যাকারিয়া ও ইয়াহয়া (আ)
আল্লাহ্র বাণী : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
-কাফ-হা-ইয়া-আয়ন-সাদ; এটা তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তার বান্দা
যাকারিয়ার প্রতি ৷ যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করেছিল নিতৃতে ৷ সে বলেছিল,
“আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে ৷ বার্ধক্যে আমার মস্তুক শুদ্রোজ্জ্বল হয়েছে : হে আমার প্রতিপালক ৷
তোমাকে আহ্বান করে আমি কখনও ব্যর্থকাম হইনি ৷ আমি আশাৎকা করি আমার পর আমার
স্বগাে ৷ত্রীয়দের সম্পর্কে অ,ামার ত্রী বন্ধ্য৷ ৷ সুতরাং তৃমি৫ আমার নিকট হতে আমাকে দান কর
উত্তরাধিকারী ৷ যে আমার উত্তরাধিকা ৷রিতু করবে এবং উত্তরাধিকারিতু করবে ইয়াকুবের বংশের,
এবং হে আমার প্রতিপালক ! তাকে করো সন্তোষভাজন ৷ তিনি বললেন : “হে যাকারিয়্যা ! আমি
তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি ৷ তার নাম হবে ইয়াহ্ইয়া; এ নামে পুর্বে আমি কারও
নামকরণ করিনি ৷ ” সে বলল, “হে আমার প্রতিপালক ! কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন
আমার শ্রী বন্ধ্যা ও আমি বার্ব্যক্যের শেষ সীমার উপনীত ৷ তিনি বললেন, “এ এরুপই হবে ৷
মার প্রদিপ লক বললেন, এ তো আমার জন্যে সহজসাধ্য, আমি তো পুর্বে তোমাকে সৃষ্টি
করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না ৷” যাকারিয়্যা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি
নিদর্শন দাও ৷ তিনি বললেন,তে তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ থাকাসত্বেও কারও সাথে তিন
দিন বাক্যালাপ করবে না ৷ অতঃপর সে কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট আসল ৷
ইংগিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বলল ৷ (আমি
বললাম) হে ইয়াহ্ইয়া! এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর ৷ আমি তাকে শৈশবেই দান
করেছিলাম জ্ঞান এবং আমার নিকট হতে হৃদয়ের কােমলতা ও পবিত্রতা; সে ছিল মুত্তাকী ৷
পিতামাতার অনুগত এবং সে ছিলনা উদ্ধত-অবাধ্য ৷ তার প্রতি শান্তি যেদিন তার মৃত্যু হবে
এবং যে দিন যে জীবিত অবস্থায় পুনরুথিহবে (১৯ মারয়াম : ১ ১ ৫ )
উক্ত ঘটনা প্ৰসংগে আল্লাহ অন্যত্র বলেন :
এবং তিনি তাকে (মরিয়মকে) যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রেখেছিলেন ৷ যখনই যাকারিয়া কক্ষে
তার সাথে সাক্ষাত করতে যেত, তখনই তার নিকট খাদাৰুসামগ্রী দেখতে পেত ৷ সে বলত , “হে
মরিয়ম ৷ এসব তুমি কোথায় গেলে?” সে বলত , এ আল্লাহ্র নিকট হতে ৷ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা
অপরিমিত জীবনােপকরণ দান করেন ৷ সেখানেই যাকারিয়া তার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা
করে বলল, “হে আমার প্রতিপালক আমাকে তুমি৫ আমার নিকট হতে সৎ বং শধর দান কর ৷
ভুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী ৷” যখন যাকারিয়া কক্ষে সালাতে দাড়িয়েছিল তখন ফেরেশতাগণ
তাকে সম্বোধন করে বলল, “আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর
বাণীর সমর্থক, নেতা , শ্রী-বিরার্গী এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী ৷ ” সে বলল, “ হে আমার
প্রতিপালক ! বার্ধক্য এসেছে এবং আমার ন্তী-বন্ধ্যা ৷” তিনি বললেন, এভাবেই ৷ আল্লাহ যা ইচ্ছা
তাই করেন ৷” সে বলল, “হে আমার প্রতিপালকা আমাকে একটি নিদর্শন দাও ৷ “তিনি
বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তিন দিন তুমি ইঙ্গিত ব্যতীত কোন মানুষের সাথে কথা
বলতে পারবে না ৷ আর তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করবে ৷ এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে
তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে (৩ আলে-ইমরান : ৩ ৭-৪ ১ )
সুরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তাআলা বলেন :
-এবৎস্ম স্মরণ কর যাকারিয়্যার কথা যখন সে৩ তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল
“হে আমার প্ৰতিপালক! আমাকে একা রেখো না তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকামার অধিক রী ৷
অতংপর আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলাম এবৎত তাকে দান করেছিলাম ইয়াহ্ইয়া এবং তার
জন্যে তার শ্ৰীকে যোগ্য ন্া সম্পন্ন করেছিলাম তারা সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করত তারা
আমাকে ডাকত আশা ও ডীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বনীত (২১ আম্বিয়াং :
৮৯-৯০ ) আল্লাহ আরও বলেন :
-এবৎ যাকারিয়্যা, ইয়াহ্ইয়া ঈসা ও ইলিয়াস, সকলেই সংকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত ৷
ইবন আসাকির তার বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থে হযরত যাকারিয়্যা (আ) এর বংশালিকাত
নিম্নরুপ বর্ণনা করেছেন, যথা : যাকাবিয়্যা ইবন বারখিয়া বা যাকারিয়্যা ইবন দান কিংবা
যাকারিয়্যা ইবন লাদুন ইবন মুসলিম ইবন সাদুক ইবন হাশবান ইবনা দ উদ ইবন সুলায়মান
ইবন মুসলিম সাদীকা ইবন বারখিয়া ইবন বালঅড়াতা ইবন নাহুর ইবন শালুম ইবন বাহনাশাত
ইবন আয়নড়ামান ইবন রাহ্বি’আম ইবন সুলায়মান ইবন দাউদ ৷ যাকারিয়্যা ছিলেন বনী
ইসরাঈলের নবী ইয়াহ্ইয়া (আ)-এর পিতা ৷ তিনি পুত্র ইয়াহইয়ার সন্ধানে দামিশকের বুছায়না
শহরে গিয়েছিলেন ৷ কেউ কেউ বলেছেন, পুত্র ইয়াহ্ইয়া নিহত হওয়ার সময় তিনি দামিশকেই
অবস্থান করছিলেন ৷ তার নসবনামা সম্পর্কে আরও বিভিন্ন মত রয়েছে ৷ উচ্চারণে যাকারিয়্যা ৷
(দীর্ঘারবিশিষ্ট) যাকারিয়্যা বা যাকরা বলা হয়ে থাকে ৷
আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (না)-কে যাকারিয়া নবীকে সন্তান প্রদানের ঘটনা মানুষের
নিকট বর্ণনা করার নির্দেশ দেন ৷ আল্লাহ যখন যাকারিয়াকে পুত্র সন্তান দান করেন তখন তিনি
ছিলেন বৃদ্ধ ৷ তার শ্রী যৌবনকাল থেকেই ছিলেন বন্ধ্যা ৷ আর এখন বার্ধক্যে আক্রান্ত ৷ কিন্তু
এসব প্রতিকুল অবস্থা বিদ্যমান থাকা সত্বেও তিনি আল্লাহ্র রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ
হননি ৷ আল্লাহ বলেন :
৫(এটা তামার পালনকতার অনুগ্নহের বিবরণ ত ব বান্দা যাকারিয়ার প্ৰতি, যখন সে তার
পালনকর্তাকে আহ্বান করেছিল নিতৃতে ৷) কাতাদা এ আয়াতের ব্যাখ্যার বলেছেন, আল্লাহাচ্ছ
অন্তর ও ক্ষীণ আওয়াজ সম্পর্কে সম্যক অবহিত ৷ কোন কোন প্রাচীন আলিম বলেছেন, হযরত
যাকারিয়া (আ) রাত্রিরেল৷ নিদ্র৷ থেকে উঠে অতি ক্ষীণ আওয়াজে, যাতে তার কাছের কেউ
শুনতে না পায় আল্লাহকে আহ্বান করে বলেন, হে আমার প্ৰভাে ! হে আমার প্রভো ! হে আমার
প্ৰভো ! আল্লাহ তাআল৷ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বললেনং লাববায়েক লাব্বায়েক ! ! লাব্বায়েক ! ! !
এরপর যাকারিয়া বলেন, আমার অস্থি দুর্বল হয়ে
পড়েছে, বয়সে দেহ ভারাবনত হয়ে গিয়েছে ৷ ৷ বার্ধকে৷ মস্তক
সুশুভ্র হয়েছে ৷ অগ্নি শিখ৷ যেমন কাষ্ঠখণ্ড গ্রাস করে, তেমন বার্ধক্য আমার কাল চুল গ্রাস করে
নিয়েছে ৷
হযরত যাকারিয়া (আ) আল্লাহকে জানালেন যে, বার্ধক্যের দুর্বলত৷ বাহ্যিকভারে ও
অভ্যস্তরীণভ৷ ৷বে তাকে গ্রাস করে ফেলেছে ৷ ,
“হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখন ও বিকল মনােরথ হইনি ৷” অর্থাৎ-
আমি ইতিপুর্বে আপনার নিকট যা কিছু চেয়েছি, আপনি তা আমাকে দিয়েছেন ৷ হযরত
যাকারিয়্যার সন্তান কামনার পশ্চাতে যে প্রেরণাটি কাজ করেছিল, তা এই যে তিনি হযরত
মরিয়ম বিনৃত ইমরান ইবন মাছানকে বায়তু ল মুকাদ্দাসে দেখাওনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ৷
বায়তৃল ঘুকাদ্দাসের যে কক্ষে বিবি মরিয়ম থাকতেন, সে কক্ষে যাকারিয়া! (আ) যখনই যেতেন
দেখতেন, ভিন্ন মওসুমের পর্যাপ্ত ফল মরিয়মের পাশে মওজ্বদ রয়েছে ৷ বন্তুত এটা ছিল
আওলিয়াদের কারামন্ব৩ র একটি নিদর্শন ৷ তা দেখে হযরত যাক৷ ৷বিয়ার অম্ভরে এ কথার উদয়
হল যে, যে সত্তা মরিয়মকে ভিন্ন মওসুমের ফল দান করছেন,৩ তিনি আমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে
সম্ভানও দান’করতে পারেন ৷ সুরা আলে-ইমরানে আছে, সেখানেই যাকারিয়া তার পালনকর্তার
নিকট প্র৷ ৷র্থন৷ করল ৷ বললাে, হে আমার পালনকর্ত৷ ! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র
সন্তান দা ন কর! নিশ্চয়ই তুমি প্রা ৷র্থনা শ্রবণকারী ৷ (৩হ্র ৩৮ )
সুরা মরিয়ামে আল্লাহর বাণীং :
-আমি ভয় করি আমার পর আমার স্বগােত্রকে এবং আমার শ্রী বন্ধ্য৷ ৷ প্রু ;, বা
স্বগােত্র বলতে গোত্রের এমন একটি দলের কথা বুঝানো হয়েছে, যাদের ব্যাপারে নবীবি আশংকা
প্রকাশ করেছেন যে, তার মৃত্যুর পরে এর! বনী ইসরাঈলকে বিভ্রান্ত করে শরীয়তের পরিপন্থী ও
নবীর অ ৷৩নুগ বিরোধী কাজে জড়িয়ে ফেলবে ৷ এ কর বণে তিনি তা ৷ল্লাহ্র নিকট একটি সুসন্তান
প্রার্থনা করেন ৷ তিনি বললেন ধ্রু আপনি আমাকে নিজের পক্ষ
থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন ৷ ং নবৃওতের দায়িতৃ পালনে এবং বনী
ইসরাঈলের নেতৃত্ব প্রদানে সে হবে আমার স্থলাভিষিক্ত ৷ ; এবং
সে প্রতিনিধিতৃ করবে ইয়াকুব বং শের ! অর্থাৎ ইয়াকুবের সন্তানদের মধ্যে৩ তার ( অর্থাৎ আমার
প্রার্থিত পুত্রের) পুর্ব-পুরুষগণ যেভাবে নবুওত, মর্যাদা ও ওহী প্রাপ্ত হয়েছে,৩ তাকেও সেই
সুমহান মর্যাদার অধিষ্ঠিত করুন! এখানে উত্তরাধিকারী বলতে ধন-সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়া
বুঝানো হয়নি ৷ কিন্তু শীআ সম্প্রদায় এখানে ধ্ন-সম্পদের উত্তরাধিকার অর্থই গ্রহণ করেছে ৷
ইবন জ বীবও এখানে শীয়া মতকে সমর্থন করেছেন ৷ তিনি সালিহ্ ইবন ইউসুফের উক্তির
কথাও নিজেরব্ মং তর সমর্থনে উল্লেখ করেছেন ৷
কিন্তু কয়েকটি কারণে এই মত গ্রহণযোগ্য নয় ৷
(এক) সুরা নামল’ এর ১৬ নং আয়াত -সুলায়মান দ উদেব
(নবুওত ও রাজাতৃর) উত্তরাধিকারী হয় ৷ এ আয়াতে র অরীনে আমরা ৰুখারী মুসলিমসহ সহীহ,
মুসনাদ ও সুনান গ্রন্থাদিতে বিভিন্ন সুত্রে বহু সংখ্যক সাহাবী থেকে বর্ণিত সেই প্রসিদ্ধ হাদীস
উল্লেখ করেছি, যাতে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন৪ ও ১া
-আমরা কেন উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, মৃত ত্যুর পরে যা কিছু পরিত্যক্ত সম্পদ থাকে,
সর্বসাধারণের জন্যে সাদাক ৷বা দান হিসেবে গণ্য হবে ৷” এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে,
রাসুলুল্লাহ (না)-এর পরিত্যক্ত সম্পদের কোন উত্তরাধিকারী রেখে যাননি ৷ এ কারণেই রাসুল
(সা) তার জীবদ্দশায় যে সব সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করতেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক
(রা) সেগুলো রাসুল (না)-এর উত্তরাধিকারীদের হাতে তুলে দেননি ৷ অথচ উপরোক্ত হাদীস
যদি না থাকত তাহলে সেগুলো রাসুলের উত্তরাধীকারী রাসুল তনয় হযরত ফাতিমা, তীর নয়জন
সহধর্মিণী ও তার চাচা হযরত আব্বাস (বা) প্রমুখের হাতে আসতো ৷ এসব উত্তরাধীকারীদের
দাবির বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রা) উপরোক্ত হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করেন ৷
রাসুলুল্লাহ (সা) থেকে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনার প্রতি সমর্থন দেন হযরত উমর, হযরত উছমান,
হযরত আলী, হযরত আব্বাস, আবদুর রহমান ইবন আওফ তালহা, যুবায়র, আবু হুরায়রা (র ৷)
প্রমুখ সাহাবায়ে কিরাম ৷
(দুই) উপরোক্ত হাদীসটি ইমাম তিরমিযী তার গ্রন্থে বহুবচনের শব্দ দ্বা ৷র৷ বর্ণনা ৷করেছেন-
ফলে সকল নবীই এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান ৷ তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন
৷১া৷ অর্থাৎ “আমরা নবীরা কোন উত্তরাধীকড়ারী বেধে যাই না ৷ ইমাম
তিরমিযী এ বর্ণনাটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন ৷
(তিন) নবীগণের নিকট দুনিয়ার সহায়-সম্পদ সর্বদাই অতি নগণ্য ও তৃচ্ছ বলে গণ্য
হয়েছে ৷ র্তারা কখনই এগুলো সংগ্রহে লিপ্ত হননি, এর প্রতি ভ্রক্ষেপ করেননি এবং এর কোন
গুরুভৃই দেননি ৷ সুতরাং সন্তান ধন-সম্পদ সঞ্চয়ের জন্যে প্রার্থনা করার প্রশ্নই আসে না ৷ কারণ,
যে সন্তান ত্যাগের মহিমায় নবীদের মর্যাদার সীমানায় পৌছতে পারবে না, সে তে ত৷ নবীর
পরিত্যক্ত সামান্য সম্পদকে কোন গুরুতুই দেবে না ৷ত তাই সেই তুচ্ছ সম্পদের উত্তরাধিকারী
বানানোর লক্ষে কোন সন্তান কামনা করা একেব৷ ৷রেই অবাম্ভর ৷
(চার) ঐতিহাসিক মতে নবী যাকারিয়৷ পেশায় ছিলেন ছুতার ৷ স্বহস্তে উপার্জিত রোযগার
দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন, যেমনটি করতেন হযরত দাউদ (আ) ৷ বলাবাহুল্য , নবীগণ
সাধারণতং আয় রোযগারে এমনভাবে আত্মনিয়োগ করতেন না, যার দ্ব৷ ৷র৷ অতিরিক্ত মাল সঞ্চয়
হতে পারে এবং পরবর্তী সন্তানগণ তার উত্তরাধিকারী হতে পা ৷রবে ৷ ব্যাপারটি দিবালোকের মত
স্পষ্ট ৷ সামান্য চিন্তা করলেই যে কেউ বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারে ৷
ইমাম আহমদ আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
যাকারিয়া নবী ছিলেন একজন ছুতার ৷ ইমাম মুসলিম ও ইবন মজাহ অভিন্ন সুত্রে হাম্মাদ ইবন
সালমা থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ আল্লাহর বাণী : “হে যাকারিয়া ! আমি তোমাকে এক
পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহ্ইয়া; এ নামে পুর্বে আমি কারও নামকরণ করিনি ৷ ”
এখানে এ কথাটি সুরা আল-ইমরড়ানের-৩৯ নং আঘাতের ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়েছে ৷ সেখানে
বলা হয়েছে : “যখন যাকারিয়া কক্ষে সালাতে দীড়িয়েছিল তখন ফেরেশতাগণ তাকে সম্বোধন
করে বলল, আল্লাহ তোমাকে ইয়াহ্ইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর বাণী সমর্থক,
নেতা, ব্রী -বিরাগী এবং পুণবােনদের মধ্যে একজন নবী ৷ এরপর যখন তাকে পুত্র সন্তানের
সুসংৰাদ দেয়া হল এবং তিনি নিশ্চিত হলেন তখন নিজের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে সন্তান
হওয়ার বিষয়ে বিস্মিত হয়ে আল্লাহর নিকট জানতে চাইলেন ৷ তিনি বললেন, “হে আমার
প্রতিপালক ! কেমন করে আমার পুত্র হবে, যখন আমার পত্নী বল্যা ও আমি বার্ধক্যের শেষ
সীমার উপনীত?” অর্থাৎ একজন বৃদ্ধ লোকের সন্তান কিভাবে হতে পারো কেউ কেউ বলেছেন,
হযরত যাকারিয়ার বয়স ছিল তখন সাতাত্তর বছর ৷ প্রকৃত পক্ষে তার বয়স ছিল এর থেকে
আরও বেশী ৷ “আমার শ্রী বন্ধ্যা” অর্থাৎ যৌবনকাল থেকেই আমার শ্রী বন্ধ্যা, কোন সন্তানাদি
হয় না ৷ এমনি এক অবস্থায় হযরত ইব্রাহীম খলীলকে ফিরিশতাগণ পুত্র হওয়ার সুসংবাদ
দিয়েছিলেন, তখন তিনি বিস্ময়ভরে জিজ্ঞেস করেছিলেন “বার্ধক্য যখন আমাকে পেয়ে
বস্যেছ, তখন তোমরা আমাকে সুসংবাদ জানাচ্ছ, বল, কি সেই সসুৎবাদঃ” তার শ্রী সারা
বলেছিলেন, “কী আশ্চর্য! সন্তানের জননী হব আমি, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী
বৃদ্ধ ৷ এটা অবশ্যই এক অদ্ভুত ব্যাপার !” ফেরেশতারা বলল “আল্লাহর কাজে তুমি বিম্ময়বােধ
করছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্ৰতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ! তিনি প্ৰশংসাহ ও
সম্মানাই” (১১ হ্রদ : ৭২, ৭৩) ৷
হযরত যাকারিয়া (আ)কেও আগত ফেরেশতা ঠিক এ জাতীয় উত্তর দিয়েছিলেন ৷
ফেরেশতা বলেছিলেন, “এরুপই হবে; তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এ কাজ আমার জন্যে
সহজসাধ্য; আমি তো পুর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলে না ৷ অর্থাৎ আল্লাহ
যখন তোমাকে অস্তিতুহীন অবস্থা থেকে অন্তিতু দান করতে পেরেছেন , তখন তিনি কি তোমার
বৃদ্ধ অবস্থায় সন্তান দিতে পারবেন না? সুরা আন্বিয়ায় (৯০) আল্লাহর বাণী “অতঃপর আমি
তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়ড়াহ্ইয়া এবং তার জন্যে তার
শ্ৰীকে যােগ্যতাসম্পন্ন করেছিলাম ৷ তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত
আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত ৷” ত্রীকে যোগ্যতা সম্পন্ন করার
অর্থ শ্ৰীর মাসিক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, পুনরায় তা চালু হয়ে যায় ৷ কারও মতে তার শ্রী মুখরা
ছিলেন, তা ভাল করে দেয়া হয় ৷ যাকারিয়া বললেন, “হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে একটি
নিদর্শন দাও ৷” অর্থাৎ আমাকে এমন একটি লক্ষণ দাও, যা দ্বারা আমি বুঝতে পারি যে, এই
প্রতিশ্রুত সন্তান আমার থেকে ত্রীর গর্ভে এসেছে ৷ আল্লাহ জানালেন, “তোমার নিদর্শন এই যে,
তুমি সুস্থ থাকা সত্বেও কারও সাথে তিন দিন বাক্যালাপ করবে না ৷” অর্থাৎ তোমার বুঝবার সে
লক্ষণ হল, তোমাকে নীরবতা আবিষ্ট করে ফেলবে, ফলে তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা
ইংগিত ব্যতীত কথা বলতে পারবে না ৷ অথচ তোমার শরীর, মন ও মেজাজ সবই সুস্থ অবস্থায়
থাকবে ৷ এ সময়ে তাকে সকাল-সন্ধ্যড়ায় অধিক পরিমাণ আল্লাহর যিক্র ও তাসবীহ মনে মনে
পাঠ করার নির্দেশ দেয়৷ হয় ৷ এ সুসংবাদ পাওয়ার পর হযরত যাকারিয়া (আ) কক্ষ হতে বের
হয়ে আপন সম্প্রদায়ের নিকট চলে আসলেন এবং তাদেরকে সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষণা করতে ইঙ্গিত (ওহী) করলেন ৷ এখানে ওহী শব্দটি গোপন নির্দেশ অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছে ৷ মুজাহিদ ও সুদ্দীর মতে এখানে ওহী’ অর্থ লিখিত গোপন নির্দেশ ৷ কিন্তু
ওহাব, ক ৷তাদ৷ ও মুজা ৷হিদের ভিন্ন মতে ৎগিরু তর মাধ্যমে নির্দেশ ৷ মুজাহিদ, ইকবিমা, ওহাব
সুদ্দী ও কা৩ ৷দ৷ বলেছেন, কোনরুপ অসুখ ব্যতীতই যাক বিয়া (আ) এর জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে
যায় ৷ ইবন যায়দ বলেছেন, তিনি পড়তে ও তড়াসবীহ পাঠ করতে পড়ার ত;ন কিভু কারও সাথে
কথা বলতে পারতেন না ৷ আল্লাহর বাণী, “হে ইয়াহ্ইয়া, এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর
আমি তাকে শৈশবেই৷ দান করেছিলাম জ্ঞ৷ ৷ন ৷ এ আয়াতে র মাধ্যমে পুর্বে যাকারিয়৷ (আ) কে
যে পুত্রের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল,৩ারই অস্তিত্বে আমার কথা বলা হয়েছে ৷ আল্লাহ তাকে
শৈশবকালেই কিতড়াবের জ্ঞান ও প্রজ্ঞ৷ দান করেছিলেন ৷
আবদুল্লাহ ইবন মুবারক (র) বলেন, মামার বলেছেন ;; একবার কতিপয় বালক ইয়াহ্ইয়া
ইবন যাকারিয়াকে তাদের সাথে খেলতে যেতে বলেছিল, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন,
“খেলার জন্যে আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়নি ৷ “শৈশবে তাকে জ্ঞান দান করেছিলাম এ
আয়াতেরই বহিঃপ্রকাশ্ ৷ঘটেছিল উক্ত ঘটনায় ৷ আল্লাহর বাণীং : “এবং আমার নিকট হতে তাকে
দেয়া ৷হয়েছিল হানানা, অর্থাৎ হৃদয়ের কােমল৩ ৷ ও পবিত্রত৷ এবং সে ছিল মুত্তাকী ৷” ইবন
জারীর ইবন আব্বাস (র) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,৩ তিনি বলেছেন, হানান৷ কি তা
আমি জানি না ৷ ইবন আব্বাস (রা) থেকে অপর সুত্রে এবং মুজাহিদ, ইকরিম৷ , কাতাদ৷ ও
যাহ্হাক থেকে বর্ণিত, হানানা অর্থ দয়া ৷ আমার নিকট থেকে দয়া এসেছিল অর্থাৎ
যাকারিয়ার প্রতি আমি দয়া করেছিলাম, ফলে তাকে এই পুত্র সন্তান দান করা হয়েছিল ৷
ইকবিম৷ বলেন, হানান৷ অর্থ মহব্বত; অর্থাৎ তাকে আমি মহব্বত করেছিলাম ৷ উপরোক্ত অর্থ
ছাড়া হানান৷ শব্দটি ইয়াহ্ইয়া (আ) এর বিশেষ গুণও হতে ৩পারে ৷ অর্থাৎ মানুষের প্ৰতি
ইয়াহ্ইয়ার ভালবাসা ছিল অধিক; বিশেষ করে তার পিতা মাতার প্রতি মহব্বত ও ভালবাসা
ছিল অতি ৩প্রগাঢ় ৷ ইয়াহ্ইয়াকে পবিত্রত৷ দেয়৷ হয়েছিল অর্থাৎ তার চরিত্র ছিল নিষ্কলুষ এবং
ত্রুটিমুক্ত ৷
মুত্তাকী অর্থ আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে দুরে অবস্থানকারী ৷ এরপর
আল্লাহ পিতা-মাতার প্রতি ইয়াহ্ইয়া (আ)-এর উত্তম ব্যবহার , র্তাদের আদেশ-নিষেধের
আনুগত্য এবং কথা ও কাজের দ্বারা পিতা-মাতার অবাধ্যত৷ থেকে বিরত থাকার কথা উল্লেখ
পুর্বক বলেন : “এবং সে ছিল পিতা-মাতার অনুগত এবং সে ছিল না উদ্ধত, অবাধ ৷ ” অত০পর
আল্লাহ বলেন : “তার প্রতি শান্তি যে দিন যে জন্মলাত করে যে দিন তার মৃত্যু হবে এবং যে
,দিন যে জীবিত অবস্থায় পুনৰুথিত হবে ৷ উল্লেখিত সময় তিনটি মানব জীবনে অত্যধিক
গুরুত্বপুর্ণ ও কঠিন অবস্থা হিসাবে বিবেচিত ৷ ক৷ ৷রণ এ তিনটি সময় হল এক জগত থেকে আর
এক জগতে স্থান৷ স্তরের সময় ৷ এক জগতে কিছুকাল অবস্থান করার যে জগতে র সাথে পরিচিতি
লাভ ও ভালবাসা সৃষ্টি হওয়ার পর তা ছিন্ন করে এমন এক জগতে চলে যেতে হয়, যে জগত
সম্পর্কে ত ৷র কিছুই জানা থা ৷কে না ৷ ত ৷ই দেখা যায় নবজা ত শিশু মাতৃগর্ভের কোমল ও সংকীর্ণ
স্থান ত্যাগ করে যখন এ সমস্যাপুর্ণ পৃথিবীতে আসে তখন সে চিৎকার করে কাদতে থাকে ৷
অনুরুপভারে এ পৃথিবী ছেড়ে যখন সে বরয়খ জগতে যায়, তখনও একই অবস্থা দেখা দেয় ৷
এসব জগত ত্যাগ করে মৃত্যুর আং পিনায় পৌছে সে কবরের বাসিন্দা হয়ে ইস্রাফীলের সিংপায়
কুক দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে ৷ এর পরেই তার স্থায়ী ব সস্থান ৷ কবর থেকে পুনরুথিত হবার
পর হয় স্থায়ী শান্তি ও সুখ, না হয় চিরস্থায়ী শান্তি ও দুঃখ ৷ ;কউ হবে জান্নাতের অধিবাসী, আর
কেউ হবে জাহান্নামের বাসিন্দা ৷ জনৈক করি অতি সুন্দরভাবে কথাটি বলেছেন :
অর্থ৪ যে দিন তোমার মা তোমাকে ভুমিষ্ট করেছিল, যে দিন তুমি চিৎকার দিয়ে র্কাদছিলে,
আর লোকজন পাশে থেকে খুশিতে হাসছিল ৷ এখন তুমি এমনভা রে জীবন গড়ে (তাল, যেন
মৃতুকোলে তুমি আনন্দচিত্তে হাসতে হাসতে মরতে প্ব আর লোকজন তোমার পাশে বসে
র্কাদতে বাধ্য হয়
উপরোক্ত স্থান তিনটি যখন মানুষের উপর অত্যধিক কঠিন, তখন আল্লাহ হযরত
ইয়াহ্ইয়াকে প্রতিটি স্থানেই শান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা দান করে বলেছেন৪ “তার প্রতি শান্তি
যে দিন যে জন্ম লাভ করে, যে দিন তার মৃত্যু হবে এবং যে দিন যে জীবিত অবস্থায় পুনরুথিত
হবে ৷” সাঈদ ইবন আবী আরুবা কাতাদার সুত্রে হাসান থেকে বর্ণনা করেন, এক দিন ইয়াহ্ইয়া
ও ঈসা (আ) পরস্পর সাক্ষাতে মিলিত হন ৷ ঈসা (আ) ইয়াহ্ইয়া (আ)-কে বললেন, আমার
জন্যে ইস্তিগফ৷ ৷র কর, কেননা তুমি আমার চাইতেউ ওত্তম ৷ ইয়াহ্ইয়া বললেন, বরং আপনি
আমার জন্যে ইসৃতিগফ৷ ৷র করুন, যেহেতু আমার তুলনায় আপনি শ্রেষ্ঠ ৷ ঈসা বললেন, তুমি
আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ ৷ কেননা, আমি নিজেই আমার উপর শান্তি ঘোষণা করেছি, আর তোমার
উপর শান্তি ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ ৷ এর দ্বারা উভয়ের উচ্চ মর্যাদার কথা জানা গেল ৷
সুরা ৷আলে-ইমরানের ৩৯নৎ আয়াতে উল্লেখিত “সে হবে নেতা, শ্রী বিরাগী এবং পুণ্যবানদের
মধ্যে একজন নবী” এখানে হাসুর দ্রী
বিরাগী প্রসংগে কেউ কেউ বলেছেন হাসুব বর্লা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যে কখনও কোন নারীর সঙ্গ
ভোগ করে না, কেউ কেউ ভিন্ন অর্থও করেছেন ৷ এটিই অধিকতর ষুক্তিসঙ্গত ৷ কেননা
যাক বিযা (আ) দােয়ায় বলেছিলেন, “আমাকে তুমি তোমার নিকট থেকে পবিত্র বংশধর দান
কর ৷” এ দো যার সাথে উপরোক্ত অহুইি বেশী মিলে ৷ ইমাম আহমদ ইবন আব্বাস থেকে
বর্ণনা করেন, বাসৃল্লুল্পাহ (সা) বলেছেন, আদম সন্তানের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে কোন গুনড়াহ
করেনি; কিৎবা অন্ততঃ গুনাহ্ব ইচ্ছা পোষণ করেনি, একমাত্র ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া ব্যতীত
আর কারও পক্ষেই এরুপ কথা বলা বাঞ্চুনীয় নয় যে, “আমি ইউনুস ইবন মাত্তার চেয়ে ভাল ৷
এ হাদীছের সনদে আলী ইবন যায়দ ইবন জড়াদআন নামক বর্ণনাকারী সম্পর্কে একাধিক ইমাম
বিরুপ মন্তব্য করেছেন ৷ তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয় ৷ ইবন খুযায়মা ও দারাকুতনীও
হাদীছটিকে আবু আ ৷সিম আবাদানীর সুত্রে উক্ত আলী ইবন যড়ায়দ ইবন জাদ আন থেকে আরও
বিশদভাবে বর্ণনা করার পর ইবন খুযায়মা (ব) বলেছেন৪ এই হাদীছের সনদ আমাদের শত
অনুযায়ী নয় ৷
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ১৪-
ইবন ওহাব ইবন শিহড়াব থেকে বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা ) সাহাবাদের
মাঝে আসেন ৷ তারা তখন বিভিন্ন নবীদের শ্রেষ্ঠতু নিয়ে আলোচনা করছিল ৷
একজন বলছিল, মুসা (আ) আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন, তিনি কালীমুল্লাহ্ ৷ আর একজন
বলছিল, ঈসা আল্লাহর রুহ্ ও তার কালেমা-ঈসা রুহুল্লাহ্ ৷ আর একজন বলছিল, ইবরাহীম
আল্লাহর বন্ধু খলীলুল্লাহ ৷ তখন রাসুলুল্লাহ (সা) বলছেন: শহীদের পুত্র শহীদের উল্লেখ করছ না
কেন? তিনি তো পাপের ভয়ে উটের লোমের তৈরী বস্ত্র পরতেন এবং গাছের পাতা থেতেন ৷
ইবন ওহাব বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) এ কথার দ্বারা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়াকে বুঝিয়েছিলেন ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসৃলুল্লাহ (যা) বলেছেন,
প্রত্যেক আদম-সন্তান কিয়ামতের দিন কোন না কোন ত্রুটিসহ আল্লাহর সম্মুখে হাজির হবে;
কেবল ইয়াহ্য়া ইবন যাকারিয়ইি হবেন তার ব্যতিক্রম ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহড়াক হাদীস বংনািয়
তাদলীস১ করেন ৷
আবদুর রাঘৃযাক সাঈদ ইবনুল মুসায়িক্লব (রা) থেকে এ হাদীস মুরসালভাবে বর্ণনা
করেছেন ৷ ইবন আ সাকিরও এ হাদীসখানা বিভিন্ন সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷ এ কথা বলে রাবী
তিলাওয়াত করতেন : ৷ এরপর তিনি মাটি থেকে কিছু একটা তুলে ধরে
বললেন, এ জাতীয় কিছু ব্যতীত তার নিকট আর কিছুই ছিল না; তারপর তিনি একটা পশু
কুরবানী করেন ৷ এ বনািটি মাওকুফ পর্যায়ের, তবে এর মারকু হওয়ার চাইতে মাওকুফ
হওয়াটি বিশুদ্ধতর ৷ ইবন আসাকির মামার থেকে বিভিন্ন সুত্রে উক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷
অনুরুপ তিনি আবু দাউদ আত্-তায়ালিসী প্রমুখ আবু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন , রাসুলুল্লাহ
(যা) বলেছেন ও হাসান ও হুসায়ন জান্নাতবাসী যুবকদের নেতা; তবে দুই খালাত ভাই ইয়াহ্য়া
ও ঈসা (আ) তার ব্যতিক্রম ৷ আবু ৰুআয়ম ইসফাহানী আবু সুলায়মান থেকে বর্ণনা করেন,
একদা ঈসা ইবন মারয়াম ও ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া (আ) একত্রে হেটে হ্াড়াচ্ছিলেন ৷ পথে এক
মহিলার সাথে ইয়াহ্ইয়ায় ধাক্কা লাগে ৷ ঈসা (আ) বললেন, ওহে খালাত ভাই ৷ আজ তুমি এমন
একটি গুনাহ করে ফেল্যেছ যা কখনও মাফ হবে বলে মনে হয় না ৷ ইয়াহ্ইয়া (আ) জিজ্ঞেস
করলেন, খালাত ভাই ! সেটা কী? ঈসা (আ) বললেন, এক মহিলাকে যে ধাক্কা দিলে ! ইয়াহ্ইয়া
বললেন, আল্লাহ্র কসম, আমি তো টেরই পাইনি ৷ ঈসা বললেন, সুবহানাল্লাহ্৷ কী আশ্চর্য!
তোমার দেহ তো আমার সাথেই ছিল, তা হলে তোমার রুহ্ কোথায় ছিল? ইয়াহ্ইয়া (আ)
বললেন, আমার রুহ্ আরশের সাথে সম্পৃক্ত ছিল ৷ আমার রুহ যদি জিরবাঈল (আ) পর্যন্ত যেয়ে
প্রশাস্তি পড়ায় , তাহলে আমি মনে করি, আল্লাহ্কে আমি কিছু মাত্রই বুঝতে পারিনি ৷ এ বর্ণনাটি
গরীব পর্যায়ের এটা ইস্রাঈলী উপাখ্যান থেকে নেয়া হয়েছে ৷ রাবী ইসরাঈল খড়ায়ছামা
থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা ইবন মারয়াম ও ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া ছিলেন পরস্পর খালাত
ভাই ৷ ঈসা ভেড়ার পশমজাত বস্ত্র পরতেন, আর ইয়াহ্য়া পরতেন উটের লোমের তৈরী বস্ত্র ৷
উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন দীনার-দিরহাম দাস-দাসী ছিল না ৷ ছিল না আশ্রয় গ্রহণের মত
কোন ঠিকানা ৷ যেথানেই রাত হত সেখানেই শুয়ে পড়তেন ৷ তারপর যখন একে অপর থেকে
বিদায় নেয় তখন ইয়াহ্ইয়া (আ) ঈসা (আ)-কে বললেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন ৷ ঈসা
১ যার নিকট থেকে হাদীস শুনেছেন, তার নাম উহ্য রেখে পরবর্তী বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করাকে তন্দেলীস বলে ৷
বললেন, ৫ক্রাধ সংবরণ কর ৷ ইয়াহ্ইয়া বললেন, ৫ক্রাধ সংবরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ৷
ঈসা (আ) বললেন, সম্পদের মােহে পড়াে না ৷ ইয়াহ্য়া (আ) বললেন, এটা সম্ভব ৷
হযরত যাকারিয়া (আ) স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, না নিহত হয়েছিলেন এ
সম্পর্কে ওহাব ইবন মুনাব্বিহ থেকে একটি বর্ণনায় রয়েছেশ্ যাকারিয়া (আ) তার সম্প্রদায়
থেকে পালিয়ে একটি গাছের মধ্যে ঢুকে পড়েন ৷ সম্প্রদায়ের লোকজন ঐ পাছটি করতে দ্বারা
দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে ৷ করাত যখন তার দেহ স্পর্শ করে, তখন তিনি চিৎকার করেন ৷ আল্লাহ
তখন ওহী প্রেরণ করে তাকে জানান, তোমার চিৎকার বন্ধ না হলে মমীন উল্টিয়ে দেয়া হবে ৷
অতঃপর তিনি চিৎকার বন্ধ করে দেন এবং তীর দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় ৷ এ ঘটনা
মারকু’ভাবেও বর্ণিত হয়েছে যা আমরা পরে উল্লেখ করব ৷ অপর বর্ণনায় বলা হয় যে , যিনি
গাছের মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন, তার নাম যীশাইর ৷ আর হযরত যাকারিয়া স্বাভাবিকভাবেই
ইনতিকাল করেছিলেন ৷
ইমাম আহমদ হারিছ আনসারী থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) বলেছেন,
আল্লাহ তাআলা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়াকে পাচটি বিষয়ে আমল করতে এবং বনী
ইসরাঈলকেও আমল করার নির্দেশ দিতে প্ৰত্যাদেশ পাঠান ৷ তিনি একটু বিলম্ব করেছিলেন ৷
তখন ঈসা (আ) র্তাকে বলেছিলেন, আল্লাহ তোমাকে পাচটি বিষয়ে আমল করতে ও বনী
ইসরাঈলকে আমল করার হুকুম করতে আদেশ পাঠিয়েছেন ৷ এখন বল, বনী ইসরাঈলের নিকট
এ সংবাদ তুমি পৌছিয়ে দিবে, না আমি যেয়ে পৌছিয়ে দিব? ইয়াহ্ইয়া (আ) বললেন, ভাই!
তুমি যদি পৌছিয়ে দাও, তাহলে আমার আশংকা হয়, আমাকে হয় শাস্তি দেয়া হবে, না হয়
মাটির মধ্যে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে ৷ অতঃপর ইয়াহ্ইয়া (আ) ইসরাঈলীদেরকে বায়তুল মুকাদ্দাসে
সমবেত করলেন ৷ মসজিদ লোকে পরিপুর্ণ হয়ে গেল ৷ ইয়াহ্ইয়া সম্মুখ দিকের উচু স্থানে
বললেন ৷ প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও ন্তুতি জানালেন ৷ অতঃপর বললেন, আল্লাহ পাচটি বিষয়ের
হুকুম করেছেন ৷ আমাকে ঐগুলাে আমল করতে বলেছেন এবং তোমাদেরকেও আমল করার
আদেশ দিতে বলেছেন ৷
এক : তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, র্তার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না ৷
কেননা তীর সাথে শরীক করার উদাহরণ হল যেমন, এক ব্যক্তি তার উপার্জিত র্খাটি স্বর্ণ বা
রৌপ্য দ্বারা একটা গোলাম ক্রয় করল ৷ ঐ গোলাম সারা দিন কাজ করে উপার্জিত ফসল নিজের
মনিবকে বাদ দিয়ে অন্যের বাড়িতে উঠায় ৷ তবে এরুপ গোলামের উপর তোমরা কেউ কি সন্তুষ্ট
থাকবেঃ জেনে রেখো, আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তোমাদের রিযিকের ব্যবস্থা
করেছেন; সুতরাং একমাত্র র্তারই ইবাদত করবে, অন্য কাউকে তীর সাথে শরীক করবে না ৷
দুই ; আমি তোমাদেরকে সালাতের আদেশ দিচ্ছি ৷ কেননা আল্লাহ তার বান্দার প্রতি তীর
অনুগ্রহ অব্যাহত রাখেন, যতক্ষণ না বান্দা অন্য দিকে ফিরে তাকায় ৷ অতএব, যখন তোমরা
সালাত আদায় করবে, তখন অন্য দিকে তাকাবে না ৷
তিন : সিয়াম পালন করার জন্যে আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি ৷ কেননা, যে ব্যক্তি
সিয়াম পালন করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে একটি দলের মধ্যে অবস্থান করছে ৷ তার
নিকট মিশৃকের একটা কৌট৷ আছে ৷ আর ঐ মিশৃকের সুঘ্রাণ দলের প্রতিটি লোক পাচ্ছে ৷ আর
গুন, সত্তম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশৃকের চাইতে অধিকতর সুঘ্রাণ
হিসেবে বিবেচিত ৷
চার৪ দান সাদৃক৷ করার জন্যে আমি ৫৩ তামাদেরকে আদেশ দিচ্ছি ৷ কেননা যে ব্যক্তি দান
সাদ্ক৷ করে, তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে শত্রুর হাতে ধরা পড়ে বন্দী হয়েছে ৷ তারা
তার হাত পা বেধে হত্যা করার জন্যে উদ্যোগ নিয়েছে ৷ ঠিক সেই মুহুর্তে সে প্রস্তাব দিল,
আমি অর্থের বিনিময়ে মুক্তি চাই ৷ তারা রাজী হল এবং সে ব্যক্তি কম-বেশী অর্থ দান করে
জীবন রক্ষা করল ৷
পাচ : আল্লাহর যিক্র (স্মরণ) অধিক পরিমাণ করার জন্যে আমি তােমাদেরকে আদেশ
দিচ্ছি ৷ কেননা, যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিক্ব করে তার দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তিশু
যাকে ধরার জন্যে শত্রুর৷ দ্রুত ধাওয়৷ করছে ৷ অতঃপর সে একটি সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে
আত্মরক্ষা করল ৷ অনুরুপ বান্দা যতক্ষণ আল্লাহর যিকিরে নিমগ্ন থাকে ততক্ষণ সে শয়তানের
পাকড়াও থেকে নিরাপদে অবস্থান করে ৷
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আমি নিজে তােমাদেরকে পাচটি বিষয়ের আমল করার জন্যে
নির্দেশ দিচ্ছি ৷ এগুলো সম্পর্কে আল্লাহ আমাকে হুকুম করেছেন; (১) জামায়াত বদ্ধভাবে থাকা
(২) নেতার কথা গোন৷ (৩) নেতার আনুগত্য করা (৪) প্রয়োজনে হিজরত করা এবং (৫)
আল্লাহর পথে জিহাদ করা ৷ কেননা যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে এক বিঘত পরিমাণও বের হয়ে
যায়, সে প্রকৃত পক্ষে ইসলামের বজ্জ্বকে নিংজব খাত থেকে খুলে ফেলে ৷ তবে যদি পুনরায়
জামায়াতে ফিরে আসে তা হলে ভিন্ন কথা ৷ আর যে ব্যক্তি জাহিলী যুগের রীতি নীতি
প্রতিষ্ঠার জন্যে আহ্বান করবে, সে জাহান্নামের ধুলিকণায় পরিণত হয়ে ৷ এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস
করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! সে ব্যক্তি যদি সালাত-সাওমে অভ্যস্ত হয়? রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন,
যদি সে সালাত সাওম আদায় করে এবং নিজেকে মুসলমান বলে মনে করে তবুও ৷
মুসলমানদেরকে সেই নামে ডাকবে, যে নাম তাদেরকে আল্লাহ দিয়েছেন ৷ অর্থাৎ মুমিন,
মুসলমান আল্লাহর বান্দা ৷ আবু ইয়া’,ল৷ তিবমিযী, ইবন মাজ হ হাকিম তাবারানী বিভিন্ন
সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
ইবন আসাকির রাবী’ ইবন আনাস থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
সাহাবীগণের উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদেরকে জানান হয়েছে; তারা বনী ইসরাঈলের আলিমদের থেকে
শুনেছেন যে, ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া পাচটি বিধানসহ প্রেরিত হয়েছিলেন ৷ অতঃপর
পুর্বোল্লেখিত পাচটি বিষয়ের উল্লেখ করেন ৷৩ তারা আরো বলেছেন ইয়াহ্ইয়৷ (আ) অধিকাৎশ
সময় মানুষের সং স্পর্শ থেকে দুরেগ্ গিয়ে নির্জ্যন অবস্থান করতে ন ৷ তিনি বলে জং গলে থাকতে
বেশী পছন্দ করতেন, গাছের পাতা খেয়ে নদীর পানি পান করে, কখনও কখনও টিডিদ্র খেয়ে
জীবন ধারণ করতেন এবং নিজেকে সম্বোধন করে বলতে তন, হে ইয়াহ্ইয়া ওে তামার চেয়ে অধিক
নিয়ামত আর করি ভাগ্যে জুটেছে? ইবন আসাকির বর্ণনা করেন, একবার ইয়াহ্ইয়ার
পিতা-মাতা ছেলের সন্ধানে বের হন ৷ বহু অনুসন্ধানের পর তাকে জদান নদীর তীরে দেখতে
পান ৷ পুত্রকে সেখানে আল্লাহ্র ইবাদত ও তার তার ভীতকম্পিত দেখে তারা উতয়ে অঝোরে
কাদতে থাকেন ৷ ইবন ওহাব মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন, ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকাবিয়ার
খাদ্য ছিল সবুজ ঘাস ৷ আল্লাহর ভয়ে তিনি অঝোরে কাদতেন ৷ তার এ কান্ন৷ এত বেশী হতো
যে, যদি চোখে আল-ক্যতরার আস্তরও থাকতো, তবে নিশ্চয়ই তাও ভেদ করে অশ্রু পড়তাে ৷
মুহাম্মদ ইবন ইয়াহ্ইয়া ইবন শিহাব থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার আমি ইদবীস
আল-খাওলানীর মজলিসে বসা ছিলাম ৷ তিনি বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করছিলেন ৷ এক পর্যায়ে এসে
বললেন তোমরা কি জান, সবচেয়ে উত্তম খাদ্য কে থােতনা সকলেই তখন তার দিকে দৃষ্টি
ফিরালো ৷ তিনি বললেন, সবচেয়ে উত্তম খাদ্য থেরু তন হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকাবিয়া (আ) ৷
তিনি বনের পশুদের সাথে আহার করতেন ৷ কেননা মানুষের সাথে জীবিকা নির্বাহ তার নিকট
খুবই অপছন্দনীয় ছিল ৷ ইবনুল মুবারক বর্ণনা করেন, হযরত তযাকাবিয়া (আ) একবার তার পুত্র
ইয়াহ্ইয়াকে তিন দিন যাবত পাচ্ছিলেন না ৷ অতঃপর জিনি তাকে সন্ধান করার জন্যে জংগলে
গমন করেন ৷ সেখানে তিনি দেখতে পান যে ইয়াহ্ইয়া কঢিকবর খনন করে তার মধ্যে
দাড়িয়ে অঝোরে কাদছেন ৷ তিনি বললেন, প্রিয় বৎস! তোমাকে আমি তিন দিন যাবত খুজে
ফিরছি, আর তুমি কিনা ৷কবর খুড়ে তার মধ্যে দাড়িয়ে কাদছ ৷ তখন ইয়াহ্ইয়া উত্তর দিলেন,
আব্বাজান ! আপনিই তো আমাকে বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে এক বিশাল কঠিন ও
দুর্গম ময়দান- যা কান্নার পানি ব্যতীত অতিক্রম করা যায় না ৷ পিতা বললেন, সত্যিই বৎস !
প্রাণ ভরে কাদো ৷ তখন পিতা পুত্র উভয়ে একত্রে কাদতে লাগলেন ৷ ওহাব ইবন মুনাব্বিহ ও
মুজাহিদ অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইবন আসাকির মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন
জান্নাতবাসীদের নিকট যে নিয়ামত সামগ্রী থাকবে, তার স্বাদ উপভােগে মও থাকা ৷য়ত তারা নিদ্রা
যাবে না ৷ সুতরাং সিদ্দীকীন যারা , তাদের অম্ভরে আল্লাহর মহব্বতের যে নিয়ামত আছে, তার
ারণে তাদেরও নিদ্র৷ যাওয়া ৷সমীচীন নয় ৷ অতঃপর তিনি বলেন, কতই না পার্থক্য উক্ত দুই
নিয়ামরুত র মধ্যে ৷ বর্ণনাকারীগণ বলেছেন, নবী ইয়াহ্ইয়া (আ) এত অধিক পরিমাণ কাদতেন
যে, চোখের পা ৷নি গড়িয়ে পড়তে পড়তে তার দুই গালে স্পষ্ট দা ৷গ পড়ে যায় ৷
হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ) এর হত্যার বর্ণনা
হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ ) এর হত আর বিভিন্ন কারণের মধ্যে প্রসিদ্ধতম কারণ এই যে সে যুগে
দামিশকের জনৈক রাজাত ৷র এক মুহরাম নারীকে বিবাহ করার সৎকল্প করে ৷ হযরত
ইয়াহ্ইয়া (আ)ত তাকে এ বিবাহ করতে নিষেধ করেন ৷ এতে মহিলাটির মনে ইয়াহ্ইয়ার প্রতি
ক্ষোভের সঞ্চার হয় ৷ এক পর্যায়ে উক্ত মহিলা ও বাজার মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে ৷ তখন
মহিলাটি রাজার নিকট ইয়াহ্ইয়াকে হত্যার আরদার জানায় ৷ সে মতে তরাজা তাকে উক্ত
মহিলার হা৩ ৩তুলে দেন ৷ মহিলাটি ইয়াহ্ইয়া (আ) ৫ক হত্যা করার জন্যে ঘাতক নিয়োগ
করে ৷ ঐ ঘাতক নির্দো৷ মত তাকে হত্যা করে এবংক কর্তিত মস্তক ও তার রক্ত একটি পাত্রে
রেখে মহিলার সামনে হাজির করে ৷ কথিত আছে, মহিলাটি তৎক্ষণাৎ মারা যায় ৷
যাকে বিবাহ করা বৈধ্য নয় ৷
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, উল্লেখিত রাজার স্তীই হযরত ইয়াহ্ইয়াকে মনে মনে ভালবাসত
এবং তার সাথে মিলনের প্রস্তাব পাঠায় ৷ হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ) তাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন ৷
মহিলাটি নিরাশ হয়ে তাকে হত্যার বাহানা খোজে ৷ সে রজাের নিকট সে জন্য অনুমতি প্রার্থনা
করে ৷ রাজা প্রথমে নিষেধ করলেও পরে অনুমতি দিয়ে দেয় ৷ মহিলাটি ঘাতক নিয়োগ করে ৷
সে ইয়াহ্ইয়ার রক্তমাখা ছিন্ন মস্তক একটি পাত্রে করে মহিলার সামনে হাজির করে ৷
ইসহড়াক ইবন বিশ্ব-এর মুবতাদা’ নামক গ্রন্থে এই মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে ৷
তিনি ইবন আব্বাস (যা) থেকে বর্ণনা করেন: মি’রাজের রাত্রে রাসুলুল্লাহ (সা) হযরত
যাকারিয়া (আ)-কে আসমানে দেখতে পান ৷ তিনি সালাম দিয়ে বললেন হে ইযাহ্য়ার পিতা !
বনী-ইসরাঈলরা আপনাকে কেন এবং কিভাবে হত্যা করেছিল, আমাকে বলুন ! তিনি বললেন
হে মুহাম্মদ! এ বিষয়ে আমি আপনাকে বিস্তারিত বলছি, শুনুন! আমার পুত্র ইয়াহ্ইয়া ছিল তার
যুগের অনন্য গুণের অধিকারী শ্রেষ্ঠ যুবক, সুদর্শন ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ৷ যার সম্পর্কে
আল্লাহ নিজেই বলছেন, “সে হবে নেতা ও ত্রী বিরাগী ৷” নারীদের প্রতি তার কোন যােহ ছিল
না ৷ বনী ইসরাঈলের রাজার ত্রী ইয়াহ্ইয়ার প্ৰতি আসক্ত হয় ৷ সে ছিল ব্যাভিচারিণী ৷ সে
ইয়াহ্ইয়ার নিকট কু-প্রস্তাব পাঠায় ৷ আল্লাহ তাকে হেফড়াজত করেন ৷ সে মহিলার প্রস্তাব
ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে ৷ এতে মহিলাটি ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ৷ বনী ইসরাঈল
সমাজে একটি বার্ষিক উৎসবের প্রচলন, যে দিন সবাই নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত হয় ৷ উক্ত রাজার
নীতি ছিল, কাউকে প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করত না এবং মিথ্যা কথা বলত না ৷ রাজা উক্ত
উৎসবের নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় ৷ তার ত্রী তাকে বিদায় অভিনন্দন জানায় ৷ রাজা
তাকে খুব ভালবাসত, অতীতে কিন্তু রাজা কখনো এরুপ করেনি ৷ অভিনন্দন পেয়ে খুশী হয়ে
রাজা বলল, তুমি আমার নিকট যে আবদার করবে, আমি তাই পুরণ করবো ৷ শ্রী বলল, আমি
যাকারিয়ার পুত্র ইয়াহ্ইয়ার রক্ত চাই ৷
রাজা বলল, এটা নয়, অন্য কিছু চাও ৷ শ্রী বলল, না, ওটাই আমি চাই ৷ রাজা বলল, ঠিক
আছে, তা-ই হবে ৷ অতঃপর রাজার শ্রী ইয়াহ্ইয়ার হত্যার জন্যে জল্লাদ পাঠিয়ে দেয় ৷ তখন
তিনি মিহ্রড়াবের মধ্যে সালাত আদায়ে রত ছিলেন ৷ যাকারিয়া (আ) বলেন, আমি পুত্রের পাশেই
সালাত রত ছিলাম ৷ এ অবস্থায় জ়ল্পাদ ইয়াহ্ইয়াকে হত্যা করে এবং তার রক্ত ও ছিন্ন মস্তক
একটি পাত্রে করে উক্ত মহিলার নিকট নিয়ে যায় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আপনার ধৈর্য তো
প্রশংসাহ ৷ যাকারিয়া (আ) বললেন, এ ঘটনার সময় আমি সালাত থেকে কোনরুপ অন্যমনষ্ক
হইনি ৷ যাকারিয়া (আ) আরো বলেন, জল্লাদ ইয়াহ্ইয়ার কর্তিত মস্তক মহিলার সম্মুখে রেখে
দেয় ৷ দিন শেষে যখন সন্ধ্য৷ ঘনিয়ে আসে তখন আল্লাহ ঐ রাজা, তার পরিবারবর্গ ও
ল্যেক-লশৃকরকে মাটির নীচে ধ্বসিয়ে দেন ৷ পরদিন সকালে ঘটনা দেখে বনী ইসরাঈলরা
পরস্পর বলাবলি করল, যাকারিয়ার মনিব যাকারিয়ার অনুকুলে ক্রুদ্ধ হয়েছেন; চল আমরাও
আমাদের রাজার অনুকুলে ক্রুদ্ধ হই এবং যাকারিয়াকে হত্যা করি ৷ তখন আমাকে হত্যার
উদ্দেশ্যে তারা সম্মিলিতভাবে আমার সন্ধানে বের হয় ৷ ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের এ
ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমাকে সাবধান করে দেয় ৷ আমি তাদের হাত থেকে বীচার জন্যে সে স্থান
থেকে পলায়ন করি ৷ কিন্তু ইবলীস তাদের সম্মুখে থেকে আমার গমন পথ দেখিয়ে দেয় ৷ যখন
দেখলাম, তাদের হাত থেকে বীচার কোন উপায় নেই, তখন সম্মুখে একটি গাছ দেখতে পইি ৷
তার নিকট যাওয়ার জন্যে পাছটি তখন আমাকে আহ্বান করছিল এবং দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে
গিয়েছিল ৷ আমি তখন তাতে ঢুকে পড়ি ৷ কিন্তু ইবলিস তখন আমার চাদয়ের আচল টেনে ধরে,
বৃক্ষের ফাটল মুদে যায় ৷ কিন্তু আমার চাদরের আচলটি বাইরে থেকে যায় ৷ বনী ইসরড়াঈল
সেখানে উপস্থিত হলে ইবলীস জানায় যে, যাকারিয়া যাদুবলে এই গাছটির মধ্যে ঢুকে পড়েছে ৷
বনী ইসরাঈল বলল, তা’হলে গাছটিকে আমরা পুড়িয়ে ফেলি ৷ ইবলীস বলল, না বরং গাছটি
করতে দিয়ে চিরে ফেল ৷ যাকারিয়া বলেন, ফলে বৃক্ষের সাথে আমিও দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাই ৷
রাসুলুল্লাহ (সা) জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি করড়াতের স্পর্শ বুঝতে পেয়েছিলেন, কিংবা
ব্যাখ্যা অনুভব করেছিলেন? যাকারিয়া বললেন, না; বরং ঐ গাছটি তা অনুভব করেছে, যার
মধ্যে আল্লাহ আমার রুহ্ রেখে দিয়েছিলেন ৷ এ হাদীসটি অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের ৷ এ এক অদ্ভুত
কাহিনী ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) থেকে এ হাদীছ বর্ণিত হওয়ার বড়াপারটি আদৌ গ্রহণযেগ্যে নয় ৷ এ
ঘটনার মধ্যে এমন কিছু কথা আছে, যা কোন মতেই গ্রহণ করা চলে না ৷ এ বংনাি ছাড়া
মিরাজ সম্পর্কে বর্ণিত কোন হাদীসেই যাকারিয়া (আ) এর উল্লেখ নেই ৷ অবশ্য সহীহ হাদীসের
কোন কোন বর্ণনায় এ কথা আছে যে, আমি ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা দৃ’খালাত ভাইয়ের পাশ দিয়ে
গমন করেছিলাম ৷ অধিকাংশ আলিমের মতে তারা ছিলেন পরস্পর খালাত ভাই ৷ হাদীস
থেকেও তাই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ৷ কেননা, ইয়াহ্ইয়ার মা আশৃয়া’ বিনৃত ইমরান মারয়াম বিনৃত
ইমরানের বোন ছিলেন ৷ কিন্তু কারও কারও মতে ইয়াহ্ইয়ার মা অড়াশৃয়া’ অর্থাৎ যাকারিয়ার ত্রী
ছিল মারয়ামের মা হান্না ৷ অর্থাৎ ইমরানের ত্রীর বোন ৷ এ হিসেব মতে ইয়াহ্ইয়া হয়ে যান
মারয়ামের খালাতাে ভাই ৷
হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ) কোন স্থানে নিহত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে মতভেদ আছে ৷ কারও
মতে বায়তুল মুকাদ্দাসের ভিতরে; কারও মতে মসজিদের বাইরে অন্য কোথাও ৷ সুফিয়ান
ছাওরী (র) বলেন যে, বড়ায়তৃল মুকাদ্দাসের অভ্যন্তরে যে ঐতিহাসিক পাথর আছে, সেখানে
সত্তরজন নবীকে হত্যা শুকরা হয় ৷ ইয়াহ্ইয়া (আ) র্তাদের অন্যতম ৷ আবু উবায়দ সাঈদ
ইবনুল মুসামািব (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন, বুখৃত নসর য়খন দামিশৃকে অভিযানে আসে, তখন
ইয়াহ্ইয়া (আ)-এর রক্ত মাটির দীচ থেকে উপরের দিকে উথিত হতে দেখতে পায় ৷ যে এর
কারণ জিজ্ঞেস করলে লোকজন প্রকৃত ঘট্টনা জানায় ৷ তখন বৃখৃত নসর এ রক্তের উপরে সত্তর
হাজার বনী ইসরাঈলকে জবইি করে ৷ “ফলে রক্ত উঠা বন্ধ হয়ে যায় ৷ এ বর্ণনার সুত্রে সাঈদ
ইবনুল মুসায়িব (বা) পর্যন্ত সহীহ ৷ এ বংনাি অনুযায়ী ইয়াহ্ইয়ার হত্যাস্থল দামিশৃক ৷ আর
বুখত নসরের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল হযরত ঈসা মাসীহ্র পরে ৷ আতা ও হাসান বসরী (র)
এই মত পোষ্ণ করেন ৷
ইবন আসাকির যায়দ ইবন ওয়াকিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তার আমলে দামিশকের
মসজিদ পুনঃনির্মাণের সময় হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ)-এর মস্তক বের হয়ে পড়ে ৷ আমি তা
প্রত্যক্ষ করেছিলাম ৷ মসজিদের পুর্ব দিকের মিহরাবের নিবল্ট কিবলার যে দেয়াল ছিল, তার
নীচ থেকে ঐ মস্তক বের হয়েছিল ৷ মন্ত্রকের চামড়া ও চুল অক্ষত ছিল ৷ এক বর্ণনায় বলা
হয়েছে যে, মস্তকটি দেখলে মনে হয় যেন এই মাত্র কর্তন করা হয়েছে ৷ অতঃপর উক্ত
মসজিদের সাকাসিকা’ নামক প্রসিদ্ধ স্তন্তের নীচে মস্তকটি দাফন করা হয় ৷
ইবন আসাকির তীর আল-মুসতাকসা ফী ফাযাইলিল আকসা’ নামক গ্রন্থে মুআবিয়ার
আপন দাস কাসিম থেকে বর্ণনা করেন, দামিশৃকের জনৈক রাজার নাম ছিল হাদ্দাদ ইবন
হাদার ৷ রাজা তার এক পুত্রকে তার ভাই আরয়ালের কন্যার সাথে বিবাহ করার ৷ পুত্র বধুটি
ছিল বহু ভু-সম্পত্তির মালিক ৷ দামিশৃকের সকল বাজার ঘ ট ছিল তার কর্তৃত্ত্বাধীন ৷ রাজপুএ
একদা কসম খেয়ে শ্ৰীকে তিন তালাক দিয়ে দেয় ৷ কিন্তু কিছু দিন পর সে আবার ঐ শ্ৰীকে
ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধা ৷ন্ত গ্রহণ করে এবং হযরত ইয়৷ হ্ইয়৷ (আ) এর নিকট এ ব্যাপারে মাসৃআলা
জিজ্ঞেস করে ৷ ইয়াহ্ইয়৷ বললেন, অন্যত্র বিবাহ ব্যভীত এই শ্রী পুনরায় গ্রহণ করা তোমার
জন্যে বৈধ নয় ৷ এ রকম সিদ্ধান্ত দেওয়ার উক্ত মহিলার মনে ইয়াহ্ইয়ার প্রতি ভৈবরিত৷ সৃষ্টি হয়
এবং সে তাকে হত্যা করার জন্যে রাজার নিকট অনুমতি চায় ৷ মহিলার মা-ই এ কাজে তাকে
প্ররোচিত করে ৷ রাজা প্রথম দিকে বারণ করলেও পরে অনুমতি দিয়ে দেয় ৷ ইয়াহ্ইয়৷ (আ )
জায়রুন নামক স্থানে এক মসজিদে সালাত আদায় করছিলেন ৷ এ অবস্থায় উক্ত মহিলা কর্তৃক
প্রেরিত এক ব্যক্তি তাকে হত্যা করে এবং ছিন্ন মস্তক একটি পাত্রে করে নিয়ে যায় ৷ কিভু তখনও
ঐ পা এ থেকে আওয়াজ আসছিলং :
(অন্যত্র বিবাহ ব্যতীত ঐ স্বামীর কাছে যাওয়া বৈধ হবে না বৈধ হবে না) এ অবস্থা দেখে
মহিলাঢি পাত্রের উপর ঢ৷ ৷কনা দিয়ে আবদ্ধ করে নিজের মাথার উপর রেখে তার মায়ের নিকট
নিয়ে আসে ৷ কিন্তু তখনও পাত্রের মধ্য থেকে অনুরুপ আওয়াজ বের হচ্ছিল ৷ মহিলাঢি
ইয়াহ্ইয়ার মস্তক রেখে তার মায়ের সম্মুখে যখন ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিল, তখন তার দুই পা
মাটির মধ্যে পুতে ৩যায় ৷ কিছুক্ষ্যণর মধ্যে৩ তার দেহ কোমর পর্যন্ত মাটির নীচে চলে যায় ৷
মহিলার ম৷ তুলুল এবৎ৩ ৷ ৷র দাসীরা ভী৩ ত-সন্ত্রস্ত হয়ে চীৎকা ৷র করতে থাকে এবং নিজ নিজ মুখে
করাঘাত করতে থাকে ৷ দেখতে দেখতে মহিলার র্কাধ পর্যন্ত মাটির মধ্যে গেড়ে যায় ৷ তখন
তার মা সান্তুনা লাভের উদ্দেশ্যে যেয়েটির মস্তক মাটির নীচে চলে যাওয়ার আগে কেটে রাখার
জন্যে এক জনকে নির্দেশ দেয় ৷ উপস্থিত জল্লাদ সাথে সাথে তরবারী দ্বারা মস্তক কেটে নিয়ে
আসে ৷ কিন্তু সেই মুহভ্রুজী ম৷ ৷টি মহিলার অবশিষ্ট দেহ ভিতর থেকে উপরে ফেলে দেয় ৷ এভাবে
মহিলাটির গো ৷টা পরিবারই লাঞ্চুন৷ ও অভিশাপে ধবৃৎ স হয়ে যায় ৷
অপরদিকে ইয়৷ হ্ইয়৷ (আ) যে স্থা নিহতইযুযছিলেন ,সে স্থানে মাটির নীচ থেকে রক্ত
উপরের দিকে উথলে উঠছিল ৷ এরপর ট্রুখত নসর এদ্ভুস পচাত্তর হাজার বনী ইসরাঈলকে হত্যা
করলে রক্তের ঐ প্রবাহ বন্ধ হয় ৷ সাঈদ ইখুন আবদিল আযীম (র) বলেছেন, ঐ রক্ত ছিল সমস্ত
নবীদের মিশ্রিত রক্ত ৷ মাটির৩ তলদেশ থেকে সর্বদা উথলে উঠত এবৎব বাইরে পড়িয়ে যেত
হযরত আ ৷রমিয়৷ (আ) সে স্থানে দাড়িয়ে রক্তকে সম্বোধন করে বলেন, “হে রক্ত বনী ইসরাঈল
তো শেষ হয়ে গিয়েছে, )আল্লাহর হুকুমে এখন থাম ৷” এরপর রক্ত থেমে যায়৷ বুখত নসর
অতঃপর হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে এবং তলোয়ার গুটিয়ে নেয় ৷৩ তার এ অভিযানকালে দামিশ্কের বহু
লোক পালিয়ে বায়তুল ঘুক ৷দ্দাসে চলে যায় ৷ বুখৃত নসর সেখানে গিয়েও তাদেরকে ধাওয়া করে
বংহত্য৷ করে ৷ কত লোক যে এ অভিযানে তার হাতে নিহত হয়েছিল তার কোন হিসেব
নেই ৷ হত্যাযজ্ঞ শেষ হলে বহু সংখ্যক লোক বন্দী করে বুখৃত নসর দা ৷মিশৃক ত্যাগ করে ৷
হযরত ঈসা (আ)-এর বিবরণ
খৃষ্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, আল্লাহ্র সন্তান আছে ৷ তাদের এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের খণ্ডনে আল্লাহ
তাআলা সুরা আলে-ইমরানের প্রথম দিকে ধারাবাহিকভাবে তিরাশিটি আয়াত অবতীর্ণ
করেছেন ৷ নাজরান থেকে খৃষ্টানদের একটি প্রতিনিধিদল রাসুলে করীম (না)-এর নিকট
উপস্থিত হয়ে তাদের ভ্রান্ত ধর্ম-বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করে বলে যে,৩ তারা ত্রিতৃবড়াদে বিশ্বাসী এবং
তাদের ধ বণা অনুসারে আল্লাহ হচ্ছেন তিন সত্তার এক সত্তা ৷৩ তাদের মধ্যকার বিভিন্ন দল
উপদলের মধ্যে এক দলের মতে সেই তিন সত্তা হলং আল্লাহ ঈসা (আ) ও মারয়াম ৷ এই
প্রেক্ষাপটে আল্লাহ৩ তা জানা সুরার প্রারন্তে উক্ত বিষয়ে আয়াত নাযিল করেন ৷ তাতে তিনি বলেন
যে, ঈসা (আ) আল্লাহ্র বন্দোদের মধ্যকার একজন বন্দো ৷ অন্যান্য সৃষ্টির ন্যায় আল্লাহ তড়াকেও
সৃষ্টি করেছেন এবং মাতৃগর্ভে আকৃতি দান করেছেন ৷ তবে, আল্লাহ তাকে পিতা ছাড়াই সৃষ্টি
করেছেন, যেমন আদমকে পিতা ও মতো ছাড়া পয়দা করেছেন ৷ তার ক্ষেত্রে তিনি কেবল
বলেছেন কুন’ (হয়ে যাও) তখনই তিনি সৃষ্ট হয়ে যান ৷ এ সুরায় আল্লাহ ঈসার মাতা
মাবৃয়ামের জন্মের বৃত্তান্ত এবং তার বৈশিষ্ট্যড়াবলীং এবং ঈসার গর্ভধারণ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন ৷
সুরা মার য়ামেও এ সম্পর্কে তিনি বিশদ বর্ণনা করেছেন ৷ সে বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা
করব ৷ সুরা আলে-ইমরানে আল্লাহ তাআলা বলেন :
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ১৫-