গণতন্ত্র হল ‘অধিকাংশের শাসন’। পুরো বিশ্বে এখন এই সিস্টেমের জয়জয়কার। কাফিরদের পানিপড়ে দেওয়া এই অধিকাংশের শাসনের এই সিস্টেমে মুগ্ধ হয়ে অনেক ইসলামিক দল নিজেদের মানহাজ (দ্বীন কায়েমের পথ) হিসেবে বেছে নিয়েছে গণতন্ত্রকে। কোনো কথা না বাড়িয়ে শুধু আল্লাহর কিতাবেই এই ‘অধিকাংশ মানহাজের’ অবস্থা যাচাই করা যাক। মনে রাখবেন, এগুলো আসমান জমিনের রব্ব আল্লাহ রব্বুল আ’লামীনের বাণী! আর মুয়াহহিদিনদের জন্য প্রথমোল্লিখিত আয়াতটিই ‘গণতন্ত্র’ কে বাতিল করার জন্য যথেষ্ট আলহামদুলিল্লাহ।
.
“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।”
[সূরা আল-আনাম, ১১৬]
.
“…নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না।”
[সূরা বাকারাহ, ২৪৩]
.
“আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারীরূপে পাইনি; বরং তাদের অধিকাংশকে পেয়েছি হুকুম অমান্যকারী।”
[সূরা আল-আরাফ, ১০২]
.
“…তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ (গায়েব) আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না।”
[সূরা আল-আরাফ, ১৮৭]
.
“…তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট করে, কিন্তু তাদের অন্তরসমূহ তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।”
[সূরা আত-তওবাহ, ৮]
.
“…আল্লাহ নিজ কাজে প্রবল থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।”
[সূরা ইউসুফ, ২১]
.
“আমি আপন পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের ধর্ম অনুসরণ করছি। আমাদের জন্য শোভা পায় না যে, কোন বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার করি। এটা আমাদের প্রতি এবং অন্য সব লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্ত অধিকাংশ লোক অনুগ্রহ স্বীকার করে না।”
[সূরা ইউসুফ, ৩৮]
.
“তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদাত কর। সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। আল্লাহ এদের কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।”
[সূরা ইউসুফ, ৪০]
.
“আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক বিশ্বাসকারী নয়।”
[সূরা ইউসুফ, ১০৩]
.
“অধিকাংশ মানুষই ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও শিরক করে”
[সূরা ইউসুফ, ১০৬]
.
“আলিফ-লাম-মীম-রা; এগুলো কিতাবের আয়াত। যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না।”
[সূরা আর-রাদ, ১]
.
“তারা আল্লাহর নামে কঠোর শপথ করে যে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। অবশ্যই এর পাকাপোক্ত ওয়াদা হয়ে গেছে। কিন্তু, অধিকাংশ লোক জানে না।”
[সূরা আন-নাহল, ৩৮]
.
“এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।”
[সূরা আন-নাহল, ১০১]
.
“আমি এই কোরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোক অস্বীকার না করে থাকেনি।”
[সূরা বনী ইসরাঈল, ৮৯]
.
“না তারা বলে যে, তিনি পাগল? বরং তিনি তাদের কাছে সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।”
[সূরা আল-মু’মিনুন, ৭০]
.
“আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত।”
[সূরা আল-ফুরকান, ৪৪]
.
“এবং আমি তা তাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিতরণ করি যাতে তারা স্মরণ করে। কিন্তু অধিকাংশ লোক অকৃতজ্ঞতা ছাড়া কিছুই করে না।”
.[সূরা আল-ফুরকান, ৫০]
.
“আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হয়ে গেছে। আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি খেলাফ করবেন না। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।”
[সূরা আর-রুম, ৬]
.
“আপনি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।”
[সূরা আর-রুম, ৩০]
.
“আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।”
[সূরা সাবা, ২৮]
.
“বলুন, আমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং পরিমিত দেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না।”
[সূরা সাবা, ৩৬]
.
“তাদের পূর্বেও অগ্রবর্তীদের অধিকাংশ বিপথগামী হয়েছিল।”
[সূরা আস-সফফাত, ৭১]
.
.
“মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না।”
[সূরা গাফির, ৫৭]
.
“কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে সন্দেহ নেই; কিন্ত অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপন করে না।”
[সূরা গাফির, ৫৯]
.
“তিনিই আল্লাহ যিনি রাত্র সৃষ্টি করেছেন তোমাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিবসকে করেছেন দেখার জন্যে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।”
[সূরা গাফির, ৬১]
.
“আপনি বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন, অতঃপর মৃত্যু দেন, অতঃপর তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না।”
[সূরা আয-যাতিয়া, ২৬]
.
.
শেষকথা
আল্লাহর দ্বীনের দোহাই দিয়েই শাসনযন্ত্রে যেতে চায় কিছু মানুষ, কিন্তু তারা আল্লাহর কিতাবকেই কিনা উপেক্ষা করে বসে। কতই না ভ্রান্তিতে আছে তারা! এসব মানুষেরা হল বনী ইসরাঈলের সেইসব গোমরাহ অভাগাদের ন্যায় যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন –
“তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ নিবে আর কিছু অংশ পরিত্যাগ করবে? যদি এমন করো তবে জেনে রাখো, পৃথিবীতে তোমরা হবে চরম লাঞ্ছিত, বঞ্চিত এবং আখিরাতে তোমাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [সূরা বাকারাহ, ৮৫]
সত্য এলে মিথ্যা বিলুপ্ত হয়। আর অহংকার হল সত্য জেনেও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দলান্ধতা, অহংকার ইত্যাদি যাবতীয় জাহিলিয়া থেকে হিফাজত করুন এবং সিরতল মুস্তাকিমে অটল অবিচল থাকার তাওফিক দিন। আমিন। আর এরপরও যারা অধিকাংশের মতামত অনুসরণ করে সমাজে চলতে চায়, অধিকাংশের স্রোতে গা ভাসাতে চায় বা অধিকাংশের মতামত নিয়ে সমাজ বা রাষ্ট্রের মাথা নির্বাচন করতে চায়, তাদেরকে এক সাগর সমবেদনা। তারা কিতাবের উক্ত আয়াতগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর দ্বীন কায়েমে নেমেছে! খেয়াল করলে দেখা যায়, তারা কখনই সম্মানিত হতে পারে নাই, বরং পদে পদে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিতই হয়ে গেছে সবসময়। কিন্তু তারপরও তাদের বোধদয় হয় না সুবহান-আল্লাহ!
গণতন্ত্রের যৌক্তিক ভ্রান্তিগুলোর কথা পরে, মুসলিমদের জন্য তো আল্লাহর কিতাব আর রাসূলের ﷺ সুন্নাহ থেকে প্রমাণই যথেষ্ট! কিন্তু এরপরও অধিকাংশ মানুষ গাফেলই থাকবে সেকথাও আমাদের জানা আছে।
“আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক বিশ্বাসকারী নয়।” [সূরা ইউসুফ, ১০৩],
“আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত।” [সূরা আল-ফুরকান, ৪৪]
অতএব, গুরাবাদের জন্য সুসংবাদ।
হক্বিকাতুত তাজবীদ এই কিতাব বাংলা পি ডি এফ দিতে পারবেন কি