কাল-বিকাল আহার করার সময় আমাকে রুটি দিত এবং নিজেরা খেজুর থেত ৷ তাদের মধ্যে
যার কাছেই রুটি থাকত, তা আমাকে দিয়ে দিত ৷ এতে ৩আমি লজ্জিত হয়েত তাদেরকে রুটি
ফিরিয়ে দিতাম ৷ কিন্তু তারা তা স্পর্শ না করেই আমাকে পুনরায় দিয়ে দিত ৷ ইবন হিশাম
বলেনঃ এই আবু অড়াযীয ছিল নযর ইবন হারিছের পরে মুশরিকদের পত ৷কাবাহী সেনাধ্যক্ষ ৷
মুসআব যখন তার ভাই আবু আযীযকে বন্দীকারী আবু ইয়াসারকে শক্ত করে বাধার জন্যে
বলেছিলেন তখন আবু অড়াযীয মুসআবকে বলেছিল, ভাই! আমার সাথে এরুপ করার জন্যে
কি তুমি আদিষ্ট ? যুসআব বললেন, তুমি আমার ভাই নও; বরং সে-ই আমার ভাই ৷ এরপর
আবু আযীযের ম৷ জিজ্ঞেস করল, সর্বোচ্চ কত মুক্তিপণ নিয়ে কুরায়শ বন্দীদের ছাড়া হচ্ছে ?
বলা হল, চার হাজার দিরহামের বিনিময়ে ৷ সে মতে তার মা চার হাজার দিরহাম পাঠিয়ে দিয়ে
তাকে মুক্ত করে নেয় ৷
ইবন আহীর গাবাতুসৃ-সাহড়াবা’ গ্রন্থে আবু আযীষের নাম ঘুরারা লিখেছেন এবং খলীফা
ইবন খইিয়াত তাকে সাহাবাদের মধ্যে গণ্য করেছেন ৷ তিনি বলেন, আবু অড়াযীয ছিল মুসআব
ইবন উমায়রের বৈপিত্রেয় ভাই ৷ তাদের আরও একজন বৈপিত্রেয় ভাই ছিল ৷ তার নাম আবুর
রুম ইবন উমায়ব ৷ যারা বলেছেন, আবু আযীয উহুদ যুদ্ধে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে, তারা
ভুল করেছেন ৷ প্রকৃতপক্ষে ঐ নিহত ব্যক্তির নাম আবু ইযযা’ ৷ এ বিষয়ে যথাস্থানে আলোচনা
করা হবে ৷ ইবন ইসহাক বলেন : ইয়াহ্ইয়া ইবন আবদুল্লাহ সুত্রে আবদুল্লাহ ইবন আবু
বকর আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে মদীনায় পৌছেন, তখন
নবী সহধর্মিণী সাওদা বিনত যামঅ৷ আফ্রা পরিবারে অবস্থান করছিলেন ৷ আফ্রার দুই পুত্র
আওফ ও মুআওয়ায বদর যুদ্ধে শহীদ হওয়ায়ত তাদেরকে সান্তুনা দেয়ার জন্যে তিনি সেখানে
গিয়েছিলেন ৷ তখনও পর্দার বিধান প্রবর্তিত হয়নি ৷ সাওদা বলেন, আল্লাহর কসম, ঐ বাড়িতে
থাকতেই আমি সংবাদ পেলাম যে, যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে আসা হয়েছে ৷ আমি তখন আমার ঘরে
ফিরে আসলাম ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৷ এ সময় দেখলাম, আবু ইয়াযীদ
সুহায়ল ইবন আমর কক্ষের একপাশে রয়েছে ৷ আর তার হাত দু’খানি র্কাধের সাথে রশি দিয়ে
বাধা ৷ সাওদা (রা) বলেন, ন্আল্লাহর কসম, আবু যায়দের এ অবস্থা দেখে আমি নিজেকে সামলে
রাখতে পারলাম না ৷ বললাম, হে আবু যায়দ৷ তোমরা আত্মসমর্পণ করলে কেন ? যুদ্ধ করে
সম্মানের সাথে মরতে পারলে না ? সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘর থেকে আমাকে ধমক দিয়ে
বললেন, হে সাওদা! তুমি কি আল্লাহ ওত ৷র রাসুলের বিরুদ্ধে উস্কা নি দিচ্ছ ? আমি বললাম,
ইয়৷ রাসুলাল্লাহ্৷ আল্লাহর কসম, আবু যায়দকে এরুপ বাধা অবস্থায় দেখে আত্মসম্বরণ করতে
পারিনি, তাই এরুপ বলে ফেলেছি ৷ মদীনায় যুদ্ধবন্দীদের অবস্থা মুক্তিপণের পরিমাণ ও ধরন
সম্পর্কে সামনে যথাস্থানে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্ ৷
বদরের ঘটনায় নাজাশীর আনন্দ প্রকাশ
হাফিয রায়হাকী বলেন : আবুল কাসিম আবদুর রহমান ইবন আবদুল্লাহ সুত্রে সানআ
নিরাসী আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, এক দিন নাজাশী হযরত জাফর ইবন আবু
তালিব ও তার মা পীদের তার কাছে আমার জন্য সংবাদ দেন ৷ (জা ফর ও তার সৎগীরা ঐ
সময় নাজাশীর আশ্রয়ে আবিসিনিয়ায থাকতেন) ৷ সংবাদ পেয়ে তারা নাজাশীর দরবারে
উপস্থিত হন ৷ নজােশী তখন ঘরের মধ্যে পুরনো কাপড় পায়ে ফরাশ ছাড়া মাটিতে বসা
ছিলেন ৷ জাফর বলেন নাজাশীকে এ অবস্থায় দেখে আমরা তড়কে পেলাম ৷ আমাদের
চেহারায় ভীতির লক্ষণ দেখে তিনি বললেন আমি তােমাদেরকে এমন একটা সুসংবাদ দেব, যা
তোমাদের আনন্দ দান করবে ৷ তারপর বললেন, তোমাদের :দশ থেকে আমার এক গুপ্তচর
এসে বলেছে, আল্লাহ্ তার নবীকে সাহায্য করেছেন ৷ নবীর শত্রুদেরকে ধ্বংস করেছেন ৷ অমুক
অমুক বন্দী হয়েছে এবং অমুক অমুক নিহত হয়েছে ৷ পীল বৃহ্মে ঘেরা বদর উপত্যকায় তারা
শত্রুদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ৷ আমার চোখের সামনে যেন ঐ উপত্যকাটি ভাসছে ৷ কারণ,
এক সময় আমি সেখানে বনুযামরার আমার এক মুনীবের উট চরত্যেম ৷ জাফর (রা) বললেন,
আপনার কী হয়েছে ? পুরনো কাপড় গায়ে ফরাশ ছাড়া খালি মাটির উপরে বসে আছেন কেন ?
নজােশী বললেন, ঈস৷ (আ)-এর প্রতি অবতীর্ণ কিভাবে আমরা দেখেছি যে, বান্দ৷ যখন
আল্লাহর কোন নিআমতের কথা মানুষকে শুনাবে, তখন তার উচিত বিনয়েয় সঙ্গে শুনানাে ৷
আল্লাহ যেহেতু তার নবীকে সাহায্য করার সুযােপ আমাকে দিয়েছেন তাই আমি তার জন্যে
এরুপ বিনয় ভাব অবলম্বন করেছি ৷
অনুচ্ছেদ
বদরের বিপর্যয়ের সংবাদ মক্কায় পৌছল
ইবন ইসহাক বলেন : হায়সুমান ইবন আবদুল্লাহ থুযাঈ বদরে কুরায়শদের বিপর্যয়ের
ৎবাদ নিয়ে সর্বপ্রথম মক্কায় পৌছে ৷ লোকজন তার নিকট জিজ্ঞেস করল, ওখানকড়ার সংবাদ
কী ? সে বলল০ : উত্বা ইবন রাবীআ , শায়বা ইবন রাবীআ, আবুল হাকাম ইবন হিশাম,
উমাইয়৷ ইবন থালফ্, যামআ ইবন আসওয়াদ, নাবীহ, মুনাব্বিহ্ এবং আবুল বুখতারী ইবন
হিশাম এরা সকলেই নিহত হয়েছেন ৷ হায়সুমান যখন নিহত কুরায়শ নেতাদের নাম একে
একে বলে যাচ্ছিল, তখন সাফওয়ান ইবন উমাইয়৷ বলল, এ লোকটির যদি জ্ঞানবুদ্ধি ঠিক
থাকে, তবে ওকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর দেখি তখন তারা হায়সুমানকে জিজ্ঞেস করল
আচ্ছা সাফওয়ান ইবন উমা ইয়ার স০ বাদ কি ? হায়সুমান বলল, এই যে সে ৫৩ ত৷ হাতীমের মধ্যে
বসা আছে ৷ আল্লাহর কসম, আমি তার পিতা ও ভাইকে নিহত হতে ৩দেখেছি ৷ মুসা ইবন উকবা
বলেন০ বদরে পরাজয়ের স০ বাদ যখন মক্কায় পৌছল, তারা এর সত্যতা যাচাই করে দেখল ৷
এরপর মহিলারা তাদের মাথার চুল কেটে ফেলল এবং অনেক সওয়ারীও ঘোড়ার পা কেটে
দিল ৷ কাসিম ইবন ছাবিত রচিত দ ৷লায়েল গ্রন্থের বরাতে সুহায়লী উল্লেখ করেছেন০ : বদরের
যুদ্ধ চলাকালে মক্কাবাসীর৷ শুনতে পায়, এক অদৃশ্য জিন বলে যাচ্ছে :
(কবিতা)
এ ১
মক্কার হ নীফী বলে দাবীদার কুরায়শরা বদর রণ ৎগনে এমন এক ঘটনার সমম্মুখীন হল,
যার প্রভাবে অচিরেই কিসরা ও কায়সারের সিং হাসন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে ৷