প্রসঙ্গে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আইশা সিদ্দীকা (রা)-এর নির্দোষিতা প্রমাণ করে আয়াত নাযিল
হয় ৷ এ সম্পর্কে ইতিপুর্বে আলোচনা করা হয়েছে ৷ এ বছর উমরাতুল হুদায়বিয়া’ সংঘটিত হয়,
মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ্ (সা )-কে উমরা পালন করতে বাধা দেয় এবং দশ বছরের জন্য যুদ্ধ বন্ধের
অঙ্গীকারসহ সন্ধি স্থাপিত হয় ৷ ফলে লোকেরা পরস্পরে নিরাপত্তা লাভ করে ৷ এ সময় কেউ
কারো উপর তরবারি উত্তোলন করবে না এবং কেউ কারো সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গও করবে না ৷ এ বিষয়ে
যথাস্থানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ৷ এ বছর ও মুশরিকরা হাজ্জর তত্ত্বাবধান করে ৷
ওয়াকিদী বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) এ বছর যিলহজ্জ মাসে ৬ জন দৃতকে পত্রসহ বিভিন্ন রাজ
দরবারে প্রেরণ করেন, এরা হলেন ১ হাতির ইবন আবুবালতাআকে আলেকজাদ্রিয়ার শাসনকর্তা
মুকাওকিসের প্রতি ২ বদর সময়ে অংশ গ্রহণকারী শুজা ইবন ও হব ইবন আসাদ ইবন
জুযাইমাকে হারীস ইবন আবুশামির আল-গাসসানীর প্রতি ৷ অর্থাৎ ইনি ছিলেন আরবের খৃস্টানদের
বাদশাহ ৷ ৩ দিহ্ইয়া ইবন খলীফা আল-কালবীকে রোম ন্ম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি ৷ : আবদৃল্লাহ্
ইবন হুযায়ফা সাহমীকে পারস্য সম্রাট কিসৃরার প্রতি , ৫ হাওয়া ইবন আলী আল হানাফীর প্রতি
সালীত ইবন আমৃর আল-আমিরীকে এবং ৬ আবিসিনিয়ার ইথিওপিয়া খৃষ্টান শাসক নাজাশীর প্ৰতি
আমৃর ইবন উমাইয়া আদৃদিমারীকে ৷ ঐ নাজাশীর আসল নাম ছিল আসহামা ইবন হ্ব ৷
সপ্তম হিজরী সনের শুরুতে সংঘটিত খায়বর যুদ্ধ
মহান আল্লাহর বাণী আবদুর রহমান
ইবন আবু লায়লা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, এখানে বলে খায়বরকে বুঝানো
হয়েছে ৷ মুসা ইবন উকবা বলেন : রাসুল করীম (সা) হুর্দায়বিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করে ২০ দিন
অথবা এর কাছাকাছি সময় মদীনায় অবস্থান করে খায়বরের উদ্দেশ্যে বের হন ৷ আর আল্লাহ্
তাআলা তার রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে এ খায়বরের বিজয়েরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ মুসা যুহ্রী
সুত্রে বর্ণনা করেন যে , হিজরী ষষ্ঠ সনে খায়বর বিজয় সম্পন্ন হয় ৷ আর বিশুদ্ধ মতে এ বিজয় হয়
সপ্তম হিজরীর শুরুতে ৷ যেমনটি আমরা এইমাত্র উল্লেখ করেছি ৷ ইবন ইসহাক (র) বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করে যিলহাজ্জ্ব মাস এবং মুহাররম মাসের কিছু অং
মদীনায় অবস্থান করেন ৷ এরপর মুহাররম মাসের অবশিষ্ট দিনগুলােতে তিনি খায়বরের উদ্দেশ্যে
বের হন ৷
ইউনুস ইবন বুকায়র মারওয়ান ও মিসওয়ার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, হুদাবিয়ার বছর
রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনা প্রত্যাবর্তনের পথে মক্কা এবং মদীনায় মধ্যবর্তী স্থান রাসুলুল্লাহট্রু (সা) এর
প্রতি সুরা ফাত্হ নাযিল হয় ৷ যুলহাজ্জ মাসে তিনি মদীনায় পৌছান এবং খায়বরের পথে রওয়ানা
হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন ৷ খায়বরের পথে খায়বর ও পাতফান গোত্রের
মধ্যবর্তী স্থানে রাজী নামক উপত্যকায় তিনি যাত্রা বিরতি করেন ৷ পাতফানীরা খায়বরবাসীদের
সহায়তা করবে ৷ পরে বলে দিল তার আশংকা, তাই তিনি ভোর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে
তারপর তাদের নিকট গমন করেন ৷ হাফিয বায়হাকী (র) বলেন, সপ্তম হিজবীর প্রথম দিকে
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বহির্পত হওয়া সম্পর্কে এ মর্মের একটা বর্ণনা ওয়াকিদী থেকে বর্ণিত আছে ৷
আবদুল্লাহ ইবন ইদরীস ইবন ইসহাক থেকে আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন
যে, মুহাররম মাসের শেষের দিকে খায়বর বিজয় হয় এবং সযক্ষ্ম মাসের শেষের দিকে নবী করীম
(সা) মদীনায় ফিরে আসেন ৷ ইবন হিলাল বলেন, এ সময় রাসৃলুল্লাহ্ (সা) নুসায়লা ইবন
আবল্লোহ্ লায়হীকে মদীনায় তার স্থলাভিষিক্ত করে যান ৷
ইমাম আহমদ (র) আফ্ফান আবুহুরায়রা সুত্রে বর্ণনা যে, আবু হুরায়রা (র) তার
সম্প্রদায়ের কিছু লোকের সঙ্গে মদীনায় আগমন করেন ৷ নবী করীম (সা ) তখন খায়বরে ছিলেন ৷
তিনি সিবা ইবন উরফাতা পাতফানীকে মদীনায় তার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করেন ৷ আবুহুরায়রা
(রা) বলেন :: আমি সিবার নিকট গিয়ে পৌছলাম, তখন তিনি ফজরের সালাতের প্রথম
রাকামাতে কাফ-হা-ইয়া-অইিন-সাদ এবং দ্বিতীয় রাকআতে ওয়াইলুললিল মুতাফ্ফিফীন সুরা পাঠ
করছিলেন ৷ তখন আমি মনে মনে বললা-স্র, অমুকের জন্য দাভাগ, যে মানুষের নিকট থেকে
যখন মেগে নেয়, তখন পুরাপুরি আদায় করে নেয়, আর যখন মানুষকে যোগ দেয় তখন কম
দেয় ৷ তিনি বলেন, আমীর নামায আদায় করে আমাদেরকে কিছু জিনিস দান করলে আমরা তা
নিয়ে খায়বর পৌছি ৷ নবী করীম (সা) তখন খায়বর বিজয় সম্পন্ন করেছেন ৷ তিনি মুসলমানদের
সঙ্গে কথা বলেন এবং গনীমতের সালে আমাদেরকেও শরীক করেন ৷
ইমাম বায়হাকী সুলায়মান ইবন হাবৃব বনুগিফারের একদল লোক থেকেও হাদীছটি
বর্ণনা করেছেন ৷
ইবন ইসহাক (র) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সা) মদীনা থেকে খায়বরের পথে বের হয়ে
আসৃর পাহাড়ের পথে গমন করেন এবং তথায় একটা মসজিদ নির্মাণ করেন ৷ তারপর সাহ্বা’
নামক স্থানে আগমন করেন; এরপর তিনি সৈন্যদেরকে নিয়ে অগ্রসর হয়ে রাব্জী নামক উপত্যকায়
অবস্থান নেন ৷ সেখানে খায়বরবাসী এবং পাতফানীদের মধ্যস্থলে অবস্থান গ্রহণ করেন, যাতে
তাদের মধ্যে আঃরায় হন, যেন তারা খায়বরবাসীদেরকে সাহায্য করতে না পারে ৷ কারণ, তারা
ছিল রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বিপরীতে খায়বরের য়াহ্রদীদের জন্য সাহায্যকারী ৷ আমি জানতে পেয়েছি
যে, পাতফানের ণ্লাকেরা যখন এটা জানতে পারে তখন একত্র হয়ে বের হয় যাতে রাসুলুল্পাহ্
(না)-এর বিরুদ্ধে য়াহ্রদীদেরকে সাহায্য করতে পারে ৷ তারা সৰেমাত্র এক মনযিল পথ অতিক্রম
করেই পেছনে সহা সম্পদ আর পরিবার-পরিজনের মধ্যে হৈ চৈ শ্রবণ করে তাদের ধারণা জানা
যে, মুসলমানরা পেছন থেকে তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে ৷ তাই তারা পেছনে ফিরে এসে
নিজেদের সহায় সম্পদ আর পব্লিবার-পরিজ্যনর মধ্যে অবস্থান গ্রহণ করে এবং রহ্সুলুল্লাহ্ (না) ও
খায়বরের মধ্যে অতরায় হয়ে দাড়ায়নি ৷
ইমাম বুখারী (র) আবদৃল্লাহ্ ইবন মাসলামা বুশায়র সুত্রে বর্ণনা করেন যে, সৃওয়ায়দ
ইবন নৃমান তাকে জানান যে, খায়বরের বছরে তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর সঙ্গে বের হন ৷ এমন
কি খায়বরের নিকটবর্তী ’সাহ্বা নামক স্থানে পৌছে আসরের সালতে আদায় করে খাবার আমার
জন্য বললে কেবল ছাতৃ আনা হলো তিনি তা ভিজাতে বলেন ৷ তা ভিজানো হলে তিনি আহার
করেন এবং তার সঙ্গে আমরাও আহার করি ৷ এরপর মাগরিবের নমােয়ের জন্য দাড়িয়ে কুলি করে
ালাত আদায় করেন ৷ এজন্যে তিনি আর নতুন করে উয়ু করেননি ৷
ইমাম বুখারী (র) আবদুল্লাহ্ ইবন মাসলামা — সালাম! ইবনুল আকওয়া সুত্রে বর্ণনা
করেন : আমরা রাত্রিবেলা রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে খায়বরের উদ্দেশ্যে বের হই ৷ তখন
আমাদের এক ব্যক্তি আমীরকে বললে! : হে আমীর ! তুমি কি আমাদ্যোকে তোমার কিছু ণ্শানাবে
না ? আর আমীর ছিলেন একজন কবি ৷ তখন তিনি বাহন থেকে অবতরণ করে লোকজনকে
উদ্বুদ্ধ করে হুদী পান গোনান :
হে আল্লাহ্ ! তুমি না থাকলে আমরা হিদায়াত তথা সরল পথের সন্ধান পেতাম না , আমরা
সদকা করতাম না এবং সালাত আদায় কঃতোম না ৷ সুতরাং তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর, যতদিন
আমরা জীবিত থাকি, তোমার তরে নিজেদের জান কুরৰান হোক ৷ নাযিল কর আমাদের উপর
শান্তি ও নিরাপত্তা ৷
আমরা যখন মুখোমুখি হবো তখন আমাদেরকে অবিচল রেখো ৷ আমাদের প্রতি হুৎকার
দেওয়া হলে আমরা তাকে তৃচ্ছ জ্ঞান করি ৷ চিৎকার দ্বারা আমাদের বিরুদ্ধে লোকজন জড়ো
বল্পা হয় ৷
পংক্তিগুলো শ্রবণ করে রাসুলুল্লাহ্ (সা) জিজ্ঞাসা করলেন, কে এই হুদী’ গায়ক ? লোকেরা
জানানো : আমীর ইবনুল আকওয়া ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : আল্লাহ্ তারপ্রতি রহম করুন ৷
তখন আমাদের মধ্যে একজন বললো : তার জন্য (শাহাদাত ) অবধারিত হয়ে গেছে ৷ ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ (সা) ! আপনি তার দ্বারা (আরো কিছু কাল) আমাদেরকে যদি উপৃকত হওয়ার সুযোগ
দান করতেন ৷ আমরা খায়বর পৌছে তাদেরকে অবরোধ করে ফেলি ৷ এ সময় আমরা ক্ষুধায়
কাতর হয়ে পড়ি ৷ এরপর আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানদেরকে খায়ররে বিজয় দান করেন ৷ যেদিন
খায়বর বিজয় হয় সেদিন বিকালে লোকেরা অনেকগুলো চুলো প্ৰজ্বলিত করে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
জানতে চইিলেন : এসব কিসের আগুন ? কেন, কিসের জন্য এ আগুন জ্বালচ্ছে ? লোকেরা
বললেন : গোশত পাকাবার জন্য ৷ তিনি বললেন, কিসের ণ্গাশত ? বলা হল : গৃহপালিত গধোর
গোশৃত ৷ তখন নবী করীম (সা) বললেন : গোশৃত আর শুররা প্রবাহিত কর এবং (পাত্র) ভেঙ্গে
ৰেলে ৷ তখন এক ব্যক্তি বললো : ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (সা ) ! আমরা কি তা প্রবাহিত করে পাত্র ধুয়ে
ফেলবাে ? নবী করীম (সা) বললেন ? এটাও হতে পারে ৷ লোকেরা যখন সারিবদ্ধ হয়ে দাড়ায়,
আর আমীর এর তলোয়ার ছিল খাট, তিনি এ খাট তরবারি দ্বারা ইয়াহ্রদীর পায়ের গোছায় আঘাত
করা শুরু করেন ৷ তরবারির আঘাত তার নিজের হাটুতে লাগে এবং এতেই আমীর এর মৃত্যু
হয় ৷ যখন তারা ফিরে আসছিলেন তখন (আমীর এর ভাই) সালমা বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
আমাকে দেখে আমার হস্ত ধারণ করেন ৷ তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমার কি হয়েছে ? আমি
বললাম : আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন ৷ লোকদের ধারণা আমীর এর সকল
আমল পণ্ড হয়ে গেছে ৷ তখন নবী করীম (সা) বললেন : যে ব্যক্তি এমন কথা বলে সে মিথ্যা
বলে ৷ তার জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার ৷ এরপর তিনি দু আঙ্গুল একত্র করেন ৷ তিনি একজন
মুজাহিদের মতো জিহাদ করেছেন ৷ খুব কম আরবই পৃথিবীর বুকে আমিরের মতো পদক্ষেপে
বিচরণ করেছে ৷ ইমাম মুসলিম (র)ও এ হাদীছটি হাতিম ইবন ইসমাঈল প্রমুখের বরাতে ইয়াষীদ
ইবন আবু উবায়দ সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ ইবন ইসহাক আমীর ইবন আক্ওয়া এর কাহিনী
অন্যভাবে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি মুহাম্মাদ ইবন ইব্রাহীম নাসৃর ইবন দৃহ্ব আসলামী সুত্রে
তিনি তদীয় পিতা থেকে ৷ তিনি ৱাসুলুল্লাহ্ (না)-কে খ্যয়বর সফরকালে আমীর ইবন আফওয়াকে
বলতে শুনেছেন আর ইনি ছিলেন সালামা ইবন আমীর ইবন আক্ওয়া এর চাচা, হে ইবনুল
আক্ওয়া! তুমি নীচে নেমে এসো এবং আমাদেরকে তোমার কিছু কবিতা শুনাও ৷ রাৰী বলেন,
তিনি নীচে নেমে রাসুলুল্পাহ্ (সা) কে নিম্নোক্ত কবিতা শুনান :
আল্লাহ্র শপথ, আল্লাহ্ না থাকলে আমরা হিদায়াত পেতাম না ৷ আমরা সদকা করতাম না,
সালাত আদায় করতাম না ৷ আমরা এমন লোক যখন কোন জাতি আমাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার
করে আর বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় আমরা তা প্রতিরোধ করি ৷ সুতরাং তুমি আমাদের প্ৰতি শান্তি
ও নিরাপত্তা নাযিল কঃ৷ ৷ এবং আমাদ্যোকে অবিচল রাখ, যখন আমরা সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হই ৷
তার কবিতা শ্রবণ করে রাসুলুল্লাহ্ (না) বলেন : তোমার পালনকতা তোমার প্ৰতি রহম করুন,
দয়া করুন ৷ তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (বা) বললেন : ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (না) ! আপনি যদি তার
দ্বারা আমাদেরকে (আরো কিছু সময়) উপকৃত হওয়ার সুযোগ দিতেন ৷ তার জন্য তো শাহাদত
অনিবার্য হয়ে গেছে ৷ খায়বরের দিন তিনি শহীদ হন ৷ ইমাম বৃখরী-এর মতো তিনিও তার মৃত্যুর
বর্ণনা উল্লেখ করেহ্নে৷ ৷
ইবন ইসহাক আতা ইবন আবু মারওয়ান আবুমাতাব ইবন আমৃর সুত্রে বর্ণনা করেন
যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) খায়বরে দাড়িয়ে সাহাবীদের উদ্দেশেদ্র বলেন, আর আমিও তাদের মধ্যে
ছিলাম, তোমরা সকলে দাড়াও ৷ এরপর তিনি বললেন :
এলাহী ! সপ্ত আকাশ এবং তা যার উপর ছায়া বিস্তার করে, সে সবের পালনকতা, ভুমি
এবং ভুমি যা কিছু ধারণ করে সে সবের পলনকতা, সমস্ত শয়তান আর শয়তানরা যাদ্যেশ্বকে
পােমরাহ করে তাদের পালনকতা, বায়ু আর ৰায়ু যেসব বস্তুকে উড়িয়ে নিয়ে যায সেসবের
খায়বরে আলী ইবন আবু তালিব (রা) রাসুল করীম (সা) থেকে পেছনে পড়ে যান আর
সেদিন তার চোখে পীড়া ছিল ৷ তখন তিনি বললেন : আমি কি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর পেছনে পড়ে
থাকবাে ? একথা বলে তিনি এসে নবী করীম (সা)-এর সঙ্গে যোগ দেন ৷ আমরা রাত্রি যাপন
করি, যে রাত্রে খায়বর বিজয় হয়, সেদিন ভোরে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : আগামী কাল আমি
এমন লোকের হাতে পতাকা দেবাে , আল্লাহ এবং তার রাসুলুল্লাহ্ (সা ) যাকে ভালরাসেন (অথবা
তিনি বলেন আগামী কাল এমন ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবেন) ৷ তার হাতে খায়বর বিজয় হবে
আমরা সকলেই খায়বর বিজেতা হওয়ার প্রত্যাশী ছিলাম ৷ বলা হলো : এই যে আলী (রা) !
রাসুলুল্লাহ্ (যা) তার হাতে পতাকা তুলে দেন আর তার হাতেই খায়বর বিজয় হয় ৷ ইমাম বুখারী
(র) ও ইমাম মুসলিম (র) কুতায়বার বরাতে হাতিম সুত্রেও হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ ইমাম বুখারী
(র) কুতায়বা আবুহাযিম সুত্রে বর্ণনা করে বলেন :
সাহ্ল ইবন সাদ আমাকে জানান যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) খায়বারের দিন আমাকে বললেন :
আগামী কাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে এ পতাকা তুলে দেবাে, যিনি আল্লাহ এবং তার
রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে ভালবাসেন এবং আল্লাহ ও তার রাসুলুল্লাহ্ (সা)ও যাকে ভালবাসেন ৷ তার
হাতে আল্লাহ খায়ররের বিজয় দান করবেন ৷ লোকেরা কানাখুষার মধ্যে রাত্রি যাপন করেন, কার
হাতে এ পতাকা দেয়া হয় কে জানে ৷ ভোরে লোকজন রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর নিকট উপস্থিত হন ৷
সকলেই আশা পোষণ করেন ৷ এ পতাকা তাকে দেয়া হবে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) জিজ্ঞেস করলেন,
আলী ইবন আবু তালিব কোথায় ? লোকেরা আরব করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (সা) ! তার চোখ
ব্যধিগ্রস্ত ৷ রাবী বলেন, লোক প্রেরণ করে তাকে ডেকে এনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার দৃচোখে মুখের
লালা লাগিয়ে তার জন্য দৃ’আ করলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে উঠেন যেন কোন ব্যথাই ছিলনা ৷
রাসুলুল্পাহ্ (সা) তার হাতে পতাকা তুলে দিলে হযরত আলী (রা) বললেন : তারা আমাদের মতো
(মুসলিম) না হওয়া পর্যন্ত আমি তাদের সঙ্গে লড়াই করে যাবো ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : ধীরে
সুন্থে তাদের দিকে এগিয়ে যাবে এবং তাদের আঙ্গিনড়ায় পৌছে ইসলামের দিকে তাদেরকে
আহ্বান জানাবে, তাদের উপর আল্লাহ্ তাঅড়ালার যে অধিকার বতায়, সে সম্পর্কে তাদেরকে
অবহিত করবে ৷ আল্লাহর শপথ, তোমার দ্বারা একজন লোকের হিদায়াত লাভ করা তোমার লাল
বর্ণের উটের মালিক হওয়ার চেয়ে অনেক উত্তম ৷ ইমাম মুসলিম (র) এবং ইমাম নাসাঈ (র)
উভয়ে কুতায়বা সুত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷
সহীহ মুসলিম এবং বায়হাকীতে সুহায়ল ইবন আবু সালিহ তার পিতা সুত্রে ৷ তিনি হযরত
আবুহ্বাযরা (রা) থেকে বর্ণনা করেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন : আমি আপামীকাল এমন এক ব্যক্তির হাতে এ পতাকা তুলে দেবাে,
যে আল্পাহ্ এবং তার রাসুলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ্ ও তার রাসুলুল্লাহ্ (সা) যাকে ভালবাসেন
এবং তার হাতে অড়াল্লাহ্ (খায়বরের) বিজয় দান করবেন ৷ (একথা শ্রবণ করে) উমর (রা) বলেন,
কেবল সেদিনই আমার মনে নেতৃত্ব লাভের আকাত্তক্ষা জাগে ৷ রাসুল করীম (সা) হযরত আলী
(রা)-কে ডেকে এ বলে তাকে প্রেরণ করেন : যাও এবং লড়াই করতে থাক যতক্ষণ না আল্লাহ্
তোমার হাতে বিজয় দান করেন ৷ পেছনে ফিরে তড়াকাবেনা, এদিক সেদিক দেখবে না ৷ আলী
(বা) জিজ্ঞেস করলেন : কে ৷নৃ বিষয়ে আমি৩ তাদের সঙ্গে জিহাদ করবো ? রাসুল করীম (সা)
বললেন৪ আল্পাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্র বান্দ৷ ও রাসুল-
যতক্ষণ তারা এ কথার সাক্ষ্য না দেয় ততক্ষণ তুমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ অব্যাহত রাখবে ৷
তারা একথা স্বীকার করে নিলে তারা তাদের জান মালের নিরাপত্তার অধিকারী হবে ৷ তবে কারো
অধিকার হরণ করলে৩ তার দন্ড ভোগ করতে হয়ে তাদের হিসাব অ ৷ল্লাহ্র হাতে ৩নস্ত ৷ এ হাদীছের
শব্দমা লা বুখা ৷রী শরীফের ৷
ইমাম আহমদ (র) মুসআব ইবন মিকদাম আবু সাঈদ খুদৃরী (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন
৪ আবু সাঈদ খুদরী (বা) বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) পতাকা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বললেন : হক আদায় করে কে এ পতাকা
ধারণ করবে ? এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে বললাে আমি ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যাও ৷ অপর
এক ব্যক্তি এগিয়ে এলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : যাও ৷ এরপর নবী করীম (সা) বললেন : সে
সত্তার শপথ, যিনি মুহাম্মাদের মুখমণ্ডলকে গৌরবদীপ্ত করেছেন, এমন এক ব্যক্তিকে আমি এটা
দান করবো , যে পলায়ন করবে না ৷ এরপর তিনি বললেন : হে আলী ধারণ কর ৷ তিনি এগিয়ে
যান এবং আল্লাহ তার হাতে খায়বর ও ফাদাক এর বিজয় দান করেন ৷ বিজয়ের পর তিনি তথা
থেকে উন্নতমানের আজওয়া , খেজুর এবং শুকন৷ গোশ্ত নিয়ে আসেন ৷ ইমাম আহমদ
এককভাবে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদীছের সনদেও কোন ত্রুটি নেই, তার একজন
রাবী সম্পর্কে বি৩কি রয়েছে ৷ হাদীছটিতে কিছুটা বিরল বর্ণনাও রয়েছে ৷
ইউনুস ইবন বুকাইর আমৃর ইবনুল আক্ওয়৷ সুত্রে বর্ণনা করে বলেন যে, নবী করীম
(সা) আবু বকর (রা)-কে খায়বরের কোন এক দুর্গের প্রতি প্রেরণ করেন ৷ তিনি জিহাদ শেষে
ফিরে আসেন ৷ অনেক চেষ্টা করেও তা জয় করতে সক্ষম হননি ৷ এরপর উমর (রা)-ফে প্রেরণ
করেন ৷ তিনিও ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : আগামী কাল আমি এমন এক
ব্যক্তির হাতে পতাকা দেবাে , আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসুলুল্লাহ্ (সা) যাকে ভালবাসেন এবং যিনি
আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলকে ভালবাসেন ৷ আল্লাহ তার হাতে বিজয় দান করবেন এবং৩ তিনি
পলায়নকা ৷রী নন ৷ সালমা বলেনঃ রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলী ইবন আবুতা তালিবকে ডাকেন ৷ তখন তার
চাে ৷খে অসুখ ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার দু চোখে লাল৷ দিয়ে বললেন০ পতাকা নিয়ে এগিয়ে যাও
যতক্ষণ না আল্লাহ্ তোমার হাতে বিজয় দান করেন ৷ আলী (রা) পতাকা নিয়ে বের হলেন দ্রুত
গতিতে চললেন আর আমরা তার পশ্চাতে পদাৎক অনুসরণ করছিলাম ৷ তিনি পাথরের ঢিবিতে
পতাকা গাড়লেন ৷ এটা ছিল দুর্গের নীচে ৷ এক ইয়াহুদী দুর্গের চুড়া থেকে মাথা তুলে দেখলে ৷
বললো০ কে তুমি ? তিনি বললেন০ আমি আলী ইবন আবুতা ৩ালিব ৷ তখন ইয়াহ্রদী বললো, মুসার
উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে (অর্থাৎ তাওরাত) তার শপথ করে বলছি, তোমরা জয়ী হয়ে ৷ আল্লাহ
তার হাতে বিজয় দান না করা পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করেননি ৷
ইমাম বায়হাকী (র) হাকিম আবদুল্লাহ্ ইবন বুরায়দা সুত্রে,৩ তিনি তদীয় পিতা সুত্রে
বর্ণনা করেন০ খায়বরের দিন আবু বকর (রা) পতাকা ধারণ করেন ৷ কিন্তু বিজয় অর্জন ছ৷ ৷ড়াই
তিনি প্র৩াবর্ভা করেন ৷ মাহমুদ ইবন মাসলামা শহীদ হলে লোকেরা ফিরে আসে ৷ ৩ খন রাসুল
করীম (সা) বললেন ৪ আপামীকাল আমি আমার পতাকা এমন এক ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত করবো, যে
আল্লাহ এবং তার রাসুলুল্লাহ্ (সা)ন্কে ভালবাসে আর আল্লাহ এবং তার রাসুলও যাকে ভালবাসেন ৷
আল্লাহ তার হাতে বিজয় সুচিত না করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ফিরে আসবে না ৷ আগামীকাল বিজয়
নিশ্চিত এ আশায় আমরা প্রশান্ত চিত্তে রাত্রি যাপন করি ৷ তখন রাসৃলুল্লাহ্ (সা) ফজরের সালাত
আদায় করে পতাকা নিয়ে আসতে বলেন এবং নিজে দাড়িয়ে থাকেন ৷ রাসুল করীম (সা)-এর
নিকট যার কিছু মযদি৷ আছে সে-ই আশা পোষণ করে যে, সেই হবে রাসুলের কাডিক্ষত ব্যক্তি ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট আমার যেটুকু স্থান আছে, তাতে আমি আশা পোষণ করি এবং মাথা
তুলে এগিয়ে যাই ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলী ইবন আবু তালিবকে তলব করেন ৷ তখন তিনি
চক্ষু পীড়ায় ভুগছিলেন ৷ রাবী বলেন, রাসুল করীম (সা) তার চোখে হাত বুলান আর তার হাতে
কা তুলে দেন ৷ তিনি বিজয় অর্জন করেন ৷ তখন আমি আবদুল্লাহ ইবন বৃরায়দাকে বলতে
শুনি, তিনি বলছিলেন, তিনি ছিলেন মারহাবকে হত্যাকারী ৷
ইবন ইসহাক সুত্রে ইউনুস বলেন যে, খায়বরের দৃর্পগুলাের মধ্যে সর্বপ্রথম নাএম’ দুর্গ জয়
করা হয় ৷ সেখানেই মাহমুদ ইবন মাসলামাকে শহীদ করা হয় ৷ উপর থেকে তার মাথায় যাতা
নিক্ষেপ করা হলে তাতে তিনি শহীদ হন ৷
ইমাম বায়হড়াকী (র) ইউনুস ইবন বুক৷ য়র আবদুল্লাহ ইবন বুরায়দা সুত্রে৩ তিনি তার
পিত ৷ থেকে বর্ণনা করেনং রাসুলুল্লাহ্ (সা) কখনো কখনো মাথা ব্যথায় ১ আক্রান্ত হতেন ৷ তখন
দৃ একদিন ঘর থেকে বের হতেন না ৷ থায়বরেও তিনি মাথা ধরায় আক্রান্ত হন ৷ এ সময়ও তিনি
লোকজনের সম্মুখে উপস্থিত হননি ৷ হযরত আবু বকর (রা) বাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর পতাকা নিয়ে
বের হন এবং তুমুল জিহাদ শেষে প্রত্যাবর্তন করেন ৷ এরপর হযরত উমর (রা) রাসুলুল্লাহ্র (সা)
পতাকা ধারণ করে ভীব্রে জিহাদ করেন যা ছিল পুর্বের চেয়ে আরো অনেক কঠোর; কিন্তু তিনিও
ফিরে আসেন ৷ এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে অব ৩করা হলেও তিনি বললেন, আগামী কাল
আমি এমন লোকের হাতে এ পতাকা তুলে দেবাে, যে আল্লাহ্ ও তার বা সুলকেভ ৩ালবাসে এবং
আল্লাহ্ ও তার রাসুলও যাকে ভালবাসেন ৷ আর যে ব্যক্তি শক্তি প্রয়ােপে উক্ত অঞ্চল জয় করবেন ৷
(রাসুলুল্লা হ্ (সা) যখন একথা বলেন) তখন সেখানে আলী (রা) ছিলেন না ৷ প্রতিটি কুরায়শী আর
প্রতিটি ব্যক্তি আশা পোষণ করেছিলেন যে, তিনিই হবেন যে ব্যক্তি ৷ প্রতু ৷ষে একটা উটে
আরোহণ করে হযরত আলী (বা) আগমন করে উট থেকে নেমে৩ তা বাধলেন ৷ এসময় তিনি
চক্ষুপীড়া য় ভুগছিলেন ৷ এ কারণে তার চক্ষুদ্বয়ে কাতা ৷রী কাপড় দ্বারা পট্টি বাধা ছিল ৷ রড়াসুলুল্লাহ্
(সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার কী হয়েছে ? বললেন, চক্ষু ব্যথা করছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন, আমার কাছে এসে৷ ৷ (তিনি কাছে এলে) রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার চোখে মুখের লালা
লাগান ৷ এরপর তার জীবনের অন্তিম দিন পর্যন্ত আর কখনো তিনি চক্ষু পীড়া ৷য় আক্রান্ত হননি ৷
এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার হাতে পতাকা তুলে দিলে তিনি পতাকা নিয়ে রওয়ানা হন ৷ এসময়
তার পায়ে ছিল আরজুয়ড়ান এর লাল জুব্বা ৷ তিনি খায়বরে আগমন করলে দুর্গের অধিপতি
মারহাব বেরিয়ে আসে ৷ মারহাবের শিরে ছিল ইয়ামানী শিরস্ত্রাণ ৷ পাথরের কারুকার্য করা এ
শিরস্ত্রাণ তিনি মাথায় ব্যবহার করেন ৷ আর মুখে নিম্নোধৃত কবিতা আবৃত্তি করছিলেন :
১ মুলে মোঃ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ৷ এর অর্থ আমার সামনের দিক বা উভয় দিকের ব্যথা ৷
খায়বর জানে যে, আমি মারহাব ! অস্ত্রধারী অভিজ্ঞ নেতা আমি ৷ সিংহ ক্ষিপ্ত হয়ে যখন সম্মুখে
এগিয়ে আসে এবং বিজয়ীর হামলার ভয়ে যখন সে পিছনে সরে যায় ৷
এর জবাবে আলী (রা) হুৎকার দিয়ে আবৃত্তি করেন :
আমি যে ব্যক্তি, যার নাম রেখেছেন তার মা হায়দর বলে ৷ :যন জঙ্গলের সিংহ আর কি ৷
শক্ত আমার পাকড়াও ৷ আমি তােমাদেরকে যেপে দেবাে এক সা এর বিনিময়ে এক মান্দারা
(এক বড় মাপের পরিমাণ বিশেষ) ৷
রাবী বলেন, এরপর উভয়ে সম্মুখ সময়ে অবতীর্ণ হন ৷ একে অন্যের উপর আঘাত হানেন ৷
হযরত আলী (বা) তার উপর এমন তবে আঘাত হানেন যা প্রস্তরকেও তা খানখান করে দেয় ৷ যা
মস্তক ভেদ করে মাড়ির দীত পর্যন্ত পৌছে ৷ এরপর তিনি খায়বর নগরী অধিকার করে নেন ৷
হাফিয বায্যার আব্বাদ ইবন ইয়াকুব ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে খায়বরের দিন হযরত
আবু বকর (রা) , হযরত উমর (রা) , অবশেষে হযরত আলী (রা) কে প্রেরণ করা এবং তার হাতে
খায়বর বিজয়ের কাহিনী বণ্টা করেছেন ৷ তবে তার বর্ণনার কিছুটা বৈকল্য আর অগ্ৰাহ্যতা রয়েছে
এবং তার সনদে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন ৷ যিনি শিয়াবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত ৷ আল্লাহ্ই ভাল
জানেন ৷
ইমাম মুসলিম (র) এবং ইমাম বায়হড়াকী (র) হড়াদীছের শব্দমালা ইমাম বড়ায়হাকী ইকরিমা
ইবন আম্মার সালামা ইবনুল আক্ওয়া ৷ তিনি তার পিতা সুত্রে দীর্ঘ হড়াদীছ বর্ণনা করে
তাতে ফাজারা যুদ্ধ থেকে তাদের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গ উল্লেখপুবর্ক বলেন যে, আমরা তথায় তিন দিন
অবস্থান করে খায়বরের উদ্দেশ্যে বের হই ৷ রাবী বলেন যে, আমীর নিলোধৃত কবিতা আবৃত্তি
করতে করতে রাস্তায় বের হন ও
আল্লাহ্র কসম ! আপনি না থাকলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, সাদাকা করতাম না, নামায
আদায় করতাম না ৷ আপনারা দয়া থেকে আমরা বিমুখ হতে পারি না ৷ সুতরাং আপনি আমাদের
প্রতি শান্তি নাযিল করুন ৷
আর আমরা যখন সম্মুখ সময়ে অবতীর্ণ হই তখন আমাদের পদ দৃঢ় ও স্থির রাখবেন ৷
রাবী বলেন, কবিতা শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কার কবিতা ? লোকেরা
বললো : আমীর নামক এক কবির ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : তোমার পালনকতা তোমাকে
ক্ষমা করুন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) কারো জন্য বিশেষভাবে দৃআ করলে সে শাহাদাত লাভ করতো ৷
তখন উমর (রা) বললেন : আর এ সময় তিনি ছিলেন উটের পিঠে ৷ আরো কিছুকাল যদি আমীর
দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত হতে দিতেন ৷ রাবী বলেন, আমরা যখন খায়বর আগমন করি তখন
মারহাব তরবান্বি উঠিয়ে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করতে করতে বের হয় :
খায়বর জানে যে, আমি মারহাব, আমি অস্ত্র চালাই, আমি দক্ষ নেতা ৷ যখন যুদ্ধে এগিয়ে
এসে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে ৷ রাবী বলেন , তখন আমীর (রা) নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করে দ্বন্দু যুদ্ধের
ডাক দেন ;
খায়বর জানে যে, আমি আমীর, অস্ত্র চালনায় দক্ষ, যোদ্ধা , আমি যুদ্ধ করি; কিন্তু পেছনে
সরে যাইনা ৷
রাবী বলেন, এ কবিতা আবৃত্তি করতে করতে উভয়ে একে অপরকে তরবারি দ্বারা আঘাত
করতে থাকেন ৷ এক পর্যায়ে মারহাবের তলোয়ার আমীর এর চালের উপর পতিত হয় ৷ আমীর
তাকে নীচে থেকে আঘাত করতে উদ্যত হলে নিজের তলােয়ারের আঘাতে তার প্রধান শিরা কটিড়া
যায় এবং এর ফলে তার মৃত্যু ঘটে ৷ সালামা (বা) বলেন, আমি বাইরে এসে দেখি, রাসুল করীম
(না)-এর একদল সাহাবী বলড়াবলি করছেন আমীর এর আমল বরবাদ হয়ে গেছে ৷ আমীর
নিজেকে নিজে হত্যা করেছে ৷ তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট হাযির হই, তখন
আমি কাদছিলাম ৷ তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমার হয়েছে কী ? আমি বললাম ? লোকেরা বলছে
আমীর এর আমল বরবাদ হয়ে গেছে ৷ তিনি জানতে চাইলেন , এমন কথা কে বলছে ? আমি
বললাম, আপনার একদল সাহাবী ৷ তিনি বললেন, ওরা মিথ্যা কথা বলছে ৷ বরং তার জন্য
রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার ৷ রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) লোক প্রেরণ করে আলী (র)-কে ডেকে
পাঠান ৷ এ সময় তার চক্ষু পীড়া ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন ?; আজ আমি এমন ব্যক্তির হাতে
পতাকা দোবা, যে আল্লাহ ও তার রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে তালরাসে ৷ রাবী বলেন, আমি আলী
(রা) কে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর দরবারে নিয়ে আসলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলী (রা) এর চোখে তার
মুখের লালা লাগালে তিনি সুস্থ হন এবং রাসুলুল্লাহ্ (না) তার হাতে পতাকা তুলে দেন ৷ এ সময়
মারহাব নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সম্মুখ সমরে প্রবৃত্ত হয় ?
তখন আলী (রা)ও নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করতে করতে এগিয়ে যান ?
আমি যে ব্যক্তি, মা যার নাম রেখেছে হায়দর ৷ আমি বনের ভয়াল-ভয়ংকর সিংহের মতে
আমি তাদেরকে ছা এর সাথে পুরাপুরি দেবাে ৷ এই বলে তিনি মারহাবের মাথায় তরবারি দ্বার
আঘাত হড়ানেন ৷ এতে তার মাথা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় ৷ মারহার নিহত হয় ৷ দুর্গ জয় হয় ৷ এমনই
বর্ণিত আছে যে হযরত আলী (রা)-ই অভিশপ্ত মারহারের হত্যাকারী ৷
ইমাম আহমদ (র) হুসাইন আলী (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আলী (বা) বলেছেন
মারহাবকে হত্যা করে আমি তার মস্তক রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর দরবারে হাযির করি ৷ পক্ষান্তরে মুস
ইবন উক্বা যুহ্রী সুত্রে বর্ণনা করেন যে, মারহাবকে যিনি ,ত্যা করেছেন তিনি হলেন মুহাম্মাদ্
ইবন মাসলামা , ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ইসহড়াকও অনুরুপ ন্ন্াত রক্তে করেছেন ৷ জাবির ইব্
আবদুল্পাহ্ সুত্রে বর্ণনা করে তিনি বলেন : মারহার ইয়াহুদী নিশ্নেক্তে কবিতা আবৃত্তি করে থাকে
দৃর্গ থেকে বহির্গত হয় :
খায়বরবাসী জ্ঞাত আছে যে, আমি মারহার ৷ আমি সশস্ত্র, অভিজ্ঞ ও বীর ৷ কখনো বশা দ্বার
আঘাত হানি , আবার কখনো আঘাত করি তরবারি দ্বারা ৷ সিংহ যখন ক্ষিপ্ত হয়ে তেড়ে আসে তখ
সে আমার চারণভুমির নিকটেও ঘেষতে পারে না ৷
তার এ কবিতা শুনে কাব ইবন মালিক (রা) জবাবে বলেন :
খায়বর জানে যে, আমি কাব আমি দুঃখ-কষ্ট দুর করি , আমি বীর-কঠাের ৷ যখন যুদ্ধ শুর
হয় আর তীব্ৰরুপ নেয় ৷ আমার কাছে তলােয়ার, আকীক পাথরের ন্যায় মুল্যবান ও ধারালাে ৷
তা বিনাশ সাধন করবে তোমাদের, শেষ পর্যন্ত বিপদই সহজ মনে হবে ৷ সে তরবারি এমন্
এক ব্যক্তির হাতে আছে, যাতে কোন খুত নেই, নেই কোন ত্রুটি ৷ বর্থাংড়াকারী বলেন যে, মারহড়া
এ কবিতা আওড়াতে আওড়াতে বলছিল এমন কে আছে যে আমার সঙ্গে দ্বন্দুযুদ্ধে অবতীর্ণ হশ্চে
পারে ? তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, কে এর মুকাবিলা করবে ? তখন মুহাম্মাদ ইবন মাসলান্
দাড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (সা) ! আমি তার ঘুকাবিলা করতে প্রস্তুত ৷ আল্লাহর কলম, আগ্রি
ময্লুম ও প্রতিশোধপ্রাথী ৷ সে গতকাল আমার ভাইকে হত্যা করেছে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা