আমর ইবনুল আস, খালিদ ইৰ্ন আলওয়ালীদ ও উছমান ইবন তাল্হার ইসলাম
গ্রহণ
ইবন ইসহাকের বরাতে পঞ্চম হিজরীর ঘটনাবলীর আলোচনায় এর ৰুসাংশিক বর্ণনা দেওয়া
হয়েছে ৷
হাফিয বায়হাকী — আমর ইবনুল আস (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, “আমি
ছিলাম ইসলামের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন ৷ মুশরিকদের পক্ষে বদবে উপ ত ছিলাম; কিন্তু সে যুদ্ধে
প্রাণে রক্ষা পেয়ে যাই ৷ এরপর উহুদে অংশ নেই এখানেও রক্ষা পেয়ে যাই ৷ এরপর খন্দকের
যুদ্ধে হাযির হই ৷ তখনও বেচে যাই ৷ মনে মনে বলতে লাগলাম, কত আর অপমানিত হব ৷
আল্লাহ্র শপথ ! মুহাম্মাদ কুরায়শদের উপর অবশ্যই বিজয় লাভ করবেন ৷ তখন আমার যা কিছু
আছে তা নিয়ে কয়েক সদস্যের একটি ক্ষুদ্র দলের সাথে মিশে গেলাম এবং লোকজনের সাথে
দেখা সাক্ষাৎ করাও কমিয়ে দিলাম ৷ যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা ) হুদায়বিয়া গমন করলেন ও সন্ধি করে
ফিরলেন এবং কুরায়শরাও মক্কায় প্রতাবর্তন করল, তখন আমি বলতে লাগলাম , “আগামী বছর
মুহাম্মাদ (সা) তীর সাহাবীদেরকে নিয়ে বিজয়ীর বেশে মক্কা প্রবেশ করবেন ৷ তাই মক্কা বা তারেক
কোথায়ও অবস্থানের জন্য অনুকুল থাকবে না ৷ ইসলামের জন্যে বেরিয়ে পড়াই এখন উত্তম ৷
আর আমি বুঝি ইসলাম থেকে বহু পিছনে পড়ে রয়েছি ৷ আবার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যদি
কুরায়শরা সকলেই মুসলমান হয়ে যায় তাহলেও আমি মুসলমান হব না ৷ তাই আমি মক্কা আগমন
করলাম এবং আমার গোত্রের কিছু লোককে একত্রিত করলাম ৷ আর তারাও আমার সিদ্ধান্তে
একাত্মতা ঘোষণা করল ৷ তারা আমার অত্যন্ত অনুগত ছিল ৷ আর কোন সমস্যা দেখা দিলে তারা
আমাকেই পুরোভাগে রাখতাে ৷ একদিন তাদেরকে আমি বললাম, তোমরা আমাকে তোমাদের
মাঝে কিরুপ মনে কর ? তারা বলল, “আপনি আমাদের মাঝে বুদ্ধিমান এবং জীবন রক্ষার এবং
সাফল্য অর্জনে আপনিই আমাদের প্রধান ৷ ” তিনি বলেন, “আমি তাদেরকে বললাম , আল্লাহ্র
শপথ, মুহাম্মাদের ব্যাপারটি এখন আমাদের কাছে অতিশয় গুরুত্বপুর্ণ এবং তার ব্যাপারটি
আমাদের সমস্ত কাজ কারবারকে দারুণ প্রভাবিত করছে ৷ সুতরাং আমি তোমাদের কাছে একটি
প্রস্তাব রাখতে চাই ৷ তারা বলল, সেটা কী ? আমি বললাম, চল, আমরা নাজ্জাশীর সাথে যোগ
দেই এবং তার সাথে আমরা থাকি ৷ যদি মুহাম্মাদ বিজয় লাভ করেন, তাহলে আমরা নাজ্জাশীর
কাছে থাকর এবং নাজ্জাশীর অধীনে থাকর যা আমাদের জন্যে মুহাম্মদের অধীনে থাকার চাইতে
অনেকগুণে ভাল ৷ আর যদি কুরায়শরা জয়লাভ করে, তাহলে আমরা যে তাদের সংগে আছি এটা
তো তারা জানেই ৷ তারা সমস্বরে বলল, এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত ৷ আমি আবার বললাম, চল
যাওয়ার কালে নাজ্জার্শীর দরবারে আমাদের দেশ হতে কিছু উপচৌকন নিয়ে যাই ৷ আমাদের দেশ
থেকে যেসব হাদিয়া সাধারণত ঐ দেশে যায় এগুলোর মধ্যে চামড়াই হল প্রধান ও তার কাছে
অতিপ্রিয় ৷ এই সিদ্ধান্ত মৃত তাবিক আমরা বহু চা ৷মড়৷ সংগ্রহ করলাম এবং বের হয়ে পড়লাম ও
নাজ্জাশীর ওখানেগ্ গিয়ে পৌছলাম ৷ আল্লাহর শপথ, আমরা যখন তার কাছে পৌছলাম, তখন
সেখানে ছিল আমর ইবন উমাইয়া আদ দিমারী ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)ত তাকে একটি পত্র সহকারে
নাজ্জাশীর নিকট প্রেরণ করেছিলেন তাতে আবু সুফিয়ান (রা) এর কন্যা উম্মে হাবীবার বিয়ের
প্রভাব ছিল ৷ তারপর তিনি নাজ্জাশীর কাছে গেলেন এবং পরে বের হয়ে আসলেন ৷ আমি আমার
সাথীদেরকে বললাম, ইনি হচ্ছেন আমর ইবন উমাইয়া আদ-দিমারী ৷ যদি আমি কিছুক্ষণ পুর্বে
নাজ্জাশীর কাছে প্রবেশ করতে পারতাম এবং তাকে বলতে পারতাম তাহলে তিনি তাকে আমার
হাতে সােপর্দ করতেন এবং আমি তাকে হত্যা করতে পারতাম ৷ যদি আমি তা করতে পারতাম ৷
তাহলে কুরায়শরা আমাদের প্রতি প্রসন্ন হত ৷ আমি তাদের থেকে বাহব৷ পেতাম এবং মুহাম্মাদের
দুতকে হত্যা করতে পারতাম ৷ এরপর আমি নাজ্জাশীর কাছে প্রবেশ করলাম এবং আমাদের প্রথা
অনুযায়ী তাকে সিজদা করলাম ৷ তিনি বললেন স্বাগতম স্বাগতম হে আমার বন্ধু ! তোমার দেশ
হতে কি কোন হাদিয়া নিয়ে এসেছ ? আমি বললাম, জী হ্যা রাজন ! আপনার জন্য অনেকগুলো
চামড়া হাদিয়া স্বরুপ নিয়ে এসেছি ৷ত তারপর এগুলো আমি তার কাছে পেশ করলাম ৷ তিনি
এগুলো খুবই পসন্দ করলেন এবং তার সভাসদদের মধ্যেও কিছুটা ভাগ করে দিলেন ৷ আর
বাকীগুলাে একটি স্থানে রাখতে বলেন এবং তালিকাভুক্ত করে সংরক্ষণের জন্যে নির্দেশ দিলেন ৷
যখন আমি তাকে পােশ মেজাষে দেখতে পেলাম তখন বললাম, রাজন ! আমি একটি লোককে
দেখতে পেলাম আপনার কাছ থেকে বের হয়ে গেল ৷ যে আমাদের শত্রুর দুত ৷ সেই শত্রু
আমাদের উপর যুলুম করেছে এবং আমাদের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করেছে ৷ তাই
লোকটাকে আমার হাতে তুলে দিন যাতে করে আমি তাকে হত্যা করতে পারি ৷ এ কথা শুনে
নাজ্জাশী রেগে গেলেন এবং আমার উপর হাত উঠালেন ৷ তিনি আমার নাকে এত জোরে আঘাত
করলেন যে, আমার মনে হয়েছিল যেন তা তে ঙ্গে গেছে ৷ নাক দিয়ে জোরে রক্ত পড়তে লাপল ৷
আর আমি আমার কাপড় দ্বারা তা মুছতে লাগলাম ৷ আমি এত অপমানিত বোধ করলাম যে, যদি
আমার জরু ন ভুমি বিদীর্ণ হয়ে যেত তাহলে আমি মাটির ভিতর ঢুকে পড়তাম ৷ এরপর আমি
বললাম, হে রাজন ! যদি আমি ধারণা করতে পারতাম যে, আমি যা “বলেছি তাতে আপনি ক্ষুদ্ধ
হবেন, তাহলে আমি কোনদিনও এ কথা মুখে উচ্চারণ করতাম না ৷ নাজ্জাশী তাতে একটু লজ্জিত
হলেন এবং বললেন, হে আমর ! তুমি আমার কাছে আবেদন করছ এমন লোকের দুতকে হত্যা
করার জন্যে, তোমার হাতে তুলে দেয়ার জন্যে যার কাছে নামুসে-আকবর’ আসা যাওয়া করেন ৷
যেমন৩ তিনি আসা যাওয়া করতেন হযরত মুসা (আ) এর কাছে এবং যিনি হযরত ৩ঈসা (আ) এর
কাছেও আসতেন ৷ আমর বলেন এরপর আল্লাহ তা মালা আমার অন্তরে যা কিছু ছিল তা
পরিবর্তন করে দিলেন ৷ আমি আমার নিজেকে সম্বোধন করে বলতে লাপলাম আরব ও অনারব
সকলেই যে সত্যটি উপলব্ধি করেছে তুমি তার বিরোধিতা করহু ৷ এরপর আমি বাদশাকে