আল্লাহ তা’আলা আল-য়াসাআ-এয় নাম অন্যান্য নবীর নামের সাথে কুরআনের বিভিন্ন
স্থানে উল্লেখ করেছেন ৷ সুরা আনআমে বলা হয়েছে :
তো
অর্থ : আরও সৎ পথে পরিচালিত করেছিলাম ইসমাঈল, আল্-য়াসাআ, ইউনুস ও লুতকে;
এবং গ্রেষ্ঠতু দান করেছিলাম বিশ্ব জগতের উপর প্ৰত্যেককে (আনআম : ৮৬) ৷
সুরা সাদ এ বলা হয়েছে :
(
স্মরণ কর, ইসমাঈল, আল-য়াসাআ ও যুল-কিফ্লের কথা, এরা প্রতেকেই ছিল সজ্জন ৷
(৩৮ সাদ : ৪৮) ৷
ইসহাক ইবন বিশর আবু হুযায়ফা হাসান (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে ইলিয়াস
(আ)-এর পরে আল-য়াসাআ ছিলেন বনী ইসরাঈলের নবী ৷ তিনি আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী
নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদের মধ্যে অবস্থান করেন ৷ বনী ইসরাঈলকে তিনি আল্লাহর আনুগত্য
করার ও ইলিয়াসের শরীআতের অনুবর্তী হওয়ার আহ্বান জানান ৷ মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত তিনি এ
দায়িত্ব পালন করেন যান ৷ তার ইনতিকালের পর আগত বনী ইসরাঈলের বহু প্রজন্ম এ
পৃথিবীতে আগমন করে ৷ তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে বিভিন্ন প্রকার বিদআত ও পাপাচার
ৎক্রামক ব্যাধির ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে ৷ এ সময়ে বহু অত্যাচারী বাদশাহর আবির্ভাব ঘটে ৷ তারা
আল্লাহর নবীগণকে নির্বিচারের হত্যা করে ৷ এদের মধ্যে একজন ছিল অত্যন্ত অহংকারী ও
সীমালংঘনকারী ৷ কথিত আছে, হযরত যুল-কিফ্ল (আ) এই অহংকারী বাদশাহ সম্পর্কে
বলেছিলেন যে, সে যদি তওবা করে ও অন্যায় কাজ ত্যাগ করে তবে আমি তার জান্নত্ত্বতের
যিম্মদোর ৷ এ কারণেই তিনি যুল-কিফ্ল বা যিম্মাদার অভিধড়ায় অভিহিত হন ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) বলেছেন, আল-য়াসাআ ছিলেন আখতুবের পুত্র ৷ কিন্তু হাফিজ
আবুল কাসিম ইবন আসাকির তার বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থে ইয়া’ ( ; ৷ন্ ) হরফের অধীনে
লিখেছেন, আল-য়াসাআর নাম আসবাত এবং পিতার নাম আদী; বংশ তালিকা নিম্নরুপ :
আল-য়াসাআ আসবাত ইবন আদী ইবন শুতড়ালিম (ৰুগ্লুর্দু) ইবন আফরাঈম ইবন
ইউসুফ ইবন ইয়াকুব ইবন ইসহাক ইবন ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ (আ) ৷ কেউ কেউ বলেন, তিনি
ছিলেন হযরত ইলিয়াস (আ)-এর চাচাত ভাই ৷ কথিত আছে, হযরত আল-য়াসাআ হযরত
ইলিয়াসের সাথে কাসিয়ুন (গ্রেৰুাপ্) নামক পর্বতে বালা-বাক্কা বাদশাহর ভয়ে আত্মগােপন
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৩-
করেছিলেন ৷ পরে উতয়ে সেখান থেকে আপন সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করেন ৷ এরপর
ইলিয়াস (আ) ইনতিকাল করলে আল-য়াসাআ (আ) তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং আল্লাহ র্তাকে
নবুওত দান করেন ৷ আবদুল মুনইম ইবন ইদরীস তার পিতার সুত্রে ওহাব ইবন মুনাব্বিহ
থেকে এই তথ্য প্রদান করেছেন ৷ অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেছেন যে, তিনি বানিয়াসে
বসবাস করতেন ৷ ইবন আসাকির আল-য়াসাআ শব্দের বানান সম্পর্কে লিখেছেন,
এ শব্দটি তিন প্ৰকারে উচ্চারিত হয়ে থাকে যথাঃ আল য়াসা আ (ব্লু ৷) আল য়াসা
আল-য়াস (চুট্রুং৷ ! ) এবং আল লাযাসড়া আ (র্টৰুএ ৷) ৷ এটা হচ্ছে একটা নবীর নামের
বিডিন্নরুপ ৷ গ্রন্থকার বলেন, আমরা হযরত আইয়ুব (আ) এর আলোচনার পরে বুল কিফ্ল
সম্পর্কে আলোচনা করে এসেছি ৷ কারণ কথিত আছে তিনি ছিলেন হযরত আইয়ুব
(আ ) এর পুত্র ৷
পবিহেদ
ইবন জারীর ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, উপরোক্ত ঘনৈার পর বনী ইসর৷ ঈলের
মধ্যে অনেক গুরুতর ঘটনা ঘটে এবং অপরাধ স০ ঘটিত হয় ৷ এমনকি বহু নবীকে তারা হত্যা
করে ৷ আল্লাহ তখন নবীগণের পরিবর্তে অত্যাচ৷ ৷রী রাজা-বাদশাদেরকে তাদের উপর চাপিয়ে
দেন ৷ যারা তাদের উপর অত্যাচারের ষ্টীম বোলার চালায় এবং নির্বিচারে তাদেরকে হত্যা করে ৷
এছাড়া আল্লাহ তাদেরকে শত্রুদের পদানত করে দেন ৷ ইতিপুর্বে বনী ইসরাঈল যখন কোন
সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হত তখন তাদের ঐতিহাসিক সিন্দুকটি ( তাবুত) কাছে
রাখত এবং যুদ্ধের ময়দানে একটি র্তাবুর মধ্যে তা সংরক্ষণ করত ৷ এই সিন্দুকের বরকতে
আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করতেন ৷ এ ছিল তাদের সেই পবিত্র সিন্দুক যাতে ছিল হযরত
মুসা ও হারুন (আ)-এর উত্তরসুরীদের পরিত্যক্ত বরকতময় সম্পদ ও শাস্তিদায়ক বস্তু সমুহ ৷
কিন্তু বনী ইসরাঈলের এই বিপর্যয়কালে গাজা ও আসকালান এলাকার অধিবাসীদের১ সাথে
তাদের এক যুদ্ধ হয় ৷ যুদ্ধে বনী ইসরাঈলরা পরাজয় বরণ করে ৷ শত্রুরা বনী ইসরাঈলদের
উপর নিম্পেষণ চালিয়ে তাদের থেকে সিন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে যায় ৷ বনী ইসরাঈলের তৎকালীন
বাদশাহ্র নিকট এ সংবাদ পৌছলে তার ঘাড় বেকে যায় এবং দুঃখে-ক্ষোভে তিনি মৃত্যুবরণ
করেন ৷ এ সময় বনী ইসরাঈলের অবস্থা দাড়ায় রাথাল বিহীন মেষপালের মত ৷ বিচ্ছিন্ন-
বিক্ষিপ্ত হয়ে তারা যাযাবরের ন্যায় জীবন কাটাতে থাকে ৷ দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকার পর
আল্লাহ শামুয়েল (ৰুাগ্লু:) নবীকে তাদের মধ্যে প্রেরণ করেন ৷ এবার তারা শত্রুর বিরুদ্ধে
যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে একজন বাদশাহ নিযুক্ত করার জন্যে নবীর নিকট প্রার্থনা করে ৷ এর
পরের ঘটনা আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন; আমরা পরে তা’ আলোচনা করব ৷ ইবন জারীর
বলেন, ইউশা ইবন নুনের ইনতিকালের ৪৬০ বছর পর আল্লাহ শামুয়েল ইবন বড়ালীকে
নবীরুপে প্রেরণ করেন ৷ ইবন জারীর বনী-ইসরাঈলের এই সময়কার বিস্তারিত আলোচনা
প্রসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সকল বাদশাহ্র বিবরণ দিয়েছেন ৷ আমরা যে আলোচনা থেকে
ইচ্ছাকৃতভাবেই বিরত রইলাম ৷
১ এখানে আমালিকাদেরকে বুঝানো হয়েছে ৷
শামুয়েল নবীর বিবরণ
শামুয়েল (আ) এর বংশপঞ্জী নিম্নরুপ শামুয়েল বা ইশমুঈল (এএফু ৷ ) ইবন বালী
ইবন আলকড়ামা ইবন ইয়ারখাম-) ইবন আল ইয়াহু ( গ্রা৷ ৷) ইবন তাহু ইবন সুফ
ইবন আলকাম৷ ইবন মাহিছ ইবন আমুসা ইবন অড়ায্রুবা ৷ ঘুকাতিল বলেছেন যে, তিনি
ছিলেন হারুন (আ) এর বংশধর ৷ মুজাহিদ বলেছেন যে তার নাম ছিল ইশমুঈল ইবন
হালফাকা ৷ তার পুর্ববর্তী বংশ তালিকা তিনি উল্লেখ করেন নি ৷ সুদ্দী ইবন আব্বাস, ইবন
মাসউদ প্রমুখ কতিপয় সা ৷হাবী থেকে এবং ছা নারী ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ এ প্রসঙ্গে বর্ণনা
করেন যে, পাজা ও আসকালান এলাকার অধিবাসী আমড়ালিক৷ সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলের উপর
বিজয় লাভ করে ৷ এরা তাদের অসংখ্য লোককে হত্যা করে এবং বিপুল সংখ্যাক লোককে বন্দী
করে নিয়ে যায় ৷ তারপর লাবী বংশের মধ্যে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত নবী প্রেরণ বন্ধ থাকে ৷ এ সময়ে
তাদের মধ্যে মাত্র একজন মহিলা গর্ভবতী ছিল ৷ সে আল্লাহর নিকট একজন পুত্র সন্তানের
প্রার্থনা করে ৷ আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন এবং একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয় ৷ মহিলা
তার নাম রাখেন ইশমুঈল ৷ ইবরানী বা হিব্রু ভাষায় ইশমুঈন ইসমাঈল শব্দের সমার্থক ৷ যার
অর্থ হচ্ছে আল্লাহ আমার প্রার্থাংড়া কবুল করেছেন ৷ পুত্রঢি বড় হলে তিনি তাকে মসজিদে
(বায়তৃল মুকাদ্দাসে) অবস্থানকারী একজন পুণ্যবান বান্দার দায়িত্বে অর্পণ করেন ৷ উদ্দেশ্য ছিল
যাতে তার পুত্র ঐ পুণ্যবান বন্দোর সাহচর্যে থেকে তার চারিত্রিক গুণাবলী ও ইবাদত-বন্দেগী
থেকে সুশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন ৷ ছেলেটি মসজিদেই অবস্থান করতে থাকেন ৷ যখন তিনি
পুর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হন তখনকার একটি ঘটনা হচ্ছে এই যে, একদিন রাত্রিবেলা তিনি মসজিদের
এক কোণে ঘুমিয়ে ছিলেন ৷ হঠাৎ মসজিদের পার্শ্ব থেকে একটি শব্দ তার কানে আসে ৷ তখন
ভীত-সস্ত্রস্ত হয়ে তিনি জেগে উঠন ৷ তার ধারণা হয়, তার শায়খই র্তাকে ডেকেছেন ৷ তাই তিনি
শায়খকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আমাকে ডেকেছেনঃ তিনি ভয় পেতে পারেন এই
আশঙ্কায় শায়খ র্তাকে সরাসরি কোন উত্তর দিলেন না ৷ তিনি শুধু বললেন, ই৷ , ঘুমিয়ে পড় ৷
তখন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন ৷ দ্বিতীয়বার অনুরুপ ঘটনা ঘটল ৷ তারপর তৃভীয়বারও একই
ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল ৷ তিনি দেখতে পেলেন, স্বয়ং জিব্রাঈল (আ)-ই তাকে ডাকছেন ৷
জিব্রাঈল (আ) র্তাকে জানালেন যে, আল্লাহ আপনাকে আপনার সম্প্রদায়ের প্ৰতি নবীরুপে
প্রেরণ করছেন ৷ এরপর সম্প্রদায়ের সাথে তার যে ঘটনা ঘটে, কুরআন মজীদে আল্লাহ তার
বিবরণ দিয়েছেন ৷ আল্লাহর বাণী :