আল-আরাফ
الأعراف
بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় মেহেরবান।
1
الٓمٓصٓ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আলিফ লাম-মিম-সাদ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১. আলিফ-লাম-মীম-সাদ। সূরা বাকারার শুরুতে এ জাতীয় বিক্ষিপ্ত বর্ণাবলীর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
2
كِتَـٰبٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِى صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِۦ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এ একটি কিতাব যা তোমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, সুতরাং তোমার অন্তরে যেন মোটেই সংকীর্ণতা না আসে। আর মু’মিনদের জন্য এটা উপদেশ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২. হে রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনার উপর কুর‘আনুল-কারীম নাযিল করেছেন। তাই আপনার অন্তরে সে ব্যাপারে কোন সঙ্কীর্ণতা ও সন্দেহ না থাকা চাই। আল্লাহ তা‘আলা আপনার উপর তা নাযিল করেছেন যেন আপনি এর মাধ্যমে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন, তাদের সামনে দলীল উপস্থাপন ও মু’মিনদেরকে উপদেশ দিতে পারেন। কারণ, তারাই তো বস্তুতঃ এ উপদেশ কর্তৃক লাভবান হবে।
3
ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমার রবের পক্ষ থেকে যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে তুমি তা অনুসরণ কর এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অভিভাবক অথবা সাহায্যকারী হিসাবে গ্রহণ করনা। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩. হে মানুষ! তোমরা সেই কিতাবেরই অনুসরণ করো যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর নাযিল করেছেন। উপরন্তু তোমরা নিজেদের নবীর সুন্নাতেরও অনুসরণ করো। তোমরা যে শয়তান ও ভÐ পাদ্রীদেরকে ওলী মনে করছো তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করা তোমাদের জন্য নিসেধ। অথচ তোমরা তাদেরকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছো এবং তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের জন্য তোমাদের উপর নাযিলকৃত বিধানকে পরিত্যাগ করছো। মূলতঃ তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো। কারণ, তোমরা যদি সত্যিই উপদেশ গ্রহণ করতে তাহলে তোমরা সত্যের উপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য দিতে না। বরং তোমরা সবকিছু বাদ দিয়ে নিজেদের রাসূল কর্তৃক আনীত বিধানেরই অনুসরণ ও আমল করতে।
4
وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـٰهَا فَجَآءَهَا بَأْسُنَا بَيَـٰتًا أَوْ هُمْ قَآئِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কত জনপদকেই না আমি ধ্বংস করেছি! আমার শাস্তি তাদের উপর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তারা বিশ্রামরত ছিল তখনই আপতিত হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪. কত জনপদই না আমি শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছি। যখন তারা কুফরি ও ভ্রষ্টতার ব্যাপারে হঠকারিতা দেখিয়েছে তখন তাদের গাফিল অবস্থায় দিনে কিংবা রাতে আমার কঠিন শাস্তি তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। তখন তারা নিজেদের উপর থেকে সেই শাস্তি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়নি, না তাদের ধারণাকৃত মা’বূদরা তা তাদের উপর থেকে প্রতিহত করতে পেরেছে।
5
فَمَا كَانَ دَعْوَىٰهُمْ إِذْ جَآءَهُم بَأْسُنَآ إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমার শাস্তি যখন তাদের কাছে এসে পড়েছিল তখন তাদের মুখে ‘‘বাস্তবিকই আমরা অত্যাচারী ছিলাম’’ এ কথা ছাড়া আর কিছুই ছিলনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫. আযাব নাযিল হওয়ার পর তাদের নিজেদের ব্যাপারে এ স্বীকারোক্তি ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না যে, বস্তুতঃ তারা আল্লাহর সাথে কুফরি করে নিজেদের উপর যুলুম করেছে।
6
فَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلْمُرْسَلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি (কিয়ামাত দিবসে) যাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে এবং রাসূলদেরকেও অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬. তাই আমি কিয়ামতের দিন যে সকল জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবো যে, তারা রাসূলদের ডাকে কেমন সাড়া দিয়েছিলো? উপরন্তু আমি রাসূলদেরকেও জিজ্ঞাসা করবো যে, যা কিছু তাদেরকে পৌঁছানোর আদেশ করা হয়েছিলো তা কি তারা সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছে এবং তাদের উম্মতরা তাদের ডাকে কেমন সাড়া দিয়েছিলো।
7
فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍ ۖ وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তখন আমি তাদের সমস্ত বিবরণ অকপটে প্রকাশ করে দিব, যেহেতু আমি পূর্ণরূপে জ্ঞাত আছি, আর আমিতো কোন কালে বেখবর ছিলামনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭. আমি সেদিন সকল সৃষ্টিজীবের সামনে নিজ জ্ঞান থেকেই তারা দুনিয়াতে কী করেছে সেগুলোর বর্ণনা দেবো। কারণ, আমি তাদের সকল আমল সম্পর্কেই জানি। সেগুলোর কোনটিই আমার নিকট অদৃশ্য নয়। আমি কোন সময় তাদের নিকট থেকে অনুপস্থিতও ছিলাম না।
8
وَٱلْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ ٱلْحَقُّ ۚ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর সেদিন (কিয়ামাতের দিন) ন্যায় ও সঠিকভাবে (প্রত্যেকের ‘আমল) ওযন করা হবে, সুতরাং যাদের (পুণ্যের) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে কৃতকার্য ও সফলকাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮. কিয়ামতের দিন আমলসমূহের ওজন এমন ইনসাফ ভিত্তিক হবে যাতে কোন ধরনের যুলুম ও অত্যাচার থাকবে না। সুতরাং ওজনের সময় যার নেকীর পাল্লা তার পাপের পাল্লার চেয়ে ভারী হবে সেই হবে সফলকাম ও ভয়মুক্ত।
9
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا يَظْلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে সেই সব লোক যারা নিজেদের ধ্বংস ও ক্ষতি নিজেরাই করেছে। কেননা তারা আমার নিদর্শনসমূহকে (আয়াত) প্রত্যাখ্যান করত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯. আর ওজনের সময় যাদের পাপের পাল্লা তার নেকীর পাল্লার চেয়ে ভারী হবে তারাই কিয়ামতের দিন নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করবে। কারণ, তারা দুনিয়াতে আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করেছিলো।
10
وَلَقَدْ مَكَّنَّـٰكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَـٰيِشَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভূ-পৃষ্ঠে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং আমি তোমাদের জন্য ওতে জীবিকা নির্বাহের উপকরণসমূহ সৃষ্টি করেছি, তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০. হে আদম সন্তান! আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত করেছি এবং সেখানে তোমাদের জীবন ধারণের জন্য উপকরণসমূহ তৈরি করেছি। তাই এ জন্য তোমাদেরকে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিৎ। অথচ তোমাদের কৃতজ্ঞতাবোধ খুবই কম।
11
وَلَقَدْ خَلَقْنَـٰكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَـٰكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِـَٔادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ ٱلسَّـٰجِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে রূপ দান করেছি, তারপর আমি মালাইকাদেরকে/ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি - তোমরা আদমকে সাজদাহ কর। তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সাজদাহ করল, যারা সাজদাহ করল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হলনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১. হে মানুষ! আমি তোমাদের পিতা আদমকে সৃষ্টি করেছি এবং তাকে সুন্দর গঠন ও অবয়ব দিয়েছি অতঃপর ফিরিশতাদেরকে তার সম্মানে সাজদাহ করার আদেশ করেছি। তারা আমার কথা মেনে তাকে সাজদাহ করেছে। তবে ইবলিস অহঙ্কার ও হঠকারিতা দেখিয়ে তাকে সাজদাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
12
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا۠ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি (আল্লাহ) তাকে (ইবলীসকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি যখন তোকে সাজদাহ (আদমকে) করতে আদেশ করলাম তখন কোন বস্তু তোকে নত শির হতে নিবৃত্ত করল? সে উত্তরে বললঃ আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দ্বারা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২. আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসকে ধমক দিয়ে বললেন: আদমকে সাজদাহ দেয়ার আদেশ মানার ক্ষেত্রে কী তোমাকে বাধা দিয়েছে? ইবলিস তার প্রতিপালকের প্রশ্নের উত্তরে বললো: আমাকে তা করতে এ কথাই বাধা দিয়েছে যে, আমি তার চেয়ে উত্তম। কারণ, আপনি আমাকে আগুন দিয়ে তৈরি করেছেন আর তাকে কাদা মাটি দিয়ে। অথচ আগুন কাদা মাটির চেয়ে বেশি সম্মানী।
13
قَالَ فَٱهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَٱخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّـٰغِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ বললেনঃ এই স্থান থেকে নেমে যা, এখানে থেকে অহংকার করা যেতে পারেনা; সুতরাং বের হয়ে যা, নিশ্চয়ই তুই ইতরদের অন্তর্ভুক্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩. আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: তুমি জান্নাত থেকে নেমে যাও। এখানে তোমার কোন অহঙ্কারই চলবে না। কারণ, সেটি হলো পবিত্র ও পরিচ্ছন্নদের ঘর। তাই তুমি এখানে থাকার জন্য উপযুক্ত নও। হে ইবলিস! নিশ্চয়ই তুমি অধম ও লাঞ্ছিত। যদিও তুমি নিজকে নিজে আদম থেকেও বেশি সম্মানী বলে মনে করো।
14
قَالَ أَنظِرْنِىٓ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমাকে পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪. ইবলিস বললো: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত সময় দিন যাতে আমি সাধ্যমত মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারি।
15
قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلْمُنظَرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ বললেনঃ তোকে অবকাশ দেয়া হল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫. আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: হে ইবলিস! নিশ্চয়ই তোমাকে ওদের ন্যায় সময় দেয়া হবে যাদের মৃত্যু আমি শিঙ্গায় প্রথম ফুৎকারের দিন পর্যন্ত লিখে রেখেছি। যেদিন সকল সৃষ্টি জীব মৃত্যু বরণ করবে। তখন একমাত্র তাদের ¯্রষ্টাই বাকি থাকবেন।
16
قَالَ فَبِمَآ أَغْوَيْتَنِى لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَٰطَكَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
(ইবলীস) বললঃ আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমিও শপথ করে বলছি - আমি আপনার সরল পথে অবশ্যই ওৎ পেতে বসে থাকব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬. ইবলিস বললো: আমি আদমকে সাজদাহ করা সম্পর্কীয় আপনার আদেশটি অমান্য করে পথভ্রষ্ট হয়েছি। তাই আমি অবশ্যই আপনার প্রদর্শিত সঠিক পথে বসে থাকবো আদম সন্তানকে তা থেকে পথভ্রষ্ট ও দিগ্ভ্রান্ত করার জন্য। যেমনিভাবে আমি তাদের পিতা আদমকে সাজদাহ না করে পথভ্রষ্ট হয়েছি।
17
ثُمَّ لَـَٔاتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَـٰنِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَـٰكِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭. অতঃপর আমি তাদের নিকট সর্ব দিক থেকে এসে তাদেরকে আখিরাতের প্রতি নিরুৎসাহিত ও দুনিয়ার প্রতি উৎসাহিত করবো। উপরন্তু তাদের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি ও তাদের সামনে কুপ্রবৃত্তিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবো। হে আমার প্রতিপালক! আমি তাদেরকে কুফরি শিখানোর দরুন আপনি তাদের অধিকাংশকেই আপনার প্রতি অকৃতজ্ঞ পাবেন।
18
قَالَ ٱخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَّدْحُورًا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তুই এখান থেকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় বের হয়ে যা, তাদের (বানী আদমের) মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই আমি তোদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮. আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: হে ইবলিস! তুমি আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত এবং নিন্দিত ও অপমানিত হয়ে জান্নাত থেকে বেরিয়ে যাও। আমি কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমাকে ও তোমার সকল অনুসারী ও অনুগামী তথা নিজ প্রতিপালকের আদেশ অমান্যকারীদেরকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দিবো।
19
وَيَـٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং এখানে তোমাদের মনে যা চায় তাই খাও, কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়োনা, তাহলে অত্যাচারীদের মধ্যে গণ্য হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯. আল্লাহ তা‘আলা আদমকে বললেন: হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী হাওয়া জান্নাতে বসবাস করো। তোমরা সেখানকার পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে যা চাও খেতে পারো। তবে এ নির্দিষ্ট গাছ থেকে কোন কিছুই খাবে না। আমার নিষেধাজ্ঞার পরও তোমরা যদি এ গাছ থেকে কোন কিছু খাও তাহলে তোমরা অবশ্যই আল্লাহর সীমা লঙ্ঘনকারী হিসেবেই বিবেচিত হবে।
20
فَوَسْوَسَ لَهُمَا ٱلشَّيْطَـٰنُ لِيُبْدِىَ لَهُمَا مَا وُۥرِىَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَٰتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَىٰكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةِ إِلَّآ أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ ٱلْخَـٰلِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা পরস্পরের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্য শাইতান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল, সে বললঃ তোমাদের রাব্ব এই বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন, এর কারণ এ ছাড়া কিছুই নয় যে, তোমরা যেন মালাইকা/ফেরেশতা হয়ে না যাও, অথবা এখানে (এই জান্নাতে) চিরন্তন জীবন লাভ করতে না পার।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০. তখন ইবলিস তাদেও গোপন লজ্জাস্থানগুলো তাদের সামনে খোলার জন্য তাদের সাথে ফিসফিস করে কিছু গোপন কথা বললো। সে তাদেরকে বললো: আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এ গাছ থেকে কোন কিছু খেতে নিষেধ করেছেন। কারণ, তিনি চান না যে তোমরা ফিরিশতা হয়ে যাও অথবা তোমরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হও।
21
وَقَاسَمَهُمَآ إِنِّى لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّـٰصِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বললঃ আমি তোমাদের হিতাকাংখীদের অন্যতম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২১. সে তাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বললো: হে আদম ও হাওয়া! আমি তোমাদেরকে যে পরামর্শ দিলাম সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কল্যাণকামী।
22
فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا ٱلشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْءَٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ ٱلْجَنَّةِ ۖ وَنَادَىٰهُمَا رَبُّهُمَآ أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن تِلْكُمَا ٱلشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَآ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর সে (শাইতান) তাদের উভয়কে বিভ্রান্ত করল। যখন তারা সেই নিষিদ্ধ গাছের ফলের স্বাদ গ্রহণ করল তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা বাগানের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তাদের রাব্ব তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি কি এই বৃক্ষ সম্পর্কে তোমাদেরকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শাইতান তোমাদের প্রকাশ্য শক্র?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২২. সে মূলতঃ ধোঁকা ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে তাদেরকে তাদের পূর্বের সম্মানজনক অবস্থান থেকে নিচে নামিয়ে আনলো। যখন তারা তাদের জন্য নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললো তখন তাদের সামনেই তাদের লজ্জাস্থানগুলো খুলে গেলো। তখন তারা নিজেদের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার জন্য নিজেদের শরীরে জান্নাতের পাতা আঁটতে শুরু করলো। আর তখনই তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে কোন কিছু খেতে নিষেধ করিনি?! আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করে বলিনি যে, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রæ?!
23
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ হে আমাদের রাব্ব! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৩. আদম ও হাওয়া বললেন: হে আমাদের প্রতিপালক! সত্যিই আমরা নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে নিজেদের উপর যুলুম করেছি। তাই আপনি যদি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা ও আমাদের প্রতি দয়া না করেন তাহলে আমরা অবশ্যই দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ সুবিধা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
24
قَالَ ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তোমরা একে অন্যের শক্র রূপে এখান থেকে নেমে যাও, তোমাদের জন্য পৃথিবীতে বাসস্থান রয়েছে, একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সেখানে জীবন ধারণের উপযোগী সামগ্রীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৪. আল্লাহ তা‘আলা আদম, হাওয়া ও ইবলিসকে বললেন: তোমরা জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নেমে যাও। অচিরেই তোমরা একে অপরের শত্রæ হয়ে যাবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে পৃথিবীতে অবস্থান করে সেখানকার ক্ষণিকের সুখ ভোগ করতে হবে।
25
قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনি বললেনঃ সেই পৃথিবীতেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু সংঘটিত হবে এবং সেখান হতেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৫. আল্লাহ তা‘আলা আদম, হাওয়া ও তাদের সন্তানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন: এ জমিনেই তোমরা আল্লাহ তা‘আলার দেয়া সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকবে এবং এখানেই মৃত্যু বরণ করবে। অতঃপর পুনরুত্থানের দিন তোমাদেরকে এ কবর থেকেই বের করা হবে।
26
يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَٰرِى سَوْءَٰتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ ءَايَـٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে বানী আদম! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভূষার জন্য তোমাদের পোশাক পরিচ্ছদের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি। (বেশ-ভূষার তুলনায়) আল্লাহভীতির পরিচ্ছদই হচ্ছে সর্বোত্তম পরিচ্ছদ। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন, সম্ভবতঃ মানুষ এটা হতে উপদেশ গ্রহণ করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৬. হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক বানিয়েছি উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য মানুষের মাঝে সাজসজ্জার প্রয়োজনে পরিপূরক পোশাকও বানিয়েছি। তবে এ প্রকাশ্য পোশাকের চেয়ে তাক্বওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। যা হলো আল্লাহর আদেশ-নিষেধ সার্বিকভাবে পালন করা। উক্ত পোশাক মূলতঃ আল্লাহর এমন এক নিদর্শন যা আল্লাহর ক্ষমতা ও মহিমা বুঝায়। আশা করি তোমরা তাঁর নিয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করে সেগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।
27
يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ كَمَآ أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ ٱلْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَٰتِهِمَآ ۗ إِنَّهُۥ يَرَىٰكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُۥ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا ٱلشَّيَـٰطِينَ أَوْلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আদম সন্তান! শাইতান যেন তোমাদেরকে সেরূপ প্রলুব্ধ করতে না পারে যেরূপ তোমাদের মাতা-পিতাকে (প্রলুব্ধ করে) জান্নাত হতে বহিস্কার করেছিল এবং তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। সে (শাইতান) নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে দেখতে পায়, অথচ তোমরা তাদেরকে দেখতে পাওনা। নিঃসন্দেহে আমি অবিশ্বাসীদের জন্য শাইতানকে বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৭. হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদের সামনে লজ্জাস্থান ঢাকার প্রকাশ্য পোশাক অথবা তাক্বওয়ার পোশাক পরিত্যাগ করার পাপকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে দেয়। কারণ, সেই তো ইতোপূর্বে তোমাদের পিতা-মাতার সামনে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়াকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দেয়। যার পরিণামে সে তাদেরকে জান্নাত থেকেই বের করে দিয়েছে। এমনকি তাদের সামনেই তাদের লজ্জাস্থানগুলো খুলে গিয়েছিলো। মূলতঃ শয়তান ও তার বংশধররা তোমাদেরকে দেখতে পায় ও অবলোকন করে; আর তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না এবং অবলোকনও করতে পারো না। তাই তোমাদেরকে তার ও তার সন্তানাদির ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। বস্তুতঃ আমি যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি। তবে যারা নেক আমল করে এমন মু’মিনদের উপর তাদের কোন কর্তৃত্ব চলবে না।
28
وَإِذَا فَعَلُوا۟ فَـٰحِشَةً قَالُوا۟ وَجَدْنَا عَلَيْهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا ۗ قُلْ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তারা কোন লজ্জাস্কর ও অশ্লীল আচরণ করে তখন তারা বলেঃ আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে এসব কাজ করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তুমি বলঃ না আল্লাহ কখনও অশ্লীল ও লজ্জাস্কর আচরণের নির্দেশ দেননা, তোমরা কি আল্লাহ সম্পর্কে এমন সব কথা বলছ যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৮. যখন মুশরিকরা নেহায়েত কোন ঘৃণ্য কাজ করে বসে যেমন: শিরক এবং উলঙ্গ হয়ে কা’বা তাওয়াফ করা ইত্যাদি তখন তারা এই কৈফিয়ত উপস্থাপন করে যে, তারা নিজেদের বাপ-দাদাকে এমন করতেই দেখেছে। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলাও তাদেরকে এমন করার আদেশ করেছেন। হে মুহাম্মাদ! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আল্লাহ তা‘আলা কখনো গুনাহের আদেশ করেন না বরং তিনি তা করতে নিষেধ করেন। অতএব, তোমরা কিভাবে তাঁর ব্যাপারে এ মিথ্যা দাবি করো? হে মুশরিকরা! তোমরা কি না জেনেই আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলো ও তাঁকে অপবাদ দাও?!
29
قُلْ أَمَرَ رَبِّى بِٱلْقِسْطِ ۖ وَأَقِيمُوا۟ وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَٱدْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ ۚ كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ আমার রাব্ব ন্যায় বিচারের আদেশ দিয়েছেন এবং তোমরা প্রত্যেক সালাতে তোমাদের মনযোগ স্থির রেখ এবং তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধ মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁকেই ডাক; তোমাদেরকে প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা তেমনিভাবে ফিরে আসবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৯. হে মুহাম্মাদ! আপনি এ মুশরিকদেরকে বলুন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ইনসাফের আদেশ করেছেন। তিনি কখনো অসৎ এবং অশ্লীলতার আদেশ করেন না। তিনি তোমাদেরকে সকল ইবাদাত একমাত্র তাঁর জন্য খাঁটিভাবে করতে আদেশ করেন। বিশেষ করে মসজিদের ইবাদাতগুলোকে। উপরন্তু তিনি তাঁকে খাঁটি আনুগত্যের ভিত্তিতে এককভাবে ডাকার আদেশ করেন। যেমনিভাবে তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার শূন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তেমনিভাবে তিনি তোমাদেরকে দ্বিতীয়বার জীবিত করবেন। বস্তুতঃ যিনি নতুনভাবে সৃষ্টি করতে পারেন তিনি অবশ্যই পুনর্বার সৃষ্টি এবং পুনরুত্থানও করতে পারেন।
30
فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلضَّلَـٰلَةُ ۗ إِنَّهُمُ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلشَّيَـٰطِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ এক দলকে সৎ পথে পরিচালিত করেছেন এবং অপর দলের জন্য সংগত কারণেই ভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে,তারা আল্লাহকে ছেড়ে শাইতানকে অভিভাবক ও বন্ধু বানিয়েছিল এবং নিজেদেরকে সৎ পথগামী মনে করত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩০. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন: এক ভাগকে তিনি হিদায়েত দিয়েছেন এবং হিদায়েতের মাধ্যমগুলোও তাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। উপরন্তু তিনি হিদায়েতের পথের বাধাসমূহও তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন। আর দ্বিতীয় ভাগের উপর ভ্রষ্টতা অবধারিত হয়েছে। তারা সত্য পথের দিশা পায়নি। তা এ কারণে যে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানদেরকে বন্ধু বানিয়েছে। ফলে মূর্খতাবশতঃ তারা তাদেরই অনুগামী হয়েছে। অথচ তারা এ ধারণা করে যে, নিশ্চয়ই তারা সঠিক পথের দিশা পেয়েছে।
31
۞ يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ خُذُوا۟ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ وَلَا تُسْرِفُوٓا۟ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسْرِفِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ কর, আর খাও এবং পান কর। তবে অপব্যয় ও অমিতাচার করবেনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালবাসেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩১. হে আদম সন্তান! তোমরা নিজেদের লজ্জাস্থান আবৃত করতে পারে এমন পোশাক পরো এবং যে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন পোশাকের মাধ্যমে তোমরা সালাত ও তাওয়াফের সময় সুসজ্জিত হও তাও পরো। আর আল্লাহর হালালকৃত পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে তোমরা যা ইচ্ছা তা খাও ও পান করো। এ ক্ষেত্রে কখনো তোমরা ভারসাম্যতার সীমা অতিক্রম করো না। এমনকি তোমরা হালালকে অতিক্রম করে হারামের দিকে ধাবিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ভারসাম্যতার সীমারেখা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
32
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِىٓ أَخْرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّيِّبَـٰتِ مِنَ ٱلرِّزْقِ ۚ قُلْ هِىَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۗ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যে সব শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে নিষিদ্ধ করেছে? তুমি ঘোষণা করে দাও - এই সমস্ততো তাদের জন্যই যারা পার্থিব জীবনে এবং বিশেষ করে কিয়ামাত দিবসে বিশ্বাস করে। এমনিভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩২. হে রাসূল! যারা আল্লাহর হালালকৃত পোশাক ও খাদ্য ইত্যাদি জাতীয় পবিত্র বস্তুগুলোকে হারাম করে দেয় আপনি সে মুশরিকদেরকে প্রতিহত করতে গিয়ে বলুন: কে তোমাদের সৌন্দর্যের বস্তু পোশাকটিকে তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছে? কে আল্লাহর রিযিক খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি জাতীয় পবিত্র বস্তুগুলোকে তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছে? হে রাসূল! আপনি বলে দিন: এ পবিত্র বস্তুগুলো মূলতঃ দুনিয়ার জীবনে মু’মিনদের জন্য। যদিও দুনিয়াতে অন্যরাও এতে তাদের অংশীদার তবে কিয়ামতের দিন তা সবই তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। তাতে কোন কাফিরই তাদের অংশীদার হবে না। কারণ, জান্নাত কাফিরদের জন্য হারাম। এভাবেই আমি বুদ্ধিমান লোকদের জন্য আয়াতগুলো বিস্তারিত বলে থাকি। কারণ, তারাই তো তা কর্তৃক উপকৃত হবে।
33
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلْفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلْإِثْمَ وَٱلْبَغْىَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا۟ بِٱللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَـٰنًا وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ আমার রাব্ব প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপ কাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা যার পক্ষে আল্লাহ কোন দলীল প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, (ইত্যাদি কাজ ও বিষয়সমূহ) নিষিদ্ধ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৩. হে রাসূল! আপনি আল্লাহর হালালকৃত বস্তু হারামকারী এ মুশরিকদেরকে বলে দিন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর অশ্লীলতা হারাম করেছেন যা নিকৃষ্টতম গুনাহ। চাই তা প্রকাশ্য হোক অথবা অপ্রকাশ্য। তেমনিভাবে তিনি সকল গুনাহকেও হারাম করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তিনি আরো হারাম করেছেন মানুষের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত হরণ ও মানহানি করা। তিনি আরো হারাম করেছেন আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করতে যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট কোন প্রমাণই নেই। তিনি আরো হারাম করেছেন না জেনে আল্লাহর নাম, গুণাবলী, তাঁর কর্ম ও শরীয়তের ব্যাপারে তাঁর উপর মিথ্যারোপ করা।
34
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
প্রত্যেক জাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, সুতরাং যখন সেই নির্দিষ্ট সময় সমুপস্থিত হবে তখন তা এক মুহুর্তকালও আগে কিংবা পরে হবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৪. প্রত্যেক প্রজন্ম ও শতাব্দীর লোকদের মৃত্যুর একটি নির্দিষ্ট সময় ও সীমা রয়েছে। যখন তাদের নির্ধারিত সময় এসে যাবে তখন তা থেকে সামান্য দেরি বা আগে তাদের মৃত্যু হবে না।
35
يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ ءَايَـٰتِى ۙ فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আদম সন্তান! তোমাদের মধ্য হতে যদি কোন রাসূল তোমাদের নিকট আগমন করে এবং আমার বাণী ও নিদর্শন তোমাদের কাছে বিবৃত করে; তখন যারা সতর্ক হবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নিবে এবং সৎ কাজ করবে, তাদের কোন ভয়-ভীতি থাকবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৫. হে আদম সন্তান! যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসবেন যাঁরা মূলতঃ তোমাদেরই বংশের এবং যাঁরা আমার নাযিলকৃত কিতাবসমূহ তোমাদেরকে পড়ে শুনাবেন তখন তোমরা তাঁদের ও তাঁদের আনীত বিধানসমূহের অনুসরণ করো। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় পূর্বক নিজেদের আমলগুলো বিশুদ্ধ করে নেয় কিয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় থাকবে না। না তারা দুনিয়ার সুবিধাদি বঞ্চিত হওয়ার দরুন চিন্তিত হবে।
36
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যারা আমার নিদর্শন ও বিধানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং অহংকার করে ওটা হতে দূরে সরে থাকে তারাই হবে জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৬. তবে কাফিররা যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং সেগুলোর উপর ঈমান আনেনি উপরন্তু রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছেন অহঙ্কারবশতঃ তারা তার উপর আমল করা থেকে বিরত থাকে তারা নিশ্চয়ই জাহান্নামী। তারা সেখানে সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করবে।
37
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦٓ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ يَنَالُهُمْ نَصِيبُهُم مِّنَ ٱلْكِتَـٰبِ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوٓا۟ أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ ۖ قَالُوا۟ ضَلُّوا۟ عَنَّا وَشَهِدُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ كَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তাঁর নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে সে অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হতে পারে? তাদের ‘আমলনামায় লিখিত নির্ধারিত অংশ তাদের নিকট পৌঁছবেই, পরিশেষে যখন আমার প্রেরিত মালাক/ফেরেশতা তাদের প্রাণ হরণের জন্য তাদের নিকট পৌঁছবে, তখন তারা (ফেরেশতারা) জিজ্ঞেস করবেঃ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা ডাকতে তারা কোথায়? তখন তারা উত্তরে বলবেঃ আমাদের হতে তারা উধাও হয়ে গেছে। আর নিজেরাই স্বীকারোক্তি করবে যে, তারা কাফির বা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৭. ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর সাথে কোন শরীক কিংবা তাঁর প্রতি দোষারোপ করে অথবা তিনি যা বলেননি তা বলেছেন বলে তাঁর উপর অপবাদ দেয় কিংবা তাঁর সঠিক পথ প্রদর্শক সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে। এ জাতীয় লোকেরা লাওহে মাহফ‚যে লিপিবদ্ধ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত দুনিয়ার ভোগ-বিলাস তো অবশ্যই পেয়ে যাবে তবে যখন মৃত্যুর ফিরিশতা ও তাঁর সহযোগী ফিরিশতারা তাদের রূহ নেয়ার জন্য তাদের নিকট উপস্থিত হবে তখন ফিরিশতারা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলবেন: আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যেগুলোর পূজা করছিলে আজ সে মূর্তিগুলো কোথায়?! তোমরা নিজেদের উপকারের জন্য আজ সেগুলোকে ডাকো। তখন মুশরিকরা ফিরিশতাদেরকে বলবে: আমরা যে মূর্তিগুলোর পূজা করতাম সেগুলো তো আজ নেই। সেগুলো এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। আমরা জানি না সেগুলো এখন কোথায়। বস্তুতঃ তারা যে দুনিয়াতে কাফির ছিলো সে কথা তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। তবে তাদের এ স্বীকারোক্তি তখন তাদের বিরুদ্ধেই প্রমাণ হয়ে দাঁড়াবে। তা তখন তাদের কোন উপকারেই আসবে না।
38
قَالَ ٱدْخُلُوا۟ فِىٓ أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ فِى ٱلنَّارِ ۖ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا ٱدَّارَكُوا۟ فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَىٰهُمْ لِأُولَىٰهُمْ رَبَّنَا هَـٰٓؤُلَآءِ أَضَلُّونَا فَـَٔاتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ ٱلنَّارِ ۖ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের পূর্বে মানব ও জিন হতে যে সব সম্প্রদায় গত হয়েছে, তাদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর। যখন কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসস্পাত করবে, পরিশেষে যখন তাতে সকলে জমায়েত হবে তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ হে আমাদের রাব্ব! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে, সুতরাং আপনি এদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন! তখন আল্লাহ বলবেনঃ তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জাননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৮. ফিরিশতাগণ তাদেরকে বললেন: হে মুশরিকরা! তোমরা পূর্বেকার কাফির ও পথভ্রষ্ট জিন ও মানুষের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করো। যখনই কোন জাতি জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখনই সে তার পূর্বেকার জাতিকে অভিসম্পাত করবে। যখন তারা একে অপরের সাথে মিলিত ও একত্রিত হবে তখনই পরবর্তী লোকেরা তথা অনুসারী ও নিচু মানের লোকেরা পূর্ববর্তীদের তথা বড় মাপের লোক ও নেতৃস্থানীয়দের প্রতি ইঙ্গিত করে বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! এ সব নেতারাই আমাদেরকে হিদায়েতের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাই আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন। কারণ, তারা ভ্রষ্টতাকে আমাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের দাবির উত্তরে বলবেন: তোমাদের প্রত্যেক দলের জন্যই রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি। তবে তোমরা তা জানো না।
39
وَقَالَتْ أُولَىٰهُمْ لِأُخْرَىٰهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর পূর্ববর্তী লোকেরা পরবর্তী লোকদেরকে বলবেঃ আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৯. তখন অনুসরণীয় নেতৃস্থানীয়রা তাদের অনুসারীদেরকে বলবে: হে অনুসারীরা! আমাদের উপর তোমাদের এমন কোন দাবি বা মর্যাদা নেই যার দরুন তোমরা আমাদের চেয়ে শাস্তি কম পাওয়ার উপযুক্ত হবে। মূলতঃ তোমরা যে আমল করেছো সেটাই ধর্তব্য। বাতিলের অনুসরণের ব্যাপারে তোমাদের কোন ওযর নেই। হে অনুসারীরা! তাই তোমরা কুফরি ও গুনাহের দরুন শাস্তি আস্বাদন করো যেমনিভাবে আমরা আস্বাদন করছি।
40
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلْجَمَلُ فِى سَمِّ ٱلْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُجْرِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং অহংকার বশতঃ তা থেকে ফিরে থাকে, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবেনা এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করবেনা, যতক্ষণ না সুচের ছিদ্র পথে উট প্রবেশ করে, এমনিভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪০. যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে অহঙ্কারবশতঃ তা অমান্য করে ও তার আনুগত্য থেকে দূরে থাকে তারা মূলতঃ সকল কল্যাণ থেকে নিরাশ হবে। তাদের কুফরির দরুন তাদের আমলগুলো গ্রহণের জন্য আকাশের দরজাগুলো খোলা হবে না। এমনকি তারা মারা গেলে তাদের রূহগুলোর জন্যও আকাশের দরজাগুলো খোলা হবে না এবং কস্মিণকালেও তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না একটি উট (যা সর্ববৃহৎ প্রাণীগুলোর একটি) সুইয়ের ছিদ্র (যা সবচেয়ে সঙ্কীর্ণ জায়গা) দিয়ে প্রবেশ করবে। যা বস্তুতঃ অসম্ভব একটি ব্যাপার। তাই তার সাথে সম্পৃক্ত বস্তুটি তথা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাও অসম্ভব। যাদের পাপসমূহ খুবই মারাত্মক আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন প্রতিদানই দিয়ে থাকেন।
41
لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের জন্য হবে জাহান্নামের (আগুনের) শয্যা এবং তাদের উপরের আচ্ছাদনও হবে (আগুনের তৈরী) চাদর, এমনিভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪১. এ জাতীয় অহঙ্কারী মিথ্যাবাদীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের বিছানা যা তারা নিচে বিছাবে এবং তাদের জন্য উপরে রয়েছে আগুনের আচ্ছাদন। এ রকম প্রতিদানই আমি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে দিয়ে থাকি। যারা তাঁর সাথে কুফরি করে ও তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
42
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে এমন কোন ব্যক্তিকে আমি তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করিনা - তারাই হবে জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪২. আর যারা তাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান আনে এবং সাধ্যমত নেক আমল করে (বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কিছু চাপিয়ে দেন না) তারাই হলো জান্নাতী। তারা তাতে প্রবেশ করে সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
43
وَنَزَعْنَا مَا فِى صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَـٰرُ ۖ وَقَالُوا۟ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى هَدَىٰنَا لِهَـٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِىَ لَوْلَآ أَنْ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ ۖ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ ۖ وَنُودُوٓا۟ أَن تِلْكُمُ ٱلْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তাদের অন্তরে যা কিছু ঈর্ষা ও বিদ্বেষ রয়েছে তা আমি দূর করে দিব, তাদের নিম্নদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে; তখন তারা বলবেঃ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন, আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন না করলে আমরা পথ পেতামনা, আমাদের রবের প্রেরিত রাসূলগণ সত্য বাণী নিয়ে এসেছিলেন। আর তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবেঃ তোমরা যে (ভাল) ‘আমল করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৩. জান্নাতে মু’মিনদের নিয়ামতের পরিপূর্ণতার একটি অংশ হলো আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তর থেকে হিংসা ও বিদ্বেষ উঠিয়ে নিবেন এবং জান্নাতের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত করবেন। উপরন্তু তারা আল্লাহর নিয়ামতের স্বীকারোক্তি দিয়ে বলবে: সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি আমাদেরকে নেক আমলের তাওফীক দিয়েছেন যা আমাদেরকে এ অবস্থানে উন্নীত করেছে। আমরা নিজেদের প্রচেষ্টায় এর উপযোগী হতে পারতাম না যদি না আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এর তাওফীক দিতেন। আমাদের প্রতিপালকের প্রেরিত রাসূলগণ এমন সত্য নিয়ে এসেছেন যাতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই। এমনকি তাঁরা জান্নাতের ওয়াদা এবং জাহান্নাম থেকে সতর্কতার বিষয়ে সত্যবাদী ছিলেন। উপরন্তু তাদের মাঝে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিয়ে বলবে: এটিই হলো সেই জান্নাত যার সংবাদ দুনিয়াতে আমার রাসূলগণ দিয়েছেন। পরিণামে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তা দিয়েছেন। কারণ, তোমরা একদা নেক আমল করে আল্লাহরই সন্তুষ্টি কামনা করতে।
44
وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ أَصْحَـٰبَ ٱلنَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا۟ نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌۢ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর জান্নাতের অধিবাসীগণ আগুনের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, ‘আমাদের রব আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা আমরা সত্য পেয়েছি। সুতরাং তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তা কি তোমরা সত্যই পেয়েছ’? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ’। অতঃপর এক ঘোষক তাদের মধ্যে ঘোষণা দেবে যে, আল্লাহর লা’নত যালিমদের উপর’।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৪. প্রত্যেকেই তার জন্য তৈরিকৃত আবাসে ঢুকার পর স্থায়ী জান্নাতীরা স্থায়ী জাহান্নামীদেরকে বলবে: আমাদের প্রতিপালক আমাদের সাথে যে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন তা আমরা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে পেয়েছি। আমাদেরকে সেখানে প্রবেশ করানো হয়েছে। হে কাফিররা! তোমরা কি আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে জাহান্নামের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে পেয়েছো? কাফিররা বলবে: নিশ্চয়ই আমরা তা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে পেয়েছি। তখন একজন আহŸানকারী আল্লাহকে ডেকে বলবে যে, যেন তিনি যালিমদেরকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করেন। কারণ, তিনি তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে রহমতের দরজাগুলো খুলে দিয়েছিলেন; অথচ তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো।
45
ٱلَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِٱلْـَٔاخِرَةِ كَـٰفِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আল্লাহর পথে চলতে (মানুষকে) বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করত তারা পরকালকেও অস্বীকার করত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৫. এ যালিমরাই স্বেচ্ছায় আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো এবং অন্যদেরকেও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য উৎসাহিত করতো। তারা চাইতো আল্লাহর পথটি সহজ না হোক। যাতে মানুষ তার উপর চলতে না পারে। বস্তুতঃ তারা পরকালে অবিশ্বাসী এবং সেজন্য তারা প্রস্তুতও নয়।
46
وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ ۚ وَعَلَى ٱلْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّۢا بِسِيمَىٰهُمْ ۚ وَنَادَوْا۟ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَن سَلَـٰمٌ عَلَيْكُمْ ۚ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এই উভয় শ্রেণীর লোকদের মাঝে পার্থক্যকারী একটি পর্দা রয়েছে। এবং আ‘রাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের ঊর্ধ্বস্থানে) কিছু লোক থাকবে, তারা প্রত্যেককে লক্ষণ ও চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে। তারা জান্নাতবাসীকে ডেকে বলবেঃ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক; তখনো তারা জান্নাতে প্রবেশ করেনি বটে, কিন্তু তারা প্রবেশ করার আকাংখা করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৬. এ দু’ দল তথা জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মাঝখানে একটি উঁচু দেয়াল থাকবে যার নাম আর’রাফ। এ উঁচু দেয়ালের উপর এমন কিছু লোক থাকবে যাদের পাপ ও পুণ্য সমান। এরা জান্নাতীদেরকে তাদের আলামত তথা চেহারার শুভ্রতা দেখে চিনে ফেলবে। তেমনিভাবে তারা জাহান্নামীদেরকেও তাদের আলামত তথা কালো চেহারা দেখে চিনে ফেলবে। এরা জান্নাতীদেরকে তাদের সম্মানার্থে বলবে: তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অথচ তখনো জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করেনি। তারা আল্লাহর রহমতে সেখানে প্রবেশের আশা করছে।
47
۞ وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَـٰرُهُمْ تِلْقَآءَ أَصْحَـٰبِ ٱلنَّارِ قَالُوا۟ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পরন্ত জাহান্নামীদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখন তারা (আ‘রাফবাসীরা) বলবেঃ হে আমাদের রাব্ব! আপনি আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করবেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৭. যখন আ’রাফের লোকদের দৃষ্টিকে জাহান্নামীদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তারা ওদের কঠিন শাস্তি নিজেদের চোখে দেখতে পাবে তখন তারা আল্লাহর নিকট দু‘আ করে বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আপনার সাথে শিরক ও কুফরি করেছে এমন যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে শামিল করবেন না।
48
وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْأَعْرَافِ رِجَالًا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَىٰهُمْ قَالُوا۟ مَآ أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আ‘রাফবাসীদের কয়েকজন জাহান্নামী লোককে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনতে পেরে ডাক দিয়ে বলবেঃ তোমাদের দলবল ও পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের গর্ব, অহংকার তোমাদের কোনই উপকারে এলোনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৮. আ’রাফের লোকেরা কিছু জাহান্নামী কাফিরদেরকে - যাদেরকে তারা কালো চেহারা এবং নীল চোখের আলামত দেখে চিনতে পারবে - তাদেরকে ডেকে বলবে: তোমাদের প্রচুর সম্পদ ও জনবল কোন কাজে আসেনি। না তোমাদের অহঙ্কার ও সত্য বিমুখতা কোন উপকারে এসেছে।
49
أَهَـٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحْمَةٍ ۚ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَنتُمْ تَحْزَنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এই জান্নাতবাসীরা কি তারা নয় যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম করে বলতে যে, এদের প্রতি আল্লাহ দয়া প্রদর্শন করবেননা? তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিত ও দুঃখিত হবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৯. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের দিকে ইঙ্গিত করে কাফিরদেরকে বলবেন: এদেরকে নিয়েই কি তোমরা কসম খেয়ে বলেছিলে যে, আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষে থেকে তাদেরকে দয়া করবেন না! এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে ডেকে বলবেন: হে মু’মিনরা! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। ভবিষ্যত নিয়ে তোমাদের কোন ভয় নেই। দুনিয়ার সুবিধাদি হারিয়ে তোমরা চিন্তিতও হবে না। কারণ, তোমরা স্থায়ী নিয়ামত পেয়েছো।
50
وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا۟ عَلَيْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ ۚ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবেঃ আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও অথবা আল্লাহ প্রদত্ত তোমাদের জীবিকা হতে কিছু প্রদান কর। তারা বলবেঃ আল্লাহ এ দু’টি জিনিস কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫০. জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে ডেকে তাদের নিকট আবেদন করে বলবে: হে জান্নাতীরা! তোমরা আমাদেরকে পানির প্রবাহ এবং আল্লাহর দেয়া খাদ্যে শামিল করো। তখন জান্নাতীরা বলবে: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা কুফরির দরুন এগুলোকে কাফিরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। তাই আমরা আল্লাহর হারামকৃত বস্তু দিয়ে কখনোই তোমাদের সহযোগিতা করতে পারবো না।
51
ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا ۚ فَٱلْيَوْمَ نَنسَىٰهُمْ كَمَا نَسُوا۟ لِقَآءَ يَوْمِهِمْ هَـٰذَا وَمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا يَجْحَدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা নিজেদের দীনকে ক্রীড়া-কৌতুকের বস্তুতে পরিণত করেছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে তেমনিভাবে ভুলে থাকব যেমনিভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিল এবং যেমনভাবে তারা আমার নিদর্শন ও আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫১. এ কাফিররাই ধর্মকে ঠাট্টার পাত্র ও গুরুত্বহীন বানিয়েছে এবং দুনিয়ার জীবন তার চাকচিক্য ও সৌন্দর্যের মাধ্যমে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে। তাই কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভুলে যাবেন এবং কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করবেন। তারা দুনিয়াতে কিয়ামতের দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়ে তার জন্য আমল ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি। উপরন্তু তারা আল্লাহর দলীল-প্রমাণগুলোকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছে; অথচ তারা জানতো যে, মূলতঃ এটিই সত্য।
52
وَلَقَدْ جِئْنَـٰهُم بِكِتَـٰبٍ فَصَّلْنَـٰهُ عَلَىٰ عِلْمٍ هُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি তাদের নিকট এমন একটি কিতাব পৌঁছিয়েছিলাম যাকে আমি স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলাম এবং যা ছিল মু’মিনদের জন্য পথ নির্দেশ ও রাহমাতের প্রতীক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫২. আমি তাদের নিকট এ কুর‘আন নিয়ে এসেছি যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত। যা আমি জেনেশুনেই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। এটি মু’মিনদেরকে সত্য ও সঠিক পথ দেখায় এবং তা তাদের জন্য রহমতও বটে। কারণ, তাতে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের সার্বিক কল্যাণের বর্ণনা।
53
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا تَأْوِيلَهُۥ ۚ يَوْمَ يَأْتِى تَأْوِيلُهُۥ يَقُولُ ٱلَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوا۟ لَنَآ أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ ٱلَّذِى كُنَّا نَعْمَلُ ۚ قَدْ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা কি এই অপেক্ষায়ই আছে যে, এর বিষয় বস্তু প্রকাশ করা হোক? যেদিন এর বিষয় বস্তু প্রকাশিত হবে সেদিন যারা এর আগমনের কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবেঃ বাস্তবিকই আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য বাণী নিয়ে এসেছিলেন, এমন কোন সুপারিশকারী আছে কি যারা আমাদের জন্য সুপারিশ করবে? অথবা আমাদেরকে কি পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানো যেতে পারে যাতে আমরা পূর্বের কৃতকর্মের তুলনায় ভিন্ন কিছু করতে পারি? নিঃসন্দেহে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, আর তারা যেসব মিথ্যা (মা‘বূদ ও রসম রেওয়াজ) রচনা করেছিল, তাও তাদের হতে অন্তর্হিত হয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৩. কাফিররা কেবল সেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসারই অপেক্ষা করছে যার আসার ব্যাপারে ইতিপূর্বে তাদেরকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। যা পরকালে তাদের কর্মের চ‚ড়ান্ত পরিণতিই বটে। যখন তাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রæত সেই শাস্তি এবং মু’মিনদেরকে দেয়া প্রতিশ্রæত সেই সুখ-শান্তি সামনে চলে আসবে তখন দুনিয়াতে কুর‘আন পরিত্যাগকারী ও তার বিধি-বিধানের উপর আমল করতে অস্বীকারকারী ব্যক্তিবর্গরা বলবে: নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালক, প্রেরিত রাসূলগণ আমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছেন; যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাতেও কোন সন্দেহ নেই। আপসোস! আজ যদি আমাদের জন্য এমন কিছু মধ্যস্থতাকারী থাকতো যারা আমাদের শাস্তি ক্ষমা করিয়ে নেয়ার জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করতো! অথবা আমরা যদি দুনিয়ার জীবনে ফিরে গিয়ে বদ আমলের পরিবর্তে আমাদের নাজাতের জন্য কিছু নেক আমল করে আসতে পারতাম! বস্তুতঃ এ কাফিররা নিজেদের কুফরির দরুন নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দিয়ে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপরন্তু তারা আল্লাহ ব্যতিরেকে যাদের পূজা করতো তারা আজ অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারা পূজারীদের কোন ফায়েদায় আসেনি।
54
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًا وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتٍۭ بِأَمْرِهِۦٓ ۗ أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিশ্চয়ই তোমাদের রাব্ব হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমাসীন হন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে ওরা একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে ত্বরিত গতিতে; সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজী সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। জেনে রেখ, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিকও তিনি, সারা জাহানের রাব্ব আল্লাহ হলেন বারাকাতময়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৪. হে মানুস! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিনকে পূর্ব নমুনা ছাড়া ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন এমনভাবে সমুন্নত হয়েছেন যা তাঁর মহত্তে¡র সাথে মানায়। যার ধরন অনুধাবন করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। তিনি রাতের অন্ধকারকে দিনের আলো দিয়ে এবং দিনের আলোকে রাতের অন্ধকার দিয়ে দূরীভূত করেন। তাদের প্রত্যেকটি অন্যটিকে দ্রæত তালাশ করে। এতটুকুও দেরি করে না। এটি গেলেই ওটি আসে। তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা সূর্য ও চন্দ্র তৈরি করেছেন। আরো তিনি তৈরি করেছেন নক্ষত্রসমূহ যেগুলো তাঁর নির্দেশে সর্বদা প্রস্তুত ও অবনত। জেনে রাখো, সকল সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহর জন্য। তাহলে তিনি ছাড়া ¯্রষ্টা আর কে?! আদেশও একমাত্র তাঁরই। তাঁর কল্যাণ ও অবদান প্রচুর ও মহৎ। তিনিই মহত্ত¡ ও পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমÐিত সকল জগতের প্রতিপালক।
55
ٱدْعُوا۟ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা বিনীতভাবে ও সংগোপনে তোমাদের রাব্বকে ডাকবে, তিনি সীমা লংঘনকারীদেরকে ভালবাসেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৫. হে মু’মিনরা! তোমরা পরিপূর্ণ বিনয় ও ন¤্রতা নিয়ে গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো। নিষ্ঠার সাথে দু‘আ করবে; কাউকে দেখানোর জন্য নয়। দু‘আতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেও নয়। নিশ্চয়ই তিনি দু‘আয় সীমালঙ্ঘনকারী তথা সুন্নত বিরোধীকে ভালোবাসেন না। আর দু‘আয় সবচেয়ে বড় সীমালঙ্ঘন হলো আল্লাহর সাথে অন্যকে ডাকা যা মুশরিকরা করতো।
56
وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَـٰحِهَا وَٱدْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٌ مِّنَ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
দুনিয়ায় শান্তি শৃংখলা স্থাপনের পর বিপর্যয় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করনা, আল্লাহকে ভয়-ভীতি ও আশা আকাংখার সাথে ডাক, নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাহমাত সৎকর্মশীলদের অতি সন্নিকটে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৬. তোমরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইতিমধ্যে রাসূলগণকে পাঠিয়ে তা পরিশুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর একক আনুগত্যের ধারা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তোমরা আল্লাহর শাস্তির ভয় অন্তরে নিয়ে এবং তাঁর সাওয়াব অর্জনের আশায় এককভাবে আল্লাহকে ডাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। তাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।
57
وَهُوَ ٱلَّذِى يُرْسِلُ ٱلرِّيَـٰحَ بُشْرًۢا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَـٰهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنزَلْنَا بِهِ ٱلْمَآءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِۦ مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ۚ كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ ٱلْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সেই আল্লাহই স্বীয় রাহমাতের (বৃষ্টির) আগে বাতাসকে সুসংবাদ বহনকারী রূপে প্রেরণ করেন। যখন ঐ বাতাস ভারী মেঘমালাকে বহন করে নিয়ে আসে তখন আমি ঐ মেঘমালাকে কোন নির্জীব ভূ-খন্ডের দিকে প্রেরণ করি। অতঃপর ওটা হতে বারিধারা বর্ষণ করি, তারপর সেই পানির সাহায্যে সেখানে সর্ব প্রকার ফল ফলাদি উৎপাদন করি। এমনিভাবেই আমি মৃতকে জীবিত করি, যাতে তোমরা এটা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পার।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৭. আল্লাহ তা‘আলাই বৃষ্টির সুসংবাদবাহী বাতাস পাঠান। যখন তা পানি ভর্তি মেঘমালা বহন করে তখন আমি সেই মেঘকে মৃত ভ‚খÐের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে সেখানেই বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর সে বৃষ্টির পানি দিয়ে সকল প্রকারের ফল-ফলাদি উৎপন্ন করি। এভাবে ফল-ফলাদি বের করার মতোই আমি মৃতদেরকে তাদের কবর থেকে জীবিত বের করবো। হে মানুষ! আমি এটি করেছি এ জন্য যে, যাতে তোমরা আল্লাহর কুদরত ও তাঁর নিপুণ কারিগরির কথা স্মরণ করো এবং এ কথাও স্বীকার করো যে, নিশ্চয়ই তিনি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম।
58
وَٱلْبَلَدُ ٱلطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُۥ بِإِذْنِ رَبِّهِۦ ۖ وَٱلَّذِى خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا ۚ كَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍ يَشْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর উৎকৃষ্ট ভূমি ওর রবের নির্দেশক্রমে খুব উৎকৃষ্ট ফসল ফলায়, আর যা নিকৃষ্ট ভূমি - তাতে খুব কমই ফসল ফলে থাকে। এমনিভাবেই আমি কৃতজ্ঞ পরায়ণদের জন্য আমার আয়াতসমূহ বিভিন্নভাবে বর্ণনা করে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৮. উৎকৃষ্ট ভ‚মি আল্লাহর আদেশে পরিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে তরুলতা উৎপাদন করে। তেমনিভাবে একজন মু’মিন সদুপদেশ শুনে তা কর্তৃক লাভবান হয়। তখন তা নেক আমল ফলায়। আর লবনাক্ত অনুর্বর জমিন খুব কষ্টেই সামান্য তরুলতা উৎপাদন করে। যাতে কোন কল্যাণ নেই। এভাবেই একজন কাফির সদুপদেশ কর্তৃক কোন ধরনের লাভবান হয় না। না তা লাভজনক কোন নেক আমল ফলায়। এ নিপুণ পদ্ধতি - যা আল্লাহর অস্তিত্বের দলীল - এর ন্যায় আমি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের সামনে সত্যের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের দলীল ও প্রমাণ উপস্থাপন করি। ফলে তারা সেগুলোর সাথে কুফরি করে না। বরং তারা নিজেদের প্রতিপালকের আনুগত্য করে।
59
لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِۦ فَقَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥٓ إِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদেরকে বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, আমি তোমাদের প্রতি এক গুরুতর দিনের শাস্তির আশংকা করছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৯. আমি নূহ (আলাইহিস-সালাম) কে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল করে পাঠিয়েছি। যেন তিনি তাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ এবং অন্যের ইবাদাত পরিত্যাগ করার আহŸান জানান। তাই তিনি তাদেরকে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের সত্য কোন মা’বূদ নেই। হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা কুফরির উপর অটল থাকো তাহলে নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ব্যাপারে অশুভ দিনের কঠিন শাস্তির ভয় পাচ্ছি।
60
قَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى ضَلَـٰلٍ مُّبِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তার সম্প্রদায়ের প্রধান ও নেতারা বললঃ আমরা তোমাকে স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে দেখছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬০. তাঁর সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়রা বললো: হে নূহ! নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে সঠিক পথ থেকে সুস্পষ্ট দূরত্বে দেখতে পাচ্ছি।
61
قَالَ يَـٰقَوْمِ لَيْسَ بِى ضَلَـٰلَةٌ وَلَـٰكِنِّى رَسُولٌ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি কোন ভুল ভ্রান্তি ও গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত নই, বরং আমি সারা জাহানের রবের (প্রেরিত) একজন রাসূল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬১. নূহ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়ের নেতাদেরকে বললেন: নিশ্চয়ই আমি পথভ্রষ্ট নই যেমন তোমরা ধারণা করছো। বরং আমি নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালকের হিদায়েতের উপরই রয়েছি। বস্তুতঃ আমি আমার ও তোমাদের তথা সর্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ থেকেই তোমাদের নিকট প্রেরিত একজন রাসূল।
62
أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَأَنصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি আমার রবের বার্তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, আর আমি তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিচ্ছি। তোমরা যা জাননা আমি তা আল্লাহর নিকট থেকে জেনে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬২. আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে ওহীর বাণী দিয়ে তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন তা আমি তোমাদেরকে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। আর আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আদেশ মানতে, তার সাওয়াবের প্রতি উৎসাহিত করতে, আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত না হতে এবং তাঁর শাস্তি থেকে ভয় পেতে আহŸান জানানোর মাধ্যমে তোমাদেরই কল্যাণ কামনা করছি। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু জানি যা তোমরা জানো না। যা আমাকে আল্লাহ তা‘আলা ওহীর মাধ্যমে শিখিয়েছেন।
63
أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَآءَكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا۟ وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমাদের মধ্য থেকে একজন লোকের মাধ্যমে তোমাদের রবের পক্ষ হতে উপদেশ বাণী আসায় কি তোমরা বিস্মিত হয়েছ, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক ও হুশিয়ার করতে পারে, যেন তোমরা সাবধান হও এবং যেন আল্লাহভীতি অবলম্বন করতে পার, হয়ত তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হবে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৩. তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো এবং তোমাদের নিকট কি এ ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত লেগেছে যে, তোমাদেরই চেনা-জানা এক ব্যক্তির মাধ্যমে তোমাদের নিকট প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ওহী ও উপদেশ এসেছে?! তিনি তোমাদের মাঝেই বড় হয়েছেন। তিনি কখনো মিথ্যুক বা পথভ্রষ্ট ছিলেন না। না ছিলেন অন্য জাতের লোক। তোমরা তাঁর উপর মিথ্যারোপ করলে বা তাঁর অবাধ্য হলে তোমাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাতে এসেছেন। তেমনিভাবে তিনি এসেছেন এ জন্য যে, তোমরা যেন আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করো এবং তাঁর প্রতি ঈমান এনে তাঁর দয়াপ্রাপ্ত হও।
64
فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ فِى ٱلْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمًا عَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, ফলে তাকে এবং তার সাথে নৌকায় যারা ছিল তাদেরকে (আযাব হতে) রক্ষা করলাম, আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অমান্য করেছিল, তাদেরকে ডুবিয়ে মারলাম। বস্তুতঃ নিঃসন্দেহে তারা ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৪. অতঃপর তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে মিথ্যুক বলেছে এবং তাঁর উপর তারা ঈমানও আনেনি। বরং তারা তাদের কুফরির উপর অটল থেকেছে। ফলে তিনি তাদের উপর বদ্দু‘আ করেছেন। যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। বস্তুতঃ আমি তাঁকে ও তাঁর নৌযানের মু’মিন সাথীদেরকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করলাম। আর যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা বলেছে এবং সেই মিথ্যার উপর অটল থেকেছে তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ প্রেরিত তুফান ও মহা প্লাবনের মাধ্যমে ডুবিয়ে মেরেছি। মূলতঃ তাদের অন্তরগুলো সত্য থেকে অন্ধ ছিলো।
65
۞ وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥٓ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
‘আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে (নাবী রূপে) পাঠিয়েছিলাম। সে বললঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মা‘বূদ নেই, তোমরা কি সাবধান হবেনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৫. আমি ‘আদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের মধ্য থেকেই রাসূল পাঠিয়েছি। যাঁর নাম হূদ (আলাইহিস-সালাম)। তিনি বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের সত্য কোন মা’বূদ নেই। তোমরা কি তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করবে না?! যাতে তোমরা তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে পারো।
66
قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى سَفَاهَةٍ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلْكَـٰذِبِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তার জাতির নেতারা বললঃ আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখছি এবং আমরাতো তোমাকে নিশ্চিত রূপে মিথ্যাবাদী মনে করি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৬. তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যকার যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যুক বলেছে এমন বড় ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা বললো: হে হূদ! আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, তুমি যখন আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং মূর্তিপূজা ছাড়তে বলো তখন তোমার মাথা ঠিক থাকে না। তখন তুমি বেকুব বনে যাও। উপরন্তু আমরা এ কথাও নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে, তুমি রাসূল হওয়ার দাবিতে নিশ্চিত মিথ্যুক।
67
قَالَ يَـٰقَوْمِ لَيْسَ بِى سَفَاهَةٌ وَلَـٰكِنِّى رَسُولٌ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি হলাম সারা জাহানের রবের মনোনীত রাসূল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৭. হূদ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়ের কথার উত্তরে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আমি বেকুব-বুদ্ধিহীন কিছুই নই। বরং আমি সর্ব জগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একজন রাসূল মাত্র।
68
أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَأَنَا۠ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি আমার রবের বার্তা তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি, আর আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাংখী ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৮. আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে তাওহীদ ও শরীয়তের বাণী পৌঁছানোর আদেশ করেছেন তাই তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। বস্তুতঃ যা পৌঁছাতে আমি আদিষ্ট সে ব্যাপারে আমি সত্যিই আমানতদার ও পরকল্যাণকামী। তাতে আমি নিজ থেকে কোন ধরনের বেশ-কম করি না।
69
أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَآءَكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ ۚ وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍ وَزَادَكُمْ فِى ٱلْخَلْقِ بَصْۜطَةً ۖ فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা কি এতে বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদের জাতিরই একটি লোকের মাধ্যমে তোমাদের রবের পক্ষ হতে তাঁর বিধান ও উপদেশসহ তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশে তোমাদের কাছে এসেছে? তোমরা সেই অবস্থার কথা স্মরণ কর যখন নূহের সম্প্রদায়ের পর আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং তোমাদেরকে অন্যদের অপেক্ষা শক্তিতে অধিকতর বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৯. তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো এবং তোমাদের নিকট কি এ ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত লেগেছে যে, তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদেরই মধ্য থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে উপদেশবাণী এসেছে; কোন ফিরিশতা বা জিন তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য আসেনি?! বস্তুতঃ এতে আশ্চর্যের কোন কিছুই নেই বরং তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আদায় করো এ জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে এ জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং নূহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়কে কুফরির কারণে ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদেরকে তাদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন। তেমনিভাবে তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো যিনি তোমাদেরকে বিশেষভাবে প্রকাÐ শরীর, শক্তি ও শত্রæকে আক্রমণের দুর্দান্ত ক্ষমতা দিয়েছেন। উপরন্তু তোমরা আল্লাহর বিস্তৃত নিয়ামতের কথা স্মরণ করো তাহলে তোমরা উদ্দেশ্যে সফল ও আতঙ্কিত বিষয় থেকে নিষ্কৃতি পাবে।
70
قَالُوٓا۟ أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ ٱللَّهَ وَحْدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ ءَابَآؤُنَا ۖ فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ তুমি কি আমাদের নিকট শুধু এই উদ্দেশে এসেছো যে, আমরা যেন একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করি এবং আমাদের পূর্ব-পুরুষরা যাদের পূজা করত তাদেরকে বর্জন করি? তুমি তোমার কথা ও দাবীতে সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭০. তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে বললো: হে হূদ! তুমি কি আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাতের আদেশ দিতে এবং আমাদের বাপ-দাদারা যে মূর্তিগুলোর পূজা করতো সেগুলো পরিত্যাগ করাতে এসেছো?! বস্তুতঃ তুমি যদি নিজ দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে তুমি যে শাস্তির হুমকি দিচ্ছো তা নিয়ে আসো।
71
قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ رِجْسٌ وَغَضَبٌ ۖ أَتُجَـٰدِلُونَنِى فِىٓ أَسْمَآءٍ سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَـٰنٍ ۚ فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ তোমাদের রবের শাস্তি ও ক্রোধ তোমাদের উপর অবধারিত হয়ে আছে। তোমরা কি আমার সাথে এমন কতকগুলি নাম সম্বন্ধে বিতর্ক করছ যার নামকরণ করেছ তোমরা এবং তোমাদের বাপ দাদারা, আর যে বিষয়ে আল্লাহ কোন দলীল প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি? সুতরাং তোমরা (শাস্তির জন্য) অপেক্ষা করতে থাক, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭১. হূদ (আলাইহিস-সালাম) তাদের উত্তরে বললেন: বস্তুতঃ তোমরা আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর ক্ষোভকে অবধারিত করে নিয়েছো তাই তা আসা অবশ্যম্ভাবী। তোমরা কি আমার সাথে এমন মূর্তিসমূহ নিয়ে ঝগড়া করছো যেগুলোকে তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা ইলাহ বলে সাব্যস্ত করেছে? অথচ সেগুলোর কোন মূল ভিত্তি নেই! বস্তুতঃ তোমরা যে সেগুলোর উপাস্য হওয়ার দাবি করছো সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন প্রমাণ নাযিল করেননি যা তোমাদের জন্য প্রমাণ হতে পারে। তাই তোমরা যে শাস্তি দ্রæত কামনা করছো তার অপেক্ষা করো; আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি। তা অবশ্যই আপতিত হবে।
72
فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا ۖ وَمَا كَانُوا۟ مُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তাকে (হুদকে) এবং তার সঙ্গী-সাথীদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম, আর যারা আমার নিদর্শনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং যারা ঈমানদার ছিলনা তাদের মূলোৎপাটন করে ছাড়লাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭২. অতঃপর আমি হূদ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর মু’মিন সাথীদেরকে আমার দয়ায় নিরাপদে রেখেছি। আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং তারা ঈমান না এনে মিথ্যারোপকারী সেজে নিজেরাই শাস্তির উপযুক্ত হয়েছে তাদেরকে আমি ধ্বংসের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে মূলোৎপাটন করেছি।
73
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَـٰلِحًا ۗ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمْ ءَايَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِىٓ أَرْضِ ٱللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি ছামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালিহকে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন মা‘বূদ নেই, তোমাদের রবের পক্ষ হতে এক স্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের নিকট এসেছে, এটি আল্লাহর উষ্ট্রী - তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন স্বরূপ। তোমরা একে ছেড়ে দাও - আল্লাহর যমীনে চরে খাবে, ওকে খারাপ উদ্দেশে স্পর্শ করনা, (কেহ কোন কষ্ট দিলে) এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৩. আর আমি সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদেরই ভাই সালিহ (আলাইহিস-সালাম) কে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি। যিনি তাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর ইবাদাতের দিকে ডাকবেন। সালিহ (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের ইবাদাতের উপযুক্ত আর কোন মা’বূদ নেই। আমি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছি তার সত্যতার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন এসে গেছে। যা হলো এমন একটি উষ্ট্রী যা পাথর থেকে বের হবে। তার পানি পানের নির্দিষ্ট একটি সময় থাকবে এবং তোমাদের জন্যও পানি পানের একটি নির্দিষ্ট দিন থাকবে। সে যেন আল্লাহর জমিন থেকে খেতে থাকে এ ক্ষেত্রে তোমরা তাকে কোন বাধা দিয়ো না। তার রক্ষণাবেক্ষণে তোমাদের কোন কিছুই করতে হবে না। তবে তোমরা তাকে কষ্ট দিয়ো না, না হয় তাকে কষ্ট দেয়ার দরুন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদের উপর নেমে আসবে।
74
وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ عَادٍ وَبَوَّأَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورًا وَتَنْحِتُونَ ٱلْجِبَالَ بُيُوتًا ۖ فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা স্মরণ কর সেই বিষয়টি যখন তিনি ‘আদ জাতির পর তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন, আর তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে আবাস গৃহ নির্মাণ করেছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে দিওনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৪. তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করো যখন তিনি তোমাদেরকে ‘আদ সম্প্রদায়ের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি তোমাদেরকে নিজেদের ভ‚মিতে অবস্থান করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তোমরা তাতে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারছো এবং সেখানে নিজেদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই পাচ্ছো। তিনি ‘আদ সম্প্রদায়কে তাদের কুফরি ও মিথ্যারোপের দরুন ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদেরকে সেখানে স্থান করে দিয়েছেন। তোমরা সেখানকার সমতল এলাকায় অট্টালিকা বানাচ্ছো আর পাহাড় কেটে তোমরা নিজেদের ঘর বানাচ্ছো। তাই তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করো এবং আল্লাহর সাথে কুফরি ও সমূহ গুনাহ ছেড়ে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করো।
75
قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لِلَّذِينَ ٱسْتُضْعِفُوا۟ لِمَنْ ءَامَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَـٰلِحًا مُّرْسَلٌ مِّن رَّبِّهِۦ ۚ قَالُوٓا۟ إِنَّا بِمَآ أُرْسِلَ بِهِۦ مُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা তাদের মধ্যকার দুর্বল ও উৎপীড়িত মু’মিনদেরকে বললঃ তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, সালিহ তার রাব্ব কর্তৃক প্রেরিত হয়েছে? তারা উত্তরে বললঃ নিশ্চয়ই যে বার্তাসহ সে প্রেরিত হয়েছে, আমরা তা বিশ্বাস করি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৫. তাঁর সম্প্রদায়ের অহঙ্কারী গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয়রা শক্তি-সামর্থ্যহীন মু’মিনদেরকে বললো: হে মু’মিনরা! তোমরা কি মনে করো সত্যিকারার্থেই সালিহ আল্লাহর রাসূল? মু’মিনরা তাদের উত্তরে বললো: আমরা সালিহ (আলাইহিস-সালাম) কে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে তা সবই বিশ্বাস, স্বীকার ও অনুসরণ করি। উপরন্তু তাঁর শরীয়তের উপর আমল করি।
76
قَالَ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوٓا۟ إِنَّا بِٱلَّذِىٓ ءَامَنتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
দাম্ভিকরা বললঃ তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা বিশ্বাস করিনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৬. তাঁর সম্প্রদায়ের অহঙ্কারীরা বললো: হে মু’মিনরা! তোমরা যা বিশ্বাস করো আমরা তার সাথে কুফরি করছি। আমরা কখনোই তাঁর উপর ঈমান আনবো না এবং তাঁর শরীয়তের উপরও আমল করবো না।
77
فَعَقَرُوا۟ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوْا۟ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا۟ يَـٰصَـٰلِحُ ٱئْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তারা সেই উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেললো এবং গর্ব ও দাম্ভিকতার সাথে তাদের রবের নির্দেশের বিরোদ্ধাচরণ করল এবং বললঃ হে সালিহ! তুমি সত্য রাসূল হয়ে থাকলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৭. বরং তারা অহঙ্কারবশতঃ আল্লাহর আদেশ অমান্য করে সেই উষ্ট্রীকে জবাই করলো যাকে কোন ধরনের কষ্ট দিতে আল্লাহ তাদেরকে নিষেধ করেছেন। উপরন্তু তারা সালিহ (আলাইহিস-সালাম) এর হুমকিকে সুদূর পরাহত ভেবে ঠাট্টা করে বললো: হে সালিহ! তুমি আমাদেরকে যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির হুমকি দিচ্ছো তা নিয়ে আসো যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হয়ে থাকো।
78
فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং ভূমিকম্প তাদেরকে গ্রাস করে নিলো, ফলে তারা নিজেদের গৃহের মধ্যেই নতজানু হয়ে পড়ে রইল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৮. পরিশেষে কাফিরদের নিকট সেই শাস্তি এসে গেলো যা তারা দ্রæত চেয়েছিলো। এক কঠিন ভ‚মিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করেছে। ফলে তারা ভ‚পৃষ্ঠে চেহারা ও হাঁটুর উপর আছড়ে পড়লো। এ কঠিন ধ্বংস থেকে তাদেরকে কেউই বাঁচাতে পারলো না।
79
فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সালিহ এ কথা বলে তাদের জনপদ হতে বের হয়ে গেলঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার রবের বার্তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরাতো হিতৈষী বন্ধুদেরকে পছন্দ করনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৯. অতঃপর সালিহ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের সাড়াশব্দে নিরাশ হয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যা পৌঁছানোর আদেশ করেছেন তা আমি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি। ভয় ও আশার বাণী শুনিয়ে তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি। অথচ তোমরা এমন এক জাতি যারা উপদেশকারীদের উপদেশকে ভালোবাসো না। যারা সর্বদা তোমাদেরকে কল্যাণের পরামর্শ ও অকল্যাণ থেকে দূরে রাখতে আগ্রহী।
80
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ ٱلْفَـٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি লূতকে পাঠিয়েছিলাম। সে তার কাওমকে বলেছিলঃ তোমরা এমন অশ্লীল ও কু-কর্ম করছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেহই করেনি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮০. হে নবী! আপনি লূত (আলাইহিস-সালাম) কে স্মরণ করুন যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের অপকর্মে বিরক্ত হয়ে বললেন: তোমরা কি বর্ণনাতীত এক বিশ্রী অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যাওনি? আর তা হলো পুরুষদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া। এ জঘন্য অপকর্ম মূলতঃ তোমরা নতুন করেই চালু করেছো। যে অপকর্মে তোমাদের পূর্বে আর কেউ লিপ্ত হয়নি।
81
إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছ। প্রকৃত পক্ষে, তোমরা হচ্ছ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮১. তোমরা যৌন তাড়না নিবারণের জন্য মহিলাদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষের সাথে মিলিত হচ্ছো; অথচ তা নিবারণের জন্য মহিলাদেরকেই তৈরি করা হয়েছে। তোমরা এ অপকর্মে না বিবেকের তোয়াক্কা করছো, না শরীয়তের, না সহজাত স্বভাবের। বরং তোমরা মানবিক ভারসাম্যের গÐী পেরিয়ে আল্লাহর দেয়া সীমারেখাও অতিক্রম করেছো। উপরন্তু তোমরা সুস্থ বিবেক ও মর্যাদাপূর্ণ সহজাত স্বভাবের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছো।
82
وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ ۖ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তার জাতির লোকদের এটা ছাড়া আর কোন জবাবই ছিলনা যে, এদের তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র রাখতে চায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮২. এ ব্যাপারে তাঁর অপকর্মকারী সম্প্রদায়ের এ ছাড়া আর কোন উত্তর ছিলো না যে, তারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো: তোমরা লূত ও তাঁর পরিবারকে নিজেদের এলাকা থেকে বের করে দাও। কারণ, তাঁরা আমাদের এ কর্ম থেকে পবিত্র থাকার লোক। তাই তাঁদেরকে আমাদের মাঝে অবস্থান করতে দেয়া আমাদের জন্য সমীচীন নয়।
83
فَأَنجَيْنَـٰهُ وَأَهْلَهُۥٓ إِلَّا ٱمْرَأَتَهُۥ كَانَتْ مِنَ ٱلْغَـٰبِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পরিশেষে, আমি তাকে এবং তার পরিবারের লোকদেরকে, তার স্ত্রী ছাড়া, শাস্তি হতে রক্ষা করেছিলাম, তার স্ত্রী তাদের সাথে পিছনেই রয়ে গিয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৩. অতএব, আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে রক্ষা করলাম। আমি তাদেরকে রাতের বেলায় আযাবের এলাকা থেকে বের হওয়ার আদেশ করেছি। তবে তাঁর স্ত্রী তার সম্প্রদায়ের অন্যদের সাথে থেকে গেলো। ফলে তার উপরও সে আযাব আসলো যা ওদের উপর এসেছে।
84
وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًا ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُجْرِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তাদের উপর মুষলধারে বারিপাত ঘটালাম, অতঃপর লক্ষ্য কর, অপরাধী লোকদের পরিণাম কি হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৪. আর আমি তাদের উপর কঠিন বর্ষণ করেছি। আমি তাদের উপর শক্ত মাটির পাথর নিক্ষেপ করেছি এবং এলাকাটিকে উপর-নিচ করে উল্টে দিয়েছি। হে রাসূল! আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, কী পরিণতি হয়েছিলো এ অপরাধী সমপ্রদায়ের? তাদের পরিণতি হয়েছিলো ধ্বংস ও স্থায়ী লাঞ্ছনা।
85
وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا۟ ٱلْكَيْلَ وَٱلْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشْيَآءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَـٰحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি মাদইয়ানবাসীদের কাছে তাদেরই ভাই শু‘আইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মা‘বূদ নেই। তোমাদের রবের পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে। সুতরাং তোমরা ওযন ও পরিমাণ পূর্ণ মাত্রায় দিবে, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবেনা। আর দুনিয়ায় শান্তি শৃংখলা স্থাপনের পর ঝগড়া ফাসাদ ও বিপর্যয় ঘটাবেনা, তোমরা বাস্তবিক পক্ষে ঈমানদার হলে এই পথই হল তোমাদের জন্য কল্যাণকর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৫. আমি মাদয়ান সম্প্রদায়ের নিকট তাদেরই এক ভাই শুআইব (আলাইহিস-সালাম) কে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি। তিনি তাদেরকে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত আর কোন মা’বূদ নেই। আমি নিজ প্রতিপালকের নিকট থেকে যা নিয়ে এসেছি তার সত্যতার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ ও পরিষ্কার দলীল এসেছে। তোমরা ওজন ও মাপে পুরোপুরি দিয়ে মানুষের অধিকার তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। মানুষের পণ্যে ভেজাল দিয়ে কমমূল্যে বিক্রয় করে অথবা পণ্যের মালিকদেরকে ধোঁকা দিয়ে তাদের অধিকার ক্ষুণœ করো না। নবীদের প্রেরণের মাধ্যমে ভ‚পৃষ্ঠকে পরিশুদ্ধ করার পর তোমরা আবারো তাতে কুফরি ও পাপ করে ফাসাদ সৃষ্টি করো না। উল্লিখিত উপদেশগুলো তোমাদের জন্য অতি কল্যাণকর ও লাভজনক। কারণ, তাতে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা মেনে গুনাহ পরিত্যাগ করার এবং আল্লাহর আদেশ মেনে তাঁর নৈকট্য অর্জনের ব্যাপার নিহিত রয়েছে।
86
وَلَا تَقْعُدُوا۟ بِكُلِّ صِرَٰطٍ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ بِهِۦ وَتَبْغُونَهَا عِوَجًا ۚ وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ كُنتُمْ قَلِيلًا فَكَثَّرَكُمْ ۖ وَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর (জীবনের) প্রতিটি পথে এমনিভাবে দস্যি হয়ে যেওনা যে, ঈমানদার লোকদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখতে থাকবে এবং সহজ সরল পথকে বক্র করায় ব্যস্ত থাকবে। ঐ অবস্থানটির কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় স্বল্প ছিলে, অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিলেন, আর এই জগতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কি হয়েছে তা জ্ঞানচক্ষু খুলে লক্ষ্য কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৬. আর তোমরা রাস্তায় বসে মানুষের সম্পদ অপহরণের জন্য তাদেরকে হুমকি দিয়ো না। তেমনিভাবে কেউ হিদায়েতের ইচ্ছা করলে তাকে আল্লাহর দ্বীন থেকে সরিয়ে দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর পথকে কঠিন বানানোর চেষ্টা করো না যাতে মানুষ তাতে সহজে চলতে না পারে। উপরন্তু তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য তাঁর নিয়ামতকে স্মরণ করো। কারণ, ইতিপূর্বে তোমাদের সংখ্যা কম ছিলো অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তেমনিভাবে তোমরা চিন্তা করে দেখো জমিনে ফাসাদকারী তোমাদের পূর্বের লোকদের পরিণতি কী হয়েছিলো। বস্তুতঃ তাদের পরিণতি ছিলো ধ্বংস ও বিনাশ।
87
وَإِن كَانَ طَآئِفَةٌ مِّنكُمْ ءَامَنُوا۟ بِٱلَّذِىٓ أُرْسِلْتُ بِهِۦ وَطَآئِفَةٌ لَّمْ يُؤْمِنُوا۟ فَٱصْبِرُوا۟ حَتَّىٰ يَحْكُمَ ٱللَّهُ بَيْنَنَا ۚ وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَـٰكِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমার নিকট যা (আল্লাহর পক্ষ হতে) প্রেরিত হয়েছে তা যদি তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল অবিশ্বাস করে তাহলে ধৈর্য ধারণ কর যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চুড়ান্ত ফাইসালা করে দেন। তিনিই হলেন উত্তম ফাইসালাকারী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৭. যদি তোমাদের একদল আমার প্রতিপালকের কাছ থেকে আনীত বিধানের উপর ঈমান এনে থাকে এবং আরেক দল না আনে তাহলে হে মিথ্যারোপকারীরা! তোমরা আল্লাহর ফায়সালার অপেক্ষা করো। কারণ, তিনি সর্বোত্তম ও সব চেয়ে বেশি ইনসাফপূর্ণ ফায়সালাকারী।
88
۞ قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لَنُخْرِجَنَّكَ يَـٰشُعَيْبُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَآ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِى مِلَّتِنَا ۚ قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَـٰرِهِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক ও অহংকারী প্রধানরা বলেছিলঃ হে শু‘আইব! আমরা অবশ্যই তোমাকে, তোমার সংগী সাথী মু’মিনদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিস্কার করব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসবে। সে বললঃ আমরা যদি তাতে রাযী না হই?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৮. শুআইব (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারী অহঙ্কারী নেতৃস্থানীয়রা তাঁকে বললো: হে শুআইব! আমরা তোমাকে ও তোমার প্রতি বিশ্বাসী মু’মিনদেরকে আমাদের এ এলাকা থেকে বের করে দেবো। না হয় তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসো। শুআইব (আলাইহিস-সালাম) আশ্চর্য ও চিন্তিত হয়ে তাদেরকে বললেন: আমরা কি তোমাদের এ ধর্ম ও মিল্লাতের অনুসরণ করবো যদিও আমরা সেটিকে অপছন্দ করি? কারণ, আমরা জানি তোমরা যে ধর্মের উপর রয়েছো তা নিশ্চয়ই বাতিল!
89
قَدِ ٱفْتَرَيْنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِى مِلَّتِكُم بَعْدَ إِذْ نَجَّىٰنَا ٱللَّهُ مِنْهَا ۚ وَمَا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّعُودَ فِيهَآ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّنَا ۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَىْءٍ عِلْمًا ۚ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْنَا ۚ رَبَّنَا ٱفْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِٱلْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْفَـٰتِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমাদের ধর্মাদর্শ হতে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্তি দেয়ার পর আমরা যদি তাতে আবার ফিরে যাই তাহলে নিশ্চিতভাবে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী হব! আমাদের রাব্ব আল্লাহ না চাইলে ওতে আবার ফিরে যাওয়া আমাদের পক্ষে কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। সবকিছুই আমাদের রবের জ্ঞানায়ত্ত, আমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর করছি। হে আমাদের রাব্ব! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সঠিকভাবে ফাইসালা করে দিন, আপনিইতো সর্বোত্তম ফাইসালাকারী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৯. তোমরা যে শিরক ও কুফরির উপর রয়েছো যা থেকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ দয়ায় আমাদেরকে মুক্ত করেছেন তা যদি আমরা আবারো বিশ্বাস করি তাহলে আমরা সত্যিই আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী হয়ে যাবো। তোমাদের বাতিল ধর্মে ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য উচিত হবে না। তবে আমাদের প্রতিপালক চাইলে সেটা হবে ভিন্ন কথা। কারণ, সকল কিছুই তাঁর ইচ্ছাধীন। আমাদের প্রতিপালক সব কিছুই জানেন। কোন কিছুই তাঁর নিকট লুক্কায়িত নয়। তাই এক আল্লাহর উপরই আমরা নির্ভরশীল। যাতে তিনি আমাদেরকে সঠিক রাস্তার উপর অটল রাখেন এবং জাহান্নামের পথ থেকে রক্ষা করেন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের মাঝে ও আমাদের কাফির সম্প্রদায়ের মাঝে সত্য ফায়সালা করুন। আপনি মযলুম সত্যবাদীকে হঠকারী যালিমের উপর বিজয়ী করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনিই তো সর্বোত্তম বিচারকর্তা।
90
وَقَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لَئِنِ ٱتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا إِنَّكُمْ إِذًا لَّخَـٰسِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তাদের সম্প্রদায়ের কাফির সর্দাররা বললঃ তোমরা যদি শু‘আইবকে অনুসরণ কর তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯০. তাঁর সম্প্রদায়ের বড় বড় নেতৃস্থানীয় কাফিররা যারা তাওহীদের দা’ওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করলো তারা শুআইব (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর ধর্মের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করে বললো: হে আমাদের সম্প্রদায়! তোমরা যদি নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মকে পরিত্যাগ করে শুআইবের ধর্মকে গ্রহণ করো তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।
91
فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর ভূ-কম্পন তাদেরকে গ্রাস করল, ফলে তারা নিজেদের গৃহেই উপুড় হয়ে পড়ে রইল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯১. ফলে তাদেরকে একটি কঠিন ভ‚মিকম্প পাকড়াও করলে তারা নিজেদের ঘরেই চেহারা ও হাঁটুর উপর উবু হয়ে নিস্তেজ পড়ে মরে থাকলো।
92
ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًا كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا۟ فِيهَا ۚ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًا كَانُوا۟ هُمُ ٱلْخَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অবস্থা দেখে মনে হল, যারা শু‘আইবকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তারা যেন কখনও সেখানে বসবাস করেনি, শু‘আইবকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী লোকেরাই শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯২. যারা শুআইব (আলাইহিস-সালাম) কে মিথ্যুক বললো তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গেলো। যেন তারা কখনোই নিজেদের ঘরে বসবাস ও আনন্দ-ফুর্তি করেনি। যারা শুআইব (আলাইহিস-সালাম) কে মিথ্যুক বললো তারাই মূলতঃ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। কারণ, তারা নিজ সত্তা ও সম্পদ উভয়কেই হারিয়েছে। তবে তাদের সম্প্রদায়ের মু’মিনরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি যা এ মিথ্যারোপকারী কাফিররা ধারণা করেছে।
93
فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ ۖ فَكَيْفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍ كَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে তাদের নিকট হতে এ কথা বলে বেরিয়ে এলোঃ হে আমার জাতি! আমি আমার রবের বার্তা তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছি এবং সৎ উপদেশ দিয়েছি। সুতরাং আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য কি করে আক্ষেপ করতে পারি?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৩. তাদের ধ্বংসের পর নবী শুআইব (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আমার প্রতিপালক আমাকে যা পৌঁছানোর আদেশ করেছেন আমি তা তোমাদেরকে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছিলাম কিন্তু তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করোনি এবং তোমরা আমার দিকনির্দেশনা মানোনি। তাই আমি কুফরিতে অটল এমন কাফির সম্প্রদায়ের জন্য কীভাবে আক্ষেপ করতে পারি?!
94
وَمَآ أَرْسَلْنَا فِى قَرْيَةٍ مِّن نَّبِىٍّ إِلَّآ أَخَذْنَآ أَهْلَهَا بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি কোন জনপদে নাবী রাসূল পাঠালে, ওর অধিবাসীদেরকে দুঃখ-দারিদ্র ও রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত করে থাকি, উদ্দেশ্য হল, তারা যেন নম্র ও বিনয়ী হয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৪. আমি কোন এলাকায় নবী পাঠালে সে এলাকার লোকেরা যদি তাঁকে মিথ্যুক মনে করে এবং তাঁর সাথে কুফরি করে তখন আমি তাদেরকে দুঃখ-কষ্ট, দরিদ্রতা ও রোগ দিয়ে পাকড়াও করি। যাতে তারা আল্লাহর প্রতি নতি স্বীকার করে কুফরি ও হঠধর্মিতা পরিত্যাগ করে। এখানে মূলতঃ মিথ্যারোপকারী জাতিগুলোর ব্যাপারে আল্লাহর চিরায়ত নীতির কথা উল্লেখ করে কুরাইশ ও সকল মিথ্যারোপকারী কাফিরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
95
ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ ٱلسَّيِّئَةِ ٱلْحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَوا۟ وَّقَالُوا۟ قَدْ مَسَّ ءَابَآءَنَا ٱلضَّرَّآءُ وَٱلسَّرَّآءُ فَأَخَذْنَـٰهُم بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তাদের দুরাবস্থাকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি। অবশেষে তারা খুব প্রাচুর্যের অধিকারী হয়, আর তারা (অকৃতজ্ঞ স্বরে) বলেঃ আমাদের পূর্ব-পুরুষরাও এভাবে দুঃখ ভোগ করেছে। অতঃপর অকস্মাৎ আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে পারলনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৫. আমি তাদেরকে দুঃখ-কষ্ট ও রোগ-ব্যাধি দিয়ে পাকড়াও করার পর আবারো তাদেরকে কল্যাণ, স্বচ্ছলতা ও নিরাপত্তা দিয়ে বদলিয়ে দিলাম। ফলে তাদের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং সম্পদ বৃদ্ধি পায়। তখন তারা বলে: আমাদের নিকট কল্যাণ ও অকল্যাণ পৌঁছা এটি একটি সাধারণ নিয়ম মাত্র যা ইতিপূর্বে আমাদের পূর্ব পুরুষদের নিকটও পৌঁছেছিলো। বস্তুতঃ তারা এ কথা বুঝতে পারেনি যে, যে বিপদগুলো তাদের নিকট পৌঁছেছিলো তা ছিলো মূলতঃ তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ, যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আর যে নিয়ামতগুলো তাদের নিকট পৌঁছেছিলো তার উদ্দেশ্য ছিলো মূলতঃ কালক্ষেপন। অতঃপর আমি তাদেরকে হঠাৎ শাস্তির সম্মুখীন করলাম; অথচ তারা শাস্তির কথা টেরই পায়নি, না তারা তার প্রতীক্ষায় ছিলো।
96
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَـٰتٍ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ وَلَـٰكِن كَذَّبُوا۟ فَأَخَذْنَـٰهُم بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনত এবং আল্লাহভীতি অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দ্বারসমূহ খুলে দিতাম, কিন্তু তারা নাবী রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, ফলে তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৬. যদি এ এলাকাগুলোর অধিবাসীরা যাদের নিকট আমি রাসূলদেরকে পাঠিয়েছি তারা যদি রাসূলদের আনীত বিধানকে সত্য মনে করে গুনাহ ও কুফরি ছেড়ে তাদের প্রতিপালকের আদেশ মেনে তাঁকে ভয় করতো তাহলে আমি চতুর্দিক থেকে তাদের উপর কল্যাণের দরজাগুলো খুলে দিতাম। কিন্তু তারা রাসূলদেরকে সত্য না জেনে এবং আল্লাহকে ভয় না করে বরং রাসূলদের আনীত বিধানকে মিথ্যা বলেছে। তাই আমি তাদেরকে গুনাহ ও পাপের দরুন হঠাৎ শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করলাম।
97
أَفَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَـٰتًا وَهُمْ نَآئِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
রাতে যখন তারা ঘুমিয়ে থাকে তখন আমার শাস্তি এসে তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে - এটা হতে কি জনপদের অধিবাসীরা নির্ভয় হয়ে পড়েছে ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৭. এ এলাকাগুলোর মিথ্যারোপকারী লোকেরা কি এ ব্যাপারে নিরাপদ যে, রাতের বেলায় তাদের নিকট আমার শাস্তি আসবে না যখন তারা ঘুমের ভেতর নিরবতা ও আরামে নিমগ্ন থাকবে?
98
أَوَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অথবা জনপদের লোকেরা কি এই ভয় রাখেনা যে, আমার শাস্তি তাদের উপর তখন আপতিত হবে যখন তারা পূর্বাহ্নে আমোদ প্রমোদে রত থাকবে ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৮. না কি তারা এ ব্যাপারে নিরাপদ যে, দিনের শুরুভাগে তাদের নিকট আমার শাস্তি আসবে না যখন তারা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার দরুন গাফিল ও আত্মভোলা হয়ে থাকবে?
99
أَفَأَمِنُوا۟ مَكْرَ ٱللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْقَوْمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে ? সর্বনাশগ্রস্থ সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেহই নি:শঙ্ক হতে পারেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৯. তোমরা চিন্তা করে দেখো, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যে ঢিল দিয়েছেন এবং যে শক্তি ও রিযিকের প্রশস্ততা দিয়েছেন তা কিন্তু তাদেরকে কঠিনভাবে ধরার জন্য। এ সব এলাকার মিথ্যারোপকারীরা কি আল্লাহর কৌশল ও সূ² পরিকল্পনা থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে? একমাত্র ধ্বংসোন্মুখ সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর কৌশল থেকে কেউ নিজকে নিরাপদ ভাবতে পারে না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর তাওফীকপ্রাপ্ত তারা তাঁর কৌশলকে ভয় পায়। তারা তাঁর নিয়ামত পেয়ে ধোঁকা খায় না। বরং তারা এটিকে আল্লাহর দয়া মনে করে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করে।
100
أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِ أَهْلِهَآ أَن لَّوْ نَشَآءُ أَصَبْنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمْ ۚ وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কোন এলাকার অধিবাসী ধ্বংস হওয়ার পর সেই এলাকার যারা উত্তরাধিকারী হয়, তাদের কাছে কি এটা প্রতীয়মান হয়নি যে, আমি ইচ্ছা করলে তাদের পাপের কারণে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারি, আর তাদের অন্তঃকরণের উপর মোহর এটে দিতে পারি যাতে তারা কিছুই শুনতে পারেনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০০. যারা গুনাহর দরুন তাদের পূর্বসূরীদের ধ্বংসের পর পৃথিবীতে বসবাস করছে তাদের নিকট কি ব্যাপারটি সুস্পষ্ট নয়? বস্তুতঃ তারা ওদের শাস্তি দেখে শিক্ষা গ্রহণ করেনি; বরং তারা ওদের মতোই কাজ করছে। এদের কাছে কি এ ব্যাপারটি সুস্পষ্ট নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা যদি তাদেরকে গুনাহের দরুন শাস্তি দিতে চান তাহলে তিনি তা দিতে পারেন? যা তাঁর চিরায়ত নিয়মই বটে। এমনকি তাদের অন্তরগুলোর উপর মোহর মেরে দিতে পারেন। ফলে তারা কোন উপদেশই গ্রহণ করবে না। এমনকি কোন উপদেশ তাদের কোন ফায়েদায়ই আসবে না।
101
تِلْكَ ٱلْقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنۢبَآئِهَا ۚ وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلْكَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ঐ জনপদগুলির কিছু ঘটনা আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, তাদের কাছে রাসূলগণ সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণসহ এসেছিল, কিন্তু পূর্বে তারা যা প্রত্যাখ্যান করেছিল তার প্রতি তারা ঈমান আনার ছিলনা, এমনিভাবেই আল্লাহ অবিশ্বাসীদের অন্তঃকরণের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০১. হে রাসূল! আমি আপনাকে উক্ত এলাকাগুলোর খবর দিচ্ছি। যেগুলো হলো নূহ, হূদ, সালেহ, লূত্ব ও শুআইবের এলাকা। উপরন্তু তাদের সম্প্রদায়গুলো যে মিথ্যারোপ ও হঠকারিতা দেখিয়েছে এবং তাদের উপর যে ধ্বংস নেমে এসেছে তা সবই বলেছি। যেন তা শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণকারীদের উপদেশ হয়। এ এলাকাবাসীদের নিকট তাদের রাসূলগণ তাদের সত্যতার ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছেন। মূলতঃ তারা রাসূলগণের উপর ঈমান আনবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব থেকেই জানেন তারা রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করবে। রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপকারী এ এলাকার লোকদের অন্তরগুলোর উপর আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে মোহর মেরে দিয়েছেন তেমনিভাবে তিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে কুফরিকারীদের অন্তরগুলোর উপরও মোহর মেরে দিবেন। তখন তারা কোনভাবেই ঈমানের পথ খুঁজে পাবে না।
102
وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍ ۖ وَإِن وَجَدْنَآ أَكْثَرَهُمْ لَفَـٰسِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তাদের অধিকাংশকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীরূপে পাইনি, তবে তাদের অধিকাংশকে পাপাচারী রূপে পেয়েছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০২. যে জাতিগুলোর নিকট রাসূলগণকে পাঠানো হয়েছে তাদের অধিকাংশকেই আমি আল্লাহর ওসিয়ত মানতে ও পূরা করতে দেখিনি। না তাদেরকে আল্লাহর আদেশগুলো মানতে দেখেছি। বরং তাদের অধিকাংশকেই আমি আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছি।
103
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنۢ بَعْدِهِم مُّوسَىٰ بِـَٔايَـٰتِنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَإِي۟هِۦ فَظَلَمُوا۟ بِهَا ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি মূসাকে আমার আয়াত ও নিদর্শনসহ ফির‘আউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠালাম, কিন্তু তারা যুলম করল। সুতরাং এই বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল তা তুমি লক্ষ্য কর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৩. উক্ত রাসূলগণের পর আমি মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে তাঁর সত্যতা বুঝায় এমন প্রমাণ ও দলিলাদি দিয়ে পাঠিয়েছি। তবুও তারা সে নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার ও সেগুলোর সাথে কুফরি করেছে। হে রাসূল! আপনি চিন্তা করে দেখুন, ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের কি পরিণতি হয়েছিলো। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ডুবিয়ে মারলেন। উপরন্তু তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নতকে তাদের পেছনে লাগিয়ে দিলেন।
104
وَقَالَ مُوسَىٰ يَـٰفِرْعَوْنُ إِنِّى رَسُولٌ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা বললঃ হে ফির‘আউন! আমি বিশ্বের রবের একজন রাসূল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৪. যখন আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে ফিরআউনের নিকট পাঠালেন তখন তিনি বললেন: হে ফিরআউন! নিশ্চয়ই আমি সকল সৃষ্টির ¯্রষ্টা এবং তাদের মালিক ও তাদের সমূহ ব্যাপার নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল।
105
حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ ۚ قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَرْسِلْ مَعِىَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবনা, আমি তোমাদের রবের পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি। সুতরাং বানী ইসরাঈলকে আমার সাথে যেতে দাও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৫. মূসা (আলাইহিস-সালাম) বললেন: যখন আমি তাঁর পক্ষ থেকেই প্রেরিত তখন আমার উচিত তাঁর ব্যাপারে সত্য ছাড়া আর কিছু না বলা। আমি তোমাদের নিকট এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি যা আমার সত্যতা অর্থাৎ আমি যে আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রেরিত রাসূল তা বুঝায়। তাই হে ফিরআউন! আপনি বনী ইসরাঈলকে বন্দিদশা ও নির্যাতন থেকে মুক্তি দিয়ে আমার নিকট ছেড়ে দিন।
106
قَالَ إِن كُنتَ جِئْتَ بِـَٔايَةٍ فَأْتِ بِهَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ফির‘আউন বললঃ তুমি যদি বাস্তবিকই স্পষ্ট দলীল ও কোন নিদর্শন এনে থাক তাহলে উপস্থিত কর, যদি তুমি সত্যবাদী হও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৬. ফিরআউন মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে বললো: তুমি যদি তোমার ধারণা মতে সত্যিই কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাকো তাহলে তা আমার সামনে নিয়ে আসো, যদি তুমি নিজ দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো।
107
فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِىَ ثُعْبَانٌ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তখন মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করল এবং সহসাই ওটা এক জীবিত অজগরে পরিণত হল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৭. তখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তার লাঠিটিকে হাত থেকে ফেলে দিলে তা একটি বড় সাপে রূপান্তরিত হয় যা সকল দর্শকই দেখতে পায়।
108
وَنَزَعَ يَدَهُۥ فَإِذَا هِىَ بَيْضَآءُ لِلنَّـٰظِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর সে তার হাত বের করল, তৎক্ষণাৎই ওটা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র ও উজ্জ্বল আলোকময় প্রতিভাত হল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৮. তেমনিভাবে তিনি তাঁর হাতখানা নিজের বুকের দিককার জামার খোলা জায়গা অথবা নিজের বগলের নিচ থেকে বের করলে তা প্রচÐ শুভ্রতায় দর্শকদের সামনে জ্বলজ্বল করতে থাকে। তবে তা নিছক সাদাই ছিলো তাতে কোন শ্বেত রোগ ছিলো না।
109
قَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَـٰحِرٌ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ফির‘আউন সম্প্রদায়ের প্রধানরা বললঃ নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি বড় সুদক্ষ যাদুকর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৯. যখন নেতৃস্থানীয়রা মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর লাঠিটিকে সাপ এবং শ্বেত রোগ ছাড়া তাঁর হাতকে অধিক সাদা হতে দেখলো তখন তারা বললো: বস্তুতঃ মূসা যাদু বিদ্যায় শক্তিশালী একজন যাদুকরই মাত্র।
110
يُرِيدُ أَن يُخْرِجَكُم مِّنْ أَرْضِكُمْ ۖ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায়, এখন তোমাদের পরামর্শ কি?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১০. সে যা করেছে তার মাধ্যমে সে মূলতঃ তোমাদেরকে এ মিশর এলাকা থেকে বের করে দিতে চায়। অতঃপর ফিরআউন মূসা (আলাইহিস-সালাম) সম্পর্কে সবার পরামর্শ চেয়ে বললো: তোমরা এখন আমাকে এ ব্যাপারে কী পরামর্শ দিচ্ছো?
111
قَالُوٓا۟ أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِى ٱلْمَدَآئِنِ حَـٰشِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ তাকে এবং তার ভাইকে (হারুন) কিছু দিনের জন্য অবকাশ দিন, আর শহরে শহরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিন,
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১১. তারা ফিরআউনকে বললো: আপনি মূসা ও তার ভাইকে সময় দিন এবং যাদুকরদেরকে একত্রিত করার জন্য মিশরের শহরগুলোতে লোক পাঠান।
112
يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَـٰحِرٍ عَلِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যেন তারা আপনার (ফির‘আউন) নিকট প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে উপস্থিত করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১২. দেখবেন তারা এলাকায় এলাকায় গিয়ে যাদুকরিতে পাকা এমন সকল দক্ষ যাদুকরকে আপনার কাছে নিয়ে আসবে।
113
وَجَآءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوٓا۟ إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ ٱلْغَـٰلِبِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যাদুকরেরা ফির‘আউনের কাছে এসে বললঃ আমরা যদি বিজয় লাভ করতে পারি তাহলে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৩. ফিরআউন যাদুকরদেরকে একত্রিত করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় লোক পাঠিয়ে দিলো। অতঃপর যাদুকররা ফিরআউনের নিকট আসলো এবং বললো যে, যদি তারা যাদুর মাধ্যমে মূসার উপর সফল ও জয়যুক্ত হয় তাহলে কি তাদের জন্য কোন পুরস্কার রয়েছে?
114
قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ হ্যাঁ, তোমরাই হবে আমার দরবারের নিকটতম ব্যক্তি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৪. ফিরআউন তাদেরকে বললো: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য পুরস্কার ও প্রতিদান রয়েছে। আর অচিরেই তোমরা আমার নিকটবর্তী পদগুলো অলঙ্কৃত করবে।
115
قَالُوا۟ يَـٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلْقِىَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ نَحْنُ ٱلْمُلْقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যাদুকরেরা বললঃ হে মূসা! তুমি কি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করবে, নাকি আমরাই (প্রথমে) নিক্ষেপ করব?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৫. যাদুকররা মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর বিপরীতে নিজেদের সফলতার ব্যাপারে আস্থাশীল হয়ে অহংকার করে বললো: হে মূসা! তুমিই বেছে নাও: তুমি কি প্রথমে যাদু দেখাবে, না আমরা দেখাবো?
116
قَالَ أَلْقُوا۟ ۖ فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟ سَحَرُوٓا۟ أَعْيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَآءُو بِسِحْرٍ عَظِيمٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বললঃ তোমরাই নিক্ষেপ কর। সুতরাং যখন যাদুকরেরা নিক্ষেপ করল তখন লোকের চোখে ধাঁধাঁর সৃষ্টি করল এবং তাদেরকে ভীত ও আতংকিত করল, তারা এক বড় রকমের যাদু দেখাল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৬. মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের সাহায্যের উপর আস্থাশীল হয়ে নির্ভয়ে তাদেরকে উত্তর দিলেন: আচ্ছা, তোমরাই সর্বপ্রথম তোমাদের লাঠি ও রশিগুলো ছাড়ো। যখন তারা সেগুলো ছাড়লো তখন মানুষের চোখগুলো যাদুগ্রস্ত হয়ে গেলো। তাদের চোখগুলো তখন সঠিক ব্যাপারটি ধরতে পারলো না। বরং তারা আতঙ্কিত হয়ে গেলো। আপাততঃ তারা দর্শনকারীদের দৃষ্টিতে শক্তিশালী যাদুই দেখালো।
117
۞ وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِىَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি মূসার নিকট এই প্রত্যাদেশ পাঠালাম, তুমি তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ কর। মূসা তা নিক্ষেপ করলে ওটা (এক বিরাট অজগর হয়ে) সহসা ওদের অলীক সৃষ্টিগুলিকে গ্রাস করতে লাগল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৭. তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী ও কালীমের (যাঁর সাথে তিনি সরাসরি কথা বলেছেন) নিকট ওহী পাঠালেন: হে মূসা! তুমি নিজের লাঠিটি ফেলে দাও। তখন তিনি ফেলে দিলেন। ফলে লাঠিটি সাপে রূপান্তরিত হয়ে তাদের লাঠি ও দড়িগুলোকে গিলে ফিললো। যেগুলোকে তারা যাদু হিসেবে ব্যবহার করেছিলো এবং মানুষরাও তাদের ধোঁকায় পড়ে ভেবেছিলো যে, বস্তুতঃ অনেকগুলো সাপই তাদের সামনে দৌড়াদৌড়ি করছে।
118
فَوَقَعَ ٱلْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পরিশেষে যা হক ছিল তা সত্য প্রমাণিত হল, আর তারা যা কিছু করেছিল তা বাতিল প্রতিপন্ন হল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৮. অবশেষে সত্য প্রকাশিত হলো এবং মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর আনীত ওহীর বাস্তবতাও প্রমাণিত হলো। উপরন্তু যাদুকরদের যাদু বাতিল বলে গণ্য হলো।
119
فَغُلِبُوا۟ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُوا۟ صَـٰغِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর ফির‘আউন ও তার দলবলের লোকেরা মুকাবিলার মাইদানে পরাজিত হল এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১৯. তারা তখন ব্যর্থ ও পরাজিত হলো এবং মূসা (আলাইহিস-সালাম) সবার উপস্থিতিতে তাদের উপর বিজয়ী হলেন। উপরন্তু তারা লাঞ্ছিত ও পরাজিত হয়ে ফিরে গেলো।
120
وَأُلْقِىَ ٱلسَّحَرَةُ سَـٰجِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যাদুকরেরা তখন সাজদাহবনত হল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২০. অতঃপর যাদুকররা আল্লাহর কুদরতের মহত্ত¡ এবং তাঁর সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ দেখে তাঁর জন্য সাজদায় পড়ে গেলো।
121
قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আমরা বিশ্বের রবের প্রতি ঈমান আনলাম,
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২১. যাদুকররা বললো: আমরা সমস্ত সৃষ্টির প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি।
122
رَبِّ مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা ও হারূনের রবের প্রতি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২২. মূসা ও হারূন (আলিাইহিমাস-সালাম) এর প্রতিপালকের উপর যিনি ছাড়া অন্য কোন ধারণাপ্রসূত ইলাহ ইবাদাতের উপযুক্ত নয়। তিনিই একমাত্র ইবাদাতের উপযুক্ত।
123
قَالَ فِرْعَوْنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبْلَ أَنْ ءَاذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَمَكْرٌ مَّكَرْتُمُوهُ فِى ٱلْمَدِينَةِ لِتُخْرِجُوا۟ مِنْهَآ أَهْلَهَا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ফির‘আউন বললঃ আমি অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার উপর ঈমান আনলে? নিশ্চয়ই তোমরা এক চক্রান্ত পাকিয়েছ শহরবাসীদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু সত্ত্বরই তোমরা এর পরিণাম জ্ঞাত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২৩. এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার পর ফিরআউন হুমকি দিয়ে বললো: তোমরা কি আমার অনুমতির আগেই মূসার উপর ঈমান এনেছো? নিশ্চয়ই তাঁর উপর ও তাঁর আনীত বিধানের উপর তোমাদের ঈমান এক ধরনের ধোঁকা ও ষড়যন্ত্র যা অত্র শহরবাসীকে নিজদের এলাকা থেকে বের করে দেয়ার জন্য তোমরা ও মূসা পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করে ঠিক করে রেখেছিলে। হে যাদুকররা! তোমরা অচিরেই জানতে পারবে তোমাদের উপর কী শাস্তি ও নির্যাতন নেমে আসছে।
124
لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَـٰفٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অবশ্যই আমি তোমাদের বিপরীত হস্ত-পদ কর্তন করব, তারপর তোমাদের সবাইকে আমি শুলে চড়াব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২৪. আমি অবশ্যই প্রত্যেকের ডান হাত ও বাম পা অথবা বাম হাত ও ডান পা কেটে ফেলবো। অতঃপর আমি তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া এবং এ অবস্থার সকল দর্শককে ভীতি প্রদর্শন করার জন্য তোমাদের সবাইকে খেজুুর গাছের খÐে ঝুলিয়ে রাখবো।
125
قَالُوٓا۟ إِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা (যাদুকরেরা) বললঃ নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রবের নিকট ফিরে যাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২৫. যাদুকররা ফিরআউনের হুমকির উত্তরে বললো: নিশ্চয়ই আমরা আমাদের একমাত্র প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাবো। তাই আমরা তোমার হুমকিকে পরোয়া করি না।
126
وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا بِـَٔايَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَا ۚ رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি আমাদের মধ্যে এছাড়া কোনই দোষ পাচ্ছনা যে, আমাদের কাছে যখন আমাদের রবের নিদর্শনাবলী এসে গেল তখন আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম রূপে আমাদের মৃত্যু দান করুন!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২৬. হে ফিরআউন! মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর হাতের উপর দিয়ে আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে নিদর্শনসমূহ আমাদের নিকট এসেছে তা বিশ্বাস করার কারণেই তুমি আমাদের উপর রাগ করেছো এবং তা অপছন্দ করছো। এটিই যদি আমাদের নিন্দনীয় অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে তা হোক। অতঃপর তারা আল্লাহ অভিমুখী হয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দু‘আ করতে গিয়ে বললো: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের উপর অপরিমিত ধৈর্য ঢেলে দিন যাতে আমরা সত্যের উপর অটল থাকতে পারি। আর আপনি আমাদেরকে আপনার অনুগত ও আপনার আদেশ পালনকারী এবং আপনার রাসূলের অনুসারী হিসেবে মৃত্যু দিন।
127
وَقَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُۥ لِيُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَءَالِهَتَكَ ۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْىِۦ نِسَآءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَـٰهِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ফির‘আউন সম্প্রদায়ের সর্দাররা তাকে বললঃ তুমি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য মুক্ত ছেড়ে দিবে এবং তোমাকে ও তোমার দেবতাদেরকে বর্জন করে চলার সুযোগ দিবে? সে বললঃ আমি তাদের সন্তানদের হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব, তাদের উপর আমাদের শক্তি ও ক্ষমতা প্রবল ও সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২৭. ফিরআউনের বংশের বড় ও নেতৃস্থানীয়রা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) ও তাঁর মু’মিন সাথীদের বিরুদ্ধে তাকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য বললো: হে ফিরআউন! তুমি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং তোমাকে ও তোমার উপাস্যগুলোকে পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে ডাকার জন্য বিনা বাধায় ছেড়ে দিবে?! ফিরআউন বললো: অচিরেই আমি বনী ইসরাঈলের ছেলে সন্তানগুলোকে হত্যা করবো এবং আমাদের খিদমতের জন্য তাদের মহিলাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবো। আর আমরা অত্যাচার, দাপট ও ক্ষমতা দেখিয়ে তাদের উপরেই প্রভাব খাটাবো।
128
قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱللَّهِ وَٱصْبِرُوٓا۟ ۖ إِنَّ ٱلْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۖ وَٱلْعَـٰقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা তার সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন কর। এই পৃথিবীর সার্বভৌম মালিক আল্লাহ, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উহার উত্তরাধিকারী করেন, শুভ পরিণাম ও শেষ সাফল্য লাভ হয় আল্লাহভীরুদের জন্য।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২৮. তখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়কে আদেশ দিয়ে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের উপর থেকে বিপদ দূর করা ও নিজেদের লাভালাভের জন্য এক আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। আর তোমরা এখন যে পরীক্ষায় পড়েছো সে ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করো। কারণ, পৃথিবী হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর। ফিরআউন ও অন্য কারো জন্য নয়। যার উপর তারা মাতব্বরি করবে। বরং আল্লাহ তাঁর ইচ্ছায় মানুষের মাঝে এর হাতবদল করেন। তবে এ পৃথিবীতে শুভ পরিণাম কেবল মু’মিনদের জন্য যারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ-নিষেধ মান্য করে। তাই এ দুনিয়া তাদেরই জন্য যদিও ক্ষণে ক্ষণে তাদের উপর কিছু বালা-মুসীবত নেমে আসে।
129
قَالُوٓا۟ أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِيَنَا وَمِنۢ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আপনি আমাদের নিকট (নাবী রূপে) আগমনের পূর্বেও আমরা (ফির‘আউন কর্তৃক) নির্যাতিত হয়েছি এবং আপনার আগমনের পরও নির্যাতিত হচ্ছি। সে (মূসা) বললঃ সম্ভবতঃ শীঘ্রই তোমাদের রাব্ব তোমাদের শক্রকে ধ্বংস করবেন এবং তোমাদেরকে তাদের রাজ্যে স্থলাভিষিক্ত করবেন, অতঃপর তোমরা কিরূপ কাজ কর তা তিনি লক্ষ্য করবেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২৯. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় বনী ইসরাঈল তাঁকে বললো: হে মূসা! আপনি আসার আগে ও পরে তথা উভয় ক্ষেত্রেই আমাদেরকে ফিরআউনের হাতে আমাদের ছেলেদেরকে হত্যা করা ও মেয়েদেরকে জীবিত রাখার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে এ কেমন কথা। মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাদেরকে উপদেশ ও বিপদ দূর হওয়ার সুসংবাদ দিয়ে বললেন: আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রæ ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদেরকে তদস্থলে কর্তৃত্ব করার সুযোগ দিবেন। তিনি দেখতে চান তারপর তোমরা কি তাঁর কৃতজ্ঞতা করো, না কুফরি করো।
130
وَلَقَدْ أَخَذْنَآ ءَالَ فِرْعَوْنَ بِٱلسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে বছরের পর বছর দুর্ভিক্ষ, অজন্ম ও ফসলহানির মধ্যে বিপন্ন রেখেছিলাম, যাতে তারা ঈমান আনে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩০. সত্যিই আমি ফিরআউনের বংশকে আকাল ও দুর্ভিক্ষ দিয়ে শাস্তি দিয়েছি এবং তাদেরকে জমিনের ফল ও ফসলের ঘাটিতে দিয়ে পরীক্ষা করেছি। যাতে তারা এতটুকু উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে যে, তাদের নিকট যে বিপদ এসেছে তা কেবল তাদের কুফরির শাস্তি স্বরূপ এসেছে। অতএব, তারা যেন আল্লাহর নিকট তাওবা করে।
131
فَإِذَا جَآءَتْهُمُ ٱلْحَسَنَةُ قَالُوا۟ لَنَا هَـٰذِهِۦ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوا۟ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓ ۗ أَلَآ إِنَّمَا طَـٰٓئِرُهُمْ عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তাদের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ হত তখন তারা বলতঃ এটা আমাদের প্রাপ্য, আর যদি তাদের দুঃখ দৈন্য ও বিপদ আপদ হত তখন তারা ওটাকে মূসা ও তার সঙ্গী সাথীদের মন্দ ভাগ্যের কারণ রূপে নিরূপণ করত। তোমরা জেনে রেখ যে, তাদের অকল্যাণ আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণাধীন, কিন্তু তাদের অধিকাংশ সে সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩১. যখন ফিরআউন গোষ্ঠীর নিকট জমিনের উর্বরতা, ফলের প্রাচুর্যতা ও পণ্যের স্বল্পমূল্য নেমে আসে তখন তারা বলে: এগুলো মূলতঃ আমাদেরকে আমাদের বিশেষত্ব ও উপযুক্ততার দরুন দেয়া হয়েছে। আর যদি তাদের নিকট অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ ও রোগের আধিক্য ইত্যাদি জাতীয় বিপদাপদ পৌঁছে তখন তারা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) ও তাঁর সাথের বনী ইসরাঈলকে নিয়ে কুলক্ষণ ভাবে। অথচ সত্য কথা হলো এগুলো যা তাদের নিকট পৌঁছেছে তা কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের তাক্বদীর অনুযায়ী পৌঁছেছে। তাদের ও মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর এখানে কোন দখলদারিত্ব নেই। তবে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর বদদু‘আ তো অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটি না বুঝে এগুলোকে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো সাথে সম্পৃক্ত করে।
132
وَقَالُوا۟ مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِۦ مِنْ ءَايَةٍ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আমাদেরকে যাদু করার জন্য যে কোন নিদর্শনই পেশ করনা কেন আমরা তাতে ঈমান আনবনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩২. ফিরআউনের গোষ্ঠী সত্য গ্রহণে হঠকারিতা দেখিয়ে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) কে বললো: যে নিদর্শন ও প্রমাণই তুমি আমাদের নিকট নিয়ে আসো না কেন এবং তুমি নিজ ধর্মের সত্যতা প্রমাণ ও আমাদেরকে নিজেদের ধর্ম থেকে ফিরানোর জন্য যে দলীলই নিয়ে আসো না কেন আমরা কখনোই সে ব্যাপারে তোমাকে বিশ্বাস করবো না।
133
فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلْجَرَادَ وَٱلْقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَايَـٰتٍ مُّفَصَّلَـٰتٍ فَٱسْتَكْبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তাদের উপর প্লাবণ, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত ধারার শাস্তি পাঠিয়ে ক্লিষ্ট করি, ওগুলি ছিল আমার সুস্পষ্ট নিদর্শন, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত দাম্ভিকতা ও অহংকারেই মেতে রইল, তারা ছিল একটি অপরাধী জাতি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩৩. তখন আমি তাদের মিথ্যারোপ ও হঠকারিতার শাস্তি স্বরূপ তাদের উপর প্রচুর বন্যার পানি পাঠিয়েছি যা তাদের শস্য ও ফল-ফলাদি ডুবিয়ে দেয়। তেমনিভাবে আমি তাদের উপর পঙ্গপাল পাঠিয়েছি যা তাদের সকল ফসল খেয়ে ফেলে। অনুরূপভাবে আমি তাদের উপর আরো পাঠিয়েছি উকুন নামক এক ধরনের পোকা যা ফসলের ক্ষতি করে অথবা চুলে পড়ে মানুষকে কষ্ট দেয়। তেমনিভাবে আমি তাদের উপর আরো পাঠিয়েছি ব্যাঙ যা তাদের পাত্রে পড়ে খাদ্যগুলোকে নষ্ট করে দেয় এবং বিছানায় পড়ে তাদের ঘুমকে নষ্ট করে। অনুরূপভাবে আমি তাদের উপর পাঠিয়েছি রক্ত ফলে তাদের কুয়া ও নদীর পানিগুলো রক্তে রূপান্তরিত হয়। বস্তুতঃ আমি এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে ধারাবাহিকভাবে পৃথক পৃথক করে পাঠিয়েছি। এরপরও কিন্তু তারা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) আনীত বিধানে বিশ্বাস স্থাপন ও ঈমান আনা থেকে দূরে সরে গেছে। মূলতঃ তারা ছিলো এমন এক জাতি যারা সর্বদা পাপ করতো, বাতিল থেকে ফিরে আসতো না এবং সত্যের প্রতি হিদায়েতপ্রাপ্ত ছিলো না।
134
وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ ٱلرِّجْزُ قَالُوا۟ يَـٰمُوسَى ٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ ۖ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا ٱلرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের উপর কোন বালা মুসীবত ও বিপদ-আপদ আপতিত হলে তারা বলতঃ হে মূসা! আমাদের পক্ষ থেকে তোমার রবের নিকট দু‘আ কর। তার সাথে তোমার যে অঙ্গীকার রয়েছে তদনুযায়ী যদি আমাদের উপর থেকে প্লেগ দূর করে দিতে পার তাহলে আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো এবং তোমার সাথে বানী ইসরাঈলদেরকে পাঠিয়ে দিব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩৪. যখনই এ শাস্তিগুলো তাদের নিকট আসলো তখনই তারা (আলিাইহিস-সালাম) এর কাছে গিয়ে তাঁকে বললো: হে মূসা! আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করুন যেন তিনি আমাদের শাস্তিগুলো উঠিয়ে নেন। কারণ, তিনিই তো আপনাকে বিশেষভাবে নবুওয়াত দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে ওয়াদাও করেছেন যে, যখনই তাওবা করা হবে তখনই তিনি শাস্তি উঠিয়ে নিবেন। যদি আপনি আমাদের উপর থেকে শাস্তিগুলো উঠিয়ে নেন তাহলে আমরা অবশ্যই আপনার উপর ঈমান আনবো এবং বনী ইসরাঈলকে ছেড়ে দিয়ে আপনার সাথে পাঠিয়ে দেবো।
135
فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ ٱلرِّجْزَ إِلَىٰٓ أَجَلٍ هُم بَـٰلِغُوهُ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু যখনই আমি তাদের উপর হতে প্লেগের শাস্তির সেই সময়টি অপসারিত করতাম যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তখনই আবার তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩৫. যখন আমি তাদেরকে ডুবিয়ে মারার আগে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের উপর থেকে শাস্তি উঠিয়ে নিলাম তখন তারা ঈমান আনা ও বনী ইসরাঈলকে ছেড়ে দেয়ার নিজেদের ওয়াদাই ভঙ্গ করলো। ফলে তারা কুফরির উপরই থেকে গেলো এবং বনী ইসরাঈলকে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সাথে ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালো।
136
فَٱنتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَـٰهُمْ فِى ٱلْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَـٰفِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং আমি তাদের হতে প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে মারলাম, কেননা তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, আর এই ব্যাপারে তারা ছিল সম্পূর্ণ গাফিল বা উদাসীন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩৬. যখন তাদেরকে ধ্বংস করার নির্দিষ্ট সময় এসে গেলো তখন আমি তাদের উপর সাগরে ডুবিয়ে দেয়ার শাস্তি নাযিল করলাম। কারণ, তারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করলো এবং সেগুলো যে সত্যের প্রদি নির্দেশনা দেয় তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো।
137
وَأَوْرَثْنَا ٱلْقَوْمَ ٱلَّذِينَ كَانُوا۟ يُسْتَضْعَفُونَ مَشَـٰرِقَ ٱلْأَرْضِ وَمَغَـٰرِبَهَا ٱلَّتِى بَـٰرَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ بِمَا صَبَرُوا۟ ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُۥ وَمَا كَانُوا۟ يَعْرِشُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যে জাতিকে দুর্বল ও দীনহীন ভাবা হত আমি তাদেরকে আমার কল্যাণ প্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানাই, আর বানী ইসরাঈল জাতি সম্পর্কে তোমার রবের শুভ ও কল্যাণময় বাণী (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ হল যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের কীর্তিকলাপ ও উচ্চ প্রাসাদসমূহকে আমি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩৭. আর আমি বনী ইসরাঈলকে যাদেরকে একদা ফিরআউন ও তার সম্প্রদায় লাঞ্ছিত করেছে তাদেরকে দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিমের ওয়ারিশ বানিয়ে দিলাম। এলাকাটি ছিলো সিরিয়া এলাকা যাতে আল্লাহ তা‘আলা পরিপূর্ণভাবে ফসল ও ফল-ফলাদি ফলিয়ে প্রচুর বরকত দিয়েছেন। ফলে হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের সুন্দর বাণীটি পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। যা ছিলো নি¤œরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَنُرِيْدُ أَنْ نَّمُنَّ عَلَى الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا فِيْ الْأَرْضِ، وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِيْنَ﴾ [القصص: ٥] “দুনিয়াতে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো আমি তাদেরকে অনুগ্রহ করার এবং নেতা ও উত্তরাধিকারী বানানোর ইচ্ছা পোষণ করছিলাম”। (আল-ক্বাসাস: ৫) ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের দেয়া কষ্ট সহ্য করার দরুন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করলেন। আর আমি ফিরআউন যে ক্ষেতখামার, অট্টালিকা ও বাড়ি-ঘর বানিয়েছিলো তা ধ্বংস করে দিয়েছি।
138
وَجَـٰوَزْنَا بِبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱلْبَحْرَ فَأَتَوْا۟ عَلَىٰ قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَىٰٓ أَصْنَامٍ لَّهُمْ ۚ قَالُوا۟ يَـٰمُوسَى ٱجْعَل لَّنَآ إِلَـٰهًا كَمَا لَهُمْ ءَالِهَةٌ ۚ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম, অতঃপর তারা মূর্তি পূজারত এক জাতির সংস্পর্শে এল। তারা বললঃ হে মূসা! তাদের যেরূপ মা‘বূদ রয়েছে, আমাদের জন্যও ঐরূপ মা‘বূদ বানিয়ে দাও। সে বললঃ তোমরা একটি মূর্খ সম্প্রদায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩৮. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) নিজ লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করলে তা খÐিত হয়ে যায় এবং আমি বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করিয়ে দেই। অতঃপর তারা এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের মূর্তিপূজায় নিমগ্ন ছিলো। তখন বনী ইসরাঈল মূসা (আলিাইহিস-সালাম) কে বললো: হে মূসা! আপনি আমাদের জন্য একটি মূর্তি বানিয়ে দিন যা আমরা পূজা করবো যেমনিভাবে এদের অনেকগুলো মূর্তি রয়েছে যেগুলোকে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে পূজা করে। মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: হে আমার জাতি! তোমরা এমন এক অজ্ঞ সম্প্রদায় যারা আল্লাহর প্রাপ্য সম্মান কী এবং তাওহীদ ও শিরক কী এসব সম্পর্কে কিছুই জানো না।
139
إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ مُتَبَّرٌ مَّا هُمْ فِيهِ وَبَـٰطِلٌ مَّا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এ সব লোক যে কাজে লিপ্ত রয়েছে তাতো ধ্বংস করা হবে, আর তারা যা করছে তা অমূলক ও বাতিল বিষয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩৯. এরা যারা নিজেদের মূর্তি পূজায় নিমগ্ন তাদের ইবাদাত ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সাথে ইবাদাতে অন্যকে শরীক করার দরুন তাদের সকল আনুগত্য ও আমল বাতিল হয়ে যাবে।
140
قَالَ أَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَـٰهًا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে তোমাদের জন্য অন্য মা‘বূদের সন্ধান করব? অথচ তিনিই হলেন একমাত্র আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে বিশ্ব জগতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪০. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: হে আমার জাতি! আমি কিভাবে তোমাদের ইবাদাতের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যকে খুঁজবো; অথচ তোমরা তাঁর অনেকগুলো মহান নিদর্শন দেখেছো এবং তিনি তোমাদেরকে তোমাদের যুগের সকল জগৎবাসীর উপর বিশেষ কিছু নিয়ামতের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তথা তোমাদের শত্রæদেরকে ধ্বংস করে তোমাদেরকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
141
وَإِذْ أَنجَيْنَـٰكُم مِّنْ ءَالِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ ۖ يُقَتِّلُونَ أَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَآءَكُمْ ۚ وَفِى ذَٰلِكُم بَلَآءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
স্মরণ কর সেই সময়টির কথা, যখন আমি তোমাদেরকে ফির‘আউনের অনুসারীদের দাসত্ব হতে মুক্তি দিয়েছি, যারা তোমাদেরকে অতিশয় মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক ও ন্যাক্কারজনক শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪১. হে বনী ইসরাঈল! তোমরা সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন আমি তোমাদেরকে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের লাঞ্ছনা থেকে বের করে এনে মুক্তি দিয়েছি। যখন তারা তোমাদেরকে হরেক রকমের লাঞ্ছনার স্বাদ আস্বাদন করাচ্ছিলো। তোমাদের ছেলে সন্তানগুলোকে হত্যা করতো এবং তোমাদের মেয়েদেরকে খিদমতের জন্য বাঁচিয়ে রাখতো। মূলতঃ ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের হাত থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার মাঝে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বড় পরীক্ষা রয়েছে। যা বস্তুতঃ তোমাদের কাছ থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দাবি করে।
142
۞ وَوَٰعَدْنَا مُوسَىٰ ثَلَـٰثِينَ لَيْلَةً وَأَتْمَمْنَـٰهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيقَـٰتُ رَبِّهِۦٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَـٰرُونَ ٱخْلُفْنِى فِى قَوْمِى وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ ٱلْمُفْسِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি মূসাকে ও‘য়াদা দিয়েছিলাম ত্রিশ রাতের জন্য এবং আরো দশ দ্বারা ওটা পূর্ণ করেছিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময়টি চল্লিশ রাত দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে। মূসা তার ভাই হারুনকে বলেছিলঃ তুমি আমার কাওমের মধ্যে আমার স্থলাভিষিক্তরূপে কাজ করবে এবং তাদেরকে সংশোধন করার কাজ করতে থাকবে, এবং বিপর্যয় ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪২. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সাথে একান্ত আলাপের জন্য ত্রিশ রাত নির্ধারণ করলেন। অতঃপর আরো দশ রাত বাড়িয়ে তিনি তাঁর নির্ধারিত সময় পূরা করলেন। ফলে তা পুরো চল্লিশ রাতই হয়ে গেলো। যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের সাথে একান্তে সাক্ষাতের জন্য রওয়ানার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি তাঁর ভাই হারূনকে বললেন: হে হারূন! তুমি আমার সম্প্রদায়ে আমার প্রতিনিধি হয়ে যাও এবং সুষ্ঠু পরিচালনা ও ন¤্রতার মাধ্যমে তাদের বিষয়গুলোর সমাধান করো। পাপে লিপ্ত হয়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের পথ অবলম্বন করো না এবং পাপীদের সাহয্যকারীও হয়ো না।
143
وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَـٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِىٓ أَنظُرْ إِلَيْكَ ۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِى وَلَـٰكِنِ ٱنظُرْ إِلَى ٱلْجَبَلِ فَإِنِ ٱسْتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوْفَ تَرَىٰنِى ۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًا ۚ فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبْحَـٰنَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা যখন নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হল, তখন তার রাব্ব তার সাথে কথা বললেন। সে তখন নিবেদন করলঃ হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে দর্শন দিন। আল্লাহ বললেনঃ তুমি আমাকে আদৌ দেখতে পারবেনা, তবে তুমি ঐ পাহাড়ের দিকে তাকাও। যদি ঐ পাহাড় স্বস্থানে স্থির থাকে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। অতঃপর তার রাব্ব যখন পাহাড়ে জ্যোতিস্মান হলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল, আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। যখন চেতনা ফিরে এলো তখন সে বললঃ আপনি মহিমাময়, আপনার পবিত্র সত্তার কাছে আমি তাওবাহ করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম ঈমান আনলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪৩. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) নির্ধারিত সময়ে তাঁর প্রতিপালকের একান্ত সাক্ষাতের জন্য আসলেন যা ছিলো পুরো চল্লিশ রাত্রি। তাঁর প্রতিপালক আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বললেন। এ সময়ে তাঁর মন তাঁর প্রতিপালকের দর্শনের জন্য খুব উৎসাহী হয়ে উঠলো। তাই তিনি তাঁকে দেখার আবেদন জানালে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উত্তরে বলেন: দুনিয়ার জীবনে তুমি আমাকে কখনোই দেখতে পারবে না। কারণ, আমাকে দেখার কোন ক্ষমতাই এখন তোমার নেই। বরং আমি যখন এই পাহাড়ে আমার নূর ক্ষেপন করবো তুমি তখন সেদিকে তাকাও। যদি পাহাড়টি কোন প্রতিক্রিয়া ছাড়াই তার জায়গায় বাকি থাকে তাহলে তুমি আমাকে অচিরেই দেখতে পাবে। আর যদি তা জমিনের সাথে মিশে যায় তাহলে তুমি আমাকে দুনিয়াতে কখনোই দেখতে পাবে না। যখন আল্লাহ তা‘আলা পাহাড়ে তাঁর নূর ক্ষেপন করলেন তখন পাহাড়টি জমিনের সাথে মিশে গেলো। আর মূসা (আলিাইহিস-সালাম) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। যখন বেহুঁশ অবস্থা থেকে তাঁর হুঁশ ফিরে আসলো তখন তিনি বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার জন্য বেমানান সকল বস্তু থেকে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি এখনই দুনিয়াতে আপনাকে দেখার আবেদন থেকে তাওবা করছি। আমিই এ ব্যাপারে আমার সম্প্রদায়ের সর্বপ্রথম মু’মিন।
144
قَالَ يَـٰمُوسَىٰٓ إِنِّى ٱصْطَفَيْتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَـٰلَـٰتِى وَبِكَلَـٰمِى فَخُذْ مَآ ءَاتَيْتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّـٰكِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা! আমি তোমাকেই আমার রিসালাত ও আমার সাথে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্য হতে মনোনীত করেছি। অতএব আমি তোমাকে যা কিছু দিই তা তুমি গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪৪. আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) কে বললেন: হে মূসা! আমি আপনাকে রিসালাতের জন্য মনোনীত করে মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। আমি আপনাকে তাদের নিকট রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি। তেমনিভাবে আমি কোন মধ্যস্থতা ছাড়াই আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে সবার উপরে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছি। তাই আমি আপনাকে যে মহা সম্মান দিয়েছি তা গ্রহণ করুন এবং এ মহৎ দানের জন্য আপনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন।
145
وَكَتَبْنَا لَهُۥ فِى ٱلْأَلْوَاحِ مِن كُلِّ شَىْءٍ مَّوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِّكُلِّ شَىْءٍ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا۟ بِأَحْسَنِهَا ۚ سَأُو۟رِيكُمْ دَارَ ٱلْفَـٰسِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর আমি তার জন্য ফলকের উপর সর্ব বিষয়ের উপদেশ এবং সর্ব বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি, (অতঃপর তাকে বললাম) এই হিদায়াতকে দৃঢ় হস্তে শক্তভাবে গ্রহণ কর এবং তোমার সম্প্রদায়কে এর সুন্দর সুন্দর বিধানগুলি মেনে চলতে আদেশ কর। আমি ফাসেক বা সত্যত্যাগীদের আবাসস্থান শীঘ্রই তোমাদেরকে প্রদর্শন করাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪৫. আর আমি মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর জন্য বনী ইসরাঈলের দীন ও দুনিয়ার সকল প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী কিছু ফলকে লিখে দিলাম। যাতে তা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ এবং প্রয়োজনীয় বিধানাবলীর ব্যাখ্যা হতে পারে। অতএব, হে মূসা! তুমি এ তাওরাতকে গুরুত্ব সহকারে শক্তভাবে ধরো। আর তোমার বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়কে আদেশ করো এগুলোর মধ্যকার যা সুন্দর ও যার সাওয়াব বেশি তা আঁকড়ে ধরতে। যেমন: পরিপূর্ণভাবে আদেশগুলো পালন করা, ধৈর্য ধরা ও ক্ষমা করা। আমি অচিরেই তোমাদেরকে আমার আদেশ অমান্যকারী এবং আমার আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাওয়া লোকদের পরিণতি তথা তাদের ধ্বংস ও বিনাশ দেখাবো।
146
سَأَصْرِفُ عَنْ ءَايَـٰتِىَ ٱلَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَإِن يَرَوْا۟ كُلَّ ءَايَةٍ لَّا يُؤْمِنُوا۟ بِهَا وَإِن يَرَوْا۟ سَبِيلَ ٱلرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِن يَرَوْا۟ سَبِيلَ ٱلْغَىِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَـٰفِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনসমূহ হতে ফিরিয়ে রাখব, প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখার পরেও তারা তাতে ঈমান আনবে না, তারা যদি সৎ পথ দেখতে পায় তবুও সেই পথ সৎ পথ বলে গ্রহণ করবে না। কিন্তু তারা ভ্রান্ত ও গুমরাহীর পথ দেখলে তাকেই তারা গ্রহণ করবে। এর কারণ হল-তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং তারা তা থেকে সম্পূর্ণরূপে অমনোযোগী ছিল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪৬. যারা আল্লাহর বান্দাদের প্রতি অহঙ্কার দেখায় এবং অবৈধভাবে সত্যকে প্যত্যাখ্যান করে তাদেরকে আমি আমার কিতাবের আয়াতসমূহ বুঝতে এবং নিজেদের ও দুনিয়ার আনাচে-কানাচের নিদর্শনসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে দেবো না। তারা সকল নিদর্শন দেখে ঠিকই কিন্তু তারা সেগুলোর ব্যাপারে অমূলক অভিযোগ আনে এবং সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। উপরন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের কারণে সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনও করে না। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সত্য পথ দেখে ঠিকই কিন্তু তারা তাতে চলবে না এবং তার প্রতি উৎসাহও দেখাবে না। তবে তারা আল্লাহর রোষানলের দিকে পৌঁছানোর ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর পথ দেখলে তাতে চলার চেষ্টা করে। এ সকল বিষয় যা তাদের ব্যাপারে ঘটেছে তা কিন্তু আল্লাহর মহান নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলার দরুন। আর রাসূলদের নিয়ে আসা বিধানের সত্যতা প্রমাণ করে এমন বিষয়ে চিন্তা করার ব্যাপারে গাফিল হওয়ার দরুন।
147
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَلِقَآءِ ٱلْـَٔاخِرَةِ حَبِطَتْ أَعْمَـٰلُهُمْ ۚ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আমার নিদর্শনসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাত মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাদের সমূদয় ‘আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, তারা যা করে তদনুযায়ী তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪৭. যারা আমার রাসূলদের সত্যতা প্রমাণ করে এমন নিদর্শনসমূহকে যা এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে মিথ্যা মনে করে তাদের সকল আনুগত্য ও আমল বাতিল হয়ে যায়। ঈমানের শর্ত পূরণ না করার দরুন তাদেরকে সেগুলোর সাওয়াব দেয়া হবে না। কিয়ামতের দিন শুধু তাদেরকে আল্লাহর সাথে তাদের কুফরি ও শিরকের প্রতিদান দেয়া হবে। যার পরিণাম হবে জাহান্নামে চিরকাল থাকা।
148
وَٱتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ مِنۢ بَعْدِهِۦ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهُۥ خُوَارٌ ۚ أَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّهُۥ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًا ۘ ٱتَّخَذُوهُ وَكَانُوا۟ ظَـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর মূসার চলে যাবার পর অলংকার দ্বারা একটি বাছুরের (মত) পুতুল তৈরী করল, ওটা হতে গরুর মত শব্দ বের হত। তারা কি দেখেনি যে, ওটা তাদের সাথে কথা বলেনা এবং তাদেরকে কোন পথও দেখিয়ে দেয়না? তবুও তারা ওটাকে মা‘বূদ রূপে গ্রহণ করল। বস্তুতঃ তারা ছিল বড় অত্যাচারী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪৮. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের একান্ত সাক্ষাতে যাওয়ার পর তার সম্প্রদায় তাদের অলঙ্কার দিয়ে একটি গো-বাছুরের অবয়ব তৈরি করলো। যার কোন রূহ ছিলো না তবে ছিলো আওয়াজ। তারা কি জানে না যে, এ গো বাছুর তাদের সাথে কথা বলতে পারে না। না তাদেরকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোন কল্যাণের পথ দেখাতে পারে। না তাদের কোন লাভ করতে পারে, না তাদের কোন দুঃখ দূর করতে পারে। বস্তুতঃ তারা তাকে উপাস্য বানিয়ে নিজেদের উপরই নিজেরা যুলুম করলো।
149
وَلَمَّا سُقِطَ فِىٓ أَيْدِيهِمْ وَرَأَوْا۟ أَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوا۟ قَالُوا۟ لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যখন তারা লজ্জিত হল এবং দেখল যে, (প্রকৃত পক্ষে) তারা বিভ্রান্ত হয়েছে, তখন তারা বললঃ আমাদের প্রভু যদি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪৯. তবে তারা যখন লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছে এবং এ কথা জানতে পেরেছে যে, তারা গো-বাছুরকে আল্লাহর পাশাপাশি মা’বূদ বানিয়ে সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গেছে তখন তারা আল্লাহর নিকট বিনয়ী হয়ে বললো: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি যদি আমাদেরকে আপনার আনুগত্যের তাওফীক দিয়ে দয়া না করেন আর আমাদের গো-বাছুর পূজার অপকর্মটি ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
150
وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ قَوْمِهِۦ غَضْبَـٰنَ أَسِفًا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِى مِنۢ بَعْدِىٓ ۖ أَعَجِلْتُمْ أَمْرَ رَبِّكُمْ ۖ وَأَلْقَى ٱلْأَلْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُۥٓ إِلَيْهِ ۚ قَالَ ٱبْنَ أُمَّ إِنَّ ٱلْقَوْمَ ٱسْتَضْعَفُونِى وَكَادُوا۟ يَقْتُلُونَنِى فَلَا تُشْمِتْ بِىَ ٱلْأَعْدَآءَ وَلَا تَجْعَلْنِى مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা রাগাম্বিত বিক্ষুদ্ধ অবস্থায় নিজ জাতির নিকট ফিরে এসে বললঃ আমার চলে যাওয়ার পর তোমরা কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ, তোমরা তোমাদের প্রভুর নির্দেশের পূর্বেই কেন তাড়াহুড়া করতে গেলে? অতঃপর সে ফলকগুলি ফেলে দিল এবং স্বীয় ভাইয়ের মস্তক (চুল) ধরে নিজের দিকে টানতে লাগল। সে (হারূন) বললঃ হে আমার মাতার পুত্র! এই লোকগুলি আমাকে পরাভূত করে ফেলেছিল এবং আমাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল। অতএব তুমি আমাকে শক্র সমক্ষে হাস্যস্পদ করনা, আর এই যালিম লোকদের মধ্যে আমাকে গণ্য করনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫০. যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের একান্ত সাক্ষাত সেরে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা গো-বাছুর পূজা করছে তখন তিনি তাদের উপর অত্যন্ত রাগ ও দুঃখ নিয়ে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর তোমরা কতোই না নিকৃষ্ট পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছো। কারণ, তা তো তোমাদেরকে ধ্বংস ও দুর্ভাগ্যের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে। তোমরা কি আমার অপেক্ষায় বিরক্ত হয়ে গো-বাছুরের পূজায় লিপ্ত হয়েছো?! অতঃপর তিনি কঠিন রাগ ও দুঃখে তাওরাতের ফলকগুলো ফেলে দিলেন। আর নিজের ভাই হারূনের মাথা ও দাঁড়ি ধরে টানতে শুরু করলেন। কারণ, তিনি তো তাদের সাথেই ছিলেন; অথচ তিনি তাদের গো-বাছুর পূজাকে প্রতিরোধ করেননি। তখন হারূন (আলিাইহিস-সালাম) মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর নিকট কৈফিয়ত দিতে ও তাঁর দয়া কামনা করতে গিয়ে বললেন: হে আমার মায়ের সন্তান! লোকেরা আমাকে দুর্বল ভেবে লাঞ্ছিত করেছে এবং তারা আমাকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হয়েছে। তাই তুমি আমাকে এমন শাস্তি দিয়ো না যাতে আমার শত্রæরা খুশি হয়। আর তুমি আমাকে আমার উপর রাগের দরুন জালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না। যারা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো ইবাদাত করে।
151
قَالَ رَبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِأَخِى وَأَدْخِلْنَا فِى رَحْمَتِكَ ۖ وَأَنتَ أَرْحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তখন মূসা বললঃ হে আমার রাব্ব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন! আর আমাদেরকে আপনার রাহমাতের মধ্যে দাখিল করুন! আপনি সব চেয়ে দয়াবান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫১. তখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালককে ডেকে বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ও আমার ভাই হারূনকে ক্ষমা করুন। আর আপনি আমাদেরকে আপনার রহমতের ছায়াতলে স্থান দিন। যা আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে রাখবে। হে আমার প্রতিপালক! আপনি তো আমাদের প্রতি যে কোন দয়াকারীর চেয়েও বেশি দয়াশীল।
152
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُفْتَرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা গো-বৎসকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছে, অবশ্যই তারা এই পার্থিব জীবনে তাদের রবের গযব ও লাঞ্ছনায় নিপতিত হবে, মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫২. যারা গো-বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে তাকে পূজা করেছে অচিরেই তাদের উপর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কঠিন ক্ষোভ ও লাঞ্ছনা নেমে আসবে। কারণ, তারা নিজেদের প্রতিপালককে রাগান্বিত ও অপমানিত করেছে। এমন প্রতিদানই আমি আমার উপর মিথ্যারোপকারীদেরকে দিয়ে থাকি।
153
وَٱلَّذِينَ عَمِلُوا۟ ٱلسَّيِّـَٔاتِ ثُمَّ تَابُوا۟ مِنۢ بَعْدِهَا وَءَامَنُوٓا۟ إِنَّ رَبَّكَ مِنۢ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা খারাপ কাজ করে, এরপর তাওবাহ করলে ও ঈমান আনলে, তোমার আল্লাহতো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫৩. যারা গুনাহের কাজ করেছে যেমন: আল্লাহর সাথে শিরক ও কুফরি করা। অতঃপর আল্লাহর উপর ঈমান এনে তাঁর নিকট তাওবা করেছে এবং নিজেদের কৃত পাপ থেকে ফিরে এসেছে। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক এ তাওবা করা ও শিরক থেকে ঈমানের দিকে এবং গুনাহ থেকে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসার পর তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাঁর উপর দয়া করবেন।
154
وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى ٱلْغَضَبُ أَخَذَ ٱلْأَلْوَاحَ ۖ وَفِى نُسْخَتِهَا هُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসার ক্রোধ যখন প্রশমিত হল তখন সে প্রস্তর ফলকগুলি তুলে নিল, তাতে লেখা ছিলঃ যারা তাদের রাব্বকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে হিদায়াত ও রাহমাত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫৪. যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর রাগ ঠাÐা ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলো তখন তিনি যে ফলকগুলো রাগের মাথায় ফেলে দিয়েছেন তা হাতে উঠিয়ে নিলেন। উক্ত ফলকগুলোতে রয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়েত লাভের ব্যবস্থা এবং সত্য ও সঠিক পথের বর্ণনা। উপরন্তু তাতে যারা তাদের প্রতিপালক ও তাঁর শাস্তিকে ভয় পায় তাদের জন্য রয়েছে রহমত ও আশীর্বাদ।
155
وَٱخْتَارَ مُوسَىٰ قَوْمَهُۥ سَبْعِينَ رَجُلًا لِّمِيقَـٰتِنَا ۖ فَلَمَّآ أَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ قَالَ رَبِّ لَوْ شِئْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّـٰىَ ۖ أَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَّآ ۖ إِنْ هِىَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَن تَشَآءُ وَتَهْدِى مَن تَشَآءُ ۖ أَنتَ وَلِيُّنَا فَٱغْفِرْ لَنَا وَٱرْحَمْنَا ۖ وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْغَـٰفِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসা তার সম্প্রদায় হতে সত্তর জন নেতৃস্থানীয় লোক আমার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার জন্য নির্বাচন করল, যখন ঐ লোকগুলি একটি কঠিন ভূ-কম্পনে আক্রান্ত হল তখন মূসা বললঃ হে আমার রাব্ব! আপনি ইচ্ছা করলে এর পূর্বেও ওদেরকে এবং আমাকে ধ্বংস করতে পারতেন, আমাদের মধ্যকার কতক নির্বোধ লোকের অন্যায়ের কারণে কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটাতো আপনার পরীক্ষা, আপনি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎ পথে পরিচালিত করেন, আপনিইতো আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন, ক্ষমাকারীদের মধ্যে আপনিইতো উত্তম ক্ষমাকারী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫৫. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোকেরা গো-বাছুরের পূজায় লিপ্ত হলে সে ব্যাপারে তাদের প্রতিপালকের নিকট ওজর পেশ করার জন্য বাছাই করা সত্তর জন ভালো লোক চয়ন করলেন এবং আল্লাহ তা‘আলাও তাদের জন্য তুর পাহাড়ের নিকট জমায়েত হওয়ার উদ্দেশ্যে একটি সময় নির্ধারিত করলেন। যখন তারা সেখানে উপস্থিত হলো তখন তারা আল্লাহর সাথে ধৃষ্টতা দেখিয়ে মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর নিকট আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখার আবেদন করলো। এর ফলশ্রæতিতে তাদের উপর ভ‚মিকম্প ও প্রচÐ বিস্ফোরণের আযাব আসলো এবং তারা বেহুঁশ হয়ে গেলো। তখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের নিকট বিনয়ের সাথে বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি যদি তাদেরকে ও আমাকে এখানে আসার আগে ধ্বংস করার ইচ্ছা করতেন তাহলে তা অবশ্যই করতে পারতেন। আপনি কি আমাদের বিবেকহীন লোকদের কর্মকাÐের দরুন আমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন? আমার সম্প্রদায় যে গো-বাছুর পূজা করলো তা তো কেবল তাদের জন্য একটি পরীক্ষাই ছিলো। যার মাধ্যমে আপনি যাকে চান পথভ্রষ্ট করবেন আর যাকে চান সঠিক পথ দেখাবেন। আপনি তো আমাদের সকল ব্যাপারের অভিভাবক। তাই আপনি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং আমাদের উপর প্রচুর দয়া করুন। কারণ, আপনিই তো সর্বোত্তম ক্ষমাশীল।
156
۞ وَٱكْتُبْ لَنَا فِى هَـٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ إِنَّا هُدْنَآ إِلَيْكَ ۚ قَالَ عَذَابِىٓ أُصِيبُ بِهِۦ مَنْ أَشَآءُ ۖ وَرَحْمَتِى وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍ ۚ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِـَٔايَـٰتِنَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতএব আমাদের জন্য এই দুনিয়ায় ও পরকালে কল্যাণ নির্ধারিত করে দিন, আমরা আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করেছি। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ যাকে ইচ্ছা আমি আমার শাস্তি দিয়ে থাকি, আর আমার করুণা ও দয়া প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যপ্ত করে রয়েছে, সুতরাং আমি তাদের জন্যই কল্যাণ অবধারিত করব যারা পাপাচার হতে বিরত থাকে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান আনে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫৬. আপনি আমাদেরকে তাদেরই দলভুক্ত করুন যাদেরকে আপনি এ দুনিয়াতে বিভিন্ন রকমের নিয়ামত ও সুস্থতা দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং নেক আমলের তাওফীক দিয়েছেন। আর পরকালে আপনার নেককার বান্দাদের দলভুক্ত করুন যাদের জন্য আপনি জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন। আমরা আপনার নিকট তাওবা করছি। আমরা নিজেদের ত্রæটির কথা স্বীকার করে আপনার দিকেই ফিরে এসেছি। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: যারা দুর্ভাগ্যের উপকরণগুলো অবলম্বন করে আমি তাদেরকেই শাস্তি দেবো। আর আমার রহমত দুনিয়ার সব কিছুকেই শামিল করে। এমন কোন সৃষ্টি নেই যার নিকট আল্লাহর রহমত পৌঁছায়নি এবং তাকে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ বেষ্টন করে রাখেনি। তবে যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করে এবং যারা হকদারদেরকে নিজেদের সম্পদের যাকাত দেয় উপরন্তু যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাসী আমি অচিরেই পরকালে আমার রহমতদানে তাদেরকে সৌভাগ্যবান করবো।
157
ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُۥ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَىٰهُمْ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَـٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ ٱلْخَبَـٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَٱلْأَغْلَـٰلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَيْهِمْ ۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ ۙ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা সেই নিরক্ষর রাসূলের অনুসরণ করে চলে যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে লিখিত পায়, যে মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করে, আর সে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ বৈধ করে এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তুকে তাদের প্রতি অবৈধ করে, আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদেরকে মুক্ত করে। সুতরাং তার প্রতি যারা ঈমান রাখে, তাকে সম্মান করে এবং সাহায্য করে ও সহানুভূতি প্রকাশ করে, আর সেই আলোকের অনুসরণ করে চলে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তারাই (ইহকালে ও পরকালে) সাফল্য লাভ করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫৭. যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ করে। তিনি এমন এক আনপড় নবী যিনি না পড়তে পারেন না লিখতে পারেন। বরং তাঁর নিকট কেবল তাঁর প্রতিপালকই ওহী পাঠায়। যাঁর নাম ও বৈশিষ্ট্যাবলী এবং তাঁর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা তারা মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর উপর নাযিলকৃত তাওরাতে এবং ঈসা (আলিাইহিস-সালাম) এর উপর নাযিলকৃত ইঞ্জীলে লিখিত পাবে। তিনি তাদেরকে সুন্দর ও সঠিকেরই আদেশ করেন এবং মানুষের সঠিক বিবেক ও বিশুদ্ধ স্বভাবে যা অসুন্দর ও অসঠিক তা থেকেই নিষেধ করেন। উপরন্তু তিনি তাদের জন্য এমন সব মজাদার খাদ্য, পানীয় ও বিবাহের বিষয়াদি হালাল করেন যাতে কোন ধরনের ক্ষতি নেই। আর সকল ধরনের বিশ্রী ও অরুচিকর জিনিস তাদের উপর হারাম করেন। তেমনিভাবে তাদের উপর থেকে এমন কঠিন বিধানাদি দূর করেন যা মেনে চলতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। যেমন: হত্যাকারীকে হত্যা করার বাধ্যবাধকতা; চাই হত্যাকাÐটি ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃত। অতএব, বনী ইসরাঈল ও অন্যান্যদের মধ্যকার যারা তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে সম্মান ও মর্যাদা দিবে উপরন্তু তাঁর শত্রæ কাফিরদের বিরুদ্ধে তাঁকে সহযোগিতা করবে এবং তাঁর উপর নাযিলকৃত পথপ্রদর্শক আলোকময় কুর‘আনের অনুসরণ করবে তারাই সত্যিকারার্থে সফলকাম। যারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হবে এবং তাদেরকে তাদের ভয়ের বস্তুসমূহ থেকে দূরে রাখা হবে।
158
قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ ۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِىِّ ٱلْأُمِّىِّ ٱلَّذِى يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَـٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বলঃ হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আকাশ ও ভূ-মন্ডলের সার্বভৌম একচ্ছত্র মালিক, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নাবীর প্রতি ঈমান আন। যে আল্লাহ ও তাঁর কালামে বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমরা তারই অনুসরণ কর। আশা করা যায়, তোমরা সরল সঠিক পথের সন্ধান পাবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫৮. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকল আরব ও অনারবদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত একজন রাসূল। আসমান ও জমিনের মালিকানা একমাত্র তাঁরই। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি মৃতকে জীবিত এবং জীবিতকে মৃত করেন। তাই তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনো এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর ঈমান আনো। তিনি এমন এক নবী যিনি লিখতে ও পড়তে জানেন না। তিনি কেবল এমন এক ওহী নিয়ে এসেছেন যা তাঁর প্রতিপালক তাঁর উপরই নাযিল করেন। যিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন এবং তাঁর উপর ও তাঁর পূর্বেকার নবীদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ বিনা পার্থক্যে বিশ্বাস করেন। অতএব, তিনি যা তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন তা তোমরা অনুসরণ করো। যাতে তোমরা নিজেদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে যা লাভজনক তার সন্ধান পেতে পারো।
159
وَمِن قَوْمِ مُوسَىٰٓ أُمَّةٌ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একদল লোক রয়েছে যারা সঠিক ও নির্ভুল পথ প্রদর্শন করে এবং ন্যায় বিচার করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫৯. মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক দলও রয়েছে যারা সত্য দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তারা মানুষকে সত্য পথ দেখায় এবং ইনসাফ ভিত্তিক ফায়সালা করে। কারো উপর কোন ধরনের যুলুম করে না।
160
وَقَطَّعْنَـٰهُمُ ٱثْنَتَىْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًا ۚ وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ إِذِ ٱسْتَسْقَىٰهُ قَوْمُهُۥٓ أَنِ ٱضْرِب بِّعَصَاكَ ٱلْحَجَرَ ۖ فَٱنۢبَجَسَتْ مِنْهُ ٱثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْ ۚ وَظَلَّلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلْغَمَـٰمَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلْمَنَّ وَٱلسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَـٰتِ مَا رَزَقْنَـٰكُمْ ۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি বানী ইসরাঈলকে দ্বাদশ গোত্রে বিভক্ত করেছি। মূসার সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন তার কাছে পানির দাবী জানাল, তখন আমি মূসার কাছে প্রত্যাদেশ পাঠালাম - তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর, ফলে ওটা হতে দ্বাদশ প্রস্রবণ উৎসারিত হল, প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানস্থান জেনে নিল। আর আমি তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া বিস্তার করলাম এবং তাদের জন্য আকাশ হতে ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ খাদ্যরূপী নি‘আমাত অবতীর্ণ করলাম। সুতরাং (আমি বললাম) তোমাদেরকে যা কিছু পবিত্র জীবিকা দান করা হয়েছে তা আহার কর। (কিন্তু ওরা আমার শর্ত উপেক্ষা করে যুলম করল) তারা আমার উপর কোন যুলম করেনি, বরং তারা নিজেদের উপরই যুলম করেছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬০. আমি বনী ইসরাঈলকে বারো বংশে ভাগ করে দিয়েছি। যখন মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় তাঁর কাছে এ আবেদন করলো যে, তিনি যেন আল্লাহর নিকট পানির আবেদন করেন তখন আমি মূসা (আলিাইহিস-সালাম) এর নিকট এ মর্মে ওহী পাঠালাম যে, হে মূসা! তুমি নিজ লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করো। মূসা (আলিাইহিস-সালাম) তাতে আঘাত করলে তাদের বারোটি বংশের সংখ্যানুসারে তা থেকে বরোটি ঝর্ণা বেরিয়ে আসে এবং তাদের প্রত্যেক বংশই তাদের বিশেষ পানি পানের জায়গা চিনে নেয়। তাতে তাদের এক বংশের সাথে অন্য কোন বংশ কোনভাবেই অংশীদার নয়। আর আমি তাদের উপর মেঘের ছায়া দিয়েছি। যা তারা চললে তাদের সাথে চলতে থাকে আর তারা থামলে তাদের সাথে থেমে যায়। উপরন্তু আমি তাদের উপর আমার নিয়ামত মধুর ন্যায় সুমিষ্ট পানি এবং সুম্মানী তথা কোয়েলের ন্যায় ছোট পাখির উন্নত গোস্ত নাযিল করি। আমি তাদেরকে বললাম: আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র রিযিক দিয়েছি তা থেকে খাও। মূলতঃ তারা যুলুম করে ও নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং তার যথাযোগ্য মর্যাদা রক্ষা না করার মাধ্যমে আমার কোন কিছু ক্ষতি করতে পারেনি। বরং তারা নিজেদের অংশ কমিয়ে নিজেদের উপরই যুলুম করেছে। কারণ, তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং তাঁর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারে উপনীত করেছে।
161
وَإِذْ قِيلَ لَهُمُ ٱسْكُنُوا۟ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةَ وَكُلُوا۟ مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ وَقُولُوا۟ حِطَّةٌ وَٱدْخُلُوا۟ ٱلْبَابَ سُجَّدًا نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطِيٓـَٔـٰتِكُمْ ۚ سَنَزِيدُ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন আমি তাদেরকে বলেছিলামঃ এই (বাইতুল মুকাদ্দাস ও তৎসংশ্লিষ্ট) জনপদে বসবাস কর এবং যা ইচ্ছা আহার কর, আর তোমরা বলঃ (হে রাব্ব!) ক্ষমা চাই, আর দ্বারদেশ দিয়ে নত শিরে প্রবেশ কর; আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎ কর্মশীল লোকদের জন্য আমার দান বৃদ্ধি করব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬১. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে বললেন: তোমরা বাইতুল-মাক্বদিসে প্রবেশ করো এবং সে এলাকার যে কোন জায়গা থেকে যে কোন সময় ফল-ফলাদি ভক্ষণ করো আর বলো: “হিত্তাতুন” অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন। সেই সাথে তোমরা গেট দিয়ে ঢুকার সময় নিজেদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়ী হয়ে রুকু’ অবস্থায় প্রবেশ করো। যদি তোমরা এমন করো তাহলে আমি তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মশীলদেরকে অচিরেই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বাড়িয়ে দেবো।
162
فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ مِنْهُمْ قَوْلًا غَيْرَ ٱلَّذِى قِيلَ لَهُمْ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِجْزًا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু তাদের মধ্যে যারা যালিম ও সীমা লংঘনকারী ছিল, তারা সেই কথা পরিবর্তন করে ফেললো যা তাদেরকে বলতে বলা হয়েছিল, সুতরাং তাদের সীমা লংঘনের কারণে আমি আসমান হতে তাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬২. তখন তাদের যালিমরা নির্দেশিত কথা পরিবর্তন করে বললো: “হিনতাতুন” অর্থাৎ যবের দানা; তারা ক্ষমা প্রার্থনার আদেশের পরিবর্তে যবের দানা চাইলো। তেমনিভাবে তারা আদিষ্ট কাজেরও পরিবর্তন ঘটালো। তারা আল্লাহর সামনে নত হয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে ঢুকার পরিবর্তে জমিনে পাছা ঠেকিয়ে প্রবেশ করলো। ফলে তাদের অন্যায়ের দরুন আমি তাদের উপর আকাশ থেকে শাস্তি পাঠিয়েছি।
163
وَسْـَٔلْهُمْ عَنِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلَّتِى كَانَتْ حَاضِرَةَ ٱلْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِى ٱلسَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ ۙ لَا تَأْتِيهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তাদেরকে সেই জনপদের অবস্থাও জিজ্ঞেস কর যা সমুদ্রের তীরে অবস্থিত ছিল। যখন তারা শনিবারের আদেশ লংঘন করেছিল। শনিবার উদযাপনের দিন মাছ পানিতে ভেসে তাদের নিকট আসত, কিন্তু যেদিন তারা শনিবার উদযাপন করতনা, সেদিন ওগুলি তাদের কাছে আসতনা, এভাবে আমি তাদের নাফরমানীর কারণে তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬৩. হে রাসূল! আপনি ইহুদিদেরকে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি আল্লাহর শাস্তির কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য তাদেরকে সাগরে মাছ ধরা সংশ্লিষ্ট ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করুন। যখন তারা নিষেধাজ্ঞার পরও শনিবারে মাছ শিকার করে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করতো। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এভাবে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন যে, শনিবারেই মাছগুলো সাগর বুকে ভেসে তাদের নিকট প্রকাশ্যে আসতো। অন্যান্য দিন মাছগুলো এভাবে আসতো না। তারা আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার দরুন আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। কিন্তু তারা মাছ শিকারের কৌশল আঁটলো। তারা সেদিন জাল পাতলো এবং গর্ত খনন করলো। ফলে শনিবারে মাছগুলো সেখানে পড়তো। আর রবিবারে তারা সেগুলো ধরে খেতো।
164
وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا ۙ ٱللَّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖ قَالُوا۟ مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তাদের একদল লোক অপর দলের নিকট বলেছিলঃ ঐ জাতিকে তোমরা কেন উপদেশ দিচ্ছ যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন অথবা কঠিন শাস্তি দিবেন? তারা উত্তরে বললঃ তোমাদের রবের নিকট দোষমুক্তির জন্য এবং এই আশা করছি যে, হয়তো তারা তাঁকে ভয় করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬৪. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন তাদেরই এক দল তাদেরকে এ অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করলো এবং এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করলো তখন অন্য আরেকটি দল তাদেরকে বললো: কেন তোমরা এমন একটি দলকে উপদেশ দিচ্ছো যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার দরুন এ দুনিয়াতেই ধ্বংস করে দিবেন অথবা কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবেন? তখন উপদেশদাতারা বললো: আমরা তাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করে যেন আমরা আল্লাহর নিকট ওজর পেশ করতে পারি। যাতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সে নির্দেশ পরিত্যাগ করার দরুন শাস্তি না দেন। আর হয়তো বা তারা এ উপদেশ কর্তৃক লাভবান হয়ে নিজেরাই পাপের কাজ থেকে সরে আসে।
165
فَلَمَّا نَسُوا۟ مَا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦٓ أَنجَيْنَا ٱلَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذْنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ بِعَذَابٍۭ بَـِٔيسٍۭ بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয় তা যখন তারা বিস্মৃত হয় তখন যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করত তাদেরকে আমি উদ্ধার করি, আর যালিমদেরকে তাদের অসৎ কর্মের কারণে কঠোর শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬৫. যখন পাপীরা উপদেশদাতাদের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো উপরন্তু তারা পাপ থেকে ফিরেও আসলো না তখন আমি যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেছে তাদেরকে আমার শাস্তি থেকে মুক্তি দিলাম। আর যারা শনিবারে মাছ শিকার করে আল্লাহর সাথে হঠকারিতা দেখিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করেছে আমি তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হওয়া এবং পাপে লিপ্ত থাকার দরুন কঠিন শাস্তি দিয়েছি।
166
فَلَمَّا عَتَوْا۟ عَن مَّا نُهُوا۟ عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا۟ قِرَدَةً خَـٰسِـِٔينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখন তারা বেপরোয়াভাবে নিষিদ্ধ কাজগুলি করতে থাকল তখন আমি বললামঃ তোমরা ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬৬. যখন তারা অহঙ্কার ও হঠকারিতাবশতঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় সীমালঙ্ঘন করলো এবং তারা উপদেশও প্রত্যাখ্যান করলো তখন আমি তাদেরকে বললাম: হে পাপীরা! তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও। তখন তারা আমার ইচ্ছা মাফিক তাই হয়ে গেলো। বস্তুতঃ আমি কোন কিছুর ইচ্ছা করলে তাকে আদেশ করে বলি: হয়ে যাও, তখন তা হয়ে যায়।
167
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ ۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ ٱلْعِقَابِ ۖ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমার রাব্ব ঘোষণা করলেন যে, তিনি তাদের (ইয়াহুদীদের) উপর কিয়ামাত পর্যন্ত এমন সব লোককে শক্তিশালী করে প্রেরণ করতে থাকবেন যারা তাদেরকে কঠিনতর শাস্তি দিতে থাকবে। নিঃসন্দেহে তোমার রাব্ব শাস্তি দানে ক্ষিপ্র হস্ত, আর নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহশীল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬৭. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা সন্দেহাতীত ও পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে বললেন: আমি অবশ্যই ইহুদিদের উপর এমন লোককে ক্ষমতা দেবো যে তাদেরকে এখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবে। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক পাপীর দ্রæত শাস্তিদাতা। এমনকি তিনি কখনো কখনো তাকে দুনিয়াতেই দ্রæত শাস্তি দিয়ে থাকেন। তবে তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যকার তাওবাকারীর পাপসমূহের জন্য অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
168
وَقَطَّعْنَـٰهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ أُمَمًا ۖ مِّنْهُمُ ٱلصَّـٰلِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَبَلَوْنَـٰهُم بِٱلْحَسَنَـٰتِ وَٱلسَّيِّـَٔاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তাদেরকে বিভিন্ন দলে দুনিয়ায় বিস্তৃত করেছি, তাদের কতক লোক সদাচারী, আর কিছু লোক ভিন্নতর। আর আমি ভাল ও মন্দের মধ্যে নিপতিত করে তাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি যাতে তারা আমার পথে ফিরে আসে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬৮. আমি তাদেরকে এ পৃথিবীর বুকে বিক্ষিপ্ত ও দলে-উপদলে বিভক্ত করে দিলাম; অথচ তারা ইতিপূর্বে একত্রে ছিলো। তাদের মধ্যকার কিছু তো রয়েছে নেককার যারা আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের অধিকারসমূহ রক্ষা করে। আর কিছু রয়েছে মধ্যমপন্থী। বাকী অন্যরা গুনাহের মাধ্যমে নিজেদের উপরই অত্যাচারী হয়েছে। মূলতঃ আমি তাদেরকে উদারতা ও কঠোরতা দিয়ে পরীক্ষা করেছি যাতে তারা কৃত অপরাধ থেকে ফিরে আসে।
169
فَخَلَفَ مِنۢ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَرِثُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـٰذَا ٱلْأَدْنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهُۥ يَأْخُذُوهُ ۚ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَـٰقُ ٱلْكِتَـٰبِ أَن لَّا يَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ وَدَرَسُوا۟ مَا فِيهِ ۗ وَٱلدَّارُ ٱلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তাদের অযোগ্য উত্তরসুরীরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় এবং তারা কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হয়। কিন্তু তারা এই নিকৃষ্ট দুনিয়ার স্বার্থাবলী করায়ত্ত্ব করে আর বলেঃ আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে। বস্তুতঃ ওর অনুরূপ সামগ্রী আবার তাদের নিকট এলে ওটাও তারা গ্রহণ করে। তাদের নিকট হতে কি কিতাবের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া কিছুই বলবেনা? আর কিতাবে যা রয়েছে তাতো তারা অধ্যয়নও করে। মুত্তাকী ও আল্লাহভীরু লোকদের জন্য পরকালের সামগ্রী, তোমরা কি এতটুকু কথাও অনুধাবণ করতে পারনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬৯. এদের পর একটি নিকৃষ্ট দল তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে যারা তাদের পূর্বসূরী থেকে তাওরাত গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা তা পড়ে ঠিকই, তবে তার উপর আমল করে না। তারা আল্লাহর কিতাবকে বিকৃত করা এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বাইরে বিচার-ফায়সালা করার জন্য ঘুষ হিসেবে স্বল্পমূল্য তথা দুনিয়ার কিছু সম্পদ ও ফায়েদা গ্রহণ করে থাকে। তাদের আশা এই যে, আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা কি তাদের কাছ থেকে এ ওয়াদা-অঙ্গীকার নেননি যে, তারা যেন কোন ধরনের বিকৃতি ও পরিবর্তন ছাড়া আল্লাহর ব্যাপারে শুধু সত্য কথাই বলে?! তাদের কিতাবের উপর আমল পরিত্যাগ করা কিন্তু মূর্খতার কারণে নয়। বরং তারা তা জেনেশুনেই করছে। কারণ, তারা তা পড়েছে ও জেনেছে। তাই তাদের পাপ হলো খুবই কঠিন। যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করে চলে তাদের জন্য দুনিয়ার নশ্বর কিছু সম্পদের চেয়ে পরকাল ও পরকালের স্থায়ী নিয়ামত অনেক উত্তম। যারা দুনিয়ার এ সামান্য সম্পদ গ্রহণ করে তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তা‘আলা পরকালে আল্লাহভীরুদের জন্য যা তৈরি করে রেখেছেন তা অনেক উত্তম ও চিরস্থায়ী?!
170
وَٱلَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِٱلْكِتَـٰبِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُصْلِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে; আমিতো সৎ কর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করিনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭০. যারা আল্লাহর কিতাবকে শক্ত হাতে ধারণ করে এবং তাতে থাকা বিধানসমূহের উপর আমল করে উপরন্তু সালাতের সময়, শর্ত, ওয়াজিব ও সুনানের প্রতি খেয়াল রেখে তা কায়েম করে অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলের প্রতিদান দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কখনো কোন নেককারের সাওয়াব নষ্ট করেন না।
171
۞ وَإِذْ نَتَقْنَا ٱلْجَبَلَ فَوْقَهُمْ كَأَنَّهُۥ ظُلَّةٌ وَظَنُّوٓا۟ أَنَّهُۥ وَاقِعٌۢ بِهِمْ خُذُوا۟ مَآ ءَاتَيْنَـٰكُم بِقُوَّةٍ وَٱذْكُرُوا۟ مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন আমি বানী ইসরাঈলের উপর পাহাড়কে স্থাপন করি, ওটা ছিল কোন একটি ছায়ার ন্যায়, তারা তখন মনে করেছিল যে, ওটা তাদের উপর পড়ে যাবে। তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা দৃঢ়ভাবে শক্ত হাতে ধারণ কর এবং ওতে যা রয়েছে তা স্মরণ রেখ। আশা করা যায় যে, তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭১. হে মুহাম্মাদ! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন বনী ইসরাঈলরা তাওরাতের বিধান মানতে অস্বীকৃতি জানালো এবং আমি পাহাড়কে নিজ জায়গা থেকে সরিয়ে তাদের মাথার উপর তুলে ধরলাম তখন পাহাড়টি তাদের মাথার উপর এমনভাবে থাকলো যে, যেন কোন মেঘ তাদের মাথার উপর ছায়া দিচ্ছে। তারা তখন এ কথাটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছে যে, নিশ্চয়ই পাহাড়টি তাদের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। তখন তাদেরকে বলা হলো: আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা শক্ত করে গুরুত্ব ও দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাতে তোমাদের জন্য যে বিধানাবলী প্রদান করেছেন তা স্মরণ করো; কখনো ভুলে যেও না। আশা করা যায়, তোমরা এমন করতে পারলে অবশ্যই আল্লাহভীরু বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
172
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِىٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَآ ۛ أَن تَقُولُوا۟ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَـٰذَا غَـٰفِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তোমার রাব্ব বানী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের রাব্ব (প্রভু) নই? তারা সমস্বরে উত্তর দিলঃ ‘হ্যাঁ! আমরা সাক্ষী থাকলাম।’ (এটা এ জন্য যে) যাতে তোমরা কিয়ামাত দিবসে বলতে না পার, ‘‘আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম।’’
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭২. হে মুহাম্মাদ! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক আদমের পিঠ থেকে তাঁর সন্তানগুলোকে বের করে আল্লাহ প্রদত্ত প্রকৃতি ও স্বভাবের ভিত্তিতে তাদের থেকে ¯্রষ্টা ও প্রতিপালক হিসেবে তাঁর প্রতি ঈমানের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বললেন: আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তখন তারা সবাই বললো: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক। এ স্বীকৃতি আদায়ের উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, যেন তোমরা কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপর ঈমান আনার প্রমাণকে অস্বীকার করতে না পারো এবং এ কথাও বলতে না পারো যে, এ ব্যাপারে আমাদের কোন জ্ঞানই ছিলো না।
173
أَوْ تَقُولُوٓا۟ إِنَّمَآ أَشْرَكَ ءَابَآؤُنَا مِن قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّنۢ بَعْدِهِمْ ۖ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلْمُبْطِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অথবা তোমরা যেন কিয়ামাত দিবসে এ কথা বলতে না পার - আমাদের পূর্ব-পুরুষরাইতো আমাদের পূর্বে শির্ক করেছিল, আমরা ছিলাম (শুধুমাত্র) তাদের পরবর্তী বংশধর। সুতরাং আপনি কি আমাদেরকে সেই ভ্রান্ত ও বাতিলদের কৃতকর্মের দরুণ ধ্বংস করবেন?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭৩. তেমনিভাবে তোমরা যেন এ কথাও বলতে না পারো যে, আমাদের বাপ-দাদারাই কেবল অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আল্লাহর সাথে শিরক করেছে আর আমরা তো আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যে শিরকের উপর পেয়েছি তারই অন্ধ অনুসরণ করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি কি আমাদের বাপ-দাদারা যে শিরক করে তাদের আমলগুলো বাতিল করে দিয়েছে তাদের এ কর্মের দরুন আমাদেরকে পাকড়াও করে শাস্তি দিবেন? কারণ, আমাদের মূর্খতা ও আমাদের বাপ-দাদাদের অন্ধ অনুসরণের দরুন আমরা কোনভাবেই পাপী নই।
174
وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এভাবেই আমি নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি যাতে তারা ফিরে আসে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭৪. যেমনিভাবে আমি মিথ্যারোপকারী জাতিগুলোর পরিণামের ব্যাপারে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি তেমনিভাবে আমি এদের পরিণামের ব্যাপারেও আমার আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবো। যাতে তারা শিরক থেকে আল্লাহর তাওহীদ ও শিরকমুক্ত ইবাদাতের দিকে ফিরে আসে। যার অঙ্গীকার তারা ইতিপূর্বেই দিয়ে এসেছে।
175
وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱلَّذِىٓ ءَاتَيْنَـٰهُ ءَايَـٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ ٱلشَّيْطَـٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلْغَاوِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি এদেরকে সেই ব্যক্তির বৃত্তান্ত শুনিয়ে দাও, যাকে আমি নিদর্শন দান করেছিলাম, কিন্তু সে উহা বর্জন করে। ফলে শাইতান তার পিছনে লেগে যায়, আর সে পথভ্রষ্টদের মধ্যে শামিল হয়ে যায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭৫. হে রাসূল! আপনি বনী ইসরাঈলকে তাদের সেই ব্যক্তির খবর পড়ে শুনান যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছি অতঃপর সে তা জেনেছে ও বুঝেছে। তবে সে সেগুলোর উপর আমল করেনি। বরং সে তা পরিত্যাগ করেছে এবং তা থেকে সে বেরিয়ে এসেছে। অতঃপর শয়তান তার পিছু নিয়েছে এবং তার সঙ্গী হয়েছে। ফলে সে হিদায়েত ও নাজাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর ধ্বংস ও পথভ্রষ্ট হয়েছে।
176
وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَـٰهُ بِهَا وَلَـٰكِنَّهُۥٓ أَخْلَدَ إِلَى ٱلْأَرْضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ ۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ ٱلْقَوْمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا ۚ فَٱقْصُصِ ٱلْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি ইচ্ছা করলে তাকে এই আয়াতসমূহের সাহায্যে উন্নত করতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ে এবং স্বীয় কামনা বাসনার (প্রবৃত্তির) অনুসরণ করতে থাকে। তার উদাহরণ একটি কুকুরের ন্যায়, ওকে যদি তুমি কষ্ট দাও তাহলে জিহবা বের করে হাঁপায়, আবার কষ্ট না দিলেও জিহবা বের করে হাঁপাতে থাকে। যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, এই উদাহরণ হল সেই সম্প্রদায়ের জন্য। তুমি কাহিনী বর্ণনা করে শোনাতে থাক, হয়তো তারা এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭৬. আমি চাইলে এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে অবশ্যই তাকে উচ্চাসনে আসীন করতাম তথা তাকে এ আয়াতগুলোর উপর আমল করার তাওফীক দিতাম। ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে উচ্চ সম্মানের অধিকারী হতো। কিন্তু সে তো যা কিছু তাকে লাঞ্ছনার দিকে নিয়ে যাবে তাই চয়ন করেছে তথা সে দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের দিকে ধাবিত হয়েছে এবং সে তার কুপ্রবৃত্তি যা চেয়েছে সে বাতিলেরই অনুসরণ করেছে। সুতরাং দুনিয়ার কঠিন লোভের ক্ষেত্রে তার দৃষ্টান্ত হলো সেই কুকুরের ন্যায় যে সর্বাবস্থায় জিভ বের করে হাঁপাতে থাকে। সে বসে থাকলেও জিভ বের করে হাঁপায় আর তাকে তাড়ালেও সে জিভ বের করে হাঁপায়। উক্ত দৃষ্টান্ত সে জাতির জন্য যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি মিথ্যারোপ করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাই হে রাসূল! আপনি ঘটনাগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করুন যাতে তারা এগুলোকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং মিথ্যারোপ ও ভ্রষ্টতা থেকে ফিরে আসে।
177
سَآءَ مَثَلًا ٱلْقَوْمُ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কতই না মন্দ উদাহরণ সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করতে থাকে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭৭. তারা কতোইনা নিকৃষ্ট যারা আমার দলীল ও প্রমাণগুলোকে মিথ্যারোপ করেছে এবং সেগুলোকে আদৌ বিশ্বাস করেনি। বস্তুতঃ তারা এরই মাধ্যমে নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে নিজেদের উপরই নিজেরা যুলুম করেছে।
178
مَن يَهْدِ ٱللَّهُ فَهُوَ ٱلْمُهْتَدِى ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ যাকে পথ দেখান সে’ই পথ প্রাপ্ত হয়, আর যাকে তিনি পথ প্রদর্শন হতে বঞ্চিত করেন সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭৮. যাকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সঠিক পথের উপর চলার তাওফীক দিয়েছেন সেই হলো সত্যিকারার্থে হিদায়েতপ্রাপ্ত। আর যারা সত্যিকারার্থে নিজেরাই নিজেদেরকে অধিকার বঞ্চিত করেছে তিনি তাদেরকে সত্য পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিবেন। তারা কিয়ামতের দিন নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারকে ক্ষতির সম্মুখীন করবে। মূলতঃ সেটিই হবে সুস্পষ্ট ও অসামান্য ক্ষতিসাধন।
179
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ ءَاذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَآ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَـٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْغَـٰفِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় রয়েছে, কিন্তু তারা তদ্বারা উপলব্ধি করেনা; তাদের চক্ষু রয়েছে, কিন্তু তারা তদ্বারা দেখেনা। তাদের কর্ণ রয়েছে, কিন্তু তদ্বারা তারা শোনেনা। তারাই হল পশুর ন্যায়, বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত। তারাই হল গাফিল বা উদাসীন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭৯. নিশ্চয়ই আমি জাহান্নামের জন্য বহু মানুষ ও জিনকে তৈরি করেছি। কারণ, আমি জানি তারা অচিরেই জাহান্নামীদের কর্মই করবে। তাদের অন্তর দিয়ে তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতি অনুধাবন করতে পারে না। তাদের চোখ দিয়ে তারা নিজেদের মাঝে ও দুনিয়ার আনাচে-কানাচে থাকা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। তাদের কান দিয়ে তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার কোন সুযোগ পায় না। এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরা মূলতঃ জ্ঞান না থাকার দৃষ্টিকোণে চতুষ্পাদ জন্তুর ন্যায়। বরং তারা পথভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে চতুষ্পাদ জন্তু থেকেও অনেক দূরে। বস্তুতঃ তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনা থেকে একেবারেই উদাসীন।
180
وَلِلَّهِ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ فَٱدْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا۟ ٱلَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِىٓ أَسْمَـٰٓئِهِۦ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আল্লাহর জন্য সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, সুতরাং তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে, আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে, সত্ত্বরই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮০. আল্লাহর অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে যেগুলো তাঁর মহত্ত¡ ও পূর্ণতা বুঝায়। তাই তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট উসিলা ধরতে পারো এবং তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা করো। পক্ষান্তরে যারা এ নামগুলোর ক্ষেত্রে এগুলোকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য সাব্যস্ত করে কিংবা তাঁর থেকে সেগুলোকে বাদ দিয়ে অথবা সেগুলোর অর্থ বিকৃত করে কিংবা এগুলোর ব্যাপারে অন্যকে তাঁর সাথে তুলনা করে সত্য থেকে দূরে সরতে চায় তাদেরকে তোমরা পরিত্যাগ করো। যারা এগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ সত্যপন্থা অবলম্বন করে না তাদেরকে আমি অচিরেই তাদের কর্মকাÐের দরুন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবো।
181
وَمِمَّنْ خَلَقْنَآ أُمَّةٌ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে এমন একটি দলও রয়েছে যারা সত্য পথের দা‘ওয়াত দেয় এবং ন্যায় বিচার করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮১. আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের মাঝে এমন একটি দল আছে যারা নিজেরাই সত্যের প্রতি হিদায়েতপ্রাপ্ত এবং তারা অন্যদেরকে সত্যের প্রতি দা‘ওয়াত দিলে তারাও হিদায়েতপ্রাপ্ত হয়। উপরন্তু তারা সত্য ও ইনসাফের ভিত্তিতে ফায়সালা করে। তারা কখনো অন্যের উপর যুলুম করে না।
182
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আমি তাদের অজ্ঞাতে তাদেরকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮২. যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনে না বরং সেগুলোকে অস্বীকার করে আমি অচিরেই তাদের জন্য রিযিকের দরজাগুলো খুলে দেবো। এটি তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য নয়। বরং তাদেরকে আরেকটু অপরাধে আগ্রহী করার জন্য। যাতে তারা ভ্রষ্টতায় আরো অগ্রসর হয়। অতঃপর আমার শাস্তি হঠাৎ তাদের নিকট পৌঁছে যাবে।
183
وَأُمْلِى لَهُمْ ۚ إِنَّ كَيْدِى مَتِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আমার কৌশল অতি শক্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮৩. আমি তাদের থেকে কিছু কালের জন্য আমার শাস্তি সরিয়ে নেই যাতে তারা এ ধারণা করে যে, তাদেরকে আর শাস্তি দেয়া হবে না। তাই তারা মিথ্যারোপ ও কুফরিতে অটল থাকে। তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়া হবে। নিশ্চয়ই আমার কৌশল অতি শক্তিশালী। আমি তাদের প্রতি দয়া দেখাই; অথচ তা দিয়ে তাদের লাঞ্ছনার দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
184
أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا۟ ۗ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা কি এটা চিন্তা করেনা যে, তাদের সঙ্গী পাগল নয়? সে নিছক একজন সুস্পষ্ট ভয় প্রদর্শনকারী!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮৪. যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যা মনে করে তারা কি নিজেদের মেধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটু চিন্তা করে দেখে না? যাতে তাদের নিকট এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাগল নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা নিজ আযাব থেকে সুস্পষ্ট ভীতি প্রদর্শনের জন্য তাঁকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন।
185
أَوَلَمْ يَنظُرُوا۟ فِى مَلَكُوتِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَىْءٍ وَأَنْ عَسَىٰٓ أَن يَكُونَ قَدِ ٱقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ ۖ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَهُۥ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা কি আল্লাহর সৃষ্টি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোন গভীর চিন্তা করেনা? এবং তাদের জীবনে নির্দিষ্ট মেয়াদটি পূর্ণ হওয়ার সময়টি হয়তো বা নিকটে এসে পড়েছে, তারা কি এটাও চিন্তা করেনা? এরপর তারা আর কোন কথায় ঈমান আনবে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮৫. তারা কি আসমান ও জমিনে অবস্থিত আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শনাবলীর দিকে দৃষ্টি দেয় না? তারা কি এতদুভয়ের মাঝে যে পশু, উদ্ভিদ ইত্যাদি আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন সেগুলো দেখে না? তারা কি নিজেদের বয়সের দিকেও খেয়াল করে না, হয়তো বা তাদের বয়সের পরিসমাপ্তি অতি সন্নিকটে। তাই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা তাওবা করে নিতো। তারা যদি এ কুর‘আন এবং তাতে যে জান্নাতের ওয়াদা ও জাহান্নামের হুমকির বাণী রয়েছে তার উপর ঈমান না আনে তাহলে তারা আর কোন কিতাবের উপর ঈমান আনবে?!
186
مَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَلَا هَادِىَ لَهُۥ ۚ وَيَذَرُهُمْ فِى طُغْيَـٰنِهِمْ يَعْمَهُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যাদেরকে আল্লাহ বিপথগামী করেন, তাদের কোন পথ প্রদর্শক নেই, আর আল্লাহ তাদেরকে তাদেরই বিভ্রান্তির মধ্যে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮৬. যাকে সত্যের পথ দেখানোর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা তার অসহযোগিতা করেন এবং সঠিক পথ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেন তার জন্য আর কোন হিদায়েতকারী নেই যে তাকে হিদায়েত দিবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভ্রষ্টতা ও কুফরির মাঝে অস্থিরাবস্থায় ছেড়ে দেন। ফলে তারা সঠিক পথ খোঁজে পায় না।
187
يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَىٰهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّى ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَآ إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْـَٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِىٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিয়ামাত কখন সংঘটিত হবে? তুমি বলে দাওঃ এ বিষয়ে আমার রাব্বই একমাত্র জ্ঞানের অধিকারী, শুধু তিনিই ওটা ওর নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করবেন, তা হবে আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এক ভয়ংকর ঘটনা। তোমাদের উপর ওটা আকস্মিকভাবেই আসবে। তুমি যেন এ বিষয় সবিশেষ অবগত, এটা ভেবে তারা তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলে দাওঃ এ সম্পর্কীয় জ্ঞান একমাত্র আমার রবেরই রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই এ কথা বুঝেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮৭. এ গাদ্দার ও মিথ্যারোপকারীরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে: কিয়ামত কখন হবে এবং তার সঠিক সময় কোন্টি? আপনি বলুন: কিয়ামতের জ্ঞান না আমার কাছে আছে, না অন্যের কাছে। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকটই তার জ্ঞান আছে। তার নির্দিষ্ট সময়েই কেবল আল্লাহ তা‘আলা তা প্রকাশ করবেন। তার প্রকাশের ব্যাপারটি আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের নিকট গোপনীয়। তা হঠাৎ করেই তোমাদের নিকট চলে আসবে। তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। মনে হচ্ছে যেন আপনি তা জানার ব্যাপারে খুবই উৎসাহী। অথচ তারা জানে না যে, আপনি সে সম্পর্কে কোন প্রশ্নই করছেন না। কারণ, আপনি নিজ প্রতিপালক সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানই রাখেন। হে মুহাম্মাদ! আপনি তাদেরকে বলুন: কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকটেই। অথচ অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
188
قُل لَّآ أَمْلِكُ لِنَفْسِى نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ ٱلْغَيْبَ لَٱسْتَكْثَرْتُ مِنَ ٱلْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ ۚ إِنْ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ বিষয়ে আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্য তত্ত্ব ও খবর জানতাম তাহলে আমি রবের কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতনা, আমিতো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদবাহী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮৮. হে মুহাম্মাদ! আপনি বলুন: আমি আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া নিজের কোন লাভও করতে পারি না। আবার নিজেকে কোন ক্ষতি থেকে রক্ষাও করতে পারি না। এ সবই কেবলমাত্র আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। আর আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যা জানান তাই আমি জানি। অতএব, আমি কোন গায়েব জানি না। যদি আমি গায়েব জানতাম তাহলে আমি শুধু সে মাধ্যমগুলোই গ্রহণ করতাম যা আমার উপকার করবে এবং আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। কারণ, তখন আমি প্রত্যেক ঘটনা সম্পর্কে তা ঘটার পূর্বেই জানতাম এবং তার পরিণতি কি হবে তাও জানতাম। বরং আমি কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন প্রেরিত রাসূল মাত্র। যারা আমাকে রাসূল হিসেবে মানে এবং আমার আনীত বিধানকে বিশ্বাস করে আমি তাদেরকে তাঁর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভয় দেখাই এবং তাঁর মহান প্রতিদানের সুসংবাদ দেই।
189
۞ هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَٰحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ۖ فَلَمَّا تَغَشَّىٰهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِۦ ۖ فَلَمَّآ أَثْقَلَت دَّعَوَا ٱللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ ءَاتَيْتَنَا صَـٰلِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّـٰكِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই ব্যক্তি হতেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যেন সে তার নিকট থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। অতঃপর যখন সে তার সাথে মিলনে প্রবৃত্ত হয় তখন সেই মহিলাটি এক গোপন ও লঘু গর্ভ ধারণ করে, আর ওটা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকে। যখন তার গর্ভ গুরুভার হয় তখন তারা উভয়েই তাদের রবের কাছে প্রার্থনা করেঃ আপনি যদি আমাদেরকে সৎ সন্তান দান করেন তাহলে আমরা আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮৯. হে পুরুষ ও মহিলাগণ! তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি তথা আদম (আলিাইহিস-সালাম) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং আদম (আলিাইহিস-সালাম) থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে তিনি সৃষ্টি করেছেন আদমের পাঁজর থেকে যাতে তিনি তাঁর কাছে গিয়ে আরাম ও মানসিক প্রশান্তি পান। যখন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মিলন করলো তখন সে হাল্কাভাবে গর্ভ ধারণ করলো। যা সে সহজে বুঝতে পারছিলো না। কারণ, তা ছিলো প্রাথমিক পর্যায়ে। এ গর্ভাবস্থায় সে তার প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে যাচ্ছিলো। তখনো গর্ভটিকে ভারী মনে হয়নি। যখন গর্ভ বড় হয়ে শরীর ভারী হয়ে গেলো তখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে তাদের প্রতিপালকের নিকট এ বলে ফরিয়াদ করলো যে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি যদি আমাদেরকে সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণ অবয়বের সন্তান দেন তাহলে আমরা অবশ্যই আপনার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করবো।
190
فَلَمَّآ ءَاتَىٰهُمَا صَـٰلِحًا جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَآءَ فِيمَآ ءَاتَىٰهُمَا ۚ فَتَعَـٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে সৎ ও সুস্থ সন্তান দান করেন তখন তারা আল্লাহর দেয়া এই দানে অংশী স্থাপন করে, কিন্তু তারা যাকে অংশী করে আল্লাহ তার অনেক উর্ধ্বে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯০. যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবুল করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের চাওয়া অনুযায়ী একটি নেক সন্তান দিয়ে দিলেন তখন তারা উভয়ে আল্লাহর দানে তাঁর শরীক বানিয়ে নিলো। তারা নিজেদের সন্তানকে অন্যের গোলাম বানিয়ে তার নাম আব্দুল-হারিস তথা হারিসের বান্দা রাখলো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সকল শরীক থেকে পূত-পবিত্র। তিনি একক প্রতিপালক ও মা’বূদ।
191
أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْـًٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা কি এমন বস্তুকে (আল্লাহর সাথে) অংশী করে যারা কোন বস্তুই সৃষ্টি করেনা, বরং তারা নিজেরাই (আল্লাহর দ্বারা) সৃষ্ট?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯১. তারা কি উপাসনার ক্ষেত্রে এ মূর্তিগুলো এবং অন্যান্য মূর্তিগুলোকে আল্লাহর শরীক বানাচ্ছে? অথচ তারা জানে, এগুলো কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। তাহলে তারা ¯্রষ্টা হিসেবে ইবাদাতের উপযুক্ত হতো। বরং এগুলো নিজেরাই আল্লাহর সৃষ্টি। অতএব, তারা এগুলোকে কিভাবে আল্লাহর শরীক বানিয়ে নিচ্ছে?!
192
وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًا وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা যেমন তাদের কোন সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেনা, তেমনি নিজেরাও কোন সাহায্য করতে পারেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯২. এ মূর্তিগুলো তাদের উপাসনাকারীদের জন্য কোন ধরনের সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না। না তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কোন ধরনের ক্ষমতা রাখে। অতএব, তারা কিভাবে এগুলোর পূজা করে?!
193
وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى ٱلْهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمْ ۚ سَوَآءٌ عَلَيْكُمْ أَدَعَوْتُمُوهُمْ أَمْ أَنتُمْ صَـٰمِتُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা যদি ওদেরকে সৎ পথে ডাক তাহলে তারা তোমাদের অনুসরণ করবেনা, তাদেরকে ডাকা অথবা চুপ করে থাকা উভয়ই তোমাদের পক্ষে সমান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯৩. হে মুশরিকরা! তোমরা যে মূর্তিগুলোকে আল্লাহ ছাড়া নিজেদের মা’বূদ বানিয়ে নিলে তাদেরকে যদি ডাকো তাহলে তারা না তোমাদের ডাকে সাড়া দিবে, না তোমাদের অনুসরণ করবে। তাদেরকে ডাকা বা না ডাকা উভয়টিই সমান। কারণ, সেগুলো মূলতঃ জড় পদার্থ। তারা কিছুই বুঝে না, শুনে না ও বলতে পারে না।
194
إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ۖ فَٱدْعُوهُمْ فَلْيَسْتَجِيبُوا۟ لَكُمْ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকেই ডাক, তারাতো তোমাদেরই মত বান্দা। সুতরাং যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে তাদেরকে উপাস্য হিসাবে ডাকতে থাক, দেখ তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় কি না!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯৪. হে মুশরিকরা! তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করো তারা তো আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তাঁরই মালিকানাধীন। তারা এ ব্যাপারে তোমাদেরই মতো। বরং তোমরা অবস্থাগতভাবে তাদের চেয়ে আরো উন্নত। কারণ, তোমরা জীবিত; তোমরা কথা বলতে, হাঁটতে, দেখতে ও শুনতে পারো। তোমাদের মূর্তিগুলো তো সে রকম নয়। বস্তুতঃ তোমরা যদি তাদের উপাসনায় নিজেদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে তোমরা তাদেরকে ডেকেই দেখো, তারা তোমাদের ডাকের উত্তর দেয় কি না?
195
أَلَهُمْ أَرْجُلٌ يَمْشُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ أَيْدٍ يَبْطِشُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ أَعْيُنٌ يُبْصِرُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ ءَاذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا ۗ قُلِ ٱدْعُوا۟ شُرَكَآءَكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের কি পা আছে যা দ্বারা চলছে? তাদের কি হাত আছে যদ্বারা কোন কিছু ধরে থাকে অথবা চক্ষু আছে যা দ্বারা দেখতে পায়? তাদের কি কর্ণ আছে যা দ্বারা শুনে থাকে? তুমি বলঃ আল্লাহর সাথে তোমরা যাদেরকে অংশী করছ তাদেরকে ডাক, তারপর (সকলে একত্রিত হয়ে) আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে থাক, আমাকে আদৌ কোন অবকাশ দিওনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯৫. যে মূর্তিগুলোকে তোমরা নিজেদের ইলাহ বানিয়ে নিলে তাদের কি এমন কোন পা আছে যা দিয়ে হেঁটে গিয়ে তোমাদের কোন প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করতে পারে? তাদের কি এমন কোন হাত আছে যার শক্তি দিয়ে তোমাদের পক্ষ থেকে কোন বিপদ প্রতিহত করতে পারে? তাদের কি এমন কোন চোখ আছে যা দিয়ে তোমাদেরকে অদৃশ্যের কোন খবর দিতে পারে? না তাদের এমন কোন কান আছে যা দিয়ে গোপন কোন কিছু শুনে তোমাদেরকে তা জানাতে পারে? সেগুলোর যদি এমন কোন কিছুই না থাকে তাহলে তোমরা কিভাবে, কোন লাভের আশায় অথবা কোন ক্ষতি থেকে বাঁচার আশায় তাদের ইবাদাত করছো?! হে রাসূল! আপনি এ মুশরিকদেরকে বলে দিন: তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সমপর্যায়ের বানালে তাদেরকে তোমরা ডাকো। অতঃপর আমার ক্ষতির যে কোন ফন্দি আঁটো এবং আমাকে এতটুকুরও অবকাশ দিয়ো না।
196
إِنَّ وَلِـِّۧىَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى نَزَّلَ ٱلْكِتَـٰبَ ۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّـٰلِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমার অভিভাবক হলেন সেই আল্লাহ যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আর তিনিই সৎ কর্মশীলদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯৬. হে নবী! আপনি বলুন: আমার সাহায্য ও সহযোগিতাকারী সেই আল্লাহ যিনি আমাকে অভিভাবক হিসেবে নিরাপত্তা দান করেন। তাই তিনি ছাড়া আর কারো কাছে আমি কোন কিছুর আশা করি না। তোমাদের মূর্তিগুলোকে আমি কোন ভয় করি না। তিনিই আমার উপর মানুষের হিদায়েতের জন্য কুর‘আন নাযিল করেছেন। তিনিই তাঁর নেক বান্দাদের অভিভাবকত্ব, নিরাপত্তা বিধান ও সহযোগিতা দান করেন।
197
وَٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক তারা তোমাদের সাহায্য করার কোন ক্ষমতা রাখেনা এবং নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯৭. হে মুশরিকরা! যে মূর্তিগুলোকে তোমরা ডাকো তারা তো তোমাদের কোন সহযোগিতা করতে পারবে না। তারা নিজেদেরও কোন সহযোগিতা করতে পারে না। তারা তো অক্ষম। তাই তোমরা কিভাবে আল্লাহ ব্যতিরেকে তাদেরকে ডাকো?!
198
وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى ٱلْهُدَىٰ لَا يَسْمَعُوا۟ ۖ وَتَرَىٰهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যদি তুমি তাদেরকে (মূর্তি) হিদায়াতের পথে ডাক তাহলে সে ডাক তারা শুনবেনা। আর তুমি দেখবে যে, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আসলে তারা কিছুই দেখছেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯৮. হে মুশরিকরা! তোমরা আল্লাহ ছাড়া যে মূর্তিগুলোর উপাসনা করো তাদেরকে যদি তোমরা হিদায়েতের দিকে ডাকো তাহলে তারা তোমাদের ডাক কিছুতেই শুনতে পাবে না। তুমি তাদেরকে দেখবে তারা তোমাদের দিকে মানুষের বানানো চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। মূলতঃ সে চোখগুলো জড়ো পদার্থের; যা দিয়ে দেখা যায় না। তারা পশু বা আদম সন্তানদের অবয়বে ভাস্কর্য তৈরি করতো। যেগুলোর হাত, পা ও চক্ষু ছিলো ঠিকই তবে তা ছিলো নির্জীব। তাতে কোন জীবন বা চঞ্চলতা ছিলো না।
199
خُذِ ٱلْعَفْوَ وَأْمُرْ بِٱلْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ ٱلْجَـٰهِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বিনয় ও ক্ষমা পরায়ণতার নীতি গ্রহণ কর, এবং লোকদেরকে সৎ কাজের নির্দেশ দাও, আর মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯৯. হে রাসূল! আপনি মানুষের পক্ষ থেকে সহজ ও স্বভাবসূলভ আমল ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রহণ করুন। আপনি তাদের স্বভাবের বাইরে কোন কিছু তাদের উপর চাপিয়ে দিবেন না। কারণ, তা তাদেরকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। আপনি তাদেরকে সকল সুন্দর কথা ও ভালো কাজের আদেশ করুন। আর মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলুন। আপনি মূর্খতা দিয়ে তাদেরকে প্রতিরোধ করতে যাবেন না। কেউ আপনাকে কষ্ট দিলে আপনি তাকে কষ্ট দিবেন না এবং কেউ আপনাকে বঞ্চিত করলে আপনি তাকে বঞ্চিত করবেন না।
200
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ نَزْغٌ فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِ ۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
শাইতানের কু-মন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্ব শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০০. হে রাসূল! যদি আপনি আঁচ করতে পারেন যে, শয়তান আপনাকে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে অথবা কল্যাণের কাজে নিরুৎসাহিত করছে তাহলে আপনি আল্লাহর আশ্রয় ও নিরাপত্তা গ্রহণ করুন। কারণ, তিনি আপনার সব কথা শুনছেন। আপনার আশ্রয় প্রার্থনা সম্পর্কেও তিনি জানেন। তাই তিনি অচিরেই আপনাকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করবেন।
201
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ إِذَا مَسَّهُمْ طَـٰٓئِفٌ مِّنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ تَذَكَّرُوا۟ فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা আল্লাহভীরু, শাইতান যখন তাদেরকে কু-মন্ত্রণা দেয়, সাথে সাথে তারা আত্মসচেতন হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাদের জ্ঞান চক্ষু ফিরে পায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০১. যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে তারা যদি কোন গুনাহ করে ফেলে তখন তারা সাথে সাথেই আল্লাহর মহত্ত¡ ও পাপীদের জন্য তাঁর শাস্তি এবং অনুগতদের জন্য তাঁর সাওয়াবের কথা স্মরণ করে নিজেদের পাপসমূহ থেকে তাওবা করে নেয় এবং নিজেদের প্রতিপালকের দিকে দ্রæত ধাবিত হয়। তখন দেখা যায় যে, তারা সত্যের উপর অবিচল থাকে এবং অপকর্ম থেকে বিরত হয়।
202
وَإِخْوَٰنُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِى ٱلْغَىِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
শাইতান যাদের অনুগত সাথী, তারা আরও বিভ্রান্তি ও গুমরাহীর মধ্যে প্রবেশ করে, এ প্রচেষ্টায় তারা আদৌ থেমে থাকেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০২. আর কাফির ও প্রকাশ্য অপরাধী শয়তানের ভাইদেরকে শয়তানরা গুনাহর পর গুনাহ করিয়ে ভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে নেয়। কেউ ক্ষান্ত হয় না। না শয়তানরা ভ্রষ্ট ও গুমরাহ করতে ক্ষান্ত হয়, না মানুষরূপী প্রকাশ্য পাপীরা তাদের অনুসরণ ও অপকর্ম করতে ক্ষান্ত হয়।
203
وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِم بِـَٔايَةٍ قَالُوا۟ لَوْلَا ٱجْتَبَيْتَهَا ۚ قُلْ إِنَّمَآ أَتَّبِعُ مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ مِن رَّبِّى ۚ هَـٰذَا بَصَآئِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি যখন কোন নিদর্শন ও মু’জিযা তাদের কাছে পেশ করনা, তখন তারা বলেঃ আপনি এ সব মু’জিযা কেন পেশ করেননা? তুমি বলঃ আমার রবের নিকট থেকে আমার কাছে যা কিছু প্রত্যাদেশ পাঠানো হয়, আমি শুধুমাত্র তারই অনুসরণ করি। এই কুরআন তোমার রবের নিকট থেকে বিশেষ নিদর্শন, আর এটা ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রাহমাত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০৩. হে রাসূল! আপনি যদি তাদের নিকট কোন নিদর্শন নিয়ে আসেন তারা আপনাকে মিথ্যারোপ করবে ও আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। আর যদি আপনি তাদের নিকট কোন নিদর্শন না নিয়ে আসেন তখন তারা বলবে: আপনি কেন নিজ থেকে কোন নিদর্শন আবিষ্কার করেন না ও বানিয়ে নেন না। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলুন: আমি নিজ পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন আনতে পারি না। আমি কেবল আল্লাহ যা আমার উপর ওহী করেন তারই অনুসরণ করি। এ কুর‘আন যা আমি তোমাদেরকে পড়ে শুনাচ্ছি তা কিন্তু তোমাদের ¯্রষ্টা ও কর্ম বিধায়ক আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল এবং তাঁর মু’মিন বান্দাদের জন্য দিক নির্দেশনা ও রহমত স্বরূপ। বস্তুতঃ মু’মিন ছাড়া অন্যান্যরা সত্যিই পথভ্রষ্ট ও দুর্ভাগা।
204
وَإِذَا قُرِئَ ٱلْقُرْءَانُ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে তা শ্রবণ করবে এবং নীরব নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০৪. যখন কুর‘আন পড়া হবে তখন তোমরা সে তিলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। কোন কথা বলবে না। অন্য কোন কিছু নিয়েও ব্যস্ত হবে না। যাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে দয়া করেন।
205
وَٱذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ ٱلْجَهْرِ مِنَ ٱلْقَوْلِ بِٱلْغُدُوِّ وَٱلْـَٔاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْغَـٰفِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমার রাব্বকে মনে মনে সবিনয় ও সশংক চিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে, আর (হে নাবী!) তুমি এ ব্যাপারে গাফিল ও উদাসীন হয়ো না ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০৫. হে রাসূল! আপনি নিজ প্রতিপালককে স্মরণ করুন বিনয়ী, ন¤্র ও ভয়ার্ত হৃদয়ে। আর আপনি দিনের শুরু ও শেষে দু‘আর সময় না উঁচু স্বরে, না একেবারেই নিচু স্বরে বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন। কারণ, এ দু’ সময়ের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। উপরন্তু আল্লাহর স্মরণ থেকে কখনো গাফিল হবেন না।
206
إِنَّ ٱلَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِۦ وَيُسَبِّحُونَهُۥ وَلَهُۥ يَسْجُدُونَ ۩
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা (অর্থাৎ ফেরেশতা) তোমাদের রবের সান্নিধ্যে থাকে তারা তাঁরই গুণগান ও মহিমা প্রকাশ করে এবং তাঁরই সম্মুখে সাজদাহবনত হয়। [সাজদাহ]
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০৬. হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের নিকট যে ফিরিশতাগণ রয়েছেন তাঁরা তাঁর ইবাদাত করতে অহঙ্কারবশতঃ কখনো অস্বীকৃতি জানান না। বরং তাঁরা তাঁর স্বীকৃত অনুগত। তাঁরা কখনো তাঁর ইবাদাতে অলসতা করেন না। বস্তুতঃ তাঁরা দিনে ও রাতে তথা সদা-সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার সাথে বেমানান বস্তুসমূহ থেকে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করেন এবং এককভাবে তাঁর জন্যই সাজদাহ করেন।