ছিলেন ৷ তবে বায়হাকী — যুহরী প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেন ৷ তারা বলেন, ৮ম হিজরীর
রমযান মাসের দশদিন বাকী থাকতে মক্কা বিজয় সম্পন্ন হয় ৷
আবু দাউদ আত-তায়ালিসী (ব) আবদুল্লাহ (বা) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন,
বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ্ (সা) রোযার অবস্থায় অভিযানে বের হন যখন তিনি কুরাউল গামীম নামক
জায়গায় পৌছলেন, তখন লোকজন পদব্রজে ও সাওয়ারীতে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে ছিলেন ৷
এটা ছিল রমযান মাস ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে আরয করা হল, “ইয়৷ রাসুলাল্লাহ ! রােযায়
লোকজনের খুবই কষ্ট হচ্ছে ৷ আর তারা দেখার জন্যে অপেক্ষায় আছেন যে, আপনি কি করছেন ?
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন এক গ্লাস পানি চাইলেন ও তা পান করলেন ৷ আর লোকজন তার দিকে
তাকিয়ে ছিলেন ৷ এরপরও কিছু সংখ্যক লোক রোযা রাখলেন এবং কিছু সৎখ্যক লোক রোযা ভঙ্গ
করলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে সংবাদ পৌছল যে, কিছু সংখ্যক লোক রোযাদার রয়েছেন,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, “তারা হুকুম অমান্য করেছে ৷”
ইমাম আহমদ আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন,
বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ্ (সা) রমযান মাসে অভিযানে বের হন ৷ তিনি রােযা রাখেন এবং তার
সাথে সাহাবীগণও রােযা রাখেন ৷ কাদীদে পৌছার পর রাসুলুল্লাহ্ (সা) এক পিয়ালা পানি
চাইলেন ৷ তিনি ছিলেন সাওয়ারীর উপর আরোহী ৷ তিনি যে রােযা ভাঙ্গলেন তা সকলকে দেখিয়ে
দেয়ার জন্যে পানি পান করলেন ৷ আর লোকজন তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন ৷ এরপর
মুসলমড়ানগণ রােযা ভাঙ্গলেন ৷ এটা ইমাম আহমদ (ব)-এব একক বর্ণনা
আব্বাস ও আবু সুফিয়ান ইবন হড়ারিচ্ প্রমুখের ইসসামগ্রহণ
রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর চাচা আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (বা) ও তার চাচাভাে ভাই আবু
সুফিয়ড়ান ইবন আল-হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা) , উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা
(না)-এর ভাই আবদুল্পাহ্ ইবন আবুউমাইয়া ইবন আল-মুগীরাহ আল মাখবুমী (বা) ইসলাম গ্রহণ
করে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর দিকে রওয়ানা হন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন মক্কার পথে তখন তার সাথে
তাদের সাক্ষাত হয় ৷
ইবন ইসহাক বলেন, “আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা) রাস্তায় রাসুলুল্পাহ্ (সা) এর সাথে
সাক্ষাত করেন ৷ ”
ইবন হিশাম বলেন, “আব্বাস (বা) তার পরিবার-পরিজনসহ হিজরত করার পথে জুহ্ফা
নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে মিলিত হন ৷ এবপুর্বে তিনি মক্কায় অবস্থান করছিলেন ৷
ইবন শিহাব যুহরী বলেন, “রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন ৷ কেননা, তিনি মক্কায় অবস্থান
করে হাজীদের পানির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আবু সুফিয়ান ইবন আল-হারিছ ইবন আবদুল মুত্তালিব (বা) ও
আবদৃল্পাহ্ ইবন আবুউমাইয়া মক্কা ও মদীনায় মধ্যবর্তী নাইকুল উকাব’ নামক জায়গায় রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর তড়াবুতে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা
করেন ৷ তাদের এ দৃইজনের ব্যাপারে উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা (বা) রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
সাথে কথা বলেন ৷ তিনি বলেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আপনার চাচার ছেলে, আপনার ফুফু ও
শ্বশুরের ছেলে আপনার সাথে দেখা করতে চান ৷ ” তিনি বলেন, “এ দুজন দিয়ে আমার কোন
কাজ সেই ৷ আমার চাচার ছেলে ইতোমধ্যে আমার ইয্যত নষ্ট করেছে ৷ আর আমার ফুফুর ছেলে
মক্কায় তার বা কিছু বলার ছিল তা আমাকে সে বলেছে ৷ ” সুহায়লী (র) বলেন, সে রাসুলুল্লাহ্
(সা) কে বলেছিল , “আল্লাহ্র শপথ, আমি তোমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করব না যতক্ষণ না তু
আকাশে একটি সিড়ি লাপাবে যার সাহায্যে তুমি আকাশে চড়বে আর আমি তাকিয়ে দেখব ৷
এরপর তুমি একটি দলীল ও চারজন ফেরেশতা নিয়ে আসবে যারা সাক্ষ্য দেবে যে , তোমাকে
আল্লাহ্তাআলা প্রেরণ করেছেন ৷
রাবী বলেন , যখন তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ্ (সা )-এর মন্তব্যের খবর ৰু;পীছল , আবুসুফিয়ানের
সাথে তার দু পুত্র ছিল তখন সে বলল, আল্লাহ্র শপথ, আমাকে অবশ্যই তিনি অনুমতি দেবেন
নচেৎ আমার এ ছোট ছেলের হাত ধরে আমরা পৃথিবীতে ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে রেড়াব এবং ক্ষুধাও
তৃষ্ণায় মরুভুমিতে মৃত্যুবরণ করব ৷ তাদের এই শপথের কথা যখন রার্কুণুল্লাহ্ (সা ) এর কাছে
পৌছল তখন তিনি তাদের প্ৰতি সদয় হলেন এবং তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন ৷ তারা
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর র্তাবুতে প্রবেশ করেন ও ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ নিম্নবর্ণিত কবিতার মাধ্যমে
আবু সুফিয়ান তার ইসলাম গ্রহণের পুর্ববর্তী ভুল-ত্রুটির জন্যে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ৷
কবিতায় বলেন :
তোমার জীবনের শপথ, নিশ্চয়ই আমি যেদিন ঝাণ্ডা উত্তোলন করেছিলাম মুহাম্মাদ (সা) এর
সৈন্যদলের উপর লাত এর সৈন্যদল জয়লাভ করবে ৷ এই উদ্দেশ্যে সেদিন আমি ছিলাম রাতের
অন্ধকারে দিশেহারা ভ্রমণকারী ৷ এখন সময় এসেছে ফলে আমাকে ঠিক পথে পরিচালিত করা
হচ্ছে এবং আমি সঠিক পথে চলছি ৷ এই যে আমার জন্য রয়েছেন একজন পথ প্রদর্শক আমার
নিজ প্রবৃত্তি নয় ৷ যিনি আমাকে উঠিয়ে দিয়েছেন হিদায়াতের রাজপথে ৷ এটি আমার গোত্রের
প্রত্যেকটি পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে আল্লাহ্র ভৈনকট্য লাভে সক্ষম করে তৃলেছেন ৷ আমি অতীতে ছিলাম
প্রতিরোধকারী ও মুহাম্মাদ (সা) থেকে বিরত রাখার জন্যে কঠোর প্রচেষ্টায় রত ৷ মুহাম্মাদ
(সা) এর দিকে দাওয়াত দোয়া হলেও আমি তার সাথে সংশ্লিষ্ট হইনি ৷ আমার সাথী কাফিরদের
ইচ্ছেমত যারা পথ চলেনি বা অন্যায় কথা বলেনি ৷ তাদের বিরুদ্ধে যা করবার তারা তা সবই
করেছে যদিও তিনি ছিলেন সঠিক বিবেকের অধিকারী ৷ তবু তারা তাকে বুদ্ধিভ্রাম্ভ বলে আখ্যায়িত
করেছে ৷ যতক্ষণ পর্যন্ত আমি হিদায়াত পাইনি ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আমার সম্প্রদায়ের লোকদের
সাথে প্রতিটি বৈঠকে শবীক থেকে তাদেরকে খুশী করতে প্রয়াস পেয়েছি ৷ যদিও আমি অভিশপ্ত
ছিলাম না ৷ ছাকীফ গোত্রকে বলে দাও, আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে চাই না ৷ আবারও
ছাকীফকে বলে দাও , আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে তারা তহ্: দেখাক ৷ আমি এমন
সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলাম না যারা আমিরকে হত্যা করেছে ৷ কেউই আমার রসনা বা হাতের
অনিষ্টের শিকার হয়নি ৷ দুরদুরান্তের জনপদসমুহ হতে সিহাম ও সুরদৃদ থেকে এসে এরা সমবেত
হয়েছে ৷
ইবন ইসহাক বলেন, ইতিহাসবিদগণ বলেন, যখন আবু সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে
কবিতা পাঠের মধ্যে বললেন, আমি যাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলড়াম তিনিই আমাকে আল্লাহ্র সাথে
সম্পৃক্ত করলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) নিজ হাত দ্বারা তীর বুকে মৃদু আঘাত করে বললেন
অর্থাৎ তৃমিই তো আমাকে সম্পুর্ণরুপে বিতাড়িত করেছিলে ৷