সঙ্গত হওয়া ৷ আর আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করে এমন কোন ব্যক্তির জন্য বণ্টনের পুর্বে
গনীমতের মড়াল বিক্রি করা হালাল নয় ৷ আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে এমন ব্যক্তির জন্য
মুসলমানদের গনীমতের পশুতে সওয়ার হয়ে তাকে দুর্বল করে ফেরত দেওয়া হালাল নয় ৷ এবং
আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে এমন কোন ব্যক্তির জন্য হালাল নয় যে, মুসলমানদের ধন ভাণ্ডার
থেকে বস্ত্র নিয়ে পরিধান করবে আর তা পুরাতন জীর্ণ-শীর্ণ করে ফেরত দিবে ৷ মুহাম্মাদ ইবন
ইসহাক (র) সুত্রে আবু দাউদ (র) এমনভাবেই হাদীছটি বর্ণনা করেরুছণ্ডুন ৷ তিরমিযী (র ) হাফ্স
ইবন উমর শায়রানী — রুয়াইফি ইব ন ছাবিত সুত্রে সংক্ষেপে হাদীছটি বর্ণনা করে এটি
হাসান পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন ৷ সহীহ্ ৰুখারীতে নাফি সুত্রে ইবন উমর (সা) থেকে বর্ণিত
আছে যে ,
খায়ররের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) গৃহপালিত গাধার পােশত খেতে নিষেধ করেছেন ৷ তিনি বসুন
থেতেও নিষেধ করেছেন ৷ ইবন হড়াযম আলী (বা) এবং শুরইিক ইবন হাম্বল (রা) এর মত উল্লেখ
করেছেন যে, তারা র্কাচা রসুন-পেয়াজ খাওয়া হারাম মনে করতেন ৷ আর তিরমিযী (র) এ দু’জন
মনীষী তা মাক্রুহ বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন, বুখারী ও মুসলিম
শরীফে যুহ্রী আলী ইবন আবুতালির (বা) বর্ণিত হাদীছ–
অর্থাৎ রাসুল করীম (সা) খায়বর (বিজয়ের) এর দিন মুতআ বিবাহ এবং গৃহ পালিত গাধার
গােশত খেতে নিষেধ করেছেন ৷ এ হাদীছ সম্পর্কে হাদীছ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা অনেক কথাবার্তা
বলেছেন ? বুখারী ও মুসলিম শরীফে মালিক প্রমুখের বরাতে যুহ্রী সুত্রে বর্ণিত হাদীছ অনুযায়ী
মুতআ বিবাহ হারাম ঘোষিত হয়েছিল খায়বরের দািনই ৷ কিন্তু দুটি কারণে এ অর্থ গ্রহণ করা
মুশকিল ৷ (এক) খায়বরের দিন মুতআ বিবাহের আদৌ কোন প্রয়োজনই ছিল না ৷ কারণ,
ভোগের জন্য সেখানে তখন নারীর অভাব ছিল না ৷ (দুই) মুসলিম শরীফে রবী ইবন সাবুরা সুত্রে
মড়াবাদ তার পিতা থেকে বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে-
রাসুল করীম (সা) মক্কা বিজয়ের দিন তাদেরকে মুতআ বিবাহের অনুমতি দিয়েছেন, এরপর
তা নিষিদ্ধ ঘোষণা না করা পর্যন্ত তিনি মক্কা ত্যাগ করেননি ৷ তারপর তিনি বলেন : আল্লাহ
তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত কালের জন্য মুতআ বিবাহ হারাম করে দিয়েছেন ৷ এতে দেখা যায় যে,
তিনি আগে নিষেধ করেছেন, পরে অনুমতি দিয়েছেন, তারপর হারাম করা হয়েছে ৷ এতে করে
দৃ’দফা বাতিল বা রহিতকরণ সাব্যস্ত হয়, যা সুদুর পরাহত ৷ উপরন্তু ইমাম শাফিঈ প্রমাণ পেশ
করেন যে, কোন একটা বিষয় একবার মুবাহ করা হয়, পরবভীন্থিত তা হারাম করে আবার
মুবাহ এবং পুনরায় হারাম করা হয়েছে বলে জানা যায় না ৷ কেবল মুতআ বিবাহ এর ব্যতিক্রম ৷
এ ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ (র) যে বিষয়কে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন ৷ তা হল হাদীছদ্বয়ের
উপর তার অগাধ আস্থা ৷ এ সম্পর্কে ইতিপুর্বে আমরা আলোচনা করেছি ৷
সুহায়লী প্রমুখ কোন কোন প্রাথমিক যুগের মনীষীর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন যে, তার দাবী
মতে মুতআ তিন দফা মুবাহ করা হয় এবং তিন দফা হারাম করা হয় ৷ অন্যরা বলেন যে, বার
দফা মুবাহ এবং হারাম করা হয় ৷ এটা তো কিছুতেই হতে পাৱৰুহ্ না ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
প্রথমে কখন মুতআ হারাম ঘোষণা করা হয় ৷ সে বিষয়ে মতভেদ দেখা যায় ৷ কেউ বলেন,
খায়বরে প্রথম হারাম করা হয় ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, উমরাতুপ্ল্ কাযায় আবার কারো কারো
মতে মক্কা বিজয়ের দিনে ৷ এ মতটাই স্পষ্ট ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, আওতাস যুদ্ধে ৷ আর এ
মতটি পুর্ববর্তী মতের নিকটবর্তী ৷ কেউ কেউ বলেন, তবুক যুদ্ধের দিন ৷ আবার কারো কারো
মতে বিদায় হকৃজ্জ ৷ আবু দাউদ এসব মত উল্লেখ করেছেন ৷ কোন কোন আলিম আলী (বা)
থেকে বর্ণিত হড়াদীছের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন এই বলে যে, তাতে আগ-পর হয়ে গেছে ৷
অবশ্য ইমাম আহমদ (র) বর্ণিত হাদীছটি মাহ্যুফ তথা নিরাপদ ৷ এতে সুফিয়ান আলী
(বা) সুত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আলী (রা) ইবন আব্বাস (বা) কে বলেন :
“রাসুল করীম (সা) খায়বরের দিনগুলোতে মুতআ বিবাহ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত
থেতে নিষেধ করেছেন ৷ মুহাদ্দিসগণ বলেন যে, রাবী আমাদেরকে বিশ্বাস করাবার চেষ্টা করেছেন
যে, তার উক্তিতে উভয় বিষয়ের নিষেধাজ্ঞাটি খায়বর এর দিনের সাথে সম্পৃক্ত ৷ অথ৪ ব্যাপারটা
তা নয় ৷ এই যুদ্ধ গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কিত ৷ আর মুতআ বিবাহের
ব্যাপারে এ দিনের কোন সম্পর্ক নেই ৷ অবশ্য দুটি বিষয় একত্র করা হয়েছে এ কারণে যে, আলী
(বা) জানতে পেয়েছিলেন যে, ইবন আব্বাস (বা) মুতআ বিবাহ এবং গৃহপালিত পাধার গোশত
খাওয়া উভয়টাকে যুবাহ মনে করতেন বলে প্রসিদ্ধি রয়েছে ৷ তখন আঘীরুল মু’মিনীন আলী (বা)
ইবন আব্বাস (রা)-কে বললেন : আপনি ভুল বুঝেছেন ৷ রাসুল করীম (সা) থায়বরের দিন
মুতআ বিবাহ এবং গৃহপালিত পাধার গোশৃত নিষিদ্ধ করেছেন ৷ এ দুটি বিষয় মুবাহ এমন বিশ্বাস
থেকে হযরত ইবন আব্বাস (বা) যাতে প্রত্যাবর্তন করেন, সে জন্য তিনি দৃটোর কথা এক সঙ্গে
উল্লেখ করেছেন ৷ এ ব্যাখ্যার দিকেই ঝুকেছেন আমাদের শায়খ হাফিয আবুল হাজ্জাজ মিযমী ৷
আল্লাহ তাকে নিজ রহমত দ্বারা ঢেকে নিন ৷ আসীন! এতদ্সরুত্ত্বও ইবন আব্বাস (বা) গাধার
গোশৃত আর মুতআ বিবাহকে বৈধ জ্ঞান করা থেকে ফিরে আসেননি ৷ গাধার গোশতের ব্যাপারে
নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তড়াতাে তার বহন আর আরোহণের কাজে ব্যবহার হতো ৷
আর মুতআতাে কেবল সফরকালে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তার মতে মুবাহ ৷ স্বাচ্ছন্দা আর শ্রীর
উপস্থিতিতে তিনি মুতআ বিবাহকে হারাম মনে করতেন ৷ এ ব্যাপারে তার একদল অনুসারী
তাকে অনুসরণ করেন ৷ ইবন জুরাইজ এবং তৎপরবর্তী কাল পর্যন্ত হিজায়ের আলিম সমাজের
নিকট তার এ মতই ছিল প্রসিদ্ধ ৷ ইবন আব্বাস (রা)-এর মতের অনুরুপ একটা মত ইমাম
আহমদ ইবন হাম্বল থেকেও বর্ণিত আছে ৷ তবে এ বর্ণনাটি দুর্বল ৷ কোন কোন প্রন্থকার ইমাম
আহমদ ইবন হাম্বল থেকে অনুরুপ মত উদ্ধৃত করার চেষ্টা করেছেন ৷ কিন্তু তাও ঠিক নয় ৷
আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার স্থান কিতাবুল আহকাম ৷ আল্লাহ্রই
নিকট সাহায্য কামনা করছি ৷
ইবন ইসহাক (র) বলেন : এরপর রাসুল করীম (সা) দুর্গ আর গনীমতের মালের নিকটবর্তী
হন এবং সেসব এক এক করে হস্তগত করেন) ৷ আবদৃল্লাহ্ ইবন আবু বকর এর উদ্ধৃতি দিয়ে
আসলাম গোত্রের কতিপয় লোকের বরাতে তিনি বলেন যে, সে গোত্রের শাখা গোত্র বনু সহমের
কতিপয় লোক রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট আগমন করে নিবেদন করে :
হে আল্লাহ্র রাসুল ! আমরা অভাব অনটনের শিকার ৷ এখন আমাদের হাতে কিছুই নেই ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা ) যে তাদের কিছু দেবেন তাও আনছিল না ৷ তখন আল্লাহ্র নবী (সা) তাদের জন্য
দুআ করলেন, হে আল্লাহ্! তুমি তাদের অবস্থা জান, তাদের শক্তি বলতে কিছুই নেই আর আমার
হাতেও তাদেরকে দেয়ার মতো কিছুই নেই ৷ তাই তুমি তাদের হাতে ইয়াহ্রদীদের সবচেয়ে বড়
দুর্গের বিজয় দান কর ৷ খাদ্য ও চর্বির বিবেচনায় তাদের যে দুর্গটা সবচেয়ে সেরা, তা-ই তুমি
তাদেরকে জয় করতে দাও ৷ তাই প্রত্যুষে লোকেরা হামলা চালায় এবং ইয়াহুদীদেব সাদ ইবন
মুআয দুর্গ জয় করে নেয় ৷ খাদ্য আর চর্বি লাভের উৎসরুপে খায়বরে এর চেয়ে বড় দুর্গ আর
কাি না ৷
ইবন ইসহাক (রা) বলেন : রাসুল করীম (সা) যখন তাদের দুর্গ জয় করে নেন (এবং
গনীমতের মালও হস্তগত করেন) তখন ইয়াহুদীরা ওয়াতীহ ও সুলালিম দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে ৷
আর এ দুর্পটি সবশেষে বিজিত হয় ৷ রাসুল করীম (সা) তেব দিন যা তার চেয়ে অধিককাল পর্যন্ত
এ দুর্গ অবরোধ করে রাখেন ৷ ইবন হিশাম (রা) বলেন :
খায়বরের দিন মুসলমানদের সংকেত ধ্বনি ছিল : ইয়া মনসুর আমিত আমিত ! ৷ঠু )
ইবন ইসহাক (র) বুরায়দা ইবন সুফিয়ান আবুল য়ুসৃর কাব ইবন আমর সুত্রে বর্ণনা
করেন :
একদিন সন্ধ্যস্বয় আমি খায়বরে রাসুল করীম (সা)-এর সঙ্গে ছিলাম ৷ এসময় কোন এক
ইয়াহুদীর ছাগপাল বাইরে থেকে দুর্গের দিকে আসছিল ৷ আর আমরা তখন তাদেরকে অবরুদ্ধ
করে রেখেছিলাম ৷ তখন রাসুল করীম (সা) বললেন : এমন কে আছে যে এ বকরীগুলাে থেকে
আমাদেরকে খাওয়াতে পারে ? আবুল য়ুসৃর বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমি
এজন্য প্রস্তুত ৷ তিনি বললেন, যাও দেখি ৷ আমি তখন উট পাখির মতো ছুটে গেলাম ৷ রাসুল
করীম (না) আমার দিকে তাকিয়ে দুআ করলেন ?, হে আল্লাহ! তার দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত
কর ৷ তিনি বলেন, আমি সেখানে যখন পৌছি তখন বকরীবপালের সামনের অংশ দুর্গের
অভ্যন্তরে প্রবেশ করছিল ৷ আমি পালের শেষ মাথা থেকে দুটো বকরী ধরে বগলদাবা করে রাসুল
করীম (না)-এর দরবারে এমনভাবে ছুটে আমি যেন আমার কাছে কিছুই নেই ৷ আমি বকরী দুটো
এনে রাসুল করীম (সা) এর সম্মুখে রাখি ৷ সাহাবীগণ বকরী দুটি যবাই করে আহারের ব্যবস্থা
করেন ৷ আর আবুল য়ুসৃর ছিলেন সকলের শেষে মৃত্যুবরণকারী রাসুল করীম (না)-এর
সাহাবীগণের অন্যতম ৷ এ হাদীছ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি কেদে ফেলতেন ৷ তিনি বলেন,
সাহাবীগণ আমার দ্বারা উপকৃত হন ৷ শেষপর্যন্ত আমিই হলাম তাদের (অর্থাৎ সাহাবীদের) মধ্যে
সর্বশেষ ব্যক্তিদের অন্যতম ৷
হাফিয বায়হাকী তার দালাইল গ্রন্থে আবু মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ আবু উছমান নাহদী বা
আবু কুলাবা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুল কবীম (সা) যখন খায়বরে পৌছেন তখন থেজুর
কাচা ছিল ৷ লোকেরা ছুটে গিয়ে কাচা থেজুর থেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাসুল করীম (সা) এব
নিকট অনুযোগ করলে রাসুল (সা) বললেন : পুরাতন মশকে পানি শীতল করে প্রত্যুষে আল্লাহ্র
নাম নিয়ে পান করবে ৷ তারা তাই করেন এবং সুস্থ হন ৷ হাফিয বায়হাকী (র) আবদুর রহমান
ইবন রাফি সুত্রে অবিচ্ছিন্ন সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ এতে মাগরিব এবং ইশার মধ্যবর্তী
সময়ের উল্লেখ রয়েছে ৷ ইমাম আহমদ (রা) আবদুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল সুত্রে বর্ণনা
করেন ৷ খায়বরের দিন চর্বি ভর্তি একটি থলে ঝুলিয়ে রাখা হয় ৷ তা হাতে নিয়ে আমি বললাম,
আমি এখান থেকে কাউকে কিছু দেবাে না ৷ তিনি বলেন, আমি পেছনে ফিরে দেখি রাসুল
করীম (সা) মুচকি হাসছেন ৷ ইমাম আহমদ (র) আফ্ফান আবদৃল্লাহ্ ইবন মুগাফ্ফাল
সুত্রে বর্ণনা করেন :
“আমরা খায়বর প্রাসাদ অবরোধ করে রাখি, এ সময় আমাদের দিকে চর্বির একটা থলে
নিক্ষেপ করা হলে আমি গিয়ে তা হাতে নেই এবং তখন রাসুল করীম (সা) কে দেখতে পেয়ে
আমি লজ্জিত হই ৷ ইমাম বৃখারী ও মুসলিম (ব) শুবা সুত্রেও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ মুসলিম
(রা) শায়বান ইবন ফররুখ সুত্রে উছমান ইবন মুগীরার বরাতেও হাদীছটি বর্ণনা করেন ইবন
ইসহাক (ব) আবদুল্লাহ্ ইবন মুগাফ্ফাল মুযনী সুত্রে বর্ণনা করেন যে, খায়বারের গনীমতের সাল
থেকে আমি এক থলে চর্বি কাধে নিয়ে আমার আস্তানা এবং বন্ধুদের নিকট গমন করি ৷
গনীমতের মাংলর দায়িত্শীল আমাকে পথে পেয়ে পাকড়াও করে নিয়ে যান এবং বলেন, এসো
এসব মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দেই ৷ আমি বললাম , আল্লাহ্র কসম , আমি কিছুতেই তা
তোমাকে দেবো না ৷ তিনি আমার নিকট থেকে থলে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য টানাটানি করেন ৷ আমি
যখন এরকম করছিলাম তখন রাসুল করীম (সা) আমাদেরকে দেখে হাসলেন , আর গনীমতের
মালের দায়িত্শীলকে বললেন, তাকে যেতে দাও ৷ তিনি আমাকে ছেড়ে দিলে আমি তা নিয়ে ঘরে
ফিরে যাই এবং বন্ধু-বান্ধব নিয়ে তা আহার করি ৷
য়াহুদীদের যৰাই করা জন্তুর চর্বি হারাম ইমাম মালিক (র) এর এ মতের বিরুদ্ধে জমহুর
আলিম এ হাদীছটিকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করেন ৷ কারণ, আল্লাহ্তাআলা বলেছেন :
আর আহলি কিতুাবচদর খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল ৷ ইমাম মালিক (রা)-এর জবাবে বলেন
যে, চর্বি খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত নয় ৷ উপরোক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করাও বিচার সাপেক্ষ ৷
এমনও তো হতে পারে যে, তাদের জন্য হালাল পশু থেকে এ চর্বি নেয়া হয়েছিল ৷ আল্লাহ্ই ভাল
জানেন ৷
এ হাদীছ দ্বারা এ প্রমাণও উপস্থাপন করা হয় যে, খাদ্য শস্যে খুমুস বা এক-পঞ্চমাংশ ধার্য
হয় না ৷ আবু দাউদ (ব) বর্ণিত মুহাম্মাদ ইবন আলা আবদুল্লাহ ইবন আবু আওফা সুত্রের
হাদীছ দ্বারা এমতের সমর্থন পাওয়া যায় ৷ এ হাদীছে উল্লেখ আছে :
৪৫ —
তিনি বলেন, আমি বললাম, রাসুল করীম (সা)-এর যুগে আপনারা কি খাদ্য শস্য থেকে
এক-পঞ্চমাংশ (খুমুস) বের করতেন ? জবাবে তিনি বলেন : খায়বরের দিন আমরা খাদ্য শস্য
লাভ করি ৷ একজন লোক এসে তার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তা নিয়ে যেতেন ৷ ইমাম আবু দাউদ
(র) এককভাবে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ হাদীছটি হাসান’ পর্যায়ের ৷
হযরত সাফিয়্যা বিন্ত হুয়ইি (রা)-এর ঘটনা
রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন বনুনযীর ইয়াহুদীদেরকে তাদের দৃষ্কর্মের জন্যে মদীনা থেকে বিতাড়িত
করেন তখন তাদের অধিকাংশই খায়বারে গিয়ে বসবাস শুরু করে ৷ তাদের মধ্যে ছিল হুয়াই
ইবন আখতার এবং আবুল হুকইিকের সন্তানরা ৷ আর তারা ছিল তাদের সম্প্রদায়ে ঐশ্বর্য ও
মর্যাদার অধিকারী ৷ তখন হযরত সাফিয়্যা ছিলেন অপ্রাপ্ত বয়স্কা ৷ তারপর যখন তার বিয়ের বয়স
হয় তখন তার একজন চাচাভাে ভাই র্তাকে বিয়ে করে ৷ তাদের বাসর হওয়ার কয়েক দিন পর
একদিন তিনিাপ্নে দেখেন যে, আকাশের চীদ যেন তার কোলে এসে পড়েছে ৷ তিনি তার এ
াপ্নের কথাামীর কাছে বর্ণনা করলে তারামী রেগে যায় এবং তাকে চপেটাঘাত করে এবং
বলে ইয়াসরিব অধিপতি তোমারামী হোক এটাইকি তুমি কামনা কর ? তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সা)
খায়বারের বাসিন্দাদেরকে অবরোধ করে ফেললে এবং খায়বারের পতন ঘটলে হযরত সাফিয়্যা
(রা) কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত হন এবং তারামী নিহত হয় ৷ তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে নিজের
জন্যে পসন্দ করেন ৷ তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কর্তৃত্মধীনে এসে যান ৷ পবিত্রত৷ অর্জনের পর
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তীর সাথে বাসর ঘর করতে গিয়ে তার ঢেহারায় উক্ত আঘাতের দাগ দেখতে পান
ও তার কারণ জিজ্ঞেস করেন ৷ তখন তিনি তীর উক্ত শুভাপ্নের কথা বলেন ও তারামীর
নির্যাতনের কথা বর্ণনা করেন ৷
ইমাম বুখারী (র) বলেন, আমাদেরকে সুলায়মান ইবন হার ব (র) আনাস ইবন
মালিক (বা) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) খায়বারের অতি নিকটে
অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করেন ৷ এরপর বলেন, “আল্লাহ মহান, খায়বার ধ্বংস
হয়ে যাবে, নিশ্চয়ই আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের আঙ্গিনায় হাযির হই তখন সতর্কীকৃতদের
প্রভাত হয় কতই না মন্দ ! এরপর খায়বারবাসীরা পরাজিত হয়ে এদিক্ সেদিক্ পলায়ন করতে
লাগল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) যােদ্ধাদেরকে হত্যা এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের বন্দী করার আদেশ
দেন ৷ বন্দীদের মধ্যে হযরত সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রা)-ও ছিলেন ৷ তিনি প্রথমে হযরত দিহ্ইয়া
কালবী (রা)-এর ভাগে পড়েন ৷ পরে অবশ্য রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর অংশে আসেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
তাকে আযাদ করে বিবাহ করেন এবং তার মুক্তিকেই মােহরানা সাব্যস্ত করেন ৷
মুসলিম (র) ও বিভিন্ন সনদে আনাস (বা) হতে হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ ইমাম বুখারী (র)
আদম অড়ানাস ইবন মালিক (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
সাফিয়্যা (রা)-কে কয়েদী হিসেবে গ্রহণ করেন, তিনি তাকে মুক্ত করে দেন এবং পরে বিবাহ
করেন ৷ একজন বিশিষ্ট বণ্টাড়াকারী ছাবিত (রা) হযরত আনাস (রা)কে জিজ্ঞেস করেন “তিনি
তার মােহরানা কী দিয়েছিলেন ?” উত্তরে হযরত আনাস (রা) বলেন, তিনি তার মুক্তিকেই
মোহরানা সাব্যস্ত করেছিলেন ৷ এ বর্ণনায় ইমাম বৃখারী (র) ছিলেন একক ৷
বৃখারী (র) আবদুল পাফ্ফার ও আহমদ ইবন ঈসা আনাস (রা ) হতে বর্ণনা করেন ৷ আনাস
(রা) বলেন, “আমরা খায়বারে আগমন করলাম ৷ যখন দৃর্গগুলো আমাদের হস্তগত হল, রাসুলুল্লাহ্
(সা) এর কাছে সাফিয়্যা বিনৃত হুয়াইর গুণ-গরিমার কথা বর্ণনা করা হল ৷ তার স্বামী নিহত
হয়েছিল এবং তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) র্তাকে নিজের জন্যে পসন্দ করলেন ৷
তাকে নিয়ে বের হলেন এবং সুদ্দাস সাহ্বা নামক স্থানে পৌছার পর সাফিয়্যা (বা) পাক পবিত্র
হলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে র্তার বাসর হল ৷ এরপর খেজুর ও ঘি দিয়ে হাইস’ নামক এক
প্রকার খাদ্য তৈরি হলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আনাস (রা)-কে বলৰ্লন, “তোমার আশে পাশে যারা
আছে তাদেরকে দস্তরখানে ডেকে এনে খেতে দাও ৷” আনাস (রা) বলেন, “এটাই ছিল হযরত
সাফিয়্যা (রা)-এর ওলীমা ৷ ” আনাস (রা) বলেন, এরপর আমরা মদীনায় দিকে রওয়ানা হলাম ৷
আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে তার পিছনে সাফিয়্যা (রা) এর একটি চাদর বিছাতে দেখেছিলাম ৷
এরপর তিনি উটের পার্শে বললেন, হযরত সাফিয়্যা (বা) রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর হীটুতে ভর দিয়ে
উটে আরোহণ করেন ৷ এ বর্ণনড়াটিতেও ইমাম বৃখারী (র) একক ৷
বৃখারী (র) সাঈদ ইবন আবুমারয়াম আনাস সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আনাস (রা)
বলেন, “রাসুলুল্লাহ্ (সা) থায়বার ও মদীনায় মধ্যবর্তী স্থানে তিন রাত অবস্থান করেন ৷ তিনি
সাফিয়্যা (রা)-এর সাথে বাসর ঘর করেন ৷ এরপর আমি মুসলমানদেরকে তার ওলীমার দাওয়াত
করলাম ৷ এ ওলীমার রুচি ও পােশতের কোন ব্যবস্থা ছিল না ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বিলাল (রা)-কে
দস্তরখান বিছাতে হুকুম করলেন ৷ যখন দস্তরখান ৰিছান হল, তার মধ্যে খেজুর পনির ও ঘি রাখা
হল ৷ সাহাবীপণ বলারলি করতে লাগলেন, সাফিয়্যা (রা)-কে কি একজন উম্মুল ঘু’মিনীন হিসেবে
গণ্য করা হয়েছে, না কি একজন দাসী হিসেবে ? তারা বলারলি করতে লাগলেন, যদি তার
জন্যে পর্দার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তিনি হবেন একজন উম্মুল ঘু’মিনীন, আর যদি পর্দার ব্যবস্থা
না করা হয়, তাহলে তিনি একজন দাসী হিসেবে গণ্য হবেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন রওয়ানা
হলেন, তার পিছনে সাফিয়্যার জন্যে স্থান করে দিলেন ও পর্দার ব্যবস্থা করে দিলেন ৷ এটিও
বুখারীর একক বর্ণনা ৷
আবু দাউদ (র) মুসাদ্দাদ আনাস ইবন মালিক (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন ,
প্রথমত সাফিয়্যা (রা) দিহ্ইয়া কালবী (রা)-এর ভাগে পড়েন ৷ পরে তিনি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
জন্যে হয়ে যান ৷
আবু দাউদ (র) ইয়াকুব ইবন ইব্রাহীম আনাস (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
বলেন , খায়বারের দিন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সামনে কয়েদীদেরকে আনা হল ৷ তখন বিশিষ্ট সাহাবী
দিহ্ইয়া কালবী উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলড়াল্লাহ্ ! কয়েদীদের মধ্য হতে আমাকে একজন
দাসী দান করুন ! রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যাও একজনকে নিয়ে যাও ৷ তখন তিনি সাফিয়্যা
বিনতে হুয়াইকে গ্রহণ করলেন ৷ তখন এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সামনে এসে আরয
করলেন ৷ ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! আপনি বনুনাযীর ও বনুকুরায়যার সর্দার হুয়াই এর কন্যা সাফিয়্যাকে
দিহ্ইয়া কালবীর হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ তিনি শুধু আপনারই যোগ্য ৷ হুয়ুর (সা) বলেন, দিহ্ইয়া
কালবীকে সাফিয়্যাসহ ডেকে নিয়ে এসো ৷ নবী করীম (সা) যখন তার দিকে নযর করলেন তখন
দিহ্ইয়া কালবী (রা)-কে বললেন, তুমি অন্য একটি বন্দিনীকে নিয়ে নাও ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
সাফিয়্যা (রা)-কে আযাদ করে দিলেন ও তাকে বিবাহ করলেন ৷ ইবন উলাইয়া (বা) হতেও
অনুরুপ বর্ণিত রয়েছে ৷
আবু দাউদ (র) মুহাম্মাদ ইবন খাল্লাদ বাহিলী আনড়াস (রা) সুত্রে বংনাি করেন ৷ তিনি
বলেন, দিহ্ইয়া কালবী (রা) এর অং শ একটি সুশ্ৰী দাসী পড়েছিল ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে
সাতটি বন্দীর বিনিময়ে খরিদ করে নেন ৷ এরপর তাকে তিনি সত্ত্বজগােজের জন্য উম্মু সালামা
(রা)-এর কাছে সমর্পণ করেন ৷ রাবী হস্ফোদ (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা সাফিয়্যাকে উম্মু সালামা
(রা)-এর কাছে সমর্পণ করে দিলেন যাতে সেখানে তার ইদ্দতকাল অতিবাহিত হয় ৷ এটি আবু
দাউদের একক বর্ণনা ৷
ইবন ইসহাক (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন বনু আবুল হুকাইকের নিকট থেকে কামুস
নামক দৃর্গটি জয় করলেন তখন সাফিয়্যা (রা) বিনত হুয়াই ও তার সাথে অন্য একজন বন্দিনীকেও
রাসুল (না)-এর সামনে আনয়ন করা হল ৷ বিলাল (রা) উক্ত ইে জন মহিলাকে নিয়ে তাদের
নিহত আত্মীয়-াজনদের পাশ দিয়ে যড়াচ্ছিলেন ৷ সাফিয়্যা (বা) এর সাথী মহিলাঢি নিহত
ব্যক্তিদেরকে দেখে উচ্চারে র্কাদতে লাগল, মহিলাটি নিজেদের মুখে আঘাত করতে লাগল এবং
মাথায় ধুলি নিক্ষেপ করতে লাগল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন বললেন, এই উচ্ছুৎখল নারীটিকে
এখান থেকে নিয়ে যাও ৷ কিন্তু সাফিয়্যা (রা)-কে দেখে হুয়ুর (সা) তার জন্যে হুয়ুরের পিছনে
বসার জায়গা করে দেন এবং তার জন্যে পর্দড়ার ব্যবস্থা করে দেন ৷ মুসলমড়ানপণ বুঝতে পারলেন
যে, রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) তাকে নিজের জন্যে পসন্দ করেছেন ৷ সাফিয়্যার সঙ্গী ইয়াহুদী মহিলাটির কাণ্ড
দেখে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বিলাল (রা)-কে লক্ষ্য করে বললেন, হে বিলাল তোমার নিকট হতে কি
রহমত ও মমতড়াবােধ লোপ পেয়ে গেছে যে, তুমি এ দুটি মহিলাকে তাদের সঙ্গীদের শবদেহ
দেখিয়ে রেড়াচ্ছ ? আর হযরত সাফিয়্যা (রা) যখন কিনানা ইবন রাবী ইবন আবুল হুকাইক এর
নব পরিণীতা ছিলেন তখন তিনিাপ্ন দেখেন যে, আকাশের চীদ যেন তার কোলে পতিত হচ্ছে ৷
তিনি তখন তারামীর কাছে এাপ্নটি ব্যক্ত করেন ৷ামী বলল, এটি তো, তোমার হিজড়ায়ের
শাসক মুহাম্মাদকে পাওয়ার আকাক্ষে৷ বৈ কিছু না ? এরপর সে তার চেহারায় আঘাত করে ফলে
তার চোখ নীলবর্ণ হয়ে যায় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সামনে যখন তাকে পেশ করা হল তখন তার
চেহারায় আঘাতের চিহ্ন ছিল ৷ তিনি এ সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞেস করেন ৷ হযরত সাফিয়্যা (রা)
তখন তাকে বিস্তারিত জানালেন ৷
ইবন ইসহাক আরো বলেন, “কিনানা ইবন রাবীর নিকট বনুনযীরের বিপুল পরিমাণ সম্পদ
গচ্ছিত ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে তাকে পেশ করা হলে, সেই সম্পদ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্
(না) তাকে জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু সে সম্পদের কথা আীকার করল এবং এ সম্বন্ধে কোন কিছু