রাসুলুল্লাহ্ (সা) মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন ৷ ইংতাপুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইবন
আব্বাস (রা) সুরমা ইবন আবু আনাস এর কবিতা লিখেছেন :
তিনি কুরায়শের মধ্যে তেরাে বছর অবস্থান করেন ৷ এ সময় তিনি উপদেশ দান করেন,
যদি কোন সহানুভুতিশীল সঙ্গী পাওয়া যায় ! আর ওয়াকিদী ইব্রাহীম ইবন ইসমাঈল সুত্রে ইবন
আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, সুরমার উপরোক্ত কবিতা তিনি প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন
করেন ৷
অনুরুপভাবে ইবন জারীর হারিছ সুত্রে ওয়াকিদী থেকে পনের বছরের কথা উল্লেখ
করেছেন ৷ এ উক্তি নিতাম্ভই গরীৰ্ ৷ আর এর চেয়েও বেশী গরীশ্ব হল ইবন জারীরের উক্তি ৷
রাওহ ইবন উবাদা সুত্রে কাতড়াদা থেকে বর্ণনা করে তিনি বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর উপর মক্কায় কুরআন নাযিল হয় আট বছর এবং মদীনায় দশ বছর ৷ এ
শ্যেষাক্ত উক্তির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন হাসান বসরী ৷ উক্তিটি এই যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেছেন ৷ আনাস ইবন মালিক, হযরত আইশা, সাঈদ ইবন
ঘুসাইয়িব, আমর ইবন দীনার এমত সমর্থন করেন ৷ এ ব্যাপারে ইবন জারীর র্তাদের নিকট
থেকে রিওয়ায়াত উল্লেখ করেন ৷ এটা ইবন আব্বাস থেকেও একটা বর্ণনা ৷ ইমাম আহমদ ইবন
হাম্বল ইয়াহ্ইয়া ইবন সাঈদ সুত্রে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন :
তেতাল্লিশ বছর বয়সে নবী করীম (না)-এর উপর ওহী নাযিল হয় এরপর তিনি মক্কায় দশ
বছর অবস্থান করেন ৷
ইতিপুর্বে আমরা ইমাম শা’বী সুত্রে বর্ণনা করেছি :
হযরত ইসরাফীল (আ) নবী করীম (না)-এর সঙ্গে তিন বছর ছিলেন ৷ তিনি রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর নিকট বাণী নিয়ে আসতেন এবং আরো কিছু ৷ অন্য বর্ণনায় আছে :
তিনি ফেরেশতা ইসরাফীলের উপস্থিতি অনুভব করতেন, কিন্তু তাকে দেখতেন না ৷ এরপর
জিবরাঈল (আ) আগমন করেন ৷ ওয়াকিদী তার কোন কোন শড়ায়খ থেকে বর্ণনা করেন যে, উক্ত
শায়খ শাবীর এ উক্তি অস্বীকার করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা ) মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন বলে
যারা বলেছেন, আর তের বছর অবস্থান করেন বলে যারা বলেছেন, ইবন জারীর এ দু’ উক্তির
মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন ৷ তিনি এ চেষ্টা করেন ইমাম শা’বীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যা
তিনি উল্লেখ করেছেন ৷ আসল ব্যাপার আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
কুবায় অবস্থানের বিবরণ
নবী করীম (সা) সঙ্গীদের সহ মদীনায় প্রবেশ করে কইবনয় বনু আমর ইবন আওফ এর
মহল্লায় অবস্থান করেন ৷ ইতোপুর্বে সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং কথিত আছে যে, সেখানে
সর্বোচ্চ ২২ রাত্রি, মতান্তরে ১৮ রাত্রি, আবার কারো কারো মতে ১০ রাত্রির কিছু বেশী অবস্থান
করেন ৷ মুসা ইবন উকবা তিন রাত্রের কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তবে প্রসিদ্ধ উক্তি হচ্ছে, যা ইবন
ইসহাক উল্লেখ করেছেন ৷ আর তা হলো, নবী করীম (সা) কুবায় তাদের মধ্যে সোমবার থেকে
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবস্থান করেন ৷ এ সময়ের মধ্যে-যার পরিমাণ নিয়ে পুর্বোল্লিখিত
মতদ্বৈধত৷ রয়েছে, তিনি সেখানে মসজিদে কুবায় ভিত্তি স্থাপন করেন ৷ সুহায়লী দাবী করেন যে,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) কুবায় আগমনের প্রথম দিলেই এ মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছেন আর এর
সপক্ষে তিনি আল্লাহ্ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেন :
প্রথম দিনেই যে মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাক্ওয়ার উপর, অবশ্যই যে মসজিদ
আর ক্রিয়া স্বীকার করে দেয়ার তিনি প্রতিবাদ করেন ৷
মসজিদে কুবায় এক বিশাল মর্যাদাপুর্ণ মসজিদ, যে সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়েছে :
“প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাক্ওয়া তথা আল্লাহর ভরের
উপর, তোমার সালাতের জন্য তা-ই অধিকতর যোগ্য ও হকদার ৷ সেখানে এমন লোক আছে,
যারা পবিত্রতা অর্জন ভালবাসে ৷ আর পবিত্রতা অর্জনকারীকে আল্লাহ ভালবাসেন (৯০ : ১০৮) ৷
এ আঘাতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তাফসীর গ্রন্থে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি আর তা
মদীনার মসজিদ বলে সহীহ্ ঘুসলিমে যে হাদীছ উক্ত হয়েছে, সেখানে আমরা যে হাদীছের
জবাবও উল্লেখ করেছি ৷ আর ইমাম আহমদ হাসান ইবন মুহাম্মদ সুত্রে উওয়ায়ম ইবন সাইদা
থেকে বর্ণিত হাদীছও আমরা উল্লেখ করেছি ৷ যাতে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাদের
মধ্যে মসজিদে কুবায় উপস্থিত হয়ে বলেন :
<তামাদের মসজিদের কিসসা প্রসঙ্গে তোমাদের পবিত্রতা-পরিচ্ছনতড়ার জন্য আল্লাহ
তা আলা তোমাদের ভুয়সী প্রশং যা করেছেন ৷ তবে এটা কি, যদ্দারা তোমরা পবিত্রত৷ অর্জন
কর ? তারা বললেনং : ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্৷ আল্লাহর কসম , আমরা কিছুই জানি না ৷ তবে আমাদের
কিছু ইয়াহুদী প্রতিবেশী ছিল, তারা পায়খানার পর মলদ্বার ধুয়ে ফেলভো ৷ তাদের মতো
আমরাও ধুয়ে নিত ৷ম ৷ ইবন খুযায়মা৩ তার সহীহ্ গ্রন্থে হাদীছটি উল্লেখ করেছেন এবং তার অন্য
কিছু প্রমাণও রয়েছে ৷ খুযায়মা ইবন ছাবিত ,মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন সালাম এবং ইবন
আব্বাস (রা) থেকেও হাদীছটি বর্ণিত ৷ আবু দাউদ তিরমিযীও ইবন মাজা ইউনুস ইবন হারিছ
সুত্রে আবু হুরায়রা থেকে এবং৩ তিনি নবী করীম (না) থেকে বর্ণনা করে বলেন :
উপরোক্ত আয়াত টি কুবাবাসীদের সম্পর্কে নাযিল হয় ৷ তিনি বলেন যে তারা পানি দ্বারা
পবিত্রত৷ অডনি করতে তাই তাদের সম্পর্কে আয়াত টি নাযিল হয়েছে ৷ এরপর তিরমিযী
বলেন : এ সুত্রে হাদীছটি গরীব ৷ আমি (গ্রন্থকা র) বলি , এ ইউনুস ইবন হারিছ যঈফ ৷ আল্লাহ্ই
ভাল জানেন ৷
আর র্যারা বলেন যে, এই মসজিদ হল যে মসজিদ, যার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাক্ওয়ার
উপর ৷ তাদের মধ্যে আছে আবদুর রাযযাক উরওয়া ইবন যুবায়র থেকে যা বর্ণিত হয়েছে ৷
আলী ইবন আবু তালহা ইবন আব্বাস সুত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ এছাড়া শাবী, হাসান
বসরী, কাতাদা, সাঈদ ইবন জুবায়র, আতিয়া আল-আওফী এবং আবদুর রহমান ইবন যায়দ
ইবন আসলাম প্রমুখ সুত্রেও হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে ৷ নবী করীম (সা) পরবভীকািলে মসজিদটি
দেখতে পেতেন এবং সেখানে নামায আদায় করতেন এবং প্রত্যেক শনিবার সেখানে যেতেন ৷
কখনো পায়ে হেটে , আবার কখনো সওয়ার হয়ে ৷ হাদীছ শরীফে আছে :
“বইিবৃনর মসজিদে সালাত আদায় করা উমরার সমতুল্য ৷ হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত
হয়েছে :
জিবরাঈল (আ) মসজিদে কইবনর কিবলার দিক নির্ণয়ের জন্য নবী (না)-কে ইঙ্গিত
করেন ৷ আর এটা ছিল ইসলামের ইতিহাসে মদীনায় নির্মিত প্রথম মসজিদ ৷ বরং ইসলামী
মিল্লাতে সাধারণ মানুষের জন্য নির্মিত প্রথম মসজিদ ছিল এটি ৷ আবু বকর (রা ) তার বাড়ীর
দরজায় যে মসজিদ নির্মাণ করান, সেখানে তিনি ইবাদত করতেন এবং নামায আদায় করতেন,
তা ছিল একান্তই তার নিজের, তা সাধারণের জন্য ছিল না ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর আগমনের সুসংবাদ পর্যায়ে হযরত সালমান ফারসীর ইসলামগ্রহণ
সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ৷ তা এই যে, সালমান ফারসী যখন রাসুলের আগমন সম্পর্কে
শুনতে পেলেন মদীনায়, তখন তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর নিকট গমনকালে তার সঙ্গে কিছু
জিনিস হাতে নিয়ে যান এবং তা রাসুলের সম্মুখে রাখলেন ৷ আর রাসুলুল্লাহ্ (না) তখন কুবড়ায়
অবস্থান করছিলেন ৷ হযরত সালমান ফারসী এটা সাদাকা বললে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) হাত গুটিয়ে
নেন ৷ তিনি নিজে খেলেন না, কিন্তু তার নির্দেশে তার সাহাবীরা তা থেকে কিছু আহার
করলেন ৷ পুনরায় তিনি এলেন এবং তার সঙ্গে কিছু একটা জিনিস ছিল ৷ এবার তিনি বললেন,
এটা হাদিয়া ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) তা থেকে কিছু আহার করলেন এবং সাহাবীগণকে নির্দেশ
দিলে তারাও তা থেকে আহার করলেন ৷ দীর্ঘ হাদীছটি ইতিপুর্বে উল্লিখিত হয়েছে ৷
আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)-এর ইসলামগ্রহণ
ইমাম আহমদ (র) মুহাম্মদ ইবন জাফর সুত্রে আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম থেকে বর্ণনা করেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করলে লোকেরা দ্রুত তার দিকে ছুটে আসে ৷ যারা তার দিকে
ছুটে আসে, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম ৷ আমি তার চেহারা দেখেই চিনতে পারি যে, এটা
কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয় ৷ আমি সর্বপ্রথম তাকে যে কথাটি বলতে শুনি , তা এই :