Home » অনুবাদকৃত বইসমুহ » আল বিদায়া ওয়ান্নিহায়া - খন্ড ৪ » তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল সালে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধ

তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল সালে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধ

  • 3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
  • Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
  • রাসুলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশে ৷বানু কুরায়যা যুদ্ধের দিনে মাহীসা (রা) তাকে হত্যা করেছিলেন ৷
    তখন তার ভাই হুয়াইসা তাকে গালমন্দ করেছিল এবং মাহীসা (বা) প্রভু ৷ত্তরে উপরোক্ত কথা
    বলেছিলেন ৷ ওই দিনই হুয়ইিসা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ৷ আল্লাহ্ই৷ ভ ল জ নেন ৷

    জ্ঞাতব্যং বায়হাকী ও ইমাম বুখারী (র) কা ব ইবন আশরাফ হত্যা র ঘটনার পুর্বে বানুনাযীর
    গোত্রের যুদ্ধের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন ৷ এরৎত তা তারা বর্ণনা করোছন উহুদ যুদ্ধের বিবরণের
    পুর্বে ৷ তবে বানুনাযীর যুদ্ধের বিবরণ উহুদ যুদ্ধের বিবরণের পর উল্লেখ করাই সঠিক ও সমীচীন ৷
    ইবন ইসহাক প্রমুখ ইতিহাসবিদগণ তাই করেছেন ৷ এর প্রমাণ এই যে বড়ানু নাযীর গোত্রকে
    অবরোধ করে রাখার সময়ে মদ হারাম হওয়ার বিধান নাযিল হয় ৷ অন্যদিকে সহীহ্ হাদীস দ্বারা

    সাব্যস্ত যে, কতক মুজাহিদ মদ পান করা অবস্থায় উহুদের যুদ্ধে শহীদ হভৈয়ছেন ৷ তাতে বুঝা যায়

    উহুদ যুদ্ধের সময় মদ পান হালাল ছিল ৷ সেটি হারাম হয়েছে পরে ৷ অতএব, সাব্যস্ত হল যে, বড়ানু
    নাযীর গোত্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে উহুদ যুদ্ধের পর ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
    আরেকটি জ্ঞাতব্যং

    বড়ানু কড়ায়নুকা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বদর যুদ্ধের পর ৷ উপরে তা আলোচিত হয়েছে ৷ কাব
    ইবন আশরাফ ইয়াহ্রদী আওস গোত্রের হাতে হত হয়েছিল বদর যুদ্ধের পর ৷ বড়ানু নাযীর গোত্রের
    যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল উহুদ যুদ্ধের পর ৷ এই বিবরণ অচিরেই আসছে ৷ ইয়াহুদী ব্যবসায়ী আবু
    রাফি এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল খাযরাজ গোত্রের হাতে উহুদ যুদ্ধের পর ৷ ইয়াহ্রদী গোত্র

    বড়ানু কুরায়যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল আহযাব তথা খন্দকের যুদ্ধের পর ৷ পরে সেই
    বিবরণ আসবে ৷

    তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল সালে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধ

    উহুদ নামকরণ প্রসৎগে প্রন্থকার বলেছেন যে, অন্যান্য পাহাড় থেকে এটি পৃথক ও একাকী
    অবস্থিত বলে এটি উহুদ নামে পরিচিত ৷ সহীহ হাদীস গ্রন্থে আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (যা) বলেছেন,
    ৷ উহুদ এমন এক পাহাড় যেটি আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও
    সেটিকে ভালবাসি ৷ কেউ কেউ বলেছেন যে, এর অর্থ হল আমরা উহুদ পাহাড়ের আশ-পাশের
    অধিবাসীদেরকে ভালবাসি আর তারা আমাদেরকে ভালবাসে ৷ আবার কেউ বলেছেন, এর ব্যাখ্যা
    হল, সফর থেকে ফেরার পথে উহুদ পাহাড় দৃষ্টিগােচর হলে বুঝা যায় যে, বাড়ীর কাছে এসে

    পৌছেছে ৷ উহুদ পাহাড় যেন মুসলিম মুসাফিরদেরকে তাদের বাড়ী-ঘরের নিকটবর্তী পৌছার
    সুসং বাদ দেয় যেমন প্রিয়জন তার প্রিয়জনকে সুসৎবাদ প্রদান করে ৷ কেউ কেউ বলেন যে, হাদীস
    তার প্রকৃত ও প্রকাশ্য মর্মই প্রকাশ করছে ৷ (অর্থাৎ প্রকৃতই উহুদ পর্বত মু ’মিনদেরকে ভালবাসে
    তার নিজস্ব চেতনা ও অনুভুতি দিয়ে ৷) যেমন আল্লাহ্ তা আলার বা ৷ণী
    ৰুা৷ ৷ মোঃ এরৎ কতক পাথর এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে ৷ (২-বাক বা ং ৭৪) ৷ হাদীছে
    আছে, আবু

    উহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালরাসে ৷ আমরাও

    তাকে ভালবাসি ৷ সেটি জান্নাতের দরজায় অবস্থিত ৷ আযর পাহাড় আমাদের প্রতি বৈরিতা পোষণ
    করে ৷ আমরাও তাকে ঘৃণা করি ৷ সেটি অবস্থিত জাহান্নামের দরজাসমুহের একটির উপর ৷

    এই হাদীছের সমর্থনে সুহায়লী বলেন, বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন :
    মানুষ তার সাথেই থাকবে যার সাথে তার বন্ধুভু রয়েছে ৷ এটি সুহায়লী এর
    একটি বিরল উপস্থাপনা ৷ কারণ, এই হাদীছ দ্বারা মানুষের অবস্থান বুঝানো হয়েছে ৷ পাহাড়তো
    মানুষের অন্তর্ভুক্ত নয় ৷

    এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে ৷ ইমাম যুহরী, কাতড়াদা, মুসা ইবন
    উক্বা এবং মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক ও ইমাম মালিক প্রমুখ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন ৷ ইবন
    ইসহাক বলেন, এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে শাওয়াল মাসের মাঝামাঝি সময়ে, কাতাদা বলেন,
    শাওয়াল মাসের ১১ তারিখ শনিবারে তা সংঘটিত হয় ৷ ইমাম মালিক বলেন, দিনের প্রথম ভাগে
    তা সংঘটিত হয় ৷ এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন :

    “স্মরণ করুন, যখন আপনি আপনার পরিজনবর্গেব নিকট হতে প্রত্যুষে বের হয়ে যুদ্ধের
    জন্যে মুমিনদেরকে মাটিতে স্থাপন করছিলেন ৷ ” আল্লাহ সর্বগ্রোতা, সর্বজ্ঞ ৷ যখন তোমাদের
    মধ্যে দু গোত্রের সাহস হারানাের উপক্রম হয়েছিল এবং আল্লাহ উভয়ের সহায়ক ছিলেন ৷
    আল্লাহর প্রতিই যেন মু’মিনগণ নির্ভর করে ৷ এবং বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে
    আল্লাহ তো তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন ৷ সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে
    তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ৷ স্মরণ করুন, যখন আপনি মুমিনদেরকে বলছিলেন এটা কি
    তোমাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত তিন হাজার ফেরেশতা দ্বারা
    তোমাদেরকে সহায়তা করবেন ? হী, নিশ্চয় যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং সাবধান হয়ে চল
    তবে তারা দ্রুত গতিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা
    দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন ৷ এটি তো কেবল তোমাদের জন্যে সুসংবাদ ও তোমাদের চিত্ত
    প্রশাস্তি হেতৃ আল্লাহ করেছেন ৷ এবং সাহায্য শুধু পরাক্রাস্ত প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতেই হয় ৷
    কাফিরদের এক অংশকে নিশ্চিহ্ন করার অথবা লাঞ্ছিত করার জন্যে ৷ ফলে তারা যেন নিরাশ হয়ে
    ফিরে যায় ৷ তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন এ বিষয়ে আপনার
    করণীয় কিছুই নেই ৷ কারণ, তারা যড়ালিম ৷ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সমস্ত আল্লাহ্রই ৷
    তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং মাঝে ইচ্ছা শাস্তি দান করেন ৷ আল্লাহ ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু ৷
    (৩-আলে ইমরান : ১ ২১ ১ ২৯)

    অসৎকে সৎ হতে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় রয়েছ আল্লাহ মু’মিনপণকে সে
    অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন না ৷ অদৃশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদেরকে অবহিত করার নন, তবে
    আল্লাহ তার রাসুলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন ৷ সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তার
    রাসুলদের প্রতি ঈমান আনবে ৷ তোমরা ঈমান আনলে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে চললে
    তোমাদের জন্যে মহাপুরস্কার রয়েছে ৷ (৩-আলে ইমরান : ১৭৯) ৷ এ সকল আঘাতের বিশদ

    ব্যাখ্যা আমরা আমাদের তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছি ৷ সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার ৷ এখানে
    আমরা উক্ত ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করব ৷ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক প্রমুখ আলিমগণ যা বর্ণনা
    করেছেন তার আলােকেই আমরা বিবরণ পেশ করব ৷ এ বিষয়ে হাদীছে বর্ণিত আছে মুহাম্মাদ
    ইবন মুসলিম যুহরী, মুহাম্মাদ ইবন ইয়াহয়া ইবন হিবৃবান, আসিম ইবন উমার ইবন কাতাদ৷ ,
    হুসায়ন ইবন আবদুর রহমান ইবন অড়ামর ইবন সাদ ইবন মুআয (র) প্রমুখ থেকে ৷ তারা
    প্রত্যেকে উহুদ দিবসের কিছু কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন ৷ তাদের সকলের বর্ণনার সমন্বিত রুপ
    এই : তারা সকলে কিত্বা র্তাদের কেউ কেউ বলেছেন, বদরের যুদ্ধে কুরায়শী কাফিরদের
    নেতৃস্থানীয় লোকজন নিহত হয়েছিল এবং তাদের মৃতদেহগুলোকে কুয়ােতে নিক্ষেপ করা
    হয়েছিল ৷৩ তাদের পরাজিত সৈনিকগণ মক্কায় ফিরে গিয়েছিল ৷ অন্যদিকে ব্যবসায়ী কাব্লুফল৷ নিয়ে
    আবু সুফিয়ানও মক্কায় এসে পৌছেছিল ৷ তখন আবদুল্লাহ ইবন আবু রবী আ , ইকরামা ইবন আবু
    জাহ্ল , সাফওয়ান ইবন উমাইয়াসহ কৃরায়শী নেতাগণ যাদের পিতৃবর্প সন্তানাদি ভাইয়েরা বদরের
    যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তারা আবু সুফিয়ানের নিকট উপস্থিত হয় ৷ তারা আবু সুফিয়ানের সাথে এবং
    ওই ব্যবসায়ী কাফেলায় যাদের মালামাল ছিল তাদের সাথে কথা বলে ৷ তারা বলেছিল, হে
    কুরায়শ সম্প্রদায় ! মুহাম্মাদ তো তোমাদের আপনজনদেরকে হত্যা করেছে এবং তোমাদের শ্রেষ্ঠ
    ণ্লাকদেরকে খুন করেছে এখন এই ব্যবসায়ী কাফেলায় ধন-সম্পদ দ্বারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে
    তোমরা আমাদেরকে সাহায্য কর ৷ আমরা আশা করছি যে, তাহলে আমরা তার থেকে প্রতিশোধ
    নিতে পারব ৷ ওরা তাই করল ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, কারো কারো মতে নিম্নোক্ত আয়াত ওদেরকে উপলক্ষ্য করে নাযিল
    হয় ৷ আল্লাহ তা আলা বলেন,
    আল্লাহর পথ থেকে লোককে নিবৃত্ত করার উদ্দেশ্যে কাফিরর৷ তাদের ধন সম্পদ
    ব্যয় করে , তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর সেটি তাদের অনুতাপের কারণ হবে,
    এরপর তারা পরাভুত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে ৷) (৮-
    আনফাল : ৩৬)

    ঐতিহাসিকগণ বলেন, আবু সুফিয়ান ও কাফেলায় সদস্যগণ কিনান৷ গোত্র ও তিহামাহ্-
    বাসীদেরকে নিয়ে এরুপ পরামর্শ করার পর কুরায়শরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার
    জন্যে সম্পুর্ণ প্রস্তুত ও একমত হয়ে যায় ৷ তাদের মধ্যে একজন ছিল আবু ইজ্জাহ্ আমর ইবন
    আবদুল্লাহ জুমাহী ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার প্রতি দয়া করেছিলেন বদর দিবসে ৷ সে ছিল একজন
    ছাপোযা দরিদ্র লোক ৷ বদর দিবসে মুসলমানদের হাতে সে বন্দী হয়েছিল ৷ যুদ্ধ প্রন্তুতির এই
    ক্রান্তিকালে সাফওয়ান ইবন উমাইয়া তাকে বলেছিল, তমি তো করি মানুষ ৷ তুমি আমাদের সাথে
    চল, আমাদেরকে কবিতা শুনিয়ে সাহায্য করবে ৷ সে বলল, মুহাম্মাদ (সা) আমার প্রতি দয়া
    দেখিয়েছেন আমাকে অনুগ্রহ করেছেন৩ তার বিরুদ্ধে যেতে আমি রাযী নই ৷ সাফওয়ান বলল, তা
    ঠিক বটে ৷ তবে তুমি শুধু আমাদের সাথে থাকবে, আমাদের সংখ্যা বাড়াবে ৷ আল্লাহ্কে সাক্ষ্য

    রেখে বলছি যদি তুমি যুদ্ধ শেষে বাড়ী ফিরে আন তরে৫ তামাকে বিত্তরান করে দেবাে ৷ আর তু
    যদি যুদ্ধে নিহত হও তাহলে তোমার কন্যাদেরকে আমি আমার কন্যাদের সাথে যুক্ত করে নেবাে ৷
    সুথে দুঃখে আমার মেয়েদের যে অবস্থা হবে৩ নদেরও সে অবস্থা হবে ৷ শেষ পর্যন্ত আবুইজ্জাহ্

    কাফিরদের সাথী হয়ে যুদ্ধে যেতে রাজী হল ৷ সে তিহামা অধিবাসীদের সাথে বের হয়ে বানু
    কিনান৷ গোত্রকে যুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে বলল :

    হে আবৃদ মানাতের বং শধরপণ তোমরা তো প্রচণ্ড শক্তিশালী ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে অবিচল ৷
    তোমরা নিজেরা রক্ষক এবং€ তামাদের পি৩ তৃপুরুষ ও রক্ষক ছিল ৷

    তোমাদের সাহায্য যেন এ বছরের পর আমার জন্যে প্রয়োজন না হয় ৷ তোমরা আমাকে এ
    অবস্থায় ঠেলে দিওনা যে, ইসলাম আমার মধ্যে প্রবেশের সুযোগ পায় ৷

    বর্ণনাকারী বলেন, অন্য দিকে বানুমালিক গোত্রের নিকট গেল নাফি ইবন আবদ মানাফ

    ইবন ওয়াহ্ব ইবন হুযাফা ইবন জুমাহ্ ৷ সে ৰানু মালিক গোত্রকে যুদ্ধের জন্যে নিম্নের কবিতা
    আবৃত্তির মাধ্যমে প্ররােচিত করে :

    হে মালিক গোত্রের লোকজন! তোমরা তো সুপ্রাচীনকাল থেকে আভিজাত্য ও মর্যাদার
    অধিকারী ৷ আমি এখানে তোমাদের আত্মীয়দের এবং দায়িত্শীলদের দোহাই দিচ্ছি ৷

    যারা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আর যারা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নয় তাদের সকলের দোহাই দিয়ে আমি
    তােমাদেরকে ওই চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যা সম্মানিত নগরী হারাম শরীফের
    মধ্যবর্তীস্থানে সম্পাদিত হয়েছিল ৷ : যা সম্পাদিত হয়েছিল
    কাবাগৃহের হাতীমের নিকট ৷

    এদিকে জুবায়র ইবন মুতইম তার এক হাবশী ক্রীতদ৷ ৷সকে ডেকে অড়ানল ৷ তার নাম ছিল
    ওযাহ্শী ৷ হাবশী কৌশলে যে বর্শা নিক্ষেপ করত, সেটি খুব কম লক্ষ্যভ্রষ্ট হত ৷ জুবায়র ইবন
    মুতইম তার হাবশী ক্রীতদাস ওয়ড়াহ্শীকে নির্দেশ দিয়ে বলল, তুমি লোকজনের সাথে যুদ্ধাভিযানে
    বেরিয়ে পড় ৷ বদর যুদ্ধে নিহত আমার চাচা তৃ আয়মা ইবন আদীর প্রতিশোধ হিসেবে তুমি যদি
    মুহাম্মাদ (না)-এর চাচা হামযাকে হত্যা করতে পার, তবে তুমি স্বাধীন হয়ে যাবে ৷ যুদ্ধ উন্মাদনা,
    প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র এবং তাদের অনুসারী ৰানু কিনানা ও তিহামা অঞ্চলের লোকজন সহ কৃরায়শের

    সম্মিলিত বাহিনী যুদ্ধ অভিযানে যাত্রা করে ৷ তাদের সাথে ছিল কতক মহিলা ৷ উদ্দেশ্য পুরুষদের
    মনােবল চাঙ্গা রাখা, তাদেরকে যুদ্ধ উন্মাদনায় সজীব রাখা এবং পলায়ন থেকে রক্ষা করা ৷

    সেনাবাহিনীর মুল নেতৃত্বে ছিল আবু সুফিয়ান সাখর ইবন হড়ারব ৷ সে তার শ্রী হিন্দ বিনৃত উতবা
    ইবন রাবীআঃক সাথে নিয়ে যেরিয়েজ্যি ৷ ইকরামা ইবন আবুজাহ্লও তার শ্রী ও চাচাত বোন উম্মু
    হার্কীম বিনৃত হারিছ ইবন হিশাম ইবন মুগীরাকে নিয়ে বের হয়েছিল ৷ ইকরামার চাচা হারিছ ইবন
    হিশাম-এর সাথে ছিল তার শ্রী ফাতিমা বিনৃত ওলীদ ইবন মুগীরা ৷ সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার
    সাথে ছিল বারযা বিনৃত মাসউদ ইবন আমর ইবন উমায়র ছাকাফিয়ব্রুাহ; ৷ আমর ইবন আস-এর
    সাথে ছিল রীত৷ বিনৃত মুনাবৃবিহ ইবন হাজ্জাজ ৷ রীতা হল আমরের পুত্র আবদুল্লাহ-এর মা ৷ আরো
    যারা নিজ নিজ শ্রীদেরকে সাথে নিয়ে বেরিয়েছিল কেউ কেউ তাদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন ৷
    যাত্রাপথে ওয়াহ্শী এবং হিন্দ কাছাকাছি এলে ওয়াহ্শীকে লক্ষ্য করে হিন্দ বলত, ওহ্ আবু
    দাছামা ৷ তুমি আমাদেরকে মুক্তি দাও তুমি নিজেও মুক্তি লাভ কর ৷ এ কথ দ্বারা সে ওয়াহ্শীকে
    উত্তেজিত করছিল হামযা (রা)-কে হত্যা করার জন্যে ৷ বন্তুত তারা মদীনায় নিকটবর্তী হল ৷
    মদীনায় উপকণ্ঠে খালের তীরে বাতনুসৃ সাবাখা’ পাহাড়ের কাছাকাছি আইনায়ন নামক স্থানে তারা
    র্তাবু ফেলল ৷ তাদের আগমন সংবাদ রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও মুসলমানদের নিকট পৌছে যায় ৷ তিনি
    মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, আমি একটি ভাল স্বপ্ন দেখেছি ৷ আমি দেখেছি যে, একটি
    পাভী জবাই করা হচ্ছে ৷ আমি আরো দেখলাম যে, আমার তরবারির ধারের মধ্যে ভাঙ্গার চিহ্ন ৷
    আমি এও দেখলাম যে, একটি মজবুত লৌহ বর্মে আমি আমার হাত ঢুকিয়েছি ৷ আমি মনে করি,
    ওই মজবুত লৌহ বর্ম হল মদীনা নগরী ৷ এই হাদীছটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম দুজনেই আবু
    কুরায়র — আবুমুসা আশআয়ী (রা)-এর বরাতে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) থেকে উদ্ধৃত করেছেন ৷
    রাসুলুল্পাহ্ (সা) বলেছেন :

    আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম যে, আমি মক্কা থেকে হিজরত করে একটি খেজুর বাগান বিদিষ্টি
    স্থানে যাচ্ছি ৷ আমি মনে করেছিলাম ওই স্থানটি ইয়ামামা কিৎবা হাজর ৷ পরে দেখলাম যে , সেটি
    ইয়াছরিব মদীনা ৷ আমার এই স্বপ্নে আমি দেখলাম যে, আমি আমার তরবারি নাড়া দিলাম সেটি
    মাঝখান থেকে ভেঙ্গে গেল ৷ এটি হল উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের উপর আপতিত বিপদের ইঙ্গিত ৷
    আমি পুনরায় তরবারি নাড়া দিলাম ৷ সেটি পুর্বের চেয়েও অধিক সুন্দর রুপ নিল ৷ এটি হল ওই
    যুদ্ধে পুনরায় মুসলমানদের একত্রিত হওয়া এবং আল্পাহ্ প্রদত্ত বিজয়ের ইঙ্গিত ৷ আমি স্বপ্নে
    দেখলাম, কতকগুলো গরু জবাই করা হচ্ছে ৷ কল্যাণ আল্লাহর নিকটই ৷ তা ছিল উহুদ যুদ্ধের
    শহীদদের প্রতি ইঙ্গিত ৷ আর কল্যাণ হল বদরের যুদ্ধের পর থেকে আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে
    যে সকল বিজয় ও বিনিময় দান করেছেন যে গুলো ৷

    বায়হাকী বলেন, আবুআবদৃল্লাহ্ হাফিয ইবন আব্বাস (রা ) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি
    বলেছেন, বদরের যুদ্ধের গনীমত হিসেবে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার যুলফিকার তরবারিটি
    পেয়েছিলেন ৷ ওই তরবারিটিই তিনি উহুদ যুদ্ধের দিনে স্বপ্নে দেখেছিলেন ৷ বন্তুত যুদ্ধের উদ্দেশ্যে
    মুশরিকগণ যখন মদীনায় উপকষ্ঠে এসে পৌছল তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর ইচ্ছা ছিল মদীনায়
    অবস্থান করেই ওদের মুকাবিলা করা ৷ বদরের যুদ্ধে ছিলেন না এমন কতক সড়াহাবী বললেন, ইয়া
    রাসুলাল্লাহ্ ! আমরা মদীনা থেকে বের হব এবং উহুদ প্রাম্ভরে গিয়ে ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব ৷
    বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুজাহিদগণ যে ফযীলত ও সম্মান লাভ করেছেন তা লাভ করাই ছিল

    তাদের উদ্দেশ্যে ৷ এ বিষয়ে তারা রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে পীড়াপীড়ি করছিলেন ৷ শেষে রাসুলুল্লাহ্
    (সা) যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ পােশাকে সজ্জিত ৩হলেন ৷ এবার ওই সাহাবীগণ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে
    অনুতপ্ত হলেন ৷ তারা আরব করলেন, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ! মদীনাতে ই অবস্থান করুন ৷ আপনার
    সিদ্ধাম্ভই আমাদের সিদ্ধান্ত ৷ তিনি বললেন, কোন নবী যদি যুদ্ধ পোশড়াক পরিধান করেন তবে
    শত্রুর বিরুদ্ধে ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ পোশাক খুলে ফেলা৩ তার জন্যে শোভনীয় নয় ৷
    বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন যুদ্ধ পোশাক পরিধান করার পুর্বে রাসুলুল্লাহ্ (সা) সাহাবীগণকে
    বলেছিলেন, আমিাপ্নে দেখেছি যে, আমি একটি মযবুত লৌহবর্মে আমার হাত ঢুকিয়েছি ৷ আমি
    তার ব্যাখ্যা করেছি যে, সেটি হল সুরক্ষিত মদীনা নগরী ৷ আমি দেরুহছি যে, আমি একটি বকরী
    পাল তাড়া করছি ৷ বন্তুতঃ এর ব্যাখ্যা হচ্ছে শত্রু সেনাবাহিনী ৷ আমি দেখেছি, আমার তরবারি
    যুলফিকারের ধারের মধ্যে ভাঙ্গা-চিহ্ন ৷ আমি এর ব্যাখ্যা করেছি যে, তোমরা আঘাত প্রাপ্ত হবে ৷
    আমি দেখেছি, একটি গরু জবাই করা হচ্ছে ৷ বন্তুতঃ সকল কল্যাণ আল্লাহ্রই হাতে ৷ ইমাম
    তিরমিযী ও ইবন মাজা উক্ত হাদীছটি আবদুর রহমান ইবন আবুয যিনাদ সুত্রে উদ্ধৃত করেছেন ৷

    বাযহাকী (র) হাম্মড়াদ ইবন সালামা আনাস (বা) থেকে মারকু রুপে বর্ণনা করেছেন
    যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, আমিাপ্নে দেখলাম যে, আমার পেছনে কতকগুলো মেষ ৷ আমার
    তরবারির ধার অংশে ভাঙ্গার চিহ্ন ৷ আমিাপ্নের এই ব্যাখ্যা করেছি যে, আমি শত্রু পক্ষের
    সৈন্যদেরকে হত্যা করব ৷ আর আমার তরবারির ধার ভেঙ্গে যাওয়ার ব্যাখ্যা হল, আমার বা শের
    কারো নিহত হওয়া ৷ ওই যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর চাচা হাময৷ (বা) শহীদ হন এবং রাসুলুল্লাহ্
    (সা) শত্রু পক্ষের পতাকাবাহী তালহাকে হত্যাকরেন ৷

    মুসা ইবন উকবা (র) বলেন, কুরায়শরা পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণ করল ৷ তাদের অনুগত আরবের
    মুশরিকদেরকেও সাথে নিল ৷ আবু সুফিয়ান কুরা ৷য়শের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে যাত্রা ৷করল ৷ এটি
    ছিল বদরের যুদ্ধের পরের বছর শাওয়াল মাসের ঘটনা, উহুদ পাহাড়ের মুখোমুখি হতে নওয়াদীতে
    এসে তারা অবস্থান নিল ৷ কতক মুসলমান বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি ৷ ফলে
    সম্মান মর্যাদা ও ছাওয়াব অর্জনে বঞ্চিত হয়ে৩ তারা অনৃতপ্ত হয়েছিলেন ৷৩ তাই শত্রুর মুখোমুখি
    হবার জন্যে তাদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ ছিল ৷ যাতে বদরী সাহাবীগণের ন্যায় তারা পরীক্ষার সম্মুখীন
    হতে পারেন ৷ আবু সুফিয়ান ও মুশরিকগণ উহুদ প্রাম্ভরে এসেছে শুনে ওই সা ড়াহাবীগণ আনন্দিত
    হলেন ৷ তারা বলেন, শত্রুর মুকাবিলা করার আমাদের আগ্রহ পুর্ণ করার জন্যে মহান আল্লাহ এ
    সুযোগ এনে দিয়েছেন ৷

    জুমুআর রাতে রাসুলুল্লাহ্ (সা) একটিাপ্ন দেখলেন ৷ সকালে সাহাবীদেবকে ডেকে তিনি
    বললেন, গতরড়াতে আমিাপ্নে দেখলাম যে, একটি গরু জবাই করা হচ্ছে ৷ কল্যাণ আল্লাহর
    নিকট ৷ আমি আরো দেখলাম আমার তরবারি যুলফিকার বারের স্থানে ভেঙ্গে গিয়েছে ৷ অন্য
    বর্ণনায় আছে তাতে তা ৷ঙ্গার চিহ্ন দেখা গিয়েছে ৷ এইাপ্ন দেখে আমি দুঃখ পেয়েছি, মুলত ও
    দুটো বিপদের পুর্বাভাস, আমি আরো দেখেছি যে, একটি সুরক্ষিত লৌহ বর্মে আমি আমার হাত
    ঢুকিয়েছি এবং আমি একটি মেয তাড়া করছি ৷াপ্নের কথা শোনার পর সাহাবা ই কিরাম (বা)
    বললেন, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! আপনি নিজে ওইাপ্নের কী ব্যাখ্যা করেছেন ? তিনি বললেন, গরু

    যবাইয়ের যোপ্ন দেখেছি তা হল আমাদের পক্ষের এবং শত্রু পক্ষের কিছু লোক নিহত হবে ৷
    তা আরাতরবাবি ভাঙ্গার বিষয়টি আমার নিকট খুবই বষ্টিদায়ক ৷ কারো কারো মন্তব্য এই যে, তরবারি
    তাঙ্গা বিষয়ে রা সুলুল্লাহ্ (সা) যা দেখেছেন তা হল উহুদ দিবসে তার মুখমণ্ডলে আপতিত আঘাত
    সেদিন তার চেহারা মুবা রকে আঘাত করেছিল ৷ তারা তার দাত শহীদ করে দিয়েছিল ৷৩ তার ঠোট
    যখন করেছিল ৷ ঐতিহাসিকদের ধারণা, উত বা ইবন আবু ওয়াক্কাস ইার প্রতি বর্শা নিক্ষেপ
    করেছিল,াপ্নে দেখা গরু যবাই এর ব্যাখ্যা হলো সেই দিনে শাহাদাত বরণকারী মুসলিমপণ,
    রাসুলুল্লাহ্ (যা) বলেছেন যে, মেষ এর ব্যাখ্যা আমার মতে শত্রু পক্ষের সৈন্য ৷ মুসলিমগণ
    তাদেরকে হত্যা করবেন ৷ মযবুত লৌহ বর্মের ব্যাখ্যা হল মদীনা নগরী ৷ মুজাহিদদেরকে নির্দেশ
    দিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তোমরা মদীনাতেই অবস্থান কর এবং নারী ও শিশুদেরকে দুর্গের
    মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দাও ৷ শত্রুরা যদি আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে তবে আমরা
    ওদের মুকাবিলা করব যুদ্ধ করব আর দুর্গের মধ্যে থাকা লোকজন ওদের প্রতি পাথর নিক্ষেপ
    করবে ৷ মদীনাবাসীগণ মদীনার গলিপথ ও রাস্তা গুলোকে ঘর বাড়ী বানিয়ে আরো সংকীর্ণ করে
    তুলেছিল ৷ ফলে পুরো মদীনা নগরী দুর্গের ন্যায় হয়ে উঠেছিল ৷ যারা বদরের যুদ্ধে অ শ গ্রহণ
    করতে পারেননি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর প্রভাব শুনে তারা বললেন, আমরা এমন একটি দিনের
    আকাত্খায় ছিলাম ৷ মুখোমুখি জিহাদের একটি দিন আমাদেরকে দেয়ার জন্যে আমরা আল্লাহ্র
    নিকট দুআ করতাম ৷ আল্লাহ তাআলা আজ আমাদেরকে তেমন দিন দিয়েছেন এবং এর দুরত্ও
    কম ৷ জনৈক আনসারী বলে উঠলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (সা) ! আমাদের বাড়ীর কাছে ওরা এসে
    পড়েছে ৷ এখন যদি আমরা ওদের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ না করি তবে আর করে তা করব ? কতক
    লোক বলল, ওদের পশুপ্রাণীগুলোাতো আমাদের ফসল খেয়ে দলিত মথিত করে দিচ্ছে ৷ আমরা
    যদি ওই ফসল রক্ষা করতে না পারিত তবে কি আর রক্ষা করব ? অন্য কতক লোক পুর্ববর্তীদের
    সমর্থনে কথা বললেন ৷ তাদের একজন হযরত হামযা (রা) ৷ তিনি বললেন, যে মহান আল্লাহ্
    আপনার প্রতি কিতাব নাযিল কবেছেন৩ তার কসম করে বলছি আমরা ওদের মুকাবিলা করবই ৷
    বানু সালিম গোত্রের নুআয়ম ইবন মালিক ইবন ছালাবা বললেন, হে অাল্লাহ্র নবী ! আমাদেরকে
    জান্নাত থেকে বঞ্চিত করবেন না, যার হাতে আমার প্রাণ ! সেই মহান সত্তার কসম, আমি অবশ্যই
    জান্নাতে প্রবেশ করব ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তুমি কেমন করে জান্নাতে যাবে ? তিনি বললেন,
    কারণ আমি আল্লাহ্কে ও তীর রাসুলকে ভালবাসি এবং জিহাদের দিলে আমি ময়দান ছেড়ে
    পালাবনা , রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ ৷ সত্যি সত্যি সেদিন নুআয়ম (রা)
    শাহাদাত বরণ করেন ৷ বহুলোক সেদিন বাইরে এসে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্
    (সা) এর প্রস্তাবে তারা সন্তুষ্ট হননি ৷ তার প্রস্তাব যদি তারা মেনে নিতেন তবে তা তাদের জন্য
    অনেক ভাল হত ৷ কিন্তু তাল্লাহ্র নির্ধারিত ফায়সালা ই প্রাধান্য পেল ৷ বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার
    প্রস্তাব যারা দিয়েছিলেন তাদের অধিকাৎশই বদর যুদ্ধে অনুপ ত ছিলেন, বদর যুদ্ধে অংশ
    গ্রহণকারীদের মাহা ত্ম্য সম্পর্কে তারা জ্ঞাত ছিলেন ৷
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) জুমু আর নামায আদায় করছিলেন ৷ তিনি তাদেরকে উপদেশ দিলেন ৷
    নসীহত করলেন ৷ এবং সাধ্য মত জিহাদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিলেন ৷ যথা নিয়মে খুতবা ও
    নামায শেষ করলেন ৷ তারপর যুদ্ধ পোশাক আনয়নের নির্দেশ নিলেন ৷ তিনি যুদ্ধ পোশাক

    পরিধান করলেন ৷ তারপর লোকজনকে যুদ্ধ অভিযানে বের হবার নির্দেশ দিলেন ৷ এ অবস্থা দেখে
    বিচক্ষণ সাহাবিপণ বললেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তো আমাদেরকে মদীনায় অবস্থান করতে বলে-
    ছিলেন ৷ আল্লাহ্র ইচ্ছা সম্পর্কে তিনিই তো ভাল জানেন ৷ উর্ধ্বাকাশ থেকে তার নিকট ওহী
    আসে ৷ শেষে তারা বললেন, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! আপনি যেমনটি নির্দেশ দিয়েছিলেন আপনি
    মদীনাতেই থাকুন, আমরাও তাই কবি ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যুদ্ধ পোশাক পরিধান করা
    এবং যুদ্ধ অভিযানে বের হবার ঘোষণা দেয়ার পর যুদ্ধ না করে ফিরে আসা কো ন নবীর জন্যে
    শোভনীয় নয় ৷ আমি তো তে ৷মাদেরকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলামৰু; কিভু তে ৷মরা অভিযানে বের
    হওয়া ব্যতীত ৩তকিছুরু রাজী হলে না ৷ এখন তোমাদের দাযিতৃ হল তাকওয়৷ অবলম্বন করাও

    যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করা ৷ আর তোমরা অপেক্ষায় থাক, আল্লাহ্ কী নির্দেশ দেন ৷ নির্দেশ
    গেলে তা পালন করবে ৷

    রাসুলুল্লাহ্ (সা) এবং মুসলমানগণ অভিযানে বের হলেন ৷ বাদাই-এর পথে তারা অগ্নসর
    হলেন, তাদের সং খ্যা ছিল এক হাজার ৷ আর মুশরিকদের সং খ্যা ছিল তিন হাজার ৷ রাসুলুল্লাহ্
    (সা) তার অনুসারীপণকে নিয়ে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশেত তাবু ফেললেন ৷ কিছুদুর গিয়ে আবদুল্লাহ
    ইবন উবায় ইবন সালুল তার তিন শ অনুসারীকে নিয়ে মদীনায় ফিরে আসে ৷ অবশিষ্ট সাত শ জন
    নিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) অগ্রসর হলেন ৷ বায়হাকী (র ) বলেন, যুদ্ধ ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মতে
    এটিই প্রসিদ্ধ কথা যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) সাত শ’ জন মুজাহিদ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ৷
    তবে যুহরী বলেন, প্রসিদ্ধ কথা হল শেষ পর্যন্ত চার শ’ জন সাহাবী রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর সাথে
    ছিলেন ৷ এটি বর্ণনা করেছেন ইয়াকুব ইবন সুফিয়ান যুহরী থেকে ৷ কেউ কেউ বলেছেন যে, সাত
    শ জন মুজাহিদ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে অবশিষ্ট ছিলেন ইমাম যুহরী থেকে এমন একটি
    বর্ণনাও রয়েছে ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷

    মুসা ইবন উকব৷ বলেন, ঘুশরিকদের অশ্ববাহিনীর নেতৃতৃ ছিল খালিদ ইবন ওয়ালীদের
    হাতে ৷ তাদের সাথে ছিল একশ’টি অশ্ব ৷ তাদের পতাকা ছিল উছমান ইবন তালহার হাতে ৷
    বর্ণনাকারী বলেন মুসলমানদের নিকট একটি অশ্বও ছিলনা ৷৩ তারপর তিনি বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা
    করেছেন যার বিবরণ অচিরেই আসবে ইনৃশাআ ৷ল্লাহ্ ৷

    মুহ হাম্মাদ ইবন ইসহড়াক বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার স্বপ্নের কথা সাহাবিগণের নিকট প্রকাশ
    করলেন, তারপর তিনি বললেন, তোমরা যদি এ অভিমত দাও যে, তোমরা মদীনায় অবস্থান
    করবে এবং ওদেরকে ওদের স্থানে ছেড়ে দেবে ৷ ওরা যদি ওদের স্থানে অবস্থান করে তাতে তারা
    একটি মন্দ স্থানে অবস্থান করবে ৷ আর যদি তারা আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে তবে মদীনার
    ভেতরেই আমরা ওদের মুকাবিল৷ করব ৷ মদীনা থেকে বেরিয়ে ওদের মুখোমুখি না হওয়ার
    প্রস্তাবে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে একমত পোষণ করেছিল আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সালুল;
    বিক্ষ্ম কতক মুসলমান যারা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি এবং পরে ওই দিনই উহুদ
    ময়দানে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেছিলেন তারা বললেন, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! আমাদেরকে
    শত্রুপক্ষের নিকট নিয়ে চলুন ৷ তারা যেন এটা মনে না করে যে, আমরা সাহসহারা এবং দুর্বল হয়ে

    পড়েছি ৷ আবদুল্লাহ ইবন উবাই বলল, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ ! শত্রু পক্ষের নিকট যাবেন না, আল্লাহর

    কসম, ইতিপুর্বে আমরা যখনই মদীনা থেকে বেরিয়ে শত্রুর মুখোমুখি হয়েছি ততবারই পরাজিত
    ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি ৷ আর যখনই শত্রুপক্ষ মদীনায় প্রবেশ করেছে তখনই আমরা বিজয় লাভ
    করেছি ৷ সবাই এভাবে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করছিল ৷ এক সময়
    তিনি হুজরায় প্রবেশ করলেন ৷ তার যুদ্ধ পোশাক পরিধান করলেন ৷ সেদিন ছিল জুম আর দিন
    জুম আ র নামায শেষে তিনি এসব করলেন ৷ সেদিন বানু নাহার গোত্রের জনৈক লোকের মৃত্যু
    হয়েছিল ৷৩ তার নাম ছিল মালিক ইবন আমর ৷ যুদ্ধ পােশাকে তিনি ওই ব্যক্তির জানড়াযা আদায়
    করলেন তারপর মুসলমানদের সম্মুখে উপস্থিত ৩হলেন ৷ নিজেদের ভুল বুঝতে পাের লোকজন
    লজ্জিত হল ৷ তারা বলল হায়, আমরা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বের করে এসেছি এটিভো
    আমাদের মোটেই উচিত হয়নি ৷ তিনি যখন তাদের সম্মুখে এলেন, তখন তারা বললেন, ইয়া
    রাসুলাল্লাহ্! আপনি চাইলে মদীনাং৩ই থাকুন ৷ তিনি বললেন, যুদ্ধ পোশাক পরিধান করার পর যুদ্ধ
    না করে ওই পোশাক খোলা কোন নবীর শান নয় ৷ এক হাজার সাহাবী নিয়ে তিনি যাত্রা করলেন ৷
    ইবন হিশাম বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখনকার জন্যে মদীনায় শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন
    আবদুল্লাহ ইবন উম্মু মাকতুম (রা ) কে ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, মদীনা ও উহুদের মধ্যবর্তী শাওত নামক স্থানে আসার পর এক
    তৃতীয়াৎশ লোক নিয়ে আবদুল্লাহ ইবন উবাই দল ত্যাগ করল ৷ সে বলল, হে লোক সকল!
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওদের কথা শুনেছেন আর আমাদের কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন ৷ তাহলে কিসের
    জন্যে আমরা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দেব তা বুঝে আসছে না ৷ তার সম্প্রদায়ের মুন৷ ৷ফিকগণ
    তাকে অনুসরণ করে ফিরে যায় ৷ হযরত ৩জাবির (রা) এ-য় পি৩ ৷ আবদৃল্লাহ্ ইবন আমর ইবন
    হারাম সুলামী ওদের পিছু পিছু গেলেন এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে থাকার জন্যে ওদেরকে
    ডেকে ডেকে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তে ৷মাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে
    দিচ্ছি ৷ শত্রুর মুখোমুখি হওয়া অবস্থায় তোমরা তোমাদের সম্প্রদায়কে এবং তোমাদের নবীকে
    ছেড়ে যেয়োনা ৷ মুনাফিকগণ বলল, আমরা যদি মনে করতাম যে, তোমরা সত্যিই জিহাদে হচ্ছে
    তবে আমরা তোমাদের কথা মানতাম; কিন্তু জিহাদ সংঘটিত হবার কোন আলাম৩ ই আমরা
    দেখছি না ৷৩ তার অনুরোধ উপরোধে তারা যখন সাড়া দিলনা তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র
    শত্রুরা, আল্লাহ তোমাদেরকে তার রহমত থেকে সরিয়ে দিন অতি ৩সত্র আল্লাহ্ তা আলা তার
    নবীকো তামাদের সাহায্য প্রার্থী হওয়া থেকে রক্ষা করবেন ৷ আমি বলি আল্লাহ তাঅ লার নিম্নোক্ত
    বাণীতে ওই মুন৷ ফিাকদের কথাই বুঝা নো হয়েছে ৷ আল্লাহ্ তা আলা বলেন :

    এবং মুনাফিকদেরকে জানবার জন্যে ৷ এবং তাদেরকে বলা হয়েছিল আস, তোমরা
    আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা প্রতিরোধ কর ৷৩ তারা বলেছিল “যদি একে যুদ্ধ বলে জানতাম তবে
    নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ কর৩ তাম ৷ সেদিন তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীর নিকটতর ছিল ৷

    যা তাদের অম্ভরে নেই তারা তা মুখে বলে, তারা বা গোপন রাখে আল্লাহ তা বিশেষভাবে
    অবহিত ৷ (৩-আলে ইমরান : ১৬৭) ৷ অর্থাৎ তারা যে বলেছে “যদি যুদ্ধ হবে জানতাম তবে
    নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ করতাম” এই রক্তবাে তারা মিথ্যাবাদী ৷ কারণ, যুদ্ধ যে সে
    সময়ে সংঘটিত হয়ে তা ছিল নিশ্চিত ৷ তাতে কোন অস্পষ্টতা ও সন্দেহ ছিলনা ৷ এই সকল
    মুনাফিক লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন :

    তোমাদের হল কী যে, তোমরা মুনাফিকদের সম্বন্ধে দৃ’ দলে বিভক্ত হয়ে গেলে? তাদেরকে
    আল্লাহ তাদের কৃতকর্যের জন্যে পুৰ্বাবন্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন ৷ ( : নিসা : ৮৮) ৷ এ মুনড়াফিকদের
    সম্বন্ধে সাহড়াবাগণ দু ধরণের অভিমত পাওয়া যায় ৷ একদল বলে যে, আমরা এই মুনাফিকদের

    বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি ৷ অপর দল বলেন আমরা ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না ৷ সহীহ হাদীস গ্রন্থে এ
    বিষয়ে হাদীস বর্ণিত আছে ৷

    যুহরী বলেন, উহুদের যুদ্ধের প্রাক্কালে আনসারগণ মদীনায় অবস্থান কারী মিত্রশক্তি ইয়াহ্রদীদের
    সাহায্য নেয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা)-এর অনুমতি চেয়েছিলেন ৷ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ওদের
    সাহায্যে আমাদের প্রয়োজন নেই ৷ উরওয়া ইবন মুসা ইবন উক্বা বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবন
    উবইি মুনাফিক ও তার সাথীগণ দলত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর বানু সালিমা ও বানু হারিছা
    গোত্রদ্বয় ও ভগ্ন হৃদয় হয়ে দলত্যাগ করার কথা ভেবেছিল ৷ কিন্তু আল্লাহ তড়াআলা তাদেরকে
    অবিচল রেখেছিলেন ৷ এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

    যখন তোমাদের মধ্যে দু গোত্রের সাহস হারানাের উপক্রম হয়েছিল এবং আল্লাহ উভয়ের
    সহায়ক ছিলেন, আল্লাহর প্রতিই যেন মু’মিনগণ নির্ভর করে ৷ (৩আলে ইমরান : ১২২) ৷ জাবির
    ইবন আবদুল্লাহ (রা) বলেন, এই আয়াত নাযিল হওয়াটাই ছিল আমাদের কামা ৷ কারণ, আল্লাহ

    তাআলা বলেছেন : আল্লাহ ওই দু দলের সাহায্যকারী ৷ সহীহ বুখারী ও সহীহ
    মুসলিমে হযরত জাবির (রা) থেকে এরুপ বর্ণিত আছে ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলেন, বানু হারিছা গোত্রের
    পাথুরে অঞ্চল অতিক্রম করার সময় একটি ঘোড়া তার লেজ নাড়ল তা’ জনৈক মুজড়াহিদের
    তরবারির র্বীটের সাথে লাগার তরবারি খাপ থেকে খসে পড়ে ৷ তরবারিধারী সাহাবীকে রাসুলুল্লাহ্
    (সা) বললেন, তরবারি আপাততঃ কোষবদ্ধ করে রাথ , আমি দেখতে পাচ্ছি যে, আজ অচিরেই
    তরবারিগুলো খোলা হবে ৷

    রাসুলুল্লাহ (সা) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, এমন কেউ আছে কি যে, আমাদেরকে
    সংক্ষিপ্ত পথে শত্রুদের নিকট নিয়ে যাবে তবে একেবারে শত্রুদের মুখোমুখি নয় ৷ বানু হারিছা
    গোত্রের আবু থায়ছামা (রা) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আমি প্রস্তুত রয়েছি ৷ এরপর তিনি

    সুলুল্লাহ্ (না)-কে পথ দেখিয়ে বানুহারিছা গোত্রের শিলাভুমি ও ধন-সম্পদ (ক্ষত-ফসলের মধ্য
    য়ে নিয়ে চলল ৷ যেতে যেতে তারা মিরবা ইবন কায়যী নামের জনৈক ব্যক্তির বাগানে গিয়ে
    টীছলেন ৷ ওই লোকটি ছিল মুনাফিক এবং দৃষ্টিশক্তিহীন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও মুসলমানদের
    াগমন আচ করতে পেরে সে উঠে র্দাড়াল এবং মুজাহিদদেরকে লক্ষ্য করে ধুলো নিক্ষেপ করতে
    গল ৷ সে বলছিল, তুমি যদি আল্লাহর রাসুল হও তবে আমার বাগানে প্ৰবেশে তোমার জন্যে
    নুমতি নেই ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আমি জানতে পেয়েছি যে, সে এক মুষ্টি ধুলো হাতে নিয়ে
    লছিল , আল্লাহর কসম , হে মুহাম্মাদ ! আমি যদি নিশ্চিত হতে পারতাম যে আমার নিক্ষিপ্ত মাটি
    মি ছাড়া অন্য কারো পায়ে পড়বে না তবে আমি শুধু তোমার মুখমণ্ডল লক্ষ্য করে এ ধুলাে
    ক্ষেপ করতাম ৷ তার এ উদ্ধত্য দেখে লোকজন দ্রুত তাকে হত্যা করার জন্যে এগিয়ে
    লেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর বললেন, না, ওকে যেরােনা ৷ এই ব্যক্তিটি চোখ এবং অন্তর উভয়
    ক থেকেই অন্ধ ৷ রসুলুল্লাহ্ (সা) বারণ করার পুর্বেই বানু আবদুল আশহাল ণ্পুপাত্রের সাদ ইবন
    য়দ মুনাফিকটির নিকট পৌছে যান এবং ধনুক দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন ৷ তাতে তার
    বা যখম হয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) অগ্রসর হয়ে অবস্থান নিলো ৷ উহুদ প্রাত্তরের উপত্যকায় সমতল
    রতে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) উহুদ পাহাড়কে পেছনে রেখে অবস্থান নিলেন ৷ তার সেনাবাহিনী ও তার
    াছনের দিকে ছিল ৷ তিনি নির্দেশ দিলেন যে, তার আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত কেউ যেন যুদ্ধ শুরু
    করেন ৷ কুরড়ায়শগণ তাদের সশস্ত্র বাহন ত্তস্থে গুলো ঘাস খাওয়ার জন্যে ছেড়ে দিয়েছিল খালের
    ারে শ্যামল শস্যক্ষেত্রে ৷ ওই শস্যক্ষেত্রটি ছিল মুসলমানদের ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) আপাততঃ যুদ্ধ
    াকে বারণ করার পর জনৈক আনসারী বলে উঠলেন, এ কেমন কথা বানু কীলা গোত্রের ক্ষেত
    মারে পশু চরানাে হচ্ছে অথচ আমরা তা তাড়াব না ৷

    রাসুলুল্লাহ্ (সা) যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলেন ৷ তখন তার সাথে মুজাহিদের সংখ্যা ছিল সাত শ’
    ন ৷ ভীরন্দাজ বাহিনীর প্রধান রুপে বানু আমার ইবন আওফ গোত্রের হযরত আবদৃল্লাহ্ ইবন
    বায়র (রা)-কে মনোনীত করেন ৷ তিনি ছিলেন সাদা পোশাক পরিহিত ৷ তীরন্দাজ বাহিনী
    রুথ্যায় ছিলেন পঞ্চাশ জন ৷ তিনি বললেন, তীর নিক্ষেপ করে তোমরা শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী
    হিনীকে প্রতিরোধ করবে ৷ তারা যেন আমাদের পেছনের দিক থেকে আসতে না পারে ৷ যুদ্ধের
    লাফল আমাদের পক্ষে হোক কিত্বা বিপক্ষে তোমরা ওই পিরিপথে অবিচল থাকবে ৷ কোন
    বন্থাতেই যেন আমরা পেছনের দিক থেকে ওদের দ্বারা আক্রান্ত না হই ৷ সহীহ বুখারী ও মুসলিম
    :ন্থ এ বিষয়ক হাদীছ রয়েছে ৷ সে গুলোর উদ্ধৃতি অচিরেই আসবে ইন্শাআল্লাহ্ ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) দুটো যুদ্ধ-বর্ম পরিধান করে মাঠে নেমেছিলেন ৷ অর্থাৎ
    কটির উপর আরেকটি বর্ম তিনি পরেছিলেন ৷ পতাকা দিয়েছিলেন মুসআব ইবন উমায়রের
    তে ৷ তিনি ছিলেন বানুআবদিদ দার গোত্রের লোক ৷

    আমি বলি, সেদিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) কতক অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালককে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ থেকে
    চরত পাঠিয়েছিলেন ৷ তাদের এ নাবালকত্বের কারণে তারা উহুদের যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি ৷
    াদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (বা) ৷ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম গ্রন্থে আছে যে ,
    ড়াবদৃল্লাহ্ ইবন উমার (রা ) বলেছেন, উহুদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিপ্রায়ে আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা)

    এর সম্মুখে উপস্তি ত হই ৷ তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন না ৷ পরবর্তীতে খন্দকের যুদ্ধে অংশ
    নেয়ার জন্যে আমি রাসৃলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট উপস্থিত হই ৷ তখন আমার বয়স ১৫ বছর এবার
    তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন ৷ আরো যারা উহদ যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি পাননি তাদের মধ্যে
    ছিলেন উসাম৷ ইবন্ ৷ যায়দ, যায়দ ইবন ছাবিত , বারা ইবন আযিব, উসায়দ ইবন যুহায়র , আরাবা
    ইবন আওস ইবন ফীযী ৷ ইবন কুতায়বা ও সৃহায়লী আরাবার নাম উল্লেখ করেছেন ৷ তার সম্পর্কে
    করি শামৃমাখ বলেন চ

    মর্যাদার ঝাণ্ডা যখনই উত্তোলিত হয়েছে, তখনই আরাবা সেটিকে তার দক্ষিণ হাতে ধারণ
    করেছে ৷

    অনুমতি-বঞ্চিতদের মধ্যে ছিলেন ইবন সাঈদ ইবন খায়ছামাভ্রদু ৷ তার কথাও উল্লেখ করেছেন
    সুহায়লী ৷ খন্দক যুদ্ধের সময় ভীর৷ সকলেই তাতে অংশ নেয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন ৷ উহুদ
    দিবসে রাসুলুল্লাহ ( সা ) সামুরা ইবন জুনদৃব এবং বাকি ইবন খাদীজকেও ফেরত পাঠিয়ে দিলেন,
    তখন তাদের বয়স ছিল পরের বছর ৷ বলা হল যে, ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! রাফি (তা ভাল তীরন্দায় ৷
    ফলে তিনি রাফি কে অনুমতি দিলেন ৷ আবার বলা হল সামুরা৩ তা কুস্তিতে ব ফি কে পরাস্ত
    করতে পারে ৷ তিনি তখন সাযুরাকেও যুদ্ধে অং শ্৷ নেয়ার অনুমতি দিলেন ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, অন্যদিকে কুরায়শরা যুদ্ধ সাজে সজ্জিত হল ৷ তারা সং খ্যায় ছিল তিন
    হাজার ৷ তাদের অশ্ব সং থ্যা ছিল দুই শ ৷ অশ্ব গুলােকে তারা দৃপাশে সাবিবদ্ধ করল ৷ তারা
    তাদের অশ্বারােহী বাহিনীর ডান বাহুর নে , হুখালিদ ইবন ওলীদকে এবং বাম বাহুর নেতৃতু
    ইকরাম৷ ইবন আবু জা হ্লকে অর্পণ করে ৷

    রাসুলুল্লাহ্ (সা একটি তরবারি উচিয়ে ঘোষণা দিলেন, প্রকৃত হক আদায় করার সংকল্প নিয়ে
    এ তরবারিটি (ক ৷নবে ? অনেক মুজাহিদ তা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন ৷ তিনি তাদের
    কাউফেই তা দিলে ৷ না ৷ এবার এলেন বানু সাইদাহ্ গোত্রের আবু দুজান৷ সিমাক ইবন খারাশা ৷
    তিনি বললেন ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্! এই রতবাবির হক কী রাসুলুল্লাহ্ (সা ) বললেন, তা হল এটি
    বো,ক না যাওয়া ম্ভে শত্রুর উপর অ নবব৩ আঘাত হেনে যাওয়া ৷ আবু দৃজ না (বা ) বললেন, ওই
    হক আদায়ের সংকাং নিয়ে আ ৷মি সেটি গ্রহণ করব ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্ ! তিনি তরবারি হলো তার হাতে
    তুলে দিলেন ৷ ইবন ইসহাক বিচ্ছিন্ন সনদে এরুপ বর্ণনা ৷কবেছেন ৷ ইবন আহমদ (র ) বলেন,
    ইয়াযীদ ছাবিত থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, উহুদ দিবসে রাসুলুল্লাহ্ (সা) একটি
    তরবারি উচিয়ে বললেন, এই নবারি নেয়ার মত কে আছে ? কতক লোক তা নিতে আগ্রহী
    হল ৷ তিনি তাদের দিকে তাকা সেন এবং বললেন, এটির হক আদায় করে গ্রহণ করার মত কে
    আছে ? এবার সবাই চুপ হয়ে গেলেন ৷ আবু দৃজানা সিমাক বললেন, আমি সেটির হক আদায়ের
    ত্কল্প নিয়ে গ্রহণ করব ৷ আবু দুজান৷ তা ৷তেহ৷ ৩নিলেন এবং সেটির আঘাতে ৩বহু মুশরিকের
    মাথার খুলি উড়িয়ে দিলেন ৷ ইমাম মুসলিম (র ) এই হাদীছ আবু বকর সুত্রে আফ্ফান থেকে
    উদ্ধৃত করেছেন ৷

    ইবন ইসহাক বলেন আবু দৃজান৷ ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা ৷ যুদ্ধকালে বিভিন্ন কৌশল

    অবলম্বনে৩ তিনি ছিলেন পারদশী ৷৩ তার একটি লাল পাগডী ছিল ৷ যুদ্ধের সময়ও তিনি তা মাথায়
    বাধাতন ৷ এটি ছিল তার পরিচিতি চিহ্ন ৷ এই পাগডী পরিধান করলেই বুঝা যেত যে তিনি
    অবিলম্বে যুদ্ধ শুরু করবেন ৷ রাসৃলুল্লাহ্ (সা) এর হাত থেকে তরবারিটি নিয়ে আবু দৃজান৷ তার
    লাল পাপ ৷ড়ি মাথায় বাধলেন ৷ তারপর উভয় পক্ষের সারির মাঝখানে গিয়ে প্রচণ্ড বীরত্বের সাথে
    পর্ব প্রকাশ করতে লাগলেন ৷ বর্ণনাকারী বলেন, জাফর ইবন আবদুল্লাহ্ বানু সালামার
    গোত্রের জনৈক আনসারী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু দৃজানার ওই পর্ব প্রদর্শনের মহড়া
    দেখে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, এটি এমন এক চলার ভঙ্গি সাধারণত যা আল্লাহ্ পসন্দ করেন না ৷
    তবে এই ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থাৎ যুদ্ধের ময়দানে তা আল্লাহ্ তা জানা পসন্দ করেন ৷

    ইব ন ইসহাক বলেন, বানুআবদুদ দার গোত্রের পতাকাবাহী লোকদের মধ্যে যুদ্ধ উন্মাদনা
    সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শত্রু সেনাপতি আবু সুফিয়ান বলেছিল, হে আবদৃদ দার গোত্রের লোকজন! বদর
    দিবসে আমাদের পতাকা তোমাদের দায়িত্বে ছিল ৷ সেদিন আমরা যে গ্নানি ভোগ করেছি ত
    তোমরা দেখেছ ৷ পতাকার উপর সৈনিকদের মনােবল ও সাহস নির্ভর করে ৷ পতাকার পতন হলে
    সৈন্যদলের পতন হয় ৷ এই যুদ্ধে তোমরা যদি পতাকা সমুন্নত রাখতে পার তবে ভাল ৷ আর যদি
    তা না পার, তবে পতাকা আমাদের নিকট হস্তান্তর কর, আমরা ওই দায়িতু থেকে তােমাদেরকে
    অব্যাহতি দেবাে ৷ এ কথা শুনে প্রতিশ্রুতি প্রদানের আঙ্গিকে তারা বলল, আমরা আমাদের পতাকা
    আপনার হাতে সােপর্দ করব ? আপামীক ল যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম সৈন্যদের মুখোমুখি হলে
    আপনি দেখবেন আমরা কেমনতর ভুমিকা পালনকা রী ৷ আবু সৃফিয়ানের ইচ্ছাও ছিল ওদের পক্ষ
    থেকে এরুপ সাহসিকতাপুর্ণ উত্তর শ্রবণ করা ৷

    উহুদ দিবসে উভয় পক্ষের সৈনিকগণ মুখোমুখি হলে, হিন্দ বিনৃত উতরা তার সঙ্গিনীদেরকে
    নিয়ে মুশরিক পুরুষদের পেছনে দাড়িয়ে গেল এবং সকল মহিলা মিলে দফ বাজাতে লাগল ৷
    কুরায়শ যোদ্ধাদেরকে উৎসা ত করে হিন্দ বাদ্যের তালে তালে আবৃত্তি করছিল :
    শুৰুধ্

    ওহে বানু আবদৃদ দার গোত্র ওহে দেশ রক্ষাক৷ ৷রী সৈনিকপণ! প্রচণ্ডভাবে তরবারি চালিয়ে
    যাও ৷

    তোমরা যদি এগিয়ে যাও সন্মুখপানে তবে আমরা তােমাদেরকে আলিঙ্গন করব এবং
    তোমাদের জন্যে ভালবাসার বিছান৷ পেতে দেব ৷

    আর তোমরা যদি পশ্চাতে ফিরে আল পালিয়ে আস তবে আমরা তােমাদেরকে চিরদিনের
    জন্যে পরিত্যাগ করব কোন দিন আর তোমাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করব না ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, আলিম ইবন উমার ইবন কাতাদা বলেছেন, আবু আমির ছিল আমর
    ইবন সায়ফী ইবন মালিক ইবন নু মানের ক্রী৩ দাস ৷ আমর ইবন সায়ফী বানু যাবীআ গোত্রের
    লোক ৷ আবু আমির রাসুলুল্লাহ্ ( সা) এর সঙ্গ ত্যাগ করে ৫০ জন ক্রী৩ তদাসসহ মক্কার পালিয়ে
    যায় ৷ কারো কারো মতে মক্কা ৷গামী ক্রীতদাসেব স খ্যা ছিল পনের ৷ কুরায়শদেরকে সে প্রতিশ্রুতি
    দিয়েছিল যে , সে তার আপন সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হলে সকলে তার দলের অন্তর্ভুক্ত হবে ৷
    কেউই৩ার বিরোধিতা করবে না ৷ উহুদ দিবসে সর্বপ্রথম মুসলমানদের মুখোমুখি হয় ওই
    দেশত্যাগী ক্রী৩ দাস আবু আমির ৷ তার সাথে ছিল তার দলবল ও মক্কার কতক ক্রীতদাস ৷
    মদীনাবাসীদেরকে ডেকে ডেকে সে বলছিল ! হে আ ওস সম্প্রদায় ! আমি আবু আমির ৷
    মুসলমানগণ বললেন, হে ফাসিক (পাপাচারী) ৷ আল্লাহ ভোর অকল্যাণ করুন ! জাহেলী যুগে সে
    রাহিব বা যাজক নামে প্রসিদ্ধ ছিল ৷ শেষে রাসুলুল্লাহ্ (না) তার নাম দিয়েছিলেন ফাসিক পাপিষ্ঠ ৷
    মুসলমানদের উত্তর শুনে সে বলল হায়, আমার দেশ ত্যাগের পর আমার সম্প্রদায় এতটা মন্দ ও
    অকল্যাণে নিমজ্জিত হয়েছে তারপর সে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড লড়াই শুরু করে ৷ সে
    তাদের প্রতি পাথর ছুড়তে থাকে ৷

    ইবন ইসহাক বলেন, এর সাথে সাথেই উভয়পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ৷ যুদ্ধ উষ্মাদনা
    শুরু হয় ৷ আবু দুজানা তরবারি চালাতে থাকেন ৷ শত্রুপক্ষের ব্যুহ ভেদ করে তিনি তাদের
    একেবারে ভেতরে ঢুকে পড়েন ৷

    ইবন হিশাম বলেন, একাধিক আলিম আমাকে জানিয়েছেন যে, যুবায়র ইবন আওয়াম
    বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিবল্ট তরবারিটি চেয়েছিলাম ৷ তিনি আমাকে না দিয়ে সেটি
    দিলেন আবু দুজানাকে ৷ তাতে আমার মনে কিছুটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল ৷ আমি মনে মনে
    বললাম, আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর ফুফাত ভইি ৷ আমি তার ফুফু সাফিয়্যার পুত্র ৷ আমি একজন
    কুরায়শী ৷ আমি আবুদৃজানার পুর্বে তার নিকট তরবারি চেয়ে আবেদন করি ৷ অথচ তিনি আমাকে
    বাদ দিয়ে তাকেই তরবারি দিলেন ৷ আল্লাহর কসম , আমি অবশ্যই দেখব আবু দুজানা ৷কী ভুমিকা
    পালন করে ? অতঃপর আমি তার পেছনে পেছনে গেলাম ৷ তিনি একটি লাল পাগড়ী বের
    করলেন ৷ সেটি মাথায় বীধলেন ৷ তা দেখে আনসারীগণ বলে উঠলেন এই যে, আবু দুজানা
    তিনি মৃত্যু পরওয়ানা পাগড়ী বের করেছেন ৷৩ তারা এরুপ বলছিলেন ৷ ইতোমধ্যে আবু দুজানা
    পাগড়ী মাথায় বাধলেন এবং এই কবিতা আবৃত্তি করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন ;;

    আমি সেই ব্যক্তি আমার বন্ধু মুহাম্মাদ (সা) যাকে প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ করেছেন ৷ খেজুর
    বীথিকার নিকট আমরা এখন রক্তের বন্যা বইয়ে দেব ৷

    তিনি আমার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন যে আমি যেন কখনো পেছনের সারিতে না থাকি ৷ আর
    আল্লাহ ও রাসুলের তরবারি দ্বারা শক্রপক্ষকে আক্রমণ করতে থাকি ৷ আর আল্লাহ ও রাসুলের
    তরবারি দ্বারা শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করতে থাকি ৷

    উমাভী বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর হাদীস বর্ণনা প্রসংপে আবুউবায়দ আমাকে বলেছেন যে,
    রাসুলুল্লাহ্ (সা) এরবারি হাতে যুদ্ধ করছিলেন ৷ তখন একজন লোক তার নিকট উপস্থিত হয় এবং
    তরবারি থানা চায় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আমি যদি তোমাকে তরবারি দিই তাহলে তুমি কি
    পেছনের সারিতে অবস্থান করে যুদ্ধ করবে ? যে ব্যক্তি বলল, জী না, তা নয় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
    তাকে একটি তরবারি দিলেন ৷ যে ব্যক্তি তখন এ বণসঙ্গীত গেয়ে পেয়ে এগিয়ে পেল :

    আমি এমন এক ব্যক্তি যে, আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ্ (না) আমার অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, আমি
    যেন জীবনে কােনদিন পেছনের সারিতে থেকে যুদ্ধ না করি ৷

    এই হাদীছটি শুবা থেকেও বর্ণিত আছে ৷ ইসরাঈলও এটি বর্ণনা করেছেন ৷ তারা দৃ’জনে
    আবু ইসহাক সুত্রে হিন্দ বিন্ত খালিদ থেকে কিত্বা অন্য কারো সুত্রে মারফু পদ্ধতিতে বর্ণনা
    করেছেন ৷
    ৷ শব্দের অর্থ সারিগুলোর পেছনে ৷ একাধিক বিজ্ঞজনের নিকট আমি এ ব্যাখ্যা
    শুনেছি ৷ এই হড়াদীছ ব্যতীত অন্য কোন হাদীছে আমি এ শব্দটি পাইনি ৷

    ইবন হিশাম বলেন, এরপর অগ্রসরমান আবু দৃজানা যাবেইি সামনে পাচ্ছিলেন তাকেই হত্যা
    করছিলেন ৷ মুশরিকদের দলে একজন লোক ছিল আহত ব্যক্তি পেলেই সে তার সেরা করছিল
    ক্ষতন্থান ব্যান্ডেজ করছিল ৷ ইতোমধ্যে আবু দৃজানা এবং ওই ব্যক্তি কাছাকাছি, হয়ে গেল ৷ যুবায়র
    (ব) বললেন, আমি আল্পাহ্র নিকট প্রার্থনা করছিলাম যেন এরা দুজনে সংঘর্ষ লেগে যায় ৷
    অবিলম্বে তারা দুজন মুখোমুখি হয়ে গেল এবং উত্তরে তরবারি পরিচালনা করল ৷ মুশরিক লোকটি
    আবু দুজানড়ার উপর তরবারির আঘাত হান ব্ ৷ ঢাল দিয়ে আবু দৃজানা তা প্রতিহত করলেন ৷
    মুশরিক লোকটির তরবারি ভৌতা হয়ে গেল ৷ এবার আবু দৃজানা তার উপর আক্রমণ চালিয়ে
    তাকে হত্যা করে ফেললেন ৷

    এরপর আমি দেখলাম আবুদৃজানা তরবারি উঠালেন হিন্দ বিনৃত উতবার মাথা বরাবর ৷ কিভৃ
    অবিলম্বে তরবারি সরিয়ে নিলেন ৷ আমি বললাম, এর রহস্য কি তা আল্লাহ্ এবং তার রাসুলই ভাল
    জানেন ৷ বায়হাকী (র ) আদ দালাইল গ্রন্থে হিশাম ইবন উরওয়৷ সুত্রে তিনি তার পিতা থেকে
    এবং তিনি যুবড়ায়র ইবন আওয়াম থেকে এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আবু
    দৃজানা বলেছেন যে, আমি একটি লোক দেখলাম যে মুশরিক সৈন্যদেরকে খুব সাহস দিচ্ছে এবং
    উত্তেজিত করছে ৷ আমি তার উদ্দেশ্যে এগিয়ে পেলাম ৷ আমি যখন তার মাথার উপর তরবারি
    উঠালাম তখন সে অনুনয় বিনয় শুরু করল ৷ তখন আমি দেখতে পেলাম যে সে একজন মহিলা ৷
    রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর তরবারির সম্মানার্থে ওই মহিলাটির উপর তরবারির আঘাত করিনি ৷

    মুসা ইবন উক্বা বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন এই তরবারিটি হস্তান্তরের প্রস্তাব করেছিলেন
    তখন উমর (রা)-ও তরবারি পাওয়ার জন্যে আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা) তাকে
    তরবারি দেননি ৷ এরপর যুবড়ায়র (রা)-তরবারিটি পাওয়ার আবেদন করেছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
    তড়াকেও তরবারিটি দেননি ৷ এতে র্তারা মনক্ষুগ্ন হয়েছিলেন, তিনি তৃতীয়বার প্রস্তাব করলেন ৷

    এবার তরবারি পাওয়ার আবেদন জানালেন আবু দৃজ না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তরবাবিটি তাকেই
    দিলেন ৷ অ বু দৃজানা শেষ পর্যন্ত তরবারির হক আদায় করেছিলেন ৷

    সীরাতঅভিজ্ঞদের ধারণা যে, কাব ইবন মালিক বলেছেন, আমি যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী
    মুসলমানদের মধ্যে ছিলাম ৷ আমি যখন দেখলাম যে মুশবিকদের সংখ্যা মুসলমানদের দ্বিগুণ
    তখন আমি এক পাশে সরে র্দাড়ালাম ৷ আমি দেখলাম জনৈক মুশবিক সৈন্য পুর্ণভাবে অস্ত্র
    সজ্জিত ৷ সে দ্রুতবেগে মুসলমানদের ব্যুহ ভেদ করে এগিয়ে যাচ্ছে ৷ সে বলছিল , পালাও ৷
    পালাও ! ৷ যেমন যবেহ করার ভয়ে বকরী দল পালায় ৷ বর্ণনাকারী বলেন, আমি আরো দেখতে
    পেলাম , একজন মুসলিম সৈনিক ওই মুশবিকের অপেক্ষায় আছে ৷ সেও পুর্ণভাবে অস্ত্র সজ্জিত
    আমি গিয়ে মুসলিম সৈনিকের পেছনে র্দাড়ালাম ৷ আমি উভয় সৈনিকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ
    করছিলাম ৷ আমি বুঝে নিলাম যে, শড়ারিরীক ও অস্ত্র শস্তের দিক থােক মুশবিকটি অধিকতর
    শক্তিশালী ৷ আমি অপলক নেত্রে তাদের দৃজনকে দেখছিলাম ৷ এক সময় তারা দুজন মুখোমুখি
    হল ৷ মুসলিম সৈনিকটি তরবাবির আঘাত হানল মুশরিকেরড়া ঘা ড় বরাবর ৷ প্রচণ্ড আঘাতে তার
    তরবারি মুশবিকের ঘাড় ণ্ত ভদ করে সোজা নিতম্ব অতিক্রম করে গেল ৷ লোকটি দুভাপে বিভক্ত
    হয়ে মাটিতে নেতিয়ে পড়ল ৷ এবার মুসলিম সৈনিকটি তার মুখের পর্দা সরাল এবং বলল, হে
    কাব ৷ কেমন দেখলেন ? আমি আবু দৃজানা ৷

    হযরত হামযা (রা)-এর শাহাদাতবরণ

    ইবন ইসহাক বলেন, হযরত হামযা লড়াই করে যাচ্ছিলেন ৷ এক সময় তিনি আরতাত ইবন
    শুরাহ্বীল ইবন হাশিম ইবন আবৃদ মনাফ ইবন আবদুদ্দার কে হত্যা করলেন ৷ আরতাত ছিল
    শত্রুপক্ষের অন্যতম পতাক ধা৷রী ৷ তিনি ওদের পতাকাবাহী উছমান ইবন আবু তালহড়াকেও হত্যা
    করলেন ৷ তখন উছমান ইবন তালহ৷ বলছিলং :

    পতড়াকাবাহীর কর্তব্য হল বল্লমকে রক্তে রঞ্জিত করা অথবা নিজে র্টুকর৷ হয়ে যাওয়া ৷
    ইত্যবসরে হযরত হামযা (রা ) তার উপর আক্রমণ চালালেন ৷ এবং তাকে হত্যা করলেন ৷ তার
    পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সিবা ইবন আবদুল উঘৃযা গুবশানী ৷ তার উপনাম ছিল আবু নাইয়ার ৷ তার
    উদ্দেশ্যে হযরত হামযা (রা) বললেন, হে খতনাকারিণী মহিলার ছেলে, এদিকে আয় ৷ তার যা হল
    উন্মু আনসার ৷ শুরায়ক ইবন আমর ইবন ওয়াহব ছাকাফীর আযাদকৃত ক্রীতদাসী ৷ মক্কায় সে
    খাতন৷ পেশায় নিয়োজিত ছিল ৷ দুজনে মুখোমুখি হল ৷ হযরত হামযা তাকে আক্রমণ করে হত্যা
    করলেন ৷ জুবায়র ইবন মুতইমের ক্রীতদাস ওয়াহ্শী বলে, আল্লাহর কসম, আমি দেখছিলাম
    হামযড়াকে তিনি তরবারি দ্বারা প্রতিপক্ষের লোকজনকে কেটেই যাচ্ছিলেন ৷ তাকে ধুসর রঙের
    উটের ন্যায় দেখাচ্ছিল ৷ আমার আগে সিবা গিয়ে হামযার নিকট পৌছল ৷ হামযা বললেন, হে
    খতনাকাবিণীর ছেলে এদিকে আয় ৷ হামযা তার উপর আক্রমণ করলেন ৷ তবে সম্ভবত; তার
    মাথায় আঘাত করতে পারেননি ৷ আমি আমার বর্শাত ৷ক করলাম ৷ সুনিশ্চিত ভাবে লক্ষ্যস্থির করে
    আমি হামযার দিকে বর্শা ছুড়লাম ৷ বর্শা গিয়ে পড়লত তার নাভিমুলে ৷ নাভি ভেদ করে দৃপায়ের

    সম্পর্কিত পোস্ট:


    নোটঃ তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল সালে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধ Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।

    মীযান জামাতের সমস্ত কিতাব PDF Download

    নাহবেমীর জামাতের কিতাব PDF Download

    হেদায়াতুন নাহু জামাতের কিতাব PDF Download

    কাফিয়া জামাতের কিতাব PDF Download

    শরহে জামী জামাতের কিতাব PDF Download

    জালালাইন জামাতের কিতাব PDF Download

    মেশকাত জামাতের কিতাব PDF Download

    দাওরায়ে হাদিসের কিতাব সমূহ PDF Download

    মাদানী নেসাবের কিতাবসমূহ PDF Download

    Leave a Comment

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.