আল-মুজাদালাহ

المجادلة

সূরা 58 মদীনা 22 আয়াত

بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় মেহেরবান।

1
قَدْ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوْلَ ٱلَّتِى تُجَـٰدِلُكَ فِى زَوْجِهَا وَتَشْتَكِىٓ إِلَى ٱللَّهِ وَٱللَّهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَآ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌۢ بَصِيرٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
(হে রাসূল) আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করেছে এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করেছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১. হে রাসূল! অবশ্যই আল্লাহ সেই মহিলার কথা শুনেছেন (যিনি হলেন খাওলা বিনতে সালাবা) যে আপনার সাথে তার স্বামীর ব্যাপারে (যিনি হলেন আওস ইবনু সামিত) বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। যখন সে তার সাথে জেহার করে এবং আপনার নিকট তার স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করে। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথোপকথন শুনেন। বস্তুতঃ আল্লাহর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। আল্লাহ অবশ্যই স্বীয় বান্দাদের কথা শ্রবণকারী এবং তাদের আচরণ দর্শনকারী। তাঁর নিকট এর কোন কিছুই অজানা নয়।
2
ٱلَّذِينَ يُظَـٰهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَآئِهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَـٰتِهِمْ ۖ إِنْ أُمَّهَـٰتُهُمْ إِلَّا ٱلَّـٰٓـِٔى وَلَدْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنكَرًا مِّنَ ٱلْقَوْلِ وَزُورًا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে তারা জেনে রাখুক যে, তাদের স্ত্রীরা তাদের মা নয়; যারা তাদেরকে জন্মদান করে শুধু তারাই তাদের মা; তারাতো অসঙ্গত ও ভিত্তিহীন কথাই বলে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২. যারা নিজেদের নারীদের সাথে জেহার করে এভাবে যে, সে নিজ স্ত্রীকে বলে, তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মতো। তারা নিজেদের উক্ত কথায় মিথ্যা বলেছে। কেননা, তাদের স্ত্রীরা মূলতঃ তাদের মা নয়। বরং তাদের মা তো কেবল তারাই যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। বস্তুতঃ তারা যখন এ কথা বলে তখন তারা ভয়ানক ও মিথ্যা কথাই বলে। বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী। তাই তিনি এ পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তোমাদের উদ্দেশ্যে কাফফারা স্থির করেছেন।
3
وَٱلَّذِينَ يُظَـٰهِرُونَ مِن نِّسَآئِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا۟ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّن قَبْلِ أَن يَتَمَآسَّا ۚ ذَٰلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِۦ ۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে ‘‘যিহার’’ করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাহলে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করতে হবে - এই নির্দেশ তোমাদেরকে দেয়া হল। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্যক অবগত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩. যারা এমন জঘন্য কথা বলে অতঃপর যাকে কেন্দ্র করে এ কথা বলেছে তার সাথে মিলন করতে চায় তারা যেম মিলনের পূর্বে একটি গোলাম স্বাধীন করার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করে। উপরোল্লিখিত এ বিধান তোমাদেরকে জেহার থেকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যেই করা হলো। বস্তুতঃ তোমরা যা কিছু করো সে বিষয়ে আল্লাহ পরিজ্ঞাত। তাঁর নিকট তোমাদের আমলের কোন কিছুই গোপন নয়।
4
فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن قَبْلِ أَن يَتَمَآسَّا ۖ فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ۚ ذَٰلِكَ لِتُؤْمِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ ۗ وَلِلْكَـٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু যার এ সামর্থ্য নেই, একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে তাকে একাদিক্রমে দুই মাস সিয়াম পালন করতে হবে। যে তাতেও অসমর্থ হবে সে ষাটজন অভাবগ্রস্তকে খাওয়াবে; এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলি আল্লাহর নির্ধারিত বিধান, কাফিরদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪. তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন করার জন্য দাস না পায় সে যেন জেহারকৃত স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে একটানা দু’মাস রোযা রাখে। আর তাতে অপারগ হলে সে যেন ষাটজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ায়। এ বিধান এ জন্য যে, যাতে করে তোমরা বিশ্বাস করতে পারো যে, আল্লাহ এ ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করেছেন। ফলে তাঁর নির্দেশ মান্য করতে পারো। তোমাদের উদ্দেশ্যে বিধিবদ্ধ এ বিধান হলো আল্লাহর বান্দাদের উদ্দেশ্যে তাঁর নির্ধারিত সীমানা। ফলে তোমরা তা অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ আল্লাহর বিধান ও তাঁর সীমানাসমূহকে অস্বীকাকারীদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।
5
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحَآدُّونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ كُبِتُوا۟ كَمَا كُبِتَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ وَقَدْ أَنزَلْنَآ ءَايَـٰتٍۭ بَيِّنَـٰتٍ ۚ وَلِلْكَـٰفِرِينَ عَذَابٌ مُّهِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদেরকে অপদস্থ করা হবে যেমন অপদস্থ করা হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে; আমি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেছি; কাফিরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫. নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রæতা রাখে তাদেরকে অপমান ও অপদস্ত করা হয়েছে যেমন পূর্বেকার জাতিদেরকে অপমান ও অপদস্ত করা হয়েছে। অথচ আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী অবতীর্ণ করেছি। বস্তুতঃ আল্লাহ, রাসূল ও তাঁর নিদর্শনগুলো অবিশ্বাসকারীদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি।
6
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ ٱللَّهُ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوٓا۟ ۚ أَحْصَىٰهُ ٱللَّهُ وَنَسُوهُ ۚ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ شَهِيدٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সেদিন, যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন এবং তাদেরকে জানিয়ে দিবেন যা তারা করত; আল্লাহ উহার হিসাব রেখেছেন, যদিও তারা তা বিস্মৃত হয়েছে। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬. আল্লাহ যে দিন তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন সে দিন তাদের মধ্যে কেউ বাদ পড়বে না। তখন তিনি তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কৃত অপকর্ম সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করবেন। আল্লাহ এগুলোকে তাদের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। ফলে তাদের আমলের কোন কিছুই বাদ পড়েনি। তারা ভুলে গিয়েছিলো। এখন তারা নিজেদের আমল নামায় তা লিপিবদ্ধ অবস্থায় পেয়ে গেছে। যা ছোট-বড় সকল আমল সংরক্ষণ করে রেখেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ সকল বিষয়ে অবগত। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না।
7
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۖ مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَىٰ ثَلَـٰثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَآ أَدْنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا۟ ۖ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا۟ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি কি অনুধাবন করনা, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয়না যাতে চতুর্থ হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেননা; এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয়না যাতে ষষ্ঠ হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেননা; তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশি হোক, তারা যেখানেই থাকুকনা কেন তিনি তাদের সাথে আছেন। তারা যা করে, তিনি তাদেরকে কিয়ামাত দিবসে তা জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭. হে রাসূল! আপনি কি ভেবে দেখেন না যে, আল্লাহ আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই জানেন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে তাঁর নিকট এর কোন কিছুই গোপন থাকে না। কোন তিনজনের সংলাপ হলেই তিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে চতুর্থজন হিসাবে সেখানে উপস্থিত থাকেন। আর কোন পাঁচজনের সংলাপ হলেও তিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের ষষ্ঠজন হিসাবে সেখানে উপস্থিত থাকেন। এতদপেক্ষা কম-বেশী যে সংখ্যাই হোক এবং তারা যেখানেই হোক আল্লাহ তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের সাথেই রয়েছেন। তাঁর নিকট তাদের কোন কথাই গোপন থাকে না। অতঃপর তিনি কিয়ামতের দিন তাদের আমল সম্পর্কে সংবাদ দিবেন। অবশ্যই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে অবগত। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না।
8
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ نُهُوا۟ عَنِ ٱلنَّجْوَىٰ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا نُهُوا۟ عَنْهُ وَيَتَنَـٰجَوْنَ بِٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِ وَمَعْصِيَتِ ٱلرَّسُولِ وَإِذَا جَآءُوكَ حَيَّوْكَ بِمَا لَمْ يُحَيِّكَ بِهِ ٱللَّهُ وَيَقُولُونَ فِىٓ أَنفُسِهِمْ لَوْلَا يُعَذِّبُنَا ٱللَّهُ بِمَا نَقُولُ ۚ حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَا ۖ فَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি কি তাদেরকে লক্ষ্য করনা, যাদেরকে গোপন পরামর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছিল; অতঃপর তারা যা নিষিদ্ধ তারই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচরণ, সীমা লংঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের জন্য কানাকানি করে। তারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তারা তোমাকে এমন কথা দ্বারা অভিবাদন করে যদ্বারা আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন করেননি। তারা মনে মনে বলেঃ আমরা যা বলি উহার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দেননা কেন? জাহান্নামই তাদের উপযুক্ত শাস্তি, সেখানে তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট সেই আবাস!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮. হে রাসূল! আপনি কি সেসব ইহুদীকে দেখেন না, যারা কোন মু’মিনকে দেখলে কানাকানি করতো। তাই আল্লাহ তাদেরকে কানাকানি থেকে নিষেধ করলেন। তদুপরি তারা আল্লাহ যে বিষয়ে নিষেধ করেছেন তার প্রতি প্রত্যাবর্তন করে এবং পাপের কানাকানিতে লিপ্ত হয়। যথা মু’মিনদের সমালোচনা, তাদের উপর চড়াও হওয়া ও রাসূলের অবাধ্যতা। হে রাসূল! যখন তারা আপনার নিকট আসে তখন এমন অভিবাদন জানায় যদ্বারা আল্লাহ আপনাকে অভিবাদন জানান নি। তা হলো তাদের কথা “আস-সামু আলাইকা”। এদ্বারা তাদের উদ্দেশ্য ছিলো আপনি যেন মারা যান এবং তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) এর প্রতি মিথ্যারোপ করতে গিয়ে বলে: আমাদের কথার ফলে আল্লাহ কেন আমাদেরকে শাস্তি দেন না? কেননা, তিনি যদি তাঁর নবুওয়াতের দাবিতে সত্য হতেন তাহলে আল্লাহ আমাদের কথার উপর শাস্তি দিতেন! তাদের কথার জন্য জাহান্নামই তাদের শাস্তি হিসাবে যথেষ্ট। তারা জ্বলন্ত আগুনের কষ্ট পোহাবে। কতোই না নিকৃষ্ট তাদের ঠিকানা।
9
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا تَنَـٰجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَـٰجَوْا۟ بِٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِ وَمَعْصِيَتِ ٱلرَّسُولِ وَتَنَـٰجَوْا۟ بِٱلْبِرِّ وَٱلتَّقْوَىٰ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ٱلَّذِىٓ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন গোপন পরামর্শ কর, সেই পরামর্শ যেন পাপাচরণ, সীমা লংঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ সম্পর্কে না হয়। কল্যাণকর কাজ ও তাকওয়া অবলম্বনের পরামর্শ কর এবং ভয় কর আল্লাহকে যাঁর নিকট তোমরা সমবেত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯. হে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী ও তাঁর প্রবর্তিত শরীয়তের উপর আমলকারী! তোমরা পাপ, শত্রæতা ও রাসূলের অবাধ্যতার কাজে কানাকানি করো না। যাতে তোমরা ইহুদিদের মতো হয়ে না যাও। বরং তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের বিষয় ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকার কাজে কানাকানি করো। আর তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করো। কেননা, কিয়ামত দিবসে হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে তাঁর কাছেই তোমরা সমবেত হবে।
10
إِنَّمَا ٱلنَّجْوَىٰ مِنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ لِيَحْزُنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَلَيْسَ بِضَآرِّهِمْ شَيْـًٔا إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
শাইতানের প্ররোচনায় হয় এই গোপন পরামর্শ, মু’মিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্য; কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত শাইতান তাদের সামান্যতম ক্ষতি সাধনেও সক্ষম নয়। মু’মিনদের কর্তব্য হল আল্লাহর উপর নির্ভর করা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০. পাপ, শত্রæতা ও রাসূলের অবাধ্যতার কাজে কানাকানি শয়তান কর্তৃক প্রলোভন ও তার চেলাদেরকে প্ররোচনা দেয়ার নামান্তর। যাতে করে মু’মিনদের অন্তরে দুশ্চিন্তা প্রবিষ্ট করে যে, তাদের জন্য ফন্দি আঁটা হচ্ছে। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতীত শয়তান ও তার প্রলোভন কোন ক্ষতি করতে পারে না। মুমিনদের উচিৎ সর্ব বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করা।
11
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا قِيلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوا۟ فِى ٱلْمَجَـٰلِسِ فَٱفْسَحُوا۟ يَفْسَحِ ٱللَّهُ لَكُمْ ۖ وَإِذَا قِيلَ ٱنشُزُوا۟ فَٱنشُزُوا۟ يَرْفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنكُمْ وَٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْعِلْمَ دَرَجَـٰتٍ ۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! যখন তোমাদের বলা হয় মজলিসের স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান করে দিবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করে দিবেন এবং যখন বলা হয় উঠে যাও, তখন উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, তোমরা যা কর সেই সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১. হে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী ও তাঁর প্রবর্তিত শরীয়তের উপর আমলকারী! তোমাদের বৈঠকসমূহকে প্রশস্ত করতে বলা হলে তোমরা তা প্রশস্ত করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ইহকাল ও পরকালে প্রশস্ততা প্রদান করবেন। তোমাদেরকে কোন বৈঠক থেকে উঠে যেতে বলা হলে তোমরা সেখান থেকে উঠে যাও। যাতে সেখানে সম্মানী ব্যক্তিরা বসতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদার ও জ্ঞানীদের মর্যাদা বিরাট আকারে বহু গুণে উন্নীত করেন। আল্লাহ তোমাদের সমূহ আমল সম্পর্কে অবগত। তাঁর নিকট তোমাদের কোন আমলই গোপন থাকে না। অচিরেই তিনি এর প্রতিদান দিবেন।
12
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا نَـٰجَيْتُمُ ٱلرَّسُولَ فَقَدِّمُوا۟ بَيْنَ يَدَىْ نَجْوَىٰكُمْ صَدَقَةً ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَأَطْهَرُ ۚ فَإِن لَّمْ تَجِدُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে মু’মিনগণ! তোমরা রাসূলের সাথে চুপি চুপি কথা বলতে চাইলে উহার পূর্বে সাদাকাহ প্রদান করবে, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় ও পরিশোধক। যদি তাতে অক্ষম হও তাহলে এ জন্য তোমাদেরকে অপরাধী গণ্য করা হবেনা। কেননা আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২. যখন সাহাবীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম) এর সাথে বেশী বেশী চুপিসারে কথা বলতে লাগলেন তখন আল্লাহ বলেন, হে মুমিনরা! তোমরা যখন রাসূলের সাথে চুপিসারে কথা বলতে চাও তখন এর পূর্বে সাদাকা পেশ করো। এ দান তোমাদের জন্য অনেক উত্তম ও পবিত্র। যেহেতু এতে আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে যা অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করে। তবে যদি দান করার মতো কোন কিছু না পাও তাহলে কোন সমস্যা নেই। কেননা, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পাপের প্রতি ক্ষমাশীল ও তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াপরবশ। যেহেতু তিনি তাদের জন্য সহজ বিধানই প্রবর্তন করেন।
13
ءَأَشْفَقْتُمْ أَن تُقَدِّمُوا۟ بَيْنَ يَدَىْ نَجْوَىٰكُمْ صَدَقَـٰتٍ ۚ فَإِذْ لَمْ تَفْعَلُوا۟ وَتَابَ ٱللَّهُ عَلَيْكُمْ فَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ ۚ وَٱللَّهُ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা কি চুপে চুপে কথা বলার পূর্বে সাদাকাহ প্রদান কষ্টকর মনে কর? যখন তোমরা সাদাকাহ দিতে পারলেনা, আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন, তখন তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্যক অবগত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩. তোমরা কি রাসূলের সাথে চুপিসারে কথা বলার সময় দান পেশ করতে অভাবের ভয় করছো?! যদি তোমরা আদিষ্ট বিষয়ে আমল না করো আর আল্লাহ তা পরিত্যাগের অনুমতি দানপূর্বক তাওবা কবুল করেন তাহলে তোমরা পূর্ণাঙ্গরূপে নামায আদায় করো এবং তোমাদের সম্পদের যাকাত প্রদান করো। আর আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের আনুগত্য করো। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের সকল আমল সম্পর্কে অবগত। তাঁর নিকট তোমাদের কোন আমলই গোপন নয়। অচিরেই তিনি তোমাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
14
۞ أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ تَوَلَّوْا۟ قَوْمًا غَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مَّا هُم مِّنكُمْ وَلَا مِنْهُمْ وَيَحْلِفُونَ عَلَى ٱلْكَذِبِ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যারা আল্লাহ যে সম্প্রদায়ের প্রতি রুষ্ট, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে? তারা তোমাদের (মুসলিমদের) দলভুক্ত নয় এবং তাদেরও (ইয়াহুদদের) দলভুক্ত নয় এবং তারা জেনে মিথ্যা শপথ করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪. হে রাসূল! আপনি কি ওই সব মুনাফিককে দেখেন নি যারা কুফরী ও পাপের কারণে আল্লাহর গজবে নিপতিত ইহুদিদের সাথে বন্ধুত্ব করে। এ মুনাফিকরা না মুমিন, না ইহুদি। বরং তারা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। না এই পক্ষে; না ওই পক্ষে। তারা এই মর্মে শপথ করে যে, তারা সত্যিই মুসলিম এবং তারা মুসলমানদের সংবাদ ইহুদিদের নিকট পৌঁছায় নি। অথচ তারা নিজেদের উক্ত শপথে মিথ্যাবাদী।
15
أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖ إِنَّهُمْ سَآءَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কঠিন শাস্তি। কত মন্দ তারা যা করে!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫. তিনি তাদের উদ্দেশ্যে পরকালের কঠিন শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। তিনি তাদেরকে জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে প্রবিষ্ট করবেন। কেননা, তারা দুনিয়ায় কুফরীর মতো নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত ছিলো।
16
ٱتَّخَذُوٓا۟ أَيْمَـٰنَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوا۟ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ فَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা তাদের শপথগুলিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে, এভাবে তারা আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬. তারা নিজেদের মিথ্যা শপথগুলোকে কুফরীর কারণে হত্যার শিকার হওয়া থেকে বাঁচার উপায় বানিয়েছে। তাই তো তারা নিজেদের রক্ত ও সম্পদ রক্ষার্থে তদ্বারা ইসলাম প্রকাশ করে থাকে। এর ফলশ্রæতিতে তারা মুসলমানদেরকে অপমান ও নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে মানুষকে হক থেকে বিরত রাখে। তাই তাদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি যা তাদেরকে অপমান ও অপদস্ত করবে।
17
لَّن تُغْنِىَ عَنْهُمْ أَمْوَٰلُهُمْ وَلَآ أَوْلَـٰدُهُم مِّنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহর শাস্তির মুকাবিলায় তাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদের কোন কাজে আসবেনা; তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭. আল্লাহর নিকট তাদের সম্পদ ও সন্তানরা কোন উপকার সাধন করতে পারবে না। তারা জাহান্নামের অধিবাসী। তারা তথায় চিরস্থায়ী অবস্থানকারী হিসেবে প্রবেশ করবে। তাদের থেকে কখনো শাস্তি সরানো হবে না।
18
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ ٱللَّهُ جَمِيعًا فَيَحْلِفُونَ لَهُۥ كَمَا يَحْلِفُونَ لَكُمْ ۖ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ عَلَىٰ شَىْءٍ ۚ أَلَآ إِنَّهُمْ هُمُ ٱلْكَـٰذِبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যেদিন আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন তাদের সকলকে, তখন তারা তাঁর (আল্লাহর) নিকট সেরূপ শপথ করবে যেরূপ শপথ তোমাদের নিকট করে এবং তারা মনে করে যে, এতে তারা উপকৃত হবে। সাবধান! তারাইতো মিথ্যাবাদী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮. যে দিন আল্লাহ তাদের সবাইকে পুনরুত্থিত করবেন। তখন প্রতিদানের জন্য পুনরুত্থানে কাউকে বাদ রাখবেন না। তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলেবে যে, তারা কুফরী ও মুনাফিকীর উপর ছিলো না। বরং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কার্যাবলী সম্পাদনকারী মুমিন ছিলো। হে মুমিনরা! তারা তাঁর নিকট হুবহু এভাবে শপথ করবে যেভাবে তোমাদের নিকট দুনিয়াতে এ বলে শপথ করে থাকে যে, তারা মুসলিম এবং তারা মনে করে যে, আল্লাহর সমীপে তাদের এ শপথ কোন উপকার সাধনে কিংবা অপকার দূরীকরণে কাজ দিবে। বরং জেনে রেখো, তারা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের এ শপথে মিথ্যুক।
19
ٱسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ فَأَنسَىٰهُمْ ذِكْرَ ٱللَّهِ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ حِزْبُ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۚ أَلَآ إِنَّ حِزْبَ ٱلشَّيْطَـٰنِ هُمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
শাইতান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করেছে। ফলে তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ। তারা শাইতানেরই দল। সাবধান! শাইতানের দল অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯. তাদের উপর শয়তান চড়ে বসেছে। ফলে সে তার প্ররোচনার মাধ্যমে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রেখেছে। তাই তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজ না করে বরং তাঁর অসন্তুষ্টির কাজে লিপ্ত হয়েছে। এ সব বৈশিষ্ট্যের লোক হলো ইবলীসের অনুসারী ও তার চেলা-চামুÐা। জেনে রেখো, ইবলীসের অনুসারী ও চেলারা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা, তারা হেদায়েতকে ভ্রষ্টতার বিনিময়ে এবং জান্নাতকে জাহান্নামের বিনিময়ে বিক্রি করেছে।
20
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحَآدُّونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ أُو۟لَـٰٓئِكَ فِى ٱلْأَذَلِّينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা হবে চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০. যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রæতা রাখে তারা সে সব লোকদের মধ্যে শামিল যে সব কাফির সম্প্রদায়কে আল্লাহ ইহকাল ও পরকালে অপমান ও অপদস্ত করেছেন।
21
كَتَبَ ٱللَّهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا۠ وَرُسُلِىٓ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, আমি এবং আমার রাসূল অবশ্যই বিজয়ী হব। আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২১. আল্লাহ তাঁর পূর্বের জ্ঞানে এ ফায়সালা করে ফেলেছেন যে, অবশ্যই আমি ও আমার রাসূলগণ দলীল ও প্রমাণের ভিত্তিতে আমাদের শত্রæদের উপর বিজয়ী হবো। বস্তুতঃ আল্লাহ স্বীয় রাসূলদের সাহায্যে ক্ষমতাবান। তিনি এমন প্ররাক্রমশালী যে শত্রæদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম।
22
لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ يُوَآدُّونَ مَنْ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوْ كَانُوٓا۟ ءَابَآءَهُمْ أَوْ أَبْنَآءَهُمْ أَوْ إِخْوَٰنَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ كَتَبَ فِى قُلُوبِهِمُ ٱلْإِيمَـٰنَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّـٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِىَ ٱللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا۟ عَنْهُ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ حِزْبُ ٱللَّهِ ۚ أَلَآ إِنَّ حِزْبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় তুমি পাবেনা যারা ভালবাসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে, হোক না এই বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা তাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠি। তাদের অন্তরে (আল্লাহ) ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা; তিনি তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তারাই আল্লাহর দল। জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২২. হে রাসূল! আপনি এমন কোন জাতি পাবেন না যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী। অথচ তারা ওদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে যারা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের সাথে শত্রæতা পোষণ করে। যদিও বা এ সব শত্রæরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা কিংবা তার প্রতি সম্বন্ধিত স্বগোত্রীয় কেউ হয়ে থাকে। কেননা, ঈমান আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের শত্রæদের সাথে বন্ধুত্বের পথে অন্তরায়। তেমনিভাবে ঈমানের সম্পর্ক অন্যসব সম্পর্ক অপেক্ষা উচ্চতর। তাই পারস্পরিক মুখোমুখী হলে তা প্রাধান্য পাবে। যারা আপনজন হওয়া সত্তে¡ও আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের শত্রæদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে না আল্লাহ তাদের মনে ঈমানকে বদ্ধমুল করেছেন। ফলে তা পরিবর্তন হয় না এবং তিনি তাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে প্রমাণাদি ও জ্যোতি দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। উপরন্তু তিনি তাদেরকে কিয়ামত দিবসে এমন সব স্থায়ী উদ্যানে প্রবিষ্ট করবেন যার অট্টালিকা ও বৃক্ষরাজির তলদেশ দিয়ে নদ- নদী প্রবাহিত। তারা তথায় সর্বদা অবস্থান করবে। তাদের থেকে এর নিয়ামত বিদূরিত হবে না। আর না তারা তা থেকে নিঃশেষিত হবে। আল্লাহ তাদের উপর এমনভাবে সন্তুষ্ট হয়েছেন যে, তিনি আর আদৗ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না এবং তারাও তাঁর উপর অফুরন্ত নিআমতের ফলে সন্তুষ্ট। তন্মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহর দর্শন। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের আধিকারীরা আল্লাহর বাহিনী। যারা তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। জেনে রেখো, আল্লাহর বাহিনীই সফলকাম। যেহেতু তারা ইহকাল ও পরকালে নিজেদের চাহিদার বস্তু লাভ করবে এবং অনাকাক্সিক্ষত বস্তু থেকে রেহাই পাবে।