করছিলেন সেই পাত্রটি সঙ্গে নিয়ে তিনি চলে আসেন এবং আল্লাহ্র কথা শুনে গৃহে ফিরে যান ৷
আর আল্লাহ্র নবী বললেন : কার ঘর আমাদের সবচাইতে কাছে ? আবু আইউব (রা) বললেন :
হে আল্লাহর নবী ৷ আমার ঘর ৷ এ আমার গৃহ, আর এ আমার গৃহের দরজা ৷ বললেন : যাও,
আমাদের বিশ্রামের আয়োজন কর ৷ তিনি যান এবং আয়োজন করে ফিরে এসে বলেন :
ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমি ব্যবস্থা করেছি ৷ আপনারা দু’জন চলুন এবং বিশ্রাম নিন ৷ আল্লাহর
নবী (সা) আগমন করলে আবদুল্লাহ ইবন সালাম খিদমতে হাযির হয়ে বলেন :
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর সত্য নবী এবং আপনি আগমন করেছেন
সত্যসহ ৷” আর ইয়াহুদীরা আসে যে, আমি তাদের নেতার পুত্র নেতা এবং আমি তাদের মধ্যে
সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী এবং সবচেয়ে বেশী জ্ঞানীর সন্তান ৷ আপনি তাদের আহ্বান করুন এবং
জিজ্ঞেস করুন ৷ তারা এসে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর দরবারে হাযির হলে রসৃলুল্লাহ্ (সা) তাদেরকে
বললেন :
হে ইয়াহুদী সমাজ! দুঃখ তোমাদের জন্য ৷ তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর ৷ সে আল্লাহর
কসম, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ সেই ৷ তোমরা তাে ভাল করেই জান যে, আমি সত্যি
সত্যিই আল্লাহ্র রাসুল ৷ তোমরা এটাও জান যে, সত্য নিয়েই আমার আবির্ভাব হয়েছে ৷
সুতরাং ইসলাম গ্রহণ করো ৷ তারা বললো, আমরা তা জানি না (অর্থাৎ আপনি যে আল্লাহর
রাসুল ৷ তাতো আমাদের জানা নেই) ৷ কথাটা তারা তিনবার উচ্চারণ করে ৷ অনুরুপভাবে ইমাম
বুথারী আব্দুস সামাদের দিকে সম্পৃক্ত না করে এককভাবে মুহাম্মদ সুত্রে হাদীছঢি বর্ণনা
করেছেন ৷
ইবন ইসহাকের আরো একটা বর্ণনা
ইবন ইসহাক ইয়াযীদ ইবন আবু হাবীব সুত্রে আবুআইউব (রা) থেকে বর্ণনা করেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন আমার গৃহে উঠেন, তখন তিনি নীচের তলায় অবস্থান করেন ৷ আমি
এবং উম্মু আইউব (অর্থাৎ আমার শ্রী) অবস্থান করি উপর তলায় ৷ তখন আমি বললাম, ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ ৷ আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোন ! আমি উপর তলায় থাকবাে আর
আপনি থাকবেন নীচতলায়, এটা আমার নিকট অসহ্য এবং জঘন্য বেয়াদবী ৷ তাই আমি চাই
যে, আপনি উপরে চলে আসুন এবং আমি নীচে নেমে যাই ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন :
হে আবু আইউব ! আমি ঘরের নীচতলায় অবস্থান করলে তাহবে আমি এবং যারা আমাদের
কাছে আসা-যাওয়া করবেন, তাদের জন্য সুবিধাজনক ৷ তাই রাসুলুল্লাহ্ (সা) গৃহের নীচতলায়
অবস্থান করলেন, আর আমরা অবস্থান করতে থাকি উপর তলায় ৷ একদিন একটা বড় পানির
পাত্র ভেঙ্গে গেল যাতে পানি ছিল ৷ তখন আমি এবং উম্মু আইউব এবন্টা চাদর বা লেপ নিয়ে
দাড়ায় ৷ আর আমাদের ঘরে কেবল একটা চাদর ছিল-যাতে চাদর পানি চুষে নেয়, যেন তা
নীচে রাসুলের গায়ে পতিত হয়ে তাকে কোন কষ্ট না দেয় ৷ বর্ণনাকারী আবু আইউব বলেন :
আমরা রাসুল (না)-এর রাত্রের খাবার পাকাতাম এবং তার কাছে প্রেরণ করতাম ৷ তিনি খাবার
থেয়ে বাড়তি অংশ ফেরত পাঠালে বরকতের আশায় আমি এবং উম্মু আইউব খুজে রেড়াতাম
কোথায় রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর হাত পড়েছে ৷ যেখানে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর হাত পড়েছে
বরকতের আশায় আমরা সেখান থেকে থেতাম ৷ এক রাত্রে আমরা তার জন্য খাবার পাঠালাম,
তাতে ছিল রসুন বা পিয়াজ ৷ ফলে তিনি খাবার ফেরত পাঠালেন ৷ আমরা তাতে তার হাত
দেয়ার কোন চিহ্নই দেখতে পেলাম না ৷ বর্ণনাকারী বলেন, আমি বা’াকুল হয়ে তার কাছে ছুটে
আসি এবং আরব করি : ইয়া রড়াসুলাল্লাহ্ ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ, আপনি
রাত্রের খাবার ফেরত দিয়েছেন, তাতে আপনার হাত রাখার চিহ্ন পেলাম না ৷ তিনি বললেন :
আমি খাদ্যে এ গাছের গন্ধ পেয়েছি ৷ আমি তাে এমন এক ব্যক্তি, যে মঙ্গোপনে কথা বলে
(আল্লাহ্ বা ফেরেশতার সঙ্গে) ৷ তবে তোমরা তা খেতে পার ৷ বর্ণনাকারী আবু আইউব (রা)
বলেন, আমরা তা আহার করি, কিন্তু পরবত্তীকািলে আমরা আর তীর খাদ্যে পিয়াজ-বলুন
ব্যবহার করিনি ৷
অনুরুপভাবে ইমাম বায়হাকী লায়ছ ইবন সাআদ সুত্রে আবু আইউব (না) থেকে হাদীছটি
বর্ণনা করেন ৷ আবু বকর ইবন শায়বাও ইউনুস ইবন মুহাম্মদ আল-মুআদ্দাব সুত্রে লায়ছ (র)
থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷
ইমাম বায়হাকী (র)-ও আফলাহ এর বরাতে আবু আইউব থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷
আবু আইউব বিচলিত হয়ে উপরে রাসুলের নিকট গিয়ে জানতে চাইলেন : রসৃন কি হারাম !
রাসুল বললেন
না, হারাম নয়, তবে আমি তা পসন্দ করি না ৷ তখন আবু আইউব বললেন : আপনি যা
অপসন্দ করেন, আমিও তা অপসন্দ করি ৷ রাবী বলেন, নবী (না)-এর নিকট ফেরেশতা আগমন
করতেন ৷ আহমদ ইবন সাঈদ সুত্রে ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ বুখারী এবং মুসলিম
শরীফে হযরত আনাস ইবন মালিক (বা) থেকে বর্ণনা প্রমাণিত আছে যে, তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট বদরে-অন্য বর্ণনায় বদর ( ) ;প্রু )-এর স্থলে কিদ্র ( এাদ্বু) অর্থাৎ
ডেগ আছে কিছু সবজি তরকারি হাযির করা হলে বর্ণনাকারী বলেন, তিনি জানতে চাইলেন
তাতে কী আছে ? তা র্তাকে জানান হয় ৷ তিনি দেখে তা খাওয়া অপসন্দ করলেন ৷ তবে
রাসুলুল্লাহ্ (না) বললেন :
তুমি খেতে পার ৷ কারণ, আমি এমন সত্তার সঙ্গে সঙ্গোপনে কথা বলি, যাদের সঙ্গে
তোমরা কথা বল না !
ওয়াকিদী বর্ণনা করেন যে, আবু আইউবের গৃহে রাসুলুল্লাহ্ (সা) অবস্থানকালে আসআদ
ইবন যুরারা সেখানে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে অবস্থান করেন এবং আবু আইউব রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর উটনীর রশি ধারণ করেন আর উটনীটি তার নিকটই রয়ে যায় ৷
হযরত যায়দ ইবন ছাবিত (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবু
আইউবের গৃহে অবস্থানকালে সর্বপ্রথম তার সমীপে যে হাদিয়া পেশ করা হয়, তা আমি বহন
করে আমি ৷ তা ছিল একটা পেয়ালায় কিছু রুটি এবং দুধ ও ঘি দ্বারা তৈয়ার করা ছায়ীদ ৷ আমি
বলি, আমার আম্মা এ পেয়ালা প্রেরণ করেছেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন :
“আল্লাহ্ তােমড়াতে বরকত দান করুন ৷” এ বলে তিনি তার সাহাংবীদেরকে ডাকলে তারা
সকলে আহার করেন ৷ এরপর আসে হযরত সাআদ ইবন উবাদার ছায়ীদ আর গোশৃতের শুরুয়া
ভর্তি পেয়ালা ৷ এমন কোন রাত ছিল না, যে রাতে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর ঘরের দরজায় হাদিয়ার
খাদ্যবাহী তিন-চারজন একের পর এক উপস্থিত থাকতেন না ৷ আবুআইউবের গৃহে রাসুলুল্লাহ্
(সা) সাত মাস অবস্থান করেন ৷ বর্ণনাকারী বলেন : আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকালেই
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর আযাদকৃত গোলাম যায়দ ইবন হারিছা এবং আবু রাফিকে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
দু’টি উট এবং ৫শ’ দিরহামসহ প্রেরণ করেন রাসুলের কন্যাদ্বয় ফাতিমা আর উম্মু কুলছুম,
নবী-সহধর্মিণী সাওদা বিনৃত যড়ামআ এবং উসামা ইবন যায়দকে নিয়ে আমার জন্য ৷ আর
রাসুলের কন্যা রুকায়া স্বামী উছমাংনর সঙ্গে হিজরত করেন ৷ আর যয়নব ছিলেন মক্কায় স্বামী
আবুল আস ইবন রাবীর সঙ্গে ৷ তাদের সঙ্গে আগমন করেন যায়দ ইবন হারিছার শ্রী উম্মু
আয়মান ৷ তাদের সঙ্গে আবু বকরের পরিবার-পরিজন নিয়ে বের হন আবদুল্লাহ্ ইবন আবু
বকর, তাদের মধ্যে উম্মুল যু’মিনীন আইশা সিদ্দীকা (রা)-ও ছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখনো
উম্মুল মু’মিনীন আইশা (বা) এর সঙ্গে বাসর করেননি ৷
ইমাম বায়হাকী আলী ইবন আহমদ সুত্রে আবদুল্পাহ্ ইবন ঘুবায়র থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ্ (না) মদীনায় আগমন করলে জাফর ইবন মুহাম্মদ ইবন আলী এবং হাসান ইবন
যায়দ এর গৃহের মধ্যস্থলে তার উটনীটি বসে পড়ে ৷ তখন লোকেরা হাষির হয়ে তাদের নিজ
নিজ ঘরে নবী করীম (সা)-কে আহ্বান জানান ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি আবু আইউবের ঘরে উঠেন ৷
আবু আইউব আনসারী উটের পৃষ্ঠে বসার গদি তার গৃহে নিয়ে যান ৷ এরপর জনৈক ব্যক্তি এসে
আরয করেন : ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি কোথায় অবস্থান করবেন ? প্রশ্ন করলে তিনি জবাব
দিলেন :
“মানুষ সেখানেই থাকে, যেখানে তার বাহনের গদি থাকে ৷” রাসুলুল্লাহ্ (সা) কুবায়
মসজিদ নির্মাণ পর্যন্ত ১২ রাত্রি ছাপড়ায় অবস্থান করেন ৷ আবু অইিউব থালিদ ইবন যায়দের
এক বিরাট সম্মান ও মর্যাদার বিষয় যে, তার গৃহেই মদীনায় রাসুলুল্পাহ্ (সা) অবস্থান
করেছিলেন ৷
ইয়াযীদ ইবন আবু হাবীব সুত্রে মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন আবদৃল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রা)
থেকে বর্ণিত আছে যে, আবু আইউব বসরায় আগমন করলে তখন সেখানে ইবন আব্বাস
ছিলেন আলী ইবন আবু তালিবের পক্ষ থেকে বসরার শাসক ৷ ইবন আব্বাস (বা) তার গৃহ
থেকে বের হয়ে আইউবকে সসম্মানে নিজ ঘরে প্রবেশ করলে-যেমনটি আবু আইউব
রাসুলুল্লাহ্কে তার গৃহে সসম্মানে বরণ করেছিলেন ৷ ঘরের সবকিছুই তার হাতে তিনি তুলে
দিয়েছিলেন ৷ তিনি ফিরে আসতে মনস্থ করলে ইবন আব্বাস (রা) তাকে ২০ হাজার (দিরহাম)
এবং ৪০টি গোলাম দান করেন ৷ আর আবু আইউবের গৃহ পরবর্তীকালে তার আযাদকুত
গোলাম আফলাহ এর গৃহে পরিণত হয় ৷ পরবর্তীকালে মুগীরা ইবন আবদুর রহমান ইবন হারিছ
ইবন হিশাম তার নিকট থেকে গৃহটি এক হাজার দীনারের বিনিময়ে ক্রয় করেন এবং তা
মেরামত করে মদীনায় নিঃস্বদেরকে তা দান করেন ৷
অনুরুপভাবে বনুনাজ্জারের মহল্লায় রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর অবস্থান এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে
তার জন্য তা অবলম্বন করা এটাও এক বিরাট ফষীলত ও মর্তবার ব্যাপার ৷ মদীনায় ছিল
অনেক পল্লী,যার সংখ্যা নয় পর্যন্ত পৌছে ৷ বসবাসের গৃহ, খেজুর বাগান; থেত-খামার আর
বাসিন্দাসহ এসব পল্লী রীতিমত একেকটি মহল্লা ছিল ৷ সেখানকার প্রতিটি গোত্র নিজেদের
মহল্লা আর জনপদে সমবেত হয়ে পরস্পর সম্পৃক্ত জনপদে পরিণত হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
জন্য আল্লাহ তাআলা বনুমালিক ইবন নাজ্জারের মহল্লাকে মনোনীত করেন ৷
আনসারদের গ্রেষ্ঠত্ব
বুখারী এবং মুসলিম শরীফে শুবা সুত্রে আনাস ইবন মালিক (বা) থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ
হাদীছে আছে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
আনসারগণের সমস্ত বংশের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে বনু নাজ্জার, তারপর বনু আবদুল
আশহাল, তারপর বনু হারিছ ইবন খাঘৃরাজ, তারপর বনু সইিদা ৷ আনসারগণের সকল
জনপদেই মঙ্গল আর কল্যাণ নিহিত আছে ৷ সাআদ ইবন উবাদা বলেন : আমি দেখি যে, নবী
করীম (না) আমাদের উপর গ্রেষ্ঠতু দান করেছেন ৷ তখন বলা হলো, তােমাদেরকেও অনেকের
উপর শ্রেষ্ঠতু দিয়েছেন ৷ এটা বুখারীর শব্দমালা ৷ অনুরুপভাবে ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস
ও আবু সালামা সুত্রে এবং আবু হুমায়দ সুত্রে নবী করীম (না) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
আবু হুমায়দ্যেশ্ব বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে ৷ তখন আবু উসায়দ সাআদ ইবন উবাদাকে বলেন :
তুমি কি দেখ না যে, নবী করীম (সা) আনসারগণকে শ্রেষ্ঠ আখ্যা দিয়েছেন আর আমাদেরকে
তাদের মধ্যে সকলের শেষে স্থান দিয়েছেন ৷ তখন সাআদ নবী করীম (না)-এর খিদমতে হাযির
হয়ে আরব করলেন ও ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আনসারদের জনপদকে আপনি গ্রেষ্ঠতু দিয়েছেন এবং
আমাদেরকে সকলের শেষে স্থান দিয়েছেন ৷ তিনি বললেন :
“তোমরা সর্বোত্তমদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় ? সমস্ত
মদীনাবাসী মুসলমানদের মধ্যে আনসারগণ দুনিয়া এবং আখিরাতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ৷ এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন : প্