অনুচ্ছেদ
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বদর থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন
পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বদর যুদ্ধ ২য় হিজরীর ১ ৭ই রমাযান শুক্ররারে সংঘটিত
হয় ৷ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে যে, কোন সম্প্রদায়ের উপর জয়ী হলে রাসুলুল্লাহ
তথায় তিন দিন অবস্থান করতেন ৷ সে মতে, বদর রণাংগনে তিনি তিন দিন অতিবাহিত
করেন ৷ সোমবার রাত্রে সেখান থেকে রওনা হন ৷ তিনি উটে অ্যারাহণ করে বদরের কুয়ােয়
নিক্ষিপ্ত লাশদের সম্বোধন করেন এবং সেখান থেকে গনীমতের অচেল মালামাল ও যুদ্ধবন্দীদের
সাথে নিয়ে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেন ৷ মুশরিক কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয় ও সাহায্যের
সুসংবাদ জানানোর জন্যে তিনি পুর্বেই দু’জনকে মদীনায় রওনা করে ;দন ৷ র্তাদের একজন
হলেন আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা ৷ র্তাকে মদীনায় উচু এলাকায় পাঠান ৷ দ্বিতীয় জন যায়দ ইবন
হারিছা ৷ তাকে পাঠান নিচু এলাকায় ৷ উসামা ইবন যায়দ বলেন, আমরা বিজয়ের সুসংবাদ
তখন পেলাম যখন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কন্যা রুকাইয়ার দাফন কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছি ৷
রুকাইয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার স্বামী হযরত উছমান ইবন আফ্ফান রাসৃলুল্লড়াহ্
(না)-এর নির্দেশক্রমে যুদ্ধে না যেয়ে মদীনায় থেকে যান ৷ অবশ্য রাসুলুল্লাহ্ (সা) র্তাকে
গনীমতের ভাগ দেন এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ছওয়াব লাভের সুসংবাদও দেন ৷ উসামা
বলেন, আমার পিতা যায়দ ইবন হারিছার আগমন সংবাদ পেয়ে আমি তার নিকট গেলাম ৷
দেখলাম, তিনি সালাত আদায় করে বসে আছেন এবং লোকজন র্তাকে ঘিরে ধরেছে ৷ আর
তিনি বলছিলেন : উত্বা ইবন রাবীআ , শায়বা ইবন রাবীআ , আবু জাহ্ল ইবন হিশাম , যাযআ
ইবন আসওয়াদ, আবুল বুখতারী আস ইবন হিশাম, উমাইয়া ইবন খালফ ও হাজ্জাজের দুই
পুত্র নাবীহ্ ও মুনাব্বিহ্ এরা সবাই নিহত হয়েছে ৷ আমি বললাম, আব্বা! ঘটনা কি সত্য ?
তিনি বললেন, ইড়া বেটা, আল্লাহর কসম ৷
বড়ায়হড়াকী হস্ফোদ ইবন সালামা সুত্রে “ উসামা ইবন যায়দ থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী
করীম (সা) হযরত উছমান ও উসামা ইবন যায়দকে তার রোগাক্রাম্ভ কন্যার সেবা-শুশ্রুষার
জন্যে মদীনায় রেখে যান ৷ যুদ্ধ শেষে বিজয়ের সৃসংবাদ নিয়ে যায়দ ইবন হারিছা রাসুলুল্লাহ্র
উট আয্বার উপরে চড়ে আগমন করেন ৷ উসামা বলেন, আমি এক আশ্চর্যজনক শব্দ শুনে
বাইরে এসে দেখি, যায়দ বিজয়ের সৃসংরাদ দিচ্ছেন ৷ আল্লাহ্র কসম, যুদ্ধবন্দীদেরকে স্বচক্ষে না
দেখা পর্যন্ত এ সংবাদ আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) উছমানকে
গনীমতের অংশ দিয়েছিলেন ৷ ওয়াকিদী বলেন, বদর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
আহীল নামক স্থানে এসে আসরের নামায আদায় করেন ৷ এক রাকআত আদায়ের পর তিনি
মুচকি হাসেন ৷ হাসির কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন , আমি যীকাঈলকে দেখতে
পেলাম, র্তার ডানায় ধুলাবালি লেগে রয়েছে এবং আমার দিকে লক্ষ্য করে মুচকি হেসে বলছেন,
আমি এতক্ষণ যাবত শত্রুদের পিছু ধাওয়া করেছি ৷ এছাড়া বদরের যুদ্ধ শেষে হযরত জিবরাঈল
(আ) একটি মাদী ঘোড়ায় চড়ে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট আসেন ৷ ঘোড়াটির কপালের চুল
ছিল বীধা এবং তার মুখ ধুলাবালি থেকে ছিল রক্ষিত ৷ জিবরাঈল বললেন, হে মুহাম্মদ ! আল্লাহ্
আমাকে আপনার নিকট এই নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সত্তুষ্ট না
হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না ৷ আপনি কি তাতে সন্তুষ্ট ? রাসুলুল্লাহ্
(সা) বললেন, হ্যা’ ৷ ওয়াকিদী বলেন, বর্ণনাকারিগণ বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবদুল্লাহ ইবন
রওয়াহা ও যায়দ ইবন হড়ারিছাকে আহীল নামক স্থান থেকে অগ্রগামী দল হিসেবে পাঠিয়ে দেন ৷
র্তারা রবিবারে প্রায় দুপুরের সময় এসে পৌছেন ৷ আকীক নামক স্থানে আসার পর আবদুল্লাহ
ইবন রাওয়াহা যায়দ ইবন হারিছা থেকে পৃথক হয়ে যান ৷ তারপর আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা
তার সওয়ারীব উপর থেকেই ঘোষণা দিলেন, হে আনসার সম্প্রদায়! সুসংবাদ গ্রহণ করুন;
বাসুলুল্লাহ্ (সা) নিরাপদে আছেন এবং মুশরিকরা মারা পড়েছে ও বন্দী হয়েছে ৷ রবীআর দুই
পুত্র, হাজ্জাজের দুই পুত্র, আবু জাহ্ল , যামআ ইবন আসওয়াদ ও উমাইয়া ইবন খালফ নিহত
হয়েছে এবং সুহায়ল ইবন আমরকে বন্দী করা হয়েছে ৷ আসিম ইবন আদী বলেন : আমি উঠে
তার কাছে যেয়ে বললাম, হে ইবন রাওয়াহা! যা বলছ তা কি সত্য ? তিনি বললেন, হীা,
আল্লাহর কলম, আপামীকাল রাসুলুল্লাহ্ (সা) বন্দীদের বেধে নিয়ে আসবেন ৷ এরপর তিনি উচু
এলাকায় আনসারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুসংবাদ দিতে থাকেন ৷ আনসারদের ছোট ছোট
বালকেরা তার সাথে সুর করে বলতে থাকে “নিহত হয়েছে আবু জাহ্ল ফাসিক’ ৷ আবদুল্লাহ
ইবন রাওয়াহা যখন বনু উমাইয়ার আবাসস্থলের কাছে পৌছেন, তখন যায়দ ইবন হারিছা
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর উটনী কাস্ওয়ার উপর চড়ে আগমন করেন এবং মদীনাবাসীদেরকে
সুসংবাদ শুনান ৷ যখন তিনি ঈদগাহের কাছে আসত্তুলন, তখন সওয়ারীব উপর থেকেই
উভৈচ্চ৪স্বরে বললেন, রাবীআর দুই পুত্র উতৃবা ও শায়বা এবং হাজ্জাজের দুই পুত্র নিহত হয়েছে ৷
উমাইয়া ইবন খাল্ফ, আবু জাহ্ল, আবুল বুখতারী এবং যামআ ইবন আসওয়াদ-এরা সকলেই
নিহত হয়েছে এবং সুহায়ল ইবন আমর যুল-আনয়াবসহ বহু লোক বন্দী হয়েছে ৷ কেউ কেউ
যায়দের কথা সত্য বলে মেনে নিতে পারছিল না ৷ তারা বলাবলি করতে লাগলো, যায়দ ইবন
হারিছা তো পরাজিত হয়ে এসেছে ৷ এতে মুসলমানদের মন ভেঙ্গে গেল এবং তারা ভীতসস্ত্রস্ত
হয়ে পড়লেন ৷ আসিম ইবন আদী বলেন, যায়দ যখন মদীনায় পৌছে, তখন আমরা রাসুলুল্লাহ্
(সা) এর কন্যা রুকাইয়াকে জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে দাফন করে ফিরছিলাম ৷ জনৈক মুনাফিক
উসামাকে লক্ষ্য করে বলল, তোমাদের সর্দার (মুহাম্মদ)ও নিহত হয়েছে ৷ সেই সাথে তার
অন্যান্য সঙ্গীরাও নিহত হয়েছে ৷ আর এক মুনাফিক আবু লুবাবাকে বলল, তোমাদের সাথী,
সঙ্গীরা এমনভাবে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে যে, আর কোনদিনও একত্রিত হবে না ৷ যুদ্ধে যায়দের
সাথীরাও নিহত হয়েছে, মুহাম্মদও নিহত হয়েছে ৷ এই তো তার উশ্ৰী, আমরা ওটা চিনি ৷ আর
এই যে যায়দ সে তো ভয়ে ভীত হয়ে কি বলছে না বলছে তা সে নিজেই বুঝতে পারছে না ৷
সে তো পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে ৷ আবু লুবারা বললেন, আল্লাহ তোমার কথা মিথ্যা
প্রমাণিত করে দিবেন ৷ ইয়াহুদীরা বলতে লাগল, যায়দ সে তো পরাজিত হয়েই এসেছে ৷
উসামা বলেন, এসব কথাবার্তা শুনে আমি একাম্ভে আমার পিতা যায়দের সাথে মিলিত হলাম
এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি যে সংবাদ দিচ্ছেন তা কি সত্য ? তিনি বললেন, হী৷ বেটা !
আল্লাহ্র কলম, আমি যা বলছি তা সবই সত্য ৷ উসামা বলল, আমি এবার নিজেকে শক্ত করে
নিলাম এবং ঐ মুনাফিকটির নিকট গিয়ে বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও মুসলমানদের সম্পর্কে
অপপ্রচার চালাল্দো ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় ফিরে আসলে তোমাকে তার সম্মুখে হাযির করা
হবে ৷ তখন৩ তিনি৫ আমার গর্দড়ান উড়িয়ে দেবেন ৷ মুনড়াফিকটি বলল এ কথাগুলো আমি
লোকজনকে বলতে শুনেছি, তাই বলছি ৷ এরপর বন্দীদেরকে নিয়ে আসা হয় ৷ রাসুল (সা) এর
আযাদকৃত দাস শাকরানও তাদেরকে নিয়ে আসছিলেন ৷ তিনি বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন ৷
যুদ্ধবন্দীদের যে ট সং থ্যা ছিল উনপঞ্চশেজন ৷ ওয়াকিদী বলেন বন্দীদের প্রকৃত সং থ্যা ছিল
সত্তরজন ৷ এর উপর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত এতে কোন সন্দেহ নেই৷ বর্ণনাকারী বলেন মদীনার
নেতৃস্থানীয় লোকজন রাওহা নামক স্থানে অগ্রসর হয়ে রাসুলুল্লাহ্ ৷ স )-কে বিজয় অভিনন্দন
জানান ৷ উসায়দ ইবন হুযায়র বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ও সকল প্রশংসজ্ব সেই আল্লাহ্র যিনি
আপনাকে বিজয়ী করেছেন, আপনার চোখ জুড়িয়েছেন ৷ ইয়া রাসুলাল্পাহ্! আল্লাহর কসম,
আপনি শত্রুর মুকাবিলা করবেন তা বুঝতে পারলে আমি বদরে না যেয়ে বাড়িতে থাকতাম না ৷
আমি মনে করেছিলাম, আপনি বাণিজ্যকাফেলার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন ৷ শত্রুর উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন তা
জানলে আমি কিছুতেই বসে থাকতাম না ৷ উস্যায়দের কথা শুনে রাসৃলুল্পাহ্ (সা) বললেন তুমি
যথার্থ বসেছ ৷
ইবন ইসহড়াক বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) যুদ্ধবব্দীসহ মদীনায় দিকে রওনা হন ৷
বন্দীদের মধ্যে উক্বা ইবন আবু মুআয়ত ও নযর ইবন হারিছও ছিল ৷ গনীমতের দায়িতৃ দেন
আবদৃল্লাহ্ ইবন কাআব ইবন আসর ইবন আওফ ইবন মাবযুল ইবন আমর ইবন গনাম ইবন
মড়াযিন ইবন নাজ্জার-এর উপর ৷ এ সময় মুসলমানদের মধ্য হতে একজন রণোদ্দীপনামুলক
বিত৷ আবৃত্তি করেন ৷ ইবন হিশাম তার নাম বলেছেন অড়াদী ইবন আবী যাগবা ৷
(কবিতা) হে রাসবাসা কাফেলার বড়াহনগুলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া অব্যাহত
রাখ ৷ যা তালীহি উপ৩ কােয় কাফেলা নিয়ে রাত্রি যাপন করা যাবে না এবং উমায়র প্রান্তরে
একে আটকান যাবে না ৷ কেননা, বিজয়ী কাফেলার বাহনের গতি রোধ করা যায় না ৷ সুতরাং
রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করে যাওয়ার সুযোগ দেয়ইি বুদ্ধিমানের পরিচয় ৷ নিঃসন্দেহে আল্লাহ
সাহায্য করেছেন এবং শয়তান পালিয়ে গেছে ৷
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুলুলুড়াহ্ (সা) সম্মুখে অগ্রসর হন এবং সাফরা গিরিপথ পার
হয়ে উক্ত গিরিপথ ও নাযিয়ার মধ্যবর্তী সায়ার নামক বালুর ঢিলায় এক প্রকাণ্ড বৃক্ষের নিকট
অবতরণ করেন ৷ সেখানে বসে তিনি মুশরিকদের থেকে প্রাপ্ত গনীমতের মাল মুসলমানদের
মধ্যে সমভাবে বণ্টন করে দেন ৷ এরপর সেখান থেকে যাত্রা করে যখন রাওহা নামক স্থানে
পৌছেন, তখন মুসলমানপণ রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও তার সাহাবীগণকে আল্লাহ যে বিজয় দান
করেছেন সেজন্যে অভিনন্দন জানাতে থাকেন ৷ আসিম সুত্রে বর্ণি৩ , তখন সা ৷লামা ইবন সুলামা
বললেন : তোমরা আমাদেরকে কি জন্যে মুবারকৰাদ দিচ্ছ ? আল্লাহর কসম, আমরা তো
কতিপয় টাকওয়ালা বৃক্ষের সাথে যুদ্ধ করেছি যারা ছিল ৰ্বাধা উটের মত, আমরা তাদেরকে
যবাহ্ করে দিয়েছি মাত্র ৷ একথা শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) মুচকি হেসে বললেন : ভাতিজাশু ওরাই
তো এক সময় সমাজের কর্ণধার ছিল ৷
ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন সাফরা নামক স্থানে পৌছেন, তখন নযর ইবন
হারিছকে হত্যা করা হয় ৷ মক্কার কয়েকজন আলিমের ভাষ্য অনুযায়ী হযরত আলী ইবন আবু
তালিব৩ তাকে হত্যা করেছিলেন ৷ এরপর সেখান থেকে অগ্রসর হয়ে আরকুব যাবিয়াং৩ ’ পৌছে
উক্বা ইবন আবু মুআয়তকে হত্যা করা হয় ৷ ইবন ইসহাক বলেন০ ,উক্বাকে হত্যা করার
নির্দেশ দিলে সে রাসুলুল্পাহ্কে বলেছিল, হে মুহাম্মদ ! আমার ছোট ছেলেমেয়েদের দেখার জন্যে
কে রইল ? তিনি বললেন, আগুন’ ৷ আবু উবায়দা ইবন মুহাম্মদ ইবন আম্মার ইবন ইয়াসিরের
বর্ণনা মতে বনী আমব ইবন আওফ গোত্রের আসিম ইবন ছাবিত ইবন আবুল আফলাহ্
উক্বাকে হত্যা করেন ৷ মুসা ইবন উক্বা তার মাগাযী গ্রন্থে এ কথাই বলেছেন ৷ তিনি আরও
বলেছেন যে, উক্বা ব্যতীত অন্য কোন বন্দীকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) হত্যা করেননি ৷ বর্ণনাকাবী
বলেন, আসিম ইবন ছাবিত উক্বাকে হত্যা করার জন্যে যখন অগ্রসর হলেন, তখন সে
বলেছিল, হে কুরায়শ জনগণ ! এখানে যতগুলাে লোক আছে, তাদের মধ্য হতে আমাকে কেন
হত্যা করা হচ্ছে ? আসিম বললেন, আল্লাহ্ ও তীর রাসুলের ন্০ান্খ শত্রুত৷ করার কারণে ৷
হাম্ম৷ দ ইবন সালামা আ৩ ৷ ইবন সারির, শা বী থেকে বর্ণনা কা;রন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন
উক্বাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন, তখন সে বলেছিল , মুহাম্মদ ! আ ৷মি একজন কৃরায়শী হওয়া
সত্বেও আমাকে হত্যা করছ ? তিনি বললেন, হী৷ ৷ এরপর সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন ?;
তোমরা কি জান, এ লোক আমার সাথে কী আচরণ করেছে ? এক দিনের ঘটনা, আমি মাকামে
ইবরাহীমের পাশে সালাতে সিজদারত ছিলাম ৷ এ অবস্থায় সে আমার ঘাড়ে পা রেখে সজােরে
চাপ দিতে থাকে ৷ অব্যাহত চাপে মনে হচ্ছিল এখনই আমার চোখ দু’টি ফেটে বেরিয়ে যাবে ৷
আর একদিন সিজদারত অবস্থায় সে ছাগলের নাড়িভুড়ি এনে আমার মাথার উপর রেখে দেয় ৷
পরে আমার মেয়ে ফাতিম৷ এসে সেগুলো ফেলে দিয়ে আমার মাথা ধুয়ে দেয়৷ ইবন হিশাম
বলেন, যুহরী প্রমুখ আলিমপণের বর্ণনা মতে, হযরত আলী ইবন আবু৩ তালিব উক্বাকে হত্যা
করেছিলেন ৷
বন্তুত এই দুই ব্যক্তি ছিল অ৩ ত্যম্ভ জঘন্য প্রকৃতির ৷ অন্যদের তুলনায় কুফরী কাজে
হিংসাবি দ্বেষ, শত্রুতা, বাড়াবাড়ি এবং ইসলাম ও মুসলমানদের কুৎস৷ রটনায় সব চ ইতে
অগ্রগামী ৷ ইবন হিশাম বলেনষ্ক নযর ইবন হারিছের মৃত্যুতে তার বোন কুতায়ল৷ বিনত হারিছ
কবিতার মাধ্যমে বিলাপ করে রলেছিল :
হে আরোহী! আহীল উপত্যকা সম্পর্কে আমি পাচ দিন ধরে দুশ্চিন্তায় ভুগছি ৷ আর তোমার
আগমন আমার যে দৃশ্চিন্তাকে নিশ্চিত করে দিল ৷
তথায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিকে আমার আশীর্বাদ পৌছিয়ে দাও, যাতে তথাকার শরীফ
লোকেরা বঞ্চিত না হয় ৷
(হে ভ্রাতা !) আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি আশীর্বাদ রইল ৷ তোমার জন্যে অশ্রু
প্রবাহিত হচ্ছে ৷ একবার অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে, আর একবার বন্ধ হচ্ছে ৷
আমি যদি নযরকে ডাকি, তবে সে কি আমার ডাক শুনবে ? যে মারা গেছে কথা বলতে
পারে না , সে কি করে ডাক শুনবে :
হে মুহাম্মদ! হে আপন জাতির সস্রান্ত মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান ! ঐতিহ্যগতভাবে যে সল্লাম্ভ হয়,
দ্ভুসই প্রকৃত সম্রান্ত ৷
আপনি যদি তার উপর করুণা দেখাতেন, তাতে আপনার কি এমন ক্ষতি হত : অনেক
ক্ষেত্রেই তো দেখা যায়, একজন ক্রোধা ত বিদ্বেষপরায়ণ যুবক তার প্ৰতিপক্ষের উপর করুণা
করে থাকে ৷
অথবা আপনি তার মুক্তিপণ গ্রহণ করতেন ৷ কষ্ট করে হলেও তার জন্যে সর্বোচ্চ হারে
মুক্তিপণ আদায় করে দেয়া হত ৷
আপনি যাদেরকে বন্দী করেছিলেন, তাদের মধ্যে নযর তাে ছিল আপনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ৷
বন্দীদের মধ্যে যদি কাউকে মুক্তি দেয়া হয়, তবে নযর ছিল তাদের মধ্যে মুক্তি পাওয়ার
সৰ্বাধিক দাবীদার ৷
নিজের গোত্রীয় সন্তানদের তরবারি তাকে আঘাত হড়ানছিল এবং রক্তের সম্পর্ক সেখানে
আল্লাহ্র হুকুমে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ছিল ৷ তাকে হাত-পা রাখা ও বেড়ি পরান অবস্থায়
টোন-হেচড়ে বধ্য-ভুমিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ৷ (হে কুতড়ায়লা তুমি ধৈর্য ধারণ কর ৷)
ইবন হিশাম বলেন : কথিত আছে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট যখন এ কবিতা পৌছে,
তখন তিনি বলেছিলেন, তাকে হত্যা করার আগে যদি আমার কাছে এ কবিতা পৌছতো, তবে
তার উপর করুণা দেখাতাম ৷
ইবন ইসহা ক বলেন : এ স্থানে (আরকুয্-যাবিয়া) ফারওয়া ইবন আমর আল-বায়াযি’র
আযাদকৃত দাস, রাসুলুল্লাহ্র ফৌরকড়ার আবু হিন্দ এসে তীর সাথে সাক্ষাত করে ৷ সে মদের
একটি মশকে হড়ায়স’ (থুরমা, ছাতু ও ঘি মিশ্রিত এক প্রকার খাবার) ভর্তি করে রাসুলুল্লাহ্র
জন্যে হাদিয়া এনেছিল ৷ রাসুলুল্পাহ্ তা গ্রহণ করলেন এবং তার সাথে উত্তম ব্যবহার করার
জন্যে আনসারদেরকে নির্দেশ দিলেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন : এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) যাত্রা শুরু
করেন এবং যুদ্ধবন্দীদের মদীনা পৌছার একদিন আগেই তিনি সেখানে পৌছেন ৷ ইবন ইসহড়াক
বলেন : আরদুদ-দার গোত্রের নড়াবীহ্ ইবন ওয়াহব আমাকে বলেছেন যে, যুদ্ধবন্দীরা মদীনা
পৌছে গেলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাদেরকে সাহাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দেন এবং বলে দেন
“ওদের সাথে তোমরা উত্তম আচরণ করবে ৷” বর্ণনাকারী বলেন, যুসআব ইবন উমায়রের
সহােদর ভইি আবু আযীয ইবন উমায়র ইবন হাশিম বন্দীদের মধ্যে ছিল ৷ আবু আযীয বলে ,
আমার ভইি ঘুসআব ইবন উমায়র আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ৷ এ সময় একজন আনসারী
আমাকে বন্দী করে রেখেছিল ৷ তখন মুসআব তাকে বলল, একে শক্ত করে বেধে তোমার কাছে
রেখে দাও ৷ তার মা একজন সম্পদশালী মহিলা ৷ হয়ত বা মুক্তিপণ দিয়ে তোমার নিকট থেকে
ওকে ছাড়িয়ে নেবে ৷ আবু আযীয বলে, বদর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে আমি একদল আনসারের
সাথে ছিলাম ৷ আমাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার জন্যে রাসুলুল্লাহ্র নির্দেশ থাকায় তারা
কাল-বিকাল আহার করার সময় আমাকে রুটি দিত এবং নিজেরা খেজুর থেত ৷ তাদের মধ্যে
যার কাছেই রুটি থাকত, তা আমাকে দিয়ে দিত ৷ এতে ৩আমি লজ্জিত হয়েত তাদেরকে রুটি
ফিরিয়ে দিতাম ৷ কিন্তু তারা তা স্পর্শ না করেই আমাকে পুনরায় দিয়ে দিত ৷ ইবন হিশাম
বলেনঃ এই আবু অড়াযীয ছিল নযর ইবন হারিছের পরে মুশরিকদের পত ৷কাবাহী সেনাধ্যক্ষ ৷
মুসআব যখন তার ভাই আবু আযীযকে বন্দীকারী আবু ইয়াসারকে শক্ত করে বাধার জন্যে
বলেছিলেন তখন আবু অড়াযীয মুসআবকে বলেছিল, ভাই! আমার সাথে এরুপ করার জন্যে
কি তুমি আদিষ্ট ? যুসআব বললেন, তুমি আমার ভাই নও; বরং সে-ই আমার ভাই ৷ এরপর
আবু আযীযের ম৷ জিজ্ঞেস করল, সর্বোচ্চ কত মুক্তিপণ নিয়ে কুরায়শ বন্দীদের ছাড়া হচ্ছে ?
বলা হল, চার হাজার দিরহামের বিনিময়ে ৷ সে মতে তার মা চার হাজার দিরহাম পাঠিয়ে দিয়ে
তাকে মুক্ত করে নেয় ৷
ইবন আহীর গাবাতুসৃ-সাহড়াবা’ গ্রন্থে আবু আযীষের নাম ঘুরারা লিখেছেন এবং খলীফা
ইবন খইিয়াত তাকে সাহাবাদের মধ্যে গণ্য করেছেন ৷ তিনি বলেন, আবু অড়াযীয ছিল মুসআব
ইবন উমায়রের বৈপিত্রেয় ভাই ৷ তাদের আরও একজন বৈপিত্রেয় ভাই ছিল ৷ তার নাম আবুর
রুম ইবন উমায়ব ৷ যারা বলেছেন, আবু আযীয উহুদ যুদ্ধে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে, তারা
ভুল করেছেন ৷ প্রকৃতপক্ষে ঐ নিহত ব্যক্তির নাম আবু ইযযা’ ৷ এ বিষয়ে যথাস্থানে আলোচনা
করা হবে ৷ ইবন ইসহাক বলেন : ইয়াহ্ইয়া ইবন আবদুল্লাহ সুত্রে আবদুল্লাহ ইবন আবু
বকর আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে মদীনায় পৌছেন, তখন
নবী সহধর্মিণী সাওদা বিনত যামঅ৷ আফ্রা পরিবারে অবস্থান করছিলেন ৷ আফ্রার দুই পুত্র
আওফ ও মুআওয়ায বদর যুদ্ধে শহীদ হওয়ায়ত তাদেরকে সান্তুনা দেয়ার জন্যে তিনি সেখানে
গিয়েছিলেন ৷ তখনও পর্দার বিধান প্রবর্তিত হয়নি ৷ সাওদা বলেন, আল্লাহর কসম, ঐ বাড়িতে
থাকতেই আমি সংবাদ পেলাম যে, যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে আসা হয়েছে ৷ আমি তখন আমার ঘরে
ফিরে আসলাম ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৷ এ সময় দেখলাম, আবু ইয়াযীদ
সুহায়ল ইবন আমর কক্ষের একপাশে রয়েছে ৷ আর তার হাত দু’খানি র্কাধের সাথে রশি দিয়ে
বাধা ৷ সাওদা (রা) বলেন, ন্আল্লাহর কসম, আবু যায়দের এ অবস্থা দেখে আমি নিজেকে সামলে
রাখতে পারলাম না ৷ বললাম, হে আবু যায়দ৷ তোমরা আত্মসমর্পণ করলে কেন ? যুদ্ধ করে
সম্মানের সাথে মরতে পারলে না ? সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘর থেকে আমাকে ধমক দিয়ে
বললেন, হে সাওদা! তুমি কি আল্লাহ ওত ৷র রাসুলের বিরুদ্ধে উস্কা নি দিচ্ছ ? আমি বললাম,
ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্৷ আল্লাহর কসম, আবু যায়দকে এরুপ বাধা অবস্থায় দেখে আত্মসম্বরণ করতে
পারিনি, তাই এরুপ বলে ফেলেছি ৷ মদীনায় যুদ্ধবন্দীদের অবস্থা মুক্তিপণের পরিমাণ ও ধরন
সম্পর্কে সামনে যথাস্থানে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্ ৷
বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্রকাশ
হাফিয রায়হাকী বলেন : আবুল কাসিম আবদুর রহমান ইবন আবদুল্লাহ সুত্রে সানআ
নিরাসী আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, এক দিন নাজাশী হযরত জাফর ইবন আবু
তালিব ও তার মা পীদের তার কাছে আমার জন্য সংবাদ দেন ৷ (জা ফর ও তার সৎগীরা ঐ