আল-মায়িদাহ
المائدة
بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় মেহেরবান।
1
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَوْفُوا۟ بِٱلْعُقُودِ ۚ أُحِلَّتْ لَكُم بَهِيمَةُ ٱلْأَنْعَـٰمِ إِلَّا مَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ غَيْرَ مُحِلِّى ٱلصَّيْدِ وَأَنتُمْ حُرُمٌ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيدُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের ও‘য়াদাগুলি পূর্ণ কর। তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। তবে যেগুলি হারাম হওয়া সম্পর্কে তোমাদের উপর পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলি এবং ইহরাম বাঁধা অবস্থায় তোমাদের শিকার করা জন্তুগুলি হালাল নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হুকুম করে থাকেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১. হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ¯্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে করা পাকাপোক্ত সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করো। আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু তথা উট, গরু ও ছাগল হালাল করেছেন। তবে তোমাদেরকে পড়ে শুনানো হারাম বস্তু এবং হজ্জ ও উমরাহর ইহরাম অবস্থায় স্থলভাগের শিকার করা হারাম পশুগুলো ছাড়া। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হিকমত অনুযায়ী যা হালাল ও হারাম করার ইচ্ছা করেন তাই ফায়সালা করেন। এ বিষয়ে তাঁকে বাধ্য করা এবং তাঁর ফায়সালার ব্যাপারে আপত্তি করার কেউ নেই।
2
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُحِلُّوا۟ شَعَـٰٓئِرَ ٱللَّهِ وَلَا ٱلشَّهْرَ ٱلْحَرَامَ وَلَا ٱلْهَدْىَ وَلَا ٱلْقَلَـٰٓئِدَ وَلَآ ءَآمِّينَ ٱلْبَيْتَ ٱلْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَٰنًا ۚ وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَٱصْطَادُوا۟ ۚ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَـَٔانُ قَوْمٍ أَن صَدُّوكُمْ عَنِ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ أَن تَعْتَدُوا۟ ۘ وَتَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْبِرِّ وَٱلتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিদর্শনাবলী, নিষিদ্ধ মাসগুলি, কুরবানীর পশুগুলির গলায় ব্যবহৃত চিহ্নগুলি এবং যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ পাবার জন্য সম্মানিত ঘরে যাবার ইচ্ছা করে তাদের অবমাননা করা বৈধ মনে করনা। আর তোমরা যখন ইহরাম থেকে মুক্ত হও তখন শিকার কর। যারা তোমাদেরকে পবিত্র মাসজিদে যেতে বাঁধা দিয়েছে সেই সম্প্রদায়ের দুশমনি যেন তোমাদেরকে সীমা ছাড়িয়ে যেতে উৎসাহিত না করে। সৎ কাজ করতে ও সংযমী হতে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য কর। তবে পাপ ও শক্রতার ব্যাপারে তোমরা একে অপরকে সাহায্য করনা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২. হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর হারামকৃত বস্তুগুলোকে হালাল মনে করবে না। যার প্রতি তিনি তোমাদেরকে সম্মান প্রদর্শনের আদেশ করেছেন। আর তোমরা ইহরাম অবস্থার নিষিদ্ধ কর্মকাÐ থেকে বিরত থাকো। যেমন: পুরুষরা সেলাই কাপড় পরিধান করবে না। হারাম এলাকার নিষিদ্ধ কর্মকাÐ থেকেও বিরত থাকবে। যেমন: সেখানকার কোন পশু শিকার করা। অনুরূপভাবে তোমরা জিলক্বদ, যিলহজ্জ, মুহাররাম ও রজব তথা হারাম এ চার মাসে হত্যাকাÐকে হালাল মনে করো না। তেমনিভাবে যে চতুস্পদ পশুগুলোকে হারাম এলাকায় জবাইয়ের জন্য হাদিয়া দেয়া হয় সেগুলোকে তোমরা অপহরণ ইত্যাদি অথবা সেগুলোকে নিজ জায়গায় পৌঁছুতে বাধা দেয়ার মাধ্যমে হালাল করে নিয়ো না। অনুরূপভাবে সে পশুকেও হালাল মনে করো না যার গলায় তাকে হাদি হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুতো ইত্যাদির মালা পরানো হয়েছে। তেমনিভাবে বাইতুল্লাহিল-হারামকে উদ্দেশ্য করে আসা লোকদের সম্পদকেও তোমরা হালাল মনে করো না। যারা এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক লাভ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। আর যখন তোমরা হজ্জ-উমরাহর ইহরাম থেকে হালাল হবে এবং হারাম থেকে বের হয়ে যাবে তখন তোমরা চাইলে শিকার করতে পারো। তোমাদেরকে মসজিদুল-হারামে আসতে বাধা দেয়ার দরুন কোন সম্প্রদায়ের শত্রæতা যেন তাদের উপর যুলুম ও বেইনসাফি করতে উৎসাহিত না করে। হে মু’মিনরা! তোমরা আদিষ্ট কাজ করা ও নিষিদ্ধ কাজ ছাড়তে একে অপরকে সহযোগিতা করো। আর আল্লাহর আনুগত্যে অনড় থাকবে ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে দূরে থেকে তাঁকে ভয় করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অবাধ্যের কঠিন শাস্তিদাতা। তাই তোমরা তাঁর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকো।
3
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ ٱلْمَيْتَةُ وَٱلدَّمُ وَلَحْمُ ٱلْخِنزِيرِ وَمَآ أُهِلَّ لِغَيْرِ ٱللَّهِ بِهِۦ وَٱلْمُنْخَنِقَةُ وَٱلْمَوْقُوذَةُ وَٱلْمُتَرَدِّيَةُ وَٱلنَّطِيحَةُ وَمَآ أَكَلَ ٱلسَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى ٱلنُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوا۟ بِٱلْأَزْلَـٰمِ ۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌ ۗ ٱلْيَوْمَ يَئِسَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَٱخْشَوْنِ ۚ ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلْإِسْلَـٰمَ دِينًا ۚ فَمَنِ ٱضْطُرَّ فِى مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ ۙ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমাদের জন্য মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অপরের নামে উৎসর্গীকৃত পশু, কন্ঠরোধে মারা পশু, আঘাত লেগে মরে যাওয়া পশু, পতনের ফলে মৃত পশু, শৃংগাঘাতে মৃত পশু এবং হিংস্র জন্তুতে খাওয়া পশু হারাম করা হয়েছে; তবে যা তোমরা যবাহ দ্বারা পবিত্র করেছ তা হালাল। আর যে সমস্ত পশুকে পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয়েছে তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এসব কাজ পাপ। আজ কাফিরেরা তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করনা; শুধু আমাকেই ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসাবে মনোনীত করলাম। তবে কেহ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় আহার করতে বাধ্য হলে সেগুলি খাওয়া তার জন্য হারাম হবেনা। কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন জবাই ছাড়া মৃত পশু। তেমনিভাবে তিনি হারাম করেছেন প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোস্ত, আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নামে জবাই করা পশু, শ্বাসরুদ্ধ করে মারা পশু, আঘাত করে মারা পশু, উপর থেকে নিচে পড়ে মারা যাওয়া পশু, অন্য পশুর আঘাতে মারা যাওয়া পশু, হিং¯্র প্রাণী যেমন: সিংহ, চিতা ও নেকড়ে কর্তৃক ছিঁড়ে খাওয়া পশু। তবে উক্ত পশুগুলো জীবিত পেয়ে জবাই করলে তা তোমাদের জন্য হালাল। তেমনিভাবে তোমাদের জন্য হারাম মূর্তির জন্য জবাই করা পশু। অনুরূপভাবে তিনি হারাম করেছেন তোমাদের অদৃশ্যের বন্টনকে পাথর ও তীরের মাধ্যমে কামনা করা যেগুলোর কোনটিতে লিখা আছে “করো” আর কোনটিতে লিখা আছে “করো না”। যা তার জন্য বের হয় সে সেটির উপরই আমল করে। উপরোক্ত হারাম কাজগুলো করা মানে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া। আজ কাফিররা ইসলামের শক্তি দেখে ইসলাম ধর্ম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে গেছে। তাই তোমরা তাদেরকে ভয় না করে কেবল আমাকেই ভয় করো। আজ আমি তোমাদের ধর্ম ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আর আমার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল নিয়ামত পুরোপুরি দিয়েছি এবং আমি তোমাদের জন্য ইসলামকেই ধর্ম হিসেবে চয়ন করেছি। তাই আমি এ ছাড়া অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করবো না। তবে কেউ পাপের প্রবণতা ছাড়া কেবল ক্ষুধার তাড়নায় মৃত পশু খেতে বাধ্য হলে তাতে তার কোন গুনাহ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল দয়ালু।
4
يَسْـَٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمْ ۖ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَـٰتُ ۙ وَمَا عَلَّمْتُم مِّنَ ٱلْجَوَارِحِ مُكَلِّبِينَ تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ ٱللَّهُ ۖ فَكُلُوا۟ مِمَّآ أَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَٱذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَيْهِ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَرِيعُ ٱلْحِسَابِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে - তাদের জন্য কি কি হালাল করা হয়েছে? তুমি বলঃ পবিত্র জিনিসগুলি তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী তোমরা যে সমস্ত পশু-পক্ষীকে শিকার করা শিক্ষা দিয়েছ; তারা যা শিকার করে আনে তা তোমরা খাও এবং ওগুলিকে শিকারের জন্য পাঠানোর সময় আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪. হে রাসূল! আপনার সাহাবীগণ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কী খাওয়া হালাল করেছেন? আপনি বলুন, হে রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন সকল পবিত্র খাদ্য এবং দন্ত বিশিষ্ট প্রশিক্ষিত পশু যেমন: কুকুর ও বাঘ এবং থাবাযুক্ত পাখী যেমন: বাজ ইত্যাদির শিকার। প্রশিক্ষিত পশু-পাখির গুণ হলো তাদেরকে শিকারের আদেশ করা হলে সে আদেশ মানে আর তা থেকে বিরত থাকতে ধমক দেয়া হলে তা থেকে বিরত হয়। তাই সেগুলোর হত্যা করা শিকার তোমরা খেতে পারো। তবে তোমরা সেগুলোকে ছাড়ার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। আর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমলসমূহের দ্রæত হিসাবকারী।
5
ٱلْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَـٰتُ ۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ حِلٌّ لَّكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْ ۖ وَٱلْمُحْصَنَـٰتُ مِنَ ٱلْمُؤْمِنَـٰتِ وَٱلْمُحْصَنَـٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَآ ءَاتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَـٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِىٓ أَخْدَانٍ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِٱلْإِيمَـٰنِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলি হালাল করা হল। আহলে কিতাবের যবাহকৃত জীবও তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের যবাহকৃত জীবও তাদের জন্য হালাল। আর সতী সাধ্বী মুসলিম নারীরাও এবং তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাবের মধ্যকার সতী-সাধ্বী নারীরাও (তোমাদের জন্য হালাল), যখন তোমরা তাদেরকে তাদের বিনিময় (মোহর) প্রদান কর, এ রূপে যে, তোমরা (তাদেরকে) পত্নী রূপে গ্রহণ করে নাও, না প্রকাশ্যে ব্যভিচার কর, আর না গোপন প্রণয় কর; আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কুফরী মিশ্রিত করবে তার ‘আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫. আজ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সুস্বাদু পবিত্র খাবার এবং আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জবাইকৃত পশু হালাল করেছেন। উপরন্তু তোমাদের জবাইকৃত পশুও তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তেমনিভাবে তোমাদের জন্য সতী-স্বাধীন মু’মিন নারী এবং পূর্বের কিতাবী তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নারীদেরকেও বিবাহ করা হালাল করা হয়েছে। যদি তোমরা তাদের মোহরানা দিয়ে দাও এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া থেকে সৎ থাকো। উপরন্তু তাদের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য তাদেরকে গোপন সঙ্গিনী বা প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ না করো। আল্লাহর বান্দাদের জন্য রচিত বিধানাবলীর সাথে কুফরিকারীর আমলসমূহ বাতিল হয়ে যায়। কারণ, তার মাঝে আমল কবুল হওয়ার শর্তটুকু তথা ঈমানই পাওয়া যায় না। উপরন্তু সে কিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশ করে সেখানে অনন্ত কাল থাকবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।
6
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغْسِلُوا۟ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى ٱلْمَرَافِقِ وَٱمْسَحُوا۟ بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى ٱلْكَعْبَيْنِ ۚ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَٱطَّهَّرُوا۟ ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰٓ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَآءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ ٱلْغَآئِطِ أَوْ لَـٰمَسْتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوا۟ مَآءً فَتَيَمَّمُوا۟ صَعِيدًا طَيِّبًا فَٱمْسَحُوا۟ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ ۚ مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُۥ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশে দন্ডায়মান হও তখন (সালাতের পূর্বে) তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলিকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসাহ কর এবং পা’গুলিকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল। যদি তোমরা অপবিত্র হও তাহলে গোসল করে সমস্ত শরীর পবিত্র করে নাও। কিন্তু যদি রোগগ্রস্ত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ পায়খানা হতে ফিরে আস কিংবা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ কর (স্ত্রী-সহবাস কর), অতঃপর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও, তখন তোমরা তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ কর, আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা আনয়ন করতে চাননা, বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে ও তোমাদের উপর স্বীয় নি‘আমাত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬. হে ঈমানদাররা! তোমরা সালাত আদায়ের প্রস্তুতির ইচ্ছা করলে এবং কম নাপাক হলে ওযু করো। ওযুর নিয়ম হলো মুখমÐল ও কনুইসহ হাতগুলো ধৌত করা এবং নিজেদের মাথাগুলো মাসেহ করা ও জঙ্ঘার জোড়ার উঁচু গোড়ালিসহ পাগুলো ধৌত করা। আর বড় রকমের নাপাক হলে গোসল করে নাও। তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়া এবং রোগ বেড়ে যাওয়া কিংবা সুস্থ হতে দেরি হওয়ার আশঙ্কা করলে অথবা সুস্থাবস্থায় মুসাফির হলে কিংবা মলমূত্র ত্যাগের মতো কোন কারণে কম নাপাক হলে অথবা স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে বড় ধরনের নাপাক হলে এবং খোঁজা সত্তে¡ও পবিত্রতার জন্য পানি না পেলে মাটি নিবে। এরপর তাতে হাত লাগিয়ে চেহারা ও হাতদু’টো মাসেহ করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর বিধানগত সঙ্কীর্ণতা চাপিয়ে দিতে চান না তথা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর পানি ব্যবহারে তোমাদেরকে বাধ্য করেন না। তাই তিনি তোমাদের জন্য রোগের কারণে পানি ব্যবহারে ওজর থাকলে কিংবা পানিই না থাকলে এর বিকল্পের বিধান করেন। তাঁর নিয়ামত তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করার জন্য। যাতে তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো এবং তাঁর সাথে কুফরি না করো।
7
وَٱذْكُرُوا۟ نِعْمَةَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمِيثَـٰقَهُ ٱلَّذِى وَاثَقَكُم بِهِۦٓ إِذْ قُلْتُمْ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তোমরা তোমাদের প্রতি বর্ষিত আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর এবং তাঁর ঐ অঙ্গীকারকেও স্মরণ কর, যে অঙ্গীকার তিনি তোমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। তোমরা বলেছিলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের কথাগুলিরও পূর্ণ খবর রাখেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭. তোমরা ইসলামের প্রতি হিদায়েতের ন্যায় আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করো আর সেই অঙ্গীকারকেও স্মরণ করো যা তিনি তোমাদের সাথে করেছেন যখন তোমরা রাজি ও নারাজ অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা শুনা ও তাঁর আনুগত্য করার বায়আত করতে গিয়ে বললে: আমরা আপনার কথা শুনলাম ও আপনার আদেশ মানলাম। আর তোমরা আল্লাহর আদেশ (তাতে তাঁর সাথে করা অঙ্গীকারও রয়েছে) নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরের সবই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়।
8
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُونُوا۟ قَوَّٰمِينَ لِلَّهِ شُهَدَآءَ بِٱلْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَـَٔانُ قَوْمٍ عَلَىٰٓ أَلَّا تَعْدِلُوا۟ ۚ ٱعْدِلُوا۟ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে বিধানসমূহ পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠাকারী ও ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হয়ে যাও, কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের শক্রতা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবেনা। তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটা আল্লাহ-ভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিফহাল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮. হে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাঁর অধিকারগুলোর প্রতিষ্ঠাকারী ও ইনসাফের সাক্ষী হয়ে যাও; যুলুমের নয়। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন বেইনসাফির প্রতি উৎসাহিত না করে। কারণ, ইনসাফটুকু বন্ধু ও শত্রæ উভয়ের সাথেই কাম্য। তাই তোমরা তাদের উভয়ের সাথেই ইনসাফ করো। কারণ, ইনসাফ আল্লাহর ভয়। আর যুলুম তাঁর সাথে ধৃষ্টতা দেখানোরই নামান্তর। তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে সম্যক অবগত। তাঁর নিকট তোমাদের কোন আমলই গোপন নয়। তাই অচিরেই তিনি তোমাদেরকে তার প্রতিদান দিবেন।
9
وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ ۙ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে তাদেরকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাদের জন্য ক্ষমা ও মহান পুরস্কার রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯. আল্লাহ তা‘আলা তিনি ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী নেককারদের সাথে গুনাহ মাফের এবং জান্নাতে প্রবেশের ন্যায় মহা পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন। যিনি তাঁর ওয়াদা কখনো ভঙ্গ করেন না।
10
وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَحِيمِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পক্ষান্তরে যারা কুফরী করেছে এবং আমার বিধানসমূহকে মিথ্যা জেনেছে তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০. যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে এবং তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তারা মূলতঃ জাহান্নামের অধিবাসী। তারা নিজেদের কুফরি ও মিথ্যা প্রতিপন্নের শাস্তি স্বরূপ সেখানে প্রবেশ করবে। তারা সেখানকার বাধ্যতামূলক সঙ্গী হবে যেমনিভাবে কোন সাথী তার সাথীর সর্বদার সঙ্গী হয়।
11
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوٓا۟ إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন এক সম্প্রদায় এই চিন্তায় ছিল যে, তোমাদের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত করবে, কিন্তু আল্লাহ তাদের হাতকে তোমাদের দিক থেকে থামিয়ে দিয়েছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, এবং মু’মিনদের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১. হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের অন্তর ও মুখ দিয়ে স্মরণ করো আল্লাহর দেয়া নিরাপত্তার নিয়ামত এবং যে ভয় তোমাদের শত্রæর অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন যখন তোমাদেরকে কঠিনভাবে ধরে হত্যা করার জন্য তারা তোমাদের দিকে তাদের হাত বাড়ানোর ইচ্ছা করেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের থেকে সরিয়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করো। দ্বীন ও দুনিয়ার সুবিধাদি হাসিলের ক্ষেত্রে মু’মিনরা যেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার উপরই ভরসা করে।
12
۞ وَلَقَدْ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَـٰقَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ ٱثْنَىْ عَشَرَ نَقِيبًا ۖ وَقَالَ ٱللَّهُ إِنِّى مَعَكُمْ ۖ لَئِنْ أَقَمْتُمُ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَيْتُمُ ٱلزَّكَوٰةَ وَءَامَنتُم بِرُسُلِى وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ ٱللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّأُكَفِّرَنَّ عَنكُمْ سَيِّـَٔاتِكُمْ وَلَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّـٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ ۚ فَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ ٱلسَّبِيلِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আল্লাহ বানী ইসরাঈলের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি তাদের মধ্য হতে বারো জন দলপতি নিযুক্ত করেছিলাম; এবং আল্লাহ বলেছিলেনঃ আমি তোমাদের সাথে রয়েছি, যদি তোমরা সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত কর ও যাকাত দিতে থাক এবং আমার রাসূলদের উপর ঈমান আন ও তাদেরকে সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তমরূপে কর্জ দিতে থাক; তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের পাপগুলি তোমাদের থেকে মুছে দিব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে এমন উদ্যানসমূহে দাখিল করব যার তলদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে, অতঃপর যে ব্যক্তি এরপরও কুফরী করবে, নিশ্চয়ই সে সোজা পথ থেকে দূরে সরে পড়ল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২. আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈল থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছেন যার বর্ণনা সামনে আসছে এবং তাদের উপর বারো জন দায়িত্বশীল নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেক দায়িত্বশীল তার অধীনস্থের ব্যাপারটি দেখবে। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে বলেন: আমি তোমাদের সাহায্য-সহযোগিতায় রয়েছি যদি তোমরা পরিপূর্ণভাবে সালাত আদায় করো, নিজেদের সম্পদের যাকাত দাও আর কোন পার্থক্য ছাড়া আমার সকল রাসূলকে বিশ্বাস, সম্মান ও সহযোগিতা করো এবং কল্যাণের ক্ষেত্রগুলোতে ব্যয় করো। তোমরা এ সব কাজ করলে আমি তোমাদের কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেবো আর কিয়ামতের দিন এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবো যার অট্টালিকাসমূহের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় অনেকগুলো নদী। যে ব্যক্তি এ দৃঢ় অঙ্গীকার নেয়ার পর আবারো কুফরি করলো সে যেন জেনেশুনে স্বেচ্ছায় সত্য পথ থেকে দূরে সরে গেলো।
13
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَـٰقَهُمْ لَعَنَّـٰهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَـٰسِيَةً ۖ يُحَرِّفُونَ ٱلْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ ۙ وَنَسُوا۟ حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦ ۚ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىٰ خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۖ فَٱعْفُ عَنْهُمْ وَٱصْفَحْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বস্তুতঃ শুধু তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণেই আমি তাদেরকে স্বীয় অভিশপ্ত করলাম এবং অন্তরকে কঠোর করে দিলাম। তারা কালামকে (তাওরাত) ওর স্থানসমূহ হতে পরিবর্তন করে দেয় এবং তাদেরকে যা কিছু উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তার মধ্য হতে এক বড় অংশকে বিস্মৃত হতে বসেছে, আর আগামীতেও (অবিরত) তাদের কোন না কোন খিয়ানতের সংবাদ তোমার নিকট আসতে থাকবে, তাদের অল্প কয়েকজন ব্যতীত। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা করতে থাক এবং তাদেরকে মার্জনা করতে থাক; নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচারী লোকদেরকে ভালবাসেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩. তাদের কাছ থেকে গৃহীত অঙ্গীকার ভঙ্গ করার দরুন আমি তাদেরকে আমার রহমত থেকে বিতাড়িত করেছি এবং তাদের অন্তরগুলোকে শক্ত ও কঠিন বানিয়ে দিয়েছি। তাই সেগুলোর দিকে আর কোন কল্যাণ পৌঁছাবে না এবং কোন উপদেশ বাণীও সেগুলোর ফায়দায় আসবে না। তারা কুর‘আনের শব্দগুলোকে পরিবর্তন করে নিজ জায়গা থেকে বিচ্যুত করে এবং নিজেদের মন মতো সেগুলোর অর্থকে বিকৃত করে। উপরন্তু তারা তাদেরকে দেয়া কিছু উপদেশের উপর আমল ছেড়ে দিয়েছে। হে রাসূল! আপনি আল্লাহ ও তাঁর মু’মিন বান্দাদের প্রতি তাদের খিয়ানত অবিরত দেখতে পাবেন। তাদের খুব কম সংখ্যকই তাদের থেকে নেয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। তাই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদেরকে সে জন্য পাকড়াও না করে তাদের অপরাধগুলো মার্জনা করুন। কারণ, এটিই হলো সৎকর্মশীলতা। আর আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।
14
وَمِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّا نَصَـٰرَىٰٓ أَخَذْنَا مِيثَـٰقَهُمْ فَنَسُوا۟ حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦ فَأَغْرَيْنَا بَيْنَهُمُ ٱلْعَدَاوَةَ وَٱلْبَغْضَآءَ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۚ وَسَوْفَ يُنَبِّئُهُمُ ٱللَّهُ بِمَا كَانُوا۟ يَصْنَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যারা বলেঃ ‘আমরা নাসারাহ,’ আমি তাদের নিকট থেকেও ও‘য়াদা নিয়েছিলাম, অনন্তর তাদেরকেও যা কিছু উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার মধ্য হতে তারা নিজেদের এক বড় অংশ বিস্মৃত হয়েছে। সুতরাং আমি তাদের পরস্পরের মধ্যে হিংসা ও শক্রতা সঞ্চার করে দিলাম কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত এবং অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সংবাদ দিবেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪. যেভাবে আমি ইহুদিদের থেকে মজবুত ও দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছি তেমনিভাবে আমি ওদের থেকেও অঙ্গীকার নিয়েছি যারা ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) এর অনুসারী বলে নিজেদের পবিত্রতা বর্ণনা করেছে; অথচ তারা স্মৃত বিধানের কিছু অংশের উপর আমল ছেড়ে দিয়েছে। যেমন তাদের পূর্বেকার ইহুদিরা করেছে। ফলে আমি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের মাঝে ঝগড়া ও কঠিন ঘৃণা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। তাই তারা পরস্পর হত্যা ও সংঘর্ষকারীর রূপ ধারণ করে একে অপরকে কাফির বলছে। আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাদেরকে তাদের কর্মকাÐের সংবাদ ও সেই ভিত্তিতে তাদের প্রতিদান দিবেন।
15
يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ ٱلْكِتَـٰبِ وَيَعْفُوا۟ عَن كَثِيرٍ ۚ قَدْ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٌ وَكِتَـٰبٌ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছে, তোমরা কিতাবের যে সব বিষয় গোপন কর তন্মধ্য হতে বহু বিষয় সে তোমাদের সামনে পরিস্কারভাবে ব্যক্ত করে, আর বহু বিষয় (প্রকাশ করা) বর্জন করে, তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এক আলোকময় বস্ত্ত এসেছে এবং তা একটি স্পষ্ট কিতাব (কুরআন)।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫. হে তাওরাত ধারণকারী ইহুদি ও ইঞ্জীলধারণকারী খ্রিস্টান আহলে কিতাব! নিশ্চয়ই আমার রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের নিকট এসেছেন। যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের গোপন অনেক কিছুই বর্ণনা করবেন। তবে যেগুলোতে তোমাদের মানহানি করা ছাড়া অন্য কোন ফায়েদা নেই এমন অনেক কিছুই তিনি এড়িয়ে যাবেন। তোমাদের নিকট কুর‘আন মাজীদ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি কিতাব হিসেবেই এসেছে। যা দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সেগুলোর একটি সুস্পষ্ট কিতাব ও আলোকময় জ্যোতি।
16
يَهْدِى بِهِ ٱللَّهُ مَنِ ٱتَّبَعَ رِضْوَٰنَهُۥ سُبُلَ ٱلسَّلَـٰمِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذْنِهِۦ وَيَهْدِيهِمْ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তা দ্বারা আল্লাহ এরূপ লোকদেরকে শান্তির পন্থাসমূহ বলে দেন যারা তাঁর সন্তুষ্টি অম্বেষণ করে এবং তিনি তাদেরকে নিজ তাওফীকে (ও করুণায়) কুফরীর অন্ধকার থেকে বের করে (ঈমানের) আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং তাদেরকে সরল (সঠিক) পথে প্রতিষ্ঠিত রাখেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬. আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাবের মাধ্যমে ওদেরকে তাঁর শাস্তি থেকে মুক্তির পথ দেখান যারা ঈমান ও আল্লাহর পছন্দীয় নেক আমলের অনুসরণ করে। এমন পথ যা জান্নাতের দিকে পৌঁছিয়ে দেয় এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাদেরকে কুফরি ও গুনাহর অন্ধকার থেকে ঈমান ও আনুগত্যের আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসে। উপরন্তু তিনি তাদেরকে ইসলামের সরল ও সোজা পথে চলার তাওফীক দেন।
17
لَّقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ ۚ قُلْ فَمَن يَمْلِكُ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا إِنْ أَرَادَ أَن يُهْلِكَ ٱلْمَسِيحَ ٱبْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُۥ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًا ۗ وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই তারা কাফির যারা বলেঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ স্বয়ং হচ্ছেন মসীহ্ (ঈসা) ইবনে মারইয়াম! তুমি বলঃ যদি আল্লাহ মসীহ্ (ঈসা) ইবনু মারইয়ামকে ও তার মাতাকে এবং ভূ-পৃষ্ঠে যারা আছে তাদের সবাইকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন তাহলে এরূপ কে আছে যে তাদেরকে আল্লাহ হতে এতটুকু রক্ষা করতে পারে? আল্লাহরই কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট রয়েছে আকাশসমূহে ও যমীনে এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত যাবতীয় কিছুর উপর; তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই সৃষ্টি করেন, আর আল্লাহ সকল বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭. “নিশ্চয়ই মাসীহ ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামই হলেন স্বয়ং আল্লাহ” এর প্রবক্তা খ্রিস্টানরা কাফির হয়ে গেছে। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলুন: আল্লাহ তা‘আলা যদি মাসীহ ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম, তাঁর মা এবং দুনিয়ার সকলকে ধ্বংস করার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলে কে আছে এমন যে আল্লাহ তা‘আলাকে এ কাজে বাধা দিতে সক্ষম?! যদি কেউ তাঁকে এ কাজে বাধা দিতে সক্ষমই না হয়ে থাকে তাহলে তা এটা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। আর ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম, তাঁর মা এবং দুনিয়ার সকল সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহরই সৃষ্টি। আকাশ-জমিন ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে তার মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন তার মধ্যকার অন্যতম হলেন ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম)। তাই তিনি তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু করতেই সক্ষম।
18
وَقَالَتِ ٱلْيَهُودُ وَٱلنَّصَـٰرَىٰ نَحْنُ أَبْنَـٰٓؤُا۟ ٱللَّهِ وَأَحِبَّـٰٓؤُهُۥ ۚ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُم بِذُنُوبِكُم ۖ بَلْ أَنتُم بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ ۚ وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ وَإِلَيْهِ ٱلْمَصِيرُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইয়াহুদী ও নাসারাহ্ বলেঃ আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়পাত্র। তুমি তাদের বলে দাও, আচ্ছা তাহলে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের পাপের দরুণ কেন শাস্তি প্রদান করবেন? বরং তোমরাও অন্যান্য সৃষ্টির ন্যায় সাধারণ মানুষ মাত্র, তিনি যাকে ইচ্ছা মার্জনা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন, আর আল্লাহর কর্তৃত্ব রয়েছে আকাশসমূহে ও যমীনে এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুতেও; আর সবাইকে আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রত্যেকেই দাবি করে যে, তারা আল্লাহর সন্তান ও প্রিয়পাত্র। হে রাসূল! আপনি তাদের দাবি খÐন করতে গিয়ে বলুন: তাহলে তোমাদের কৃত পাপের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে শাস্তি দেন কেন?! তোমাদের দাবি অনুযায়ী তোমরা যদি সত্যিই তাঁর প্রিয়পাত্র হতে তাহলে তিনি তোমাদেরকে দুনিয়াতে হত্যা ও বিকৃতির মাধ্যমে এবং আখিরাতে আগুনের মাধ্যমে শাস্তি দিতেন না। কারণ, তিনি তো তাঁর প্রিয় পাত্রকে শাস্তি দেন না। বরং তোমরা অন্য মানুষের মতোই সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যকার যে ভালো করবে তিনি তাকে জান্নাত দিয়ে প্রতিদান দিবেন আর যে খারাপ করবে তাকে জাহান্নাম দিয়ে শাস্তি দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকেই তাঁর দয়ায় ক্ষমা করেন আর যাকে চান তাকেই তাঁর ইনসাফ ভিত্তিক শাস্তি দিয়ে থাকেন। একমাত্র আল্লাহর জন্যই আসমান, জমিন ও এতদুভয়ের সব কিছুর মালিকানা। একমাত্র তাঁর দিকেই সব কিছুর প্রত্যাবর্তন।
19
يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ عَلَىٰ فَتْرَةٍ مِّنَ ٱلرُّسُلِ أَن تَقُولُوا۟ مَا جَآءَنَا مِنۢ بَشِيرٍ وَلَا نَذِيرٍ ۖ فَقَدْ جَآءَكُم بَشِيرٌ وَنَذِيرٌ ۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আহলে কিতাব! রাসূলদের আগমন দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পর তোমাদের নিকট আমার রাসূল এসে পৌঁছেছে, যে তোমাদেরকে স্পষ্টভাবে (আল্লাহর হুকুম) বলে দিচ্ছে, যেন তোমরা (কিয়ামাত দিনে) বলতে না পার যে, তোমাদের নিকট কোন সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রর্দশনকারী আগমন করেনি। (এখন তো) তোমাদের নিকট সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রর্দশনকারী এসে গেছে, আর আল্লাহ সকল বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯. হে ইহুদি ও খ্রিস্টান আহলে কিতাব! রাসূলদের আগমন দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা এবং আমার রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে পাঠানোর কঠিন প্রয়োজনীয়তা দেখার পরই তিনি তোমাদের নিকট এসেছেন। যাতে তোমরা ওজর-আপত্তি করতে না পারো, আমাদের কাছে আল্লাহর সাওয়াবের সুসংবাদদাতা এবং তাঁর শাস্তির প্রতি ভীতি প্রদর্শনকারী কোন রাসূলই আসেননি। তাই আল্লাহর সাওয়াবের সুসংবাদ এবং তাঁর শাস্তি প্রতি ভীতি প্রদর্শন করতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কাছে এসেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু করতে সক্ষম। কোন বস্তুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না। আর তাঁর শক্তির একটি আলামত হলো রাসূলদেরকে পাঠানো এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমে তাঁদের সমাপ্তি ঘটানো।
20
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِۦ يَـٰقَوْمِ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَةَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنۢبِيَآءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا وَءَاتَىٰكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি’আমতকে স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে বহু নাবী সৃষ্টি করলেন, রাজ্যাধিপতি করলেন এবং তোমাদেরকে এমন বস্তুসমূহ দান করলেন যা বিশ্ববাসীদের মধ্যে কেহকেও দান করেননি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলকে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের মুখ ও অন্তর দিয়ে আল্লাহর সে নিয়ামতের কথা স্মরণ করো যখন তিনি তোমাদের মাঝে এমন নবীদেরকে পাঠিয়েছেন যাঁরা তোমাদেরকে হিদায়েতের দিকে ডাকে। আর তিনি তোমাদেরকে বাদশাহ বানিয়েছেন। তোমরা একদিন বাধ্যতামূলক গোলাম ছিলে। আর আজ নিজেরাই নিজেদের মালিক হয়েছো। উপরন্তু তিনি তোমাদেরকে এমন নিয়ামত দিয়েছেন যা ইতোপূর্বে তোমাদের সমকালীন আর কাউকে দেননি।
21
يَـٰقَوْمِ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْأَرْضَ ٱلْمُقَدَّسَةَ ٱلَّتِى كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوا۟ عَلَىٰٓ أَدْبَارِكُمْ فَتَنقَلِبُوا۟ خَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার সম্প্রদায়! এই পুণ্য ভূমিতে প্রবেশ কর যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন, আর পিছনের দিকে ফিরে যেওনা, তাহলে তোমরা সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২১. মূসা (আলাইহিস-সালাম) বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা পবিত্র ভ‚মি তথা বাইতুল-মাক্বদিস এবং তার আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করো। যাতে প্রবেশ ও তথা কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার ওয়াদা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সাথে করেছেন। আর তোমরা প্রবল শক্তিধরদের সামনে পরাজিত হয়ো না। তা হলে দুনিয়া ও আখিরাত উভকালেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
22
قَالُوا۟ يَـٰمُوسَىٰٓ إِنَّ فِيهَا قَوْمًا جَبَّارِينَ وَإِنَّا لَن نَّدْخُلَهَا حَتَّىٰ يَخْرُجُوا۟ مِنْهَا فَإِن يَخْرُجُوا۟ مِنْهَا فَإِنَّا دَٰخِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ হে মূসা! সেখানেতো পরাক্রমশালী লোক রয়েছে। অতএব তারা যে পর্যন্ত সেখান হতে বের হয়ে না যায় সে পর্যন্ত আমরা সেখানে কখনও প্রবেশ করবনা। হ্যাঁ, যদি তারা সেখান হতে বেরিয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই আমরা যেতে প্রস্তুত আছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২২. মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় তাঁকে বললো: হে মূসা! নিশ্চয়ই পবিত্র ভ‚মিতে কঠিন যুদ্ধবাজ শক্তিশালী একটি সম্প্রদায় রয়েছে। সেখানে প্রবেশে আমাদের জন্য এটি বড় বাধা। তাই তারা থাকা পর্যন্ত আমরা তাতে কখনো প্রবেশ করবো না। কারণ, তাদের সাথে যুদ্ধ করার আমাদের কোন শক্তি-সামর্থ্য নেই। তারা সেখান থেকে বের হলেই কেবল আমরা সেখানে ঢুকবো।
23
قَالَ رَجُلَانِ مِنَ ٱلَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِمَا ٱدْخُلُوا۟ عَلَيْهِمُ ٱلْبَابَ فَإِذَا دَخَلْتُمُوهُ فَإِنَّكُمْ غَـٰلِبُونَ ۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓا۟ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সেই দুই ব্যক্তি (যারা আল্লাহকে ভয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন) বললঃ তোমরা তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে (নগরের) দ্বারদেশ পর্যন্ত যাও, অনন্তর যখনই তোমরা দ্বারদেশে পা রাখবে তখনই জয় লাভ করবে; এবং তোমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৩. মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের দু’ ব্যক্তি যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর শাস্তিকে ভয় পায় এবং যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্যের তাওফীকের মতো বিশেষ নিয়ামতটুকু দিয়েছেন তারা নিজেদের সম্প্রদায়কে মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর আদেশ মানার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে গিয়ে বললো: তোমরা সাহস করে এ প্রকাÐ শক্তিধরদের দরজায় আঘাত করো। তোমরা যদি তা করতে পারো তাহলে তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান ও বৈষয়িক উপকরণ সংগ্রহের ভিত্তিতে জয় পাওয়ার আল্লাহর সাধারণ নিয়মের উপর আস্থা রেখে তাঁর ইচ্ছায় তাদের উপর অচিরেই নিশ্চিত জয়ী হবে। তোমরা সত্যিকারের মু’মিন হলে একমাত্র আল্লাহর উপরই নির্ভরশীল ও তাঁর উপর ভরসা করো। কারণ, একমাত্র ঈমানই কাউকে তাঁর উপর ভরসা করতে বাধ্য করে।
24
قَالُوا۟ يَـٰمُوسَىٰٓ إِنَّا لَن نَّدْخُلَهَآ أَبَدًا مَّا دَامُوا۟ فِيهَا ۖ فَٱذْهَبْ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَـٰتِلَآ إِنَّا هَـٰهُنَا قَـٰعِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ হে মূসা! নিশ্চয়ই আমরা কখনও সেখানে পা রাখবনা যে পর্যন্ত তারা সেখানে বিদ্যমান থাকে। অতএব আপনি ও আপনার রাব্ব (আল্লাহ) চলে যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানেই বসে থাকব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৪. মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় তথা বনী ইসরাঈল তাদের নবী মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর আদেশ অমান্য করার ক্ষেত্রে নিজেদের অনড় অবস্থান দেখাতে গিয়ে বললো: এ প্রকাÐ শক্তিধররা এ শহরে অবস্থান করা পর্যন্ত আমরা কখনো প্রবেশ করবো না। তাই হে মূসা! আপনি ও আপনার রব গিয়ে এ প্রকাÐ শক্তিধরদের সাথে যুদ্ধ করুন আর আমরা আপনাদের সাথে যুদ্ধ করতে না গিয়ে এখানেই অবস্থান করছি।
25
قَالَ رَبِّ إِنِّى لَآ أَمْلِكُ إِلَّا نَفْسِى وَأَخِى ۖ فَٱفْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ ٱلْقَوْمِ ٱلْفَـٰسِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা বলল- হে আমার রাব্ব! আমি শুধু নিজের উপর ও নিজের ভাইয়ের উপর অধিকার রাখি, সুতরাং আপনি আমাদের উভয়ের এবং এই অবাধ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে মীমাংসা করে দিন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৫. মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর রব্বকে বললেন: হে আমার রব! আমি ও আমার ভাই হারূন ছাড়া কারো উপর আমার কর্তৃত্ব নেই। কাজেই আপনি আমাদের মাঝে এবং আপনি ও আপনার রাসূলের আনুগত্যের বাইরে অবস্থানকারী সম্প্রদায়ের মাঝে একটি ফায়সালা করে দিন।
26
قَالَ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ ۛ أَرْبَعِينَ سَنَةً ۛ يَتِيهُونَ فِى ٱلْأَرْضِ ۚ فَلَا تَأْسَ عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْفَـٰسِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ (তাহলে মীমাংসা এই যে) এই দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এদের হস্তগত হবেনা, এ রূপেই তারা ভূ-পৃষ্ঠে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরবে, সুতরাং তুমি অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্য (একটুও) বিষন্ন হয়োনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৬. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলের উপর চল্লিশ বছরের জন্য এ পবিত্র ভ‚মিতে প্রবেশ হারাম করেছেন। তারা এ সময় মরুভ‚মিতে পথ না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরবে। তাই হে মূসা! আপনি আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হওয়া সম্প্রদায়ের জন্য কোন হা-হুতাশ করবেন না। কারণ, তারা যে শাস্তি পাচ্ছে তা তাদের পাপের ফসল।
27
۞ وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱبْنَىْ ءَادَمَ بِٱلْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ ٱلْـَٔاخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ ۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلْمُتَّقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি তাদেরকে (আহলে কিতাবদেরকে) আদমের পুত্রদ্বয়ের (হাবীল ও কাবীলের) ঘটনা সঠিকভাবে পাঠ করে শুনিয়ে দাও; যখন তারা উভয়েই এক একটি কুরবানী উপস্থিত করল এবং তন্মধ্য হতে একজনের (হাবীলের) কুরবানী কবূল হল এবং অপরজনের কবূল হলনা। অপরজন বলতে লাগলঃ আমি তোমাকে নিশ্চয়ই হত্যা করব; প্রথমজন বললঃ আল্লাহ আল্লাহভীরুদের ‘আমলই কবূল করে থাকেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৭. হে রাসূল! আপনি এ ইহুদি যালিম হিংসুকদেরকে আদম (আলাইহিস-সালাম) এর দু’ সন্তানের প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে দিন। তারা হলো হাবীল ও কাবীল। তারা উভয়ে আল্লাহর নৈকট্যার্জনে একটি করে কুরবানী করলে আল্লাহ তা‘আলা হাবীলেরটি গ্রহণ করেন। আর কাবীলেরটি বর্জন করেন। কারণ, হাবীল ছিলো মুত্তাকী। আর কাবীল ছিলো বিদ্রোহী। তখন কাবীল হিংসাবশত হাবীলের কুরবানী কবুল হওয়াকে অপছন্দ করে উদ্ধত হয়ে বললো: হাবীল! আমি তোমাকে নিশ্চিত হত্যা করবো। তখন হাবীল ন¤্রভাবে বললো: আল্লাহ তা‘আলা তো কেবল তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী মুত্তাকীর কুরবানীই কবুল করে থাকেন।
28
لَئِنۢ بَسَطتَ إِلَىَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِى مَآ أَنَا۠ بِبَاسِطٍ يَدِىَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ ۖ إِنِّىٓ أَخَافُ ٱللَّهَ رَبَّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি যদি আমাকে হত্যা করার জন্য হাত প্রসারিত কর, তথাপি আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে কখনও আমার হাত বাড়াবনা; আমিতো বিশ্ব জাহানের রাব্ব আল্লাহকে ভয় করি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৮. তুমি আমাকে হত্যার জন্য আমার দিকে হাত বাড়ালেও আমি কিন্তু তোমার কর্মের ন্যায় তোমাকে প্রতিদান দেবো না। বস্তুতঃ এটি আমার পক্ষ থেকে কাপুরুষতা নয়। বরং আমি কেবল সকল সৃষ্টির রব আল্লাহকে ভয় করি।
29
إِنِّىٓ أُرِيدُ أَن تَبُوٓأَ بِإِثْمِى وَإِثْمِكَ فَتَكُونَ مِنْ أَصْحَـٰبِ ٱلنَّارِ ۚ وَذَٰلِكَ جَزَٰٓؤُا۟ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি চাই যে, (আমার দ্বারা কোন পাপ না হোক) তুমি আমার পাপ এবং তোমার পাপ সমস্তই নিজের মাথায় তুলে নাও; অনন্তর তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও, অত্যাচারীদের শাস্তি এরূপই হয়ে থাকে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৯. সে তাকে আরো ভয় দেখিয়ে বলে: আমি চাই তুমি যুলুম ও অত্যাচারবশত আমাকে হত্যা করার গুনাহ নিয়ে তোমার পূর্বের গুনাহের দিকে ফিরে গিয়ে কিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। এ প্রতিদান মুলতঃ অত্যাচারীদেরই প্রতিদান। তোমাকে হত্যা করার গুনাহ নিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া আমি চাই না।
30
فَطَوَّعَتْ لَهُۥ نَفْسُهُۥ قَتْلَ أَخِيهِ فَقَتَلَهُۥ فَأَصْبَحَ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তার প্রবৃত্তি তাকে স্বীয় ভ্রাতৃ হত্যার প্রতি প্রলুব্ধ করে তুলল। সুতরাং সে তাকে হত্যা করেই ফেলল, ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩০. অতঃপর কাবীলের অসৎকর্মে প্ররোচনাকারী আত্মা তার ভাই হাবীলকে যুলুমবশত হত্যা করার ব্যাপারটিকে তার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে সে তাকে হত্যা করে। ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়।
31
فَبَعَثَ ٱللَّهُ غُرَابًا يَبْحَثُ فِى ٱلْأَرْضِ لِيُرِيَهُۥ كَيْفَ يُوَٰرِى سَوْءَةَ أَخِيهِ ۚ قَالَ يَـٰوَيْلَتَىٰٓ أَعَجَزْتُ أَنْ أَكُونَ مِثْلَ هَـٰذَا ٱلْغُرَابِ فَأُوَٰرِىَ سَوْءَةَ أَخِى ۖ فَأَصْبَحَ مِنَ ٱلنَّـٰدِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আল্লাহ একটি কাক প্রেরণ করলেন, সে মাটি খুঁড়তে লাগল, যেন সে তাকে (কাবীলকে) শিখিয়ে দেয় যে, স্বীয় ভাইয়ের মৃতদেহ কিভাবে ঢাকবে, সে বলতে লাগলঃ আমার অবস্থার প্রতি আফসোস! আমি ঐ কাকের সমতুল্য হতে পারলামনা এবং নিজ ভাইয়ের মৃতদেহ আবৃত করতে অক্ষম হয়ে গেলাম। ফলে সে অত্যন্ত লজ্জিত হল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩১. তারপর আল্লাহ তা‘আলা একটি কাক পাঠালেন যে আরেকটি মৃত কাককে দাফন করার জন্য তার সামনেই মাটি খনন করতে লাগলো। যাতে সে কাবীলকে জানাতে পারে কীভাবে সে তার ভাইয়ের শরীর লুকাতে পারে। সে বললো: ধিক আমার! আমি এ কাকটির মতোও হতে পারলাম না যাতে আমি আমার ভাইয়ের লাশটি লুকাতে পারি? ফলে সে খুবই অনুতপ্ত হলো।
32
مِنْ أَجْلِ ذَٰلِكَ كَتَبْنَا عَلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفْسًۢا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِى ٱلْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحْيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعًا ۚ وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِٱلْبَيِّنَـٰتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم بَعْدَ ذَٰلِكَ فِى ٱلْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এ কারণেই আমি বানী ইসরাঈলের প্রতি এই নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে অন্য প্রাণের বিনিময় ব্যতীত, কিংবা তার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে কোন ফিতনা-ফাসাদ বিস্তার ব্যতীত, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেলল; আর যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করল, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করল; আর তাদের (বানী ইসরাঈলের) কাছে আমার বহু রাসূলও স্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে আগমন করেছিল, তবু এর পরেও তন্মধ্য হতে অনেকেই ভূ-পৃষ্ঠে সীমা লংঘনকারী হয়ে গেছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩২. কাবীল তার ভাইকে হত্যা করার দরুন আমি বনী ইসরাঈলকে জানিয়ে দিলাম যে, কিসাস অথবা কুফরি কিংবা ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করার ন্যায় কোন কারণ ছাড়া অন্যকে হত্যা করলে সে তাবৎ দুনিয়ার সকল মানুষ হত্যাকারীর সমান পাপী হবে। কারণ, তার নিকট অপরাধী ও নির্দোষের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আর যে ব্যক্তি কোন মানুষকে হত্যা করা হারাম মনে করে কাউকে হত্যা না করে আল্লাহর হারামকৃত কাউকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকলো সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকে বাঁচিয়ে দিলো। কারণ, তার এ কর্মকাÐের মাঝে সকলেরই নিরাপত্তা রয়েছে। বস্তুতঃ আমার রাসূলগণ বনী ইসরাঈলের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ ও প্রকাশ্য দলীল নিয়ে এসেছেন। এতদসত্তে¡ও তাদের অধিকাংশই গুনাহে লিপ্ত হওয়া ও তাঁর রাসূলগণের বিরোধিতার মাধ্যমে আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রম করে গেছে।
33
إِنَّمَا جَزَٰٓؤُا۟ ٱلَّذِينَ يُحَارِبُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَسْعَوْنَ فِى ٱلْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوٓا۟ أَوْ يُصَلَّبُوٓا۟ أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَـٰفٍ أَوْ يُنفَوْا۟ مِنَ ٱلْأَرْضِ ۚ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْىٌ فِى ٱلدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, আর ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শুলে চড়ান হবে, অথবা এক দিকের হাত ও অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে, অথবা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে; এটাতো দুনিয়ায় তাদের জন্য ভীষণ অপমান, আর আখিরাতেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তি রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৩. যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করে এবং হত্যা, ছিনতাই ও ডাকাতির মাধ্যমে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি ও শত্রæতার প্রকাশ্য ঘোষণা দেয় তাদের শাস্তি হলো তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করা ছাড়া হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হবে কিংবা তাদের ডান হাত ও বাম পা কেটে দেয়া হবে এবং আবার করলে তার বাম হাত ও ডান পা কেটে দেয়া হবে অথবা তাদেরকে দেশান্তর করা হবে। এটি শুধু তাদের দুনিয়ার লাঞ্ছনা এবং পরকালে তো রয়েছে তাদের জন্য মহাশাস্তি।
34
إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُوا۟ مِن قَبْلِ أَن تَقْدِرُوا۟ عَلَيْهِمْ ۖ فَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু হ্যাঁ, তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার করার পূর্বে যারা তাওবাহ করে, তাহলে জেনে রেখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৪. তবে হে কর্তৃত্বশীলরা! এ ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের যারা তোমাদের হাতে ধরা পড়ার আগেই তাওবা করে নেয় তোমরা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাওবার পর তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আর তাদের প্রতি তাঁর দয়ার একটি নমুনা হলো তাদের শাস্তিটুকু মওকুফ করে দেয়া।
35
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَٱبْتَغُوٓا۟ إِلَيْهِ ٱلْوَسِيلَةَ وَجَـٰهِدُوا۟ فِى سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর সান্নিধ্য অম্বেষণ কর ও আল্লাহর পথে জিহাদ করতে থাক। আশা করা যায় যে, তোমরা সফলকাম হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৫. হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো। আর আদিষ্ট কাজ আদায় ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য কামনা করো। উপরন্তু তাঁর সন্তুষ্টি কামনার্থে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো। তা করতে পারলে তোমরা নিজেদের প্রাপ্যটুকু পাবে এবং আতঙ্কের বিষয় থেকে দূরে থাকতে পারবে।
36
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَوْ أَنَّ لَهُم مَّا فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُۥ مَعَهُۥ لِيَفْتَدُوا۟ بِهِۦ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই যারা কাফির, যদি তাদের কাছে বিশ্বের সমস্ত সম্পদও থাকে এবং ওর সাথে তৎপরিমান আরও থাকে, এবং এগুলোর বিনিময়ে কিয়ামাতের শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়, তবুও এই সম্পদ তাদের থেকে কবূল করা হবেনা, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৬. যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছে যদি ধরে নেয়া হয় যে, তাদের প্রত্যেকেই দুনিয়ার সকল কিছু এবং তার সমপরিমাণের মালিক উপরন্তু তারা তা উপস্থাপন করেছে কিয়ামতের দিন আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য তারপরও সে মুক্তিপণ তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
37
يُرِيدُونَ أَن يَخْرُجُوا۟ مِنَ ٱلنَّارِ وَمَا هُم بِخَـٰرِجِينَ مِنْهَا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই তারা এটা কামনা করবে যে, জাহান্নাম থেকে বের হয়ে যায়, অথচ তারা তা থেকে কখনও বের হতে পারবেনা, বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৭. তারা জাহান্নামে ঢুকার পর তা থেকে বের হতে চাইলেও কখনো বের হতে পারবে না। বরং তাতে রয়েছে তাদের জন্য স্থায়ী শাস্তি।
38
وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقْطَعُوٓا۟ أَيْدِيَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا كَسَبَا نَكَـٰلًا مِّنَ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে, তোমরা তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসাবে তাদের (ডান হাত) কেটে ফেল, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি, আর আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান, মহা প্রজ্ঞাময়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৮. হে বিচারকরা! তোমরা চোর ও চুন্নি উভয়ের হাত কেটে দিবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য শাস্তি ও প্রতিদান স্বরূপ। কারণ, তারা মানুষের সম্পদ অবৈধভাবে হরণ করেছে। উপরন্তু এটি তাদের ও অন্যান্যদের জন্য ভীতি প্রদর্শন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী। কোন বস্তুই তাঁকে পরাজিত করতে পারে না। তিনি তাঁর শরীয়ত ও তাকদীরে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
39
فَمَن تَابَ مِنۢ بَعْدِ ظُلْمِهِۦ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَتُوبُ عَلَيْهِ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অনন্তর যে ব্যক্তি সীমা লংঘন করার পর (চুরি করার পর) তাওবাহ করে এবং ‘আমলকে সংশোধন করে, তাহলে আল্লাহ তার প্রতি (রাহমাতের) দৃষ্টি বর্ষণ করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৯. তবে কেউ চুরি থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নিকট তাওবা করে এবং তার আমলটুকু ঠিক করে নিলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে তার তাওবাটুকু গ্রহণ করবেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের পাপসমূহ ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। তবে তাওবার মাধ্যমে তাদের দÐখানা রহিত হবে না যদি ব্যাপারটি প্রশাসকের নিকট পৌঁছে যায়।
40
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ يُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ وَيَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি কি জাননা যে, আল্লাহরই জন্য রয়েছে আধিপত্য আসমানসমূহে এবং যমীনে, তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন! আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪০. হে রাসূল! আপনি জানেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিনের মালিক। তিনি যা চান সেভাবে তা করতে পারেন। তিনি যাকে চান ইনসাফ ভিত্তিক শাস্তি দিবেন। আর যাকে চান স্বীয় অনুগ্রহে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। কোন বস্তু তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।
41
۞ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَـٰرِعُونَ فِى ٱلْكُفْرِ مِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِأَفْوَٰهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ ۛ وَمِنَ ٱلَّذِينَ هَادُوا۟ ۛ سَمَّـٰعُونَ لِلْكَذِبِ سَمَّـٰعُونَ لِقَوْمٍ ءَاخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ ۖ يُحَرِّفُونَ ٱلْكَلِمَ مِنۢ بَعْدِ مَوَاضِعِهِۦ ۖ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَـٰذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَٱحْذَرُوا۟ ۚ وَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ فِتْنَتَهُۥ فَلَن تَمْلِكَ لَهُۥ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَمْ يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ ۚ لَهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌ ۖ وَلَهُمْ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে রাসূল! যারা দৌড়ে দৌড়ে কুফরীতে পতিত হয় তাদের এই কাজ যেন তোমাকে চিন্তিত না করে, তারা ঐ সব লোকের মধ্য থেকেই হোক যারা নিজেদের মুখেতো (মিছামিছি) বলেঃ আমরা ঈমান এনেছি; অথচ তাদের অন্তর বিশ্বাস করেনি, অথবা তারা সেই সব ইয়াহুদী যারা মিথ্যা কথা শুনতে অভ্যস্ত, তারা তোমার কথাগুলি অন্য সম্প্রদায়ের জন্য কান পেতে শোনে; সেই সম্প্রদায়ের অবস্থা এরূপ যে, তারা তোমার নিকট আসেনি (বরং অন্যকে পাঠিয়েছে); তারা কালামকে ওর স্বস্থান থেকে পরিবর্তন করে থাকে। তারা বলেঃ যদি তোমরা (সেখানে গিয়ে) এই (বিকৃত) বিধান পাও তাহলে তা কবূল করবে, আর যদি এই (বিকৃত) বিধান না পাও তাহলে বিরত থাকবে। আল্লাহ যাকে পরীক্ষায় ফেলার ইচ্ছা করেন তুমি তার জন্য আল্লাহর সাথে কোন কিছুই করার অধিকারী নও; তারা এরূপ যে, তাদের অন্তরগুলি পবিত্র করা আল্লাহর অভিপ্রায় নয়; তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে অপমান এবং আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪১. হে রাসূল! যে মুনাফিকরা ঈমানকে প্রকাশ করে ও কুফরিকে লুকিয়ে রাখে তারা যেন রাগান্বিত করার জন্য কুফরি কর্মকাÐ দ্রæত প্রকাশ করে আপনাকে ব্যথিত করতে না পারে। তেমনিভাবে বড়দের মিথ্যা কথা মান্যকারী আপনার থেকে বিমুখ ইহুদিরাও যেন আপনাকে ব্যথিত করতে না পারে। তারা তাওরাতে থাকা আল্লাহর বাণীকে নিজেদের মতো করে বিকৃত করে। আর তাদের অনুসারীদেরকে বলে: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ফায়সালা তোমাদের মতো মনে হলে তার অনুসরণ করবে। আর মনের বিরোধী হলে তার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কারো ভ্রষ্টতা চাইলে তার ভ্রষ্টতা দূর করে তাকে সত্যের পথ দেখাবে হে রাসূল! আপনি এমন কোন লোক খুঁজে পাবেন না। মূলতঃ এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ইহুদি ও মুনাফিকদের অন্তরগুলোকে আল্লাহ তা‘আলা কুফরি থেকে পরিচ্ছন্ন করার ইচ্ছা করেন নি। দুনিয়াতে তাদের জন্য রয়েছে লজ্জা ও লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে রয়েছে তাদের জন্য জাহান্নামের মহাশাস্তি।
42
سَمَّـٰعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّـٰلُونَ لِلسُّحْتِ ۚ فَإِن جَآءُوكَ فَٱحْكُم بَيْنَهُمْ أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ ۖ وَإِن تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَن يَضُرُّوكَ شَيْـًٔا ۖ وَإِنْ حَكَمْتَ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِٱلْقِسْطِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা মিথ্যা কথা শুনতে অভ্যস্ত, হারাম বস্তু খেতে অভ্যস্ত। অতএব তারা যদি তোমার কাছে আসে তাহলে তুমি তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, কিংবা তাদের ব্যাপারে নিলিপ্ত থাক, আর যদি তুমি তাদের থেকে নিলিপ্তই থাক তাহলে তাদের সাধ্য নেই যে, তোমার বিন্দুমাত্রও ক্ষতি করে। আর যদি তুমি বিচার-মীমাংসা কর তাহলে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত বিচার করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচারকদেরকে ভালবাসেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪২. এ ইহুদিরা মিথ্যা কথা বেশি শুনে ও সুদের মতো হারাম সম্পদ বেশি ভক্ষণ করে। তারা আপনার নিকট ফায়সালার জন্য আসলে হে রাসূল! তাদের ফায়সালা আপনার এখতিয়ার। আপনি উভয় ক্ষেত্রেই স্বাধীন। আপনি তাদের মাঝে ফায়সালা করা পরিত্যাগ করলে তারা আপনার কোন ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না। আর ফায়সালা করলে ইনসাফ ভিত্তিক ফায়সালা করুন। যদিও তারা জালিম ও আপনাদের শত্রæ হোক না কেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বিচার-ফায়সালায় ইনসাফকারীদেরকে ভালোবাসেন। যদিও বিচারপ্রার্থীরা বিচারকের শত্রæ হোক না কেন।
43
وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ ٱلتَّوْرَىٰةُ فِيهَا حُكْمُ ٱللَّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ ۚ وَمَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তারা কিরূপে তোমাকে মীমাংসাকারী বানিয়ে নিচ্ছে? অথচ তাদের কাছে তাওরাত রয়েছে, যাতে আল্লাহর বিধান বিদ্যমান! অতঃপর তারা (তোমার মীমাংসা হতে) ফিরে যায়, আর তারা কখনও বিশ্বাসী নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৩. বস্তুতঃ তাদের ব্যাপারটি খুবই আশ্চর্যজনক। তারা আপনার সাথে কুফরি করে। আবার তাদের মন মতো বিচার পেতে তারাই আপনার নিকট বিচারপ্রার্থী হয়। অথচ তাদের নিকটই রয়েছে তাওরাত যার উপর তারা ঈমান আনার দাবি করে আর তাতেই রয়েছে আল্লাহর বিধান। আবার আপনার ফায়সালা তাদের মন মতো না হলে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অতএব তারা দু’ অপরাধই একত্রে করলো: তাদের কিতাবে থাকা ফায়সালার সাথে কুফরি এবং আপনার ফায়সালা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। তাদের এ কর্মকাÐ বস্তুতঃ মু’মিনদের কর্মকাÐ নয়। তাই তারা আসলেই আপনাতে ও আপনার আনীত বিধানে ঈমান আনয়নকারী নয়।
44
إِنَّآ أَنزَلْنَا ٱلتَّوْرَىٰةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ۚ يَحْكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسْلَمُوا۟ لِلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلرَّبَّـٰنِيُّونَ وَٱلْأَحْبَارُ بِمَا ٱسْتُحْفِظُوا۟ مِن كِتَـٰبِ ٱللَّهِ وَكَانُوا۟ عَلَيْهِ شُهَدَآءَ ۚ فَلَا تَخْشَوُا۟ ٱلنَّاسَ وَٱخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا۟ بِـَٔايَـٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْكَـٰفِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তাওরাত নাযিল করেছিলাম, যাতে হিদায়াত ছিল এবং (আনুষ্ঠানিক বিধানাবলীর) আলো ছিল, আল্লাহর অনুগত নাবীগণ তদনুযায়ী ইয়াহুদীদেরকে আদেশ করত আর আল্লাহওয়ালাগণ এবং আলিমগণও। কারণ এই যে, তাদেরকে এই কিতাবুল্লাহর সংরক্ষণের আদেশ দেয়া হয়েছিল এবং তারা এর সাক্ষী। অতএব (হে ইয়াহুদী আলিমগণ!) তোমরা মানুষকে ভয় করনা, বরং আমাকে ভয় কর; আর আমার বিধানসমূহের বিনিময়ে (পার্থিব) সামান্য বস্তু গ্রহণ করনা; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতারিত (বিধান) অনুযায়ী বিচার করেনা, এমন লোকতো পূর্ণ কাফির।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৪. নিশ্চয়ই আমি মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর উপর তাওরাত নাযিল করেছি। তাতে রয়েছে কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত ও পথ প্রদর্শন এবং এমন আলোকিত হওয়ার জ্যোতি। আল্লাহর একান্ত অনুগত বনী ইসরাঈলের নবীগণ যা কর্তৃক ফায়সালা করে থাকেন। আরো তা কর্তৃক ফায়সালা করে থাকেন এমন আলিম ও ফকীহগণ যারা মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন সে কিতাবের যে কিতাবের সংরক্ষণকারী ও আমানতদার আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে বানিয়েছেন। যে কিতাবকে তাঁরা সকল ধরনের পরিবর্তন ও বিকৃতি থেকে রক্ষা করেন এবং তাঁরা তার সত্যতার ব্যাপারেও সাক্ষী। উপরন্তু সে ব্যাপারে মানুষরা তাঁদের দিকেই ফিরে আসে। তাই হে ইহুদিরা তোমরা মানুষকে ভয় করো না। বরং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো। আর তোমরা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধানানুযায়ী ফায়সালা করার পরিবর্তে সামান্যটুকু মূল্য তথা নের্তৃত্ব, সম্মান ও সম্পদ গ্রহণ করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর অবতীর্ণ ওহী অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না চাই তা হালাল মনে করে হোক অথবা অন্যটিকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কিংবা সমান মনে করে হোক তারা সত্যিই কাফির।
45
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَآ أَنَّ ٱلنَّفْسَ بِٱلنَّفْسِ وَٱلْعَيْنَ بِٱلْعَيْنِ وَٱلْأَنفَ بِٱلْأَنفِ وَٱلْأُذُنَ بِٱلْأُذُنِ وَٱلسِّنَّ بِٱلسِّنِّ وَٱلْجُرُوحَ قِصَاصٌ ۚ فَمَن تَصَدَّقَ بِهِۦ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهُۥ ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি তাদের প্রতি তাতে (তাওরাতে) এটা ফরয করেছিলাম যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং (তদ্রুপ অন্যান্য) যখমেরও বিনিময়ে যখম রয়েছে; কিন্তু যে ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে এটা তার জন্য (পাপের) কাফ্ফারা হয়ে যাবে; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতারিত বিধান অনুযায়ী ফাইসালা করেনা, তাহলেতো এমন ব্যক্তি পূর্ণ যালিম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৫. আমি তাওরাতে ইহুদিদের উপর যে বিষয়টি অবধারিত করেছি তা হলো যে কাউকে ইচ্ছাকৃত অবৈধভাবে হত্যা করবে তাকে তার পরিবর্তে হত্যা করা হবে। যে চোখ উপড়ে ফেলবে তার চোখও উপড়ে ফেলা হবে। যে নাক কেটে ফেলবে তার নাকও কেটে দেয়া হবে। যে কান কেটে ফেলবে তার কানও কেটে দেয়া হবে। যে দাঁত উঠিয়ে নিবে তার দাঁতও উঠিয়ে নেয়া হবে। আমি তাদের উপর আরো অবধারিত করেছি যে, জখম করা হলে অপরাধীকে তার অপরাধের সমপরিমাণ শাস্তি দেয়া হবে। আর যে অপরাধীকে এমনিতেই ক্ষমা করে দিবে তার এ ক্ষমা তার গুনাহগুলোর জন্য কাফফারা হবে। কারণ, সে তার জালিমকে ক্ষমা করলো। আর যে কিসাস ও অন্যান্য বিষয়ে আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করবে না সে বস্তুতঃ আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রমকারী।
46
وَقَفَّيْنَا عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِم بِعِيسَى ٱبْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ ۖ وَءَاتَيْنَـٰهُ ٱلْإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি তাদের পর ঈসা ইবনে মারইয়ামকে এই অবস্থায় প্রেরণ করেছিলাম, সে তার পূর্ববর্তী কিতাবের অর্থাৎ তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিল এবং আমি তাকে ইঞ্জীল প্রদান করেছি, যাতে হিদায়াত এবং আলো ছিল, আর ওটা তার পূর্ববর্তী কিতাব অর্থাৎ তাওরাতের সত্যতা সমর্থন করত এবং এটা সম্পূর্ণ রূপে মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত ও নসীহত ছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৬. আর আমি বনী ইসরাঈলের নবীদের পরপরই ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামকে পাঠিয়েছি তাওরাতের বিষয়ে বিশ্বাসী ও তা কর্তৃক বিচারক হিসেবে। উপরন্তু আমি তাঁকে ইঞ্জীল দিয়েছি যাতে সত্যের প্রতি দিশা ও সন্দেহ দূরকারী প্রমাণাদি রয়েছে। আরো তাতে রয়েছে বিধানগত সমস্যাদির সমাধান। যা পূর্বের অবতীর্ণ তাওরাত মাফিক। শুধু সামান্য বিধানেই পার্থক্য যা পরবর্তীতে রহিত হয়েছে। বস্তুতঃ আমি ইঞ্জীলকে হিদায়েত বানিয়েছি যা কর্তৃক হিদায়েত গ্রহণ করা যায় এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুতে লিপ্ত হওয়া থেকে প্রতিহতকারী।
47
وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ ٱلْإِنجِيلِ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فِيهِ ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আহলে ইঞ্জীলের উচিত-আল্লাহ তাতে যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী হুকুম প্রদান করা, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতারিত (বিধান) অনুযায়ী হুকুম প্রদান করেনা, তাহলে তো এ রূপ লোকই পাপাচারী ফাসিক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৭. খ্রিস্টানরা যেন আল্লাহ তা‘আলার ইঞ্জীলে অবতীর্ণ বিষয়ে ঈমান আনে এবং সে অনুযায়ী তারা ফায়সালা করে তাদের নিকট মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে পাঠানোর পূর্বে তাঁর সত্যতা সম্পর্কে যে বাণী এসেছে সে ব্যাপারে। যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারা মূলতঃ আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে অবস্থানকারী, সত্য বর্জনকারী ও বাতিলমুখী।
48
وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَـٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلْكِتَـٰبِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ ۖ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلْحَقِّ ۚ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا ۚ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَلَـٰكِن لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْ ۖ فَٱسْتَبِقُوا۟ ٱلْخَيْرَٰتِ ۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি এই কিতাবকে (কুরআন) তোমার প্রতি নাযিল করেছি যা নিজেও সত্যতা গুণে বিভূষিত, (এবং) ওর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেরও সত্যায়নকারী এবং ঐ সব কিতাবের বিষয় বস্তুর সংরক্ষকও। অতএব তুমি তাদের পারস্পরিক বিষয়ে আল্লাহর অবতারিত এই কিতাব অনুযায়ী মীমাংসা কর, যা তুমি প্রাপ্ত হয়েছ, তা থেকে বিরত হয়ে তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করনা, তোমাদের প্রত্যেকের (সম্প্রদায়) জন্য আমি নির্দিষ্ট শারীয়াত এবং নির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণ করেছিলাম; আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তোমাদের সকলকে একই উম্মাত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি এ কারণে যে, যে ধর্ম তিনি তোমাদেরকে প্রদান করেছেন তাতে তোমাদের সকলকে পরীক্ষা করবেন, সুতরাং তোমরা কল্যাণকর বিষয়সমূহের দিকে ধাবিত হও; তোমাদের সকলকে আল্লাহরই সমীপে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন যে বিষয়ে তোমরা মতবিরোধ করছিলে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৮. হে রাসূল! আমি সন্দেহ ও সংশয়হীন সত্য দিয়ে আপনার উপর কুর‘আন নাযিল করেছি। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং যা তার আগের অবতীর্ণ কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী ও সেগুলোর আমানত রক্ষাকারী। সুতরাং সেগুলোর যে বিধানের সাথে কুর‘আনের মিল রয়েছে সেটি সত্য। আর যা তার বিপরীত তা বাতিল। তাই আপনি আল্লাহ তা‘আলার নাযিল করা বিষয়ের ভিত্তিতে মানুষের মাঝে ফায়সালা করুন। আর আল্লাহ তা‘আলা আপনার উপর যে নিঃসন্দেহ সত্য নাযিল করেছেন তা বাদ দিয়ে আপনি তাদের গৃহীত খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। আমি প্রত্যেক উম্মতকে কার্জগত বিধানাবলীর একটি শরীয়ত ও সুস্পষ্ট পদ্ধতি দিয়েছি যা কর্তৃক তারা হিদায়েত গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ চাইলে সকল শরীয়তকে এক করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে প্রত্যেক উম্মতকে একটি করে শরীয়ত দিয়েছেন তা দিয়ে সবাইকে পরীক্ষা করার জন্য। যাতে অনুগত ও অবাধ্য প্রকাশ পায়। তাই তোমরা কল্যাণকর কর্মসমূহের দিকে দ্রæত অগ্রসর হও এবং অসৎ কাজগুলোকে পরিত্যাগ করো। কিয়ামতের দিন একমাত্র আল্লাহর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অচিরেই তিনি তোমাদেরকে দ্ব›দ্বপূর্ণ বিষয়সমূহ জানিয়ে দিবেন এবং তোমাদের অগ্রিম প্রেরিত আমলগুলোর প্রতিদান দিবেন।
49
وَأَنِ ٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ وَٱحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَنۢ بَعْضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيْكَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَٱعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلنَّاسِ لَفَـٰسِقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, তুমি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারে এই প্রেরিত কিতাব অনুযায়ী মীমাংসা করবে এবং তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করবেনা, এবং তাদের দিক থেকে সতর্ক থাকবে যেন তারা তোমাকে আল্লাহ প্রেরিত কোন নির্দেশ হতে বিভ্রান্ত করতে না পারে; অনন্তর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে দৃঢ় বিশ্বাস রেখ, আল্লাহর ইচ্ছা এটাই যে, তাদেরকে কোন কোন পাপের কারণে শাস্তি প্রদান করবেন; আর বহু লোকতো নাফরমানই হয়ে থাকে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৯. হে রাসূল! আল্লাহ আপনার প্রতি যে বিধান নাযিল করেছেন আপনি সে অনুযায়ী তাদের মাঝে ফায়সালা করুন। আপনি কখনো তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ সৃষ্ট খেয়াল-খুশির অনুকরণ করবেন না। আর আপনি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন যে, তারা যেন আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা আপনার উপর যা নাযিল করেছেন তার কিয়দংশ থেকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে। তারা কখনো এ পথে চেষ্টা চালাতে সামান্যটুকুও ত্রæটি করবে না। তারা আপনার প্রতি নাযিল করা আল্লাহর ফায়সালা গ্রহণ থেকে বিমুখ হলে আপনি জেনে রাখুন যে, আল্লাহ তা‘আলা চান তাদের কিছু গুনাহর জন্য দুনিয়াতে আর সকল গুনাহর জন্য পরকালে শাস্তি দিতে। বস্তুতঃ অনেক মানুষই আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে।
50
أَفَحُكْمَ ٱلْجَـٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাহলে কি তারা অজ্ঞতা যুগের মীমাংসা কামনা করে? আর দৃঢ় বিশ্বাসীদের কাছে মীমাংসা কার্যে আল্লাহর চেয়ে কে উত্তম ফাইসালাকারী?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫০. তারা কি আপনার ফায়সালা থেকে বিমুখ হয়ে জাহিলী যুগের মূর্তিপূজকদের ফায়সালা কামনা করছে। যারা নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে থাকে?! দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর চেয়ে সুন্দর ফায়সালাকারী আর কেউ নেই যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূলের উপর নাযিলকৃত বিধান বুঝতে সক্ষম। মূর্খ ও প্রবৃত্তিপূজারীদের জন্য নয় যারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মাফিক কোন জিনিস না হলে তা গ্রহণ করে না। যদিও তা বাতিল হয়।
51
۞ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ ٱلْيَهُودَ وَٱلنَّصَـٰرَىٰٓ أَوْلِيَآءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُۥ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করনা, তারা পরস্পর বন্ধু; আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে নিশ্চয়ই সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী হে মু’মিনরা! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের যাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাও তাদের কাউকে খাঁটি দোস্ত ও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারো না। কারণ, ইহুদিরা তাদের ধর্মের লোকদেরকে এবং খ্রিস্টানরাও তাদের ধর্মের লোকদেরকে বন্ধু বানাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমরা তাদের উভয়ের সাথেই শত্রæতা পোষণ করবে। তোমাদের কেউ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের সাথে তাদের বন্ধুত্বের দরুন যালিম সম্প্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না।
52
فَتَرَى ٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَـٰرِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰٓ أَن تُصِيبَنَا دَآئِرَةٌ ۚ فَعَسَى ٱللَّهُ أَن يَأْتِىَ بِٱلْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِۦ فَيُصْبِحُوا۟ عَلَىٰ مَآ أَسَرُّوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ نَـٰدِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এ কারণেই যাদের অন্তরে পীড়া রয়েছে তাদেরকে তোমরা দেখেছ যে, তারা দৌড়ে দৌড়ে তাদের (কাফিরদের) মধ্যে প্রবেশ করছে, এবং তারা বলেঃ আমাদের ভয় হচ্ছে যে, আমাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে না কি! অতএব আশা করা যায় যে, অচিরেই আল্লাহ (মুসলিমদের) পূর্ণ বিজয় দান করবেন অথবা অন্য কোন বিষয় বিশেষভাবে নিজ পক্ষ হতে (প্রকাশ করবেন), অনন্তর তারা নিজেদের অন্তরে লুকায়িত মনোভাবের কারণে লজ্জিত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫২. হে রাসূল! আপনি দুর্বল ঈমানদার মুনাফিকদেরকে দেখবেন তারা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে এ আশঙ্কায় দ্রæত বন্ধুত্ব করে যে, তারা একদিন সফল হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করবে। আর আমরা তাদের কাছ থেকে কেবল অপছন্দনীয় আচরণই পাবো। আমরা আশা করছি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল ও মু’মিনদেরকেই সফলতা দিবেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে এমন ব্যবস্থা করবেন যার ফলে ইহুদি ও তাদের বন্ধুদের দাপট প্রতিহত হবে। তখন তাদের বন্ধুত্বে দ্রæত অগ্রসর লোকেরা তাদের অন্তরে লুকানো মুনাফিকীর জন্য লজ্জিত হবে। কারণ, তখন তাদের ধারণকৃত ঠুনকো যুক্তিগুলো বাতিল বলে প্রমাণিত হবে।
53
وَيَقُولُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَهَـٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقْسَمُوا۟ بِٱللَّهِ جَهْدَ أَيْمَـٰنِهِمْ ۙ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ ۚ حَبِطَتْ أَعْمَـٰلُهُمْ فَأَصْبَحُوا۟ خَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর মুসলিমরা বলবেঃ আরে! এরাই নাকি তারা, যারা অতি দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর নামে শপথ করত, আমরা তোমাদের সাথেই আছি? এদের সমস্ত কাজই ব্যর্থ হয়ে গেছে, ফলে তারা অকৃতকার্য হয়ে রইল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৩. তখন মু’মিনরা মুনাফিকদের এ অবস্থা দেখে আশ্চর্য হয়ে বলবে: এরাই কি একদা শক্ত কসম করে বলেছিলো তারা ঈমান, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে তোমাদের সাথেই রয়েছে। হে মু’মিনরা! বস্তুতঃ তাদের আমলগুলো বাতিল হয়ে গেছে। ফলে তাদের উদ্দেশ্যটুকু হাত ছাড়া হয়েছে আর তাদের জন্য প্রস্তুত করা শাস্তির দরুন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
54
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِۦ فَسَوْفَ يَأْتِى ٱللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ يُجَـٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَآئِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম হতে বিচ্যুত হবে, (এতে ইসলামের কোন ক্ষতি নেই, কেননা) আল্লাহ সত্ত্বরই (তাদের স্থলে) এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে, তারা মুসলিমদের প্রতি মেহেরবান থাকবে, কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করবেনা; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন; বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৪. হে মু’মিনরা! ধর্ম ছেড়ে কুফরির দিকে ফিরে যাওয়াদের পরিবর্তে অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন যারা তাদের ধর্মের উপর অটলতার দরুন তাঁকে ভালোবাসবে এবং তিনিও তাদেরকে ভালোবাসবেন। যারা মু’মিনদের প্রতি দয়াশীল ও কাফিরদের প্রতি কঠিন হবে। তারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ করতে যুদ্ধ করবে। এ ক্ষেত্রে তারা কোন কঠোরতাকারীর কঠোরতাকে ভয় পাবে না। কারণ, তারা তো আল্লাহর সন্তুষ্টিকে তাঁর সৃষ্টির সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটি মূলতঃ আল্লাহর দান যা তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যকার যাকে চান দান করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সুপ্রশস্ত দয়া ও করুণার অধিকারী। তিনি তাঁর জানা অনুযায়ী তাঁর করুণার উপযুক্তকে তা দিয়ে থাকেন আর অনুপযুক্তকে তা থেকে বঞ্চিত করেন।
55
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُمْ رَٰكِعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমাদের বন্ধুতো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মু’মিনগণ - যারা সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত করে, যাকাত প্রদান করে এবং বিনম্র।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৫. ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য কাফিররা তোমাদের বন্ধু নয়। বরং বন্ধু ও সাহায্যকারী হলো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং পরিপূর্ণভাবে সালাত আদায়কারী, সম্পদের যাকাত আদায়কারী এবং আল্লাহর তা‘আলার জন্য সর্বদা বিনয়ী ও বিন¤্র মু’মিন।
56
وَمَن يَتَوَلَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ فَإِنَّ حِزْبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلْغَـٰلِبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যারা বন্ধুত্ব রাখবে আল্লাহর সাথে, তাঁর রাসূলের সাথে এবং মু’মিনদের সাথে, তাহলে তারা আল্লাহর দলভুক্ত হল এবং নিশ্চয়ই আল্লাহর দলই বিজয়ী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৬. আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ বন্ধুত্বকারীরাই মূলতঃ আল্লাহর দলভুক্ত। আর আল্লাহর দলই সত্যিকার বিজয়ী। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাদের সহযোগিতায় রয়েছেন।
57
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ مِن قَبْلِكُمْ وَٱلْكُفَّارَ أَوْلِيَآءَ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! যারা তোমাদের পূর্বে কিতাব প্রাপ্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা তোমাদের ধর্মকে হাসি-তামাশার বস্তু মনে করে তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করনা, এবং আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৭. হে ঈমানদারগণ! তোমরা পূর্বের কিতাবী তথা ইহুদি ও খ্রিস্টান উপরন্তু তোমাদের ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা ও তামাশাকারী মুশরিকদেরকে খাঁটি দোস্ত ও বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। আর তাদের বন্ধুত্বের বিষয়ে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞাকে মেনে তাঁকেই ভয় করো। যদি তোমরা তাঁর উপর এবং তোমাদের প্রতি নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনে থাকো।
58
وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ ٱتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন তোমরা সালাতের (আযান দ্বারা) আহবান কর তখন তারা ওর সাথে উপহাস করে; এর কারণ এই যে, তারা এরূপ লোক যারা মোটেই জ্ঞান রাখেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৮. সর্ববৃহৎ একটি সাওয়াবের কাজ সালাতের আযান দিলে তারা এভাবেই ঠাট্টা ও তামাশা করে। কারণ, তারা এমন সম্প্রদায় যারা আল্লাহর ইবাদাত এবং মানুষের জন্য তাঁর রচিত শরীয়তের মূল মর্ম কথাটুকুই বুঝে না।
59
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ هَلْ تَنقِمُونَ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلُ وَأَنَّ أَكْثَرَكُمْ فَـٰسِقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাও, হে আহলে কিতাব! তোমরা আমাদের মধ্যে কোন্ কাজটি দুষণীয় পাচ্ছ এটা ব্যতীত যে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং ঐ কিতাবের প্রতি যা আমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছে এবং ঐ কিতাবের প্রতিও যা অতীতে প্রেরিত হয়েছে, অথচ তোমাদের অধিকাংশ লোক (উল্লিখিত কিতাবসমূহের) প্রতি ঈমান (এর গন্ডি) হতে বহির্ভূত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৯. হে রাসূল! আপনি ঠাট্টাকারী আহলে কিতাবকে বলুন: আমরা আল্লাহ এবং আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর নাযিল করা বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি বলেই তোমরা কি আমাদের এটাই দোষ ধরছো। আর আমরা এও বিশ্বাস করি যে, তোমাদের অধিকাংশই আল্লাহর উপর ঈমান না এনে এবং তাঁর আদেশ অমান্য করে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেছে?! বস্তুতঃ তোমরা আমাদের যা দোষ ধরছো তা আমাদের জন্য প্রশংসার ব্যাপার; নিন্দার ব্যাপার নয়।
60
قُلْ هَلْ أُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِّن ذَٰلِكَ مَثُوبَةً عِندَ ٱللَّهِ ۚ مَن لَّعَنَهُ ٱللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ ٱلْقِرَدَةَ وَٱلْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ ٱلطَّـٰغُوتَ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَأَضَلُّ عَن سَوَآءِ ٱلسَّبِيلِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ আমি কি তোমাদেরকে এরূপ পন্থা হিসাবে ওটা হতেও (যাকে তোমরা মন্দ বলে জান) এরূপ সংবাদ দিব যা আল্লাহর কাছে অধিক নিকৃষ্ট? ওটা ঐ সব লোকের পন্থা, যাদেরকে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন এবং যাদের প্রতি গযব নাযিল করেছেন ও যাদেরকে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করেছেন এবং যারা তাগুতের ইবাদাত করছে তারা মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সরল পথ হতে সর্বাধিক বিচ্যুত ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬০. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: আমি কি তোমাদেরকে এদের চেয়ে বেশি দোষী ও কঠিন শাস্তি পাওয়ার উপযুক্তদের সংবাদ দেবো না?! তারা হলো মূলতঃ এদেরই পূর্বসূরি যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত এবং তাদের সুন্দর আকৃতিটুকু বিকৃত করে তাদেরকে শূকর ও বানরে পরিণত করেছেন। উপরন্তু তাদের কিছু সংখ্যককে তাগূতের পূজারী বানিয়েছেন। তাগূত হলো সেই ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার ইবাদাত ও আনুগত্য করা হয় এবং সেও এ ব্যাপারে খুশি। উক্ত ব্যক্তিবর্গের অবস্থান কিয়ামতের দিবসে সর্বনিকৃষ্ট এবং সঠিক পথের অনুসন্ধানে তারাই সবচেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট।
61
وَإِذَا جَآءُوكُمْ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَقَد دَّخَلُوا۟ بِٱلْكُفْرِ وَهُمْ قَدْ خَرَجُوا۟ بِهِۦ ۚ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا۟ يَكْتُمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন তারা তোমাদের নিকট আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি; অথচ তারা কুফরী নিয়েই এসেছিল এবং তারা কুফরী নিয়েই চলে গেছে; এবং আল্লাহতো খুব ভাল জানেন যা তারা গোপন রাখে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬১. হে মু’মিনরা! তাদের মুনাফিকরা মুনাফিকীবশত তোমাদের নিকট এসে ঈমান প্রকাশ করবে। বস্তুতঃ তারা ঢুকা ও বের হওয়ার সময় কুফরির সাথেই সম্পৃক্ত থাকে অবিচ্ছিন্নভাবে। তারা তোমাদের সামনে ঈমান প্রকাশ করলেও আল্লাহ তা‘আলা তাদের গোপন কুফরি সম্পর্কে খুব ভালোই জানেন। তিনি অচিরেই তাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
62
وَتَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يُسَـٰرِعُونَ فِى ٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِ وَأَكْلِهِمُ ٱلسُّحْتَ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তুমি তাদের মধ্যে অনেককে দেখবে, দৌড়ে দৌড়ে পাপ, যুলম ও হারাম ভক্ষণে নিপতিত হচ্ছে; বাস্তবিকই তারা খুব মন্দ কাজ করছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬২. হে রাসূল! আপনি অধিকাংশ ইহুদি ও মুনাফিকদেরকে মিথ্যা, যুলুম ও হারাম পন্থায় মানুষের সম্পদ ভক্ষণের মাধ্যমে তাদের উপর অত্যাচার করা ইত্যাদি গুনাহের প্রতি দ্রæত ধাবিত হতে দেখবেন। তাদের উক্ত কর্ম কতোই না নিকৃষ্ট।
63
لَوْلَا يَنْهَىٰهُمُ ٱلرَّبَّـٰنِيُّونَ وَٱلْأَحْبَارُ عَن قَوْلِهِمُ ٱلْإِثْمَ وَأَكْلِهِمُ ٱلسُّحْتَ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا۟ يَصْنَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদেরকে আল্লাহওয়ালা এবং আলিমগণ পাপের বাক্য হতে এবং হারাম মাল ভক্ষণ করা হতে কেন নিষেধ করছেনা? তাদের এ অভ্যাস নিন্দনীয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৩. তাদের প্রশাসক ও আলিমরা কেন তাদেরকে মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া এবং অবৈধভাবে মানুষের সম্পদ খাওয়ার প্রতি দ্রæত ধাবিত হওয়া থেকে তিরস্কার ও বাধা প্রদান করে না?! তাদের প্রশাসক ও আলিমদের এ কর্মকাÐ খুবই নিকৃষ্ট যে, তারা ওদেরকে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে না।
64
وَقَالَتِ ٱلْيَهُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغْلُولَةٌ ۚ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا۟ بِمَا قَالُوا۟ ۘ بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَآءُ ۚ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم مَّآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَـٰنًا وَكُفْرًا ۚ وَأَلْقَيْنَا بَيْنَهُمُ ٱلْعَدَٰوَةَ وَٱلْبَغْضَآءَ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۚ كُلَّمَآ أَوْقَدُوا۟ نَارًا لِّلْحَرْبِ أَطْفَأَهَا ٱللَّهُ ۚ وَيَسْعَوْنَ فِى ٱلْأَرْضِ فَسَادًا ۚ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلْمُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর ইয়াহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ, এবং তাদের এই উক্তির দরুণ তারা অভিশপ্ত। বরং তাঁর (আল্লাহর) তো উভয় হাত উম্মুক্ত, যেরূপ ইচ্ছা তিনি ব্যয় করেন; আর যে বিষয় তোমার নিকট তোমার রবের পক্ষ হতে প্রেরিত হয় তা তাদের মধ্যে অনেকের নাফরমানী ও কুফর বৃদ্ধির কারণ হয়, এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা নিক্ষেপ করেছি কিয়ামাত পর্যন্ত; যখনই (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতে চায়, আল্লাহ তা নির্বাপিত করে দেন; তারা ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ছড়িয়ে বেড়ায়; আর আল্লাহ অশান্তি বিস্তারকারীদেরকে ভালবাসেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৪. দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংক্রান্ত কষ্ট-ক্লেশ দেখা দিলে ইহুদিরা বললো: দান ও মানুষের কল্যাণ করার ব্যাপারে আল্লাহর হাত খুবই সঙ্কুচিত। তিনি তাঁর ধন-ভাÐার আমাদেরকে না দিয়ে নিজের কাছে আটকে রেখেছেন। বরং তাদের হাত দান ও মানুষের কল্যাণ করার ব্যাপারে আবদ্ধ এবং তাদের এ কথার দরুন তাদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। বরং আল্লাহর হাত দান ও কল্যাণে প্রশস্ত। তিনি যেভাবে যাকে চান কখনো বিস্তর আবার কখনো নির্ধারিত পরিমাণে দান করেন। তাঁকে নিষেধকারী ও বাধ্যকারী কেউ নেই। হে রাসূল! আপনার উপর নাযিলকৃত কিতাব ইহুদিদের সীমাতিক্রম ও অস্বীকার আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, তাদের মাঝে প্রচুর হিংসা রয়েছে। আর আমি ইহুদি সম্প্রদায়ের মাঝে শত্রæতা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছি। যখনই তারা যুদ্ধের জন্য একত্রিত হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করে অথবা যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে তখনই আল্লাহ তা‘আলা তাদের কাজ ভÐুল করে তাদের শক্তিকে নিঃশেষ করে দেন। সর্বদা তারা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে। তা হলো ইসলামকে বাতিলের ষড়যন্ত্র। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না।
65
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّـَٔاتِهِمْ وَلَأَدْخَلْنَـٰهُمْ جَنَّـٰتِ ٱلنَّعِيمِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর এই আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও নাসারাহ্) যদি ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, আমি অবশ্যই তাদের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা করে দিতাম এবং অবশ্যই তাদেরকে নি‘আমাতের উদ্যানসমূহে দাখিল করতাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৫. ইহুদি ও খ্রিস্টানরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আনা বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে পাপ থেকে দূরে থেকে আল্লাহকে ভয় করলে আমি তাদের কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেবো। উপরন্তু আমি তাদেরকে কিয়ামতের দিন নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবো। তারা সেখানের অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করবে।
66
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا۟ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِم مِّن رَّبِّهِمْ لَأَكَلُوا۟ مِن فَوْقِهِمْ وَمِن تَحْتِ أَرْجُلِهِم ۚ مِّنْهُمْ أُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ ۖ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যদি তারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের এবং যে কিতাব (অর্থাৎ কুরআন) তাদের রবের পক্ষ হতে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, ওর থেকে যথারীতি ‘আমলকারী হত তাহলে তারা উপর (অর্থাৎ আকাশ) হতে এবং নিম্ন (অর্থাৎ যমীন) হতে প্রাচুর্যের সাথে আহার পেত; তাদের একদলতো সরল পথের অনুগামী; আর তাদের অধিকাংশই এরূপ যে, তাদের কার্যকলাপ অতি জঘন্য।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৬. ইহুদিরা তাওরাতে এবং খ্রিস্টানরা ইঞ্জীলে উপরন্তু তাদের উপর নাযিলকৃত কুর‘আনের উপর আমল করলে তাদের জন্য রিযিকের উপকরণগুলো তথা আকাশ থেকে বৃষ্টি নাযিল হওয়া ও জমিনে ফসল উৎপাদিত হওয়া সহজ হয়ে যেতো। আহলে কিতাবের কিছু সংখ্যক সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত মধ্যমপন্থী। তবে মু’মিন না হওয়ায় তাদের অধিকাংশের আমলই খারাপ।
67
۞ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُۥ ۚ وَٱللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْكَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে রাসূল! যা কিছু তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তুমি (মানুষকে) সব কিছুই পৌঁছে দাও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমাকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেনা; আল্লাহ তোমাকে মানুষ (অর্থাৎ কাফির) হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৭. হে রাসূল! আপনার উপর প্রতিপালকের নাযিল করা বিষয় পুরোপুরি জানিয়ে দিন। সামান্যও লুকাবেন না। যদি তা করেন তাহলে ধরে নেয়া হবে আপনি রবের বাণীটুকুই পৌঁছান নি। বস্তুতঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পৌঁছানোর আদেশের সবই পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তাই কেউ এর বিপরীত ধারণা করলে সে মূলতঃ আল্লাহর উপর মহা অপবাদ দিলো। আজ থেকে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন। তাই তারা কখনোই অকল্যাণের উদ্দেশ্যে আপনার নিকট পৌঁছাতে পারবে না। তাই আপনার একমাত্র দায়িত্ব হলো পৌঁছে দেয়া। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে সঠিক পথে চলার তাওফীকই দেন না যারা মূলতঃ হিদায়েত পাওয়ারই ইচ্ছা করে না।
68
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لَسْتُمْ عَلَىٰ شَىْءٍ حَتَّىٰ تُقِيمُوا۟ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم مَّآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَـٰنًا وَكُفْرًا ۖ فَلَا تَأْسَ عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা কোনো পথেই প্রতিষ্ঠিত নও যে পর্যন্ত না তাওরাত, ইঞ্জীল এবং যে কিতাব (অর্থাৎ কুরআন) তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে তার উপর আমল কর; আর অবশ্যই যা তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরণ করা হয়, তা তাদের মধ্যে অনেকেরই নাফরমানী ও কুফর বৃদ্ধির কারণ হয়ে যায়। অতএব তুমি এই কাফিরদের জন্য মনঃক্ষুন্ন হয়োনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৮. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা! তোমরা ধর্মের ধর্তব্য কোন বিষয়ের উপরই নও যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত ও ইঞ্জীলের উপর আমল করো। উপরন্তু তোমাদের উপর অবতীর্ণ কুর‘আনের উপর আমল করো যা করা হয়েছে যার উপর ঈমান না আনলে এবং তার উপর আমল না করলে তোমাদের ঈমানই শুদ্ধ হবে না। বস্তুতঃ আপনার প্রতি আপনার রবের অবতীর্ণ বিষয় অধিকাংশ আহলে কিতাবের হঠকারিতা ও কুফরি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, তাদের মধ্যে রয়েছে প্রচুর হিংসা। তাই আপনি এ কাফিরদের উপর আফসোস করবেন না বরং যে মু’মিনরা আপনার আনুগত্য করেছে তাই যথেষ্ট।
69
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلصَّـٰبِـُٔونَ وَٱلنَّصَـٰرَىٰ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَعَمِلَ صَـٰلِحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এটা সুনিশ্চিত যে, মুসলিম, ইয়াহুদী, সাবেঈ এবং খৃষ্টানদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং সৎ কাজ করে, এইরূপ লোকদের জন্য শেষ দিনে না কোন প্রকার ভয় থাকবে আর না তারা চিন্তান্বিত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৯. মু’মিন, ইহুদি, সাবিয়ী তথা কোন কোন নবীর অনুসারীদের একটি দল ও খ্রিস্টানদের যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের ভবিষ্যতে কোন ভয় নেই, না দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিল না হওয়ার দরুন তারা চিন্তিত আছে।
70
لَقَدْ أَخَذْنَا مِيثَـٰقَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ وَأَرْسَلْنَآ إِلَيْهِمْ رُسُلًا ۖ كُلَّمَا جَآءَهُمْ رَسُولٌۢ بِمَا لَا تَهْوَىٰٓ أَنفُسُهُمْ فَرِيقًا كَذَّبُوا۟ وَفَرِيقًا يَقْتُلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি বানী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছি এবং তাদের কাছে বহু রাসূল প্রেরণ করেছি; যখনই তাদের কাছে কোন নাবী আগমন করত এমন কোন বিধান নিয়ে যা তাদের মনঃপুত হতনা, তখনই তারা কতিপয়কে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করত এবং কতিপয়কে হত্যাই করে ফেলত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭০. আমি বনী ইসরাঈল থেকে শ্রবণ ও আনুগত্যের কঠিন অঙ্গীকার নিয়েছি কিন্তু তারা সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করেছে তথা তাদের রাসূলগণ তাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে; তাদের কাউকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে ও কাউকে হত্যা করেছে।
71
وَحَسِبُوٓا۟ أَلَّا تَكُونَ فِتْنَةٌ فَعَمُوا۟ وَصَمُّوا۟ ثُمَّ تَابَ ٱللَّهُ عَلَيْهِمْ ثُمَّ عَمُوا۟ وَصَمُّوا۟ كَثِيرٌ مِّنْهُمْ ۚ وَٱللَّهُ بَصِيرٌۢ بِمَا يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তারা এই ধারণাই করেছিল যে, কোন শাস্তিই হবেনা, ফলে তারা আরও অন্ধ ও বধির হয়ে গেল, অতঃপর দীর্ঘকাল পর আল্লাহ তাদের প্রতি করুণা করলেন; তবুও তাদের অধিকাংশই অন্ধ ও বধিরই রইল। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের কার্যকলাপসমূহ প্রত্যক্ষ করেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭১. তারা এ ধারণা করেছে যে, তাদের ওয়াদা ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, নবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ও তাদেরকে হত্যা করা তা তাদের কোন ক্ষতিই করবে না। বস্তুতঃ তারা যা ধারণা করেনি তাই ঘটেছে। তারা সত্য দেখা থেকে অন্ধ হয়েছে তাই তারা সত্যের পথ খুঁজে পায়নি আর তারা গ্রহণের মানসিকতায় সত্য শুনা থেকেও বধির হয়েছে। অতঃপর দয়া করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা গ্রহণ করলেন। এরপর তারা আবারও সত্য দেখা থেকে অন্ধ হয়েছে এবং সত্য শুনা থেকে বধির হয়েছে। এটি কিন্তু তাদের অনেকের ব্যাপারেই ঘটেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকল কর্মকাÐ দেখছেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই এর প্রতিদান দিবেন।
72
لَقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ ۖ وَقَالَ ٱلْمَسِيحُ يَـٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُۥ مَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ ٱلْجَنَّةَ وَمَأْوَىٰهُ ٱلنَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّـٰلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই তারা কাফির হয়েছে যারা বলে - মসীহ ইবনে মারইয়ামই আল্লাহ। অথচ মসীহ্ নিজেই বলেছিলঃ হে বানী ইসরাঈল! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর! যিনি আমার রাব্ব এবং তোমাদেরও রাব্ব; নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর অংশী স্থাপন করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম; এবং এরূপ অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭২. নিশ্চয়ই খ্রিস্টানরা কুফরিই করেছে যারা বললো যে, আল্লাহই হলেন স্বয়ং মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়াম। কারণ, তারা উলূহিয়্যাত তথা ইবাদাতের ব্যাপারটিকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। অথচ মাসীহ ইবনু মারইয়াম তিনি নিজেই তাদেরকে বললেন: হে বনী ইসরাঈল! তোমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করো। তিনি হলেন আমার ও তোমাদের রব্ব। তাই আমরা সবাই তাঁর দাসত্বে সমান। বস্তুতঃ যে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করলো আল্লাহ তা‘আলা সর্বদার জন্য তার জান্নাতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তার আবাসস্থল হবে জাহান্নামের আগুন। সে দিন আল্লাহর নিকট তার কোন সাহায্যকারী ও সহযোগী থাকবে না। না অপেক্ষমাণ আযাব থেকে কেউ তাকে রক্ষা করবে।
73
لَّقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ ثَالِثُ ثَلَـٰثَةٍ ۘ وَمَا مِنْ إِلَـٰهٍ إِلَّآ إِلَـٰهٌ وَٰحِدٌ ۚ وَإِن لَّمْ يَنتَهُوا۟ عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিঃসন্দেহে তারাও কাফির যারা বলেঃ ‘আল্লাহ তিনের (অর্থাৎ তিন মা‘বূদের) এক’, অথচ ইবাদাত পাবার যোগ্য এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেহই নেই; আর যদি তারা স্বীয় উক্তিসমূহ হতে নিবৃত্ত না হয় তাহলে তাদের মধ্যে যারা কুফরীতে অটল থাকবে তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৩. নিশ্চয়ই খ্রিস্টানরা কুফরি করেছে যারা বললো: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তিনের সমষ্টি। তারা হলো পিতা, পুত্র ও রূহুল-কুদুস। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এমন কথা থেকে বহু উপরে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা একাধিক নন। তিনি হলেন এক ইলাহ; যাঁর কোন শরীক নেই। তারা এ নিকৃষ্ট বক্তব্য থেকে বিরত না হলে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে।
74
أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى ٱللَّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُۥ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা আল্লাহর সমীপে কেন তাওবাহ করেনা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনা? অথচ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৪. তারা কি তাদের এ কথা থেকে আল্লাহর নিকট তাওবা করে ফিরে আসবে না এবং তাদের কৃত শিরক থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবে না?! বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যে কোন গুনাহ থেকে তাওবাকারীর প্রতি ক্ষমাশীল। যদিও গুনাহটি তাঁর সাথে কুফরি করাই হয়ে থাকে। তিনি মু’মিনদের প্রতি দয়াশীল।
75
مَّا ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ وَأُمُّهُۥ صِدِّيقَةٌ ۖ كَانَا يَأْكُلَانِ ٱلطَّعَامَ ۗ ٱنظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ ثُمَّ ٱنظُرْ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মারইয়াম পুত্র মাসীহ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে অনেক রাসূল বিগত হয়েছে এবং তার মা ছিল অতি সত্যবাদী। তারা উভয়ে খাবার খেত। দেখ, কীভাবে আমি তাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করছি। অতঃপর দেখ, কীভাবে তাদেরকে সত্যবিমুখ করা হচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৫. মূলতঃ মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়াম রাসূলদেরই একজন। অন্যদের মতো তাঁকেও মৃত্যু গ্রাস করবে। আর তাঁর মা মারইয়াম (আলাইহাস-সালাম) অধিক সত্যবাদিনী ও সত্যায়নকারিণী। তাঁরা উভয়েই প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহণ করতেন। তাহলে তাঁরা কীভাবে ইলাহ হতে পারেন অথচ তাঁদের খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে?! তাই হে রাসূল! আপনি ভেবে দেখুন, আমি কীভাবে তাদের জন্য আয়াতগুলো সুস্পষ্ট করে দিচ্ছি। যা আল্লাহ তা‘আলার একক হওয়া এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে উলূহিয়্যাত তথা ইবাদাতকে সম্পৃক্ত করায় বাড়াবাড়ি করা বাতিল হওয়া প্রমাণ করে। অথচ তারা এ আয়াতগুলো যেন চিনেই না। অতঃপর আপনি আবারো ভেবে দেখুন, তাদেরকে কীভাবে সত্য থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে অথচ এ সুস্পষ্ট আয়াতগুলো আল্লাহর একক হওয়াই প্রমাণ করে।
76
قُلْ أَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا ۚ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুর ইবাদাত কর যা তোমাদের না কোন অপকার করার ক্ষমতা রাখে, আর না কোন উপকার করার? অথচ আল্লাহই সব শুনেন, জানেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৬. হে রাসূল! আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাতের ক্ষেত্রে দলীল দিয়ে আপনি তাদেরকে বলুন: তোমাদের না কোন উপকারে আসবে আর না ক্ষতি দূর করতে পারবে তোমরা কি এমন কিছুর ইবাদাত করছো?! সে তো অক্ষম। আর আল্লাহ তা‘আলা তা থেকে পবিত্র। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা এককভাবেই তোমাদের কথাগুলো শুনেন। তার কোনটাই তাঁর হাত ছাড়া হয় না। তিনি তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে সম্যক অবগত। কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
77
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لَا تَغْلُوا۟ فِى دِينِكُمْ غَيْرَ ٱلْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعُوٓا۟ أَهْوَآءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا۟ مِن قَبْلُ وَأَضَلُّوا۟ كَثِيرًا وَضَلُّوا۟ عَن سَوَآءِ ٱلسَّبِيلِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা নিজেদের ধর্মে অন্যায়ভাবে সীমা লংঘন করনা, এবং ঐ সম্প্রদায়ের (ভিত্তিহীন) কল্পনার উপর চলোনা যারা অতীতে নিজেরাও ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে এবং অন্যান্যদেরকে ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেছে। বস্তুতঃ তারা সরল পথ থেকে দূরে সরে পড়েছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৭. হে রাসূল! আপনি খ্রিস্টানদেরকে বলুন: সত্য অনুসরণের আদেশে তোমরা সীমাতিক্রম করো না। আর তোমাদেরকে যাঁদের সম্মান করতে আদেশ করা হয়েছে যেমন: নবীগণ, তাঁদের সম্মানে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। যেমন তোমরা তাঁদের ব্যাপারে উলূহিয়্যাতের বিশ্বাস করবে যা তোমরা ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামের ক্ষেত্রে করেছিলে। তা মূলতঃ তোমাদের পথভ্রষ্টকারী ও পথভ্রষ্ট পূর্বসূরিদেরই অনুসরণ।
78
لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنۢ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبْنِ مَرْيَمَ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কাফির ছিল, তাদের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছিল দাঊদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের মুখে; এই লা’নত এ কারণে করা হয়েছিল যে, তারা অবাধ্য ছিল এবং সীমালংঘন করত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৮. আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি বনী ইসরাঈলের কাফিরদেরকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করেছেন। এটি বর্ণিত আছে দাঊদ (আলাইহিস-সালাম) এর উপর অবতীর্ণ যাবূরে এবং ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস-সালাম) এর উপর অবতীর্ণ ইঞ্জীলে। তবে এ রহমত থেকে বিতাড়িত করার মূল কারণ হলো তাদের কৃত গুনাহ এবং আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর উপর হস্তক্ষেপ।
79
كَانُوا۟ لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا۟ يَفْعَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা যে অন্যায় কাজ করেছিল তা হতে একে অপরকে নিষেধ করতনা; বাস্তবিকই তাদের কাজ ছিল অত্যন্ত গর্হিত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৯. তারা একে অপরকে গুনাহ থেকে বিরত রাখতো না। বরং তাদের পাপীরা প্রকাশ্যেই গুনাহ ও অসৎ কাজ করতো। কারণ, তাদেরকে বাধা দেয়ার কেউই ছিলো না। তাদের এ অসৎ কাজ থেকে বাধা না দেয়ার ব্যাপারটি কতোই না নিকৃষ্ট ছিলো।
80
تَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۚ لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ ٱللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِى ٱلْعَذَابِ هُمْ خَـٰلِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি তাদের (ইয়াহুদীদের) অনেককে দেখবে, তারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করছে; যে কাজ তারা ভবিষ্যতের জন্য করেছে তা নিঃসন্দেহে মন্দ, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ফলতঃ তারা আযাবে চিরকাল থাকবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮০. হে রাসূল! আপনি উক্ত বহু কাফির ইহুদিকে দেখবেন কাফিরদেরকে ভালোবাসতে ও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হতে এবং আপনি ও তাওহীদপন্থীদের সাথে শত্রæতা করতে। তারা যে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বে অগ্রসর হচ্ছে তা কতোই না নিকৃষ্ট। কারণ, এটি তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হওয়া এবং তাদেরকে চিরন্তন জাহান্নামে প্রবেশ করানোর একটি বিশেষ উপকরণ। যা থেকে তারা কখনোই বের হবে না।
81
وَلَوْ كَانُوا۟ يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلنَّبِىِّ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا ٱتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَآءَ وَلَـٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَـٰسِقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যদি তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতো এবং নাবীর প্রতি এবং ঐ কিতাবের (তাওরাতের) প্রতি যা তাঁর নাবীর নিকট প্রেরিত হয়েছিল, তাহলে তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) কখনও বন্ধু রূপে গ্রহণ করতনা, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই ফাসিক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮১. যদি এ ইহুদিরা আল্লাহ ও তাঁর নবীর উপর সত্যিকারার্থে ঈমান আনতো তাহলে তারা মুশরিকদের কাউকে বন্ধু বানাতো না। মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা ভালোবাসবে ও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। কারণ, তাদেরকে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে। বস্তুতঃ এ ইহুদিদের অনেকেই আল্লাহর আনুগত্য এবং তিনি ও তাঁর মু’মিন বান্দাদের বন্ধুত্ব থেকে বাইরে অবস্থিত।
82
۞ لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةً لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱلْيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشْرَكُوا۟ ۖ وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُم مَّوَدَّةً لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّا نَصَـٰرَىٰ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيسِينَ وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি মানবমন্ডলীর মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলিমদের সাথে অধিক শক্রতা পোষণকারী পাবে, আর তন্মধ্যে মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব রাখার অধিকতর নিকটবর্তী ঐ সব লোককে পাবে যারা নিজেদেরকে নাসারাহ্ (খৃষ্টান) বলে; এটা এ কারণে যে, তাদের মধ্যে বহু আলিম এবং বহু দরবেশ রয়েছে; আর এ কারণে যে, তারা অহংকারী নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮২. হে রাসূল! আপনি ইহুদিদের মাঝে হিংসা, বিদ্বেষ ও অহঙ্কার থাকায় আপনার ও আপনার আনা বিধানের প্রতি ঈমান আনা লোকদের মহা শত্রæ হিসেবে দেখতে পাবেন। আর পাবেন মূর্তিপূজারী ও আল্লাহর সাথে অন্যান্য শিরককারীদেরকে। তেমনিভাবে আপনি ওদেরকে যারা নিজেদের ব্যাপারে বলে, তারা খ্রিস্টান তাদেরকে আপনি ও আপনার আনা বিধানের প্রতি ঈমান আনা লোকদের নিকটতম ভালোবাসার পাত্র হিসেবে পাবেন। মু’মিনদেরকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে এরা নিকটতম হওয়ার কারণ হলো এদের মধ্যে রয়েছে অনেক আলিম ও আবিদ। আর তারা ন¤্র অহঙ্কারী নয়। কারণ, অহঙ্কারীর অন্তরে সাধারণত কল্যাণ পৌঁছায় না।
83
وَإِذَا سَمِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَى ٱلرَّسُولِ تَرَىٰٓ أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ ٱلدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا۟ مِنَ ٱلْحَقِّ ۖ يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱكْتُبْنَا مَعَ ٱلشَّـٰهِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন রাসূলের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা শ্রবণ করে তখন তুমি দেখতে পাও যে, তাদের অশ্রু বইছে; এ কারণে যে, তারা সত্যকে উপলদ্ধি করতে পেরেছে। তারা এরূপ বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আমরা মু’মিন হয়ে গেলাম, সুতরাং আমাদেরকেও ঐ সব লোকের সাথে লিপিবদ্ধ করে নিন, যারা (মুহাম্মাদ ও কুরআনকে সত্য বলে) স্বীকার করে ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৩. এরা যেমন: নাজাশী ও তার সাথীরা তাদের অন্তরগুলো হলো নরম। তারা নাযিলকৃত কুর‘আন শুনে বিনয়ভরে কেঁদে ফেলে যখন তারা জানতে পারে যে, নিশ্চয়ই এটা সত্য। কারণ, তারা ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) আনীত বিধান সম্পর্কে জানে। তারা তখন বলে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিল করা বিষয়ে ঈমান এনেছি। তাই হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের নামগুলোকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উম্মতের সাথে লিখে দিন। যা কিয়ামতের দিন মানুষের বিরুদ্ধে প্রমাণ হবে।
84
وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ ٱلْحَقِّ وَنَطْمَعُ أَن يُدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلصَّـٰلِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমাদের কি এমন ওযর আছে, যে জন্য আমরা ঈমান আনবনা আল্লাহর প্রতি এবং সেই সত্যের প্রতি যা আমাদের কাছে পৌঁছেছে; অথচ এ আশা রাখবো যে, আমাদের রাব্ব নেককারদের সাথে আমাদেরকে শামিল করবেন?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৪. কোন্ কারণটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো আমাদের মাঝে এবং আল্লাহ ও তিনি যে সত্য নাযিল করেছেন এবং যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিয়ে এসেছেন তার মাঝে?! অথচ আমরা আশা করি আল্লাহর অনুগত ও তাঁর শাস্তির ব্যাপারে ভীতরা নবীগণ ও তাঁদের অনুসারীদের সাথে জান্নাতে যাবে।
85
فَأَثَـٰبَهُمُ ٱللَّهُ بِمَا قَالُوا۟ جَنَّـٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ جَزَآءُ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ফলতঃ তাদের এই উক্তির বিনিময়ে আল্লাহ তাদেরকে এমন উদ্যানসমূহ প্রদান করবেন, যার তলদেশে নহর বইতে থাকবে, তারা তাতে অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎ কর্মশীলদের জন্য এটাই প্রতিদান!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৫. ফলে আল্লাহ তা‘আলা ঈমান ও সত্য স্বীকারের দরুন প্রতিদান স্বরূপ তাদেরকে জান্নাত দিয়েছেন যার অট্টালিকা ও গাছের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত। যাতে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটিই মূলতঃ সত্য অনুসরণ ও বিনা শর্তে তার আনুগত্যের দরুন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান।
86
وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَحِيمِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যারা কাফির হয়েছে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৬. আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছে উপরন্তু রাসূলের উপর অবতীর্ণ আল্লাহর আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তারাই জ্বলন্ত আগুনের বাধ্যতামুলক সঙ্গী যা থেকে তারা কখনোই বের হবে না।
87
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُحَرِّمُوا۟ طَيِّبَـٰتِ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوٓا۟ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! আল্লাহ যে সব বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তন্মধ্যে সুস্বাদু বস্তুগুলিকে হারাম করনা এবং সীমা লংঘন করনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৭. হে মু’মিনরা! তোমরা খাদ্য, পানীয় ও বিবাহের ন্যায় মজাদার হালাল বস্তুগুলোকে হারাম করো না। তোমরা সেগুলোকে ইবাদাত ও দুনিয়া বিমুখতা মনে করে হারাম করো না। উপরন্তু তোমরা আল্লাহর হারাম করা বস্তুসমূহের সীমারেখা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সীমারেখা অতিক্রমকারীদেরকে ভালোবাসেন না। বরং তিনি তাদেরকে ঘৃণা করেন।
88
وَكُلُوا۟ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ حَلَـٰلًا طَيِّبًا ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ٱلَّذِىٓ أَنتُم بِهِۦ مُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আল্লাহ তোমাদেরকে যা দান করেছেন তন্মধ্য হতে হালাল ও পবিত্র বস্তুগুলি আহার কর, এবং আল্লাহকে ভয় কর - যাঁর প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৮. আর তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করা আল্লাহর হালাল ও পবিত্র রিযিক তোমরা খাও। তবে হারাম খেয়ো না যেমন: অপহৃত বা নাপাক বস্তু। উপরন্তু তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো। কারণ, তোমরা তো তাঁকে বিশ্বাস করেছো। আর তাঁকে সত্যিকার বিশ্বাস তাঁকে ভয় করা বাধ্যতামূলক করে।
89
لَا يُؤَاخِذُكُمُ ٱللَّهُ بِٱللَّغْوِ فِىٓ أَيْمَـٰنِكُمْ وَلَـٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ ٱلْأَيْمَـٰنَ ۖ فَكَفَّـٰرَتُهُۥٓ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَـٰكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَـٰثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّـٰرَةُ أَيْمَـٰنِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَٱحْفَظُوٓا۟ أَيْمَـٰنَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَـٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ তোমাদের অর্থহীন কসমের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেননা, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ঐ কসমসমূহের জন্য পাকড়া করবেন যেগুলিকে তোমরা (ভবিষ্যত বিষয়ের প্রতি) দৃঢ় কর, সুতরাং ওর কাফফারা হচ্ছে দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম ধরণের খাদ্য প্রদান করা, যা তোমরা নিজ পরিবারের লোকদেরকে খাইয়ে থাক, কিংবা তাদেরকে পরিধেয় বস্ত্র দান করা (মধ্যম ধরণের), কিংবা একজন গোলাম কিংবা বাঁদী মুক্ত করা। আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখেনা সে (একাধারে) তিন দিন সিয়াম পালন করবে; এটা তোমাদের কসমসমূহের কাফ্ফারা যখন তোমরা কসম কর এবং অতঃপর ভঙ্গ কর এবং নিজেদের কসমসমূহকে রক্ষা করবে। এই রূপেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় বিধানসমূহ বর্ণনা করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৯. হে মু’মিনগণ! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মুখ দিয়ে এমনিতেই বেরিয়ে যাওয়া অনিচ্ছাকৃত কসমের হিসাব নিবেন না। বরং তিনি সে কসমের হিসাব নিবেন যার উপর তোমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছো এবং অন্তরগুলোকে পোক্ত করে তা ভঙ্গ করেছো। তবে মুখে উচ্চারণ করা পরিপক্ব কসম ভঙ্গের গুনাহ তিনটি স্বেচ্ছাধীন বস্তুর যে কোন একটিই মিটিয়ে দিবে। আর তা হলো পর্যায়ক্রমে, দশজন মিসকীনকে নিজেদের এলাকার মাঝারী খাদ্য খাওয়ানো। প্রত্যেক মিসকীনকে আধা সা’ তথা দেড় কিলো খাদ্য দেয়া অথবা তাদেরকে সমাজ প্রচলিত দশটি পোশাক দেয়া কিংবা একজন মু’মিন গোলাম স্বাধীন করা। কসমের কাফফারাদাতা এ তিনটি বস্তুর কোনটিই না পেলে সে তিন দিন রোযা রেখে তার কাফফারা দিবে। হে মু’মিনগণ! মূলতঃ উল্লিখিত বস্তুগুলোই তোমাদের ভঙ্গ করা কসমের কাফফারা। আর তোমরা মিথ্যা ও বেশি কসম করা এবং কসম খেয়ে তা পুরণ না করা থেকে বিরত থেকে কসমের মর্যাদা রক্ষা করো। তবে কসম পুরণ না করা উত্তম হয়ে থাকলে উত্তমটিই করো এবং কসমের কাফফারা দিয়ে দাও। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য কসমের কাফফারার মতো হালাল এবং হারাম সংক্রান্ত বিধানাবলীও বর্ণনা করেছেন। যাতে অজানা জিনিসগুলো জানিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞ হতে পারো।
90
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْخَمْرُ وَٱلْمَيْسِرُ وَٱلْأَنصَابُ وَٱلْأَزْلَـٰمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ ٱلشَّيْطَـٰنِ فَٱجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯০. হে মু’মিনগণ! মস্তিষ্ক বিকৃতকারী মদ, উভয় পক্ষের বিনিময় সম্বলিত জুয়া, মুশরিকদের সম্মানিত পাথর যার নিকট তারা পশু জবাই করে অথবা তার ইবাদাতের জন্য স্থাপন করে এবং ভাগ্য নির্ধারণকারী তীর এ সবই শয়তানের প্রবঞ্চনা ও গুনাহের কাজ। তাই তোমরা তা থেকে দূরে থাকো। যাতে তোমরা দুনিয়ায় সম্মানজনক জীবন ও আখিরাতে জান্নাতের নিয়ামত পেয়ে কৃতকার্য হতে পারো।
91
إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيْطَـٰنُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ ٱلْعَدَٰوَةَ وَٱلْبَغْضَآءَ فِى ٱلْخَمْرِ وَٱلْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
শাইতানতো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে। সুতরাং এখনো কি তোমরা নিবৃত্ত হবেনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯১. মদ ও জুয়াকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে শয়তান চায় অন্তরগুলোর মাঝে শত্রæতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে। উপরন্তু আল্লাহর যিকির ও সালাত থেকে ফিরিয়ে দিতে। হে মু’মিনরা! তাহলে তোমরা কি এ সকল অসৎ কাজ ছাড়বে? নিঃসন্দেহে এটি তোমাদের জন্য উপযুক্ত। তাই তোমরা তা থেকে বিরত থাকো।
92
وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَٱحْذَرُوا۟ ۚ فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّمَا عَلَىٰ رَسُولِنَا ٱلْبَلَـٰغُ ٱلْمُبِينُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করতে থাক ও রাসূলের অনুগত হও এবং সতর্ক থাকো, আর যদি বিমুখ থাকো তাহলে জেনে রেখ যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব ছিল শুধু স্পষ্টভাবে (আদেশ) পৌঁছে দেয়া।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯২. শরীয়তের আদেশ মেনে এবং নিষেধ থেকে দূরে থেকে তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাঁদের বিরোধিতা থেকে সতর্ক থাকো। তোমরা এ থেকে বিমুখ হলে জেনে রাখো যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব হলো আল্লাহ যা প্রচারের আদেশ করেছেন তা করা। আর তিনি তা ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন। তাই তোমরা সঠিক পথে চললে তা তোমাদেরই উপকারে আসবে। আর খারাপ করলে তা তোমাদেরই ক্ষতির কারণ হবে।
93
لَيْسَ عَلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ جُنَاحٌ فِيمَا طَعِمُوٓا۟ إِذَا مَا ٱتَّقَوا۟ وَّءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ ثُمَّ ٱتَّقَوا۟ وَّءَامَنُوا۟ ثُمَّ ٱتَّقَوا۟ وَّأَحْسَنُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করে, এরূপ লোকদের উপর কোন পাপ নেই যা তারা পূর্বে আহার করেছে যখন তারা ভবিষ্যতের জন্য পরহেয করে, ঈমান রাখে ও ভাল কাজ করে, পুনরায় সংযত থাকে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে। পুনরায় সংযত থাকে ও ভাল কাজ করতে থাকে; বস্তুত আল্লাহ এরূপ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৩. আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী ও তাঁর নৈকট্য হাসিলের জন্য নেক আমলকারী মদ হারাম হওয়ার পূর্বে তা পান করলে কোন গুনাহ হবে না। যদি তারা আল্লাহর উপর ঈমান এনে ও নেক আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয়ে হারাম পরিত্যাগ করে থাকে। অতঃপর তারা আল্লাহর মুরাকাবায় অগ্রসর হয়ে এমনভাবে ইবাদাত করে যেন তারা তাঁকে দেখতে পাচ্ছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের ইবাদতকারীকে ভালোবাসেন। কারণ, তাদের মাঝে রয়েছে সর্বদা আল্লাহর পর্যবেক্ষণ অনুভ‚তি। আর এ অনুভ‚তিই একজন মু’মিনকে তার আমলগুলো সুন্দর ও সূ²ভাবে করতে উৎসাহিত করে।
94
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَيَبْلُوَنَّكُمُ ٱللَّهُ بِشَىْءٍ مِّنَ ٱلصَّيْدِ تَنَالُهُۥٓ أَيْدِيكُمْ وَرِمَاحُكُمْ لِيَعْلَمَ ٱللَّهُ مَن يَخَافُهُۥ بِٱلْغَيْبِ ۚ فَمَنِ ٱعْتَدَىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهُۥ عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! আল্লাহ তোমাদেরকে কতক শিকারের দ্বারা পরীক্ষা করবেন, যে শিকার পর্যন্ত তোমাদের হাত ও তোমাদের বল্লম পৌঁছতে পারবে, এই উদ্দেশে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে তাঁকে না দেখে ভয় করে। সুতরাং যে ব্যক্তি এরপরও সীমা লংঘন করবে, তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৪. হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ইহরামরত অবস্থায় স্থলভাগের তোমাদের নাগালে পাওয়া শিকার দিয়ে পরীক্ষা করবেন। যা ছোটরা হাত দিয়ে ধরতে পারে আর বড়রা বর্শা দিয়ে। যেন আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্যে জানার ভিত্তিতে বান্দাদের হিসাব নিবেন; তাঁর জ্ঞান সম্পর্কে পূর্ণ ঈমান রেখে কে তাঁকে না দেখে ভয় করে এবং শিকার থেকে বিরত থাকে। তাঁর কাছে কোন আমলই গোপন নয়। সুতরাং যে সীমাতিক্রম করবে এবং হজ্জ ও উমরার ইহরামরত অবস্থায় শিকার করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কারণ, সে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞায় লিপ্ত ছিলো।
95
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَقْتُلُوا۟ ٱلصَّيْدَ وَأَنتُمْ حُرُمٌ ۚ وَمَن قَتَلَهُۥ مِنكُم مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ ٱلنَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِۦ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ هَدْيًۢا بَـٰلِغَ ٱلْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّـٰرَةٌ طَعَامُ مَسَـٰكِينَ أَوْ عَدْلُ ذَٰلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوقَ وَبَالَ أَمْرِهِۦ ۗ عَفَا ٱللَّهُ عَمَّا سَلَفَ ۚ وَمَنْ عَادَ فَيَنتَقِمُ ٱللَّهُ مِنْهُ ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ ذُو ٱنتِقَامٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমরা ইহ্রামের অবস্থায় নিষিদ্ধ এলাকায় বণ্য শিকারকে হত্যা করনা; আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছা পূর্বক শিকার বধ করবে তার উপর তখন বিনিময় ওয়াজিব হবে, যা (মূল্যের দিক দিয়ে) সেই জানোয়ারের সমতুল্য হয় যাকে সে হত্যা করেছে, যার (আনুমানিক মূল্যের) মীমাংসা তোমাদের মধ্য হতে দু‘জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি করে দিবে। (অতঃপর নিরূপিত মূল্য দ্বারা) সেই বিনিময় গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু নেয়ায্ স্বরূপ কা‘বা ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিবে, না হয় কাফফারা স্বরূপ (নিরূপিত মূল্যের খাদ্যদ্রব্য) মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করবে, অথবা এর সম পরিমাণ সিয়াম পালন করবে, যেন নিজের কৃতকর্মের পরিণামের স্বাদ গ্রহণ করে; অতীত (ক্রটি) আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন; আর পুনরায় যে ব্যক্তি এরূপ কাজই করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি হতে (এর) প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন; আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৫. হে মু’মিনগণ! তোমরা হজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় স্থলভাগে কোন শিকার করো না। তোমাদের কেউ স্বেচ্ছায় কোন শিকার করলে শিকারের সমপরিমাণ প্রতিদান তাকেই দিতে হবে। চাই তা উট, গরু বা ছাগল হোক না কেন। যার ফায়সালা করবে মুসলমানদের দু’ জন ন্যায়পরায়ণ পুরুষ। তারা যে পশুর ব্যাপারেই ফায়সালা করুক না কেন তার সাথে সে আচরণই করা হবে যা কোন হাদির (ক্বিরান ও তামাত্তু হজ্জের নির্ধারিত পশু) সাথে করা হয়। তথা সে পশুকে মক্কায় পাঠানো হবে এবং হারাম এলাকায়ই তাকে জবাই করা হবে অথবা সে পশুর মূল্যমানের খাদ্য হারামের ফকিরদেরকে দেয়া হবে। প্রত্যেক ফকিরকে আধা সা’ তথা দেড় কিলো খাদ্য দিবে কিংবা প্রত্যেক আধা সা’ খাদ্যের পরিবর্তে এক দিন রোযা রাখবে। এ সবই তার শিকারের পরিণাম। হারাম করার পূর্বে ইহরাম অবস্থায় স্থলভাগের শিকার আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবে হারামের পর শিকার করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দিয়ে প্রতিশোধ নিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা এক অজেয় শক্তিধর। তাঁর শক্তির একটি নমুনা হলো তিনি চাইলে তাঁর অবাধ্য থেকে প্রতিশোধ নিতে পারেন। সে ব্যাপারে তাঁকে বাধা দেয়ার আর কেউই নেই।
96
أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ ٱلْبَحْرِ وَطَعَامُهُۥ مَتَـٰعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ ۖ وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ ٱلْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا ۗ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ٱلَّذِىٓ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমাদের জন্য সামুদ্রিক শিকার ধরা ও খাওয়া হালাল করা হয়েছে তোমাদের ও মুসাফিরদের উপকারের জন্য, আর স্থলচর শিকার ধরা তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে যতক্ষণ তোমরা ইহ্রাম অবস্থায় থাক; আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর সমীপে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৬. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন জলচর প্রাণী শিকার করা এবং সাগরের জীবিত অথবা মৃত প্রাণী। যা তোমাদের মুকীম বা মুসাফিরের জন্য লাভজনক সম্বল। জলচর প্রাণীর মতো হজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় তোমাদের জন্য স্থলচর শিকারও হারাম। আর তোমরা আল্লাহর আদেশ মেনে এবং তাঁর নিষিদ্ধ কর্ম থেকে দূরে থেকে তাঁকেই ভয় করো। কিয়ামতের দিন একমাত্র তাঁর দিকেই ফিরতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে আমলের প্রতিদান দিবেন।
97
۞ جَعَلَ ٱللَّهُ ٱلْكَعْبَةَ ٱلْبَيْتَ ٱلْحَرَامَ قِيَـٰمًا لِّلنَّاسِ وَٱلشَّهْرَ ٱلْحَرَامَ وَٱلْهَدْىَ وَٱلْقَلَـٰٓئِدَ ۚ ذَٰلِكَ لِتَعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ وَأَنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সম্মানিত গৃহ কা‘বাকে আল্লাহ মানুষের স্থিতিশীলতার কারণ রূপে তৈরী করেছেন এবং সম্মানিত মাসসমূহকে, হারামে কুরবানীর জন্তুকে এবং সেই পশুকেও যার গলায় বিশেষ ধরণের বেড়ী পড়ানো হয়েছে। এটা এ জন্য যেন তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আকাশসমূহ ও যমীনস্থিত সব বস্তুরই খবর রাখেন, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৭. আল্লাহ তা‘আলা কা’বা তথা বাইতুল্লাহিল-হারামকে মানুষের জীবন উপকরণ বানিয়েছেন। এর মাধ্যমেই তারা পেয়ে থাকে ধর্মীয় সুবিধাদি তথা সালাত, হজ্জ ও উমরাহ এবং দুনিয়ার সুবিধাদি তথা হারামের নিরাপত্তা ও ফল-ফলাদির সমাহার। তেমনিভাবে তিনি হারাম মাসগুলো তথা যুল-কি’দাহ, যুল-হিজ্জাহ, মুহাররাম ও রজব মাসকেও তাদের জীবন উপকরণ বানিয়েছেন। এ মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তিনি হাদিকে এবং হারামে নিয়ে যাওয়া পশুর গলার মালাগুলোকে মানুষের জীবন উপকরণ বানিয়েছেন। এ সব প্রাণীর মালিকদেরকে কষ্ট থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে এ নিয়ামতগুলো দিয়ে এ কথা অবগত করিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমিনের নিশ্চিত সবজান্তা। এগুলোর বিধান তোমাদের উপকারে আসবে এবং ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। আসলে বান্দাহর উপযোগী বস্তু সম্পর্কে আল্লাহর সম্যক জ্ঞান রয়েছে তাই প্রমাণ করে।
98
ٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ وَأَنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা জেনে রেখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা এবং নিশ্চয়ই অতি ক্ষমাশীল ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৮. হে মানুষ! তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অবাধ্যদের জন্য কঠিন শাস্তিদাতা এবং তাওবাকারীদের জন্য অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
99
مَّا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلْبَلَـٰغُ ۗ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া মাত্র; আর তোমরা যা কিছু প্রকাশ কর এবং যা কিছু গোপন কর তা সবকিছুই আল্লাহ জানেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৯. রাসূলের দায়িত্ব হলো কেবল আল্লাহ তা‘আলার আদেশ পৌঁছে দেয়া। মানুষকে হিদায়েতের তাওফীক দেয়া নয়। এটা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই এখতিয়ারে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রকাশ্য ও গোপন হিদায়েত ও ভ্রষ্টতা সবই জানেন। তাই তিনি তোমাদেরকে শিগগির এর প্রতিদান দিবেন।
100
قُل لَّا يَسْتَوِى ٱلْخَبِيثُ وَٱلطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ ٱلْخَبِيثِ ۚ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ يَـٰٓأُو۟لِى ٱلْأَلْبَـٰبِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলে দাওঃ পবিত্র ও অপবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। অতএব হে জ্ঞানীগণ! আল্লাহকে ভয় করতে থাক যেন তোমরা (পূর্ণ) সফলকাম হতে পার।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০০. হে রাসূল! আপনি বলে দিন যে, অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে আকৃষ্ট করলেও প্রত্যেক জিনিসের পবিত্র ও অপবিত্র সমান নয়। কারণ, এর আধিক্য কখনো এর ফযীলত বুঝায় না। তাই হে বুদ্ধিমানরা! তোমরা নাপাক ত্যাগ করে পবিত্র কর্ম করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তাহলেই তোমরা জান্নাত পেয়ে সফলকাম হবে।
101
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَسْـَٔلُوا۟ عَنْ أَشْيَآءَ إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ وَإِن تَسْـَٔلُوا۟ عَنْهَا حِينَ يُنَزَّلُ ٱلْقُرْءَانُ تُبْدَ لَكُمْ عَفَا ٱللَّهُ عَنْهَا ۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন সব বিষয় জিজ্ঞেস করনা, যদি তা তোমাদের নিকট প্রকাশ করে দেয়া হয় তাহলে তোমাদের খারাপ লাগবে, আর যদি তোমরা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় উক্ত বিষয়সমূহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস কর তাহলে তোমাদের জন্য প্রকাশ করে দেয়া হবে, অতীতের জিজ্ঞাসাবাদ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ মহাক্ষমাশীল, অতিশয় সহিষ্ণু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০১. হে মু’মিনগণ! তোমরা রাসূলকে অপ্রয়োজনীয় কোন বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না। এটি ধর্মীয় বিষয়ের সহযোগীও নয়। তোমাদের জন্য তা প্রকাশ করা হলে মনে কষ্ট পাবে। কারণ, তাতে রয়েছে কষ্টেরই ব্যাপার। রাসূলের উপর ওহী নাযিলের সময় তোমাদেরকে যে সকল বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে নিষেধ করা হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করলে তা তোমাদের জন্য বর্ণনা করা হবে। আল্লাহর জন্য তা খুবই সহজ। আল্লাহ তা‘আলা এমন অনেক বিষয় এড়িয়ে গেছেন যে ব্যাপারে কুর‘আন নিশ্চুপ রয়েছে। তাই তোমরা সেগুলো জিজ্ঞাসা করো না। তোমরা যদি সেগুলো জিজ্ঞাসা করো তাহলে সেগুলোর বিধান তোমাদের উপর বাধ্যতামূলকভাবে নাযিল হবে।
102
قَدْ سَأَلَهَا قَوْمٌ مِّن قَبْلِكُمْ ثُمَّ أَصْبَحُوا۟ بِهَا كَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এরূপ বিষয় তোমাদের পূর্বে অন্যান্য লোকেরাও জিজ্ঞেস করেছিল, অতঃপর ঐ সব বিষয়ের হক তারা আদায় করেনি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০২. এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে তোমাদের পূর্বের লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছে। তবে যখন সেগুলোকে তাদের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তখন তারা তা করেনি। ফলে তারা সে কারণে কাফির হয়ে গেছে।
103
مَا جَعَلَ ٱللَّهُ مِنۢ بَحِيرَةٍ وَلَا سَآئِبَةٍ وَلَا وَصِيلَةٍ وَلَا حَامٍ ۙ وَلَـٰكِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يَفْتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ ۖ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ না বাহীরাহর প্রচলন করেছেন, না সায়েবাহর; না ওয়াছীলার আর না হা‘মীর; কিন্তু যারা কাফির তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে, আর অধিকাংশই (ধর্ম) জ্ঞান রাখে না।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৩. আল্লাহ তা‘আলা চতুস্পদ জন্তু হালাল করে দিয়েছেন সেগুলোর কোনটিই তিনি হারাম করেননি যা মুশরিকরা তাদের মূর্তির জন্য নিজেদের উপর হারাম করেছে। যেমন: “বাহীরা” তথা নির্দিষ্ট সংখ্যক বাচ্চা প্রসবের পর যে উটের কান কেটে দেয়া হয়, “সায়িবাহ” তথা নির্দিষ্ট বয়সের পর যে উটকে তাদের মূর্তির জন্য ছেড়ে দেয়া হয়, “ওয়াসীলাহ” তথা যে উট একটার পর একটা মাদি বাচ্চাই প্রসব করে, “হামী” তথা যে মাদা উটের ঔরস থেকে কিছু সংখ্যক উট জন্ম নেয়। কাফিররা মিথ্যা ও অপবাদবশত ধারণা করে যে, আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত পশুগুলোকে হারাম করে দিয়েছেন। বস্তুতঃ অধিকাংশ কাফিরই হক ও বাতিল এবং হালাল ও হারামের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না।
104
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا۟ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ قَالُوا۟ حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ ءَابَآءَنَآ ۚ أَوَلَوْ كَانَ ءَابَآؤُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ شَيْـًٔا وَلَا يَهْتَدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহর অবতীর্ণ বিধানসমূহের দিকে এসো এবং রাসূলের দিকে’ তখন তারা বলেঃ আমাদের জন্য ওটাই যথেষ্ট যার উপর আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে পেয়েছি; যদিও তাদের পূর্ব-পুরুষরা না কোন জ্ঞান রাখতো, আর না হিদায়াত প্রাপ্ত ছিল। তবুও কি তারা তাই করবে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৪. কিছু চতুষ্পদ জন্তু হারাম করার ব্যাপারে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদকারীদেরকে যখন বলা হয়, হালাল হারাম চিনার জন্য তোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত কুর‘আন ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাতের দিকে চলে এসো তখন তারা বলে: আমরা যে বিশ্বাস, কথা ও কাজ আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে বংশ পরম্পরায় মিরাসি সূত্রে পেয়েছি তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বস্তুতঃ কীভাবেই বা তাদের জন্য এটি যথেষ্ট হবে; অথচ তাদের পূর্ব পুরুষরা কিছুই জানতো না এবং তারা সত্যের প্রতি হিদায়েতপ্রাপ্তও হয় নি?! সুতরাং তাদের অনুসারী তাদের চেয়ে আরো বেশি মূর্খ এবং আরো বেশি পথভ্রষ্ট। তাই বলতে হয়, সত্যিই এরা মূর্খ ও পথভ্রষ্ট।
105
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهْتَدَيْتُمْ ۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমাদের (সংশোধন করার) দায়িত্ব তোমাদের, যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা যদি তোমরা দীনের পথে চল; তোমরা সবাই আল্লাহরই সমীপে প্রত্যাবর্তিত হবে, অতঃপর তোমরা যা কিছু করছিলে সে সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৫. হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের ব্যাপার নিজেরাই দেখো। তোমাদের সংশোধনে আসে এমন কাজ করতে তোমরা নিজেদেরকে বাধ্য করো। তোমরা হিদায়েতের উপর থাকলে তোমাদের ডাকে সাড়া না দেয়া পথভ্রষ্টরা তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। তোমাদের হিদায়েতের উপর থাকা মানে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা। কিয়ামতের দিন একমাত্র আল্লাহর দিকেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে তোমাদের দুনিয়ার কর্মের প্রতিদান দিবেন।
106
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ شَهَـٰدَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ ٱلْمَوْتُ حِينَ ٱلْوَصِيَّةِ ٱثْنَانِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ أَوْ ءَاخَرَانِ مِنْ غَيْرِكُمْ إِنْ أَنتُمْ ضَرَبْتُمْ فِى ٱلْأَرْضِ فَأَصَـٰبَتْكُم مُّصِيبَةُ ٱلْمَوْتِ ۚ تَحْبِسُونَهُمَا مِنۢ بَعْدِ ٱلصَّلَوٰةِ فَيُقْسِمَانِ بِٱللَّهِ إِنِ ٱرْتَبْتُمْ لَا نَشْتَرِى بِهِۦ ثَمَنًا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۙ وَلَا نَكْتُمُ شَهَـٰدَةَ ٱللَّهِ إِنَّآ إِذًا لَّمِنَ ٱلْـَٔاثِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! যখন তোমাদের মধ্যে কারও মৃত্যু আসন্ন হয় তখন অসীয়াত করার সময় তোমাদের মধ্য হতে দু’জন লোক সাক্ষী থাকা সঙ্গত। এই দু’ব্যক্তি হবে দীনদার এবং তোমাদের মধ্য হতে; অথবা ভিন্ন সম্প্রদায় হতে দু’জন হবে, যদি তোমরা সফরে থাক এবং ঐ অবস্থায় মৃত্যু তোমাদের উপর উপস্থিত হয়; যদি তোমাদের সন্দেহ হয় তাহলে ওসীদ্বয়কে সালাতের (জামা‘আতের) পর রুখে নাও, অতঃপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমরা এই শপথের বিনিময়ে কোন স্বার্থ ভোগ করবনা যদি আত্মীয়ও হয়; আর আল্লাহর সাক্ষ্য প্রমাণকে আমরা গোপন করবনা, (যদি এরূপ করি) এমতাবস্থায় আমরা ভীষণ পাপী হব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৬. হে মু’মিনগণ! মৃত্যুর কোন আলামত প্রকাশ পাওয়ার মাধ্যমে তোমাদের কারো মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে বুঝতে পারলে যেন তার ওসিয়তের ব্যাপারে দু’জন ন্যায়পরায়ণ মুসলমানকে সাক্ষী রাখে। মুসলমান পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে দু’জন কাফিরকে সাক্ষী রাখে। সফরে কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে এবং তাদের সাক্ষীর ব্যাপারে কোন সন্দেহ হলে তোমরা তাদেরকে কোন এক সালাতের পর সবার সামনে দাঁড় করিয়ে এভাবে আল্লাহর নামে কসম করাবে যে, তারা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের অংশকে কোন কিছুর বিনিময়ে বিক্রি করে না দেয়। না সে ব্যাপারে কোন আত্মীয়ের পক্ষপাতিত্ব করে। না তাদের কাছে থাকা আল্লাহর কোন সাক্ষ্যকে লুকিয়ে রাখে। এ কাজ করলে তারা পাপী ও আল্লাহর অবাধ্য বলে বিবেচিত হবে।
107
فَإِنْ عُثِرَ عَلَىٰٓ أَنَّهُمَا ٱسْتَحَقَّآ إِثْمًا فَـَٔاخَرَانِ يَقُومَانِ مَقَامَهُمَا مِنَ ٱلَّذِينَ ٱسْتَحَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلْأَوْلَيَـٰنِ فَيُقْسِمَانِ بِٱللَّهِ لَشَهَـٰدَتُنَآ أَحَقُّ مِن شَهَـٰدَتِهِمَا وَمَا ٱعْتَدَيْنَآ إِنَّآ إِذًا لَّمِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যদি জানা যায় যে, ওসীদ্বয় কোন পাপে জড়িত হয়ে পড়েছিল তাদের মধ্য হতে (মৃতের) সর্বাপেক্ষা নিকটতম অপর দু’ব্যক্তি তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে, অতঃপর উভয়ে (এরূপে) আল্লাহর নামে শপথ করে বলবেঃ নিশ্চয়ই আমাদের এই শপথ তাদের শপথ অপেক্ষা অধিক সত্য এবং আমরা বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম করিনি, (যদি করি তাহলে) এমতাবস্থায় যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৭. কসমের পর সাক্ষ্য বা কসমের ক্ষেত্রে তাদের মিথ্যা সুস্পষ্ট হলে অথবা তাদের আত্মসাৎ প্রকাশ পেলে তদস্থলে মৃতের নিকটতম ব্যক্তিদের দু’জন যেন সত্যের পক্ষে কসম করে বা সাক্ষ্য দেয়। তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলবে যে, তাদের সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতার ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্যের চেয়ে তাদের মিথ্যা ও আত্মসাতের ব্যাপারে আমাদের সাক্ষ্য অধিক সত্য। আর সত্যিই আমরা মিথ্যা কসম করি নি। মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে আমরা যালিম ও আল্লাহর সীমা অতিক্রমকারী বলে বিবেচিত হবো।
108
ذَٰلِكَ أَدْنَىٰٓ أَن يَأْتُوا۟ بِٱلشَّهَـٰدَةِ عَلَىٰ وَجْهِهَآ أَوْ يَخَافُوٓا۟ أَن تُرَدَّ أَيْمَـٰنٌۢ بَعْدَ أَيْمَـٰنِهِمْ ۗ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَٱسْمَعُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْفَـٰسِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এটাই এ বিষয়ে অতীব সহজ পন্থা যে, তারা ঘটনা যথাযথভাবে প্রকাশ করে দিবে, অথবা এই ভয় করবে যে, তাদের শপথ গ্রহণ করার পর (পুনঃ) শপথ করানো হবে; আল্লাহকে ভয় কর এবং (বিধানসমূহ) শ্রবণ কর, আর আল্লাহ ফাসিকদেরকে পথ দেখাবেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৮. সাক্ষ্যের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হলে সালাতের পর সাক্ষীদ্বয়কে কসম করানো এবং মিথ্যা প্রমাণিত হলে তাদের সাক্ষ্যকে প্রত্যাখ্যান করা শরীয়তসম্মতভাবে তাদের সাক্ষ্য প্রদানের খুবই নিকটবর্তী। তাহলে তারা সাক্ষ্য না বিকৃত করবে; না পরিবর্তন কিংবা আত্মসাৎ করবে। উপরন্তু তা এরও খুবই নিকটবর্তী যে, তারা এ ব্যাপারে অবশ্যই ভয় পাবে যে, তাদের কসমের পর ওয়ারিশরাও কসম করতে পারে। আর ওয়ারিশরা সাক্ষ্যের বিপরীত কসম করলে তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হবে। আর তোমরা সাক্ষ্য ও কসমের ব্যাপারে মিথ্যা ও আত্মসাৎ পরিত্যাগ করে আল্লাহকে ভয় করো। উপরন্তু তোমাদেরকে দেয়া আদেশ গ্রহণ করার নিয়তে শুনো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসা লোকদেরকে সঠিক পথে চলার তাওফীক দেন না।
109
۞ يَوْمَ يَجْمَعُ ٱللَّهُ ٱلرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَآ أُجِبْتُمْ ۖ قَالُوا۟ لَا عِلْمَ لَنَآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّـٰمُ ٱلْغُيُوبِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যে দিন আল্লাহ সমস্ত রাসূলদেরকে সমবেত করবেন, অতঃপর বলবেনঃ তোমরা (উম্মাতদের নিকট থেকে) কি উত্তর পেয়েছিলে? তারা বলবেঃ (তাদের অন্তরের কথা) আমাদের কিছুই জানা নেই; নিশ্চয়ই আপনি সমস্ত গোপনীয় বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞাত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৯. হে মানুষ! তোমরা কিয়ামতের দিনের কথা স্মরণ করো। যখন আল্লাহ তা‘আলা সকল রাসূলকে একত্রিত করে বলবেন: যে উম্মতের নিকট আমি তোমাদেরকে পাঠিয়েছি তারা তোমাদের ডাকে কী ধরনের সাড়া দিয়েছে? তখন তাঁরা এর উত্তর আল্লাহর দিকে সোপর্দ করে বলবেন: হে আমাদের রব! এ ব্যাপারে আমাদের কোন সঠিক জ্ঞান নেই। তা তো কেবল আপনার নিকটেই। গায়েবের খবর আপনিই নিশ্চিত জানেন।
110
إِذْ قَالَ ٱللَّهُ يَـٰعِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ٱذْكُرْ نِعْمَتِى عَلَيْكَ وَعَلَىٰ وَٰلِدَتِكَ إِذْ أَيَّدتُّكَ بِرُوحِ ٱلْقُدُسِ تُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِى ٱلْمَهْدِ وَكَهْلًا ۖ وَإِذْ عَلَّمْتُكَ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ ۖ وَإِذْ تَخْلُقُ مِنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ بِإِذْنِى فَتَنفُخُ فِيهَا فَتَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِى ۖ وَتُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ بِإِذْنِى ۖ وَإِذْ تُخْرِجُ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِى ۖ وَإِذْ كَفَفْتُ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ عَنكَ إِذْ جِئْتَهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْهُمْ إِنْ هَـٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর যা তোমার উপর ও তোমার মাতার উপর (প্রদত্ত) হয়েছে। যখন আমি তোমাকে রূহুল কুদুস দ্বারা সাহায্য করেছি, (এবং) তুমি মানুষের সাথে (মাতার) ক্রোধের কথা বলেছ এবং পৌঁঢ় বয়সেও; আর যখন আমি তোমাকে কিতাবসমূহ, প্রগাঢ় জ্ঞান এবং তাওরাত ও ইঞ্জীল শিক্ষা দিয়েছি এবং যখন তুমি আমার আদেশে মাটি দ্বারা পাখীর আকৃতি সদৃশ এক আকৃতি প্রস্তুত করেছিলে, অতঃপর তুমি ওতে ফুৎকার দিলে, যার ফলে ওটা আমার আদেশে পাখী হয়ে যেত, আর তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগী নিরাময় করে দিতে আর যখন তুমি আমার আদেশে মৃতদেরকে বের করে দাঁড় করাতে, আর যখন আমি বানী ইসরাঈলকে (তোমাকে হত্যা করা হতে) নিবৃত্ত রেখেছি যখন তুমি তাদের কাছে (স্বীয় নবুওয়াতের) প্রমাণাদী নিয়ে হাজির হয়েছিলে, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফির ছিল তারা বলেছিলঃ এটা (মু’জিযাসমূহ) স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১০. আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) কে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম! তোমাকে দেয়া আমার নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করো। তম্মধ্যে, ক. পিতা ছাড়া তোমার সৃষ্টি। খ. তোমার মা মারইয়াম (আলাইহাস-সালাম) কে সমকালীন মহিলাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান। গ. জিব্রীল (আলাইহিস-সালাম) এর মাধ্যমে তোমাকে শক্তিশালী করণ। ঘ. দুধ পানের বয়সে মানুষের সাথে কথোপকথন ও তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহŸান । তেমনিভাবে পূর্ণ বয়সেও তাদের কাছে পাঠানো ওহীর ব্যাপারে কথোপকথন। ঙ. আমি তোমাকে লেখা শিক্ষা দিয়েিেছ। চ. তোমাকে মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর উপর অবতীর্ণ তাওরাতও শিক্ষা দিয়েছি। ছ. তোমার উপর ইঞ্জীল নাযিল করে তাও তোমাকে শিক্ষা দিয়েছি। জ. তোমাকে শরীয়তের রহস্য কথা, ফায়েদা ও হিকমত শিক্ষা দিয়েছি। ঝ. তুমি মাটি থেকে পাখী বানিয়ে তাতে ফুঁ দিলে তা পাখী হয়ে যেতো। ঞ. তুমি জন্মান্ধকে তার অন্ধত্ব থেকে আরোগ্য দিতে পারো। ট. তুমি কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দিতে পারো। তখন সে সুন্দর চামড়ার অধিকারী হয়ে যায়। ঠ. তুমি আল্লাহর নিকট জীবন দেয়ার দু‘আর মাধ্যমে মৃতদেরকে জীবিত করতে পারো। এ সবই কেবল আমারই অনুমতিক্রমে। ড. বনী ইসরাঈলের নিকট আনা সুস্পষ্ট মু’জিযার জন্য তোমাকে হত্যা করতে চাইলে আমি তোমার পক্ষ হয়ে তাদেরকে প্রতিহত করেছি। এতদসত্তে¡ও তারা নিদর্শনাবলীর সাথে কুফরি করে বললো: ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) যা নিয়ে এসেছে তা সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।
111
وَإِذْ أَوْحَيْتُ إِلَى ٱلْحَوَارِيِّـۧنَ أَنْ ءَامِنُوا۟ بِى وَبِرَسُولِى قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَٱشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন আমি হাওয়ারীদেরকে আদেশ করলামঃ আমার প্রতি এবং আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আন তখন তারা বললঃ আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১১. তুমি আরো স্মরণ করো আমার বিশেষ নিয়ামতের কথা যখন আমি সহজভাবে তোমার কিছু সহযোগী তৈরি করেছি যখন হাওয়ারীদের মাঝে আমার ও তোমার উপর ঈমান আনার চেতনা ঢুকিয়ে দিয়েছি। তখন তারা নত হয়ে তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে বললো: আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি সাক্ষী থাকুন যে, নিশ্চয়ই আমরা আপনারই একান্ত অনুগত মুসলমান।
112
إِذْ قَالَ ٱلْحَوَارِيُّونَ يَـٰعِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيعُ رَبُّكَ أَن يُنَزِّلَ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ ٱلسَّمَآءِ ۖ قَالَ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন হাওয়ারীরা বললঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! আপনার রাব্ব কি এরূপ করতে পারেন যে, আমাদের জন্য আকাশ হতে কিছু খাদ্য প্রেরণ করেন? ঈসা বললঃ আল্লাহকে ভয় কর যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১২. তুমি আরো স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন হাওয়ারীরা বললো: আপনি দু‘আ করলে আপনার প্রতিপালক কি পারবে আকাশ থেকে খাঞ্চাভর্তি খাদ্য নাযিল করতে? তখন ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) তাদের উত্তরে তাদেরকে আল্লাহভীতি ও ফিতনার কারণ হতে পারে বিধায় তাদের চাওয়া জিনিস পরিত্যাগ করার আদেশ করলেন। তাই তিনি তাদেরকে বললেন: মু’মিন হয়ে থাকলে তোমরা রিযিক অনুসন্ধানে নিজেদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করো।
113
قَالُوا۟ نُرِيدُ أَن نَّأْكُلَ مِنْهَا وَتَطْمَئِنَّ قُلُوبُنَا وَنَعْلَمَ أَن قَدْ صَدَقْتَنَا وَنَكُونَ عَلَيْهَا مِنَ ٱلشَّـٰهِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, আমরা তা থেকে আহার করি এবং আমাদের অন্তর সম্পূর্ণ প্রশান্ত হয়ে যায়, আর আমাদের এই বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় হয় যে, আপনি আমাদের নিকট সত্য বলেছেন এবং আমরা এর প্রতি সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৩. হাওয়ারীরা ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) কে বললো: আমরা চাই যে, আমরা এ খাঞ্চাভর্তি খাদ্য থেকে কিছু খাবো। তখন আল্লাহর পরিপূর্ণ কুদরত ও আপনার রিসালাতের ব্যাপারে আমাদের মন প্রশান্ত হয়ে যাবে। আর আমরা এ কথা দৃঢ়ভাবে জানতে পারবো যে, আপনি আল্লাহর কাছ থেকে যা নিয়ে এসেছেন সে ব্যাপারে আপনি আমাদের সাথে সত্য কথাই বলছেন। উপরন্তু আমরা অনুপস্থিত লোকদের নিকট এ ব্যাপারে সাক্ষী হবো।
114
قَالَ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ ٱللَّهُمَّ رَبَّنَآ أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ ٱلسَّمَآءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَءَاخِرِنَا وَءَايَةً مِّنكَ ۖ وَٱرْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلرَّٰزِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ঈসা ইবনে মারইয়াম দু‘আ করলঃ হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ণ করুন যেন ওটা আমাদের, অগ্র ও পশ্চাতবর্তীদের জন্য একটি আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয়ে থাকে। আর আমাদেরকে রিয্ক প্রদান করুন, বস্তুতঃ আপনিতো সর্বোত্তম জীবিকা প্রদানকারী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৪. ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আল্লাহকে ডেকে বললেন: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের উপর খাঞ্চাভর্তি খাদ্য নাযিল করুন। সে দিনকে আমরা ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে আপনার কৃতজ্ঞতার্থে তাকে আমরা সম্মান করবো। উপরন্তু তা হবে আপনার একক সত্তা ও আমার প্রেরিত বিষয়ের সত্যতার প্রমাণ ও আলামত। আপনার ইবাদাতের সহযোগী হবে আপনি আমাদেরকে এমন রিযিক দিন। হে প্রতিপালক! আপনিই সর্বোত্তম রিযিকদাতা।
115
قَالَ ٱللَّهُ إِنِّى مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ ۖ فَمَن يَكْفُرْ بَعْدُ مِنكُمْ فَإِنِّىٓ أُعَذِّبُهُۥ عَذَابًا لَّآ أُعَذِّبُهُۥٓ أَحَدًا مِّنَ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ বললেনঃ আমি এই খাদ্য তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করব, অনন্তর তোমাদের মধ্য হতে যে এরপর অকৃতজ্ঞ হবে, আমি তাকে এমন শাস্তি দিব যে, বিশ্ববাসীদের মধ্যে ঐ শাস্তি আর কেহকেও দিবনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৫. আল্লাহ তা‘আলা ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) এর ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন: তোমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমি নিশ্চিত খাঞ্চাভর্তি খাদ্য নাযিল করবো। তবে নাযিল হওয়ার পরও কেউ কুফরি করলে সে যেন নিজকেই তিরস্কার করে। আমি তাকে অচিরেই এমন কঠিন শাস্তি দেবো যা আর কাউকে দেবো না। কারণ, সে সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেছে। তাই তার কুফরি হলো হঠকারিতার কুফরি। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে কৃত ওয়াদা বাস্তবায়ন ও তা তাদের উপর নাযিল করলেন।
116
وَإِذْ قَالَ ٱللَّهُ يَـٰعِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ءَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِى وَأُمِّىَ إِلَـٰهَيْنِ مِن دُونِ ٱللَّهِ ۖ قَالَ سُبْحَـٰنَكَ مَا يَكُونُ لِىٓ أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِى بِحَقٍّ ۚ إِن كُنتُ قُلْتُهُۥ فَقَدْ عَلِمْتَهُۥ ۚ تَعْلَمُ مَا فِى نَفْسِى وَلَآ أَعْلَمُ مَا فِى نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّـٰمُ ٱلْغُيُوبِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলেঃ তোমরা আল্লাহর সাথে আমার ও আমার মায়েরও ইবাদাত কর? ঈসা নিবেদন করবেঃ আপনি পবিত্র! আমার পক্ষে কোনক্রমেই শোভনীয় ছিলনা যে, আমি এমন কথা বলি যা বলার আমার কোন অধিকার নেই; যদি আমি বলে থাকি তাহলে অবশ্যই আপনার জানা থাকবে; আপনিতো আমার অন্তরে যা আছে তাও জানেন, পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞানে যা কিছু রয়েছে আমি তা জানিনা; সমস্ত গাইবের বিষয় আপনিই জ্ঞাত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৬. স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিবসে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস-সালাম) কে উদ্দেশ্য করে বলবেন: হে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম! তুমি কি মানুষকে বলেছিলে, তোমরা আমাকে ও আমার মা-কে আল্লাহ ছাড়া মা’বূদ বানিয়ে নাও। তখন ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর রব্বের পবিত্রতা বর্ণনা করে উত্তরে বলেন: বস্তুতঃ সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলা আমার জন্য উচিত নয়। তারপরও যদি ধরে নেয়া হয় যে, আমি তা বলেছি তাহলে আপনি তো তা অবশ্যই জানেন। কারণ, আপনার নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। আপনি আমার অন্তরে লুকিয়ে রাখা বিষয় জানেন। আমি তো আপনার অন্তরের কিছুই জানি না। একমাত্র আপনিই প্রত্যেক অনুপস্থিত, গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই জানেন।
117
مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَآ أَمَرْتَنِى بِهِۦٓ أَنِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْ ۚ وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ ۖ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِى كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ شَهِيدٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তাদেরকে উহা ব্যতীত কিছুই বলিনি যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, যিনি আমার রাব্ব এবং তোমাদেরও রাব্ব। আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম, অতঃপর আপনি যখন আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই ছিলেন তাদের রক্ষক, বস্তুতঃ আপনিই সর্ব বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৭. ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর রব্বকে বললেন: আমি মানুষদেরকে আপনার নির্দেশিত বিষয় বলেছি। তথা আপনার একক ইবাদাতের নির্দেশ। আমি তাদের কথার পর্যবেক্ষক ছিলাম যতদিন আমি তাদের মাঝে অবস্থান করেছিলাম। যখন আপনি আমাকে জীবিতাবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে তাদের মাঝে আমার উপস্থিতির পরিসমাপ্তি ঘটালেন তখন আপনিই একমাত্র তাদের আমলসমূহের সংরক্ষক হে আমার রব্ব! বস্তুতঃ আপনি সব কিছুরই সাক্ষী। কোন কিছুই আপনার অলক্ষ্যে নেই। তাই তাদের উদ্দেশ্যে বলা আমার কোন কথা এবং আমার পরে তাদের কোন কথা আপনার নিকট গোপন নয়।
118
إِن تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۖ وَإِن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তাহলে ওরাতো আপনার বান্দা; আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলেতো আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৮. হে আমার রব্ব! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিলে তারা তো আপনারই বান্দা। আপনি তাদের সাথে যা চান তাই করতে পারেন। আর আপনি তাদের মু’মিনদেরকে দয়া ও ক্ষমা করলে তাতে আপনাকে বাধা দেয়ারও কেউ নেই। আপনি হলেন অপরাজেয় পরাক্রমশালী। আপনি নিজ পরিচালনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
119
قَالَ ٱللَّهُ هَـٰذَا يَوْمُ يَنفَعُ ٱلصَّـٰدِقِينَ صِدْقُهُمْ ۚ لَهُمْ جَنَّـٰتٌ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ۚ رَّضِىَ ٱللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا۟ عَنْهُ ۚ ذَٰلِكَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ বলবেনঃ এটি সেই দিন যেদিন সত্যবাদীদের সত্যবাদীতা কাজে আসবে, তারা উদ্যান প্রাপ্ত হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট; এটাই হচ্ছে মহাসফলতা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৯. আল্লাহ তা‘আলা ‘ঈসা (আলাইহিস-সালাম) কে বললেন: আজ কথা, কাজ ও নিয়তে সত্যবাদীদের সত্যতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার অট্টালিকা ও গাছের নিচ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। মৃত্যু কখনোই তাদেরকে গ্রাস করবে না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর সন্তুষ্ট। কখনোই তাদের উপর অসন্তুষ্ট হবেন না। আর তারাও স্থায়ী নিয়ামত পেয়ে তাঁর উপর সন্তুষ্ট। এ প্রতিদান ও সন্তুষ্টি সত্যিই মহা সফলতা। আর কোন সফলতাই এর নিকটবর্তীও নয়।
120
لِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا فِيهِنَّ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌۢ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহরই জন্য অধিপত্য রয়েছে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল এবং ঐ সমস্ত কিছুর যা এতদুভয়ের মাঝে বিদ্যমান; আর তিনি সকল বিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২০. একমাত্র আল্লাহর জন্যই আকাশ ও জমিনের মালিকানা। তিনিই সেগুলোকে সৃষ্টি ও পরিচালনা করছেন এবং সেগুলোর মাঝে যা কিছু রয়েছে সে সকল সৃষ্টির মালিকও তিনি। তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিধর। কোন বস্তুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।