঁদেরকে দয়া করে অনেক কল্যাণ দিলাম। উপরন্তু আমি সব সময়ের জন্য আমার বান্দাদের মুখে মুখে তাঁদের সুন্দর প্রশংসা চালু করে দিলাম।
51
وَٱذْكُرْ فِى ٱلْكِتَـٰبِ مُوسَىٰٓ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এই কিতাবে উল্লেখিত মূসার কথা বর্ণনা কর, সে ছিল বিশুদ্ধ চিত্ত এবং সে ছিল রাসূল, নাবী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫১. হে রাসূল! আপনি নিজের উপর নাযিলকৃত কুর‘আনে মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর বৃত্তান্ত উল্লেখ করুন। তিনি ছিলেন বিশেষভাবে মনোনীত একজন নবী ও রাসূল।
52
وَنَـٰدَيْنَـٰهُ مِن جَانِبِ ٱلطُّورِ ٱلْأَيْمَنِ وَقَرَّبْنَـٰهُ نَجِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তাকে আহবান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি গুঢ়তত্ত্ব আলোচনারত অবস্থায় তাকে নিকটবর্তী করেছিলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫২. আমি মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর অবস্থান হিসেবে তাঁকে পাহাড়ের ডান দিক থেকে ডেকেছি এবং তাঁকে একান্ত কথা বলার জন্য কাছে নিয়েছি। সেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নিজের কিছু শুনিয়েছেন।
53
وَوَهَبْنَا لَهُۥ مِن رَّحْمَتِنَآ أَخَاهُ هَـٰرُونَ نَبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি নিজ অনুগ্রহে তাকে দিলাম তার ভাই হারূনকে, নাবীরূপে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৩. আর যখন তিনি তাঁর প্রতিপালকের নিকট এ দু‘আ করলেন তখন আমি তাঁর দু‘আটি কবুল করার খাতিরে নিজ দয়ায় ও রহমতে তাঁর ভাই হারূন (আলাইহিস-সালাম) কে নবী বানিয়ে দিলাম।
54
وَٱذْكُرْ فِى ٱلْكِتَـٰبِ إِسْمَـٰعِيلَ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ صَادِقَ ٱلْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এই কিতাবে উল্লেখিত ইসমাঈলের কথা বর্ণনা কর, সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং সে ছিল রাসূল, নাবী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৪. হে রাসূল! আপনি নিজের উপর নাযিলকৃত কুর‘আনে ইসমাঈল (আলাইহিস-সালাম) এর বৃত্তান্ত উল্লেখ করুন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ওয়াদা রক্ষাকারী। তিনি কোন ওয়াদা করলে তা অবশ্যই পূরণ করতেন। তেমনিভাবে তিনি ছিলেন একজন নবী ও রাসূল।
55
وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُۥ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱلزَّكَوٰةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِۦ مَرْضِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে তার পরিজনবর্গকে সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তার রবের সন্তোষভাজন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৫. তিনি নিজ পরিবারকে সালাত কায়েম ও যাকাত আদায়ের আদেশ করতেন। উপরন্তু তিনি ছিলেন তাঁর প্রতিপালকের নিকট একজন সন্তুষ্টিভাজন।
56
وَٱذْكُرْ فِى ٱلْكِتَـٰبِ إِدْرِيسَ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এই কিতাবে উল্লেখিত ইদরীসের কথা বর্ণনা কর, সে ছিল সত্যবাদী নাবী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৬. হে রাসূল! আপনি নিজের উপর নাযিলকৃত কুর‘আনে ইদ্রীস (আলাইহিস-সালাম) এর বৃত্তান্ত উল্লেখ করুন। তিনি ছিলেন অতি সত্যবাদী এবং তাঁর প্রতিপালকের আয়াতসমূহে কঠিন বিশ্বাসী। উপরন্তু আল্লাহর একজন নবী।
57
وَرَفَعْنَـٰهُ مَكَانًا عَلِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং আমি তাকে দান করেছিলাম উচ্চ মর্যাদা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৭. আমি তাঁকে নবুওয়াত দিয়ে তাঁর স্মরণকে সুউচ্চ করেছি। ফলে তিনি হলেন একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।
58
أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّـۧنَ مِن ذُرِّيَّةِ ءَادَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْرَٰٓءِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَٱجْتَبَيْنَآ ۚ إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ ءَايَـٰتُ ٱلرَّحْمَـٰنِ خَرُّوا۟ سُجَّدًا وَبُكِيًّا ۩
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নাবীদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এরাই তারা, আদমের এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশদ্ভুত, ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশদ্ভুত ও যাদেরকে আমি পথ নির্দেশ করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম তাদের অন্তর্ভুক্ত; তাদের নিকট দয়াময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে তারা সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ত ক্রন্দন করতে করতে। [সাজদাহ]
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৮. যাকারিয়া (আলাইহিস-সালাম) থেকে শুরু করে সর্বশেষ ইদ্রীস (আলাইহিস-সালাম) পর্যন্ত এ সূরায় উল্লেখিত সকল ব্যক্তিবর্গকে আল্লাহ তা‘আলা নবুওয়াতের নিয়ামত দিয়েছেন। তাঁরা ছিলেন আদম (আলাইহিস-সালাম) এর সন্তান এবং ওদের সন্তান যাদেরকে আমি নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সাথে নৌকায় উঠিয়েছি। উপরন্তু তাঁরা ইব্রাহীম ও ইয়া’ক‚ব (আলাইহিমাস-সালাম) এর সন্তান এবং যাদেরকে আমি ইসলামের প্রতি হিদায়েতের তাওফীক দিয়েছি আর যাদেরকে আমি মনোনীত করে নবী বানিয়েছি। তাঁরা আল্লাহর আয়াতসমূহ পড়তে শুনলে আল্লাহর ভয়ে কান্নারত অবস্থায় তাঁর জন্য সাজদায় পড়ে যেতো।
59
۞ فَخَلَفَ مِنۢ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلشَّهَوَٰتِ ۖ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা; তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসা পরবশ হল; সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৯. এ মনোনীত নবীদের পরই আসলো খারাপ ও ভ্রষ্টতার অনুসারীরা। যারা নামাযকে নষ্ট করেছে; আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে তারা তা আদায় করেনি। বরং তারা নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় পাপসমূহে লিপ্ত হয়েছে যেমন: ব্যভিচার। তাই তারা অচিরেই জাহান্নামে অনিষ্ট ও ব্যর্থতার সাক্ষাত পাবে।
60
إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَـٰلِحًا فَأُو۟لَـٰٓئِكَ يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ شَيْـًٔا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু তারা নয় - যারা তাওবাহ করেছে, ঈমান আনয়ন করেছে ও সৎ কাজ করেছে; তারাতো জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবেনা –
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬০. তবে যে তার ত্রæটি ও অপকর্ম থেকে তাওবা করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান এনে নেক আমল করবে অর্থাৎ যারা এ সকল বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যময় তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের আমলসমূহের সাওয়াবে সামান্য কমতিও করা হবে না। চাই তা যে পর্যায়েরই হোক না কেন।
61
جَنَّـٰتِ عَدْنٍ ٱلَّتِى وَعَدَ ٱلرَّحْمَـٰنُ عِبَادَهُۥ بِٱلْغَيْبِ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ وَعْدُهُۥ مَأْتِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এটা স্থায়ী জান্নাত, যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন, তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬১. সেগুলো হবে নিশ্চিন্তে বসবাসের জান্নাত। যেগুলোতে দয়ালু প্রভু তাঁকে না দেখে নেক আমলকারী বান্দাদেরকে প্রবেশ করানোর ওয়াদা করেছেন। বস্তুতঃ তারা জান্নাতগুলো না দেখেই সেগুলোকে বিশ্বাস করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে যে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন তা সন্দেহাতীতভাবেই চিরসত্য।
62
لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا إِلَّا سَلَـٰمًا ۖ وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সেখানে তারা শান্তি ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবেনা এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬২. তারা সেখানে অর্থহীন ও অশ্লীল কথা শুনতে পাবে না। বরং তারা একে অপরের এবং ফিরিশতাদের সালাম শুনতে পাবে। আর সেখানে তাদের চাহিদামত তাদের নিকট সকাল ও সন্ধ্যায় খানা আসতে থাকবে।
63
تِلْكَ ٱلْجَنَّةُ ٱلَّتِى نُورِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَن كَانَ تَقِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এই সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমি আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৩. এ সকল বৈশিষ্ট্যমÐিত জান্নাত আমি আমার আদেশ-নিষেধ মানা বান্দাদেরকে উত্তরাধিকার হিসেবে দেবো।
64
وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلَّا بِأَمْرِ رَبِّكَ ۖ لَهُۥ مَا بَيْنَ أَيْدِينَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذَٰلِكَ ۚ وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমরা আপনার রবের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করিনা; যা আমাদের অগ্রে ও পশ্চাতে আছে এবং যা এই দু’এর অন্তবর্তী তা তাঁরই এবং তোমার রাব্ব কোনো কিছু ভুলেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৪. হে জিব্রীল! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলে দাও: ফিরিশতাগণ কখনো নিজ থেকে অবতরণ করেন না। বরং তাঁরা কেবল আল্লাহর আদেশেই অবতরণ করেন। সামনের তথা আখিরাতের ব্যাপার এবং পেছনের তথা দুনিয়ার ব্যাপার উপরন্তু এতদুভয়ের মধ্যকার তথা দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যাপার তা সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। আর হে রাসূল! আপনার প্রতিপালক কোন কিছুই ভুলেন না।
65
رَّبُّ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَٱعْبُدْهُ وَٱصْطَبِرْ لِعِبَـٰدَتِهِۦ ۚ هَلْ تَعْلَمُ لَهُۥ سَمِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তর্বতী যা কিছু আছে সবারই রাব্ব; সুতরাং তুমি তাঁরই ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাক; তুমি কি তাঁর সমগুণ সম্পন্ন কেহকে জান?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৫. তিনি হলেন আকাশ ও জমিনের ¯্রষ্টা, মালিক এবং সেগুলোর ব্যাপারসমূহের পরিচালনাকারী। তেমনিভাবে তিনি এতদুভয়ের মধ্যকার সবকিছুর ¯্রষ্টা, মালিক ও পরিচালনাকারী। তাই একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো। তিনি হলেন ইবাদাতের একমাত্র উপযুক্ত। উপরন্তু তাঁর ইবাদাতে অটল থাকো। কারণ, ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাঁর কোন সমকক্ষ ও সমতুল্য শরীক নেই।
66
وَيَقُولُ ٱلْإِنسَـٰنُ أَءِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ أُخْرَجُ حَيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মানুষ বলেঃ আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৬. পুনরুত্থান অস্বীকারকারী কাফির ঠাট্টা করে বলে: আমি কি মারা গেলে অচিরেই নিজ কবর থেকে আবার জীবিত অবস্থায় উঠবো?! এটি তো একেবারেই অসম্ভব বিষয়।
67
أَوَلَا يَذْكُرُ ٱلْإِنسَـٰنُ أَنَّا خَلَقْنَـٰهُ مِن قَبْلُ وَلَمْ يَكُ شَيْـًٔا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মানুষ কি স্মরণ করেনা যে, আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিলনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৭. এ পুনরুত্থান অস্বীকারকারী কি এ কথা স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতিপূর্বে সৃষ্টি করেছি। তখন সে কিছুই ছিলো না?! তাই সে প্রথম সৃষ্টি দ্বারা দ্বিতীয় সৃষ্টির প্রমাণ গ্রহন করুক। যদিও দ্বিতীয় সৃষ্টি অত্যন্ত সোজা ও সহজ।
68
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَٱلشَّيَـٰطِينَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং শপথ তোমার রবের! আমিতো তাদেরকে শাইতানদেরসহ একত্রে সমবেত করবই এবং পরে আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৮. হে রাসূল! আপনার প্রভুর কসম! আমি অবশ্যই তাদেরকে কবর থেকে হাশরের দিকে বের করে নিয়ে আসবো। সাথে থাকবে তাদের সে শয়তানগুলো যারা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদেরকে লাঞ্ছিত ও নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের দরজাগুলোর দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবো।
69
ثُمَّ لَنَنزِعَنَّ مِن كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى ٱلرَّحْمَـٰنِ عِتِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে দয়াময়ের প্রতি সর্বাধিক অবাধ্য আমি তাকে টেনে বের করবই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৯. অতঃপর আমি প্রত্যেক ভ্রষ্ট দল থেকে সবচেয়ে কঠিন অবাধ্যকে শক্তি ও কঠোরতা প্রয়োগে টেনে নিয়ে আসবো। যারা হলো মূলতঃ তাদের নেতৃস্থানীয়।
70
ثُمَّ لَنَحْنُ أَعْلَمُ بِٱلَّذِينَ هُمْ أَوْلَىٰ بِهَا صِلِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারপর আমিতো তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়ার অধিকতর যোগ্য তাদের বিষয় ভাল জানি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭০. আমি ওদের সম্পর্কে অবশ্যই ভালো জানি, যারা জাহান্নামে প্রবেশের এবং তার উত্তপ্ত আগুনে দগ্ধ হওয়ার অধিক উপযুক্ত।
71
وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا ۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং তোমাদের প্রত্যেকেই ওটা অতিক্রম করবে; ওটা তোমার রবের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭১. হে মানুষ! তোমাদের প্রত্যেককে অচিরেই জাহান্নামের পিঠের উপর লাগানো পুলের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করতে হবে। এ পথ অতিক্রম করা কিন্তু আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালাকৃত বিষয়। তাঁর ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করার কেউ নেই।
72
ثُمَّ نُنَجِّى ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوا۟ وَّنَذَرُ ٱلظَّـٰلِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পরে আমি মুত্তাকীদেরকে উদ্ধার করব এবং যালিমদের সেখানে নতজানু অবস্থায় রেখে দিব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭২. এ পুলের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করার পর আমি ওদেরকে নিরাপদে রাখবো যারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ ও নিষেধ মেনে কেবল তাঁকেই ভয় করেছে। আর জালিমদেরকে নতজানু অবস্থায় রেখে দেবো। তারা কখনো সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবে না।
73
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ ءَايَـٰتُنَا بَيِّنَـٰتٍ قَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَىُّ ٱلْفَرِيقَيْنِ خَيْرٌ مَّقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াত আবৃত্তি করা হলে কাফিরেরা মু’মিনদেরকে বলেঃ দু’ দলের মধ্যে কোন্টি মর্যাদায় শ্রেয়তর ও মজলিস হিসাবে কোনটি উত্তম?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৩. আমার রাসূলের উপর নাযিলকৃত সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যখন মানুষের সামনে পড়া হয় তখন কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে: আমাদের মধ্যকার কোন্ দলটি সর্বোত্তম আবাসস্থল এবং সর্বসুন্দর বৈঠক ও সমাজে অবস্থান করবে; আমাদের দল না তোমাদের দল?!
74
وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هُمْ أَحْسَنُ أَثَـٰثًا وَرِءْيًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি যারা তাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্য দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৪. বৈষয়িক উন্নতির অহঙ্কারে আত্মহারা এ কাফিরদের পূর্বে আমি অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি। যারা সম্পদের দিক দিয়ে এদের চেয়ে অনেক উন্নত ছিলো এবং উন্নত পোশাক ও সুঠাম দেহের জন্য তাদেরকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিলো।
75
قُلْ مَن كَانَ فِى ٱلضَّلَـٰلَةِ فَلْيَمْدُدْ لَهُ ٱلرَّحْمَـٰنُ مَدًّا ۚ حَتَّىٰٓ إِذَا رَأَوْا۟ مَا يُوعَدُونَ إِمَّا ٱلْعَذَابَ وَإِمَّا ٱلسَّاعَةَ فَسَيَعْلَمُونَ مَنْ هُوَ شَرٌّ مَّكَانًا وَأَضْعَفُ جُندًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বলঃ যারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাদেরকে প্রচুর অবকাশ দিবেন যতক্ষণ না তারা, যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করবে, তা শাস্তি হোক অথবা কিয়ামাতই হোক; অতঃপর তারা জানতে পারবে কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট এবং কে দলবলে দুর্বল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৫. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: যারা নিজ ভ্রষ্টতায় উদ্ভ্রান্ত তাদেরকে দয়ালু প্রভু অচিরেই আরো সময় দিবেন যেন তারা আরো বেশি পথভ্রষ্ট হয়। যখন তারা তাদের সাথে ওয়াদাকৃত দুনিয়ার নগদ ও কিয়ামতের দিনের বাকি শাস্তি দেখবে তখন তারা অচিরেই বুঝতে পারবে যে, কার অবস্থান অতি নিকৃষ্ট এবং কার সাহায্যকারী খুবই নগণ্য। সেটি তাদের দল না মু’মিনদের দল?
76
وَيَزِيدُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ٱهْتَدَوْا۟ هُدًى ۗ وَٱلْبَـٰقِيَـٰتُ ٱلصَّـٰلِحَـٰتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ مَّرَدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং যারা সৎ পথে চলে আল্লাহ তাদেরকে অধিক হিদায়াত দান করেন এবং স্থায়ী সৎ কাজ তোমার রবের পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং প্রতিদান হিসাবেও শ্রেষ্ঠ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৬. বেশি ভ্রষ্টতার জন্য এদেরকে সময় দেয়ার বিপরীতে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়েতপ্রাপ্তদের ঈমান ও আনুগত্য বাড়িয়ে দিবেন। হে রাসূল! যে নেক আমলগুলো চিরন্তন সৌভাগ্যের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে তা প্রতিদান ও শুভ পরিণতির দিক দিয়ে আপনার প্রতিপালকের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী।
77
أَفَرَءَيْتَ ٱلَّذِى كَفَرَ بِـَٔايَـٰتِنَا وَقَالَ لَأُوتَيَنَّ مَالًا وَوَلَدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলেঃ আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবেই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৭. হে রাসূল! আপনি কি ওকে দেখেছেন যে আমার প্রমাণাদি ও হুমকিকে অস্বীকার করে বলেছে, আমি যদি মারা যাই এবং আমাকে পুনরুত্থান করা হয় তাহলে আমাকে অবশ্যই প্রচুর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে।
78
أَطَّلَعَ ٱلْغَيْبَ أَمِ ٱتَّخَذَ عِندَ ٱلرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৮. সে কি গায়েব জানে, ফলে সে যা বলেছে তা প্রমাণসহ বলেছে?! না কি সে তার প্রতিপালকের নিকট থেকে এমন অঙ্গীকার নিয়েছে যে, তিনি অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিবেন?!
79
كَلَّا ۚ سَنَكْتُبُ مَا يَقُولُ وَنَمُدُّ لَهُۥ مِنَ ٱلْعَذَابِ مَدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কখনই নয়, তারা যা বলে আমি তা লিখে রাখবো এবং তাদের শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৯. ব্যাপারটি সে রকম নয় যা তারা ধারণা করেছে। বরং আমি সহসাই তারা যা বলে ও করে তা সবই লিপিবদ্ধ করবো। এমনকি আমি তার বাতিল দাবির দরুন তার শাস্তির উপর আরো শাস্তি বাড়িয়ে দেবো।
80
وَنَرِثُهُۥ مَا يَقُولُ وَيَأْتِينَا فَرْدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে যে বিষয়ের কথা বলে তা থাকবে আমার অধিকারে এবং সে আমার নিকট আসবে একা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮০. উপরন্তু তাকে ধ্বংস করার পর আমি তার ছেড়ে যাওয়া ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির উত্তরাধিকারী হবো। ফলে সে কিয়ামতের দিন আমার নিকট একাকী উপস্থিত হবে। যার ভোগের সম্পদ ও পদাদি কেড়ে নেয়া হয়েছে।
81
وَٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ ءَالِهَةً لِّيَكُونُوا۟ لَهُمْ عِزًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেহকে মা‘বূদ রূপে গ্রহণ করে এ জন্য যে, যাতে তারা তাদের সহায় হয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮১. মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া নিজেদের জন্য কিছু মা’বূদ গ্রহণ করে নিয়েছে। যাতে তারা ওদের সাহায্যকারী ও সহযোগী হতে পারে।
82
كَلَّا ۚ سَيَكْفُرُونَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কখনই নয়; তারা তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮২. ব্যাপারটি সে রকম নয় যা তারা ধারণা করেছে। কারণ, এ মা’বূদরা -আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তারা যাদের ইবাদাত করছে তারা- অচিরেই কিয়ামতের দিন মুশরিকদের ইবাদাতকে অস্বীকার এবং তাদের থেকে নিজেদের সম্পর্কচ্ছিন্নতা ঘোষণা করবে। উপরন্তু তারা ওদের শত্রæ বনে যাবে।
83
أَلَمْ تَرَ أَنَّآ أَرْسَلْنَا ٱلشَّيَـٰطِينَ عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি কি লক্ষ্য করনা যে, আমি কাফিরদের জন্য শাইতানদেরকে ছেড়ে রেখেছি তাদেরকে মন্দ কর্মে বিশেষভাবে প্রলুব্ধ করার জন্য।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৩. হে রাসূল! আপনি কি দেখেননি যে, নিশ্চয়ই আমি শয়তানদেরকে পাঠিয়ে তাদেরকে কাফিরদের উপর লাগিয়ে দিয়েছি? যারা তাদেরকে গুনাহের কাজে এবং আল্লাহর দ্বীন থেকে সরিয়ে নেয়ার কাজে বিপুলভাবে উৎসাহিত করে।
84
فَلَا تَعْجَلْ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّمَا نَعُدُّ لَهُمْ عَدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং তাদের বিষয়ে তাড়া করনা; আমিতো গণনা করছি তাদের নির্ধারিত কাল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৪. তাই হে রাসূল! আপনি আল্লাহর নিকট তাদের দ্রæত ধ্বংস কামনা করবেন না। আমি তাদের বয়স ভালোভাবে হিসাব করে রাখছি। যখন তাদেরকে ঢিল দেয়ার সময়টুকু শেষ হয়ে যাবে তখন আমি তাদেরকে অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি দেবো।
85
يَوْمَ نَحْشُرُ ٱلْمُتَّقِينَ إِلَى ٱلرَّحْمَـٰنِ وَفْدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যেদিন আমি দয়াময়ের নিকট মুত্তাকীদের সম্মানিত মেহমান রূপে সমবেত করব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৫. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন কিয়ামতের দিনের কথা যখন আমি তাদের প্রতিপালকের আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করা লোকদেরকে নিজেদের প্রতিপালকের নিকট সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিনিধিরূপে একত্রিত করবো।
86
وَنَسُوقُ ٱلْمُجْرِمِينَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ وِرْدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৬. আর আমি কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে তৃষ্ণার্তভাবে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবো।
87
لَّا يَمْلِكُونَ ٱلشَّفَـٰعَةَ إِلَّا مَنِ ٱتَّخَذَ عِندَ ٱلرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে সে ব্যতীত অন্য কারও সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৭. এ কাফিররা তাদের কারো জন্য সুপরিশের মালিক হবে না। তবে যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনে তাঁর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে তার কথা ভিন্ন।
88
وَقَالُوا۟ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحْمَـٰنُ وَلَدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বলেঃ দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৮. ইহুদি, খ্রিস্টান ও কিছু মুশরিকরা বললো: দয়ালু প্রভু সন্তান গ্রহণ করেছেন।
89
لَّقَدْ جِئْتُمْ شَيْـًٔا إِدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরাতো এক ভয়ংকর কথার অবতারণা করেছ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৯. হে এমন উক্তিকারীরা! তোমরা একটি ভয়ঙ্কর বস্তু নিয়ে এসেছো।
90
تَكَادُ ٱلسَّمَـٰوَٰتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ ٱلْأَرْضُ وَتَخِرُّ ٱلْجِبَالُ هَدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড বিখন্ড হবে এবং পর্বতসমূহ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে –
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯০. এ অসৎ কথার দরুন আকাশগুলো খÐবিখÐ হওয়া এবং জমিন ফেটে যাওয়া ও পাহাড়সমূহ ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
91
أَن دَعَوْا۟ لِلرَّحْمَـٰنِ وَلَدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যেহেতু তারা দয়াময়ের উপর সন্তান আরোপ করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯১. এসবই এ জন্য যে, তারা দয়ালু প্রভুর প্রতি সন্তানকে সম্পৃক্ত করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
92
وَمَا يَنۢبَغِى لِلرَّحْمَـٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯২. দয়াময় প্রভুর জন্য শোভনীয় নয় যে, তিনি নিজের জন্য সন্তান গ্রহণ করবেন। কারণ, তিনি তা থেকে পবিত্র।
93
إِن كُلُّ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ إِلَّآ ءَاتِى ٱلرَّحْمَـٰنِ عَبْدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেহ নেই যে দয়াময়ের নিকট উপস্থিত হবেনা বান্দা রূপে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৩. আকাশের ফিরিশতারা এবং জমিনের মানুষ ও জিন সবাই কিয়ামতের দিন নিজ প্রতিপালকের নিকট বিনয়ী হয়ে আসবে।
94
لَّقَدْ أَحْصَىٰهُمْ وَعَدَّهُمْ عَدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৪. তিনি তাদের সব কিছুই জানেন এবং তাদেরকে তিনি ভালোভাবে গণনা করে রেখেছেন। তাই তাদের কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়।
95
وَكُلُّهُمْ ءَاتِيهِ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ فَرْدًا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং কিয়ামাত দিবসে তাদের সকলেই তাঁর নিকট আসবে একাকী অবস্থায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৫. তাদের সবাই কিয়ামতের দিন তাঁর নিকট একাকীভাবে আসবে। সেদিন তার কোন সাহায্যকারী ও সম্পদ থাকবে না।
96
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ ٱلرَّحْمَـٰنُ وُدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে দয়াময় তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন ভালবাসা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৬. নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং তাঁর সন্তুষ্টি মাফিক নেক আমল করেছে আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাদের জন্য তাঁর একান্ত ভালোবাসা নির্ধারণ করবেন। তিনি নিজেই তাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তাঁর বান্দাদের নিকটও তাদেরকে ভালোবাসার পাত্র বানাবেন।
97
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَـٰهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ ٱلْمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِۦ قَوْمًا لُّدًّا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমিতো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তুমি ওর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং বিতন্ডা প্রবণ সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৭. হে রাসূল! আমি এ কুর‘আনকে আপনার ভাষায় নাযিল করে তাকে অতি সহজ করেছি। যাতে আপনি এরই মাধ্যমে আমার আদেশ ও নিষেধ মানা মুত্তাকীদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ এবং সত্য মানার ক্ষেত্রে কঠিন ঝগড়াটে ও হঠকারী সম্প্রদায়কে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করতে পারেন।
98
وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هَلْ تُحِسُّ مِنْهُم مِّنْ أَحَدٍ أَوْ تَسْمَعُ لَهُمْ رِكْزًۢا
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের পূর্বে আমি কত মানব গোষ্ঠীকে বিনাশ করেছি! তুমি কি তাদের কেহকেও দেখতে পাও অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৮. আমি আপনার সম্প্রদায়ের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছি। আপনি কি আজ সে জাতিগুলোর কোনটিকে অনুভব করতে পারছেন?! নাকি আপনি তাদের কোন গোপন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন?! তাদের ব্যাপারে যা ঘটেছে তা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে অন্যের ব্যাপারেও ঘটতে পারে।