হে লুয়াই গোত্রের লোকেরা ! তোমরা আনুগত্য করো না তোমাদের গোমরাহ লোকদের ৷
ফিরে এসো তোমরা ইসলামে, সরল পথে ৷
আমার আশংকা হয় তোমাদের উপর নাযিল হবে আবার তখন তোমরা লাঞ্ছিত হয়ে সন্তান
হারানাের জন্যে রােদন করবে ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আবু জাহ্ল ইবন হিশাম তার প্রতি আল্পাহ্র অভিসম্পাত হোক-
এর জবাবে বলে-
এসব রাগ-ণ্লাভ আর অজ্ঞতার কারণসমুহ নিয়ে আমি অবাক, বিরোধ আর অর্থহীন কথায়
যারা যেতে উঠে, তাদের জন্য আমি অবাক হই ৷
যারা বিসর্জন দেয় পুর্ব পুরুষের রীতিনীতি, (তাদের জন্য বিস্ময়) বাবা ছিলেন বংশ-মর্ষাদা
আর নেতৃত্-কর্তৃত্বের অধিকারী ৷
অধিকাংশ আলিমই এই দু’টি কবিতা হামযা ও আবু জাহ্লের হওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি
জানিয়েছেন ৷
বুণ্ডুয়াতের যুদ্ধ
ইবন ইসহাক বলেন : এরপর রাসুলুল্পাহ্ (স) দ্বিতীয় হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে
কুরায়শের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বের হন ৷ ইবন হিশাম বলেন : এবং সাইব ইবন উছমান ইবন
মাযউনকে মদীনায় তার স্থলাভিষিক্ত করে যান ৷ পক্ষাম্ভরে ওয়াকিদী বলেন : মদীনায়
স্থলাভিষিক্ত করেন সাআদ ইবন ঘুআযকে ৷ আর রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সঙ্গে ছিলেন দু’শ’
আরােহী আর তীর পতাকা ছিল সাআদ ইবন আবু ওয়কােসের হাতে ৷ আর রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
লক্ষ্য জ্যি কুরায়শের বণিক দলের উপর আক্রমণ করা ৷ এ দলে উমাইয়া ইবন খাল্ফ এবং তার
নেতৃত্বে একশ’ ব্যক্তি এবং দু’ হাজার পড়াচ শ’ উট ছিল ৷
ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (স) রিজবী পাহাড়ের দিক থেকে বুওয়াত পৌছেন ৷
সেখান থেকে মদীনা প্রত্যাবর্তন করেন ৷ এ অভিযানে কোন সংঘর্ষ হয়নি ৷ তিনি সেখানে
রবিউছ-ছানী মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো এবং জুমাদাল উলার কিছু সময় কাটড়ান ৷
আশীরার যুদ্ধ
ইবন হিশাম বলেন : এ যাত্রার নবী করীম (স) আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদকে
মদীনায় শাসনকর্তা নিযুক্ত করে যান ৷ আর ওয়াকিদী বলেন, রাসুলুল্পাহ্ (না)-এর পতাকা কাি
হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিবের হাতে ৷ তিনি বলেন, সিরিয়াগামী কুরায়শের বণিক দলকে
ঠেকাবার জন্যই রাসুলুল্লাহ্ (না) অভিযানে বের হন ৷ ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্পাহ্ (সা) বনু
দীনারের পথ ধরে চলেন ৷ এরপর ফাইফা আল-খিয়ার-এর উচু ভুমির দিকে যান এবং ইবন
আযহার-এর বাতহা প্রান্তরে একটা বৃক্ষের নীচে অবতরণ করেন ৷ এ স্থানকে বলা হতো যাতুস
সাক ৷ সেখানে নামায আদায় করেন ৷ পরে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয় ৷ সেখানে তার
জন্যে আহার্য তৈয়ার করা হলে তিনি এবং তার সঙ্গীরা আহার করেন ৷ সেখানকার চুলার চিহ্ন
সর্বজন বিদিত ৷ মুশায়রিব নামক কুয়াে থেকে তার জন্য পানি আনা হয় ৷ এরপর তিনি বাংলা
হন খালায়েক স্থানটি র্বায়ে রেখে এবং আবদুল্লাহ পিরিসঙ্কটের পথ ধরে গমন করেন ৷ এরপর
সাববুশ শাদ হয়ে মিলাল’ নামক স্থানে অবতরণ করেন ৷ তিনি সেখানে মুজতামাউয যাবুআ
নামক স্থানে অবস্থান নেন ৷ এরপর ফড়ারশা মিলাল হয়ে বাখীরাতুল ইয়ামাম-এর পথ ধরে
চলেন ৷ তারপর সেখান থেকে পথের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে বাতনে ইয়াম্বু-এর আশীরা নামক
স্থানে অবস্থান নেন এবং জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখরার কিছু দিন কাটান ৷ সেখানে তিনি
বনী মুদলাজ এবং বনী মুদলাজের মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতা করে মদীনয় প্রত্যাবর্তন করেন ৷ এ
ক্ষেত্রেও কোন সংঘর্ষ হয়নি ৷
ইমাম বুখারী আবদুল্লাহ সুত্রে আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করে বলেন, আবু ইসহাক
বলেনঃ আমি যায়দ ইবন আরকামের পাশে ছিলাম ৷ তাকে জিজ্ঞেস করা হল, রাসুলুল্লাহ্ (স)
কতটা যুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন ? তিনি বললেন : ১ ৯টায় ৷ আমি বললাম , আপনি তার
সঙ্গে ক’টাতে শরীক ছিলেন ? তিনি বললেন, ১ ৭টায় ৷ আমি বললাম, এগুলোর মধ্যে কোনটা
প্রথম ছিল ? তিনি বললেন, আল-আশীর বা আল-আসীর ৷ বিষয়টা আমি কাতাদার সঙ্গে
আলোচনা করলে তিনি বললেন, আল-আশীর ৷ এ হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, প্রথম
পায্ওযা ছিল আল-আশীরা ৷ এটাকে আশীরা, আসীরা, আশীর এবং আশীরাও বলা হয়ে থাকে ৷
তবে যদি এর অর্থ হয় সে সব গায্ওয়া , যাতে নবী করীম (স) স্বয়ং অংশঃত্ত্বহণ করেছেন, তবে
তার প্রথমটা হল আল-আশীরা ৷ এ যুদ্ধে যায়দ ইবন আরকাম অংশগ্রহণ করেন ৷ তখন আর
তার পুর্বে এমন অন্য অভিযান হওয়াটা নাকচ হবে না যাতে যায়দ ইবন আরকাম অংশগ্রহণ
করেননি ৷ এভাবে মুহাম্মদ ইবন ইসহাকের বর্ণনা এবং এ হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত
হবে ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, এ দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলীকে লক্ষ্য করে যা বলার
বলেছিলেন ! ইয়াযীদ ইবন মুহাম্মদ সুত্রে আম্মার ইবন ইয়াসির থেকে তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে
যে, আমার বলেন, বাতনে ইয়াম্বু-এর গাবওয়া আল-আশীরায় আমি আলী (রা)-এর সফর-সঙ্গী
ছিলাম ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না) সেখানে অবতরণ করে এক মাস অবস্থান করেন ৷ সেখানে তিনি বনী
মুদলাজ এবং তাদের মিত্র গোত্র বনী যামরার সঙ্গে সন্ধি করেন ৷ তখন আলী ইবন আবু তালিব
আমাকে বলেন, বনী মুদলাজের যেসব লোক একটা কুয়াের কাছে কাজ করছে হে আবুল
ইয়াকযান! আমরা কি তাদের কাছে যেতে পারি না ? সেখানে তারা কেমন কাজ করছে আমরা
তা প্রত্যক্ষ করবো ৷ আমরা তাদের কাছে গেলাম এবং কিছু সময় তাদের কাজ প্রত্যক্ষ
করলাম ৷ এখানে নিদ্র৷ আমাদেরকে আচ্ছন করে এবং আমরা মাটিতে শুয়ে পড়ি ৷ সেখানে
আমরা ঘুমিয়ে পড়ি ৷ আল্লাহর কসম, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার পবিত্র পা দিয়ে আমাদেরকে নাড়া
দিলে আমরা জাগ্রত হই ৷ আমাদের পায়ে মাটি লেগেছিল ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলীকে
বললেন, হে আবু তুরাব! কারণ তার গায়ে মাটি লেগেছিল ৷ আমরা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে
তাকে জানালাম ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : আমি কি যে হতভাপা দৃ’ জন লোক সম্পর্কে
তেড়ামড়াদেরকে জানানো ? আমরা বললাম , অবশ্যই ইয়া রাসুলাল্লাহ্৷ তিনি বললেন, ছামুদ গোত্রের
উহায়মির, যে উষ্টী বধ করেছিল, আর যে ব্যক্তি, যে তোমার এ অঙ্গে আঘাত করবে ৷ হে
আলী একথা বলতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলীর মাথায় তার হাত রাখলেন ৷ অবশেষে এটা
রক্তে রঞ্জিত হবে ৷ একথা বলে তিনি দাড়ির উপর তীর পবিত্র হাত স্থাপন করেন ৷ এ সনদে
হাদীসটি গরীব পর্যায়ের ৷ তবে অন্য হাদীসে এর সমর্থন আছে-ন্ আলী (রা)-এর নাম আবু
তুরাব রাখার পক্ষে ৷ যেমন বুখারী শরীফে আছে : আলী (রা) একদিন ফাতিমড়াৱ উপর রাগ
করে ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদে ঘুমান ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাদের ঘরে এসে ফাতিমড়ার নিবল্ট
আলী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাগ করে তিনি মসজিদে চলে গিয়েছেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (স) মসজিদে উপস্থিত হয়ে তাকে জাগ্রত করেন এবং বলেন, হে আবু তুরাব, উঠে
দীড়াও ! হে আবুতুরাব, উঠে দীড়াও ৷
প্রথম বদর যুদ্ধ
ইবন ইসহাক বলেন : পাযওয়া আশীরা থেকে প্রত্যাবর্তা করে রাসুলুল্পাহ্ (সা) মদীনায়
কয়েক দিন মাত্র অবস্থান করেন, যা দশ পর্যন্তও পৌছেনি ৷ এসময় কুরয ইবন জাবির
আল-ফিহ্রী মদীনায় চারণভুমিতে হামলা চালায় ৷ তখন রাসুল (না) তার তালাশে বের হয়ে
বদর-এর উপকণ্ঠে অবস্থিত সাফওয়ান নামক স্থানে উপস্থিত হন ৷ আর এটাই হল পায্ওয়া বদর
আল উলা প্রথম বদর যুদ্ধ ৷ কিন্তু কুরয সে স্থান অতিক্রম করে চলে যায় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)
তার নাপাল পাননি ৷ ঐতিহাসিক ওয়াকিদী বলেন, রাসুল (না)-এর পতাকাবাহী ছিলেন আলী
(রা) ৷ ইবন হিশাম এবং ওয়াকিদী বলেন : এসময় মদীনায় যায়দ ইবন হারিসাকে তিনি
স্থলাভিষিক্ত করে যান ৷
ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) ফিরে আসেন এবং সেখানে জুমাদাছ ছানী, রজব ও
শাবান এ তিন মাস অবস্থান করেন ৷ আর এসময় তিনি সাআদ (রা)-এর নেতৃত্বে ৮ জন
মুহাজিরের এবস্টা দলকে প্রেরণ করেন ৷ কোন কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির মতে সাআদকে প্রেরণ করা
হয় হামযার পর ৷ তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন ৷ কোন সংঘর্ষ হয়নি ৷ সংক্ষেপে ইবন
ইসহাক এতটুকু উল্লেখ করেছেন ৷ এ তিনটি বাহিনী সম্পর্কে ওয়াকিদীর বর্ণনা ইতোপুর্বে উল্লেখ
করা হয়েছে ৷ অর্থাৎ রমাযান মাসে হামযার মারিয়া, শাওয়াল মাসে উরায়দার মারিয়া এবং
যিলকাদ মাসে সড়াআদের সারিয়া ৷ আর এসবই সংঘটিত হয় হিজরী প্রথম সনে ৷
ইমাম আহমদ আবদুল মুতড়াআল ইবন আবদুল ওয়াহহাব সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস
(রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করলে জুহায়না তার নিকট আগমন
করে বলে, আপনি তো আমাদের এলাকায় অবস্থান করছেন, তাই আমাদেরকে এ মর্মে
প্রতিশ্রুতি দেন যে, আমরা এবং আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার নিকট নির্ভয়ে
যাতায়াত করতে পারবো ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা) তাদের সঙ্গে এ মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলে তারা
ইসলাম গ্রহণ করে ৷ রাবী বলেন, রজব মাসে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাদেরকে প্রেরণ করেন ৷