দুরে সরে থাকল ৷ সে যখন ফিরে আসল তখন নবী করীম তড়াকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক,
আমাদের সাথে নামায পড়া থেকে কিসে তোমাকে বিরত রাখলো ? সে বলল, আমি
জানড়াবাতগ্রস্ত’১ হয়েছি ৷ তখন তিনি তাকে মাটি দিয়ে তড়ায়াম্মুম করার নির্দেশ দিলেন ৷ এরপর
সে নামায আদায় করল ৷ আর আমাকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার সম্মুখের একটি বাহনের আরোহী
করেছিলেন ৷ এদিকে আমরা সকলে ভীষণ পিপাসার্ত হয়ে পড়লাম ৷ আমরা আমাদের পথ
চলছিলাম, হঠাৎ আমরা এক শ্ৰীলােকের দেখা পেলাম, যে দুটি মশকের মাঝে তার পদদ্বয়
ছড়িয়ে রেখেছিল, তখন আমরা তাকে বললাম, পানি কোথায় ? সে বলল, এখানে কোন পানি
নেই ৷ আমরা তখন প্রশ্ন করলাম, তোমার গৃহৰাসী ও পানির মধ্যে দুরত্ব কতটুকু ? সে বলল,
একদিন একরাভৈতর দুরত্ব ৷ আমরা তাকে বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে চল ৷ সে
বলল, রাসুলুল্লাহ্’ আবার কী ? তার এরুপ কথাবার্তা আমাদের কাছে অসহ্য মনে হল ৷ আমরা
তাকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর মুখোমুখি এনে দাড় করালাম ৷ তখন সে তড়াকেও ঐরুপ কথা বলল
যা আমাদেরকে বলেছিল ৷ আর তাকে অতিরিক্ত একথাও বলল যে, সে বিধবা ৷ এরপর তিনি
তার মশক দুটি নিয়ে আসতে বললেন, এবং সেগুলোর মুখ দুটি ছুয়ে দিলেন ৷ তখন আমরা
চল্লিশজন পিপাসার্ত তা থেকে পান করে তৃপ্ত হলাম এবং আমাদের সাথের সকল মশক ও
পানির পাত্র সমুহ ভরে নিলাম ৷ তবে আমরা কোন উটকে পান করাইনি ৷ মহিলাটির ক্ষোভে
ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছিল ৷ তারপর তিনি বললেন, তোমাদের কাছে (খাদ্যদ্রব্য) যা কিছু
আছে নিয়ে এসো ৷ এভাবে তিনি তার জন্য রুটির অনেকগুলো টুকরা ও খেজুর সংগ্রহ করে
দিলেন ৷ ত্রীলােকটি সেগুলি নিয়ে তার স্বগােত্রের কাছে ফিরে গিয়ে বলল , আমি হয়ত সর্বশ্রেষ্ঠ
যাদুকরের সাক্ষাৎ পেয়েছি অথবা তিনি আল্লাহর নবী হবেন; যেমন তার সচরগণ দাবি করছে ৷
এরপর আল্লাহ ঐ শ্ৰীলোকের মাধ্যমে ঐ যাযাবর গোত্রকে সত্যের পথ দেখালেন ৷ ফলে
ত্রীলোকটি ইসলাম গ্রহণ করল এবং সাথে সাথে তার গোত্রের ণ্লাকেরাও ইসলাম গ্রহণ করল ৷
সিল্ম ইবন রাযীনের হাদীস সংগ্রহ থেকে মুসলিম এভাবেই বর্ণনা করেছেন ৷ আর বুখারী ও
মুসলিম উভয়ে আওফ আল আ’রাবীর হাদীস সংগ্রহ থেকে ইমরান ইবন হুসায়নের বরাতে
তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷ তাদের একটি রিওয়ায়াতে রয়েছে এরপর তিনি তাকে বললেন,
এগুলি (রুটির টুকরা ও খেজুর) তোমরা পােয্যপরিজনের জন্য নিয়ে যাও এবং বিশ্বাস কর যে,
আমরা তোমার পানির সামান্য অংশও হ্রাস করিনি, আসলে আল্লাহ্ই আমাদেরকে পান
করিয়েছেন ৷ আর তাতে এও রয়েছে তিনি যখন মশকের মুখ খুললেন তখন বিসমিল্লাহ্’
বললেন ৷
এ বিষয়ে আবু কাতাদা (রা) এর হাদীস
ইমাম আহমদ, ইয়াযীদ ইবন হারুন আবু কাতাদা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে সফরে কািড়াম ৷ এ সময় তিনি বললেন,
আগামীকাল যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পিপাসড়ায় কষ্ট পাবে ৷ তখন দ্রুতগাযী লোকেরা
পানির সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল আর আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে সদা লেগে থাকলাম ৷
এদিকে তার বাহন তাকে নিয়ে কাত হয়ে গেল ৷ আর তিনি তন্দ্রচ্ছেন্ন হয়ে পড়লেন ৷ তখন
১ অর্থাৎ আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে ৷ জালালাবাদী (সম্পাদক)
আমি তাকে ঠেকনা দিলাম আর তিনি আমার গায়ে হেলান দিলেন ৷ এরপর তিনি আরো
ঝুকলেন, আবার আমি তাকে ঠেকনা দিলাম আর তিনি আমার গায়ে হেলান দিলেন, এরপর
তিনি আরো কাত হয়ে পড়েন যাতে তার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল ৷ তখন আমি তাকে
পুনরায় ঠেকনা দিলাম তখন তিনি জেগে উঠলেন এবং বললেন, তুমি কে ? আমি বললাম,
আবু কাতাদা (রা) ৷ তিনি বললেন, তোমার (আমাদের) এই পথচলা কতক্ষণ যাবৎ ৷ আমি
বললাম, রাতভর ৷ তিনি বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে হিফাযত করুন, যেভাবে তুমি তার
রাসুলের হিফাযত করেছে৷ ? তারপর বললেন, যদি আমরা (রাতের শেষ প্রহরে) খানিকটা
বিশ্রাম করে নিতাম ৷ এই বলে তিনি একটি গাছের দিকে অগ্রসর হলেন ৷ তারপর সেখানে
নেমে বললেন, দেখতাে, তুমি কাউকে দেখতে পাও কিনা ? আমি বললাম, এই যে একজন
আরোহী, এই যে দুইজন, এভাবে তাদের সংখ্যা সাতে পৌছে গেল ৷ তখন তিনি (এদেরকে
বললেন) তোমরা আমাদের নামাযের প্রহরায় থাক, যেন তা বাধা না হতে পারে ৷ এরপর
আমরা ঘুমিয়ে গেলাম, তারপর সুর্যের তাপ গায়ে লাগার পুর্বে কেউই জাগতে পারলাম না,
সুর্যেড়াদয়ের পর আমরা জাগ্রত হলাম ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (না) তার বাহনে আরোহণ করে
অগ্রসর হলেন এবং আমরাও কিছুক্ষণ চলার পর তিনি বাহন থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলেন,
তোমাদের সাথে কি পানি আছে ? আবু কাতাদা বলেন, আমি বললাম, আমার কাছে একটি
উয়ুর পাত্র আছে তাতে সামান্য পানি রয়েছে ৷ তিনি বললেন, তুমি তা নিয়ে এসো ৷ তিনি
বলেন, তখন আমি তার কাছে, তা নিয়ে আসলাম ৷ তখন তিনি বললেন, তোমরা তা থেকে
স্পর্শ কর ৷ তোমরা তা থেকে স্পর্শ কর ! ! তখন লোকেরা তা থেকে উয়ু করার পর এক ঢোক
পরিমাণ অবশিষ্ট থাকল ৷ তিনি আমাকে বললেন, আবু কাতাদা, তা সংরক্ষণ কর, অচিরেই
তার গুরুত্ব প্রকাশ পাবে ৷ তারপর বিলাল (রা) আমান দিলেন এবং তিনি ফজরের পুর্বের
দুরাকাত আদায় করলেন তারপর ফজরের ফরয নামায পড়লেন ৷
এরপর তিনি তার বাহনে আরোহণ করলেন এবং আমরাও বাহনে আরোহণ করলাম ৷
তখন লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, আমরা আমাদের নামাষের ব্যাপারে অবহেলা করলাম ৷
একথা শুনে তিনি বললেন, তোমরা কি বলাবলি করেছো ? যদি তোমাদের কোন পার্থিব
ব্যাপার হয় তাহলে তা তোমাদের ব্যাপার আর যদি তা তোমাদের দীনের ব্যাপার হয়ে থাকে
তবে তা আমার দিকে রুজু কর ৷ লোকেরা বলল, আমরা আমাদের নামায়ের ব্যাপারে
হেলাফেলা করলাম ৷ তিনি বললেন, ঘুমের কারণে কোন হেলাফেলা হয় না ৷ হেলাফেলা
প্রযোজ্য হয় জাগ্রত মানুষের ক্ষেত্রে ৷ যখন তোমাদের ঘুমের কারণে নামায কাযা হয়ে যায়
তখন তা পড়ে নিও, আর পরদিনই তার উপযুক্ত ন্সময় ৷ এরপর তিনি বললেন, তোমরা
লোকদের অবস্থা অনুমান কর ৷ তারা বলল, আপনি গতকাল বলেছিলেন, যদি তোমরা
আগামীকাল পানি না পাও তাহলে পিপাসার্ত হবে ৷ লোকেরা তো এখনো পানি পাচ্ছে ৷ রাবী
বলেন, সকালে যখন লোকেরা নবী করীম (না)-কে খুজে গেল না তখন একে অন্যকে বলল,
নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রাসুল জলাশয়ে রয়েছেন ৷ এ সময় তাদের মাঝে আবু বকর ও উমর ছিলেন,
তারা দু’জন বললেন, হে লোকসকলা তোমাদেরকে ফেলে রেখে তিনি পানির উৎসে পৌছে
যাওয়ার নন ৷ লোকেরা যদি আবু বকর ও উমরের কথা মানে তাহলে তারা সুপথ পাবে, এটা
তারা তিনবার বললেন ৷
তারপর যখন দৃপুরের উত্তাপ তীব্র হল তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) দৃশ্যমান হলেন ৷ তারা তখন
বলল, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্! আমরা পিপাসার মরে গেলাম, আমাদের ঘাড়সমুহ অর্থাৎ ঘাড়ের
শিরাসমুহ ছিড়ে যাচ্ছে ৷ তখন তিনি বললেন, তোমরা মরবে না ৷ এরপর আবু কাতাদাকে ,
বললেন, হে আবু কাতদাে ! সেই উবুর পাত্রটি নিয়ে এসো ৷ আমি সেটা তার কাছে নিয়ে
আসলাম ৷ তিনি বললেন, আমার পেয়ালাটি খুলে নিয়ে এসো! তখন আমি তা খুলে তার কাছে
নিয়ে আসলাম ৷ তখন তিনি তাতে সেই (উবুর পাত্রের) পানি ঢালতে লাগলেন এবং
লোকদেরকে পান করাতে থাকলেন ৷ এ সময় লোকজন ভিড় করল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন,
হে লোকসকল৷ তোমরা পরস্পর সদাচারের সাথে ধীরস্থিরভাবে পান কর, কেননা, তোমাদের
প্রত্যেকেই তৃপ্তি ভরে পান করতে পারবে ৷ এভাবে লোকেরা সকলে পান করল ৷ শুধু মাত্র আমি
এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) বাকি থা কলাম ৷ তখন তিনি পানি ঢেলে আমাকে বললেন, আবুকাতাদা !
তুমি পান করে নাও ৷ আবুকাতাদা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি আগে পান
করুন তিনি বললেন, যে পান করায় তাকে সবশেষে পান করতে হয় ৷ তখন আমি পান করলাম
এবং তিনি আমার পর পান করলেন, আর যে পরিমাণ পানি ছিল তার সমপরিমাণ অবশিষ্ট রয়ে
গেল ৷ এ সময় সাহাবাদের সংখ্যা ছিল তিনশ’ ৷
আবদুল্লাহ বলেন, ইমরান ইবন হুসায়ন আমাকে জামে মসজিদে এই হাদীস বর্ণনা করতে
শুনে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পরিচয় বল ৷ আমি বললাম, আমি আবদুল্লাহ ইবন রাবাহ আল
আনসারী ৷ তিনি বললেন, ঘরের খবর ঘরের ল্যেকই বেশি জানে, ভেবে-চিত্তে হাদীস
রিওয়ায়াত করবে, কেননা আমি ঐ রাত্রের সেই সাতজনের একজন ৷ আমি যখন হাদীস বর্ণনা
শেষ করলাম, তিনি বললেন, আমার ধারণা ছিল না যে, আমি ছাড়া অন্য কেউ এই হাদীস
সংরক্ষণ করেছে ৷
হাম্মাদ ইবন সালামা, হুমায়দ আত তবীল আবু কাতদাে আল-মাওসেল সুত্রে এরুপ
রিওয়ায়াত করেছেন এবং অতিরিক্ত একথা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন সফরে রাত্রিকালে
যাত্রা বিরতি করে বিশ্রাম করতেন তখন তার ডান হাতকে বালিশ রুপে ব্যবহার করতেন, আর
প্রভাতকালে যাত্রা বিরর্তিকালে তার মাথা রাখতেন ডান হাতের তালুতে এবং কনুই পর্যন্ত হাত
খাড়া রাখতেন ৷ মুসলিম ও শায়বান ইবন ফাররুখ আ বু কাতদাে আলহারিছ ইবন রিরঈ
(রা) সুত্রে সম্পুর্ণ হড়াদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন এবং হাম্মাদ ইবন সালামার হাদীস সংগ্রহ
থেকে তার সর্বশেষ সনদেও তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷
হযরত আনাস থেকে বর্ণিত এরুপ একটি হাদীস
বায়হাকী আবু ইয়ালার হাদীস সংগ্রহ থেকে আনাস ইবন মালিকের বরাতে বর্ণনা
করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ্ (সা) মুশরিকদের বিরুদ্ধে এক বাহিনী প্রস্তুত করলেন ৷ এদের
মাঝে আবু বকর (রা)ও ছিলেন ৷ তিনি র্তাদেরকে বললেন, তোমরা দ্রুত চলে যাও ৷ কেননা
তোমাদের ও মুশবিকদেরমড়াঝে একটি পানির উৎস রয়েছে ৷ মুশরিকরা যদি তোমাদের আগে
সেই পানির উৎসের দখল নিয়ে নেয় তাহলে তা সকলের জন্য কষ্টদায়ক হবে আর তোমরা
তোমাদের বাহনসমুহ ভীষণ পিপাসার শিকার হয়ে ৷ আনাস (রা) বলেন, আর রাসুলুল্লাহ্
(সা) আটজনকে নিয়ে পিছিয়ে রইলেন ৷ আমি ছিলাম তাদের নবম জন ৷ তিনি তার এ