আবদুল্লাহ ইবন উমরের রিওয়ায়াত
হাফিয বায়হাকী আবু আবদুল্লাহ আল হাফিয ও আবু বক্র আহমদ ইবন হাসান
আবদুল্লাহ ইবন উমর সুত্রে “কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে ৷ এই আয়াতেরব্যাপারে
বলেন, এটা ঘটেছিল রাসুলুল্পাহ্ (না)-এর জীবদ্দশায়, এ সময় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল , এক খণ্ড
ছিল পাহাড়ের সামনে, অন্যখণ্ড পাহাড়ের পিছনে, এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন, হে
আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক ৷ মুজাহিদের বরাতে শু বা থেকে মুসলিম ও তিরমিযী একাধিক সুত্রে
এভাবেই হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন ৷ মুসলিম, ইবন মাসউদ আবু মা মার সুত্রে
বর্ণিত মুজাহিদের রিওয়ায়াতের ন্যায় বর্ণনা করেছেন ৷ আর তিরমিযী মন্তব্য করেন, হাদীসখানি
হাসান’ সহীহ্ ৷
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের রিওয়ায়াত
ইমাম আহমদ, সুফিয়ান ইবন মাসউদ সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর জীবদ্দশায় চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে দ্বিখণ্ডিত হল ৷ লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করল ৷
তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক ৷ বুখারী ও মুসলিম সুফিয়ান ইবন
উয়ায়নাব হাদীস সংগ্রহ থেকে তা রিওয়ায়াত করেছেন এবং আমাশের হাদীস সংগ্রহ থেকে
ইবরাহীম ইবন মাসউদ সুত্রে তারা উভয়ে হাদীসখানি সনদসহ উল্লেখ করেছেন ৷
বুখারী সনদবিহীনভাবে এবং আবু দাউদ তার মুসনাদে সনদসহ হাদীসখানি উল্লেখ
করেছেন ৷ তিনি আবু আওয়ানা ইবন মাসউদের বরাতে বলেন যে, তিনি বলেছেন,
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর জীবদ্দশায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হল ৷ তখন কুরায়শরা বলল, এ হল ইবন আবু
কাবশার যাদু ৷ (ইবন মাসউদ বলেন) তখন তারা বলল, অপেক্ষা কর, মুসাফিরগণ আমাদের
কাছে কী খবর নিয়ে আসে? কেননা সকল মানুষকে মুহাম্মদ যাদুকরতে পারবে না ৷ ইবন
মাসউদ বলেন, এরপর মুসাফিরগণ এসে তার সত তার সাক্ষী দিল ৷ আর বায়হাকী হাকিম
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ সুত্রে বর্ণনা করেন যে,৩ তিনি বলেছেন, (রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
জীবদ্দশায় মক্কায় চন্দ্র বিদীর্ণ (দ্বিখণ্ডিত) হল ৷ তখন কুরায়শের কাফিররা বলল, এ হল এক
যাদু যা দ্বারা ইবন আবু কাবশা৫ আমাদেরকে যাদু করেছে ৷ তোমরা তোমাদের মুসাফিরদের
প্রতীক্ষড়ায় থাক, তারাও যদি তোমাদের মত দেশে থাকেত তাহলে সে সত্য নবী ৷ আর যদি তারা
তামাদের ন্যায় কিছু দেখে না থাকে তাহলে এটা তার যাদু দ্বারা সে তােমাদেরকে যাদু
করেছে ৷ এরপর চতুপিক থেকে আগত মুসাফির দলকে জিজ্ঞেস করা হল তখন তারা সকলে
বলল আমরা তা (দ্বিখণ্ডিত চন্দ্র) প্রত্যক্ষ করেছি ৷ ইবন জারীর মুগীরার হাদীস সংগ্রহ থেকে
হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন, আর তিনি তাতে এই অং শ বাড়তি বলেছেন ৷ তখন আল্লাহ
তা আলা নাযিল করলেনষ্ক
ইমাম আহমদ মুআম্মিল আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
(আবদুল্লাহ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর জীবদ্দশায় চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে দ্বিখণ্ডিত হল এমন কি
আমি মক্কার পাহাড়কে চন্দ্র খণ্ডদ্বয়ের মাঝে দেখতে পেলাম ৷ ইয়াকুব আদৃ দাওরীর সুত্রে
ইবন জারীর মুহাম্মদ ইবন সীরীন থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, আমি জানতে পেয়েছি যে,
ইবন মাসউদ (রা) বলতেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর জীবদ্দশায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে ৷ সহীহ্
বুখারীতে ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলতেন, (কিয়ামতের) পড়াচটি আলামত গত
হয়েছে রোম, লিযাম, পাকড়াও, ধুম্ন , এবং চন্দ্র (এর দ্বিখণ্ডিত হওয়া১ ) ৷
সুরা দৃখানের তড়াফসীরে তার থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে এর উল্লেখ রয়েছে ৷ ৷আদ্
দালাইল গ্রন্থে আবু যুরআ (র) আবদুর রহমান ইবন ইব্রাহীম ইবন বুকায়র সুত্রে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেন, হিজরতের পুর্বে নবী করীম (সা) মক্কায় অবস্থানকালে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হল ৷
তখন মুশরিকরা বলল, ইবন আবু কাবশা এটাকে যাদু করেছে ৷ আর এই হাদীসখানি এই
বর্ণনা সুত্রে মুরসাল ৷ এগুলি হচ্ছে সাহাবাদেব এই জামাত থেকে বর্ণিত সুত্রসমুহ ৷ আর
বিষয়টির প্রসিদ্ধির কারণে তার সনদ উল্পেখের প্রয়োজন নেই ৷ আল-কুরআনেও যে তা বিবৃত
হয়েছে ৷ আর কোন কোন কাহিনীকার বলে থাকেন যে, চন্দ্র নবী করীম (না)-এর আমার গলা
দিয়ে প্রবেশ করে হতো দিয়ে বের হয়েছিল, এবং এ জাতীয় অন্যান্য কথা, এর কোনটিরই
নিতরিযােগ্য কোন ভিত্তি নেই ৷ আর দ্বিখণ্ডিত হওয়ার সময়ও চন্দ্র আকাশে তার কক্ষপথ থেকে
বিচ্যুত হয়নি বরং তা দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়েছিল এবং তার একখণ্ড হেরা পাহাড়ের পশ্চাতে
অবস্থান নিয়েজ্জি আর অন্যখণ্ড তার বিপরীত দিকে ৷ আর তখন অন্য পাহাড়ের অবস্থান ছিল এ
দৃখণ্ডের মাঝামাঝি, আর উভয় খণ্ডই আকাশে (স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল) এ সময় মক্কাবাসীরা
তা প্রত্যক্ষ করছিল ৷ তাদের অনেক মুর্থই ধারণা করেছিল যে এটা হল (রাসুলের) যাদু যা দ্বারা
তাদের দৃষ্টিভ্রম ঘটানো হয়েছে ৷ ৷ পরে তারা তাদের কাছে আগত মুসাফিরদেরকে জিজ্ঞেস
করেছিল, তখন তারা তাদেরকে তারা বা প্রত্যক্ষ করেছিল তার অনুরুপ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার
ত্বাদই দিয়েছিল ৷ তখন তার এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিল ৷ যদি প্রশ্ন করা হয়,
তাহলে পৃথিবীর সকল স্থানে কেন তা জানা যায়নি? এর উত্তর হল, এর সম্ভাবনা অস্বীকার করল
কে? আসলে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়েছে আর কাফিরগণ আল্লাহ্র নিদর্শনাদি অস্বীকার করে
চলেছে ৷ সম্ভবত যখন তারা জানতে পেরেছে যে, এটা ছিল প্রেরিত মহানবীর নিদর্শন, তখন
তাদের বিকৃত বিবেক তা গোপন করা এবং বিস্মৃত হওয়ার পথেইরায় দিয়েছে ৷ এছাড়া
একাধিক পর্যটক উল্লেখ করেছেন যে তারা, ভারতে একটি ধস্বীয়ি স্থাপনা প্রত্যক্ষ করেছেন, যাতে
একথা খোদাই করে লেখা যে তা চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার রাত্রে নির্মিত হয়েছে ৷ এ ছাড়া চন্দ্র
বিদীর্ণ হওয়ার এই ঘটনা যেহেতু রাত্রিকালে সংঘটিত হয়েছিল তাই তা বহু মানুষের কাছে
গোপন থাকতে পারে ৷ আর সে সময় তা প্রত্যক্ষ করার একাধিক অম্ভরায় থেকে থাকতে
পারে ৷ হয়তবা এসময় তাদের আকাশ ঘন মেঘে আবৃত ছিল, কিৎবা তাদের অনেরেইি নিদ্রিত
ছিল ৷ কিৎবা হয়তবা তা গভীর রাতে ঘটেছিল যখন অধিকাৎশ লোক ঘুমিয়ে যায় ৷ আল্লাহ্ই
অধিক জানেন ৷ আর আমরা আমাদের তাফসীর গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি ৷
আর অস্ত যাওয়ার পর সুর্যকে ফিরিয়ে আনা সম্পর্কে আমাদের শায়খ বাহাউদ্দীন কাসিম
ইবন ঘুযাফফর, হাফিয আবু আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন আসাকির আসমা
বিনৃত উমায়স সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন ৷ একবার হযরত আলীর কোলে মাথা
রাখা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে ওহী নাযিল হচ্ছিল ৷ এ সময় আলীর (রা) আসরের
নামায আদায়ের পুর্বেই সুর্য অস্ত গেল ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে বললেন, তৃমি কি
১ হাদীসখানির ব্যাখ্যা তাফসীর গ্রন্থসমুহে বিদ্যমান ৷
আসরের নামায পড়েছ? আর আবু উমায়্যার বিওয়ায়াতে হে আলী , শব্দটি বাড়তি আছে ৷
তিনি বললেন, জী-না ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আবু উময়্যার বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ্ (সা)
স্থলে নবী কবীম (সা) আছে ৷ হে আল্লাহ্! সেতো তোমার ও তোমার নবীর আনুগত্যে মষ্পগুল
ছিল ৷ (আবু উময়্যার বর্ণনায়ভােমার নবীর’ স্থলে তোমার রাসুলের আছে) ৷ সুতরাং আপনি
তার জন্য সুর্যকে ফিরিয়ে দিন ৷ আসমা বলেন, আমি সুর্যকে (প্রথমে) অস্ত যেতে দেখেছি
এরপর তাকে পুনরায় উদিত হ্তে দেখেছি ৷ শায়খ আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী হাদীসখানিকে
আবু আবদৃল্লাহ্ ইবন মানদার সুত্রে ’জাল’ হাদীসের মাঝে রিওয়ায়াত করেছেন ৷ এ ছাড়া আবু
জাফর আল উকায়লী সুত্রেও৩ তিনি হাদীসখানি উল্লেখ করার পর মন্তব্য করেছেন, এটা জাল
হাদীস ৷ এই হাদীস বর্ণনায় রাবীগণ তালগােল পাকিয়ে ফেলেছেন ৷ সাঈদ ইবন মাসউদ,
উবায়দুল্লাহ্ ইবন মুসা সুত্রে আসমা বিনৃত উমায়স সুত্রে৩ তা রিওয়ায়াত করেছেন আর
এটা বিওয়ায়াতের তালগােল পাকানাে বৈ নয় ৷ ইবনুল জাওযী বলেন, (এই সনদের রাবী)
আহমদ ইবন দাউদ সম্পুর্ণ অগ্রহণযোগ্য ৷ দারা কুত্নী বলেন, রাবী হিসাবে লোকঢি প্রত্যাখ্যাত
ৎসে মিথুাক ৷ ইবন হিববান বলেন, যে জাল হাদীস তৈরী করত ৷ আর অন্য রাবী আমার
ইবন মাতাবের ব্যাপারে উকায়লী বলেন, এই ব্যক্তি নির্ভরযোগ্য রাবীদের বরাতে মুনকার
হাদীসসমুহ রিওয়ায়াত করত ৷ ইবন আদী বলেন,৩ তার হাদীস প্রত্যাখ্যাত ৷ ইবনুল জাওযী
বলেন, আর রাবী ফুযায়ল উবন মারয়ুককে ইয়াহ্য়া (ইবন মায়ীন) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন ৷ তীর
সম্পর্কে ইবন হিববান বলেন, সে জাল হাদীসসমুহ রিওয়ায়াত করে এবং নির্ভরযোগ্য রাবীদের
বরাতে ত্যুণ্৷ বর্ণনা করে ৷
হাফিয ইবন আসাকির ,আবু মুহাম্মদ ট্রু উরওয়া ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন কুশায়র সুত্রে
বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একবার আমি ফাতিম৷ বিনৃত আলীর সাক্ষাতে প্রবেশ
করলাম, তখন আমি তার গলায় একটি পুতির হার এবং হাতে দুটি পুরু বালা দেখতে
পেলাম ৷ উল্লেখ্য, এ সময় তিনি অতিবৃদ্ধা ছিলেন-তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, এটা কী?
তিনি বললেন, নারীর জন্য (নিরাভরণ হয়ে) পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করা অনুচিত ৷ এরপর তিনি
আমাকে বর্ণনা করলেন যে, আসমা বিনৃত উমায়স তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, একবার নবী
কবীম (সা) এর কাছে ওহী নাযিল হওয়ার সময় আলী (বা) তার কাছে উপস্থিত হলেন ৷ তখন
নবী কবীম (সা)৩ তাকে তার চাদর দিয়ে আবৃত করে নিলেন ৷ তিনি এ অবস্থায় থাকতে থাকতে
সুর্য অস্তমিত ৩হল ৷ উরওয়া বলেন, সুর্য অস্তমিত হল বা হওয়ার উপক্রম হল ৷ তারপর নবী
কবীম (সা) এর ওহী নাযিলের বিশেষ অবস্থা অপসারিত ৩হল ৷ তখন তিনি বললেন, আলী তুমি
কি নামায আদায় করেছো? তিনি বললেন, জী-না ৷ তখন নবী কবীম (সা) বললেন, হে
আল্লাহ আলীর জন্য সুর্যকে ফিরিয়ে দিন ৷ তখন সুর্য৩ তার পুর্বাবস্থায় ফিরে আসল, এমন কি
তা মসজিদের অর্ধেক বরাবর হয়ে গেল ৷ আবদুর রহমান (এই হাদীসের এক রাবী) বলেন,
আমার পিতা বলেছেন, মুসা আল জুহানী আমাকে এর মত হাদীস বর্ণনা করেছেন ৷ তারপর
ইবন আসাকির মন্তব্য করেছেন, এটা যুনকার’ প্ৰত্যাখ্যাত হাদিস ৷ এর সনদে একাধিক
অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি রয়েছে ৷ ইবনুল জাওযী আল-মাওয়ুআত’ গ্রন্থে বলেন, ইবন শাহীন এই
হাদীসখানি ইবন উকদা থেকে বর্ণনা করেছেন, এরপর তিনি হাদীসখানি উদ্ধৃত করে বলেন,
এই বিওয়ায়াতটি বাতিল বা ভ্রান্ত ৷ আর এই হাদীসের রাবী ইবন উক্দ৷ অভিযুক্ত ৷ কেননা, সে
রাফেষী ছিল, সাহাবায়ে কেরামের দোষচর্চা করত ৷ খতীব বলেন, আলী ইবন মুহাম্মদ সুত্রে
তিনি বলেন আমি হামযাহ্ ইবন ইউসুফকে বলতে শুনেছি, ইবন উকদা এমন এক ব্যক্তির
সাথে উঠাবসা করত, যে সাহাবাগণের দোষচর্চায় অভ্যস্ত ছিল অথবা তিনি বলেন যে,
ন্া৷য়খায়নের১ দোষচর্চা করত ৷ ফলে আমি তাকে বর্জন করলাম ৷ দারাকুতনী বলেন, ইবন
উকদা মন্দ লোক ছিল ৷ ইবন আদী বলেন, আমি আবু বক্র ইবন আবু পালিবকে বলতে
শুনেছি, ইবন উকদা হাদীসের ব্যাপারে দীনদার নয় ৷ কেননা, সে কুফাবাসী একাধিক শায়খকে
মিথ্যা বলায় প্ররোচিত করত, এরপর তাদেরকে জাল হাদীস সম্বলিত অনুলিপি তৈরী করে দিয়ে
তা রিওয়ায়াত করতে বলত ৷ আর আমরা কুফাবাসী জনৈক শায়খ থেকে তার মিথ্যা বর্ণনার
প্রমাণ পেয়েছি ৷ হাফিয আবুবিশৃর আদ্দুলাবী তার গ্রন্থ আয্যরিয়াতৃৎ তাহিরা’ গ্রন্থে ইসহাক
ইবন ইউনুস হযরত হুসায়ন (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে,৩ তিনি বলেছেন, (একবার)
হযরত আলীর কোলে মাথা থাকা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে ওহী নাযিল হচ্ছিল ৷
এরপর তিনি পুর্বের ন্যায় হাদীস উল্লেখ করেছেন ৷ এই সনদের ইব্রাহীম ইবন হিবৃবানকে
দারাকুতনী ও অন্যান্যয়া বজন করেছেন ৷ হাফিয মুহাম্মদ ইবন নাসির আল-বাগৃদাদী বলেন,
এই বর্ণনাটি জাল’ ৷ শায়খ আবু আব্দুল্লাহ্ যাহাবী (র) বলেন, ইবন নাসিরের মন্তব্য যথার্থ ৷
আর ইবনুল জাওযী বলেন, ইবন মারদাওয়ায়হ্ দাউদ ইবন ওয়াইিজ সুত্রে আবু হুরায়রার
বরাতে হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি বলেছেন, একবার হযরত আলীর কোলে
মাথা রেখে নবী করীম (সা) ঘুমিয়ে পড়েন ৷ হযরত আলী আসরের নামায না পড়তেই সুর্য
অস্ত গেল ৷ তারপর যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘুম থেকে জাগলেন তখন তিনি তার জন্য দু আ
করলেন, ফলে আল্লাহ্ তা আল৷ সুর্যকে পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন, এবং তিনি আসরের নামায
পড়ার পর সুর্য আবার অস্ত গেল ৷ তারপর ইবনুল জাওযী বলেন, শুবা এই হা দীসেররড়াবী
দাউদকে যয়ীফ’ বলেছেন ৷ এরপর ইবনুল জাওযী বলেন, এই হাদীস জালকারীর অসতর্কতার
প্রমাণ হল যে এই হাদীসের ফযীলতের প্রতি লক্ষ্য করেছে ৷ কিন্তু তার অসারতার কথা
উপলব্ধি করেনি ৷ কেননা, সুর্য অস্ত গেলে আসরের নামায় কাযায় পরিণত হয়, আর সুর্যের
পুর্বাবস্থায় ফিরে আসা তার পুনরায় আদায় করা সাব্যস্ত করেন৷ ৷ এ ছাড়া সহীহ্ বুখারীত্বে
রাসুলুল্লাহ্ (না) থেকে বর্ণিত তআছে যে, একমাত্র হযরত ইউশা ছাড়া অন্য কারো জন্য সুর্যকে
স্থির রাখা হয়নি ৷ আল বিদায়ার গ্রন্থকার বলেন, এ হাদীসখানি তার সকল বর্ণনা সুত্রেই
যয়ীফ’ ও মুনকার’ এর একটি সুএও অন্তত একজন অজ্ঞাত পরিচয় শিয়া রাবী এবং একজন
অগ্নহণযোগ্য শিয়া রাবী থেকে মুক্ত নয় ৷ আর এ ধরনের হাদীসের ক্ষেত্রে বর্ণনা সুত্র অবিচ্ছিন্ন
সনদ মুত্তাসিল হলেও কোন এক পর্যায়ে একজন মাত্র রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয় ৷ কেননা,
হাদীসখানি এমন গ্রেণীভুক্ত যার বংনীির পর্যাপ্ত কারণ ও হেতৃ বিদ্যমান, সুতরাং অত্যন্ত
নির্ত্যযােগ্য ও বিশ্বস্ত সুত্রে তা বর্ণিত হওয়া প্রয়োজন ৷ এ হল ন্যুনতম শর্ত এর চেয়ে কম হলে
চলবে না ৷ অবশ্য আল্লাহ্ তাআলার কুদরত এবং রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সম্মান বিবেচনায় আমরা
এর সম্ভাব্যতা অস্বীকার করি না ৷ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, সুর্যকে ইউশা ইবন নুন (আ) এর
জন্য স্থির রাখা হয়েছিল ৷ আর তা ঘটেছিল তার বায়তু ল মাক্দিস অবরোধের দিন ৷ ঘটনাক্রমে
তা শুক্রবার দিবসের শেষ প্রহর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, আর শনিবারে তারা যুদ্ধ করত না ৷ এ
সময় হযরত ইউশা সুর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তা অস্ত যাওয়াৱ উপক্রম হয়েছে ৷ তখন
১শায়খায়ন দ্বারা এখানে হযরত আবু বকর ও উমরকে বুঝানো হয়েছে ৷ অনুবাদংষ্
তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, তৃমিও আদিষ্ট আর আমিও আদিষ্ট ৷ হে আল্লাহ ! আমার জন্য
এটাকে স্থির রাখুন ৷ তখন আল্লাহ তার জন্য সুর্যকে স্থির করে রাখলেন এবং তারা ৫স দিনই
বিজয় লাভ করলেন ৷
আর এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) ইউশা ইবন নুনের চেয়ে সম্মান ও মর্যাদার
শ্রেষ্ঠতর, বরং তিনি তাে সকল নবীর চইিতেও শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত ৷ কিতু৷ তার সম্পর্কে আমরা
সভ্য ও বিশুদ্ধ কথা ছাড়া বলব না ৷ এবং-যা সঠিক নয় তা তার দিকে সম্পৃক্ত করব না ৷ যদি
তা সঠিক ও যথার্থ হত, তা হলে আমরাই তা সকলের আগে বলতাম এবং বিশ্বাস করতাম ৷
আর আল্লাহ্ই আমাদের সাহায্য স্থল ৷ হাফিয আবু বকর মুহাম্মদ ইবন হাতিম ইবন যাম জুইয়া
বুখারী তার ইছবাতৃ ইমামাতি আবী বকর” গ্রন্থে বলেন, যদি কোন রাফিযী এ কথা বলে
যে, হযরত আলীর শ্রেষ্ঠতম ফযীলত এবং তার ইমামতের অকাট্য প্রমাণ হল আসমা বিনৃত
উমায়সের বর্ণিত বিওয়ায়াত, যাতে তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে ওহী
নাযিল হচ্ছিল ৷ আর সে সময় তার পবিত্র মস্তক হযরত আলীর কোলে রাখা জ্যি ৷ তখন
হযরত আলীর আসরের নামায পড়ার পুর্বেই সুর্য অস্ত গেল, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলীকে
বললেন, তুমি কি নামায আদায় করেছো? তিনি বললেন, জী না ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন, হৈ আল্লাহ! সে তো তোমার ও তোমার রাসুলের আনুগত্যে মশগুল ছিল, আপনি তার
(নামাযের) জন্য সুর্যকে ফিরিয়ে দিন ৷ হযরত আসমা বলেন, আমি তখন সুর্যকে একবার অস্ত
যেতে তারপর পুনরায় উদিত হতে দেখেছি ৷ তাহলে তাকে বলা হবে, এই হাদীস যদি সহীহ্
হতো, তাহলে তো আমাদের ভালই হত, আমরা তা দ্বারা আমাদের বিরোধী ইয়াহুদী ও
নাসারাদের বিপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারতাম, কিন্তু হাদীসখানি অত্যন্ত যয়ীফ’-এর
কোন ভিত্তি নেই ৷ আসলে এটা রাফিযীদের স্বকপোল কল্পিত জাল হাদীস, অস্ত যাওয়ার পর
যদি পুনরায় সুর্যের উদয় ঘটত তাহলে মু’মিন কাফির সকলেই তা দেখতে পেত এবং
ঐতিহাসিকগণ আমাদেরকে বর্ণনা করতেন যে, অমুক বছরের অমুক মাসের অমুক দিনে অস্ত
যাওয়ার পর সুর্য পুনরায় উদিত হয়েছিল ৷
এরপর রাফিযীদের প্রশ্ন করা হবে, আসরের নামায কায৷ হওয়ায় হযরত আলীর জন্য সুর্য
পুনরায় উদিত হল, অথচ আল্লাহ্র রাসুলের জন্য এবং সকল আনসার ও মুজাহিরদের জন্য
পুনরায় উদিত হল না ৷ যখন খন্দকের যুদ্ধের দিন তাদের সকলের যুহর, আসর ও মাগরিবের
নামায কায৷ হল এটা কি যুক্তি সম্মত কথা? এছাড়া আরেকবার নবীজী (সা) খায়বার অভিযান
থেকে ফেরার পথে আনসার ও মুজাহিরগণকে নিয়ে রাত্রের শেষ প্রহরে যাত্রা বিরতি
করলেন-এরপর হাদীসে ফজরের নামাযের সময় তাদের ঘুমিয়ে থাকার কথা এবং সুর্যোদয়ের
পর তার কাযা আদায়ের উল্লেখ রয়েছে ৷ এখন প্রশ্ন হল, তাহলে আল্লাহ্র রাসুল ও তার
সাহাবাগণের জন্য কেন রাত্রকে ফেরানাে হল না? আর এটা যদি কোন ফযীলতের বিষয় হতো,
তাহলে আল্লাহ্য় রাসুলকে তা দেয়া হত ৷ আর আলী ইবন আবু তালিবকে প্রদত্ত কোন সম্মান ও
ফযীলত আল্লাহ কেন তার নবী থেকে বারিত রাখবেন?
এরপর গ্রন্থকার বলেন, ইব্রাহীম ইবন ইয়াকুব আল জাওয্যানী বলেন, একবার আমি
মুহাম্মদ ইবন উবায়দ আত্তনাফিসিকে প্রশ্ন করলাম, ঐ ব্যক্তির সম্বন্ধে আপনি কী বলেন, যে
দাবি করে, হযরত আলীর জন্য সুর্যকে অস্ত যাওয়ার পর উদিত করা হয়েছিল যাতে তিনি
আসরের নামায পড়তে পারেন? তখন জবাবে তিনি বললেন, যে একথা বলেছে, সে মিথ্যা
বলেছে ৷ ইব্রাহীম ইবন ইয়াকুব আরো বলেন, আমি ইয়ালা ইবন উবায়দ আৎ তনাফিসীকে
প্রশ্ন করলাম, আমাদের কাছের কতিপয় লোকজন বলে, হযরত আলী হলেন রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর ওসী, তার খাতিরে অস্ত যাওয়ার পর সুর্যকে পুনরায় উদিত করা হয়েছে, তখন তিনি
বললেন, এর সবই মিথ্যা ৷
বিভিন্ন সুত্রে এই হাদীসের উপস্থাপন এবং
এ সম্পর্কে পুস্তক রচনা প্রসঙ্গে
আবুল কাসিম উবায়দুল্লাহ্ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আহমদ আল-হাসকানী এ প্রসঙ্গে
শিরোনামে বলেন, এই হাদীসখানি
আসমা বিনৃত উমায়স, আলী ইবন আবু তালিব, আবু হুরায়রা এবং আবু সাঈদ খুদরী সুত্রে
বর্ণিত আছে ৷ এরপর তা বর্ণিত হয়েছে আহমদ ইবন সালিহ আল মিসরী, আহমদ ইবন
ওয়ালীদ আল আনত ড়াকী এবং হাসান ইবন দাউদ আসমা বিনৃত উমায়স সুত্রে যে,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) খায়বা ৷র ভুমির আসৃ সাহ্বাতে যুহরের নামায পড়লেন, এরপর হযরত আলীকে
কোন প্রয়োজনে পাঠালেন, এরপর আলী যখন ফিরে আসলেন-আর রাসুলুল্লাহ্ (সা) ইতিমধ্যে
আসরের নামায পড়ে নিয়েছিলেন-তখন তিনি তার পবিত্র মস্তক হযরত আলীর কোলে রাখলেন
এবং সুর্যাস্তের পুর্বে তা আর নড়া দেন না এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আল্লাহ আপনার
বান্দা আলী তার নবীর জন্য নিজেকে আবদ্ধ রেখেছিল, সুতরাং আপনি তার জন্য দিনের আলো
ফিরিয়ে দিন ৷ আসমা বলেন, এরপর সুয উদিত হল এমনকি তা পাহাড়ের চুড়ায় দৃশ্যমান হল,
তখন হযরত আলী উঠে গিয়ে উয়ু করলেন এবং আসরের নামায পড়লেন-তারপর আবার সুর্য
অস্ত গেল ৷ এই হাদীসের সনদে অজ্ঞাত অবস্থার রাবী রয়েছেন ৷ কেননা, এই সনদে রাবী
আগুন ও তার মা সম্পর্কে এমন বিশ্বস্ততা ও স্মরণশক্তির কথা জানা নেই, যার কারণে এর
চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কোন বিষয়েও এদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণন্থযাগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে ৷
সুতরাং তাদের বর্ণিত খবর বা তথ্য দ্বারা কিভাবে এরুপ গুরুতর একটি বিষয় সাব্যস্ত হতে
পারে, অথচ সিহাহ্ সিত্তার নির্ভরযোগ্য কোন সংকলকই তা রিওয়ায়াত করেননি ৷ আল্লাহ্ই
অধিকতর জ্ঞাত ৷ আর আমরা জানি না যে, আগুনের যা তার পিতামহী আসমা বিনৃত উমায়স
থেকে তা শুনেছেন কিনা ! তারপর এই মিসরীয় রাবী তা হুসায়ন ইবন হাসান আল আমাকরের
বরাতে উল্লেখ করেছেন ৷ আর সে হল কট্টর শিয়া, একাধিক হাদীসবেত্তা তাকে যয়ীফ’ আখ্যা
দিয়েছেন ৷ সে হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছে ফুযায়ল ইবন মারয়ুক আসমা বিনৎ উমায়স
সুত্রে ৷ এছাড়া ফুযায়ল ইবন মারয়ুক থেকে একাধিক ব্যক্তি তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷ এদের
অন্যতম হলেন উবায়দৃল্লাহ্ ইবন মুসা ৷ এরপর তিনি তা রিওয়ায়াত করেছেন আবু জাফর আত্
তহােবী সুত্রে ৷ ইতিপুর্বে আমরা উবায়দৃল্লাহ্ ইবন মুসা আল আবসীর সাঈদ ইবন মাসউদ
এবং আবু উমায়্যার হাদীস সংগ্রহ থেকে আমাদের রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছি ৷ আর উবায়দৃল্পাহ্
আল আবসী শিয়া ৷ তারপর এই মিশরীয় রাবী তা রিওয়ায়াত করেছেন আবু জাফর আল
উকায়লী আহমদ ইবন দাউদ ফুযায়ল ইবন মারয়ুক সুত্রে এবং আল আপার আর
রক্কাশী থােক ৷ তাকে আর রুয়াসীও বলা হয়ে থাকে ৷ আবু আবদুর রহমান আল কুফী তিনি