হযরত সুলায়মান (আ)
হাফিজ ইবন আসাকিরের বর্ণনা মতে, হযরত সুলায়মান (আ)-এর নসবনামা নিঃনম্নরুপ :
সুলায়মান ইবন দাউদ ইবন ঈশা ( ৷) ইবন আবীদ ( ; প্রু প্রু; ) ইবন আবির ইবন সালমুন
ইবন নাহ্শুন ইবন আমীনাদাব ইবন ইরাম ইবন হাসিরুন ইবন ফারিস ইবন ইয়াহুযা ইবন
ইয়াকুব ইবন ইসহাক ইবন ইবরাহীম ৷ সুলায়মান (আ) ছিলেন নবীর পুত্র নবী ৷ ইতিহাসের
কোন কোন বর্ণনায় এস্যেছ যে, তিনি দামিশৃকে গিয়েছিলেন এবং ইবন খাবৃলাও অনুরুপ নসব
বর্ণনা করেন ৷ সুলায়মান (আ) প্রসংগে আল্লাহ বলেন :
সুলায়মান হয়েছিল দ উদেব উত্তরাধিকারী এবং সে বলেছিল, “হে মানুষ আমাকে
পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়৷ হয়েছে এবং আমাকে সকল কিছু দেয়৷ হয়েছে ৷ এটা অবশ্যই
সুস্পষ্ট অনুগ্রহ” ৷ (২৭ নামল : ১৭) অর্থাৎ তিনি পিতা দাউদেব নবুওয়াত ও রাজত্বের
উত্তরাধিকারী হন ৷ এখানে সম্পদের উত্তরাধিকারী অর্থে বলা হয়নি ৷ কেননা, সুলায়মান
(আ) ব্যতীত হযরত দাউদ (আ)-এর আরও অনেক পুত্র ছিলেন, তাদেরকে বাদ দিয়ে
শুধু সুলায়মানের নামে সম্পদের উল্লেখ করার কোন অর্থ হয় না ৷ তা ছাড়া সহীহ
হাদীসে বিভিন্ন সুত্রে একদল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন ;;
১! অর্থাৎ আমরা উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা
কিছু রেখে যাই তা সাদৃক৷ ৷ আমরা বলতে এখানে নবীদের জামাআত বুঝানো হয়েছে ৷ এ
বাক্যে রাসুলুল্লাহ (সা) মানুষকে জা ৷নিয়েছেন যে, নবীদের রেখে যাওয়া বৈষয়িক সম্পদের কেউ
উত্তরাধিকারী হয় না, যেমন অন্যদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে ৷ এর দাবীদার নয়, বরং তা
সাদকা-দৃস্থু৪ ও গরীবদেবই প্রাপ্য ৷ কেননা, দুনিয়ার সহায়-সম্পদ যেমন আল্লাহর নিকট তৃচ্ছ ও
নগণ্য, তেমনি তার মনোনীত নবীগণের নিকটও তা’ মুল্যহীন ও গুরুতুহীন ৷ হযরত
সুলায়মানের উক্তি মানুষ! আমাকে
পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়৷ হয়েছে ৷ অর্থাৎ হযরত সুলায়মান (আ) পাখীদের ভাষা বুঝতেন
তারা শব্দ করে কি বুঝাতে চায়, তিনি মানুষকে তার ব্যাখ্যা বলতে ন ৷ হাফিজ আবু বকর
ায়হাকী আবু মালিক থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন সুলায়মান (আ) কো থা৷ও যাচ্ছিলেন,
পথে দেখেন একটা পুরুষ চড়ুই পাখী আর একটা ত্রী চড়ুই পাখীর পাশে ঘোরাঘুরি করছে ৷
সুলায়মড়ান (আ) তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা বুঝেছ কি? চড়ুই পাখীঢি কী বলছে? তারা
বলল, হে আল্লাহর নবী! এরা কী বলছে? সুলায়মান (আ) বললেন, যে তার সাথে বিবাহের
প্রস্তাব দিচ্ছে এবং বলছে তুমি আমাকে নিয়ে কর, তা হলে তোমাকে নিয়ে আমি দামিশকের
প্রাসাদের যে কক্ষে চাও, সেখানে বসবাস করব ৷ অতঃপর সুলায়মান (আ) এরুপ বলার কারণ
ব্যাখ্যা করলেন যে, দামিশকের প্রাসাদ সমুহ শক্ত পাথর দ্বারা নির্মিত ৷ তার মধ্যে কেউই
বসবাস করতে পারে না, তবে বিবাহের প্রত্যেক প্ৰস্তাবকই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে থাকে ৷ ইবন
আসাকির বায়হার্কী থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ চইে ছাড়া অন্যান্য সকল জীব জন্তু ও
প্রাণীর ভাষাও তিনি বুঝতেন ৷ এর প্রমাণ কুরআনের আয়াত : ৰুদ্বু ংৰু এে & এ এ অর্থাৎ
আমাকে সকল জিনিসের জ্ঞান দান করা হয়েছে ৷ যা একজন বাদশাহর জন্যে প্রয়োজন অর্থাৎ
দ্রব্য সামগ্রী, অস্ত্র, আসবাব পত্র, সৈনা সামম্ভ, জিশ্ ইনসান বিহংগকুল, বন্য জন্তু,
বিচরণকারী শয়তান, জ্ঞা-ন বিজ্ঞান, বাক ও নিব ক জীবের অন্তরের খবর জ না৷ ই৩ ৷৷দি ৷ এরপর
আল্লাহ বলেছেন স্পো ৷ ৰুাৰু; ব্লু ৷ শ্রো৷ ৷াগু ৷ নিচয়ই এটা সুস্পষ্ট অনুগ্নহ ৷ অর্থাৎ
এ সবই সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা ও আসমান-যমীনের সৃষ্টিকতার পক্ষ থেকে দান ৷ যেমন আল্লাহ বলেনঃ
-সুলায়মানের সম্মুখে সমবেত করা হল তার বাহিনীকে জিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে
এবং এগুলোকে বিন্যস্ত করা হল বিভিন্ন ব্যুহে ৷ যখন ওরা পিপীলিক৷ অধ্যুষিত উপত্যকায়
পৌছল তখন একটি পিপড়ে বলল, “হে পিপড়ের দল! তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর,
যেন সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাত সারে তােমাদেরকে পদতলে পিষে না ফেলে ৷” তার
কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হেসে বলল, “হে আমার প্রমিপালক ! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও,
যাতে আমি তোমার প্রতি ৩কৃতজ্ঞত৷ কাশ করতে পারি ৷ আমার প্রতি ও আমার পিতা-
মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্যে এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা
তুমি পছন্দ কর এবং তোমার অনুগ্নহে আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শামিল কর ৷
(২৭ নড়ামৃল : ১ ৭-১৯)
উপোরােক্ত আয়াতে আল্লাহ র্তার বান্দা , নবী ও নবীপুত্র হযরত সুলায়মান ইবন দাউদ (আ )
সম্পর্কে জানাচ্ছেন যে, একদা সুলায়্যান তার জিন, ইনসান ও পাথী বাহিনী নিয়ে অভিযানে
রওয়ানা হন ৷ জিন ও ইনসান তার সাথে সাথে চলে, আর পাখীর৷ উপরে থেকে রৌদ্র ইত্যাদি
হতে ছায়া দান করে ৷ এই তিন বাহিনীর তদারর্কীরুপে নিযুক্ত ছিল একটি পর্যবেক্ষক দল ৷ তারা
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতো ৷ ফলে কেউ তার নিজ অবস্থান থেকে আগে
যেতে পারভাে না ৷ আল্লাহ বলেন ;;
পিপড়েটি সুলায়মান ও তার বাহিনীর অজ্ঞা৩ সারে দুর্ঘটনার বিষয়ে পিপড়ের দলকে
সাবধান করে দিল ৷ ওহাব ইবন মুনাব্বিহ বলেছেন, উক্ত ঘটনায় সৃলায়মান (আ) তার আসনে
আসীন অবস্থায় তায়েফের একটি উপত্যকা অতিক্রম করছিলেন ৷ এ পিপড়েটির নাম ছিল
জারাস এবং তার গোত্রের নাম বানুশ শায়তান ৷ সে ছিল বোড়া এবং আকৃতিতে নেকড়ে বাঘের
মত ৷ কিন্তু এর কোন কথইি সমর্থনযোগ্য নয় ৷ বরং এই ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি
তচুট্রুার অশ্বারােহী বাহিনীতে ঘোড় সওয়াব অবস্থায় ছিলেন; আসনে আসীন ছিলেন না ৷ কেননা
তাই হত৩ তাহলে পিপড়ের কোন ভয় থাকতো না, তারা পদদলিভ্র হত না ৷ কারণ তখন
আসনের উপরই তার যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস, সৈন্য বাহিনী, অশ্ব উদ্রী যাবতীয়
প্রয়োজনীয় পত্র, তাবু চতুস্পদ জভু, পাখী ইত্যাদি সব কিইে থাকত ৷ এ বিষয়ে সামনে আরও
বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ৷
এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, পিপড়েটি তার দলবলকে বুদ্ধিমত্তার সাথে যে সঠিক
নির্দেশ দিয়েছিল হযরত সুলায়মান (আ) তা বুঝেছিলেন এবংঅ আনন্দে মুচকি হেসেছিলেন ৷
কেননা, আল্লাহ কেবল তাকেই এ বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন, অন্য কাউকে করেননি ৷ কিন্তু
কতিপয় মুর্থ লোক বলেছে যে, সুলায়মান (আ)-এর পুর্বে জীব-জভুর বাকশক্তি ছিল এবং
মানুষের সাথে তারা কথা বলত ৷ নবী হযরত সুলায়মান তাদের কথা বলা বন্ধ করে দেন ,
তাদের থেকে অংগীকার আদায় করেন এবং তাদের মুখে লাগাম পরিয়ে দেন ৷ এরপর থেকে
তারা আর মানুষের সাথে কথা বলতে পারে না ৷ কিন্তু এরুপ কথা কেবল অজ্ঞব ই বলতে
পারে ৷ ঘটনা যদি এ রকমই৩ হত তাহলে সুলায়মান (আ) এর জন্যে এটা কোন বৈশিষ্ট্য হত না
বং অন্যদের তুলনায় তার মাহাত্ম্য রুপে গণ্য হবে না ৷ কেননা তাহলে তো সকল মানুষই
জীব-জন্তুর কথা বুঝতে৷ ৷ আর যদি তিনি অন্যদের সাথে কথা না বলার অংগীকার নিয়ে থাকেন
এবং কেবল নিজেই বুঝবার পথ করে থাকেন, তাহলে এরুপ বন্ধ রাখার মধ্যেও কোন মাহাত্ম্য
নেই ৷৩ তাই তিনি আরয করলেন:
হে আমার পালনক৩ ৷, তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে
আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ
বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর ৷) আমার অতরে প্রেরণা জাগিয়ে
দিন এবং সঠিক পথ প্রদর্শন করুন ৷ নবী আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছেন তিনি যেন তাকে
সেইসব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তওফীক দেন, যা তিনি তাকে দান করেছেন এবং যে
সব বিষয়ে অন্যদের উপর তাকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন ৷ এসব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বরুপ
তিনি সৎকর্ম করার তওফীক কামনা করছেন এবং মৃত্যুর পরে £নক বান্দাদের সাথে তার হাশর
যাতে হয় সেই প্রার্থনাও জানিয়েছেন ৷ আল্লাহ তার এ প্রার্থনা কবুলও করেছেন ৷ হযরত
সুলায়মান (আ)-এর মাতা ছিলেন একজন ইবাদতকা রী সৎকর্যশীল মহিলা ৷ যেমন সুনায়দ ইবন
দাউদ জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) বলেন, সুলায়মান ইবন দাউদের
মাত৷ বলেছিলেন, “হে প্রিয় বৎস! রাত্রে অধিক ঘুমিয়াে না কেননা এ অভ্যাস মানুষকে
কিয়ামতে র দিন নিঃস্ব-দরিদ্র করে উঠাবে ৷” ইবন মাজাহ হর্তার চারজন উস্তাদ সুত্রে এ হাদীস
বর্ণনা ৷করেছেন ৷
আবদুর রায্যাক মা’মারের সুত্রে যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন সুলায়মান ইবন দাউদ
(আ) ও তার সৈন্য বাহিনী একদা ইসতিসৃকা নামায (বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনার নামায) আদায়
করার জন্য বের হন ৷ পথে দেখলেন, একটি পিপড়েত পর একটা পা উপরের দিকে উঠিয়ে বৃষ্টি
কামনা করছে ৷ এ দৃশ্য দেখে সুলায়মান (আ) সৈন্যদেরকে বললেন, “ তামর৷ ফিরে চল
তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে ৷ কেননা এই ৷পপড়েটি আল্লাহর কাছে বৃষ্টি কামনা করছে
এবং তার প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েছে ৷ ” ইবন আসাকির লিখেছেন, এ হাদীছ মারকু’ সনদেও বর্ণিত
হয়েছে ৷ অতঃপর আবদুর রাযযাক মুহাম্মদ ইবন আযীযের সুত্রে আবু হুরায়র৷ (রা) থেকে
বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে ৩শ্যুনছেন৪ আল্লাহর এক নবী একবার
আল্লাহর কাছে বৃষ্টি কামনার উদ্দেশ্যে লোকজন সাথে নিয়ে বের হয়েছিলেন ৷ পথে তারা দেখরু তে
পান যে, একটি পিপড়ে আকাশের দিকে তার একটি পা উঠিয়ে বৃষ্টি কামনা করছে ৷ অতঃপর ঐ
নবী তার সংপীদেরকে বললেন, তোমরা ফিরে চল; কেননা এ পিপড়েটির ওসীলায় তোমাদের
জন্যেও বৃষ্টি মঞ্জুর হয়েছে ৷ সুদ্দীর বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে, চলার পথে র্তারা দেখলেন একটি
পিপড়ে দু-পায়ে দাড়িয়ে এবং দৃ-হাত মেলে এই দোয়া করছে, হে আল্লাহ! আমরা আপনারই
সৃষ্টিকুলের মধ্যে একটি সৃষ্টি ৷ আপনার অনুগ্রহ থেকে আমরা নিরাশ হইনি ৷ অতঃপর আল্লাহ
তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন ৷ আল্লাহর বাণী :
সুলায়মান পক্ষীকুলের সন্ধান নিল এবং বলল, “ব্যাপার কি, হুদ্হুদ্কে দেখছি৷ না যে সে
অনুপস্থিত না কি? যে উপযুক্ত কারণ না দর্শালে আমি অবশ্য ওকে কঠিন শাস্তি দিব অথবা
যবেহ্ করব ৷ কিছুকালের মধ্যেই হুদ্হুদ্ এসে পড়ল এবং বলল, “আপনি যা অবগত নন আমি
তা অবগত হয়েছি এবং সাবা’ থেকে সুনিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি ৷ আমি এক নারীকে
দেখলাম তাদের উপর রাজতৃ করছে ৷ তাকে সকল কিছু হতে দেয়৷ হয়েছে এবং তার আছে এক
বিরাট সিংহাসন ৷ আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলড়ামতারা আল্লাহর পরিবর্তে সুর্যকে
সিজ্বদা করছে ৷ শয়তান ওদের ক র্যাবলী ওদের নিকট শোভন করেছে এবং ওদেরকে সৎপথ
থেকে নিবৃত্ত করেছে: ফলে তারা সৎপথ পায় না ,নিবৃত্ত করেছে এ জন্যে যে, ওরা যেন সিজ্বদা
না করে তা ৷ল্লাহকে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর লুক্কা ৷য়িত বস্তুকে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন,
যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর ৷ আল্লাহ্’৩ তিনি ব্যতীত কো ন ইলাহ্ নেই ৷
তিনি মহা অ ৷বশের অধিপতি ৷ ” সুলায়মান বলল, “আমি দেখব, তুমি কি সত্য বসেছ, না তুমি
মিথ্যাবাদীা তুমি যাও আমার এ পত্র নিয়ে এবং এটা তাদের নিকট অর্পণ কর; এরপর তাদের
নিকট হতে সরে থেক্যে এবং লক্ষ্য করো তাদের প্রতিক্রিয়া কী?” সেই নারী বলল, “হে
পারিষদবর্গৰু আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে; এটা সুলায়মানের নিকট হতে এবং তা
এই দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, অহমিকা বশে আমাকে অমান্য করো না, এবং
আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও ৷” সেই নারী বলল , “হে পারিযদবর্গ ৷ আমার
এ সমস্যার তোমাদের অভিমত দাও ৷ আমি কোন ব্যাপারে একম্ভে সিদ্ধান্ত করি না তোমাদের
উপস্থিতি ব্যতীত ৷ ” ওরা বলল, “আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্ষমতা আপনারই, কী আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন ৷” সে বলল, “রাজা-বাদশাহ্রা
যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান
ব্যক্তিদেরকে অপদন্থ করে; এরাও এরুপই করবে; আমি তাদের নিকট উপটোকনঃ পাঠাচ্ছি;
দেখি দুতরা কী নিয়ে ফিরে আসে ৷ ” দুত সুলায়মানের নিকট আসলে সুলায়মান বলল, “তোমরা
কি আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমরা যা
দিয়েছ হতে উৎকৃষ্ট অথচ তোমরা তোমাদের উপটোকন নিয়ে উৎফুলু বোধ করছ ৷ ওদের নিকট
ফিরে যাও, আমি অবশ্যই ওদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসর এক সেনাবাহিনী, যার মুকাবিলা করার
শক্তি ওদের নেই ৷ আমি অবশ্যই ওদেরকে সেখান থেকে বহিষ্কাব করব লাঞ্ছিতভাবে এবং ওরা
হবে অবনমিত ৷ ” (২৭ : ২০-৩ ৭)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ হযরত সুলায়মান (আ) ও হুদহুদ পাখীর ঘটনা উল্লেখ
করেছেন ৷ সফরকালে প্রত্যেক শ্রেণীর পাথীদের থেকে কিছু সংখ্যক সম্মুখভাগে থাকত ৷ তারা
সময় মত তীর নিকট উপস্থিত হত এবং তাদের থেকে তিনি প্রয়োজনীয় সংবাদ জেনে নিতেন ৷
তারা পালাক্রমে তার কাছে নামত-যেমনঢি সেনাবাহিনী রাজা-বাদশাহর সাথে করে থাকে,
পাখীর দায়িতৃ সম্পর্কে হযরত ইবন আব্বস (রা) প্রমুখ বলেন, কোন শুন্য প্রাম্ভর অতিক্রমকালে
সুলায়মান (আ) ও তীর সংগীরা যদি পানির অভাবে পড়তেন, তাহলে যে স্থানে পানি কোথায়
আছে, হুদ্হুদ্ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে তার সন্ধান দিত ৷ মাটি নীচে কোন স্তরে পানি আছে
হদ্হুদ্ তা বলে দিতে পারত ৷ সুতরাং যেখানে পানি আছে বলে সে নির্দেশ করত, সেখানকার
মাটি খুড়ে সেখান থেকে পানি উত্তোলন করা হত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহৃত হতো ৷
একদা সুলায়মান (আ) লকরকালে হ্দহ্দের সন্ধান করেন, কিন্তু তাকে তার কর্মন্থলে উপস্থিত
পেলেন না ৷ তখন তিনি বললেন :
ব্যাপার কি, হুদৃহুদৃকে দেখছি না যে ! সে অনুপস্থিত না কি? অর্থাৎ হুদহুদের হল কি, যে কি
এ দলের মধ্যেই নেই ৷ না কি আমার দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে?
আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দিব ৷ হুদ্হুদ্কে তিনি কোন কঠিন শাস্তি দেয়ার
প্রতিজ্ঞা করেন ৷ শাস্তির প্রকার সম্পর্কে মুফাসসিরগণ বিভিন্ন কথা বলেছেন; অথবা আমি তাকে
যরেহ করব, অথবা যে আমার নিকট উপযুক্ত কারণ দর্শাবে ৷ অর্থাৎ এমন যুক্তিপুর্ণ কারণ
দর্শাতে হবে যা তাকে এ বিপদ থেকে রক্ষার উপযুক্ত হয় ৷
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৭-
অল্পক্ষণের মধ্যে থাখা এসে প ৬ল , অর্থাৎ খাখা বেশী দেরী না করেই চলে আসল এবং
সুলায়মান (আ)-কে বলল, “আপনি যা অবগত নন আমি তা অবগত হয়েছি ৷ অর্থাৎ আমি
এমন বিষয়ের সন্ধান পেয়েছি যার সন্ধান আপনি জানেন না ৷ এবং সাবা’ থেকে সুনিশ্চিত
সংবাদ নিয়ে এসেছি ৷ অর্থাৎ সত্য সংবাদ ৷ “আমি এক নারীকে দেখলাম তাদের উপর রাজতু
করছে ৷ তাকে সবকিছু থেকে দেয়া হয়েছে এবং তার আছে এক বিরাট সিংহাসন ৷ ” এখানে
ইয়ামানের সারা বাজন্যবর্গের অবস্থা, শান-শওকত ও রাজতে,র বিশালতার কথা উল্লেখ করা
হয়েছে ৷ সুলায়মান (আ)-এর যুগের সাবার রাজার কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তার কন্যার
উপর রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব তার অর্পিত হয় ৷
ছালাবীসহ অন্যান্য ইতিহাসবিদ লিখেছেন, বিলকীসের পিতার মৃত্যুর পর তার সম্প্রদায়ের
লোকেরা একজন পুরুষ লোককে তাদের রাজা মনোনীত করে ৷ কিভু তার অয়োগতোর কারণে
রাজেদ্রর সর্বত্র বিশৃৎখলা ছড়িয়ে পড়ে ৷ বিলকীস তখন কৌশলে সে রাজার কাছে নিজের
বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেন ৷ ফলে রাজা ভীকে বিবাহ করেন ৷ বিলকীস স্বামী-গৃহে গিয়ে স্বামীকে
মদ্য পান করতে দেন ৷ রাজা যখন মদ পান করে মাতাল অবস্থায় ছিল তখন বিলকীস তার দেহ
থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দরজার উপর লটকিয়ে দেন ৷ জনগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে এ দৃশ্য
দেখতে পেয়ে বিলকীসকে সিংহাসনে বসায় এবং তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ৷ বিলকীসের
বংশপঞ্জি নিম্নরুপঃ বিলকীস বিনত সীরাহ (ইনি হুদ্হাদ ( এ ৮১ ;৯ ) নামে পরিচিত, আবার কেউ
কেউ একে শারাহীলও বলেছেন ৷) ইবন যীজাদান ইবন সীরাহ ইবন হারছ ইবন কায়স ইবন
সায়ফী ইবন সারা ইবন ইয়াশজাব ইবন ইয়ারাব ইবন কাহতান ৷ বিলকীসের পিতা ছিলেন
একজন বিখ্যাত রাজা ৷ তিনি ইয়ামানের কোন নারীকে বিবাহ করতে অস্বীকৃতি জানান ৷ কথিত
আছে, তিনি একজন জিন মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন ৷ তার নাম ছিল রায়হানা বিনত সাকান ৷
তার গর্ভে একটি মেয়ের জন্ম হয় ৷ তার নাম রাখা হয় তালবগমা ৷ ইনিই বিলকীস নামে
অভিহিত হন ৷
ছালাবী আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, বাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :
বিলকীসের পিতা-মড়াতার একজন ছিল জিন ৷ হাদীসটি গরীব পর্যায়ের এবং এর সনদ দুর্বল ৷
ছালাবী আবু বাকরা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, এক দিন রড়াসুলুল্লাহ্
(না)-এর দরবারে বিলকীসের প্ৰসংগ নিয়ে আলোচনা উঠলে তিনি বললেন ও ঐ জাতির কোন
মৎগল নেই, যারা তাদের কর্তৃতৃ কোন নারীর হাতে তুলে দেয় ৷ এ হাদীসের এক রাবী ইসমাঈল
ইবন মুসলিম আল-মাক্কী দুর্বল ৷ ইমাম বৃখাবী (র) আওফ হাসানের মাধ্যমে আবু বাকরা
(বা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌছল যে, পারস্যবাসীরা
ড়ারস্য সম্রাটের কন্যাকে তাদের সম্রাজী বানিয়েছে, তখন তিনি বলেছিলেন ও ঐ জাতির কল্যাণ
হবে না যারা তাদের নেতৃতু কোন নারীর উপর ন্যাস্ত করে ইমাম তিরমিযী এবং নাসাঈও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ তিরমিযী একে হাসান সহীহ
পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন ৷ আল্লাহর বাণী হ; “তাকে সবকিছু থেকে দেয়া হয়েছে ৷ ” অর্থাৎ
বাদশাহর জন্যে যা কিছু প্রয়োজন তা তাকে দেয়া হয়েছিল ৷ “এবং তার ছিল বিরাট
সিংহাসন ৷ ” অর্থাৎ বিলকীসের সিংহাসন ছিল স্বর্ণ, মনি-মুক্তা খচিত ও বিভিন্ন প্রকার মুল্যবান ও
উজ্জ্বল ধাতু দ্বারা সু-সজ্জিত ৷ এরপর আল্লাহ তা আলা তাদের কুফরী, অবাধ্যত ,৷ পােমরাহী,
সুর্য পুজা ৷এবং শয়তান কতক পথভ্রষ্ট হওয়া এবং এক ও অদ্বিভীয় অ ল্লা৷হ্র ইবাদত থেকে দুরে
রাখার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ অথচ আল্লাহতোঐ সত্তা ৷যিনি আসমান ও যমীনের পােপনায়
বিষয়কে প্রকাশ করেন এবং তাদের প্রকাশ্য অপ্রকাশ৷ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন ৷
আল্লাহর বাণী ৷ আল্লাহ তিনি ব্যতীত
কোন ইলাহ নেই ৷ তিনি মহা শ্আরশের অধিপতি ৷ অর্থাৎ আল্লাহর এত বড় বিশাল আরশ
রয়েছে যে, সমগ্র সৃষ্টি জগতে এর চেয়ে বড় আর কিছুই :নই ৷ যা হোক এ সময় হযরত
সুলায়মান (আ) হুদহুদ্ পাখীর নিকট একটি পত্র দিয়ে বিলকীসের নিকট পাঠান ৷ চিঠিতে তিনি
আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুপতোর প্রতি ৩আহ্বান জানান এবং বশ্যত ৷ স্বীকার করে তার কতৃতু
ও রাজত্বের প্রতি আনুগত্য দেখানোর নির্দেশ দেন ৷ এ আহ্বান ছিল বিলকীসের অধীনস্ত সকল
প্রজাদের প্রতিও ৷ত তাই তিনি লেখেন৪ “অহমিকা বশে আমাকে অমান্য করে৷ না ৷ ” অর্থাৎ
আমার আনুগত্য প্রত্যাখ্যান ও নির্দেশ অমান্য করে৷ না ৷ “এবং আনুগত স্বীকার করে আমার
নিকট উপস্থিত হও ৷ এ কথা তোমাকে দ্বিতীয়বার বলা হবে না এবং কোন রকম অনুরোধও
করা হবে না ৷ অতঃপর হুদ হুদ্ বিলকীসের নিকট চিঠি নিয়ে আসে ৷ এ ঘটনার পর থেকে মানুষ
চিঠির আদান প্রদান করতে শিখে ৷ কিন্তু সেই অনুগত, বিনয়ী বিচক্ষণ পাখীর আনীত চিঠির
মুল্যের সাথে কি আর কোন চিঠির তুলনা করা চলে ৷ বেশ কিছু মুফাসৃসির ও ঐতিহাসিক
লিখেছেন যে, হুদ্হুদ্ পাথী ঐ চিঠি নিয়ে বিলকীসের রাজ-প্রাসাদে তার কক্ষে প্রবেশ করে এবং
তার সামনে চিঠিটি রেখে দিয়ে একটু দুরে সরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে যে, বিলকীস এর
কি উত্তর দেন ৷ বিলকীস তার মন্তীবর্গ, পাবিষদবর্গ ও অমাত তাদের এক জরুরী পরামর্শ সভা
আহ্বান করেন ৷ “রাণী বিলকীস বলল, হে পাবিযদবর্গ! আমাকে একটি সম্মানিত পত্র দেয়া
হয়েছে ৷” তারপর তিনি চিঠির শিরোনাম পড়লেন যে “এটা সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং তা
এই অসীম দাতা, পরম দয়ালু আল্লাহর সালে শুরু ৷ আমার মুকাবিলায়৷ শক্তি প্রদর্শন করে৷ না
এবং বশ্যতা ৷৷স্বীক ৷র করে আমার কাছে উপস্থিত হও ৷”
অতঃপর রাণী সতাসদবর্গের সাথে পরামর্শে বসেন, সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে
আলোচনা করেন ৷ সৌজন্য ও তার গান্তীর্যপুর্ণ পবিবেশে তাদের উদ্দেশে বলেন : “হে
পাবিষদবর্গ! আমার এই সমস্যায় তে ৷মাদের অভিমত দাও ৷ তে ৷মাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে
আমি কোন সিদ্ধ ম্ভ গ্রহণ করি না ৷” অর্থ ৎ তোমাদের উপস্থিতি ও পরামর্শ ব্যতীত কোন
গুরুতৃপুর্ণ বিষয়ে আমি একা কখনও চুড়ান্ত সিদ্ধ ম্ভ গ্রহণ করি না ৷ “তারা বলল, আমরা
শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা, এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই ৷ অতএব, আপনি ভেবে
দেখুন, আমাদেরকে কি আদেশ করবেন ৷ অর্থাৎ তারা বুঝাতে চাইল , আমরা দৈহিকভাবে,
প্রশিক্ষ্যণর দিক দিয়ে এবং সমরারুস্ত্রশ্ ৷৷ক্তিশলী, যুদ্ধে কঠোর ও অটল, রণাঙ্গণে দ্ভশীর্যবীর্ফা৷লী
বীরদের মুকাবিলা করত সক্ষম ৷ অতএব, আপনি যদি মুক৷ ৷বিলা করতে চান তবে আমরা তাতে
সক্ষম ৷ এতারু যে তারা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িতু বাণীর উপর ন্যস্ত করে , যাতে রাণী তার
নিজের ও জনগণের জন্যে যেটা মহ্গলজনক ও সঠিক মনে করেন, সেই পন্থা অবলম্বন করতে
পারেন ৷ ফলে দেখা গেল , রাণী যে সিদ্ধ ৷ম্ভ দিলেন, সেটাই ছিল সঠিক ও যথার্থ৷ তিনি ঠিকই
বুঝেছিলেন যে, এই চিঠির প্রেরককে পরাভুত কর যাবে না, তার বিরোধিতা করা সম্ভব হবে
না ৷ তার প্রতিরোধ করা যাবে না এবং৩ তাকে ধোক৷ দেওয়াও সম্ভব হবে না ৷ রাণী বললেন ং
“রাজা-রড়াদশাহর৷ যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন ত ৷৷ক বিপর্যস্ত করে দেয় এবং
সেখানকার সন্তুাম্ভ ব্যক্তিরর্গকে অপদস্থ করে ৷ তারাও এরুপই করবে ৷ ” রাণী যথার্থ মতামত
রক্তে করেছিলেন যে, এই বাদশাহ যদি আমাদের এ দেশ আক্রমণ করেন ও বিজয়ী হন তাহলে
এর দায় দায়িছু আমার উপরই বর্তাবে এবং সমস্ত ক্রোধ, হামলা ও প্রবল চাপ আমার
উপরই আসবে ৷ “আমি তাদের নিকট কিছু উপচৌকন পাঠাচ্ছি দো ই প্রেরিত লোকেরা কি
জওয়াব আসে ৷
বিলকীস চেয়েছিলেন তার নিজের পক্ষ থেকে ও জনগণের পক্ষ থেকে সুলড়ায়মান (আ) এর
নিকট উপচৌকন পাঠাতে ৷৩ তারপর তিনি তা পাঠিয়েও দিয়েছিলেন কিন্তু তার জান ৷ছিল না
যে, আল্লাহ্ব্র নবী হযরত সুলায়মান (আ) তা’ গ্রহণ করবেন না কেননা রাণীর জনগণ ৷ছিল
কাফির ৷ আর নবী ও তার সৈন্যবাহিনী এই কাফির গোষ্ঠীকে পরা ভুত করতে সক্ষম ছিলেন ৷
ষ্) ই যখন দুত সুলায়মানের কাছে আগমন করল, তখন সুলায়মান বলল, “তোমরা কি
ধ্ন-সম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তােমাদেরাক
প্রদত্ত বস্তু থেকে উত্তম ৷ বরং তােমর ই তামাদের উপভৌকন নিয়ে সুখে থাক’ ৷ রাণী বিলকীস ’
যে উপচৌকন সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন, তা ছিল পরিমাণে প্রচুর এবং মহা মুল্যবান দ্রব্য সম্ভার ৷
ঘুফাস্সিরীনে কিরাম এর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন ৷ অতঃপর সুলায়মান (আ) দরবারে
উপস্থিত লোকজনের সম্মুখে উপচৌকন বহনকারী দুত ও প্রতিনিধি দলকে লক্ষ্য করে বলেন ং
“ফিরে যাও তাদের কাছে ৷ এখন অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে
আসর, যার মুকাবিল৷ করার শক্তি৩ ন্া৷দর নেই ৷ আমি অবশ্যই তাদেরকে অপদস্থ করে সেখান
থেকে রহিষ্ক৷ ৷র করব এবং৩ তারা হবে লাঞ্ছি৩৷ ” দৃতকে বলা হচ্ছে যে, যেসব উপচৌকন আমার
কাছে এনেছ তা নিয়ে তুমি ফিরে যাও ৷ কেননা, আল্লাহ আমাকে যে ধন-সম্পদ নিয়ামত
হিসেবে৷ দা ন করেছেন, তা এ উপচৌকন যা নিয়ে৫ তামর৷ গৌরব ও অহং কারবে৷ ধ করছ তার
তুলনায় অনেক বেশী এবং উৎকৃষ্ট ৷ আমি অবশ্যই ওদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসর এক সৈন্য
বাহিনী, যার মুকাবিলার শক্তি ওদের নেই ৷ অর্থাৎ আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন সেনাদল
পাঠাব যাদেরকে প্রতিহত করার, প্রতিরোধ গড়ে ওোলার ও যাদের বিরুদ্ধে ল৬ ই করার
ক্ষমতা তাদের নেই এবং আমি তাদেরকে তাদের রাড়িষ্ঘর, শহর তাদের লেনদেনও দেশ
থেকে অপদস্থু করে বহিষ্কার করব ৷ “এবং ওরা হবে লার্শ্বত ৷” অর্থাৎ তারা হবে লাঞ্ছিত
অপমানিত ও ঘৃণিতা
রাণী বিলকীসের রাজোর জনগণ যখন সুলায়মান (আ) এর ঘোষণা জানতে পারলৰু তখন
নবীর আনুগত্য ও রশ্যত৷ স্বীকার করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না ৷ সুতরাং তারা
সেই যুহুতে ৩নবীর ডাকে সাড়া দেয়ার জন্যে বাণীর নিকট এসে সমবেত ৩হল ও রিনয়ের সাথে
র্তার আনুগত্য করে যাওয়ার অংগীকার ব্যক্ত করল ৷ সুলায়মান (আ) যখন তাদের আগমনের ও
প্রতিনিধি দল প্রেরণের সংবাদ শুনলেন তখন তার অনুগত এক জিনকে বললেন :
-সুলায়মান আরো বলল, (হ আমার পারিষদবর্গ! তারা আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট
আমার পুর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবো এক শক্তিশালী
জিন বলল, “আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পুর্বে আমি তা এনে দেব এবং এ ব্যাপারে
আমি অবশ্যই ক্ষম৩ ,ারান বিশ্বস্ত ৷” কিতাবের জ্ঞ ন বা ব ছিল, সে বলল, “আপনি চোখের পলক
ফেলার পুর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দিব ৷ সুলায়মান যখন তা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায়
দেখল তখন সে বলল, এটা আমার প্রৰুন্৷ তপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে
পারেন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ ৷ যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে
নিজের কল্যাণের জন্যে এবং যে অকৃতজ্ঞ, সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত
মহানুভব ৷ সুলায়মান বলল, তার সিং হাসভ্রুনর আকৃতি অপরিচিত করে রদলিয়ে দাও; দেখি যে
সঠিক দিশা পায় না সে বিভ্র৷ ৷ম্ভদের শ্ ৷মিল হয় ? সেই নারী যখন আসলং তখন তাকে জিজ্ঞেস
করা হল, “৫৩ লমার সিংহাসন কি এরুপই ?” সে বলল, এতো যেন তাই৷ আমাদেরকে ইতি
পুর্বেই প্রকৃত জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণও করেছি ৷ আল্লাহর পরিবতে সে
যার পুজা করত তা ই তাকে সত্য হতে নিবৃত্ত করেছিল, যে ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ৷
তাকে বলা হল, এই প্রাসাদে প্রবেশ কর ৷ যখন সে৩ তা দেখল তখন সে ওটাকে এক গভীর
জলাশয় মনে করল এবং সে তার পদদ্বয় (পায়ের গোছা) অনাবৃত করল; সুলায়মান বলল,
এতো স্বচ্ছ ম্ফটিক খণ্ডিত প্রাসাদ ৷ সেই নারী বলল, “হে আমার প্ৰতিপালক৷ আমি তাে নিজের
প্রতি জুলুম করেছিলাম ৷ আমি সুলায়মানের সহিত জপতসমুহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট
আত্মসমর্পণ করছি ৷” (২৭ নামলং ৩৮ ৪৪)
রাণী বিলকীস যে সিংহাসনের উপর বসে রাজ্য পরিচালনা করতেন, ঐ সিংহাসনটি
বিলর্কীসের আগমনের পুর্বেই সুলায়মান (আ) এর দরবারে হাজির করার জন্যে তিনি যখন
জিনদেরকে আহ্বান করেন তখন এক শক্তিশালী জিন বলল “আপনি আপনার স্থান থেকে উঠবার পুর্বেই আমি
তা এনে দেব ৷”
অর্থাৎ আপনার মজলিস শেষ হবার পুর্বেই অমি তা হাজির করে :দব ৷ কথিত আছে,
সুলায়মান (আ) বনী ইসরাঈলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে দিনের প্রথম থেকে দুপুরের পুর্ব
পর্যন্ত মজলিস করতেন ৷ ষ্;ণ্ ৷ পুৰুপ্রু এে; ণ্ডা ৷ এ “এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই
ক্ষমত ৷বান, বিশ্বন্ত ৷” অর্থাৎ উক্ত সিংহার্সন আপনার কা ছে উপস্থিত কব্ র দিতে আমি সক্ষম এবং
তাতে যে সব মুল্যবান মনি-মুক্তা ৷রয়েছে তা যথাযথভাবে আপনার কাছে বুঝিয়ে দেয়ার
ব্যাপারে আমি বিশ্বন্ততার পরিচয় দেব ৷ ,ন্ন্নুপু ৷ ট্রুস্পো ৭১া: র্মুাট্রুষ্; র্দু;এ ৷ ৰুও কিতাবের
জ্ঞান যার ছিল, সে বলল ৷” এই উক্তিকারীর নাম আসফ ইবন বারাখৃইয়৷ বলে প্ৰসিদ্ধি রয়েছে ৷
ইনি ছিলেন হযরত সুলায়মান (আ) এর খালাত ভাই ৷ কেউ কেউ বলেন, ইনি ছিলেন একজন
মু’মিন জিন ৷ কথিত আছে যে, ইসমে আজম এই জিনের কণ্ঠস্থ ছিল ৷ আবার কেউ কেউ
বলেছেন, এই ব্যক্তি ছিলেন বনী ইসরাঈলের একজন বিখ্যাত আলিম ৷ কেউ কেউ বলেছেন
ইনি স্বয়ং হযরত সুলাযমান (আ) ৷ কিন্ত এ মত টি অত্যন্ত দুর্বল ৷ সৃহায়লী এ মতকে দুর্বল
আখ্যায়িত করে বলেন যে, বাকের পুর্বাপর এ কথাকে আদৌ সমর্থন করে না ৷ চতু র্থ আরও
একটি মত আছে যে,৩ তিনি হযরত জিবরাঈল (আ) ৷
“আপনি চোখের পলক ফেলার পুর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব ৷” এ কথার ব্যাখ্যার
বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন যেমন : (১) যমীনের উপরে আপনার দৃষ্টির শেষ সীমা
পর্যন্ত একজন লোকের যেতে ও ফিরে আসতে যত সময় লাগবে, এই সময়ের পুর্বে আমি নিয়ে
আসর; (২) দৃষ্টি সীমার মধ্যে সবচেয়ে দুরবর্তী একটি লোকের হেটে এসে আপনার কাছে
পৌছতে যে সময় লাগবে, এই সময়ের পুর্বে; (৩) আপনি পলক বিহীন একটানা দৃষ্টিপাত
করতে থাকলে চক্ষু ক্লান্ত হয়ে যখন চোখের পাত৷ বন্ধ হয়ে আসবে তার পুর্বে; (৪ ) আপনি
সম্মুখপানে সর্ব দুরে দৃষ্টিপাত করে পুনরায় দৃষ্টি নিজের কাছে ফিরিয়ে এনে চক্ষু বন্ধ করার
পুর্বে ৷ উল্লেখিত মতামতের মধ্যে এই সর্বশেষ মত টি অধিক যথার্থ বলে মনে হয় ৷ “সুলায়মান
যখন তা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখলেন” অর্থাৎ হযরত সুলায়মান (আ) বিলকীসের
সিংহাসনকে যখন চোখের পলকের মধ্যে সুদুর ইয়ামান থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপ ত
দেখতে পেলেন, “তখন সে বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে
পরীক্ষা করতে ৩পায়েন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ ৷ অর্থাৎ এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার
প্রতি অনুগ্রহ বিশেষ ৷ আর বান্দাহ্র উপরত ৷র অনুগ্রহের উদ্দেশ্য হল তাকে পরীক্ষা করা যে
যে এ অনুগ্রহ পেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, না অকৃতজ্ঞ হয় ৷ যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করে , যে তা করে নিজের কল্যাণের জন্যে ৷” অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শুভ ফল তারই কাছে
ফিরে আসে ৷ “এবং যে অকৃতজ্ঞ, সে জেনে রাখুক যে, এামর প্রতিপালক অভাবমুক্ত
অকৃতজ্ঞতা য় ত ৷র কো ড়ানই ক্ষতি নেই ৷
অতঃপর সুলায়মান (আ) বিলকীসের এ সিংহাসনের ক ক কায পবিবর্ত ন করে দিতে ও
আকৃতি বদলিয়ে দিতে নির্দেশ দেন ৷ উদ্দেশ্য ছিল, এর দ্বারা বিলকীসের জ্ঞান-বুদ্ধি পরীক্ষা
করা ৷ তা ই তিনি বললেন ং “দেখি, যে সঠিক দিশা পায় নাকি সে বিভ্রান্তদের শামিল হয় ? সে
নারী যখন আসল, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তােম র সিং হাসন কি এরুপই? সে বলল,
“এটা তো যেন তাই ৷” অর্থাৎ এটা ছিল তার বুদ্ধিমত্তা গভীর জ্ঞানের পরিচয় ৷ কারণ এ
ংহাসন তার না হয়ে অন্যের হওয়া তার কাছে অসম্ভব মনে হচ্ছিল ৷ কেননা, এটা সে ই
নির্মাণ করিয়েছে এবং দীর্ঘ দিন একে ইয়ামানে প্রত্যক্ষ করেছে তার ধারণা ৷ছিল না যে, এ
ধরনের আশ্চর্য কারু-কার্য খচিত মুল্যবান সিংহাসন অন্য কেউ কমাতে পারে ৷
অতঃপর আল্লাহ তাআলা সুলায়মান (আ) ও তার সম্প্রদায়ের সংবাদ দিয়ে বলছেন :
“আমাদেরকে ইতিপুর্বেই প্রকৃত জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণও করেছি ৷
আল্লাহ্র পরিবর্তে যে যার পুজা করত তাই তাকে সত্য থেকে নিবৃত্ত্ব করেছিল, যে ছিল কাফির
সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ৷” অর্থাৎ বিলর্কীস ও তার সম্প্রদায়ের লোকেরা পুর্ব-পুরুষদের অন্ধ
অনুকরণে আল্লাহকে বাদ দিয়ে সুর্যের পুজা করত ৷ এই সুর্য-পুজাই তাদেরকে আল্লাহর সত্য
পথ থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছিল ৷ অথচ সুর্য পুজার পক্ষে তাদের কাছে কোন দলীল-প্রমাণ
কিছুই ছিল না ৷ হযরত সুলায়মান (আ) জিনৃদের দ্বারা একটি র্কাচের প্রাসাদ নির্মাণ
করেছিলেন ৷ প্রাসাদে যাওয়ার পথে তিনি একটি গভীর জলাশয় তৈরি করেন ৷ জলাশয়ে মাছ ও
অন্যান্য জলজ প্রাণী ছাড়েন ৷ তারপর জলাশয়ের উপরে ছাদস্বরুপ স্বচ্ছ র্কাচের আবরণ নির্মাণ
করেন ৷ তারপর হযরত সুলায়মান তার সিংহত্বসনের উপর উপবিষ্ট থেকে বিলকীসকে ঐ প্রাসাদে
প্রবেশ করার আদেশ দেন ৷
“যখন সে৩ তা দেখল তখন সে এটাকে এক গভীর জলাশয় মনে করল এবং সে তার পদদ্বয়
অনাবৃত করল ৷ সুলায়মান বলল, এ তো স্বচ্ছ ম্ফঢিক মণ্ডিত প্রাসাদ সেই নারী বলল, হে
আমার প্রতিপালক! আমি (৩ ৷ নিজের প্রতি জুলুম করেছিলাম আমি সুলড়ায়মানের সাথে
জগ৩ সমুহের প্রতিপা ৷লক অ ৷ল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পণ করছি ৷ ” কথিত আছে বিলকীসের পায়ের
গোছায় লম্বা লম্বা পশম ছিল ৷ জিনৃরা ঢেয়েছিল এই পশম কোন উপায়ে সুলায়মানের সামনে
প্রকাশ পাক এবং তা দেখে সুলায়মানের মনে ঘৃণা জন্মুক ৷ জিনৃদের এরুপ করার কারণ ছিল,
বিলকীসের যা ছিল জিন ৷ এখন সুলায়মান যদি বিলকীসকে বিবাহ করেন তা হলে সুলায়মানের
সাথে বিলকীসও জিনৃদের উপর প্রতুতৃ বিস্তার করবে বলে তারা আশংকা করছিল ৷ কেউ কেউ
বলেছেন, বিলকীসের পায়ের পা ৷ ছিল পশুর ক্ষুরের ন্যায় ৷ এ ম৩ টি অত্যন্ত দুর্বল, প্রথম
মতটিও সন্দেহমুক্ত নয় ৷ কথিত আছে, হযরত সুলায়মান (আ) যখন বিলকীসকে বিবাহ করার
৫৬ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া
সিদ্ধ ম্ভ নেন, তখন তার পায়ের পশম ফেলে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন ৷ এ ব্যাপারে তিনি
মানুষের পরামর্শ নেন ৷৩ তারা ক্ষুর ব্যবহারের প্রস্তাব দেয় ৷ বিলর্কীস এতে অসম্মতি প্রকাশ
করেন ৷ এরপর৩ তিনি জিনদেরকে জিজ্ঞেস করেন ৷ তারা সুলায়মান ( ন্সা)-এর জন্যে চুনা তৈরি
করে এবং একটা হাম্মানখানা নির্মাণ করে ৷ এর পুর্বে মানুষ হাম্মানখানা কি , তা বুঝত্যে না ৷
তিনিই সর্বপ্রথম হাম্মামখানা তৈরি করেন ও ব্যবহার করেন ৷ সুলায়মান (আ) হাম্মানখানায়
প্রবেশ করে চুণ দেখতে পান এবং পরীক্ষামুলকভাবে তা স্পর্শ করেন ৷ স্পর্শ করতে তই চুণের
বাাজে উহ্৪ বলে ওঠেন; কিন্তু তার এ উহ্৪তে কোন কাজ হয়নি ৷ তিবরানী এ ঘটনা রাসুল (সা )
থেকে (মারফু ভাবে) বর্ণনাকরেছেন ৷ কিন্তু তা সমর্থনযোগ্য নয় ৷
ছালাবী প্রমুখ লিখেছেন যে, সুলায়মান (আ) বিলকীসের সাথে পরিণয় সুত্রে আবদ্ধ হন
এবং তার রাজতু বহাল রেখে র্তাকে ইয়ামানে পাঠিয়ে দেন ৷ তিনি প্রতি মাসে একবার করে
ইয়ামানে গমন করতেন এবং তিন দিন বিলকীসের কাছে থেকে পুনরায় চলে আসতেন ৷
যাতায়াতে তিনি তার সেই বিখ্যাত আসনটি ব্যবহার করতেন ৷ তিনি জিনুদের দ্বারা ইয়ামানে
তিনটি অনুপম প্রাসাদ নির্মাণ করিয়ে দেন ৷ প্রাসাদ তিনটির নাম গামদান সালিহীনও বায৩ ন ৷
কিন্তু মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক ওহাব ইবন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণনা করেন যে, সুলায়মান (আ )
বিলকীসকে নিজে বিবাহ করেন নি ৷ বরং র্তাকে তিনি হামাদানের বাদশাহর সাথে বিবাহ করিয়ে
দেন এবং বিলকীসকে ইয়ামানের রাজত্বে বহাল রাখেন ৷ এরপর তিনি জিনদের বাদশাহ
য়ুবিআকে তার অনুগত করে দেন ৷ সে তথায় উপরােল্লিখিত প্রাসাদ তিনটি নির্মাণ করে ৷ তবে
প্রথম বর্ণনাটিই অধিক প্রসিদ্ধ ৷
হযরত সুলায়মান (আ) প্রসংগে সুরা সাদ’-এ আল্লাহর বাণী :
–আমি দাউদকে দান করলাম সুলায়মান ৷ সে ছিল উত্তম বান্দা এবং সে ছিল অভিনয়
অ আল্লাহ অভিঘুখী ৷ যখন অপরাহ্নে তার সম্মুখে ধাবনােদ্যত ৩উত্কৃষ্ট অশ্বরাজিকে উপস্থিত করা
হল, তখন সে বলল, আমি ৫৩ তা আমার প্রতিপালকের স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে সম্পদ প্রীতিতে
মগ্ন হয়ে পড়েছি, এ দিকে সুর্য অস্তমিত হয়ে গিয়েছে ৷ এগুলোকে পুনরায় আমার সম্মুখে আনয়ন
কর ৷ তারপর সে এগুলোর পদ ও গলদেশ ছেদন করতে লাগল ৷ আমি সুলায়মানকে পরীক্ষা
করলাম এবং তার আসনের উপর রাখলাম একটি বড়: তারপর সুলায়মান আমার অভিমুথী
হল ৷ সে বলল, হে আমার প্রতিপালক৷ আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে দান কর এমন এক
রাজ্য, যার অধিকারী আমি ছাড়া কেউ না হয় ৷ তুমি (তা পরম দাতা ৷ তখন আমি তার অধীন
করে ছিলাম বায়ুকে, যা তার আদেশে, সে যেখানে ইচ্ছে করত সেথায় মৃদুমন্দ গতিতে প্রবাহিত
হত এবং শয়তানদেরকে, যারা সকলেই ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী, এবং শৃওখলে আবদ্ধ
আরও অনেককে ৷ এসব আমার অনুগ্রহ, এ থেকে ভুমি অন্যকে দিতে অথবা নিজে রাখতে
পার ৷ এর জন্যে তোমাকে হিসেব দিতে হবে না ৷ এবং আমার নিকট রয়েছে তার জন্যে
নৈকটোর মর্যাদা ও শুভ পরিণাম ৷ (৩৮ সাদ : ৩০-৪ 🙂
এ আয়াতগুলােতে আল্লাহ এ কথা উল্লেখ কয়্যাছন যে, তিনি দাউদকে পুত্র হিসেবে
সুলায়মানকে দান করেছেন ৷ এরপর সুলায়মানের প্রশংসয বলেছেন, “সে ছিল উত্তম বান্দা
এবং সে ছিল অভিনয় আল্লাহ অভিমুথী ৷ ” অতঃপর আল্লাহ হযরত সুলায়মান ও তীর উৎকৃষ্ট
শক্তিশালী অশ্ব সম্পর্কিত ঘটনার উল্লেখ করেছেন ৷ ;ট্রুব্রগুশু বা দ্রুতপামী অশ্ব বলতে ঐসব
শক্তিশালী অশ্বকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলো তিন পায়ের উপর দাড়ায় এবং চতুর্থ পায়ের
একাংণের উপর ভর করে দাড়ায় ৷
১! অর্থ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দ্রুতগামী অশ্ব ৷ “তখন সে বলল আমি তো আমার প্রতিপালকের
স্মরণ থেকে বিযুখ হয়ে সম্পদ প্রীতিতে মগ্ন হয়ে পড়েছি, এদিকে সুর্য অস্তমিত হয়ে গিয়েছে ৷
কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, ঘোড়া চোখের আড়ালে চলে গিয়েছে ৷ “এগুলোকে পুনরায়
আমার সম্মুখে আনয়ন কর ৷ অতঃপর স্লে ঐগুলাের পদ ও পলদেশ ছেদন করতে লাগল ৷” এ
কথার দৃ’রকম তাফসীর করা হয়েছিল ৷ প্রথম মতে অর্থ হল তিনি তরবারী দ্বারা ঘাড়ের রগ ও
গলদেশ কেটে দিয়েছেন ৷ দ্বিতীয় মতে অর্থ হল, ঘোড়াগুলােকে প্রতিযোগিতা করানোর পর
ওগুলোকে ফিরিয়ে এলে তিনি ওগুলাের ঘাম মুছে দেন ৷ অখিকাৎশ আলিম প্রথম মত সমর্থন
করেন ৷ র্তারা বলেছেন, হযরত সুলায়মান (আ) অশ্বরাজি পরিদর্শন করার কাজে লিপ্ত থাকায়
আসরের নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় এবং সুর্য অস্তমিত হয় ৷ হযরত আলীসহ কতিপয়
সাহাবী থেকে এরুপ বর্ণিত হয়েছে ৷ কিন্তু এই বক্তব্যের উপর আপত্তি তোলা যায় যে, তিনি
ওযর ব্যতীত কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কায৷ করেন নি বলে নিশ্চিতরুপে বলা যায় ৷ অবশ্য
এ আপত্তির উত্তর এভাবে দেয়া যায় যে, তার অশ্বরাজি ছিল জিহাদের জন্যে প্ৰন্তুত ৷ তিনি
সেগুলো পবিদশ্নি করছিলেন আর এ জাতীয় ব্যাপারে নামায আদায় বিলম্ব করা তখনকার
শরীআতে বৈধ ছিল ৷
একদল আলিম দাবি করেছেন যে, খন্দকের যুদ্ধকালে রড়াসুলুল্লাহ (সা ) আসরের নামায
কাযা করেন; কারণ তখন পর্যন্ত এরুপ করা বৈধ ছিল ৷ পরবর্তীতে সালাতুল খাওফ (ভয়ের
নামায)-এর দ্বারা ঐরুপ কাযা বিধান রহিত হয়ে যায় ৷ ইমাম শাফিঈসহ কতিপয় আলিম এ
কথা বলেছেন ৷ কিন্তু মাকহ্রল, আওযাঈ প্রমুখ বলেছেন, যুদ্ধের প্রচগুতার কারণে নামায বিলন্বে
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৮-
পড়া ও কায৷ করা একটা স্থায়ী বিধান এবং ঐরুপ অবস্থায় আজও এ বিধানের কার্যকারিতা
রয়েছে ৷ আমরা তাফসীর গ্রন্থে সুরা নিসায় সালাতুল খওফের আলোচনায় এ বিষয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি ৷ অপর একদল আলিম বলেছেন, খন্দকের যুদ্ধে নবী করীম (না)-এর
আসরের নামায কায৷ হয়েছিল ভুলে যাওয়ার কারণে ৷ র্তার৷ বলেন, হযরত সুলাযমান
(আ)-এরও নামায কায৷ হয়েছিল ঐ একই কারণে ৷ যেসব মুফাসৃসির ঘোড়া আড়ালে অদৃশ্য
হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তাদের মতে সুলায়মান (আ)-এর নাভ্রুয কায৷ হয়নি ৷ এবং
দু,এ; ৷ট্রুণ্ড্রট্রুর্দুাঠু আঘাতের অর্থ পুর্বের অর্থের থেকে
সম্পুর্ণ ভিন্ন হয়ে ৷ তখন এর অর্থ হয়ে, ঘোড়াগুলিকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন ৷ ফিরিয়ে
আনার পর তিনি সেগুলোর গলদেশ ও পায়ে হাত বুলিয়ে আদর করেন ও নাম মুছিয়ে দেন ৷
ইবন জারীর এই তাফসীরকে সমর্থ্য৷ করেছেন ৷
ওয়ালীবী হযরত ইবন আব্বাস (রা ) থেকে এ কথা বর্ণনা করেছেন ৷ ইবনে জারীর এই
তাফসীরকে এ কারণে অগ্রাধিকার দিয়েছেন যে, এতে সম্পদ বিনষ্ট করার অভিযোগ এবং বিনা
অপরাধে পণ্ডাক রগ কেটে শাস্তি দেওয়ার আপত্তি থাকে না ৷ কিন্তু এ৩ তাফসীরও প্ৰশ্নাতাত নয়;
কেননা, হতে পারে পশু এভাবে যবেহ করা তখনকার শরী আতে বিধিসম্মত ছিল ৷ এ কারণে
আমাদের অনেক আলিম বলেছেন, মুসলমানদের যদি আশংকা হয় যে , তাদের পনীমাতে প্রাপ্ত
কিৎব৷ অন্য কো ন উপায়ে প্রাপ্ত পশু কাফিরর৷ দখল করে নিয়ে তখন এসব পশু নিজেদের হাতে
যবেহ করা ও ধ্বং স করে দেয়৷ বৈধ, যাতে কাফিরর৷ ৷এগুলে৷ দখল করে শক্তি সঞ্চয় করতে না
পারে ৷ এই যুক্তিতে ই হযরত জা ’ফর ইবন আবী তালিব (রা ) মুতার যুদ্ধে নিজের অশ্বের প৷
নিজেই কেটে দিয়েছিলেন ৷ কথিত আছে যে, হযরতসুলায়মান (আ)-এর ছিল বিরাট অশ্ব
পাল ৷ কারও মতে দশ হাজার এবং কারও মতে বিশ হাজার ৷ কেউ কেউ বলেছেন যে, এসব
অশ্বের মধ্যে বিশটি অশ্ব ছিল ডানা বিশিষ্ট ৷
আবু দাউদ (র) তার সুনান গ্রন্থে আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ রাসুলুল্লাহ
(সা) তাবুক অথবা খায়বার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাখ্যান করে যখন বাড়িতে ফিরেন, তখন
বাতাসে পর্দা সরে যাওয়ায় ঐ ফীক দিয়ে দেখেন, আয়েশা (বা) ঘরের মধ্যে কাপড়ের পুতুল
নিয়ে খেলা করছেন ৷ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আয়েশা ! এগুলো কি ? আয়েশা বললেন, এগুলো
আমার যেয়ে ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) পুতুলদের মাঝে দুই ডানা বিশিষ্ট একটা কাপড়ের ঘোড়া দেখে
জিজ্ঞেস করেন, মাঝখানের ওটা কি দেখা যায় ? আয়েশা বললেন, ওটা ঘোড়া ৷ রাসুলুল্লাহ
(সা) জিজ্ঞেস করেন, ঘোড়ার উপরে ওটা কি ? আয়েশা বললেন, ওটা ঘোড়ার দুই ডানা ৷
রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, ঘোড়ার আবার দুই ডানা হয় নাকি ? আয়েশা (রা ) বললেন, কি,
আপনি কি শুনেন নি যে, সুলায়মান (আ) এর ঘোড়া ডানা বিশিষ্ট ছিল ? আয়েশা বলেন, আমার
এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা) এমনভাবে হাসলেন যে, আমি তার মাড়ির শেষ দাত পর্যন্ত
দেখতে গেলাম !
কোন কোন আলিম বলেছেন, সুলায়মান (আ) আল্লাহর সভুষ্টির উদ্দেশ্যে অশ্বরাজি বিনষ্ট
করার পর আল্লাহ তাকে আরও উত্তম বস্তু দান করেন, তা হলো আল্লাহ বাতাসকে তার অনুগত
করে দেন, যার সাহায্যে তিনি এক সকালে এক মাসের পথ এবং এক বিকেলে এক মাসের পথ
অতিক্রম করতে পারতেন ৷ পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসছে ৷ এর সমর্থনে
ইমাম আহমদ কড়াতড়াদা ও আবুদ্ দাহমা (ব) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তার) দু’জন প্রায়ই
বায়তুল্লাহ্ব সফর করতেন ৷ এমনি এক সফরে তাদের সাথে এক বেদুইনের সাক্ষাৎ হয় ৷
রেদুইন লেড়াকটি বলেন যে, একদা রাসুলুল্লাহ (সা) অড়ামর হাত ধরে কাছে নিয়ে কিছু বিষয়
শিক্ষা দিলেন যা স্বয়ং আল্লাহ র্তড়াকে শিক্ষা দিয়েছেন ৷ তিনি আমাকে বললেন, আল্লাহর ভয়ে
তুমি যা কিছু ত্যাগ করবে, তার চেয়ে অধিক উত্তম বস্তু আল্লাহ তোমাকে দান করবেন ৷
আল্লাহর বাণী : “আমি সুলায়মানকে পরীক্ষা করলাম এবং তার আসনের উপর রাখলাম একটি
ধড়, অতঃপর সে আমার অভিমুখী হল ৷” ইবন জারীর, ইবন আবী হাতিমসহ বেশ কিছু সংখ্যক
মুফাসৃসির এ আঘাতের তাফসীরে প্রথম যুগের মনীষীপণেব বরাত অনেক বিওয়ায়াত বর্ণনা
করেছেন ৷ কিত্তু এর অধিকাৎশই কিৎবা সম্পুংটি৷ ইসরাঈলী বর্ণনা ৷ অধিকাৎশ ঘটনা খুবই
আপত্তিকর ৷ আমরা তাফসীর গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোকপাত করেছি ৷ এখানে শুধু আঘাতের
উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হচ্ছি ৷ তারা বা লিখেছে তার সড়ারমর্য হচ্ছে এই যে, সুলায়মান (আ)
সিংহাসন থেকে চল্লিশ দিন অনুপস্থিত থাকেন ৷ চল্লিশ দিন পর পৃনরায় সিৎহাসনে ফিরে আসেন
এবং বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করার আদেশ দেন ৷ ফলে অত্যন্ত মজবুতভাবে বায়তুল
মুকাদ্দাসের মসজিদটি নির্মিত হয় ৷ কিন্তু ইতিপুর্বে আমরা লিখে এসেছি যে , সুলায়মান (আ)
বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করেননি বরং পুনঃনির্মাণ করেছিলেন ৷ এটি প্রথমে নির্মাণ করেছিলেন
ইস্যাঈল অর্থাৎ ইয়াকুব (আ) ৷ এ সম্পর্কে হযরত আবু ষর (রা)-এব বর্ণিত হাদীস সেখানে
উল্লেখ করা হয়েছে ৷ তিনি রাসুলুল্লাহ (না)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদ
কােনটিং তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম ৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপরে কোনটি ? তিনি
বললেন, বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদ ৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম ৷ এ দুই মসজিদ নির্মাণের মধ্যে
সময়ের ব্যবধান কত ? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর ৷ এখানে উল্লেখ্য যে, মসজিদে হারামের
নির্মাতা হযরত ইবরাহীম (আ) ও হযরত সুলায়মান (আ ৷-এর মাঝে সময়ের ব্যবধান চল্লিশ
বছর তো হতেই পারে না; বরং তা এক হাজার বছরেরও বেশী ৷
উল্লেখিত আয়াতে হযরত সুলায়মান (আ) আল্লাহর নিকট এমন একটা রাজতৃ পাওয়ার
আবেদন করেছেন, যেইরুপ রাজত্ব তার পরে আর কাউকে দেওয়া হবে না এর মর্ম হল,
বায়তুল মৃকাদ্দাসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা ৷ এ সম্পর্কে ইমাম আহমদ, নসােঈ ইবন মাজাহ্,
ইবন খুযায়মা , ইবন হিবৃবান, হাকিম প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ নিজ নিজ সনদে আমর ইবনৃল
আস (বা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সুলায়মান (আ) বায়তুল মুকাদ্দাস
নির্মাণ করার সময় আল্লাহর নিকট তিনটি বিষয় চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু আল্লাহ তাকে তিনটির
মধ্যে দু’টি দান করেছেন ৷ আশা করি তৃতীয়টি আল্লাহ আমাদেরকে দান করবেন ৷ তিনি
আল্লাহর নিকট চেয়েছিলেন এমন ফয়সালা দানের ক্ষমতা, যা আল্লাহর ফষসালার সাথে মিলে
যায় ৷ আল্লাহ র্তাকে তা’ দান করেন ৷ তিনি আল্লাহর নিকট এমন একটা রাজতৃ পাওয়ার
আবেদন করেন, যে রকম রাজতৃ তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না ৷ আল্লাহ এটাও তাকে
দান করেন ৷ তিনি আল্লাহর নিকট আবেদন করেন যে, কোন লোক যদি এই (বায়তুল
মুকাদ্দাসা মসজিদে কেবল সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয়, সে যেন এমন
নিম্পাপ হয়ে বেরিয়ে যায় যেমন নিম্পাপ ছিল সে মায়ের গেট থেকে ভুমিষ্ট হওয়ার দিন ৷
আমরা আশা করি এই তৃতীয়টা আল্লাহ আমাদেরকে দান করবেন ৷ সুলত্ত্বয়মান (আ ) যে
ফয়সালা দিতেন তা যে আল্লাহর ফয়সালা অনুযায়ী হতো, যে প্রসং’দুগ আল্লাহ তার ও তার
পিতার প্ৰশংসায় বলেছেন :
এবং স্মরণ কর দাউদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত সম্পর্কে;
তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের যেষ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের
বিচার ৷ এবং আমি সুলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের
প্ৰত্যেককে আমি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান ৷ (২১ আম্বিয়া : ৭৮-৭৯) ৷
কাযী ওরায়হ্ ও অন্যান্য কতিপয় প্রাচীন মুফাস্সির এ আঘাতের শানে নুয়ুলে লিখেছেন :
হযরত দাউদ (আ)-এর নিকট যারা বিচারপ্রাথী হয়েছিল তাদের আৎগুরের ক্ষেত ছিল ৷ অন্য
এক সম্প্রদায় তাদের যেষপাল রাত্রিবেলায় ঐ ক্ষেতে ঢুকিয়ে দেয় ৷ ফলে যেষপাল আঙ্গুরের গাছ
খেয়ে সম্পুর্ণরুপে বিনষ্ট করে ফেলে ৷ অতঃপর বাদী-বিরাদী উভয় দল দাউদ (আ )-এর নিকট
মীমাংসার জন্যে আসে ৷ ঘটনার বিবরণ শুনে তিনি আৎগুর £ক্ষাতর মালিক পক্ষকে তার
ক্ষয়-ক্ষতির সমপরিমাণ মুল্য প্রদান করার জন্যে যেষ-মালিক পক্ষকে নির্দেশ দেন ৷ তারা
সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে দাউদ পুত্র সুলড়ায়মানের সংগে তাদের সাক্ষাত হয় ৷
সুলায়মান (আ) জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর নবী ভোমাদেরকে কী ফয়সালা দিয়েছেন ? তারা
ফয়সালার বিবরণ শুনাল ৷ সুলায়মান (আ) বললেন, যদি আমি এ ঘটনার বিচার করতাম
তাহলে এই রায় দিতাম না; বরং আমার ফয়সালা হত এভাবে যে, যেষপাল আৎগুর ক্ষেতের
মালিক পক্ষকে দেয়া হত ৷ তারা এগুলোর দুধ, বাচ্চা, ণশম থেকে উপকৃত হতে থাকতো , আর
ক্ষেত যেষপালের মালিক পক্ষের নিকট অর্পণ করা হত ৷ তারা তাতে চাষাবাদ করে শস্য
উৎপন্ন করত ৷ যখন শস্য ক্ষেত্র যেষপালক দ্বারা বিনষ্ট হওয়ার পুর্বের অবস্থায় পৌছে যেত ৷
তখন শস্য ক্ষেত্র ক্ষেতের মালিক পক্ষকে এবং যেষপাল মেয়ের মালিক পক্ষকে প্ৰতব্রর্পণ করা
হত ৷ এই কথা দাউদ (আ)-এর কর্ণাপাচর হলে তিনি পুর্বের রায় রহিত করে সুলায়যানের মত
অনুযায়ী পুনরায় রায় দেন ৷
প্রায় এই ধরনের আর একটি ঘটনা বুখারী শরীফে আবু হুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণিত
হয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন : দুই মহিলা এক সংগে সফর করছিল ৷ উভয়ের কোলে ছিল
দুগ্ধপেড়াষ্য শিশু পুত্র ৷ পথে এক শিশুকে বাঘে নিয়ে যায় ৷ অবশিষ্ট শিশুকে উভয় মহিলা নিজের
পুত্র বলে দাবি করে এবং পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হয় ৷ দুজনের মধ্যে বয়াে৪জেব্রষ্ঠা মহিলা বলল,
তোমার পুত্রকে বাঘ নিয়ে গেছে; আর কনিষ্ঠা মহিলাটি বলল, বরং তোমার পুত্রকেই বাঘে
নিয়েছে ৷ অতঃপর মহিলাদ্বয় হযরত দাউদ (আ)-এর নিকট এর মীমাংসার জন্যে যায় ৷ তিনি
উভয়ের বিবরণ শুনে জোষ্ঠা মহিলার পক্ষে রায় দেন কারণ শিশুটি তার কাছে ছিল এবং ছোট
জনের পক্ষে কোন সাক্ষী ছিল না ৷ বিচারের পর তারা যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন সুলায়মান
(আ) এর সাথে তাদের সাক্ষাত হয় ৷ তিনি বিচারের বর্ণনা শোনার পর একটা ছুরি আমার হুকুম
দেন এবং বলেন, আমি শিশুটিকে সমান দু’ভাগ করে প্রভ্রু৩ ৷কক্রুক অর্ধেক করে দিব ৷ তখন
কনিষ্ঠা নইিলাটি বলল আল্লাহ আপনাকে রহম করুন, আ শনি ওকে দ্বি-খণ্ডিত করবেন না,
শিশুটি ঐ মহিলারই, আপনি ওকে দিয়ে দিন ৷ (তখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে শিশুটি কনিষ্ঠা
মহিল বই) তাই তিনি শিশুটিকে কনিষ্ঠা মহিলাকেই প্রদান করেন ৷ সম্ভবত উভয় রকম বিচার
তখনকার শরী আতে ৩চালু ছিল ৷ তবে সুলায়মান (আ) এর বিচার ছিল অধিকতর গ্রহণযোগ্য ৷
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে প্রথমে সুলায়মান (আ )-এর সুবিচারের প্রশংসা
করার পর তার পিতা দাউদ (আ)-এর প্রশংসা করেছেন ৷ যেমন অল্লাহ বলেছেন :
-এবং তাদের প্রত্যেককে আ ৷মি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞ৷ ও জ্ঞান ৷ আমি পর্বতৎ বিহত্পকুলকে
অধীন করে দিয়েছিলাম ওরা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রত৷ ও মহিম৷ ঘোষণা করত ৷
আমিই ছিলাম এই সমস্তের কর্তা ৷ আমি তাকে তোমাদের জন্যে বর্স নির্মাণ শিক্ষা
দিরেছিলাম যাতে তা ঙ্গুতামড়াদের যুদ্ধে ণ্তামাদেরকে রক্ষা করে; সুতরাং তোমর৷ কি কৃতজ্ঞ হবে
না ? (২১ আম্বিয়৷ ং ৭৯ ৮০) ৷ এরপর আল্লাহ তা আলা বলেন ং
-এবং সুলায়মানের বশীভুত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; তা তার আদেশক্রমে
প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রস্তুত ৷ক বিষয় সম্পর্কে আমি
সম্যক অবগত ৷ এবং শয়তানদের মধ্যে ক শুরু তার জন্যে ডুবুরীর কা জ করত; তা ছাড়া অন্য
কাজও করত; আমি ওদের রক্ষাকারী ছিলাম ৷ “( ২১ আন্বিয়া-৮ ১ ৮ ২)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন ০ং,
-তখন আমি তার অধীন করে দিলাম বায়ুকে, যা তার আদেশে, সে যেখানে ইচ্ছা ৷করত
সেখানে মৃদুমন্দ ভাবে প্রবাহিত হত, এবং শয়তানদেরকে যারা সকলেই ছিল প্রাসাদ নির্মা ণকারী
ও ভুবুরী, এবং শৃথেলে আবদ্ধ আরও অনেককে ৷ এ সবই আমার অনুগ্রহ; এ থেকে তুমি
অন্যকে দিতে অথবা নিজে রাখতে পার ৷ এর জন্যেও তোমাকে হিসাব দিতে হবে না ৷ এবং
আমার নিকট রয়েছেত তার জন্যে নৈকটোর মর্যাদা ও শুভ পবিণাম ৷ (৩৮ সাদ৪ ৩৬ ৪০)
হযরত সুলায়মান (আ) যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে ৷ব্রত তার রক্ষিত অশ্বরাজির মায়৷ ত্যাগ
করলেন তখন আল্লাহ তার পরিবর্তে বায়ুকে তার অধীন করে দেন ৷ যা ছিল অশ্বের তুলনায়
অধিক দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ৷ এতে কে ন রকম কষ্টও ছিল না; তার নির্দোশ সে বায়ু প্রবাহিত
হত মৃদুমন্দ গতিতে ৷ যেই কোন শহরে তিনি যেতে ইচ্ছে করতেন বায়ু সেখানেই তাকে নিয়ে
যেত ৷ হযরত সুলায়মানের ছিল কাঠের তৈরি এক বিশাল আসন তাতে পাকা ঘর, প্রাসাদ, তাবু,
আসবাবপত্র, অশ্ব, উট, তা ৷রি জিনিসপত্র , মানুষ, জিন এবং সর্বপ্রকার পওপাখী প্রভৃতি
প্রয়োজনীয় সবকিছুর স্থান সস্কুলান হতো ৷
যখন তিনি কোথাও কোন সফরে বিনােদনে কিৎবা কোন রাজা অথবা শত্রুর বিরুদ্ধে
অভিযানে বের হতেন, তখন ঐসব কিছু ঐ আসনে তুলে বায়ুকে হুকুম করতেন ৷ বায়ু ঐ
আসনের নীচে প্রবেশ করেত তা শুন্যে উঠিয়ে নিত ৷ অতঃপর আসমান যমীনের মধ্যবর্তী স্তর
পর্যন্ত তা উঠার পর মৃদুমন্দ গতিতে চলার নির্দেশ দিলে বায়ু সেভ৷ বেত তা সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে
যেত ৷ আবার যখন দ্রুত যাওয়ার ইচ্ছে করতেন তখন বায়ুকে যেতা বে নির্দেশ দিতেন; ফলে
বায়ু প্রবল বেগে ধাবিত হত এবং অল্প সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে পৌছিয়ে দিত ৷ এভাবে তিনি
সকাল বেলা বায়তৃল মুকাদ্দাস থেকে যাত্রা করে এক মাসের দুরত্বে অব ত ইসতাখারে
দ্বিপ্রহরের পুর্বেই পৌছে যেতেন এবং সেখানে বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করে আবার সন্ধ্যার পুর্বেই
বায়তৃল মুকাদ্দাসে ফিরে আসতেন ৷ আল্লাহ তাআল৷ বলেন :
-আমি সুলায়মড়ানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে যা প্রতাতে এক মাসের পথ অতিক্রম
করত এবং সন্ধ্যড়ায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত ৷ আমি তার জন্যে গলিত তামার এক
প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছিলাম ৷৩ তার প্রতিপা ৷লকের অনুমতিক্রমে জিনৃদের কতক তার সম্মুখে কাজ
করত ৷ ওদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ অমান্য করেত তাকে আমি জ্বলম্ভ অগ্নি শাস্তি আস্বাদন
করার ৷ তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য, হ ওয সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং
সুদৃঢ়তাবে স্থাপিত বৃহদাকার ডেগ নির্মাণ করত ৷ আমি বলেছিলাম, হে দাউদ পরিবার!
কৃতজ্ঞতার সংগে তোমরা কাজ করতে থাক ৷ আমার বান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই কৃতজ্ঞ ৷
(৩৪ সারা : ১২-১৩) ৷
হাসান বসরী (র ) বলেছেন, হযরত সুলায়মান (আ) প্রভাতে দামিশৃক থেকে যাত্রা শুরু
করতেন এবং ইসতাখারে পৌছে সক৷ লের নান্তা করতেন ৷ আবার বিকলে বেলা সেখান থেকে
যাত্রা করে কাবুলে পৌছে রাত্রি যাপন করতে ন ৷ অথচ স্বাভাবিক গতিতে দামিশৃক থেকে
ইসতাথার যেতে সময় লাগতে৷ এক মাস ৷ অনুরুপ ইসত ৷খার থেকে কাবুলের দুরতু ছিল এক
মাসের ৷ শহর-নগর ও স্থাপত্য শিল্পের বিশে ৷ষজ্ঞগণ বলেছেন ,ইসতাখার শহরটি জিনৃরা হযরত
সুলায়মান (আ) এর জন্যে নির্মাণ করেছিল ৷ এটা ছিল প্রাচীন তুর্কিস্তানের রাজধানী ৷ অনুরুপ
অন্যান্য কতিপয় শহর যেমন: তাদঘুর বায়তুল মুকাদ্দাস, বাবে জাবরুন ও বাবুল বারীদ ৷
শেষোক্ত দুটি শহর অনেকের মতে দামিশক অঞ্চলে অবস্থিত ৷
ইবন আব্বাস (রা ) মুজাহিদ, ইকরামা, কাতাদা ৷(র) প্রমুখ অনেকেই ,া ;দ্ব শব্দটির অর্থ
করেছেন তামা ৷ কাতাদা বলেন, এইণ্ তামা ইয়ামানের খা ৷হ্নিাজ সম্পদ ছিল ৷ আল্লাহ তা উথিত
করে ঝর্ণার আকারে সুলায়মান (আ) এর জন্যে প্রব৷ ৷হিত করে দেন ৷ সুদ্দী বলেন তা মাত্র :ি ন
দিন স্থায়ী ছিল ৷ সুলায়মান (আ ) তার নির্মাণাদির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ তামা এই সময়ের
মধ্যে সংগ্নহ করে নেন ৷ আল্লাহর বাণী
“কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে ৷ তাদের যে কেউ আমার
আদেশ অমান্য করবে, আমি তাকে জ্বলস্ত অগ্নির শাস্তি আস্বাদন করার ৷ অর্থাৎ আল্লাহ কতক
জ্যিাকে সুলায়মা ন (আ) এর মজুর হিসেবে অধীনস্থ করে দিয়েছিলেন ৷ তিনি তাদেরকে যে কাজ
করার আদেশ ৷দিতেন, তা ৷র৷ সে কা ৷জই করত; এতে তারা গাফলতি ৩করতাে না বা অবাধ্যও হত
না ৷ অবশ্য যে ই অবাধ্য হত ও আনুপ৩ ব্র প্রত্যাহার করত তাকে তিনি দৃষ্টান্তমুলক শ স্তি
দিতেন ৷ তারা সুলায়মানের জন্যে নিম ণ করতে দুর্গ ৷অর্থ সুদৃশ্য প্রাসাদ
সভাকক্ষ ঠুাট্রুদ্বুঠুৰু,ষ্ট্রট্রু প্রাচীর পাত্রে উৎকীর্ণ ভাস্কর্য ৷ তখনকার শরীআতে তা বৈধ ছিল ৷
৷ন্নু ইবন আব্বাস বলেছেন, জিফানুন অর্থ মাটির গর্ত বা মাটির দ্বারা তৈরি র্চুপাত্রযা
’ আকারে হাউযের ন্যায় বড় ৷ মুজাহিদ, হাসান, কাতাদা, যাহ্হাক প্রমুখ মনীষীগণও অনুরুপ
বলেছেন ৷ জাওয়াব বহুবচন, এক বচনে জ৷ ৷বিয়াণ্ডু ন ৷ অর্থ হাওয যার মধ্যে পানি জমা থাকে ৷
কবি আশা বলেছেন:
অর্থ তুমি র্সাঝের বেলা মুহাল্লাক পরিবারের হ৷ ওযের পাড়ে উপস্থিত হবে, যা পানিতে
পরিপুর্ণ থাকে ৷ এ হাওযটি শায়খে ইরাকির হাওযের মত ৷ এবং চুল্লির
উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ ৷) এর ব্যাখায় ইকরামা , মুজাহিদ প্রর্মুখ বলেছেন, কুদুরুর রাসিয়াত
বলে চুল্লিতে স্থাপিত ডেগ বুঝানো হয়েছে ৷ অর্থাৎ এসব ডেগ সর্বদা সেখানে স্থাপিত থাকে,
কখনও নামিয়ে রাখা হয় না ৷ এ কথা বলার তাৎপর্য হচ্ছে, তিনি সর্বদা জিন ও ইনসানকে খাদ্য
সরবরাহ করতেন এবং তাদের প্রতি বদান্যতা প্রকাশ করতেন ৷
আল্লাহর রাণী : “(হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও ৷ আমার
রান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যরইি কৃতজ্ঞ ৷”) আল্লাহর বাণী ;
আর শয়তানদিগকে যারা সকলেই ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবৃরী ৷
অর্থাৎ কিছু সংখ্যক শয়তান জিনকে সুলায়মানের অধীন করে ৷;দয়৷ হয় ৷ যারা প্ৰাসাহৃ
অট্টালিকা নির্মাণে নিয়োজিত ছিল ৷ আর কিছু জিনৃকে তিনি সমুদ্রের তলদেশ থেকে মনি-ঘুক্তা
আহরণের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন, এরা যে কাজই করত ৷ “এবং শৃৎখলে আবদ্ধ আরও
অনেককে ৷ ” অর্থাৎ কিছু দুষ্ট জিন অবাধ হওয়ার কারণে শাস্তি স্বরুপ তাদেরকে দু’জন দু’জন
করে একত্রে শৃগ্রলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল ৷ উপরের বর্ণনায় যে সব জিনিসকে সুলায়মান
(আ) এর অধীনস্থ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর উপর তার শাসন ও নির্দেশ
কার্যকর ছিল ৷ এটাই হচ্ছে৩ তার সেই রাজতু ও কর্তৃতু, যার জন্যে তিনি আল্লাহর নিকট প্রার্থ্যা৷
করেছিলেন, যে তার পরে কিৎব৷ পুর্বে কেউই যেন আর তা না পা ষ্
ইমাম বুখ৷ ৷রী আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা ৷করেন, রাসু হ্ণ্হ (সা ) বলেছেন ; গত
রাত্রে নামায পড়ার সময় এক দুষ্ট জিন আমার নামায নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আমার প্ৰতি থুথু
নিক্ষেপ করে ৷ কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর প্রবল করে দেন ৷ আমি তাকে ধরে
ফেলেছিলাম এবং মসজিদের খুটির সাথে বেধে রাখতে চেয়েছিলাম ৷ তা করলে তোমরা সবাই
তাকে দেখতে পেতে ৷ কিন্তু ঐ সময় হযরত সুলায়মানের দোয়া আমার স্মরণ হল তিনি
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন:
“হে আমার পালনকর্তা, আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাকে এমন রাজতু দান কর, যা
আমার পরে আর কেউ পা ৷রে না ৷” (৩৮ সাদং ৩৫ ) তারপর আমি তাকে লাঞ্ছিত করেত তাড়িয়ে
দিলাম ৷ ইমাম মুসলিম ও নাসাঈ শা বী থেকে অনুরুপ বর্ণনা ৷করেছেন ৷ ইমাম মুসলিম
আবুদ দারদা (রা) থেকে বর্ণনা ৷করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) একদা সালাত আদায় করছিলেন ৷
আমরা শুনলাম, তিনি সালাতের মধ্যে বলছেন; ঠুটুছুা
আমি আল্লাহর কাছে তোমার থেকে পানাহ চা ৷,ই আমি তোমাকে আল্লাহর লা নণ্ডে তর অভিশাপ
দিচ্ছি ৷ রাসুলুল্লাহএ একথাটি তিন বার বললেন ৷ এরপর তিনি হাত সম্প্রসারিত করলেন, মনে
হল৩ তিনি কোন কিছু ধরতে যাচ্ছেন ৷ নামায শেষ হওয়ার পর আমরা বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ!
আমরা আপনাকে সালাতের মধ্যে এমন কথা বলতে শুনৃলাম, যা ইতিপুর্বে কখনও শুনিনি
আমরা আরও দেখলাম আপনি হাত বাড়িয়ে দিলেন ৷ তিনি বললেন, সালাতের মধ্যে আল্লাহর
দুশমন ইবলীস আগুনের হলকা নিয়ে এসে আমার মুখমণ্ডলে ছুড়ে মারতে চেয়েছিল তখন
আমি তিনবার এট্রু এা৷প্রুা,ন্; ৷ বলি ৷ এরপর আমি ব্লুংর্চু;৷ ৷ ণ্এ৷ ৷ ধ্৬ এট্রুড়ু;টু৷ ৷
বাক্যটিও তিনবার উচ্চারণ করি ৷ তাতেও সে পিছ৷ ৷লে৷ না ৷ অতঃপর আমি তাকে ধরার উদ্যোগ
নেই ৷ আল্লাহর কসম , আমাদের তাই নবী সুলায়মানের দোয়া যদি না থাকত তা হলে তাকে
বেধে রাখা হত এবং মদীনায় ছেলে যেয়েরা তাকে নিয়ে খেলা করত ৷ ইমাম নাসাঈও এ
ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম আহমদ আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) একদা
ফজরের সালাত আদায়ের জন্যে র্দাড়িয়েছিলেন ৷ আমিও তার পিছনে সালাতে শরীক ছিলাম চ
তিনি কিরাআত পড়ছিলেন; কিন্তু হঠাৎ কিরাআত জড়িয়ে যায় ৷ সালাত শেষে তিনি বললেন,
আজকের সালাতে আমার কিরাআত ইবলিস গুলিয়ে দেয় ৷ তোমরা যদি দেখতে পারতে তা
হলে বুঝতে পা রতে ৷ আমি৩ তার টুটি চেপে ধবি ৷৩ তার মুখ থেকে লাল৷ বেরিয়ে আসে ৷ এমনকি
আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তাঃনীিতে তার শীতলতা অনুভব করি ৷ আমার ভাই সুলায়মান (আ) এর
দােয়ার কথা ৷যদি মনে না পড়তো তা হলে মসজিদের খুটির সাথে আমি তাকে বেধে রাখতাম
এবং মদীনায় ছেলে যেয়েরা৩ ৷কে নিয়ে খেলা করতো ৷ অতএব, তোমরা চেষ্টা কর যাতে
সাল ৷ত আদায়ের সময় তোমার ও কিবলার মাঝে অন্য কেউ আড াল সৃষ্টি না করে ৷ আবু দাউদ
(র) ও এ হাদীস ভিন্ন সুত্রে উল্লেখ করেছেন ৷
বহু প্রাচীন ঐতিহাসিক লিখেছেন যে , হযরত সুলায়মান (আ)-এব এক হাজার শ্রী ছিলেন ৷
তাদের মধ্যে সাতশ ছিলেন স্বাধীন এবং তিনশত ৰ্বাদী ৷ কেউ কেউ এর বিপরীতে তিনশ’
স্বাধীন ও সাতশ’ বাদীয় কথা বলেছেন ৷ হযরত সুলায়মান (আ) ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও
সক্ষম পুরুষ ৷ ইমাম বুখারী আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স)
বলেছেন : একদা হযরত সুলায়মান ইবন দাউদ (আ) বলেছিলেন, আজ রাত্রে আমি সত্তরজন
শ্ৰীর কাছে যাব ৷ প্রত্যেক ত্রীর গর্ভে একজন করে পুত্র সন্তান জন্ম হবে এবং তার ৷ সকলেই অশ্ব
চালনায় পারদর্শী হবে ৷ আল্লাহ্র রাস্তায়৩ ৷রা জিহাদ করবে ৷ সুলায়মানের কাছে অবস্থা নক৷ ৷রী
একজন তখন বলেছিল, ইনশা আল্লাহ’ (আল্লাহ যদি চান); কিন্তু সুলায়মান (আ) ইনশা আল্লাহ
বলেন নি ৷ ফলে সে রাতে কোন ত্রীই সন্তান ধারণ করেন নি ৷ মাত্র একজন শ্রী পরে একটি
অসম্পুর্ণ সন্তান প্রসব করেন ৷ রাসুলুল্লাহ (সা ) বলেন, তিনি যদি ইনৃশা আল্লাহ’ বলতেন , তবে
সকল ত্রী থেকেই পুত্র সন্তান জন্ম হত এবং তারা আল্লাহ্ব রাস্তায় জিহাদ করত ৷ শুআয়ব ও
ইবন আবী যিনাদ সত্তরের স্থলে নব্বইজন স্তীর কথা বর্ণনা করেছেন এবং এটাই বিশুদ্ধতম ৷
ইমাম বুখারী একাই এই সুত্রে উক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷ আবু ইয়াল৷ থেকে আবু
হুরায়রা (রা) সুত্রে বর্ণিত হাদীছে একশত’ ত্রীর কথা উল্লেখিত হয়েছে ৷
এই শেষোক্ত বর্ণনাটির সনদ সহীহ্র শর্ত পুরণ করে, যদিও অন্য কেউ এ সুত্রে
হাদীসটি বর্ণনা করেন নি ৷ ইমাম আহমদেরও আবু হুরায়রা (রা)-এব অনুরুপ একটি বর্ণনা
রয়েছে ৷
ইমাম আহমদের অপর এক বর্ণনায় আছে যে, সুলায়মান (আ) ইনৃশ৷ আল্লাহ বলতে ভুলে
গিয়েছিলেন ৷ রাসুল (সা) বললেন, তিনি যদি ইনৃশ৷ আল্লাহ বলতেন, তা হলে তার যে লেক
নিয়াত এভাবে নিম্ফল হয়ে যেত না ৷ বরং তার ইচ্ছাই পুরণ হতো ৷ বুখারী ও মুসলিমে আবদুর
রায্যাক সুত্রে এভাবেই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ৷ ইসহাক ইবন বিশ্ব কর্তৃক আবু হুরায়র৷ (বা)
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৯-
সুত্রে অপর এক বর্ণনায় হযরত সুলায়মান (আ) এর চ’ বাদীর উল্লেখসহ উক্ত
ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে ৷
নবী করীম (সা) ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, সেই সত্তার কসম , হার হাতে আমার জীবন,
যদি হযরত সুলায়মান (আ) ইন্শা আল্লাহ বলতেন তা হলে যেভাবে তিনি বলেছিলেন সেভাবেই
অশ্বারোহী পুত্র সন্তান জন্ম হত এবং আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করত ৷ এই হাদীছের সনদ
দুর্বল ; কেননা ইসহাক ইবন বিশ্ব হাদীছ বর্ণনায় বিশ্বস্ত নন, তিনি মুনকারুল হাদীছ ৷ তাছাড়া
এটি (সংখ্যার ব্যাপারে) সহীহ হাদীছের পরিপন্থী ৷ তবে হযরত সৃলায়মান (আ)-এর ছিল
বিশাল সাম্রাজ্য ৷ অসংখ্য সৈন্য-সামম্ভ ৷ বিভিন্ন প্রজাতির সেনাবাহিনী এবং রাজ্য পরিচালনার
অন্যান্য সামগ্রী যা আল্লাহ তীর পুর্বেও কা ৷উকে দেননি এবং পরেও কাউকে ওদননি ৷ যেমন৩ তিনি
বলেছিলেন :; আমাকে সবকিছু দেয়৷ হয়েছে ( ২৭ নামল: ১৬)
সুলায়মান বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য
দান করুন যা আমার পরে আর কেউ পেতে পারবে না, নিশ্চয় আপনি মহাদাত৷ (৩৮ সাদ
৩৫) সে মতে আল্লাহ সুলায়মানের প্রার্থিভ্র সবকিছুই দিয়েছিলেন ৷ রাসুলুল্লাহ (না ) আমাদেরকে
তা জানিয়ে দিয়েছেন ৷৩ তার প্ৰতি প্রদত্ত অনুগ্রহের কথা আল্লাহ কুরআন মজীদেও নিম্নোক্ত ভাবে
উল্লেখ করেছেন :
এগুলো আমার অনুগ্রহ ৷ অতএব এগুলো কাউকে দান কর অথবা নিজে রেখে দাও এর
কো ন হিসাব দিতে হবে না (৩৮ সাদ৪ ৩৯) ৷ অর্থাৎ যাকে ইচ্ছা তাকে দিতে পার এবং যাকে
ইচ্ছা নাও দিতে প ব ৷ এতে তোমাকে কোন জওয়াবদিহী করতে হবে না ৷ অন্য কথায় তুমি
ফেইভাবে ইচ্ছা সম্পদ ব্যবহার ও খরচ করতে পার; কেননা তুমি যা-ই করবে তা ই আল্লাহ
তোমার জন্যে বৈধ করে দিয়েছেন ৷ এ জন্যেও তোমার কোন জবাব দিতে হবে না৷ যিনি একই
সাথে নবী ও সম্রাট হন-৩ তার মর্যাদা এ রকমই হয় ৷ পক্ষা ৷ম্ভার যিনি কেবল বান্দা ও রাসুল হন,
তার মর্যাদা এ রকম হয় না ৷ কেননা বরং আল্লাহ যেভাবে অনুমতি দেন সেভাবেই তাকে কাজ
করতে হয় ৷ আল্লাহ তাআলা আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে উক্ত দুই অবস্থানের
( ৷) যে কোন একটিকে গ্রহণ করার ইখতিয়ার
দিয়েছিলেন ৷ তিনি বান্দা ও রাসুল হওয়াকেই বেছে নেন ৷ কোন কোন বর্ণনায় আছে যে,
রাসুলুল্লাহ (সা) এ ব্যাপারে জিবরাঈল (আ) এর নিকট পরামর্শ চান ৷ জিবরাঈল তাকে বিনয়ী
পথ অবলম্বনের দিকে ইঙ্গিত করেন ৷
সে মতে তিনি বান্দা ও রাসুল হওযাকেই পছন্দ করেন ৷ অবশ্য নবী (না)-এর পরে তার
উম্মতের মধ্যে খিলাফত ও বাদশাহী উভয়টাই চালু রেখেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত
থাকবে ৷ সুতরাৎ৩া ৩ংার উম্মতে র একটি দল কিযামত পর্যন্ত বিজয়ী হয়ে থাকবে ৷
হযরত সুলায়মান (আ) কে অাল্লাহ তা অ লা দুনিয়ার জীবনে যে সব অনুগ্রহ দান করেছেন
তা ৩ার উল্লেখ শেষে পরকালীন জীবনে যে সব অনুগ্রহ, পুরস্কা র সম্মান ও ভৈনকট্য দায়ের প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেনতারও উল্লেখ করেছেন যথাঃ , ৷টু
-নিশ্চয়ই তার জন্যে আমার কাছে রয়েছে ভৈনকটোর মর্যাদা ও শুভ পরিণতি ৷
(৩৮ সাদ : ৪০)
হযরত সুলায়মান (আ) এর রাজত্বকাল, আয়ু ও মৃত্যু
এ প্রসংগে আল্লাহ্র বাণীং
“যখন আমি সুলায়মানের মৃতুা ঘটালাম তখন জিনদেরকে তার মৃত ত্যুর বিষয় জানাল,
কেবল মাটির পোকা যা তার লাঠি খাচ্ছিল ৷ যখন সে পড়ে গেল তখন জিনেরা বুঝতে পারল
যে, ওরা যদি অদৃশ্য বিষয় অবগত থাকত তা হলে ওরা লাঞ্চুনাদায়ক শাস্তিতে আবদ্ধ থাকত
না ৷” (৩৪ সাংবা : ১৪)
ইবন জারীর ইবন আবী হাতিম ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ ইবন আব্বাস (রা)-এর
বরাতে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন ং হযরত সুলাযমান যখনই সালাত আদায়
করতেন, তখনই সম্মুখে একটি চারা গাছ দেখতে পেতে তন ৷ তিনি গাছের কাছে তার নাম
জিজ্ঞেস করতেন ৷ গাছ নিজেরা না ম বলে দিত ৷ত তারপরে জিজ্ঞেস করতেন, কি কাজের জন্যে
তোমার সৃষ্টি ? যদি রোপন করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তা হলে তা রোপন করা হত ৷ আর যদি
ঔষধ হিসেবে হয়ে থাকে, তবে ঔষধ উৎপাদনে লাগান হত ৷ এক দিন তিনি সালাতে রত
ছিলেন ৷ সহসা সম্মুখে একটি বৃক্ষ-চারা দেখেন ৷ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম ? সে বলল,
আ-ল খারুব ৷ তিনি বললেন, কি উদ্দেশ্যে ৫ত তামার সৃষ্টি ? সে বলল, এই বায়তুল
মুকাদ্দাস ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ৷ তখন সুলায়মান (আ) দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ! জিনদের
কাছে আমার মৃত্যুর অবন্থাটা গোপন রাখুন, যাতে ৩মানুষ জিনরা যে পায়ের জানে তা উপলব্ধি
করতে না পারে ৷ অতংপর সুলায়মান (আ) ঐ বৃক্ষ-চারা দ্বারা এাকটি লাঠি তৈরি করেন এবং
এক বছর যাবত উহাতে ৩তর করে র্দাড়িয়ে থাকেন ৷ ও দিকে জিনরা পুর্ণ উদ্যমে কাজ চালিয়ে
যেতে থাকে ৷ অবশেষে পোকা লাঠিটি খেয়ে শেষ করে ফেলে ৷ এ ঘটনা থেকে মানুষ
সৃ ংপষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারল যে জিনরা গায়েবের খবর জানে না ; জানলে এক বছর পর্যন্ত
এ লাঞ্চুনাদায়ক শাস্তি তারা কিছুতেই ভোগ করত না ৷
সাঈদ ইবন জুবায়র বলেন, ইবন আব্বাস (বা) আযাতটিকে এভাবেই পড়তেন
তখন জিনরা পোকার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল এবং তাদেরকে
পানি দান করল ৷ ইবন জারীর বলেন, আতা আল-খুরাসানীর এ বর্ণনায় অনেক আপত্তি আছে ৷
ইবন আসাকির এ ঘটনাটি ইবন আব্বাস (বা) থেকে মাওকুহ্ড্ডাভৈ,ব বর্ণনা করেছেন, যা
অনেকটা যথার্থ বলে মনে হয় ৷ সৃদদী হযরত সুলায়মড়ান (আ ) এর ইতিহাস বর্ণনা প্ৰসংগে ইবন
আব্বাস ও ইবন মড়াসউদসহ কতিপয় সাহারা থেকে বংনাি করেছেন যে, সৃলায়মড়ান (আ) অন্যান্য
কাজ-কর্য থেকে অব্যড়াহতি নিয়ে বায়তুল ঘুকাদ্দাসে কখনও কখনও একটানা এক বছর , দু’বছর,
এক মাস, দু’মাস কিৎবা এর চেয়ে বেশী কিৎবা এর চেয়ে কম সময় অবস্থান করতেন ৷ গুর
খাদ্য ও পানীয় মসজিদেই সরবরাহ করা হত ৷ যে বারে তিনি মসজিদে প্রবেশ করার পর
ইনতিকাল করেন যে বারে এক নতুন ঘটনা দেখতে পান ৷ প্ৰত্যহ সকাল বেলা তিনি দেখতেন
বায়তুল মুকাদ্দাসের অভ্যন্তরে একটি বৃক্ষ উদগত হচ্ছে ৷ কাছে এসে নাম জিজ্ঞেস করলে বৃক্ষটি
তার নাম বলে দিত ৷ যদি তা রোপন করার উদ্দেশ্যে হতো তা হলে রোপন করতেন ৷ যদি
ঔষধরুপে ব্যবহারের জন্যে হতো তা হলে বলে দিত আমি ঔষধ-বৃক্ষ ৷ যদি অন্য কোন
উদ্দেশ্যে জন্মাত তবে বৃক্ষ তাও বলে দিত এবং তাকে সে কাজেই ব্যবহার করা হত ৷ অবশেষে
এক দিন এমন এক বৃক্ষের জন হল, যার নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমার নাম খারুবা ৷
সুলায়মান (আ) জানতে চাইলেন, তোমার সৃষ্টি কী উদ্দেশ্যে ? বৃক্ষঢি বলল, এই মসজিদ ধ্বংস
করার জন্যে ৷ সুলায়মান (আ) বললেন, আমি জীবিত থাকতে আল্লাহ এ মসজিদ ধ্বংস করবেন
না ৷ বরং তুমি এমন একটি বৃক্ষ যার উপর ভর দেয়া অবস্থায় আমার মৃত্যু হবে এবং বায়তুল
মুকাদ্দাসও ধ্বংস হবে ৷ অতঃপর তিনি বৃক্ষচারাটি সেখান থেকে তুলে মসজিদের আৎগিনার
বাগানে রোপণ করেন ৷ এরপর তিনি মসজিদের মিহ্রাবে প্রবেশ করে লাঠির উপর হেলান দিয়ে
সালাতে দণ্ডায়মান হন ৷ এ অবস্থায় তার ইনতিকাল হয়ে যায়; কিন্তু কর্মরত জিন্রা তা টের
পেলো না ৷ তারা নবীর নির্দেশ মতে মসজিদের কাজ অব্যাহত রাখে ৷ তাদের অম্ভরে সর্বদা এ
ভয় ছিল যে, কাজে র্কাকি দিলে তিনি মিহ্রাব থেকে বেরিয়ে এসে শাস্তি দিবেন ৷ অবশ্য
কখনও কখনও জিনগুলাে মিহ্রাবের পাশে এসে একত্রিত হত ৷ মিহ্রাবের সম্মুখে ও পশ্চাতে
জানালা লাগান ছিল ৷
কোন জিন পলায়নেব ইচ্ছে করলে বলত , আমি কি এক দিকে প্রবেশ করে অন্যদিকে বের
হয়ে যাওয়ার মতো চালাক নই? সুলায়মড়ান (আ) মিহ্রাবের মধ্যে থাকা অবস্থায় কোন জিন তার
দিকে তাকালেই সংগে সংগে সে পুড়ে যেত ৷ একবার কর্মরত জিনৃদের একজন মিহ্রাবে প্রবেশ
করে সুলায়যান (আ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করে গেল , কিন্তু তার কোন আওয়াজ শুনতে
পেল না ৷ পুনরায় যে ঐ পথে প্রত্যাবর্তন করল, তখনও কোন সাড়া-শব্দ পেল না ৷ আবার সে
ঘরে ঢুকলো কিন্তু পুড়ল না, তখন সে সুলায়মান (আ)-এর প্রতি তাকিয়ে দেখল, তার মৃতদেহ
পড়ে রয়েছে ৷ এবার জিনটি বেরিয়ে এসে লোকজনকে জানাল যে, সুলায়মানের মৃত্যু হয়েছে ৷
লোকজন দরজা খুলে মিহরাবে প্রবেশ করে (দখল ঘটনা সত্য ৷৩ তারা তার দেহকে বাইরে বের
করে আনল ৷ তারা দেখতে পেল যে,৩ তার লাঠিটি কীটে থেয়ে ফেলেছে ৷ কুরআন মজীদে
ওা১০ শব্দ এসেছে ৷ এটা হাবশী ভাষার শব্দ অর্থ লাঠি ৷ তিনি করে, কত দিন আগে মারা
গেদু ছেন তা জানার কোন উপায় ছিল না ৷ তাই মৃতু ত্যুকাল বের করার উদ্দেশ্যে তারা একটি
কীটকে একটি লাঠির পায়ে ছেড়ে দেয় ৷ কীটটি একদিন এক রাত পর্যম্ভ লাঠিটি যেতে থাকে ৷
এবার তারা হিসেব বের করল যে, এই হারে একটা লাঠি খেতে এক বছর লাগে ৷ তাতে তারা
বুঝতে পারে যে, তিনি এক বছর পুর্বেই ইনতিকাল করেছেন ৷ যা হোক, হযরত সুলায়মান
(আ)-এর মৃত্যুর পর পুর্ণ একটি বছর পর্যন্ত জিনৃব৷ হাড়ভাৎগ৷ খার্টুনী খাটে ৷ মানুষ তখন পুর্বের
ধারণা পরিবর্তা করে নতুনভাবে বিশ্বাস করতে থাকে যে, জিনৃরা গায়ের জানে এ কথা সর্বৈব
মিথ্যা ৷৩ তারা যদি সত্যিই পায়ের জানত তা হলে সুলায়মান (আ ) এর মৃত্যু সম্পর্কে অবশ্যই
অবগত হত এবং পুর্ণ এক বছর পর্যন্ত শাস্তিমুলক কাজে বি ছু তই আ বদ্ধ থাকতে ৷ না ৷ এ কথাই
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন :
আমি যখন সুলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম তখন জিনদেরকে তার মৃত্যু বিষয় জানাল
কেবল মাটির পোকা, যা সৃলায়মানের লাঠি খাচ্ছিল ৷ যখন সুলায়মান পড়ে গেল তখন
জিংনর৷ বুঝতে পারল যে, তারা যদি অদৃশ্য বিষয়ে অবগত থাকত তা হলে লাঞ্চুনাদায়ক
শাস্তিতে আবদ্ধ থাকত না ৷
আয়াতে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, অর্থাৎ জিনৃব৷ পায়ের জানার যে দাবি করত তা মানুষের
কাছে ফীস হয়ে গেল ৷ এরপর জিনৃর৷ ঐ পােকাটির কাছে গিয়ে বলল তুমি যদি খাদ্য দ্রব্য
আহার করতে তবে আমরা তোমাকে উৎকৃষ্ট খাদ্য সরবরাহ করতাম ৷ যদি তুমি পানীয় পান
করতে তার উন্নতমানের শরাব পান করাত ৷ম ৷ কিন্তু এগুলো যেহেতু তোমার আহার্য নয়, তাই
আমরা তোমাকে পানি ও কাদ৷ দিচ্ছি ৷ বর্ণনাক৷ রী বলেন, এরপর থেকে উই পোকাটি যেখানেই
অবস্থান করত জিনর৷ সেখানে পানি ও মাটি পৌছিয়ে দিত ৷ এ কারণেই কাঠের ভিতরে যে মাটি
দেখা যায় তা বন্তুতঃ সেই উই পােকার কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে জিনৃরাই পৌছিয়ে দিয়ে থাকে ৷
এই বর্ণনার মধ্যে কিছু ইসরাঈলী বিবরণ আছে যাকে সত্য বা মিথ্যা কােনটাই বলা যায় না ৷
অ আবু দ উদ (র) তার গ্রন্থে কদর অধ্যায়ে আ’মাশের সুত্রে খায়ছাম৷ থেকে বর্ণনা
করেন৪ হযরত সুলায়মান ইবন দ উদ মালাকুল মওত কে বলেছিলেন, আপনি যখন আমার রুহ্
কবয করবেন, তার পুর্বে আমাকে জ নিয়ে দেবেন ৷ ফিবিশতা বললেন, বিষয়ে আপনার
থেকে আনা ৷র অধিক কিছু জান নানেই ৷ বন্তু৬ : আমার নিকট একটি লিখিত পত্র দেয়৷ হয় ৷ যার
মৃত্যু হবে, ঐ পত্রে তার নাম লেখা থাকে ৷ বংনিঃাকারী বলেন যে, সুলায়মান (আ) মালাকুল
মওতকে বলেছিলেন, আপনি যখন আমার রুহ কবয করার আদেশ পাবেন তখন পুর্বত্বহ্নে
আমাকে জ নিয়ে দেবেন ৷ একদা মালাকুল মওত এসে সুলায়মান (আ) কে জানালেন, আপনার
রুহ্ কবয করার জন্যে আমি আদিষ্ট হয়েছি আরাল্প সময় বাকী আছো
তিনি তৎক্ষণাৎ দুর্মদ শয়৩ান জিনৃদেরকে ডেকে অবিলম্বে একটি প্রাসাদ নিন ণ করার
আদেশ দেন ৷ নির্দেশ মতে তারা একটি কা চের প্রাসাদ ভৈ৩ রি করল ৷ এতে কোন দরজা জানালা
ছিল না ৷ সুলায়মান (আ) ঐ কাচের ঘরে লাঠির উপর ৫হলান দায় সালাতে নগ্ন হন ৷
ইত্যবসরে মালাকুল মওত তথায় প্রবেশ করে সুলায়মানের রুহ কবয করে নেন ৷ অবশ্য র্তার
মৃত দেহ লাঠির উপর হেলান দেয়া অবন্থায়ই থেকে যায় ৷ সুলায়মান (আ) মালাকুল মওতকে
র্ফাকি দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে র্বাচাব জন্যে এই কৌশল অবলম্বন করেন নি ৷ জিনৃরা তার
সম্মুখেই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল ৷ সুলায়মান (আ) এর প্রতি তারা বারবার তাকিয়ে দেখত
এবং মনে করত, তিনি৫ তা জীবিত ই আছেন ৷ পরে আল্লাহ তার লাঠির কাছে একটি উই পোকা
পাঠ ন ৷ উই পােকাটি লাঠির গায়ে লেগে যেতে শুরু করে ৷ যখন লাঠির অভ্যম্ভর তাগ খেয়ে
শুন্য করে ফেলে তখন তা দুর্বল হয়ে যায় ৷ সুলায়মানের তার সহ্য করতে না পেরে লাঠিটি
ভেত্পে যায় এবং তার মৃতদেহ মাটিতে পড়ে যায় ৷ জিন্রা এ অবস্থা দেখে কাজ ছেড়ে চলে
যায় ৷
আয়াতে একথাই বর্ণনা করা হয়েছে ৷ বর্ণনাকারী আসবাগ বলেন, আমি বিভিন্ন সুত্রে
জানতে পেয়েছি যে, উই পােকাটি এক বছর যাবত লাঠিটি খাওয়ার পর সুলায়মান (আ)
মাটিতে পড়ে যান ৷ প্রাচীন অনেক লেখকই এই একই কথা বলেছেন ৷
ইসহাক ইবন বিশৃর মুহাম্মদ ইবন ইয়হাকের সুত্রে যুহ্রী প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেন যে,
হযরত সুলায়মান (আ) বায়ান্ন বছর জীবিত ছিলেন এবং চল্লিশ বছর রাজতু করেন ৷ কিন্তু
ইসহাক আবু রওক ইকরামার সুত্রে ইবন আব্বাস (রা ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তার বাজতু
বিশ বছর স্থায়ী ছিল ৷ ইবন জারীর লিখেছেন, সুলায়মান (আ)-এর বয়স মোটামুটি পঞ্চাশ
বছরের কিছু বেশী ৷
কথিত আছে, হযরত সুলায়মড়ান (আ) তার রাজত্বের চতুর্থ বছরে বায়তু ল মুকাদ্দাস নির্মাণ
শুরু করেন ৷ সুলায়মানের পরে তার পুত্র রুহবিআম, সতে তর বছর রাজতু করেন ৷ ঐতিহাসিক
ইবন জারীর লেখেন যে, এরপর বনী ইসরাঈলের রাজতৃ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায় ৷
হযরত দাউদ ও ইয়াহয়া (আ) এর মধ্যবর্তী
ইসরাঈল বংশীয় নবীগণের ইতিহাস
উপরোক্ত সময়ের মধ্যে আগমনকারী নবীদের মধ্যে হযরত শাইয়া ইবন আমসিয়া
( ৰু !) অন্যতম (বাইবেলের ভাষায় আমােসোর পুত্র যিশাইয়) মুহাম্মদ ইবন ইসহাকের
মতে, তার আবির্ভাব হয়েছিল যাকারিয়া ও ইয়াহয়া (আ)-এর পুর্বে ৷ তিনি সেই সব নবীর
একজন, যারা হযরত ঈসা ও মুহাম্মদ (সা) এর আগমনের সুসংবাদ প্রচার করেছিলেন ৷ ঐ
সময়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে বনী ইসরাঈলের শাসক ছিলেন রাজা হিযকিয়া ৷ যে কোন সংস্কার ও
সংশোধনমুলক কাজে তিনি নবী শাইয়ার আদেশ-নিষেধ মেনে চলতেন ৷ বনী ইসরাঈলের মধ্যে
তখন ব্যাপক হারে দুর্নীতি , পাপাচার ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে ৷ তাদের রাজা অসুস্থ
হয়ে পড়েন এবং তার পারে একটি ক্ষত সৃষ্টি হয় ৷ এ সুযোগে ব্যাবিলনের রাজা সড়ানহড়ারীব
বায়তুল মুকাদ্দাস আক্রমণে উদ্যোগী হয় ৷ ইবন ইসহাক (র) বলেছেন, এ অভিযানে ছয় লক্ষ
পতাকাবাহী সৈন্য অংশগ্রহণ করে ৷ তাতে লোকজন অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ৷ রাজা
হযরত শাইয়ার নিকট জিজ্ঞেস করেন যে, সড়ানহারীব ও তার সৈন্যবাহিনী সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা কী ওহী প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, তাদের সম্পর্কে আমার নিকট কোন প্রকার
ওহী আসেনি ৷ কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর হযরত শাইয়ার নিকট এই মর্মে ওহী আসে যে
অল্প দিনের মধ্যে রাজার মৃত্যু হবে ৷ সুতরাং তিনি যেন তার পছন্দমত কাউকে স্থলাভিষিক্ত
করেন ৷ নবীর মাধ্যমে এ সংবাদ পেয়ে রাজা কিবলামুখী হয়ে সালাত ও তাসবীহ্ পাঠ করে
অত্যন্ত ভারাক্রাম্ভ হৃদয়ে আল্লাহর প্ৰতি পুর্ণ আস্থা রেখে ধৈর্যের সাথে কেদে কেদে এই দোয়া
করেন :
হে আল্লাহ, মহা প্রতিপালক, রাজাধিরাজ, দয়াময়, পরম দয়ালু হে ঐ সত্তা, র্যাকে তন্দ্র৷ বা
নিদ্রা স্পর্শ করে না ৷ আমার জ্ঞান, আমার কার্যাবলী ও বনী ইসরাঈলদের উপর আমার
ন্যায়-বিচারের দিকে লক্ষ্য করে আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন ৷ আমার এ যা কিছু কৃতিতৃ ,
সবই আপনার করুণার দান ৷ এ সম্পর্কে আপনি সর্বাধিক অবগত ৷ আমার ভিতর ও বাছির সব
আপনাতে ন্যস্ত ৷