একটি বিয়ের অসাধারণ কাহিনী!
সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর পিতা নাজমুদ্দীন আইয়ুব দীর্ঘদিন পর্যন্ত অবিবাহিত ছিলেন। তিনি তিকরীতের আমীর থাকাকালীন সময়ে তার ভাই আসাদুদ্দীন শেরকুহ জিজ্ঞেস করলেন, -হে আমার ভাই! তুমি বিয়ে করছো না কেনো?
– ভাইজান! আমি নিজের জন্যে কোনো উপযুক্ত মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছি না!
— আমি কী তোমার জন্যে কোনো মেয়েকে প্রস্তাব দেবো?
– কাকে?
– বাদশাহ মালিকশাহের কন্যা অথবা প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে।নাজমুদ্দীন জবাব দিলেন, এরা কেউই আমার জন্যে উপযুক্ত নয়!
শেরকুহ অবাক হয়ে বললেন,
– তাহলে কে তোমার জন্যে উপযুক্ত হবে?
– আমি এমন নেককার নারী চাই, যে আমাকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে, আমার জন্যে এমন সন্তান জন্ম দিবে যার উত্তম লালন-পালন সে করবে, এমতাবস্থায় সে যুবক হবে এবং হবে একজন অশ্বারোহী। আর মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাসকে ফিরিয়ে আনবে। (নাজমুদ্দীনের সহজ জবাব).এটাই ছিলো নাজমুদ্দীনের স্বপ্ন।
তাঁর ভাইয়ের এ কথা পছন্দ হলো না, বললেন, তোমার জন্যে এ রকম মেয়ে কোথায় পাবে?
নাজমুদ্দীন জবাব দিলেন, যে আল্লাহর জন্যে ইখলাসের সাথে নিয়ত করে, আল্লাহ তার নিয়ত পূর্ণ করেন।.
এর কয়েকদিন পর নাজমুদ্দীন তিকরীতের এক শায়খের সাথে বসে কোনো এক মসজিদে আলাপ করছিলেন। তখন এক যুবতী মেয়ে আসলো এবং পর্দার আড়াল থেকে শায়খকে ডাকলো। তখন শায়খ ওই যুবতী মেয়ের সাথে আলাপ করার জন্যে নাজমুদ্দীনের কাছ থেকে অনুমতি চাইলেন।.
অনুমতি পেয়ে শায়খ ওই মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
– কেনো তুমি ওই যুবকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে যাকে আমি তোমাদের ঘরে পাঠিয়েছিলাম?
– হে শায়খ! এ কথা সত্য যে, এই যুবক সৌন্দর্য্যে এবং বংশমর্যাদায় পরিপূর্ণ, কিন্তু সে আমার উপযুক্ত নয়!– তাহলে তুমি কী চাও?
– হে প্রিয় শায়খ! আমি এমন যুবক চাই, যে আমাকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে, আমার জন্যে এমন একটি সন্তান জন্ম দিবে, যার লালনপালন সে উত্তমভাবে করবে; এমতাবস্থায় যখন সন্তানটি যুবক হবে, আমি তাকে দেখতে পাবো একজন তাজাদম অশ্বারোহীর রূপে। আর সে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাসকে দখলদার খৃষ্টানদের হাত থেকে ফিরিয়ে আনবে!
.আল্লাহু আকবার! এটাতো সেই বাক্য, যা নাজমুদ্দীন তাঁর ভাইকে বলেছিলেন। নাজমুদ্দীন বাদশাহের মেয়ে এবং মন্ত্রীর মেয়েকে ত্যাগ করলেন।আর এই মেয়ে সুন্দর-অভিজাত বংশের ছেলেকে ত্যাগ করলো শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য!আর আল্লাহ তাদের এই এখলাসের বদৌলতে জোড়া মিলিয়ে দিলেন!.ভাইকে খুশিমতো পাত্রী মিলে যাবার খবর জানিয়ে নাজমুদ্দীন বিয়ে করে ফেললেন।
তাঁদেরই ঔরসে জন্ম নিলেন গাজী সালাহুদ্দীন আইয়ুবী রাহিমাহুল্লাহ। যিনি সারাটা জীবনই আল্লাহর রাস্তায় ওয়াক্বফ্ করে দিয়েছিলেন। শেষতক খৃষ্টানদেরকে পরাজিত করে ফিরিয়ে এনেছিলেন মুসলমানদের হারিয়ে যাওয়া প্রথম ক্বিবলা- মাসজিদে আক্বসা।