ইউসুফ
يوسف
بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় মেহেরবান।
1
الٓر ۚ تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱلْكِتَـٰبِ ٱلْمُبِينِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আলিফ-লাম-রা এগুলি সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১. আলিফ, লাম, রা। এগুলো ও এ জাতীয় বর্ণমালার মর্ম সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা হয়েছে। এ সূরাটিতে অবতরণকৃত আয়াতসমূহ এমন কুরআনের অন্তর্ভুক্ত যা নিজের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে।
2
إِنَّآ أَنزَلْنَـٰهُ قُرْءَٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি অবতীর্ণ করেছি আরাবী ভাষায় কুরআন যাতে তোমরা বুঝতে পার।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২. ওহে আরবজাতি! আমি কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। যাতে তোমরা এর মর্মসমূহ বুঝতে পার।
3
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ أَحْسَنَ ٱلْقَصَصِ بِمَآ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ هَـٰذَا ٱلْقُرْءَانَ وَإِن كُنتَ مِن قَبْلِهِۦ لَمِنَ ٱلْغَـٰفِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি তোমার কাছে উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি, অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে এই কুরআন প্রেরণ করে, যদিও এর পূর্বে তুমি ছিলে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩. ওহে রাসূল! আমি আপনার কাছে এই কুরআন অবতীর্ণ করে সত্যতা, শব্দ ও ভাষার বিশুদ্ধতা ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ঘটনাবলী বর্ণনা করছি। যদিও এর পূর্বে আপনি এ সম্পর্কে বেখবরদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যে বিষয়ে আপনার কোন জ্ঞানই ছিল না।
4
إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَـٰٓأَبَتِ إِنِّى رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِى سَـٰجِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন ইউসুফ তার পিতাকে বললঃ হে পিতা! আমি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য এবং চাঁদকে দেখেছি - দেখেছি ওদেরকে আমার প্রতি সাজদাহবনত অবস্থায়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪. ওহে রাসূল! আমি আপনাকে ঘটনাটির খবর দিচ্ছি। আপনি শুনুন, ইউসুফ (আলাইস-সালাম) যখন তাঁর পিতা ইয়াক‚ব (আলাইস-সালাম) কে বলেছিলেন: ওহে আব্বাজান! আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চন্দ্র আমাকে সাজদাহ করছে। এই স্বপ্নটি ইউসুফ (আলাইস-সালাম) এর জন্য ছিল একটি অগ্রিম সুসংবাদ।
5
قَالَ يَـٰبُنَىَّ لَا تَقْصُصْ رُءْيَاكَ عَلَىٰٓ إِخْوَتِكَ فَيَكِيدُوا۟ لَكَ كَيْدًا ۖ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ لِلْإِنسَـٰنِ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্নের বৃত্তান্ত তোমার ভাইদের নিকট বর্ণনা করনা; করলে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে; শাইতানতো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫. ইয়াক‚ব (আলাইস-সালাম) তাঁর পুত্র ইউসুফ (আলাইস-সালাম) কে বললেন: হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না। কেননা তারা সে স্বপ্নের মর্ম উপলব্ধি করে হিংসাবশতঃ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। শয়তান অবশ্যই মানুষের জন্য প্রকাশ্য শত্রæ।
6
وَكَذَٰلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأْوِيلِ ٱلْأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُۥ عَلَيْكَ وَعَلَىٰٓ ءَالِ يَعْقُوبَ كَمَآ أَتَمَّهَا عَلَىٰٓ أَبَوَيْكَ مِن قَبْلُ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْحَـٰقَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এভাবে তোমার রাব্ব তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিবেন, আর তোমার প্রতি ও ইয়াকূবের পরিবার পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন যেভাবে তিনি এটা পূর্বে পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি। নিশ্চয়ই তোমার রাব্ব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬. ওহে ইউসুফ! তুমি যেমন ওই স্বপ্ন দেখেছ, তোমার রব সেভাবেই তোমাকে মনোনীত করবেন। তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিবেন। তিনি তোমাকে নবুওয়াত দান করে তাঁর নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করবেন। যেমন তোমার পূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ: ইব্রাহীম ও ইসহাকের উপর তাঁর অনুগ্রহকে পরিপূর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই তোমার রব তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে সর্বজ্ঞ এবং ব্যবস্থাপনায় বড়ই প্রজ্ঞাবান।
7
۞ لَّقَدْ كَانَ فِى يُوسُفَ وَإِخْوَتِهِۦٓ ءَايَـٰتٌ لِّلسَّآئِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফ ও তার ভাইদের ঘটনায় জিজ্ঞাসুদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭. নিশ্চয়ই ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের ঘটনার মধ্যে তাদের খবরাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসুদের জন্য রয়েছে বহু শিক্ষা ও উপদেশ।
8
إِذْ قَالُوا۟ لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَىٰٓ أَبِينَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّ أَبَانَا لَفِى ضَلَـٰلٍ مُّبِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তারা (ভাইয়েরা) বলেছিলঃ আমাদের পিতার নিকট ইউসুফ এবং তার ভাইই (বিন ইয়ামীন) অধিক প্রিয়, অথচ আমরা একটি সংহত দল, আমাদের পিতাতো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮. যখন ইউসুফের ভাইয়েরা তাদের মধ্যে বলাবলি করছিল, নিশ্চয়ই ইউসুফ ও তাঁর সহোদর ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চেয়ে বেশি প্রিয়। অথচ আমরা বৃহৎ সংখ্যার একটি দল; সুতরাং কিভাবে তিনি শুধু তাদের দু’ জনকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিচ্ছেন? যখন তিনি অজ্ঞাত কারণে তাদের দু’ জনকে অযৌক্তিকভাবে আমাদের উপর অগ্রাধিকার দেন তখন আমরা দেখছি যে, তিনি সুস্পষ্ট ভুলের মধ্যে আছেন।
9
ٱقْتُلُوا۟ يُوسُفَ أَوِ ٱطْرَحُوهُ أَرْضًا يَخْلُ لَكُمْ وَجْهُ أَبِيكُمْ وَتَكُونُوا۟ مِنۢ بَعْدِهِۦ قَوْمًا صَـٰلِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফকে হত্যা কর অথবা তাকে কোন স্থানে ফেলে এসো। ফলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতি নিবিষ্ট হবে এবং তারপর তোমরা ভাল লোক হয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯. তোমরা ইউসুফকে হত্যা করে ফেল বা তাকে একটি দূর ভূমিতে গুম করে দাও, তাহলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি তোমাদের প্রতিই নিবদ্ধ হবে, তখন তিনি তোমাদেরকেই পরিপূর্ণরূপে ভালোবাসবেন। আর তাকে হত্যা বা গুমের ঘটনা ঘটানোর পর তোমরা সৎ লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে যখন তোমরা নিজেদের পাপ থেকে তওবা করে নিবে।
10
قَالَ قَآئِلٌ مِّنْهُمْ لَا تَقْتُلُوا۟ يُوسُفَ وَأَلْقُوهُ فِى غَيَـٰبَتِ ٱلْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ ٱلسَّيَّارَةِ إِن كُنتُمْ فَـٰعِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের মধ্যে একজন বললঃ ইউসুফকে হত্যা করনা, বরং যদি তোমরা কিছু করতেই চাও তাহলে তাকে কোন গভীর কুপে নিক্ষেপ কর, যাত্রী দলের কেহ তাকে তুলে নিয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০. ভাইদের একজন বলল: তোমরা ইউসুফকে হত্যা কর না, বরং তোমরা তাকে কুয়ার গভীরে ফেলে দাও, ফলে সেখান দিয়ে অতিবাহিত মুসাফিরদের কেউ তাকে নিয়ে যাবে; আর এটা তার হত্যার চেয়ে ক্ষতির দিক দিয়ে হালকা হবে, যদি তোমরা তার ব্যাপারে যা বলছ তার উপর দৃঢ়প্রত্যয়ী হও।
11
قَالُوا۟ يَـٰٓأَبَانَا مَا لَكَ لَا تَأْمَ۫نَّا عَلَىٰ يُوسُفَ وَإِنَّا لَهُۥ لَنَـٰصِحُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ হে আমাদের পিতা! ইউসুফের ব্যাপারে আপনি আমাদেরকে অবিশ্বাস করছেন কেন, যদিও আমরা তার হিতাকাংখী?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১. যখন তারা ইউসুফকে দূরে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে একমত হয়ে গেল তখন তারা নিজেদের পিতা ইয়ক‚ব (আলাইস-সালাম) কে বলল: ওহে আমাদের পিতা! আপনার কী হল যে, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদেরকে ভরসাস্থল মনে করছেন না? আমরা তার প্রতি অবশ্যই দয়ালু, যা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে আমরা তাকে তা থেকে রক্ষা করব, সে আপনার কাছে নিরাপদে ফিরে আসা পর্যন্ত তার হেফাজত ও যতœ নেয়াসহ আমরা অবশ্যই তার কল্যাণকামী, সুতরাং কি এমন আছে যা তাকে আমাদের সাথে পাঠাতে বাধা দিচ্ছে?
12
أَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَـٰفِظُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আপনি আগামীকাল তাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুন, সে ফলমূল খাবে ও খেলাধুলা করবে, আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১২. আপনি আমাদেরকে আগামী কাল তাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন, সে আমোদ-ফুর্তি ও মজা করবে। আর আমরা তার কষ্ট হতে পারে এমন সবকিছু থেকে তাকে অবশ্যই রক্ষা করব।
13
قَالَ إِنِّى لَيَحْزُنُنِىٓ أَن تَذْهَبُوا۟ بِهِۦ وَأَخَافُ أَن يَأْكُلَهُ ٱلذِّئْبُ وَأَنتُمْ عَنْهُ غَـٰفِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ এটা আমাকে কষ্ট দিবে যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি ভয় করি, তোমরা তার প্রতি অমনোযোগী হলে তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৩. ইয়াক‚ব (আলাইস-সালাম) তাঁর ছেলেদেরকে বললেন: তাকে তোমাদের নিয়ে যাওয়া আমাকে অবশ্যই চিন্তিত করছে। কেননা আমি তার বিচ্ছিন্নতা সহ্য করতে পারব না এবং আমি তার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছি যে, তোমরা খেল-তামাশায় ব্যস্ত হয়ে তার থেকে গাফেল হয়ে যাবে তখন তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলবে।
14
قَالُوا۟ لَئِنْ أَكَلَهُ ٱلذِّئْبُ وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّآ إِذًا لَّخَـٰسِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আমরা একটি সংহত দল হওয়া সত্ত্বেও যদি তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলে তাহলেতো আমরা ক্ষতিগ্রস্তই হব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৪. তারা নিজেদের পিতাকে বলল: আমরা একদল লোক হওয়া সত্তে¡ও যদি ইউসুফকে বাঘে খায় তাহলে অবশ্যই আমাদের মাঝে কোন কল্যাণ নেই। যখন আমরা তাকে বাঘ থেকে রক্ষা করতে পারব না তখন অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদেরই অন্তর্ভুক্ত।
15
فَلَمَّا ذَهَبُوا۟ بِهِۦ وَأَجْمَعُوٓا۟ أَن يَجْعَلُوهُ فِى غَيَـٰبَتِ ٱلْجُبِّ ۚ وَأَوْحَيْنَآ إِلَيْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُم بِأَمْرِهِمْ هَـٰذَا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখন তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে গভীর কূপে নিক্ষেপ করতে একমত হল, এমতাবস্থায় আমি তাকে জানিয়ে দিলামঃ তুমি তাদেরকে তাদের এই কর্মের কথা অবশ্যই বলে দিবে যখন তারা তোমাকে চিনবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৫. পরিশেষে ইয়াক‚ব (আলাইস-সালাম) তাকে তাদের সাথেই পাঠিয়ে দিলেন। যখন তারা তাকে বহুদূর নিয়ে গেল এবং তারা কুয়ার গভীরে তাকে নিক্ষেপ করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী হল তখন আমি ইউসুফকে জানিয়ে দিলাম যে, তুমি একদা অবশ্যই তাদের সামনে তাদের এ কর্ম-কাÐ ব্যক্ত করবে; অথচ তখন তোমার সম্পর্কে তারা বেখবরই থাকবে।
16
وَجَآءُوٓ أَبَاهُمْ عِشَآءً يَبْكُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা রাতে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার নিকট এলো।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৬. ইউসুফের ভাইয়েরা তাদের ষড়যন্ত্রকে গোপন রাখার জন্য ভান করে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার কাছে এশার সময় এসে উপস্থিত হল।
17
قَالُوا۟ يَـٰٓأَبَانَآ إِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوسُفَ عِندَ مَتَـٰعِنَا فَأَكَلَهُ ٱلذِّئْبُ ۖ وَمَآ أَنتَ بِمُؤْمِنٍ لَّنَا وَلَوْ كُنَّا صَـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতা করেছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের নিকট রেখে গিয়েছিলাম, অতঃপর তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনিতো আমাদের বিশ্বাস করবেননা, যদিও আমরা সত্যবাদী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৭. তারা বলল: ওহে আমাদের আব্বাজান! আমরা দৌড় ও তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করছিলাম। তখন আমরা ইউসুফকে আমাদের পোশাক ও মালপত্রের কাছে সেগুলোর হেফাজতের জন্য রেখে গিয়েছিলাম। আর সে সময়ই তাকে নেকড়ে বাঘ এসে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আসলে আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না যদিও আমরা যে বিষয়ে আপনাকে খবর দিচ্ছি সে বিষয়ে সত্যবাদী।
18
وَجَآءُو عَلَىٰ قَمِيصِهِۦ بِدَمٍ كَذِبٍ ۚ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ وَٱللَّهُ ٱلْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তারা তার জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। সে বললঃ না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৮. তারা একটি বাহানা করে তাদের খবরটি নিশ্চিত করার জন্য ইউসুফের জামায় এমন রক্ত মিশিয়ে নিয়ে আসল যা আসলে তার রক্ত নয়। যেন তারা এ দ্বারা এমন ধারণা সৃষ্টি করতে পারে যে, এটি মূলতঃ তাকে বাঘে খেয়ে ফেলার আলামত। তবে ইয়াকূব (আলাইস-সালাম) এর বিচক্ষণতায় তাদের এ মিথ্যা ধরা পড়ে গেল যে, জামা তো ছেঁড়া নয়, তখন তিনি তাদেরকে বললেন: ব্যাপারটি তোমরা যেভাবে খবর দিচ্ছ তা নয়, বরং তোমাদের প্রবৃত্তি তোমাদেরকে একটি খারাপ কাহিনী বানাতে উদ্বুদ্ধ করেছে; তাই তোমরা তা বানিয়েছ। সুতরাং আমার কর্তব্য হল উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ করা, যাতে কোন ধরনের অস্থিরতা থাকবে না। ইউসুফের ব্যাপারে তোমরা যা বর্ণনা করছ সে ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছেই আমি সাহায্য প্রার্থনা করি।
19
وَجَآءَتْ سَيَّارَةٌ فَأَرْسَلُوا۟ وَارِدَهُمْ فَأَدْلَىٰ دَلْوَهُۥ ۖ قَالَ يَـٰبُشْرَىٰ هَـٰذَا غُلَـٰمٌ ۚ وَأَسَرُّوهُ بِضَـٰعَةً ۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِمَا يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এক যাত্রী দল এলো, তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল, সে বলে উঠলঃ কি সুখবর! এ যে এক কিশোর! অতঃপর তারা তাকে পণ্য রূপে লুকিয়ে রাখল, তারা যা করছিল সেই বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবগত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১৯. একটি চলমান কাফেলা আসল। তারা তাদেরকে যে পানি পান করাবে তাকে পানির জন্য পাঠাল। সে কুয়াতে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল। ইউসুফ তখন রশির সাথে ঝুলে গেল। যে রশি নামিয়েছিল সে যখন তাকে দেখল তখন সে খুশিতে বলে উঠল: কী যে আনন্দের খবর! এ যে দেখছি এক বালক! সে এবং তার কোন কোন সাথী তখন তাকে কাফেলার অন্য লোকদের থেকে এ জন্য গোপন করল যে, সে মূলতঃ একটি পণ্য। তাই তারা তাকে পণ্য হিসেবেই গ্রহণ করবে। তারা ইউসুফকে কেনা-বেচা নিয়ে যা করছিল আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে খুবই অবহিত। তাদের কার্যকলাপ তাঁর কাছে কিছুই গোপন নয়।
20
وَشَرَوْهُ بِثَمَنٍۭ بَخْسٍ دَرَٰهِمَ مَعْدُودَةٍ وَكَانُوا۟ فِيهِ مِنَ ٱلزَّٰهِدِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তারা তাকে বিক্রি করল স্বল্প মূল্যে, মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে, তারা এতে ছিল নির্লোভ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২০. পানি সংগ্রহকারী ও তার কতিপয় সাথী মিশরে গিয়ে তাকে অতি স্বল্প মুল্যে বিক্রি করে দিল। আর তা ছিল খুবই কম; গণনায় সহজ কতিপয় দেরহাম মাত্র। মূলতঃ তারা তার প্রতি নিরুৎসাহিত ছিল। তাই তারা তার থেকে দ্রæত পরিত্রাণের অপেক্ষায় ছিল। কেননা তারা তার অবস্থা দেখে বুঝেছিল যে, সে তো আসলেই কোন কৃতদাস নয়। তাই তারা নিজ পরিবার থেকেই নিজেদের উপর ভয় পেয়েছিল। আর এটি ছিল তার প্রতি আল্লাহর পরিপূর্ণ রহমতের নজীর। যেন সে তাদের কাছে দীর্ঘকাল না পড়ে থাকে।
21
وَقَالَ ٱلَّذِى ٱشْتَرَىٰهُ مِن مِّصْرَ لِٱمْرَأَتِهِۦٓ أَكْرِمِى مَثْوَىٰهُ عَسَىٰٓ أَن يَنفَعَنَآ أَوْ نَتَّخِذَهُۥ وَلَدًا ۚ وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِى ٱلْأَرْضِ وَلِنُعَلِّمَهُۥ مِن تَأْوِيلِ ٱلْأَحَادِيثِ ۚ وَٱللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰٓ أَمْرِهِۦ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বললঃ সম্মানজনকভাবে এর থাকার ব্যবস্থা কর, সম্ভবতঃ সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা একে পুত্র রূপেও গ্রহণ করতে পারি এবং এভাবে আমি ইউসুফকে সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য। আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২১. মিশর থেকে যে ইউসুফকে ক্রয় করেছিল সে তার স্ত্রীকে বলল: তুমি তার সাথে সদ্ব্যবহর কর এবং আমাদের সাথে তার থাকার সুব্যবস্থা কর, সম্ভবত: সে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজে উপকারে আসবে অথবা তাকে আমরা ছেলে বানিয়ে নিব। যেভাবে আমি ইউসুফকে হত্যা করা থেকে রক্ষা করি, কুয়া থেকে তাকে বের করি, মিশরের প্রশাসকের অন্তরে তার উপর মমতা সৃষ্টি করে দেই সেভাবেই আমি তাকে মিশরে অধিষ্ঠিত করি এবং তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেই। আল্লাহ তাঁর কর্মে কর্তৃত্বশীল। সুতরাং তাঁরই হুকুম বাস্তবায়ন হবে। তাই কেউ তাঁকে বাধ্য করার নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কাফের। যারা তা জানে না।
22
وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُۥٓ ءَاتَيْنَـٰهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল তখন আমি তাকে হিকমাত ও জ্ঞান দান করলাম, এবং এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২২. ইউসুফ যখন সুঠাম শরীর ও শক্তিশালী হওয়ার বয়সে উপনীত হল তখন আমি তাকে বুঝ ও জ্ঞান দান করলাম। আর আমি তাকে যে ধরনের প্রতিদান দিয়েছি সেভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে তাদের ইবাদতের প্রতিদান দিয়ে থাকি।
23
وَرَٰوَدَتْهُ ٱلَّتِى هُوَ فِى بَيْتِهَا عَن نَّفْسِهِۦ وَغَلَّقَتِ ٱلْأَبْوَٰبَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ ۚ قَالَ مَعَاذَ ٱللَّهِ ۖ إِنَّهُۥ رَبِّىٓ أَحْسَنَ مَثْوَاىَ ۖ إِنَّهُۥ لَا يُفْلِحُ ٱلظَّـٰلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে যে স্ত্রী লোকের গৃহে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎ কাজ কামনা করল এবং দরজাগুলি বন্ধ করে দিল ও বললঃ চলে এসো (আমরা কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করি), সে বললঃ আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি (আযীয) আমার প্রভু! তিনি আমাকে সম্মানজনকভাবে থাকতে দিয়েছেন, সীমালংঘনকারীরা সফলকাম হয়না।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৩. মিশরের অধিপতির স্ত্রী বিনয় ও অপকৌশল অবলম্বন করে ইউসুফের সাথে অপকর্ম কামনা করল এবং সে একান্ত নির্জনতার জন্য দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর সে তাঁকে বলল: তুমি আমার দিকে এস। ইউসুফ (আলাইস-সালাম) তখন বললেন: তুমি আমাকে যে পথে আহŸান করছ আমি তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করছি। আমার প্রভু তাঁর কাছে আমার থাকার ব্যাপারে অনেক অনুগ্রহ করেন। অতএব, আমি তার খেয়ানত করব না। যদি আমি খেয়ানত করি তবে তো আমি জালেম হয়ে যাব। আর নিশ্চয়ই জালেমরা সফলতা অর্জন করতে পারে না।
24
وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِۦ ۖ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَآ أَن رَّءَا بُرْهَـٰنَ رَبِّهِۦ ۚ كَذَٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلْفَحْشَآءَ ۚ إِنَّهُۥ مِنْ عِبَادِنَا ٱلْمُخْلَصِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সেই রমণীতো তার প্রতি আসক্ত হয়ে ছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার রবের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত। তাকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে ছিল আমার বিশুদ্ধ চিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৪. সেই মহিলার অন্তর অসৎ কর্মের জন্য আসক্ত হয়ে উঠল এবং ইউসুফ (আলাইস-সালাম)ও তাতে ভয়ের আশঙ্কায় ছিলেন। যদি তিনি আল্লাহর ওই সমস্ত নিদর্শন না দেখতেন যা তাঁকে তা থেকে বিরত ও দূরে রেখেছে তাহলে এ থেকে বেঁচে থাকা তার জন্য সম্ভব হতো না। আমি তাঁকে এ জন্যেই তা দেখিয়েছি, যেন আমি তাঁকে অসৎকর্ম থেকে মুক্ত রাখি এবং তাঁকে ব্যভিচার ও খেয়ানত থেকে দূরে রাখি। নিশ্চয়ই ইউসুফ (আলাইস-সালাম) হলেন রেসালত ও নবুওয়াতের জন্য আমার পছন্দনীয় বান্দাদের একজন।
25
وَٱسْتَبَقَا ٱلْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيصَهُۥ مِن دُبُرٍ وَأَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَا ٱلْبَابِ ۚ قَالَتْ مَا جَزَآءُ مَنْ أَرَادَ بِأَهْلِكَ سُوٓءًا إِلَّآ أَن يُسْجَنَ أَوْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা উভয়ে দৌড়ে দরযার দিকে গেল এবং স্ত্রী লোকটি পিছন হতে তার জামা ছিড়ে ফেলল, তারা স্ত্রী লোকটির স্বামীকে দরযার কাছে দেখতে পেল। স্ত্রী লোকটি বললঃ যে তোমার পরিবারের সাথে কু-কাজ কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ অথবা অন্য কোন বেদনাদায়ক শাস্তি ব্যতীত আর কি দন্ড হতে পারে?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৫. তারা উভয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল; ইউসুফ (আলাইস-সালাম) নিজেকে বাঁচানোর জন্য আর মহিলাটি তাঁকে বের হতে বাধা দেয়ার জন্য। সুতরাং মহিলাটি তাঁর জামা টেনে ধরল এবং এক পর্যায়ে সে তাঁর জামার পিছন দিকটা ছিঁড়ে ফেলল। এসময় তারা উভয়ে মহিলাটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। তখন মহিলাটি তার স্বামীকে ছলনা করে বলে উঠল: তোমার স্ত্রীর সাথে যে অসৎকর্মের ইচ্ছাপোষণ করে তার জেল বা মারাত্মক শাস্তি ছাড়া আর কী ফয়সালা হতে পারে?!
26
قَالَ هِىَ رَٰوَدَتْنِى عَن نَّفْسِى ۚ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ أَهْلِهَآ إِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ ٱلْكَـٰذِبِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে (ইউসুফ) বললঃ সে’ই আমা হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিল। স্ত্রী লোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলঃ যদি তার জামার সম্মুখ দিক ছিন্ন করা হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী লোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৬. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) বললেন: সে-ই আমার সাথে অসৎকর্ম করতে চেয়েছে; আমি তার সাথে অসৎকর্ম করতে চাইনি। আল্লাহ তাআলা তার পরিবার থেকে এমন একজন শিশু নিয়োজিত করলেন যে দোলনাতেই কথা বলতে লাগল। আর সে এ বলে সাক্ষ্য দিল: ইউসুফের জামা যদি তার সামনে থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে এতে প্রমানিত যে, মহিলাটির কথা সত্য। কেননা, এতে বুঝা যাচ্ছে যে, সে তখন নিজেকে হিফাযত করার জন্যই ইউসুফকে বাধা দিচ্ছিল। সুতরাং ইউসুফই মিথ্যাবাদী।
27
وَإِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর যদি তার জামা পিছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী লোকটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৭. আর যদি তার জামা পিছন থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে তাতে প্রমাণ হবে যে, ইউসুফের কথা সত্য। কেননা, এতে বুঝা যাচ্ছে যে, মহিলাটি তাকে আকৃষ্ট করছিল আর ইউসুফ তার নিকট থেকে পলায়ণ করছিল। তাই মহিলাটিই মিথ্যাবাদী।
28
فَلَمَّا رَءَا قَمِيصَهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُۥ مِن كَيْدِكُنَّ ۖ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সুতরাং গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়েছে তখন সে বললঃ ভীষণ তোমাদের ছলনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৮. স্বামী যখন দেখলো যে, ইউসুফের জামা পেছন থেকে ছেঁড়া তখন ইউসুফের সত্যবাদিতাই সাব্যস্ত হল এবং সে বলল: অবশ্যই এ অপবাদ যা তুমি তাকে দিয়েছ তা ছলনামাত্র। ওহে মহিলা জাতি! তোমাদের সবার দ্বারাই এ ধরনেরই ছলনা হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই তোমাদের ছলনা অতি ভয়ানক।
29
يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَـٰذَا ۚ وَٱسْتَغْفِرِى لِذَنۢبِكِ ۖ إِنَّكِ كُنتِ مِنَ ٱلْخَاطِـِٔينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে ইউসুফ! তুমি এটা উপেক্ষা কর এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তুমিই অপরাধী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
২৯. সে ইউসুফকে বলল: ওহে ইউসুফ! তুমি এ ব্যাপারটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখ; কাউকে বিষয়টি বর্ণনা কর না। আর ওহে নারী! তুমি নিজ অপরাধের জন্য ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই তুমি ইউসুফকে আকৃষ্ট করার কারণে অপরাধীদেরই অন্তর্ভুক্ত।
30
۞ وَقَالَ نِسْوَةٌ فِى ٱلْمَدِينَةِ ٱمْرَأَتُ ٱلْعَزِيزِ تُرَٰوِدُ فَتَىٰهَا عَن نَّفْسِهِۦ ۖ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا ۖ إِنَّا لَنَرَىٰهَا فِى ضَلَـٰلٍ مُّبِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নগরে কতিপয় নারী বললঃ আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎ কাজ কামনা করেছে; প্রেম তাকে উম্মত্ত করেছে, আমরাতো তাকে দেখছি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩০. মহিলাটির খবর শহরে ছড়িয়ে পড়ল। তখন একদল মহিলা ঘৃণা করেই বলল: আযীযের তথা সম্মানিত কর্তা ব্যক্তির স্ত্রী নিজেই তার দাসকে তার দিকে আহŸান জানিয়েছে। এমনকি তার ভালবাসা তাকে উন্মাদ করে দিয়েছে। সে তার দাস হওয়া সত্তে¡ও তার ভালবাসায় সে যেভাবে আকৃষ্ট হয়েছে সে কারণে আমরা তাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতেই পতিত দেখছি।
31
فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ أَرْسَلَتْ إِلَيْهِنَّ وَأَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَـًٔا وَءَاتَتْ كُلَّ وَٰحِدَةٍ مِّنْهُنَّ سِكِّينًا وَقَالَتِ ٱخْرُجْ عَلَيْهِنَّ ۖ فَلَمَّا رَأَيْنَهُۥٓ أَكْبَرْنَهُۥ وَقَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ وَقُلْنَ حَـٰشَ لِلَّهِ مَا هَـٰذَا بَشَرًا إِنْ هَـٰذَآ إِلَّا مَلَكٌ كَرِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
স্ত্রী লোকটি যখন তাদের ষড়যন্ত্রের কথা শুনল, তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল, তাদের প্রত্যেককে একটি করে চাকু দিল এবং যুবককে বললঃ তাদের সামনে বের হও। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল তখন তারা তার সৌন্দর্যে অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। তারা বললঃ অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্য! এতো মানুষ নয়, এতো এক মহিমান্বিত মালাক/ফেরেশতা!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩১. আযীযের স্ত্রী যখন শহরের মহিলাদের পক্ষ থেকে তার প্রতি সমালোচনা ও দোষারোপের ব্যাপারে শুনল তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল। যেন তারা ইউসুফকে দেখে তার অপারগতা বুঝতে পারে। তাদের জন্য সে এমন স্থান প্রস্তুত করল যেখানে থাকল হেলান দেয়া শয্যা ও বালিশ। সে আমন্ত্রিত প্রত্যেক মহিলাকে একটি করে ছুরি দিল যা দিয়ে সে খাদ্য কেটে খাবে। অতঃপর সে ইউসুফকে বলল: তাদের সামনে বের হও। যখন তারা তাকে দেখল তখন তাদের নিকট বড়ই আশ্চর্য মনে হল। আর তার সৌন্দর্যে তারা হতবুদ্ধি ও বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেল। তাকে নিয়ে কঠিন বিস্ময়ে তারা খাদ্য কেটে খাওয়ার সময় ছুরি দিয়ে নিজ নিজ হাত কেটে যখম করে দিল। আর বলে উঠল: আল্লাহই মহা পবিত্র! এ যুবক তদাসটি তো মানুষ নয়। তার মধ্যে যে সৌন্দর্য রয়েছে তা মানুষের মাঝে কল্পনা করা যায় না। সুতরাং সে একজন সম্মানিত ফেরেশÍা ছাড়া আর কিছুই নয়।
32
قَالَتْ فَذَٰلِكُنَّ ٱلَّذِى لُمْتُنَّنِى فِيهِ ۖ وَلَقَدْ رَٰوَدتُّهُۥ عَن نَّفْسِهِۦ فَٱسْتَعْصَمَ ۖ وَلَئِن لَّمْ يَفْعَلْ مَآ ءَامُرُهُۥ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُونًا مِّنَ ٱلصَّـٰغِرِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ এই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ, আমি তার হতে অসৎ কাজ কামনা করেছি; কিন্তু সে নিজকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি, সে যদি তা না করে তাহলে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩২. আযীযের স্ত্রী মহিলাদের অবস্থা দেখে তাদেরকে বলল: এই সেই দাস যার ভালবাসার কারণে তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করেছ। আমিই তাকে চেয়েছিলাম এবং তাকে ভুলানোর জন্য ছলনা করেছি কিন্তু সে বিরত থেকেছে। তবে ভবিষ্যতে তার কাছে আমি যা চাইব সে যদি তা না করে তাহলে অবশ্যই সে জেলে প্রবেশ করবে আর সে হীন লোকদেরই অর্ন্তভুক্ত হবে।
33
قَالَ رَبِّ ٱلسِّجْنُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا يَدْعُونَنِىٓ إِلَيْهِ ۖ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّى كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ ٱلْجَـٰهِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফ বললঃ হে আমার রাব্ব! এই নারীরা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার কাছে অধিক প্রিয়। আপনি যদি আমাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা না করেন তাহলে ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৩. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর রবকে ডেকে বললেন: ওহে আমার রব! তারা আমাকে যে জেলখানার হুমকি দিচ্ছে তা-ই আমার কাছে যে অসৎকর্মের দিকে তারা আমাকে ডাকছে তা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। তাদের অপকৌশল যদি আমার কাছে প্রকাশ না হয়ে যায় তবে আমি তাদের দিকেই ঝুঁকে যাব। তখন আমি যদি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাই তবে আমি অজ্ঞদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব এবং আমি মূলতঃ আমার কাছে তারা যা চায় তারই অনুগত হয়ে পড়ব।
34
فَٱسْتَجَابَ لَهُۥ رَبُّهُۥ فَصَرَفَ عَنْهُ كَيْدَهُنَّ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তার রাব্ব তার আহবানে সাড়া দিলেন এবং তাদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন, তিনিতো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৪. অতঃপর আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে নিলেন এবং আযীযের স্ত্রীর চক্রান্ত ও শহরের মহিলাদের চক্রান্ত তার থেকে নিরসন করে দিলেন। নিশ্চয়ই তিনি ইউসুফের দোয়া ও প্রত্যেক দোয়াকারীর দোয়ার সর্বশ্রোতা এবং তাঁর ও অন্য সবার অবস্থা সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
35
ثُمَّ بَدَا لَهُم مِّنۢ بَعْدِ مَا رَأَوُا۟ ٱلْـَٔايَـٰتِ لَيَسْجُنُنَّهُۥ حَتَّىٰ حِينٍ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
নিদর্শনাবলী দেখার পর তাদের মনে হল যে, তাকে কিছু কালের জন্য কারারুদ্ধ করতেই হবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৫. তারপর যখন তারা ইউসুফের নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ দেখল তখন আযীয ও তার জাতির মতানুযায়ী তারা তাঁকে এক অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারাগারে বন্দি করার সিদ্ধান্ত নিল। যেন সেই অপমানজনক খবর প্রকাশ না পায়।
36
وَدَخَلَ مَعَهُ ٱلسِّجْنَ فَتَيَانِ ۖ قَالَ أَحَدُهُمَآ إِنِّىٓ أَرَىٰنِىٓ أَعْصِرُ خَمْرًا ۖ وَقَالَ ٱلْـَٔاخَرُ إِنِّىٓ أَرَىٰنِىٓ أَحْمِلُ فَوْقَ رَأْسِى خُبْزًا تَأْكُلُ ٱلطَّيْرُ مِنْهُ ۖ نَبِّئْنَا بِتَأْوِيلِهِۦٓ ۖ إِنَّا نَرَىٰكَ مِنَ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তার সাথে দু’জন যুবক কারাগারে প্রবেশ করল, তাদের একজন বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি আংগুর নিংড়িয়ে রস বের করছি এবং অপরজন বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি আমার মাথায় রুটি বহন করছি এবং পাখী তা হতে খাচ্ছে, আমাদেরকে আপনি এর তাৎপর্য জানিয়ে দিন, আমরা আপনাকে সৎকর্মপরায়ণ দেখছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৬. সুতরাং তারা তাঁকে কারগারেই বন্দি করল। তার সাথে কারাগারে দু’জন যুবকও প্রবেশ করল। দুই যুবকের একজন ইউসুফকে বলল: আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আঙুর নিংড়িয়ে মদ তৈরি করছি আর দ্বিতীয়জন বলল: আমি দেখেছি যে, আমি নিজ মাথায় রুটি বহন করছি। সেখান থেকে পাখিরা ঠুকরিয়ে খাচ্ছে। ওহে ইউসুফ! আমরা যা দেখেছি তার ব্যাখ্যা আমাদেরকে বলে দিন। আমরা তো আপনাকে পরোপকারী বলেই মনে করছি।
37
قَالَ لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهِۦٓ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِۦ قَبْلَ أَن يَأْتِيَكُمَا ۚ ذَٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِى رَبِّىٓ ۚ إِنِّى تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَهُم بِٱلْـَٔاخِرَةِ هُمْ كَـٰفِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফ বললঃ তোমাদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয় তা আসার পূর্বে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে দিব, আমি যা তোমাদেরকে বলব তা আমার রাব্ব আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হতে বলব, যে সম্প্রদায় আল্লাহকে বিশ্বাস করেনা ও পরলোকে অবিশ্বাসী হয় আমি তাদের মতবাদ বর্জন করেছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৭. ইউসুফ (আলাইস-সালাম) বললেন: বাদশাহ বা অন্য কারো পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট যে খাদ্য সরবরাহ করা হয় তা তোমাদের কাছে আসার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে তার রহস্য বর্ণনা করে দিব। তোমাদের এ দু’য়ের যে ব্যাখ্যা আমি জানি তা আমার রব আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তারই অন্তর্ভুক্ত। তা কিন্তু কোন জ্যোতিষী বা গণকের পক্ষ থেকে নয়। আমি এমন এক জাতির ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করে এসেছি যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেনি এবং তারা পরকালেরও অস্বীকারকারী।
38
وَٱتَّبَعْتُ مِلَّةَ ءَابَآءِىٓ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ ۚ مَا كَانَ لَنَآ أَن نُّشْرِكَ بِٱللَّهِ مِن شَىْءٍ ۚ ذَٰلِكَ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى ٱلنَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি আমার পিতৃ পুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়, এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৮. আমি অনুসরণ করি আমার পূর্বপুরুষ: ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াক‚ব (আলাইহিমুস-সালাম) এর ধর্মের। তা হল আল্লাহর তাওহীদের দ্বীন। আল্লাহর সাথে শরীক করা আমাদের জন্য মোটেও উচিত হবে না। তিনিই এক ও অদ্বিতীয়। সেই তাওহীদ ও ঈমান যার উপর আমি ও আমার পূর্বপুরুষ প্রতিষ্ঠিত রয়েছি তা হল আমাদের উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদেরকে এর জন্য তাওফীক দান করেছেন। আর অন্য সবার উপরও তাঁর অনুগ্রহ যে, তিনি তাদের প্রতি সেই তাওহীদের নেয়ামত দিয়েই নবীদেরকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ লোকই আল্লাহর এ সকল নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না বরং তারা তাঁর সাথে কুফরি করে।
39
يَـٰصَـٰحِبَىِ ٱلسِّجْنِ ءَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلْوَٰحِدُ ٱلْقَهَّارُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু রাব্ব শ্রেয়, নাকি পরাক্রমশালী এক আল্লাহ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৩৯. তারপর ইউসুফ (আলাইস-সালাম) তাঁর জেলের সঙ্গীদ্বয়কে সম্বোধন করে বললেন: কয়েকজন মাবূদের ইবাদত করা উত্তম, না সেই এক আল্লাহর যার কোন শরীক নেই, যিনি অন্যকে পরাভ‚ত করেন। তাঁকে কেউ পরাভ‚ত করতে পারে না?
40
مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَـٰنٍ ۚ إِنِ ٱلْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাঁকে ছেড়ে তোমরা শুধু কতকগুলি নামের ইবাদাত করছ, যে নাম তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ, এইগুলির কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। হুকুম (বিধান) দেয়ার অধিকার শুধু আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে, আর কারও ইবাদাত করবেনা; এটাই সরল সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪০. তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যেগুলোর ইবাদত করছ সেগুলো নিছক কিছু কিংবদন্তীমূলক নাম মাত্র। যেগুলোকে তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা মাবূদ হিসেবে সাব্যস্ত করে নিয়েছে। অথচ তাদের মাঝে উপাস্য হওয়ার বৈশিষ্ট্যাবলীর কোন কিছুই নেই। তোমরা তাদেরকে মাবূদ সাব্যস্ত করে নেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ এমন কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি যা সেগুলোর সত্যতার ব্যাপারে কোন ধরনের দলীল বলে অভিহিত হতে পারে। এক আল্লাহ ছাড়া সকল সৃষ্টির মধ্যে কারও হুকুম দেয়ার ক্ষমতা নেই, না এসব নামের যেগুলোকে তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা মাবূদ হিসেবে সাব্যস্ত করে নিয়েছ। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ইবাদতের ক্ষেত্রে তাঁরই এককত্ব সাব্যস্ত করার হুকুম দেন এবং তিনি তোমাদেরকে তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করতে নিষেধ করেন। আর এটিই হল তাওহীদ; এমন সরল দ্বীন যার মধ্যে কোন ধরনের বক্রতা নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানেনা। যার কারণে তারা আল্লাহর সাথে শরীক করে কোন কোন সৃষ্টির ইবাদত করে থাকে।
41
يَـٰصَـٰحِبَىِ ٱلسِّجْنِ أَمَّآ أَحَدُكُمَا فَيَسْقِى رَبَّهُۥ خَمْرًا ۖ وَأَمَّا ٱلْـَٔاخَرُ فَيُصْلَبُ فَتَأْكُلُ ٱلطَّيْرُ مِن رَّأْسِهِۦ ۚ قُضِىَ ٱلْأَمْرُ ٱلَّذِى فِيهِ تَسْتَفْتِيَانِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়! তোমাদের একজনের ব্যাপার এই যে, সে তার প্রভুকে মদ পান করাবে এবং অপর সম্বন্ধে কথা এই যে, সে শুলবিদ্ধ হবে; অতঃপর তার মস্তক হতে পাখী আহার করবে, যে বিষয়ে তোমরা জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪১. ওহে আমার কারাগারের সঙ্গীদ্বয়! যে স্বপ্নে দেখেছে যে, সে আঙুর নিংড়িয়ে মদ তৈরি করছে নিশ্চয়ই সে কারাগার থেকে বের হবে এবং তার পূর্বের কাজে সে ফিরে যাবে, তারপর বাদশাকে সে মদপান করাবে। আর যে স্বপ্নে দেখেছে যে, সে নিজ মাথায় রুটি বহন করছে আর সেখান থেকে পাখিরা ঠুকরিয়ে খাচ্ছে নিশ্চয়ই তাকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। তারপর পাখিরা তার মাথার মগজ থেকে আহার করবে। তোমরা দু’জনে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আর তা অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে; এতে কোন সন্দেহ নেই।
42
وَقَالَ لِلَّذِى ظَنَّ أَنَّهُۥ نَاجٍ مِّنْهُمَا ٱذْكُرْنِى عِندَ رَبِّكَ فَأَنسَىٰهُ ٱلشَّيْطَـٰنُ ذِكْرَ رَبِّهِۦ فَلَبِثَ فِى ٱلسِّجْنِ بِضْعَ سِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করল, তাকে বললঃ তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বল; কিন্তু শাইতান তাকে তার প্রভুর কাছে তার বিষয়ে বলার কথা ভুলিয়ে দিল। সুতরাং ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে রইল।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪২. তাদের দু’জনের মধ্যকার যার সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি পাবে তাকে ইউসুফ (আলাইস-সালাম) বলে দিলেন -আর সে হল বাদশাকে মদপানকারী-: বাদশার কাছে তুমি আমার ঘটনা ও ব্যাপারটি আলোচনা করবে। তাহলে তিনি আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দিতে পারেন। তবে শয়তান মদপানকারীকে ইউসুফের কথা বাদশার কাছে আলোচনা করতে ভুলিয়ে দিল। ফলে ইউসুফ তারপর কারাগারে কয়েক বছরই অবস্থান করল।
43
وَقَالَ ٱلْمَلِكُ إِنِّىٓ أَرَىٰ سَبْعَ بَقَرَٰتٍ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعَ سُنۢبُلَـٰتٍ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَـٰتٍ ۖ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْمَلَأُ أَفْتُونِى فِى رُءْيَـٰىَ إِن كُنتُمْ لِلرُّءْيَا تَعْبُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বাদশাহ বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি স্থূলকায় গাভী, ওগুলিকে সাতটি শীর্ণকায় গাভী ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ এবং অপর সাতটি শুস্ক। হে প্রধানগণ! যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার তাহলে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে অভিমত দাও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৩. বাদশাহ বলল: আমি স্বপ্নে দেখলাম সাতটি মোটাতাজা গাভী। এদেরকে সাতটি জীর্ণশীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে এবং দেখলাম সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুষ্ক শীষ। ওহে আমার পরিষদবর্গ! তোমরা আমাকে আমার এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানাও যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পারদর্শী হও।
44
قَالُوٓا۟ أَضْغَـٰثُ أَحْلَـٰمٍ ۖ وَمَا نَحْنُ بِتَأْوِيلِ ٱلْأَحْلَـٰمِ بِعَـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ এটা অর্থহীন স্বপ্ন এবং আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৪. তারা বললো: আপনার স্বপ্ন কল্পনাপ্রসূত। স্বপ্ন যদি এমন হয় তবে এর কোন ব্যাখ্যা হয় না। সুতরাং আমরা এই কিংবদন্তীমূলক স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারবো না।
45
وَقَالَ ٱلَّذِى نَجَا مِنْهُمَا وَٱدَّكَرَ بَعْدَ أُمَّةٍ أَنَا۠ أُنَبِّئُكُم بِتَأْوِيلِهِۦ فَأَرْسِلُونِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
দু’জন কারারুদ্ধের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে তার স্মরণ হলে সে বললঃ আমি এর তাৎপর্য তোমাদেরকে জানিয়ে দিব, সুতরাং তোমরা আমাকে পাঠিয়ে দাও।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৫. দু’জন কারারুদ্ধ যুবকের মধ্যে যে মদ্যপানকারী মুক্তি পেয়েছিল দীর্ঘকাল পর স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইউসুফের গভীর জ্ঞানের কথা স্মরণ হলে সে বলল: যার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিষয়ে জ্ঞান আছে আমি তাকে জিজ্ঞেস করে বাদশার দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা তোমাদেরকে জানাব। অতএব ওহে বাদশাহ! আপনি আমাকে ইউসুফের কাছে পাঠান। সে যেন আপনার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে দেয়।
46
يُوسُفُ أَيُّهَا ٱلصِّدِّيقُ أَفْتِنَا فِى سَبْعِ بَقَرَٰتٍ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعِ سُنۢبُلَـٰتٍ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَـٰتٍ لَّعَلِّىٓ أَرْجِعُ إِلَى ٱلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ হে ইউসুফ! হে সত্যবাদী! সাতটি স্থুলকায় গাভী, ওগুলিকে সাতটি শীর্ণকায় গাভী ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুস্ক শীষ সম্বন্ধে আপনি আমাদেরকে ব্যাখ্যা দিন, যাতে আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি এবং যাতে তারা অবগত হতে পারে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৬. কারামুক্ত যুবকটি যখন ইউসুফের কাছে পৌঁছল তখন তাঁকে বলল: ওহে ইউসুফ! ওহে সত্যবাদী! আমাদেরকে সেই লোকের স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানান যে স্বপ্নে দেখেছে, সাতটি মোটাতাজা গাভী; এদেরকে সাতটি জীর্ণশীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে এবং সে দেখেছে সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুষ্ক শীষ। যাতে আমি বাদশাহ ও তাঁর কাছে অবস্থিত লোকদের কাছে ফিরে গেলে তারা বাদশাহর দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে অবহিত হয় এবং তারা আপনার মান-মর্যাদা সম্পর্কেও জানতে পারে।
47
قَالَ تَزْرَعُونَ سَبْعَ سِنِينَ دَأَبًا فَمَا حَصَدتُّمْ فَذَرُوهُ فِى سُنۢبُلِهِۦٓ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّا تَأْكُلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফ বললঃ তোমরা সাত বছর একাদিক্রমে চাষ করবে, অতঃপর তোমরা শস্য সংগ্রহ করবে; তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা আহার করবে, তা ব্যতীত সমস্ত শস্য শীষ সমেত রেখে দিবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৭. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এই স্বপ্নটির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন: সাত বছর তোমরা একনাগাড়ে উত্তমরূপে চাষ করবে। আর উক্ত সাত বছরের প্রত্যেক বছর তোমরা যে শস্য কাটবে তার মধ্যকার যে সামান্য পরিমাণ শস্যদানা তোমরা খাবে তা ছাড়া অবশিষ্ট শস্য পোকা থেকে রক্ষা করার জন্য শীষ সমেত রেখে দিবে।
48
ثُمَّ يَأْتِى مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ سَبْعٌ شِدَادٌ يَأْكُلْنَ مَا قَدَّمْتُمْ لَهُنَّ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّا تُحْصِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এরপর আসবে সাতটি কঠিন বছর; এই সাত বছর যা পূর্বে সঞ্চয় করে রাখবে - লোকে তা খাবে; শুধু সামান্য কিছু যা তোমরা সংরক্ষণ করবে তা ব্যতীত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৮. ওই উৎপাদনশীল সাত বছরের পর -যে সময়ে তোমরা শস্য চাষ করেছ- আসবে দুর্ভিক্ষের সাত বছর। সে বছরগুলোতে তোমাদের বীজের জন্য কিছু তুলে রাখা শস্য ছাড়া উৎপাদনশীল সাত বছরে তোমরা যা কেটেছ তা থেকে লোকেরা খেয়ে যাবে।
49
ثُمَّ يَأْتِى مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ عَامٌ فِيهِ يُغَاثُ ٱلنَّاسُ وَفِيهِ يَعْصِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এবং এরপর আসবে এক বছর, সেই বছর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সেই বছর মানুষ প্রচুর ফলের রস নিংড়াবে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৪৯. ওই দুর্ভিক্ষের সাত বছর পর আসবে এমন এক বছর যে বছর বৃষ্টি বর্ষিত হবে, তাতে শস্য উৎপাদিত হবে। ফলে লোকেরা তাতে রস নিংড়ানোর জন্য তাদের প্রয়োজনীয় আঙুর, যাইতুন ও আখ উৎপাদন করবে।
50
وَقَالَ ٱلْمَلِكُ ٱئْتُونِى بِهِۦ ۖ فَلَمَّا جَآءَهُ ٱلرَّسُولُ قَالَ ٱرْجِعْ إِلَىٰ رَبِّكَ فَسْـَٔلْهُ مَا بَالُ ٱلنِّسْوَةِ ٱلَّـٰتِى قَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ ۚ إِنَّ رَبِّى بِكَيْدِهِنَّ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বাদশাহ বললঃ তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো। যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল তখন সে বললঃ তুমি তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করঃ যে নারীরা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি? আমার রাব্ব তাদের ছলনা সম্যক অবগত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫০. বাদশাহর কাছে যখন তাঁর দেখা স্বপ্নের ইউসুফ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে খবর পৌঁছল তখন তিনি সাথীসঙ্গীদেরকে বললেন: কারাগার থেকে তোমরা তাঁকে বের করে আমার কাছে নিয়ে আস। বাদশাহর দূত যখন ইউসুফের কাছে আসল তখন সে তাঁকে বলল: তুমি তোমার বাদশাহ মনিবের কাছে ফিরে যাও এবং তাঁকে সেই মহিলাদের ঘটনাটি জিজ্ঞেস কর যারা তাদের হাতগুলো কেটে যখম করে ফেলেছিল। যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তাঁর নির্দোষ হওয়া প্রকাশ পায়। নিশ্চয়ই আমার রব মহিলারা যে ছলচাতুরী করেছে সে সম্পর্কে সর্বজ্ঞ, এর কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নেই।
51
قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ إِذْ رَٰوَدتُّنَّ يُوسُفَ عَن نَّفْسِهِۦ ۚ قُلْنَ حَـٰشَ لِلَّهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ مِن سُوٓءٍ ۚ قَالَتِ ٱمْرَأَتُ ٱلْعَزِيزِ ٱلْـَٔـٰنَ حَصْحَصَ ٱلْحَقُّ أَنَا۠ رَٰوَدتُّهُۥ عَن نَّفْسِهِۦ وَإِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বাদশাহ নারীদেরকে বললঃ যখন তোমরা ইউসুফ হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিলে তখন তোমাদের কি হয়েছিল? তারা বললঃ অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! আমরা তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি। আযীযের স্ত্রী বললঃ এক্ষণে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল, আমিই তার হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিলাম, সেতো সত্যবাদী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫১. বাদশাহ মহিলাদেরকে সম্বোধন করে বললেন: তখন তোমাদের কী হয়েছিল যখন তোমরা ফন্দি করে ইউসুফের কাছে চেয়েছিলে যে, সে যেন তোমাদের সাথে অসৎকর্মে লিপ্ত হয়? আযীযের স্ত্রী নিজে যা করেছিল তা স্বীকার করে বলল: এখন সত্য প্রমাণিত। আমিই তাকে ভুলানোর চেষ্টা করেছিলাম। সে আমাকে ভুলানোর চেষ্টা করেনি। আমি তাকে যে অপবাদ দিয়েছিলাম, সে ক্ষেত্রে সে যা দাবি করেছে তাতে সে অবশ্যই একজন সত্যবাদী।
52
ذَٰلِكَ لِيَعْلَمَ أَنِّى لَمْ أَخُنْهُ بِٱلْغَيْبِ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى كَيْدَ ٱلْخَآئِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমি এটা বলেছিলাম যাতে সে জানতে পারে যে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং আল্লাহ বিশ্বাস ঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫২. আযীযের স্ত্রী বলল: আমি যখন স্বীকার করলাম যে, আমিই তাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম; সে আসলেই সত্যবাদী তখন ইউসুফও যেন জানতে পারে যে, আমি তার অনুপস্থিতিতে তার প্রতি কোন অপবাদ দেইনি। মূলতঃ যা ঘটে গেছে তা থেকে এ কথা আমার কাছে স্পষ্ট যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মিথ্যাবাদী ও অপকৌশলকারীকে সফল হতে দেন না।
53
۞ وَمَآ أُبَرِّئُ نَفْسِىٓ ۚ إِنَّ ٱلنَّفْسَ لَأَمَّارَةٌۢ بِٱلسُّوٓءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّىٓ ۚ إِنَّ رَبِّى غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আমি নিজকে নির্দোষ মনে করিনা, মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কর্ম-প্রবণ। কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার রাব্ব অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার রাব্ব অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৩. আযীযের স্ত্রী তার কথার ধারাবাহিকতায় আরো বললো অথবা ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) বললেন: আমি নিজের মনকে খারাপের ইচ্ছামুক্ত বলে দাবি করছি না। না আমি নিজ মনের বিশুদ্ধতার দাবি করতে চাই। কারণ, মানব মনের প্রকৃতিই হলো বেশি বেশি খারাপের নির্দেশ দেয়া। যেহেতু মানব মন তার কুপ্রবৃত্তির দিকেই ঝুঁকে থাকে সেহেতু তাকে বিরত রাখা খুবই কঠিন। তবে যে মনের প্রতি আল্লাহ দয়া করে তাকে খারাপের পরামর্শ থেকে রক্ষা করেছেন তার ব্যাপার ভিন্ন। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক তাঁর তাওবাকারী বান্দার প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
54
وَقَالَ ٱلْمَلِكُ ٱئْتُونِى بِهِۦٓ أَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِى ۖ فَلَمَّا كَلَّمَهُۥ قَالَ إِنَّكَ ٱلْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِينٌ أَمِينٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
বাদশাহ বললঃ ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে একান্ত সহচর নিযুক্ত করব। অতঃপর বাদশাহ যখন তার সাথে কথা বলল তখন রাজা বললঃ আজ তুমি আমাদের কাছে মর্যাদাবান ও বিশ্বাস ভাজন হলে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৪. যখন ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর দোষমুক্তি সুস্পষ্ট হলো এবং বাদশাহও তা জেনে গেলেন তখন তিনি তাঁর সহচরদেরকে বললেন: তোমরা তাঁকে আমার কাছে নিয়ে আসো। আমি তাঁকে নিজের একনিষ্ঠ সাথী হিসেবে গ্রহণ করবো। তারা তাঁকে নিয়ে আসার পর যখন বাদশাহ তাঁর সাথে কথা বললেন এবং তাঁর জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা তাঁর নিকট সুস্পষ্ট হলো তখন তিনি তাঁকে বললেন: হে ইউসুফ! নিশ্চয়ই আপনি আজ আমার নিকট একজন সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি।
55
قَالَ ٱجْعَلْنِى عَلَىٰ خَزَآئِنِ ٱلْأَرْضِ ۖ إِنِّى حَفِيظٌ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমাকে কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। নিশ্চয়ই আমি উত্তম সংরক্ষণকারী, অতিশয় জ্ঞানবান।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৫. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) বাদশাহকে বললেন: আপনি আমাকে মিশরের ধনসম্পদ ও খাদ্য ভাÐারের হিফাযতের দায়িত্ব দিন। নিশ্চয়ই আমি একজন বিশ্বস্ত ধনভাÐার রক্ষক এবং আমার দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ও সচেতনতার অধিকারী।
56
وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِى ٱلْأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَآءُ ۚ نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَن نَّشَآءُ ۖ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এভাবে আমি ইউসুফকে সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম। সে সেই দেশে যথা ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত। আমি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি দয়া করি, আর আমি সৎ কর্মপরায়ণদের শ্রমফল বিনষ্ট করিনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৬. যেমনিভাবে আমি ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) কে দোষমুক্তি ও জেলমুক্তির মাধ্যমে দয়া করেছি তেমনিভাবে আমি তাঁকে মিশরের অধিপতি বানিয়ে দিয়েও তাঁর উপর দয়া করেছি। তিনি সে এলাকার যেখানেই চান সেখানে অবতরণ ও অবস্থান করতে পারেন। বস্তুতঃ আমি দুনিয়াতে আমার বান্দাদের মধ্যকার যাকে চাই তাকে দয়া করি। আমি সৎকর্মশীলদের অবদান নষ্ট করি না। বরং আমি তাদেরকে তার প্রতিদান কোন ধরনের কম না করে পরিপূর্ণভাবেই দিয়ে দেই।
57
وَلَأَجْرُ ٱلْـَٔاخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَكَانُوا۟ يَتَّقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যারা মু’মিন ও মুত্তাকী তাদের পরকালের পুরস্কারই উত্তম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৭. বস্তুতঃ যে আল্লাহতে বিশ্বাসী এবং যে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে একমাত্র তাঁকেই ভয় করে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা পরকালে যে প্রতিদান তৈরি করে রেখেছেন তা দুনিয়ার প্রতিদানের চেয়ে অনেক উত্তম।
58
وَجَآءَ إِخْوَةُ يُوسُفَ فَدَخَلُوا۟ عَلَيْهِ فَعَرَفَهُمْ وَهُمْ لَهُۥ مُنكِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফের ভাইয়েরা এলো এবং তার নিকট উপস্থিত হল। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারলনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৮. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা সামান্য পণ্যমূল্য নিয়ে মিশরে প্রবেশ করলে তিনি তাদেরকে ভাই বলে চিনে ফেলেন। কিন্তু তারা তাঁকে দীর্ঘ সময় ও আকৃতির পরিবর্তনের দরুন ভাই বলে চিনতে পারেনি। কারণ, তারা যখন তাঁকে কুয়ায় ফেলেছিলো তখন তিনি বাচ্চা বয়সের ছিলেন।
59
وَلَمَّا جَهَّزَهُم بِجَهَازِهِمْ قَالَ ٱئْتُونِى بِأَخٍ لَّكُم مِّنْ أَبِيكُمْ ۚ أَلَا تَرَوْنَ أَنِّىٓ أُوفِى ٱلْكَيْلَ وَأَنَا۠ خَيْرُ ٱلْمُنزِلِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন সে বললঃ তোমরা আমার নিকট তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে নিয়ে এসো; তোমরা কি দেখছনা যে, আমি মাপে পূর্ণ মাত্রায় দিই? এবং আমি উত্তম মেযবান?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৫৯. তিনি যখন তাদেরকে তাদের তলবকৃত খাদ্য ও সম্বল দিয়ে দিলেন এবং ইতিমধ্যে তারাও তাঁকে জানিয়ে দিলো যে, তাদের একজন সৎ ভাই আছে যাকে তারা তার পিতার কাছেই রেখে এসেছে তখন তিনি বললেন: তোমরা নিজেদের সৎ ভাইকে নিয়ে আসবে তাহলে আমি তোমাদেরকে আরেক উটের বোঝা বাড়িয়ে দেবো। তোমরা কি দেখোনি আমি পুরোপুরি পাত্র ভরে দেই; সামান্যও কম দেই না। আর আমি সর্বোত্তম অতিথি পরায়ণ।
60
فَإِن لَّمْ تَأْتُونِى بِهِۦ فَلَا كَيْلَ لَكُمْ عِندِى وَلَا تَقْرَبُونِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার নিকট নিয়ে না আস তাহলে আমার নিকট তোমাদের জন্য কোন বরাদ্দ থাকবেনা এবং তোমরা আমার নিকটবর্তী হবেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬০. তোমরা যদি তাকে না নিয়ে আসো তাহলে তোমাদের সৎ ভাইয়ের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হবে। আর আমিও তোমাদেরকে পাত্র ভরে খাদ্য দেবো না। এমনকি তোমরা আমার এ এলাকার কাছেও আসবে না।
61
قَالُوا۟ سَنُرَٰوِدُ عَنْهُ أَبَاهُ وَإِنَّا لَفَـٰعِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ ওর বিষয়ে আমরা ওর পিতাকে সম্মত করার চেষ্টা করব এবং আমরা নিশ্চয়ই এটা করব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬১. তখন তাঁর ভাইয়েরা উত্তরে বললো: আমরা অচিরেই তাকে তার পিতার কাছ চাইবো এবং এ ব্যাপারে চেষ্টা করবো। আর আমরা আপনার আদেশ মাফিক কাজ করতে কোন ত্রæটি করবো না।
62
وَقَالَ لِفِتْيَـٰنِهِ ٱجْعَلُوا۟ بِضَـٰعَتَهُمْ فِى رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُونَهَآ إِذَا ٱنقَلَبُوٓا۟ إِلَىٰٓ أَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইউসুফ তার ভৃত্যদেরকে বললঃ তারা যে পণ্য মূল্য দিয়েছে তা তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে স্বজনদের কাছে প্রত্যাবর্তনের পর তারা বুঝতে পারে যে, ওটা প্রত্যর্পন করা হয়েছে, তা হলে তারা পুনরায় আসতে পারে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬২. তখন ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর কর্মচারীদেরকে বললেন: তোমরা এদের পণ্যমূল্য ফিরিয়ে দাও যাতে তারা ফিরে গিয়ে এ কথা বুঝে যে, আমরা তাদের সাথে কোন বেচা-কেনা করিনি। ফলে এটি দ্বিতীয়বার তাদের ভাইকে নিয়ে আসতে তাদেরকে বাধ্য করবে। যাতে তারা ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট তাদের সত্যতা প্রমাণ করতে পারে এবং তিনিও তাদের পণ্যমূল্য গ্রহণ করতে পারেন।
63
فَلَمَّا رَجَعُوٓا۟ إِلَىٰٓ أَبِيهِمْ قَالُوا۟ يَـٰٓأَبَانَا مُنِعَ مِنَّا ٱلْكَيْلُ فَأَرْسِلْ مَعَنَآ أَخَانَا نَكْتَلْ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَـٰفِظُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখন তারা তাদের পিতার নিকট ফিরে এলো তখন তারা বললঃ হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সুতরাং আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন যাতে আমরা রসদ পেতে পারি, আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৩. যখন তারা তাদের পিতার নিকট ফিরে গেলো তখন তারা তাদের প্রতি ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর মর্যাদাদানের কাহিনী শুনিয়ে বললো: হে আমাদের পিতা! আমাদেরকে আর পাত্র ভরে খাদ্য দেয়া হবে না যদি আমরা আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে না নিয়ে যাই। তাই আপনি তাকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন। কারণ, আপনি তাকে আমাদের সাথে পাঠালে আমরা আবারো খাদ্য নিয়ে আসতে পারবো। আর আমরা আপনার নিকট নিরাপদে ফিরে আসা পর্যন্ত তাকে হিফাযত করার অঙ্গীকার করছি।
64
قَالَ هَلْ ءَامَنُكُمْ عَلَيْهِ إِلَّا كَمَآ أَمِنتُكُمْ عَلَىٰٓ أَخِيهِ مِن قَبْلُ ۖ فَٱللَّهُ خَيْرٌ حَـٰفِظًا ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমি কি তোমাদেরকে ওর সম্বন্ধে সেইরূপ বিশ্বাস করব, যেরূপ বিশ্বাস পূর্বে তোমাদেরকে করেছিলাম ওর ভাইয়ের ব্যাপারে? আল্লাহই রক্ষণাবেক্ষণে শ্রেষ্ঠ এবং তিনি শ্রেষ্ঠতম দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৪. তাদের পিতা তাদেরকে বললো: আমি কি তোমাদেরকে তার ব্যাপারে তেমনিভাবে নিরাপদ ভাববো যেমননিভাবে তোমাদেরকে ইতিপূর্বে নিরাপদ ভেবেছিলাম তার আপন ভাই ইউসুফের ব্যাপারে?! আমি তোমাদেরকে তার ব্যাপারে নিরাপদ ভেবে তোমাদের কাছ থেকে হিফাযতের অঙ্গীকারও নিয়েছিলাম। তবে তোমরা সেই অঙ্গীকার পুরা করোনি। তাই তোমাদের পক্ষ থেকে একে হিফাযতের অঙ্গীকারের প্রতি আমার আর কোন আস্থা নেই। আমার আস্থা কেবল আল্লাহর প্রতি। তিনি যার রক্ষা চাইবেন তার জন্য তিনি সর্বোত্তম রক্ষক। আর যার প্রতি দয়া করতে চাইবেন তার জন্য সর্বোচ্চ দয়াশীল।
65
وَلَمَّا فَتَحُوا۟ مَتَـٰعَهُمْ وَجَدُوا۟ بِضَـٰعَتَهُمْ رُدَّتْ إِلَيْهِمْ ۖ قَالُوا۟ يَـٰٓأَبَانَا مَا نَبْغِى ۖ هَـٰذِهِۦ بِضَـٰعَتُنَا رُدَّتْ إِلَيْنَا ۖ وَنَمِيرُ أَهْلَنَا وَنَحْفَظُ أَخَانَا وَنَزْدَادُ كَيْلَ بَعِيرٍ ۖ ذَٰلِكَ كَيْلٌ يَسِيرٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তারা তাদের মালপত্র খুলল তখন তারা দেখতে পেল, তাদের পণ্যমূল্য তাদেরকে প্রত্যর্পন করা হয়েছে। তারা বললঃ হে আমাদের পিতা! আমরা আর কি প্রত্যাশা করতে পারি? এটা আমাদের প্রদত্ত পণ্যমূল্য, আমাদেরকে প্রত্যর্পন করা হয়েছে; পুনরায় আমরা আমাদের পরিবারবর্গকে খাদ্যসামগ্রী এনে দিব এবং আমরা আমাদের ভাইয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করব এবং আমরা অতিরিক্ত আর এক উট বোঝাই পণ্য আনব, যা এনেছি তা পরিমাণে অল্প।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৫. যখন তারা নিজেদের নিয়ে আসা খাদ্যের ভাÐগুলো খুললো তখন তারা নিজেদের পণ্যমূল্য ফিরে পেয়ে তাদের পিতাকে বললো: এ সম্মানের পর আমরা আর কী জিনিস চাইতে পারি এ শাসনকর্তার পক্ষ থেকে? আমাদের এ খাদ্যমূল্যও তিনি আমাদের উপর দয়া করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাহলে আমরা আবারো নিজেদের পরিবারের জন্য খাদ্য নিয়ে আসবো এবং আমাদের ভাইটিকেও হিফাযত করবো যা আপনি তার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছেন। উপরন্তু সে সাথে থাকার দরুন আরেক উটের খাদ্য বেশি পাবো। কারণ, এক উটের বাড়তি খাদ্য ওই শাসনকর্তার নিকট খুবই সহজ ব্যাপার।
66
قَالَ لَنْ أُرْسِلَهُۥ مَعَكُمْ حَتَّىٰ تُؤْتُونِ مَوْثِقًا مِّنَ ٱللَّهِ لَتَأْتُنَّنِى بِهِۦٓ إِلَّآ أَن يُحَاطَ بِكُمْ ۖ فَلَمَّآ ءَاتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ ٱللَّهُ عَلَىٰ مَا نَقُولُ وَكِيلٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
পিতা বললঃ আমি ওকে কখনও তোমাদের সাথে পাঠাবনা যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে অঙ্গীকার কর যে, তোমরা তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবেই, অবশ্য যদি তোমরা একান্ত অসহায় হয়ে না পড়। অতঃপর যখন তারা তার নিকট প্রতিজ্ঞা করল তখন সে বললঃ আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি, আল্লাহ তার বিধায়ক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৬. তাদের পিতা তাদেরকে বললো: আমি তাকে তোমাদের সাথে পাঠাবো না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর সাথে এ ব্যাপারে শক্ত অঙ্গীকার করবে যে, তোমরা তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে দিবে। তবে কোন ধ্বংসযজ্ঞ যদি তোমাদের সবাইকে ঘিরে ফেলে এবং তোমাদের কেউ বেঁচে না থাকো কিংবা সে ধ্বংসযজ্ঞ তোমরা প্রতিরোধ করতে বা সেখান থেকে তোমরা ফিরে আসতে না পারো তাহলে তা ভিন্ন কথা। যখন তারা তাঁকে এ ব্যাপারে আল্লাহর শক্ত অঙ্গীকার দিলো তখন তিনি বললেন: আমাদের কথার উপর আল্লাহই সাক্ষী। তাঁর সাক্ষ্যই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
67
وَقَالَ يَـٰبَنِىَّ لَا تَدْخُلُوا۟ مِنۢ بَابٍ وَٰحِدٍ وَٱدْخُلُوا۟ مِنْ أَبْوَٰبٍ مُّتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَآ أُغْنِى عَنكُم مِّنَ ٱللَّهِ مِن شَىْءٍ ۖ إِنِ ٱلْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُتَوَكِّلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ হে আমার পুত্রগণ! তোমরা এক দরযা দিয়ে প্রবেশ করনা, ভিন্ন ভিন্ন দরযা দিয়ে প্রবেশ করবে, আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারিনা। বিধান আল্লাহরই; আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং যারা নির্ভর করতে চায় তারা তাঁরই (আল্লাহরই) উপর নির্ভর করুক।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৭. উপরন্তু তাদের পিতা তাদেরকে ওসিয়ত করে বললো: তোমরা মিশরে একত্রে এক দরজা দিয়ে সবাই প্রবেশ করো না। বরং তোমরা বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। তাহলে কেউ তোমাদের ব্যাপক ক্ষতি করতে চাইলে তা থেকে তোমরা রক্ষা পাবে। আমি এ কথার মাধ্যমে আল্লাহর চাওয়া কোন ক্ষতি তোমাদের থেকে প্রতিরোধ করছি না। না আল্লাহর না চাওয়া কোন ফায়েদা এর মাধ্যমে তোমাদের জন্য নিয়ে আসতে পারবো। কারণ, ফায়সালা তো কেবল আল্লাহরই ফায়সালা। আর আদেশ কেবল তাঁরই আদেশ। আমি কেবল তাঁর উপরই আমার সকল ব্যাপারে ভরসা করি এবং কেবল তাঁর উপরই সকল ব্যাপারে ভরসাকারীগণ ভরসা করতে হবে।
68
وَلَمَّا دَخَلُوا۟ مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُم مَّا كَانَ يُغْنِى عَنْهُم مِّنَ ٱللَّهِ مِن شَىْءٍ إِلَّا حَاجَةً فِى نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَىٰهَا ۚ وَإِنَّهُۥ لَذُو عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَـٰهُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তারা, তাদের পিতা তাদেরকে যেভাবে আদেশ করেছিল সেভাবেই প্রবেশ করল, তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে ওটা তাদের কোন কাজে এলোনা; ইয়াকূব শুধু তার মনের একটি অভিপ্রায় পূর্ণ করেছিল এবং সে অবশ্যই জ্ঞানী ছিল। কারণ আমি তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৮. তারা রওয়ানা হলো। তাদের সাথে রয়েছে ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর আপন ভাই। তারা নিজেদের পিতার আদেশ মাফিক বিভিন্ন দরজা দিয়ে ঢুকলো। কিন্তু বিভিন্ন দরজা দিয়ে তাদের এ ঢুকা আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ের কোন কিছুই প্রতিরোধ করতে পারেনি। এ ছিলো কেবল সন্তানদের প্রতি ইয়াকুব (আলাইহিস-সালাম) এর ¯েœহমায়া নির্দেশ। যা তিনি প্রকাশ করেছেন ও তাদের প্রতি ওসিয়ত করেছেন। অথচ তিনি জানেন, আল্লাহর ফায়সালাই আসল ফায়সালা। আমি তাঁকে যে তাকদীরে বিশ্বাস ও উপকরণ ধারণের প্রশিক্ষণ দিয়েছি তিনি তা ভালোভাবেই জানেন। তবে অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
69
وَلَمَّا دَخَلُوا۟ عَلَىٰ يُوسُفَ ءَاوَىٰٓ إِلَيْهِ أَخَاهُ ۖ قَالَ إِنِّىٓ أَنَا۠ أَخُوكَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা যখন ইউসুফের সামনে হাযির হল তখন ইউসুফ তার (সহোদর) ভাইকে নিজের কাছে রাখল এবং বললঃ আমিই তোমার (সহোদর) ভাই। সুতরাং তারা যা করত সেজন্য দুঃখ করনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৬৯. যখন ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা তাঁর আপন ভাইকে নিয়ে তাঁর নিকট প্রবেশ করলো তখন তিনি তাঁর আপন ভাইকে নিজের কাছে টেনে এনে গোপনে তাকে বললেন: নিশ্চয়ই আমি তোমার আপন ভাই ইউসুফ। অতএব, তোমার ভাইয়েরা আমাদের সাথে যে অন্যায় কাজগুলো করছে যেমন: আমাদের প্রতি হিংসা করা ও আমাদেরকে কষ্ট দেয়া এবং আমাকে কুয়াতে নিক্ষেপ করা তা নিয়ে দুঃখ করো না।
70
فَلَمَّا جَهَّزَهُم بِجَهَازِهِمْ جَعَلَ ٱلسِّقَايَةَ فِى رَحْلِ أَخِيهِ ثُمَّ أَذَّنَ مُؤَذِّنٌ أَيَّتُهَا ٱلْعِيرُ إِنَّكُمْ لَسَـٰرِقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন সে তার (সহোদর) ভাইয়ের মালপত্রের মধ্যে পানপাত্র রেখে দিল, অতঃপর এক ঘোষক উচ্চৈঃস্বরে বললঃ হে যাত্রীদল! তোমরা নিশ্চয়ই চোর।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭০. যখন ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) নিজ কর্মচারীদেরকে তাঁর ভাইদের উটে খাদ্য উঠিয়ে দেয়ার আদেশ করলেন তখন তিনি তাঁর ভাইকে নিজের কাছে রাখার মাধ্যম স্বরূপ খাদ্য নিতে আসা লোকদের জন্য খাদ্য মাপার বাদশাহর পেয়ালাটি তাদের অজান্তেই তাঁর আপন ভাইয়ের ভাÐে রেখে দিলেন। যখন তারা নিজেদের পরিবারের কাছে যেতে রওয়ানা হলো তখন এক আহŸানকারী তাদের পেছন থেকে তাদেরকে ডেকে বললো: হে খাদ্য বোঝাই করা উটওয়ালারা! নিশ্চয়ই তোমরা চোর।
71
قَالُوا۟ وَأَقْبَلُوا۟ عَلَيْهِم مَّاذَا تَفْقِدُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা তাদের দিকে ফিরে তাকাল এবং বললঃ তোমরা কি হারিয়েছ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭১. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা তাদের পেছন থেকে আহŸানকারী ও তার সাথীদের দিকে ফিরে বললো: তোমাদের এমন কী হারিয়ে গেলো যে তোমরা আমাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো?
72
قَالُوا۟ نَفْقِدُ صُوَاعَ ٱلْمَلِكِ وَلِمَن جَآءَ بِهِۦ حِمْلُ بَعِيرٍ وَأَنَا۠ بِهِۦ زَعِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়েছি; যে ওটা এনে দিবে সে এক উট বোঝাই মাল পাবে এবং আমি ওর যামীন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭২. আহŸানকারী ও তার সাথীরা ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইদেরকে বললো: বাদশাহর মাপার পেয়ালাটি আমরা হারিয়ে ফেলেছি। যে ব্যক্তি অনুসন্ধানের আগেই বাদশাহর পেয়ালাটি নিয়ে আসবে তার জন্য পুরস্কার স্বরূপ এক উট বোঝাই খাদ্য রয়েছে। আর আমি সেজন্য জামিনদার।
73
قَالُوا۟ تَٱللَّهِ لَقَدْ عَلِمْتُم مَّا جِئْنَا لِنُفْسِدَ فِى ٱلْأَرْضِ وَمَا كُنَّا سَـٰرِقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আল্লাহর শপথ! তোমরাতো জান যে, আমরা এই দেশে দুস্কৃতি করতে আসিনি এবং আমরা চোরও নই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৩. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা তাদেরকে বললো: আল্লাহর কসম! আমরা যে পরিশুদ্ধ ও নিরাপরাধ সে কথা তোমরা ভালো করেই জানো। যা তোমরা আমাদের অবস্থা দেখেই বুঝতে পারছো। আর আমরা মিশর এলাকায় ফাসাদ সৃষ্টি করতে আসিনি। না আমরা জীবনে কখনো চুরি করেছি।
74
قَالُوا۟ فَمَا جَزَٰٓؤُهُۥٓ إِن كُنتُمْ كَـٰذِبِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও তাহলে তার শাস্তি কি?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৪. আহŸানকারী ও তার সাথীরা বললো: তোমরা যদি চুরির অপবাদমুক্তির দাবিতে মিথ্যুক হয়ে থাকো তাহলে তোমাদের জানামতে চোরের শাস্তি কী হতে পারে?
75
قَالُوا۟ جَزَٰٓؤُهُۥ مَن وُجِدَ فِى رَحْلِهِۦ فَهُوَ جَزَٰٓؤُهُۥ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلظَّـٰلِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ এর শাস্তি এই যে, যার মালপত্রের মধ্যে পাত্রটি পাওয়া যাবে, সে’ই তার বিনিময়, এভাবে আমরা সীমালংঘনকারীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৫. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা তাদেরকে বললো: আমাদের নিকট চোরের শাস্তি হলো যার মালপত্রের মধ্যে চুরিকৃত দ্রব্য পাওয়া যাবে তাকে যার জিনিস চুরি হয়েছে তার নিকট গোলাম হিসেবে সোপর্দ করা হবে। মূলতঃ আমরা এ গোলামির শাস্তির মতোই চোরদের শাস্তি দিয়ে থাকি।
76
فَبَدَأَ بِأَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَآءِ أَخِيهِ ثُمَّ ٱسْتَخْرَجَهَا مِن وِعَآءِ أَخِيهِ ۚ كَذَٰلِكَ كِدْنَا لِيُوسُفَ ۖ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِى دِينِ ٱلْمَلِكِ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ ۚ نَرْفَعُ دَرَجَـٰتٍ مَّن نَّشَآءُ ۗ وَفَوْقَ كُلِّ ذِى عِلْمٍ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর সে তার (সহোদর) ভাইয়ের মালপত্র তল্লাশির পূর্বে তাদের মাল-পত্র তল্লাশি করতে লাগল, পরে তার সহোদরের মাল-পত্রের মধ্য হতে পাত্রটি বের করল। এভাবে আমি ইউসুফের জন্য কৌশল করেছিলাম, রাজার আইনে তার সহোদরকে সে আটক করতে পারতনা, আল্লাহ ইচ্ছা না করলে। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি, প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর আছেন সর্বজ্ঞানী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৬. ফলে তাদের থলেগুলো অনুসন্ধানের জন্য তাদেরকে ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট ফিরিয়ে আনা হলো। তখন ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) কৌশলটি লুকানোর জন্য আপন ভাইয়ের থলে অনুসন্ধানের আগে সৎ ভাইদের থলেগুলো অনুসন্ধান করতে শুরু করলেন। এরপর তিনি আপন ভাইয়ের থলেটি অনুসন্ধান করে সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির পেয়ালাটি বের করে আনলেন। যেমনিভাবে আমি ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়ের থলে পেয়ালাটি রাখার পরিকল্পনার মাধ্যমে তাঁর জন্য কৌশল করলাম তেমনিভাবে আমি তাঁর ভাইদেরকে তাদের এলাকার শাস্তি তথা চোরকে গোলাম বানানো কর্তৃক পাকড়াও করে তাঁর জন্য দ্বিতীয় কৌশল করলাম। এ উদ্দেশ্যটি হাসিল হতো না যদি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত চোরের শাস্তি তথা প্রহার ও জরিমানা করার বিচারটি প্রয়োগ করা হতো। তবে আল্লাহ তা‘আলা যদি এর জন্য অন্য পরিকল্পনা করতে চাইতেন তাহলে তা ভিন্ন ব্যাপার। কারণ, তিনি তা করতে সক্ষম। যেভাবে আমি ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর মর্যাদাকে সুউচ্চ করেছি তেমনিভাবে আমি আমার বান্দাদের মধ্যকার যার ব্যাপারে ইচ্ছা করি তার মর্যাদাকেও উন্নীত করে থাকি। মূলতঃ প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর রয়েছে আরেক জ্ঞানী। আর সবার জ্ঞানের উপরে রয়েছে আল্লাহর জ্ঞান। যিনি সবকিছুই জানেন।
77
۞ قَالُوٓا۟ إِن يَسْرِقْ فَقَدْ سَرَقَ أَخٌ لَّهُۥ مِن قَبْلُ ۚ فَأَسَرَّهَا يُوسُفُ فِى نَفْسِهِۦ وَلَمْ يُبْدِهَا لَهُمْ ۚ قَالَ أَنتُمْ شَرٌّ مَّكَانًا ۖ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَصِفُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ সে যদি চুরি করে থাকে তার (সহোদর) ভাইওতো ইতোপূর্বে চুরি করেছিল, এতে ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপার নিজের মনে গোপন রাখল এবং তাদের কাছে প্রকাশ করলনা। সে মনে মনে বললঃ তোমাদের অবস্থাতো হীনতর এবং তোমরা যা বলছ সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৭. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা বললো: যদি সে চুরি করে তাহলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। কারণ, তার আপন ভাই তথা ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) ইতিপূর্বে চুরি করেছে। ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) তাদের এ কথার আঘাতের কষ্টটি লুকিয়ে রাখলেন। তা প্রকাশ করলেন না। বরং তিনি মনে মনে তাদেরকে বললেন: তোমরা ইতিপূর্বে যে হিংসা ও খারাপ কাজ করেছিলে এ জায়গায়ও সেই নিকৃষ্ট কাজটিরই পুনরাবৃত্তি ঘটলো। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের এ অপবাদ সম্পর্কে ভালোই জানেন।
78
قَالُوا۟ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْعَزِيزُ إِنَّ لَهُۥٓ أَبًا شَيْخًا كَبِيرًا فَخُذْ أَحَدَنَا مَكَانَهُۥٓ ۖ إِنَّا نَرَىٰكَ مِنَ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ হে আযীয! এর পিতা আছেন অতিশয় বৃদ্ধ, সুতরাং এর স্থলে আপনি আমাদের একজনকে রাখুন! আমরাতো আপনাকে দেখছি মহানুভব ব্যক্তিদের একজন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৮. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা তাঁকে বললো: হে ক্ষমতাবান আযীয! তার একজন খুব বৃদ্ধ বাবা আছেন যিনি তাকে খুবই ভালোবাসেন। তাই আমাদের একজনকে তার পরিবর্তে আটকে রাখুন। আমরা নিশ্চয়ই আপনাকে আমাদের ও অন্যদের প্রতি দয়াশীল বলেই দেখতে পাচ্ছি। তাই আপনি আমাদের প্রতি একটু দয়া করুন।
79
قَالَ مَعَاذَ ٱللَّهِ أَن نَّأْخُذَ إِلَّا مَن وَجَدْنَا مَتَـٰعَنَا عِندَهُۥٓ إِنَّآ إِذًا لَّظَـٰلِمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ যার নিকট আমরা আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া অন্যকে রাখার অপরাধ হতে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরূপ করলে আমরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী হব।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৭৯. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) বললেন: কোন যালিমের অপরাধে অন্য কোন নির্দোষের উপর যুলুম করা থেকে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি যার থলেতে রাষ্ট্রপতির পেয়ালা পেয়েছি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে আটকে রাখতে পারি না। আমি এমন করলে যালিম বলে গণ্য হবো। কেননা, তখন আমার দ্বারা দোষীকে ছেড়ে দিয়ে নির্দোষকে শাস্তি দেয়া হবে।
80
فَلَمَّا ٱسْتَيْـَٔسُوا۟ مِنْهُ خَلَصُوا۟ نَجِيًّا ۖ قَالَ كَبِيرُهُمْ أَلَمْ تَعْلَمُوٓا۟ أَنَّ أَبَاكُمْ قَدْ أَخَذَ عَلَيْكُم مَّوْثِقًا مِّنَ ٱللَّهِ وَمِن قَبْلُ مَا فَرَّطتُمْ فِى يُوسُفَ ۖ فَلَنْ أَبْرَحَ ٱلْأَرْضَ حَتَّىٰ يَأْذَنَ لِىٓ أَبِىٓ أَوْ يَحْكُمَ ٱللَّهُ لِى ۖ وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَـٰكِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তারা তার নিকট হতে সম্পূর্ণ নিরাশ হল তখন তারা নির্জনে গিয়ে পরামর্শ করতে লাগল, ওদের মধ্যে যে ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ সে বললঃ তোমরা কি জাননা যে, তোমাদের পিতা তোমাদের নিকট হতে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং পূর্বেও তোমরা ইউসুফের ব্যাপারে ক্রটি করেছিলে; সুতরাং আমি কিছুতেই এই দেশ ত্যাগ করবনা যতক্ষণ না আমার পিতা আমাকে অনুমতি দেন অথবা আল্লাহ আমার জন্য কোন ব্যবস্থা করেন এবং তিনিই বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮০. যখন তারা ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট তাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলো তখন তারা পারস্পরিক পরামর্শের জন্য মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গেলো। তাদের বড় ভাই বললো: আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, তোমাদের পিতা তোমাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আল্লাহর নামে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ছেলেকে তাঁর নিকট ফিরিয়ে দিবে। তবে এমন কোন ব্যাপার যদি তোমাদেরকে আটক করে ফেলে যা সরাতে তোমরা সক্ষম নও তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। তোমরা কিন্তু ইতিপূর্বে ইউসুফের ব্যাপারে অন্যায় করেছো; তার ব্যাপারে তোমরা নিজেদের পিতার সাথে কৃত অঙ্গীকার পুরো করোনি। তাই আমি মিশর এলাকা ছাড়বো না যতক্ষণ না আমার পিতা আমাকে তাঁর নিকট ফিরতে অনুমতি দেয় অথবা আল্লাহ তা‘আলা আমার ভাইকে নিয়ে আসার ফায়সালা করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। তিনি সত্য ও ইনসাফের ভিত্তিতে ফায়সালা করেন।
81
ٱرْجِعُوٓا۟ إِلَىٰٓ أَبِيكُمْ فَقُولُوا۟ يَـٰٓأَبَانَآ إِنَّ ٱبْنَكَ سَرَقَ وَمَا شَهِدْنَآ إِلَّا بِمَا عَلِمْنَا وَمَا كُنَّا لِلْغَيْبِ حَـٰفِظِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা তোমাদের পিতার নিকট ফিরে যাও এবং বলঃ হে আমাদের পিতা! আপনার পুত্র চুরি করেছে এবং আমরা যা জানি তারই প্রত্যক্ষ বিবরণ দিলাম, অদৃশ্যের ব্যাপারে আমরা অবহিত ছিলামনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮১. বড় ভাই আরো বললো: তোমরা নিজেদের পিতার কাছে গিয়ে বলো: নিশ্চয়ই আপনার ছেলে চুরি করেছে। অতঃপর মিশরের শাসনকর্তা আযীয চুরির শাস্তি স্বরূপ তাকে গোলাম বানিয়ে নিয়েছে। আমরা তাই বলছি যা আমরা দেখে জেনেছি। তার থলে থেকে পেয়ালা বের করা হয়েছে। আমরা জানতাম না যে সে চুরি করবে। যদি আমরা তা জানতাম তাহলে আপনার সাথে তাকে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করতাম না।
82
وَسْـَٔلِ ٱلْقَرْيَةَ ٱلَّتِى كُنَّا فِيهَا وَٱلْعِيرَ ٱلَّتِىٓ أَقْبَلْنَا فِيهَا ۖ وَإِنَّا لَصَـٰدِقُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যে জনপদে আমরা ছিলাম ওর অধিবাসীদেরকে জিজ্ঞেস করুন এবং যে যাত্রীদলের সাথে আমরা এসেছি তাদেরকেও, আমরা অবশ্যই সত্যবাদী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮২. হে আমাদের পিতা! আমাদের কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আপনি মিশরের অধিবাসীদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যাদের কাছে আমরা ছিলাম এবং যে কাফেলার সাথে আমরা এসেছি তাদেরকেও জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তারা আপনাকে তাই বলবে যা আমরা বলেছি। নিশ্চয়ই আমরা তার চুরির সংবাদ প্রসঙ্গে সত্যবাদী।
83
قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ عَسَى ٱللَّهُ أَن يَأْتِيَنِى بِهِمْ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْحَكِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
ইয়াকূব বললঃ না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে; সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়; হয়তো আল্লাহ ওদেরকে এক সাথে আমার কাছে এনে দিবেন, তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৩. তাদের পিতা তাদেরকে বললো: ব্যাপারটা তেমন নয় যা তোমরা বলছো যে, সে চুরি করেছে। বরং তোমরা নিজেরাই একটা চক্রান্ত সাজিয়েছো যেমনিভাবে তোমরা ইতিপূর্বে তার ভাইয়ের সাথে চক্রান্ত করেছো। অতএব, ধৈর্য ধরাই আমার জন্য শ্রেয়। অভিযোগ একমাত্র আল্লাহর কাছেই পেশ করছি। আশা করা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকেই আমার নিকট ফিরিয়ে দিবেন। ইউসুফ, তার আপন ভাই ও তাদের বড় ভাইকে। নিশ্চয়ই তিনি আমার অবস্থা সম্পর্কে জানেন এবং আমার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
84
وَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَـٰٓأَسَفَىٰ عَلَىٰ يُوسُفَ وَٱبْيَضَّتْ عَيْنَاهُ مِنَ ٱلْحُزْنِ فَهُوَ كَظِيمٌ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বললঃ আফসোস ইউসুফের জন্য। শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৪. তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে বললেন: আমার ইউসুফের জন্য হায় আপসোস। এদিকে বেশি কাঁদার দরুন তাঁর চোখের কালো অংশটি সাদা হয়ে গেলো। তিনি ভীষণভাবে চিন্তা ও পরিতাপে ভোগছিলেন। তিনি তাঁর দুঃখকে মানুষ থেকে লুকিয়ে রেখেছেন।
85
قَالُوا۟ تَٱللَّهِ تَفْتَؤُا۟ تَذْكُرُ يُوسُفَ حَتَّىٰ تَكُونَ حَرَضًا أَوْ تَكُونَ مِنَ ٱلْهَـٰلِكِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আল্লাহর শপথ! আপনিতো ইউসুফের কথা ভুলবেননা যতক্ষণ না আপনি শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হবেন, অথবা মৃত্যু বরণ করবেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৫. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা তাদের পিতাকে বললো: হে আমাদের পিতা! আল্লাহর কসম! আপনি তো শুধু ইউসুফের কথাই স্মরণ করে যাচ্ছেন! অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, ইউসুফের চিন্তায় আপনি কঠিনভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন অথবা আপনি কার্যত ধ্বংস হয়ে যাবেন।
86
قَالَ إِنَّمَآ أَشْكُوا۟ بَثِّى وَحُزْنِىٓ إِلَى ٱللَّهِ وَأَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমি আমার অসহনীয় বেদনা, আমার দুঃখ আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি এবং আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি তোমরা তা জাননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৬. তাদের পিতা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আমি আমার দুঃখ-বেদনা কেবল আল্লাহর কাছেই নিবেদন করছি। দুর্দশাগ্রস্তের ডাকে আল্লাহর সাড়া দেয়া এবং তার প্রতি তাঁর অফুরন্ত দয়া, করুণা এবং প্রতিদানের বিষয়ে আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।
87
يَـٰبَنِىَّ ٱذْهَبُوا۟ فَتَحَسَّسُوا۟ مِن يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلَا تَا۟يْـَٔسُوا۟ مِن رَّوْحِ ٱللَّهِ ۖ إِنَّهُۥ لَا يَا۟يْـَٔسُ مِن رَّوْحِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْقَوْمُ ٱلْكَـٰفِرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহর করুণা হতে তোমরা নিরাশ হয়োনা, কারণ কাফির ব্যতীত কেহই আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়না।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৭. তাদের পিতা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আরো বললেন: হে আমার সন্তানেরা! তোমরা ফিরে গিয়ে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের খোঁজখবর জানার চেষ্টা করো। আর তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের বিপদাপদ দূরীকরণ ও তাদেরকে প্রবোধ দেয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না। কারণ, তাঁর বিপদাপদ দূরীকরণ ও প্রবোধ দেয়া থেকে কেবল কাফির জাতিরাই নিরাশ হতে পারে। যেহেতু তারা আল্লাহর বান্দাদের উপর তাঁর মহান ক্ষমতা ও গোপনীয় দয়া থেকে একেবারেই অজ্ঞ।
88
فَلَمَّا دَخَلُوا۟ عَلَيْهِ قَالُوا۟ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْعَزِيزُ مَسَّنَا وَأَهْلَنَا ٱلضُّرُّ وَجِئْنَا بِبِضَـٰعَةٍ مُّزْجَىٰةٍ فَأَوْفِ لَنَا ٱلْكَيْلَ وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَآ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَجْزِى ٱلْمُتَصَدِّقِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হল তখন বললঃ হে আযীয! আমরা ও আমাদের পরিবার পরিজন বিপন্ন হয়ে পড়েছি এবং আমরা তুচ্ছ পণ্য নিয়ে এসেছি; আপনি আমাদের রসদ পূর্ণ মাত্রায় দিন এবং আমাদেরকে দান করুন; আল্লাহ দাতাদেরকে পুরস্কৃত করেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৮. তারা নিজেদের পিতার আদেশ মান্য করলো এবং ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর ভাইয়ের অনুসন্ধানে বের হয়ে গেলো। যখন তারা ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট প্রবেশ করলো তখন তারা তাঁকে বললো: দরিদ্রতা ও দুঃখ-কষ্ট আমাদেরকে পেয়ে বসেছে। আর আমরা অতি নগণ্য পণ্যমূল্য নিয়ে আপনার কাছে উপস্থিত হয়েছি। তাই আপনি আমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে খাদ্য মেপে দিন যেমনিভাবে আপনি আমাদেরকে ইতিপূর্বে দিতেন। আর আমাদের নগণ্য পণ্যমূল্যের দিকে না তাকিয়ে আমাদের উপর আরেকটু বাড়তি অনুদান দিন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহকারীদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।
89
قَالَ هَلْ عَلِمْتُم مَّا فَعَلْتُم بِيُوسُفَ وَأَخِيهِ إِذْ أَنتُمْ جَـٰهِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ তোমরা কি জান, তোমরা ইউসুফ ও তার সহোদরের প্রতি কিরূপ আচরণ করেছিলে, যখন তোমরা ছিলে অজ্ঞ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৮৯. যখন তিনি তাদের কথা শুনলেন তখন তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরে বললেন: তোমরা অবশ্যই জানো তোমরা ইউসুফ ও তার আপন ভাইয়ের সাথে কী করেছিলে যখন তোমরা নিজেদের উক্ত কর্মের পরিণামের ব্যাপারে অজ্ঞ ছিলে?!
90
قَالُوٓا۟ أَءِنَّكَ لَأَنتَ يُوسُفُ ۖ قَالَ أَنَا۠ يُوسُفُ وَهَـٰذَآ أَخِى ۖ قَدْ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَيْنَآ ۖ إِنَّهُۥ مَن يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ তাহলে কি তুমিই ইউসুফ? সে বললঃ আমিই ইউসুফ এবং এই আমার সহোদর; আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যে ব্যক্তি মুত্তাকী ও ধৈর্যশীল, আল্লাহ সেইরূপ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯০. তারা হতচকিত হয়ে বললো: তাহলে আপনিই কী ইউসুফ?! ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: হ্যাঁ, আমিই ইউসুফ। আর আমার সাথে যাকে দেখছো সে আমার আপন ভাই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দুরবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে এবং আমাদের সম্মান বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের উপর দয়া করেছেন। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করে এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করে তার আমল হলো খুবই ফলপ্রসু। আর আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। বরং তিনি তাদের জন্য তা সংরক্ষণ করেন।
91
قَالُوا۟ تَٱللَّهِ لَقَدْ ءَاثَرَكَ ٱللَّهُ عَلَيْنَا وَإِن كُنَّا لَخَـٰطِـِٔينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আল্লাহর শপথ! আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আমরা নিশ্চয়ই অপরাধী ছিলাম।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯১. তাঁর ভাইয়েরা নিজেদের কৃতকর্মের ওজর পেশ করে বললো: আল্লাহর কসম! তিনি আপনাকে পূর্ণতার বৈশিষ্ট্যসমূহ দিয়ে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আমরা আপনার সাথে যা করেছি তাতে আপনার প্রতি অসদাচরণ ও যুলুম হয়েছে।
92
قَالَ لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ ٱلْيَوْمَ ۖ يَغْفِرُ ٱللَّهُ لَكُمْ ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন, এবং তিনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯২. ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) তাদের ওজর গ্রহণ করে বললেন: আজ আমি তোমাদেরকে এমন কোন তিরস্কার করবো না যাতে শাস্তি কিংবা ধমকের অবকাশ রয়েছে। বরং আল্লাহর কাছে আশা করছি তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।
93
ٱذْهَبُوا۟ بِقَمِيصِى هَـٰذَا فَأَلْقُوهُ عَلَىٰ وَجْهِ أَبِى يَأْتِ بَصِيرًا وَأْتُونِى بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটা আমার পিতার মুখমন্ডলের উপর রেখ, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন, আর তোমরা তোমাদের পরিবারের সকলকেই আমার নিকট নিয়ে এসো।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৩. তারা যখন তাঁকে তাঁর পিতার চোখের অবস্থা জানালো তখন তিনি তাদেরকে তাঁর জামাটি দিয়ে বললেন: তোমরা আমার জামাটি নিয়ে গিয়ে আমার পিতার চেহারার উপর ফেললে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে। আর তোমরা আমার নিকট তোমাদের পুরো পরিবারকে নিয়ে আসবে।
94
وَلَمَّا فَصَلَتِ ٱلْعِيرُ قَالَ أَبُوهُمْ إِنِّى لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ ۖ لَوْلَآ أَن تُفَنِّدُونِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যাত্রীদল যখন বের হয়ে পড়ল তখন তাদের পিতা বললঃ তোমরা যদি আমাকে অপ্রকৃতিস্থ মনে না কর তাহলে বলিঃ আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৪. যখন কাফেলাটি মিশর থেকে রওয়ানা করে সেখানকার জনপদ অতিক্রম করলো তখন ইয়া’কুব (আলাইহিস-সালাম) তাঁর ছেলেসন্তান ও তাঁর কাছে থাকা লোকদেরকে বললেন: তোমরা যদি আমাকে মূর্খ ও বয়োবৃদ্ধির দরুন এমন কথা না বলো যে, এ একজন বুড়ো দিশেহারা, যা জানে না তাই বলে তাহলে আমি বলবো: আমি সত্যিই ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি।
95
قَالُوا۟ تَٱللَّهِ إِنَّكَ لَفِى ضَلَـٰلِكَ ٱلْقَدِيمِ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ আল্লাহর শপথ! আপনিতো আপনার পূর্ব বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৫. তখন তাঁর কাছের সন্তানরা বললো: আপনি এখনো নিজের নিকট ইউসুফের অবস্থান এবং তাকে দ্বিতীয়বার দেখা সম্ভব হওয়ার ব্যাপারে আপনার পূর্ব ধারণার উপরই রয়েছেন।
96
فَلَمَّآ أَن جَآءَ ٱلْبَشِيرُ أَلْقَىٰهُ عَلَىٰ وَجْهِهِۦ فَٱرْتَدَّ بَصِيرًا ۖ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّىٓ أَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর যখন সুসংবাদ বাহক উপস্থিত হল এবং তার মুখমন্ডলের উপর জামাটি রাখল তখন সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। সে বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি তোমরা তা জাননা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৬. যখন ইয়া’কুব (আলাইহিস-সালাম) এর সুসংবাদদাতা আসলো তখন সে ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর জামাটি তাঁর চেহারার উপর রাখতেই তিনি দৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি নিজ ছেলেসন্তাদেরকে বললেন: আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আল্লাহর দয়া ও করুণা সম্পর্কে যা জানি তোমরা তা জানো না?
97
قَالُوا۟ يَـٰٓأَبَانَا ٱسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَآ إِنَّا كُنَّا خَـٰطِـِٔينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তারা বললঃ হে আমাদের পিতা! আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন; আমরাতো অপরাধী।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৭. ইয়া’কুব (আলাইহিস-সালাম) এর ছেলেরা তাদের পিতার নিকট ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর ভাইয়ের সাথে কৃত অপরাধের জন্য ওজর পেশ করে বললো: হে আমাদের পিতা! আপনি আল্লাহর কাছ থেকে আমাদের পূর্বের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আমরা নিশ্চয়ই ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর ভাইয়ের সাথে কৃত আচরণে অসদাচারী ও পাপী ছিলাম।
98
قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّىٓ ۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
সে বললঃ আমি আমার রবের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, তিনিতো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৮. তাদের পিতা তাদেরকে বললো: অচিরেই আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের পাপসমূহ ক্ষমাকারী ও তাদের প্রতি অসীম দয়ালু।
99
فَلَمَّا دَخَلُوا۟ عَلَىٰ يُوسُفَ ءَاوَىٰٓ إِلَيْهِ أَبَوَيْهِ وَقَالَ ٱدْخُلُوا۟ مِصْرَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অতঃপর তারা যখন ইউসুফের নিকট উপস্থিত হল তখন সে তার মাতা-পিতাকে আলিঙ্গন করল এবং বললঃ আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
৯৯. ইয়া’কুব (আলাইহিস-সালাম) তাঁর পরিবারসহ ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর উদ্দেশ্যে নিজেদের এলাকা থেকে মিশরের দিকে বের হলেন। যখন তারা তাঁর নিকট প্রবেশ করলো তখন তিনি নিজ মাতা-পিতাকে জড়িয়ে ধরে নিজের ভাইদের ও তাদের পরিবারবর্গকে বললেন: আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিশরে প্রবেশ করুন। এখানে কোন কষ্টই আপনারা পাবেন না।
100
وَرَفَعَ أَبَوَيْهِ عَلَى ٱلْعَرْشِ وَخَرُّوا۟ لَهُۥ سُجَّدًا ۖ وَقَالَ يَـٰٓأَبَتِ هَـٰذَا تَأْوِيلُ رُءْيَـٰىَ مِن قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّى حَقًّا ۖ وَقَدْ أَحْسَنَ بِىٓ إِذْ أَخْرَجَنِى مِنَ ٱلسِّجْنِ وَجَآءَ بِكُم مِّنَ ٱلْبَدْوِ مِنۢ بَعْدِ أَن نَّزَغَ ٱلشَّيْطَـٰنُ بَيْنِى وَبَيْنَ إِخْوَتِىٓ ۚ إِنَّ رَبِّى لَطِيفٌ لِّمَا يَشَآءُ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْحَكِيمُ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর ইউসুফ তার মাতা-পিতাকে উচ্চাসনে বসাল এবং তারা সবাই তার সামনে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ল। সে বললঃ হে আমার পিতা! এটাই আমার পূর্বেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা; আমার রাব্ব ওটা সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমাকে কারাগার হতে মুক্ত করেছেন এবং শাইতান আমার ও আমার ভাইদের সম্পর্ক নষ্ট করার পরও আপনাদেরকে মরু অঞ্চল হতে এখানে এনে দিয়ে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমার রাব্ব যা ইচ্ছা তা নিপুণতার সাথে করে থাকেন, তিনিতো সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০০. তিনি নিজ মাতা-পিতাকে নিজের বসার খাটে বসালে তাঁরা ও তাঁর এগারো ভাই তাঁর সম্মানে সাজদায় লুটে পড়লো। এটি ছিলো সম্মানের সাজদাহ; ইবাদাতের নয়। যা ছিলো মূলতঃ তাঁর স্বপ্নে দেখা আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন। এজন্যই ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর পিতাকে বললেন: আপনাদের পক্ষ থেকে আমার প্রতি এ সম্মানের সাজদাহ মূলতঃ সে স্বপ্নেরই ব্যাখ্যা যা ইতিপূর্বে দেখে আপনার নিকট বর্ণনা করেছি। আমার প্রতিপালক সেটিকে বাস্তবায়ন করে দেখালেন। আমার প্রতিপালক আমার প্রতি দয়া করেছেন যখন তিনি আমাকে জেল থেকে বের করলেন এবং আপনাদেরকে আমার ও আমার ভাইদের মধ্যকার শয়তানের ফাসাদের পর গ্রাম থেকে এখানে নিয়ে আসলেন। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক তাঁর ইচ্ছাকৃত পরিকল্পনায় অত্যন্ত সূ²দর্শী। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে জানেন এবং তাঁর পরিকল্পনায় তিনি অতি প্রজ্ঞাময়।
101
۞ رَبِّ قَدْ ءَاتَيْتَنِى مِنَ ٱلْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِى مِن تَأْوِيلِ ٱلْأَحَادِيثِ ۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ أَنتَ وَلِىِّۦ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ ۖ تَوَفَّنِى مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِى بِٱلصَّـٰلِحِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! আপনিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক, আপনি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন!
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০১. অতঃপর ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালককে ডেকে বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে মিশরের ক্ষমতা দিলেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যাও শিক্ষা দিলেন। হে আকাশ ও জমিনের ¯্রষ্টা এবং সেগুলোকে পূর্বের নমুনা ছাড়া সৃষ্টিকারী! আপনি আমার দুনিয়ার জীবন ও আখিরাতের সর্ব ব্যাপারের অভিভাবক! আমার শেষ বয়সে আপনি আমাকে মুসলমান হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সুমহান জান্নাতুল-ফিরদাউসে আমার পিতৃপুরুষ ও অন্যান্য নেককার নবীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
102
ذَٰلِكَ مِنْ أَنۢبَآءِ ٱلْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۖ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوٓا۟ أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ যা তোমাকে আমি অহী দ্বারা অবহিত করছি, ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌঁছেছিল তখন তুমি তাদের সাথে ছিলেনা।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০২. হে রাসূল! ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর ভাইদের উক্ত ঘটনা আমিই আপনার নিকট ওহী করেছি। এ ব্যাপারে আপনার কোন জ্ঞানই ছিলো না। কারণ, আপনি তখন উপস্থিত ছিলেন না যখন ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) এর ভাইয়েরা তাঁকে কুয়ার গভীরে নিক্ষেপ করার প্রতিজ্ঞা করলো এবং তাঁর ব্যাপারে যতো অপকৌশল খাটালো। কিন্তু আমিই আপনার নিকট এটি ওহী করেছি।
103
وَمَآ أَكْثَرُ ٱلنَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি যতই চাও না কেন, অধিকাংশ লোকই ঈমান আনার নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৩. হে রাসূল! আপনি যদি তাদের ঈমান আনার জন্য সকল চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তারপরও অধিকাংশ মানুষই মু’মিন হবে না। তাই আপনি তাদের উপর আপসোস করে নিজকে ধ্বংস করবেন না।
104
وَمَا تَسْـَٔلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَـٰلَمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আর তুমিতো তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক দাবী করছোনা, এটাতো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ ছাড়া কিছু নয়।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৪. হে রাসূল! যদি তারা বুঝতো তাহলে আপনার উপর ঈমান আনতো। কারণ, আপনি তো তাদের কাছ থেকে কুর‘আন ও অন্যান্য দা’ওয়াতি কাজের জন্য প্রতিদান চাননি। কুর‘আন তো কেবল সকল মানুষের জন্য উপদেশ মাত্র।
105
وَكَأَيِّن مِّنْ ءَايَةٍ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে, তারা এ সমস্ত প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু তারা এ সবের প্রতি উদাসীন।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৫. আকাশ ও জমিনে বিক্ষিপ্তভাবে আল্লাহর তাওহীদ বুঝায় এমন অনেকগুলো নিদর্শন রয়েছে যেগুলোর পাশ দিয়ে ওরা চলে যায় ঠিকই কিন্তু তারা সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা ও সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা থেকে বিমুখ। বস্তুতঃ তারা সেগুলোর দিকে একটু তাকিয়েও দেখে না।
106
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর সাথে শরীক করে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৬. অধিকাংশ মানুষ যারা আল্লাহর উপর এ বিশ্বাস রাখে যে, তিনি ¯্রষ্টা ও রিযিকদাতা এবং তিনি জীবন ও মৃত্যু দানকারী। এতদসত্তে¡ও তারা তাঁর সাথে অন্য মূর্তি ও প্রতিমার ইবাদাত করে। উপরন্তু তারা দাবি করে যে, নিশ্চয়ই তাঁর সন্তান রয়েছে। অথচ আল্লাহ এ থেকে পবিত্র।
107
أَفَأَمِنُوٓا۟ أَن تَأْتِيَهُمْ غَـٰشِيَةٌ مِّنْ عَذَابِ ٱللَّهِ أَوْ تَأْتِيَهُمُ ٱلسَّاعَةُ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাহলে কি তারা আল্লাহর সর্বগ্রাসী শাস্তি হতে অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে কিয়ামাতের আকস্মিক উপস্থিতি হতে নিরাপদ?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৭. এ মুশরিকরা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, তাদেরকে দুনিয়াতে এমন কোন শাস্তি গ্রাস করবে না? যা তারা প্রতিরোধ করতে অক্ষম অথবা হঠাৎ তাদের উপর কিয়ামত এসে পড়বে না? যার জন্য তারা কোন প্রস্তুতি নিতে পারবে না। এ জন্যই কি তারা ঈমান আনে না?!
108
قُلْ هَـٰذِهِۦ سَبِيلِىٓ أَدْعُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِى ۖ وَسُبْحَـٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তুমি বলঃ এটাই আমার (আল্লাহর) পথ; প্রতিটি মানুষকে আমি আহবান করি সজ্ঞানে, আমি এবং আমার অনুসারীগণও; আল্লাহ মহিমান্বিত এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে আমি তাদের অন্তভুর্ক্ত নই।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৮. হে রাসূল! আপনি সবাইকে বলুন: এটিই আমার পথ যার দিকে আমি মানুষকে ডাকি। সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আমি এবং আমার অনুসারী, আমার হিদায়েতে হিদায়েতপ্রাপ্ত ও আমার আদর্শে আদর্শবানরা সেদিকেই ডাকি। আমি আল্লাহর সাথে শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই। বরং আমি তাঁর তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকারীদেরই একজন।
109
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِىٓ إِلَيْهِم مِّنْ أَهْلِ ٱلْقُرَىٰٓ ۗ أَفَلَمْ يَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۗ وَلَدَارُ ٱلْـَٔاخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তোমার পূর্বেও জনপদবাসীদের মধ্য হতে পুরুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম, যাদের নিকট অহী পাঠাতাম; তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিল তা কি দেখেনি? যারা মুত্তাকী তাদের জন্য পরকালই শ্রেয়; তোমরা কি বুঝনা?
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১০৯. হে রাসূল! আমি আপনাকে যেমনভাবে ওহী দিয়ে পাঠিয়েছি তেমনভাবে আপনার পূর্বেও পুরুষ মানুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম। কোন ফিরিশতাকে নয়। যাদের নিকট আমি আপনার মতোই ওহী পাঠিয়েছি। যারা শহরবাসী ছিলো; গ্রামবাসী নয়। তাঁদের জাতিরা তাঁদের প্রতি মিথ্যারোপ করলে আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। আপনার প্রতি এ মিথ্যারোপকারীরা কি জমিনে ভ্রমণ কওে দেখে না যে, আপনার পূর্বের মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি কেমন ছিলো? ফলে তারা তাদেরকে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতো?! যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে পরকালের নিয়ামত তাদের জন্য অনেক উত্তম। তোমরা কি জানো না যে, এটি খুবই উত্তম? তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ -যার সর্বোচ্চটি হলো ঈমান আনার নির্দেশ- মেনে এবং তাঁর নিষিদ্ধ কাজ -যার বড়টি হলো আল্লাহর সাথে শিরক করা- পরিত্যাগ করে তাঁকে ভয় করবে।
110
حَتَّىٰٓ إِذَا ٱسْتَيْـَٔسَ ٱلرُّسُلُ وَظَنُّوٓا۟ أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا۟ جَآءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّىَ مَن نَّشَآءُ ۖ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ ٱلْقَوْمِ ٱلْمُجْرِمِينَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
অবশেষে যখন রাসূলগণ নিরাশ হল এবং লোকে ভাবল যে, রাসূলদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য এলো। এভাবে আমি যাকে ইচ্ছা করি সে উদ্ধার পায়, আর অপরাধী সম্প্রদায় হতে আমার শাস্তি রদ করা হয়না।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১০. যে রাসূলগণকে আমি পাঠিয়েছি তাঁদের শত্রæদেরকে আমি ছাড় দিয়েছি তথা আমি তাদেরকে দ্রæত শাস্তি দেইনি, তাদেরকে একটু সুযোগ দিয়েছি মাত্র। তবে যখন তাদের শাস্তি দেরি হয়ে গেলো এবং রাসূলগণও তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলেন আর কাফিররাও ধারণা করলো যে, তাদের রাসূলগণ মু’মিনদের মুক্তি ও মিথ্যারেপকারীদের ক্ষেত্রে যে শাস্তির ওয়াদা করেছেন সে ব্যাপারে তাঁরা মিথ্যুক তখনই আমার রাসূলদের জন্য আমার সাহায্য এসে গেলো। আর রাসূলগণ ও মু’মিনদেরকে মিথ্যারোপকারীদের উপর আপতিত এই শাস্তি থেকে রক্ষা করা হলো। বস্তুতঃ আমি যখন অপরাধী জাতির উপর শাস্তি নাযিল করি তখন তাদের পক্ষ থেকে আমার শাস্তি কখনো ফিরিয়ে নেয়া হয় না।
111
لَقَدْ كَانَ فِى قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُو۟لِى ٱلْأَلْبَـٰبِ ۗ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَىٰ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ ٱلَّذِى بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَىْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অনুবাদ (রাওয়াই আল-বায়ান)
তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা, ইহা এমন বাণী যা মিথ্যা প্রবন্ধ নয়, কিন্তু মু’মিনদের জন্য এটা পূর্ব গ্রন্থে যা আছে উহার সমর্থন এবং সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত ও রাহমাত।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
১১১. রাসূলগণ ও তাঁদের উম্মতদের ঘটনাবলী এবং ইউসুফ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর ভাইদের ঘটনার মাঝে নিশ্চয়ই উপদেশ রয়েছে, যা থেকে সুস্থ বিবেকবান ও বুদ্ধিমানরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। এ ঘটনাবলী সম্বলিত কুর‘আন কখনোই আল্লাহর উপর মিথ্যা এবং বানানো কথা নয়। বরং তা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত পূর্বের কিতাবগুলোর সত্যায়ন এবং প্রত্যেক প্রয়োজনীয় বিধানাবলী ও শরীয়তের বিস্তারিত বর্ণনা। উপরন্তু এটি সকল কল্যাণের পথপ্রদর্শক ও মু’মিন জাতির জন্য রহমতস্বরূপ। কারণ, তারাই তো এর দ্বারা উপকৃত হয়ে থাকে।