আল্লাহর সুমহান পবিত্র কিছু সিফাত। গুণাবলী। বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলার সহনশীলতা - ১: আল্লাহ সহনশীল। বান্দাদের শাস্তিদানে তাড়াহুড়া করেন না। وَاللهُ غَفُوْرٌ حَلِیْمٌ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (বাকারা: ২২৫)। ২. বান্দাকে অবাধ্যতার শাস্তিদানে আল্লাহ তাড়াহুড়া করলে, পৃথিবীতে কারও বেঁচে থাকার সুযোগ ছিল না। وَلَوْ یُعَجِّلُ اللهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُمْ بِالْخَیْرِ لَقُضِیَ اِلَیْهِمْ اَجَلُهُمْ ؕ فَنَذَرُ الَّذِیْنَ لَا یَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا فِیْ طُغْیَانِهِمْ یَعْمَهُوْنَ আল্লাহ যদি (ওই সকল কাফের) লোককে অনিষ্টের (অর্থাৎ শাস্তির) নিশানা বানাতে সেই রকম ত্বরা করতেন, যেমনটা ত্বরা কল্যাণ প্রার্থনার ক্ষেত্রে তারা করে থাকে, তবে তাদের অবকাশ খতম করে দেওয়া হত। (কিন্তু এরূপ তাড়াহুড়া আমার হিকমত-বিরুদ্ধ)। সুতরাং যারা (আখেরাতে) আমার সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে না তাদেরকে আমি তাদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেই, যাতে তারা তাদের অবাধ্যতার ভেতর ইতস্তত ঘুরতে থাকে (ইউনুস: ১১)। وَلَوْ یُؤَاخِذُ اللهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِمْ مَّا تَرَكَ عَلَیْهَا مِنْ دَآبَّۃٍ আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে (সহসা) ধৃত করলে ভূপৃষ্ঠে কোনও প্রাণীকে রেহাই দিতেন না (নাহল: ৬১)। لَوْ یُؤَاخِذُهُمْ بِمَا کَسَبُوْا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَ তিনি যদি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতে চাইতেন, তবে তাদেরকে অচিরেই শাস্তি দিতেন (কাহফ: ৫৮)। وَ لَوْ یُؤَاخِذُ اللهُ النَّاسَ بِمَا کَسَبُوْا مَا تَرَكَ عَلٰی ظَهْرِهَا مِنْ دَآبَّۃٍ আল্লাহ মানুষকে তাদের প্রতিটি কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতে শুরু করলে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কাউকে ছাড়তেন না (ফাতির: ৪৫)। ৩. আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না। আল্লাহ অবকাশ দেন। বান্দার কৃতকর্ম সম্পর্কে উদাসীন থাকেন না। وَ لَوْ یُؤَاخِذُ اللهُ النَّاسَ بِمَا کَسَبُوْا مَا تَرَكَ عَلٰی ظَهْرِهَا مِنْ دَآبَّۃٍ وَّ لٰکِنْ یُّؤَخِّرُهُمْ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمْ فَاِنَّ اللهَ کَانَ بِعِبَادِهٖ بَصِیْرًا আল্লাহ মানুষকে তাদের প্রতিটি কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতে শুরু করলে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কাউকে ছাড়তেন না। বস্তুত তিনি এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন। যখন তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ এসে যাবে তখন আল্লাহ স্বয়ং তাঁর বান্দাদের দেখে নিবেন (ফাতির: ৪৫)। . . উলুহিয়ত রুবুবিয়ত সম্পর্কিত মূলনীতি (৯) আল্লাহর সুমহান পবিত্র কিছু সিফাত। গুণাবলী। বৈশিষ্ট্য। মাখলুকের প্রতি আল্লাহর দয়া, করুণা ও কোমলতা। --- ১: আল্লাহ রহমতকে নিজের কর্তব্যরূপে স্থির করে নিয়েছেন। کَتَبَ عَلٰی نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ তিনি রহমতকে নিজের প্রতি অবশ্য কর্তব্যরূপে স্থির করে নিয়েছেন (তাই তাওবা করলে অতীতের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন)। (আনআম: ১২)। وَ رَحْمَتِیْ وَسِعَتْ كُلَّ شَیْءٍ আর আমার দয়া-সে তো প্রথ্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত (আরাফ: ১৫৬)। وَ رَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِ তোমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, দয়াময় (কাহফ: ৫৮)। ২. আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা, তার রহমতের দরজা খুলে দেন। এটা তাঁর অশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রহমতের দরজা বন্ধু করে দেন। এটা তার আদল। ইনসাফ। مَا یَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَۃٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۚ وَمَا یُمْسِكْ ۙ فَلَا مُرْسِلَ لَهٗ مِنْۢ بَعْدِهٖ আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত খুলে দেন, তা রোধ করার কেউ নেই, আর যা তিনি রুদ্ধ করেন, এমন কেউ নেই যে তারপর তা উন্মুক্ত করতে পারে (ফাতির: ২)। ৩. আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব কর্তব্যগুলো মানুষের সাধ্য ও সামর্থের সীমাতেই হয়। আল্লাহর দেয়া প্রতিটি বিধানই মানুষের কর্মশক্তি উপযোগী। لَا تُکَلَّفُ نَفْسٌ اِلَّا وُسْعَهَا কাউকে তার সামর্থের বাইরে ক্লেশ দেওয়া হয় না (বাকারা: ২৩৩)। لَا یُکَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পন করেন না (বাকারা: ২৮৬)। لَا نُکَلِّفُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত কষ্ট দিই না (আনআম: ১৫২)। ৪. মানুষকে দেয়া আল্লাহর প্রতিটি বিধানই সহজ। হালকা। আল্লাহর বিধান পালন করা কারো জন্যই কষ্টকর বা দুর্বহ নয়। কঠিন বিধান দিয়ে আল্লাহ আমাদের মোটেও কষ্টে ফেলতে চান না। یُرِیْدُ اللهُ بِكُمُ الْیُسْرَ وَلَا یُرِیْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ সেটাই করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে চান না (বাকারা: ১৮৫)। مَایُرِیْدُ اللهُ لِیَجْعَلَ عَلَیْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ আল্লাহ তোমাদের উপর কোনও কষ্ট চাপাতে চান না (মায়েদা: ৬)। وَ لَیْسَ عَلَیْكُمْ جُنَاحٌ فِیْمَاۤ اَخْطَاْتُمْ بِهٖ তোমাদের দ্বারা কোন ভুল হয়ে গেলে সেজন্য তোমাদের কোন গোনাহ হবে না (আহযাব: ৫)। ৫. আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য বান্দার ওপর রহমত টেনে আনে। وَاَطِیْعُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমতের আচরণ করা হয় (আলে ইমরান: ১৩২)। ৬. গুনাহ করে তাওবা করলে, আল্লাহ মাফ করে দেন। وَ اِنِّیْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰی আর এটাও সত্য যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনে, সৎকর্ম করে অতঃপর সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে আমি তার পক্ষে পরম ক্ষমাশীল (তোয়াহা: ৮২)। وَّهُوَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَ এবং তিনি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ট দয়ালু (ইউসুফ: ৬৪)। اِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُوْرٌ নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি মার্জনাকারী,পরম ক্ষমাশীল (হজ: ৬০)। اِنَّ اللهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ বস্তুত আল্লাহ মানুষের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণকারী, পরম দয়ালু (হজ: ৬৫)। وَ کَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (আহযাব: ৫)। وَ اِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِیْزُ الرَّحِیْمُ নিশ্চিত জেন তোমার প্রতিপালক পরাক্রমশালীও, পরম দয়ালুও (শুআরা: ১০৪)। اِنَّ اللهَ یَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন (যুমার: ৫৩)। اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (যুমার: ৫৩)। وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (তাহরীম: ১)। ৭. আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যার প্রতি ইচ্ছা দয়া করেন। وَاللهُ یَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهٖ مَنْ یَّشَآءُ অথচ আল্লাহ যাকে চান স্বীয় রহমতের দ্বারা বিশিষ্ট করে নেন (বাকারা: ১০৫)। وَ یَرْحَمُ مَنْ یَّشَآءُ যার প্রতি ইচ্ছা দয়া করবেন (আনকাবূত: ২১)। ৮. মুমিনের জীবন পরিচালনা পদ্ধতি হবে, আল্লাহর শাস্তির ভয়ে সতর্ক পদক্ষেপে পা ফেলবে পাশাপাশি ভুল হয়ে গেলে, আল্লাহর ক্ষমার আশাও রাখবে। اِعْلَمُوْۤا اَنَّ اللهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ وَ اَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ জেনে রাখ, আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর এবং এটাও জেনে রেখ যে, তিনি অতি ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু (মায়েদা: ৯৮)। اِنَّ رَبَّكَ سَرِیْعُ الْعِقَابِ ۫ۖ وَ اِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ এটা বাস্তব সত্য যে, তোমার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদাতা এবং এটাও বাস্তব সত্য যে, তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (আনআম: ১৬৫)। نَبِّئْ عِبَادِیْۤ اَنِّیْۤ اَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ ﴿ۙ۴۹﴾ وَ اَنَّ عَذَابِیْ هُوَ الْعَذَابُ الْاَلِیْمُ আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও, নিশ্চয় আমিই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এবং এটাও জানিয়ে দাও যে, আমার শাস্তিই মর্মন্তুুদ শাস্তি (হিজর: ৪৯-৫০)। ৯. আল্লাহ তাআলা শ্রেষ্ঠতম দয়ালু। الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ যিনি সকলের প্রতি দয়াবান, পরম দয়ালু (ফাতিহা: ২)। وَّهُوَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِیْنَ তিনি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ট দয়ালু (ইউসুফ: ৬৪)। উলুহিয়ত রুবুবিয়ত সম্পর্কিত মূলনীতি (১০) আল্লাহর সুমহান পবিত্র কিছু সিফাত। গুণাবলী। বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর আদল ও ইনসাফ। --- ১: আল্লাহ কাউকেই জুলুম করেন না। وَمَا اللهُ یُرِیْدُ ظُلْمًا لِّلْعٰلَمِیْنَ আল্লাহ জগদ্বাসীর প্রতি কোনও রকম জুলুম করতে চান না (আলে ইমরান: ১০৮)। اِنَّ اللهَ لَا یَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّۃٍ আল্লাহ কারও প্রতি অণু-পরিমাণও জুলুম করেন না (নিসা: ৪)। اِنَّ اللهَ لَا یُظْلِمُ النَّاسَ شَیْئًا وَّلٰکِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ یَظْلِمُوْنَ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করেন না। কিন্তু মানুষ নিজেই নিজের প্রতি জুলুম করে (ইউনুস: ৪৪)। وَ مَا ظَلَمْنٰهُمْ وَ لٰکِنْ کَانُوْۤا اَنْفُسَهُمْ یَظْلِمُوْنَ আমি তাদের উপর কোন জুলুম করিনি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করছিল (নাহল: ১১৮)। وَ لَا یَظْلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি কোন জুলুম করবেন না (কাহফ: ৪৯)। وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِیْدِ তোমার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না (ফুসসিলাত: ৪৬)। ২. একজনের অপরাধে আল্লাহ আরেকজনকে শাস্তি দেন না। وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَیْهَا ۚ وَلَا تَزِرُوَازِرَۃٌ وِّزْرَ اُخْرٰی প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার-বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না (আনআম: ১৬৪)। উলুহিয়ত রুবুবিয়ত সম্পর্কিত মূলনীতি (১১) আল্লাহর সুমহান পবিত্র কিছু সিফাত। গুণাবলী। বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর ইলম। --- ১: আল্লাহর ইলম সর্বব্যাপী। জগতের সবকিছু আল্লাহর ইলমের আয়ত্তাধীন। প্রতিটি অণু-পরমাণুর পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান আল্লাহর গোচরীভূত। জগতের কোনও কিছুই আল্লাহ ইলমের বাইরে নেই। وَاللهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত (নূর: ৬৪)। اِنَّهٗ هُوَ الْعَلِیْمُ الْحَکِیْمُ নিশ্চয়ই তিনিই সেই সত্তা, যার জ্ঞানও পরিপূর্ণ, হিকমতও পরিপূর্ণ (ইউসুফ: ১০০)। وَكُنَّا بِكُلِّ شَیْءٍ عٰلِمِیْنَ আমি প্রতিটি বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত (আম্বিয়া: ৮১)। اِنْ تُبْدُوْا شَیْئًا اَوْ تُخْفُوْهُ فَاِنَّ اللهَ کَانَ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمًا তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর বা তা গোপন রাখ, আল্লাহ তো প্রতিটি বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে (আহযাব: ৫৪)। وَكُلَّ شَیْءٍ اَحْصَیْنٰهُ فِیْۤ اِمَامٍ مُّبِیْنٍ এক সুস্পষ্ট কিতাবে প্রতিটি বিষয় সংরক্ষণ করে রেখেছি (ইয়াসিন: ১২)। وَ كُلَّ شَیْءٍ اَحْصَیْنٰهُ کِتٰبًا আমি প্রতিটি জিনিস লিপিবদ্ধভাবে সংরক্ষণ করেছি (নাবা: ২৯)। وَمَا یَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّۃٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِیْ کِتٰبٍ مُّبِیْنٍ তোমার প্রতিপালকের কাছে অণু-পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না- না পৃথিবীতে, না আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট এবং তার চেয়ে বড় এমন কিছু নেই, যা এক স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই (ইউনুস: ৬১)। وَ عِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَیْبِ لَا یَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ ؕ وَ یَعْلَمُ مَا فِی الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ؕ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَۃٍ اِلَّا یَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّۃٍ فِیْ ظُلُمٰتِ الْاَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَّ لَا یَابِسٍ اِلَّا فِیْ کِتٰبٍ مُّبِیْنٍ আর তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের কুঞ্জি। তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থলে ও জলে যা-কিছু আছে সে সম্পর্কে তিনি অবহিত। কোনও গাছের এমন কোনও পাতা ঝরে না, যে সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত নন। মাটির অন্ধকারে কোনও শস্যদানা অথবা আর্দ্র বা শুষ্ক এমন কোনও জিনিস নেই যা এক উন্মুক্ত কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই (আনআম: ৫৯)। وَ لِلّٰهِ غَیْبُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যত গুপ্ত রহস্য আছে, তার সবই আল্লাহর জ্ঞানে রয়েছে (হুদ: ১২৩)। وَمَا مِنْ دَآبَّۃٍ فِی الْاَرْضِ اِلَّا عَلَی اللهِ رِزْقُهَا وَیَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَ مُسْتَوْدَعَهَا ؕ كُلٌّ فِیْ کِتٰبٍ مُّبِیْنٍ ভূ-পষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিযিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। তিনি তাদের স্থায়ী ঠিকানাও জানেন এবং সাময়িক ঠিকানাও। সব কিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে (হুদ: ৬)। وَاللهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ আল্লাহ সকল কথা শোনেন, সবকিছু জানেন (তাওবা: ৯৮)। وَمَا مِنْ غَآئِبَۃٍ فِی السَّمَآءِ وَ الْاَرْضِ اِلَّا فِیْ کِتٰبٍ مُّبِیْنٍ তারা যে জুলুম করেছিল, সে কারণে তাদের প্রতি শাস্তিবাণী কার্যকর হয়ে যাবে। ফলে তারা কিছুই বলতে পারবে না (নামল: ৭৫)। اِنَّ اللهَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ شَهِیْدٌ নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের সাক্ষী (হজ: ১৭)। اِنَّهٗ عَلِیْمٌ قَدِیْرٌ নিশ্চয়ই তিনি জ্ঞানেরও মালিক, শক্তিরও মালিক (শুরা: ৫০)। یَعْلَمُ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ یَعْلَمُ مَا تُسِرُّوْنَ وَ مَا تُعْلِنُوْنَ ؕ وَ اللهُ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ আকাশম-লী ও পৃথিবীর যা-কিছু আছে সবই তিনি জানেন। তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর তাও তিনি পরিপূর্ণরূপে জানেন এবং আল্লাহ অন্তরের বিষয়াবলী পর্যন্ত ভালোভাবে জ্ঞাত আছেন (তাগাবুন: ৪)। وَ اَحَاطَ بِمَا لَدَیْهِمْ وَ اَحْصٰی كُلَّ شَیْءٍ عَدَدًا আর তিনি তাদের যাবতীয় অবস্থা পরিবেষ্টন করে আছেন এবং তিনি সমস্ত কিছু পুরোপুরি হিসাব করে রেখেছেন (জিন: ২৮)। ২. আল্লাহর ইলম আদি। সবকিছু সৃষ্টির আগে থেকেই, সবকিছু সম্পর্কে সমস্ত জ্ঞান আল্লাহর আয়ত্তাধীন ছিলো। আল্লাহর ইলমে কোনও কমবেশ হয় না। আল্লাহর ইলমে নতুন কিছু যোগ হয় না। যোগ হওয়ার সুযোগ নেই। প্রয়োজনও নেই। কারণ, সবসময়ের জন্যই তিনি সবকিছু জানেন। اَللهُ یَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰی وَمَا تَغِیْضُ الْاَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ প্রত্যেক নারী যে গর্ভ ধারণ করে আল্লাহ তা জানেন এবং মাতৃগর্ভে যা কমে ও বাড়ে তাও (রাদ: ৮)। ৩. আল্লাহ গর্ভবতী মায়ের গর্ভে কী আছে, সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। প্রতিটির প্রাণীর গর্ভ সম্পর্কেও আল্লাহ পূর্ণ ওয়াকিবহাল। গর্ভের আগের অবস্থা সম্পর্কেও জানেন। পরের অবস্থা সম্পর্কেও জানেন। প্রসবের সঠিক সময় সম্পর্কেও জানেন। এটা কোনও মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الْغَیْثَ ۚ وَ یَعْلَمُ مَا فِی الْاَرْحَامِ ؕ নিশ্চয়ই কিয়ামত (-এর ক্ষণ) সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল আল্লাহরই কাছে আছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কী আছে (লুকমান: ৩৪)। وَمَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰی وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِهٖ নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং যা সে প্রসব করে তা আল্লাহর জ্ঞাতসারেই করে (ফাতির: ১১)। وَمَا تَخْرُجُ مِنْ ثَمَرٰتٍ مِّنْ اَكْمَامِهَا وَ مَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰی وَلَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِهٖ আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন ফল তার আবরণ থেকে বের হয় না এবং কোন নারী গর্ভ ধারণ করে না এবং তার কোন বাচ্চাও জন্ম নেয় না (ফুসসিলাত: ৪৭)। ৪. সার্বিক, সর্বব্যাপী, সর্বাত্মক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই আছে। وَ لَا یُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِیْرٍ যে সত্তা যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত তাঁর মত সঠিক সংবাদ তোমাকে আর কেউ দিতে পারবে না (ফাতির: ১৪)। قُلْ لَّا یَعْلَمُ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ الْغَیْبَ اِلَّا اللهُ বলে দাও, আকাশম-লী ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না (নামল: ৬৫)। عٰلِمُ الْغَیْبِ فَلَا یُظْهِرُ عَلٰی غَیْبِهٖۤ اَحَدًا ﴿ۙ۲۶﴾ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰی مِنْ رَّسُوْلٍ তিনিই সকল গুপ্ত বিষয় জানেন। তিনি তাঁর গুপ্ত জ্ঞান সম্পর্কে কাউকে অবহিত করেন নাÑ তিনি যাকে (এ কাজের জন্য) মনোনীত করেছেন সেই রাসূল ছাড়া (জিন: ২৬-২৭)। ৫. আল্লাহর ইলম সর্বাত্মক। এটা জানার পর বান্দার মনে আল্লাহর প্রতি ভয়, সমীহবোধ আর আনুগত্য বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। আল্লাহর ইলম সর্বব্যাপী, এ বিষয়ক আয়াতগুলোতে সত্যপথ থেকে বিচ্যুতদের জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকি ও সতর্কবার্তা আছে। এসব আয়াতে আছে, সিরাতে মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত মানুষের জন্য আছে ধমকি। পাশাপাশি এসব আয়াতে আছে অনুগত বান্দাদের জন্য সুসংবাদ। কারণ আল্লাহ তাদের আমল সম্পর্কে জানেন। তিনি সময়মতো তাদের প্রতিদানে ভূষিত করবেন। وَ مَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا یَعْمَلُوْنَ তারা যা-কিছুই করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক উদাসীন নন (আনআম: ১৩২)। وَاللهُ یَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ তোমরা যা-কিছু কর, আল্লাহ তা জানেন (আনকাবূত: ৪৫)। اِنَّهٗ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের কথাও ভালোভাবে জানেন (যুমার: ৭)। یَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْاَعْیُنِ وَمَا تُخْفِی الصُّدُوْرُ আল্লাহ জানেন চোখের চোরাচাহনি এবং সেইসব বিষয়ও, যা বক্ষদেশ লুকিয়ে রাখে (গাফের: ১৯)। وَ اللهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ আল্লাহ তোমাদের গতিবিধ ও তোমাদের অবস্থানস্থল সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন (মুহাম্মাদ: ১৯)। . . লক্ষ্যণীয়: ১ঃ বক্ষ্যমাণ লেখাটি কুরআনিয়াত সিরিজে প্রকাশিতব্য বইয়ের চয়িতাংশ। বইটির কাজ শেষ হলে, প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। বিষয়ভিত্তিক আয়াত মুখস্থ বলার প্রতিযোগিতা। প্রশ্নের ধরণ হবে: ‘অমুক বিষয়ে আয়াত ও তরজমা বলুন’-এমন। আয়াতের শুরুতে দেয়া উপশিরোনামও বলতে হবে। আকর্ষণীয় পুরস্কার থাকবে। ইন শা আল্লাহ। আগ্রহবোধ করলে, তালিবে ইলমগণ প্রস্তুতি স্বরূপ এখন থেকে মুখস্থ করা শুরু করতে পারি। ২ঃ এই প্রতিযোগিতার প্রধান উদ্দেশ্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক চলে, আল্লাহকে রাজিখুশি করা। রাসূলের তরিকা অনুযায়ী চলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি করতে হলে, কুরআন ও সুন্নাহর ইলম অর্জন করতে হবে। এই আয়োজন সে লক্ষেই আবর্তিত। রাব্বে কারীম বরকত ও তাওফিক দান করুন। আমীন। ৩ঃ সবচেয়ে বড় কথা, এভাবে কুরআনচর্চার মাধ্যমে নিজের ঈমান পরিশুদ্ধ হবে। আকীদা পরিচ্ছন্ন হবে। দ্বীন ও দুনিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে। চিন্তা ও আচরণগত ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধিত হয়ে যাবে। ইন শা আল্লাহ। ৪ঃ এটা হবে আমার চিন্তার জন্য এক নিখুঁত গোসল। চিন্তা ও অভ্যাসে জমে থাকা ক্লেদ, আবর্জনা ধুয়েমুছে সাফ সুতরো করে দিবে। ইন শা আল্লাহ। ৫. এই বইয়ে আমরা শুধু আয়াত আর তরজমা সংকলন করবো। বোঝার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় উপ-শিরোনাম যোগ করব। ইন শা আল্লাহ। তারপরও কিছু আয়াতের তরজমা পড়ে, পুরোপুরি তৃপ্তি আসবে না। বাড়তি জানার আগ্রহ থেকে যাবে। এসব আয়াত নিয়ে সম্পূরক আলোচনা, কুরআনিয়াত সিরিজের ‘মাই লাইফ জার্নি উইথ কুরআন’ বইয়ে সন্নিবেশিত হবে। ইন শা আল্লাহ। ৬. উপ-শিরোনামগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো মূলত আয়াতসংশ্লিষ্ট তাদাব্বুরের নির্যাস। আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার, আমরা শুধু ‘মূলনীতি’ সংকলন করছি। তাই শুধু আয়াতের মূলনীতিমূলক অংশটাই চয়ন করার চেষ্টা করেছি।
সম্পর্কিত পোস্ট
আমার নানা বা দাদার আপন ভাই তথা চাচাত নানা-দাদার সাথে...
08 Sep, 2025
অনুচ্ছেদ : রাসূলুল্লাহ (সা) এর ওফাতের তারীখ ও সময় ওফাত কালে উনার বয়স, তার গোসল ও কাফন দাফনের বিবরণ তাঁর সমাধির স্থান নির্ধারণ
08 Sep, 2025
হায়াতুস সাহাবা pdf
08 Sep, 2025
অভিধান (বাংলা, আরবী, উর্দূ ও ইংরেজী) Pdf
08 Sep, 2025
ছবি অঙ্কনকারী বা চিত্র শিল্পীদের পরিণাম
08 Sep, 2025

পর্নের ব্রেইন ইফেক্ট পর্ব-১
08 Sep, 2025

অন্তর মরে যাওয়ার দশ কারণ
08 Sep, 2025
পর্নের ব্রেইন ইফেক্ট পর্ব-২
08 Sep, 2025