ইসলামী জীবন বিধান তত্ত্ব ও তথ্যগতভাবে দুটি মৌলিক বুনিয়াদের উপর স্থাপিত। একটি পবিত্র কোরআন, অপরটি রাসূলের সুন্নাহ বা হাদীস।
আল্লাহর বাণী আল-কোরআন ইসলামের একটি কাঠামো উপস্থাপন করে আর রাসূলের হাদীস সে কাঠামোর উপর একটি পূর্ণাঙ্গ ইমারত গড়ে তোলে। তাই ইসলামী জীবন বিধানে পবিত্র কোরআনের পরই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের হাদীসের স্থান।
হাদীসেই ইসলামী জীবন-বিধানের বিস্তৃত রূপরেখার প্রতিফলন ঘটেছে। এ কারণে পবিত্র কোরআনের শিক্ষা ও মর্ম উপলব্ধি এবং তদনুসারে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গঠনের জন্য হাদীসের বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না।
পবিত্র কোরআনের শিক্ষানুসারে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের জীবন ও কর্মধারা মুসলমানদের জন্য ‘উসয়াতুন হাসানাহ’ বা সর্বোত্তম আদর্শ। মুসলমানদের জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির সকল অঙ্গনেই এই আদর্শের পরিধি বিস্তৃত। আর এই আদর্শের সঠিক ও নির্ভুল বিবরণ সংরক্ষিত হয়েছে হাদীসের বিশাল ভাণ্ডারে। কাজেই প্রকৃত মুসলিমরূপে জীবন যাপন ও সামগ্রিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য হাদীসের ব্যাপকতর অধ্যয়ন এবং এর বিশুদ্ধতা ও প্রমাণিকতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা একান্তই আবশ্যক। হাদীস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন না করা প্রকৃতপক্ষে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকারই নামান্তর।
হাদীস (حَدِيْث) এর শাব্দিক অর্থ: নতুন; প্রাচীন ও পুরাতন-এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যেসব কথা, কাজ ও বস্তু পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস। এর আরেক অর্থ হলো: কথা।
ফক্বীহগণের (ইসলামি স্কলার) পরিভাষায় নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ হিসেবে হাদীসকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
১. ক্বওলী হাদীস: কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা বিবৃত হয়েছে তাকে ক্বওলী (বাণী সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।
২. ফে‘লী হাদীস: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতিনীতি পরিস্ফুটিদ হয়েছে। অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফে’লী (কর্ম সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।
৩. তাকরীরী হাদীস: সাহাবীগণের যে সব কথা বা কাজ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের অনুমোদন ও সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরীয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। অতএব, যে হাদীসে এ ধরনের কোন ঘটনার বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাকে তাকরীরী (সমর্থন মূলক) হাদীস বলে।
সুন্নাহ (السنة): হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ। (السنة) সুন্নাহ/সুন্নাত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম অবলম্বন করতেন তাকে সুন্নাহ/সুন্নাত বলা হয়। অন্য কথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম প্রচারিত মহান আদর্শই সুন্নাত বা সুন্নাহ। কোরআন মাজিদে মহত্তম ও সুন্দরতম আদর্শ (أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ) বলতে এই সুন্নাতকেই বুঝানো হয়েছে।
খবর (خبر): হাদীসকে আরবী ভাষায় খবরও (خبر) বলা হয়। তবে খবর শব্দটি হাদীস ও ইতিহাস উভয়টিকেই বুঝায়।
আছার (أثر ): আছার শব্দটিও কখনও কখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের হাদীসকে নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকেই হাদীস ও আছার এর মধ্যে কিছু পার্থক্য করে থাকেন। তাঁদের মতে- সাহাবীগণ থেকে শরীয়াত সম্পর্কে যা কিছু উদ্ধৃত হয়েছে তাকে আছার বলে।
ইলমে হাদীসের কতিপয় পরিভাষা:
সাহাবী (صحابى): যিনি ঈমানের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের সাহাবী বলা হয়।
তাবে‘ঈ (تابعى) : যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের কোন সাহাবীর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবে‘ঈ বলা হয়।
তাবে–তাবে‘ঈ (تابعى تابع) : যিনি কোন তাবে‘ঈ-এর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবে-তাবে‘ঈ বলা হয়।
মুহাদ্দিস (محدث) : যিনি হাদীস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলা হয়।
শায়খ (شيخ) : হাদীসের শিক্ষাদাতা রাবীকে শায়খ বলা হয়।
শায়খান (شيخان) : সাহাবীগণের মধ্যে আবূ বাকার (রদ্বিয়াল্লাহি আনহু) ও উমার (রদ্বিয়াল্লাহি আনহু)-কে একত্রে শায়খান বলা হয়। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এবং ফিক্বহ-এর পরিভাষায় ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) ও আবূ ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে একত্রে শায়খান বলা হয়।
হাফিয (حافظ) : যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্তসহ এক লাখ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিয বলা হয়।
হুজ্জাত/হুজ্জাহ (حجة) : অনুরূপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হুজ্জাত/হুজ্জাহ বলা হয়।
হা-কিম (حاكم) : যিনি সব হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাকে হা-কিম বলা হয়।
রিজাল (رجال) : হাদীসের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলে। যে শাস্ত্রে রাবীগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাকে আসমাউর-রিজাল বলা হয়।
রিওয়ায়াত/রিওয়ায়াহ (رواية): হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত/রিওয়ায়াহ বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়াত/রিওয়ায়াহ বলা হয়। যেমন- এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়াত/রিওয়ায়াহ (হাদীস) আছে।
সনদ (سند): হাদীসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
মতন (متن): হাদীসের মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।
মারফূ (مرفوع): যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফূ হাদীস বলে।
মাওক্বূফ (موقوف) : যে হাদীসের বর্ণনা-সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে, অর্থাৎ যে সনদসূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওক্বূফ হাদীস বলে। এর অপর নাম আছার।
মাক্বতূ (مقطوع): যে হাদীসের সনদ কোন তাবে‘ঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মাক্বতূ হাদীস বলা হয়।
তা‘লীক্ব (تعليق): কোন কোন গ্রন্থকার হাদীসের পূর্ণ সনদ বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এরূপ করাকে তা‘লীক্ব বলা হয়।
মুদাল্লাস (مدلس): যে হাদীসের রাবী নিজের প্রকৃত শায়খের (উস্তাদের) নাম উল্লেখ না করে তার উপরস্থ শায়খের নামে এভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই উপরস্থ শায়খের নিকট তা শুনেছেন অথচ তিনি তাঁর নিকট সেই হাদীস শুনেননি- সে হাদীসকে মুদাল্লাস হাদীস এবং এইরূপ করাকে ‘তাদলীস’ আর যিনি এইরূপ করেন তাকে মুদাল্লীস বলা হয়।
মুদ্বতারাব (مضطرب): যে হাদীসের রাবী হাদীসের মতন ও সনদকে বিভিন্ন প্রকারে বর্ণনা করেছেন সে হাদীসকে হাদীসে মুদ্বতারাব বলা হয়। যে পর্যন্ত না এর কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভবপর হয়, সে পর্যন্ত এই হাদীসের ব্যাপারে অপেক্ষা করতে হবে অর্থাৎ এই ধরনের রিওয়ায়াত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
মুদরাজ (مدرج): যে হাদীসের মধ্যে রাবী নিজের অথবা অপরের উক্তিকে অনুপ্রবেশ করিয়েছেন, সে হাদীসকে মুদরাজ এবং এইরূপ করাকে ‘ইদরাজ’ বলা হয়।
মুত্তাসিল (متصل): যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষিত আছে, কোন স্তরেই কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি তাকে মুত্তাসিল হাদীস বলে।
মুনক্বতি’ (منقطع): যে হাদীসের সনদে ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি, মাঝখানে কোন এক স্তরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে, তাকে মুনক্বতি’ হাদীস, আর এই বাদ পড়াকে ইনক্বিতা’ বলা হয়।
মুরসাল (مرسل): যে হাদীসের সনদে ইনক্বিতা’ শেষের দিকে হয়েছে, অর্থাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবে‘ঈ সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর উল্লেখ করে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।
মু‘আল্লাক্ব (معلق) : সনদের ইনক্বিতা’ প্রথম দিকে হলে, অর্থাৎ সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পড়লে তাকে মু‘আল্লাক হাদীস বলা হয়।
মু‘দাল (معضل): যে হাদীসে দুই বা ততোধিক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বাদ পড়েছে তাকে মু‘দাল হাদীস বলে।
মুতাবি ও শাহিদ (و شاهد متابع): এক রাবীর হাদীসের অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদীস পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় রাবীর হাদীসকে প্রথম রাবীর হাদীসের মুতাবি বলা হয়। যদি উভয় হাদীসের মূল রাবী অর্থাৎ সাহাবী একই ব্যক্তি না হয় তবে দ্বিতীয় ব্যক্তির হাদীসকে শাহিদ বলে। আর এইরূপ হওয়াকে শাহাদাত/শাহাদাহ বলে। মুতাবা‘আত/মুতাবা’আহ ও শাহাদাত/শাহাদাহ দ্বারা প্রথম হাদীসটির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মা‘রূফ ও মুনকার (معروف و منكر): কোন দুর্বল রাবীর বর্ণিত হাদীস অপর কোন মাক্ববূল (গ্রহণযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী হলে তাকে মুনকার বলা হয় এবং মাক্ববূল রাবীর হাদীসকে মা‘রূফ বলা হয়।
সহীহ (صحيح) : যে মুত্তাসিল হাদীসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবত (ধারণ ক্ষমতা) গুণসম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষত্রুটি ও শাযমুক্ত তাকে সহীহ হাদীস বলে।
হাসান (حسن) : যে হাদীসের মধ্যে রাবীর যাবত (ধারণ ক্ষমতা) এর গুণ ব্যতীত সহীহ হাদীসের সমস্ত শর্তই পরিপূর্ণ রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়। ফক্বীহগণ সাধারণত সহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরীয়াতের বিধান নির্ধারণ করেন।
য‘ঈফ (ضعيف ) : যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন সেটিকে য‘ঈফ হাদীস বলে।
মাওযূ ( موضوع ) : যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ হাদীস বলে।
রাবীর সংখ্যা বিচারে হাদীস প্রধানত দু‘প্রকার। যথা:
১. মুতওয়াতির (متواتر) ও
২. আহাদ (أحاد)।
১. মুতওয়াতির (متواتر): বৃহৎ সংখ্যক রাবীর বর্ণিত হাদীস, মিথ্যার ব্যাপারে যাদের উপর একাট্টা হওয়া অসম্ভব, সনদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা বিদ্যমান থাকলে হাদীসকে মুতওয়াতির (متواتر) বলা হয়।
২. আহাদ (أحاد): أحاد তিন প্রকার। যথা:
মাশহুর (مشهور): যে কোন স্তরে হাদীস বর্ণনা কারীর সংখ্যা যদি দুই এর অধিক হয়, কিন্তু মুতওয়াতির এর পর্যায়ে পৌঁছে না তাকে মাশহুর (مشهور) বলে।
আযীয (عزيز): যে কোন স্তরে হাদীস বর্ণনাকারীর সংখ্যা যদি দু‘জন হয় ।
গরীব (غريب): যে কোন স্তরে হাদীস বর্ণনাকারীর সংখ্যা যদি একজন হয় ।
শায (شاذ): একাধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বিপরীত একজন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনাকে শায হাদীস বলে।
কিয়াস (قياس): অর্থ অনুমান, পরিমাপ, তুলনা ইত্যাদি। পরিভাষায়: শাখাকে মূলের সঙ্গে তুলনা করা, যার ফলে শাখা ও মূল একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
তাক্বলীদ (تقليد): দলীল উল্লেখ ছাড়াই কোন ব্যক্তির মতামতকে গ্রহণ করা।
ইজতিহাদ (اجتهاد): উদ্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা চালানোকে ইজতিহাদ বলে।
শরী‘আত/শরীয়ত/শরী‘আহ (شريعة): অর্থ: আইন, বিধান, পথ, পন্থা ইত্যাদি।
পরিভাষায়: মহান আল্লাহ্ স্বীয় দ্বীন হতে বান্দার জন্য যা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন তাকে শরী‘আত বলে।
মাযহাব (مذهب): অর্থ- মত, পথ, মতবাদ ইত্যাদি। ফিক্বহী পরিভাষায়: ইবাদাত ও মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে শার‘ঈ হুকুম পালনের জন্য বান্দা যে পথ অনুসরণ করে এবং প্রত্যেক দলের জন্য একজন ইমামের উপর অথবা ইমামের ওসীয়ত কিংবা ইমামের প্রতিনিধির উপর নির্ভর করে তাকে মাযহাব বলে।
নাযর (نذر): কোন বিষয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চিন্তা-ভাবনা করাকে নাযর বলে।
আম (عام): সীমাবদ্ধ করা ছাড়াই যা দুই বা ততোধিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে আম বলে।
খাস (خاص): আম এর বিপরীত, যা নির্দিষ্ট বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
ইজমা (اجماع): কোন এক যুগে আলিমদের কোন শর‘ঈ বিষয়ের উপর একমত পোষণ করাকে ইজমা বলে।
মুসনাদ (مسند): যার সনদগুলো পরস্পর এমনভাবে মিলিত যে, প্রত্যেকের বর্ণনা সুস্পষ্ট।
ফিক্বহ (فقه): ইজতিহাদ বা গবেষণার পদ্ধতিতে শার‘ঈ হুকুম সম্পর্কে জানার বিধানকে ফিক্বহ বলে।
আসল বা মূল (اصل): এমন প্রথম বিষয়, যার উপর ভিত্তি করে কোন কিছু গড়ে উঠে। যেমন- দেয়ালের ভিত্তি।
ফারা’ বা শাখা (فرع): আসলের বিপরীত যা কোন ভিত্তির উপর গড়ে উঠে।
ওয়াজিব (واجب): যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
মানদূব (مندوب): যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি হবে না।
মা’হযূর (محظور): যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
মাকরূহ (مكروه): যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি হবে না।
ফাতওয়া (فتوى): জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির নিকট থেকে দলীল ভিত্তিক শার‘ঈ হুকুম সুস্পষ্ট বর্ণনা করে নেয়াকে ফাতওয়া বলে।
নাসিখ (ناسخ): পরিবর্তিত শার‘ঈ দলীল যা পূববর্তী শার‘ঈ হুকুমকে রহিত করে দেয় তাকে নাসিখ বলে।
মানসূখ (منسوخ): আর যে হুকুমটি রহিত হয়ে যায় সেটাই মানসূখ।
মুতলাক্ব (مطلق): যা প্রকৃতিগত দিক থেকে জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু অনির্দিষ্টভাবে একটি অর্থকে বুঝায়।
মুকাইয়্যাদ (مقيد): যা মুতলাক্বের বিপরীত অর্থাৎ জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে না। বরং নির্দিষ্ট একটি অর্থকে বুঝায়।
হাক্বীক্বত/হাক্বীক্বাহ (حقيقة): কোনো শব্দকে আসল অর্থে ব্যবহার করাকে হাক্বীকত বলে। যেমন- সিংহ শব্দটি এক প্রজাতির হিংস্র প্রাণীকে বুঝায়।
মাজায (مجاز): শব্দ যখন আসল অর্থকে অতিক্রম করে তার সাথে সাদৃশ্য রাখে এমন অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে মাজায বলে। যেমন- সাহসী লোককে সিংহের সাথে তুলনা করা।